বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে সম্প্রতি অভিজিৎ রায় একটি চমৎকার ই-বুক করেছেন, নাম “মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা“। অভিজিৎদা যখন লিখছেন তখন আমিও এপাশে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছিলাম, মূলত একটি বইয়ের জন্য প্রবন্ধ লেখার তাগিদে। এটা অবশ্য অভিজিৎদার সাথে আমার মনের মিলটাও ধরিয়ে দেয়, মনে হয় অভিজিৎদারও প্রধান আগ্রহের বিষয় জ্যোতির্বিজ্ঞান আর বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান- যে বিষয়গুলো নিয়ে পড়তে ভাল লাগে তিনি বই লিখেছেন ঠিক সেই বিষয়গুলো নিয়ে; বড়ই অদ্ভুত। যাহোক, ই-বুকটা আবার পড়তে গিয়ে দেখলাম এক জায়গায় লেখা:
তবে আধুনিক ‘বিবর্তন মনোবিদ্যা’র জন্ম এদের কারো হাতে হয়নি, এর জন্ম হয়েছে মূলতঃ এক সেলিব্রিটি দম্পতি জন টুবি (নৃতত্ত্ববিদ) এবং লিডা কসমাইডস (মনোবিজ্ঞানী) –এর হাত দিয়ে। তারা ১৯৯২ সালে ‘The Adapted Mind: Evolutionary Psychology and the Generation of Culture’ নামের যে বইটি লেখেন সেটিকে আধুনিক বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ভিত্তিমূল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা এই বইয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মত সমাজবিজ্ঞানের প্রচলিত মডেলকে (standard social science model, সংক্ষেপে SSSM) প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং সামাজিক বিবর্তন এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন রূপরেখা জৈববিজ্ঞানীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করেন। এই দৃষ্টিকোনটিকে আজ অনেকেই অভিহিত করছেন ‘মনের নতুন বিজ্ঞান’ (‘the new science of the mind’) নামে। যারা জন টুবি এবং লিডা কসমাইডসের এই ‘নতুন বিজ্ঞানের’ সাথে পরিচিত হতে চান, তারা অন লাইনে ‘Evolutionary Psychology: A Primer’ প্রবন্ধটি পড়ে নিতে পারেন।
আমি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বুঝেছিলাম ঠিক এই প্রাইমারটা পড়েই। উইলসনের সোশিওবায়োলজি পড়া হয় নি, ডকিন্সের সাথে পরিচয় ছিল এই যা। লেখা অনেকদিন আগের হলেও আজকের ডারউইন দিবস উপলক্ষে ভাবলাম ধারাবাহিকভাবে ছেড়ে দেই। অভিজিৎদার লেখা থেকে রিডাইরেক্টেড হয়ে যারা কসমাইডস-টুবির প্রাইমার পড়তে যাবেন তাদের ইংরেজি-বিদ্বেষ এর ইন্ধন হয়ে থাকবে আমার এই লেখাটা। আমার ধারণা এটা পড়লে কসমাইডস-টুবির প্রাইমার পড়ার কাজ কিছুটা হয়ে যাবে। আর কথা না বাড়িয়ে তবে শুরু করি… [বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সমগ্র প্রেক্ষাপট জানতে হলে ই-বুক টি পড়ে ফেলুন]
:line:
জানি না কখন আমরা, মানুষেরা, আমাদের মন নিয়ে চিন্তা শুরু করেছিলাম। ভাবলে অবাক হতে হয়- নিজেদের মন দিয়েই নিজেদের মনের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছি। এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের কারণেই হয়তোবা, এখনও খুব বেশী এগোতে পারিনি আমরা। তবে একেবারে পিছিয়েও নেই। অন্তত রহস্য উদঘাটনের একটা রাস্তা তৈরী করা গেছে। বিবর্তনবাদ সময়মতো কদর পেলে হয়তো সে রাস্তা আরও আগেই তৈরী করা যেতো। মন নিয়ে গবেষণা করার জন্য মনোবিজ্ঞান নামে জ্ঞানের একটি আলাদা শাখাই আছে। কিন্তু সময়ের দাবী মেনে মনোবিজ্ঞানের প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে উঠেছে বিবর্তনকে সম্পূর্ণ অবহেলা করে। বিংশ শতকের শেষার্ধে বিবর্তনবাদ সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পর জ্ঞানের অন্য অনেক শাখার মত মনোবিজ্ঞানীরাও তাদের ভিত্তি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সেই চিন্তা থেকেই জন্ম নিয়েছে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান।
মনোবিজ্ঞান মানুষের মন এবং ব্যবহার নিয়ে কাজ করে। মানুষের মন কিভাবে গঠিত হয়েছে? মনের মধ্যে সংঘটিত বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিভাবে ব্যবহারের জন্ম হয়?- মনোবিজ্ঞান এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বেড়ায়। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান ঠিক এই কাজগুলোই করে, এই প্রশ্নগুলোরই উত্তর খুঁজে বেড়ায়; তবে সাধারণ মনোবিজ্ঞানীদের থেকে একটু ভিন্ন উপায়ে। তারা এক্ষেত্রে বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের তত্ত্ব ও উপাত্তগুলো প্রয়োগ করে। অর্থাৎ বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের কোন পৃথক শাখা নয়, বরং মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি বিশেষ উপায়। এই উপায়ের মাধ্যমে মনোবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত যে কোন বিষয় নিয়েই গবেষণা করা যায়। দৃষ্টি, যুক্তি, সামাজিক ব্যবহার- এগুলো যেমন মনোবিজ্ঞানের পৃথক পৃথক শাখা, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান তেমন কোন শাখা নয়। এটি একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে এই সবগুলো শাখায়ই গবেষণা করা যায়। তাই এর সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়: মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণার যে পদ্ধতিতে মানুষের মনের গঠন বোঝার জন্য বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের তত্ত্ব ও উপাত্ত ব্যবহার করা হয় তাকেই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বলে।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে ধরে নেয়া হয়: মানুষের মস্তিষ্ক নিছক একটি তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র যা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। আর আমাদের শিকারী-সংগ্রাহক পূর্বপুরুষরা অভিযোজন করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল সেগুলো সমাধান করার জন্যই এই যন্ত্র গঠিত এবং বিকশিত হয়েছে। মনোবিজ্ঞানের এই নতুন চিন্তাধারা অনেক বিজ্ঞানীর উপর প্রভাব ফেলেছে এবং অনেকেই এ নিয়ে গবেষণা করছে। তাই গবেষণার নিত্য-নতুন ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে। পাশাপাশি এ নিয়ে সমালোচনারও অভাব নেই। বিজ্ঞানের অনেক দার্শনিকই মনে করেন, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ভিত্তিটি এখনও নড়বড়ে। বিজ্ঞানের সব নবীন তত্ত্ব এবং পদ্ধতিকেই সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। ভবিষ্যতে মনোবিজ্ঞানের এই নতুন উপায়ের ভিত্তি ভ্রান্ত প্রমাণিত হলে একে পথ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু ততোদিনে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে যে গবেষণাগুলো হয়ে যাবে সেগুলোর গুরুত্ব কমবে না। কারণ বর্তমান গবেষণার ভুলকে সংশোধনের মাধ্যমেই নতুন গবেষণার ক্ষেত্র তৈরী হয়।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান্টা বারবারায় “সেন্টার ফর এভল্যুশনারি সাইকোলজি” নামে একটি গবেষণাকেন্দ্র আছে যেখানে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। কেন্দ্রটির পরিচালক হলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের লিডা কসমাইড্স এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের জন টুবি। এই দম্পতি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এখানে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমি মূলত কসমাইড্স ও টুবির একটি জনপ্রিয় প্রবন্ধ অনুসরণ করবো। সবশেষে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং সমালোচনার কথা বলতে গিয়ে অন্য কয়েকটি প্রবন্ধের দ্বারস্থ হবো। পরিশেষে সবগুলো সূত্রই উল্লেখ করা থাকবে। যে তথ্যের কোন সূত্র নেই বুঝতে হবে সেটা কসমাইডস ও টুবির প্রাইমার থেকে নেয়া। প্রায় পুরো লেখাটাই তাদের প্রাইমারের আদলে লেখা। অনেক অংশে হুবহু অনুবাদও করা হয়েছে।
আমাদের স্বজ্ঞান্ধতা এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায়
চার্লস ডারউইন তার “অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস” (১৮৫৯) বইয়ে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন ব্যাখ্যা করার পর একেবারে শেষের দিকে বলেছিলেন,
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, অদূর ভবিষ্যতেই এ বিষয়ক গবেষণার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র তৈরী হবে। মনোবিজ্ঞান সম্পূর্ণ নতুন ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। ধীর পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে প্রত্যেকে মানসিক শক্তি ও ক্ষমতা অর্জন করেছে তা জানার মাধ্যমেই নতুন ভিত্তির দ্বার উন্মোচিত হবে।
এর ত্রিশ বছর পর উইলিয়াম জেম্স ঠিক এ কাজটিই করে দেখিয়েছিলেন। তার “প্রিন্সিপ্ল্স অফ সাইকোলজি” (১৮৯০) পরীক্ষণমূলক মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি বই। এই বইয়ে জেম্স “স্বজ্ঞা” বা ইনট্যুশন (intuition) নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তার বইয়ে স্বজ্ঞা বলতে এমন সব বিশেষায়িত স্নায়বিক বর্তনীকে বোঝানো হয়েছে যেগুলো কোন একটি প্রজাতির সকল সদস্যের মধ্যেই থাকে, স্বভাবতই এগুলো সে প্রজাতির বিবর্তনীয় ইতিহাসের উৎপাদ। মানুষের ক্ষেত্রে এই বর্তনীগুলোকেই একসাথে “মানব প্রকৃতি” বলা যায় কারণ এরাই আমাদের প্রকৃতি ও স্বভাব নির্ধারণ করে।
সে সময়, এবং এখনও প্রায় সবাই মনে করে, অন্যান্য প্রাণী “স্বজ্ঞা” দ্বারা চালিত হলেও মানুষ স্বজ্ঞাকে জয় করে সম্পূর্ণ “যুক্তি” (reason) দ্বারা চালিত হয়। এটা সেই চিরাচরিত “সৃষ্টির সেরা জীব” ধারণার বহিঃপ্রকাশ। অনেকে ধরে নেয়, স্বজ্ঞার বদলে যুক্তি দ্বারা চালিত হয় বলেই অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষ এতো ব্যতিক্রমী রকমের বুদ্ধিমান। উইলিয়াম জেম্স এই প্রতিষ্ঠিত ধারার একেবারে বিপরীত ধারণা গ্রহণ করেন। তিনি বলেন: মানুষের স্বজ্ঞা কম নয় বরং অনেক অনেক বেশী বলেই সে অন্যান্যদের তুলনায় ব্যতিক্রমী রকমের বুদ্ধিমান। আর মানুষের স্বজ্ঞা এত সূক্ষ্ণভাবে কাজ করে যে আমরা তার প্রভাবটাও বুঝতে পারি না। প্রকৃতপক্ষে যুক্তি নয়, বরং অনেক বেশী ও সূক্ষ্ণ স্বজ্ঞা দ্বারা চালিত হয় বলেই মানুষ এতো উন্নত। আমাদের মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বেশ স্বয়ংক্রিয় বলেই আমরা এর প্রভাব টের পাই না। আমরা নিজেদের ব্যবহার খুব স্বাভাবিক মনে করি বলেই তা ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। এটা মনোবিজ্ঞান গবেষণাকে কঠিন করে দেয়। একে এক ধরণের অন্ধত্ব বলা যায়, জেমস যাকে বলেছেন স্বজ্ঞার প্রতি অন্ধতা বা স্বজ্ঞান্ধতা (instinct blindness)। ফুলের গন্ধ আমাদের এত প্রিয়, অথচ গোবরের গন্ধ আমরা সহ্য করতে পারি না- এ ধরণের অতি স্বাভাবিক ঘটনা ব্যাখ্যার মাধ্যমেই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান চর্চা শুরু করতে হবে।
অর্থাৎ খুব স্বাভাবিক ঘটনা ও বিষয়গুলোকেই আমাদের অস্বাভাবিক ভাবতে হবে এবং সেগুলোর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের স্বভাবকে ভাবতে হবে কোন এলিয়েনের স্বভাব, তারপর সে রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে দক্ষ গোয়েন্দার মত। মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টিই এতোদিন ধরে এড়িয়ে গেছেন। সামাজিক মনোবিজ্ঞানীরা এমন সব আচরণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন যেগুলো দেখলে আমাদের দাদা-দাদীরা আকাশ থেকে পড়তো। আর বৌদ্ধিক মনোবিজ্ঞানীরা এমন সব কাজের ব্যাখ্যা খোঁজায় ব্যস্ত থেকেছেন যেগুলোতে আমরা কাঁচা- যেমন অংক কষা। এই গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের লক্ষ্য করতে হবে এমন সব আচরণের প্রতি যেগুলো খুব স্বাভাবিক, যেগুলো কাউকে অবাক করে না; এমন সব কাজের ব্যাখ্যা খুঁজতে হবে যেগুলোতে আমরা খুবই দক্ষ। আমাদের দেখা, কথা বলা, ঘ্রাণ নেয়া, প্রেমে পড়া, রোগের ভয়, আক্রমণ, গোষ্ঠীবদ্ধতা এগুলোকে এবার ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে হবে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। তাদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটা সাধারণত এরকম হয়:
অভিযোজনগত সমস্যা -> বৌদ্ধিক প্রোগ্রাম -> স্নায়ু-জৈবিক ভিত্তি
অর্থাৎ প্রথমে অভিযোজনগত সমস্যা চিহ্নিত করা হয়, এরপর সেই সমস্যা সমাধান করতে পারে এমন বৌদ্ধিক (cognitive) প্রোগ্রাম খুঁজে বের করা হয় এবং সবশেষে এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় স্নায়বিক বর্তনী তথা জৈবিক কাঠামো সনাক্ত করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে তুলনা করা যায় একটি ফিল্টারের সাথে যে ফিল্টারের মধ্য দিয়ে চালনা করলে মনোবিজ্ঞান স্বজ্ঞান্ধতা থেকে মুক্ত হয়। এই ফিল্টারের মাধ্যমেই আমরা মনের মধ্যে নিরন্তর ঘটতে থাকা জটিল সব ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করতে পারি। এগুলোর নকশা আবিষ্কারের পথে কিছুটা হলেও এগিয়ে যেতে পারি। আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন,
এই তত্ত্ব প্রকৃতপক্ষে আমরা কি পর্যবেক্ষণ করতে পারব তা নির্ধারণ করে।
প্রমিত সমাজবিজ্ঞান মডেল
মনোবিজ্ঞানের অনগ্রসরতার পেছনে স্বজ্ঞান্ধতার পাশাপাশি আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে সর্বজনগৃহীত “প্রমিত সমাজবিজ্ঞান মডেল”। এই মডেল অনুসারে: মানুষের মনের মধ্যে যা কিছু আছে তার সবই সমাজ থেকে এসেছে এবং এ কারণেই সামাজিক বিজ্ঞানগুলো মনোবিজ্ঞানের বিবর্তনীয় ভিত্তি থেকে মুক্ত। এই ধারণা থাকার কারণে এ যুগেরও অনেক সামাজিক বিজ্ঞানী মনে করেন, সামাজিক আচার-ব্যবহার ব্যাখ্যার জন্য বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এই ধারণার উৎপত্তির দিকে নজর দিলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে।
ডেভিড হিউম বলেছিলেন,
বিভিন্ন ধারণা বা চিন্তার মধ্যে মাত্র তিন ধরণের সংযোগ থাকতে পারে: সাদৃশ্য, স্থান-কালে সংস্পর্শ এবং কারণ বা ফলাফল।
হিউমের চিন্তাধারা পরবর্তী সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলোকে প্রভাবিত করেছে। তাই আধুনিক সামাজিক বিজ্ঞানের মডেলেও আমরা সাধু টমাস একুইনাসের কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পাই:
মানুষের বুদ্ধিতে এমন কিছু নেই যা আগেই ইন্দ্রিয়তে ছিল না।
এই ধারার মডেল অনুসারে প্রথমে বলা হয়েছিল, মানুষ “ব্ল্যাংক স্লেট” নিয়ে জন্মায়, সেখানে কিছুই লেখা থাকে না। জন্মের পর ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সে নানান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকে এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ ছাড়া আর কোনকিছুই তার স্লেটে কিছু লিখতে পারে না। তাছাড়া এই ধারার মনীষীরা মনে করেন, পরিবেশের এই স্লেট-লিখন খুব বেশি জটিল হতে পারে না। স্বভাবতই মানুষের মন-যন্ত্রের কার্যকলাপকে হতে হবে বেশ সরল। তারা ধরে নেন, মনের একটিমাত্র যন্ত্র দিয়ে মানুষ অনেক কিছু করতে পারে। বিষয়টা আরেকটু বিশদ করে বলে যাক:
মন এমন কিছু যন্ত্র বা কৌশলের মাধ্যমে গঠিত যেগুলোর মধ্যে কেবল যুক্তি আছে কিন্তু কোন জিনিসপত্র নেই। অর্থাৎ তারা কিভাবে কাজ করবে সেই যুক্তি ঠিক করে দেয়া আছে, কিন্তু কিসের উপর কাজ করবে তা বলা নেই। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট যন্ত্রের ইনপুট হিসেবে যে জিনিসই দেই না কেন যন্ত্রটি একই ধরণের ফলাফল দেবে। বিষয়টাকে আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রের সাথে তুলনা করা যেতে পারে: যন্ত্রকে বলা হয়েছে তোমার ইনপুটে যা দেয়া হবে তাকেই তুমি চার কোণা শক্ত ঘনকে পরিণত করবে এবং আউটপুট হিসেবে বের করে দেবে। এখন ইনপুটে আবর্জন দেয়া হলেও সে যা করবে অতি মূল্যবান আসবাবপত্র দিলেও সে তাই করবে। অর্থাৎ কনটেন্ট নিয়ে তার কোন চিন্তা নেই, সে কেবল যুক্তি বা প্রক্রিয়ার সূক্ষ্ণতা নিয়ে চিন্তা করে। এ ধরণের একটি যন্ত্র দিয়ে যত কাজ করা সম্ভব, ইনপুটের উপর নির্ভরশীল অনেক যন্ত্র দিয়েও সেটা সম্ভব না। আবর্জনা প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রকে যদি বলা হতো, তোমার কাজ শুধু এই ইনপুটগুলো গ্রহণ করা তবে আমাদের আরও কত কত যন্ত্র লাগতো সেটা বলে না দিলেও চলে। কিন্তু কথা হলো সবসময় KISS (keep it small and simple) নীতিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। কিস নীতি আসলে কাজ কমানোর জন্য প্রয়োগ করা হয় না, বরং অনেক কষ্ট করে খুব সাধারণ ও ছোট্ট মূলনীতিটা বের করাই তার আসল কাজ।
বৌদ্ধিক মনোবিজ্ঞান, বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি, মানুষের মন অনেক জটিল। অনেক অনেক সূক্ষ্ণ এবং ইনপুটের উপর নির্ভরশীল যন্ত্রের মাধ্যমে এটি গঠিত। মনের ক্রিয়া বোঝার অর্থ কোন সাধারণ সূত্র বের করা নয়, বরং এ ধরণের ছোট ছোট যন্ত্রগুলো খুঁজে বের করা। যত বেশি যন্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে মনোবিজ্ঞান ততই প্রগতির দিকে এগিয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে এই যন্ত্রগুলো প্রচণ্ড বিশেষায়িত। সে হিসেবে প্রমিত সামাজিক বিজ্ঞান মডেলের দিকে ফিরে তাকানোর সুযোগ খুব কম।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের মূলনীতি
স্বজ্ঞান্ধতা ও প্রমিত মডেলের ধাঁধা সমাধান করার পর এখন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের মূলনীতি সম্পর্কে আলোচনা করা যায়। পাঁচটি মৌলিক সূত্রকে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের মূলনীতি বলা যেতে পারে, মনোবিজ্ঞানের যেকোন গবেষণা এই পাঁচ সূত্র মেনে করতে হবে।
প্রথম সূত্র:মস্তিষ্ক একটি ভৌত যন্ত্র যা কম্পিউটারের মত কাজ করে। এর বর্তনীগুলো পরিবেশ উপযোগী স্বভাব তৈরী করে।
মনের মাঝে অতিপ্রাকৃত কিছু নেই। এটা নিছকই এক ভৌত যন্ত্র যা পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের সকল সূত্র মেনে কাজ করে। আমাদের চিন্তা-চেতনা, আশা-ভরসা, প্রেম-ভালোবাসা সবই রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফল- এটা মেনে নিতে একটু কষ্ট হওয়ারই কথা। মস্তিষ্ক থেকেই এসবের জন্ম হয়। আর মস্তিষ্ককে তুলনা করা যায় কম্পিউটারের সাথে। পার্থক্য হল, এটা সিলিকন চিপের বদলে জৈব উপাদান দিয়ে গঠিত। মস্তিষ্কের মূল গাঠনিক উপকরণ হল নিউরন নামক স্নায়ু কোষ। প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াও স্নায়বিক চেতনা সারা দেহে ছড়িয়ে দেয়া এবং সারা দেহ থেকে বিভিন্ন অনুরণন মস্তিষ্কে নিয়ে আসার জন্য পৃথক পৃথক নিউরন আছে। নিউরনগুলো সংবেদী কোষের সাথে যুক্ত। এই সংযুক্তিগুলো অনেকটা বর্তনীর মতই। বৈদ্যুতিক বর্তনীতে যেমন একটি উপাদান আরেকটির সাথে বিভিন্ন তারের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এখানেও তেমন যোগাযোগ লক্ষ্য করা যায়।
মানব দেহের স্নায়বিক বর্তনী খুবই সুসংগঠিত। যেমন সেন্সরি গ্রাহক থেকে মস্তিষ্ক হয়ে মোটর নিউরন পর্যন্ত চেতনা পৌঁছানোর কথাই ধরা যাক। সেন্সরি গ্রাহকদের কাজ পরিবেশ থেকে পাওয়া বিভিন্ন অনুভূতি নিউরনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয়া। অন্যান্য নিউরন আবার এই অনুভূতিকে মোটর নিউরনে পৌঁছে দেয়। মোটর নিউরন সংযুক্ত থাকে পেশীর সাথে, সুতরাং এই প্রক্রিয়াতেই আমরা পেশীর মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করতে পারি। মস্তিষ্কের সাথে চলাচল তথা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া বা নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করার সম্পর্ক আছে। যেসব জীব নড়াচড়া করে না তাদের কোন মস্তিষ্ক নেই, যেমন গাছ। এমন কিছু প্রাণীও আছে যারা জীবনের একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত চলাচল করে না, এজন্য সেই পর্যায়ে তাদের মস্তিষ্কও থাকে না। যেমন কিছু সামুদ্রিক স্কয়ার্ট জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে নড়াচড়া করে না। তারা জীবন ধারণের উপযোগী পরিবেশে গিয়ে শক্ত কোনকিছুর সাথে লেগে যায় এবং অনেকটা সময় সেভাবেই থাকে। চলাচল না করায় এ সময় তাদের মস্তিষ্ক লাগে না। না লাগলে শুধুশুধু এমন একটা বোঝা মাথায় বয়ে বেড়ানোর কি দরকার! এই ভেবেই বোধহয় তারা নিজেদের মস্তিষ্ক খাওয়া শুরু করে। পুরোটা না পারলেও নিজ মস্তিষ্কের অনেকটাই তারা খেয়ে ফেলে।
বলা যায়, মস্তিষ্কের বর্তনীগুলো জীবদের চলন এবং পরিবেশের বিভিন্ন আবেদনে সাড়া দিতে জীবকে সাহায্য করে। সাহায্য করে বললে আসলে ভুল হবে। বরং বলা উচিত, এইসব বর্তনীর মাধ্যমেই আমরা নড়াচড়া করি এবং পরিবেশের বিভিন্ন আবেদনে সাড়া দিই। সে হিসেবে বলা যায় এরাই আমাদের স্বভাব তৈরী করে।
দ্বিতীয় সূত্র: প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের স্নায়বিক বর্তনীগুলো গড়ে উঠেছে। বিবর্তনের ইতিহাসে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল সেগুলো সমাধান করার জন্যই প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করেছে।
স্নায়বিক বর্তনীগুলোর মাধ্যমেই আমরা পরিবেশের আবেদনে সাড়া দেই। কিন্তু কোন আবেদনে কিভাবে সাড়া দেব সেটা পূর্বনির্ধারিত নয়। একই আবেদনে একেক প্রজাতি একেকভাবে সাড়া দিতে পারে। তাই নির্দিষ্ট কোনটিকে সঠিক এবং বাকিগুলোকে ভুল বলার অবকাশ নেই। গোবরের কথাই ধরা যাক। মানুষ যেখানে গোবর দেখলে নাক চেঁপে দ্রুত পালায়, সেখানে গুবরে পোকারা হন্যে হয়ে গোবর খোঁজে আর পেলেই তাতে নিজের ডিম রুয়ে দেয়। গুবরে পোকার লার্ভারা আবার গোবরকেই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মজার ব্যাপার হল পুরুষ গুবরে পোকারা প্রেমিকার সন্ধানে গোবরের আশেপাশেই ঘুরে বেড়ায়। বলা যায় মানুষের কাছে ড্যান্স ক্লাবের যে গুরুত্ব গুবরে পোকার কাছে গোবরের গুরুত্ব ঠিক ততটাই। গোবরের গন্ধকেও কেউ ভালোবাসতে পারে- এটা ধরে না নিলে আমরা বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের পথে এগোতে পারব না। উইলিয়াম জেম্স বোধহয় এটাকেই বলেছিলেন, “স্বাভাবিককে অদ্ভুত হিসেবে দেখা”।
স্বভাব স্নায়বিক বর্তনীর একটি ফাংশন। স্বভাব বলতে প্রকৃতির বিভিন্ন আবেদনে সাড়া দেয়াকেই বোঝায়। আর এই সমীকরণ অনুযায়ী বলা যায়, যেকোন আবেদনে যেকোন সাড়া তৈরী করা সম্ভব। আমি যদি মানব মস্তিষ্কের নকশাকারী হতাম তবে গোবরের প্রতিও ভালো লাগার অনুভূতি জাগাতে পারতাম। কিন্তু এই নকশা যে কোন নির্দিষ্ট সত্ত্বা বা ব্যক্তি করেনি সেটা আজ ভালই বোঝা যাচ্ছে। এর নকশাকারী প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক নির্বাচন। এই অন্ধ প্রক্রিয়াটি নিজের ইচ্ছামত নকশা করেনি কারণ তার নিজের কোন ইচ্ছাই নেই। প্রক্রিয়াটা খুব জটিল হলেও এক অর্থে বলা যায় তাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি, সে কেবল এমন সব অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দিয়েছে যেগুলো মানুষের প্রজনন ক্ষমতা এবং আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে দেয়।
প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রজাতির ভাল করে এমনটিও বলা যাবে না। বরং বলা উচিত, এই প্রক্রিয়ায় ফিনোটাইপের একটি নির্দিষ্ট গুণ বা দোষ জনপুঞ্জে নিজেই নিজের বিকাশ ঘটায়। অর্থাৎ যে গুণটি তার বাংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে সেটি নিজেই বিস্তৃত হয়। গোবরের উদাহরণেই ফিরে আসি। ধরা যাক সুদূর অতীতে আমাদের কোন এক পূর্বপুরুষ গোবর খেতে ভালোবাসতো। গোবরের মধ্যে মানুষের জন্য ক্ষতিকর অনেক জীবাণু আছে। সুতরাং এটা খাওয়ার ফলে তার রোগ প্রতিরোধ কমে যাবে এবং স্বভাবতই আয়ু কমে যাবে। পাশাপাশি তার সঙ্গী বেছে নেয়ার ক্ষমতাও কমে যাবে, কারণ ঘুরতে ফিরতে না পারলে প্রেমিকা খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। তাই সামগ্রিকভাবে এ মানুষদের বংশধর হবে কম। অন্যদিকে যে মানুষটি গোবর খেতো না সে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘায়ু লাভ করবে এবং বেশি সন্তান-সন্ততির জন্ম দেবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে একসময় দেখা যাবে গোবর-খেকোরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের মত গোবর প্রত্যাখ্যানকারীরাই কেবল টিকে থাকবে। এককথায় বলা যায়, আমাদের স্নায়বিক বর্তনী অন্যরকম না হয়ে এমন হওয়ার কারণ এরকম বর্তনীগুলোই অতীতের অভিযোজনগত সমস্যার সমাধানে অন্যগুলোর চেয়ে বেশি পারঙ্গম ছিল।
মস্তিষ্ক এবং মনকে এখন বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা যায় যেটা বৌদ্ধিক মনোবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমানে মস্তিষ্ককে কেবলই এক তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মস্তিষ্ক যদি স্বভাব তৈরী প্রক্রিয়ার হার্ডওয়্যার হয় তবে মনকে সেই প্রক্রিয়ার সফ্টওয়্যার বলা যায়। মন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং সেগুলোর সমাধান করার মাধ্যমেই মস্তিষ্কের বিবর্তন ঘটেছে। তবে এই পরিবর্তনের জন্য কেবল অভিযোজনগত সমস্যাগুলোই দায়ী। এ ধরণের সমস্যার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য আছে: প্রথমত, বিবর্তনের ইতিহাস জুড়ে সেই সমস্যাগুলো বারবার ফিরে এসেছে এবং দ্বিতীয়ত, এগুলো কোন না কোনভাবে প্রজাতির প্রজননকে প্রভাবিত করেছে। বৈশিষ্ট্য দুটো থেকেই প্রাকৃতিক নির্বাচন কিভাবে কাজ করে তা বোঝা যায়। এক পপুলেশনে কোন সমস্যা দেখা দিলে যাদের মধ্যে সেই সমস্যার সমাধান আছে তারা বেঁচে থাকবে এবং যাদের নেই তারা মারা যাবে। কিন্তু এই একই সমাধান এবং সমস্যাগুলো যদি পরবর্তী প্রজন্মে না যায় তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজই করবে না। আর যদি যায় তাহলে যাদের সমাধান ছিল তাদের ছেলেমেয়েদেরও সমাধানটি থাকবে এবং অনেক প্রজন্ম পর কেবল তারাই টিকে থাকবে, সমাধানহীনেরা বিলুপ্ত হবে। প্রথম বৈশিষ্ট্যে বলা হয়েছে সমস্যাটি বারবার ফিরে আসে দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যে বলা হয়েছে সমাধানটি বংশানুক্রমে প্রবাহিত হয়। এটাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের জিয়নকাঠি।
[চলবে…]
অসাধারণ লাগলো! ধারণাগুলো খুব স্বাভাবিক এবং পরিচিত লাগলো। বোঝা যাচ্ছে কৃবুর গবেষণার সাথে এর ঘনিষ্ঠতা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
এই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের লেখায় সব সময় দেখি ‘শিকারী-সংগ্রাহক’ সময়ের অভিযোজনের কথা বলা হয়। আমরা তো মাত্র ২.৬ মিলিয়ন বছর আগে শিকার করতে শুরু করেছি (পাথরের অস্ত্র এ সময় থেকেই পাওয়া যেতে শুরু করে)। আমাদের বিভিন্ন স্বভাবের মনোস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিতে গেলে সবসময়েই এই শিকারের ব্যাপারটা চলে আসে। আমাদের বিবর্তন কি তাহলে এই সময় থেকে শুরু হল বলে ধরতে হবে? ওই ‘Evolutionary Psychology: A Primer’ লেখাটাতেই যে তথ্য দিচ্ছে তা থেকে কিন্তু অঙ্ক মিলছে না,
এক জায়গায় বলছে,
‘Generation after generation, for 10 million years, natural selection slowly sculpted the human brain,’
আবার তার পরেই বলছে,
‘Our species lived as hunter-gatherers 1000 times longer than as anything else.’
প্যাঁচ লাগানোর জন্য শুধু না (এখানে সেটাও যদিও একটা উদ্দেশ্য … এই evolutionary psychology র অনেক ব্যাখ্যাই আমার এখনও পছন্দ হয় না) এবার আমি কিন্তু আন্তরিকভাবে কনফিউসড 🙂
@বন্যা আহমেদ,
ভাল প্রশ্ন। দেখি শিক্ষানবিস কি জবাব দেয়।
আমার একটা ব্যাখ্যা আছে। সেটা আপাততঃ বয়ান করি। জানি না একদম ঠিক ব্যাখ্যা হবে কিনা।
ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে গেলে মস্তিস্কের শেয়ার্ড এবং ইউনিক মডিউল গুলোর কথা জানতে হবে। ধরা যাক, আমাদের পুর্বপূরষদের কথা যদি বলতে হয়, তবে সব স্তন্যপায়ী প্রানীদের পুর্বপুরুষ ছিলো সরিসৃপেরা। কাজেই কিছু মডিউল থাকবেই মানুষের জন্য ‘ইউনিক’ নয়। সুবিন যেমন দেখিয়েছেন – আমাদের দেহগত স্ট্রাকচারে ‘ইনার ফিশ’ এর ছোয়া আছে, আমাদের মস্তিস্ক বিশ্লেষন করলেও আমাদের সরিসৃপ কিংবা মৎস প্রজাতির বিভিন্ন মডিউল পাওয়া যাবে – যা আমরা শেয়ার করি। কিন্তু তারপরেও কিছু মডিউল পাওয়া যাবে ইউনিক। কুমির এবং মানুষের – উভয়েরই চোখ আছে – এবং দুজনেই একই পূর্বপূরুষ হতে বিবর্তিত এবং বিকশিত, কিন্তু তার মানে এই নয় যে একটি মানুষের ‘কুমিরের চোখ’ আছে। মানব প্রজাতিতে চোখের বৈশিষ্ট কুমিরের বৈশিষ্ট থেকে আলাদা। আমি আমার “মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা“ বইটিতে পাকস্থলির উপমা দিয়ে বুঝিয়েছিলাম যে, সলিমুল্লাহ কসাই খুব ভাল করেই আমাদের দেখিয়ে দিতে পারবেন গরুর পাকস্থলি কেমন হয়, খাসিরটা কেমন, ভেড়ারটা কেমন আর মুরগীরটা কেমন। মানুষের পাকস্থলিও এদের থেকে আলাদা হবে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, পেটের ভিতরে পাকস্থলির যেমন একটা প্রকৃতি আছে, তেমনি মানুষের মনেরও আলাদা একটা প্রকৃতি আছে – যেটা অন্য প্রানী থেকে আলাদা। কিন্তু এই “সার্বজনীন মানব প্রকৃতি” টা চেনার উপায় কি?
উপায় হল অনুসন্ধান। আমরা প্রায় ৬ মিলিয়ন বছর আগে শিম্পাঞ্জী থেকে আলাদা হয়েছিলাম। সেখান থেকে শুরু করে আজ থেকে এক লক্ষ বছর আগ পর্যন্ত আমরা বনে জঙ্গলেই কাটিয়েছি। প্রায় এক লক্ষ বছর আগে আমরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে আসি। সে সময় থেকে শুরু করে আজকের সময় বিবর্তনের ক্যালেন্ডারে হিসেব করলে খুবই ক্ষুদ্র একটা সময়। আর দশ হাজার বছর আগে কৃষি কাজের উদ্ভব কিংবা তারো পরে শিল্প বিপ্লব ইত্যাদি তো আরো তুচ্ছ। অর্থাৎ, মোদ্দা কথা হল – ইভল্যুশনারী স্কেলে আমরা “মানব সভ্যতার” শতকরা নিরানব্বই ভাগ সময়টাই বনে জঙ্গলে আর ফলমূল শিকার করে কাটিয়েছি। কাজেই আমাদের মস্তিস্কের বেসিক মডিউলগুলো হয়তো তৈরি হয়ে গিয়েছিলো তখনই, সে সময়কার স্পেসিফিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য – আজকের দিনে কম্পিউটার চালানো, ব্লগ করা কিংবা আইপড শোনার জন্য নয়। আমাদের চারপাশের উদাহরণ থেকেই আমরা সেটা বুঝতে পারি। আমরা (কিংবা আমাদের পরিচিত অনেকেই) মাকড়শা, তেলাপোকা কিংবা টিকটিকি দেখলে আঁতকে উঠি। কিন্তু বাস ট্রাক দেখে সেরকম ভয় পাই না। অথচ কে না জানে, প্রতি বছর তেলাপোকার আক্রমণে যত মানুষ না মারা যায়, তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষ মরে ট্রাকের তলায় পড়ে। অথচ ট্রাককে ভয় না পেয়ে আমরা ভয় পাই নিরীহ তেলাপোকাকে। এটাও কিন্তু বিবর্তনের কারণেই ঘটে। বনে –জঙ্গলে দীর্ঘদিন কাটানোর কারণে বিষধর কীটপতংগকে ভয় পাবার স্মৃতি আমরা নিজেদের অজান্তেই আমাদের জিনে বহন করি। সে হিসেবে, বাস ট্রাকের ব্যাপারগুলো আমাদের জন্য অপেক্ষাকৃত নতুন, তাই এগুলোকে ভয় পাবার কোন স্মৃতি আমরা এখনো আমাদের জিনে (এখনো) তৈরি করতে পারিনি। সেজন্যই বোধ হয় লিডা কসমিডস এবং জন টুবি আধুনিক মানুষকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেন – ‘Our modern skull house a stone age of mind’।
@অভিজিৎ,
আমার প্রশ্নটা মনে হয় পরিষ্কার হয়নি, আমি ঠিক এর উলটো প্রশ্নটাই করেছিলাম। আমার প্রশ্নটা ছিল আমরা শিকারী হওয়ায় আগের সময়টাকে ধরা হচ্ছে না কেন? ৬ মিলিয়ন বছর আগে যদি আমরা আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে ভাগ হয়ে থাকি, তারপর, তখন থেকে ২-২১/২ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত আমরা যদি শিকার করে না থাকি ( সংগ্রাহক ছিলাম যদিও) তা হলে তো সেটাও একটা বড় সময়, হিসেবে সে সময়টা হিসেবে ধরা হচ্ছে না কেন? (এটার কারণ একটা হয়তো হতে পারে যে আমাদের মস্তিষ্ক বড় হতে শুরু করেছে এর পরে।)
@বন্যাপা,
আপনার প্যাচের অপেক্ষায় ছিলাম। প্রথমেই বলে রাখি এটা অনেক পুরান লেখা, পুরোটাই লেখা ছিল, এখন পার্ট পার্ট করে ছাড়ছি কেবল। সুতরাং এটা লিখতে গিয়ে আমি অন্য জায়গায় ফাঁকিবাজি করছি ভাবার কোনই কারণ নেই।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে সংশয় আছে বেশ কয়েকটা। জানুয়ারি ২০০৯ সংখ্যার সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকানে “Four fallacies of pop evolutionary psychology” নামের লেখাটায় ৩ নম্বর ফ্যালাসি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এটা: “আমাদের আধুনিক খুলির ভেতর একটি প্রস্তর যুগীয় মন বাস করে।” আপনিও এটার কথাই বলতেছেন। এই অনুসিদ্ধান্ত হচ্ছে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ৫ম সূত্র। আগামী পর্বেই এটার কথা থাকছে। টুবি কসমাইডস এর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যে সন্দেহ আছে এটা নিশ্চিত, আমি কতটুকু ব্যাখ্যা দিতে পারব কে জানে!! অভিজিৎদা কিছুটা বলে দিয়েছে, আমি চেষ্টা করি…
মানুষ শিকারী-সংগ্রাহক ছিল প্লাইস্টোসিন যুগের পুরো সময়টাতে: ২৫ লক্ষ বছর পূর্ব থেকে ১২,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত। “হোমো” গণ এর উদ্ভবের সময়কালটাও ২৫ লক্ষ বছর পূর্বের দিকে। তার মানে মানুষের ২৫ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ইতিহাসে ৯৯% সময়ই তারা ছিল শিকারী-সংগ্রাহক। বন্যাপা যে দুইটা অংশ কোট করছেন উপরে দুটাই কিন্তু ঠিক বলে মনে হচ্ছে আমার কাছে:
প্রথমে বলা হচ্ছে ১০ মিলিয়ন বছরে ধীরে ধীরে মস্কিষ্কের বিবর্তন ঘটেছে, এটা তো ভুল না। দ্বিতীয়টাতে শুধু আমাদের প্রজাতির কথা বলা হচ্ছে, ২৫ লক্ষ বছর আগেই যদি আমাদের প্রজাতির জন্ম হয় তাহলে ১০,০০০ বছরের কৃষিকাজের চেয়ে হাজার গুণ বেশি সময়ই তো আমরা শিকারী-সংগ্রাহক ছিলাম।
হ্যা তবে আপনার এই সন্দেহের সাথে আমি একমত: শিকারী-সংগ্রাহক তথা প্লাইস্টোসিন এর আগের সময়টাকে কেন অবজ্ঞা করা হবে? কৃষিকাজের সময়টাকে যত সহজে সময়ের স্বল্পতা দেখিয়ে অবজ্ঞা করা যাচ্ছে প্লাইস্টোসিনের আগের সময়টাকে তত সহজে অবজ্ঞা করা ঠিক হচ্ছে না। এখন টুবি-কসমাইডস নিশ্চয়ই এটা বলেননি যে, আগের সময়টাকে একেবারে ফেলে দিতে হবে। তারা মনে হয় বলতে চাচ্ছেন, পূর্ণ মস্তিষ্ক নিয়ে ২৫ লক্ষ বছর আগে যাত্রা শুরুর পর কৃষিকাজের আগ পর্যন্ত সময়টা অনেক দীর্ঘ। তাহলে এই সময়ে বিবর্তনের একটা ভাইটাল রোল থাকার কথা এবং মানুষের ইউনিক বৈশিষ্ট্যগুলো এ সময়ই বিবর্তিত হওয়ার কথা। এই ইউনিক এর ব্যাপারটা অভিজিৎদা বলেছেন।
রবার্ট সেপলস্কির একটা লেকচার শুনলাম মানুষের অনন্যতা বিষয়ে। এখানে তিনি বলেছেন সব মানুষসহ অন্যান্য প্রাইমেটদের মাঝেও aggression, theory of mind, tit for tat golden rule, empathy, pleasure in anticipation এবং culture এর বৈশিষ্ট্য আছে। এগুলোতে আমরা অনন্য না। কিন্তু আমাদের অনন্যতা হচ্ছে আমরা এই সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে উন্নত করতে করতে একেবারে ভিন্ন একটা মাত্রা দিয়েছি, সবকিছু অনেক জটিল করে ফেলেছি। হতে পারে এই জটিল করার কাজটাই শিকারী-সংগ্রাহক সময়ে হয়েছে এবং সে কারণেই মনোবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা এই যুগ বেছে নিচ্ছেন। তাছাড়া এই যুগে মানুষের প্রতিবেশ কেমন ছিল তা অনুমান করাও সম্ভব হচ্ছে। তার মানে এই না যে এর আগের যুগটাকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা হচ্ছে, অবজ্ঞাটা করাটা তো বৈজ্ঞানিকভাবে সিদ্ধ হওয়ার কথা না। অবজ্ঞা যে তারা করছেন না এটা তো ১০ মিলিয়ন বছরে মস্তিষ্কের বিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করাটাই প্রমাণ করে দিচ্ছে।
কত কিছু যে লিখলাম, না জানি এখন কি ঝাড়ি খাইতে হয়!!!
এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমি ‘শিক্ষানবিস’ এর ভক্তে পরিণত হলাম।
‘বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান’ মানুষকে বোঝার জন্য অপরিহার্য বিজ্ঞানের নাম। এ বিষয়ের উপর বাংলা ভাষায় আরো লেখালেখি হওয়া সময়ের দাবি।
শিক্ষানবিসের লেখাটি নিঃসন্দেহে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ। অপার্থিবকে উত্তর দিতে গিয়ে আগেই লিখেছিলাম যে, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান ক্রমশঃ বিজ্ঞানের এক বলিষ্ঠ শাখা হয়ে উঠছে। আর ডারউইনীয় মডেলকে গোনায় ধরে কাজ শুরু করায় বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা হয়ে উঠেছে মনোবিজ্ঞানকে বিশ্লেষণের প্রথম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান অনেকক্ষেত্রেই এটি সামাজিক বিজ্ঞানের শাখাগুলোর চেয়ে আরো বস্তুনিষ্ঠভাবে ভবিষ্যদ্বানী করা করতে পারছে। এথেকে এই নতুন শাখাটির গুরুত্ব বোঝা যায়।
শিক্ষানবিসকে ধন্যবাদ, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান নিয়ে ভাববার জন্য আর লিখবার জন্য। শিক্ষানবিস তার লেখার শুরুতেই আমার সাথে আগ্রহের বিষয় মিলে যাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। বিস্ময় আমারো, কিন্তু সেই সাথে আনন্দেরও। শিক্ষানবিস যে বয়সে এগুলো নিয়ে চিন্তা করছে, কাজ করছে আর লেখালিখি করছে – সে বয়সে আমি বিবর্তন কি তাই বোধ হয় ঠিক মতো বুঝতাম না, আর বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা তো আরো পরের ব্যাপার। শিক্ষানবিসকে দেখে আমি মনে জোর পাই – আমাদের ভবিষ্যৎ আসলে সত্যই অন্ধকার নয়।
যা হোক লেখাটি নিয়ে কিছু মন্তব্য করি। লেখাটা গছানো এবং গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। কিন্তু ব্লগের জন্য খুব বেশি স্ট্রাকচার্ড মনে হলো। আরেকটু মজার মজার উদাহরণ হাজির করে লিখলে মনে হয় ভাল হবে। তবে বইয়ের কথা মাথায় রেখে যদি লেখা শুরুর প্রয়াস হয়, তবে এটি ভাল সূচনা।
লেখাটির একটি বাক্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করি-
আসলে মনকে যন্ত্রের সাথে তুলনা করাটা ঠিক যৌক্তিক মনে হলো না। আসলে বোধ হয় এখানে সঠিক শব্দটি হবে মস্তিস্ক। মস্তিস্ক আসলে কম্পিউটারের মত একটা প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র, আর মন হচ্ছে সেই প্রক্রিয়ার ফল – স্নায়বিক অভিব্যক্তি। আসলে মস্তিস্ককে (মন নয়) যে প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রের সাথে তুলনীয় তা কিন্তু শিক্ষানবিসই স্পষ্ট করেছে তার লেখায় বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের মূলনীতি বর্ণনায়। যেমন, প্রথম নীতি নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেছে –
এখানে মস্তিস্ক শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয়; আমার মতে এটিই সঠিক শব্দ হবে।
আর লেখাটির এই অংশটা সত্যই চমৎকার – খুব স্বাভাবিক ঘটনা ও বিষয়গুলোকেই আমাদের অস্বাভাবিক ভাবতে হবে এবং সেগুলোর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সত্যই তাই। আর সেজন্যই বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞানের এক বলিষ্ঠ শাখা হয়ে উঠছে।
@অভিজিৎদা,
লেখাটা আসলেই অনেক বেশি টেক্সট বুক এর মতো হয়ে গেছে। না, এটা আসলে মানব বিবর্তন বইয়ের জন্য লেখা না। আবার ব্লগের জন্যও না। অনন্ত দা প্রবন্ধ সংকলনের জন্য লিখতে বলছিলেন। তাই গত বছরের জুলাই মাসে লিখেছিলাম এটা, উদ্দেশ্য মনে হয় আসলেই ছিল বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের বেসিকটা লিপিবদ্ধ করা, অনেকটা অনুবাদের মত হয়েছে। এখন পার্ট পার্ট করে মুক্তমনায় ছাড়ছি, আপাতত বোধহয় তাই কোন চেঞ্জ করতে পারব না। যা ছিল সেটাই ছেড়ে দিচ্ছে, কারণ এটার পেছনে সময় লাগালে বন্যাপা আবার চেতবে, তার উপ্রে উনার বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের প্রতি এলার্জি আছে।
হ্যা ঐ লাইনে মন না লিখে মস্তিষ্ক লিখলে ভাল হতো। চেঞ্জ করতেছি।