বইমেলা সামনে। কাজের চাপে আর কাজ শেষ করার চাপে ঘাড় সোজা করার জো নেই। সেই ব্যস্ততার দিনগুলোতে একদিন সকাল এগারোটা বারোটার দিকে দুইজন তরুণ আসলেন আমার অফিসে। লালমাটিয়ার অফিসে। এসে পরিচয় দিলেন, আমরা রূপবান গ্রুপ থেকে এসেছি। এদের একজন তনয়, আরেকজন জুলহাজ বা অন্য কেউ, নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না। সম্ভবত তাদের সাথে আরো কেউ একজন ছিলেন। তারা তাদের পরিচয় দিয়ে বললেন, রূপবান গ্রুপের মুখপত্র হিসাবে রূপবান নামে তারা একটা ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যা প্রকাশ করেছেন, এখন দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন। আমাকে তারা প্রথম সংখ্যাটি দেখালেন এবং একটি কপি উপহার দিলেন। সেদিনই আমি জানলাম রূপবান গ্রুপ বা্ংলাদেশে সমকামিদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অবশ্য এর আগে আমার অফিস যখন আজিজ মার্কেটে ছিল, তখন একজন সমকামি এক্টিভিস্ট (নাম উল্লেখ করা ঠিক হবে না) আমাকে বাংলাদেশে সমকামিদের অধিকার বিষয়ে একটা ছোট স্টাডি নোট দিয়েছিলেন। তো তনয় এবং জুলহাজ বললেন, তারা এখন দ্বিতীয় সংখ্যাটি প্রকাশ করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আগে যে প্রেসে ছেপেছিলেন সেই প্রেস এখন আর ছাপতে রাজি হচ্ছে না। এমনকি আরো দুএকটি প্রেসে তারা গিয়েছিলেন কিন্তু ম্যাগাজিনের বিষয়বস্তু দেখে কেউই রাজি হচ্ছেন না। এজন্যই তারা অভিজিৎ রায়ের সমকামিতা বইয়ের প্রকাশকের কাছে এসেছেন, রূপবান ম্যাগাজিনটি প্রকাশ করার একটা উপায় বের করার জন্য। আমি দায়িত্ব মনে করে উপায় বের করতে সহযোগিতা করলাম এবং ম্যাগাজিনটি প্রকাশিত হলো। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে আমি কেন দায়িত্ব মনে করলাম; এমন তো না যে আমি নিজে সমকামি। আমি নিজে সমকামি না তবে আমি চাই বৈচিত্রপূর্ণ শারীরিক-মানসিক গঠনের সকল মানুষই যেন তার অধিকার নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। অনেকদিন পর আবার একদিন তনয় এসে হাজির। এবার তারা রূপবান গ্রুপের সদস্যদের কবিতা নিয়ে একটি কবিতা সংকলন করতে চায়। অনুরোধ করলো শুদ্ধস্বর যেন এই সংকলনের প্রকাশক হয়। আমি সাথে সাথেই সম্মতি দিয়ে দিলাম। “রূপঙক্তি” নামে কবিতার সংকলনটিও প্রকাশ হয়েছিল। দুই হাজার পনেরো সালের ফেব্রুয়ারি বইমেলার ২৬তারিখ সন্ধ্যায় এই বইটির মোড়কও উন্মোচিত হয়েছিল অভিজিৎ রায়ের হাতে। (অবশ্য এই বইটির মোড়ক উন্মোচন আরো একদিন হয়েছিল রূপবান গ্রুপের সদস্যদের উপস্থিতিতে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি তাদের আরেকটি অনুষ্টান থাকায় সেদিন তারা আসতে পারেননি)। তারপরের ঘটনা তো সবই আমাদের জানা। সেই ২৬ তারিখেই হত্যা করা হলো অভিজিৎ রায়কে। তারপর একে একে অনন্ত-বাবু-নীল…। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমি জানতে পারি, আমার নামেও মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কাছে গিয়ে এসব কাজ এদেশে না করাই ভাল জাতীয় উপদেশ শুনার পর এক দুর্বিষহ আতংকের জীবন যখন কাটাতে হচ্ছিল তখন রূপবান গ্রুপ নিয়মিত আমার খোঁজ-খবর নিয়েছে, সহমর্মিতা দেখিয়েছে। ২০১৫র ৪এপ্রিল তারিখে রূপবান গ্রুপের উদ্যোগে একটা রেইনবো র্যালি হয়েছিল ঢাকায়। ২০১৫র রোজার মাসে জুলহাজের কলাবাগানের বাসায় একটা ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। সেই প্রোগ্রামে অনেক দেশের কুটনীতিবিদরা যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৬তেও নববর্ষের দিনে একটা র্যালির উদ্যেগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু এসব কাজ এই দেশে করাটা আসলেই দুরুহ। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সমাজের বাইরে একটা আলগা সামাজিক কাঠামো আছে, সেটা হলো রাজনৈতিক-ধর্মীয় কাঠামো। এই আলগা কাঠামো সবসময়ই সাধারণ মানুষের সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। এবং রাষ্ট্র ও সরকার আলগা কাঠামোকে অবলম্বন করেই শাসন কার্য পরিচালনা করে। তো এই আলগা কাঠামোর ইঙ্গিতে আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিষেধাজ্ঞার কারণে সেবার র্যালিটি আর হয়নি। তারপর সেই নির্ধারিত দিন থেকে মাত্র দশ দিনের মাথায় ২৫এপ্রিল নির্মম ও নৃশংসভাবে জুলহাজ এবং তনয়কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
সমকামিতা কোনো অপরাধ হতে পারে না। লিঙ্গ বৈচিত্র ,সমপ্রেম একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এটা কোনো সামাজিক অসংগতি বা অপরাধ না। সংখ্যায় যত ছোটই হোক না কেন, এই শ্রেণির মানুষদেরও আছে স্বাভাবিক জীবনের অধিকার। রূপবান গ্রূপ বা জুলহাজ-তনয়রা এই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক বিষয়টি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টাটাই করছিলেন। কেননা এটা কোনো লুকিয়ে রাখার মতো গোপন ব্যাধি না। যেনো সমাজ কাঠামো এবং সমাজের মানুষজন সমপ্রেমিদের প্রতি স্বাভাবিক আচরণ করেন এবং তাদের অধিকার হরণ না করেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতির আপোষকামিতা আশ্চর্যজনক ভাবে শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের আবেগকে উসকে দেয়ার মাধ্যমে তথাকথিত জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য একটা অপ্রয়োজনীয় আলাদা কাঠামোকে গড়ে তুলেছে, পৃষ্টপোষকতা করেছে এবং টিকিয়ে রেখেছে। আমরা জানি বাংলাদেশে এই আলাদা কাঠামোটি কারা নিয়ন্ত্রন করে, কারা এটিকে দাবার চালের গুটি হিসাবে ব্যবহার করে। এই আলগা কাঠামোর মূল অস্ত্র হলো ধর্ম। গত ত্রিশ চল্লিশ বছরের পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় ধর্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতি-সন্ত্রাস-আধিপত্য আর লুটপাটের যাবতীয় আয়োজনকে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে এই কাঠামো। সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা, তাদের কাছে বিজ্ঞানসম্মত তথ্য পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার মাধ্যমেই সম্ভব আলগা কাঠামোর খোলস ভাঙা। বাংলাদেশের মানুষকে সমকামিতা সম্পর্কে যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত ধারনা দিয়ে সচেতন করে তোলার ব্যাপারে সবচেয়ে যুগান্তকারি ভুমিকা রেখেছিলেন ড. অভিজিৎ রায়। তিনি সমকামের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করে বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম সমকামিতা নামে একটি বই লিখেছিলেন। আমার সুযোগ হয়েছিল বইটির প্রকাশ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার এবং প্রকাশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পারার। বইটি লেখা ও এর প্রকাশ নিয়ে রূপবান ম্যগাজিনকে দেয়া একটা সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ রায় বলেছিলেন,
আসলে এ নিয়ে বই লেখার ইচ্ছে আমার প্রথম থেকে ছিল না। আমি নিজে একজন বিজ্ঞান লেখক। বিজ্ঞানের টুকিটাকি বিষয় নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বহু আগে থেকেই লিখতাম। সেসময় একটি ব্লগ-সাইটের পোস্টে একজন মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘সমকামিতা প্রাকৃতিক কোনোভাবেই হতে পারে না মূলত (নারী-পুরুষে) কামটাই প্রাকৃতিক’। বস্তুত এর উত্তর দিতে গিয়ে আমাকে কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তির অবতারণা করতে হয়, এবং এ নিয়ে আমি একটা পূর্ণাঙ্গ লেখা লিখি। তারপর ব্যাপারটাকে বিস্তৃত করতে গিয়ে আরো কয়েকটি পর্বের অবতারণা করতে হয়। লেখাগুলোর শিরোনাম ছিল – ‘সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক আলোচনা’। দেখলাম যে, আমার লেখাগুলো পাঠকদের ভাল লাগছে। অনেকেই ভিন্ন বিষয় নিয়ে গঠনমূলক প্রশ্ন করেছেন। যে ব্যাপারগুলো রাষ্ট্রীয় মিডিয়াগুলোতে অনুপস্থিত ছিল, ঢেকে রাখা হয়েছিল অদৃশ্য কালো চাদরে, সেগুলোই এক ধরণের আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিচ্ছে ব্লগগুলোতে। অনেকেই এ নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন, আমিও আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান এবং পড়াশোনা থেকে উত্তর দিতে সচেষ্ট হচ্ছিলাম। বই প্রকাশের ক্ষেত্রটা তৈরি হয়েছিল সেসময়ই, যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম না, এই ‘ট্যাবু টপিক’ নিয়ে দেশের কোন প্রকাশক বই প্রকাশ করতে সম্মত হবেন কিনা।
এই ব্যাপারটা সহজ করে দিলেন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর তরুণ প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল। আমাকে ইমেইল করে উনি নিজে থেকেই আমার কাছে একটি বিজ্ঞানের বইয়ের পাণ্ডুলিপি চাইলেন। আমি বললাম, পাণ্ডুলিপি একটা আছে বটে, কিন্তু একজন সাহসী প্রকাশক লাগবে। উনি বিনীত ভাবে জানালেন, প্রকাশক হিসেবে তার সফলতা কতটুকু তা তিনি জানেন না, কিন্তু স্রোতের বিপরীতে বই ছাপানোর সাহস তাঁর আছে। উনি ‘সমকামিতা’ পাণ্ডুলিপিটি প্রকাশের জন্য মনোনীত করলেন, এবং ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বইটি প্রকাশিত হলো ‘সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ শিরোনামে। আর ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে বইটির দ্বিতীয় (পরিবর্ধিত) সংস্করণ শুদ্ধস্বর থেকেই।
একই সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ আরো বলেছিলেন, “বইটি যে বছর প্রকাশ করা হয়েছিল, তার পরের বছরই একটি পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ মন্তব্য করেছিলেন, ‘[শুদ্ধস্বরের] অনেক বইই পাঠক পছন্দ করেছে। সমকামিতা বইটি নিয়ে ব্যাপক পাঠকের আগ্রহ লক্ষ্য করেছি’। বস্তুত আহমেদুর রশীদ পুরো সাক্ষাৎকারে একটি বইয়ের নামই উল্লেখ করেছেন, আর সেটি ছিলো আমার বই সমকামিতা। এর পর যতদিন গেছে আরো অনেক আশাপ্রদ ঘটনা ঘটেছে। যেমন, বইয়ের প্রথম প্রকাশের পর বইটির ভাল কিছু রিভিউ আমার নজরে পড়েছে। প্রথম আলো পত্রিকায় ২০১০ সালের অগাস্ট মাসের ৬ তারিখে আলতাফ শাহনেওয়াজ ‘অবগুণ্ঠন সরে গেল’ নামের চমৎকার একটি শিরোনামে রিভিউ করেছেন বইটির। সমকামিতার মত ব্যাপার যা এখনো আমাদের সমাজে ‘অচ্ছুৎ’ বলেই বিবেচিত, সে ধরণের বিষয় প্রথম আলোর মত মূলধারার পত্রিকায় নিবন্ধিত হওয়া নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ এবং সেই সাথে প্রেরণাদায়ক। বইটির আরেকটি মূল্যবান এবং সুবিস্তৃত রিভিউ প্রকাশিত হয়েছে সুসাহিত্যিক আহমদ মাযহার সম্পাদিত ‘বইয়ের জগৎ’ পত্রিকায়। অঞ্জন আচার্যের করা সেই রিভিউটির শিরোনাম ছিল – ‘বিজ্ঞানমনস্ক উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সমকামিতা’। বইটি প্রকাশের পর থেকেই একাডেমিয়াতে, ব্লগে কিংবা ম্যাগাজিনে আমার এই বইটিকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্লগে এবং ফেসবুকেও বইটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।”
আজ তাত্ত্বিক অভিজিৎ রায় নাই, এক্টিভিস্ট জুলহাজ-তনয় নাই। যারা আছেন তাদেরকে বাধ্যতামূলক আত্মরক্ষার প্রতিবেদন লিখতে হচ্ছে। কিন্তু এটা মানতেই হবে এদের লেখা, এদের কার্যক্রম অনেক ভীষণ রকমভাবে বাংলাদেশের সমাজকে নাড়া দিয়ে গেছে। আলগা কাঠামোর খোলসের নিচে এই নাড়িয়ে দেয়ার মধ্য দিয়েই মূলত নিকটবর্তী হবে জনতার মুক্তি, জনতার প্রগতি। ধর্ম ও সংস্কারের যে জুজু মানুষকে মানুষের নিজের কাছে পরাধীন করে রেখেছে, নড়ে উঠা মানুষরা্ই সেই শৃঙ্খল ভেঙে মানুষকে নিয়ে গড়ে তুলবে মুক্ত বুদ্ধির মুক্ত সমাজ। সেই নতুন সমাজের, নতুন পৃথিবীর মাইল ফলক হিসাবে অভিজিৎ-জুলহাজ-তনয়দের নামই প্রোথিত হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে।
টুটুল ভাই, অনেক ধন্যবাদ এমন একটা লেখা পোস্ত করার জন্যে। এই লেখার মাধ্যমে আপনি না জানালে জানতেই পারতাম না কোন কিছু। অনেক সাহস আর অনেক ঝুকির কাজ করেছেন সন্দেহ নেই। কিন্তু যারা এখন দেশে প্রগতির পথে, আলোর পথে চলছে, তারা কি আপনার এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে?
ধন্যবাদ পেছনের কিছু কথা জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আপনি সাহসী মানুষ, আর সমাজের বদল আপনাদের মত সাহসী মানুষদের হাত ধরেই হয়।
চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ টুটুল ভাই। অভিজিৎ দা’র ‘সমকামিতা’ বইটি নিয়ে এ পর্যন্ত কম আলোচনা হয় নি, ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় আলোচনাই হয়েছে। প্রথমদিকে অনেক ‘মুক্তমনা’ বন্ধুরাও বইটির নেতিবাচক সমালোচনায় লিপ্ত ছিলেন। সেসময় সামহয়ার-ইন ব্লগে এ নিয়ে কয়েকজন রীতিমতো যুদ্ধও করেছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকেই অভিজিৎ দা’র মৃত্যুর পরে খোলস পাল্টেছেন! এগুলো হয়তো অনেকেরই মনে আছে। তখন অভিজিৎ দা জীবিত ছিলেন। আজ অভিজিৎ দা নেই, জুলহাজ, তনয়ও নেই। কিন্তু যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁদের জীবন দিতে হয়েছে; সে অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয় নি। বরং অধিকারের কথা বলার কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে খুন-খারাবি ও আইনের শিকল পড়িয়ে। এই অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আজও যারা লড়ে যাচ্ছেন তাদের লড়াইয়ে আমরা যেন পাশে থাকতে পারি সেদিকে সচেষ্ট থাকা উচিত।
আমি আশাবাদী বাংলাদেশেও একদিন সমপ্রেমের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, মুক্তচিন্তার জয় হবে।
আমাদের লক্ষ দুই বছরের প্রজাতিগত উপস্থিতিতে এমন কোন সময় হয়তো কখনো ছিলনা যখন আমরা কিছু না কিছু নিয়ে, কোন না কোন কারণে, কোন না কোন কিছুর জন্য সংগ্রাম করিনি, স্ট্যাটাস কো নিয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিলাম। সংগ্রামের ধরন হয়তো বদলেছে, সমাজ বদলেছে, মানুষগুলো প্রতিনিয়ত বদলেছে কিন্তু সংগ্রাম থামেনি। এই পৃথিবীতে বেশীরভাগ প্রাণীই হয়তো শুধু জৈবিক সংগ্রাম করে, আমরা তার চেয়ে অনেক বেশী কিছুর জন্য সংগ্রাম করি। আমাদের চেতনার বিবর্তনের সাথে এই প্রতিনিয়ত সংগ্রামের হয়তো একটা লিনিয়ার সম্পর্ক আছে। আমরা শুধু জৈবিক সংগ্রাম করেই খুশী থাকতে পারিনা, তার চেয়ে অনেক বেশী কিছু লাগে আমাদের।