বেশকিছুদিন ধরেই পত্রিকায় পড়ছিলাম। অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনী মানুষদের সাহায্য করতে চল্লিশটি দেশের উদ্যোগে সাহায্য সামগ্রী নিয়ে কয়েকটি জাহাজ ফিলিস্তিনী অভিমুখে রওয়ানা হয়েছে। তিন বছর ধরে ফিলিস্তিনীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। অভিযোগ হামাসের রকেট হামলা। এ তিনটি বছরে ফিলিস্তিনীদের সীমহীন দুর্ভোগের কথা কি কেউ ভেবেছে? বিশ্বকে তাদের এ কষ্টের কথা মনে করিয়ে দিতে তুরস্কের মানবাধিকার কর্মীদের উদ্যোগে দশ হাজার টন সাহায্য সামগ্রী নিয়ে ফিলিস্তিনে যাচ্ছিল এ নৌবহরটি। ছয়টি জাহাজের মধ্যে তুরস্ক ছাড়াও ছিল সুইডেন, গ্রীস এবং যুক্তরাষ্টের একটি জাহাজ।

ফ্রিডম ফ্লোটিলার লক্ষ্য ছিল ইসরাইলী অবরোধের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ। এ অবরোধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফিলিস্তিনের সব কিছুই। কৃষি ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যাবস্থা। সত্তুর শতাংশ মানুষ কর্মহীন। জাতিসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের প্রতিদিনের আয় এক ডলারেরও নিচে। আশি শতাংশ মানুষ খাদ্য সাহায্যের উপর নির্ভর করে। আর বিশুদ্ধ পানি পায় না প্রায় ষাট শতাংশের অধিক মানুষ। ইসরাইল নাকি ক্যালরি হিসাব করে খাদ্য পাঠায়। একবার ভাবুন তো, বাংলাদেশকে ভারত ক্যালরি হিসাব করে খাদ্য পাঠাচ্ছে! আর যে পরিমান পাঠাচ্ছে ইসরাইল, জাতিসঙ্ঘের মতে তা প্রয়োজনের শতকরা ২০ ভাগও পুরণ করছে না।

এরুপ দুর্বিষহ অবস্থা যে কোন মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষকে আকুল করে তুলবে। আর সে বোধ থেকেই ফ্রিডম ফ্লোটিলার ব্যবস্থাপকেরা নিজেদের জীবন বাজী রেখে এগিয়ে গিয়েছিলেন অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে। তাদের আশা ছিল ইসরাইল আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতিকে সম্মান করবে। কারণ তাদের জাহাজগুল ছিল আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমায়। তবে তারা ভুলে গিয়েছিল এ বিশ্বে ইসরাইল যা করে তাই নীতি। তাই আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় বিদেশী নাগরিক হত্যা করা তাদের জন্যে কোন ব্যাপার না।  চরম জঘন্য এ কাজের পর নিজেদের অপকর্ম ঢেকে রাখতে ইসরাইল তথ্য প্রবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখছে। যার ফলে সত্যিকার পরিস্থিতি বিশ্ববাসী এখন জানতে পারছে না।

ইসরাইল বলেছে, জাহাজের যাত্রীরা তাদেরকে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করেছে। তার থেকে বেশী কিছুর হামলাতো আমাদের দেশের পুলিশের উপরও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের আনতে আমাদের পুলিশ টিয়ারশেল সহ অন্যান্য ব্যাবস্থা নেয়। ইসরাইল কি তা নিতে পারত না?

আসলে ইসরাইলী প্রশাসন আইন, মানবাধিকার এসবে বিশ্বাস করেনা। তারা টিকে থাকতে চায় শক্তি প্রয়োগ করেই। আমি জানি ইসরাইলের এ আচরণের নিন্দা জানিয়ে  কোন লাভ নেই। তবে আশা করব এবার বিশ্ববাসী ফিলিস্তিনী অবরোধ তুলে নিতে ইসরাইলের প্রতি চাপ প্রয়োগ করবে। কারন এবার শুধু ফিলিস্তিনী নাগরিক মারা যাননি। নিহত হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। যাদের লক্ষ্য ছিল মানুষ ও মানবতা রক্ষা।