অপর্ণা সেন কদিন আগে বলেছিলেন উনি দৈনন্দিন বাস্তবতা থেকে মুক্তি চাইছেন-তখনো জাপানিজ ওয়াইফ দেখা হয় নি আমার। রবিবারে দেখলাম। সত্যিই উনি বাংলা সিনেমাতে প্রথম ম্যাজিক রিয়ালিজম নিয়ে পরীক্ষা করার সাহস দেখালেন। ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের (www.databazaarmedia.com) সৌজন্যে এখন সারা আমেরিকা জুরেই বাংলা সিমেমার হল স্ক্রীনিং শুরু হয়েছে-আমি সংস্কৃতি আয়োজিত প্রিমিয়ারেই সিনেমাটি দেখলাম মেরীল্যান্ডে।

দি জাপানিজ ওয়াইফ বুঝতে জাদু বাস্তবতার এলিমেন্ট গুলো বুঝতে হবে, তা মোটেও না। বেশ মিষ্টি প্রেমের ছবি। তবে ম্যাজিক রিয়ালিজমের সাথে পরচিতি থাকলে আরেকটু বেশী ভাল লাগবে।

ম্যাজিক রিয়ালিজম কিন্ত সারিয়ালিজম বা অধিবাস্তবতা না। অধিবাস্তবতাতে মনের অবচেতন গহণ অরণ্যে ডুব মারা হয়। আর ম্যাজিক রিয়ালিজমে খন্ড খন্ড বাস্তবতাকে এমন ভাবে জোড়া লাগানো হয়-তা হয়ে ওঠে একাধিক অত্যাশ্চর্য্য কাহিনীর সূতিকাগৃহ।

জাপানীজ ওয়াইফের গল্পটাও তাই। এখানে জাপানী মেয়ে মিয়াগী এবং বাঙালী অঙ্কের মাস্টারমশাই স্নেহময়-দুটি চরিত্রই দারুণ ভাবে বাস্তব। তাদের কর্মক্ষেত্রও জাপান এবং দক্ষিন বঙ্গ। মাতলা এবং নদীবঙ্গের জলভরা রূপের বাস্তবতার মধ্যে ততোধিক বাস্তব চরিত্র অঙ্কের মাস্টারমশাই স্নেহময়-। মিয়াগীও রক্ষণশীল জাপানীজ নারী। কিন্ত এই দুই অতিবাস্তব চরিত্রকে মিলিয়ে দেয় এক অবাস্তব প্লট!

এদের প্রেমের গল্পটা যদি বাস্তব বা রিয়ালিজম দিয়ে ডেভেলপ করা হত-তাহলে পাত্র বা পাত্রী কাওকে জাপান বা বাংলাতে এসে প্রেম করতে হত বাস্তবে। ম্যাজিক রিয়ালিজমের প্রেমে মজাটা হচ্ছে-সেখানে দুটো বাস্তব চরিত্রকে বাঁধতে মোটেও বাস্তব কোন প্লট লাগে না। নিয়াগী এবং সুভময় পত্রমিতালী- পত্রে প্রেম বিনিময়েই তাদের বিবাহ! হাজার হাজার মাইল দূরত্বের প্রেম আজকাল ফেসবুকের যুগে আখছার হচ্ছে। কিন্ত আজ থেকে কুড়ি বছর আগে একটি অজ পাড়াগাঁয়ের স্কুলশিক্ষকের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হচ্ছে একটি জাপানী মেয়ে-শুধু চিঠি পড়ে-এই অবিশ্বাস্য কাহিনীকে বাস্তব করার গল্প জাপানীজ ওয়াইফ। সেখানেই ম্যাজিক রিয়ালিজম।

রাহুল আর রাইমার অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। সিনেমাটোগ্রাফিও চমৎকার। এই ধরনের সিনেমা আমরা গর্বকরে বিদেশী কলিগদের দেখাতে পারি। বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের লম্ফনটাই আসলে সার-বিদেশীদের দেখানো জন্যে দুপিস সত্যজিত আর রবীন্দ্রসমগ্র ছাড়া আসলেত কিছু নেই। এর মধ্যেই অপর্ণা সেন বা ঋতুপর্ণ যে বাংলা সিনেমাগুলো বানাচ্ছেন-তা অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাজারে সফল হওয়ার সামর্থ্য রাখে।

এর আগে ঐশ্বরিয়া রায়ের মিসট্রেস অব স্পাইস
দেখে মনে হয়েছিল সিলভার স্ক্রীনে ম্যাজিক রিয়ালিজম অসম্ভব। অপর্না সেন কিন্ত মুন্সীয়ানার সাথে প্রমাণ করলেন তা সম্ভব। ম্যাজিক রিয়ালিজমের সম্পূর্ন ফায়দা তুলেছেন পরিচালক। অনেক দৃশ্যই আমরা দেখব-যা অবাস্তব গল্প-কিন্ত পরিবেশনের মূর্ছনাতে, দর্শক বাধ্য হবে মেনে নিতে-এমটাত হতেই পারে। দৈনন্দিন বাস্তবতার বাইরে মুক্তির এই স্বাদ জাদুবাস্তবতাতেই সম্ভব। আমার দেখা সেরা জাদুবাস্তব সিনেমা -“লাভ ইন দি টাইম অব কলেরা” -সেখানে মার্কোয়েজ দুই নায়ক নায়িকাকে বাহুডোরে বেঁধেছিলেন তাদের প্রথম প্রেমের পঞ্চাশ বছর বাদে যখন তারা দাদু দিদিমা হয়ে গেছে। সেই বিবাহও যেমন ছিল অবাস্তব-এই গল্পও তাই। কিন্ত গোটা সিনেমাটা দেখলে মিয়াগী এবং স্নেহময়ের বিবাহের বাস্তবতাকে না মেনে উপায় নেই। সেই ইন্দ্রজাল মোহেই আবিষ্ট করবে “দি জাপানিজ ওয়াইফ”