একটি বৈজ্ঞানিক কল্পবিলাস
সে এক বহুদিন পরের কথা, বছর বিশ-ত্রিশ হতে পারে। আবেদের বয়স সত্তর পেরিয়েছে, বলল, সেঝভাই, যৌবনে কত মেয়ের মনে যে দু:খ দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই, আমার কোন দোজখে জায়গা হবে তা ভাবলে খুব ভয় লাগে। বললাম, তোমার চরিত্র তো ভালই জানতাম, আজ এসব কি শোনাচ্ছ? বলল, আগে ফোন করলে প্রায়ই সুন্দরী মেয়েদের গলায় শুনতে পেতাম, ‘দু:খিত আপনি ভুল নাম্বারে ফোন করেছেন’। তা এখন কি আর কাউকে দুঃখ দিচ্ছ না, জিজ্ঞেস করায় বলল, হ্যাঁ তাই, ইদানিং ফোনের সার্ভিস খুব ভাল হয়েছে, তার ওপর দেশের প্রায় বাড়িতেই একাধিক ফোন আছে। যাক, দেশের উন্নতির সাথে সাথে, অপরের দোষে আমার নিজের ভাই এর গুনাহ বেড়ে বেড়ে দোজখে যেতে হবে না ভেবে আশ্বস্ত হলাম। গত বিশ-ত্রিশ বছরে বাংলাদেশ হাঁটি হাঁটি পা পা করে বেশ অনেকটা পথ পারি দিয়েছে। রাজনীতিবিদের ওপর জনগণের আস্থা বেড়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি পালা করে দেশ শাসন করে আসছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, রাস্তায় যানজট হয় না লোকজন নিয়ম মেনে চলে বলে। বিপদে পুলিস এগিয়ে আসে কোন ঘুষ টুষ দিতে হয় না। ক্রিমি ও ডায়ারিয়া জনিত পেটের পীড়া কমে যাওয়ায় খাদ্য ও পুষ্টির অপচয় কমে গিয়ে খাদ্য সমস্যা কমেছে। পয়সার অভাবে কেউ উচ্চ-পর্যায়ের লেখাপড়া থেকে বঞ্ছিত থাকে না। প্রতি পরিবারের সরকারীভাবে একজনকে চাকুরির নিশ্চয়তার পর এবং দেশে ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসারের ফলে কলেজ পাশ করা যুবক-যুবতীরা গড়ে দেড় বছরের বেশি বেকার থাকে না। মোট কথা দেশের লোকজন এখন আগের চেয়ে অনেক শান্তিতে বসবাস করে।
তাই বলে ভাববেন না দেশ থেকে অশান্তি উঠে গেছে। পৃথিবীতে অশান্তি আছে বলেই মানুষ শান্তির মূল্য বুঝতে পারে। যুবাবয়সে এখনো বন্ধ হয়নি মাদকের চাহিদা, রয়ে গেছে পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অশান্তি, এবং ইভ-টিজিং এর ভয়াবহ অভিশাপ। এগুলো সামাজিক সমস্যা হলেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও উন্নতিকে ব্যাহত করছে। তরুণ-যুবা বয়সে বহুদিন প্রেম করার পরও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাদের সমস্যার শেষ হয় না। স্বামী বনে যাবার পর পুরুষরা মনে করেন, ভালবাসার স্ত্রীরা শুধুই স্বামীর ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করবেন। অন্যদিকে দূর থেকে দেখা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আলোকে অনেক মহিলা মনে করেন স্বামীর স্বাধীন চিন্তা, খাবারে, পোষাকে, চলনে-বলনে, বন্ধু নির্বাচনে সবকিছুতেই নিজের ভাললাগাকে বিসর্জন দিয়ে স্ত্রীর ইচ্ছামাফিক চলাতেই ভালবাসা প্রকাশ পায়। এই দুই দলের যাঁতায় পড়ে দাম্পত্য জীবনের আসল ভালবাসা বেশীর ভাগ পরিবার থেকেই নির্বাসন নিয়েছে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, টিকে থাকলেও এধরনের সংসারে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের মাঝে কোমলতা, সমমর্মিতা, এবং অপরের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব থেকেই যাচ্ছে। আসল কথা হচ্ছে ভালবাসা যে একটি পারস্পরিক ব্যাপার, সাংসারিক জীবনে সেটি প্রয়োগ হচ্ছে না। ২০৩৩ সনে সামাজিক অর্থনীতিবিদ ডঃ প্রেমময় বেপারী গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে বাংলাদেশের পারিবার গুলোতে ভালবাসার অভাবে দেশ ৩০ শতাংশ জাতীয় উৎপাদন থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে আর ১৫ শতাংশ জাতীয় আয় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ছেলে বা মেয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হবে, প্রাণী জগতে সেটাই স্বাভাবিক। মানুষের বেলায় একে বাধা দেয়া বা লাগামহীন ভাবে প্রশ্রয় দেয়া দুটোই বিপজ্জনক। বাংলাদেশের উন্নতির সাথে সাথে যুবক-যুবতীদের মেলামেশার সুযোগ আগের চেয়ে বেশি হয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনো এই মেলামেশাকে সামাজিকভাবে ভাল ভাবে দেখা হয় না এবং প্রকারান্তরে নিরুৎসাহিত করা হয়। পুরুষের চেয়ে নারী শিক্ষার হার বেশি হলেও আজো নারীরা তুলনামুলকভাবে দূর্বলই রয়ে গেছে। মেয়েদের স্কুল-কলেজের আশেপাশে সমবয়সী ছেলেদের ভিড় তাই বেড়েই চলেছে। তবে সমস্যা এখানে নয়। নারী-উত্ত্যক্ত বা ইভ-টিজিং এর যন্ত্রণায় অভিভাবকরা মেয়েদের নিয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকেন। ব্যাপারটি এখন আর শুধু উপদ্রব বা ন্যুইসেন্সের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। এর শিকার অনেক মেয়েরা প্রতিবাদ করতে না পেরে মানসিক যে ক্ষত নিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকে, সমাজের উন্নতির জন্য তা অনিষ্টকর। ১৯৭৬ সনে করা শাস্তিমুলক আইনটির কঠোর প্রয়োগ করেও সমস্যাটি আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না। ভুক্ত মেয়েদের আত্মহত্যার সংখ্যা ভীতিজনক ভাবে বেড়ে চলেছে। তাদের রক্ষা করতে বা পাহারা দিতে অধিক পরিমাণে অভিভাবক ও পুলিস নিয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে দেশের উৎপাদনশীলতা ব্যাহত ও জাতীয় আয় নষ্ট হচ্ছে।
এই অবস্থায় সরকার একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করল। কমিটি কাজে হাত দিয়েই বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একত্র করলেন। সমরবিদ বললেন ক্ষমতা দিলে পুলিসের সহায়তায় বেয়াড়া ছেলেদের দুনিনেই ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দেবেন। মনস্তত্ববিদ, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ মনে করেন সাময়িক এধরনের সমাধান বেশিদিন স্থায়ী হয় না। মৌলানা সাহেব জানালেন, সারা মুলুকের লোকজন একসাথে ও একাগ্রচিত্তে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করলে আমাদের যুবসমাজ সৎ পথে আসতে বাধ্য। ইতিহাসবিদ স্মরণ করিয়ে দিলেন যে ১৯৮৮ সালে দেশে বন্যা থামাতে লেজেহোমো এরশাদ সারাদেশের মুসল্লি ও দেশবাসীকে সাথে নিয়ে রাত জেগে মুনাজাত করার পরদিন ভোরে ঢাকা শহরের পানি দু’হাত বেড়ে গিয়েছিল। সবাই একমত হলেন যে বিজ্ঞান ও কারিগরি পন্থায়ই সমস্যার সমাধান করতে হবে, তবে দোয়া পড়ে এর সাফল্যকে কেউ ত্বরান্বিত করলে কারো আপত্তি নেই। মনস্তত্ববিদ জানালেন যে মানুষ বাদে অন্যান্য জীব যখন বয়ঃপ্রাপ্তির দিকে অগ্রসর হয়, স্ত্রী দেহ থেকে ফেরোমোন নামে এক পদার্থের সৃষ্টি হয়ে গন্ধ ছড়ায়, এর আকর্ষণেই পুরুষ স্ত্রী জাতির দিকে আকৃষ্ট হয়। কাজেই এই ফেরোমোন জাতীয় কিছুকে বশে আনতে পারলে হয়তো ইভ-টিজিং এর সমাধান আসতে পারে। সমাজবিদ বলে উঠলেন, তাইতো, এই ফেরোমোনের একটু হেরফের করলে আমাদের পরিবারগুলোতে হয়তো ভালবাসাও বাড়ানো সম্ভব হবে। যদিও ফেরোমোনের ব্যাপারটি প্রাণসায়নবিদের নখদর্পণে, ইভ টিজিং বা ভালবাসার সাথে এর সম্পর্ক তিনি কোন দিনই চিন্তা করেন নাই। আইডিয়াটি তাঁর কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হল। তিনি বললেন, ফেরোমোন অনেক ধরনের কাজ করে বলে জানি, কিন্তু ভালবাসায় এর কতটুক অবদান সেটা একটু গবেষণার ব্যাপার। তবে যেহেতু বিভিন্ন গবেষণায় আমাদের বেশকিছু বিজ্ঞানী ইতিমধ্যেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, মনে হয় তাঁদের পরামর্শে আমরা এর একটা সুরাহা করতে পারবো। এই মর্মে কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে প্রাণরসায়ণবিদকে একটি “ভালবাসার গতি সঞ্চারন ও ইভ-টিজিং বন্ধকরণ গবেষণা কমিটি” করতে দায়িত্ব দিয়ে বর্তমান কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করলেন।
কমিটি প্রধান ডঃ সজীব চক্রবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের কর্ণধার। পশ্চিমের বিখ্যাত হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও পূর্বের সবচেয়ে নামী কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ শামিমা ইসলাম কেকা পিএইচডি শেষে ফিরে আসলে তাদেরকে সহ তিনি যে একটি শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ বৈজ্ঞানিক গবেষণা দল গঠন করেছিলেন তা এখনো পূর্ণোদ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানেন, গবেষণার কাজটি শক্ত-সক্ষম বিজ্ঞানীদের দিয়েই করাতে হবে, কিন্তু তার প্ল্যানিং পর্বটা তিনি পোড় খাওয়া ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে করাই ঠিক করলেন। সেই মর্মে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বেশ ক’জন বিজ্ঞানীকে ঢাকায় এক মগজ-ঝাড়া বৈঠকে (ব্রেইন স্টর্ম সেশনে) একত্রিত করলেন। এঁদের অনেকেই সক্রিয় পেশা থেকে অবসর নিলেও বিচক্ষণতার জন্য সবাই এখনো সমাদৃত। প্রথমেই তাঁরা সদ্য-প্রয়াত আশরাফ আহমেদ, যিনি তাঁদের শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব গুলোকে মূল্যায়ন করতে বিফল হয়েছিলেন, তার নিন্দা করেন। নিউ জার্সি থেকে আসা রসায়নবিদ ড: দলিলুর রহমান জানালেন, অনেক বছর আগে ইউরোপের বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছিলেন যে মশাকে আকর্ষণ করার মত পদার্থ কারো শরীরে তৈরি হয়ে গন্ধ ছড়ায় বলেই তাদের মশা কামড়ায়। আবার যাদের শরীরে মশাকে বিকর্ষণ করার পদার্থ তৈরি হয়ে গন্ধ ছড়ায়, মশা তাদেরকে কামড়ায় না। এমনও হতে পারে, কোন কোন মানুষ তাদের দেহে তৈরি বিশেষ পদার্থের গন্ধ বিপরীত লিঙ্গের বিশেষ মানুষকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে। এর ফলে তাদের মধ্যে ভালবাসার পরিমিতি বা ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আকর্ষণ করার এই পদার্থের আধিক্যের ফলে ইভ টিজিং এর মত ঘটনাও ঘটতে পারে। আর বিকর্ষণী পদার্থের আধিক্যের ফলেই হযতো একতরফা প্রেমের চেষ্টা করে অনেক ক্ষেত্রে চড়-থাপ্পর এর মত ঘটনা ও আত্মহত্যার আশ্রয় নিতে দেখা যায়। উপস্থিত বিশেষজ্ঞগন মশার কামড়ের সাথে মানুষের ভালবাসার যোগসূত্রে শুধু মজাই পেলেন না, এই ভালবাসা-ঘৃণা গন্ধের সমূহ সম্ভাবনার কথা ভেবে খুবই উদ্দীপিত হলেন। কমিটি প্রধান নিশ্চিত হতে চাইলেন, কিন্তু লক্ষ লক্ষ স্বামী-স্ত্রী বা হাযার হাযার ইভ-টিজারদের সমস্যার কিভাবে সমাধান হবে?
প্রথিত যশা বিজ্ঞানী ড: মোতাসিম বিল্লাহ, যিনি এপারের বাংগালিদের মাঝে সর্বপ্রথম ‘জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল কেমিষ্ট্রি’ ও ‘বায়োকেমিক্যাল জার্ণাল’ নামে অতি সম্ভ্রান্ত দুটো বিজ্ঞান সাময়িকীর সম্পাদনা পরিষদের বহুবছর সদস্য থাকার বিরল সম্মান এনেছিলেন, মৃদু হেসে বললেন, আমাদের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ জায়গায় গন্ধ সনাক্তকারী ‘অলফ্যাক্টরি নার্ভ’ নামে কতগুলি বিশেষ কোষ আছে। গন্ধ বিশেষজ্ঞ বেলায়েত হোসেন তাঁকে সমর্থন করে বললেন, আমাদের জিভ যদিও টক, মিষ্টি, নোনা, তিতা ও উমামি এই পাঁচটি মূল স্বাদ চিহ্নিত করার ক্ষমতা রাখে, মস্তিষ্কের এই কোষ গুলি দশ হাজার বিভিন্ন জিনিসের গন্ধকে আলাদা ভাবে সনাক্ত করতে পারে। কোন কোন খাবারে গন্ধ উৎদনকারী এই জিনিসগুলোর পরিমাণ দশ কোটি ভাগের এক ভাগ হলেও, এদের গন্ধের জন্যেই আমরা মূল পাঁচ স্বাদের বাইরেও অসংখ্য স্বাদের পার্থক্য বুঝতে পারি। ড: বিল্লাহ জানালেন যে, গন্ধ উৎপাদনকারী জিনিস কয়েক হাজার হলেও, মস্তিষ্কের কোষগুলোতে এদের চিহ্নিত করার গ্রাহক (রিসিপ্টার) এর সংখ্যা মাত্র চারশত, যার একেকটি একাধিক গন্ধকে চিহ্নিত করতে পারে। কাজেই আমদের সমস্যা কোটি কোটি না হয়ে বড় জোর কয়েক’শ হতে পারে, আর ভাগ্য ভাল থাকলে আট দশটিতে গিয়ে ঠেকতে পারে। মানুষের শরীরের কোন কোন গন্ধ পরস্পরকে আকর্ষণ করে, আর কোনগুলো বিকর্ষণ করে তা জানা গেলে, তাদের সনাক্ত কারী কোষগুলোকে বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রযুক্তিতেই সাময়িক বা চিরতরে অকার্যকর বা অধিক শক্তিশালী করা যেতে পারে। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা সংস্থার পুষ্টি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ফাহিমা রুখসানা বললেন, জিনিসগুলি কি জানা গেলে আমাদের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন এনেও শরীরে এদের সৃষ্টির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতে পারে। এছাড়াও অবস্থা বুঝে ওষুধের পুড়িয়া হিসেবে বা খাবারের সাথে মিশিয়েও এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। কমিটি প্রধান এই পর্যায়ে ড: আবিদ চৌধুরীর অভিমত জানতে চাইলেন। মূলতঃ রসায়নের ছাত্র হয়েও অফুরন্ত সম্ভাবনার কথা বুঝতে পেরে ডঃ চৌধুরী তার মেধা অণুজীব বিজ্ঞানে প্রয়োগ করেন। ধানবীজ ও অন্যান্য গাছ নিয়ে তাঁর বেশ ক’টি যুগান্তরকারী আবিষ্কারের কয়েকটি, প্রাণীর ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। তিনি বললেন, ধরুন আলোচ্য আকর্ষণী-বিকর্ষণী পদার্থগুলো ছোট ছোট পেপটাইড বলে জানা গেল। টি-প্লাসমিড (সাধারাণতঃ গাছে ব্যবহৃত) পরিবর্তন করে বা কোন ভাইরাসের ক্ষতিকারক ধর্ম নাশ করে তার বংশানু পদার্থ (জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল) এর সাথে এই ঘ্রানের জেনেটিক তথ্য জোড়া লাগানো এখন পানিভাতের মতই সহজ। প্রয়োজনে পরিবর্তিত প্লাসমিড (খুব ছোট বৃত্তাকার বংশানু পদার্থ) বা ভাইরাসটি টীকার মতন শরীরে ঢুকিয়ে দিলে তা থেকে মানব দেহে সেই পদার্থ গুলো অধিক পরিমাণে তৈরি হবে। অপর দিকে এই ভাইরাস প্রযুক্তি দিয়েই গ্রাহকের (রেসিপ্টার) কর্মক্ষমতা কমানো-বাড়ানো সম্ভব।
অবশেষে কমিটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে, মশার কামড় থেকে বাঁচার যে পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল, একই পদ্ধতি নারী-পুরুষের ভালবাসার গন্ধ আবিষ্কারেও ব্যবহার করা হবে। এই পরীক্ষার একটি বাড়তি ফল হিসেবে ইভ-টিজিং এর প্রতিষেধক গন্ধও আলাদা খরচ ছাড়াই আবিষ্কার করা যাবে। বাংলাদেশের কর্মঠ বিজ্ঞানীরাই এই বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবেন। আবিষ্কার করা পদার্থ গুলির রাসায়নিক গঠন ও গন্ধমান নির্ণয় করার পর ‘অলফ্যাক্টরি নার্ভ’ এর গ্রাহকের (রেসিপ্টার) ধর্ম পরিবর্তন করা হবে, না পদার্থগুলো কারখানায় তৈরি করে খাবারের সাথে পুড়িয়া হিসেবে দেয়া হবে, না ভাইরাস প্রযুক্তিতে মানব দেহে তৈরি করা হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রাণরসায়নবিদ, কানাডিয়ান মুসলিম কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও শরীয়ৎ বিশেষজ্ঞ মৌলানা হাসান মাহমুদ এই বলে মত দিলেন যে, যেহেতু এই পদার্থগুলো আল্লাহ পাক আমাদের দেহেই তৈরি করেন, নিজেদের কল্যাণে এদের নিয়ন্ত্রণ করা কোন মতেই ধর্ম বিরোধী নয়। তা ছাড়া ‘মকসুদুল মু’মেনিন’ বই পড়ে, তাবিজ দিয়ে স্ত্রী-পুরুষ বা পরকীয়া ভালবাসা আদায়ের অনৈসলামিক ও অনিশ্চিত চেষ্টার চেয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধান করাই আল্লাহর কাছে অধিক শ্রেয়:।
আপনার ধারণা ঠিকই, Molecular Biology এর বাংলা অণুজীববিজ্ঞানই হয়। কিন্তু ঢাঃবিঃ এর Microbiology Department এর বাংলা অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ রাখার জন্য Biochemistry and Molecular Biology এর বাংলা প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ করা হয়েছে, ২০০২/২০০৩ সাল থেকে এই নামটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভুল ধরার জন্য নয়, কৌতুহল হয়েছিল যে আপনি সাম্প্রতিক অনেক কিছু সঠিক জানলেও বিভাগের সঠিক নামটি কেন দেন্নি।
আর লেখকের কল্পনাতে যদি কোন বিশেষ ক্ষেত্রে বিখ্যাত ঢাঃবিঃ স্বতঃস্ফূর্তভাবে না আসে, তাহলে চেষ্টা করে আনা কেন, কল্পনা তো কল্পনাই।
@শহীদ,
নামটি ঠিক করে দিয়েছি। আর ভুল দেখিয়ে দেয়ায় দোষনীয় কিছু নেই, এতে আমার উপকারই হয়। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
আপনার আগের লেখাটি পড়ে অনেক ভালো লেগেছিলো, তাই এ লেখাটিও আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায় এসে একটু ধাক্কা খেলাম, প্রাণরসায়ন বিভাগ এর নাম যখন বললেনই তখন সঠিক নামটি বলতেন- প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন এর নাম যখন কল্পনাতেও সঠিক আছে 🙂
তবে দুঃখ পেলাম, ২০৩৩ সালের কল্পনাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিখ্যাত হতে পারেনি দেখে। এসব কিছু বাদেও জীববিজ্ঞান নিয়ে কল্পবিলাস মজা লেগেছে।
ভালো থাকুন।
@শহীদ,
আপনি কেমন লোক মশাই? নিজেকে মেরে ফেললাম, একবার ইন্নালিল্লাহ…ও পড়লেন না আবার গল্পটি পড়ে আপনি মজা পেলেন! তবুও আপনাদের খুশিতেই আমার স্বার্থকতা (ভূল ধরিয়ে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ), তাই বিভাগের নামে ‘অণুপ্রাণ’ বা সমার্থক কিছু যোগ করে দেব। তবে মলিকিউলার বায়োলজী এর বাংলা তো আমার ধারণায় অনুজীববিজ্ঞান। ঢাঃবিঃ এর বিভাগটি কোন শব্দটি ব্যাবহার করে, দয়া করে তা জানালে সাথে সাথে যোগ করে দেব।
কোন বিশেষ ক্ষেত্রে বিখ্যাতি আমি উল্লেখ করিনি ঠিকই (ঢঃবিঃ কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভাল লাগলেও বয়সের ভারে হয়তো আমার দ্রিষ্টির প্রখরতা নেই), তবে “….যে একটি শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ বৈজ্ঞানিক গবেষণা দল গঠন করেছিলেন তা এখনো পূর্ণোদ্যমে কাজ করে যাচ্ছে” এবং “তবে যেহেতু বিভিন্ন গবেষণায় আমাদের বেশকিছু বিজ্ঞানী ইতিমধ্যেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, মনে হয় তাঁদের পরামর্শে আমরা এর একটা সুরাহা করতে পারবো।” এই বক্তব্যে ঢঃবিঃ’র অসামান্য উন্নতির কথাই বুঝাতে চেয়েছি। তাছাড়া “তিনি জানেন, গবেষণার কাজটি শক্ত-সক্ষম বিজ্ঞানীদের দিয়েই করাতে হবে,…‘ বক্তব্যে নিজেদের সাফল্য-অভিজ্ঞতায় অরজিত প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসও প্রকাশ করতে চেয়েছি। এখন দেখা যাচ্ছে আমার এসব চেষ্টায় ত্রুটি ছিল, ভবিষয়তে উন্নতির চেষ্টা করবো।
আপনি কষ্ট করে পড়েছেন আর মন্তব্য করেছেন, তার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।