সমালোচনা আর বিদ্বেষের মাঝে পার্থক্য মনে হয় বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারে না। সমালোচনার মধ্যে সংশয়বাদ থাকা বাঞ্চনীয়। যখনই সমালোচনা থেকে সংশয়বাদ দূর হয়ে যায় তখনই সেটা হয়ে যায় বিদ্বেষ, যা প্রকৃতিগতভাবেই অন্ধ এবং উগ্র। কার্ল স্যাগানের সেই বিখ্যাত উক্তি “extraordinary claims require extraordinary evidence” এর আলোকেই বলতে চাই, ধর্ম যেহেতু বড় বড় দাবি করে তাই ধর্মের সমালোচনাটাও তীব্র হওয়া উচিত। কিন্তু ঠিক কতটুকু তীব্র? আমি বলব বিদ্বেষের পর্যায়ে না গেলেই হল। বর্তমানকালে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল ধর্ম হল ইসলাম, এই ধর্মের অনুসারীরা কার্টুনের জবাব দেয় রক্ত দিয়ে। বলাই বাহুল্য এই উগ্রপন্থার কারণে ইসলামের সমালোচনাও হয় অনেক বেশি, কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগে যখন দেখি যে সমালোচনাটা বিদ্বেষের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।
প্রথম যখন “ফেইথ ফ্রীডম” সাইটটা দেখি, বলাই বাহুল্য, মুসলমান হিসেবে সাইটটাকে আমার কাছে খুব কুরুচিকর মনে হয়েছিল। “We are against hate, not faith”- সাইটের প্রতিষ্ঠাতা সাইটের এই আদর্শবাণী কতটুকু বিশ্বাস করেন জানি না তবে সাইটের সদস্যদের মধ্যে মোটেই তা দেখা যায় না। একবার বাংলাদেশ সম্পর্কিত এক প্রবন্ধে “proud_kafir” বা অনুরুপ নিকের একজন মন্তব্য করেছিলেন যে বিশ্ব উষ্ণায়নের মাধ্যমে এই মুসলমান ভূমি এর ডুবে যাওয়া উচিত। সাইটটার মূল বক্তব্য হল “বিশ্বাস” কোন সমস্যা না, ইসলামই সব সমস্যার মূল। অন্য সব ধর্মের মত ইসলামের ভিত্তিও কিন্তু বিশ্বাস, মুসলমানরা ওই বিশ্বাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েই কোরানকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। কোরানে এমন কিছু বলা নেই যা নৃশংসতার দিক দিয়ে অন্য ধর্মগ্রন্থকে হার মানায়। সোলায়মা্নের শত শত বউ, পুরুষ অতিথিদের বাঁচানোর জন্য উচ্ছৃঙ্খল জনতার কাছে লুতের কন্যা দান প্রভৃতি গল্পগুলো তো কোরানের অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। সাইটটা যখন দাবি করে তারা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে না কিন্তু একনাগাড়ে ইসলামের উপর আক্রমন চালিয়ে যায়, তখন সেটা নিঃসন্দেহে পক্ষপাতদুষ্টতার পর্যায়ে পড়ে। ইসলামের সমালোচনা করা ভাল, কিন্তু অন্য সব ধর্মকে “বিকল্প” হিসেবে উপস্থাপন করা বা ইঙ্গিত করাটা ভন্ডামি। তবে আলি সিনার যুক্তিবোধ তীক্ষ্ণ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আলি সিনার কয়েকটা বিতর্ক পড়েই ঈমানের অধঃপতন শুরু হয়েছিল।
আজকে অন্য কারণে এই পোষ্ট লিখতে বসেছি। ফেসবুকে আমার কয়েকজন বন্ধুকে একটা গ্রুপে যোগ দিতে দেখলাম, গ্রুপটা মূলত কয়েকটা ইসলামবিদ্বেষী ফ্যান পেইজের বিপরীতে সৃষ্টি হয়েছে। নিচের লিংকগুলো দেখুন,
1.ALLAH IS A CRIMINAL
http://www.facebook.com/pages/ALLAH-IS-A-CRIMINAL/107982012573321?v=wall&ref=mf
2.MUHAMMAD WAS A HOMOSEXUAL
http://www.facebook.com/pages/MUHAMMAD-WAS-A-HOMOSEXUAL/121468601206453?ref=mf
3.Allah is a pig
http://www.facebook.com/pages/ALLAH-IS-A-PIG/106867459355597?ref=mf
তাছাড়া ফেসবুকের সেই কুখ্যাত “ফাক ইসলাম” গ্রুপটা তো আছেই। আমি মনে করি যুক্তিবাদী হিসেবে আমার এসব বিদ্বেষমূলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা উচিত। তাই, সম্যকরুপে বিশ্বাসকে ঘৃণা করা সত্ত্বেও আমি “রিপোর্ট দিস পেইজ” লিংকে ক্লিক করলাম।
অনেকের সাথে আলাপের সময় বলেছি যে তালেবানরা হলো সত্যিকার ইসলামের অনুসারী কোরান হাদিস অনুযায়ী । কিন্তু তখন তারা তা মানতে চায় না। এটা যে তাদের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ তা বলা বাহুল্য। কিন্তু বিশ্বাসে কোন ঘাটতি নাই আবার যে ইসলাম হলো আল্লাহর ধর্ম আর মোহাম্মদ হলো আল্লাহর নবী। কি অদ্ভুত মানসিকতা!
পৃথিবী আপনি এখানে কার কথা বোঝাচ্ছেন। ডেনিশ কার্টুনিস্ট কার্ট ওয়েস্টারগার্ট, যিনি মুহম্মদের কার্টুন এঁকেছিলেন,যিনি কিনা জীবন্ত আগুনে পুড়ে মরেছেন বলে প্রচার করা হয়েছিল বাংলাদেশে। নাকি ডাচ চিত্র পরিচালক ভিন্সেন্ট ভ্যান গগের কথা, যিনি Submissionনামক প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কারণে জীবন দিয়ে দিয়েছেন।
@অভীক, কা্র্টুনিস্টের কথাই বলছি, উপরে লাইজু আপুর মন্তব্যের পর সংশোধন করেছিলাম তো মনে হয়।
@অভীক,
ওনার নাম থিউ ফান গগ( বাংলায় থিউ ভ্যান গগ)।
ভিন্সেন্ট ভ্যান গগ প্রখ্যাত ডাচ চিত্রকর।
ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
ভুল সংশোধন করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ওই দুইজনের নাম নিয়ে আমি সবসময়ই কনফিউসড থাকি। আশা করি এই ভুল আর করব না। তবে মু-ম এর সকল পাঠকদের বলছি থিউ ভ্যান গগের Submission প্রামাণ্যচিত্রটি না দেখলে দেখে নিবেন।
পৃথিবী,
বোধ হয় ডেনিশ কার্টুনিস্টকে হবে।
ধন্যবাদ!
যুক্তিকে যুক্তি দিয়েই খণ্ডন করাই শ্রেয়। আর সেই আপ্তবাক্যটি তো আছেই : বিনয় কিনতে পাওয়া যায় না, কিন্তু বিনয় দিয়ে দুনিয়ার সব কিছু কেনা যায়।
পৃথিবী'র মতো আমিও বিস্ময়ের সঙ্গে দেখি, বিভিন্ন গ্রুপ, ব্লগ ও কমিউনিটি সাইটে — যারা সুশীল বা সাহেব বাবুর বৈঠকখানায় বেশ কেতা দূরস্ত বাতচিত করেন, তারা অনেক সময়ই সামান্যতম সমলোচনাও তারা নিতে পারেন না। প্রায়ই যুক্তিতর্কের বাইরে রথী-মহারথীরা কাছা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়েন; আবার তাদের কামড়া-কামড়িতে ফেউ জুটে যায় খুব সহজেই…অনেকটা ওই *াক ইসলাম-এর মতোই।
এখনও মনে হয় কমেন্ট বাই কমেন্ট জবাব দেওয়া যাচ্ছে না, তাই সবগুলো জবাব একসাথেই দিচ্ছি।
মুমিনরা অবিশ্বাসীদের গালাগালি করলে আমি আশ্চর্য হই না, বস্তুতঃ, আমি তাদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশাও করি না। বিশ্বাস এতই ভয়াবহ যে এটা রোগের কাছাকাছি, তাই কেউ তার বিশ্বাসকে বাঁচানোর জন্য আমাকে আক্রমন করলে আমি খুব একটা অবাক হব না। আমি তার সাথে তর্ক করার চেষ্টা করে দেখতে পারি, কিন্তু তাকে ঘৃণা করলে হিতে বিপরীত হবে। জাকির নায়েকের বকৃতা প্রথম শুনে আমার নিজের মাথায়ও ইসলামী ভূত চেপেছিল, তখন আমিও ভাবতাম ওই ডাচ কার্টুনিস্টকে যথাসাধ্য নৃশংসতার সাথে খুন করা উচিত। এরপর অনেক চিন্তাভাবনা করেছি, আস্তে আস্তে চিন্তার পরিবর্তন ঘটেছে। মুক্তমনায় ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান, কোরানের ১৯ মিরাকলের সংশয়বাদী বিশ্লেষণ প্রভৃতি লেখা পড়েই আমার চিন্তার পরিবর্তন ঘটেছে এবং অবশেষে বন্যাপুর বইটা পড়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌছুতে পেরেছি। “মোহাম্মদ একটা ফ্যাগট”, “আল্লাহ একটা শূকর”, “আল্লাহ একটা সন্ত্রাসী” জাতীয় লেখা আমাকে কখনওই সাহায্য করেনি, উলটো ইহুদি-নাছারাদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছিল। আমার নিজের পরিবর্তনকে বিশ্লেষণ করেই আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি বিশ্বাসের রোগ নিরাময় করা কঠিন হলেও অসম্ভব না।
মোহাম্মদকে সমকামী ও শূকর ঘোষণা করা, মুসলমানের দেশ বলে বাংলাদেশের ধ্বংস কামনা করা, ইত্যাদি কাজকর্ম ইসলামী সন্ত্রাসের সমকক্ষ না হলেও উন্মাদনার দিক দিয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই। এখন ইসলামের দাপটের কারণেই হয়ত আলি সিনারা মুসলমানদের উপর শারীরিকভাবে হামলে পড়ছে না, ক্ষমতার হাত বদল হলে যে তিনিও একই কাজ করবেন না তার নিশ্চয়তা কি?
“কোরানে বিধর্মীদের খুন করতে বলা হয়েছে” এই জাতীয় কথা রেফারেন্স সহকারে বললে সেটা অবশ্যই সমালোচনা হবে। কিন্তু ইসলাম প্রগতির জন্য হুমকি বলে মুসলমানদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়াটা সমালোচনা নাকি বিদ্বেষ, সেটা বিচার করার ভার আপনার বিবেকের হাতেই ছেড়ে দিলাম। আলি সিনার ইসলাম সমালোচনার সাথে ড্যানিয়েল ডেনেটের “ব্রেকিং দ্যা স্পেল” বইয়ের ধর্মের সমালোচনা তুলনা করে দেখুন, সমালোচনা আর বিদ্বেষের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
আলি সিনার প্রবন্ধগুলার সত্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই এবং তিনি যে বোমা মেরে মুসলমানদের ভূমিত উড়িয়ে দেওয়া কখনও সমর্থন করবেন না, এতেও আমার সন্দেহ নেই। তবে তাঁর সাইটের সদস্যদের নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বাংলাদেশ নিয়ে জনৈক বিদ্বেষীর মন্তব্যটাই তার প্রমাণ। ফেইথ ফ্রীডমের পুরনো সাইটে জনাব উইলিয়াম গোমেজের বাংলাদেশ সম্পর্কিত কোন একটা লেখায় মন্তব্যটা দেখেছিলাম, সাইট আপডেটের পর পুরনো লেখাগুলো ওরা আর আপলোড করেনি।
বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল কোন মতবাদ কিভাবে আরেকটা মতবাদের বিকল্প হতে পারে সেটা আমার জানা নেই। আমার পোষ্টে যাদের কথা বলেছি, তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে যে ইসলামের বিকল্প ধর্ম আছে। ওল্ড টেস্টামেন্টের ঈশ্বর আল্লাহর চেয়ে বেশি মানবিক- এটা কেউ বিশ্বাস করলে আসলেই কিছু বলার নেই। এই খ্রীষ্টান ধর্মের লোকজনই তো গর্ভপাত ক্লিনিকের চিকিৎসর-সেবিকাদের প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করেছে। সহিংসতার প্রেক্ষাপট আলাদা হতে পারে, কিন্তু খ্রীষ্ট ধর্ম আর ইসলামের মধ্যে আসলেই কি খুব বেশি পার্থক্য আছে?
এটা কি মাযহাবভেদে সব খ্রীষ্টানই বিশ্বাস করেন নাকি শুধু একটি বিশেষ গোত্রের খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করেন? আপনার কথা যদি সত্য হয়, তবে খ্রীষ্টানদের মধ্যে এত বিভেদ কেন?
আমার পোষ্ট করা ফেসবুক পেইজগুলো যদি এখনও ওপেন থাকে, তবে আপনি দেখে আসতে পারেন। সমালোচনা আর বিদ্বেষের মাঝে একটা পরিস্কার রেখা আমি আঁকতে পেরেছি বলেই আমার বিশ্বাস। "ডারউইন একটা হারামী" আর "বিবর্তনবাদ শুধুই একটা থিওরী"- এই দু'টো বাক্যের মধ্যে কিন্তু বড় ধরণের পার্থক্য আছে।
@পৃথিবী,
আমি আমার মূল পয়েন্ট গুলি বলি তাতেই সব পরিস্কার হয়ে যাওয়া উচিতঃ
১। ইসলামের সমালোচনাকারীদের কারও কারও মধ্য ইসলাম বা ইসলামিস্টদের প্রতি যে ঘৃণা বা বিদ্বেষ তা হল প্রতিক্রিয়ামূলক(Reactive) বা আত্মরক্ষামূলক(Defensive)। কিন্তু ইসলামিস্টদের ঘৃনা/বিদ্বেষ ক্রিয়ামূলক(Proactive) বা আক্রমনাত্মক। এই দুটো বিদ্বেষ ক্রিয়া/প্রতিক্রিয়ার সম্পর্কে বাঁধা, নিউটনের ৩য় সূত্রের মত। ইতিহাসই এর সাক্ষ্য দেয়। ইসলামিস্টরা শ শ বছর ধরে একের পর এক নাস্তিক, কাফের, পৌত্তলিক, সংশয়বাদী এদের উপর নির্যাতন চালিয়ে গেছে । আর তাদের এই নির্যাতনের প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা যোগায় কুরাণের অসহনশীল আয়াতসমূহ। যার পরিণতিতে ইসলামের সমালোচনাকারীদের উদ্ভব। আর এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবেই কিছু সমালোচনাকারীর মনে ইসলাম ও ইসলামের সমর্থকদের প্রতি বিদ্বেষ জন্ম নিয়েছে। ইসলামিস্টরা যদি অসহনশীল আচরণ ও নির্যাতন না করত তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই পালটা বিদ্বেষও সৃষ্টি হত না। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের বিরুদ্ধে তো এইরকম বিদ্বেষ দেখা যায় না। মনে করিয়ে দেই ইসলামিস্টদের বিদ্বেষ দৈহিক পর্যায়ে চলে যায় অবধারিতভাবে। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষীদের বিদ্বেষ লেখনী বা কথায় সীমিত। ইসলামিস্টরা লেখনীর বা উক্তির জবাব দেয় ছোরা দিয়ে, আর ইসলাম বিদ্বেষীরা ছোরার জবাব দেয় লেখনী বা উক্তির দ্বারা। দুটো বিদ্বেষকে সমান করে দেখা বৌদ্ধিক হটকারিতা।
২। বোমা মেরে মুসলমান্দের উড়িয়ে দাও, ইত্যাদি কথা যারা বলে থাকে, যেমন আলী সিনার ওয়েব সাইটের কিছু সদস্য, তারা কেবল মুখেই বা কলমেই বলে এগুলো, তাই আমরা এটা জানি। এটা স্পষ্টতই তাদের ভিতরের চাপা রোষ আর ফ্রাস্ট্রেশনের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এই স্বল্প সংখ্যক সদস্যরা তাদের নিজের মতই জানাচ্ছে, কোন বিশ্বাসভিত্তিক গোষ্ঠী বা মতাদর্শের অনুসারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে না। আর তারা যদি এধরণের কাজ করতে সিরিয়াস হত তাহলে ইন্টারনেটে এটা বলে বেড়াবে না, করতে চেষ্টা করবে, যেমন ইসলামী জঙ্গীরা করে দেখাচ্ছে মাঠ পর্যায়ে।। কিন্তু সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট পয়েন্ট হল যে ইসলাম বিরোধী বিদ্বেষ কোন ধর্মগ্রন্থ দ্বারা অণুপ্রাণিত নয়। কাজেই তাদেরকে সহজে মার্জিনালাইজ করা যায় (যদি আদৌ তারা তারা কোন সহিংস কর্মে লিপ্ত হয়), কারণ তারা তাদের সহিংসতার সমর্থনে কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের সহায়তয়া নিতে পারবেনা, তারা কোন শ্লোক উদ্ধৃতি করতে পারবে না, বিশেষ করে তারা যদি নাস্তিক হয়। আর যদি উদ্ধৃতি করতে পারেও, যেহেতু তাদের ধর্মের গ্রন্থগুলি সরসরি ইশ্বর দ্বারা লেখা বলে দাবী করা হয়না আর ওটা অনুসরণ করা কুরাণের মত আবশ্যিকও নয়, সেহেতু তাতে তারা কোন সুবিধা করতে পারবে না। এই জন্যই দুনিয়ায় ইসলাম বিদ্বেষীদের নিয়ে কোন বড় সমস্যা নেই,কারণ তারা সীমা লঙ্ঘন করলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারীরা প্রচলিত আইনেই তা সুরাহা করতে পারে, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানা হচ্ছে এই ওজুহাতে তারা কোন পালটা আন্দোলন চালাতে পারবে না। সমস্যা হচ্ছে আছে ইসলা্মী জঙ্গীদের নিয়ে। কারণ তারা কুরাণ দ্বারা অণুপ্রাণিত। আগেই বলেছি কুরাণ এর সাথে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মূল পার্থক্য হল সকল মুসলামানের কুরাণ সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস ও অনুসরণ করা আবশ্যিক। সকল মুসলমানেরা (তথাকথিত মডারেট থেকে কট্টরবাদী সকলেই) এ ব্যাপারে একমত, কারণ তারা সবাই বিশ্বাস ও দাবী করে যে কুরান আল্লাহর প্রত্যক্ষ বাণী। কুরাণে বলাই আছে কাফেররা মুসলমানের শত্রু, ইস্ললাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম গ্রহণযোগ্য নয়, আর জিহাদ করা আবশ্যিক ইত্যাদি।
মুহম্মদের যুদ্ধাভিজানই তাদের প্রেরণা। সারা বিশ্বে ইসলাম কায়েম করাই ইসলামের বাণী। ইসলামী জিহাদীদের বাধা দিলে তারা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বা ইসলাম ধর্মের উপর আঘাত হানা হচ্ছে বলে প্রচার চালায় এবং আরও বলীয়ান হয়ে ওঠে আর তথাকথিত মডারেটদের সহানুভূতিও লাভ করে।
এবার কিছু মন্ত্যব্য/প্রশ্নের(উদ্ধৃতি চিহ্ণের ভেতর) প্রত্যুত্তরঃ
“বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল কোন মতবাদ কিভাবে আরেকটা মতবাদের বিকল্প হতে পারে সেটা আমার জানা নেই”
বিকল্প কথাটা বলিও নি আর বোঝানও হয়নি। আর ওয়েব সাইটের কেউ যদি বলেও থাকে তারা কুরানের মত কোন বইএর অনুসরণ করে বলছে না, তাদের ব্যক্তিগত মত। আমার উপরের ১) ও ২) এর মন্তব্যগুলি প্রজোয্য।
“ওল্ড টেস্টামেন্টের ঈশ্বর আল্লাহর চেয়ে বেশি মানবিক”
এটাও কোথাও দাবী করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়না। নিউ টেস্টামেন্টের ব্যাপারে এই দাবী করা যায়। আরেকটা কথা। কুরাণ কিন্তু বলে যে বাইবেল আল্লার দ্বারাই প্রেরিত। কাজেই ওল্ড টেস্টামেন্টের গুণাগুণের দায়িত্ব আল্লাহকেই নিতে হবে।
“এটা কি মাযহাবভেদে সব খ্রীষ্টানই বিশ্বাস করেন নাকি শুধু একটি বিশেষ গোত্রের খ্রীষ্টানরা বিশ্বাস করেন? আপনার কথা যদি সত্য হয়, তবে খ্রীষ্টানদের মধ্যে এত বিভেদ কেন?”
আগেই বলেছি বাইবেলের কোথাও বলা নেই কোনটা বিশ্বাস করলে খাঁটি খ্রীষ্টান হয়া যায়। কাজেই যে যার ব্যক্তিগত ভাবে বেছে নিতে পারে কোনটা বিশ্বাস করেব। তবে একটা নূন্যতম শর্ত হচ্ছে যীশুকে আর তাঁর বাণী্তে বিশ্বাস করা। কাজেই এখানে ইসলামের মত মাহযাবের কথা উঠবে কেন? আর একটা কথা। একটু চিন্তা করলেই যে কেউ বুঝতে পারবে যে আমি খ্রীষ্টান ধর্মের সমর্থন বা প্রশংসা করছি না, কেবল ইসলামের সাথে এর বস্তুগত পার্থক্যটা দেখাচ্ছি। খ্রীষ্টানদের মধ্যে বিভেদ থাকলেও আমাদের বর্তমান আলোচনায় তা অবান্তর। বিভেদ তো অন্য ধর্মের প্রতি অশনশীলতা আনছে না, যেটা নিয়ে বর্তমান আলোচনা। আর ওদের বিভেদ তো আহমেদিয়ার প্রতি মূল ইসলামিস্টদের নিপীড়নের মত নয়। বিভেদকে অহিংসভাবে মেনে নিলে ক্ষতি কি? কোন ভাবেই দেখান যাবে না ইসলামের চেয়ে অন্য কোন ধর্ম কার্যত বেশী অসহনশীল। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যার ধর্মগ্রন্থে অন্য ধর্মের প্রতি নেতিবাচক উক্তি করা হয়েছে।
“”ডারউইন একটা হারামী” আর “বিবর্তনবাদ শুধুই একটা থিওরী”- এই দু’টো বাক্যের মধ্যে কিন্তু বড় ধরণের পার্থক্য আছে।”
কিন্তু পার্থক্য নেই একটা ব্যাপারে। দুটোই শুধু কথা। একটা কুরুচিশীল বটে। কিন্তু রুচির আলোচনা এখানে অবান্তর। ইস্লামিস্টরা কথায় সীমাবদ্ধ থাকে না। ছদ্মনাম ব্যবহার না করে ইসলামের সমালোচনা করলেই তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়।
@যাযাবর, :yes:
উল্টা দিকে যাচ্ছি না তো আবার? এরপর হয়তো সমালোচনাটাই বিদ্বেষ ধরে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আসবে!!!????
“যে বয়সে পুরুষ ভালবাসে নারীকে, সে বয়সে তুমি ভালবাসলে তোমার মাতৃভূমি দক্ষিন আফ্রিকাকে, বেঞ্জামিন মলয়েস………” কার লেখা কবিতা যেন (লাইনটাও বোধহয় পুরোপুরি শুদ্ধ হলোনা)। অনেকদিন আগে পড়া, ঠিক মনে নেই। ম্যাট্রিকের তিন মাসের ছুটিতে প্রায় শ’ খানেকের ওপর ‘মাসুদ রানা’ বইয়ের সিরিজ পড়ে শেষ করেছিলাম। আরও বেশী কিছু বলে নিজেকে আর ছোট করার ইচ্ছে নেই। এতটুকু একটা ছেলে যে জ্ঞানে এত পরিপক্ক, তা দেখে শ্রদ্ধায় এমনিতেই মাথা নত হয়ে আসে। এস.এস.সি. তে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যে অভিনন্দন, পৃথিবী। তোমার উত্তরোত্তর আরো সাফল্য কামনা করছি।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
এটা কি বললেন আবিদ ভাই?
শুধু মাসুদ রানা পড়ার কারনে ছোট হয়ে গেলেন??? অন্য কিছু পড়েননি সেটা বলেন।
আমার তো মনে হয় মাসুদ রানার ছোঁয়া না পেলে আমার জীবনের অর্ধেকই অপূর্ণ থাকত।
আদিল,
ঠিকরে ভাই। আসলে মাসুদ রানা ছাড়া তেমন আর কিছুই পড়িনি সেসময়। সেকারনেই মাঝে মাঝে আফসোস হয় যদি উঁচু মানের বই-টই আরও পড়তে পারতাম সেসময়, তাহলে আরো আগে থেকেই আরো কতকিছু জানতে পারতাম। "It's better to be late than never" স্বান্তনাখানা অবশ্য কিঞ্চিত মনযাতনা লঘুকারী।
আবিদ,
আপনার আগের একটি মন্তব্যের কথা মাথায় রেখে কমেন্ট করার ইন্টারফেস একটু চেঞ্জ করলাম। আপনি বলেছিলেন লিঙ্ক দিতে নাকি আপনার অসুবিধে হচ্ছিলো। এবার দেখুন লিঙ্ক দিতে পারেন কিনা। অনেকেটা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের মতো ভিজুয়াল ইন্টারফেস করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনার ভাল লাগবে।
এ সংক্রান্ত যে কোন ফীডব্যাক থাকলে জানাতে পারেন।
অভজিৎ,
ধন্যবাদ তথ্যটা দেয়ার জন্যে। আমি চেষ্টা করে দেখবো। সমস্যা হলে জানাবো। আবারও ধন্যবাদ।
পৃথিবী সম্পর্কে অভিজিত এবং মিঠুনের কথায় একমত না হবার কোন উপায় নেই। এ বিষয়ে কেউ একমত না হলে তার মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত 🙂 । এতে কোন আপোষ নেই।
আমি পৃথিবীর কথাবার্তা চিন্তাভাবনা খুব কৌতূহলের সাথে শুনি, নিজের সে বয়সের সাথে মেলাতে চেষ্টা করি, কিছুতেই পারি না। অবশ্য তাতে নিজেকে দোষও দিতে পারি না, আরন বাংলা ব্লগে যারা লেখালেখি করেন তাদের বেশীরভাগেরই তার ৩ গুন বয়সেও মনে হয় অতটা স্বচ্ছতা ও পরিপক্কতা আসেনি।
আগামী দিনে আশা করি পৃথিবীর মত ছেলেরাই এগিয়ে আসবে, নিখুত ও শালীন যুক্তিবোধের সাহায্যে নিয়ে আসবে নুতন দিন।
পৃথিবীর লেখা ও তার উপর কয়েকজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি কিছু পালটা মন্তব্য করতে চাই। তাদের কয়েকটি মন্তব্যের উল্লেখ করেই শুরু করি, কার কোনটা সেটা উল্লেখ না করেই, কারণ সেটা মুখ্য ব্যাপার নয়। মন্তব্যগুলি হলঃ
১। ঘৃণার জবাব ঘৃনা দিয়ে দিলে তাদের সাথে আমাদের আর কি পার্থক্য থাকল? পাগলা কুকুরে কামড়ালে কি আপনিও পাগলা কুকুরকে কামড়াতে যান?
২। যুক্তি আর আবেগকে যুক্তিবাদীদের দাবীদাররাই মিলিয়ে ফেললে আর চরমপন্থীদের দোষ দেওয়া যাবে কিভাবে?
৩। এক ধর্মের লোকের অন্য ধর্মের লোকের সমালোচনা করার অধিকার নাই।
এটা অনেকটা এক চোরের আরেক চোরের চৌর্যবৃত্তির সমালোচনার পর্যায়ে পড়ে
৪। বিশুদ্ধ নাস্তিক যিনি, তার কাছে সব ধর্মই সমান, তার কোন পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে না
এই সব মন্তব্যগুলিই রাজনৈতিক শুদ্ধতায় বিশ্বাসী উদারপন্থীদের সরলতার প্রতিফলন। এরাই বরং যুক্তিবাদীদের ক্ষতি করছেন বলে আমার মনে হয়। আমি একটা একটা করে উপরের মন্তব্যগুলির সমালোচনা করছি।
১। ঘৃণার জবাব ঘৃনা দিয়ে দিলে তাদের সাথে আমাদের আর কি পার্থক্য থাকল? পাগলা কুকুরে কামড়ালে কি আপনিও পাগলা কুকুরকে কামড়াতে যান?
তাদের সাথে বলতে ইসলাম পন্থীদের কথাই নিশ্চয় বোঝাচ্ছেন। ইসলাম পন্থীদের ঘৃনা কার প্রতি? যারা নাস্তিক, যারা ইসলামের সমালোচনা করে তাদের প্রতি। যদিও ঐ নাস্তিকেরা বা ইসলামের সমালোচকরা কোন সহিংসতায় লিপ্ত হন নি। আর এই ঘৃনাটা শুধু মনেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এই ঘৃনা অবধারিতভাবেই সহিংসতার রূপ নেয়। যারা ইসলামের সমালোচনা করেন তারা হাড়ে হাড়ে এটা টের পান। তাই ছদ্মনামে লেখা, ঠিকানা গোপন রাখা ছাড়া তাদের গতি নেই। তথাকথিত মডারেট ইস্লামিস্টরা নিজে সহিংসতায় লিপ্ত না হলেও ইসলামের সমালোচকদের প্রতি সহিংসতাকে বৈধতা দেন এই বলে যে ইসলামের অবমাননা করে ধার্মিকদের সেন্টিমেন্টে আঘাত করলে এই পরিণতিই হয়। তারা কোন ইসলামী সমালোচকের নাম ঠিকানা জানলে ঠিকই কট্টরবাদীদেরকে তা জানিয়ে দেন। সেটা গোপন রাখার কোন প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না তারা। ইসলাম পন্থীদের প্রতি ঘৃনা, সেটা যদি থেকেও থাকে সেটা কি একই কাতারে পড়ে? আলী সিনা কি কোন ইসলাম পন্থীর নাম ঠিকানা খুঁজে বেড়িয়ে প্রাণ নাশের চেষ্টায় ব্যস্ত? আলী সিনার ঘৃনা শুধু লেখায় সীমিত আর এই ঘৃনার লক্ষ্য ইসলাম নামের এই মারাত্মক ডক্ট্রিনের প্রতি। কোন অহিংস লোকের প্রতি নয়। এই দুই ঘৃনাকে সমান করে দেখাটা কোন ধরনের মুক্তমনার পরিচায়ক? ৪=৫ বলাটা কি যুক্তিবাদীদের সাজে?
২। যুক্তি আর আবেগকে যুক্তিবাদীদের দাবীদাররাই মিলিয়ে ফেললে আর চরমপন্থীদের দোষ দেওয়া যাবে কিভাবে
উপরের কথার পুনরুক্তি করে বলতে হয় ইসলাম পন্থীদের “আবেগ” আর ইস্লামের সমালোচকদের “আবেগ” কি একই পর্যায়ে পড়ে? এ দুটোর পার্থক্য এমন সূক্ষ্ণ কিছু না, যে বোঝ খুব শক্ত। যুক্তিবাদীরা কেমন করে দুটোকে এক করে দেখতে পারেন? ইসলাম পন্থীদের “আবেগ” সহিংস্তার পূর্বলক্ষণ। ইসলাম সমালোচকদের আবেগ এই ইসলামী ডক্ট্রিন যা কিনা ইসলাম পন্থীদের এই সহিংস আবেগে চালিত করে তার প্রতি। আর এটা লেখনীতেই সীমাবদ্ধ। কি করে যুক্তিবাদীর দাবীদার হয়ে দুটোকে এক করে দেখলেন সেটাই অবাক হবার ব্যাপার।
৩। এক ধর্মের লোকের অন্য ধর্মের লোকের সমালোচনা করার অধিকার নাই।
এটা অনেকটা এক চোরের আরেক চোরের চৌর্যবৃত্তির সমালোচনার পর্যায়ে পড়ে
এমন ঢালাও মন্তব্য করাটা কোন ধরনের যুক্তি/যুক্তিবাদ? সমালোচনাটা যদি যুক্তিপূর্ণ হয় তাহলে আপত্তি কোথায়। সব ধর্মই যুক্তির নিরীখে হাস্যকর হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বায়াপের তাদের পার্থক্য ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম বলে কোরাণের কথা খোদ আল্লার আর কোরান বিশ্বাস করা আবশ্যিক, সমালোচন করেল তার শাস্তি হবে । খোদ মোহাম্মদ এটা দেখিয়ে গেছেন। আর কোন ধর্মের বইএ এরকম কথা বলএ আর তা বলবত করারা প্রতিজ্ঞা দেয়? হিন্দুরা গীতা/বেদের সমালোচনা করলে অন্য হিন্দুরা তার প্রাণ নাশের চেষ্টায় লিপ্ত হয়না। একই কথা বলা যায় খ্রীষ্টান্দের বেলায়ও। কাজেই কোন হিন্দু বা খ্রীষ্টান এই তফাত টার কথাটা বলেন তাহলে সেটা কি অযৌক্তিক হবে? এটা মনে রাখা দরকার যে খ্রীষ্টান হলেই যে কাউকে বাইবেল্র সব অধ্যায় বিশ্বাস করতে হবে তা নয়। হিন্দুদের বেলায় ও একই কথা বলা যায়। কেউ শুধু যীশু খ্রীষ্টের বানী তে (অর্থাত Matthews বা Luke) বিশ্বাস করলেই খ্রীষ্টান হতে পারেন। মুসলিমদের বেলায় পুরো কোরান বিশ্বাস না করলে মুসলমন হয়া যায় না। কাজেই কোন খ্রীষ্টান কোরানের আট দিনে বিশ্ব সৃষ্টির, বা মাটির দ্বারা আদম সৃষ্টির সমালোচনা করলে ভন্ডামী হবে না, কারণ তিনি নিজেও বাইবেলের(অর্থাৎ Genesis) সৃষ্টি তত্ত্ব বিশ্বাস নাও করতে পারেন।
৪। বিশুদ্ধ নাস্তিক যিনি, তার কাছে সব ধর্মই সমান, তার কোন পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে না
এর উত্তরে উপরে আমার সব মন্তব্যই দেয়া যেতে পারে। বিশুদ্ধ নাস্তিক যদি যুক্তিবাদী হন তাহলে তিনি যুক্তির দ্বারাই সব ধর্মের তুলনামূলক পাঠ আর সমালোচনা করবেন। সবই সমান এই ধরণের অযৌক্তিক পূর্বসিদ্ধান্ত নিয়ে হাত পা গুটিয়ে থাকবেন না।
যাযাবর জসীম
পৃথিবী খুব ছোট একটা ছেলে। সবেমাত্র তিনি ম্যাট্রিক পাশ করলেন (কংগ্রাচুলেশন পৃথিবী :rose: )। সম্ভবতঃ তিনিই মুক্তমনা ব্লগের সর্বকনিষ্ঠ ব্লগার। অথচ তার লেখায় এবং চিন্তাভাবনায় আমি যে পরিমাণ পরিণত বিচার বুদ্ধির ছাপ দেখি, তা দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটে লেখা অনেক লেখকদের লেখাতেই দেখি না। এটা খুবই নৈরাশ্যজনক যে অনেকেই ঘৃণা এবং সমালোচনার পার্থক্য করতে পারেন না; ধার্মিকদের ঘৃণার বিপরীতে তারাও ঘৃণা তৈরি করেন। এমনো দেখেছি কেউ কেউ পাইকারিভাবে বোমা মেরে পৃথিবীর সকল মুসলমানদের মেরে ফেলার কথাও লিখেছেন, কেউ কেউ আবার বলেছিলেন, ‘সকল মুসলমানই আমাদের শত্রু’ – এ জাতীয় কথাবার্তা। আর লেখায় নানাবিধ বিশেষণের ব্যবহারের কথা না হয় বাদই দিলাম। যে লেখা শেষ পর্যন্ত ঘৃণা আর বিশেষণের চারপাশেই ঘুর ঘুর করতে থাকে তা আর মানোত্তীর্ণ লেখা হয়ে উঠে না। এই ব্যাপারটি মনে রাখতে হবে।
হ্যা, সমালোচনা আর ঘৃণার পার্থক্য করতে পারেন বলেই রিচার্ড ডকিন্স এবং ইবনে ওয়ারেরা স্কলারলি বই লিখতে পারেন। কেবল কে বা কাহারা উন্মাদ, ভন্ড, বিকৃতরুচি, পিগ ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করে লিখতে থাকলে চটকদার জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়, কিন্তু সে লেখাগুলো কখনোই বই হয়ে উঠে না। কেবল মিডিয়া আমাদের সেন্সর করছে, আমাদের লেখা ছাপাচ্ছে না – এগুলো বলে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া যায় না।
মুক্তমনা সবসময়ই গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়, বিদ্বেষ নয়। লেখায় জাতিগত বিদ্বেষ প্রকাশ পাওয়ায় অতীতে কয়েকজনকে সতর্কও করা হয়েছে এডমিনের তরফ থেকে। এর চেয়েও কঠোর পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে, এগুলো প্রাজ্ঞ সদস্যরা দেখেছেন।
শত বাধা বিপত্তি পেরিয়েও মুক্তমনা লেখকেরা প্রতি বছরই বিভিন্ন বিষয়ের উপর বই প্রকাশ করে চলেছেন, তা কিন্তু সবাই দেখছেন। ‘ মিডিয়া আমাদের সেন্সর করছে, আমাদের লেখা ছাপাচ্ছে না’ বলে কেবল খিস্তি খেউর করে বসে থাকেনি। স্কলারলি লেখা একটি অনুপম শিল্প। ক্রমাগত প্রচেষ্টায় সেটা অর্জন করতে হয়, খিস্তি খেউরে নয়।
পৃথিবীকে আবারো ধন্যবাদ।
@পৃথিবী,
এস. এস. সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি পৃথিবীকে। তুমি বয়সে যতখানি ছোট ঠিক ততখানি বেশী পরিপক্ক তোমার চিন্তা চেতনায়। বাংলা ব্লগারদের বেশীরভাগেরই তোমার কাছ থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। তোমার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। :rose2:
সমসাময়িক ফোরামগুলোয় অনেকদিন পর এমন সুক্ষ্ণ একটা বিষয়ের উপর সংক্ষিপ্ত কিন্তু চমৎকার বিশ্লেষনাত্মক ও যুক্তিপূর্ণ একটা লেখা পড়লাম। ভাল লাগল। ধন্যবাদ, পৃথিবী।
ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে, আগে নিজেদের মন থেকে ঘৃণাকে ছেঁটে ফেলতে হবে। প্রতিটি ধার্মিকএর ই সমস্যা এই যে তারা পেঁয়াজের মতন। ওপরে বিনয়ী, দাতা-কিন্ত খোঁসাটা ছাড়ালে অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণার ঝাঁঝ বেড়তে থাকে। নাস্তিকদের মধ্যেও অনেকেই প্রকাশ্যে ঘৃণা করেন ধার্মিকদের। এসব পরিহার করা উচিত।
@বিপ্লব পাল,
আমি সাধারনভাবে মোটামুটি দেখেছি যে ধার্মিকেরা নাস্তিকদের প্রতি এক ধরনের বদ্ধ ধারনা নিয়ে থাকেন যে নাস্তিক মানেই পশু সমতূল্য ভয়াবহ কোন মানবগোষ্ঠী, যারা ইশ্বরের সরাসরি শত্রু, এবং পরকালে তাদের কোনই নিস্তার নেই।
তেমনি কোন কোন নাস্তিকের আবার ধারনা থাকে যে ধার্মিক মানেই বদ্ধ, গোঁড়া, যাবতীয় প্রগতির পথে অন্তরায়। ধার্মিকদের গায়েব করে দিতে পারলেই দুনিয়ায় স্বর্গসুখ কায়েম হইয়ে যাবে।
দুটো ধারনাই অত্যন্ত ভ্রান্ত বলার অপেক্ষা রাখে না।
– খুবই সত্য কথা। আজকাল বেশ কিছু ধার্মিক এই অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে অনেক কষ্ট করে হলেও অন্য ধর্ম সম্পর্কে কিছু অন্তত প্রকাশ্যে বলেন না। কিছুদিন আগে মাওলানা সাঈদীর একটি ওয়াজের ভিডীও দেখছিলাম; যাতে উনি অত্যন্ত উদার মনে ঘোষনা করছেন যে হিন্দু বা অন্য ধর্ম সম্পর্কে তিনি কোন খারাপ কথা বলেন না, তাদের ও তিনি শ্রদ্ধা করেন। ইসলাম ধর্ম কেউ মন থেকে মেনে নিলে এমন ধরনের কথা বলা ভন্ডামীই বলতে হবে। ইসলাম ধর্ম যেখানে হিন্দু ধর্মকে কোনভাবেই স্বীকৃতি দেয় না সেখানে সে ধর্মের প্রতি উদাসীন থাকা যাবে কিভাবে? কেন স্বীকৃতি দেয় না সেটা তো বলতেই হবে, মানে দাঁড়ায় কেন সেই ধর্ম খারাপ বয়ান করতেই হবে।
@আদিল মাহমুদ,
মাওলানা সাঈদীর উক্তিটি অবিশ্বাস্য মনে হয় নি। যারা উনার সম্বন্ধে জানেন, তারা ভাল করেই জানেন উনি দশ কথা বললে তাতে,শুধু পরষ্পরবিরোধীতাই দেখা যায়। উনার বই গুলো ঘাঁটলেই তা পাওয়া যায়।
@আদিল মাহমুদ,
আমার মনে হয় “কোন কোন ধার্মিকেরা কিংবা অনেক ধার্মিকেরা” বললে কথাটা ঠিক হবে, যেভাবে নাস্তিকদের মনোভাব নিয়ে পরের বাক্যটাতে বলেছেন।
এটা ঠিক বলেছেন। তবে আমার মনে হয় এধরনের “চরমপন্থী” নাস্তিকের সংখ্যা অত্যন্ত কম।
মনে হয় বিপ্লব পাল এটা ঠিক বলেননি। আমার মনে হয় যারা অন্য ধর্মকে মন থেকে ঘৃণা করেন তারা ঐ খোঁসা টোসা পরে থাকেননা। পরাটা প্রয়োজনও মনে করেননা। তবে এধরনের দ্বিচারী লোক কিছু থাকতেই পারে। কিন্তু আমার মনে হয়না এটা “প্রতিটি ধার্মিকএর” সমস্যা।
স্বীকৃতি দেওয়া বলতে কি বুঝাচ্ছেন পরিষ্কার নয়। সব ধর্মই ত অন্য ধর্মকে ভূল মনে করে। কিন্তু অন্যের ভূল বিশ্বাস কিংবা মতামতের প্রতি একধরনের শ্রদ্ধাশীলতা সব সভ্য সমাজের সৌজন্যবোধের একটা অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। সেই সৌজন্যবোধকে ত আমরা ঠিক ভন্ডামী বলতে পারিনা। তাছাড়া অন্য ধর্মের কিছু বিশ্বাস আর আচারকে প্রত্যাখান করলেও আবার ঐ একই ধর্মের অন্য কোন দিকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াত সম্ভব, কি বলেন?
আপনার কি মনে হয় ভারতীয় কংগ্রেস নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ, যিনি ছিলেন মনে প্রানে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, ভন্ড ছিলেন?
মোঃ হারুন উজ জামান ,
ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য। আপনি আমার যেসব কথায় মন্তব্য করেছেন তার প্রায় বেশীরভাগই আমার ব্যাক্তিগত ধারনা বা পর্যবেক্ষন; খুব বেশী যুক্তিতর্কের অবকাশ মনে হয় নেই। অন্য কারো পর্যবেক্ষনে কিছু ভিন্ন ফল আসতেই পারে, খুবই সম্ভব।
যেমন, আস্তিকেরা (এখানে আমার পরিব্যাপ্তি যেহেতু মুসলিম সমাজে, তাই আস্তিক বলতে মুসলিমদেরই বোঝাচ্ছি) নাস্তিকদের ঘৃণা করে বিষয়ে আমার পর্যবেক্ষন অনুযায়ী "কোন কোন ধার্মিক বা অনেক ধার্মিক" না বলে প্রায় সব ধার্মিক বলা ভাল বলে আমি মনে করি। অন্তত আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষন তেমনই বলে। নিঃসন্দেহে এমন কোন স্বীকৃত পরিসংখ্যান কোথাও পাওয়া যাবে না, তবে ছোট উদাহরন হিসেবে বলতে পারি যে সনাতনী ইসলামী দর্শন অনুযায়ী ইয়াহিয়া খান বা ৭১ এর রাজাকাররা পরকালে শাস্তি ভোগ করার পর একদিন না একদিন ঠিকই বেহেশত লাভ করবে, কিন্তু নাস্তিক হুমায়ুন আযাদ বা আহমেদ শরীফের কোনও গতি পরকালে হবে না, সে ওনাদের দুনিয়ায় যতই ভাল অবদান থাকুক না কেন। ইসলামী দর্শন তো আল্লাহর বিচার সম্পর্কে ষ্পষ্টতই এমন ধারনাই দেয়।
তবে চরমপন্থী নাস্তিকের সংখ্যা অত্যন্ত কম এই কথাটায় আমি পুরোপুরি একমত।
"তাছাড়া অন্য ধর্মের কিছু বিশ্বাস আর আচারকে প্রত্যাখান করলেও আবার ঐ একই ধর্মের অন্য কোন দিকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াত সম্ভব"
আদিল মাহমুদ,
কেবল ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করলে টাইমস নিউ রোমান ফন্ট ব্যবহার করুণ। অন্য সকল ক্ষেত্রে হয় সোলায়মান লিপি কিংবা ডিফল্ট ফন্ট ব্যবহার করুন।
তথাস্তু।
সোলায়মান লিপির নাম আজই প্রথম শুনলাম। ডাউনলোড করতে হবে। তবে নুতন ব্যাবস্থায় মনে হচ্ছে জবাব দিতে গেলে যাকে জবাব দেওয়া হচ্ছে তার নাম নিজ থেকে আসছে না।
আর কারো উদ্বৃতি দিতে গেলে মনে হয় একটু ঝামেলা হচ্ছে। নিজের কথাও সেখানে ঢুকে যাচ্ছে। নিজের ভুলও হতে পারে অবশ্য।
ভাই পৃথিবী,
আপনি কি জানেন কেন সমালোচনা বিদ্বেষে পরিনত হয় ? মুসলমানরা নিজেরা তাদের কোরান হাদিসকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করতে দেবে না অথচ তাদের ধমীয় সভাগুলোতে তারা ধুমসে অন্য ধর্মের সমালোচনা তো করেই ঘৃণাও ছড়ায়। তো অন্য ধর্মের লোকজন কাহাতক তা সহ্য করবে? তাদেরও তো সহ্যের একটা সীমা আছে। তারপরেও দেখুন অমুসলিমরা হয়ত ইন্টারনেটে তাদের মনের ঝাল মেটায়, কারও গলা কাটতে যায় না, শরীরে বোমা বেধে আত্মঘাতী হামলা চালাতে যায় না, কিন্তু মুসলমানরা কি করে ? আপনি ভালই তা জানেন। ইন্টারনেটের কল্যাণে ও জ্ঞান অর্জনের আগ্রহের কারনে অমুসলিমরা জেনে গেছে যে ইসলাম কোন সত্য ধর্ম না , কোরান কোন আল্লাহর কিতাব না বা মোহাম্মদ কোন আল্লাহ প্রেরিত নবী না, সে কারনেই এখন তাদের ঘৃণার বহিঃপ্রকাশটা একটু বেশী যা আগে দেখা যেত না কারন তখন তারা ইসলাম সম্পর্কে নিঃসন্দেহ ছিল না। আপনার জ্ঞাতার্থে বলি মুসলমানরা যেরকম জ্ঞান অর্জনের প্রতি তীব্র অনিহা প্রকাশ করে অন্য কোন মানুষের মধ্যে তা দেখা যায় না। আজকে সব কিছু গ্লোবাল ভিলেজের প্রেক্ষিতে চিন্তা করতে হবে। প্রায় দেড বিলিয়ন মুসলমানের অধিকাংশই জ্ঞান অর্জন না করে অজ্ঞ মূর্খ জাতি হিসাবে দুনিয়াতে বাস করে বাকী জাতি গোষ্ঠির উপর ভারবাহী জীবের মত বসে থাকবে আর মাঝে মাঝে ধর্মের নামে নানারকম ঝামেলা পাকাবে, বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে, বাকী জাতি গোষ্ঠি তা বেশীদিন সহ্য করবে না। সে পরিস্থিতি থেকেই কিন্তু ঘৃণার সৃষ্টি হচ্ছে , আপনাকে পুরো বিষয়টা গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে। বাস্তব উদারহন হিসাবে আমি বলতে পারি- আমি ব্যক্তিগত ভাবে তিনজন বন্ধুকে বাংলা কোরান উপহার দিয়েছি কারন বহুদিন ধরে অনুরোধ করার পরও তারা তা কেনেনি। আর কোরানের অর্থ না জেনেই কিন্তু তারা একশত ভাগ নিশ্চিত যে কোরান হলো আল্লাহর কিতাব। তো এর পর আমি তাদেরকে বিশ পচিশটার মত আয়াত চিহ্নিত করে দিয়েছি পড়ার জন্য। দুই মাসের বেশী হয়ে গেল , প্রতি নিয়ত ফোন করে খবর নেই তারা তা পড়েছে কিনা। আশ্চর্যের ব্যপার কি জানেন ? ঘন্টার পর ঘন্টা ফালতু আড্ডা দেয়ার সময়ের অভাব নেই কিন্তু আজও তারা কেউ সেই আয়াত গুলো পড়ার সময় করে উঠতে পারেনি। অথচ তারা পেশায় কেউ কলেজ শিক্ষক, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এবার বুঝেছেন মুসলিম মানসিকতা ? এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে কি আমরা অন্যান্য অগ্রসরমান জাতগোষ্ঠীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারব ? না পারলে তারা কতদিন আমাদের ভার বহন করবে ? বুঝতে হবে- আজকের বিশ্ব গ্রাম পরিবেশে ইচ্ছে করলেই আমরা যেমন খুশী থাকতে পারি না। বাকী দুনিয়া কিভাবে চলছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে বিবর্তন বাদ তত্ত্বের মত আমরা কিন্তু আমাদের বেচে থাকার অক্ষমতার জন্য সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবো অথবা যদি অন্য জাতি গোষ্ঠির বেচে থাকার পথে আমরা বাধা হয়ে দাড়াই তাহলে তারাই কিন্তু তাদের বেচে থাকার জন্য আমাদেরকে বিনাশ করে দেবে। শুনতে খারাপ লাগলেই এটাই বাস্তব আর এটাই পৃথিবীতে ঘটে চলেছে অনাদি কাল থেকে। মুসলমানরা যত তাড়াতাড়ি বিষয়টা বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল।
@ভবঘুরে,
ভাই, আপনার কথা ঠিক আছে। কিন্তু ঘৃণার জবাব ঘৃনা দিয়ে দিলে তাদের সাথে আমাদের আর কি পার্থক্য থাকল? পাগলা কুকুরে কামড়ালে কি আপনিও পাগলা কুকুরকে কামড়াতে যান? আপনার কথা মেনেই বলছি- ঘৃনা নয়, যুক্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়েই আমরা তাদেরকে জাগ্র্রত করতে পারি।
খুব ভাল বিষয়।
আমার প্রায়ই মনে হয় যে সমালোচনা আর বিদ্বেষের পার্থক্য কোথায় তা অনেকেই ধরতে পারেন না। যুক্তি আর আবেগকে যুক্তিবাদীদের দাবীদাররাই মিলিয়ে ফেললে আর চরমপন্থীদের দোষ দেওয়া যাবে কিভাবে?
আমারো মনে হয় যে ঐ ধরনের হেট সাইটগুলো আসলে যুক্তিবাদীদেরই ক্ষতি করছে। এ ধরনের সাইটগুলিতে হয়ত সদস্যরা নিজেদের গায়ের ঝাল মেটাতে পারে, তবে ধার্মিক কেউ এসব সাইট দেখলে আরো তাদের ঈমান শক্ত হবে। ফেইথ ফ্রীডম সাইটে আমি যে ধরনের লেখার জন্য মুক্তমনায় ঢু মারা শুরু করি তেমন লেখা প্রচুর আছে, তবে পড়ার উতসাহ পাই না। যে কারনে একজন গ্রাম্য মাদ্রাসা শিক্ষিত মোল্লার থেকে ইসলামের ইতিহাস জানতে আগ্রহ বোধ করি না একই কারনে তাদের লেখাও পড়তে আগ্রহ পাই না।
তবে সমালোচনার ব্যাপারেও কিছু ধুসর এলাকা আছে। যেমন; আমরা সবাই অন্তত মুখে হলেও স্বীকার করি যে কোন জাতি তুলে কথা বলা উচিত নয়, সেটা বিদ্বেষের পর্যায়ে। কিন্তু যৌক্তিক আলোচনার জন্য কিন্তু আমরা সবাই কম বেশী হরদমই করে থাকি। নিজেরা বাংগালী হয়ে জাতি তুলে বাংগালীর সমালোচনা আমরা করি না? এটাকে কি বিদ্বেষ বলা যায়? আমার তো মনে হয় না।
@আদিল মাহমুদ,
ভাই এটা তো আত্ম-সমালোচনা। তাছাড়া আমি সচেতনমনে পাকিস্তানীদের গালাগালি করাটাও পছন্দ করি না। ছোটবেলা থেকেই মগজধোলাই খেতে খেতে ওরা বড় হয়। পাকিস্তানীরা বাঙ্গালীত্ব নিয়ে কটুক্তি করলে তখন রাগ দেখানোটা বুঝতে পারি, কিন্তু সচেতন চিত্তে একটা মগজধোলাইপ্রাপ্ত জাতিকে গালাগাল করার কোন যৌক্তিকতা দেখি না।
আরও আপত্তিকর বিষয় হল, এসব বিদ্বেষমূলক সাইট ব্যবহার করে অনেক সময় অন্য ধর্মের লোকজন মজা লুটে। আমি মনে করি, এক ধর্মের লোকের অন্য ধর্মের লোকের সমালোচনা করার অধিকার নাই। এটা অনেকটা এক চোরের আরেক চোরের চৌর্যবৃত্তির সমালোচনার পর্যায়ে পড়ে। এক্সক্লুসিভলি নাস্তিক সাইটে কিন্তু এরকম বিদ্বেষ পাবেন না। রিচার্ড ডকিন্সের ফোরামের কথাই ধরুন, ওখানকার পরিবেশ বেশ সুন্দর। ইবনে ওয়ারাকের সেন্টার ফর ইনকোয়ারি ওয়েবসাইটটাও দেখতে পারেন।
@পৃথিবী,
সুন্দর পয়েন্টের জন্য ধন্যবাদ।
আমি মনে করি যে শুধু আত্মসমালোচনাই নয়, ভাষা সংযত হলে এবং তথ্য/যুক্তি পূর্ন হলে সমালোচনা হতেই পারে। এখানে মনে হয় মূল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে সংযত ভাষার ব্যাবহার।
সংযত ও উপযুক্ত ভাষা ব্যাবহার করলে একই কথা ভিন্ন ভাবে বলা যেতে পারে।
এটাও ঠিক যে বিশুদ্ধ নাস্তিক যিনি, তার কাছে সব ধর্মই সমান, তার কোন পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে না। যদিও হয়ত কোন পরিস্থিতির কারনে কোন বিশেষ ধর্মের প্রতি তার সমালোচনা সীমিত থাকতে পারে।
@পৃথিবী,
আপনার লেখার সাথে একমত, তবে আপনার মন্তব্যের উপরের প্রথম দুটি বাক্যের সাথে একমত হতে পারলাম না। আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের নামগুলো পেয়েছি, নাম দেখে আমরা মোটামুটিভাবে ধারণা করতে পারি কে কোন ধর্মের। কিন্তু যারা নাস্তিক তারা তো কোন ধর্মে বিশ্বাস করে না, যদিও তাদের নামগুলো থেকে মনে হতে পারে যে তারা কোন না কোন ধর্মের অন্তর্গত। তবে আপনার শেষ বাক্যটির সাথে একমত। আমি মুক্তমনায়ও খেয়াল করে দেখেছি, বহুদিনের প্রতিষ্ঠিত এবং খুব শক্তভাবে নাস্তিকতা ধারণ করেন এমন ব্যক্তিদের বেশীরভাগই প্রকাশ্যেই এ ধরণের বিদ্বেষ এর বিপক্ষে দাঁড়ান, অনেকে তো ধর্ম নিয়ে ক্যাচক্যাচানি করতেই পছন্দ করেন না। আমার মতে এভাবে বলা যেতে পারে, যারা এক ধর্মের চেয়ে আরেক ধর্মকে বেশী ভালো বলে মনে করে তাদের অন্য ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার থাকা উচিত না, কি বলেন?