আজ ডারউইন দিবস। বাংলাদেশের অনেকেই ১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইস ডে’ বা ভালবাসা দিবসের সাথে পরিচিত, কিন্তু তার দু’দিন আগের অর্থাৎ ১২ই ফেব্রুয়ারীর ডারউইন দিবসের সাথে নয়। আমরা মনে করি – বাঙালী পাঠকদের জন্য ডারউইন দিবসের ইতিহাসটা একটু তুলে ধরার প্রয়োজন । বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদের সম্মানে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ১২ তারিখে বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী চার্ল ডারউইনের জন্মবার্ষিকীতে বিশ্বজনীনভাবেই ডারউইন দিবস (Darwin Day) পালিত হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার প্যালো এল্টোর মানবতাবাদী সম্প্রদায় ১৯৯৫ সালে প্রথম ডারউইন ডে পালন করা শুরু করে এবং এর পর থেকে এটি প্রতি বছর উদযাপিত হতে থাকে বিরামহীনভাবে। বিখ্যাত সংশয়বাদী জীববিজ্ঞানী প্রফেসর মাসিমো পিগলিউসি নিজে উদ্যোগ নিয়ে ১৯৯৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব টেনেসিতে ডারউইন দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যা বছর বছর ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। আজ ডারউইন দিবস উৎসবের অনুষ্ঠানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হচ্ছে www.darwinday.org. আগ্রহীরা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য এখানে নিবন্ধিকৃত হতে পারেন। এ ছাড়াও ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সহ অনেকেই সারাদিনব্যাপী উৎসব পালন করছে। ন্যাচারাল জিওগ্রাফিক এবং সায়েন্টিফিক আমেরিকানের মত স্বনামধন্য পত্রিকা প্রকাশ করেছে ডারউইন দিবস উপলক্ষে তাদের বিশেষ সংখ্যা। সেই তুলনায় বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় এই দিনটি নিয়ে উচ্ছ্বাস কিন্তু একদমই কম। সে দিক থেকে সমকাল পত্রিকাটি ব্যতিক্রম। সমকালের কালস্রোত বিভাগের সম্পাদক আসিফ মুক্তমনার একজন শুভানুধ্যায়ী এবং ডিস্কাশন প্রজেক্টের জনপ্রিয় বিজ্ঞান বক্তা এবং সুলেখক। মুক্তমনাতেও তিনি মাঝে সাঝে লেখেন। তার উদ্যোগেই এবারের কালস্রোতে ডারউইন দিবসকে ফীচার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে কালস্রোত সমকালে বেরোয় প্রতি শনিবার। কাজেই আমাদের সেই ফীচার সংখ্যার জন্য আরো একটি দিন অপেক্ষা করতে হবে। দৈনিক সমকালের দিকে চোখ রাখুন, প্রিয় পাঠক।
আমি আসিফের ডারউইন দিবসের উদ্যোগের কথা যখনই শুনলাম – তখন থেকেই ভাবছিলাম সমকালের জন্য কি লেখা যায়। প্রথমেই মনে এলো, বিবর্তনকে সহজবোধ্য ভাবে জনপ্রিয় করেছেন কে? অবধারিত ভাবে যে নামটি প্রথমেই চলে এলো, তিনি অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স। আমি অনেকদিন ধরেই ডকিন্সের লেখা বিবর্তনের বইগুলো পড়ছি। বস্তুতঃ ডকিন্সের বই (সেলফিশ জিন) দিয়েই আমার আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার শুরু। তারপরে ধীরে ধীরে পড়ে ফেলেছি তার সবগুলো বইই। ডকিন্সের লেখা নিয়ে এন্তার তর্ক বিতর্ক মুক্তমনায় করলেও তার বইগুলো নিয়ে কোন পূর্ণাঙ্গ আলোচনা আমি কোথাও করিনি। আমি ভাবলাম ডারউন দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশী পাঠকদের জন্য রিচার্ড ডকিন্সের বইগুলো নিয়ে লেখার চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে! আর তাই এই প্রয়াস। তবে সমকালের শব্দসংখ্যার লিমিটেশনের কথা মাথায় রেখে রিভিউটাকে খুব ছোট স্কেলে আটকে রাখতে হল, যা হয়ত পাঠককে পূর্ণ তৃপ্তি নাও দিতে পারে।
:line:
রিচার্ড ডকিন্স – বিবর্তনকে জনপ্রিয় করার এক ও অদ্বিতীয় কান্ডারী
অভিজিৎ রায়
রিচার্ড ডকিন্স আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকদের অন্যতম। নিজেই আজ যেন নিজের পরিচিতি, এক কথায় জীবিত কিংবদন্তী। পেশায় বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী, তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর চার্লস সিম্নোয়ি চেয়ার ইন দি পাবলিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং অফ সায়েন্স-এর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, সম্প্রতি ২০০৮ সালে তিনি এই পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। এর আগে বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগেও অধ্যাপনা করেছেন বহুদিন। অক্সফোর্ডে প্রাণীবিদ্যায় পি.এইচ.ডি (ডি.ফিল) করেছেন ১৯৬৬ সালে; পরবর্তীতে সম্মানসূচক ডক্টোরেট ডিগ্রী পেয়েছেন ওয়েস্ট মিনিস্টার, ডারহাম, হাল সহ একগাদা নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮৯ এ ডি.এস.সি। নেচার, সায়েন্স সহ প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর শতাধিক প্রবন্ধ। বৈজ্ঞানিক মহলে শুধু নয়, এর বাইরে বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী এবং সমাজসচেতন লেখালিখির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ড. রিচার্ড ডকিন্সের খ্যাতি আজ আক্ষরিক অর্থেই তুঙ্গস্পর্শী। বিবর্তনের মত জটিল বিষয় রিচার্ড ডকিন্সের নিপুন রং-তুলিতে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে পাঠকের ক্যানভাসে; ‘ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার’, ‘সেলফিশ জিন’, ‘আনোয়েভিং দ্য রেইনবো’, ‘ক্লাইম্বিং মাউন্ট ইম্প্রোবেবল’, ‘ডেভিলস চ্যাপ্লেইন’, ‘অ্যান্সেসটর টেল’ এবং সর্বশেষ বই ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ সহ অসংখ্য পাঠকনন্দিত জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞানভিত্তিক বইগুলো যেন তারই সার্থক মঞ্চায়ন। ডকিন্স-ছন্দে বিমোহিত পাঠক আজ বিজ্ঞানের মত ‘নিরস’ বিষয়ের মধ্যেও খুঁজে পায় অনুপম মহাকাব্য। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিচার্ড ডকিন্সের লেখা নিয়ে মন্তব্য করেছে- ‘যদি বিজ্ঞান জিনিসটা কারো হাতে সত্যি সত্যি কাব্যে রূপ নেয়, তবে সে ব্যক্তির নাম রিচার্ড ডকিন্স’। সেজন্যই বোধ হয় বিজ্ঞান-লেখক হওয়া সত্ত্বেও ২০০৫ সালে অর্জন করেছেন ‘শেক্সপিয়র পুরষ্কার’ যা এতদিন কেবল সাহিত্যিকদের কপালেই জুটতো। বিজ্ঞান, দর্শন এবং সাহিত্যবোধ ছাড়াও ডকিন্সের যে ব্যাপারটি পাঠকদের আলোড়িত করে তা হল সামাজিক দায়বদ্ধতা। বিশ্বের সংখ্যালঘু নাস্তিক এবং মানবতাবাদীদের অধিকার রক্ষায় আজকের বিশ্বে এক উদীপ্ত ‘চার্বাক’ যেন তিনি! নীতি-নৈতিকতার ব্যাপার-স্যাপারগুলো যে ঈশ্বর-প্রদত্ত ‘গায়েবী’ কিছু নয়, কিংবা ধার্মিকদের একচেটিয়া নয়, তা ডকিন্সের লেখালিখিতে দিনের আলোর মতই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মানুষকে বিজ্ঞান সচেতন ও যুক্তিবাদী করে তুলতে লেখালিখির পাশাপাশি সভা-সমিতি সেমিনারের আয়োজন করছেন, কখনও বা যোগদান করেছেন নিজের আগ্রহেই, চষে বেড়াচ্ছেন সারা পৃথিবী। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের ‘চ্যানেল ফোর’ -এ তাঁর উপস্থাপনা ও গ্রন্থনায় প্রদর্শিত হয় ‘দ্য রুট অব অল ইভিল’ নামের নব্বই মিনিটের তথ্যচিত্র। ধর্ম জিনিসটা যে কেবল বহুল প্রচলিত ‘শান্তির আঁকর’ নয় বরং সময় সময় হয়ে ওঠে অশান্তি, হিংসা ও বিদ্বেষের হাতিয়ার তাই স্পষ্ট করেছেন ডকিন্স তার তথ্যচিত্রের মাধ্যমে, সেই সাথে হয়েছেন কোন কোন মহলে ‘বিতর্কিত’। সম্প্রতি নিজ উদ্যোগে তৈরী করেছেন ‘রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশন’। সাংবাদিক গোর্ডি স্ল্যাক রিচার্ড ডকিন্সকে বর্ণনা করেছেন ‘খোলস ছেড়ে বেরুনো পৃথিবীর খ্যাতনামা জীবিত নাস্তিক বিজ্ঞানীদের অন্যতম’ হিসেবে। আরেক লেখক টেরি ইগ্লেটন ডকিন্সকে অভিসিক্ত করেছেন- ‘বার্ট্রান্ড রাসেলের পর সবচেয়ে খ্যাতনামা প্রফেশনাল নাস্তিক’ অভিধায়। তাঁর ‘দ্য গড ডিলুশন’ ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০০৭ পর্যন্ত বাহান্ন সপ্তাহ ধরে নিউয়র্ক টাইমসের ‘বেস্ট সেলার’ তালিকায় ছিলো, এবং এখন পর্যন্ত ২ বইটির মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। শুধু তাঁর লেখা নয়, ডকিন্স আজ নিজেই যেন পরিণত হয়েছেন গবেষকদের ‘গবেষণার বিষয়’ হিসেবে। খোদ রিচার্ড ডকিন্সের উপরই আজ তাবৎ রথী-মহারথী বিজ্ঞানী আর দার্শনিকেরা বই লিখছেন। এমনি একটি বই ‘Richard Dawkins: How a Scientist Changed the Way We Think’। ২০০৬ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত এই বইটিতে ড. হেলেনা ক্রোনিন, ড. মাইকেল রুজ, ড. ডেনিয়াল ডেনেট, ড. ম্যাট রিডলী, স্টিভেন পিঙ্কারের মত লব্ধ-প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীরা অভিমত দিয়েছেন কেন ডকিন্সকে আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তাবিদ হিসেবে গ্রন্য করা হয়।
২০০৪ সালের প্রোসপেক্ট ম্যাগাজিনের জরিপে ব্রিটিশ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ডকিন্স ছিলেন শীর্ষস্থানে। ডকিন্স রয়্যাল সোসাইটির সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৮৭ সালে, একই বছর পেয়েছেন লস এঞ্জেলেস টাইমস সাহিত্য পুরষ্কার, লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির রৌপ পদক পেয়েছেন ১৯৮৯ সালে, ১৯৯০ সালে পেয়েছেন মাইকেল ফ্যারাডে পুরষ্কার। ন্যাকায়্যামা পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৯৪ সালে। পঞ্চম আন্তর্জাতিক কসমস পুরষ্কার পেয়েছেন ১৯৯৭ সালে, কিৎসলার পুরষ্কার পেয়েছেন ২০০১ সালে, একই বছর পেয়েছেন ইতালীর প্রেসিডেন্সি পুরষ্কার। মানবতাবাদের প্রতি বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৫ সালে নির্বাচিত হয়েছেন ‘হিউম্যানিস্ট অব দ্য ইয়ার’ । ২০০৬ সালে বিবিসির পাঠক এবং দর্শকদের ভোটে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ও নির্বাচিত হয়েছেন ড. রিচার্ড ডকিন্স।
এখানে পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডকিন্সের গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।
সেলফিশ জিন এবং এক্সটেডেড ফেনোটাইপ: রিচার্ড ডকিন্সের ‘সেলফিশ জিন’ (১৯৭৬) নামের অনন্যসাধারণ বইটি রিচার্ড ডকিন্সের প্রথম বই এবং তার শ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলোর একটি। এই বইয়ের মাধ্যমেই ডকিন্স সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করলেন কেন জেনেটিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তিনি এই বইয়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিলেন যে বিবর্তন কাজ করে জিনের উপর, একক কোন জীবের উপর নয়। তিনি তার বইয়ে দেখালেন যে, আমরা আমাদের এই দেহের পরিচর্যা নিয়ে যতই চিন্তিত থাকিনা কেন- দেহ কিন্তু কোন প্রতিলিপি তৈরি করেনা; প্রতিলিপি তৈরি করে বংশানু বা জিন। তার মানে হচ্ছে আমাদের দেহ কেবল আমাদের জিনের বাহক (vehicle) হিসেবে কাজ করা ছাড়া আর কিছুই করে না। আমাদের খাওয়া, দাওয়া, হাসি কান্না, উচ্ছ্বাস, আনন্দ, সিনেমা দেখা, খেলাধূলা বা গল্প করা – আমাদের দেহ যাই করুক শেষ পর্যন্ত ‘অত্যন্ত স্বার্থপর’ভাবে জিনকে রক্ষা করা আর জিনকে পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে দেয়াতেই উদ্দেশ্য খুঁজে নিতে বাধ্য করে, বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে জীবনের কোন ‘উদ্দেশ্য’ যদি থেকে থাকে তবে সেটাই সে উদ্দেশ্য। শুধু মানুষ নয় অন্য যে কোন প্রানীর মধ্যেই সন্তানদের প্রতি অপত্য স্নেহ প্রদর্শন কিংবা সন্তানদের রক্ষা করার জন্য মা বাবারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে। অর্থাৎ, নিজের দেহকে বিনষ্ট করে হলেও পরবর্তী জিনকে রক্ষা করে চলে। ‘পরবর্তী জিন’ রক্ষা না পেলে দেহসৌষ্ঠব যত আকর্ষনীয় হোক না কেন, বিবর্তনের দিক থেকে কোন অভিযোজিত মূল্য নেই। এক ধরণের ইঁদুর আছে যারা শুধু সঠিক সঙ্গী খুঁজে জিন সঞ্চালন করার জন্য বেঁচে থাকে। যৌনমিলনের পর পরই পুরুষ ইঁদুরটি মৃত্যুবরণ করে। অথচ এই মৃত্যুকূপের কথা জেনেও পুরুষ ইঁদুরটি সকল নিয়ে বসে থাকে ‘সর্বনাশের আশায়’। এক প্রজাতির ‘ক্যানিবাল’ মাকড়শা আছে যেখানে স্ত্রী মাকড়শাটি যৌনমিলনের পর পরই পুরুষ মাকড়শাটিকে খেয়ে ফেলে। সাক্ষাৎ এই মৃত্যুর কথা জেনেও দেখা গেছে পুরুষ মাকড়শাগুলো জিন সঞ্চালনের তাড়নায় ঠিকই তাড়িত হয়। অর্থাৎ, দেহ এবং জিনের সঙ্ঘাত যদি উপস্থিত হয় কখনো – সে সমস্ত বিরল ক্ষেত্রগুলোতে দেখা গেছে জিনই জয়ী হয় শেষপর্যন্ত। আমাদের দেহে ‘জাংক ডিএনএ’ কিংবা ‘সেগ্রেগেশন ডিস্টরশন জিন’-এর উপস্থিতি সেই সত্যটিকেই তুলে ধরে যে – শরীরের ক্ষতি করে হলেও জিন অনেক সময় নিজেকে টিকিয়ে রাখে – অত্যন্ত ‘স্বার্থপর ভাবে’ই। ডকিন্সের এ বইয়ের মূল্য একাডেমিয়ায় অনেক। এই বইয়ের মাধ্যমেই আসলে জীববিজ্ঞানীরা সমাজ এবং জীবনকে ভিন্নভাবে দেখা শুরু করলেন। বইটির নাম ‘সেলফিশ জিন’ হলেও বইটির মূল লক্ষ্য ছিলো ঠিক বিপরীত। পরার্থতা, আত্মত্যাগ, দলগত নির্বাচনের মত যে বিষয়গুলো আগে বিজ্ঞানীরা পরিস্কার করে ব্যাখ্যা করতে পারতেন না, সেগুলো আরো বলিষ্ঠভাবে জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে ব্যখ্যা করতে পারলেন তারা। তবে তার চেয়েও বড় যে ব্যাপারটি ঘটল, সেটা হল মানবসমাজের বিভিন্ন সামাজিক প্যাটার্ন ব্যখ্যা করার নতুন এক দুয়ার খুলে গেল জীববিজ্ঞানীদের জন্য।
তার পরবর্তী বই ‘এক্সটেডেড ফেনোটাইপ’-এও ডকিন্স সেলফিশ জিনের ধারণাকেই আরো প্রসারিত করেন।
ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার : ১৯৮৬ সালে লেখা রিচার্ড ডকিন্সের এই গুরুত্বপূর্ণ বইটি আধুনিক জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে প্রাচীন দার্শনিক এবং ধর্মবেত্তা উইলিয়াম প্যালের সৃষ্টির পরিকল্প যুক্তি বা ‘ডিজাইন আর্গুমেন্টের’ বলিষ্ঠ খন্ডন। উইলিয়াম প্যালে (১৭৪৩-১৮০৫)’র বিখ্যাত বই ‘Natural Theology, or Evidence of Existence and Attributes of the Deity, collected from the Appearences of Nature’ প্রকাশিত হয় ১৮০২ সালে। ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়েও প্যালে ভেবেছিলেন বিস্তর, কিন্তু নিজেই শেষ পর্যন্ত বলেছিলেন ‘বুদ্ধিদীপ্ত স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞান উপযুক্ত মাধ্যম নয়’; এ ক্ষেত্রে প্যালের ‘উপযুক্ত মাধ্যম’ মনে হয়েছিল বরং জীববিজ্ঞানকে। আর পূর্ববর্তী অন্যান্য ন্যাচারাল থিওলিজিয়ানদের মতই প্যালেও জীবজগতকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে জীবের অভিযোজনের ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। প্যালে লক্ষ্য করেছিলেন যে, প্রতিটি জীবদেহে নির্দিষ্ট কাজ করবার জন্য নির্দিষ্ট অংগ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে, যা জীবটিকে একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে টিকে থাকতে সহায়তা করে। তিনি জটিল জীবদেহকে কিংবা চোখের মত প্রত্যঙ্গকে ঘড়ির কাঠামোর সাথে তুলনীয় মনে করেছিলেন, আর তার মধ্যেই দেখেছিলেন স্রষ্টার সুমহান পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য আর নিপুণ তুলির আঁচর। বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন তার ‘প্রজাতির উদ্ভব’ বইয়ের মাধ্যমে প্যালের এই ডিজাইন আর্গুমেনটের সমাধি রচনা করেন। ডারউইন তার তত্ত্বে কারিগরের বদলে প্রস্তাব করেছিলেন একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার নাম প্রাকৃতিক নির্বাচন- যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাখ লাখ বছর ধরে ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা পরিবর্তনের ফলে চোখের মত অত্যন্ত জটিল অংগ-প্রত্যংগ গড়ে ওঠা সম্ভব। একাধিক ধাপের এই ক্রমবর্ধমান নির্বাচনের মাধ্যমে যে ধাপে ধাপে যে জটিল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উদ্ভুত হতে পারে তা ইতোমধ্যেই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত হয়েছে। রিচার্ড ডকিন্স তার বইয়ে সর্বাধুনিক আধুনিক তথ্য এবং উপাত্তের সাহায্যে সৃষ্টির পরিকল্প যুক্তির অসাড়তা সাফল্যের সাথে তুলে ধরেছেন আরো একবার। সেই সাথে বইয়ের একটি অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে স্টিফেন জ়ে গুল্ডের ‘পাংচুয়েটেড ইকুইলিব্রিয়াম’-এর প্রখর এবং গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা।
এর পরবর্তী ‘রিভার আউট অব ইডেন’ বইয়ে তিনি সাধারণ পাঠকদের জন্য বিবর্তনকে জনবোধ্য করে তোলেন।
ক্লাইম্বিং মাউন্ট ইম্প্রবেবল বইয়ে তিনি সৃষ্টিবাদীদের যুক্তি নস্যাৎ করে দেখান যে, খুব ছোট সম্ভবনা থেকেই প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে জটিল জীবজগতের উদ্ভব হতে পারে।
ডকিন্স তার পরের বইটি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে লেখেন। তার এই ‘আনউইভিং দ্য রেইনবো’ বইয়ে তিনি যুক্তি দেন যে, একটি গল্প, কবিতা কিংবা কোন সার্থক শিল্পকীর্তির মত বিজ্ঞানও বলিষ্ঠভাবে করতে পারে সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব। ঐতিহাসিকভাবে অনেকের মাঝেই একটা গৎবাঁধা প্রচলিত ধারণা আছে যে বিজ্ঞান ও কলা বা সাহিত্য বুঝি পরস্পর বিরোধী। ডকিন্স তার এই বইয়ে এই সজ্ঞাত ধারণা খন্ডন করে মত প্রকাশ করেন যে বিজ্ঞানকে তিনি একটি অনুপম কবিতার চেয়ে কম সৌন্দর্যময় মনে করেন না।
ডেভিলস চ্যাপ্লিন নামের পরবর্তী বইটি ডকিন্সের প্রবন্ধ সংকলন। তার মধ্যে বিবর্তন তো আছেই, সেই সাথে আছে ছদ্মবিজ্ঞান, ধর্ম এবং সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়েও মনোজ্ঞ আলোচনা।
অ্যান্সেস্টর টেল নামের বইটি আমাদের বিবর্তনের এক ধারাবাহিক ইতিহাসের এক সার্থক চলচিত্র। বইটি পড়লে মনে হবে – ডকিন্স তার পাঠকদের সাথে নিয়ে হোমোসেপিয়েন্স থেকে শুরু করে প্রণের উৎপত্তি পর্যন্ত বিবর্তনের এক তীর্থযাত্রা যেন সম্পন্ন করলেন।
এর পরে বেরোয় ডকিন্সের বর্ষকালীন সেন্সেশন – দ্য গড ডিলুশন (২০০৬)। এই বইয়ে ডকিন্স যুক্তি প্রদর্শন করেন যে, কোন অপার্থিব সত্ত্বার হাতে আমাদের মহাবিশ্ব, প্রাণ কিংবা প্রজাতির সৃষ্টি হয়নি, হয়েছে বিবর্তনের ধারাবাহিকতায়। তিনি তার বইয়ে ঈশ্বর বিশ্বাসকে এক ধরণের বিভ্রান্তি বা ডিলুশন বলে উল্লেখ করেছেন। বইটি ‘ব্রিটিশ বুক এওয়ার্ড’-এর জন্য নির্বাচিত হয়েছিলো।
ডকিন্সের সর্বশেষ বই ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ (২০০৯) ডকিন্সের এ পর্যন্ত পাওয়া বিবর্তনের যাবতীয় সাক্ষ্য প্রমাণের সর্বশেষ দলিল। তিনি এই বই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এর আগে আমি বিবর্তনের স্পেশাল কিছু বিষয় নিয়ে লিখেছি, এই বইটি পাঠকদের জন্য লিখেছি বিবর্তনের সার্বজনীন সত্যতা জনবোধ্যভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে।‘
বিবর্তনের উপর অতীতে লিখছেন অনেকেই, ভবিষ্যতে লিখবেনও অনেকেই। কিন্তু বিবর্তনকে জনপ্রিয়করণে ডকিন্সের মত সফল বোধ হয় কোন লেখকই হননি। যিনি ইংরেজীতে বিবর্তনের উপর একটি বইও কখনো পড়েছেন, তিনি সম্ভবতঃ রিচার্ড ডকিন্স পড়েছেন – এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। ডকিন্সের কাজে শিক্ষায়তনের গবেষকরা যেভাবে প্রভাবিত হয়েছেন, তেমনি হয়েছেন বিবর্তন না জানা বহু সাধারণ মানুষও। কখনো বা হয়ে উঠেছেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুও। এক সময় বিজ্ঞানী টি এইচ হাক্সলিকে ডাকা হতো “ডারউইনের বুলডগ’ হিসেবে, আর বর্তমানে অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স হয়ে উঠেছেন “ডারউইনের রটউইলার”।
ডারউইন দিবসে ডারউইনের রটউইলারের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
:line:
আপডেটঃ লেখাটি ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আকারে দৈনিক সমকালে (ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১০) প্রকাশিত।
আমি বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী ৷আমি ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী নয় ৷
ধন্যবাদ অভি দা কে ডকিন্সের বইগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরার জন্য ৷
মন্তব্য পরে খেই হারিয়ে ফেলি।
এখানে মোটামোটি মুক্তমনার একটা ইতাহাস পাওয়া গেল।
শুভ জন্মদিন রিচার্ড ডকিন্স। :rose2: :rose2: :rose2: প্রত্যাশা করি শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বেঁচে থাকুন আরো অনেক দিন।
ডকিন্স নিয়া আলাদা পোস্ট দেয়ার ইচ্ছে ছিল,কিন্তু একাডেমিক চাপ এবং আলসেমির কারণে দেয়া হল না।(এমনিতেই ডকিন্সের ফ্যানাটিক ফ্যান হিসেবে তকমা জুটে গেছে!)
এতদিন নাস্তিকতার স্কেল নিয়া পোস্ট দিয়েছি এই বার চাদা,কম্পাস,পেন্সিল-রাবার মোট কথা জ্যামিতি বক্সের সব উপকরণ নিয়েই পোস্ট পাবেন আশা করি। :laugh: 😀 :rotfl:
আপনি স্টিফেন হকিংয়ের যে বইটা উল্লেখ করেছেন, সেটা একটু পড়ে দেইখেন। তাছাড়া যে লোক ঈশ্বরের মনকে বোঝার কথা বলতে পারে, সে আর যাই হোক, কোন প্রথাগত ধার্মিক না।
নিচের যে বইটা উল্লেখ করলেন সেটা আদতে কিসের বই সেই বিষয়ে তো কিছু বললেন না। তাছাড়া স্টিভেন ভাইনবার্গের নাম শুনেছেন নিশ্চয়? উনি কিন্তু শুধু পদার্থবিদ না, নোবেলজয়ী ও বটে!
@পৃথিবী,
আপনাকে একটি জিনিস বলি, আমি নিজেকে বড় মনে না করে ছোট মনে করি। নয়ত, অহংকার বাসা বাধবে, যা আল্লাহ পাকের নিকট অপছন্দনীয়।
আর এই বইটি সম্পর্কে এইখানে জানতে পারবেন। এইখানে এই বইয়ের নাম “বিজ্ঞানীরা কেন হেয়ালিচ্ছলে হলেও বিভিন্ন লিটারেচারে ‘গড’ শব্দটি ব্যাবহার করেন এনিয়ে তার ক্ষোভের অন্ত নেই” এই অংশ দেখে দিয়েছি। আপনাকে ধন্যবাদ।
@ফুয়াদ,
নিজেকে ছোট বড় ভাবার প্রশ্ন নয়। কোন বইয়ের থেকে কোট করলে বইটা পড়া থাকা উচিৎ। স্টিফেন হকিং এর ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বা পল ডেভিসের বইয়ে ‘মাইন্ড অব গড’ শব্দমালা আছে বটে কিন্তু তারা সেগুলো নৈর্বক্তিক অর্থে মেটাফর হিসেবে ‘প্রকৃতি’ হিসেবেই বুঝিয়েছিলেন। আইনস্টাইনও এক সময় ‘ঈশ্বর পাশা খেলেন না’ উপমা ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু সেটা দিয়ে তিনি সর্বশক্তিমান, পরম দয়াবান, ন্যায়বিচারক ঈশ্বর বোঝাননি, বুঝিয়েছিলেন প্রকৃতির শৃঙ্খলতাকে। তিনি ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করলে কখনোই বলতেন না যে,
‘আমার ধর্ম-প্রীতি নিয়ে যা শোনা যায় তার সবটাই মিথ্যে ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচারিত। আমি কোনো ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না এবং এটা আমি স্পষ্টভাবে বারবার জানিয়ে এসেছি। আমার মধ্যে ধর্মীয় ভাব বলতে শুধু আছে এই অসীম রহস্যময় মহাবিশ্বের বিশালতার প্রতি এক বিস্ময়’।
বাকিটা দেখে নেন এখান থেকে।
@অভিজিৎ,
দেখেন নিজেকে ছোট বলে মনে করি দিয়ে আমি কি বুঝাইতে চেয়েছি, তা আপনি বুঝেন নাই।আর ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বই ক্লাস১০-১১ থাকতেই পরেছি, তখন স্টিফেন সাহেবের আর কিছু লেখাও পড়েছিলাম।
আইস্টাইন যে স্পিঞ্জুয়ার নির্বিকার গড কে বিলিভ করতেন তা আমি ভাল করেই জানি, যে গড এতই বড় যে কৃত কর্মের শাস্তি দেন না।
যেহুতু আপনি আইস্টাইন সাহেবের কিছু উক্তি দিলেন, সেহেতু আমিও কিছু দেই, আমার নিজের অনুবাদ করা।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@ফুয়াদ,
স্পিঞ্জুয়া নয় স্পিনোজা। আর স্পিনোজার গড হলে তো আমাদের বিতর্কের কোন অবকাশ নেই।
আর আপনি নাস্তিক্য বিরোধী যে কোটগুলোর অনুবাদ করেছেন, সেগুলোকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ থাকলেও, ধরে নিচ্ছি ওগুলো সত্য (আসলে এই মুহূর্তে আমার সময় নেই আপনার অনুবাদের সত্যাসত্য যাচাই করার)। কিন্তু বহুক্ষেত্রেই আবার আইনস্টাইন বিপরীত কথাও বলেছেন, এমনকি নিজেকে নাস্তিকও বলেছেন অনেক জায়গাতেই। যেমন তিনি বলেছেন –
I received your letter of June 10th. I have never talked to a Jesuit priest in my life and I am astonished by the audacity to tell such lies about me. From the viewpoint of a Jesuit priest I am, of course, and have always been an atheist.
– Albert Einstein, letter to Guy H. Raner Jr, July 2, 1945, responding to a rumor that a Jesuit priest had caused Einstein to convert from atheism; quoted by Michael R. Gilmore in Skeptic, Vol. 5, No. 2
কাজেই প্রেক্ষিত বিচার করে আইনস্টাইনকে উদ্ধৃত করতে হবে। জানতে হবে কখন কি প্রসঙ্গে তিনি এগুলো বলেছেন।
@অভিজিৎ,
ওয়াল্টার আইসাক্সনের আইস্টাইনের জীবনি থেকে নেওয়া, আপনি এখানেই পাবেন http://inarchei.wordpress.com/2008/06/03/was-einstein-an-atheist/
আপনারা আইস্টাইনের যে উক্তি দিয়েছেন, ঐধরনের কাজের জবাবেই উপরের আরটিক্যাল লেখা। বিশেষ করে ডকিন্স সাহেব এর কাজকে উদ্দেশ্য করে।
Einstein had previously explored this belief that man could not understand the nature of God when he gave an interview to Time Magazine explaining:
—Albert Einstein
উপরের লেখা গুলি ওয়িকিপিডিয়াতেও আছে, চেক করে নিতে পারেন।
আমার একটি বিষয় জানার ছিল, স্টিফেন হকিং ও পল ডেভিসের বইয়ের যেখানে ‘গড’ বলতে নৈর্বক্তিক অর্থে মেটাফর হিসেবে ‘প্রকৃতি’-কে বুঝানো হয়েছে সেই লাইনগুলো কোট করা যাবে কি-না ? তাহলে বুঝতে সহজ হইত।
@ফুয়াদ,
ওয়াল্টার আইজ্যাকসন এবং ডেনিস ডিসুজার মত কনজারভেটিভ রিপাবলিকান প্রাণপণে আইনস্টাইনকে ঈশ্বরবিশাসী প্রমাণ করতে চাইবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অথচ তারা যেটা প্রমোট করছেন – এর বিপরীতেও অজস্র প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। এমনকি আইনস্টাইনের ২০০৮ সালে পাওয়া নতুন চিঠিতেও তিনি ঈশ্বর বিশ্বাসকে ‘Childish superstition’ বলে উল্লেখ করেছিলেন (নিউজ়পেপার দেখুন)-
আইনস্টাইনের এই চিঠিটি এ বিষয়ে সমস্ত বিতর্কের ইতি টেনে দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। তারপরেও আইনস্টাইন সত্যই নাস্তিক ছিলেন নাকি প্রবল ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন – তা নিয়ে আমরা হয়তো সারা রাত তর্ক করে যেতে পারবো। হয়তো দু’জনই নিজেদের স্বপক্ষে এখান ওখান থেকে আরো অসংখ্য কোটেশন হাজির করতে পারব – কিন্তু এ সমস্যা হয়তো এত সহজে মেটার নয়। আসলে আইনস্টাইন অনেক জায়গায় যেমন ঈশ্বর টেনে এনেছেন, অনেক সময় নাস্তিকতার বিরুদ্ধে বলেছেন, তেমনি আবার বহু কোটেশন উদ্ধৃত করে দেখানো যায় – তিনি নাস্তিকতার পক্ষে খুব প্রবলভাবেই দাঁড়িয়েছিলেন। এখন সত্যই আইনস্টাইন কি ছিলেন তার জবাব হয়তো শুধু তিনিই দিতে পারবেন। কাজেই এ নিয়ে আমাদের অযথা তর্ক করা বৃথা।
তবে আপনি যে প্রশ্ন করেছেন – মেটাফর হিসেবে ‘প্রকৃতি’-কে বুঝানো হয়েছে সেগুলো কোট করা যাবে কিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রকৃতিকে প্রকৃতি বলতেই পছন্দ করি। অনেকেই প্রকৃতিকে ঈশ্বর বলতে পারেন, কিংবা ডাকতে পারেন অন্য কোন নামেও। আমি এতে বাধা দেওয়ার কেউ না। তবে বৈজ্ঞানিক আলোচনায় বৈজ্ঞানিক টার্মে সবকিছুকে সংজ্ঞায়িত করাই মনে হয় ভাল।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@শামীম,
তাহলে তো এই লেখা ডকিন্স সাহেবকে ব্যাপক কষ্ট দেবে।
স্টিফেন হকিং তার বিখ্যাত আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম বইয়ের
তবে ডকিন্স সাহেবের দুঃখের বিষয় এখানেই শেষ নয়, কারন
আরেক পদার্থ বিজ্ঞানী বই লিখে ফেলেছেন এই নামে
এই ধরনের পাঠকের তালিকা আমি নিজেও আছি । রিচার্ড ডকিন্সকে নিয়ে বাংলা ভাষ-ভাষী পাঠকদের জন্য আপনার আরো আগেই লেখা উচিত ছিল বলে মনে করি । ডকিন্স বিরোধীরা যে যাই বলুক না কেন, বিবর্তন কে সাধারণের মাঝে সহজবোধ্য করে তুলেছেন ডকিন্স-ই । চ্যানেল ফোরের ‘দ্য রুট অব অল ইভিল’ দেখে প্রথম ডকিন্স এর কাজের সাথে পরিচিত হই । এই ডকুটাও মনে করি সবারই দেখা উচিত ।
সৃষ্টিবাদীদের ধর্মীয় অনুভূতি উদ্রেগকারী অঙ্গের সংবেদনশীলতা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে দাড়ালো কেন ,এ বিষয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে বোধ করি। রিচার্ড ডকিন্স এমন এক জায়গায় অবস্থান করে গবেষণা চালাচ্ছেন, যেখানে আজও এক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মানুষ ধর্মের বর্ণনানুযায়ী পৃথিবীর বয়স ছয় হাজার বছর বলে মনে করে। এমতবস্থায় শুধু ডকিন্স কেন, যেকোন স্বাভাবিক বিচার বু্দ্ধিসম্পন্ন মানুষকেই ‘ধর্ম’ নামক প্রাগৌতিহাসিক অপবিশ্বাস দুরীকরণে এগিয়ে আসা উচিত।বিজ্ঞান যদি সমাজ থেকে অপবিশ্বাস দূর করতে পারে তাহলে তার আর কি স্বার্থকতা রইল।যারা মনে করেন ডকিন্স মারা যাবার সাথে সাথেই বিবর্তন তত্ত্বের অবসান ঘটবে তাদের ভুলে গেলে চলবে না বিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রমাণ সাড়ে চারশ কোটি বছর বয়সী পৃথিবীর বুকে তারা বাস করছেন। তাই তাদের এখন উচিত পৃথিবীর বয়স ছয় হাজার বছরে কিভাবে নামিয়ে আনা যায় সে চেষ্টা করা।
দেখা য়ায় না, শোনা যায় না, বোঝা যায় না মর্ম,
জন্মসূত্রে পেলাম এমন ঠুনকো কাচের ধর্ম।
আমার একটা ছোট অভিযোগ আছে। মুক্তমনাতে বিবর্তনকে গুরুত্ব দেয়া হয় ঠিক আছে, কিন্তু আজকাল আমার মনে হচ্ছে যে বিবর্তন ছাড়া অন্য টপিককে গুরুত্ব যথেষ্ট কম দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে অভিজিৎদা, বন্যাদি এরা বিবর্তনের যেকোনো পোস্টে কমেন্ট করেন, অনেক আলোচনা করেন, কিন্তু অন্য পোস্টে সেভাবে আলোচনা করেননা, ফলে আজকাল মুক্তমনায় পোস্ট দিতে আগ্রহ পাচ্ছি না। দয়া করে কেও কিছু মনে করবেননা, এটা শুধুই আমার ব্যক্তিগত ভাবনা।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
এই মিয়া, আমি নিষ্ঠার সাথে শত ব্যাস্ততার মাঝেও আপনার সব কমেন্ট পড়ি, সিঙ্গাড়ার বিরুদ্ধে কিছু বলা হল কিনা দেখা আমার নৈতিক দায়িত্ব।
ওইসব রথি মহারথিরা যত খুশী বিবর্তন নিয়ে লিখেন না, আমরা তো আমাদের মূল্যবান আলোচনা চালিয়ে যেতে পারি?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আপনার অভিযোগ মাথা পেতে নিচ্ছি। আসলেই অনেক লেখায় ঠিক তেমনভাবে কমেন্ট করা হয়ে ওঠে না। একটি বড় কারণ – ব্যস্ততা। অফিস বাড়ী, সব কিছুর হিসেব নিকেশ মিলিয়ে লেখালেখি বা মুক্তমনাগিরি করতে হয়। দেখুন – আপনি নাস্তিক্যবাদী গান নিয়ে যখন লিখতে শুরু করেছিলেন – তখন আমিই কিন্তু কমেন্ট করেছিলেম, বিভিন্ন গানের নাম দিয়েছিলাম। কাজেই বিবর্তন ছাড়া অন্য কিছু তে কমেন্ট করিনা তা ঠিক নয়।
আপনাদের মতো লেখকেরাই মুক্তমনার প্রাণ। অভিমান করে লেখা বাদ দিলে কি চলবে? কার লেখায় কে কমেন্ট করলো – এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক তুচ্ছ ব্যাপারগুলো ভুলে আসেন আমরা ভাল লেখালিখিতে হাত দেই। মুক্তমনা এখন আর ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই, এটি একটি আন্দোলনের নাম। এই আন্দোলনে শরীক – আমি আপনি, এবং আপনার মতো সকলেই। কাজেই অভিমান ভুলে আবার লেখালিখি শুরু করুন।
@রামগড়ুড়ের ছানা, আপনার সমালোচনাটা সঠিক। এখন থেকে অন্য লেখাতেও মন্তব্য করবো, আর আপনি লিখলে তো কথাই নেই, গ্যরান্টি দিলাম যে মন্তব্য করবোই 🙂 । আপনি লিখেই দেখেন এবার……
বিবর্তন বিষয়টা নিয়ে পড়ি এবং জানি দেখে কষ্ট করতে হয় না, ঠাস করে মন্তব্য করে দেওয়া যায়। তাই মনে হয়, মন্তব্য করা হয়ে যায়………
@ বন্যাদি & অভিজিৎদা:
জবাবদুটি পড়ে ভালো লাগল। আপনাদের ধন্যবাদ। :rose2:
লেখা বাদ দেইনি, নতুন কোনো কিছু মাথায় আসলেই লিখে ফেলব। আসলে আপনাদের মত অসাধারণ লেখকরা শুধু একটা বিষয়কে গুরুত্ব দিলে আমাদের মত সাধারণ লেখকরা উৎসাহ হারাতে পারে, আমি সেটাই বলছিলাম। তবে এটাও বুঝি যে শত ব্যস্ততার মধ্যে আপনারা আমাদের লেখা পড়েন, আর সে জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই :rose: ।
একবার বলার পরেও আবার আমাকে “আপনি” করে বলার জন্য :guli: :guli: :guli:
@আদিল মাহমুদ: ওই কিম্ভূতকিমাকার খাবারটার জন্য এতো টান কেন??
বিজ্ঞানের মধ্যমে সকল ধর্মকে শতকরা ১০০ ভাগ অযৌক্তিক, প্রমাণহীন কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেয়া যায়। বিজ্ঞানীরা এতোদিন কেবল বিজ্ঞান বিজ্ঞান করে গবেষণাগার মাতিয়ে বেড়িয়েছেন, এখন সময় এসেছে সমাজের জঞ্জাল দূরীকরণে সেটা কাজে লাগাবার। যুক্তি যেখানে প্রতিষ্ঠিত তখন সেটা ছড়িয়ে না দেয়ার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর নেই। ডকিন্স এই ছড়িয়ে দেয়ার কাজটিই করেছেন, অযৌক্তিক বিশ্বাসের বদলে মানুষকে যৌক্তিকভাবে ভাবতে বলেছেন।
@শিক্ষানবিস,
পুরোপুরি একমত। স্টিফেন গুল্ডের ‘নন ওভারল্যাপিং ম্যাজেস্ট্রিয়া’ একটা গাঁজাখুরী তত্ত্ব। কিছু কিছু বিজ্ঞানী “পলিটিক্যাল” কারণে বলে বেড়ান বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সংঘাত নেই, দু,য়ের সহাবস্থান সম্ভব। মুস্কিল হচ্ছে এঁদের কথায় প্রভাবিত হয়ে অনেকেই মনে করেন, ধর্ম/দর্শন আর বিজ্ঞান আলাদা আলাদা ব্যাপার, বিজ্ঞান সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না, ইত্যাদি, ইত্যাদি। বিজ্ঞান পারে না আর বিরিঞ্চি বাবা পারেন, তাই বিজ্ঞানের নিরপেক্ষ থাকা উচিত! এই বিরিঞ্চি বাবার আবার একেক ধর্মে একেক নাম – কেউ বলেন গড, কেউ বলেন ভগবান, কেউ বা আল্লা সুবাহানাতালা। রিচার্ড ডকিন্স আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, এই বিরিঞ্চি বাবার সাথে আল্লা-ভগবানের কোন পার্থক্য নেই। দুটো সমানভাবে পরিত্যাজ্য।
ডকিন্সের বিষয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা প্রায়ই দেখি যে তিনি নাকি বিবর্তনবিদ্যাকে ব্যবহার করে নাস্তিকতা প্রচার করেন। আমি ডকিন্সের কোন বইতে এটা দেখিনি, তিনি শুধু দাবি করেন যে বিবর্তনবিদ্যা প্রাণসম্পর্কিত সব রহস্য সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে, এর জন্য আমাদের গালগল্পের শরণাপন্ন হওয়ার কোনই প্রয়োজন নেই। নাস্তিকতার ব্যাপারে তিনি প্রায়ই বার্ট্রান্ড রাসেলের চায়ের কেতলির উপমাটা ব্যবহার করেন(সূর্যের চারপাশে যে একটা কোয়ার্কের সমান চায়ের কেতলি প্রদক্ষিণ করছে না, তার প্রমান কি?)। ইউটিউব আর উইকিপিডিয়াই যদি যাবতীয় জ্ঞানের উৎস হয়, তবে এরকম হাস্যকর ভুল করা স্বাভাবিক। বই পড়ার কোন বিকল্প নাই, আমার বাংলা স্যারের উপদেশটা উদ্ধৃত করি- “পড়, পড় এবং পড়”।
আর ডকিন্সের নাস্তিকতা প্রচারে আমি কোন সমস্যা দেখি না। বিজ্ঞান সম্পর্কে গন্ডমূর্খ লোকজন যদি বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে জায়েজ করার চেষ্টা করতে পারে, তবে ডকিন্স কেন প্রকৃত বিজ্ঞান চেতনা তুলে ধরতে পারবেন না? বিজ্ঞান তো কখনওই স্রষ্টাকে স্বীকৃতি দেয়নি। ব্যক্তি হিসেবে অতীতে অনেক বিজ্ঞানীই বিশ্বাসী ছিলেন কিন্তু বৈজ্ঞানিক হিসেবে সবাই ছিলেন সংশয়বাদী। বিজ্ঞানের কার্যপদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে, তবে কোন প্রস্তাবিত কার্যপদ্ধতিই যুক্তি-প্রমানের উর্ধ্বে কোন সত্ত্বাকে স্বীকৃতি দেয় না। ডকিন্স যদি সবার মাঝে বিজ্ঞানের দর্শন প্রমোট করেন, তবে তা তো আপত্তিকর নয়ই, বরং তা অধিক প্রশংসনীয়।
ডকিন্স সত্যই মেধা ও বিবর্তনবাদ প্রচারে থমাস হাক্সলির যোগ্য উত্তরসুরী।
(বাই দ্যা ওয়ে, আমার জন্য সবাই দোয়া কইরেন :-X )
@পৃথিবী, তাছাড়া ডকিন্সের সবগুলো বই peer reviewed। একটা প্রবন্ধে ডকিন্সের ৪টা বই থেকে উদ্ধৃতি দিলে তো সমস্যা না হওয়ারই কথা 🙂
রিচার্ড ডকিন্স মানুষটাকে কেনো যে আমার এত ভালো লাগে টিক জানি না। যখন তাঁর কথা শুনি বা বই পড়ি তখন মাঝে মাঝে এমনভাবে হারিয়ে যাই যে নিজেকেই মনে হয় রিচার্ড ডকিন্স। তাঁর চেহারায়ও কি যেন একটা জাদু আছে – আমি মাঝে মাঝে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রই।
একটি মজার কথা বলি। ধর্মবাদিদেরকে প্রায়ই দেখা যায় না-বুঝে তাঁর সমালোচনায় মুখর। তারা ডকিন্স কে নাস্তিকদের প্রফেট মনে করে কেননা প্রফেট বিহীন ফিলোসফিতে তারা অভ্যস্ত নয়।
@সৈকত চৌধুরী,
” তারা ডকিন্স কে নাস্তিকদের প্রফেট মনে করে”
আমার নিজেরো মাঝে মাঝে তেমনি মনে হয়। বিবর্তনবাদ আজ আর কোন নিষিদ্ধ বা বিতর্কিত বিজ্ঞান নয়, এর সাথে আজ অসংখ্য নামজাদা বিজ্ঞানী জড়িত আছেন। তবে এখানে এ বিষয়য়ের নিয়মিত লেখকদের প্রায় সবাই অনেকটা একচেটিয়াভাবেই তাকে প্রায়ই রেফার করেন। রেফার করায় কোন সমস্যা নেই, বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত যে কাউকেই রেফার করা যায়। তবে একচেটিয়াভাবে কাউকে রেফার করতে দেখলে কেমন যেন সবেধন নীলমণির মত লাগে। ভ্রমবশতও মনে হতে পারে যে আর মনে হয় কোন বিজ্ঞানী নেই।
তবে ধর্মবাদীরা এই ভদ্রলোকের উপর একটু বেশী খাপ্পা কারন ইনি যে বিবর্তনবাদী বৈজ্ঞানিক এজন্যই শুধু নয়, ইনি সাথে সাথে নাস্তিকতা প্রমোট করেন বা ধর্মকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন বলে। ধার্মিকেরা বিরক্ত না হলেই তো বরং আরো অবাক হবার ছিল।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার মন্তব্যটা দেখে একটা প্রশ্ন না করে পারছি না, আপনি বোধ হয় সৈকতের মন্তব্যটাকে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনি যে লেখকদের কথা বললেন( যারা কিনা একচেটিয়াভাবে শুধু ডকিন্সকে রেফার করেন) তারা কারা? আপনি কি বিবর্তনবিরোধী সাইটগুলোর কথা বলছেন? আমি তো দেখি, বিবর্তনের বইগুলোতে (ইংরেজী বইএর কথাই বলছি, যেহেতু ইংলিশেই এই বইগুলো আমরা বেশী পড়ি) আর্নেষ্ট মায়ার থেকে শুরু করে, গুল্ড, উইলসন,ফুটিয়ামা, রিডলী, মিলার, কোয়েন, ক্যারল, ইউজিন স্কট… এরকম হাজারো বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করা থাকে। এমনকি আমার লেখা বইটাতেও আমি মনে হয়না কয়েকবারের বেশী ডকিন্সের নাম উল্লেখ করেছি।
এমনকি হতে পারে আপনি যেহেতু বিবর্তন বিষয়ক সাইটগুলোতে বেশী যান না বা বই পড়েন না, তাই অন্যদের ( বিশেষতঃ বিবর্তনবিরোধীদের) কথা শুনে শুনে আপনার এরকম মনে হয়। দেখুন তো, গত কয়েক সপ্তাহে এই লেখাটা ছাড়া মুক্তমনায় বিবর্তনবিষয়ক যে কয়টা লেখা এসেছে তার মধ্যে কে কে ডকিন্সের নাম উল্লেখ করেছে!!!
@বন্যা আহমেদ,
আমি এখানে বলতে মুক্তমনার কথাই বুঝিয়ছি। বিবর্তন বিষয়ে আমি মুক্তমনার বাইরে আর কোন লেখা পড়ি না বা পড়িনি, আসলে বাংলায় আর কোথাও মনে হয় নেইও। আপনার কথা ঠিক, বিবর্তন ঘটিত আসল সাইট বা বই গুলি ঘাটাঘাটি করলে হয়ত এমন ধারনা মনে আসত না। তবে আমি কিন্তু মনে করি না যে ডকিন্স সাহেবে ছাড়া আর তেমন কেউ নেই। বিবর্তন বিষয়ক অতি সামান্য সার্চ করেই দেখেছি যে এ বিষয়ে অসংখ্য নিবেদিত প্রান বিজ্ঞানী আছেন। সত্য বলতে ডকিন্স সাহেবের নাম আমি সেভাবে দেখিনি। সেজন্যই ডকিন্স সাহেবের নাম মুক্তমনায় তূলনামূলকভাবে বেশী আসাতে (অবশ্যই আমার চোখে) মনে হয় চোখে লাগে। আমি এ নিয়ে দীর্ঘ তদন্ত বা ষ্ট্যাট খোজার কোন মানে দেখি না। আপনাকে বা বিশেষ কাউকে উদ্দেশ্য করেও বলিনি। কারো কথাই লেখার সময় মনে হয়নি, সাধারনভাবেই বলেছি। লেখকের স্বাধীনতা থাকে তার বক্তব্যের সাথে সম্পর্কিত যে কাউকেই রেফার করা, এটাও মানি।
বিবর্তন বিরোধী সাইটে কি বলে তা আমলে নেই না (মন খারাপ করলে বিনোদনের জন্য পড়া ছাড়া)। ক’মাস আগে একবার দেখেছিলাম এক আমেরিকা প্রবাসী বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এক বাংগালী ডাক্তার ডকিন্স সাহেবের ক’টা বিয়ে কি এসব নিয়ে গবেষনা করছেন, আরেকজন হিসেব করছেন ডকিন্স সাহেব আর কতদিন বাচতে
পারেন, কারন ওনার মতে তার মৃত্যুর সাথে সাথেই বিবর্তনবাদ মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে। এ জাতীয় আশাবাদ হাস্যরস যোগালেও এরা মনে হয় বিবর্তনবাদ বলতে কেন যেন ডকিন্স সাহেবকেই বোঝেন।
তবে কিছুদিন আগে আপনার মনে হয় মনে নেই শামীম সাহেব এখানে এই জাতীয় একই অভিযোগ করেছিলেন। তখন অবশ্য কেউ প্রতিবাদ বা ব্যাখ্যা দাবী করেননি।
তবে এটা ঠিক যে এ অভিযোগে অন্যদের দ্বারা কিছুটা হলেও প্রভাবিত হয়েছি। কিছুদিন আগে আমারব্লগে একজন পোষ্ট দিলেন মুক্তমনা বন্ধ করা হোক বলে। নিতান্তই ছাগলা মার্কা পোষ্ট, গুরুত্ব দেবার কিছু নেই। তবে সেখানে আরেকজন মুক্তমনার কিছু সমালোচনা করে তার কিছু পয়েন্ট দিয়েছিলেন তার মধ্যে একটা পয়েন্ট ছিল এটা। ওনার কাছেও নিশ্চয়ই ডকিন্সের নাম বেশীই চোখে পড়েছে।
@আদিল মাহমুদ, একটা ব্যাপার খেয়াল করুন। আমরা কত ডকিন্সের কথা বলছি সেটার বেলায় বললেন স্ট্যাট এর দরকার নেই, কিন্তু আবার যখন আপনি রেফারেন্স দিলেন তখন যাদের কথা বললেন তারা সবাই কিন্তু বিবর্তনের বিরোধিতা করছেন।
আমি আপনার মন্তব্যটাকে ব্যাক্তিগতভাবে নেইনি, কিন্তু আমি যেহেতু এখানে বিবর্তন নিয়ে অনেক লেখালিখি করি তাই উত্তরটা দেওয়া জরুরী মনে করেছিলাম। এখন কোন লেখকের যদি একজন প্রিয় লেখক থাকে তাহলে কিছু বলার থাকে না। কিন্তু বিবর্তনতত্ত্ব মানেই ডকিন্স এমন কথা যারা বলেন তারা আর যাই বুঝে থাকুন না কেন, বিবর্তন তত্ত্ব যে বুঝেন না এইটূকু বোধ হয় চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। তবে এটা মানতেই হবে যে, ডকিন্স বিবর্তন তত্ত্বকে জনপ্রিয় করতে যে ভুমিকা রেখেছেন সেটাকে কার্ল স্যাগানের কাজের সাথেই শুধু তুলনা করা চলে। কিন্তু বিবর্তনতত্ত্ব ডকিন্সের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে নেই , জীববিজ্ঞান এবং তার বেশীরভাগ শাখা বরং এর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছেঃ)।
এবার আসি আপনার শামীম প্রসঙ্গে। শুনেছি উনি নাকি প্রায় একমাস ধরে অনেক কিছুই লিখেছিলান মুক্তমনায়। আমি বাংলাদেশে থাকায় সেগুলো দেখিনি, সুতরাং সে প্রসঙ্গে বেশী কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু আমার যতটুকু মনে আছে, জানুয়ারী মাসে ওনার বিবর্তন সম্পর্কে তথ্যগত এবং বেসিক ধারণায় বেশ কিছু ভুল ধরিয়ে দিয়ে একটা বেশ লম্বা মন্তব্য করেছিলাম, উনি সেটার উত্তর তো দেনই নি, তখন থেকে এখানে তেমন আর লেখেনও না। সুতরাং ওনার কথাটা রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করতে একটু কষ্টই হচ্ছে।
@বন্যা আহমেদ,
আমি এডু ভেডু এর আরটিক্যালে একটি নুতুন কমেন্ট করেছিলাম। আপনি হয়ত দেখেন নি। http://blog.mukto-mona.com/?p=4868#comment-13527 এই কমেন্টের নিচে আপনার উত্তরের-ই পরে আছে। আলোচনা জানার অপেক্ষায় আছি।
@ফুয়াদ, ধন্যবাদ ফুয়াদ, সরি এটা দেখিনি, আনোয়ার জামানের মন্তব্যটাও দেখিনি। আজকে অনেক রাত হয়ে গেছে, কালকে উত্তর দেবো। আপনার প্রশ্নটা কিন্তু বেশ মজার। এই চিন্তাগুলো আমার মাথায়ও এসেছিল আগে। তবে এর বিবর্তনীয় উত্তরই আছে, ল্যামার্কের কাছে যেতে হবে না এর উত্তরের জন্য।
@বন্যা আহমেদ,
ডকিন্স সাহেব আসলে বিবর্তন বিজ্ঞানী বলেই শুধু নয়, তিনি বিবর্তনকে জনপ্রিয় বা প্রচার করার কাজও ভালভাবে করেন, এ কারনে তিনি অন্য বিজ্ঞানীদের উপর কিছুটা বিশিষ্টতা পেতে পারেন, বিশেষ করে আমাদের মত বিবর্তনের নীচু ক্লাসের ছাত্রদের কাছে। এটা মানতেই হবে, এভাবে আসলে আগে চিন্তা করিনি।
শামীম সাহেব সেসময় বেশ নুতন মাত্রা এনে দিয়েছিলেন, জোর তর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার বিবর্তনের জ্ঞান জানি না, তবে যুক্তিবোধ মন্দ ছিল না। তবে আমারো ভালই মনে আছে আপনার পোষ্টের পর তিনি আর জবাব দেননি। কেন তা তিনিই ভাল বলতে পারেন।
তবে ডকিন্স প্রসংগে উনি একটা ভিডিও দিয়েছিলেন যা নিয়ে অন্য যায়গায় অনেককে আহ্লাদ করতে দেখেছি। সেটার একটা জবাব আমি আশা করেছিলাম। মূল বক্তব্য ছিল যে ডকিন্স সাহেব আইডি বিশ্বাস করেন।
httpv://www.youtube.com/watch?v=1YzDROXeEjc
@আদিল মাহমুদ,
সিনেমাটির পরিচালক বেন স্টেন চালাকি করে ইন্টারভিউটি নেন, এবং খন্ডিত অংশ প্রচার করেন। এ নিয়ে রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশন থেকে প্রতিবাদও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদ করছেন পি জ়ে মায়ার, মাইকেল শারমার, ইউজিন স্কট সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও, যাদেরকে অপাংক্তেয় এবং মিসলিডিংভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এমনকি সায়েন্টিফিক আমেরিকানের সংখ্যায়ও এ নিয়ে লেখা হয়েছে।
আসলে ডকিন্স যে টা বলছিলেন, সেটা প্যান্সপারমিয়ার কথা। প্যান্সপারমিয়া আসলেই প্রাণের উৎপত্তি বিষয়ে জোরালো হাইপোথিসিস। আমি (এবং ফরিদ ভাই) আমার ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইয়ে প্রায় দু তিন চ্যাপ্টার লিখেছিলাম। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রাণের উদ্ভব পৃথিবীতে যেমন ঘটতে পারে, তেমনি প্রাণের প্রথম বীজ পৃথিবীর বাইরের মহাজগৎ থেকেও আসতেই পারে, সেই সম্ভাবণাকে কেউ বাতিল করছে না। কিন্তু সেটা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনকে বিশ্বাস করার সমতুল্য মনে করা ভুল হবে। যদিও ডকিন্সের ভিডিওতে ব্যাপারটি যেভাবে দেখানো হয়েছে সেটা খুব বেশি স্পষ্ট হয় নি (হয়তো পরের দিকে স্পষ্ট করেছিলেন, যেটা বেন স্টে্ন চালাকি করে বাদ দিয়েছেন), কিংবা হয়তো ডকিন্স আসলেই পরিস্কার করতে পারেন নি, তার বক্তব্যের দুর্বলতার কারণেই। আর বেনের ব্যাকগ্রাউন্ড কথপোকথন ব্যাপারটাকে আরো জটিল করেছে।
আর তাছাড়া একটি মুভির পরিচালকের হাতে সব সময়ই একটা ক্ষমতা থাকে তার পছন্দমতো ব্যাপারগুলোকে যোগ করার আর তার অপছন্দনীয় ব্যাপারগুলোকে বাদ দেয়ার। যেহেতু মুভির পরিচালকই হন সর্বেসর্বা। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচারগুলোতে তা হয় না। যেমন, রিচার্ড ডকিন্স ফক্স নিউজেও গিয়েছিলেন, এবং কনজারভেটিভ থিঙ্ক ট্যাংক বিল ও রাইলির সাথে সরাসরি তর্ক করেছিলেন, সেটাও দেখা যেতে পারে, কারণ সেখানেও তিনি প্রায় একই প্রশ্নগুলোরই সম্মুখীন হন –
httpv://www.youtube.com/watch?v=Mk9cXJ1MljI
তর্কে কে জিতেছিলেন, সেটা বিচারের ভার পাঠক দর্শকদেরই থাক। কিন্তু যে ব্যাপারটাতে আমি আসলে জোর দিতে চাইছি – ডকিন্স একটি বিশেষ ইন্টারভিউতে কি বললেন, কিংবা একটি ইন্টারভিউয়ে তার দক্ষতা কিংবা অদক্ষতা – সেটা বিবর্তনকে বাতিল করার জন্য যথেষ্ট নয়। বিবর্তনের পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আসলেই পাহাড়সম। বৈজ্ঞানিক জার্ণালগুলোই তার প্রমাণ।
@অভিজিৎ,
অসংখ্য ধণ্যবাদ। আমার আগে ভাসা ভাসা ধারনা ছিল যে এটা কিছুটা মনে হয় মিডিয়া জালিয়াতি জাতের কিছু। তবে সাথে সাথে সংশয়বাদী মনে মনে পড়েছিল আমাদের রাজনৈতিক নেতারাও দেখা যায় হরদম এরকম মিডিয়ায় এক কথা বলে পরে আবার অস্বীকার করেন তেমন কথা বলেননি বলে, মিডিয়াই নাকি তাদের মুখ থেকে বলিয়ে নেয়। নিজামী যেমন বাংলা ভাই বলে কিছু নেই দাবী করে পরে মিডিয়ার উপর দায় চাপায় তেমন।
ডকিন্স সাহেবও দেখি অভিযোগ করেছেন যে তার বক্তব্য হঠাত করেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারভিউ এর ব্যাকগ্রাউণ্ডে অযাচিতভাবে চাপিয়ে দেওয়া কন্ঠস্বর আসলেই নিরপেক্ষতাকে নাড়া দিতে পারে।
তবে ডকিন্স সাহেবকে আমার বিশেষ করে পরের দিকে একটু নার্ভাস মনে হয়েছিল।
তবে ডকিন্স সাহেব আজ রাতারাতি কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমান ছাড়াই আইডিতে বিশ্বাসী হয়ে গেলেও বিবর্তনবাদের কোন হেরফের হবে না সেটাই বড় কথা।
@আদিল মাহমুদ,
আমি যে সব কিছু জানিনা সেটা আমি স্বীকার করি এবং আমি এই উত্তর-পালটা উত্তরে অনেক কিছুই শিখছিলাম সেটা স্বীকার করতে আমার কোন লজ্জা নেই। আমার উচ্চশিক্ষার বিষয় জীববিজ্ঞান ছিলনা কিন্ত তারপরও আমি চেষ্টা করছিলাম একটু একটু করে জানতে। আমি বন্যা আহমেদের লিখার পরে আমার মন্ত্যব্য তৈরীও করছিলাম। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন কমেন্টকারীর ব্যাক্তিগত আক্রমনে এবং বিশেষত ঐ পোষ্টে বিপ্লব পালের মন্তব্যের পর আর মন্ত্যব্য করার ইচ্ছা জাগেনি।
তারপরও নতুন নতুন অনেক কিছু শিখা যায় বলেই মুক্তমনার সাইট আমি ভিজিট করি। কিন্তু ভিন্ন মন্ত্যব্য করলে পাছে কেউ অন্যভাবে নেয় সেই জন্য কমেন্ট করা থেকে নিজেকে সংবরন করি।
@শামীম,
বিপ্লবের মন্তব্যের পর আমিই কিন্তু আপনার পক্ষ হয়ে বিপ্লবকে উত্তর দিয়েছিলাম। যতদূর মনে পড়ে আদিল মাহমুদ সহ অনেকেই বলেছিলেন। বিপ্লব নিজেও পরে আপনাকে ব্যাপারটি বন্ধুসুলভ ভাবে নিতে অনুরোধ করেছিলেন। কাজেই আপনার উপর আমাদের কোন বিদ্বেষ নেই, আপনার মন্তব্য গুরুত্ব দিয়েই আমরা আলোচনা করেছিলাম। আপনি নিয়মিয়তভাবে মুক্তমনায় লিখুন।
তারপরেও একটি বিষয় আপনার নজরে আনছি। অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছেন যে, আপনি অন্য ব্লগে গিয়ে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা বলেছেন, এমনকি আমাকে “পীর” পর্যন্ত বানিয়ে দিয়েছিলেন। আমার ব্যক্তিগতভাবে এগুলোতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমাদের কোন দোষ থাকলে এখানেই আলোচনা করতে পারেন – অন্য সাইটে গীবৎ গেয়ে তো লাভ নেই, না? আর আপনি যদি সত্যই মনে করেন – মুক্তমনা সাইট থেকে নতুন কিছু শেখা যায় – তার প্রতিফলন কিন্তু আমরা দেখতে চাই আপনার বিভিন্ন মন্তব্যেও। ব্যাক্তিগত আক্রমণ পরিহার করার জন্য ভূমিকা নিতে হবে আসসলে সকল পক্ষেরই।
মুক্তমনায় আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করছি।
@অভিজিৎ,
আপনি যখন একটি পোষ্টে আমার নাম উল্লেখ করে কিছু লিখেছিলেন তারপর এখানকার কিছু ব্লগার কমেন্ট করছিলেন যেঃ যেখানে অভিজিৎ পর্যন্ত আপনার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন, তার পরও এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন। আমিতো অভিজিৎ-কে আর দশটা অন্য ব্লগারের মতোই ধরে নিয়েছিলাম। এখানকার কতিপয় ব্লগারের কথায় মনে হচ্ছিল আমি অভিজিৎ-এর সাথে তর্ক করে ভুল করেছি, আমার উচিত ছিল হার মেনে নেয়া ইত্যাদি। আমার মনে হয় আমার যায়গায় অন্য যে কারো ঐ একই অনুভুতি হত যে, অভিজিৎ এখানে এমন একজন বিশেষ ব্যাক্তিত্ব যার বিরুদ্ধমত থাকা অন্যায়।
যেখানকার সমালোচনা সেখানেই করা সঠিক, কিন্তু তার সুযোগ থাকতে হবেতো। কেউ সস্থানে সুযোগ থাকলে অন্যত্র সুযোগ নেয় না।
@শামীম,
ধন্যবাদ আবার আপনি যোগ দেওয়ায়।
বিপ্লবের সেই কমেন্টের পর কিন্তু আমরা (আমি/অভিজিত) দুজনেই তার প্রতিবাদ করেছিলাম; বিপ্লব নিজেও স্বীকার করেছিলেন যে তিনি রসিকতা করছেন। যতদুর মনে পড়ে এরপর আপনি ব্যাপারটা মেনে নিয়েছিলেন এবং আবারো আলোচনায় অংশগ্রহন শুরু করেছিলেন। এরপর অনেকটা আচমকাই নীরব হয়ে যান।
বিবর্তন বা যেকোন বিষয়তেই কেউই দাবী করতে পারে না যে আমিই সব জানি। তাহলে আর আলোচনার দরকার পড়ত না। আপনি আপনার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করতে জানেন তার মানেই কিন্তু আপনার মধ্যে জানার শেখার আগ্রহ আসলেই আছে। মুক্তমনা শুধু আস্তিক বা নাস্তিক এসব ব্যাক্তিগত বিশ্বাসে হওয়া যায় না, মনের জানালা খোলা রাখলে তবেই হওয়া যায়। ফোরামে স্রেফ তর্কে জেতা এমন কিছু কৃতিত্ত্বের ব্যাপার নয়। অন্তত মুক্তমনা ফোরামে জেতা হারা কে বড় করে দেখা হয় না। আপনার স্বল্পকালীন উপস্থিতি আসলেই মুক্তমনার ফোরামে বেশ প্রান এনে দিয়েছিল বলেই আমি মনে করি।
মুক্তমনায় ডকিন্সের অতি ব্যবহার বিষয়ে আপনি পয়েন্ট তুলেছিলেন, আমিও তাতে সমর্থন দিয়েছিলাম। তবে এখন আমার মনে হচ্ছে ব্যাপারটা ওভাবে দেখা ঠিক হয়নি। ডকিন্স সাহেবকে শুধু বিবর্তন বিজ্ঞানী নয়, বিবর্তনবাদের প্রচারক হিসেবেও বিশিষ্ট স্থান দেওয়া যেতে পারে। আপনি কি মনে করেন তা বলতে পারি না।
আশা করি এখন থেকে এখানে নিয়মিত অংশগ্রহন করবেন, অভিযোগ বা সাইটের মান উন্নয়ন বিষয়ক যেকোন পরামর্শ যাই হোক এখানেই তুলে ধরবেন।
@আদিল মাহমুদ,
বিপ্লবের মনে হলেইতো হবেনা যাকে নিয়ে করা হয়েছে তারওতো মনে হতে হবে যে ওটা রসিকতা ছিল।
ডকিন্স সম্পর্কে এখোনো সেই আগের মতোই মত আছে। এর আগে আইনষ্টাইন, নিউটনদের সাথে ডকিন্সকে মেলানো হয়েছে। এখানেই আমার আপত্তি। আইনষ্টাইন বিখ্যাত হয়েছিলেন তার স্ব ক্ষেত্রে, তিনি বিজ্ঞানী হিসাবেই জনপ্রিয় হয়েছিলেন তার ব্যাক্তিগত কি কনভিকশন (আস্তিক, নাস্তিক-সংশয়বাদী) আছে তার জন্য নয়। নিউটন ব্যাক্তি জীবনে একজন ধার্মিক লোক ছিলেন তিনি যতনা বিজ্ঞানের প্রবন্ধ লিখেছেন তার চেয়ে ঢের বেশী ধর্মীয় পুস্তক লিখেছেন, এছাড়া নিউটন গোপনে আলকেমির চর্চা করতেন (আইনষ্টাইন নিজেও আলকেমির উপর বই পড়তেন)। নিউটনস ডার্ক সিক্রটস নামে একটা ডকু আছে দেখতে পারেন। কিন্তু নিউটন কিন্তু তার ধর্ম প্রচারে বিখ্যাত হননি।
ডকিন্স বিজ্ঞানী হিসাবে বিজ্ঞানী মহলে কতটা আলোচিত সেটা আমি জানিনা। কিন্তু তিনি যে বিজ্ঞানী হিসাবে জনপ্রিয় নন (সাধারন জনতার কাছে) সেটা কিন্তু বলতে পারি। তিনি জনপ্রিয় একজন স্ব-ঘোষিত নাস্তিক হিসাবে ও তার প্রচারে । বিবর্তনবাদ তার প্রচার কৌশলের অংশ মাত্র । হারুন ইয়াহিয়ার সাথে আমি তার পার্থক্য করিনা শুধু পার্থক্য তারা প্রচার স্প্রেকটামের দুই প্রান্তে অবস্থিত । তিনি তার আত্ম প্রচারে কি নিয়ে কি করবেন এটা তার ব্যাপার। তিনি নিজের নামে ফাউন্ডেশন করুন আর ডকুমেন্টারী বানিয়ে বেচুক এটা তার ব্যাপার।
ধর্ম ও বিজ্ঞানে যেমন মিশ্রন দোষনীয় তেমনি দর্শন-বিজ্ঞান কিংবা নাস্তিকতা-বিজ্ঞান মিশ্রন সমান দোষনীয়। আমার মতে বিজ্ঞান একটি নিরেপেক্ষ শাস্ত্র। বিজ্ঞান বুঝে এ থেকে আপনি কি ইনফার করবেন সেটা আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। ষ্ট্রিং থিউরি পড়ে আপনার যদি মনে হয় এটি স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমান সেটা একান্ত ব্যাক্তিগত, আবার যদি মনে হয় এটি আসলে স্রষ্টাকে কন্ট্রাডিক্ট করে তাও আপনার নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও বোধের বিষয়। কিন্তু আপনি যখন বলবেন বিজ্ঞান আমাদের স্রষ্টাকে স্বীকার বা অস্বীকার করতে শিখায়- তা আমি মানবোনা।
এক শ্রেনীর নাস্তিকতাবাদী/সংশয়বাদী বিজ্ঞানীরা কেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে ডকিন্স সাহেবের সাথে যোগদেন না এ নিয়ে ডকিন্স ও তার অনুসারীদের আক্ষেপের অন্ত নেই। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে কি পড়ানো হবে এই নিয়ে কেন পলিসি ফাইটে ল্যাবরেটরী ছেড়ে কেন বিজ্ঞানীরা তার সাথে আসেননা এতে তার অভিযোগের অন্ত নেই। আবার এই ডকিন্স সাহেবই হারুন ইয়াহিয়ার সাথে বিতর্কে যেতে নারাজ হন কারন ইয়াহিয়াকে পাত্তা দেয়া হয় বলে। বিজ্ঞানীরা কেন হেয়ালিচ্ছলে হলেও বিভিন্ন লিটারেচারে ‘গড’ শব্দটি ব্যাবহার করেন এনিয়ে তার ক্ষোভের অন্ত নেই (সম্ভবত অভিজিৎও এ নিয়ে একটি লিখাতে অভিযোগ করেছে)।
ডকিন্স সাহেব নাস্তিকতা পরিমাপের স্কেল বের করেন যা দিয়ে এখানকার ব্লগাররা তাদের নাস্তিকতার পরিমাপ বের করেন, দেখুনতো আপনি কতখানি নাস্তিক? (একসময় বলা হতো এখানাকার মস্কো পন্থীরা নাকি মস্কোতে বৃষ্টি হলে বঙ্গদেশে ছাতি মেলে ধরত)।
ডকিন্স সাহেবের আলোচনাতে অনেক কিছু শিখার আছে কিন্তু তার চিন্তা ধারনায় আচ্ছন্ন হবার কোন কারন দেখিনা। আমরা বিজ্ঞানী নিউটনের প্রশংসা করি কিন্তু আলকেমিষ্ট নিউটনকেতো চিনিই না।
@শামীম,
সাধারণ মানুষদের কাছে তো একজন বিজ্ঞানীর চেয়ে একজন ধর্মনেতা কিংবা ধুরন্ধর রাজনীতিবিদও জনপ্রিয়। অনেকেই রজার পেনরোজ, এডওয়ার্ড উইলসন, জেরি কয়েন কিংবা মিচো কাকুর নাম শুনেননি কিন্তু পোপ, ওবামা কিংবা এমনকি হাসিনা খালেদাকেও ভাল চেনেন। সাধারণ মানুষ কাকে কিভাবে নেয় তা অনেক সময়ই সত্যের প্রতিনিধিত্ব নাও করতে পারে। কোপার্নিকাস, ব্রুনো কিংবা গ্যালিলিও – এরা কেউই সাধারণ মানুষের কাছে ‘জনপ্রিয়’ ছিলেন না। চার্চের অত্যাচারের কথা না হয় নাই তুললাম এখানে, ডকিন্সও সেই সব অধিকাংশ ‘বিশ্বাসী’ মানুষের কাছে জনপ্রিয় নন (কারণ সংখ্যায় তো তারাই সংখ্যাগুরু)। কি আর করা। বিশ্বাস নির্ভর সিস্টেমকে আঘাত করলে কিছু জনপ্রিয়তা হয়তো হারাতেই হয় হয়তো। তারপরেও আপনার ডকিন্স সম্বন্ধে ভিন্নমত এবং মূল্যায়নের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবাইকেই যে সব কিছুতে সম্মতি দিতে হবে – এমন কোন কথা নেই। দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য থাকবেই।
এতো কিছুর পরেও ডকিন্স যেভাবে বিবর্তন তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেছেন তা আর কেউই পারেননি। তার অবদানকে কার্ল স্যাগানের সাথে তুলনা করা হয়। কার্ল স্যাগান এক সময় পদার্থবিজ্ঞানকে এবং মহাবিশ্বকে যেভাবে সাধারণ মানুষের কাছে জনবধ্য ভাবে তুলে ধরেছেন, ডকিন্সও অনুরূপভাবে জীববিজ্ঞানের বিবর্তনকে সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট করেছেন। আর ‘Richard Dawkins: How a Scientist Changed the Way We Think’ বইটির কথা তো বলেছিই – কেন এমনকি একাডেমিয়ার বিজ্ঞানীরাও তাকে এই সময়ের অগ্রগন্য চিন্তাবিদ হিসেবে গ্রন্য করেন। আপনি রিচার্ড ডকিন্সের নিজস্ব ফাউণ্ডেশন গড়ে সিডি বিক্রি ইত্যাদি নিয়ে যে সমস্ত কটাক্ষ করেছেন, সেগুলোতেও কিন্তু পরোক্ষভাবে তার জনপ্রিয়তাই ধরা পড়ে। সে সমস্ত লেকচার এবং সিডি/ভিডিওর চাহিদা আছে বলেই তিনি ওগুলো বেঁচতে পারেন তাই না? আর তাছাড়া জনপ্রিয়তা না থাকলে তার বইগুলো এভাবে বেস্ট সেলার হতো না। আমি আজকেও আমার বাসার পাশের বার্নস এন্ড নোবেলে সায়েন্স সেকশনের তাকে চোখ বুলাচ্ছিলাম। সেখানে এক রিচার্ড ডকিন্সের যত বই আছে, সম্মিলিতভাবে বহু বিজ্ঞান লেখকেরও তত বই রাখা নেই। বার্নস এন্ড নোবেলের মত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান কেবল নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য এভাবে বছরের পর বছর ‘অজনপ্রিয়’ লেখকের বই দোকানে রেখে দেবে না। তারপরেও ‘জনপ্রিয়তা’ নিয়ে আপনার ভিন্নমতকে আমি সম্মান করছি। এ নিয়ে আসলে তর্ক করার কিছু নেই, কারণ এই তর্কের কোন পরিমাপগত অবজেক্টিভিটি নেই ।
আপনি আমাকে পীর বলুন আর যাই বলুন, আমি মনে করি না আমি আপনার সম্বন্ধে কোন নেতিবাচক বিশেষণ ব্যবহার করেছি। এমনকি আপনি মুক্তমনা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়েও কুৎসা রচনা করেছেন। আমি শুধু চেয়েছি আপনি সেগুলোই পরিহার করে এখানে লিখুন এবং আমার সমালোচনা করুন (আর অন্য ব্লগাররা আমার সমন্ধে কি বললো তার ভিত্তিতে বিচার না করে বরং আমি কিছু বলেছি কিনা – সেটা দিয়ে যাচাই করুন)। আপনাকে আমি সবসময়ই স্বাগত জানাবো।
আপনাকে ধন্যবাদ আবারো।
@অভিজিৎ,
অবশ্যই আমি বলবো যে আমি মুক্তমনা নিয়ে সমালোচনা করেছি। সমালোচনাকে কুৎসা মনে করলে কিছুই বলার নেই। যে খানে এর সমালোচনা করেছি সেখানে মুক্তমনার ব্যাপারটি প্রাসঙ্গিক ভাবে এসে যাওয়াতেই সমালোচনা করা হয়ছে। এমন নয় যে আমি নিজেই এই সমালচোনার সুত্রপাত করেছি। বরংচ অন্য একটি সাইটে যখন মুক্তমনাকে বন্ধ করে দেবার দাবী জানিয়ে সমর্থন চাওয়া হচ্ছিল (যদিও এর কোন মানে নেই) আমি সেখানে মুক্তমনার সমালোচনা করেছি কিন্তু মুক্তমনাকে বন্ধ করে দেবার নিন্দা করেছি। হয়ত আমার সমালোচনাটুকুই আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে মুক্তমনার সপক্ষে সমর্থন টুকু দৃষ্টি গোচর হয়নি।
যে সাইটে মুক্তমনার সমালোচনা করা হয় সেখানে প্রায় সব বাংলা ব্লগ নিয়েই সমালোচনা করা হয় এবং বিশ্রী ভাষায় সমালোচনা করা হয়। সেখানে অন্য কোন বাংলা ব্লগ নিয়ে সমালোচনা করা যাবেনা এমন নয়। আবার মুক্তমনাকে নিয়ে মুক্তমনাতেই সমালোচনা (যেটা আপনার কাছে কুৎসা) হতেই হবে এমন কোন বাধাধরা নিয়ম আছে বলে মনে করিনা প্রসঙ্গত এটা যে কোন যায়গাতেই হতে পারে। যেহেতু এটা একটা বাংলা ব্লগ এবং আমরা যারা বিভিন্ন সাইটে লিখি, বিষয় গুলি স্পিল ওভার করে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আপনাকে পীর বলাতে বলেছেন আপনার ব্যাক্তিগত ভাবে কোন সমস্যা নেই। সুতরাং এই ব্যাপারে অভিযোগের কারন দেখছিনা। প্রতিটা ব্লগের মেজাজ ভিন্ন হয়। আমি নিজে যে মেজাজে মুক্তমনায় কমেন্ট করি সেই একই মেজাজে অন্য একটি নো-মডারেশন ব্লগে লিখিনা। সেখানে আমি একটু এগ্রেসিভ ভঙ্গিতেই লিখি কারন ওখানে ওটাই স্বাভাবিক। সুতরাং ওখানে কি লিখেছি সেটা যদি আপনার গোচরীভুত হয় এবং ডিফেন্ডযোগ্য হয় সেটা ওখানেই দেয়া যেত (ওখান কার ঘটনাওযে এখানে চলে আসাতে এবং সেটা নিয়ে এখানে আলোচনাতে আমি বিস্মিত বা অভিযোগ করছি তা নয় বরংচ স্বাভাবিক মনে করছি, স্পিল ওভারের বিষটি আমি আগেই বলেছি।) ।
@শামীম,
ধর্ম আর বিজ্ঞানে মিশ্রন কিন্তু ধর্মবাদীরাই করে। শুনেছেন কখনো, বিজ্ঞানীদের বলতে, ধর্মের বা থিওলজির ক্লাসে বিবর্তন-বিজ্ঞান পড়াতে হবে – এই দাবী তুলতে? উল্টোটাই শুনেছেন।
বিজ্ঞান শাস্ত্রই নয়, নিরপেক্ষ হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। (শাস্ত্র কথাটা ধর্মের প্রেক্ষিতে ব্যবহার করা হয়, জানতাম।)
বিজ্ঞানকে দর্শন থেকে বাদ দেবেন কি করে? বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে দার্শনিক চিন্তা-চেতনায় অগ্রগতি হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আর তাতে করে ধর্মের আজগুবি কল্পনাগুলো মানুষের মন-মানস থেকে বিদায় নেয়াটা ঠেকাবেন কি করে?
আর এখানেই ডকিন্স বিজ্ঞানী হিসেবে অনন্য। তিনি ভন্ডামীতে বিশ্বাস করেন না। মানেন না, ধর্মীয় কল্পনার সাথে বিজ্ঞানের সহাবস্থান সম্ভব। এই মনোভাব পোষন করতেন বলে সতীর্থ বিবর্তন-বিজ্ঞানী স্টিফেন গুল্ডকেও সমালোচনা করতে ছাড়েন নি।
আর নাস্তিকতা তো পুরোপুরিই দাঁড়িয়ে আছে বিবর্তন বিজ্ঞানের ওপরে। ধর্মের সব গল্পকাহিনী বিবর্তনতত্ত্ব বাতিল করে দেয়। আর আপনি বলছেন নাস্তিকতার সাথে বিজ্ঞানকে মেশানো যাবে না।
আপনি না মানলেও, বিবর্তন তত্ত্ব আসলেই স্রষ্টার ধারণাকে বাতিল করে দেয়।
@ইরতিশাদ,
বিজ্ঞানের অগ্রগতি যেমন ধর্মের অনেক কিছু বাদ করে দেয় তেমনি ভাববাদি দর্শন, অধিবিদ্যা (metaphysics) নামে বিষয় গুলিকেও কিন্তু বাদ করে। আপনি যেটাকে দার্শনিক চিন্তার অগ্রগতি বলছেন আমি তাকে বিজ্ঞানের কাছে দর্শনের পরাজয় হিসাবেই দেখি (আপনি শুধু ধর্মের পরাজয়ের বিষয়টিই দেখেন)। আর যেখানে বিজ্ঞান যেতে পারেনা (স্কোপ সীমিত হবার কারনে) সেখানেই ধর্ম আর দর্শন টিকে থাকে।
আমি যদি একটু ঘুরিয়ে বলি, আপনি না মানলেও বিবর্তনবাদ কিন্তু আসলে স্রষ্টা নিয়ে কিছুই বলেনা। আমি আগেই বলেছি বিজ্ঞান লব্ধ জ্ঞান দিয়ে আপনি কি ইনফার করবেন তা আসলে ব্যাক্তির উপরই নির্ভর করে। বিবর্তনবাদ স্রষ্টাকে যদি এবসোলিউটলি যদি বাতিলই করতো তাহলে যারা বিবর্তনবাদ পড়ত, জানত সবাই নাস্তিক হয়ে যেত। কিন্তু সত্য হল বিবর্তনবাদীদের সবাই নাস্তিক নয় (নাস্তিক্যবাদ আর ধর্মকে আলাদা ধরে)। কারন ঐ যে, বিজ্ঞান লব্ধ জ্ঞান কে কিভাবে নেয় সেটা ব্যাক্তির কনভিকশনের উপর নির্ভর করে।
তাই বিবর্তনবাদ যদি বিজ্ঞান, হয় তা ধর্ম ও দর্শন নিরপেক্ষই হওয়া বাঞ্ছনীয়।
@শামীম,
”
– আমি একমত। ঘটনা আপনার এবং বিপ্লবের মাঝে, আপনি কিভাবে নেবেন সে অধিকার আপনার অবশ্যই আছে। তবে আপনি না বললেও মনে হয়েছিল যে আপনি মেনে নিয়েছেন, কারন ঐ ব্যাখ্যার পর আপনি পূর্বঘোষিত মুক্তমনায় আর না পার্টিসিপেট না করার কথা বললেও আরো কিছু কমেন্ট করেছিলেন। তাই ধারনা হয়েছিল বোধহয় মেনে নিয়েছিলেন।
নিউটন সাহেব শুনেছি ধর্মের চরম চর্চা করেছেন। তিনি বাইবেলের কোন আদি এডিশন ধরে নাকি গবেষনা করে পৃথিবীতে সামনের অনেক বছরের নিখুত প্রেডিকশন করে গেছেন। ব বড় ঘটনার ইংগিতই নাকি সেখানে আছে। তার হিসেবমত কেয়ামত ঘটবে ২০৬০ না কত সালে যেন। আর রহস্যময় ব্যাপার হল তার এই মূল্যবান গবেষনা তিনি বাক্সবন্দী করে গোপন রেখে গেছিলেন, মাত্র এই সেদিন নাকি এ রত্ন আবিষ্কার হয়।
নিউটনের এসব ধর্মীয় চর্চায় কিন্তু বিজ্ঞানে তার অবদানের কিছুই যাচ্ছে আসছে না।
বিজ্ঞানের দর্শন বলতে কি বোঝায় আমি সঠিক জানি না। আসলে দর্শন শাস্ত্র জিনিসটা আসলেই কি তাই আমি তেমন বুঝি না। তবে বিজ্ঞানের অতি বেসিক দর্শন বলতে আমি বুঝি পরীক্ষা নীরিক্ষা পর্যবেক্ষন লব্ধ জ্ঞান। এই বেসিক মতে কোন বিজ্ঞানী কোন অদেখা অপ্রমানিত স্বত্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী হয়ে প্রচার শুরু করলে তাকে বিজ্ঞানী সূলভ আচরন মনে হয় বলা যায় না। একই কারনে কোন বিজ্ঞানী অদেখা অপ্রমানিত ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিপক্ষে মত দিলে আমার কাছে সেটাই স্বাভাবিক মনে হবে। উল্টাটা নয়। সে হিসেবে ডকিন্স সাহেব ইশ্বররে পেছনে লাগলে তেমন একটা দোষ দেওয়া যায় না। তিনি কোন বিজ্ঞানীর ইশ্বর, মা কালী, বা অন্য দেব দেবীর প্রচারনায় কটাক্ষ করলে তার দোষ দেই কিভাবে? তবে আমি কোন বিজ্ঞানীর এহেন আচরন পছন্দ করি না এ কারনে যে এতে করে ফালতু বিতর্কে তার মূল বিজ্ঞান চর্চাই গুরুত্ব হারাতে পারে।
এ যুগেও কিছু লোকে বিশ্বাস করে বিশ্ব আসলে গোল নয়, সমতল। তারা ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি খুলে বসে আছেন। এখন নামজাদা বিজ্ঞানীদের ঠেকা পড়েনি তাদের সংগে চ্যালেনজ়ে নেমে বিশ্ব গোল প্রমানের। হারুন ইয়াহিয়ার চ্যালেঞ্জে না নামার ব্যাপারটাকে আমি অনেকটা একইভাবে দেখি। তার চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী বিশ্বের তাবদ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন বিষয়ক বিভাগ রাতারাতি বন্ধ ঘোষনা করে নামজাদা সব অধ্যাপকদের জুতা সেলাই জাতীয় পেশা গ্রহন ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না। অনেকে একেই সত্য হিসেবে চিন্তা করে বিমলানন্দ পান।
বিবর্তনবাদের বর্তমান বা অতীত আইনষ্টাইনের রিলেটিভিটি বা অন্য তত্ত্বের সাথে মনে হয় না তূলনীয়। সেসব তত্ত্বকে বিবর্তনবাদের মত ধর্মবাদী লোকজনের এত তীব্র বাধার মাঝে পড়তে হয়নি। বিবর্তনবাদ নিয়ে প্রচুর বিপ্লাবত্মক কাজ হয়েছে, কিন্তু সেসব কাজ সেভাবে মানুষের সামনে বেরিয়ে আসছে না। কেন আসছে না তা বলাই বাহুল্য। এসবের প্রচারের অবশ্যই দরকার আছে। ডকিন্স সাহেব সেটা করলে সাধুবাদ তার প্রাপ্য। তবে কেউ শুধু ডকিন্স সাহেবের আদর্শে মুগ্ধ হয়ে নাস্তিকে পরিনত হলে তার যৌক্তিকতাবোধ নিয়ে প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে।
@আদিল মাহমুদ,
ডকিন্স সাহেব অবশ্যই সাধুবাদ পাবেন। আমি ইতিমধ্যে ডকিন্সের প্রায় সবগুলি ই-বুক টরেন্ট থেকে নামিয়েছি। ডকিন্সের বই সুখ পাঠ্য এবং ব্যাপক শিক্ষনীয় সেটা আমি তার বই পড়েই বুঝতে পারছি। কিন্তু তার কতিপয় বই বেষ্ট সেলার হল বলেই এই যুগকে ডকিন্সের যুগ বলা, এতে আমি রাজী নই।
আগে আপনার সাথে তর্ক করতে গিয়ে হাল্কা ভাবে মনে হয়েছিলো আপনি হয়তো সেলফিশ জিন বইটি পড়েননি। এখন বুঝতে পারছি আপনি টরেন্ট থেকে ডকিন্সের বইগুলো সবেমাত্র নামাতে শুরু করেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। পড়া শুরু করে দিন। তারপর আবার না হয় তর্ক করা যাবে। বিষয়গত জানা শোনাটা দুপক্ষের থাকলে বিতর্কে সুবিধা। আমাদের আসলে প্রতিদ্বন্দ্বি ভাবার কিংবা প্রতিপক্ষ ভাবার কিছু নেই। আপনার আলোচনা আমাদের সাইটকে প্রাণবন্ত করুক, এই কামনা করি।
@শামীম,
আপনি ডকিন্সকে ব্যাক্তিগতভাবে পছন্দ করবেন কি করবেন না সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে তিনি কতখানি জনপ্রিয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, তাকে নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের লেখাগুলোই তার সাক্ষী দেয়। আর তিনি যদি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় নাই হবেন তাহলে আমেরিকার মত রক্ষণশীল দেশেও তার একাধিক বই কি করে বেস্ট সেলার হয় সেটা একবার ভেবে দেখেছেন কি? গড ডিলিউশন ছাড়া বাকী বইগুলো তো শুধু বিবর্তনের বিজ্ঞান নিয়েই লেখা, তিনি তো রাজনীতি বা সস্তা ফিকশান নিয়ে বই লেখেন না। আর তিনি নাস্তিক হিসেবে পরিচিত পাওয়ার অনেক আগে বা এ নিয়ে বই লেখার অনেক আগে থেকেই বিবর্তন নিয়ে বই লিখে বিখ্যাত হয়েছেন, সুতরাং বিবর্তনকে তিনি নাস্তিকতা প্রচারের অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করেন এ কথাটাও ঠিক নয়। যাই হোক এ নিয়ে বিতর্ক করাটা বোধ হয় অনর্থক।
তবে একটা অনুরোধ করবো, আপনি যদি আসলেই মনে করেন যে এই ব্লগে এসে কিছু হলেও শিখতে পারেন, তাহলে আপনার কাছ থেকে সেইটুকু সন্মানও দাবী করবো আমরা। আমাদের অনেকেই বিভিন্ন ব্লগে ঘুরে বেড়ান না, আপনার কিছু বলার থাকলে এখানেই বলবেন। কোন ব্লগারের সাথে আপনার মনোমালিন্য হলে সেটাকে সাইটের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা বোধ হয় ঠিক নয়।
@বন্যা আহমেদ,
আমি জীববিজ্ঞানী মহলের সাথে পরিতিত নই তাই আমি ওনি জীববিজ্ঞানীদের মধ্য তিনি কতটা জনপ্রিয় তা আমি বলতে পারবোনা তবে বিভিন্ন লেখাতে তার রেফারেন্স আছে দেখেছি তবে সেখানে তার এক্সক্লুসিভিটি কিছু আছে বলে মনে হয়নি। যাই হোক, আমার বক্তব্য ছিল বিজ্ঞানী মহলের বাইরে তার প্রভাব নিয়ে।
এই নিয়ে আমি অভিজিতের কমেন্টের উত্তরে কিছু বলেছি। এখানে শুধু একটু যোগ করি যে, আমি মুক্তমনার কোন সদস্য ব্লগার নই। আমি শুধু অতিথি হিসাবে কমেন্ট করি তাই মুক্তমনার প্রতি আমার কমিটমেন্ট কম হওয়াটাই স্বাভাবিক। একজন অতিথি তার হোষ্টের সমালোচনার অধিকার রাখেনা সেটা বোধহয় বলবেন না। কিন্তু অতিথিকে তার হোষ্টের কাছেই সমালোচনা করতে হবে এমন দাবী করা বোধ হয় যুক্তিযুক্ত নয়। এক মিডিয়া যেমন অন্য মিডিয়ার সমালোচনা করে তেমনি এক ব্লগে অন্য ব্লগের সমালোচনা হয়। এটাই বাস্তব জগতের বাস্তবতা। এখানে যেমন রায়হান সাহেবকে ‘হয়রান সাহেব’ বা জাকির নায়েককে ‘জোকার নায়েক’ বা আরো বহু বিচিত্র অভিধাতে সম্বোধন করা হয় তখন কিন্তু ওনারা এখানে এসে ডিফেন্ড করতে পারেনা। আমি সহ আরো অনেকেই বিষয়টি উত্থাপন করার পরও কিন্তু সেই প্রবনতা কমেনি। সুতরাং মুক্তমনাকেও ধোয়া তুলসী পাতা বলতে পারেননা।
তাই বাস্তবিকতার খাতিরেই সমালোচনার প্রতি একটু সহনশীল হলেই মনে ভালো হবে। তারপরও আপনার পরামর্শ মনে থাকবে।
@শামীম,
কেউ বিজ্ঞানী হলে দার্শনিক হতে পারবেন না বা ঈশ্বর নিয়ে কিছু বলতে পারবেন না – এ শর্তটি কোথা থেকে পেলেন? কোনো বিজ্ঞানীর কাছে যদি ঈশ্বর বিশ্বাসকে অমূলক ও ক্ষতিকর বলে মনে হয় তবে তার কি এ ব্যাপারে চুপ থাকা উচিত?
আমি যখন ‘পানিচক্র’ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক তথ্য জানতে পারব তখন তার সাথে জড়িত ঈশ্বর-বিশ্বাসকে বাতিল করে দিব, তাই না?
“ঈশ্বর সর্বকালের সেরা গুজব”- প্রবীর ঘোষ।
@সৈকত চৌধুরী,
একদম হাছা কথা। প্রবীর ঘোষের বই একেবারেই পড়া হয়নি। মুক্তমনায় তো তার কিছু লেখা থাকার কথা, খুঁজে দেখতে হবে।
অফ টপিক- বানানটায় আর ভুল অইতনায় ইনশিল্লাহ।
@আদিল মাহমুদ,
হা হা হা….
দাদা কিন্তু নিজের নামের বানানটা এ ভাবে লিখেন না।
@আসরাফ,
🙂
জানি, আসলে খন্ড-ত লেখা মহা ঝামেলার ব্যাপার। আমাদের দাদা খুবই বানান সেনসিটিভ হলেও আশা করি তাতে এমন কিছু মনে করেন না। উনি হলেন বটবৃক্ষ, আমরা হলাম শাখা প্রশাখা।।
সবচেয়ে ভাল হয় উনি নামের বানান পালটে ফেললে 😀 ।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যা, আসল বই গুলি আপনি পড়লে এই রকম বিষয়-ও পেতেন না, যেমন বিবর্তন ধর্মকে বাতিল করে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আসল বিজ্ঞানীরা শধু বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন। কিভাবে বিবর্তন হল? কেন? কি কি প্রভাব ইত্যাদি। ডকিংস সাহেবের কথা এক বিবর্তনের বইয়ে পেলাম এখানে তার পিকচার আর নিচে লেখা আছে,
বাকি বিষয় আপনি-ই বুঝে নিন।
@ফুয়াদ,
আপনি প্রায়ই রিচার্ড ডকিন্সের নাম লিখতে গিয়ে ডকিং লেখেন কখনো বা আবার ডকিংস। আসলে উচ্চারনটা হবে ডকিন্স।
আর ডকিন্স fierce critic of religion হতেই পারেন, আবার অনেক বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীই আছেন fierce defender of religion। যেমন অধ্যাপক কেনেথ মিলার।
কে ফিয়ার্স ক্রিটিক অব রিলিজিয়ন, আর কে নন, তার উপর কিন্তু বিবর্তন তত্ত্ব দাঁড়িয়ে নেই, দাঁড়িয়ে আছে বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে।
@ফুয়াদ,
ডকিন্স সাহেব ধর্মকে আক্রমন করে অনেক কথাই বলেন, জানি। আমি নিজে তার মতের প্রতি শ্রদ্ধা করলেও বিজ্ঞানী হিসেবে আক্রান্ত না হলে ধর্মে পেছনে বেহুদা লাগা পছন্দ করি না। এতে বেহুদা ধর্মবাদী লোকদের খোচানো হয়। মূল বিষয় বিজ্ঞান চর্চাই গুরুত্ব হারাতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনার কাছে জিজ্ঞাসা; কেউ যদি বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম ডিফেন্ড করার চেষ্টা করে তবে কেউ সেই বিজ্ঞান দিয়েই ধর্মের পেছনে লাগলে সেটা কেন দোষনীয় হবে?
আপনার প্রিয় জাকির নায়েক বা তেমন কেউ ধর্মে মহা বিজ্ঞানের যাবতীয় সব সূত্র খুজে পেলে আপনি তখন একইভাবে আপত্তি করেন?
আরেকটা কথা; আপনার কথা ঠক। বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান নিয়েই মাথা ঘামান। ডকিন্স সাহেবকে বৈজ্ঞানিক জগতে বিজ্ঞানীরা জাদরেল বিজ্ঞানী হিসেবেই গননা করেন। তিনি ধর্মের পেছনে লাগেন বলে বিজ্ঞানে তার অবদান কেউ অস্বীকার করে না। ধর্ম সম্পর্কে তিনি যা বলেন তা নিতান্তই তার ব্যাক্তিগত অভিমত। তেমনিভাবে কোন বিবর্তনবাদী বৈজ্ঞানিক ঈশ্বরের বন্দনা করলে তাতেও বৈজ্ঞানিক জগতের কিছু যায় আসে না। এ ব্যাপারগুলি মনে রাখলে ভাল করবেন।
@আদিল মাহমুদ,
আপনাকে ধন্যবাদ।
(মন্তব্যে উদ্ধৃতি দিতে হলে লিখে বা কপি-পেস্ট করার পর তা সিলেক্ট করে উপরে ‘উদ্ধৃতি’ তে ক্লিক দিলেই হয়ে যায়; নীল রং দেখাবে। এভাবে দেখেন ‘বোল্ড’ ‘ইটালিক’ এছাড়া লিংক দেয়া যায়। আলগা মাতব্বরি ইদানিং স্বভাবে পরিণত হয়েছে 🙂 ।)
@সৈকত চৌধুরী,
আলগা মাতবরী অনেক সময়ই বেশ উপকারী। আমি আসলে নিজে এই ব্যাপার নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকি, কোনদিন যায়গামত ধরা খাই। অবশেষে আজকে দেখা যাচ্ছে এই মাহেন্দ্রক্ষন উপস্থিত।
এই অতি সোজা টেকনিক কেন যেন আমার কপালে সয়নি। বোল্ড ইটালিকে সমস্যা হয় না, তবে উদ্ধৃতি দিতে গেলেই বিপর্যয় হয়। দুয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম, ফলাফল হয়েছিল অতি ভয়াবহ, কেন যেন পুরো পোষ্টই আজব নীলাকার ধারন করে। এরপর এমনই ভয় পেয়েছি যে অন্য ব্লগেও আর সাহস করি না।
দেখি আপনার ভরসায় আরেকবার বিসমিল্লাহ করে। মনে হচ্ছে আজ লেগে যাবে।
@আদিল মাহমুদ,
বাহ এই তো পারছেন! কংগ্রাচুলেশন!!!! :rose:
@অভিজিৎ,
Thank You!
আসলে মাইরের বড় ভিটামিন নাই!
@আদিল মাহমুদ,
এটা বোধ হয় ঠিক নয়। বন্যার রিসেন্ট এভু ডেভু নিয়ে লেখা কিংবা আজকের অপার্থিব কিংবা শিক্ষানবিসের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে লেখাগুলো দেখুন – ডকিন্সের নামও নেই। আসলে যারা বিবর্তন নিয়ে গভীর লেখা লেখেন তারা ডকিন্স ছাড়াও হাজারো বিজ্ঞানীদের কাজের উল্লেখ করেন তাদের লেখায়।
ডকিন্সের নাম আসলে বেশি নেন বিবর্তনবিরোধীরা। তারা কোন এক সজ্ঞাত কারণে ধরেই নেন যে, ডকিন্সকে গালাগালি দিলেই কিংবা তাকে কোন একভাবে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলেই বোধ হয় বিবর্তন রিফিউট হয়ে যাবে। আসলে বিবর্তন একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, এটা কোন ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভরশীল নয়। বিবর্তনকে ভুল প্রমাণ করতে হলে বৈজ্ঞানিকভাবেই তা করতে হবে, ব্যক্তির উপর আক্রোশ ঝেড়ে নয়।
তবে প্রফেট সংক্রান্ত একটি মন্তব্য করতেই হচ্ছে। প্রতিটি যুগেই কোন কোন বিজ্ঞানী কাজের জন্য অনেক সময় সেলিব্রিটিতে পরিণত হন। নিউটনের সময় যেমন নিউটন। আইনস্টাইনের কালে যেমন আইনস্টাইন। সে সময় অন্য বহু বিজ্ঞানী থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষেরা এদেরকে যত উদ্ধৃত করেছেন, অন্যদের তেমন করেননি। কিন্তু তা বলে তারা তো প্রফেট হয়ে যাননি। বিজ্ঞানে হিরো আছে, কিন্তু প্রফেট নেই। আজ আইনস্টাইনের তত্ত্ব কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারলে ন্তুন হিরোকে নিয়েই লোকে নাচবে, তাকেই বেশি উদ্ধৃত করা হবে বেশি। এটিই স্বাভাবিক। আইনস্তাইনের কালে যেমন আইনস্টাইন উদ্ধৃত হয়েছেন বেশি, ঠিক তেমনি আমরা হয়তো ডকিন্সের কালে বাস করছি। ডারউইনের অরিজিন অব স্পিশিজের পর ডকিন্সের সেলফিশ জিন আসার আগে জীববিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরা এমনিভাবে আসলেই আলোড়িত হননি। তার সেলফিশ জিন তত্ত্বের মাধ্যমে সর্বসাধারণের বিবর্তনীয় ভাবনাকে আমূল পরিবর্তন করেছেন ডকিন্স। সেজন্যই ডকিন্স এ যুগের সেলিব্রিটি বিজ্ঞানী, কোন প্রফেট নন।
আর পরিশেষে, সৈকতের মতই “মাতব্বরি” করে বলি – উদ্ধৃতি বাটনটি ব্যবহার করে আপনার মন্তব্য আর উদ্ধৃতিকে আলাদা করুন। দেখতেও ভাল লাগে। আর তাছড়া ডেভেলপার হিসেবেও আমার জন্য লজ্জার। একগাদা বাটন দেয়ার পরেও ইউজার বুঝতে পারছে না কি করে সেগুলো ব্যবহার করতে হয়! 🙂
ডকিন্স ভক্ত তো ছিলামই। সম্প্রতি অ্যানসেস্টর্স টেল পড়ে আরও ভক্ত হচ্ছি। বুড়া হলে বলতে পারব যে আমরা ডকিন্স যুগের মানুষ।
সমকালে লেখা যে পরিমাণ কাটা হইছে কতটুকু ঠিক থাকে কে জানে। ডিসক্লেমার দিয়ে রাখি: [আমার কোন দোষ নাই, সব করছে আসিফ ভাই :D]
@শিক্ষানবিস,
কাটাকাটিতে আসিফ ভাই অনন্য। 🙂
বাংলা ভাষার পাঠকদের জন্য ডকিন্সের পরিচিতিটা খুবই দরকারী ছিল। সৃষ্টিবাদীরা নাকি বলে বেড়ায়, ডকিন্স মরলেই বিবর্তন বিজ্ঞান শেষ হয়ে যাবে। সৃষ্টিবাদীদের এই ‘শকুন-দোয়া’ থেকেই বোঝা যায় ডকিন্স বিবর্তন তত্ত্বের কতটা শক্তিশালী প্রবক্তা। সৃষ্টিবাদীদের মুখে ছাই দিয়ে ডকিন্স বেঁচে থাকবেন তাঁর অসাধারণ কীর্তি, তাঁর লেখা অমূল্য গ্রন্থগুলোর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে।
অনেক ধন্যবাদ অভিজিৎ।