সংখ্যালঘুর মানচিত্র
গীতা দাস
(১)
‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে
কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাইরে
পাহাড় শিখায় তাহার সমান
হই যেন ভাই মৌন মহান
খোলা মাঠের উপদেশে দিল খোলা হই তাই রে।’
ছোটবেলায় পড়া ও শেখা সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতা কানের ভেতর দিয়ে— জিহ্বার নীচ দিয়ে প্রাণের ভেতরে কতটুকু প্রবেশ করেছিল জানি না, তবে নিজেকে উদার– মহান—- দিল খোলা— সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ভাবতে এক ধরনের সুখ অনুভব করি। সমসাময়িক অনেক ঘটনা— পারিপার্শ্বিক বহু অসামঞ্জস্যকে নিজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিশ্লেষণ করে— বিবেচনা করে স্বস্তি পাই।
তেমনি পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস এর ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনা যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিশ্লেষণ ও মানবিকবোধ দিয়েই অনুভব করছিলাম। সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা, লুটপাট, গণকবরও সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের অসহায়ত্বে মর্মাহত হয়েছি– শোকাভিভূত হয়েছি। বি ডি আর সদর দপ্তরে কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের সংখ্যা নিয়ে অনুমান নির্ভর তথ্য ও সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের অদক্ষতা নিয়ে হতাশ হয়েছি। অস্বস্তিতে দু’এক রাত ঘুমুতে পর্যন্ত পারিনি। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে শিহরে উঠেছি। বিচলিত হয়েছি।
কেউ মরে পাপে আর কেউ মরে তাপে। এখন বি ডি আর পরিবার পরিজনদের হাহাকারও আমাকে সংবেদনশীল করছে বৈ কি। এক যুবক তার নিখোঁজ বাবাকে খুঁজছে যে বি ডি আর এর কর্মকর্তা ছিল, অথচ যুবকটি নিজের পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশ করছে না লজ্জায় ও ভয়ে। ছেলেটি বাবার সাথে পিলখানায়ই ম্যাসে থাকতো। গোলাগুলি শুরুর পর বাবার সাথে মোবাইলে একবার কথা হয়েছিল। বাবা তাকে পিলখানা থেকে বার হয়ে যেতে বলেছিল। নিহত সেনা পরিবারের হাহাকার আর তাপে পোড়া বি ডি আর পরিবারের হাহাকার তো একই তারে বাঁধা।
এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং বিভিন্ন রেডিও ও টিভি চ্যানেলের সংবাদ পই পই করে পড়েছি, শুনেছি ও দেখেছি। এখন পিলখানার অরাজকতা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য অসহ্য লাগলেও একজন সাধারণ নাগরিক বলে সহ্য না করে পারছি না। এই হলো পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস এর ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় সংক্ষেপে আমার উপলব্ধি।
এ নিয়ে বন্ধু বান্ধবের সাথে আলাপ আলোচনাও চলছে ফোনে বা চা-চক্রে। আমার এক বন্ধু এ্যাডভোকেট কামরুন্নাহারের পিলখানায় ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনা নিয়ে যে মন্তব্য এবং আরেক বন্ধু ফরিদার অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে উচ্ছ্বাস মাকে যে প্রশ্ন করেছে তা আমি বললে সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশ বলে গণ্য হতো। আমাকে সংকীর্ণ মনোভাবের বলে ভাবা হতো, তবে তাদের ভাবনা কিন্তু আমার চিন্তার মোড় একটু হলেও ঘুরিয়ে দিয়েছে বৈ কি!
যদিও আমি নিজেকে সংখ্যালঘু হিসেবে ভাবতে চাই না। মূলস্রোতের একজন ভাবতে গর্ব অনুভব করি। সংবিধানে বাঙালী ও বাংলা ভাষার উল্লেখে সংখ্যাগুরুর দলে পরি। আবার জেনারেল জিয়ার আমলে সংবিধানের প্রস্তাবনায় কিছু বাক্যের সংযোজন ও এরশাদের আমলে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর পর হয়ে গেছি সংখ্যালঘু।
এ্যাডভোকেট কামরুনের মন্তব্য— নিখোঁজ ও নিহত সেনা কর্মকর্তাদের ও বি ডি আর এর নামের তালিকা প্রমাণ করে সেনা বাহিনীতে ও বি ডি আর এ নিয়োগ পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। কোন হিন্দু সেনা কর্মকর্তা নেই।
ফরিদার অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে উচ্ছ্বাস মাকে বলেছে— শুধু নামাজে জানাজা কেন? অন্য কোন ধর্মের কেউ মারা যায়নি বুঝি?
অন্য ধর্মের কেঊ সেনাবাহিনীতে বা বাংলাদেশ রাইফেলসে নেই কেন?
হ্যাঁ, জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসেব ধরলেও দু-একজন সংখ্যালঘু (হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান) সেনা কর্মকর্তা থাকার কথা। সাথে নিশ্চয়ই বাংলাদেশ রাইফেলসেও। এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? তাছাড়া, এর উত্তর আমাদের কারো কারো হয়তো জানা আছে। অথবা নেই।
কোন সংখ্যালঘু (হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান) সেনা কর্মকর্তা মরেও যদি প্রমাণ করতে পারতো যে সেনাবাহিনীতে নিরপেক্ষ নিয়োগ হয়!
গীতা দাস
৬ চৈত্র ১৪১৫/ ২০ মার্চ, ২০০৯
ধন্যবাদ আরিফ খানকে। ভাষাগত প্রমাদ বলতে ‘ফরিদার অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে উচ্ছ্বাস মাকে বলেছে— শুধু নামাজে জানাজা কেন? অন্য কোন ধর্মের কেউ মারা যায়নি বুঝি? অন্য ধর্মের কেঊ সেনাবাহিনীতে বা বাংলাদেশ রাইফেলসে নেই কেন?’
পরের লাইনটিও উচ্ছ্বাসের। যাহোক। বিতর্কের অবসান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
Palash is in a denial mode.
আমার লেখার পাঠক পলাশকে ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি আরো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে বিতর্কের অবতারণা হতো না। তিনি লিখেছেন—
‘আমি শুধু গীতা দাসের ভুল তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। গীতা দাসের বক্ত্যবের সার কথা হচ্ছে সেনাবাহিনিতে
অন্য ধর্মের কেঊ নেই। যেটা আমি ভুল প্রমান করেছি।‘
পলাশ, আপনি যদি সত্যিকারভাবেই আমার তথ্যকে ভুল প্রমাণ করতে পারতেন তবে অনেকে খুশী হতাম । সেনাবাহিনী এবং বি ডি আর এ সংখ্যালঘুর চাকরির সংখ্যা জেনে আশ্বস্ত হতাম । শুধু সেনাবাহিনী এবং বি ডি আর এ নয় —- অন্যান্য বিভাগেও নিয়োগে সংখ্যালঘুর প্রতি বৈষম্য রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আজ নয়। আর আপনার লেখায় সি আর দত্ত আর সুধীর বাবুর নাম উল্ল্যেখেই আমার লেখার ভুল প্রমাণ হয়ে যায়নি এবং আমার সি আর দত্তের নাম না জানার কোন কারণ নেই। সেনাবাহিনীতে একজনও সংখ্যালঘু নেই এমন কথা বলা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি সেনাবাহিনী এবং বি ডি আর লোক নিয়োগে পক্ষপাতিত্বের প্রতি দৃষ্টিপাত করাতে চেয়েছিলাম।
অনিরুদ্ধ রায়এ বিষয়ে আরো একটি নতুন দিক সংযোজন করেছেন। ধন্যবাদ অনিরূদ্ধ রায়কে।
২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারি পিলখানার ঘটনায় কোন সংখ্যালঘুর নাম পায়নি বলেই আমি আমার পরিচিত দু’জনের কথার রেফারেন্স দিয়ে লেখাটি লিখেছি।
আপনার ভাষায় ‘গীতা দাস (নিশ্চিত না হয়েই) মুখস্ত বলে দিলেন .. নেই। ভাবখান এমন উনি সেনাবাহিনীর সব সদস্যের ধর্মীয় পরিচয় জানেন।‘
তবে হ্যাঁ, লেখাটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লেখা। আমার সীমাবদ্ধতা আছে তবে ভাব দেখানোর মত মানসিকতা নেই। আমি ভাবের ঘোরে ঘুরি না।
“অন্য ধর্মের কেঊ সেনাবাহিনীতে বা বাংলাদেশ রাইফেলসে নেই কেন?”
@অসর্তকতার দরুণ এখানে তাঁর ভাষাগত প্রমাদ ঘটেছে, গীতা দাসের এটা মেনে নেয়াই উচিত বলে আমি মনে করি।
আর পলাশ সাহেবের প্রথম মন্তব্যটি সংকীর্ন মানসিকতার পরিচায়ক বৈকি!
@গীতা দাস,
সংখ্যালঘু অফিসার যে একদম নেই তা নয়। অনেকেই আছেন। আমার পিতাও আছেন যিনি মধ্য পযযায়ের একজন সেনা অফিসার । আমি নিজেই ২০ জনের মত সারভিং/ রিটায়া্ড নন- মুসলিম অফিসার কে চিনি। পাইপ লাইনে আরও অনেক অফিসার আছেন। আর সৈনিক ত অনেক !! আমার নিজের পরিচিত দু জন অমুসলিম বন্ধু গত বছর সেনাবাহিনী তে গেল।
এইতো কিছুদিন আগে মেজর জেনারেল অনুপ কুমার চাকমা মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স ছিলেন; যেটি একটি বেশ ক্ষমাতাধর পোস্ট;। বর্তমানে তিনি বা্মায় রাস্ট্রদূত। একই পোস্টে বছর সাতেক আগে ছিলেন মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস।
আরো আছেন মেজর জেনারেল ডঃ বিজয় কুমার সরকার;
ব্রিগেডিয়ার আছেন তুষার চাকমা, অঞ্জন দেব সহ আরও বিভিন্ন র্যাঙ্কে আছেন আরও অনেক অফিসার ।
তবে আ্মির প্রায় প্রত্যেক ব্যাচে ৩-৪ জন non muslim থাকেই । তছাড়া সেনা সাইটে অফিসারদের প্রমশনের রেজাল্ট দেখে এব্যাপারে ধারণা পাবেন।
তবে এটাঠিক নন-মুস্লিম অফিসার দের কিছু বঞ্চণা সইতে হয়; অনেক সময় প্রমশন হয় না।ভালথাকবেন।। তবে সঠিক না জেনে এরকম ঢালাও লেখা ঠিক নয়।
@মানুষ,
ধন্যবাদ আমার পুরানো লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য। আপনার মন্তব্য আমার ই মেইলে মুক্তমনা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠানো হয়েছে এবং আপনিও পাঠিয়েছেন বলে আপনার মন্তব্য নিয়ে জানাতে পারলাম। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের চেয়ে জাতিগত সংখ্যালঘুরা কি সংখ্যায় বেশি সেনাবাহিনীতে? বিচ্ছিন্ন কয়েকটি নাম নয়, সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান থাকলে জানাবেন। উপকৃত হব।
সংখ্যালঘু কোন সেনা অফিসারের নাম সচরাচর জন সন্মুখে প্রচারিত ও প্রকাশিত পাওয়া যায় না। আমি পরে চিকিৎসা স্কোরের দুয়েকজনের নাম শুনেছি।
যাহোক,ধন্যবাদ ইস্যূটি নিয়ে আগ্রহের জন্য।
C R Dutta is retired person.
Mr. Sudhir Saha is most likely retired. I am not certain.
@গীতা দাস,
“অন্য ধর্মের কেঊ সেনাবাহিনীতে বা বাংলাদেশ রাইফেলসে নেই কেন?”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাপারে আপনার পড়াশোনা খুব একটা নেই মনে হচ্ছে। এই লেখাটি লেখার আগে আপনার একটু খোজখবর নেয়া উচিত ছিল।
এই মুহুর্তে আমার দুই জন সেনা অফিসারের কথা মনে পড়ছে
* মে. জে. সি আর দত্ত
* মে. সুধীর সাহা
যারা নি্যমিত পত্র-পত্রিকা পড়ে তাদের সবাইতো মনে হ্য় এই দুজনকে কলাম লেখক হিসাবে চিনে।
আরো আনেকে আছে হ্য়তো।
@পালাশ,
আপনার মনে হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে বেশ পড়াশোনা আছে। খুব ভাল কথা। এরকম কাউকেই আমি খুঁজছিলাম মনে মনে।
বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রায়শ এই ধরনের তিক্ত অভিযোগ শুনতে হয় আমাদেরকে। ছাত্র জীবনে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বেশিরভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ার কারণে দিনের অনেকখানি সময়ই আমার কেটেছে জগন্নাথ হলে। সেখানে চাকুরী বিশেষ করে সশস্ত্রবাহিনীর চাকুরীর ক্ষেত্রে ভয়াবহ বৈষম্যের কথা শুনেছি আমি তাদের কাছ থেকে। সংখ্যাগুরুর একজন হওয়ার কারণে রীতিমত লজ্জিত ছিলাম আমি। ধরে নিচ্ছি, সংখ্যালঘুর মানসিক অনিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির আবেগগত অপরিপক্ক এবং অতিরঞ্জিত বহির্প্রকাশ ছিল সেগুলো। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ ধরনের অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তি দাঁড় করাতে গেলে পরিসংখ্যানই একমাত্র ভরসা।
আর সে কারণেই, গীতা দাসের লেখাটা পড়ার পরেই আমি চেষ্টা করছিলাম সশস্ত্রবাহিনীতে সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্ব কোন পর্যায়ে তার একটা চিত্র পাবার। দেশের বাইরে থাকার কারণে আমার একমাত্র উপায় হচ্ছে ইন্টারনেট। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে সশস্ত্রবাহিনী সম্পর্কে এধরনের কোন তথ্যই আমি সেখানে খুঁজে পেলাম না। বাংলাদেশ আর্মির কয়টা বন্দুক পিস্তল আছে, কোন ধরনের কামান আছে, কোন ধরনের ট্যাংক আছে তার হিসাব ঠিকই আছে, নেই শুধু মানুষের খবর। কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না! ইউএস আর্মির ডেমোগ্রাফিক আমি জানি। কিন্তু নিজের দেশেরটাই জানতে পারছি না।
যাকগে। সেই দুঃখ আশা করি আমার ঘুঁচে যাবে আপনাকে পাওয়াতে। আপাতত আমার এই দুই চারটা প্রশ্নের উত্তর আপনি দেবেন বলেই আশা করছি। পরে না হয় অন্যগুলো করা যাবে।
১। সশস্ত্রবাহিনীর কমিশন কর্মকর্তা পর্যায়ে সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্বের হার কতটুকু। দয়া করে বলবেন না যে, সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ্যতার মাপকাঠিতেই কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়, ধর্মীয় বা জাতিগত ভিত্তিতে নয়। কারণ আমরা খুব ভাল করেই জানি যে, আমাদের দেশে এখনো শিক্ষার হারে হিন্দুরা মুসলমানদের তুলনায় অগ্রগামী। কাজেই আনুপাতিক হারেই সেখানে হিন্দু কর্মকর্তা থাকার কথা। নন কমিশন কর্মকর্তা এবং সিপাইদের ক্ষেত্রেই বা এই হার কত?
২। উইকিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের আঠারোজন মেজর জেনারেল এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের নাম দেওয়া আছে। সবগুলো নামই দেখলাম মুসলমান নাম। এদের মধ্যে একজনও ভিন্ন ধর্মালম্বী এবং ভিন্ন জাতিসত্ত্বার নয় কেন? জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে হলেতো অন্ততঃ দুইজন হিন্দু অফিসার থাকার কথা। এটা কি বৈষম্য না?
৩। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত যে পনেরোজন সেনাপ্রধান হয়েছে তারা সকলেই মুসলমান। এটাও কি একটু বিস্ময়কর নয়। আমরা একজন ভিন্ন ধর্মালম্বী সেনা প্রধান পেলাম না গত আটত্রিশ বছরেও। হিন্দু অফিসাররা কি এতই অযোগ্য? এমন কেন হলো বলে আপনি মনে করেন।
৪। ধরা যাক, কোন বৈষম্যই নেই নিয়োগের ক্ষেত্রে। যোগ্যতা থাকলেই হিন্দু অফিসার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে ঠিকঠাক মতই। আমি যদ্দুর জানি সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদেরকে ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে দেশ এবং সংবিধানকে রক্ষা করার শপথ নিতে হয় (আমার জানা ভুল থাকলে আপনি এই প্রশ্নটাকে উপেক্ষা করতে পারেন)। অন্য ধর্মালম্বী কর্মকর্তারা কি তাদের ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ নিতে পারেন? সেই অধিকার কি তাদের আছে?
আপাততঃ এইটুকুই। এগুলোর উত্তর পেলে অন্য যেগুলো মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে সেগুলো না হয় পরেই বলবো।
আপনি যে মেজর জেনারেল সি আর দত্তের কথা বললেন। উনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের কারণে বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন বহু আগে। মেজর সুধীর সাহা সম্পর্কে অবশ্য কিছু জানি না আমি। উনি কি এখনো কর্মরত? নিশ্চয়ই না। কারণ তা হলেতো পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করতে পারার কথা নয়। দু’জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মর্তার উদাহরণ দিয়ে আপনি বর্তমান পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করছেন কিভাবে?
তার মানে আপনিও নিশ্চিত না এ ব্যাপারে। গীতা দাসকে পরামর্শ দিচ্ছেন এই লেখা লেখার আগে আরো খোঁজ খবর নেয়া উচিত ছিল বলে । অথচ আপনি নিজেই নিশ্চিত না হয়েই মন্তব্য করে বসে আছেন দেখছি। ডাবল স্টান্ডার্ড হয়ে গেলো না কি বিষয়টা?
@ফরিদ,
আপনি আমার বক্তব্য ভাল করে পড়ে দেখুন
সেনাবাহিনিতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব কম কি বেশী সেটা আমার আলোচ্য বিষয় ছিলনা। আমি শুধু গীতা দাসের ভুল তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি।
গীতা দাসের বক্ত্যবের সার কথা হচ্ছে সেনাবাহিনিতে
অন্য ধর্মের কেঊ নেই। যেটা আমি ভুল প্রমান করেছি।
কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেখানে কোন কিছু নেই বলে প্রমান করা দুনিয়ার কঠিনতম কাজ।
যেমন ধরুন আপনি আপনার ব্যাক্তিগত বিশাল library
টি কোন কারনে এলোমেলো করে রেখেছেন, যার কারনে একটি প্রয়োজনীয় বই বা রেফারেন্স খুজে পাচ্ছেন না। এখন আপনি কিন্তু ঘোষনা দিতে পারেন না যে বইটি নেই। নিশ্চিত ভাবে নেই বলার আগে আপনাকে তন্ন তন্ন করে বইটি খুজতে হবে আথবা নতুন ভাবে Inventory করতে হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যপারে আপনিতো নিজেই বললেন যে অস্ত্র-সস্ত্রের inventory পেলেও মানুষের খবর পাননি।
সেখানে গীতা দাস কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে অন্য ধর্মের কেউ নেই।
গীতা দাস (নিশ্চিত না হয়েই) মুখস্ত বলে দিলেন .. নেই। ভাবখান এমন উনি সেনাবাহিনীর সব সদস্যের ধর্মীয় পরিচয় জানেন। এই জাতীয় ভুলে ভরা এবং মুখস্ত তথ্য আমি মুক্ত-মনাদের কাছে আশা করিনি।
এবার আপনার প্রশ্ন গুলোর জবাব দেয়ার চেষ্টা করি।
১)
সেজন্যইতো আমরা আনেক ভাল ভাল হিন্দু শিক্ষাবিদ পেয়েছি, যাদের কেউ দমিয়ে রাখেনি তারা সংখ্যালঘু বলে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়-ও তারা ভাল করছে, এবং তারা হিন্দু বলে কেউ তাদের ভর্তি বাতিল করেনি।
আমিতো মনে করি সবচেয়ে ভাল ছাত্রগুলো H.S.C -র পর BUET, DU ইত্যাদিতে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে।
যাক এখন মুল কথায় আসি। বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিম্প সংস্কৃতির মত সেরা জায়গাগুলোতে সংখ্যালঘুদের
উপস্তিতি বেশি হওয়া সত্বেও সেনাবাহিনীতে সেই রকম নেই কেন? ব্যাপারটা খুব সহজ। এ দেশের সংখ্যালঘুদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা দেখা যায়না (যদিও পুলিশ বাহিনীতে প্রচুর সংখ্যালঘু পুলিশ কর্মকর্তা পাবেন)।
এখন সেনাবাহিনীতো আর ডেকে ডেকে লোকজনকে BMA -তে ঢুকাবে না।
এখন আপনার কাছে প্রশ্ন , বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য সেরা জায়গাগুলোতে সংখ্যালঘুরা যেরকম ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে সে রকম BMA- ভর্তি পরীক্ষা্য় ও কি অংশগ্রহন করে? করলে সেখান থেকে কি পরিমান নেওয়া হ্য় বা বাদ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারটা যতক্ষন জানা যাচ্ছেনা ততক্ষন বলা যাবেনা যে সেনাবাহিনীতে সংখ্যাকঘুদের যথাযত উপস্তিতি না থাকার জন্য সেনাবাহিনী দায়ী। সেনাবাহিনীর গরজ পরেনাই যে ডেকে ডকে লোকদের BMA-তে ডুকাবে কোন প্রকার ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া।
আমারও বেশীরভাগ সেরা বন্ধুগুলো কিন্তু হিন্দু। তাদের কারোতো সেনাবাহিনী ঢুকার ব্যাপারে কোন interest দেখিনি, তাদেরকে বরং উচ্চশিক্ষা এবং রাজনিতী নিয়ে আগ্রহী দেখেছি.
২)উত্তরটা আগের প্রশ্নের উত্তরে দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীতে ঢুকার ব্যাপারে্ই যদি সংখ্যাঘুদের ইচ্ছাই না থাকে, তাহলে সেনাবাহিনী কিভাবে সংখ্যালঘু জেনারেল পেতে পারে?
Wiki -তে বর্তমান জেনারেলদের নাম দেয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে সেনাবাহিনীতে কোন সংখ্যালঘু জেনারেল ছিলনা।
আমার মনে হ্য় মে. জে. সি আর দত্ত এবং মে. সুধীর সাহার মত বীরদের পথ ধরে, বর্তমান সংখ্যালঘু তরুন প্রজন্মের ও সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া উচিত, তাহলেই আমারা সে-রকাম কিছু জেনারেল পেতে পারি।
৩) আগের উত্তর দেখুন।
৪)
হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন। Youtube-এ আমি নিজেও
এই রকম একটি clip দেখেছি।
এখন আপনি কি করে নিশ্চিত হচ্ছেন যে অন্যধর্মের লোকেরা এরকম সুযোগ পাইনা। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে গেলেতো আপনাকে বাংলাদেশে এসে সেনানিবাসগুলো পরিদর্শন করতে হবে।
বি: দ্র : Computer -র বাংলা লেখার অব্যেশ নেই। বানান এবং ভাষাগত ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
@পলাশ, বাংলাদেশের আর্মি অফিসারদের এত আরাম আয়েশের চাকরি, এত সুযোগ-সুবিধা। এতসব আকর্ষণের পরেও অন্য ধর্মালম্বীরা যোগ দিতে না চাওয়ার কারণ কি? এরা কি ইহজাগতিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বাদ দিয়ে অমৃতের সন্ধানে আছে নাকি? নাকি এরা ভীরু কাপুরুষ? নাকি হারমোনিয়াম, তবলা বাজাতে জানে, কিন্তু নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা নাই?
@পলাশ,
পলাশ, শুরুতেই বলে নেই, আপনি যে মার্জিত ভাষায় আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন তাতে আমি মুগ্ধ। এই জিনিষটাই আমরা মুক্তমনায় আশা করছি সেই শুরু থেকেই। বক্তব্যে দ্বিমত থাকতে পারেই, ভিন্ন ভিন্ন মানুষের চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাবোধটুকু যেন সরে না যায় বিতর্কের অজুহাতে।
আপনার বক্তব্যের অনেক জায়গাতেই আমার ভিন্নমত আছে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে আমি আর লেবু কচলাতে চাই না। এর মধ্যেই গীতা দাস এবং আবু নঈম কিছুটা বলেও ফেলেছেন। কাজেই আমি আর ওই প্রসঙ্গে বিস্তারিত যাচ্ছি না। শুধু একটা বিষয়ে আপনার বক্তব্যের দ্বিমত পোষণ করে যাচ্ছি আমি। কার্ণ, এই বিষয়টিকে খুব কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় হিন্দু ছেলেরা ভাল করছে এবং তাদের ভর্তি কেউ বাতিল করছে না সে ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা এমনভাবে হয় যে সেখানে এই ম্যানিপুলেশন করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু তারপর কি হয়? সেই মেধাবী ছাত্রগুলো মধ্য থেকে খুব ভাল রেজাল্ট করা ছাত্রগুলো যখন শিক্ষকতা পেশায় আসতে চায় সেখানে কি তারা ভর্তি পরীক্ষার মত সুষ্ঠু ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাতে পারে? না, পারে না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি তারা সেটা পারে না।
বাংলাদেশের একটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর শিক্ষকতা করেছি আমি। সেখানে চাকুরীতে যোগদানের পরেই জানতে পারি যে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কোন হিন্দু ছাত্রকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এর মানে কি ওই সময়টাতে কোন হিন্দু ছাত্র ভাল রেজাল্ট করেনি। না, তা নয়। বহু বহু হিন্দু ছাত্র ফার্স্ট ক্লাশ ফার্স্ট বা সেকেন্ড হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কারো মন নরম করতে পারেনি তখন। স্বপ্নের পেশাকে পিছনে ফেলে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে চলে যেতে হয়েছে তাদেরকে অন্য কোন পেশায়। অসংখ্য অসহায় হিন্দু মেধাবী ছাত্রের অশ্রুগাথায় আজো ভারী হয়ে আছে সেখানকার বাতাস। এই চিত্র কি বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রেও কম বেশি প্রজোয্য নয়? পলাশ, এখনো কি বলবেন যে শিক্ষাবিদ হওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা তাদেরকে দমিয়ে রাখিনি সংখ্যালঘু বলে।
এর চাইতেও মারাত্মক একটা ব্যাপার আমার চোখে ঠেকছে। নিহত অনেকেরই নিকট আত্মীয়স্বজন সশস্ত্রবাহিনীর অবপ্রাপ্ত অথবা কর্মরত অফিসার। সংখ্যাগুরুরাও যে বঞ্চিত হচ্ছে বলাবাহুল্য। সংখ্যালঘুদের কথা বাদ দেন, সংখ্যাগুরুদের জন্যও বাংলাদেশ নিরাপদ না।
@অনিরুদ্ধ রায়, অবপ্রাপ্ত বলেছি এই কারণে যে, এরা সবাই অবসর গ্রহণকে পদপ্রাপ্তি হিসেবে গণ্য করে আগের পদবীর সাথে অবঃ জুড়ে দেয়।
আসলে আমার মনে হয় ব্যাপারটো এমন হওয়া উচিৎ নয় যে যেকোন সেক্টরে আনুপাতিক হারে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক নিয়োগ দিতে হবে। প্রকৃত পক্খে দেশটা আমাদের। অধিকার সমান, নিশ্চই জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নয়। এই অধিকার বোধটা প্রতিটি সাধারনের মাঝে জাগতে হবে। সংখ্যা লঘু-গুরুর ব্যপার থেকেই বেরিয়ে আসতে হবে। বিতর্কিত এবং সংগতিহীন সাংবিধানিক ধারা গুলো মুছে ফেলতে হবে। নিয়োগের ধরন হবে প্রয়োজন এবং যোগ্যতা। আর এজন্যে পর্য়ায়ক্রমে চালু করতে হবে শিক্খার সুনীতি, স্বশিক্খা যা হবে মুক্তচিন্তার ধারক এবং বাহক, অতঃপর তরান্বিত করতে ষবে খ্খয়িষ্নু আধা সামন্ত আধা পূঁজির সামাজিক অবকাঠামোর অনিবার্য ধ্বংস। বিঙ্গান মনষ্ক ও অধুনিক বিঙ্গান ও ডিজিটেক ব্যাবস্থার ব্যাপক প্রসার উক্ত ধ্বংসস্তুপের উপরে গড়ে তুলবে নতুন প্রজন্ম ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সামাজিক বিবর্তন। নতুন ব্যবস্থায় সেকেলে বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি দ্বন্দ্বের জায়গায় স্থান করে নেবে আধুনিক বিঙ্গান ভিত্তিক প্রতিযোগীতা। আর তা হবে ব্যক্তি বা সামাজিক দ্বন্দ্বের ঊর্দ্ধে, ইন্টারগ্যালাকটিক। আর এখন যা দেখতে পাচ্ছেন তা হলো কূপমুন্ডুকতা ও সংকীর্নতার পরাকাষ্ঠা! যা অনিবার্য।
আপনি নিজেই লিখলেন মহাগুরুদের সংবিধান সংশোধনীর কথা। আবার আপনিই খুজছেন তাদের আস্তানায় সংখ্যালঘুদের ছায়া!
লজ্জা পাই, হতাশ হই। উত্তর দেবার ভাষা খুঁজে পাইনা। শ্রীলংকার ক্রিকেটার দের উপর হামলা নিয়ে বিপ্লব পালের লেখাটি পড়ে মন্তব্য করতে গিয়ে দেখি ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।
কথা বললে নীজের কাছে হালকা লাগে, তাই জানতাম এতকাল। ইদানিং এমন কিছু ঘটছে যা নিয়ে কথা বলার পর নীজেকে আরো বেশী নির্লজ্জ মনেহয়। আথচ আমি কথা বলতে ভালবাসি।