অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
এই জীবনে কিছুই হতে চাই নি আমি। না মেঘ, না বৃষ্টি, না ছায়া, না রোদ্দুর, না সমুদ্দর, না জল, না নীল, না পাখি, না আকাশ। কোনো কিছুই নয়।
কোনো কিছু যে হতে হবে সেই ভাবনাটাই মনে আসে নি কখনো। প্রয়োজনটুকুও অনুভব করি নি কখনো বুকের মাঝে। এতে নিজের হয়তো কোন আক্ষেপ নেই, বেদনা নেই, নেই কোন দীর্ঘশ্বাস কিংবা হতাশাও। কিন্তু আশেপাশের মানুষদের বড় সমস্যা হয় আমাকে নিয়ে। আমার অপ্রাপ্তিকে নিজেদের অপ্রাপ্তি ভেবে নিয়ে হতাশায় মাটি কাঁপায় তারা। আমার হাল ছেড়ে দেওয়া পরাজয়ে বিক্ষুব্ধ হয় বিপুল পরিমাণে। আমার গুটিয়ে যাওয়া দেখে গুমরে মরে তারা।
ক্লান্তিতে হাল ছেড়ে দেওয়া আমার ভারি দুচোখ যখন মুদে আসতে থাকে গভীর ঘুমের আশায়, তারা ঠেলে ঠুলে তুলে দিতে চায় আমাকে। কেউ বুঝতে চায় না যে, বড্ড ক্লান্ত আমি। ক্লান্তির বোঝা টানতে টানতেই নিঃশেষিতপ্রায়। বিশাল বোঝার ভারে নিষ্পেষিত আমি। লড়াই করার আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই আমার। লড়াই করতে চাইও না আমি। কেড়ে নেবার কোন অভ্যেস যে নেই আমার। প্রয়োজনটাই আসলে নেই।
যে লড়াই করি তা করিয়ে নেওয়া হয় আমাকে দিয়ে। হাজারো দর্শকের উন্মাতাল চোখের সামনে ক্লান্তশ্রান্ত অনিচ্ছুক রোমান ম্যাটাডোরের মত আমাকেও ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় ক্ষুধার্ত সিংহের মুখে। দর্শক মনোরঞ্জনের জন্যে, তামাশা দেখার জন্যে। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই প্রাণঘাতী লড়াইয়ে আমি ক্ষতবিক্ষত হই, রক্তাক্ত হই, ক্লান্ত হই, রিক্তসিক্ত হই, ঘুমের অতল তলে তলিয়ে যেতে থাকি অনিচ্ছায়।
একেকটা অর্থহীন লড়াইয়ের পরে শরীরে ক্ষতের দাগ লুকিয়ে, চোরা রক্তস্রোতকে উপেক্ষা করে উল্লসিত দর্শকদের দিকে বিজয়ীর মত হাত নাড়ি আমি। তারপর ভিতরের পরাজিতকে নিয়ে ফিরে যাই পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুটের অন্ধকারে। নিজে নিজে ক্ষতে মলম দেই অযত্নে, ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলি দেহ থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়া রক্তিম রুধিরস্রোত। শরীরের রক্ত-ঘাম মুছে আরেকটি অপরিবর্তিত দিনের অপেক্ষায় থাকি আমি। আরেকটি অর্থহীন লড়াইয়ের অনাগ্রহী প্রস্তুতি নেই।
কেউ ভাবে না, আসলে কি চাই আমি। আদৌ কিছু চাই কি না। কাঠিন্য দিয়ে মোড়ানো যে স্বেচ্ছামোড়ক রয়েছে চারপাশে আমার, তার ভিতরে আসলে ঘুণপোকারা বাসা বেঁধেছে দলবেঁধে। উপরের শক্ত আবরণটুকু সরালেই দগদগে সত্যের মত প্রকাশিত হয়ে যাবে ঝুরঝুরে নরম কাদামাটির ভাঙা বসতবাড়ি।
অভিশপ্ত জীবন আমার। থিকথিকে অন্ধকারের মধ্যে অনিচ্ছুক এবং অবাঞ্ছিত জন্ম পেয়েছি আমি। আশাহীন, স্বপ্নহীন এক জীবনকে হাতে ধরিয়ে দিয়ে এই ধরায় পাঠিয়ে দিয়েছেন বিধাতা আমাকে। চোখ মেলেই দেখেছি চারিদিকে অন্ধকারের শক্ত কালো দেয়াল। জন্মান্ধ ইঁদুর ছানার মত মাথা কু্টে মরেছি সেখানে কতযুগ, কত অনন্ত সময়। শুধুমাত্র একটু মুক্তির আশায়। মুক্তি চাই, মুক্তি চাই বলে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি অসহায় আমি। না, আলোর জন্য কো্নো আকুতি ছিল না আমার, ছিল না কোনো অদম্য ভালবাসাও। তীব্র প্রয়োজন ছিল শুধু অসহ্য আঁধার থেকে বের হয়ে আসার। পৌরাণিক কাহিনির কোন অভিশপ্ত চরিত্রের মত নক্ষত্র নিয়ন্ত্রিত পথে হেঁটেছি আমি টালমাটাল, তালচিহ্নহীন। একাকী, এলোমেলো, সঙ্গীবিহীন। দ্বিধাগ্রস্ত, দ্বন্দ্বমুখর আর দিশাহীন ছিল সেই যাত্রা। এক জীবনের অর্ধেকটাই কেটে গিয়েছে আমার সেই আঁধারের রাজ্যের সীমানা পেরোতেই।
এত কিছু না চাওয়ার মধ্যে একজনকেই চেয়েছি আমি। শুধু একজনকেই। আর কাউকেই নয়। তীব্রভাবে, মনের সমস্ত আকুতি দিয়ে, বুকের মধ্যে জমানো সবটুকু ভালবাসা দিয়ে চেয়েছি তাকে। বরষাভেজা এক স্বপ্নিল রাতে অচেনা অরণ্য পেরিয়ে সে এসেছিল করুণাধারায় সিক্ত করতে। স্বেচ্ছামৃত্যুর চোরাবালিতে গেঁথে যাওয়া একজনকে গভীর ভালবাসায় হাত ধরে টেনে তুলেছিল। মমতামাখানো কোমল হাতের স্পর্শে স্পন্দিত করেছিল আমাকে, পালটে দিয়েছিল আমার পুরোনো পৃথিবীকে। বিপুল বিস্ময়ে পুরো চোখ মেলে বদলে যাওয়া ভূবনকে দেখেছিলাম আমি তখন।
শুধুমাত্র তার কারণেই ঝুম বৃষ্টিতে মিলপুকুরের পাড়ে ভিজতে ইচ্ছে করে আমার। শুধুমাত্র তার কারণেই বিরান কোন বনের বনভাসানো নেশাময় বুনোগন্ধ নাকে নিয়ে তার হাতে হাত রেখে আঁকাবাঁকা সরু বুনোপথ ধরে হাঁটতে ইচ্ছে করে অনাদিকাল। চাঁদনী রাতে দূর সাগরের মাঝের নির্জন কোন দ্বীপের বিশাল কোন বৃক্ষের উপর করা গাছবাড়ির বারান্দায় পা ছড়িয়ে দিয়ে বসে গল্প শুনতে ইচ্ছে করে ভোর অবধি। জোছনাগুলোকে হাতের মুঠোয় ধরে ফুল বানিয়ে গুঁজে দিতে ইচ্ছে করে তার রেশমের মত মখমলে চুলের মাঝে। মাতাল করা গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে ওই চুলের ঘন অরণ্যে নাক ডুবিয়ে। সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া নীল জলের সুখস্পর্শধন্য রুপোলি বালুতে শুয়ে কোলের মধ্যে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে ঘুমঘুম চোখে কবিতা শুনতে ইচ্ছে করে।
বদলে দেওয়া আমার এই পৃথিবী যে শুধু তার কারণেই পাওয়া। সে না এলে এগুলোর কিছুই যে জানতাম না আমি। জীবন থেকে যেত অনাড়ম্বরহীন, অতৃপ্ত। স্বাদগন্ধবর্ণহীন শুকনো পাতার মতন । প্রকৃতির সমস্ত সৌন্দর্য থেকে যেত অনালোকিত, অনাবিষ্কৃত আর অনাস্বাদিত।
বন্ধু, তোমাকে হারাতে দেবো না কিছুতেই।
|
|
এ বিষয়ে কবিগুরুর কথাই মনে হয় মহাসত্য-
“যাহা পাই তাহা ভূল করে চাই-
আনন্দ গান উঠুক তবে বাজি,
এবার আমার ব্যথার বাশিঁতে-
অশ্রু নদীর ঢেউয়ের পরে আজি,
পারের তরী থাকুক ভাসিতে।
অঃটঃ রৌরব,কুলদা রায়,গীতাদাস হিন্দু মিথোলজীতে জলদেবতা কে?
একটু কষ্ট করে,
তাকে নিয়ে যে উপকথা, সেটা মুক্তমনায় দিলে আমার খুব উপকার হয়।
আশা করি লেখাটা আপনাদের চোখে পরবে!
@লাইজু নাহার,
চোখে তো পড়ল, কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না কার কথা বলছেন। বরুণ নাকি?
@রৌরব,
তাই হবে হয়ত!
বরুণকে নিয়ে কোন উপকথা থাকলে সংক্ষেপে কষ্ট
করে একটু লিখলে বড় ভাল হয়।
চোখে পরার জন্য ধন্যবাদ!
@লাইজু নাহার,
দুর্ভাগ্যক্রমে, জানা নেই। দেখুন অন্য কেউ জানে কিনা। বরুণ বৈদিক দেবতা, কিন্তু পরে তাঁর দর পড়ে গেছে, এটুকুই জানি।
@রৌরব,
আপনার ধারণাই সঠিক। প্রাক-বৈদিক যুগে সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা ছিলেন বরুণ। শুধু আকাশ আর জলেরই দেবতা ছিলেন না তিনি, ছিলেন সমস্ত স্বর্গ, নরক, মহাকাশসহ সমস্ত বিশ্বজগতের স্রষ্টা। কিন্তু পরে তাঁর আর সেই গুরুত্ব ছিল না।
যুগের সাথে সাথে পৌরাণিক দেবতাদেরও বিবর্তন ঘটেছে। এক যুগের মহা পরাক্রমশালী দেবতা অন্য যুগে এসে পরিণত হয়েছেন নখদন্তহীন কোনো দেবতায়। আবার আগের কোনো এক সময়ের পাত্তা না পাওয়া কেউ হয়তো বিপুল বিক্রমে ছড়ি ঘুরিয়েছেন অন্য যুগে এসে।
বরুণের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। প্রাক-বৈদিক এবং ঋগ-বৈদিক যুগের শুরুর দিকের এই প্রবল পরাক্রান্ত দেবতা মহাভারতে এসে খর্বশক্তির এক সামান্য জলের দেবতায় পরিণত হয়েছেন। আকাশ রাজ্যও হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে তাঁর। বিশ্বজগতের স্রষ্টার গৌরবতো আরো আগেই হারিয়েছেন তিনি ইন্দ্রের কাছে।
@ লাইজু নাহার,
বরুণের প্রবল উত্থান এবং ক্রমান্বয়ে পতিত হতে হতে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার কাহিনি পাবেন এখানে।
varuna and his decline – part 1
varuna and his decline – part 2
varuna and his decline – part 3
varuna and his decline – part 4
@ফরিদ আহমেদ,
সব দেবতাই কবে নখদন্তহীন হয়ে পড়বেন, সেদিনের অপেক্ষায় আছি! বরুণ বিষয়ক সূত্রটির জন্য ধন্যবাদ, সুযোগ পেলে পড়ে দেখব।
@রৌরব,
অপেক্ষার আর বেশি দেরি নেই। অসুরদের রাজত্ব এখন, দেবতাদের বিদায় নেবার পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। 🙂
অমিত রায়ের কথাকেই একটু পালটে দিয়ে বলা যায়ঃ
এখন থেকে দেব-দেবতাদের দ্রুতনিঃশেষিত যুগ।
@ফরিদ আহমেদ,
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
আপনি দেখছি মহা দেবতাবিশেষজ্ঞ!
পুরো লেখাটিতেই নিজের ছবি দেখতে পেলাম, বিশেষ করে এই বাক্যগুলোতে। শুধু দুঃখ এভাবে প্রকাশের ক্ষমতা নেই। কত অপূর্ণতায় ভরা এই ছোট্ট জীবন। ভাল থাকুন সব সময়।
মন্তব্য প্রথমটি কেন যেন মনে হল যায়নি, তাই দ্বিতীয়টি দিলাম। এখন দেখি দু’টোই গিয়েছে 😥 ।
পুরো লেখাটিতেই নিজের ছবি দেখতে পেলাম, বিশেষ করে এই প্যারাটিতে। শুধু দুঃখ এভাবে প্রকাশের ক্ষমতা নেই। কত অপূর্ণতায় ভরা এই ছোট্ট এই জীবন। ভাল থাকুন সব সময়।
@স্বাধীন,
আপনার অবস্থাও কি আমার মতই নাকি? কিছু একটা হতে হবে এই সমুদ্রসম সামাজিক চাপটা না থাকলে জীবনটা মনে হয় অন্যরকম হতো, তাই না?
ব্যক্তিগত অনুভূতির অসামান্য প্রকাশক এই লেখাটাতে স্বপ্নের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের উপাখ্যান আছে। আর তার পেছনে স্বপ্নভঙ্গের আশংকার একটা করূণ সুর যেন শুনতে পাই। আশা করি, স্বপ্নভঙ্গের যাতনায় যেন আপনাকে না পুড়তে হয়।
@পথিক,
স্বপ্নভঙ্গের যাতনায় না পুড়ে কি আর স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় ধরা যায় বলেন। স্বপ্নবিলাসী মানুষ আমি, জেগে জেগেও স্বপ্ন দেখি সারাক্ষণ। এত এত স্বপ্ন কি আর সত্যি হবে এই জীবনে। কাজেই, স্বপ্নভঙ্গরাও চলার পথের সাথী হবে আমার সেটাই স্বাভাবিক। তাদেরকে দূরে ঠেলে দেওয়াটা বোধহয় ঠিক না।
ফরিদ ভাই,
প্রতিদিনের খুঁটিনাটি আর ক্ষুদ্রতার মাঝে ডুবে গিয়ে আমরা জীবনের অমূল্য পাওয়াগুলোর কথা প্রায়ই ভুলে যাই। জীবনটা খুব খুব বিরক্তিকর, প্রায়ই মনে হয় এই র্যান্ডম প্রকৃতিতে বড্ড বেমানান আমরা। একদিকে নিত্যদিনের ঝুটঝামেলা, ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া, কামড়াকামড়ি, হীনতার থাবা আর আরেকদিকে মহাকালের বিশালতা যা আসলে এক সীমাহীন উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই দু’য়ের অবিশ্রাম টানাটানির মাঝে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বটাই যেন আমাদের কাছে একটা সমস্যা। বেশীরভাগ সময়ই আমরা আত্মসমর্পণ করে বসি ক্ষুদ্রতার কাছেই, কারণ বেশীরভাগ সময়েই এগুলোকে মাপা যায়, ধরা যায়, স্পর্শ করা যায় চারপাশের মানুষগুলোর তীক্ষ্ণ স্ক্রুটিনির মাঝে। কিন্তু জীবনের অনেক বড় বড় অর্জনগুলোর উপর যেহেতু স্ক্যান করে দামের ট্যাগ বসানো যায় না, অনেক সময়েই তারা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, এগুলোকে ধরে রাখতে পারার মধ্যেই হয়তো এই অর্থহীন জীবনের অর্থটা নিহিত রয়েছে। গত কয়েক বছরে আমার নিজের এবং খুব কাছের কিছু মানুষের জীবনের ঘটনাবলী যেন মহাকালের এই উদাসীনতা এবং বিক্ষিপ্ততাকেই বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সবই যেন কেমন তাশ খেলার মত, অনবরত শাফলিং চলছে, কখন যে কার কোন পিঠ উঠে আসবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। সময় বড় অল্প আমাদের হাতে, প্রতিটা জীবন যেন এক টাইম বোম, টিক টিক করে যেন মহাবিস্ফোরণের সেই সময়টার হিসেব করে চলেছে। তাই যাকে এমনভাবে চেয়েছেন তাকে ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার সবই তো করা উচিত, এত বড় একটা প্রাপ্তিকে হারিয়ে ফেলার মধ্যে আসলেই তো কোন সার্থকতা নেই।
আমার তো মনে হয় আপনি অনেক সৌভাগ্যবান যে আপনার মাঝে বেশীরভাগ মানুষের মত নিত্যদিনের ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া নিয়ে নিজেকে তিক্ত করার আর্জি কাজ করে না, আমার কাছে এই ‘না চাইতে পারা’র শক্তিটাকেও একটা বিশাল মানবিক ক্ষমতা বলে মনে হয়। এতে করে আপনার ভিতরে তো ঘুণ নয় বরং এক ধরণের প্রসন্ন স্থিতিশীলতা কাজকরার কথা। হয়ত আশে পাশের মানুষগুলোর বিরামহীন গুতাগুতিতে সাময়িকভাবে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যাত্রাপথের এই স্বল্প বিরতিটা পার হয়ে গেলেই হয়তো দেখবেন আবার সব কিছুই ফিরে গেছে আপনার সেই চির চেনা জগতে যেখানে এসব ছোটখাটো জিনিস নিয়ে আর বিচলিত বোধ করবেন না।
@বন্যা আহমেদ,
এই লেখার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনে হয় তোমার এই মন্তব্য।
এরকম সাহিত্যরসসমৃদ্ধ মনোহারিণী মাধুর্যময় মন্তব্য যে বিজ্ঞানী বন্যার হাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তা কি কেউ কল্পনাও করতে পেরেছে কখনও।
আমি যে সবসময় বলি তোমার বাংলা অভির চেয়েও অষ্টগুণ ভাল, বিশ্বাসতো করো না। এবার মুক্তমনার পাঠকেরাই সেটা স্বাক্ষ্য দেবে। আমার আর কিছু বলা লাগবে না।
এধরনের অনায়াসসাধ্য অনুনকরণীয় মন্তব্য লেখার অভিলাষ অভির অভক্ষিতই থেকে যাবে।
দিলামতো পারিবারিক ক্যাঁচাল বাধাইয়া। এইবার ঠ্যালা সামলাও। 😀
@ফরিদ ভাই, দাম্পত্য কলহ হবে না মনে হয়, তবে এই উষ্কানিমূলক মন্তব্যটা করে আপনি যে অপূরণীয় ক্ষতিটা করলেন সেটা কিন্তু আর ভাষায় প্রকাশ করা যাছে না। এরপর থেকে আমি যখন আমার লেখায় অদ্ভূত সব ভুল শব্দ বসিয়ে দিব, ব্যাকরণগতভাবে ভুল বাক্য লিখব, তখন আর অভি আমাকে বাঁচাতে আসবে না। এতদিন তো অভি আমার ভুলভাল লেখা পড়ে প্রথমে হাসাহাসি করলেও, পরে কিছুটা হলেও ঠিকঠাক করে দিত, এখন বলবে ‘ফরিদ ভাই কই, ওনারে কও ঠিক কইরা দিতে’। দিলেন তো লেখক হিসেবে আমার ক্যারিয়ারটাই অঙ্কুরে বিনষ্ট করে :-Y ।
@বন্যা আহমেদ, আপনি বলেছেন,
এটা মনে হয় বাইরে, ভিতরে মেলাবার, চাইবার তীব্র বাসনা কাজ করে, প্রকাশে সেটাকে মেলানো যায় না।
ফরিদ আহমেদ, উপন্যাস লিখুন।
স্পষ্টতই আপনি কবিতার লোক। শুধু নিজের লেখাতেই নয়, পাঠকের মধ্যেও অক্লেশে ছন্দ-সঞ্চারণে আপনার ক্ষমতা বিস্ময়কর, যেটা পাঠকদের মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার। কিন্তু আমি আপনার লেখার প্রথমাংশে এবং কিছু মন্তব্যে উপন্যাসের উপকরণ দেখছি। কবিতাকে সংহত করে গদ্যই লিখে ফেলুননা।
ফরিদ ভাই,
জীবন থেকে উঠে আসা কষ্টগুলো যে মহৎ সাহিত্যে পরিণত হয় আবারো বুঝতে পারলাম আপনার লেখা পড়ে। না পাওয়ার যন্ত্রণা এক ধরনের। আবার পেলেও হারানোর ভয় এসে ঘিরে ধরে। নইলে কেন বলতে হয় ‘তোমাকে দেবো না হারাতে’?
@প্রদীপ দেব,
যতই বলি না কেন যে কল্পনার কোন সীমা-পরিসীমা নেই, মানুষের কল্পনা আসলে সীমাবদ্ধই। সব মহৎ সাহিত্যের পিছনেই লেখকের অভিজ্ঞতাটা কোথাও না কোথাও ঠিকই থেকে যায়। অভিজ্ঞতাহীন লেখক যতই সৃষ্টিশীল আর শক্তিশালী হোক না কেন, তাঁর লেখাতে খামতিটা সেকারণে থেকেই যাবে। অনভিজ্ঞ পাঠককে হয়তো ফাঁকি দেয়া যায় কথার বুননে, কিন্তু অভিজ্ঞ পাঠকের শক্তিশালী চোখে সেই ফাঁকিবাজি ঠিকই ধরা পরে যায়।
আমি সাহিত্যিক নই, সাহিত্য রচনার কোন দূরাশাও করি না কখনও। মুক্তমনার মাধ্যমে নিজের ভাবনাগুলোকেই শুধু সহভাগিতা করি সমমনা মানুষদের সাথে।
@ ফরিদ আহমেদ,
এইটা একটা কবিতার নাম।“অম্লকান্তি রদ্দুর হতে চেয়েছিলো” এইটা অজিত পানডে গান হিসাবে গেয়েছেন। তাই না?
@আফরোজা আলম,
হ্যাঁ ওটা একটা কবিতার অংশ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা। পুরো কবিতাটা নীচে দিয়ে দিলাম।
অমলকান্তি
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
অমলকান্তি আমার বন্ধু,
ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।
রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না,
শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে
এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!
ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জাম আর জামরুলের পাতায়
যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।
আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে;
চা খায়, এটা-ওটা গল্প করে, তারপর বলে, “উঠি তাহলে।”
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
আমাদের মধ্যে যে এখন মাষ্টারি করে,
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,
উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।
অথচ, সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সেই অমলকান্তি–রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে
ভাবতে-ভাবতে
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
ফরিদ ভাইএর লেখা টি বেশ কয়েক বার পড়লাম।
এই ধরনের লেখায় কোন লেখক যখন লিখতে বসেন, তখন উনি এক অন্য জগতে প্রবেশ করে যান যা পাঠকদের বেশী ভাগ সময়েই প্রবেশ করা সম্ভব হয়না। তাই বিভিন্ন পাঠক বিভিন্ন মানে করেন। সব মানে গুলই ঊপভগ্য।
লেখাটি আত্যন্ত রোমান্টিসিজমে ভরা কিন্তু এই রোমান্টিসিজমের ভিতরেও কড়া বিষাদের গন্ধ।বুঝতে পারছি আবার যেন কেমন বুঝতে পারছিনা।পড়তে ইচ্ছা করছেনা আবার যেন পড়তে ইচ্ছা করছে। এই খানেই লেখকের লেখার ‘ম্যগনেটিজম’ ।
@সেন্টু টিকাদার,
এই লেখাটা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অসম ঘনত্ববিশিষ্ট দুটি কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। আপনি খুব সাফল্যজনকভাবে অপেক্ষাকৃত ঘনটাকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন।
এই কথাটা আমি আগে কোথাও পড়েছি। বাদবাকি লেখা ভালো লাগলো। সাহিত্যের ছোঁয়া আছে পুরোটায়।
@আফরোজা আলম, এটা কবিতা, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর
অমলকান্তি আমার বন্ধু,
ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম।
রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না,
শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে
এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি সে-সব কিছু হতে চায়নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!
ক্ষান্তবর্ষণ কাক-ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জাম আর জামরুলের পাতায়
যা নাকি অল্প-একটু হাসির মতন লেগে থাকে।
আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সে এখন অন্ধকার একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে;
চা খায়, এটা-ওটা গল্প করে, তারপর বলে, “উঠি তাহলে।”
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।
আমাদের মধ্যে যে এখন মাষ্টারি করে,
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,
উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।
অথচ, সকলেরই ইচ্ছেপূরণ হল, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সেই অমলকান্তি–রোদ্দুরের কথা ভাবতে-ভাবতে
ভাবতে-ভাবতে
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
ওহো, লেখক আগেই লিংক দিয়েছেন
ফরিদের কিছু কিছু লেখায়, কোন কোন মন্তব্যে দুঃখবোধের গভীরতর দীর্ঘশ্বাসের আভাস পাই। তোমাকে দেবো না হারাতে লেখায়ও এরই অনুরণন। লেখাটি পড়ে নির্মলেন্দু গুণের একটি কবিতা মনে পড়ে গেল ——-
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই৷
হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি৷
তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই৷
তখন আমি একটু ছোঁব,
হাত বাড়িয়ে জাড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরনী নায়ে৷
নায়ের মাঝে বসব বটে,
না-এর মাঝে শোব৷
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ,
দু:খ দিয়ে ছোঁব৷
তুই কেমন করে যাবি?
অনেকে হয়ত ফরিদের লেখার সাথে গুণের এ কবিতার উদ্ধৃতি কেন এবং কীভাবে মেলালাম সে প্রশ্ন তুলবেন । এখানে আমার কোন উত্তর নেই।
আপনার একজন হাতের কাছে বন্ধু আছে, আমার তো সেরকম আষ্টেপিষ্ঠে ঘনিষ্ট বন্ধু তেমন কেউই নেই। অথবা, বন্ধু আছে, সুচিরসঙ্গী নেই। নেই এমন কেউ যার সাথে ভাগাভাগি করা যায় সবকিছু, সবকিছুই।
আমিও হয়তো বলতে পারবো না নিজের সব না বলা কথা; ব্যর্থ চেষ্টাই করছি গত তিন বছর ধরে। তারপরও আশা, হয়তো একদিন, হয়তো একদিন…কিন্তু, হায় এতোদিন, এতোদিন…তবুও…বৃথাই আশা, বৃথা খেলা, বৃথা মেলা, বৃথা বেলা গেল ভাসি…আর আবাহন নয়, আশা নয়, মনকে বলি, আর নয় সুযোগ, এবার চলো বোঁচকা কাঁধে শেষ পারানির কড়ি গুনতে গুনতে সূর্যাস্তের দিকে…আর কি, আর কতো…
কামনা করি যেন পেয়ে হারানোর বেদনা আপনাকে বিদ্ধ না করে নিরন্তর।
আপনার বন্ধুপ্রেমের উদ্দেশে একটি কবিতা:
মুকুল যখন ভাসে
তখন চোখের পাতায়
দু’একটি জলবিন্দু এসে
মার্জনা চায়
দু’একটি জলবিন্দু তখন
চোখের আলোয়
দুর্বল সেই দীপকে বলে,
“আমায় জ্বালো”…
জ্বালতে জ্বালতে দীপ নিজেকেই
জ্বালায় পোড়ায়
পুড়তে পুড়তে আকাশতীরের
বন্ধুকে পায়
বন্ধু তাকে ঝড়বাদলে
আগলে রাখে
কাছে পেয়েও বন্ধুকে সে
স্বপ্নে ডাকে
স্বপ্নটিকে সত্যি করে
মুকুল ভাসায়
বন্ধুটি তার চোখের পাতায়
হাতের পাতায়…
[মুকুল যখন ভাসে: জয় গোস্বামী]
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
দুই যখন এক এর মাঝে বিলীন হয়ে যায়, তখন এমনই হয়। এ চাওয়ার শেষ নেই, এ পাওয়ার শেষ নেই। কবিতাটি আগে কোথাও পড়িনি, বার কয়েক পড়লাম। এখানে তুলে দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
ফরিদ ভাই, সব ত্যাগ, সব হারানোর বিনিময়ে যাকে পাওয়ার তাকেই পেলেন, এমন চাওয়া সকলে চাইতে পারেনা। জগতের সকল পাওয়ার উপরে যাকে স্থান দিলেন, সে অধরা যখন ধরাই দিল ধরা দেয়ার মত, তখন আর গানের বীণার তারে তারে এ করুণ সুর উঠবে কেন? স্বর্গ রাজ্যের হৃদমন্দিরে এবার তার পুজো হবে, যে পুজোর শেষ নেই, সেখানে মর্ত্যলোকের আবর্জনার কোন স্থান নেই।
আর শুনতে চাইনা এমন কবিতা-
আয় দুঃখ, আয় তুই,
তোর তরে পেতেছি আসন,
হৃদয়ের প্রতি শিরা টানি টানি উপাড়িয়া
বিচ্ছিন্ন শিরার মুখে তৃষিত অধর দিয়া
বিন্দু বিন্দু রক্ত তুই করিস শোষণ;
জননীর স্নেহে তোরে করিব পোষণ।
হৃদয়ে আয় রে তুই হৃদয়ের ধন। (দুঃখ-আবাহন)
কিংবা-
ওরে আশা, কেন তোর হেন দীনবেশ!
নিরাশারই মতো যেন বিষণ্ন বদন কেন —
যেন অতি সংগোপনে
যেন অতি সন্তর্পণে
অতি ভয়ে ভয়ে প্রাণে করিস প্রবেশ।
ফিরিবি কি প্রবেশিবি ভাবিয়া না পাস,
কেন, আশা, কেন তোর কিসের তরাস।
আজ আসিয়াছ দিতে যে সুখ – আশ্বাস,
নিজে তাহা কর না বিশ্বাস,
তাই হেন মৃদু গতি,
তাই উঠিতেছে ধীরে দুখের নিশ্বাস।
বসিয়া মরমস্থলে কহিছ চোখের জলে —
“ বুঝি হেন দিন রহিবে না,
আজ যাবে, আসিবে তো কাল,
দুঃখ যাবে, ঘুচিবে যাতনা। ”
কেন, আশা, মোরে কেন হেন প্রতারণা।
দুঃখক্লেশে আমি কি ডরাই,
আমি কি তাদের চিনি নাই।
তারা সবে আমারি কি নয়।
তবে, আশা, কেন এত ভয়।
তবে কেন বসি মোর পাশ
মোরে, আশা, দিতেছ আশ্বাস।
বলো, আশা, বসি মোর চিতে,
“ আরো দুঃখ হইবে বহিতে,
হৃদয়ের যে প্রদেশ হয়েছিল ভস্মশেষ
আর যারে হত না সহিতে,
আবার নূতন প্রাণ পেয়ে
সেও পুন থাকিবে দহিতে
করিয়ো না ভয়,
দুঃখ – জ্বালা আমারি কি নয়?
তবে কেন হেন ম্লান মুখ
তবে কেন হেন দীন বেশ?
তবে কেন এত ভয়ে ভয়ে
এ হৃদয়ে করিস প্রবেশ? (আশার নৈরাশ্য)
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
সামান্য যে দুই একজনের বাংলার উপর বর্ণনাতীত বজ্রমুষ্ঠি দেখে বিমুগ্ধ হই, আপনি তাঁদের মধ্যে একজন। এরকম মুক্তোদানার মত শব্দকে গেঁথে গেঁথে ভাষার মালা বানাতে খুব কম লোককেই দেখেছি আমি।
মাঝে মাঝে শুধু মন্তব্য করে শক্তিক্ষয় না করে, আপনার উচিত নিয়মিত লেখা। আর অবশ্যই সেটা নিজের নামে, এরকম একটা পঁচা সাবান মার্কা পঁচা নামে নয়।
@ফরিদ আহমেদ,
স হ ম ত :yes: :yes:
ফরিদ ভাইয়ের লেখাগুলো সবসময়ই ভালো লাগে। এ লেখাটি আগে কোথাও পড়েছি বলে মনে হচ্ছে। গান দুটোও শুনলাম।
আমার মনে হয় ‘কোনো’ বানানটি ‘কোন’ লেখা ঠিক না (যদিও এভাবে লেখা অশুদ্ধ নয়)। উচ্চারণ ‘কোন(kon)’ না ‘কোনো(kono)’ তা ঠিক করতে গিয়ে অনেক সময় বিপত্তি দেখা দেয়। মাঝে মাঝে পুরো বাক্য বা বাক্যের কিছু অংশ পড়ে নিশ্চিত হতে হয়।
বাংলা একাডেমী অভিধানে বানান দেয়া আছে “কাঙ্ক্ষিত” (ঙ্ক্ষ = ঙ+ক্ষ)
বাংলা একাডেমী অভিধানে বানান দেয়া আছে “কাহিনী”।
@সৈকত চৌধুরী,
ফরিদ ভাইয়ের কোন লেখা পড়তে গেলেই আমি ম্যাগিনফাইং গ্লাস হাতে নিয়ে বসি। উদ্দেশ্য বানান ভুল ধরা। কিছু কিছু মানুষকে কথা বলাতে হলে খোঁচাখোঁচি করতে হয়, এতে কোন গোনাহ হয়না বরং সোয়াব হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আপনার উল্লেখিত এই বানান ‘কোন’ ‘কাহিনি’ ‘অনাকাঙ্খিত’ গুলোকে ভুল বলা সম্ভব হলোনা। বিবর্তনের ধারায় বানানগুলো আমার মনে হয় এভাবেই সর্বস্থরে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যাবে। ঢিল তো একটা দিলাম, দেখা যাক কিছু বেরিয়ে আসে কি না।
@আকাশ মালিক,
স্কুলে থাকতে স্যারের ভুল ধরে মজা পেতাম, এখনো সে অভ্যাস রয়ে গেছে কি না। তবে এখানে আমি কিন্তু বানানগুলো ভুল হয়ে গেছে তা বলি নি। 😉
@আকাশ ভাই,
খামোখাই বলছেন এগুলো। বিশাল বিশাল বানান ভুল করে মুক্তমনার বানান পুলিশদের হাতে কমতো নাজেহাল হইনি আমি। 🙁
@সৈকত চৌধুরী,
আগে পড়ার কথা নয়, আজকে সকালেই লিখেছি লেখাটা। তবে এই লেখার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ ‘এই জীবনে কিছুই হতে চাই নি আমি। না মেঘ, না বৃষ্টি, না ছায়া, না রোদ্দুর, না সমুদ্দর, না জল, না নীল, না পাখি, না আকাশ। কোন কিছুই নয়।’ হয়তো আগে পড়ে থাকতে পারেন। গীতাদির তখন ও এখন (৩৭) এ আমি একটি মন্তব্য করেছিলাম। সেই মন্তব্যে এই দুটো লাইন আছে।
আরেকটি বিষয় হতে পারে এই লেখায় আমার অতীতের যে অংশটা এসেছে তা আমি আমার ঘাসের বনে ছোট্ট কুটির লেখাতেও উল্লেখ করেছিলাম। হয়তো ওটাই আপনার অবচেতন স্মৃতিতে রয়ে গেছে।
যেটাই হোক না কেন, আপনার স্মৃতিশক্তির প্রশংসা না করে পারছি না।
যে তিনটে বানান ভুল ধরেছেন তার দুটোতে আমার কোন আপত্তি নেই। কোনো-টাই আসলে সঠিক বানান হবে। কোন ব্যবহার হয় বিশেষ কিছু জানার জন্য যে প্রশ্ন করা হয় সেখানে। যেমন, কোন পথে যাব? বা কোন তারিখে ঘটনাটা ঘটেছে?
কাহিনি বানানের ক্ষেত্রে আমি আমার অবস্থান ধরে রাখবো। বানানের শুদ্ধতা-অশুদ্ধতা যাচাইয়ে আমি ২০০৮ সালে প্রকাশিত বাংলা একাডেমীর বাংলা বানান অভিধান ব্যবহার করি। বাংলা একাডেমীর পুরোনো অভিধানে যে কাহিনী লেখা আছে সেটা আমি জানি। আমার কাছে ১৯৯৩ সালের একটা অভিধান আছে। সেখানেও ভুল বানানটাই আছে।
কাহিনি বানান নিয়ে অভির সাথে একটা বাগবিতণ্ডা হয়েছিল আমার এখানে। দেখতে পারেন, বিস্তারিত জানতে পারবেন।
@ফরিদ আহমেদ,
বুক ভারী হয়ে গেছে।কথার শব্দমালা চিন্তা-মন থেকে বোবা বনে পাথর হয়ে গেছে। :brokenheart:
মনের কথা বলেছেন। 🙂
কিন্তু শেষতঃ আপনি ভাগ্যবান এই জীবনে এমন বন্ধু পেয়েছেন। এ যেন শত জনমের সাধনা। :rose2:
সাবিনা ইয়াসমিনের গানটা কি ববিতা-রাজ্জাকের করা ” অনন্ত প্রেম ” ছবির ??? যৌবনের পারম্ভে দেখা আমার জীবনের একটি সেরা ছবি এটি। গতকাল থেকে মনে হয় এ গানটা ৫০ বার শুনেছি।যতবার শুনি ততবার শুধু মন-প্রান ছুঁয়ে যায়। এ গানটির জন্য আপনাকে এক হাজারটা গোলাফ শুভেচ্ছা রলো।
শেষতঃ আপনার তুলনা আপনি নিজেই।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
ধন্যবাদ মামুন ভাই।
ঠিক ধরেছেন। এটা অনন্ত প্রেম ছবির গান। সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া অন্যতম সেরা একটি গান, কিন্তু খুব একটা জনশ্রুত না।
সাবিনার গাওয়া এরকমই আরেকটি গান ‘এই উতলা রাতে কেন যে’। অসাধারণ, কিন্তু অজনশ্রুত। শুনে দেখুন, ভাল লাগবে বলেই আশা রাখছি।
httpv://www.youtube.com/watch?v=VLa4-X7kN_g
@ফরিদ আহমেদ,
আসলেই অসাধারন আরও একটি গান।সাবিনার পরে যখন রুনা লায়লার জয়-জয়কার অবস্থা তখন কে কত বড় শিল্পী তা নিয়ে আমাদের ভাই-বোন দের মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটি বা এক একসময় তা ঝড়গাঝাটিতে রূপ নিতো।তবে আমি সারা জীবন সাবিনার জাদু ছোঁয়া সুরেলা কন্ঠের একজন প্রিয় ভক্ত।
আধুনিক বা সিনেমার গান ছাড়াও তার দেশাত্ববোধক গান শুনলে কার না মনে ভালো লাগার ছোঁয়া লাগে !!অথচ এমন গুনী জাতীয় শিল্পীর যখন ক্যান্সার হয় তখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কি নাজুক বিমাতাসুলভ আচরন হয় তা আমরা তার বেলায় দেখেছি।
ভালো থাকুন।
@ফরিদ আহমেদ,
উদাহরণটা এভাবে দিলে কেমন হয়?
কোন্ দিন আসিবেন বন্ধু কইয়া যাও—-
কোনদিন যারে তুমি দাওনি মালা—
এ জন্যে বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেই।
এ জন্যে কোন্ ব্যবস্থা নেয়া ভাল?।
হসন্ত চিহ্ন ( ্ ) কি বিলুপ্ত হয়ে গেল?
@আকাশ মালিক,
বাংলা একাডেমীর প্রমিত বাংলা বানানের ২.১৫. তে হস্-চিহ্ন সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
হস্-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমনঃ কাত, মদ, চট, ফটফট, কলকল, ঝরঝর, তছনছ, জজ, টন, হুক, চেক, দিশ, করলেন, বললেন, শখ, টাক, টক। তবে যদি ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকে তাহলে হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনঃ উহ্, যাহ্।
যদি অর্থের বিভ্রান্ত্রির আশঙ্কা থাকে তাহলেও তুচ্ছ অনুজ্ঞায় হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনঃ কর্, ধর্, মর্, বল্।
:yes:
ফরিদ ভাই,
এরপর আর কোন কথাই থাকে না 🙂 তাহলে আর জীবন ব্যর্থই বা হয় কীভাবে, আর এতো ক্লান্তিই বা কেন আসবে। এরকম ‘বন্ধু’ পাওয়ার পর এসব সাময়িক ক্লান্তি বা বিরক্তি পাত্তা দেয়াই তো উচিত না!
আমরা অনেক সময়ই বহু কিছু ফর গ্র্যান্টেড ধরে নেই। বিশ্বাস করুন, জীবন অশ্লীল ধরনের অনিশ্চিত। ‘বন্ধু’কে হারাতে না চাইলে, যা করতে হয় করে ফেলাই ভালো। কে বলতে পারে, সামনে আর সময় পাওয়া যাবে কি যাবে না!
[আপনি ক্যারিয়ার বা ঐরকম পার্থিব বিচারে কী হয়েছেন বা কী হন নি আমি জানি না, কিন্তু যা (বা যাকে) পেয়েছেন সেটার চাইতে বড় অর্জন চাইবেনই বা কেন? :-)]
@স্নিগ্ধা,
জীবন ব্যর্থ হয়েছে কি না জানি না, তবে সফল যে হয় নি সেটা খুব ভাল করেই বুঝি। দুঃখটা ঠিক সে জায়গায় নয়। সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে চুলচেরা বিচার আমি করি না। কিন্তু বিচারে মানদণ্ডটা যখন অন্যের হাতে তখনই বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
জীবনের অশ্লীলতা যে কী রকম ভয়াবহ তা খুব ভাল করেই জানি আমি। সবকিছু সব জায়গায় খোলাখুলি বলা যায় না বলেই ওগুলো গোপনই থেকে যাবে আজীবন।
ঠিকই বলেছেন, সামনে সময় হয়তো আর নাও পাওয়া যেতে পারে। কত ছোট্ট একটা জীবন আমাদের, তাই না? কত কত কিছু না করেই অতৃপ্তির একটা বিরাট বোঝা ঘাড়ে নিয়ে অন্যলোকে যাত্রা শুরু করতে হবে যে কোন একদিন।
বিচলিত সময়ে পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনার অন্যরকম লেখাটি মন ছুঁয়ে গেল। অনেক শুভ কামনা। :rose:
[img]httpv://www.youtube.com/watch?v=8Z78ENYq4Sg&feature=related[/img]