জ্ঞান বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সামরিক শক্তি বা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীর কিছু সাধারন বৈশিষ্ট্য থাকে। সোনালী অতীতের স্বপ্নে বিভোর থাকা তার মধ্যে একটি। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল নিজদের অক্ষমতা বা দুরবস্থার জন্য অন্যদের দায়ী করা। অনেক রকমের কনস্পিরেসি থিওরী আবিস্কার করা এবং মিথ্যা কাল্পনিক ঘটনায় শান্তি খোজা। নিজেদের দুরবস্থার জন্য যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ নিজেই দায়ী তা তারা স্বীকার করতে চায়না।
কিছু উদাহরন দেই। আমাদের দেশে অনেকেই এখনো বলেন যে পাকিস্তান আমলই ভাল ছিল। অনেকে আবার এরকম ও বলেন যে, শায়েস্তা খার আমল ই ভাল কারন টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত। আমরা প্রায় ই বলি, যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ। প্রায়ই আমরা দেখি যে কেউ একজন স্বপ্নে দেখেছেন যে নবীজী এসে তাকে কিছু একটা নির্দেশ দিয়েছেন। সে যাতে এই নির্দেশ এর ৪০ টা কপি করে বিলাতে থাকে। এর সাথে থাকে আবার সাবধান বানী। অবিশ্বাস করলে শাস্তি আর বিলালে অশেষ পুরস্কার। আগে এসব ফটোকপি হয়ে আসত এখন আসে মেইল এ। মুসলমানরা জ্ঞান বিজ্ঞান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার ফলে বিভিন্ন রকমের এরকম আজগুবি তথ্য ও ইতিহাস বিলিয়ে তারা আত্মার শান্তি খোজে। এক হাজার বছর আগে কিছু মুসলিম বিজ্ঞানীর অবদান নিয়ে এখনো বড়াই করে (সেই বিজ্ঞানীরাও কতটা মুসলিম ছিলেন বা মুসলিম শাসক রা তাদের কি দৃষ্টিতে দেখত সে বিতর্কে নাই বা গেলাম)। কিংবা ধরুন নীল আর্মস্ট্রং এর মুসলমানিত্বের খবর ইত্যাদি। এ নিয়ে হাস্যকর ভিডিও ও আছে দেখলাম ইউটিউব এ।
এরকম আরেকটি কন্সপেরিসি থিওরী হল এপ্রিল ফুল ডে তে কিভাবে স্প্যানিশরা মুসলমানদের বোকা বানিয়েছিল তার গল্প। এই কন্সিপেসি থিওরীর ও আবার দু তিনটা ভাষ্য আছে। এই প্রবন্ধে আমরা দেখার চেষ্টা করব কন্সপিরেসি থিওরী গুলো কি। এপ্রিল ফুল এর আসল ইতিহাস কি এবং স্প্যানিশ ইসলামের ইতিহাস আসলে কি।
ইসলামিক কন্সপিরেসি থিওরীর জনপ্রিয় সংস্করণটি এরকম-
শান্তিপ্রিয় মুসলিম শাসকরা গ্রেনাডায় শান্তিপূর্ণ ভাবে রাজত্ব করে আসছিল। অত্যাচারী রাজা ফার্দিনান্দ ও শয়তান ইসাবেলের বাহিনী গ্রেনাডা আক্রমণ করে। তার গ্রাম ঘর জ্বালিয়ে ছারখার করে রাজধানীতে উপস্থিত হয়। তখন তারা ঘোষণা করে যে মুসলমানরা যদি মসজিদে আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের মারা হবে না। কিন্তু মোনাফেক ইহুদী নাসারারা মসজিদে আগুন ধরিয়ে হত্যা করে নিরপরাধ মুসলিমদের। সেদিন ছিল এপ্রিলের ১ তারিখ। মুসলিমদের এই বোকা বানানোর গল্প থেকেই নাকি এপ্রিল ফুল পালিত হয়। তবে এর স্বপক্ষে নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক প্রামাণ পাওয়া দুস্কর।
আরেকটি থিওরী হল, মুসলমানদের পরাজিত করার জন্য ইহুদী খ্রিষ্টান রা মদ ও সিগারেট পাঠানো শুরু করল। মুসলমানরা সেগুলো সেবন করে তাদের তাকওয়া থেকে দূরে সরে যায় এবং পরাজিত হয়।
সমস্যা হল বরাবরের মত এসব ইসলামি কন্সপিরেসি থিওরীর কোন তথ্যসুত্র বা রেফারেন্স নেই। তারা কোন ঐতিহাসিক সূত্রের রেফারেন্স দিয়ে এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করেন না। ঘটনার বিপরীত সূত্র দিলে বলেন যে এগুলো ইহুদী নাসারাদের দেয়া তথ্য, বিশ্বাস করতে নেই।
এবার দেখি স্প্যানিস ইসলামের আসল ইতিহাস। এ ইতিহাসে অনেক ঘটনা আছে। ৮০০ বছরের মুসলিম শাসনের অনেক উত্থান পতন আছে। আমি খুব সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি। ইউরোপে মুসলমান আগ্রাসন শুরু হয় ৭১১ সাল থেকে। বিষেশ করে আইবেরিয়ান পেনিনসুলা (আজকের স্পেন এবং পর্তুগাল) এরিয়ায় তারা দখল করতে থাকে। ৭১১ সালের ৩০ এপ্রিল মুসলিম যোদ্ধা তারিক বিন জায়ীদ প্রথম জিব্রাল্টার প্রনালীতে উপস্থিত হন। সে যুগের ইউরোপ ছিল অসংখ্য ছোট স্টেট- এ টুকরা টুকরা হওয়া। তেমন কোন বড় রাজ্যের অস্তিত্ব এই পেনিন্সুলায় ছিলনা। তারা ছিল নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যস্ত। গ্রীক ও রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংশের পর ইউরোপে একধরনের অন্ধকার অবস্থা বিরাজ করছিল। অন্যদিকে সামরিক শক্তিতে আরবদের উত্থানের যুগ। এই অবস্থায় মুসলিমরা আক্রমণ করে আইবেরিয়ান পেনিনসুলায়। এই অঞ্চলকে তারা বলত আল আন্দালুস। তারা দখল করে নেই আইবেরিয়ার একাংশ। এসময়ে তারা চার্চ ও সিনাগগ নির্মানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অমুসলিমদের উপর আরোপ করে জিজিয়া কর। তাদের অনেক রকমের যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ইউরোপের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোর ক্রমাগত আক্রমণের মোকাবেলা করতে হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত। তখন ইউরোপ আবার জেগে উঠতে শুরু করেছে। ইউরোপের রেনেসাঁর যুগ। একত্র হওয়া শুরু করেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো। ইউরোপ তখন আবিস্কার আর দেশ জয়ের নেশায় বিভোর। আর অন্যদিকে শুরু হয়েছে মুসলিমদের পতনের যুগ। উমাইয়া আমলের শেষ থেকে মুসলমানেরা নৈতিক, সামরিক সব দিক থেকে পর্যুদস্ত। মোল্লা তন্ত্র, প্রতিক্রিয়াশীলতা, বিভিন্ন মতবাদে বিভক্তি হয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি ইত্যাদি তখন চরমে। সেই চরম অবস্থা থেকে তারা আজো বের হতে পারেনি। কাজেই ইতিহাসের একটা ঘটনা সেই সময়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এসবের সমন্বয়ে বিচার করতে হবে। কে মুসলিম আর কে খ্রিষ্টান সেটা দিয়ে করলে আসল সত্য বেরোবে না।
ইতিহাসে একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। সাধারনত গড়ে একেকটি সভ্যতা তিনশ বছর করে থাকে। কম বেশি হতে পারে। চীনের মিং বংশ থেকে শুরু করে গ্রিক, রোমান, মেসেপটেমিয়ান, এমনকি মোঘল সাম্রাজ্য। ইসলামের ও অনেকটা তাই। সাফল্যের শিখরে থাকতে থাকতে তার মধ্যে বোধহয় একধরনের স্থুলতার জন্ম নেয়। শুরু হয় পতনের পালা।
দশম শতাব্দী থকেই স্পেনে শুরু হয় মুসলিম দখলদারিত্ব থেকে তাদের মাতৃভুমি রক্ষার সংগ্রাম। একে বলা হয় রিকনকোয়েস্ট। স্পেনের দুটি ক্ষুদ্র রাজ্যের প্রধান রানী ইসাবেল অফ ক্যাস্টেল এবং ফার্দিনান্দ III অব এরাগন এক হয়ে শুরু করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আক্রমণ। টানা দশ বছর এই আক্রমন চলে। শেষে বো আবদেল ( যিনি নিজেকে ষোড়শ মোহাম্মদ ঘোষণা করেছিলেন) এর সময়ে ১৪৯২ এর ২ জানুয়ারি তাদের পতন হয়। বো আবদেল তার দলবলসহ আত্মসমর্পন করেন। তার পরেও প্রায় ১৬শ শতক পর্যন্ত মুসলমানদের অবস্থান ছিল গ্রেনাডায়। মুসলমান দখলদারিত্ব মুক্তির এই দিনটি সেখানে প্রতিবছর এখনো পালিত হয়।
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে এপ্রিল ফুল এর সাথে ইসলামি কন্সপেরিসি থিওরীর আসলে কোন যোগাযোগ নেই।
এবার দেখা যাক এপ্রিল ফুল এর ইতিহাস নিয়ে গল্পগুলো কিরকম।
এপ্রিল ফুল এর কোন প্রামান্য ইতিহাস পাওয়া যায়না। কেন শুরু হয়েছিল, কবে থেকে,কোথায় এসব নিয়ে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত আছে। বহুল প্রচলিত গল্পটি ফ্রান্সের। ১৫৫৬ সালে রাজা গ্রেগরি, জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন করেন। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মার্চের ২৫ থেকে এপ্রিলের ১ তারিখ পর্যন্ত নতুন বছরের উৎসব পালন করা হত। কিন্তু গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন বছর হয়ে যায় ১ জানুয়ারি। সে যুগে তথ্য আজকের মত এত দ্রুত পৌঁছানো যেতনা। ফলে দুরবর্তি অনেক এলাকার মানুষ নতুন তারিখ সম্পর্কে জানত না। অনেকেই এর ফলে বিড়ম্বনার শিকার হত, এবং রাজধানীর মানুষের হাস্যরসের উপাদান হত। এই ঘটনা থেকেই আস্তে আস্তে এপ্রিল ফুল পালনের রেওয়াজ ঘটে।
অনেকে বলেন যে, এপ্রিল ফুল পালনের ঘটনা আরো আগের। ইংরেজ কবি চসারের ক্যান্টারবেরি টেইলস এর একটি ছত্রে এর উল্লেখ আছে। কেউ কেউ আবার রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনায় এর উৎস সন্ধান করেন।
ফ্রান্সে পয়সন দ্য আভ্রিল পালিত হয় এবং এর সাথে সম্পর্ক আছে মাছের। এপ্রিলের শুরুর দিকে ডিম ফুটে মাছের বাচ্চা বের হয়। এই শিশু মাছগুলোকে সহজে বোকা বানিয়ে ধরা যায়। সেজন্য তারা ১ এপ্রিল পালন করে পয়সন দ্য এভ্রিল অর্থাৎ এপ্রিলের মাছ। সে দিন বাচ্চারা অন্য বাচ্চাদের পিঠে কাগজের মাছ ঝুলিয়ে দেয় তাদের অজান্তে। যখন অন্যরা দেখে তখন বলে ওঠে পয়সন দ্য আভ্রিল বলে চিৎকার করে।
এরকম আরো বিভিন্ন মজার গল্প বা উপকথা আছে এপ্রিল ফুল নিয়ে।
যে কারনেই উদ্ভুত হোক না কেন, এপ্রিল ফুল নির্মল বিনোদনের উৎস হয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। একদিন তারা সিরিয়াসনেস ভুলে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে। অনেক বোকা বানানোর গল্প বিখ্যাত হয়ে আছে।
ইসলামে হাস্যরসের স্থান খুবই কম। তারা সব কিছুতেই সিরিয়াস। পরকালে দোজখের চিন্তা আর আল্লার গোলামীর চেষ্টায় হাস্যরস একধরনের সাইডলাইনের জিনিস ইসলামে। তার একটি বড় প্রমান আমাদের দেশে কার্টুনিস্ট আরিফের কার্টুন। কাজেই, ধর্মকারী সাইটের একটি বহুল ব্যবহৃত উক্তি — দেয়ার ইজ নো হিউমার ইন রিলিজিয়ন।
তথ্যসুত্রঃ
museumofhoaxes.com
Wikipedia
Anseringislam.com
Spanish Islam by Reinhart Dozy
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস- মোহাম্মদ হাসান।
ইসাবেলা তো ভাল কিছু করেনি; দুটো জাতিকে পৃথিবীর একটি ভূখন্ড থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। ইহুদী ও মুরদের জাতিগত ও ধর্মগত ধোলাইয়ের মত অপরাধের দায় কখনোই ইসাবেলা এড়াতে পারবে না। বিংশ শতাব্দীর হিটলারের জাতিবিদ্বেষের সাথে পঞ্চদশ শতাব্দীর ইসাবেলার জাতিবিদ্বেষের পার্থক্য কি? নারী হিসেবে নারীদের প্রশংসাও তো এই মহিলার প্রাপ্য নয়।
জার্মানীর হিটলার আর স্পেনের ইসাবেলার পর-জাতিবিদ্বেষের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? মানবতাবাদী হিসেবে ম্যারানোস, মরিস্কোস শব্দগুলো ভুলে গেলে তো আর চলবে না।
১৪৯৬ সালে ইসাবেলার সম্মতিতে আর্চবিশপ তালাভ্যারা আলহামরা ডিক্রি জারি করে। এই ডিক্রি অনুসারে স্পেনের ইহুদী ও মুসলিমদের হয় ক্যাথলিক ক্রিশ্চান ধর্মগ্রহণ নয়তো দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। ১৫০২ সালে ইসাবেলা ইহুদী-মুসলিম ও অন্যান্য ক্রিশ্চানদের বাধ্যতামূলক ক্যাথলিক ক্রিশ্চান ধর্মে ধর্মান্তরিত হবার অথবা, দেশত্যাগের আদেশ দিয়ে সরকারী ফরমান জারি করে।
গ্রানাডার পতনের পর প্রায় এক লক্ষ মুসলমান মারা যায়, চার লক্ষ মুসলমান দেশত্যাগে বাধ্য হয় ও তিন লক্ষ মুসলমান ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়। ইহুদীদের ইতিহাস তো আরো করুণ। দুই লক্ষ মারা যায়, এক লক্ষ ইহুদী ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়, এক লক্ষ ইহুদী দেশত্যাগ করে।(সূত্র: Spain 1469 – 1714; A Society of Conflict, লেখক: Henry Kamen)
…বলেছেন সবুজ পাহাড়ের রাজা
অনে এ এক দেরীতে লেখাটা পড়লাম।
মজার ব্যাপার হচ্ছে যে আগে কোন সময়ই কিন্তু আমি মুসলমান দের সাথে এপ্রিল ফুলের বিরোধ সম্পর্কে জানতাম না। এবারই ১ এপ্রিলের একটা ঘটনায় আমি প্রথম জানতে পারি যে এপ্রিল ফুল ইসলাম বিরোধী!!!! আমি আমার এক বন্ধু কে এপ্রিল ফুলের জন্য মোবাইলে মেসেজ পাঠালে সে এর উত্তরে লিখে যে এপ্রিল ফুল ইসলাম বিরোধী। আমি ইকটু আশ্চর্য হই।তবে তখন আর কিছু বলি নি। এর দু তিন দিন পরই বাসায় পরে থাকা একটা বই “ধর্মের সহিংস ইতিহাস” অকারনে ঘাটতে গিয়ে আবার ঐ এপ্রিল ফুল আমার সামনে চলে আসে। ওখান থেকে স্পেনের ঐ ঘটনার বিস্তারিত জানলাম। তার পর আর সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই নি। এরপর আজকে আবার মুক্তমনার সাথে আমার কয়েকদিনের গ্যাপের মাঝের লেখা গুলো পড়তে গিয়ে আপনার লেখাটা পেলাম……!! কি আজব ব্যপার…।! এত দিন কিছুই জানতাম না, আর এখন পরপর তিনটা অকারন অঘটনের মধ্যে দিয়ে এই আজগুবি ঘটনার আজব চেহারাটা জানলাম!!!
এপ্রিল ফুল এবার আমারেই বেকুব বানালো!!
বকলমের ঐতিহাসিক লেখাটি দেরীতে ( :-X ) পড়ে পুরোপুরি ধন্য হলাম।
আমার সহকর্মী মালয়শীয়ান এক মুসলিম ভদ্র মহিলা অন্যান্য সহকর্মীর সামনে আমাকে এপ্রিল ফুলের বোকা বানাল। এপ্রিল ফুল মালয়শীয়াতে বিস্তৃত আগে জানতাম না। আমাকে বোকা করে অনেক মজা করল। ভদ্র মহিলা অনেক ধার্মিক। প্রায়ই প্রশ্ন করে, আমি কেন নামাজে যাই না।
@অপু,
অনেক ধার্মিক মানুষ প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জানেন না। কারন বেশিরভাগ মানুষই কোরান হাদীসের মানে বুঝে পড়েনা। তা না হলে আরো কতশত আফগানিস্তানের সূচনা হত কে জানে।
@বকলম,
একটা কথার মত কথা বলেছেন। যে টুকু শান্তি এখনো মুসলমানদের মধ্যে আমরা দেখছি, তা তাদের ঐ আরবী না বুঝে কোরান পড়ার কারনে।
কলম ছাড়াও যে বকলম লিখতে পারেন, তা প্রথম লেখাতেই প্রমাণ করে দিয়েছেন। :yes: :yes:
আমার ধারনা, মোহাম্মদ নিজেও কল্পনা করে নাই যে সারা দুনিয়াতে তার এত উম্মত হবে, মারা মারি কাটা কাটি করবে। তবে এপ্রিল ফুল ঘটনা যদি সত্যও হয় মুসলমানদের প্রচারিত তথ্য মোতাবেক, তাতে খারাপ কিছু হয়েছে মনে হয় না। মুসলমানরা যদি ইসলাম প্রচারের জন্য ছল বল কল কৌশল সব প্রয়োগ করতে পারে, তার মধ্যে নির্বিচার খুন খারাবিও , তাহলে দখলদার মুসলমানদেরকে স্পেন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে যদি স্পেনীয়রা এটুকু ছলনা করে মুসলমানদেরকে মেরে থাকে তাহলে অন্যায় কিছু হয়েছে মনে হয় না। একবার কল্পনা করে দেখেছেন, যদি মুসলমানরা পুরো ইউরোপ দখল করত, ইউরোপিয়ানরা সব ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলমান হতো- আজকে আমরা সভ্যতার এই পর্যায়ে আসতে পারতাম? আমরা মনে হয় এখন আবার সেই গুহার যুগে ফিরে যেতাম। আল্লাহ যে পরম করুনাময় এটা কিন্তু তার একটা উদাহরন। যে তিনি মুসলমানদেরকে স্পেন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করে গোটা মানব জাতিকে এ ধরনের অসভ্যতার হাত থেকে রক্ষা করেছেন। মানবজাতি ও সভ্যতা বড় বাচা বেচে গেছে। বলেন, আমীন।
@ভবঘুরে,
😀
কথাগুলো খুবই সত্যি। নবীজি একটা হাদিসে বলেছেন যে ইহজগতে হাসবে তার জন্যে আখেরাতে রয়েছে অফুরন্ত কান্না।
আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, মুসলমানরা তাদের দুর্ভাগ্যের জন্য সর্বদাই অন্যকে, বিশেষতঃ ইহুদিদেরকে দায়ী করে থাকে। এর কারন হলো নবিজীও সর্বদা তাঁর অসাফল্যের জন্য মক্কার আঅরবদের অথবা মদিনার ইহুদেদের অথবা খৃষ্টানদের দায়ী করতেন।
তাই শত শত বছর যাবত মুসলমানরা নবিজীর ঐ সুন্নত পালন করে আসছেন। এতে অবাক হবার কিছু নাই।
@আবুল কাশেম,
মি. আবুল কাশেম, আমি মুরাদ, আপনারে তো একটার পর একটা ইমেল পাঠাইতাছি, আপনি ১০০% ভুল কুরআনের contradiction গুলা নিয়া নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। যদি পারেন ইমেলের উত্তর দিয়েন।
নবীজি একটা হাদিসে বলেছেন যে ইহজগতে হাসবে তার জন্যে আখেরাতে রয়েছে অফুরন্ত কান্না।
আমারে কি এই হাদিসটা পাঠাতে পারবেন। ইমেল [email protected]
@মুরাদ,
মিঃ মুরাদ, আপনাকে ধন্যবাদ।
আচ্ছা, আপনি-ই ঐ ই-মেল গুলোর লেখক। আপনি কষ্ট করে আমার লেখা কোরানের contradiction এর উপর মন্তব্য করেছেন এ-জন্য আবারো ধন্যবাদ জানাচ্চি। আমি দঃখিত আপনার লেখয় আমি তেমন কিছু পাইনি যার উত্তর দেয়া প্রয়োজন মনে করেছি। এছাড়া আমার লেখাতে আমি ওয়েব সাইটের লিঙ্ক দিয়েছি যা থেকে পাঠকেরা আপনি যেই ধরনের উত্তর দিয়েছেন সেই টা পড়তে পারেন—এতে জাকির নায়েকের উত্তরও আছে। আমার মনে হয়েছে আপনার উত্তর গুলো ঐ সব সাইট-এর কপি।
যাই হোক, আমি আপনাকে পরামর্শ দেব আপনার যা লেখার আছে, সেগুলো গুছিয়ে লিখুন এবং মুক্তমনায় প্রকাশ করুন। তারপর আমি আপনার লেখার প্রতিউত্তর দেব। পাঠকেরাও এতে সুফল পাবে। আপনিও লাভবান হবেন–কারন আপনার সুচিন্তিত মতবাদ নিশ্চয় পাঠকদের প্রশংসা পাবে।
চলুন, এইভাবে আমরা প্রকৃত বিতর্কে অবস্থান নেই। শুধু ই-মেল দিয়ে বিতর্ক হতে পারনা। বিতর্কের জন্য দর্শক, শ্রোতা, অথবা পাঠকের প্রয়োজন দরকার। তা না হলে কে বিচার করবে যে কার মতামত অধিক জোরালো এবং যুক্তিযুক্ত।
তাই আমি মনে করছিনা আপনাকে ই-মেলের মাধ্যমে আমি বিতর্কের জবাব দেব। যাই হোক, ভদ্রতার খাতিরে আমি আপনাকে ই-মেল পাঠালাম, আপনার ই-মেলের ঠিকানায়।
আচ্ছা, এবার দেখুন, হাদিসটা–
সাহী বুখারি ভলুম ৮, বুক ৭৬, হাদিস ৪৯২, ৪৯৩
Narrated Abu Huraira:
Allah’s Apostle said, “If you knew that which I know you would laugh little and weep much.”
Narrated Anas:
The Prophet said, “If you knew that which I know, you would laugh little and weep much.”
এ ছাড়াও দেখতে পারেন নিম্ন হাদিসগুলো
সাহী বুখারি 2.18.154, 156, 157; 7.62.148, 149
@আবুল কাশেম,
তারা হাসবে কীভাবে? ক্রীতদাসের আবার হাসি কী?
বকলমের কাছ থেকে এক্কেবারে আস্ত একটা লেখা, তাও আবার এপ্রিল ফুলস ডে তে, খুবই সন্দেহজনক ঠেকছে কিন্তু 🙂
@বন্যাপা,
কোন বিষয়টা সন্দেহজনক? লেখার বিষয়বস্তু নাকি লেখাটা আদৌ বকলম লিখেছে কিনা তা?
আমি ই লিখেছি, কসম খোদার।
বকলম এতোদিনে হারানো কলম খুজে পেয়েছেন! সুন্দর লেখা, অনেক কিছু জানতে পারলাম 🙂
http://www.islamtomorrow.com/lies/fools.asp
বিস্তারিত আছে এপরিল ফুল সর্ম্পকে
ধন্যবাদ
আমিও একটা সাবাস বলি। এপ্রিল ফুলের ব্যাপারটায় ছোট বেলায় বেশ মজা পেতাম, বন্ধুবান্ধবরা মিলে বেশ দুষ্টামিও করতাম।
তারপর ফোর, ফাইভে পড়ার সময় স্কুলের বার্ষিক পত্রিকায় মসজিদে হত্যা করার ফলে এই দিনের উদ্ভব নিয়ে একটা লেখা আসলো, তারপর থেকে এপ্রিল ফুলকে এড়িয়ে চলি।
বিজ্ঞানময় কিতাব পড়ে যে স্কেপটিসিজমের সূচনা আমার জীবনে, তার আরেকটি অংশ যুক্ত হলো আজকে। ব্যাপারটা এতোই মজার যে, আজ পর্যন্ত সকল ধরণের ধ্যান ধারণায় সংশয় প্রকাশ করা মাত্র দেখা যাচ্ছে, কী বিশাল ফাপর কথাগুলো, অথচ কী অবলিলায় লক্ষ, কোটি মানুষ সেটা দিনের পর দিনে বিশ্বাস করে আছে।
ধর্মকারীতে একবারই ব্যবহার হয়েছে কথাটা। বলা যেতে পারে, ধর্মকারী সাইটে, আয়াতউল্লাহ খোমিনিকে উদ্ধৃত করা সেই কথাটি, দেয়ার ইজ নো হিউমার ইন ইসলাম।
পণ্ডিতি মাফ দিয়েন।
@রায়হান আবীর,
মাফ করনের মালিক আল্লাহ। আমরাতো উসিলা মাত্র 😉
এই গল্প প্রথম শুনি সেভেনে, স্কুলের ধর্ম শিক্ষকের মুখে। অবিশ্বাসের প্রশ্নই আসে না। এই গল্প যে ভূয়া বা অত্যন্ত সন্দেহজনক তা জানতে পারলাম মাত্র গতকাল। এ ধরনের অজস্ব গল্পগাঁথা আমাদের ছেলেবেলার থেকেই মাথায় গেড়ে দেওয়া হয়। যারা এসব করেন তারা একবারও ভাবেন না যে এসব গল্পের কয়েকটি মিথ্যা প্রমান হলে যে বাকিগুলি, হয়ত কিছু সত্যও হতে পারে সেগুলি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে।
আমাদের ধর্ম শিক্ষক হয়ত ইতিহাস পড়ে জানেননি, তিনিও তার মুরুব্বীদের থেকে জেনেছেন এবং অন্ধভাবে বিশ্বাসও করে নিয়েছেন। ধর্ম বিষয়ে যেহেতু সন্দেহবাদী হতে নেই তাই কেউই এসব নিয়ে প্রশ্ন করেন না। ধর্মীয় জগতে কূট প্রশ্ন করা কখনোই ভাল চোখে দেখা হয় না। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। দীর্ঘজীবি হচ্ছে এসব গালগল্প।
শিক্ষিত লোকেরাও চট করে বিশ্বাস করে ফেলেন কোথায় মাছের পেটে আল্লাহর নাম পাওয়া গেছে, আজমীর শরিফের আকাশে খাজা বাবার বিমূর্ত চেহারা ভেসে উঠেছে, গণেশের মূর্তি দুধ খাচ্ছে এসব। যারা বুঝতে পারেন বা জানেন যে এসব মিথ্যা, তারাও তেমন প্রতিবাদ করেন না। হয়ত ধরে নেন যে ধর্মের স্বার্থে এসব গালগল্প মিথ্যা প্রচারনা খারাপ নয়।
@আদিল ভাই,
এটা আমার মনে হয় অজ্ঞানতার সাথে হীনমন্যতার মিশ্রণের ফল
@বকলম,
অনেকটা তাই। তবে আরো বেশ কিছু বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ধার্মিকরা ধর্মীয় কল্পকাহিনী যেমন হনুমানের লংকা জয়, নবীজির নারী পশুর মত বোরাক পাখিতে চড়ে বেহেশত ভ্রমন এইগুলি সব অন্ধভাবেই বিশ্বাস করেন।
তবে মুসলমানদের আরো কিছু ফ্যাক্টর সাথে যোগ হয়েছে। নিজেরা শত শত বছর ধরে পিছিয়ে পড়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছে তীব্র হীনমন্যতার। যেটা খুবই স্বাভাবিক। একদিকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি, সভ্যতা হিসেবে দাবী, আরেকদিকে সম্পূর্ন উলটা বাস্তবতা। এই হীনমন্যতা থেকে বিধর্মীদের প্রতি ঘৃণা আসে, যার পরিনতি এইসব গল্প বানানো। এখানে শিক্ষিত লোকেরাও ধরা খেয়ে যায়।
আমাদের সেই ধর্ম শিক্ষকই একবার গল্প করেছিলেন কিভাবে এই জমানায়ও আল্লাহ মাঝে মাঝে তার মুমিন বান্দাদের গায়েবী উপায়ে সরাসরি সাহায্য করেন। ৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধে নাকি ভারতীয় পাইলটরা পরে বলেছে যে তারা পাক স্থাপনার উপর বোমা মারলে দেখা গেছে লম্বা সাদা কাপড় পরা কে একজন মাটিতে দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় সেই বোমা সরিয়ে দিচ্ছে। কখনো বা আবার তেমন চরিত্রকে দেখা গেছে ভারতীয়দের ছোঁড়া গুলি মাঝপথে ধরে নিজের জোব্বার পকেটে ভরে ফেলতে।
তবে তেমন ব্যাপার ৭১ সালে ঘটেনি কারন সেসময় মুসলিমরাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এ জাতীয় গল্প গাঁথার কোন শেষ নেই।
এটা এপ্রিল ফুলের জোক না তো :-/
@পৃথিবী,
মুসলিমদের গল্পগুলো কিন্তু আসলেই এপ্রিল ফুলের জোকস 🙂
সাবাস! এপ্রিলের ১ তারিখে এপ্রিল ফুল নিয়ে জম্পেশ পোস্ট।
প্রথম লেখাতেই দেখি বকলম সাহেবের বাজিমাত।
আরো এ ধরণের লেখা চাই 🙂
@অভিজিৎ দা,
সব নতুন লেখককেই আপনি এধরনের প্রসংশাসূচক বাক্য বলেন।
আমি কিন্তু গলিনি 😀
@বকলম,
নতুন আর থাকলেন কোথায়, ‘ঝানু নারিকেল’ হইয়া বইসা আছেন। সেজন্যই মনে হয় গলেননি। নারিকেল ঝুনা হয়ে গেলে, গলানো না – বাড়ি মেরে ফাটাতে হবে 🙂