লিখেছেনঃ আবু জাহেদ

প্রিয় ইসলাম দরদী বাংলাদেশের তৌহিদী জনগন, আপনারা এবার ইসলামী অসুন্দর জীবনের প্রস্তুত হয়ে যান। সিরিয়ার লোকজন না হয় ইউরোপ যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলো, আপনারা এখন কোন চুলায় যাবেন সেই চিন্তা করুন। ভারত মালাউনের দেশ; সেখানে তো আর যেতে পারবেন না এবং মায়ানমার (বার্মা) মুসলমানদের কেমন মহব্বত করে তা তো জানেন’ই, এখন কাছে পিঠে একমাত্র বঙ্গপোসাগরে ঝাপ দেওয়া ছাড়া আমি তো আর কোন পথ দেখিনে। কথাগুলি বলছি কেন ? কারণ কথাগুলি বলার দরকার। জঙ্গি আকাশ থেকে নাজিল হয়না ভিতর থেকেই তারা তৈরী হয়। কার ছেলে মেয়ে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি মাদ্রাসা থেকে গায়েব হয়ে কোথায় যেন চলে গেল, হঠাৎ আসলো কয় মাস পর। রাতের নিভৃত অন্ধকারে কোন মসজিদে গোপনে বৈঠক চলে, কোন আড্ডায় কি গোপন কি বলে বেড়ায়, কে জানে? কারা বাড়ি বাড়ি যেয়ে জেহাদী বই লিফলেট ক্যাসেট দিয়ে আসে – এই সমস্ত বিষয় কি আসলেই সমাজ জানেনা বা জানতো না ? এ কথা বললে কি কারো বিশ্বাস হয় ! এই সমস্ত লোকজন কি অন্যকোন সমাজ থেকে বাংলাদেশে এসেছে ? ইসলামী জঙ্গিবাদ ও গলা কাটা জেহাদীদের প্রতি বাংলাদেশী আলেম ওলামা ও মডারেট মুসলমান সমাজের নীরব সমর্থন, এ দেশে জঙ্গিবাদ উত্থান ও বিকাশের জন্য কি দায়ী নয়? বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ বিস্তারের কারণও রয়েছে, কিন্তু সমাজের এই নীরব সমর্থন যদি না থাকতো, বাংলাদেশীরা নিশ্চিত ভাবে জঙ্গিবাদের ভয়ঙ্কর দ্রুত উত্থানকে ঠেকাতে পারতো।

যখন একের পর এক মুক্তমনা লেখক ব্লগারদের গলা কাটা হচ্ছিলো, তখনও এদেশের বৃহৎতর সমাজের টনক নড়েনি বরং তারা আহলাদে ডগমগ হয়েছিলেন। একের পর এক হিন্দু পুরোহিতদের গলাকাটা চলছে, সাথে বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদেরও রেহাই নেই। এই সমস্ত প্রতিদিন চলা নিত্য গলা কাটার ঘটনাগুলি, এদেশের বৃহৎতর মুসলিম সমাজকে ভাবিত তো করেইনি বরং এই সমস্ত ঘটনাগুলি ছিলো তাদের কাছে বিধর্মীদের গলা কাটার উপভোগ্য বিষয়। অতএব তা নিয়ে চিন্তা করার , প্রতিবাদ করার প্রয়োজনীয়তা এরা কখনোই অনুভব করেনি। যে সমাজের বাস্তব অবস্থা এমন, তাদের দূরবস্থা ঠেকাবে কে ? ইচ্ছা করে কেউ মরতে ও মারতে চাইলে তাকে ঠেকাবার পথ কি? নেশাগ্রস্থ চোখ দিয়ে সিরিয়া আফগান ইরাকের অবস্থার দিকে দেখতে থাকুন, দেখুন, এবং সাথে সাথে দায়িত্ব জ্ঞ্যানহীন ভাবে গলা কাঁটা জিহাদীদের কর্মকান্ডগুলিকে নিরবে সমর্থন করে যান – তাহলে অচিরেই দেখতে পাবেন, ঘর বাড়ি ফেলে রেখে বৌ বাচ্চা মা বোন নিয়ে খালি পেটে আপনি রাস্তায়, এবং জীবনে বাঁচার জন্য বনে জঙ্গলে বর্ডারে বর্ডারে আপনি উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এইটা যে হবে, তা বোঝা যায় সমাজের এই ‘কিচ্ছু হয়নি’ গোছের মানসিকতা দেখলে। যারা স্পষ্ট অন্যায়কে অন্যায় আর ন্যায়কে ন্যায় বলার আগে ভাবতে বসে; বিচার করে যে সংশ্লিষ্টরা মুসলমান নাকি বিধর্মী, সেই সমস্ত মানুষের বুদ্ধি বিবেক আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করা যেতেই পারে। এটা অমূলক কিছু নয়।

বাংলাদেশের মডারেট মুসলমানরা মনে করে যে যেহেতু এই জঙ্গিগুলি কোন সহি মুসলমানকে মারেনি, সেহেতু তারা ভালো লোক। যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যে কিছু বাংলাদেশী শ্রমিক কে আই এস ধরেও ছেড়ে দিয়েছে, সেই কারনে তারা বন্ধু মানুষ। এই নির্বোধ সমাজের এই কথা বোঝার সাধ্য নেই যে , এই কাজগুলি তারা করছে কৌশল হিসাবে একটি বৃহত্তর ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠিকে দলে ভেড়াবার ইচ্ছায় । যে সমাজ হেজাদ ফি সাবিলিল্লা বলা মাত্র, কেন জেহাদ কিসের জিহাদ তা চিন্তা পর্যন্ত না করে নারায়ে তকবির দিয়ে রাস্তায় ঝাপ দিয়ে পড়ে, সেই সমাজ দূর্গতি এড়াবে কি করে?