স্বাধীন দেশ কিন্তু পরাজিত মুক্তিযোদ্ধা !

নুরুজ্জামান মানিক

 

ক্যালেন্ডারের নিয়মে মার্চ আর ডিসেম্বর মাস এলেই আমরা সবাই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক -বাহক বনে যাই স্মর্তি রোমন্থন , কি পেলাম বা পেলাম না , হা হুতাস , নানা প্রতিজ্ঞা করা ইত্যাদি অনেক কিছুই হতে থাকে কিন্তু থাকে না অনেক প্রশ্নের উত্তরআসুন একটু চোখ বুলিয়ে দেখি স্বাধিন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের আবস্থান ?

মর্মান্তিক ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য হল ,বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান , মুজিব নগর সরকারের চার স্তম্ভ সর্বজনাব তাজ উদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান ও এম মনসুর আলী কে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নয় বরং এই স্বাধীন দেশেই শহিদ হতে হয়েছিল এবং নির্মম হলেও সত্য হল , এই হত্যাগুলোর পেছনে সি আই এ আর তার চর দের ষড়যন্ত্র যেমন সত্য তেমনি সত্য তারকা খচিত মুক্তিযুদ্ধাদের ক্যু -দেতায় ভুমিকা

মুক্তিযুদ্ধকালীন সেনা অফিসার সঙ্কট ছিল প্রকটসেই সময় অধিকাংশের পোস্টিং ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে নজরবন্দি অবস্থায় তবে, সবাই নয়যুদ্ধকালীন পাকিস্তান থেকে ছুটিতে বা বিভিন্ন উপলক্ষে এদেশে এসেছেন ,আবার চলে গেছেন এমন অফিসারের সংখ্যা দেড়শতের মতো অর্থাত্ ১৫০ অফিসারেরই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবার সুযোগ ছিল কিন্তু যুদ্ধে যোগ দেন মাত্র ৩০/৩৫ জন অফিসারমুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া অফিসারদের আমরা দুভাগে ভাগ করতে পারি : ক) এদেশে কর্মরত যারা প্রতিরোধ পর্বে যোগ দিয়েছিলেন যথা লে কর্নেল সালাউদ্দিন , মেজর জিয়া, মেজর বাহার , মেজর সফিউল্লাহ , মেজর খালেদ, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর আবু ওসমান, ক্যাপ্টেন হাফিজ , ক্যাপ্টেন ভুঁইয়া , প্রমুখ খ) যারা পশ্চিম পাকিস্তান ( নজরবন্দি অবস্থা ) থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন যেমন ডালিম ,নুর, মতি , জিয়াউদ্দিন, তাহের , মঞ্জুর প্রমুখ মুক্তিযুদ্ধে বীরোত্বপুর্ন ভুমিকার জন্য উপরোক্ত সুর্যসন্তানদের সরকার স্বীকৃতি দেন বীর উত্তম , বীর বিক্রম , বীর প্রতীক প্রভৃতি খেতাব

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য , এই স্বাধীন বাংলাদেশেই তাদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার খালেদ বীর উত্তম -কর্নেল হায়দার বীর উত্তম -কর্নেল তাহের বীর উত্তম -জেনারেল জিয়া বীর উত্তম -জেনারেল মঞ্জুর বীর উত্তম প্রমুখ সেক্টর অধিনায়কসহ বী উ, বীবি , বীপ্র প্রভৃতি খেতাবধারী অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানি কে ব্রাশ ফাঁয়ার ও ফাঁসি দ্বারা মরতে হয়েছে তথাকথিত ক্যূর অভিযোগে কিংবা নিছক বিপ্লবী উন্মাদনায় (যেমন ৭ নভে৭৫ তারিখে হায়দার ও হুদাকে হত্যা

মুক্তিবুদ্ধি -চিন্তার জন্যে ২৫শে মার্চ ১৯৭১ রাতেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবীদের নিধন এবং তাচলে যুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়ে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও  তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে দেশের শ্রেষ্ঠসন্তান বুদ্ধিজীবীদের এমনকি ৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় লাভের পরেও বুদ্ধিজীবীদের নিধন অব্যাহত থাকেদ্রষ্টান্তস্বরূপ ডঃ মনসুর আলী (ডিসে ২১,১৯৭১) চলচিচত্রকার জহির রায়হান (নিখোজ হন ৩০ শে জানু ১৯৭২ )এবং সাংবাদিক গোলাম রহমান (হত্যা জানু ১১,১৯৭২)

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য , ৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যা কান্ড শুরু হয়ে এখনও তাচলছে

প্রান্তিক মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশ বেঁচে আছেন “জিন্দা লাশ” হয়েপ্রতিদিন সংবাদপত্রে ছাপা হছে তাদের বেচে থাকার সংগ্রাম নিয়ে নিউজ-ফিচার

আমরা সেমিনার করি ,বিশেষ দিনে ক্রোরপত্র বের করি ,কাউকে দেবতাও বানাই , দিবসভিত্তিক মায়া কান্নাকাটি করি অতি সার্থক ভাবে কিন্তু কেন এমনটি হল তা জানতে চাই না ,জানাতে চাই না