দর্শন শাস্ত্রের প্রান্তিক টুকিটাকি বিষয়গুলো নিয়ে একে একে ছোট ছোট কিছু পোস্ট লেখা শুরু করেছিলাম মুক্তমনায় । এর প্রেক্ষিতে এর আগে একটি পোস্টে নিবেদন করা হয়েছিলো – ‘নাস্তিকতাও একটি ধর্ম হলে’ নামক নিবন্ধটি। এর পরে একই ধারাবাহিকতায় এসেছিলো ‘অক্কামের ক্ষুর এবং বাহুল্যময় ঈশ্বর‘।
আজকে প্রকাশিত হল ফ্রেড্রিক হয়েলের বোয়িং ৭৪৭। হয়েলের এই বোয়িং উপমা বর্তমান কালের বিজ্ঞানের দর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তি।
:line:
ফ্রেড্রিক হয়েলের বোয়িং ৭৪৭
ছবি: ফ্রেড্রিক হয়েল (১৯১৫-২০০১)
ফ্রেড্রিক হয়েল (১৯১৫-২০০১) ছিলেন বিগত শতকের এক নামকরা জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী। আজকে যে আমরা মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং তত্ত্বের কথা শুনি,সেই ‘বিগ ব্যাং’ শব্দটি তার কাছ থেকেই প্রথম উচ্চারিত হয়েছিলো ১৯৪৯ সালের একটা রেডিও প্রোগ্রামে, যদিও বিগ ব্যাং শব্দটি তিনি তখন উচ্চারণ করেছিলেন অনেকটাই সমালোচনা আর শ্লেষের সুরে। শ্লেষ থাকার করণ, সে সময় বিগ ব্যাং-এর সাথে সমানে পাল্লা দিচ্ছিলো হয়েলেরই নিজস্ব একটি তত্ত্ব; যাকে বিজ্ঞানীরা ডাকতেন স্থিতিশীল অবস্থা তত্ত্ব (steady state theory) নামে। ১৯৬৪ সালে আর্নো পেনজিয়াস এবং রবার্ট উইলসন মহাজাগতিক পশ্চাদপট বিকিরণ[1] খুঁজে পাবার আগ পর্যন্ত কিন্তু পৃথিবীর বহু নামকরা পদার্থবিজ্ঞানীই স্থিতিশীল অবস্থা তত্ত্বের প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। ফ্রেডরিক হয়েল ছিলেন সেই স্থিতিশীল তত্ত্বের মূল প্রবক্তা, যদিও তার এই বিখ্যাত তত্ত্বের সাথে জড়িত ছিলেন আর কয়েকজন নামকরা পদার্থবিদ – হারমান বন্দি, থমাস গোল্ড এবং পরবর্তীকালে এক ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী – জয়ন্ত নারলিকর। স্থিতিশীল তত্ত্ব ছাড়াও স্টেলার নিউক্লিওসিন্থেসিস সহ জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক কিছুতেই ফ্রেডরিক হয়েলের অবদান ছিলো। জীবনের শেষ বয়সে তিনি তার ছেলের সাথে মিলে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখায়ও হাত দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ‘স্যার’ উপাধি পেয়েছিলেন, পুরস্কার পেয়েছিলেন রয়েল এস্ট্রোনমিকাল সোসাইটি থেকেও, এ ছাড়া আরো অন্যান্য ছোট-খাট পুরস্কার তো আছেই। কাজেই ফ্রেড্রিক হয়েলের সুনাম কম ছিলো না তার সময়ে ।
কিন্তু বড় বিজ্ঞানী হলে কি হবে তিনি জায়গায় বেজায়গায় নাক গলিয়ে নিজের মতামত দিতে পছন্দ করতেন। এমনি একটা ঘটনা ঘটেছিলো যখন বিজ্ঞানীরা বিগত শতকের মাঝামাঝি সময়ে বেশ কটি ডায়নোসর এবং পাখির মধ্যবর্তী জীবাশ্ম আর্কিওপটেরিক্সের ফসিল খুঁজে পাচ্ছিলেন। হয়েল হঠাৎ করেই বলে বসলেন আর্কিওপটেরিক্সের ফসিলগুলো নাকি সব জালিয়াতি। অথচ, আর্কিওপটেরিক্স কিন্তু বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন কিছু ছিলো না সে সময়। আর্কিওপটেরিক্সের প্রথম পালকের ফসিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো বহু আগেই – সেই ১৮৬০ সালে। এমনকি ডারউইন তার ‘অরিজিন অব স্পিশিজ’ গ্রন্থের চতুর্থ সংস্করণে আর্কিওপটেরিক্সের উল্লেখও করেছিলেন। ডারউইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী টিএইচ হাক্সলি তখনই মন্তব্য করেছিলেন যে, হাবভাবে মনে হচ্ছে আধুনিক পাখিগুলো সব থেরোপড ডায়নোসর থেকেই এসেছে; আর আর্কিওপটেরিক্সের মত ফসিলগুলো এই যুক্তির পেছনে জোরালো প্রমাণ হিসেবে হাজির হয়েছে[2]’। তারপর ১৮৬১ সালের দিকে জার্মানীর ল্যাংগেনালথিমে[3] পাওয়া গেলো আর্কিওপটেরিক্সের পূর্ণাংগ কঙ্কাল। একই পরিক্রমায় ১৮৭৭ সালে ব্লুমেনবার্গে[4], ১৮৫৫ সালে রিডিনবার্গে, ১৯৫৮ সালে ল্যাংগেনালথিমে[5], ১৯৫১ সালে ওয়ার্কারসজেলে, ১৯৬০ সালে জার্মানীর ইৎসচাটে, ১৯৯১ সালে ল্যাংগেনালথিমে, ২০০৫ এবং ২০০৬ এ জার্মানীতে আর্কিওপটেরিক্সের বিভিন্ন ফসিল উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিকেরা আর জীববিজ্ঞানীরা কষ্ট করে ফসিল পেলে কি হবে, বিজ্ঞানী হয়েল তার সহকর্মী গণিতবিদ চন্দ্র বিক্রমসিংহের সাথে মিলে হঠাৎ করেই ১৯৮৫ সালে তুমুল সোরগোল শুরু করলেন এই বলে যে, আর্কিওপটেরিক্সের ফসিলগুলো সব নাকি বানোয়াট। তারা বললেন, ফসিলগুলো নাকি এত চমৎকারভাবে সংরক্ষিত থাকার কথা না,মধ্যবর্তী স্তরে নিশ্চয় আধুনিক পাখির পালক ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, ইত্যাদি। ব্রিটিশ ন্যাচারাল হিস্ট্রি জাদুঘরের বিজ্ঞানীরা হয়েলের প্রতিটি সন্দেহ পরীক্ষা করে দেখলেন, এবং তাদের পরীক্ষায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হল ফসিলগুলো আর্কিওপটেরিক্সেরই। এমনি একটি পরীক্ষায় অ্যালেন চ্যারিগ সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরা স্ল্যাবের কিনারাগুলোর মাপ নিয়ে দেখালেন আর্কিওপটেরিক্সের দুটি পাললিক শিলাস্তরের স্ল্যাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে একে অপরের স্তরে খাপ খেয়ে যায়, ফলে মধ্যবর্তী স্তরে আধুনিক পাখির পালক থাকার ব্যাপার এখানে নেই। তাদের সম্পূর্ণ পরীক্ষার ফলাফল সায়েন্স জার্নালের ১৯৮৬ সালের ২৩২ সংখ্যায় ‘ আর্কিওপটেরিক্স কোন জোচ্চুরি নয়’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়[6]। হয়েল যখন ফসিলের সত্যতা নিয়ে সোরগোল করছিলেন, ঠিক সেসময়ই জার্মানীর সোলনহফেনে ১৯৮৭ সালে আরেকটি আর্কিওপটেরিক্সের ফসিল পাওয়া যায়, আর বিজ্ঞানীরা সবাই মিলে পুরো প্রক্রিয়াটিকে বস্তুনিষ্ঠভাবে অবলোকন করার সুযোগ পান।কিভাবে পাখির পালকের ছাপ পাললিক শিলায় পড়ে, কিভাবে শিলাস্তরে চির ধরে সবকিছুই বিজ্ঞানীরা আরো একবার ভালমতো যাচাই করার সুযোগ পেয়ে যান। দেখা গেল আর্কিওপটেরিক্সের এই সোলনহফেন নমুনাটিও অন্যগুলোর মতই একই ফলাফল নিয়ে আসলো। এই আবিস্কারের ব্যাপারটিও সায়েন্স জার্নালে আর্কিওপটেরিক্সের সত্যতার প্রমাণ হিসেবে আবির্ভুত হল[7] আর আর্কিওপটেরিক্স নিয়ে হয়েলের যাবতীয় ‘কন্সপিরেসি তত্ত্বের’সমাধি রচনা করলো ।
ছবি: আর্কিওপটেরিক্স (১৮৭৭) : বার্লিন স্পেসিমেন
আসলে অধ্যাপক হয়েল পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত হলেও জীববিজ্ঞান কিংবা প্রত্নতত্ত্বের খুঁটিনাটি বিষয়ে সম্যকভাবে অবহিত ছিলেন না; সত্যি বলতে কি – বিবর্তন কিংবা পাললিক শিলায় কিভাবে ফসিল সংগৃহীত হয়,কিভাবে পালকের ছাপ স্ল্যাবে পড়ে এগুলো নিয়ে পরিস্কার জ্ঞান হয়েলের ছিলো না। কিন্তু সেই অপরিচ্ছন্ন জ্ঞান নিয়েই বিশেষজ্ঞীয় এলাকায় সেঁদিয়ে গিয়েছিলেন, তর্ক করে ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন পোড় খাওয়া জীববিজ্ঞানীদের খুঁজে পাওয়া কষ্টার্জিত সাক্ষ্য-প্রমাণগুলোকে। অল্পবিদ্যা কিভাবে ভয়ঙ্করি হয়ে উঠে শেষপর্যন্ত নিজেকেই খেলো করে তুলে হয়েলের দৃষ্টান্তই বড় প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে টিম বেড়া তার ‘ইভোলুশন এন্ড দ্য মিথ অব ক্রিয়েশনিজম’ বইয়ে খুব সেজন্য চাঁছাছোলা ভাবেই বলেন[8] –
Hoyle and Wickramasinghe, it should be noted, had no experience in biology or paleontology, do not understand natural selection, and have espoused a variety of anti-evolutionary ideas. Because these allegations, regardless of their lack of merit, could give aid and comfort to the creationists…. Hoyle’s motive was unclear, but he would not for a moment brook a comparable challenge in his own area of expertise. His claim demonstrates what can happen when a scientist makes uninformed remarks about a subject in which he is unqualified.
অধ্যাপক টিমবেড়ার কথায় অত্যুক্তি নেই। হয়েলের অভিযোগ কিংবা বিশ্লেষণগুলোতে কোন সারবত্তা না থাকলেও সৃষ্টিবাদীদের জন্য সেগুলো তখন ভালই রসদ যুগিয়েছিলো।ধর্মবাদী সাইটগুলো বুঝে না বুঝে হয়েলের ভুল অভিযোগগুলোই পুনরাবৃত্ত করে চললো (এবং কিছু ক্ষেত্রে এখনো চলছে)।তারা খোঁজ করে দেখারও চেষ্টা করেননি যে হয়েলের ভিত্তিহীন অভিযোগগুলো ন্যাচারাল হিস্ট্রি জাদুঘরের বিজ্ঞানীরা (যারা এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখেন) ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলেন সে সময়ই।
হয়েল শুধু আর্কিওপটেরিক্স নিয়েই জল ঘোলা করেননি, করেছিলেন আরো একটা বড় ব্যাপারে, যেটা নিয়ে সৃষ্টিবাদীরা এখনো যার পর নাই উচ্ছ্বসিত। হয়েল তার ‘নিজস্ব গণনা’ থেকে একসময় সিদ্ধান্তে চলে এসেছিলেন যে, সরল অবস্থা থেকে উচ্চতর জটিল জীবের সৃষ্টি অনেকটা নাকি টর্নেডোর ঝড়ে জাঙ্কইয়ার্ডে পড়ে থাকা লোহার জঞ্জালের স্তুপ থেকে এক লহমায় বোয়িং ৭৪৭ বিমান তৈরি হয়ে যাওয়ার মত অবাস্তব!
ছবি: হয়েল ধারণা করেছিলেন যে, সরল অবস্থা থেকে উচ্চতর জটিল জীবের সৃষ্টি অনেকটা নাকি টর্নেডোর ঝড়ে জাঙ্কইয়ার্ডের স্তুপ থেকে বোয়িং ৭৪৭ বিমান তৈরি হয়ে যাওয়ার মত অসম্ভাব্য কিছু!
মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, এই ‘জঞ্জাল থেকে বোয়িং ৭৪৭ বিমান’ তৈরি হবার উপমা হয়েল কোন বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে লেখেননি।তবে শোনা যায় তিনি ১৯৮২ সালের একটি সেমিনারে প্রাণের রাসায়নিক উৎপত্তি তত্ত্বের বিপরীতে তার প্যান্সপারমিয়া তত্ত্বের সাফাই গাইতে গিয়ে একথা বলেছিলেন। ইস্টের সাথে বোয়িং ৭৪৭ এর তুলনা করার কারণ হিসেবে বলেছিলেন দুটোরই নাকি সমান সংখ্যক প্রত্যঙ্গ, এবং জটিলতার স্তরেও বেশ মিল আছে[9]। যাহোক ফ্রেড হয়েলের এই ‘যুক্তিমালা’পরবর্তীতে তার একটি বই ‘দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইউনিভার্স'(১৯৮৩)-এ সন্নিবেশিত হয়েছিলো এভাবে[10] –
ধরা যাক একটি জাঙ্কইয়ার্ডে বোয়িং ৭৪৭ বিমানের সকল অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হঠাৎ একটি ঘূর্ণিঝড় (whirlwind)এসে জাঙ্কইয়ার্ডের উপর দিয়ে বয়ে চলে গেলো। সেই ঘূর্ণিঝড়ে পুরো বোয়িং ৭৪৭ তৈরি হয়ে উড়ার জন্য প্রস্তুত অবস্থায় চলে আসার সম্ভাবনা বা চান্স কতটুকু?
তারপর থেকেই সৃষ্টিতাত্ত্বিকেরা জায়গায় বেজায়গায় হয়েলের উপমাকে ‘বিবর্তনের বিরুদ্ধে এক মোক্ষম অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন।
শোনা যায় হয়েল ব্যক্তিগত জীবনে নাস্তিক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সরল অবস্থা থেকে উচ্চতর জীবের উৎপত্তির সম্ভাবনা গণনা করতে গিয়ে দেখেন সেটার চান্স এতোই কম (১০৪০০০০ ভাগের ১ ভাগ) যে, তাতে নাকি তার ‘নাস্তিকতার বিশ্বাস টলে গিয়েছিলো’ এবং হয়েল ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন, এবং সে সময়ই তিনি ঘূর্ণিঝড়ে বোয়িং ৭৪৭ তৈরি হবার উপমা এনে দেখানোর চেষ্টা করেন যে,সরল অবস্থা থেকে জটিল জীবের উদ্ভব নাকি প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার, ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ নাকি লাগবেই। এই গুজবের পেছনে আমি কোন সত্যতা খুঁজে না পেলেও (যদিও ব্যাপারটা সত্য হলেও খুব বেশি অবাক হব না) সম্প্রতি বইপত্র ঘাটার ফলে একটা মজার জিনিস বেরিয়ে এসেছে। হয়েল কিন্তু কোন সৃষ্টিবাদী বা ক্রিয়েশনিস্ট ছিলেন না। বরং তার অনেক প্রবন্ধ এবং বই পত্রেই তিনি বিবর্তন তত্ত্বের উপর প্রগাঢ় আস্থা ব্যক্ত করেছেন। যেমন, তার ‘অরিজিন অব লাইফ ইন দ্য ইউনিভার্স’বইয়ে তিনি খুব স্পষ্ট করেই বলেন[11] –
We are inescapably the result of a long heritage of learning, adaptation, mutation and evolution, the product of a history which predates our birth as a biological species and stretches back over many thousand millennia…. Darwin’s theory, which is now accepted without dissent, is the cornerstone of modern biology. Our own links with the simplest forms of microbial life are well-nigh proven.
এমনকি তার জীবনের একেবারে শেষদিককার বইগুলোতেও তিনি সৃষ্টিবাদকে প্রত্যাখ্যান করে লিখেছিলেন যে, কোন প্রকৃত বিজ্ঞানী সৃষ্টিবাদে বিশ্বাস করতে পারেননা[12]। তারপরেও সৃষ্টিবাদীরা আর ধর্মবাদীরা হয়েলের বোয়িং ৭৪৭ উপমা নিয়ে যার পর নাই উচ্ছ্বসিত। এ যেন ঈশ্বরের অস্তিত্বের অকাট্য প্রমাণ তাদের কাছে। জাকির নায়েক হারুন ইয়াহিয়ারা তো আছেই, আমি শুনেছি সম্প্রতি শিবিরও নাকি তাদের কিছু মুখপত্রে আর লিফলেটে ‘সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ’ হিসেবে হয়েলের যুক্তিমালা ব্যবহার করা শুরু করেছে। বোঝা যাচ্ছে কেবল কোরান হাদিস কিংবা অনুরূপ ধর্মগ্রন্থের আয়াতের বিভিন্ন ব্যাখ্যা আর অপব্যাখ্যা হাজির করে আর কাজ চলছে না, শিবিরকে দারস্থ হতে হচ্ছে বিবর্তন-বিশ্বাসী এবং সম্ভবত পাঁড় নাস্তিক হয়েলের উপমার কাছে। সম্প্রতি রায়হান আবীর মুক্তমনায় তার একটি প্রবন্ধে যেমন লিখেছিলেন ‘প্যালের ঘড়ির মৃত্যু নেই’ ঠিক তেমনি হয়তো বলা যেতে পারে ‘হয়েলের বোয়িং বিমানের মৃত্যু নেই’! প্যালের ঘড়ি আর হয়েলের বোয়িং যেন পরষ্পরের পরিপূরক; তামাক আর ফিল্টার – দু’জনে দুজনার!
আমার আজকের প্রবন্ধটি অবশ্য হয়েল সাহেব আস্তিক নাকি নাস্তিক, সৃষ্টিবাদী না অসৃষ্টিবাদী তা নিয়ে নরক গুলজার করার জন্য লেখা নয়,বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে তার আর্গুমেন্টগুলোকে যাচাই করে দেখা যে সত্যই হয়লের বোয়িং উপমা বিবর্তনের বিরুদ্ধে কোন শক্তিশালী যুক্তি হিসেবে গ্রহনীয় হতে পারে কিনা। তবে সেখানে ঢুকবার আগে একটি ব্যাপার পরিস্কার বোধ হয় করে নেয়া দরকার যে, আধুনিক বিশ্বের প্রায় সকল জীববিজ্ঞানীরাই হয়েলের এই বোয়িং উপমাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন[13]। তারা মনে করেন হয়েলের এই বোয়িং ৭৪৭ উপমা বিবর্তনের সাথে তুলনীয় হতে পারে না। কারণ –
- বিবর্তন টর্নেডো বা ঘুর্ণিঝড়ের মত কোন আকস্মিক ব্যাপার নয়। এটা কোন দৈবাৎ প্রক্রিয়াও নয়, যে কেবল চান্স দিয়ে একে পরিমাপ এবং ব্যাখ্যা করতে হবে।
- টর্নেডো দিয়ে চূড়ান্ত কোন কিছু তৈরি করার চেষ্টা আসলে একধাপে ঘটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোন কিছু বানানোর চেষ্টা। আর অন্যদিকে বিবর্তন ঘটে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বহু ধাপে পরিমিত ভিন্নতার মধ্য দিয়ে ক্রমবর্ধমান নির্বাচন (Cumulative Selection)-এর মাধ্যমে।
- প্রকৃতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সরঞ্জাম (যেমন জাঙ্কইয়ার্ডে রাখা বিমানের বিভিন্ন অংশ) জোড়া লেগে লেগে কিন্তু বিবর্তন ঘটে না। বিবর্তন ঘটে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রভাবে শুধুমাত্র বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হওয়ার মাধ্যমে।
- বোয়িং বিমানের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত দ্রব্য থাকে স্থির। আর বোয়িং বিমান বানানোর পেছনে থাকে নকশাকারীর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। অপরদিকে বিবর্তন কিন্তু কোন ভবিষ্যতের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য মাথায় রেখে কাজ করে না, চূড়ান্ত লক্ষ্যের ব্যাপারে থাকে একেবারেই উদাসীন।
প্রথম দুটো পয়েন্ট আরেকটু বিস্তৃত করা যাক। অনেকেই ভেবে থাকেন প্রথমিকভাবে মিউটেশনের ফলে বিভিন্ন প্রকারণের অভ্যুদয় যেহেতু ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্তভাবে (randomly) ঘটে থাকে,বিবর্তন বোধ হয় কেবল চান্সের খেলা। আসলে কিন্তু তা নয় মোটেই। বিবর্তনের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন। প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যাপারটা কিন্তু কোন কোন চান্স নয়। প্রাথমিক পরিব্যক্তি (মিউটেশন) গুলো রান্ডম হতে পারে, কিন্তু তার পর বৈশিষ্ট্যগুলো ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি কিন্তু র্যান্ডম নয়, বরং ডিটারমিনিস্টিক, কারণ তা নির্ভর করে বিদ্যমান উপযুক্ত পরিবেশের উপর।সেজন্যই বিবর্তন কেবল চান্সের খেলা নয়[14]। পরিব্যক্তিগুলো র্যান্ডম হবার পরেও কিভাবে তা বিবর্তনকে একটি নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তা জানতে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ If Mutation is Random, Why Does Evolution Occur at All ‘ প্রবন্ধটি পড়া যেতে পারে। প্রবন্ধটিতে দুটি চমৎকার উদাহরণ হাজির করে বঝানো হয়েছে – Mutation was random, but selection provided a direction to the evolution.
এ প্রসঙ্গে আমাদের চোখের অভ্যুদয় এবং বিকাশের ব্যাপারটা চিন্তা করি। আজকে আমরা চোখের যে পূর্নাংগ গঠন দেখে বিস্মিত হই, তা কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি, বরং বহুকাল ধরে ক্রমান্বয়ে ঘটতে থাকা ছোট ছোট পরিবর্তনের ফলশ্রুতি হিসেবে বিকাশ লাভ করেছে। খুব সম্ভবতঃ আলোর প্রতি সংবেদনশীল একধরনের স্নায়বিক কোষ থেকে প্রথম চোখের বিকাশ শুরু হয়। তারপর হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হতে হতে আজকে তারা এই রূপ গ্রহন করেছে। কতগুলো সংবেদনশীল কোষকে কাপের মত অবতলে যদি ঠিকমতভাবে সাজানো যায় তাহলে যে নতুন একটি আদি-চোখের উদ্ভব হয় তার পক্ষে আলোর দিক নির্ণয় করা সম্ভব হয়ে উঠে। এখন যদি কাপটির ধারগুলো কোনভাবে বন্ধ করা যায়, তা হলে আধুনিক পিন হোল ক্যামেরার মতো চোখের উৎপত্তি ঘটবে।
ছবি: চোখের বিবর্তন : চোখের মত একটি জটিল প্রত্যঙ্গ সহজেই আলোর প্রতি সংবেদনশীল খুব সরল স্নায়বিক কোষ বিশিষ্ট ‘আই-স্পট’ থেকে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পরিমিত ভিন্নতার মধ্য দিয়ে বিবর্তিত হতে পারে। যখনই এ ধরনের কোন পরিবর্তন – যা কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা প্রদান করে, তা ধীরে ধীরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জনপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে।
তারপরে এক সময় গতি নির্ধারণ করতে পারে এমন একটি অক্ষিপট বা রঙ বুঝতে পারে এমন কোনের মতো অংশ বিকাশ লাভ করে, তা হলে উন্নত একটি চোখের সৃষ্টি হবে। এরপর যদি বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইরিস ডায়াফ্রামের উৎপত্তি ঘটে তা হলে চোখের ভেতরে কতখানি আলো ঢুকবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এরপর আস্তে আস্তে যদি লেন্সের উদ্ভব ঘটে তা তাকে আলোর সমন্বয় এবং ফোকাস করতে সহায়তা করবে, আর এর ফলে চোখের উপযোগিতা আরো বাড়বে। এভাবেই সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রভাবে উপযোগিতা নির্ধারণ করে চোখের ক্রমান্বয়িক পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা এখনও আমাদের চারপাশে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত বিভিন্ন ধাপের চোখের অস্তিত্ব দেখতে পাই, অনেক আদিম প্রাণীর মধ্যে এখনও বিভিন্ন রকমের এবং স্তরের আদি-চোখের অস্তিত্ব দেখা যায়।
কিছু এককোষী জীবে একটা আলোক-সংবেদনশীল জায়গা আছে যা দিয়ে সে আলোর দিক সম্পর্কে খুব সামান্যই ধারণা করতে পারে, আবার কিছু কৃমির মধ্যে এই আলোক-সংবেদনশীল কোষগুলি একটি ছোট অবতল কাপের মধ্যে বসানো থাকে যা দিয়ে সে আরেকটু ভালোভাবে দিক নির্ণয় করতে সক্ষম হয়।
ছবি: প্রকৃতিতে পাওয়া বিভিন্ন ধরণের চোখ- খুব সরল ধরণের চোখ থেকে শুরু করে জটিল চোখের অস্তিত্ব এই প্রকৃতিতেই আছে, আর তা সবই তৈরি হয়েছে বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় [24]।
সমতলের উপর বসানো নামমাত্র আলোক সংবেদনশীলতা থেকে শুরু করে পিনহোল ক্যামেরা সদৃশ চোখ কিংবা মেরুদন্ডী প্রাণীদের অত্যন্ত উন্নত চোখ পর্যন্ত সব ধাপের চোখই দেখা যায় আমাদের চারপাশে (অন্ধ গুহা মাছ মেক্সিকান টেট্রা থেকে শুরু করে সালামানদরে, নটিলাস, প্লানারিয়াম, অ্যান্টার্কটিক ক্রিল, মৌমাছি, মানুষের চোখ ইত্যাদি), এবং তা দিয়েই বিবর্তন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা করা সম্ভব। বিবর্তন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে ক্রমবর্ধমান নির্বাচনের মাধ্যমে না ঘটলে আমরা প্রকৃতিতে এত বিভিন্ন ধরণের চোখের অস্তিত্ব পেতাম না। সম্প্রতি সুইডিশ অধ্যাপক ড্যান এরিক নিলসন এবং পেলগার গবেষণার মাধ্যমে[15] বের করে দেখিয়েছেন যে, আদি সমতল পিগমেন্টেড আলোক সংবেদনশীল সেল থেকে শুরু করে প্রায় ২০০০ ধাপের মধ্যে পরবর্তীতে মানুষের চোখের মতো জটিল যন্ত্রে পরিবর্তিত হতে পারে। তাদের করা সিমুলেশনের সচিত্র ফলাফল নীচে দেয়া হল –
ছবি: অধ্যাপক ড্যান এরিক নিলসন এবং পেলগারের সিমুলেশনের ফলাফল, তারা দেখিয়েছেন আদি সমতল আলোক সংবেদনশীল সেল থেকে শুরু করে ৪০০ ধাপ পরে তা রেটিনাল পিটের আকার ধারণ করে, ১০০০ ধাপ পরে তা আকার নেয় পিন-হোল ক্যামেরার মত আকৃতির, আর প্রায় ২০০০ ধাপ পরে অক্টোপাসের মত জটিল চোখের উদ্ভব ঘটে। জীববিজ্ঞানী মার্ক রিডলীর সাইটে ব্যাপারটি এনিমেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে, এখানে।
এবার হয়েলের সম্ভাবনার মারপ্যাচ নিয়ে একটু গভীরে ঢুকি। হয়েলের এই জঞ্জাল থেকে বোয়িং উপমা খুব মৌলিক কিছু নয়। অসীম বানর তত্ত্ব (Infinite monkey theorem) নামে একটা ব্যাপার দর্শনের আঙ্গিনায় প্রচলিত ছিলোই। হয়েল সেটাকে বোয়িং মোড়কে মুড়ে কোষীয় প্রাণবিজ্ঞানের আঙ্গিনায় ব্যবহার করতে চেয়েছেন। আমি ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ নামের বইয়ে এই অসীম বানর তত্ত্ব নিয়ে ছোট করে লিখেছিলাম[16]। ব্যাপারটা পাঠকের সামনে পুনর্বার একটু ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন বোধ করছি।
অসীম বানর তত্ত্ব হচ্ছে এমন একটা ধারণা – যেখানে মনে করা হয় যে, অফুরন্ত সময় দেয়া হলে আপাতঃ দৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব সমস্ত ব্যাপারও ঘটে যেতে পারে সম্ভাবনার নিয়মেই। যেমন, একটা বানরকে যদি টাইপরাইটারের সামনে বসিয়ে দেয়া হয়, তবে তার অন্ধভাবে টাইপিং করা থেকে শেক্সপিয়পিয়রের হ্যামলেট বেরিয়ে আসলে আসতেও পারে, যদি বানরটিকে অফুরন্ত সময় দেয়া হয় টাইপিং চালিয়ে যাবার জন্য। হয়েল এই বানরের বিক্ষিপ্তভাবে টাইপ করে হ্যামলেট লেখার উপমাকেই প্রাকৃতিক উপায়ে জটিল জীবজগত তৈরির ব্যাখ্যায় নিয়ে গেছেন, কেবল পার্থক্য এই যে, তিনি শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের বদলে ব্যবহার করেছেন বোয়িং ৭৪৭।
হয়েলের ধারণা সত্য হলে সরল অবস্থা হতে প্রাকৃতিকভাবে জটিল জীবজগতের উদ্ভব অনেকটা হঠাৎ লটারী জিতে কোটিপতি হওয়ার মতই একটা ব্যাপার যেন। কম সম্ভাবনার ঘটনা যে ঘটে না তা নয়। অহরহই তো ঘটছে। ভূমিকম্পে বাড়ী-ঘর ধবসে পড়ার পরও অনেক সময়ই দেখা গেছে প্রায় ‘অলৌকিক’ভাবেই ভগ্নস্তুপের নীচে কেউ বেঁচে আছেন। এই যে হাইতিতে বিশাল ভূমিকম্প হল কিছুদিন আগে, প্রায় পনেরো দিন, এমনকি একটি ক্ষেত্রে ২৭ দিন পরেও জীবন্ত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে[17]। নিউইয়র্ক টাইমস-এ একবার এক মহিলাকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল যিনি দু দুবার নিউজার্সি লটারির টিকেট জিতেছিলেন। তারা সম্ভাবনা হিসেব করে দেখেছিলেন ১৭ ট্রিলিয়নে ১। এত কম সম্ভাবনার ব্যাপারও ঘটছে। কাজেই সম্ভাবনার নিরিখেই প্রাণের উৎপত্তি এবং সর্বোপরি জটিল জীবজগতের উদ্ভব যত কম সম্ভাবনার ঘটনাই হোক না কেন,ঘটতে পারেই।
কিন্তু জীববিজ্ঞানীদের কাছে স্রেফ সম্ভাবনার মার-প্যাঁচ থেকেও ভাল উত্তর আছে, প্রাণের আবির্ভাব এবং বিবর্তনের পেছনে। আর সেই উত্তরটি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন। আর পূর্বেই ব্যাখ্যা করা হয়ছে যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন জিনিসটা কোন চান্সের খেলা নয়। এটা একটা নন- র্যান্ডম ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া। সেজন্যই ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার গ্রন্থে অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স পরিস্কারভাবেই বলেন[18] –
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটা ডারউইনীয় বিবর্তন কে র্যান্ডম মনে করা শুধু ভুলই নয়, চূড়ান্ত বিচারে অসত্য। এটা সত্যের পুরোপুরি বিপরীত। চান্স জিনিসটা ডারউইনীয় রেসিপিতে খুব ছোট একটা উপাদান, কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ বড় উপাদানটির নাম ক্রমবর্ধমান নির্বাচন – যেটা একেবারেই নন-র্যান্ডম।
একটা উদাহরণ দেই। আমাদের গ্যালাক্সিতে ১০১১ টি তারা আর ১০৬০ টি ইলেকট্রন আছে। দৈবাৎ এ ইলেকট্রনগুলো একত্রিত হয়ে আমাদের গ্যালাক্সি, কোটি কোটি তারা, আমাদের পৃথিবী এবং শেষ পর্যন্ত এই একটি মাত্র গ্রহে উপযুক্ত পরিবেশে প্রথম জীবকোষটি গঠনের সম্ভাবনা কত? আমাদের গ্যালাক্সি এবং পৃথিবীর যে বয়স, তা কি ওই সম্ভাবনা সফল করার জন্য যথেষ্ট? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। কারণ এই সম্ভাবনা মাপতে গেলে যে হাজারটা চলক নিয়ে কাজ করতে হয়, তার অনেকগুলো সম্বন্ধে আমরা এখনও অনেক কিছু ঠিকমত জানি না। তারপরেও এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, হয়েলের মত শুধু চান্স দিয়ে পরিমাপ করে একধাপী সমাধান হাজির করলে সেটার সম্ভাবনা এতোই কম বেরুবে যে ‘জঞ্জাল থেকে বোয়িং’ হবার মতোই শোনাবে ; কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গোনায় ধরলে আর সেটা মনে হবে না। বিজ্ঞানী কেয়রেন্স-স্মিথ এমনি একটি কৃত্রিম উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটি আমাদের বুঝিয়েছিলেন ১৯৭০ সালেই।
ছবি: অনেকে ভাবেন, একটা বানরকে যদি টাইপরাইটারের সামনে বসিয়ে দেয়া হয়, তবে তার অন্ধভাবে টাইপিং করা থেকে শেক্সপিয়পিয়রের হ্যামলেট বেরিয়ে আসলে আসতেও পারে, যদি বানরটিকে অফুরন্ত সময় দেয়া হয় টাইপিং চালিয়ে যাবার জন্য।
তিনি বলেছেন, ধরা যাক একটা বানরকে জঙ্গল থেকে ধরে নিয়ে এসে টাইপরাইটারের সামনে বসিয়ে দেয়া হল। তারপর তার সামনে ডারউইনের ‘প্রজাতির উৎপত্তি’ নামক বইটি খুলে এর প্রথম বাক্যটি টাইপ করতে দেয়া হল। বাক্যটি এরকম :
When on board HMS Beagle, as a naturalist, I was much struck with certain facts in the distribution of the inhabitants of South America, and in the geological relations of the present to the past inhabitants of that continent.
এই লাইনটিতে ১৮২ টি অক্ষর আছে। বানরটিকে বলা হল এই লাইনটিকে সঠিকভাবে কাগজে ফুটিয়ে তুলতে। এখন বানর যেহেতু অক্ষর চিনে না, সেহেতু সে টাইপরাইটারের চাবি অন্ধভাবে টিপে যাবে। টিপতে টিপতে দৈবাৎ একটি শব্দ সঠিক ভাবে টাইপ হতেও পারে। কিন্তু একটা শব্দ টাইপ হলে চলবে না, পুরো বাক্যটি সঠিকভাবে যেমনিভাবে লেখা আছে – ঠিক তেমনিভাবে- টাইপ হতে হবে। মানে শুধু সবগুলো শব্দ সঠিক ভাবে টাইপ নয়, এর ধারাবাহিকতাও রাখতে হবে। এখন এই বানরটির এই বাক্যটি সঠিকভাবে টাইপ করার সম্ভাবনা কত? কত বছরের মধ্যে অন্ততঃ একবার হলেও বানরটি সঠিকভাবে বাক্যটি টাইপ করতে পারবে? সম্ভাবনার নিরিখে একটু বিচার-বিশ্লেষণ করা যাক।
মনে করা যাক যে, টাইপরাইটারটিতে ৩০ টি অক্ষর আছে এবং বানরটি প্রতি মিনিটে ৬০ টি অক্ষর টাইপ করতে পারে। শব্দের মধ্যে ফাঁক-ফোকর গুলো আর বড় হাত-ছোট হাতের অক্ষরের পার্থক্য এই গণনায় না আনলেও, দেখা গেছে পুরো বাক্যটি সঠিকভাবে টাইপ করতে সময় লাগবে ১০৮০ বছর, মানে প্রায় অনন্তকাল! কিন্তু যদি এমন হয় যে, একটি সঠিক শব্দ লেখা হবার সাথে সাথে সেটিকে আলাদা করে রাখা হয়, আর বাকী অক্ষরগুলো থেকে আবার নির্বাচন করা হয় বানরের সেই অন্ধ টাইপিং এর মাধ্যমে, তবে কিন্তু সময় অনেক কম লাকবে, তারপরও ১৭০ বছরের কম নয়। কিন্তু যদি এই নির্বাচন শব্দের উপর না হয়ে অক্ষরের উপর হয়ে থাকে (অর্থাৎ, সঠিক অক্ষরটি টাইপ হওয়ার সাথে সাথে এটিকে আলাদা করে রেখে দেয়া হয়); তবে কিন্তু সময় লাগবে মাত্র ১ ঘন্টা, ৩৩ মিনিট, ৩০ সেকেন্ড।
কাজেই উপরের উদাহরণ থেকে বুঝা যায়, প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গোনায় ধরলে ব্যাপারগুলো আর ‘অসম্ভব’ থাকে না, বরং অনেক সহজ হয়ে যায়। নিঃসন্দেহে পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ; তারপরেও উপরের উদাহরণটির কিছু ত্রুটি আছে।। একে তো এ ধরনের প্রোগ্রাম খুব সরল, তার উপর সঠিক বাক্য বা অক্ষর নির্বাচিত হবার সাথে সাথে ‘ সেটিকে আলাদা করে রাখা’র ব্যাপারটা কিন্তু সেইভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনকে প্রকাশ করে না। প্রাকৃতিক নির্বাচন জিনিসটি তাহলে কি? আমি মুক্তমনায় আমার আগের একটি লেখায় প্রাকৃতিক নির্বাচন জিনিসটাকে ব্যাখ্যা করার জন্য বেছে নিয়েছিলাম নীচের তিনটা ধাপকে[19] –
১) জনপুঞ্জের অধিবাসীরা নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করে (জীববিজ্ঞানীরা এর একটা গালভরা নাম দিয়েছেন – ‘রেপ্লিকেশন’ ) ।
২) প্রতিলিপি করতে গিয়ে দেখা যায় – প্রতিলিপি গুলো নিঁখুত হয় না, অনেক ভুল ভাল হয়ে যায় (জীববিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘মিউটেশন’ বা পরিব্যক্তি )
৩) এই ভুল ভালের কারণে প্রজন্মে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের তারতম্য ঘটে (জীববিজ্ঞানিরা বলেন ‘ভ্যারিয়েশন’ বা প্রকরণ )
কাজেই প্রতিলিপি, পরিব্যক্তি এবং প্রকারণের সমন্বয়ে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া জীবজগতের জনপুঞ্জে যে পরিবর্তনের জন্য দায়ী তাকেই আমরা প্রাকৃতিক নির্বাচন নামে অভিহিত করব। কাজেই এই ধরণের প্রাকৃতিক নির্বাচনকে গোনায় ধরলে আমাদের উপরের সমস্যাটা কিভাবে সমাধান করতে হবে? করতে হবে মিউটেশন এবং রেপ্লিকেশনের ব্যাপারটা মাথায় রেখে, এবং সেখান থেকে শুরু করে।
বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি (random mutation) এবং প্রতিলিপির (replication) ব্যাপারটা মাথায় রেখে অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স নিজ হাতে আশির দশকে একটি প্রোগ্রাম লেখেন, প্রথমে জি ডাব্লিউ বেসিক ভাষায়, এবং পরে প্যাস্কেলে, যেটাকে এখন অভিহিত করা হয় Weasel program নামে। বানর দিয়ে পুরো হ্যামলেট না লিখে তিনি হ্যামলেট এবং পলোনিয়াসের মধ্যকার কথোপকথনের একটি উদ্ধৃতি – METHINKS IT IS LIKE A WEASEL সিমুলেশনের জন্য তার প্রোগ্রামে ব্যবহার করেন। তবে তিনি অন্ধভাবে টাইপরাইটার বা কিবোর্ড টেপা কোন বানর খুঁজে পাননি, তার বদলে তিনি ব্যবহার করেছিলেন তার এগারো মাস বয়সী কন্যাকে – কম্পিউটারেরর কিবোর্ডের সামনে বসিয়ে দিয়ে। তার কন্যা কম্পিউটারের কিবোর্ডে হাত রেখে টাইপ করেছিলো নীচের অর্থহীন কিছু অক্ষরমালা –
WDLTMNLT DTJBKWIRZREZLMQCO P
এই অক্ষরমালাকেই তিনি প্রতি জেনারেশন বা প্রজন্মে প্রতিলিপি করতে দেন ডকিন্স। যেহেতু তিনি জানতেন জীবজগতে প্রতিলিপি গুলো নিঁখুত হয় না, অনেক ভুল ভাল হয়ে যায় (অর্থাৎ মিউটেশন ঘটে), ডকিন্সও প্রতিলিপিতে কিছু ‘ভুল হবার’ সুযোগ করে দেন তার সিমুলেশনে, ফলে প্রতি প্রজন্মে একটি বা দুটি অক্ষর পরিবর্তিত হয়ে যাবার সুযোগ থাকতো। তিনি এভাবে সিমুলেশন করে এগিয়ে গিয়ে অনেকটা এ ধরণের ফলাফল পেলেন –
প্রজন্ম 0১: WDLTMNLT DTJBKWIRZREZLMQCO P
প্রজন্ম 0২: WDLTMNLT DTJBSWIRZREZLMQCO P
…
প্রজন্ম ১০: MDLDMNLS ITJISWHRZREZ MECS P
…
…
প্রজন্ম ২০: MELDINLS IT ISWPRKE Z WECSEL
…
…
প্রজন্ম ৩০: METHINGS IT ISWLIKE B WECSEL
…
…
প্রজন্ম ৪০: METHINKS IT IS LIKE I WEASEL
…
প্রজন্ম ৪৩: METHINKS IT IS LIKE A WEASEL
অর্থাৎ একেবারেই অর্থহীন কিছু অক্ষরমালা থেকে ৪৩ প্রজন্ম পরে তিনি METHINKS IT IS LIKE A WEASEL এর মতো অর্থপূর্ণ বাক্যাংশ গঠিত হতে দেখলেন। ডকিন্স তার ব্লাইন্ড ওয়াচমেয়ার বইয়ে বলেছেন, তিনি যখন প্রথমে বেসিক ভাষায় প্রোগ্রামটি লিখে লাঞ্চের জন্য আধা ঘন্টার বাইরে গিয়েছিলেন,ফিরে এসে দেখেন এর মধ্যেই METHINKS IT IS LIKE A WEASEL বেরিয়ে গিয়েছিলো।পরে তিনি একই প্রোগ্রাম প্যাস্কাল ব্যবহার করে লিখেছিলেন, এবং তাতে সময় লেগেছিল মাত্র ১১ সেকেন্ড। নীচে ভিডিওগুলো থেকে ডকিন্সের এই সিমুলেশন সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=OvEl1lOc0Iw
এছাড়া সিমুলেশন প্রক্রিয়াটি বুঝার জন্য দেখা যেতে পারে এটাও –
httpv://www.youtube.com/watch?v=AXxCsHGIxww
১৯৮৪ সালের দিকে গ্লেনডেল কলেজের রিচার্ড হার্ডিসন একই ধরনের স্বতন্ত্র একটি কম্পিউটর প্রোগ্রাম তৈরী করে তাতে দেখান যে এভাবে র্যান্ডমলি ‘মিউটেশন বা পরিব্যক্তি ঘটতে দিয়ে’ শেক্সপিয়রের গোটা হ্যামলেট নাটিকাটি সারে চার দিনে একেবারে অগোছালো অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ সঠিক ভাবে পুনির্বন্যস্ত করা সম্ম্ভব[20]।
তারপরেও ডকিন্সের সিমুলেশনেরও কিছু সমালোচনা আছে। তার প্রোগ্রামও সরলতার দোষে দুষ্ট। এ ছাড়া তার প্রোগ্রাম একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে (long term goal) সামনে রেখে চালিত (এ ক্ষেত্রে অভীষ্ট লক্ষ্যটি ডকিন্সই নির্বাচন করেছিলেন – METHINKS IT IS LIKE A WEASEL)। বিবর্তন কিন্তু এ ধরনের কোন সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোয় না। তিনি নিজেই ‘ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার’ বইয়ে তার প্রোগ্রামের এই সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছিলেন এভাবে –
Although the monkey/Shakespeare model is useful for explaining the distinction between single-step selection and cumulative selection, it is misleading in important ways. One of these is that, in each generation of selective ‘breeding’, the mutant ‘progeny’ phrases were judged according to the criterion of resemblance to a distant ideal target, the phrase METHINKS IT IS LIKE A WEASEL. Life isn’t like that. Evolution has no long-term goal. There is no long-distance target, no final perfection to serve as a criterion for selection, although human vanity cherishes the absurd notion that our species is the final goal of evolution. In real life, the criterion for selection is always short-term, either simple survival or, more generally, reproductive success.
তারপরেও ডকিন্সের এই উইসেল প্রোগ্রাম এই অর্থেই গুরুত্বপূর্ণ যে, তিনি দেখালেন – পরিব্যক্তি এবং প্রতিলিপির প্রভাবে ঘটা ক্রমবর্ধমান নির্বাচনের মাধ্যমে আপাতঃ অসম্ভব বলে মনে হওয়া ঘটনাও স্বাভাবিক নিয়মে ঘটতে পারে। সেজন্যই তিনি তার বইয়ে বলেন –
ক্রমবর্ধমান নির্বাচন জীবনের অস্তিত্বের সমস্ত আধুনিক ব্যাখ্যার চাবিকাঠি। এটা এক বিনি সূতার মালায় খুব সৌভাগ্যপ্রসূত ঘটনা (বিক্ষিপ্ত পরিব্যক্তি)গুলোকে গ্রন্থিত করে চলে অবিক্ষিপ্ত এক অনুক্রমে; ফলে অনুক্রমের শেষে এসে আমরা যখন চূড়ান্ত কাঠামোর দিকে তাকাই তখন আমাদের মধ্যে এক ধরনের বিভ্রম তৈরি হয়, আমরা ভাবি – এধরনের কাঠামো তৈরি হবার সম্ভাবনা এতোই কম যে, চান্সের মাধ্যমে এমনি একটি কাঠামো তৈরিতে যে সময় লাগবে – তার তুলনায় সমগ্র মহাবিশ্বের বয়সও অতীব নগন্য।
ডকিন্স পরবর্তিতে তার প্রোগ্রামটিকে আরো উন্নত করেন, এবং METHINKS IT IS LIKE A WEASEL বাদ দিয়ে কোন সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছাড়াই সিমুলেশন ঘটান। গাছের থেকে যেমন শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করে, ঠিক সেভাবেই ‘জিন নির্বাচনের’ মাধ্যমে বিবর্তনকে কম্পিউটারে চালিত করে সরল অবস্থা থেকে মাকড়শা কিংবা অক্টোপাস সদৃশ জটিল জীবজগতের কাঠামো তৈরি করে দেখান, তার সেই প্রোগ্রামের নাম দেন ‘বায়োমর্ফ’। ডকিন্সের বায়োমর্ফ সম্বন্ধে জানতে হলে এই ভিডিওটি দেখা যেতে পারে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=4ThaHhIkYAc
ডকিন্স তার পরবর্তী বই ‘ক্লাইম্বিং মাউন্টেন্ট ইম্প্রোবেবল’এ অন্য প্রোগ্রামারদের লেখা আরো কিছু জটিল প্রোগ্রামের উল্লেখ করেন বিবর্তনের বাস্তবসম্মত মডেল তুলে ধরতে। এমনি একটি মডেলের অ্যানিমেশন দেখানো হল এখানে –
ছবি: বিবর্তনের বায়োমর্ফ সিমুলেশনের একটি জটিল গাণিতিক মডেল
এ গাণিতিক সিমুলেশনের সবগুলোই আমাদের খুব পরিস্কারভাবে দেখিয়েছে যে নন-র্যান্ডম প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রভাবে জটিল জীবজগতের উদ্ভব ঘটতে পারে, কোন ধরণের ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই। মূলতঃ অধ্যাপক হয়েল প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যাপারটা ঠিকমত বোঝেননি বলেই তিনি জটিল জীবজগতের উদ্ভবকে কেবল চান্স দিয়ে পরিমাপ করতে চেয়েছিলেন এবং একে বোয়িং ৭৪৭ উপমার সাথে তুলনা করে ফেলেছিলেন। এমনকি হয়লের চান্সের গণনাও সম্প্রতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যেমন, টক অরিজিন সাইটে ডঃ ইয়ান মাসগ্রেভ Lies, Damned Lies, Statistics, and Probability of Abiogenesis Calculations প্রবন্ধে হয়েলের অজৈবজনি (Abiogenesis) সংক্রান্ত গণনার নানা ভুলভ্রান্তির প্রতি নির্দেশ করেছেন[21] । একটি ভ্রান্তি এই যে, হয়েল সম্ভাবনা পরিমাপের সময় প্রতিটি ঘটনাকে একটির পরে একটি – এভাবে সিরিজ বা অনুক্রম আকারে সাজিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতির সিমুলেশনগুলো এভাবে সিরিজ আকারে ঘটেনি, অনেকগুলোই ঘটেছে সমান্তরাল ভাবে। ফলে সময় লেগেছে অনেক কম। আপনার চারজন বন্ধুকে চারটি মূদ্রা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঝোঁকমুক্ত ভাবে নিক্ষেপের সুযোগ করে দিলে- চারটি HHHH পেতে যে সময় লাগবে, সেই একই ফলাফল (অর্থাৎ চারটি HHHH) পেতে আপনার ষোলজন বন্ধুকে লাগিয়ে দিলে অনেক তাড়াতাড়িই কাঙ্খিত ফলাফল বেরিয়ে আসবে। ঠিক একই ভাবে, একটি বানর দিয়ে পুরো হ্যামলেট পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম মনে হলেও, যদি এক লক্ষ বানরকে একই কাজে লাগিয়ে দেওয়া যায়, তবে আর সেরকম অসম্ভব কিছু মনে হবে না। সেজন্যই ইয়ান মাসগ্রেভ তার প্রবন্ধে যথার্থই বলেছেন, ‘যদি এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনার কোন কিছু ঘটিয়ে দেখাতে চান – তা হলে চীনের জনসংখ্যার মত চলক নিযুক্ত করে দিন’। আর ডকিন্সের মত ইয়ান মাসগ্রেভও মনে করেন, সৃষ্টিবাদীদের বোয়িং উপমার সাথে বিবর্তনবাদের পার্থক্য মূলতঃ এই জায়গাটিতে –
ছবি: অধ্যাপক হয়েল ভেবেছিলেন কতকগুলো রাসায়নিক পদার্থ মিলেমিশে হটাৎ করেই ব্যাকটেরিয়ার মত জটিল জীবের অভ্যুদয় হওয়াটাই অজৈবজনি, কিন্তু সত্যিকার অজৈবজনি কখনোই সেরমকভাবে একধাপে ঘটে না।
সব মিলিয়ে হয়েলের জঞ্জাল থেকে বোয়িং উপমা জীববিজ্ঞানে বহু আগেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। খ্যাতনামা জীববিজ্ঞানী জন মায়নার্ড স্মিথ তো স্পষ্ট করেই বলেন, ‘কোন জীববিজ্ঞানীই হয়লের মত চিন্তা করেন না যে, জটিল কাঠামো জঞ্জাল থেকে বোয়িং-এর মতো এক ধাপে হুট করে তৈরি হয়'[22]। হয়েলের এই বোয়িং উপমার সমালোচনা সময় সময় করেছেন স্ট্রাহেলার,ম্যাক্লিভার, কাউফম্যান, দ্য দ্যুভে, পিটার স্কেলটন, রুডলগ রাফ, পেনক, ম্যাট ইয়ং এবং ডেনিয়েল ডেনেট সহ বহু বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকই। মূলতঃ হয়েলের এই অপরিনামদর্শী উপমাকে এখন অবহিত করা হয়ে থাকে হয়েলের হেত্বাভাষ (Hoye’s fallacy) হিসেবে[23]।
রিচার্ড ডকিন্স তার সাম্প্রতিক ‘গড ডিলুশন’ (২০০৬) বইয়ে রসিকতা করে বলেন, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জটিল জীবজগতের উদ্ভবের তাও একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাই। কিন্তু ঈশ্বর নামে সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান এক জটিল সত্ত্বা হুট করে কোথা থেকে উদ্ভুত হল, তার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই আমরা কোথাও পাইনা, কখনো পাবোও না। তাই ঈশ্বরই হচ্ছেন হয়েলের ‘আল্টিমেট বোয়িং ৭৪৭’ [26]।
httpv://www.youtube.com/watch?v=LRQQmCpmuGc
তথ্যসূত্র:
[1] অভিজিৎ রায়, আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী, অঙ্কুর, ২০০৬ দ্রঃ
[2] Huxley T.H. the animals which are most nearly intermediate between birds and reptiles. Geol. Mag. 5, 357–65; Annals & Magazine of Nat Hist 2, 66–75; Scientific Memoirs 3, 3–13, 1968
[3] পরে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে স্থানান্তরিত; লন্ডন স্পেসিমেন হিসেবে গন্য
[4] বার্লিন স্পেসিমেন হিসেবে গন্য
[5] ম্যাক্সবার্গ স্পেসিমেন হিসেবে গন্য
[6] Charig, A.J.; Greenaway, F.; Milner, A.N.; Walker, C.A.; and Whybrow, P.J., “Archaeopteryx is not a forgery”. Science 232 (4750): 622–626, 1986
[7] Wellnhofer P. , A New Speciment of Archaeopteryx, Science 240, 1790, 1988.
[8] Tim Berra, Evolution and the Myth of Creationism: A Basic Guide to the Facts in the Evolution Debate, Stanford University Press, 1990, p41.
[9] Elliot Meyerowitz of Caltech quoted by Gail Vines, New Scientist 2 Dec 2000 p36-39.
[10] Hoyle Fred, The Intelligent Universe. New York: Holt, Rinehart and Winston, 1983, pp. 18-19 .
[11] Fred Hoyle and Chandra Wickramasinghe, Lifecloud: The Origin of Life in the Universe, 1978, p.15-16
[12] Fred Hoyle and Chandra Wickramasinghe, Our Place in the Cosmos, 1993, p.14
[13] Derek Gatherer, The Open Biology Journal, 2008, 1, 9–20, Finite Universe of Discourse: The Systems Biology of Walter Elsasser (1904–1991)
[14] Why Evolution Isn’t Chance, http://www.ebonmusings.org/evolution/evonotchance.html
[15] Nilsson, D.-E., and S. Pelger. 1994. A pessimistic estimate of the time required for an eye to evolve. Proc. Roy. Soc. Lond. B 256:53-58.
[16] অভিজিৎ রায় এবং ফরিদ আহমেদ, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে, অবসর, ২০০৭
[17] Haiti earthquake survivor Evan Muncie trapped under rubble for 27 days, Times Online, February 10, 2010, http://www.timesonline.co.uk/tol/news/world/us_and_americas/article7021168.ece
[18] Richard Dawkins, The Blind Watchmaker: Why the Evidence of Evolution Reveals a Universe without Design, W. W. Norton & Company, 1996, page 49.
[19] অভিজিৎ রায়, বিবর্তনের সহজ পাঠ,যুক্তি, সংখ্যা ৩, জানুয়ারি ২০১০; এ ছাড়া অনলাইনে পড়ুন, এক বিবর্তনবিরোধীর প্রত্যুত্তরে : https://blog.mukto-mona.com/?p=936
[20] John Rennie, Scientific American, July 2002, “15 Answers to Creationist Nonsense”, page 81
[21] Ian Musgrave, Lies, Damned Lies, Statistics, and Probability of Abiogenesis Calculations, TalkOrigins Archive.
[22] John Maynard Smith, The Problems of Biology, p.49. (1986), ISBN 0-19-289198-7, “What is wrong with it? Essentially, it is that no biologist imagines that complex structures arise in a single step.”
[23] George Johnson, Bright Scientists, Dim Notions NY Times, October 28, 2007
[24] বন্যা আহমেদ, বিবর্তনের পথ ধরে, অবসর, ২০০৭
[25] Richard Dawkins, The God Delusion, Houghton Mifflin Harcourt; 2006, page 114
@অভিজিৎ,
অভিজিৎদা, আমি বুঝতে পারছি না আপনি আমার জবাব পেয়েছেন কিনা । নাকি আমার প্রশ্ন ও মন্তব্যগুলো এমনই বিদঘুটে যে উত্তরের যোগ্য না ।
তাই এই খানে আমার জবাবটা আবার পেস্ট করছি।
অভিজিৎদা,
উত্তরের জন্য অনেক ধন্যবাদ। দয়া করে আমাকে তুমি করে বলবেন । আমি আপনার থেকে জ্ঞানে ও বয়সে অনেক ছোট (জাবিতে গণিতে মাস্টার্স পড়ছি)।
এই বিষয়টা নিয়ে analysis করতে ভাল লাগতাছে, তাই নিজের স্বল্পজ্ঞানে কিছু মন্তব্য করছি।
আমরা যদি শুধুমাত্র পরমাণু-অণুর ক্ষেত্রে বিবর্তনবাদের কথা চিন্তা করি, তবেতো কোন একটা অণু কতটুকু stable হবে তার উপরই ওই অণুটা গঠিত হবে কিনা তা নির্ভর করে । আর যদি আমরা কোয়ান্টাম স্তরে চলে যাই তবেতো সেখানে শুধুমাত্র randomness ই কাজ করবে। সুতরাং কোয়ান্টাম স্তরে তো সম্ভবতঃ বিবর্তনবাদের কোন প্রশ্নই আসে না।
সিডনী ফক্স আসলে কি ধরনের গবেষণার করেছিলেন এবং উনার গবেষণার ফলাফল কি রকম ছিল?
অভিজিৎদা, হয়ত আমি হয়েলের বোয়িং থেকে অনেক দূরে চলে আসতেছি। এজন্য আগেই আপনার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
কোয়ান্টাম পর্যায়ে তো randomness এখনও চলতেছে। সেই randomness ই কি জীবের ক্ষেত্রে প্রতিলিপি এর পরবর্তী পরিব্যক্তি ঘটিয়ে বিভিন্ন প্রকরন তৈরী করে । মানে আমি আসলে বলতেছে চাচ্ছি কোয়ান্টাম পর্যায়ের randomness ই কি প্রকৃতির randomness এর জন্য দায়ী । অথবা , আসলে ঠিক কি কারনে আমাদের প্রকৃতিতে random ঘটনা ঘটে থাকে, তার কি কোন ব্যাখা এখনো বের হয়ছে?
“পৃথিবীতেই ডায়াটামগুলো সিলিকনভিত্তিক প্রাণের ছোট দৃষ্টান্ত”
ডায়াটাম যে সিলিকনভিত্তিক এটা জানতাম না। এদের কি কোন সামুদ্রিক মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে না? আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম, যদি কোন কার্বনভিত্তিক মাছ এদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তবে কি তার পুষ্টি চাহিদা পূরন হবে।
প্যানস্পারমিয়া তত্ত্ব সত্য হলে আমাদের কাছের যে গ্রহেই প্রাণের উপযোগী পরিবেশ থাকবে, সেইগ্রহেই তো প্রাণের বিকাশ ঘটার কথা । কারন প্রাণ স্পোর তো আর নিশ্চয়ই একটা দুইটা আসেনি আর নিশ্চয়ই কোন বিশেষদিকে প্রবাহিত হয়নি । তাহলেকি এতদিনে আমাদের একটা প্রতিবেশী পাওয়া যাওয়ার কথা ? অভিজিৎদা আসলে প্রায় পৃথিবীর মতো প্রাণ বিকাশের উপযোগী এরকম কয়টা গ্রহ কিংবা উপগ্রহ পাওয়া গেছে । যদি পৃথিবীর থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে এরকম কয়েকটা গ্রহও থাকে তবেতো সেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি ।
“কোন কোন বিজ্ঞানী (যেমন ক্রিক) একেবারে আরো এক ডিগ্রী এগিয়ে ‘ডাইরেক্টেড প্যানস্পার্মিয়া’ও সাজেস্ট করেছেন”
‘ডাইরেক্টেড প্যানস্পার্মিয়া’ টা আসলে কি? এটা কি বর্হিবিশ্বের এলিয়েনরা সরাসরি এসে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটিয়েছে , এরকম টাইপের কিছু নাকি?
@রনবীর,
আমি তো তোমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম উপরে। এই থ্রেডের শেষ মন্তব্যটাতেই তো আমার উত্তর আছে।
ভালো থেকো।
@মীজান রহমান,
আমি আপনার লেখার বিশেষ ভক্ত। আপনার লেখা মুক্তমনাতে দেখতে পেলে খুবই ভালো লাগতো। আপনি বলেছেন,
এটা একটি দুঃসংবাদ। আপনি নিশ্চয়ই আপনার অভিজ্ঞতালব্দ ধারনার থেকে এই উপসংহারে এসেছেন। এই সম্পর্কে আপনার একটি আলোচনা পেলে খুবই খুশী হতাম।
Dear Avijit,
As I started gleaning through your article I got more and more absorbed in it, so I thought why put it off for another day. Besides it’s not as long as I thought it was. Obviously you have done a lot of research for this. And gave a lot of thought. It’s neither easy nor prudent to try to pick a hole in Fred Hoyle’s line of thinking. But as great a man as he was, he too was human, which is probably the greatest handicap of us mortals, because then you are always faced with the daunting task of having to face death and your ultimate reduction to ashes. That prospect created this monster called religion, that also created a confused state in the mind of an intellectual giant like Voltaire, and possibly also in the mind of Fred Hoyle. Your assessment on Hoyle’s faith in a god may be partly true but I do not necessarily agree with all your arguments. I think he was torn between his strong scientific instincts and a hidden vulnerability to common human weakness. Obviously his understanding of Evolution was less than perfect, or even grasp of the science of probability. I like your final argument about God’s existence being no less likely than the Boeing 747 suddenly popping out of a junkyard after having assembled itself into a full-fledged flying passenger liner.
If I were you I’d have also pointed out the mutually complementary fields of Statistical Mechanics and Thermodynamics, one dealing with reversible microscopic motions while the other is concerned with irreversible macroscopic objects like heat, pressure, density and entropy, especially entropy, which is perhaps the most glaring example of how random motions ultimately lead to a definite destination. Quantum Mechanics is also another example, which, of course, you have already mentioned. Having said all that I don’t think the creationists, the pseudo scientists, the intelligent design theorists will ever understand or accept the evolution theory, not because they are not capable to understand, but because they do not want to. Instead they will always look for a Fred Hoyle or an Einstein or at least a Descartes or a Pascal. The condition of Muslims are pretty bad. They will always look inward to their holy Koran, which in my opinion has been the greatest obstacle to any meaningful modernization of the Muslim communities all over the world. Finally let me express my deep admiration for your very thorough and well researched scientific articles that have greatly enhanced my own understanding of certain things, and I think, have been very beneficial to the readers of MM. But if you have any illusion about changing the mind of a single creationist I’d say, my friend, forget it. It ain”t going to happen.
Best wishes to you
Mizan Bhai.
আমি প্রথমেই শ্রদ্ধেয় অভিদা’র কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, তাঁর মনোজ্ঞ প্রবন্ধ থেকে আলোচনাটা অন্যদিকে নিচ্ছি বলে। ভীষণ একটা বিতর্কের রেশ উঠেছে যার কেন্দ্রবিন্দুতে আমার একটি মন্তব্য। এক্ষেত্রে আমার একটা কৈফিয়ৎ দিতেই হয়। প্রথমত, ছদ্মনাম ঘটিত বিতর্কটি অনুজপ্রতিম পথিক আমাকে চ্যাটে জানায়। আমি খুবই আশ্চর্য হই। হতাশও হই। আমি মুক্তমনার কোন পৃষ্ঠাই খুলতে পারছিলাম না। পথিক আমাকে ফরিদ ভাইয়ের মন্তব্য কপি-পেস্ট করে।
এ কথাটা পরে দেখে আমি পথিককে প্রচণ্ড ধমক দেই। কারণ অনুরোধটা আমি নয় ওই করেছিল। আমি এর মধ্যে ঢুকতেই চাইছিলাম না। পথিক আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বেচারাকে এত ভেঙে পড়তে দেখে আমি নিতান্ত বাধ্য হয়ে এ মন্তব্যটি করিঃ
এর উত্তরে শ্রদ্ধেয় ফরিদ ভাই লেখেন,
এখানে আসলে আমাদের দুজনেরই যুগপৎ অভিমান ও ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। চলুন দেখা যাক,
ফরিদ ভাই, আমি খুবই দুঃখিত যে আপনি এটাকে ব্যক্তিআক্রমণ ভেবে এতটা কষ্ট পেয়েছেন। আপনি যেমন ছদ্মনামধারীদের লেখা সম্পর্কে ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন, আমিও তেমনি দেশবাসীর দুরবস্থার প্রতি সহানুভূতিহীন ব্যক্তিবর্গকে আমার ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি।
মডারেটর হিসেবেই লিখুন আর ফরিদ আহমেদ নামেই লিখুন আপনার উক্তি অন্য ব্লগারের চেয়ে আলাদা তাৎপর্য রাখে আমার কাছে। আর মন্তব্যের শুরুটা আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই। কিন্তু শেষ লাইনটা আমি আলাদা প্যারায় লিখেছি শুধু আপনার উদ্দেশ্য নয় বরং আর যত প্রবাসী দেশের অবস্থা না বুঝে মন্তব্য করেন- তাদের সবার উদ্দেশ্যে লেখা। আমার মন্তব্যের কোথাও @ফরিদ আহমেদ লেখা ছিল না। আপনি কিন্তু শুরুই করেছেন @আগন্তুক দিয়ে।
ছদ্মনামে লেখার প্রত অহেতুক বিদ্বেষ পথিক এবং বন্যাদি খণ্ডন করেছে। অবিবেচক এবং রূঢ় হতেই পারে আমার মন্তব্য কিন্তু টয়লেট লিখনের মত অশালীন ছিল কি?
আপনার সাথে কিন্তু আমার ব্যক্তিগতভাবে ইমেইল যোগাযোগ ছিল। সেখানে আমার আসল নাম এবং ছবিও ছিল। বোধহয় আপনার মত একজন গুণী মানুষ এই অধমকে মনে রাখার যোগ্য মনে করেন নি! আমি যে ছাত্র এবং বয়েসে আপনার হাঁটুর বয়েসী তা আপনি জানতেন এবং পরিচয়ের পর আপনি আমাকে তুমি করেই বলতেন। আপনি বিদেশে আকাশ ফুঁড়ে গেছেন কিনা সেকথা আমি বলিনি। আপনি দেশ বলতে মাটিকে প্রতীকীকরণ করেছেন – সেটা নিয়েও আমার দ্বিমত আছে। কিন্তু সেকথা বলছি না। প্রশ্ন করছি আমি কোথায় বলেছি যে, এ দেশে আপনার রক্ত,ঘাম,পরিশ্রম,সংগ্রাম আর সাহস মিশে নেই? ছিল বলেই তো আপনি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন, ক’জন পায়। আপনি বলেছেন আমি নাকি এসব নিয়ে নাকি কান্না কাঁদি…
আপনি এবং বাকি সব মুক্তমনা বন্ধুরা বলুক , আমি আদৌ কতখানি এবং ক’বার নাকি কান্না কেঁদেছি? আমার শিক্ষানগরীর ভয়াবহতা এবং শিবিরের সর্বগ্রাসী দাপটের এক তুচ্ছ অংশই আমার লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। আর আমার বয়েস কম। আমার রক্ত,ঘাম,শ্রম আর সংগ্রামের হিসেব আমি তো জানি না। সেটা বিচার করবে তারা ,যারা আমাকে চেনে। আপনার তুলনায় আমি নেহাতই এক টয়লেট লেখক উদ্ধত ছোকড়া! তবুও সেগুলো নাকি কান্না! সত্যিই সেলুকাস কি বিচিত্র এই পৃথিবী!
দেখুন এটাকে আমার অপরিপক্কতা বা ভুল বলেও ভাবতে পারেন। কিন্তু শেখ হাসিনা কে আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই মনে করি। তিনি কখনোই আমার কাছে আপা নন। আপনার ব্যক্তিগত মন্তব্য একজন তরুণ,অনভিজ্ঞ লেখকের কাছে সম্পাদকের মন্তব্য মনে হতেই পারে। সম্পাদকীয় লিখেও তো অনেকে নিচে নাম লিখে দেয়! আমি ব্লগে একেবারে নবীস বলে এখনো এ কলচর ঠাউরে উঠতে পারিনি!
রণদীপমদা লিখেছেন,
ধন্যবাদ দাদাকে। আমার আশা ছিল উনিই বুঝতে পারবেন। পেরেছেনও। দাদা একবার বলবেন কি আমার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কতটা আমি ঢেঁড়া পিটিয়ে বলে বেড়াই? কতটা আপনাকে বলেছি? ক’বার নাকি কান্না কেঁদেছি? আমি কিন্তু ছদ্মনামের পেছনে যুক্তি দিয়েছি, যুদ্ধে পশ্চাদপসরণ। সেদিকে না গিয়ে এটাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে দেখা হল কেন? গত কয়েকবছরে রাজশাহীতে শিবিরের তাণ্ডব নিয়ে কতটুকু ভয় বা আশঙ্কা আমি ব্যক্ত করেছি? আমার কটা লেখায় আমার সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা এসেছে? একটাতে আর বোধহয় গুটিকয় মন্তব্যে খুব খণ্ডিতভাবে।
@অভিদা,
আমিও কি ব্যক্তিগতভাবে বিদেশে বসে দেশের পরিস্থিতি না বুঝে অবিবেচক মন্তব্যকারী লোকদের সম্পর্কে ব্যক্তিগত ধারণা ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ ব্যক্ত করতে পারি না? ফরিদ ভাইয়ের মন্তব্য তবে কেন আমার, শিক্ষানবিসের ,পথিকের ও অন্যান্য যারা ছদ্মনামে লেখেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ হবে না? তিনি যদি একটা গোষ্ঠি সম্বন্ধে ব্যক্তিগত মত দিতে পারেন তাহলে আমারও অধিকার আছে কোন গোষ্ঠি সম্পর্কে ব্যক্তিগত মত দেয়ার। আমি শিবির পেটাই এটা কি ব্লগে লিখেছি নাকি কখনো? লিখলে দেখিয়ে দিন। শুধড়ে নেবো। লাঠিসোটা নিয়ে রাতজাগা আর পেটানো। বাপরে! শিবির পেটানো? আর যদি ব্যক্তিগতভাবে বলে থাকি তাহলে সেটা ব্লগে লিখে কি ভালো করলেন? আপনি বলেই দিলেন কে কি অবস্থায় লেখে সেটা আপনার কাছে মূখ্য নয়। এটা কি খুব সহানুভূতিশীল কথা?
আমি প্রথম থেকেই আপনার স্নেহধন্য। আমার রীতিমত অখাদ্য লেখাগুলোকেও আপনি না জানি কত কষ্ট করে তারিফ করেছেন! আপনার কি মনে আছে প্রথম যখন আমার বিরুদ্ধে এই ব্যক্তিগত অভিযোগ উঠল, তখন কিন্তু আপনি নিজে আমাকে ইমেইলে বলেছিলেন যে সেরকম কিছু আপনি খুঁজে পাননি। দুয়েকজন বলা শুরু করতেই আপনি সম্পূর্ণ উলটোভাবে ব্যক্তিআক্রমণের গন্ধ পেলেন। আমার পরবর্তী পোস্টে আমি প্রত্যাদেশবিরোধী আস্তিক্যের সমালোচনা দিতে গিয়ে শুধু প্রসঙ্গক্রমে জনৈক ব্লগারের উল্লেখ করেছিলাম। সেটাকে তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে ঘোষণা দিতেই মুক্তমনা এডমিন আমার লেখাটাকে ব্যক্তিগত অহংবোধের প্রকাশ বলে রায় দিয়ে দিলেন। অথচ আমার লেখার মূল বক্তব্যে কেউ আসেনি। ব্যক্তিগত আক্রমণের সংজ্ঞা কি? ডিইস্ট কেন ফ্রি থিঙ্কার নয় -সে বিষয়ে যৌক্তিক তর্কেও না গিয়ে আপনি মার্টিন গার্ডনারের উদাহরণ দিয়ে দিলেন। কষ্ট আমিও পেয়েছিলাম। স্নেহ বেশি করেন বলেই কি শাসনটাও আমার বেলায় কড়া? আমি আপনাকে কখনোই আস্তিক ব্লগারদের নিষিদ্ধ করতে বলিনি। বলেছি মুক্তমনা যেন সংশয়বাদীদের সম্মিলন হিসেবেই বজায় থাকে।
এই মূলমন্ত্রেই আমি উজ্জীবিত ছিলাম। একজন আস্তিক তিনি প্রত্যাদেশবিরোধী আস্তিক হলেও মুক্তমনা নন এবং সংশয়বাদীও নন। কারণ শেষ পর্যন্ত তিনি শূণ্যস্থানে ঈশ্বরকে আনছেন। এ যুক্তিতে আমি কোন আস্তিককে ব্লগে পোস্ট করার অনুমতি দেয়াকে মুক্তমনার মূলনীতির পরিপন্থী মনে করি। মডারেশনের ভিত্তিতে তাঁরা মন্তব্য করতে পারেন, পোস্টও দিতে পারেন কিন্তু আদর্শ অনুযায়ী সদস্য হতে পারেন না। এটা করতে হলে আদর্শ পালটে আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে উদারপন্থী মানুষের সম্মিলন কে নতুন আদর্শ করতে হবে। সেটা করার আগে কেউ আমাকে উগ্রপন্থী রায় না দিলে খুশি হব। আর এই আপোসের কারণটাও বোধগম্য নয়। মডারেশনের ভিত্তিতে মন্তব্য ছাপতে দিলেও বিতর্ক প্রাণবন্তই থাকত বরং এই আদর্শের টানাপোড়েন লাগত না।
আপনার,বন্যাদির বা রায়হানের উত্তর আমি পড়িনি এবং পথিক আমাকে বলেছিল যে এই নিদারুণ উক্তির কেউ কোন প্রতিবাদ করেনি। আমি এড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। পথিক বেচারা ভেঙে পড়ছিল।তাই মন্তব্য করেছি। ব্যক্তিগত আক্রমণের সংজ্ঞাটা কি? মহানবী,জাকির নায়েক,রবিঠাকুর এরা ব্লগার হলে তো নালিশের ঠেলায় ব্লগ বন্ধই করে দিতে হত!আমি কোথায় ফরিদ ভাইকে এড্রেস করেছি? ফরিদ আহমেদ আমাকে চেনা সত্বেও যে মন্তব্য করলেন তা আপনাদের কাছে আবেগাক্রান্ত উক্তি। আবেগাক্রান্ত হবার আর ব্যক্তিগত মত দেবার অধিকার কি আগন্তুকের নেই? আর বন্যাদি যে উত্তরটা দিয়েছে সেটা আরো আগে দিলে এবং আমি পুরো ব্যাপারটা পড়লে আমি কোন মন্তব্যই হয়তো করতাম না।
রাস্তার ভাষা আমরা কোথায় ব্যবহার করেছি?
পরিশেষে এটুকুই বলব, যে কোন ব্যক্তিবিশেষের ভ্রান্ত মতের শালীন সমালোচনা ব্যক্তিগত আক্রমণ হতে পারে না। কোন গোষ্ঠি সম্পর্কে ব্যক্তিগত মত ব্যক্তি আক্রমণ হতে পারে না। কাজেই আমার বিরুদ্ধে আনীত ব্যক্তিআক্রমণের অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি। কিন্তু কেউ ভুল বুঝে কষ্ট পেলে তার জন্য আমি দুঃখিত। প্রবাসে যারা গেছে তারা এ দেশেরই সন্তান। এদেশে তাঁদের অনেক অবদানই আছে। সেগুলোকে আমি কোথায় অস্বীকার করেছি? কিন্তু প্রবাসে গিয়ে তাঁরা কেন দেশের প্রকৃত অবস্থা ভুলে গিয়ে ফ্যান্সি মন্তব্য করবেন? জানি চাইলেই দেশে ফেরা যায় না। মানুষের অনেক সীমাবদ্ধতাই থাকে। কিন্তু সহানুভূতি তো আমরা দেখাতে পারি।
রণদীপমদা আমার অবস্থা আঁচ করতে পেরেছেন। আমি নাকি কান্না কাঁদিনি বলেই হয়তো ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি মাঝে মাঝে জেগে ওঠে। ফরিদ ভাই আবেগপ্রবণ হয়ে দ্বিতীয় মন্তব্য করেছিলেন। প্রথম মন্তব্য কিন্তু তার স্বাভাবিক ব্যক্তিগত মত। তাঁর স্বাভাবিক ব্যক্তিগত মন্তব্যে আমরা কতটা আহত হয়েছি সে খবরটা খুব বেশি লোক নেননি। আর আমি আবেগ-প্রবণ হয়ে অবিবেচক প্রবাসীদের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তিগত মত দিলাম,সেটা ব্যক্তিগত আক্রমণ? এটা ঠিক ব্যক্তিগত ও জাতীয়জীবনে আমরা যে দুঃসহ সময় পার করছি তাতে পুরোপুরি মাথা ঠাণ্ডা রাখার মত পরিপক্কতা আমার নেই। প্রথমে আবেগ ছিল সামান্য, তাতে ব্যক্তিগত মত দিয়েছি। তারপর অনেকের মধ্যেই এড়িয়ে যাবার প্রবণতা ও সিনিয়রদের ছাড় দেবার প্রবণতা আমাকে আরো কষ্ট দিয়েছে। এ অবস্থায় অনেকেরই আদর্শিক সততা কিংবা ভণ্ডামি নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন মুক্তমনার মুক্ত আকাশের দিকে তাকাই -বুঝতে পারি আমার আশঙ্কা হয়তো ভুল। আমি আশায় বুক বাঁধি -এই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মানুষগুলো হয়তো খারাপ নয়। আশায় বুক বেঁধে আমি একটা নতুন লেখা লিখি – ন্যায়ের প্রত্যাশায়। যদি ঔদ্ধত্বের কারণে (?) আর মুক্তমনায় নাও লেখা হয়, তবুও আমি এ আন্দোলনের সাথে থাকতে চাই। মডারেটরদের ব্যক্তিগত ভুলের সমালোচনা করা যেতেই পারে, মুক্তমনার ধারণার নয়। জয় হোক মুক্তমনার।
@আগন্তুক,
এনিয়ে আবারো ক্যাচাল শুরু করার ইচ্ছে আমার নেই। এখানে তো মন্তব্য করেছই, আবার আলাদাভাবে পোস্টও দিয়েছ। কাজেই তোমার কাছে নিশ্চয় ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। আমি অনেক কষ্টে পথিককে থামিয়েছি, এখন আবার তোমার পালা।
ছদ্মনাম নিয়ে ফরিদ ভাইয়ের সাথে আমি একমত হইনি, সেটা প্রথম ধাক্কাতেই মন্তব্যে জানিয়েছিলাম। পথিকের প্রতি আমি সহানুভূতিশীল ছিলাম বলেই প্রতিবাদ করেছিলাম। তোমার মন্তব্য নিয়ে আমার কিছুই বলবার নেই। পথিকের কাট এন্ড পেস্ট করা তোমার মন্তব্যটি আমার পছন্দ হয়নি, এখনো সেই মনোভাব আমার পাল্টাচ্ছে না। সরি। তোমার এতোবড় মন্তব্য করার পরেও নয়। আজকের লেখার টোনের সাথে সেই কাট এন্ড পেস্ট করা মন্তব্যের তুলনা করলে তুমিও বুঝবে (অবশ্য তর্কের খাতিরে ‘ব্যক্তি আক্রমণ কি’, আগে হয়েছিলো কিনা, এডমিন কি করেছিলো, সাইটে সংশয়বাদী নিয়ে কি লেখা আছে, এগুলো নিয়ে তর্ক করেই যাওয়া যায় ইচ্ছে করলে – সেই তর্কে ঢোকার ইচ্ছে আপাতত আমার নেই)। আমার বরং হয়েলের বোয়িং বিমান নিয়ে লেখাটার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা সমালোচনাতেই আগ্রহ ছিলো, সেটা দূরে সরে যাচ্ছে দেখেই বরং আমি দুঃখিত। জিনিসটা ঠান্ডা হবার পরে আবার নতুন করে ব্যাপারটাকে উস্কে দেয়ার কোন মানে দেখছি না।
আর মডারেটরদের ‘ব্যক্তিগত ভুলের’ কিংবা ‘আদর্শিক ভন্ডামীর’ সমালোচনা তুমি আগেও করেছ, ভবিষ্যতেও করতে পার কোন বাধা ছাড়াই। ইণ্টারনেটে সমরূপ অন্য বাংলা ব্লগে লিখলে সেটা করতে পারতে না, এটুকু আমি বলতে পারি। মুক্তমনা বলেই এটা পারছ।
পৃথিবী, সায়েনটিফিক আমেরিকানের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা বা আর্টিকেল লাগলে আমাকে বলতে পারেন, আমার সাবস্ক্রিপশান আছে, ডাউনলোড করে পাঠিয়ে দিতে পারবো।
@বন্যা আহমেদ, ধন্যবাদ আপু, প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই আপনাকে মেইল করব।
একটা অপ্রাসঙ্গিক খবর শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। আজকে আবিস্কার করলাম যে প্রখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েনটিফিক আমেরিকানের সংখ্যাগুলো বিনে পয়সায় warez বা পাইরেসীর সাইট থেকে ডাউনলোড করা যায়। অনেকেই অভিযোগ করেন যে বিজ্ঞানের বই আন্তর্জাল থেকে বিনামূল্যে নামানো দুষ্কর(বিশেষ করে পাবলিকে খায় না এমন বই তো বলতে গেলে পাওয়াই যায় না)। warez-bb ফোরামে নিবন্ধন করে সার্চ ফীল্ডে গিয়ে আপনার পছন্দের বই বা ম্যাগাজিনের নাম টাইপ করে অনুসন্ধান করলে অনেক ডাউনলোড লিংক পাবেন। আমি সায়েন্টিফিক আমেরিকানের অনেকগুলো নতুন-পুরনো ইস্যু পেয়েছি যেগুলো এক টানে পড়ে শেষ করতে গেলে কম পক্ষে দুই-তিন মাস তো লাগবেই!
ঠিক আছে অঙ্ক না করে বোঝাচ্ছি।
প্রথম ব্যাপারটা হচ্ছে কেও যদি বলে প্রোটিন সুপ থেকে মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা 10^(-40) -সেই তথ্যের মধ্যে সাংঘাতিক ভুল আছে-ভুল আছে মডেলিং এ।
প্রথম কথাই হচ্ছে এই প্রশ্নটা করা যাকঃ
প্রোটিন থেকে মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা
[১] পৃথিবীতে কত?
[ ২] টাইটানে কত?
[৩] মঙ্গল গ্রহে কত?
[২] এবং [৩] এর উত্তর শুন্য হবে য যদি এই গ্রহ গুলিতে মানুষের ন্যায় কোন বুদ্ধিমান জীব থেকেও থাকত।
এই সম্ভাবনা তত্ত্বের ফ্যালাসি হচ্ছে এই খানে যে,
আসলে প্রশ্নটা হবে
পৃথিবীতে [ মানে পৃথিবী ভূইতিহাস সাপেক্ষে] মানুষের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা কত????
কেন না, মানুষ এই লাইফ ফর্মটা সম্পূর্ন ভাবে বিবর্তিত হয়েছে পৃথিবীর ১০০০ মিলিয়ান বছরের ইতিহাসের সাপেক্ষে। যেমন ৫০ মিলিয়ান বছর আগে এস্টারয়েড ধাক্কা না মারলে, মানুষ জন্মাতই না। টিরেক্সদের উন্নত সংস্করন হয়ত আরো আগে বুদ্ধিমান প্রানী হয়ে যেত। মনে রাখতে হবে টিরেক্সদের ঘিলু আমাদের কাছাকাছি-চোখ এবং কান আমাদের থেকেও বেশী উন্নত ছিল।
ফলে এই যে প্রানের জটিল রূপ আমরা মানুষের মধ্যে দেখছি-সেটাকে যদি পৃথিবীর পরিবেশের সাপেক্ষে সম্ভাবনা দিয়ে দেখা যায়, তাহলে সম্ভাবনা ১ এর কাছাকাছিই থাকবে। আবার চাঁদের সাপেক্ষে দেখলে সেই শুন্যই হবে। সুতরাং মানুষের এই লাইফ ফর্ম পৃথিবীর অতীত পরিবেশের নির্বাচন।
অনেকেরই ধারনা, বিবর্তিত হয়ে জটিল তর জীবের উৎপত্তির সম্ভাবনা খুব কম- 10^–40
-কিন্ত এটা কোথা থেকে এল? এই ধারনাটাই সম্ভাবনাবনা তত্ত্বের ভুল প্রয়োগ।
আমি খুব ছোট্ট একটা অঙ্ক করে বোঝাচ্ছি-[আমি ইংরাজিতে এর পর থেকে লিখছি-এছাড়া উপায় নেই]
Problem definition:
Find the probability of evolution of complex life form Z from life form A:
Let’s assume life is evolving in sequence:
A–>B–>C–>….Z
By definition B has better chance of survival in the environment compared to A…and therefore probability of survival follows the sequnce:
P_s(Z)>P_s(Y)…….>P_s(A)
Typically,
A when reproduces, can produce a progency A_n where
P_s(A_n) >P_s(A) and probaility that A_n is born :
P_b(An)==10^-9
With the fact that A can reproduce by millions, expectation that a sizable new species will be born is around N*P_b(An) or will be close to a number which will be very high.
Just for present human race with 6B population, at least
6B*10^-9 or 6000 humans are born in each generation with much better adaptibility to nature. In the case of animals, these 6000 will reproduce more than others to move to a better life form.
So question here is, the origin of complexicity is perfectly a very high certainity game and not at all probabilistic. It’s quite certain event with close to probability 1.
So if somebody predefines Z and then try to find out
p(Z/A), then yes-it is low-extremely tiny.
But issue here is -Z is not predefined.
Complexcity of Z reflects natural consequcne and history of earth geography.
Now P((Z/A)/N1) and P((Z/A)/N2) where N1 and N2 are two different natural history of billion years , are entirely different. For example of N1==geo- history of earth and N2= geo-history of moon, this probability will be hell and heaven difference because Z is a life form that followed N1.
So the statement that probability of life evolution on the earth is tiny low-is extreme misunderstanding of both probability theory and theory of evolution. Hoyale sure knew probability theory but didn’t understand principles of evolution-it was silly, extremely silly to say probability of evolution of complex human being is as low as 10^-40.
There is no mathematics in the statement except complete ignorance of statistics and evolution.
@বিপ্লব,
ভাল প্রমাণ। কিন্তু কয়জন বুঝবে কে জানে! স্টিফেন হকিং যখন ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম লিখেছিলেন, তখন তাকে পই পই করে বলা হয়েছিল, কোন গাণিতিক সমীকরণ যেন তিনি না ব্যবহার করেন। প্রতিটি সমীকরণের ব্যবহারের সাথে সাথে নাকি পাঠক ১০% হারে কমতে থাকে! তোমার মন্তব্য পড়ে সেই কথা মনে পড়ে গেলো।
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লব দা, আগা গোড়া কিছুই যে বুঝলাম না এখন উপায়?
অভিজিৎ দার এই সিরিজটা যে আমার মত মুর্খের কি উপকার করছে বলে বোঝানো যাবে না।
আরেকটা বিষয়ের দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। দর্শনের এ ধরণের আলোচনায় ভাববাদীরা আরেকটি বিষয় প্রায় নিয়ে আসেন।
তারা বলেন জ্ঞান যদিও ইন্দ্রীয় নির্ভর, কিন্তু শুধু জ্ঞান (সম্ভবত তারা জ্ঞান বলতে ইনফরমেশন বোঝান) দিয়ে মানুষ চলতে পারেনা। মানুষের উপলব্ধির জায়গা জ্ঞানের ও সীমানা ছাড়িয়ে। তাকে তারা বলেন প্রজ্ঞা বা স্বজ্ঞা। এই প্রজ্ঞা শুধু ইন্দ্রীয় নির্ভর জ্ঞান দিয়ে হয়না। এই প্রসংগে ভাববাদীরা আস্তে আস্তে প্রজ্ঞার সাথে আত্মার সম্পর্কের দিকে যান এবং বলতে চান যে সজ্ঞা বা প্রজ্ঞা সেই আত্মার ই উপলব্ধি। তারা চেতনাকেও আত্মার সাথে যোগ করেন। বিশেষ করে সুফীবাদী আলোচনাগুলোতে এ ধরনের দার্শনিক (?) আলোচনার প্রভাব বেশি দেখি। এর আরেকটু স্থুল প্রকাশ ধর্মজাযকরা করেন নৈতিকতা বা প্রেম ভালোবাসা এসব কথা বলে। যতদুর মনে পড়ে ডকিন্স বলেছিলেন যে বিজ্ঞান এখনো প্রেম ভালোবাসা বা কবিতা/আর্ট ভালোলাগা এসব নিয়ে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম।
আমার ব্যক্তিগত ধারণা হল এরিস্টটল, সক্রেটিসদের যে আত্মাবাদী ধারণা ছিল এগুলো তার ই একধরনের এক্সটেনশন।
দার্শনিক আলোচনায় এই প্রজ্ঞা বা স্বজ্ঞা কিভাবে নির্ণীত হয়? এ নিয়ে কোন কন্সাইজ বৈজ্ঞানিক/বস্তবাদী ব্যাখ্যা আছে কিনা?
@বকলম,
ভাল মন্তব্য করেছেন। একটা সময় মানুষ ভাবতো প্রেম ভালবাসা ইত্যাদির উৎস বিজ্ঞান করতে পারে না। বর্তমান কালের বিজ্ঞান কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেছে। গত ভ্যালেন্টাইস ডের প্রাক্কালে অপার্থিব একটি চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছিলেন – ভালবাসা ও বিবর্তন শিরোনামে। লেখাটিতে অপার্থিব আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের আলোকে প্রেম ভালবাসার অস্তিত্ব এবং প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন সুচারুভাবে।
নীতি, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের উৎসও যে আজ বিজ্ঞানের বাইরে নয় তা জানার জন্য ম্যাট রিডলীর – The Origins of Virtue: Human Instincts and the Evolution of Cooperation বইটি পড়ে দেখা যেতে পারে। আমাদের ই-বুক –
বিজ্ঞান ও ধর্ম: সংঘাত নাকি সমন্বয়? এর পঞ্চম অধ্যায় : ধর্ম, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ -এই অধ্যায়টিতেও বেশ কিছু চমৎকার প্রবন্ধ সন্নিবেশিত আছে। সেগুলো পড়া যেতে পারে। এ ছাড়া আত্মা নিয়ে আমি একটা সিরিজ লিখেছিলাম একসময়, সেটা আছে এখানে।
আপনার শেষ প্রশ্ন – দার্শনিক আলোচনায় এই প্রজ্ঞা বা স্বজ্ঞা কিভাবে নির্ণীত হয় – এটা মনে হয় একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমি খুব বেশি অবগত নই এর গভীর জটিলতা নিয়ে। Qualia নামে একটা বিষয়ের অস্তিত্ব/অনস্তিত্ব এর সাথে জড়িত। আমার মনে হয় ধ্রুব বর্ণন এ নিয়ে কিছু লেখালেখি করেছিলো। তিনি হয়তো উত্তর দিতে পারবেন। দীপেন ভট্টাচার্যের একটি লেখা আছে আমাদের ইবুকে – স্বজ্ঞা- সংঘাত ও সমন্বয়ের উর্ধ্বে শিরোনামে। এ ছাড়া দেনিয়েল ডেনেটের Consciousness Explained বইটি দেখতে পারেন।
প্রকৃতির নির্বাচন ব্যাপারটা কি ? এটা কি কেবল প্রজাতির উৎপত্তিতে ভূমিকা রাখে ? নাকি অন্য কোন কাজও করে ? প্রকৃ্তিতে যে সব পরিবর্তন হয়, যেমন তৃ্নভূমি- মরুভূমিতে, পাহাড়-মালভূমিতে পরিনত হয়। এগুলিকে কি প্রকিতির বিবর্তন বলা যাবে ? নাকি বিবর্তন কেবল মাত্র প্রানী জগতের ব্যাপার।
আমার এই এলেবেলে প্রশ্নগুলর জন্য অভিজিৎ দার কছে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
@আতিক রাঢ়ী,
আপনি আলাদা করে প্রাণীজগৎ না ভেবে জীবজগৎ ভাবুন, তাহলে অর্ধেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। যেমন আপনার মন্তব্য থেকেই একটা উদাহরণ দেই – ধরুন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা যে কারণেই হোক না কেন কোন তৃণভূমির তাপমাত্রা বা জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটতে শুরু করলো এবং তা ক্রমশঃ মরুভূমিতে পরিণত হতে শুরু করলো। সে অবস্থায় সেখানকার সব প্রাণীসহ, উদ্ভিদ এবং ঘাসের মধ্যে পরিবেশের সাথে টিকে থাকার জন্য প্রতিযোগীতা হবে। যে কোন জীবের মধ্যে সেই নির্দিষ্ট সময়ে বিরাজমান প্রকারণগুলোর মধ্যে শুধু সেগুলোই টিকে থাকবে যারা সেই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে সক্ষম। আর, মূলত সেটাই তো প্রাকৃতিক নির্বাচন। যে কোন রকমের জীবের জন্যই ( প্রাণী, উদ্ভিদ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া…যারই প্রাণ আছে বলে ধরা হয়) প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন প্রযোজ্য।
এখন জড় পদার্থের ক্ষেত্রে অনেকেই বিবর্তনের কথা বলে থাকেন। কসমিক বিবর্তনের কথাও বলেন অনেকে। কিন্তু প্রাকৃতিক নির্বাচন ঠিক কিভাবে জড় পদার্থের এই বিবর্তনের ক্ষেত্রে কাজ করবে তা কিন্তু বলা মুশকিল। প্রাকৃতিক নির্বাচন ঘটতে হলে টিকে থাকার জন্য সংগ্রামের প্রশ্ন আসছ, তার জন্য আবার জনপুঞ্জে প্রকারণ থাকতে হবে (যার জন্য আবার প্রয়োজন মিউটেশন এবং/বা জেনেটিক রিকম্বিনেশন) …
আমি এভাবেই বুঝি ব্যাপারটা, এখানে আর কারও অন্য কোন অভিমত থাকলে জানাতে পারেন।
আমি বিবর্তনের পথ ধরে বইতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের উপর প্রায় পুরো একটা অধ্যায় ( অনন্ত সময়ের উপহার, তৃতীয় অধ্যায়) লিখেছিলাম। ইচ্ছে করলে সেটা পড়তে পারেন।
@বন্যা আহমেদ,
যেহেতু আপনার আহভান সত্ত্বেও এই ব্যাপারে কেউ কিছু বলছেন না সুতরাং ধরে নিচ্ছ এই ব্যাপারে হয়তো এখনও সেভাবে কাজ হয়নি। তবে বিষয়টা গুরুত্ত্বপূর্ন।জীবের মত জড়ও সৃষ্টি, স্থীতি ও লয় এই সব প্রক্রিয়ার মধ্যেদিয়েই যায়, এমন কি ক্রমবিকাশও বাদ যায় না। সুতরাং প্রশ্ন আসে এখানেও কি টিকে থাকার সংগ্রাম আছে ? তাহলে প্রকৃ্তি কি নীজেই নীজেকে টিকে থাকার সনদ দেয় ? মানে জীব যেহেতু প্রকৃ্তিক নির্বাচনের দ্বা্রা টিকে থাকে, তাহলে প্রকৃ্তি কিসের প্রেক্ষিতে টিকে থাকে ? বা কিসের প্রভাবে পরিবর্তিত বা বিবর্তিত হয় ?
@আতিক রাঢ়ী,
আপনার এ প্রশ্নগুলোর জবাব কিন্তু আমি রণবীরকে উত্তর দিতে গিয়ে হাল্কা ভাবে হলেও দিয়েছি। আমি সেখানে অধ্যাপক সিডনী ফক্সের গবেষণার কথা উল্লেখ করেছিলাম। সিডনী ফক্স মনে করেন প্রাকজীবন পূর্ব সময়ে জড়পদার্থের আনবিক স্তরেও হয়তো চলেছিলো এক ধরনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের মতই কোন কিছুর প্রভাব, যেটাকে তিনি মলিকিউলার সিলেকশন বা আনবিক নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছেন। পরে অন্যান্য গবেষকদের গবেষনাতেও (যেমন, Spiegelman, 1967; Eigen and Schuster, 1979; Julius Rebek, 1994, Cohen, 1996) মলিকিউলার সিলেকশনের বিচ্ছিন্ন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি পুরো মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য কিছু বিজ্ঞানী (যেমন পদার্থবিদ লি স্মোলিন) ডারউইনের স্মরণাপন্ন হয়েছেন এবং গড়ে তুলেছেন ‘কসমোলজিকাল ন্যাচারাল সিলেকশন’ তত্ত্ব।
এখন আপনার প্রশ্নটির আর একটি গুরুত্বপুর্ণ দিক আছে। আমরা জানি যে সমস্ত রাসায়নিক মৌল দিয়ে জড় পদার্থ গঠিত, সেগুলো দিয়েই জীবদেহ গঠিত। তারপরেও জড়পদার্থের বিবর্তনকে জীবদেহ থেকে আলাদা করতে হবে কারণ এদের কোন জেনেটিক মিউটেশন বা রেপ্লিকেশন হয় না। কিন্তু তাদের বিবর্তন হয়। আনবিক স্কেলে তাদের বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করার জন্য ‘মলিকিউলার ইভলুশন’ নামে আলাদা একটা শাখাই আছে বর্তমানে।
এছাড়া সমস্ত রাসায়ননিক পদার্থের অস্তিত্ব আবার মহাবিশ্বের উৎপত্তির সাথে জড়িত। মহাবিশ্বের উৎপত্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞান একটি চলমান ব্যাপক গবেষণার বিষয়। মহাবিশ্ববিদ্যা বা কসমোলজি মহাবিশ্বের উৎপত্তি, বিকাশ ও বিবর্তন নিয়ে গবেষনা করে থাকে। এর পরিসর অনেক ব্যাপক।
@অভিজিৎ,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিষয়টা পরিস্কার করে বলার জন্য।
অভিজিৎদা আমি বরাবরই আপনার লেখার ভক্ত. তথ্যসমৃদ্ধ এই লেখাটি দারুন লাগল. বিবর্তন সম্বন্ধে আমার জ্ঞান আসলে খুবই কম । আপনার এই লেখাটি পড়ে বিবর্তন সম্বন্ধে ধারণা অনেকটা পরিষ্কার হল । আমার কিছু জিজ্ঞাসা আছে । দয়া করে যদি উত্তর দেন ।
বিবর্তনবাদ কি শুধুমাত্র জীবের বিকাশ এবং পরিণতি ব্যাখা করে যদিও আমি বরাবর সেটাই জানি.
তবে আপনার লেখা পড়ে মাথায় নতুন একটা চিন্তা আসল, জীবনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করল যেই প্রকৃতি , সেই প্রকৃতি কি শুধুমাত্র random process এ এই replication এর উপযোগী একটি জীবাণু বা কিছু একটা সৃষ্টি করল নাকি জড় বস্তুও বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে যদিও তাদের মধ্যে replication, mutation এবং variation সম্ভব নয়. নাহলেতো জীবনের উপযোগী জড় পদার্থ সৃষ্টি অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ ?
আর একটা প্রশ্ন, আমাদের মাটিতে এত সিলিকিন থাকা সত্ত্বেও প্রকৃতি কেন কার্বনকেই জীবন গঠনের জন্য বেছে নিল যদিও সিলিকনেরও কার্বনের মত শিকল তৈরী করার ক্ষমতা আছে।
আর একটা কথা, জাফর ইকবাল স্যারের অনেকগুলো science fiction এ দেখা যায় পৃথিবীর প্রাথমিক অবস্থা জীবন সৃষ্টির জন্য উপযোগী ছিল না এবং পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি হয় বর্হিবিশ্বের কোন অতি উন্নত প্রাণীর হস্তক্ষেপে. উনি কি নেহাত fiction সৃষ্টি করার জন্য এই কাহিনী লিখেছেন না আসলেই পৃথিবীর প্রাথমিক অবস্থা যে প্রাণ সৃষ্টির জন্য উপযোগী , এমন কোন অব্যর্থ প্রমান পাওয়া যায় নি.
শেষের দুটি question সম্ভবত বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক না । সেক্ষেত্রে আপনার ইচ্ছা হলে আপনি skip করতে পারেন.
@রনবীর,
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নগুলো কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নের ধরণ দেখেই আমার মনে হয়েছে আপনার বিবর্তনে জ্ঞান মোটেই কম নয়, বরং অনেকের চেয়ে বেশি। আশা করছি আপনি আমাদের ব্লগে নিয়মিত মন্তব্য করবেন, লেখা লিখবেন। এবার আপনার প্রশ্নগুলোর একে একে জবাব দেয়া যাক।
আমি আমার লেখায় ব্যাখ্যা করেছি যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যাপারটার জন্য প্রতিলিপি, পরিব্যক্তি এবং প্রকারণের সমন্বয় দরকার। খুব সাদামাঠাভাবে বললে – প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করে জিনের উপর। জড়পদার্থে যেহেতু জিন নেই – সেহেতু জীবজগতে যেভাবে বিবর্তনের কথা বলা হয় সেরকম বিবর্তন জড় জগতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সে জন্য বিবর্তন বলতে সাধারণতঃ জৈব বিবর্তনবই বোঝানো হয়।
কিন্তু তা বলে জড়জগত কিন্তু বিবর্তনের বাইরে নয়। সমস্ত জৈব পদার্থ ভাংগলে দেখা যাবে সেগুলো অজৈব পদার্থ দিয়েই তৈরি। মিথেন ভাঙ্গলে কার্বন আর হাইড্রোজেনের মত প্রানহীন জড়পদার্থের অনুই পাওয়া যায়। তেমনি ইউরিয়া তৈরি করা যায় এমোনিয়াম সায়ানেটের মত জড় পদার্থ থেকেই। ভাইরাস বাস করে জীব জড়ের মধ্যবর্তী এলাকায় তা আমরা ছোটবেলার পাঠ্যবই থেকেই জানি। কাজেই জড় পদার্থকে বিবর্তনের বাইরে রাখলে কিন্তু চলবে না। সেজন্যই অধ্যাপক ম আখতারুজ্জামান তার ‘বিবর্তনবিদ্যা’ বইয়ে বলেছেন – “এক সময় বিবর্তনের ধারনাটি শুধু জীবজগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তখন বিবর্তন বলতে কেবল জৈব বিবর্তন বোঝাতো। এখন জড়জগতও এর আওতায় এসেছে। কারো মতে, বিবর্তনের ১০ ভাগের ১ ভাগ জীবজগতে আর বাকী ১০ ভাগের ৯ ভাগই জড়জগতে প্রসারিত – অনেকটা পানিতে ভাসমান বরফের মতো।’
কিন্তু তাহলে প্রশ্ন হল জড়জগতে বিবর্তন কাজ করে কিভাবে? সিডনী ফক্স এ নিয়ে ভাল কিছু গবেষনা করেছিলেন বিগত নব্বই এর দশকে। তিনি মনে করেন প্রাকজীবন পূর্ব সময়ে জড়পদার্থের আনবিক স্তরেও হয়তো চলেছিলো এক ধরনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের মতই কোন কিছুর প্রভাব, যেটাকে তিনি মলিকিউলার সিলেকশন বা আনবিক নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছেন। পরে অন্যান্য গবেষকদের গবেষনাতেও (যেমন, Spiegelman, 1967; Eigen and Schuster, 1979; Julius Rebek, 1994, Cohen, 1996) মলিকিউলার সিলেকশনের বিচ্ছিন্ন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি পুরো মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করার জন্য কিছু বিজ্ঞানী (যেমন পদার্থবিদ লি স্মোলিন) ডারউইনের স্মরণাপন্ন হয়েছেন এবং গড়ে তুলেছেন ‘কসমোলজিকাল ন্যাচারাল সিলেকশন’ তত্ত্ব। এগুলো এখনো গবেষণার সজীব বিষয়।
এটা নিয়ে আমি আর ফরিদ ভাই আগে কিছুটা লিখেছিলাম আমার ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইটিতে। কার্বন পরমাণুর অসংখ্য বন্ধন তৈরি করেছে দুটো কারনে – আইসোমারিজম এবং ক্যাটিনেশন। ফলে কার্বনের জটিল লম্বা ও স্থায়ী শিকল তৈরী হতে পারে। খুব কম হলেও কার্বনের মত সিলিকনেরও এই ধর্মটি আছে। সেজন্য কৃত্রিম প্রাণ তৈরির ক্ষেত্রে (যেমন রোবোটিক্স) সিলিকন খুব গুরুত্বপূর্ন উপাদান। পৃথিবীতেই ডায়াটামগুলো সিলিকনভিত্তিক প্রাণের ছোট দৃষ্টান্ত। আর মহাবিশ্বেও সিলিকন বিত্তিক প্রাণের অস্ত্বিত্ব একেবারে বাতিল করে দেয়া যায় না।
কিন্তু এটি সত্য যে, , আমাদের পৃথিবীতে সিলিকনভিত্তিক প্রাণের বিকাশ দৃশ্যমান নয়। আমার মতে যে কারণ গুলো আছে তা হল – সিলিকন পরমাণুর আকার কার্বন পরমাণুর চেয়ে বড়। বৃহৎ এই আকৃতির কারণে সিলিকন কার্বনের মতো হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন করতে পারে না। যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ হাইড্রোজেন বন্ধনকে ব্যবহার করে থাকে সেগুলো সাধারণত কাঠামোগতভাবে শক্তিশালী ও নমনীয় হয়ে থাকে। সমস্ত বিষয়ের বিবেচনায় অনেকের কাছেই কার্বন জীবন গঠনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপাদান হিসাবে বিবেচিত। এর ফলাফল হচ্ছে, আমাদের জীববিজ্ঞানীদের যাবতীয় গবেষণা অস্বস্তিকরভাবে ওই একই ধরনের ‘কার্বন ভিত্তিক’ জীববিজ্ঞানের কারাগারে বন্দি।
এটার উত্তর অধ্যাপক জাফর ইকবালই ভাল দিতে পারবেন। তবে সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে সাধারণ প্রাকৃতিক উপায়ে প্রাণের উদ্ভব হওয়ার চেয়ে বর্হিবিশ্বের কোন অতি উন্নত প্রাণীর হস্তক্ষেপে প্রাণ আসার ব্যাপারটি সবসময়ই চিত্তাকর্ষক ব্যাপার বলে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে নানা ধরনের রহস্যেরও আনয়ন সম্ভব, সম্ভব গল্পে নানা পদের ক্লাইম্যাক্স তৈরি। হয়তো একারনেই তিনি কিংবা অন্যান্য ফিকশন রচয়িতারা এটার উপর গুরুত্ব দেন বেশি। তবে একেবারেই যে তাদের কাজের পেছনে যুক্তি নেই তা নয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন ধূমকেতু উল্কা প্রভৃতি যে মাঝে মধ্যেই পৃথিবীতে আছরে পরে – তার মধ্যে নানা রকম জৈব অনুর সন্ধান পাওয়া যায়। কাজেই চারশ কোটি বছর আগে সেরকম কোন উল্কা পিন্ড থেকেই জৈব অনু পৃথিবীতে এসে প্রাণের বিকাশ ঘটায়নি কেউ তা দিব্যি দিয়ে বলতে পারে না। সেজন্যই প্যান্সপারমিয়া এখনো গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি তত্ত্ব। আমি উপরে পথিককে উত্তর দিতে গিয়ে কিছুটা আলোকপাত করেছিলাম, দেখে নিতে পারেন। কোন কোন বিজ্ঞানী (যেমন ক্রিক) একেবারে আরো এক ডিগ্রী এগিয়ে ‘ডাইরেক্টেড প্যানস্পার্মিয়া’ও সাজেস্ট করেছেন। হয়তো এগুলোই এ ধরণের সায়েন্সফিকশনের ভিত্তি।
আলোচনার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। মুক্তমনায় আরো লিখবেন আশা করি।
@অভিজিৎ,
অভিজিৎদা,
উত্তরের জন্য অনেক ধন্যবাদ। দয়া করে আমাকে তুমি করে বলবেন । আমি আপনার থেকে জ্ঞানে ও বয়সে অনেক ছোট (জাবিতে গণিতে মাস্টার্স পড়ছি)।
এই বিষয়টা নিয়ে analysis করতে ভাল লাগতাছে, তাই নিজের স্বল্পজ্ঞানে কিছু মন্তব্য করছি।
আমরা যদি শুধুমাত্র পরমাণু-অণুর ক্ষেত্রে বিবর্তনবাদের কথা চিন্তা করি, তবেতো কোন একটা অণু কতটুকু stable হবে তার উপরই ওই অণুটা গঠিত হবে কিনা তা নির্ভর করে । আর যদি আমরা কোয়ান্টাম স্তরে চলে যাই তবেতো সেখানে শুধুমাত্র randomness ই কাজ করবে। সুতরাং কোয়ান্টাম স্তরে তো সম্ভবতঃ বিবর্তনবাদের কোন প্রশ্নই আসে না।
সিডনী ফক্স আসলে কি ধরনের গবেষণার করেছিলেন এবং উনার গবেষণার ফলাফল কি রকম ছিল?
অভিজিৎদা, হয়ত আমি হয়েলের বোয়িং থেকে অনেক দূরে চলে আসতেছি। এজন্য আগেই আপনার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
কোয়ান্টাম পর্যায়ে তো randomness এখনও চলতেছে। সেই randomness ই কি জীবের ক্ষেত্রে প্রতিলিপি এর পরবর্তী পরিব্যক্তি ঘটিয়ে বিভিন্ন প্রকরন তৈরী করে । মানে আমি আসলে বলতেছে চাচ্ছি কোয়ান্টাম পর্যায়ের randomness ই কি প্রকৃতির randomness এর জন্য দায়ী । অথবা , আসলে ঠিক কি কারনে আমাদের প্রকৃতিতে random ঘটনা ঘটে থাকে, তার কি কোন ব্যাখা এখনো বের হয়ছে?
“পৃথিবীতেই ডায়াটামগুলো সিলিকনভিত্তিক প্রাণের ছোট দৃষ্টান্ত”
ডায়াটাম যে সিলিকনভিত্তিক এটা জানতাম না। এদের কি কোন সামুদ্রিক মাছ খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে না? আমি আসলে বলতে চাচ্ছিলাম, যদি কোন কার্বনভিত্তিক মাছ এদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তবে কি তার পুষ্টি চাহিদা পূরন হবে।
প্যানস্পারমিয়া তত্ত্ব সত্য হলে আমাদের কাছের যে গ্রহেই প্রাণের উপযোগী পরিবেশ থাকবে, সেইগ্রহেই তো প্রাণের বিকাশ ঘটার কথা । কারন প্রাণ স্পোর তো আর নিশ্চয়ই একটা দুইটা আসেনি আর নিশ্চয়ই কোন বিশেষদিকে প্রবাহিত হয়নি । তাহলেকি এতদিনে আমাদের একটা প্রতিবেশী পাওয়া যাওয়ার কথা ? অভিজিৎদা আসলে প্রায় পৃথিবীর মতো প্রাণ বিকাশের উপযোগী এরকম কয়টা গ্রহ কিংবা উপগ্রহ পাওয়া গেছে । যদি পৃথিবীর থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে এরকম কয়েকটা গ্রহও থাকে তবেতো সেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি ।
“কোন কোন বিজ্ঞানী (যেমন ক্রিক) একেবারে আরো এক ডিগ্রী এগিয়ে ‘ডাইরেক্টেড প্যানস্পার্মিয়া’ও সাজেস্ট করেছেন”
‘ডাইরেক্টেড প্যানস্পার্মিয়া’ টা আসলে কি? এটা কি বর্হিবিশ্বের এলিয়েনরা সরাসরি এসে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটিয়েছে , এরকম টাইপের কিছু নাকি?
@রনবীর,
দুঃখিত, প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে অনেক দেরী হয়ে গেল। নানা ঝুট ঝামেলায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছি। আজকে একটু সময় সুযোগ পাওয়া যাওয়ায়, প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে বসলাম। দেখি কতদূর যাওয়া যায়।
এখানে মূল আলোচনাটা হতে পারে বিবর্তন বলতে আমরা ঠিক কি বুঝব। যেহেতু জড় জগতে মিউটেশন ঘটে না কিংবা নিজের প্রতিলিপি তৈরি হয় না, সেহেতু জৈবজগতে যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে হয়তো বিবর্তন ঘটে না। কিন্তু একেবারেই কোন ধরনের বিবর্তন ঘটে না বলে চূড়ান্ত রায় বিজ্ঞানীরা দিয়ে দেননি। আমি আতিক রাঢ়ীকে উত্তর দিতে গিয়ে লি স্মোলিন সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের কাজের উল্লেখ করেছিলাম। সেগুলো দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া জড়জগতে তেজস্ত্রিয় পদার্থের বিকিরণ ঘটা, নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় প্রোটন সংখ্যা পরিবর্তনের মাধ্যমে এক পদার্থের অন্য পদার্থে পরিণত হবার ব্যাপারগুলো বিজ্ঞানীরা জানেন। আর মহাবিস্ফোরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মৌলের উৎপত্তি থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত এই পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি এবং জীবজগতে প্রজাতির উৎপত্তি এবং পরিশেষে মানুষের উদ্ভব – সবকিছুকেই যদি একটি ক্রমিক ধারা হিসেবে দেখা হয়, তবে জড়জগতের পরিবর্তনও হয়তো বিবর্তনের বাইরে থাকবে না। সেজন্যই অধ্যাপক আখতারুজ্জামান তার বিবর্তনবিদ্যা বইয়ে লিখেছেন – ‘এক সময় বিবর্তনের ধারনাটি শুধু জীবজগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তখন বিবর্তন বলতে জৈববিবর্তন বোঝাতো। এখন জড়জগতও এর আওতায় এসেছে। কারো কারো মতে, বিবর্তনের এক দশমাংশ জীবজগতে আর বাকি নয় দশমাংশ জড়জগতে প্রসারিত – অনেকটা পানিতে ভাসমান বরফের মতো।
সিডনী ফক্সের মূল কাজ ছিলো প্রোটিনয়েড মাইক্রোস্ফিয়ার তৈরি করা। ইউরে-মিলার তাদের পরীক্ষায় প্রাণের উৎপত্তির প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো এসিড পেয়েছিলেন। সিডিনী ফক্স ইউরে-মিলারের পরীক্ষার ফলাফলকেই আরো বিস্তৃত করেন। তিনি মিলারের পরীক্ষায় পাওয়া অ্যামিনো এসিড থেকে এমন একধরণের মাইক্রোস্ফিয়ার তৈরি করেন যারা বৈদ্যুতকভাবে সক্রিয়, যারা দ্রবণের মধ্যে প্রটিনয়েড শোষন করে ‘বৃদ্ধিপ্রাপ্ত’ হয়, ইস্ট বা ব্যাকটেরিয়ার মতো নড়াচড়া করে এবং অঙ্কুরিত হয়। এদের অসমোটিক এবং সিলেকটিভ ডিফিউশনমূলক ধর্ম আছে, যা কেবল জীবিত কোষেই দেখা যায়। সিডনী ফক্সের এই কাজ নিয়ে আমি আমার মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে লিখেছিলাম। এখান থেকে চ্যাপ্টারটা পড়া যেতে পারে।
ফক্সের আরো একটি বড় কাজ ছিলো মলিকিউলার সিলেকশন নিয়ে গবেষণা করা। জড় জগতের সিলেকশন প্রক্রিয়া তিনি চমৎকারভাবে কিছু ধারণার সাহায্যে ব্যখ্যা করেছিলেন। জড়জগতে জীবজগতের মত রেপ্লিকেশনের মাধ্যমে সিলেকশন না ঘটলেও থার্মোডায়নামিক এবং কায়নিটিক সিলেকশন ঘতে। আমি তার ‘ইমারজেন্স অব লাইফ : ডারউইনিয়ান ইভলুশন ফ্রম ইনসাইড’ বইটা পড়ে চমৎকৃত হয়েছিলাম। তার কিছু কাজের নমুনা ইন্টারনেটেও পাওয়া যাবে, যেমন এখানে। ফক্স মনে করতেন প্রাক জীবনপূর্বে আনবিক স্তরেও এক ধরণের সিলেকশনের খেলা চলেছিলো। এ ধরনের সিলেকশনের বহু প্রমাণ বিজ্ঞানীরা নানভাবে পেয়েছেন (যেমন, Spiegelman, 1967; Eigen and Schuster, 1979; Julius Rebek, 1994 )। সম্প্রতি রেজা ঘাদারির গবেষণায় জীবনের প্রথম অনু পাওয়ার কথা শোনা গেছে tPNA (thioester peptide nucleic acid)-এর মাধ্যমে।
এটা নিয়ে অনেক বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক আলোচনা আছে। কেন আনবিক স্তরে কোয়ান্টাম কিংবা র্যান্ডমনেসই থাকতে হলো, সেটা এখনো বিজ্ঞানীদের জন্য গবেষণার সজীব বিষয়। এটা নিয়ে এত অল্প কথায় উত্তর দেয়া যাবে না। এ নিয়ে ঢাউস ঢাউস সব বই আছে। গনিতে স্টচাস্টিক প্রসেস বলে একটি পদ্ধতিই আছে যা র্যান্ডমনেস নিয়ে কাজ করে। আর প্রকৃতিতে র্যান্ডমন্সের অজস্র উদাহরণ আছে। অনু পরমানুর ব্রাউনিয়ান মোশন, র্যান্ডম মিউটেশন, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন, রেডিও এক্টিভ ডিকে …অনেক কিছুই প্রাকৃতিক র্যান্ডমনেসের বাস্তব উদাহরণ।
এটা হলফ করে বলা মুশকিল। ‘প্রাণের উপযোগী পরিবেশ’ বলতে কি বুঝব তার উপর এর উত্তর নির্ভর করেছে। একেবারে আইডেন্টিকাল পৃথিবীর মতো পরিবেশবিশিষ্ট গ্রহ হয়তো কাছকাছি নেই। যদিও মঙ্গল গ্রহ, বৃহস্পতি গ্রহ এবং শনি গ্রন্থের উপগ্রহ টাইটানের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা আশাবাদি হওয়ায় প্রাণের সন্ধান তারা করছেন। আমি আর ফরিদ আহমেদ মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে বইয়ে এ সম্বন্ধে আলোকপাত করেছিলাম। এমন হতেই পারে যে মহাজাগতিক স্পোর পৃথিবীর মত মঙ্গল কিংবা অন্য গ্রহেও গিয়েছিলো, কিন্তু কোন কারণে প্রাণের উদ্ভব বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। কিংবা এমনও হতে পারে যে, প্রাণের উদ্ভবের পরেও সেটা কোনভাবে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আসলে আমরা পৃথিবী ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কোথাও প্রাণের অস্তিত্বের সরাসরি প্রমাণ পাইনি, যদিও সম্ভাব্য জায়গা আমরা কিছু ধারনা করতে পেরেছি – যেখানে প্রাণ বিকশিত হতে পারে। কিন্তু সত্যিকার প্রমাণ পাওয়ার আগ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যবশতঃ আমাদের আলোচনাগুলো তত্ত্বকথা এবং সম্ভাবনার মারপ্যাচেই সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে।
হ্যা অনেকটা তাই। ডাইরেক্টেড প্যান্সপারমিয়ার অনুসারীরা মনে করেন কোন মহাজগতিক উন্নত সভ্যতার হস্তক্ষেপে জীবনের স্পোর ছড়ানো হয়েছিলো। এগুলোই হয়তো জাফর ইকবাল সহ অন্যান্যরা যে সায়েন্সফিকশনগুলো লেখেন তার ভিত্তি।
আরেকটা বিষয় কিন্তু মনে রাখতে হবে। আমরা পৃথিবীতে যে ধরনের প্রাণ দেখে অভ্যস্থ তার নিরিখেই হয়তো বিচার করে ফেলি প্রাণের প্রকৃতি কিরকম হবে। কিন্তু এই সংকীর্ণ সংজ্ঞার বাইরেও প্রাণের বিকাশ হতে পারে। পৃথিবীতেই গন্ডাখানেক চরমজীবীর অস্তিত্ব দেখা যায় যারা কেরোসিন তেল কিংবা সালফিউরিক এসিডের মধ্যেও বিস্তৃত হয়েছে। আর প্রাণ বলতে যদি এমন ব্যবস্থাকে বোঝানো হয় যে, যার ভৌত ভিত্তি নির্ভর করে শক্তি সংগ্রহ, সঞ্চয় এবং তা ব্যবহারের মাধ্যমে কাজে লাগানো, তাহলে এমনকি ‘অরাসায়নিক প্রাণের’ অস্তিত্বের সম্ভাবনাও থাকতে পারে। এমনকি তা হতে পারে আয়োনাইজড গ্যাস কিংবা বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় ক্কেত্রের উপর ভিত্তি করেও। স্যার ফ্রেড্রিক হয়েলের একটা সায়েন্স-ফিকশন আছে ‘দ্য ব্ল্যাক ক্লাউড’ নামে – সেখানে আন্তঃনক্ষত্রীয় মেঘ থেকে জীবনের উৎপত্তির কথা নিয়ে প্লট রচিত হয়েছে। মুখম্মদ জাফর ইকবাল একটা সায়েন্সফিকশন লিখেছিলেন – টাইট্রন একটি গ্রহের নাম নামে – সেখানে পুরো গ্রহটাই একটা জীবন্ত প্রানী!
বিবর্তন নিয়ে আমার কিছুটা ধারণা থাকলেও তা বিভিন্ন প্রজাতি উৎপন্ন হবার প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু জড় বস্তু হতে জীব উদ্ভব প্রসঙ্গে আমার জ্ঞানের পরিধি শুন্য়। এ প্রসঙ্গে মুক্তমনার কেউ আলোক পাত করলে কৃতার্থ হব।
@FZ,
এই প্রশ্নটা আমি নিজেকে বহুবার করেছি, আজও ভেবে অবাক হই, কিন্তু এখন বিশ্বাস করি তা যে সম্ভব। বেশ কিছু লেখা মুক্তমনায়ই আছে। প্রথম পড়েছি নারায়ন সেনের ডারউইন থেকে ডি এন এ এবং ৪০০কোটি বছর বইয়ে।
@FZ, এ ইন্টারনেটে বাংলায় এ বিষয়গুলো নিয়ে জানতে হলে মুক্তমনা ছাড়া মনে হয় গতি নেই। প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে একটা আস্ত ই-বুক রাখা আছে এখানে,
http://www.mukto-mona.com/Articles/life/index.htm
আর বিবর্তন নিয়ে আপনার জানার পরিধি বাড়াতে চাইলে এই
ই-বুকটি পড়তে পারেন,
http://www.mukto-mona.com/Articles/bonna/book/index.htm
সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো এ দু’টো বইই বাংলায় পাব্লিশড বই এর অংশ, অবসরের মত প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত এবং একাডেমিয়ার বিভিন্ন শিক্ষকের রিভিউ করা বই।
@রাহাত খান,
লিংক গুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ.
এমন সিম্যুলেশন নিয়ে জানাটা খুব দরকার ছিল। ভবিষ্যতে এ ধরণের সিম্যুলেশনগুলো আরো অনেক সফিস্টিকেটেড হবে নিশ্চয়ই।
ফ্রেড হয়েল এর ব্যাপারটা সবাইকে পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য ভবিষ্যতে এই লেখাটা কাজে লাগবে। অভিজিৎ দার প্রতিটা লেখাই একটা গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স হিসেবে থেকে যায়।
শুনছি এই পুরা লেখাটা আপনি এক দিনে লেখছেন… শুনে আকাশ থেকে পড়ছি। কেমনে লিখেন সেই রহস্যটা ক্লিয়ার করেন…
@শিক্ষানবিস,
অনেক ধন্যবাদ। আরে না একদিনে কি আর লেখা হয় নাকি। মাথায় ঘুরতেছিলো এমনিতেই। ছোট খাট নোট নিয়া রাখসিলাম। তবে কম্পিউটারের সামনে কাটাইছি একটা পুরাদিনই। সেইটাই মনে হয় তিল থেকে তাল হইছে।
ফ্রেড্রিক হয়েলের ‘বোয়িং তত্ত্ব’ তো আই,ডি ওয়ালারা লুফে নেবেই। কারণ তিনি একজন বিজ্ঞানী। কিন্তু হয়েলের ‘বোয়িং তত্ত্ব’, প্যালির ‘ঘড়ি তত্ত্ব’ আর আমাদের আব্দুর রহমান বয়াতির “একটা চাবি মাইরা, দিছে ছাইরা” তত্ত্বের মধ্যে গূণগত কোন পার্থক্য নাই।
বয়াতির গানে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের কথা, আর হয়েলের ‘বোয়িং তত্ত্বে’ মূর্ত হয়েছে বিবর্তনবিজ্ঞানে তাঁর মনগড়া অবিশ্বাসের কথা। প্রথমজন বুঝতে পারেন নি, দ্বিতীয়জন বুঝতে চান নি – প্রাকৃতিক নির্বাচন কিভাবে কাজ করে।
পরিসংখ্যান বিদ্যার (স্টাটিস্টিক্স) সম্ভাব্যতা তত্ত্বের অপব্যাখ্যা আর অপপ্রয়োগের একটা ভালো উদাহরণ হয়েলের বোয়িং তত্ত্ব।
জ্ঞানগভীর এই লেখাটার জন্য অভিজিৎকে ধন্যবাদ। বিবর্তন তত্ত্বকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য এই লেখা আমার মতো অনেকেরই কাজে লাগবে। বাংলায়তো বটেই, ইংরেজীতেও এমন তথ্যসমৃদ্ধ লেখা খুব একটা পাওয়া যায় না।
@ইরতিশাদ ভাই,
আপনার মন্তব্য সব সময়ই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে একাডেমিয়ার সাথে যুক্ত থাকায় নিঃসন্দেহে আপনি পরিসংখ্যানের মার-প্যাচগুলো ভাল বুঝবেন।
যেখানে অনেকেই লাইনচ্যুত হয়ে ছদ্মনাম নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অযথা কোলাহল করে যাচ্ছিলো, আপনার মন্তব্যটি আমাদের ট্র্যাকে ফেরত আনতে সহায়তা করবে।
ইরতিশাদ ভাই, এবার বিবর্তনের সাক্ষ্যপ্রমাণ-এর ২য় পর্বটি দেয়ার সময় হয়ে গেছে। আমরা কিন্তু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি পর্বটির জন্য।
টেকনিক্যাম সমস্যার কারণে আগন্তুক দার কমেন্ট অপশন কাজ করছে না।উনি আমাকে মেইলে একটা জবাব পাঠিয়ে যেটা উনি পোস্ট করতে অনুরোধ করেছেন।নিচের অংশটুকু আগন্তুকের নিজস্ব বক্তব্য,
@ আগন্তুক ভাই,
ফরিদ ভাই একজন সাধারণ ব্লগার হিসেবেই তাঁর কথা বলেছেন, এটাকে মডারেটরদের অফিসিয়াল বক্তব্য বলে না ভাবার অনুরোধ করবো। আর উনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে বন্যাপা, পথিক, অভিজিৎ দা, আপনি যুক্তিদিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলেন। আশাকরি, উনি উনার অবস্থান পরিষ্কার করবেন। তার আগে আমরা উত্তেজিত না হই, আমরা আমরাই তো!
@রায়হান আবীর,
হ্যা, আমরা যেন ভুলে না যাই একজন মডারেটরের ও নিজস্ব একটা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে আর আমরা সকলেই এর সাথে প্রয়োজনে দ্বিমত পোষণ করতে পারি। যেমন আমি ফরিদ ভাইয়ের সাথে মোটেও একমত নই।
আমরা এতজন ব্লগার এখানে আছি, আমাদের মধ্যে রাগ, অভিমানসহ যেকোন ধরণের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটতে পারে কিন্তু সবার শেষে আমাদের মনে রাখতে হবে মুক্ত-মনা আমাদেরই আঙ্গিনা।
অভিজিৎ দা অনেক পরিশ্রমের একটা লেখা দিয়েছেন আমাদের জন্য। আসুন আমরা সবাই এ নিরর্থক বিতর্ক বাদ দিয়ে মূল লেখায় ফিরে যাই।
@পথিক,
এত হতাশ হবার কিছু নেই। ফরিদ ভাই মডারেটর হিসেবে তার অভিমত দেননি, আমার ধারণা দিয়েছেন একজন মুক্তমনা সদস্য হিসেবে। সবারই বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন অভিমত থাকতে পারে। আলোচনা সমালোচনাতেই আমরা গন্তব্যে পৌছুবো। আমি ছাড়াও রায়হান বন্যা তো দ্বিমত প্রকাশ করেছেই। এর বাইরে এত ঘটা করে রাগান্বিত ভাষায় চ্যাচামেচি করার কিছু নেই। তোমার নিজের মন্তব্যটাই বরং অনেক পরিশিলীত ছিলো।
@অভিজিৎ ভাই,ওটা আমার মন্তব্য ছিল না ছিল,আগন্তুক ভাই এর।উনি যেটা পাঠিয়েছেন সেটাই পোস্ট করেছি অবিকল ভাবে। ”এর বাইরে এত ঘটা করে রাগান্বিত ভাষায় চ্যাচামেচি” আমি করি নাই, করবোও না।
তবে আমিও কিছুটা কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে যে আমি কখনোই শুধু পোস্ট দিয়ে কর্তব্য সারা হয়েছে বলে মনে করি না।একাডেমিক ব্যস্ততার মাঝেও আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আপনাকে,বন্যা আপু,রায়হান ভাই,শিক্ষানবিস,সৈকত ভাই কে মেইল দিয়ে,তথ্যসূত্র এনে,ইবুক পাঠিয়ে পোস্ট বা বই লেখার কাজে যতটা পারি সাহায্য করি। নতুন সদস্য আনার চেষ্টা করি,কয়েকজন কে বলে কমেন্ট করিয়েছি ও।শুধু নিজের লেখার কমেন্ট করে নয়,নতুন যারা আসেন ব্লগে তাদের স্বাগত জানিয়ে,কমেন্ট করতে উৎসাহ দেই।তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে,লিংক জোগান দিয়ে সাহায্য করি।এই সব করে আমি সাধু সাজতে চাই না কারণ আমি মুক্তমনাকে নিজের ওয়েবসাইট মনে করি।মুক্তমনা আমার জীবনে কতটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে সেটা আমি আপনাকে এবং বন্যা আপুকে জানিয়েছিও। নিজ মুখে নিজের গল্প করতে চাই নি কিন্তু এরপর ও মডারেটররা যদি এমন মন্তব্য করেন তবে যে কারো অভিমান হতেই পারে।আমি এই বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করব না।আশা করি মুক্তমনা মডারেটর ফরিদ আহমেদের মন্তব্য এই বিষয়ে ইতি টেনে দেবে।
@আগুন্তুক,
আপনার এই মন্তব্যটা ব্যক্তি আক্রমণের আদর্শ মন্তব্য হিসেবে মুক্তমনার আর্কাইভে রেখে দেয়া যেতে পারে।
ছদ্মনামের নিরাপদ আশ্রয়ে বসে থেকে এরকম অশালীন, অবিবেচক এবং রূঢ় মন্তব্য করে ফেলাটা খুবই সোজা। আমি নিশ্চিত, আসল পরিচয়ে হলে আপনি ঠিকই করতেন না এধরণের মন্তব্য। পরিচয় গোপন রেখে টয়লেটে যা ইচ্ছা লেখা যায়, জানা থাকলে করা যায় না সেটা।
ছদ্ম পরিচয়ের আড়ালের মানুষটাও যদি ছদ্ম না হয়ে থাকেন, তবে ধরে নিচ্ছি আপনি একজন ছাত্র মানুষ। আপনার যে বয়স হবার কথা তার চেয়ে বেশি বছর আমি বাংলাদেশে কাটিয়ে এসেছি। বিদেশে আমি আকাশ ফুঁড়ে আসিনি। আমার রক্ত, ঘাম, পরিশ্রম, সংগ্রাম আর সাহস এখনো মিশে আছে ওই মাটিতে। কিন্তু, সেগুলো নিয়ে আপনার মত নাঁকিকান্না করতে চাই না আমি। শুধু এইটুকুই কামনা করি, কোন কারণে যেন বিদেশের আরাম আয়েসে আপনাকে আসতে না হয়।
আমি নিতান্তই ব্যক্তিগতভাবে একটা মন্তব্য করেছিলাম। সেই মন্তব্যের জের ধরে আমার মডারেটর পরিচয়কে টেনে আনা আর সেটাকে বিদ্রুপ করার কোন অর্থ খুঁজে পেলাম না আমি। আমি ওই মন্তব্য মডারেটর হিসেবে করি নাই, নিজের নামেই করেছিলাম।
যে কোন বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিমত থাকতেই পারে, তাই না? সেটাকে এত বিশাল রূপ দেবার মানেটা কি? ছদ্মনাম নেয়াটা যদি কারো ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় হতে পারে, তবে পাঠক হিসাবে সেটাকে অপছন্দ করার অধিকারও আমার আছে বলেই আমি মনে করি।
ভাইজানেরা, আসেন সবাই মিলা মাথা ঠান্ডা রাখি। ছদ্মনাম পদ্মনাম নিয়া ভ্যাগ ভ্যাগ না কইরা কিংবা হাবি জাবি ইস্যু বাদ দিয়া হয়েল বোয়িং লইয়া আলোচনা করি আসেন। জঞ্জাল থেইকা এক ফুঁ-এ এত বড় একটা বিমান হইয়া গেলো, কারো কোন মাথাব্যাথা নাই? বড়ই আপসোস!
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই, আগুন্তুকের মন্তব্যটাকে সিরিয়াসলি নেবেন না আশা করি। আসলে সে যে পরিবেশে থাকে, আমার জানামতে সম্ভবত খুব নার্ভটেনশানে থাকতে হয়। তাই মন্তব্যে একটু তীব্রতা। আসলে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে থেকে এবং দুঃখজনক কিছু ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষি ও ভিকটিম হওয়ায় তার অনুভূতিটা আমাদের থেকে একটু ব্যতিক্রম অবস্থায় রয়েছে হয়তো।
এটাকে অন্যভাবে না নিলেই বরং তাদের কাছে আমাদেরকে সহানুভূতিশীল মনে হবে।
তারা তাদের দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্ত হোক এই কামনা করি।
ঁ অভিজিৎ দা,
লেখাটা দারুণ লাগলো ! এতো গবেষণার সময় পান কখন ! আপনাকে কুর্নিশ করি।
@ফরিদ আহমেদ,
আশ্চর্য হলাম আপনার কমেন্ট পড়ে।একজন ‘মুক্তমনা’ ব্লগার যদি এই ভাষায় কমেন্ট করেন তবে আশ্চর্য হতেই হয়।আগুন্তুককে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। উনি যে পরিবেশে থেকে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর মোকাবেলা করে জীবনবাজি রেখে যেসব সাহসী লেখা আমাদের উপহার দিচ্ছেন তা আসলেই অকল্পনীয়!তিনি সহ অনেকেই বাংলাদেশের মৌলবাদের প্রাণকেন্দ্রে বসবাস করে বারংবার মৃত্যুর হুমকি উপেক্ষা করে এইসব লেখা লিখছেন। মৃত্যুর হুমকি উনার জীবনের প্র্যত্যহিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।উনার ভয়াবহতম অভিজ্ঞতাগুলো উনি কখনোই ব্লগে তুলে ধরেন না তারপর ও তাকে নাকিকান্নার অপবাদ সইতে হল! আমি ছদ্মনামে লিখি তাই ফরিদ ভাই এর মন্তব্য আমাকে সহ সব ছদ্মবেশি(!) মুক্তমনাকে আঘাত করেছে।আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করায় আগন্তুক দা আমার অনুরোধে তার নিজের এবং অন্যান্য ছদ্মনামী ব্লগারদের পাশে দাঁড়িয়ে মন্তব্য করেছিলেন যা আমি পোস্ট করেছি। অভিজিত রায়,বন্যা আহমেদ,রায়হান আবীর,সৈকত চৌধুরী,ব্রাইট স্মাইল,রণদীপম বসু সহ যারা বিষয়টা বুঝে ছদ্মনামের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তাদের সবাই কে আন্তরিক ধন্যবাদ।
এইবার আপনার কমেন্টের লাইন বাই লাইন আসা যাক।
যদি আগন্তুক এর মন্তব্য ‘ব্যক্তি আক্রমণের আদর্শ মন্তব্য’ হয় তাহলে আপনার প্রথম মন্তব্যটি ব্যক্তি ও দলগত আক্রমণের দোষে দায়ী।আমার ব্যক্তিগত মতামত হল আপনার মন্তব্যে ছদ্মনামে যারা লেখেন তাদের সবাইকেই হেয় করা হয়েছে।আর আপনার পরের মন্তব্যটায় ব্যক্তিবিশেষের প্রতি বিদ্বেষ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এটাই বরং আর্কাইভে স্থান পেতে পারে।
ব্যক্তিগত আক্রমণের সংজ্ঞা কি?আকাশ মালিক,অভিজিত রায় বা আগন্তুক যখন কোন ভুল মতবাদের সমালোচনা করেন তখন তো সেই মতবাদধারী ব্যক্তিটির সমালোচনা করতেই হয়।এ হিসেবে আকাশ মালিক ভাই এর পুরো বইটাই ব্যক্তি আক্রমণের অজুহাতে বাতিল করতে হয়!রবীন্দ্রনাথ জীবিত থাকলে হুমায়ূন আজাদের প্রবন্ধে বা অভিজিত রায়ের লেখায় তাঁর উপর ব্যক্তিগত আক্রমণ হয়েছে বলে নাকিকান্না জূড়লে পরিস্থিতি কেমন হত?মুক্তমনায় ”বিপ্লবের রবীন্দ্র পূজা” ধরণের লেখাও এসেছে এবং সংগত কারণেই।সেগুলো যদি ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত না হয় তা হলে আমার সমর্থনে আগন্তুকের মন্তব্য কি দোষ করল?
এই কথা গুলোতে আগন্তকের মন্তব্যকে অশালীন, অবিবেচক এবং রূঢ় বলে দেয়া হয়েছে।আসল পরিচয়ে এই মন্তব্য করতে না পারার অক্ষমতাকে আবারো বিদ্রুপ করা হয়েছে।অথচ আপনি আসল পরিচয়েই এই সব অগ্রহণযোগ্য কমেন্ট করেছেন।
আপনি দেশে থাকেন না কেন,সরকারের অর্থে দেশে পড়াশোনা করে,দেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে, কেন বিদেশ-বিভুঁই এ পড়ে আছেন এটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।এ প্রসংগে আমি কিছু বলব না।একজন ব্লগারকে ‘ছদ্ম মানুষ’ হিসেবে সন্দেহ করে কি তৃপ্তি পান জানি না।দেশে আপনার কি অবদান ছিল সেটাও জানি না।তবে এটা বলতে চাই আগন্তুক বা আমি কেউই মুক্তমনায় কেন লিখি সেটা নিয়ে নাঁকিকান্না করি না।যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বসে আমরা কিভাবে লিখে চলেছি সেটার উল্লেখ করা মোটেও অপ্রাসংগিক নয়।বরং অপ্রাসংগিক ‘ছদ্মনামে কেন লেখা হয়’ সেটা নিয়ে ‘নাঁকিকান্না’ করা।
আপনি কিভাবে বিদেশে গিয়েছেন তা জানি না তবে একজন মুক্তমনা সদস্য যেন কোনভাবেই বিদেশের আরাম ভোগ করতে না পারেন এমন ‘বদ-দোয়া’ কোন ‘মুক্তমনা’ ব্লগার(এবং সেই সাথে মডারেটর-যদিও তার বক্তব্যকে এখানে আমি একজন সাধারণ ব্লগার হিসেবেই নিচ্ছি) করতে পারেন বলে আগে বিশ্বাস করতাম না,এখন বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে।এখানে যারা ছদ্মনামে লেখেন তাদের লেখাকে টয়লেট লিখনের সাথে তুলনা করে পক্ষান্তরে মুক্তমনাটাকেই টয়লেটের সাথে তুলনা করে আপনি মুক্তমনার লেখক-পাঠক সবাইকেই ছোট করেছেন।
আপনার বাকি মন্তব্যটায় আপনার মন্তব্যকে একজন মডারেটর নয় বরং একজন সাধারণ ব্লগারের মন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করতে বলেছেন। কিন্ত আমার মনে হয় না আপনার দ্বিতীয় মন্তব্যটা কোনভাবেই নিরপেক্ষ মডারেশনের হাত গলে বেরিয়ে প্রকাশিত হতে পারত। একজন সাধারণ ব্লগারের সাথে কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষণ কোন অপরাধ নয়।আমি মনে করি মুক্তমনা আমারও ওয়েবসাইট।ব্যক্তিবিশেষের কথায় অভিমান করে লেখা ছেড়ে দেয়ার পাত্র আমি নই। আমার বক্তব্য আমি স্পষ্ট করেই তুলে ধরব এবং এতে বাধা দেয়া হলে জর্জ অরওয়েলের আমিও বলতে বাধ্য হব,সব ব্লগার ই সমান কিন্তু কেউ কেউ একটু বেশি সমান।কেবল দুর্ভাগ্য এই যে এই অসাধারণ পোস্ট টা মুক্তমনা ব্লগারদের কাদা-ছোড়াছুড়ির একটা নিদর্শন হয়ে থাকল।কিন্তু আমি নিরুপায়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিই বা করার থাকে!
আগন্তুকের মত বিপদজনক পরিস্থিতিতে দেশে বসে স্বনামে মুক্তমনায় লেখার চ্যালেঞ্জটা বোধহয় কেউ নিতেই রাজি হবেন না!
@পথিক,
তুমি বলেছিলে এ নিয়ে আর কথা বলবে না, ঘোষণা দেয়ার পরও আবার একই বিষয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করা শুরু করেছ। সামান্য একটা মন্তব্যকে ঘিরে তোমরা যা শুরু করেছ সেটা দেখে আমি সত্যই দুঃখিত এবং হতাশ। ফরিদ ভাই ব্যক্তিগতভাবে ছদ্মনামে লেখা নাই পছন্দ করতে পারেন, আর সেটার জবাব তো আমি, রায়হান কিংবা বন্যা তো উত্তর দিয়েছিলামই। সেখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু তুমিই আগুন্তুকের যে রাগান্বিত মন্তব্যটা পোস্ট করেছ সেটা সত্যই ব্যক্তি আক্রমণ। মুক্তমনায় এগুলো প্রশ্রয় দেয়া হবে না – একথা আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। কে শিবির পেটায় আর কে রাজশাহীতে থেকে যুদ্ধ করছে, আর কে বিদেশের আরাম আয়েসে আছে – সেটা আমার কাছে মূখ্য নয়। মুক্তমনায় লিখতে হলে ভাষা, ব্যবহারের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের মতান্তর হতে পারে, কিন্তু ঝগড়া ঝাটি নয়। আগন্তুকের ওই মন্তব্যটা তুমি কাট এন্ড পেস্ট করার আগে এই ধরণের ঝগড়াঝাটি লাগে নি। ওই মন্তব্যটা পোস্ট করার পরই ব্যাপারটা সিরিয়াস দিকে চলে গেছে। আগন্তুকের মন্তব্যের ব্যাপারে রায়হান, রণদীপম, সৈকত সহ অন্যান্যদের মন্তব্য পড়ে দেখো। কাজেই এর দায়ভার তুমিও এড়াতে পার না। আগন্তুকের নেট কাজ করছিলো না, মুক্তমনায় তার কোন পেইজ ওপেন হচ্ছিলো না, সেটা আমি সেদিন সকাল থেকেই জানি। অথচ জায়গামত কিভাবে তার মন্তব্য এসে পড়ল তা সত্যিই অদ্ভুত। তারপরেও মন্তব্য দেয়ার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু মন্তব্য দেয়ার সময় আমাদের ভাষা এবং টোনের প্রতিও দৃষ্টি দিতে হবে।
আমি বার বারই তোমাদের সবাইকে থামতে বলছি, করজোড়ে থামতে বলছি (বলেছি এগুলো নিয়ে মেতে না থেকে আস লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করি), অথচ তোমরা সবাই সেই একই কাদায় ঘুরপাক খাচ্ছ আর কাদা ছড়িয়েই যাচ্ছ। ফরিদ ভাইয়ের সাথে আমিও একমত নই। কিন্তু একমত না হলেই সভ্যতা ভব্যতা সব ভুলে রাস্তার ভাষায় কথা বলতে হবে – তা আমি বিশ্বাস করি না।
আমি আশা করব আমার এই মন্তব্যের পর তুমি থামবে, আর ফরিদভাই তার দ্বিতীয় বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন। ব্যাপারটার ইতি কামনা করছি।
@অভিজিৎ ভাই,
আন্তরিক ভাবেই দুঃখ প্রকাশ করছি।আপনার জবাবটা আমার কাছে তেতো কিন্তু প্রয়োজনীয় লেগেছে।জবাবে হয়তো অনেক কিছুই হয়তো বলা যেত সেটা আসলে আমার-আপনার কারোর ই কোন কাজে আসত না। আমরা আসলে মানুষ হিসেবে আমরা কেউই আবেগপ্রবণতার গন্ডি পেরোতে পারি না। আমার বক্তব্য যদি কেউ দুঃখ পেয়ে থাকেন তা হলে আন্তরিক ভাবেই ক্ষমা চাচ্ছি। চোখের বদলে চোখের দাবি থেকে যেন সবাই সরে আসেন সেটা বিনীতভাবেই প্রার্থনা করি। আর এই বিষয়ে যাব না।পোস্ট সংক্রান্ত প্রশ্ন করিঃ
আচ্ছাঃ
১।বোয়িং প্লেন নিয়ে উপমাটা কি অ্যামিনো এসিড থেকে ফাংশনাল প্রোটিন তৈরির সাথে সম্পর্কিত?
২।অরিজিন অফ লাইফ নিয়ে কি অ্যাবায়োজেনেসিস তত্ত্ব টা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে?আপনার ও ফরিদ ভাই এর বইটায় প্যারপ্যান্সামিয়া সহ আরো কয়েকটা হাইপোথিসিস এর কথা পড়েছিলাম।
৩।ক্রেগ ভেন্টর আর্টিফিসিয়াল লাইফে তৈরির ব্যাপারে কতদূর এগোলেন?
৪।আচ্ছা মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি কি উত্তপ্ত অবস্থা নাকি শীতল অবস্থা?
ব্লগীয় গন্ডগোলের নায়ক(!) হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আবার দূঃখ প্রকাশ করছি।অনেক দিন পর ব্লগের জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য পরিবেশবাদীরা এখন না চেপে ধরলেই বাঁচি! :-)।
@পথিক,
তোমার এই মন্তব্যটি ভাল লাগল। ব্যাপারটা কিন্তু অনেক আগেই নিষ্পত্তি হতে পারতো। আসলে আমাদের নিজেদের গোয়ার্তুমি তো আছেই, পাশাপাশি বাইরের বিভিন্ন চলক দিয়ে প্রভাবিত হওয়ার প্রবণতা। আমার মনে হয় নিজের বিচার বুদ্ধির উপর আস্থা রেখে মাথা ঠান্ডা রাখলে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা কম। আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের সাথে ঝগড়াবিবাদ করি, তবে তা খারাপই দেখায়। যাক, আশা করছি সবকিছু ভালয় ভালয় শেষ হবে। এবারে তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া যাক –
১।বোয়িং প্লেন নিয়ে উপমাটা কি অ্যামিনো এসিড থেকে ফাংশনাল প্রোটিন তৈরির সাথে সম্পর্কিত?
উত্তরঃ আমি আগেই বলেছি হয়েল ঠিক কোন কন্টেক্সটে উপমাটা করেছিলেন তা এতোদিন পরে আর জানার উপায় নেই। তবে সৃষ্টিবাদীরা একে বিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে প্রথম থেকেই। আমার প্রবন্ধে দেখিয়েছি সেটা একেবারেই ভুল প্রয়োগ। তবে এর বাইরে অজৈবজনি বা এবায়োজেনেসিসে সেটা কিছুটা হলেও প্রযুক্ত হতে পার বলে অনেকে মনে করেনে। তবে সেটা বোধ হয় অ্যামিনো এসিড থেকে ফাংশনাল প্রোটিন তৈরিতেই সীমাবদ্ধ তা নয়। তবে অ্যাবায়োজেনেসিসে প্রয়োগের সেই ধারণাও যে প্রশ্নবিদ্ধ তা ডঃ ইয়ান মাসগ্রেভ Lies, Damned Lies, Statistics, and Probability of Abiogenesis Calculations-এ সবিস্তারে দেখিয়েছেন।
২।অরিজিন অফ লাইফ নিয়ে কি অ্যাবায়োজেনেসিস তত্ত্ব টা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে?আপনার ও ফরিদ ভাই এর বইটায় প্যারপ্যান্সামিয়া সহ আরো কয়েকটা হাইপোথিসিস এর কথা পড়েছিলাম।
উত্তরঃ আসলে জড় পদার্থ হতে জীবের উৎপত্তির ধারণাটা এত অস্বাভাবিক কিছু নয়। বেশ কিছু অংশ তো বহু আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিলো। আমি আমার বই ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’র চতুর্থ অধ্যায়ে বলেছি। সেখান থেকে আমার প্রিয় উদাহরণটা দেই। রসায়ান চর্চার প্রথম দিকে মানুষের ধারণা ছিল জৈব পদার্থ এবং অজৈব পদার্থ এক্কেবারেই আলাদা দুটি জিনিস – এদের বৈশিষ্ট্য একদম আলাদা। তারা ভাবতেন জৈব পদার্থ এক অর্থে অনন্য; কারণ জৈব পদার্থের মধ্যে লুকিয়ে আছে জীবনদায়ী শক্তি (লাইফ ফোর্স)রযা কোন অজৈব পদার্থে নেই। জীবদেহ গঠিত হয় জৈব পদার্থ দিয়ে, তাই এতে রয়েছে প্রাণশক্তির স্ফুরণ; আর অন্যদিকে জড় জগৎ তৈরী হয়েছে অজৈব পদার্থ ফিয়ে – তাই তারা প্রাণহীন ও নিথর। জৈব পদার্থের আনন্যতার ধারণাটি মানুষের মনে এতটাই স্থায়ী আসন গেড়ে গিয়েছিল, এর ভুত এখনও আমাদের কাঁধ থেকে নামে নি। এখনও আমাদের পাঠ্য বইগুলোতে ‘জৈব রসায়ন’ আর ‘অজৈব রসায়ন’ – আলাদা দু’ ভাগে ভাগ করে ছাত্রদের রসায়ন পড়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু এই সজ্ঞাত ধারণাটি হঠাৎ ধাক্কা খেল ১৮২০ সালে এসে যখন বিজ্ঞানী ভোয়েলার (Wöhler) তাপ প্রয়োগে অজৈব এমোনিয়াম সায়ানেট থেকে ইউরিয়া নামক জৈব পদার্থ উৎপন্ন করলেন:
( অজৈব এমোনিয়াম সায়ানেট) —-> ( জৈব ইউরিয়া)
এই ভাবে কৃত্রিম উপায়ে ইউরিয়া আবিস্কার করে ভোয়েলার তার শিক্ষক বার্জিলিয়াসকে চিঠি লিখে জানান : ‘প্রাণীর বৃক্ক ছাড়াই আমি ইউরিয়া তৈরী করতে সক্ষম হয়েছি।’ এরপর আরেক বিজ্ঞানী কোলবি (Kolbe) অজৈব মৌল থেকে অ্যাসিটিক এসিড তৈরী করতে সক্ষম হন। এই সমস্ত আবিস্কারের ফলে জৈব- আজৈবের মাত্রাগত পার্থক্যটুকু ঘুঁচে গেল। যারা জৈবপদার্থকে প্রথম থেকেই ‘অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ’ একটা কিছু বলে ভেবে নিয়েছিলেন, মনে করেছিলেন জীবনশক্তির সাহায্য ছাড়া কখনো জৈব পদার্থ তৈরী করা সম্ভব নয়, তাদের বিশ্বাস কিন্তু টলে গেল। এখন তো বিজ্ঞানীরা রসায়নগারে শত শত জৈব পদার্থ কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন যে, আমাদের দেহের কার্বন অণুর সাথে ওই মালবাহী ট্রাকটির সায়লেন্সার পাইপের মধ্যে দিয়ে বেরুনো ময়লা কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের ভিতর লুকিয়ে থাকা কার্বন অণুর আসলে কোনই পার্থক্য নেই। কোন জাদুকরের কেরামতিতে অজৈব পদার্থের প্রাণহীন কদাকার কার্বন অণুগুলো জৈব পদার্থে গিয়ে ‘সজীব’ হয়ে উঠছে না; কোন ‘অলৌকিক’ জীবনদায়ী শক্তি উষর, বন্ধ্যা কার্বন অণুগুলোকে বদলে দিয়ে (জৈব পদার্থের ভিতর) এগুলোকে প্রাণে প্রাণে পুষ্পিত করে তুলে না। শুধু কার্বন নয়- সেই সাথে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন, সেগুলোও কিন্তু অজৈব পদার্থ থেকে জৈব পদার্থে আসার জন্য কোন বিশেষ ‘ওহী প্রাপ্ত’ হয় না। এদের চেহারা আর বৈশিষ্ট্য কিন্তু একই রকমই থেকে যায়। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জৈব যৌগের উদ্ভব কোন রহস্যময় কারণে নয়, বরং তারা মনে করেন, সুদূর অতীতে নানারকম প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবেই অজৈব পদার্থ থেকে জৈব পদার্থের সৃষ্টি হয়েছিলো, যা ১৯৫৩ সালে ইউরে-মিলারের পরীক্ষায় অত্যন্ত সার্থকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মিলার-ইউরের কাজের কথা প্রচারিত হবার পর পরই সারা দুনিয়া জুড়ে এ ধরনের কাজের হিড়িক পড়ে যায় একেবারে। অনেকেই নানা রকম দ্রব্য মিশিয়ে বিজারকীয় পরিবেশে অজৈব বস্তু থেকে জৈব বস্তু পাওয়া যায় কিনা দেখতে শুরু করেন। এর মধ্যে পাবলোবস্কায়া ও পেসিসিস্কি (১৯৫৯), ফিলিপ এবেলসন (১৯৫৭), অরো (১৯৬৩), গ্রাসেনবেখার ও নাইট (১৯৬৫), ডোজ ও রাজেউস্কি (১৯৫৭), হারাডা ও ফক্স (১৯৬৯), গ্রথ ও ওয়েনসেফ (১৯৫৯) প্রমুখের পরীক্ষাগুলো উল্লেখযোগ্য। সবাই কিন্তু মিলার-ইউরের মতই ফলাফল পেয়েছিলেন। আর এখন তো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডার গ্রাজুয়েট রসায়ন কোর্সেই ছাত্ররা সাফল্যের সাথে মিলার-ইউরের বিখ্যাত পরীক্ষাটির পুনরাবৃত্তি করতে পারে।বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, সে সব আদিম জৈব উপাদান থেকেই কালের পরিক্রমায় গড়ে উঠেছিল প্রথম জীব।
ইউরে-মিলারের পরীক্ষায় বিজারকীয় পরিবেশে অজৈব পদার্থ থেকে জৈব অণু সফলভাবে উৎপন্ন করার পর বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা শুরু হয় জীবনের পরবর্তী ধারাবাহিকতাগুলো জানবার, বুঝবার। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার মায়ামি ইউনিভার্সিটির সিডনি ফক্সের গবেষণার কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মিলারের পরীক্ষায় পাওয়া অ্যামাইনো এসিড, আ্যাসপারটিক আর গ্লুটামিক এসিডগুলোকে নিয়ে অধ্যাপক ফক্স উত্তপ্ত করলেন – ১৩০ থেকে ১৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায়; ফলে প্রোটিনের মত একটি দ্রব্য উৎপন্ন হল। এর নাম দেওয়া হল তাপীয় প্রোটিনয়েড। এটি অনেক দিক দিয়েই প্রকৃতিতে পাওয়া প্রোটিনের মত। অধ্যাপক ফক্স, এই সব প্রোটিনয়েডকে পানিতে সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে পেলেন অনেকটা আদি কোষের মত দেখতে ঝিল্লিবদ্ধ প্রোটিনয়েড মাইক্রোস্ফিয়ার। অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখলে এগুলোকে একেবারে আদি কোষের মত দেখায়; শুধু তাই নয় – ল্যাবরেটরীতে উৎপন্ন এই মাইক্রোস্ফিয়ার গুলোকে কৃত্রিম ভাবে জীবাশ্মে পরিণত করেও দেখা গেছে প্রায় তিনশ কোটি বছর আগেকার প্রাথমিক জীবাশ্ম গুলোর সাথে এর অবিকল মিল! কাজেই অজৈব পদার্থ থেকে জীবের উৎপত্তির ধারনার বেস একেবারে ফেলনা নয়।
এর বাইরেও আরেকটা তত্ত্ব আছে যাকে বলে প্যানস্পারমিয়া। এটা মনে করে পৃথিবীর প্রথম প্রাণের বীজ এসেছিলো মহাশূন্য থেকে। উনবিংশ শতকের শেষার্ধে যখন স্বতঃজননবাদ গ্রহনযোগ্য বিবেচিত হচ্ছিল না, তখন প্রাণের উৎপত্তির পেছনে অন্য একটি অনুকল্প প্রস্তাবিত হয়। তার মূল কথা হল জীবনের প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল মহাবিশ্বে। সেখান থেকে পৃথিবীতে জীবন এসেছে। এ অনুকল্পের নাম বহির্বিশ্বে জীবনের উৎপত্তি তত্ত্ব। প্রথম দিকে রিখটার, আরহেনিয়াস (তাঁর অনুকল্পের নাম ছিলো ‘প্যানস্পার্মিয়া’, এবং পরবর্তীতে ব্রুকস, শ’, ক্রিক, হয়েল, বিক্রমসিংহ প্রমুখ এই তত্ত্বের প্রচারক ছিলেন। তাদের মতে পৃথিবীর বাইরে কোন গ্রহে বা অন্য কোথাও জীবনের উৎপত্তি হয়েছিল। সেখান হতে প্রাণ স্পোর বা অনুবীজ হিসেবে পৃথিবীতে এসেছিল। কিন্তু মহাশূন্যের পরিবেশ এই আন্তঃগ্রহ পরিভ্রমনের জন্য এতই প্রতিকুল (নিম্নমাত্রার তাপ, বায়ুর অনুপস্থিতি, উচ্চশক্তির বিকিরণ, অকল্পনীয় দূরত্ব ইত্যাদি) যে এভাবে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ এবং টিকে থাকার সম্ভাবনা প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। কার্ল স্যাগান আর শকোভস্কি ১৯৬৬ সালে অনুজীবের আন্তঃনাক্ষত্রিক পরিভ্রমণের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আরেকটি ব্যাপারে রহস্য ছিল। এতদিনকার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে সমস্ত অ্যামাইনো এসিড উল্কাপিন্ডের উপর ভর করে এই পৃথিবীতে এসেছে সেগুলোর সাথে পৃথিবীতে তৈরী অ্যামাইনো এসিডের পার্থক্য রয়েছে বিস্তর। মহাকাশের উল্কাপিন্ডের সাথে আসা অ্যামাইনো এসিডগুলোর মধ্যে কিছু বামাবর্তী এবং কিছু ডানাবর্তী ফলে এগুলোর কোন আলোক ক্রিয়া নেই। কিন্তু পৃথিবীতে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী অ্যামাইনো এসিডগুলো সবই বামাবর্তী । এ ছাড়া এমন কিছু অ্যামাইনো এসিড উল্কাপিন্ডে পাওয়া গেছে যেগুলো পৃথিবীর কোন জীবে দেখা যায় না। তাই অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করতেন এ সব অ্যামাইনো এসিড থেকে পৃথিবীর অ্যামাইনো এসিড তৈরী হতে পারে না। তবে সাম্প্রতিক কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা এর বিপরীতে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
তা ছাড়া প্যানস্পারমিয়ার আদি আরেকটি সমস্যা তো রয়েই গেছে – প্রাণের বীজ পৃথিবীর বাইরে বা মহাশূন্য থেকে এলে সেই বীজটি মহাশূন্যেই বা কিভাবে তৈরি হল সেটাও আমাদের বলতে হবে। স্রেফ পৃথিবীতে সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না বলে একধাপ পেছনে গেলে তো আর সেটা প্রকৃত সমাধান নয়।
৩।ক্রেগ ভেন্টর আর্টিফিসিয়াল লাইফে তৈরির ব্যাপারে কতদূর এগোলেন?
উত্তরঃ বলা মুশকিল। বিজ্ঞান সাময়িকী ডিস্কভারের ২০১০ সালের জানুয়ারী -ফেব্রুয়ারীর সংখ্যায় জেনেটিসিস্ট ক্রেগ ভেন্টরের “সিন্থেটিক লাইফ’” নিয়ে একটা সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারে ভেন্টর মত প্রকাশ করেছেন যে, কৃত্রিম জীবন তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে আছেন বিজ্ঞানীরা। রসায়নাগারে কৃত্রিমভাবে ভাইরাস তৈরী করার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে অনেক দিন হল; ২০০৩ সালে প্রথম সিন্থেটিক ভাইরাস তৈরী করা হয়েছিল – এবং তা ১০০% নিখুঁত। পোলিও ভাইরাস সহ দশ হাজার প্রজাতির ভাইরাস তৈরী করা গেছে ভাইরাসের জিনোম পর্যবেক্ষন করে এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাহায্যে। এক ব্যাক্টেরিয়া থেকে অন্য ব্যাক্টেরিয়াতে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াও সফল হয়েছে। তিনি মনে করেন আর আগামী দুই বছরের মধ্যেই আদি কোষ বা প্রোক্যারিওট আর দশ বছরের মধ্যে প্রকৃত কোষ বা ইউক্যারিওট বানানো সম্ভব হবে। এমনকি তার ‘সিন্থেটিক লাইফের’ গবেষণা অদূর ভবিষ্যতে “মলিকিউলার বায়োলজি”কে প্রতিস্থাপন করতে চলেছে বলে ভেন্টর মনে করেন। কিন্তু মুশকিল হল – বেশ ক’বছর ধরেই তিনি এগুলো বলে চলেছেন। কাজেই আমি এর বাইরে বেশি কিছু জানি না।
৪।আচ্ছা মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি কি উত্তপ্ত অবস্থা নাকি শীতল অবস্থা?
উত্তরঃ আপাততঃ আমার ঘুমন্ত অবস্থা। ঘুমাতে যাই। পরে আবার কখনো মহাবিশ্বের উত্তপ্ত/শীতল অবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে।
ভালো থেকো।
@পথিক, একমত।
বরাবরের মতোই অসাধারণ একটি লেখা। আর তাই সর্বাগ্রে অভিজিৎ দা’র জন্য এই অধমের পক্ষ থেকে রইল একটা আন্তরিক ধন্যবাদ।
লেখায় বেশ কিছু ব্যাপার যোগ করা যেত। যেমন, প্রবাবিলিটির ক্ষেত্রে অনেকেরই একটা ভুল ধারণা আছে যে, ১/১০০ যদি কোন ঘটনার সম্ভাব্যতা হয়ে থাকে তবে সেটি ঘটবে ১০০টির মধ্যে ঠিক ১০০ নাম্বারে গিয়ে। কিন্তু বাস্তবে ১/১০০,০০০ সম্ভাব্যতার কোন ঘটনাও কিন্তু ঘটে যেতে পারে ঠিক প্রথম চান্সেই। সে হিসেবে প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনা যতই কম হোক না কেন, একদমই যে হবে না তা বলা যাবে না। আবার জীবের সংখ্যা যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে কোন প্রজাতির একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিবর্তনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় পৌঁছানোর সম্ভাব্যতাও বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি মাত্র বানরের ঘাড়ে যদি হ্যামলেট লেখার দায়িত্ব চাপিয়ে না দিয়ে এক লক্ষ বানরকে সেটি দেয়া হত, তাহলে অনেক অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটা হ্যামলেট বেড়িয়ে আসতো। এ প্রসঙ্গে ইয়ান মাসগ্রেভের উপমাটা কপি-পেস্ট করে মন্তব্যটাকে কিঞ্চিত ভারী করার লোভ সামলাতে পারছি না।
@অভিষেক খান,
অনেক ধন্যবাদ, সুচিন্তিত মতামত প্রদানের জন্য। আপনার মতা মত থেকে দুটো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের উল্লেখ পেলাম।
আমার ধারণা ছিল – এই ব্যাপারটা কিন্তু আমি পরিস্কার করেছি আমার লেখায়। আমি লিখেছিলাম – কম সম্ভাবনার ঘটনা যে ঘটে না তা নয়। অহরহই তো ঘটছে। ভূমিকম্পে বাড়ী-ঘর ধবসে পড়ার পরও অনেক সময়ই দেখা গেছে প্রায় ‘অলৌকিক’ভাবেই ভগ্নস্তুপের নীচে কেউ বেঁচে আছেন। এই যে হাইতিতে বিশাল ভূমিকম্প হল কিছুদিন আগে, প্রায় পনেরো দিন, এমনকি একটি ক্ষেত্রে ২৭ দিন পরেও জীবন্ত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে । নিউইয়র্ক টাইমস-এ একবার এক মহিলাকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল যিনি দু দুবার নিউজার্সি লটারির টিকেট জিতেছিলেন। তারা সম্ভাবনা হিসেব করে দেখেছিলেন ১৭ ট্রিলিয়নে ১। এত কম সম্ভাবনার ব্যাপারও ঘটছে। কাজেই সম্ভাবনার নিরিখেই প্রাণের উৎপত্তি এবং সর্বোপরি জটিল জীবজগতের উদ্ভব যত কম সম্ভাবনার ঘটনাই হোক না কেন,ঘটতে পারেই। কিন্তু তারপরেও আমি যে বিষয়টাতে গুরুত্ব দিতে চেয়েছি – সেটা হল – জীববিজ্ঞানীদের কাছে স্রেফ সম্ভাবনার মার-প্যাঁচ থেকেও ভাল উত্তর আছে, প্রাণের আবির্ভাব এবং বিবর্তনের পেছনে। আর সেই উত্তরটি হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচন। আমি ব্যাখ্যা করেছি যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন জিনিসটা কোন চান্সের খেলা নয়।
আমার প্রবন্ধের আয়তন এমনিতেই হাতীর মত হয়ে গেছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও সব গুলো পয়েন্ট কভার করা সম্ভব হয়নি। তবে আপনার মন্তব্য পাবার পরে ব্যাপারটির গুরুত্ব অনুধাবন করে “টক অরিজিন সাইটে ডঃ ইয়ান মাসগ্রেভ Lies, Damned Lies, Statistics, and Probability of Abiogenesis Calculations প্রবন্ধে হয়েলের অজৈবজনি (Abiogenesis) সংক্রান্ত গণনার নানা ভুলভ্রান্তির প্রতি নির্দেশ করেছেন” – এই লাইনটির পরে নীচের অংশগুলো লেখায় যোগ করলাম –
একটি ভ্রান্তি এই যে, হয়েল সম্ভাবনা পরিমাপের সময় প্রতিটি ঘটনাকে একটির পরে একটি – এভাবে সিরিজ বা অনুক্রম আকারে সাজিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতির সিমুলেশনগুলো এভাবে সিরিজ আকারে ঘটেনি, অনেকগুলোই ঘটেছে সমান্তরাল ভাবে। ফলে সময় লেগেছে অনেক কম। আপনার চারজন বন্ধুকে চারটি মূদ্রা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঝোঁকমুক্ত ভাবে নিক্ষেপের সুযোগ করে দিলে- চারটি HHHH পেতে যে সময় লাগবে,সেই একই ফলাফল (অর্থাৎ চারটি HHHH) পেতে আপনার ষোলজন বন্ধুকে লাগিয়ে দিলে অনেক তাড়াতাড়িই কাঙ্খিত ফলাফল বেরিয়ে আসবে। ঠিক একই ভাবে, একটি বানর দিয়ে পুরো হ্যামলেট পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম মনে হলেও, যদি এক লক্ষ বানরকে একই কাজে লাগিয়ে দেওয়া যায়, তবে আর সেরকম অসম্ভব কিছু মনে হবে না। সেজন্যই ইয়ান মাসগ্রেভ তার প্রবন্ধে যথার্থই বলেছেন, ‘যদি এক বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনার কোন কিছু ঘটিয়ে দেখাতে চান – তা হলে চীনের জনসংখ্যার মত চলক নিযুক্ত করে দিন’। আর ডকিন্সের মত ইয়ান মাসগ্রেভও মনে করেন …… (এরপরে বাকিটুকু আগের মতোই)
ধন্যবাদ আপনার গুরুত্বপূর্ণ ইনপুটের জন্য।
আমি শুনেছি আপনিও বিবর্তন নিয়ে লেখালেখি করেন (ফেস বুকে কি?) আপনি আমাদের সাইটের জন্য লেখা পাঠালে ভাল লাগবে। আপনার জন্য মডারেটরদের পক্ষ থেকে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছিলো। পেয়েছিলেন কি? যদি না পেয়ে থাকেন, তবে আপনার সঠিক ইমেইল এড্রেসটি এখানে রেখে যেতে পারেন। আবারো পাঠিয়ে দেয়া হবে।
@অভিজিৎ,
অভিষেক বিবর্তন সম্পর্কে আসলেই বেশ ভালো জ্ঞান রাখে 🙂
@অভিজিৎ দা, ব্যস্ততার কারণে আপনার মন্তব্যের জবাব দিতে সত্যিই অনেক দেরি হয়ে গেল। দু’দিন মাত্র আসি নি, এর মধ্যেই দেখি এখানে দারুন তোলপাড় হয়ে গেছে। যা-ই হোক, আমার মন্তব্যটাকে এত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করায় নিজেকে অনেক ধন্য মনে হচ্ছে। আর ফেইসবুকের নোটগুলোর ব্যাপারে সৈকত ভাই বলেছে নিশ্চয়ই? ওগুলো আসলে ব্লগে পাব্লিশ করার মতো মানসম্মত করে লিখি নি। বিবর্তনের ব্যাপারে বন্ধুদের আগ্রহ দেখে ভেবেছিলাম ব্যাপারটা তাদের কাছে পরিষ্কার করা দরকার। বন্যা আপুর বইটা পড়লেই বিবর্তনে মোটামুটি দখল এসে যাওয়ার কথা সবার, তবু বিবর্তনের মেকানিজমগুলো নিয়ে নিজের মতো করেই একটু বিস্তারিত আলোচনায় গিয়েছিলাম। মুক্তমনায় প্রকাশ করতে হলে আগে লেখাগুলোকে একটু সম্পাদনা করে ব্লগে প্রকাশের উপযোগী করে নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সময় এখন হাতে নেই। দু’দিন পরই পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হলে মাসখানেক পর চেষ্টা করে দেখব, কথা দিলাম। 🙂
আমার ইমেইল আইডি [email protected]। রেখে গেলাম, রেজিস্টার্ড মেম্বার হিসেবে গ্রহণ করলে যার পর নাই ধন্য হব।
আরেকটি কথা, আমি কিন্তু বয়সে রামগড়ুড়ের ছানা ভাইএর চেয়েও ছোট। তাই আমাকে ‘আপনি’ না বলে যদি ‘তুমি’ করে বলেন, তাহলে বড়ো স্বস্তি পাবো। 🙂
‘হয়েলের বোয়িং বিমানের মৃত্যু নেই’!
প্যালে ঘড়ি দিয়ে এই আর্গুমেন্টের সূচনা হলেও এমন হাজার হাজার উদাহরণ এখন পাওয়া যায়। চাইলে আমি আপনিও পণ্ডিতি জাহির করার জন্য এমন উদাহরণ দিতে পারি। যেমন, সিলিকন ভ্যালিতে ভুমিকম্পের ফলে কী কম্পিউটার তৈরী হওয়া সম্ভব?
আমি একবাক্যে স্বীকার করি যে, বিবর্তন আইডিয়াটা প্রথম শোনায় খুব বিভ্রান্তিকর। শুধু বিবর্তন শব্দটা শুনে এটাকে মেনে নেওয়া অসম্ভব। আমাদের সৃষ্টিবাদীরা সবাই শুধু শব্দটাই শুনেছে। জিনিসটার মানে কী বোঝার চেষ্টা করেন নি। তাদের সৃষ্টিবাদ প্যালিয়েণ্টোলোজি, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, হিস্টোরি সহ যাবতীয় সকল জ্ঞানকে অস্বীকার করেন। অথচ বিবর্তনতত্ত্ব পড়লে বোঝা যায়- কী যুক্তযুক্ত ব্যাপারটি।
বিবর্তন নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি লেখার সময়ই আমি খেয়াল করিছিলাম, সৃষ্টিবাদীদের সকল কথারই ঘুরে ফিরে একই মানে। এবং তাদের প্রতিটা পয়েণ্ট রিবাটাল করার সময় আমাদেরও ঘুরে ফিরে একই কথা বলতে হয়। কিন্তু তাদের চোখ খুলেনা। একজনের গোলামী করতে এদের এতো আগ্রহ কেন বুঝিনা।
বানরের উদাহরণটা দারুন দিয়েছেন। এই উদাহরণের ভক্ত আমি। আপনার লেখাটা অতিরিক্ত ভালো হয়েছে। তবে আফসোস একটাই এতো কষ্টের পরও, এতো যুক্তির পরো আপনি কাউকে কনভিন্স করতে পারবেন বলে মনে হয়না। তারা তো এই লেখা পড়বেই না। উপরে মুক্তমনা নাম দেখেই মনে দিবে, ধূর এইটা তো প্রপাগান্ডা।
@রায়হান আবীর,
হুমম। … :-/
@বিপ্লব রহমান, লেখায় বিপ্লব দিলেন না? 😉 😀
@পথিক,
অভিজিৎ দা বরাবরই এরকম ঝলসানো লেখা লেখেন, জানেন নিশ্চয়ই। তাই লেখায় বিপ্লব বা প্রতিবিপ্লব দেওয়ার বিষয়টি বাহুল্যমাত্র। :clap2:
—
অ/ট: একটি নিছক বালকসুলভ কৌতুহল, আশাকরি কিছু মনে করবেন না; আচ্ছা, বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে বা মন্তব্য করতে হলে ছদ্মনাম নিতে হবে কেনো? :deadrose:
@বিপ্লব রহমান,
আসলে ছদ্মনামে লেখার একটা কারণ আমার পারিপার্শ্বিকতা। ছদ্মনামে লেখা আমারো পছব্দ না। তাই মুক্তমনা সদস্যদের যখন মেইল করি,পরিচয় জানিয়ে দেই। আরেকটা কারণ ভবিষ্যত্বে আমি ধর্ম,মানবাধিকার এবং বিশেষত পাহাড় পরিস্থিতি নিয়ে লিখতে চাই। আপনাকে মেইলে বিস্তারিত জানাবো।
@পথিক,
ঠিকাছে। চলুক। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
ছদ্মনামের বিষয়টা আমিও খুব ভাল বুঝি না। নিরাপত্তা একটা কারণ হতে পারে বটে, তবে খুব শক্তিশালী কারণ বোধ হয় না। অভির চেয়ে বিতর্কিত বিষয়সমূহ নিয়ে বাংলাদেশী কেউ লিখেছে বলেতো মনে হয় না আমার। অতো দেখি দিব্যি নিজের নামেই সব লিখে চলেছে। কদিন আগে দেশ থেকে ঘুরেও এলো।
আমি ব্যক্তিগতভাবে যখনই টের পাই যে কেউ ছদ্মনামে লিখছে, কেন যেন আর সেই লেখার সাথে একাত্মতাবোধ করি না। অনেকেই হয়তো বলবেন যে, লেখক কেন গুরুত্বপূর্ণ হতে যাবেন, লেখাটাই আসল। কিন্তু আমার কাছে তা মনে হয় না, লেখার সাথে সাথে লেখকও আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যার নিজের নামে লেখার সাহস নেই, তার লেখা যতখানিই সাহসী হোক না কেন, যতখানিই প্রাসঙ্গিক হোক না কেন, কেন যেন সেই লেখা কোন আবেদন সৃষ্টি করে না আমার মনে। এধরণের লেখাগুলো সাধারণত এড়িয়ে যাবারই চেষ্টা করি আমি।
@ফরিদ ভাই, কিছুটা ভিন্নমত আছে। চারদিক জামাত-শিবির বেষ্টিত হয়ে দেশে বসে এইসব প্রথাবিরোধী লেখা যারা লেখেন তাদের আমি স্যালুট করি।শুধু জামাতশিবির কেন,আওয়ামীবেশি মোল্লা,বিএনপিবেশি ধার্মিক,মডারেট ধার্মিক,মৌলবাদী,জলপাইরাজাগণ,এমন কি কিছু নির্বোধ বামপন্থীও মুক্তমনা বিরোধী।
আগন্তুক,শিক্ষানবিস,নাস্তিকের ধর্মকথা,আকাশ মালিক এরা কেউ ভীতু বলে ছদ্মনাম নেয় নি, কেবল নিজের পিতৃদত্ত প্রাণটি রক্ষার জন্যই এ ব্যাবস্থা। অভি ভাই বা বন্যা আপু যদি সবসময় বাংলাদেশে বসবাস করে ঢাবি বা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে এসব লিখতেন তবে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।
আসলে ছদ্মনামে লিখতে আমারো খারাপ লাগে কিন্তু ব্লগীয় ছাগু ও মগবাজারি পেইড ব্লগারদের কল্যাণে আমার শিক্ষাজীবন এমনকি জীবন ও হুমকির মুখে পড়তে পারে। এদেশে তাসনীম খলিল সহ অনেকেই রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতেই নির্যাতিত হয়েছেন। আর অনেকেই জানে জামাত-শিবির কি পরিমাণে এইসব সংস্থায় ইনফিলট্রেট করেছে।অনেকে হয়তো স্বনামে লেখেন(অনন্ত দা,সৈকত ভাই) তাদের সাহসকে আমি সম্মান জানাই। এছাড়া মুক্তমনা সদস্যদের আমি মেইলে যোগাযোগ করে পরিচিত হয়ে পরিচয় জানিয়ে দেই।
ফরিদ ভাই ও বিপ্লব রহমান ভাইকে আমি মেইল করেছি। এছাড়া সব দেশের প্রায় মুক্তমনা সদস্যের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। বিদেশে গেলে আমিও স্বনামে লিখতে দ্বিধা করব না। সুতরাং শুধু ছদ্মনামে লেখার কারণে কারো লেখা এড়িয়ে গেলে সেটা লেখক ও তার প্রতি সুবিচার করা হবে বা বলেই আমার মনে হয়।
@পথিক আর ফরিদ ভাই,
আমার তো মনে হয় লেখকের স্বাধীনতা সব সময়ই আছে কে কোন নামে লিখবেন। আমি অভিজিৎ রায় স্বনামে লিখি বলেই অন্যদেরও লিখতে হবে এমন কোন কারণ নেই। আমরা স্বনামে লেখকদের লিখতে উৎসাহিত করি, কিন্তু তারপরেও মনে রাখতে হবে – বিপদ আপদ সবারই হতে পারে। হুমায়ুন আজাদকে তার লেখার জন্যই প্রাণ দিতে হয়েছিলো। আমি অন্ততঃ চাইনা আমার কোন কাছের কারো ভাগ্য হুমায়ুন আজাদের মত হোক মুক্তমনায় স্বনামে লেখার কারণে। আর তা ছাড়া – অনেক প্রখ্যাত লেখকই ছদ্মনামে লিখেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সিরাজুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। আর ব্লগ আসার পরে তো স্বাধীনতা আরো বেড়েছে – লেখক নিক নির্বাচন করার। অন্য ব্লগেও তাই হচ্ছে। আর বাংলাদেশে অনেকেই খুব বিপজ্জনক জায়গা থেকে ব্লগিং করেন। তাদের অহরহ থাকতে হয় মৌলবাদের থাবার নীচে। কেউ যদি সেই বিপদের কথা ভেবে একটি ভিন্ন নাম গ্রহণ করে লেখেন, তাহলে তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারি না। আমরা যেটাকে অনুৎসাহিত করতে পারি তা হল – কেউ যদি একেক সময় একেক নাম নিয়ে এসে নানা ধরণের বিভ্রান্তি ছড়ায়। আমার মনে হয়না পথিক সেটা করছেন। উনি কিন্তু পথিক হিসেবেই প্রথম থেকে নিজের মতামত তুলে ধরছেন।
আমি আমার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা বললাম। আমি নিজে স্বনামেই লিখি যদিও।
@অভিজিৎ দা,
যদিও তর্কটি মূল লেখার বাইরে হয়তো অপ্রাসঙ্গিকতার দিকেই যাচ্ছে, তবু বলি, আপনার মূল বক্তব্যের সঙ্গে একমত। লেখকের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকবে। এমনকি তিনি কোন নামে, কি বিষয়ে ও বানানরীতিতে লিখবেন, তা-ও।
কিন্তু আরজ আলী মাতুব্বর ও ড. আহমদ শরীফ এই সেদিনও এরচেয়ে বৈরি পরিবেশে, মৌলবাদের বিশাল থাবার নীচে সাহসের সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। হুমায়ুন আজাদ তো প্রাণই দিয়েছেন, কিন্তু মাথা নত করেননি। আজো তারা অনুসরণীয়।…
এর বাইরে এদেশে বাংলাব্লগে উগ্র মৌলবাদী চেতনার বিরুদ্ধে যারা সবচেয়ে সোচ্চার, তাদের প্রধান সারির দুজন অমি রহমান পিয়াল ও নুরুজ্জামান মানিক — তারা কিন্তু স্বনামে ও সপরিচয়েই সবখানে লেখেন।
অর্থাৎ, লেখক ও লেখা — দুইই আমার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে লেখাটাই মুখ্য বিবেচ্য। এসবই আমার একান্ত অভিরুচি এবং এর সঙ্গে সবাইকে একমত হতে হবে — মোটেই তা নয়।
অনেক ধন্যবাদ। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
হুমম… আপনার এই অহেতুক কৌতুহল থেকেই যাবতীয় ঝামেলার শুরু তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন :)। আসলে কে ছদ্মনামে লিখছে আর কে নয়, তা আসলে একেবারেই প্রাসঙ্গিক ছিলো না এই পোস্টে। আমাদের ব্লগে যেহেতু এ নিয়ে কোন রেস্ট্রিকশন নেই যে কেউ যে কোন নামেই লিখতে পারেন।
আপনি ইন্টারনেটের যে দুজন লেখকের লিঙ্ক দিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখেন, মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখেন, খুবই সত্যি কথা। কিন্তু মুক্তমনায় যারা লেখেন – তাদের এডেড ঝামেলা হল – তাদের অনেকেই আবার ধর্মের বিভিন্ন অসঙ্গতির বিরুদ্ধেও লেখেন। ব্যাপারটা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।
আর তাছাড়া আধুনিক বাংলা ব্লগ কালচারে যে কেউ যে কোন নিকেই লিখতে পারেন – কোন কারণ ছাড়াই। মুক্তমনাও ব্যতিক্রম নয়। এটা নিয়ে এত প্রশ্ন কেন সেটাই বোধগম্য নয়। আমি দুঃখিত আপনাকে এরকম একটা উত্তর দেয়ায়। আসলে নীচে ছদ্মনাম নিয়ে ক্যাচাকেচি দেখে আমি যার পর নাই বিরক্ত। আমি সাধারণতঃ এগুলোতে ঢুকিই না, বিষয়গত আলোচনাতেই আমার আগ্রহ বেশি।
@পথিক,
একমত। লেখাটিই মুখ্য, লেখক নয়।
@ফরিদ ভাই,
আপনার লেখা এবং মন্তব্যের বিশেষ ভক্ত আমি। আপনার চিন্তাভাবনা আমাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু নিকের ব্যাপারে মন্তব্য মানতে পারলাম না একদমই।
বিপ্লব দা,
আমার মনে বিজ্ঞান নিয়ে লিখছেন বলে কেউ ছদ্মনাম নেয়না। সবাই ছদ্মনাম নেয় সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে লেখার কারণে। কেন নিশ্চয়ই বোঝেন আপনি। কেউ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে ছদ্মনাম নিতেই পারে।
@রায়হান আবীর,
আপনার লেখারও আমি ভক্ত। এই বয়সে আপনার যে পরিপক্কতা এবং জ্ঞানের গভীরতা সেটার বিন্দু পরিমাণও আমার ওই বয়সে ছিল না বললেই চলে।
ছদ্ম নামের বিষয়ে আমার মতামতকে যে মানতেই হবে এমনতো নয়। ওটা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত অভিমত। সব বিষয়েই সবার অভিমত যে একই হতে হবে সেরকমতো কোন কথা নেই। আছে কি?
@ফরিদ আহমেদ,
স হ ম ত। :yes:
@ফরিদ আহমেদ এবং বিপ্লব, ছদ্মনামের ব্যাপারে আপনাদের সাথে একমত হতে পারলাম না। দেশে হিয়ে হুট করে ঘুরে আসা আর দেশে বাস করা কিন্তু এক না। বাইরে থেকে অনেক কিছুই বলা এবং করা সম্ভব, দেশে বসে আবার অনেক কিছুই কঠিন হয়ে যেতে পারে। আমি দেশে গিয়ে এবার দেখেছি মুক্তমনা অনেকেই পড়েন, কিন্তু এখানে লিখতে ভয় পান, কারণ, মুক্তমনায় যে মেসেজ দেওয়া হয় সেটা দেশে ৯৯% মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আবার অনেকেই আসল নামেই লিখে অনেক কিছু, সত্যি কথা বলতে কি তাদের নিয়ে আমি আসলে ভয়ও পাই যে কখন কোথায় বিপদে না পড়ে।
আরেকটা ব্যাপার, কেউ যদি ছদ্মনামে লেখে তাকে নিরুৎসাহিত করার কোন কারণ আছে বলে মনে করিনা। এটা একান্তই লেখকের ব্যাক্তিগত ব্যাপার হওয়া উচিত বলে মনে করি। ফরিদ ভাই মুক্তমনার মডারেটর, তাই অনেকে মনে করতে পারে ( এবং করেছেও) যে মুক্তমনা ছদ্মনামের ব্যাপারে এরকম দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে। তাহলে তো মুক্তমনায় ছদ্মনামে যারা লেখে তাদের সবাইকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
আর বাংলাদেশে বিজ্ঞান নিয়ে লেখা আর উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞান নিয়ে লেখা এক কথা নয়। দেশে সঠিকভাবে বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে হলে যে সব অবৈজ্ঞানিক মনোভাবের সাথে যুদ্ধ করতে হয় সেটা যে কোন সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এখনও দেশে এমন অনেক প্রকাশক আছে যারা আমাদের লেখা প্রকাশ করতে ভয় পায়। আপনারা কি জানেন যে সমকালে অভির সমকামিতা নিয়ে একটা লেখা আটকে দেওয়া হয়েছে? এ বইটা প্রকাশ করতে দেশের বড় বেশ কয়েকটা প্রকাশক রাজী হয়নি? আমার বিবর্তনের পথ ধরে বইটা থেকে বেশ কিছু লাইন উঠিয়ে দিতে হয়েছিল?
যাই হোক, আশা করবো ফরিদ ভাই আরেকটু নমনীয়ভাবে ব্যাপারটা দেখার চেষ্টা করবেন।
@বন্যা দি,
হুমম।… :-/
দারুণ হচ্ছে। চলুক।
আর, প্যাস্কেলের ওয়েজার নিয়ে লেখাটা দিলেন না!
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
ধন্যবাদ। প্যাস্কালের ওয়েজার পরের পর্বে আসার সম্ভাবনা আছে। আশা করছি ওটা হয়েলের বোয়িং তৈরি হবার মত প্রায় অসম্ভব কোন সম্ভাবনা নয়। 🙂
যা হোক, আমার ধারনা মডারেটরদের পক্ষ থেকে আপনার বর্নিল একাউণ্টে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড পাঠানো হয়েছিলো। পেয়েছিলেন কি? আমাদের সাইটের জন্য আপনার লেখা পেলে ভাল লাগবে।
এই বিষয়টা আমার একবারেই অজানা ।তবু অজানা বললে নিশ্চয় মুর্খ ভেবে অবজ্ঞা পেতে পারিনা।
একটা ব্যাপার মনকে দারুন নাড়া দিল তা হচ্ছে ” আর তা বল্লেও সমস্যা নেই । 🙂
:yes:
ফ্রেড হয়েলের আরেকটা বইয়ের একটা উদ্ধৃতি দেখলাম,
ওই সময়ে তিনি খুব সম্ভবত deist ছিলেন।
এইটা যদি ঈশপের গল্প হইত তাহলে এর সারবত্তা এইটাই হত। আজকাল কত মহাজ্ঞানী ব্লগে আবির্ভূত হয়ে বিবর্তন সম্পর্কে একবিন্দু জ্ঞান না রেখে এক ফুৎকারে বিবর্তন উড়ায়ে দেন। আসলে একটা বৈজ্ঞানিক ধারণা কত শত বছর ধরে কত ধরণের ফলসিফিকেশন টেস্ট পার হয়ে আসে সেটা কেউ বোঝে না বলেই আজ এই অবস্থা। কেবল ধর্ম থেকে মুক্তিই যথেষ্ট নয়,বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান-দর্শনে জ্ঞান ও চেতনার বিকাশ না ঘটলে অনেকের শেষ অবস্থা হয়েলের মতই হবে।হয়েলের স্থিতিশীল অবস্থা তত্ত্ব আজ বাতিলের খাতায়। হয়েল শেষজীবনে বিবর্তন মেনে নিয়েছিলেন শুনেছি । তবে তিনি আস্তিক বা নাস্তিক যাই হোক না কেন তিনি কোন ভাবেই প্রাকৃতিক নির্বাচন বুঝতেন না। জীবন সৃষ্টি বা বিবর্তন কোনটাই শুধু চান্সের মাধ্যমে হয় না,হতে পারে না। এর জন্য আছে ন্যাচারাল সিলেকশন নামের একটা মহা শক্তিশালী হাতিয়ার। এটাকে সচেতনতা-উত্তোলক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ডকিন্স। ব্লাউন্ড ওয়াচমেকার টা সবার ই পড়া উচিত এই জন্য যে তাহলে ন্যাচারাল সিলেকশনের শক্তি টা সবাই বুঝতে পারবে। যদি পড়তে কষ্ট হয় তাহলে ব্লাউন্ড ওয়াচমেকার নামের ডকুটা গুগল ভিডিও থেকে নামিয়ে দেখে নেয়া যায়।তবে সবচেয়ে ভাল হয় গ্রোয়িং আপ ইন দি ইউনিভার্স লেকচার সিরিজটা দেখলে। আমার ইচ্ছে করে লেকচার গুলো বাংলা করে সব স্কুলে স্কুলে ফ্রি বিলাতে।
আরেকটা মজার কথা বলি,আমি একবার এই বোয়িং যুক্তি ক্রাশ করায়ে দিছিলাম। 😀 আমার এক বন্ধুর(পরিচয় শুনলে অবাক হবেন,তাই ব্লগে দিচ্ছি না) কাছ থেকে প্রথম এই যুক্তি শুনি।বোয়িং এর পার্টস গুলা যেমনে জোড়া লেগে প্লেন তৈরি হতে পারে না তেমনি নাকি এত গুলা ভিন্ন ভিন্ন অ্যামিনো এসিড জোড়া লেগে একটা কার্যকর প্রোটিন তৈরি হতেই পারে না!যেমন বিশ টা অ্যামিনো এসিড দিয়ে একটা প্রোটিন তৈরি হলে এটা অটো রি আরেঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা নাকি প্রায় ১০^২০ তে এক।এমন অনেক গুলো উদাহরণ সে বুঝায়ে বলল(যার কোনটার সাথে কোনটার সম্পর্ক নেই এদের মধ্যকার চলকও হিসাবযোগ্য নয়) যাতে প্রমাণিত হয় একজন বুদ্ধিমান কেউ এর পেছনে আছে। কি আর বলব!সাধারণত এই সব তর্ক আমি এড়ায়ে চলি। কিন্তু অপবিজ্ঞান দিয়ে বিজ্ঞানকে খারিজের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আর চুপ থাকতে পারলাম না।বললাম,সৃষ্টির গঠন যত জটিল হবে তত সম্ভাবনা কমবে এর স্রষ্টার।(ডকিন্স বলেছিলেন কোথায় যেন) শুনে সে পুরা ভ্যাবাচ্যাকা।তখন তারে প্রথমে প্রোবাবিলিটি হিসাবের নিয়ম বুঝাইলাম।তারপর বললাম এই যে তুই বোয়িং নির্মাতা ঈশ্বরের গল্প দিলি,তাইলে বল যে বোয়িং এর ডিজাইনার সে ঈশ্বর এর ডিজাইন তো নিশ্চয়ই আরো অনেক জটিল আরো অনেক কার্যকর হইতে হবে। সে বলল নিশ্চয়ই। তখন সে কিছু হাদিস-কোরান উদ্ধৃত করল। ঈশ্বরের স্বরূপ বোঝাইল। আমি বললাম, দারণ তাহলে বলতো এই সর্বশক্তিমান মহাজ্ঞানী ঈশ্বর কেমনে জোড়া লাইগা তৈরি হইল।কারণ ডিজাইনারের ডিজাইনার লাগে,তারো ডিজাইনার লাগে এমনে করে তো ডিজাইনার ডিজাইন ফ্যাক্টরি খুলে বসতে হবে! তাইলে ঈশ্বর ই হইল আল্টিমেট বোয়িং ৭৪৭। সে হতবাক বলে তাই তো!তখন তাকে অক্কামের ক্ষুর বুঝাইলাম।তবে কাজ হয় নাই।এখন বলে ঈশ্বরের বেলায় নাকি এই সব জাগতিক যুক্তি প্রযোজ্য না।এমন কি প্যাস্কেলের হুমকি টাও দিল।ধর্ম পালন নাকি সেফ সাইডে খেলার মত, লাভ না হইলেও ক্ষতি নাই! আমি হাসি আর কিছু বলি নাই কারণ সে স্পষ্ট বলেছে জাগতিক যুক্তি প্রযোজ্য হবে না ঈশ্বরের ক্ষেত্রে।আমার হাতে তো কোন সুপার-ন্যাচারাল যুক্তি নাই! 🙂 তাইলে তো আমিই হইতাম আল্টিমেট ৭৪৭। :laugh:
যাই হোক অভি দাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না।এই অসাধারণ পোস্ট টায় এই মূর্খের কিছু প্রলাপ যুক্ত করার দুঃসাহস নিজ গুণে ক্ষমা করে দিবেন।প্যাস্কেলের ওয়েজার নিয়েও লিখে ফেলেন তাড়াতাড়ি।আসলে আমার ব্যক্তিগত এই সব তর্ক নিয়ে আলাদা পোস্ট দিতাম কিন্তু মনে হল একসাথে থাকলেই ভাল হবে।
ডকিন্সের “গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ” বই থেকে উদ্ধৃতি:-
@পৃথিবী, হা হা হা।ভাল উদাহরণ টা মনে করে দিলেন।সবাই আসলে ভুলে যায় একটা কোষ(জাইগোট) থেকেই আজকে প্রত্যেকে বড় মানুষ হয়েছে। you did it yourslf in nine months নামে চ্যাপ্টারটা আমার দারুণ লাগে।তবে বিবর্তন বিরোধীদের যতই বোঝান কাজ হবে না আসলে। বিশ্বাসের ভাইরাস একটা ভয়াবহ জিনিস।নিচের কমেন্ট টাতে সেটাই লিখলাম আরকি।
@পৃথিবী,
🙂 :yes: পৃথিবী আসলেই অনন্য।
আমারো খুবই ভাল লাগলো দেখে যে পৃথিবী একেবারে জায়গামত ডকিন্সের বই থেকে হালডেন এর ‘ইউ ডিড ইট ইন নাইন মান্থ’ ব্যবহার করেছেন।
হালডেন খুব বড় মাপের বিজ্ঞানী ছিলেন। বিবর্তন এবং প্রাণের উৎস নিয়ে গবেষণায় হালডেনের খুব মৌলিক কিছু অবদান আছে। বিশেষত প্রাণের উৎস নিয়ে জীবনের রাসায়িনিক উৎপত্তি তত্ত্ব নামের যে তত্ত্বটি এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক মহলে সবচেয়ে গ্রহনীয় তত্ত্ব সেটার রূপকার ছিলেন হাল্ডেন। তিনি রুশ বিজ্ঞানী ওপারিনের মতই স্বতন্ত্রভাবে গবেষণা করে একই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছিলেন। তাই এ তত্ত্বকে অনেকে ওপারিন-হালডেন তত্ত্বও বলে থাকেন। আমি মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে বইটিতে হালডেনকে নিয়ে লিখেছিলাম মনে আছে।
পাশাপাশি হালডেন খুব ইন্টারেস্টিং মানুষ ছিলেন। তার বাম রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো, যদিও স্ট্যালিন জামানায় লাইসেঙ্কোইজমের উন্মেষের পর তিনি পার্টিলাইন ত্যাগ করেন। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তো তিনি বরং সমালোচক হয়ে গিয়েছিলেন।
হালডেন শেষ বয়সে পশ্চিমা বিশ্বের সমস্ত সুযোগ সুবিধা ত্যাগ করে ভারতে চলে যান ভারতের সেবা করতে, কারণ তিনি মনে করতেন, ব্রিটিশ শাসকেরা ভারতবর্ষে ঔপনিবেসিক শাসন কায়েম করে অন্যায় করেছে। তিনি ভারতেই তার পরবর্তী গবেষণা করেন। তিনি ভারতের নাগরিকও হয়েছিলেন, এমনকি কলকাতায় থাকার জন্য ছোট একটা বাড়িও কিনেছিলেন। মজার ব্যাপার হল – ভারতে আসার পর তিনি মাছ মাংস ত্যাগ করে ভেজিটেরিয়ানও হয়ে যান। তিনি মৃত্যুর পর তার দেহ অন্ধ্রপ্রদেদেশের একটি মেডিকেলের জন্য দান করে যান।
বিজ্ঞান এবং মানবতাবাদের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য আমি জেবিএস হালডেনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। পৃথিবীকে আবারো ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
কলকাতার চিরায়ত প্রকাশন থেকে হ্যালডেনের ‘The inequality of Man & Other Essays’ প্রবন্ধসংকলনের কয়েকটির অনুবাদ বের হয় ১৯৯৩ সালে ‘মানুষের বিভিন্নতা’ নামে। শুরুতে যথারীতি প্রকাশক লেখকের শংসাধ্বনি করেছেন এভাবে, “হ্যালডেন শুধুমাত্র একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না, ছিলেন মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী সামাজিক দায়বদ্ধ এক মহান পুরুষ। সমাজতন্ত্রের প্রতি আমরণ তাঁর আস্থা ছিল।…একদিকে বিজ্ঞানের গবেষণা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞানের শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়া, এই ছিল তাঁর আদর্শ।”
তা, এই হ্যালডেনের রচনাতেই না হয় উঁকি মেরে দেখা যাক এই ‘মহান পুরুষ’-এর ‘সামাজিক দায়বদ্ধ’-তার চালচিত্র।
মন ও দেহের সম্পর্ক নিয়ে তাঁর উক্তি: “মন হলো দেহের একটি দিক এবং দেহ ছাড়া মন থাকে একথা মনে করবার পক্ষে কোন যুক্তি নেই।” বেশ ভাল কথা। বস্তুবাদীদেরই কথা, বস্তুত।
এর পরে বললেন: “মনের প্রকৃতি যদি শরীরের প্রকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হয় তার অনুসিদ্ধান্ত হবে প্রত্যেক ধরনের মানবমন ইতিপূর্বে অনন্তবার সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। শরীর যদি মনের নিয়ামক হয় তাহলে বস্তুবাদ অনন্তজীবনের ধারণা থেকে বিশেষ কিছু পৃথক নয়। আমার নিজের মন বা আত্মার অনুরূপ মন বা আত্মা অনন্তকাল ধরে ছিল এবং ভবিষ্যতেও অনন্তকাল ধরে থাকবে।” (‘মানুষের বিভিন্নতা’, পৃ: ৭৭)
একটা ঘটনা মনে পড়লো। সম্ভবত ‘৭০-এর দশকের শেষ দিকের বা ‘৮০-এর প্রথম দিকের ঘটনা। ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে কেবলই হারে। অবশ্য, সবাই-ই হারে। বোম্বের কৌতুক অভিনেতা মেহমুদ ফাস্ট বোলার তৈরির জন্যে খোদ ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকেই এক কমবয়েসি ছেলে নিয়ে এলেন। উদ্দেশ্য, ভারতের জন্যে ফাস্ট বোলার প্রস্তুত-করা। কিছুদিন পর তাঁকে প্রশ্ন করা হল যে, কী অবস্থা। তিনি বিরসবদনে বললেন, “আরে ভাই, ছেলেটা দেখি মিডিয়াম পেস শুরু করল। আর কিছুদিন থাকলে স্পিনারই না হয়ে যায়, এই ভয়ে ওকে দেশেই পাঠিয়ে দিলাম।”
হ্যালডেনও কি এই অঞ্চলের বাতাসের প্রভাবে জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠছিলেন?
তিনি বলছেন টেলিপ্যাথি সম্পর্কে: “আমি বুঝি না যে একজন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী কেন পূর্বসিদ্ধভাবে টেলিপ্যাথি বা অলোকদৃষ্টির ঘটনা বলে যা দাবি করা হয় সেগুলির সম্ভাবনা অস্বীকার করবেন। আমি নিঃসন্দেহ যেসব ঘটনার কথা বলা হয় সেগুলোর অধিকাংশ সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে প্রতারণার ঘটনা।” (The Marxist Philosophy & the Sciences-এর অনুবাদ-‘বিজ্ঞান ও মার্কসীয় দর্শন”: চিরায়ত প্রকাশন, ১৯৯০, পৃ: ১০৭)
তার মানে টেলিপ্যাথি (এখানে ভুল অনুবাদ করা হয়েছে ‘অলোকদৃষ্টি’ হিসেবে। ওটা ‘ক্লেয়ারভয়েন্স’-এর অনুবাদ।) সম্ভাব্য একটি ব্যাপার! আর কেউ কেউ প্রতারণা করেন, তার মানে এই নয় যে টেলিপ্যাথির সম্ভাবনা নেই!!
এর নাম ‘সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞানের শিক্ষাকে পৌছে দেওয়া’?
আর তাঁকে বস্তুবাদী হিসেবে উপস্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, “আমি নিজে বস্তুবাদী নই, কারণ বস্তুবাদ যদি সত্য হয় তাহলে আমার ধারণা আমরা জানতে পারি না যে সেটা সত্যি। আমার মতামতগুলি যদি আমার মস্তিষ্কের মধ্যে চলতে থাকা রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে হয় তাহলে সেগুলি নির্ধারিত হয় রসায়নের নিয়মে, যুক্তিশাস্ত্রের নিয়মে নয়।” (‘মানুষের বিভিন্নতা’, পৃ: ৬৮)
হ্যালডেন সম্পর্কে এই বাংলায় খুব উচ্ছ্বসিত ছিলেন ছায়ানট-খ্যাত প্রয়াত ওয়াহিদুল হক। তাঁর একাধিক লেখায় তিনি হ্যালডেনের বিজ্ঞানসংক্রান্ত সরস ও প্রাণবন্ত লেখালেখির প্রশংসা করেছেন। অবশ্য নিশ্চয় এর একটা বড় কারণ হ্যালডেনের মার্ক্সবাদ-সংলগ্নতা। ওয়াহিদুল হক লেনিন-কে ‘মহামতি’ বিশেষণ ছাড়া উল্লেখ করতেন না তাঁর লেখায়।
আর ডকিন্স শুনলে কী ভাবতেন? যিনি তাঁর একাধিক গ্রন্থে তাঁকে তুলে ধরেছেন তাঁর বিবর্তনসংক্রান্ত তীক্ষ্ম ও তির্যক মন্তব্যের জন্যে, তিনি কি তখন এটাই বলতেন যে মানুষ মাত্রই ভুল করে? 🙁
জানতে বড় মঞ্চায়
একটা জিনিস কিন্তু বুঝতে পারলাম না। হয়েল যদি আমরণ বিবর্তনকে সঠিক বলেই মনে করবেন, তাহলে এই বোয়িং এর উদাহরণটা দিলেন কি করে? একদিকে বিবর্তনকে সঠিক বলছেন আবার অন্যদিকে বিবর্তন ঘটতে পারে না বলছেন , তাহলে কি ওনার মাথা খারাপ ছিল বলে ধরে নিব?
@রাহাত খান,
তিনি কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে বিবর্তন তত্ত্ব গ্রহন করেছিলেন
@রাহাত খান,
হয়েল ঠিক কি মাথায় রেখে এগুলো বলেছেন তা আজ এতোদিন পরে বের করা কঠিনই। তবে, আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে, শেষ জীবনে হঠাৎ করে তিনি বিবর্তনে বিশ্বাসী হন নি, তার বিবর্তনে আস্থা ছিলো সবসময়ই। কিন্তু তিনি বোধ করি প্রাণের উৎস নিয়ে কেলিক্যাল ইভলুশন অব লাইফে বিশ্বাস করতেন না, তার পছন্দের তত্ত্ব ছিলো প্যানস্পারমিয়া। ওটা ডিফেন্ড করতেই হয়েল এই বোয়িং আমদানী করেছিলেন। সৃষ্টিবাদীরা (সম্ভবতঃ) না বুঝেই এটাকে বিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। ডকিন্স ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার বইয়ে নূলতঃ সৃষ্টিবাদীদের যুক্তিই খন্ডন করেছেন।
আমিও আমার প্রবন্ধে বলেছি – আমার আজকের প্রবন্ধটি অবশ্য হয়েল সাহেব আস্তিক নাকি নাস্তিক, সৃষ্টিবাদী না অসৃষ্টিবাদী তা নিয়ে নরক গুলজার করার জন্য লেখা নয়,বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে তার আর্গুমেন্টগুলোকে যাচাই করে দেখা যে সত্যই হয়লের বোয়িং উপমা বিবর্তনের বিরুদ্ধে কোন শক্তিশালী যুক্তি হিসেবে গ্রহনীয় হতে পারে কিনা।
এই ব্যাপারটিই গুরুত্বপূর্ণ। হয়লের মাথা খারাপ ছিলো, নাকি পেট, সেটা মূখ্য নয়।
একটি ব্যাপার উল্লেখ করতে ভুলে গেছি …
রিচার্ড ডকিন্স তার ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার বইয়ে হয়েলের ভুলকে ‘Hoyle’s memorable misunderstanding’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লেখেন (পৃঃ ২৩৪) –