প্রায় এক দশক হতে চললো, কিন্তু মনে হয় যেন এই তো সেদিনের ঘটনা! বিংশ শতাব্দীর এক্কেবারে প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা প্রথমবারের মত জানতে যাচ্ছি আমাদের নিজেদের শরীরের একান্ত গভীরে কোষগুলোর মধ্যে জিন বা বংশগতির এককের সংখ্যা কত! বিখ্যাত মনস্তত্ববিদ এরিক ফ্রম বোধ হয় ঠিকই বলেছিলেন, মানুষই একমাত্র প্রানী যার কাছে নিজের অস্তিত্বটাই যেন একটা বড় সমস্যা এবং সে নিরন্তর তার উত্তরও খুঁজে চলেছে।
এত বুদ্ধিমান প্রানী আমরা, এত জটিল মস্তিষ্কের গড়ন, আমাদের মধ্যে যেরকম বুদ্ধিমত্তার ছড়াছড়ি, আর কোন প্রাণীতেই বা তা দেখা যায়? আমরা মানুষ – কি না করতে পারি! এই পৃথিবীর বুকে আমাদের মত অতুলনীয় বুদ্ধিমান প্রানীর জিনোমের সাথে আর কোন প্রানীর জিনোমের তুলনা হয় নাকি? এত জটিল একটা প্রানীর বিকাশ তো আর যা তা কথা নয়। বিবর্তনের ধারায় জীব যত জটিল থেকে জটিলতর আকৃতি এবং বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হবে তার জিনের সংখ্যাও তো ততই বেশী হতে হবে! একটা সামান্য গোল কৃমির (norhabditis elegans) যদি ১৯,৫০০ জিন থাকে, সামান্য ফ্রুট ফ্লাই এর ১৩,৭০০ আর ওই ফালতু ধেরে ইঁদুরের জিনের সংখ্যা যদি হয় ৩০,০০০ হয় তাহলে আমাদের তো তার চেয়ে বহুগুণ বেশী জিন থাকতেই হবে। আমাদের দেহে প্রায় এক লাখের মত প্রোটিন তৈরি হয়, প্রত্যেকটা প্রোটিন তৈরির পিছনে যদি একটা করেও জিন থাকে তাহলেই তো কেল্লাফতে, আমাদের ক্রমোজমে জিনের সংখ্যা চোখ বন্ধ করেই এক লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা।
আসল কাজটা ১৯৯০ সালে শুরু হলেও সেই আশির দশকের প্রথম থেকেই মানুষের জিনোম সংশ্লষণ নিয়ে হইচই শোনা যাচ্ছিল। বিজ্ঞানীদের মধ্যে জল্পনাকল্পনারও যেন শেষ নেই, এমনকি বাজী ধরাধরিও চলেছে। প্রাথমিক অনুকল্প অনুযায়ী সবাই তো মোটামুটিভাবে নিশ্চিত যে, মানুষের জিনোমে কম করে হলেও এক লাখ বিশ হাজারের মত জিন থাকতে হবে। এর চেয়ে কম জিন দিয়ে তো মানব শরীরের জটিল অংগ প্রত্যংগের গঠনই সম্ভব হওয়ার কথা নয়, সেখানে জটিল মস্তিষ্ক বা স্নায়বিক কাজকর্মগুলো তো বহুদুরের কথা। শুধু প্রাচীন ধর্মবেত্তা আর চিন্তাবিদেরাই যে মানুষকে আর সব প্রানী থেকে আলাদা করে ‘সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি’ র বেদীতে বসিয়েছিলেন তাই তো নয়, এই আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে আমরাই বা কম কি? মানুষের মত এত ‘উন্নত’ প্রানীর জিনের সংখ্যা তো লাখ ছাড়িয়ে যেতেই হবে! পার্থক্য শুধু এই যে, প্রাচীণকালে ওনারা বিশ্বাসের রঙ্গীন ফানুসের উপর ভর করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন আর আমরা বিংশ শতাব্দীর প্রান্তে এসে অভূতপূর্ব বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়েও একই ধারার ভুলগুলো করে বসি। হাজার হাজার বছরের লালন করা ঔদ্ধত্য( নাকি অজ্ঞানতা) বলে না কথা, ধোপার পাটায় ধুয়ে মুছে সাফ হতেও তো সময় লাগারই কথা।
সে যাই হোক, ২০০০ সালে জিনোম প্রজেক্টের বিজ্ঞানীরা ডি এন এর নিউক্লিওটাইডের সংশ্লেষণের কাজ প্রায় গুটিয়ে আনতে শুরু করেন। বহুদিনের সাধণার ফসল -বের হল মানুষের জিনোম সংশ্লেষণের প্রথম খসরা রিপোর্ট। সামনে এক পরম বিস্ময় অপেক্ষা করছিল বিজ্ঞানিদের জন্য! এক ধরণের হতাশা মেশানো বিস্ময় নিয়ে জানতে পারলাম যে আমাদের এবং ইঁদুরের জিনের সংখ্যা প্রায় সমান। ৩০-৩৫ হাজারের বেশী প্রোটিন তৈরির জিন নেই মানুষের কোষে! তখন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে কয়েক বছরে বহুবারই এই সংখ্যাটা ঘষামাজা করতে হয়েছে – নাহ উপরে দিকে নয়, ক্রমশঃ নিচের দিকেই নেমে গেছে এই সংখ্যাটা। ১৩ বছরের গবষণার পর ২০০৩ সালে যখন চূড়ান্ত রিপোর্টটা বের হল তখন ইতোমধ্যেই সেই সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছে ২০-২৫ হাজারে। তার মানে কি আমাদের জিনের সংখ্যা ওই সামান্য ইদুরের চেয়েও কম? তাই বা সম্ভব কিভাবে?
শুধু তো জিনোম প্রজেক্টের বিজ্ঞানীরাই যে এ ধরণের বিস্ময়কর ফলাফল পাচ্ছিলেন তা তো নয়, অনুজীববিদ্যার বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন গবেষণাও সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। যেমন ধরুন, মানুষ আর শিম্পাঞ্জীর জিনোম ৯৮-৯৯ ভাগই মিলে যায় -এ থেকে বহু আকাঙ্খিত এক প্রশ্নের উত্তর পেলেও, সেটা থেকে যে আরেক বিড়ম্বনার সৃষ্টি হচ্ছে তার উত্তর তো আর দেওয়া যাচ্ছিল না খুব সহজে। বুঝলাম, এতে করে প্রমাণ হয় যে, শিম্পাঞ্জিরা আমাদের সবচেয়ে কাছের আত্মীয়, তাদের আর আমাদের সাধারণ পূর্বপুরুষ না হয় একই ছিল! কিন্তু, জিনের সবকিছুই যদি এতই এক হবে তাহলে শিম্পাঞ্জীর সাথে মানুষের এতটা পার্থক্য এল কোথা থেকে? মাত্র এক থেকে দেড় ভাগ পার্থক্য কি করে গঠনে আকারে বুদ্ধিমত্তায় এতটা পার্থক্যের কারণ হতে পারে? কিংবা ধরুন এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতি তৈরি হতে যদি এত কাড়িকাড়ি নতুন জিনের প্রয়োজন হয় তাহলে তাইই বা তৈরি হচ্ছিল কোথা থেকে? এই কোটি কোটি নতুন প্রজাতির বিবর্তনের পিছনে তাহলে কত নতুন জিনের দরকার হল? একেক জীব কেন দেখতে একেরকম, আকারে এবং গঠনে এত প্রকারণ এল কোথা থেকে? আবার ধরুন, নিষিক্ত ডিম্বাণু বা একটা মাত্র কোষ থেকে শুরু হয় আমাদের জীবনযাত্রা। তারপর কয়েক দিন, সপ্তাহ বা মাসের ব্যবধানে কি করে অযুত-লক্ষ-কোটি কোষের সমন্বয়ে জটিল সব অংগ-প্রত্যংগ বিশিষ্ট জীবের উৎপত্তি ঘটে সেখান থেকে? ভ্রূণের এই বিকাশের সাথে প্রাণের বিবর্তনের সম্পর্কটাই বা কি?
ডারউইন এবং টি এইচ হাক্সলী কিন্তু ঠিকই বুঝেছিলেন যে, বিবর্তনের চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে এই ভ্রুণতত্ত্বের মাঝেই, এর মধ্যেই পাওয়া সম্ভব এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। বিভিন্ন লেখায় এবং বইএ সে কথা উল্লেখও করেছেন। কিন্তু কিভাবে একটা নিষিক্ত ডিম্বানু থেকে এত জটিল সব প্রানীর উদ্ভব হয় সেটা বোঝার জন্য বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির যে অগ্রসরতা প্রয়োজন তা জীববিজ্ঞানীদের হাতে ছিল না। তার ফলে ভ্রুণতত্ত্ব জীববিজ্ঞানীদের কাছে ব্ল্যাকবক্স হয়েই ছিল গত প্রায় দেড়শ বছর।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বিজ্ঞানীরা হাবুডুবু খাচ্ছিলেন ডারউইনের দেওয়া বিবর্তন তত্ত্বের সাথে নব্য-আবিষ্কৃত বংশগতিবিদ্যার সমন্বয় করতে। তখনো জিনের আবিষ্কার না হওয়ার ডারউইন জীবদ্দশায় অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলো কিভাবে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালিত হয় এবং প্রকারণ (Variation) আসলেই কিভাবে ঘটে তার ব্যাখ্যা করতে পারেন নি।
এ নিয়ে মেন্ডেলের কাজ যখন পুনরাবিষ্কৃত হয় ১৯০৫ সালে, তখন তা থেকে প্রকারণের ব্যাখ্যা দেওয়া গেলেও গোল বাঁধলো আরেক জায়গায়। পরিবর্তন এবং প্রকারণ যদি এত ক্ষুদ্র জিনের লেভেলেই ঘটবে তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এত বৃহত্তর স্কেলে প্রাণের বিবর্তন এবং প্রজাতির উদ্ভব ঘটছে কিভাবে। একেক বিজ্ঞানী বিবর্তনকে একেক দিক থেকে ব্যখ্যা করতে শুরু করলেন, ফসিলেবিদেরা বিস্তৃত ভূতাত্ত্বিক সময়ের পরিধিতে প্রজাতির বিবর্তনে মেতে রইলেন, সিষ্টেমেটিষ্টরা বিভিন্ন প্রজাতির প্রকৃতি এবং প্রজাতি তৈরির প্রক্রিয়ায় মনোনিবেশ করলেন, আবার ওদিকে জেনেটিস্টরা কাজ শুরু করলেন প্রজাতির ভিতরে প্রকারণ এবং জিনের প্রভাব নিয়ে। তারপর চল্লিশের দশকে এসে এদের সমন্বয় ঘটলো মর্ডান সিন্থেসিস বা আধুনিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে। দু’টো প্রধান ধারণার সমন্বয় ঘটে এসময়ঃ
১) প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট জেনেটিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যে প্রকারণের উৎপত্তি ঘটে তাকে খুব সহজেই ধীর প্রক্রিয়ায় ঘটতে থাকা বিবর্তনতত্ত্বের মাধ্যমে ব্যখ্যা করা সম্ভব, এবং
২) দীর্ঘ সময়ের বিস্তৃতিতে ঘটা এই একই বিবর্তনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতি বা এক শ্রেণী থেকে আরেক শ্রেণীতে বেশ বড় স্কেলের বিবর্তনও ঘটে থাকে। গত শতাব্দীর বাকীটা সময় ধরে এই আধুনিক সংশ্লেষণী তত্ত্বই জৈববিবর্তনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে এসেছে [1]।
এখন ফাস্ট ফরওয়ার্ডের বোতামটা টিপে প্রায় ৫-৬ দশক সামনে চলে এসে, এখনকার অবস্থান থেকে, যদি আধুনিক সংশ্লেষণকে বিচার করতে চাই, তাহলে বলতেই হয় যে, সেই সময়ে এটাই সবচেয়ে ‘আধুনিক’ তত্ত্ব হলেও আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এর সীমাবদ্ধতাটা আসলে চোখে পড়ার মতই। আমরা এ তত্ত্ব থেকে জানতে পারি যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় বিবর্তন ঘটছে, আকারে গঠনে বদলে যাচ্ছে প্রাণী, উৎপত্তি ঘটছে নতুন নতুন প্রজাতির। কিন্তু আকারে, গঠনে এই পরিবর্তন ঘটছে কিভাবে? নিষিক্ত ডিম্বানুর একটি কোষ থেকে পূর্ণাংগ একটি জীবে পরিণত হতে যে আকার বা গঠণগুলোর বিকাশ ঘটে তার উৎপত্তি ঘটছে কিভাবে? ভ্রূণাবস্থায়, কোন জিনগুলোর সক্রিয় পরিচালনায় ঘটে চলেছে অত্যাশ্চার্য এই বিকাশের নাটক? অর্থাৎ বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় ‘কি ঘটছে’ তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ না থাকলেও ‘কিভাবে ঘটছে’ তা কিন্তু রহস্যের বেড়জালেই আটকে ছিল এতদিন।
ছবি – সব জীবই একটি মাত্র কোষ থেকে শুরু করে তাদের জীবনের বিকাশ ঘটায়। এখানে ইঁদুরের নিষিক্ত ডিম্বানুর বিকাশ দেখানো হয়েছে।
নাহ, এই অজানা প্রশ্নগুলো আর অজানা নেই জীববিজ্ঞানীদের কাছে। ব্ল্যাকবক্সের রুদ্ধদ্বারগুলো একটা একটা করে খুলে পড়তে শুরু করেছে। গত দুই-তিন দশকে সৃষ্টিতত্ত্ববাদী এবং ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের প্রবক্তাদের সাথে তর্কাতর্কিতে আমরা টেরই পাইনি যে নীরবে কি এক বিশাল বিপ্লব ঘটে গেছে জীববিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলোতে। সত্যি কথা বলতে কি জীববিজ্ঞানের যেন এক গুণগত উল্লম্ফন ঘটে গেছে এরই মধ্যে। বিবর্তন ‘ঠিক কি বেঠিক’ সে তাত্ত্বিক স্তর পার হয়ে আমরা যে প্রায়োগিক বিবর্তনীয় বিজ্ঞানের পর্যায়ে পৌঁছে গেছি তা বুঝতেও পারিনি বিবর্তন-বিরোধীদের সাথে অন্তহীন তর্ক-বিতর্কের ডামাডোলে। কিন্তু সত্তরের দশকের শেষ থেকেই আনবিক জীববিজ্ঞান এবং জেনেটিক্সের বিভিন্ন শাখায় প্রযুক্তিগত দিক থেকে অভাবনীয় উন্নতি ঘটতে শুরু করে। তার সাথে যুক্ত হয় কম্পিউটার প্রযুক্তির বিকাশ, আর এখান থেকেই বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মত যে কোন জীবকে তার জেনেটিক লেভেলে বিস্তারিতভাবে দেখতে এবং গবেষণা করতে শুরু করেন।
বিজ্ঞানীরা এখন গবেষণাগারে যে পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো করে চলেছেন তা শুধু কল্পবিজ্ঞানের সীমানার চার দেওয়ালে বন্দী ছিল এতদিন। কার্টুনের সেই মিউট্যান্ট নিনজা টারটেলের মত এখন মিউট্যান্ট ফলের মাছি তৈরি হচ্ছে গবেষণাগারে, ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের মত ফ্র্যঙ্কেনমাছিগুলোর গল্প যেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকেও হার মানায়।ধরুন, একটা জিনের এদিক ওদিক করে মাছির মাথা থেকে শুড়ের বদলে দু’টো পা বের করে দিলেন, একটা মাত্র জিনের মিউটেশন থেকে তার এক জোড়া পাখার বদলে চার, ছয় বা অগুন্তি পাখা যোগ করে দেওয়া হল, কিংবা পাখাগুলো এক্কেবারে উবেই গেল। একটা মাত্র জিনের রদবদলের ফলে যদি এরকম নাটকীয় পরিবর্তন সম্ভব হয় তাহলে তো প্রশ্ন জাগে, এই জিনগুলো আসলে কি, এদের আসলে কাজ কি? কিংবা ধরুন ইঁদুরের চোখের জিনটাকে ( একই জিন কিন্তু মানুষের মধ্যেও আছে) মাছির ভ্রূণের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হল, দেখা গেল যে, সেখানে দিব্যি ইঁদুরের নয় বরং মাছির চোখের টিসু তৈরি হয়ে যাচ্ছে।…… নাহ অলৌকিক কোন গল্পের বই থেকে তুলে দেওয়া নয় উপরের কথাগুলো, কোন কল্পবিজ্ঞানের বই থেকে এই লাইনগুলো তুলে দেইনি। ডিসকভার ম্যাগজিনের (ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সংখ্যায়) এক সাক্ষাৎকারে হাল আমলের বিখ্যাত আমেরিকান বিজ্ঞানী ডঃ শন ক্যারল জীববিজ্ঞানের অন্যতম নতুন শাখা ‘এভ্যুলেশনারী ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজী’ বা সংক্ষেপে ‘এভু ডেভু’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এই কথাগুলো বলেছিলেন [2]।
শুধু তো তাই নয়, বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে দেখছেন, হাত, পা, শুড়, শিং, অর্থাৎ, বিভিন্ন প্রাণীর শরীর থেকে যে অংগ প্রত্যঙ্গগুলো বাইরের দিকে উদ্গত হয় তার সবগুলোর পিছনে একই সাধারণ জিনের হাত রয়েছে। ৭০-৮০ এর দশকে জেনেটিক্সের আলোয় যতই আমরা আমাদের কোষের অভ্যন্তরের সুক্ষ্ম গঠণ এবং কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলাম ততই যেন হা হয়ে থাকার পালা শুরু হল। বিজ্ঞানীরা চরম বিস্ময়ে দেখতে থাকলেন যে, প্রকৃতিতে এত পার্থক্য, এত জৈব-বৈচিত্রকে এক্কাবারে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বারবার একই ফলাফল চোখে সামনে ফুটে উঠছে – শুধু মানুষে আর শিম্পঞ্জীতেই নয়, ইঁদুর থেকে শুরু করে পাখী, প্রজাপতি, ফলের মাছি এমনকি ব্যাক্টেরিয়া – সবার মধ্যেই অকল্পনীয় রকমের জেনেটিক সাদৃশ্য বিদ্যমান!
আর এই গবেষণাগুলোর হাত ধরেই গত ২০-৩০ বছরে জীববিজ্ঞানের এই নতুন শাখার সৃষ্টি হয়েছে – বিবর্তনীয় বিকাশমান জীববিজ্ঞান (Evolutionary Developmental Biology) বা সংক্ষেপে এভু ডেভু [3]। জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মেলবন্ধনে সৃষ্টি হয়েছে এই শাখাটি। আজকে একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে বিবর্তন নিয়ে লিখতে বা পড়তে গেলে এভু ডেভুকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। ১৫০ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ‘হ্যান্ডসেক’ ঘটেছে ভ্রূণতত্ত্বের সাথে জীববিজ্ঞানের ভিত্তি বিবর্তনতত্ত্বের। আর তাকে কার্যকরী রূপ দেওয়ার পিছনে অবদান রাখছে ফসিলবিদ্যা, প্রাণরসায়ন, আনবিক জীববিজ্ঞান, জেনেটিক্স থেকে শুরু করে কম্পিউটার প্রযুক্তি পর্যন্ত অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলো। এর বিভিন্ন কাজ এবং অত্যাশ্চার্য সব গবেষণার ফলফলগুলোর ভিতরে ঢোকার আগে, এভু ডেভুর সংজ্ঞাটা কি দাঁড়াচ্ছে, সেটা চট করে তাহলে একবার দেখে নেওয়া যাক।
ছবি- ডিস্টাল লেস নামক একটি মাত্র জিন সামুদ্রিক পোকা থেকে শুরু করে ইঁদুর এমনকি মানুষের প্রত্যংগের গঠনের জন্য দায়ী। এই ধরণের ‘মাস্টার টুলকিট’ জিনগুলোর আবিস্কার প্রানীজগতের বিবর্তন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আবার নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। ছবিতে মানুষের সতের দিন বয়সী একটি ভ্রুণ দেখানো হয়েছে।
আমরা বিবর্তনতত্ত্ব থেকে জানি যে সময়ের সাথে জীবের আকারে গঠনে ক্রমাগতভাবে পরিবর্তন ঘটে চলেছে আর তা থেকেই উদ্ভব ঘটছে বিভিন্ন প্রজাতির। এখন ভ্রূণতত্ত্ব থেকে আমরা প্রথম বারের মত দেখতে পারছি জীবের গঠনের পিছনে কোন প্রক্রিয়াগুলো কাজ করছে। আমরা এখন ভ্রূণের বিকাশের বিভিন্ন স্তরে ডিএনএ র নিউক্লিক এসিড বেসের উপর কাজ করে দেখাতে পারছি যে, কোন জিনের কারণে কোন গঠনের জন্ম হচ্ছে। এখানে দুই একটা বেস বদলে দিলে পা টা লম্বা হয়ে যাচ্ছে, ওই জিনের এখানে কয়েকটা বেস বদলে দিলে পায়ের বদলে শুড় গজিয়ে যাচ্ছে, জিনের কোন জায়গাটায় বদলে দিলে পায়ের বদলে শুধু হাতই জন্মাচ্ছে না, একই জিন থেকে গজিয়ে যাচ্ছে মানুষের হাত, বাদুরের পাখা, সিলের তাড়নী! আর এটাই তো হচ্ছে বিবর্তনের ভিত্তি, সময়ের সাথে সাথে ডিএনএর পরিবর্তন। একটা জীব পূর্ণাংগ রূপ ধারণ করার পর তার দেহে এই পরিবর্তনগুলো ঘটে না, তাই এই পরীক্ষাগুলো কোন পূর্ণবিকশিত জীবের দেহকোষে করা সম্ভব নয়। এই প্রথমবারের মত আমারা এগুলো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, এগুলোকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারছি – আর আবারও নতুন করে, নতুন আঙ্গিকে, নতুন জ্ঞানের আলোয় প্রথমবারের মত গবেষণাগারে আমাদের চোখের সামনে প্রমাণিত হচ্ছে বিবর্তনতত্ত্ব। ভ্রূণের বিকাশ আর তার আলোর বিবর্তনের প্রক্রিয়ার সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে এই বিবর্তনীয় বিকাশমান জীববিজ্ঞান বা এভু ডেভু।
চলবে…
এর পরের পর্বে এভু ডেভু কিভাবে বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের পুরনো ধারণাগুলোকে ভেঙ্গেচুড়ে গুণগতভাবে এক নতুন স্তরে নিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইলো।
:line:
তথ্যসূত্র
1) Carroll S, 2005, Making of the Fittest. W.W. Norton & Company.
2) http://discovermagazine.com/2009/mar/19-dna-agrees-with-all-the-other-science-darwin-was-right
3) যুক্তি, সংখ্যা ৩, জানুয়ারি ২০১০, শন ক্যারলের সাথে সাক্ষাকারঃ ডি এন এ এবং অন্যান্য বিজ্ঞান প্রমাণ করছে যে ডারউইন সঠিক ছিল।
অসাধারন…
[…] পূর্ববর্তী পর্বের পর… […]
বন্যাপা, আপনার তথ্যমূলক এলেখাটির জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি। 🙂
কয়েকদিন ধরে মানবজিনের সংখ্যা নিয়ে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরঘুর করছিল। আপনার এলেখাটায় এসংখ্যার ব্যাপারে উল্লেখ আছে। আরেকটা ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম, এপিজেনেটিক্স নিয়ে। প্রশ্নটা এরকম, আমরা যদি মানবপ্রকৃতি নির্ধারণকারী জিনগুলোর সংখ্যা, জিনসমূহ কিভাবে বিন্যস্ত হয় এবং সেই সাথে এপিজেনেটিক্সের সম্পর্কগুলোর ধারণা পেতে পারি, তাহলে গাণিতিক হিসাবনিকাশের মাধ্যমে বের করা যায় যে, সর্বোচ্চ কয়জন ভিন্ন ভিন্ন মানুষের জন্ম নেওয়া সম্ভব। 😕 আইডিয়াটা কি আজগুবি শোনাল? :-/ এপর্যন্ত জানা জিনের সংখ্যা এবং বিন্যাসের সম্ভাব্যতা-অসম্ভাব্যতা, এপিজেনেটিক্স, এক কথায় কোত্থেকে ব্যক্তি-ব্যক্তিতে পার্থক্য সৃষ্টি হয়, সেগুলো নিয়ে কি পরবর্তী কোন লেখায় আলোকপাত করবেন? কিংবা এসম্পর্কিত কোন বইয়ের রেফারেন্স দিলেও উপকৃত হব।
ফুয়াদ ভাই ভাল কথা মনে করিয়েছেন।
আচ্ছা, জেনেটিক কোডে কোনরকমের কেরামতি করে হারিয়ে যাওয়া এসব প্রজাতিক আবার ফিরিয়ে আনা যায় না?
আমাদের দেশ থেকেই কত বিচিত্র প্রজাতি প্রানী আমাদেরই অবহেলায় চিরতরে হারিয়ে গেছে ভাবলে খুবই খারাপ লাগে। এমনকি মংগোলিয়ার পান্ডাও নাকি সহসাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
@আদিল মাহমুদ,
সাধারনত হয় না। তবে হারিয়ে যাওয়ার আগেই যদি আমরা তার কিছু অংশ সংরক্ষন করেতে পারি, তাহলে স্টিম সেল করে নুতুন করে ফিরেয়ে আনা যেতে পারে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার দের কাজ, ক্লোরিং।
আপনি নিশ্চই জোরাসিক পার্ক ফ্লিম টি দেখেছেন, ঐখানে জোরাসিক যুগের মশা পাওয়া যায় যা এম্বারের মধ্যে অপরিবর্তনীয় থাকে। তার পেটের মধ্যে ডাইনোসরের রক্ত পাওয়া যায়, এই রক্তে ডাইনোসরের ডি.এন.এ পান তার মধ্যে ব্যাঙ্গ এর ডি.এন.এ এর সহায়তায় ডাইনোসর ফিরিয়ে আনেন। তবে এ সব কল্পনা বাস্তব নয়।
একে বারে হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়ার আর অবকাশ নেই। জানিনা, অন্যদের কি মত।
@ফুয়াদ,
জুরাসিক পার্কের কথা ভেবেই এই অতি উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা মাথায় এসেছিল। কে জানে, একদিন হয়ত হতেও পারে। আশাবাদী হতে দোষ কি। কল্পনাবিলাসী হবার দরকার আছে।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি একটি ঐ রকম একটি মশা যুগার করুন। তারপর বাকি টুকু ……………………………………………… আপনি বিখ্যাত হয়ে যাবেন। 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂
দেখেছেন, একটি মশার কত পাওয়ার আপনাকে বিখ্যাত করে ফেলল।
@ফুয়াদ,
আমার জন্য এটা এমন কোন ব্যাপারই না। ইচ্ছে করলেই করে দেখাতে পারি। তবে মুশকিল হল ঐ বিখ্যাত হবার ব্যাপারটা। বিখ্যাত হবার ভয়েই করতে চাই না। কি দরকার জীবনে জটিলতা বাড়িয়ে। অত বিখ্যাত হলে কি আর এইসব ফোরামে ঘোরাঘুরি করতে পারব নাকি।
বন্যা আপা,
আরেক টি বিষয় বলতে ভুলে গেয়িছিলাম। বিজ্ঞানের এই শাখা কিন্তু প্রতিটি প্রজাতির গুরুত্ত বুঝতে ব্যাপক সাহায্য করে। একটি প্রজাতি হারিয়ে যাওয়া , মানে এর জেনিটিক কোড হারিয়ে যাওয়া। হয়ত এই জেনেটিক কোড আমাদের খুব দরকারী। হয়ত হারিয়ে যাওয়া জ্বীন গুলি আমাদের সহায়তা করত, প্রকৃতিকে ভালভাবে বুঝতে। হয়ত অনেক হারিয়ে যাওয়া জ্ঞান ঐ জ্বীন গুলিতে লিখা আছে।
[img]http://www.dodo.blog.br/wp-content/uploads/2007/09/birds_mauritius.jpg[/img]
{ছবিটি অনলাইন থেকে ডুডু ব্লগ থেকে পাওয়া}
এই মায়াবী পাখি গুলি নাকি হারিয়ে গিয়েছে। কি জানি, এই পাখির ডি.এন.এ তে স্রষ্ঠা কি লিখে রেখেছিলেন।
আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর একটি লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
@ফুয়াদ, আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য। তবে দুটো অনুরোধ করি, আশা করি কিছু মনে করবেন না।
১) বিজ্ঞানের লেখাকে বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই দেখুন, এখানে স্রষ্টা টেনে আনবেন না, তাহলে বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান থাকে না, আইডি হয়ে যায়। আপনি স্রষ্টায় বিশ্বাস করতে পারেন, সেটা আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, আমার তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু স্রষ্টা দিয়ে বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করলে সেটা আর বিজ্ঞান থাকে না। ধর্ম এবং বিজ্ঞানকে আলাদা করে ফেলতে শিখতে হবে, তাহলে আলোচনায় আমার এবং আপনার দুজনেরই সুবিধা হবে।
২) বানানের দিকে আরেকটু নজর দিন। না হলে সাইটের মান নষ্ট হয়, দেখতেও খারাপ লাগে। আমারও বানানের অবস্থা ভালো না, তাই বারবার ডিকশেনরী দেখি, একটা কিছু লেখার পর বারবার বানান ঠিক করার চেষ্টা করি। যেমন ধরুন, আপনার শেষ দু’টো মন্তব্যের মধ্যে কিছু ভুল বানানের উদাহরণ দেই, গুরুত্ত(গুরুত্ব), জ্বীন (জিন), গেয়িছিলাম (গিয়েছিলাম), লিখা (লেখা), স্রষ্ঠা (স্রষ্টা), সংরক্ষন (সংরক্ষণ), স্টিম সেল (স্টেম সেল), ক্লোরিং (ক্লোনিং), ব্যাঙ্গ (ব্যঙ্গ নাকি ব্যাঙ), সাধারনত (সাধারণতঃ) … এ বানানগুলো একটু সচেতন হলেই কিন্তু শুদ্ধভাবে লেখা সম্ভব।
আপনার আরো অংশগ্রহণ কামনা করছি।
@বন্যা আহমেদ,
ধন্যবাদ, বাকি পর্বগুলির অপেক্ষায় আছি। তবে একটি বিষয় আমি আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করেছি যে সকল প্রানীর জেনেটিক বয়স সমান। আরেকটি বিষয় আমার কাছে ল্যামার্টকে কিছু হলেও সঠিক মনে হয়। যেমনঃ মানুষের উতপত্তি আফ্রিকাতে হয়েছে। সাদা মানুষের জিন কোন কারনে মিউটেশনের ভুল ভালতে উতপত্তি হয়েছে। এখন, সাদা হওয়ার জিন টি জনপুঞ্জে বিস্তার লাভ করেছে। ধরলাম, সাদা হওয়ার জিন ইউরোপের জনপুঞ্জে বিস্তার লাভ করেছে। এভাবে ইউরোপের মানুষ সাদা হয়ে গেছে। কিন্তু মেন্ডেলের মতে প্রকট বৈশিষ্টের জিন প্রছন্ন বৈশিষ্টের জিন এর উপর প্রাধান্য বিস্তার করে । তাহলে অবশ্য-ই মানুষ সাদা হওয়ার জিনটি প্রকট বৈশিষ্টের হতে হবে। না হলে জনপুঞ্জ সাদা হয়ে ঊঠবে না। কিন্তু বাস্তবে সাদা-কালো দের বিবাহের ক্ষেত্রে বাচ্চা সাদা-কালো উভয়ই হয়ে থাকে, যেমনঃ বারাক ওবামা কালো। এটা মেন্ডেলের ২য় সূত্রের সাহায্যে ব্যক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু ২য় সূত্র অনুষারে কালো বাচ্চা হবার সম্ভাবনাও থাকে। বাস্তবে, প্রাচীন ইউরোপিয়দের(সাদা গোত্রদের বাহিরের মানুষ ব্যাতীত) মধ্যে কাল মানুষ দেখা যায় না। ঠিক তেমনি প্রাচীন মংগলিয়ডদের মধ্যে কাল কিংবা সাদা কিছুই দেখা যায় না। এই বিষয়ের ক্ষেত্রে থেকে আমার কাছে ল্যামার্টকে কেন জানি সঠিক মনে হয়। কারন বাস্তব অভিজ্ঞতা ও এর সাথে মিলে যায়, যেমন আমাদের দেশের অনেক মানুষ ইউরোপে গিয়ে সাদা হয়ে উঠে। আমার ধারনা বহু বছর ধরে থাকলে বংশপরাম্পনায় তারা সাদা হয়ে উঠবে। যেমনঃ লন্ডনে টিয়া পাখি নেওয়ার পর তা কয়েক প্রজন্ম পরে এখন সাদা হয়েগেছে।
আমার একটি ব্যাক্তি গত ধারনা, গাছের পরিচর্যা করতে গিয়ে হয়েছে, প্রতিটি প্রানী বা জীব পরিবেশের চাপে বিবর্তিত হয়। মানে প্রতিকুল পরিবেশে বাচতে চায়। পারলে পারে, তার পরিবর্তি বংশধর আরো বেশি পারে, তার পরিবর্তি বংশধর আরো বেশী পারে। আর না পারলে মরে যায়। অর্থ্যাত পরিবেশ-ই চাপ দিয়ে জীব জগতকে বিবর্তিত করে। জীব এবং পরিবেশের মধ্যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চলছে। এভাবে জীব পরিবেশকে পরিবর্তন করতে চায়, পরিবেশ জীব কে। এগুলো আমার ব্যক্তি গত চিন্তা বা ধারনা। এ ধারনা গুলি বিবর্তন শব্দের সাহিত পরিচিত হওয়ার পর হয়েছিল, তখন ডারোয়িন সাহেবের শুধু নাম জানতাম, এবং উনার বই বা বিবর্তনের উপর কোন লিখা-ই পড়িনি। ল্যামার্ট সাহেবের বই দুরের কথা, উনার নাম-ই শুনে নি তখন।
উপরের বর্ননাকৃত ক্ষেত্রে আমি জীব জগত প্রতিনিয়ত কপি করতে গিয়ে ভুল ভাল হয়ে নুতুন প্রাজাতি উতপত্তি হয়, পরে ন্যাচার সিলেকশেনের মাধ্যমে যোগ্যতম কে ধরে রাখে তা মিলিয়ে নিতে পারতেছি না। আপনি আশা করি সম্পূর্ন বিজ্ঞানিক দৃষ্ঠিকোন থেকে আলোচনা করবেন, এবং আমার ধারনা গুলি উড়িয়ে না দিয়ে, আলোচনার মাধ্যমে এর মধ্যে যদি কোন সম্ভাবনা থাকে তাহলে দয়াকরে বলবেন। আমি অপেক্ষায় থাকলাম।
@ফুয়াদ, আপনার মন্তব্যটা আগে দেখিনি দেখে উত্তর দেওয়া হয়নি। ধৈর্য সহকারে আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
এই কথাটা দিয়ে ঠিক কি বুঝাতে চাইলেন বুঝলাম না। হোমো সেপিয়ানদের বয়স মাত্র দেড় থেকে দুই লাখ বছর, প্রাইমেটদের বয়স সেখানে ৫-৬ কোটি বছর, ডাইনোসরদের বয়স প্রায় ২০-২৫ কোটি বছর, পাখাওয়ালা পতঙ্গের বয়স ২৫-৩০ কোটি বছর… ইত্যাদি ইত্যাদি।
‘ল্যামার্ট’ নয় ল্যামার্ক হবে, Jean-Baptiste Lamarck (1744-1829)
না এখানে আপনার কথাটা পুরোপুরি ঠিক না। যদি সাদা গায়ের রঙ এর জিন প্রচ্ছন্ন হয় এবং যদি বাবা এবং মা দুজনের থেকেই আপনি প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের জিন পান, তাহলেও আপনার গায়ের রঙ সাদা হতে পারে। আপনার কথা ঠিক হবে যখন বাবা এবং মা থেকে একটা প্রকট এবং একটা প্রচ্ছন্ন জিনের প্রশ্ন আসে।
না আমাদের দেশের কোন মানুষ ইউরোপে গিয়ে সাদাদের মত সাদা হয়ে যায় না। ঠান্ডার কারণে গায়ের রং কিছুটা পরিষ্কার দেখাতে পারে। আর আপনি লন্ডন প্রবাসী যে টিয়া পাখির কথা বললেন তার সম্পর্কে ব্যাক্তিগত কোন তথ্য যেহেতু আমার কাছে নেই, তাই তাকে নিয়ে কোন মন্তব্য করতে পারছি নাঃ)।
এবার আসি ইউরোপিয়ানদের সাদা হওয়ার প্রসঙ্গে। এখন পর্যন্ত রিসার্চ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, খুব সম্ভবত তারা ১০-১২ হাজার বছর আগে তাদের গায়ের রং হাল্কা হয়ে যেতে শুরু করে। না, ল্যমার্কের তত্ত্ব দিয়ে এটা ব্যখ্যা করা যায় না, জীববিজ্ঞানে এই তত্ত্ব সম্পূর্ণভাবে ভুল বলেই প্রমাণিত। আপনার কোষের মধ্যে যদি জেনেটিক মাল মশলা না থাকে তাহলে পরিবেশের যতই দাবী থাকুক না কেন আপনি সেভাবে বিবর্তিত হবেন না, দরকার হয় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারেন এবং সে জন্যই প্রায় ৯৫% এর বেশি জীব পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ঠিক যে কারণে আমাদের যতই প্রয়োজন থাকুক না কেন, ডিএনএ তে এই বৈশিষ্ট্য না থাকলে আমাদের যেমন জিরাফের মত গলা লম্বা হয়ে যাবে না, তেমনি আবার উড়ার জন্য পাখা জন্মে যাবে না। বিবর্তন ঘটার জন্য জনপুঞ্জে প্রকারণ থাকতে হয়, আর পরিবেশের পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে কোন প্রকারণ সেই সময়ে নির্ধারিত হবে সেটা প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।এই ল্যমার্ক নিয়ে কথা বলতে আর ভালো লাগে না, এটা অনেক পুরোনো গল্প, আপনার কাছে অনুরোধ রইলো, বিবর্তন নিয়ে আগ্রহ থাকলে এর উপড়ে একটা বেসিক বৈজ্ঞানিক বই পড়ে ফেলুন, তাহলেই এই জিনিষটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
নীচের মন্তব্যে দেখলাম, আনোয়ার জামান এপিজেনেটিক্স নিয়ে প্রশ্ন করেছেন, হ্যা এপিজেনেটিক্স পরিবেশের কারণে পরিবর্তন নিয়ে কাজ করে ( আমি অবশ্য এটা নিয়ে খুব বেশী কিছু জানি না)। কিন্তু সেই পরিবর্তনটা যদি কোনভাবে মিউটেশনের মাধ্যমে ডিএনএ তে না ঘটে তাহলে সেটা বংশ পরম্পরায় চালিত হবে না এবং বিবর্তনেও ভূমিকা রাখতে পারবে না, এক প্রজন্মেই হারিয়ে যাবে।
এখন আসি ইউরোপের সাদাদের মধ্যে কালো দেখা যায় না কেন সে প্রসঙ্গে। এর মধ্যে অনেক জেনারেশন পার হয়ে গেছে, সাদা গায়ের রঙ নির্বাচিত হতে হতে তাদের জনপুঞ্জে আর কালো গায়ের রঙ এর প্রকারণগুলো অবশিষ্ট নেই। আর আজকের জনসংখ্যা দেখে এইটা কিভাবে সম্ভব তা ভাবলে চলবে না। যে সময় এই পরিবর্তনটা ঘটেছিল তখন গোটা ইউরোপে জনসংখ্যা খুব কম ছিল, তার ফলে ওই ছোট জনপুঞ্জে যে কোন প্রকারণ জন্ম নিয়ে ছড়িয়ে পড়তে বা বিলুপ্ত হয়ে যেতে খুব বেশী সময় লাগতো না। কিন্তু আবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বা গোষ্ঠীতে কিন্তু গায়ের রঙ এর অনেক হেরফেরঅ দেখা যায়। তাদের গায়ের রঙ সামগ্রিকভাবে হাল্কা বর্ণের হলেও তার মধ্যে কিন্তু প্রকারণের অভাব নেই, একই কথা আবার খাটে চোখের বা চুলের রঙ এর ক্ষেত্রেও।
@বন্যা আহমেদ,
ডায়নোসর থেকে পাখি হলো কি করে? সামনের হাত দুটো ডানা হয়েগেল কি পরিবেশের সাথে সংগ্রামের ফলে নাকি প্রকরনের কারনে। আমি প্রথম প্রজন্মের পাথিদের কথা ভেবে কূল পাচ্ছি না। :-X বন্যা আপা সাহায্য চাই।
@আতিক রাঢ়ী,
ধুর মিয়া, আপনারে কয় বার কইলাম যে বন্যাপুর বইটা পুরাটা ভালো মতন শেষ করেন!! বই না পইড়া হুদাই ফাল পাড়েন!!! :-Y :-Y
যতদিন পড়বেন না, তত দিন কূল অকূল কিছুই পাইবেন না।
ধন্যবাদ আগুন্তক, এই শব্দটা নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলাম না অনেকদিন, আমারও মাথায় কিছু আসছিলো না। আমার মনে হয় ‘ডেভেলপমেন্ট’ এর বাংলা ঠিক ‘বিকাশ’ হয় না, কিন্তু আর কোন শব্দও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনন্ত ‘যুক্তি’ তে ‘Evolutionary Developmental’ এর বাংলা করেছে ‘বিবর্তনীয় বিকাশমান জীববিজ্ঞান’ , তাই দেখে খুশী হয়ে এটাই লিখে দিলাম “(সব দোষ আসলে অনন্তর 🙂 । বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে লেখা একটা বিশাল ঝামেলা, আমরা তো মৌলিক গবেষণা করি না, অল্প কিছু করলেও রিসার্চ পেপারগুলো আবার বাংলায় লেখা হয় না, এভাবে বাংলার বিকাশ ঘটবে কিভাবে?
‘বিকাশমূলক’ই লিখবো এর পর থেকে তাহলে…
@বন্যাদি,
development এর বাংলা পরিভাষা অবশ্যই থাকার কথা। কিন্তু আমার কাছে এখন কোন অভিধান নেই। আপনি একটু সংসদ অভিধানের পরিভাষাগুলো দেখে নিন। রিসার্চ পেপার অদূর ভবিষ্যতে বাংলায় লেখা হবে বলে মনে হয় না। আর বিকাশ লিখলেও কন্টেক্সট ঠিকই থাকে।
বিকাশমান কথাটা ঠিক খাপ খাচ্ছে না। জানিনা এর কোন পরিভাষা আছে কিনা। তবে ‘বিকাশমূলক’
লিখলে বোধহয় মন্দ হয় না।
একমত ।
বিজ্ঞানের অন্য যে কোন শাখার চেয়ে বিবর্তন তত্ব আমার মনে হয় সাধারণ পাঠকদের জন্য অনেক বেশি জরুরি। কারণ বিবর্তন তত্বের জ্ঞান ছাড়া মানুষের সাংস্কৃতিক আর দার্শনিক শিক্ষার মানে উত্তরণ ঘটানো অসম্ভব। এই শাখাটাকে ভালোভাবে বুঝতে পারলেই আমরা আজগুবি, কষ্টকল্পিত ধর্মীয় চিন্তাধারা আর কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি পাবো।
এভু ডেভুর ব্যাপারগুলো এতই নতুন যে এগুলো এখনো বায়োলজির পাঠ্যবইয়ে স্থান পায় নি। অথচ বিবর্তনতত্ব বোঝার জন্য খুবই দরকারী এই এভু ডেভুর আলোচনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে বিবর্তনের পক্ষে সাক্ষ্যপ্রমাণ খোঁজার জন্য বিজ্ঞানীদের আর মিসিং লিঙ্ক আবিষ্কার করার দরকার নাই, তার চেয়ে অনেক বেশি জোরালো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জিনোম সংশ্লেষন আর ভ্রুণতত্বের মাঝে। কিন্তু প্রমাণ জোরালো হলেই তো হবে না, বোধগম্যতাও সহজ হওয়া চাই। বন্যার বুঝিয়ে লেখার আশ্চর্যরকমের ক্ষমতা রয়েছে। বন্যাকে ধন্যবাদ শত ব্যস্ততার মধ্যেও ক্ষমতাটাকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগানোর জন্য। বাংলাভাষার পাঠকদের জন্য এর চেয়ে দামী উপহার আর কিছু হতে পারে না।
@ইরতিশাদ,
১০০% সহমত। :yes:
@ইরতিশাদ,
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের এসব অত্যাধুনিক জটিল বিষয় সোজাভাবে বুঝিয়ে বলায় আসলেই বন্যা, অভিজিতের জুড়ি নেই। তবে আরো কেউ কেউ আছে খুব ভালভাবে বোঝাতে পারেন।
আপনি নিজেই আমার কাছে তেমন একজন। গত বছর মনে হয় বিবর্তন বিষয়ে আপনার একটি লেখা দিয়েছিলেন, অতি সরল ভাষায় এবং ঢাকাইয়া কথ্য ভাষার সংমিশ্রনে খুবই তথ্যবহুল আর উপভোগ্য মনে হয়েছিল। ওটা তখন পড়িনি, কিছুদিন আগে মাত্র পড়েছিলাম। লেখাটি বিবর্তন বিরোধীদের অনেক প্রান্তিক ভ্রান্ত ধারনা চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আশা করি এমন লেখা আরো দেবেন।
আর বিবর্তন বিরোধীদের লেখা পড়তে গেলে আপনার একটা কথা প্রায়ই মনে পড়ে। হুবহু মনে নেই, কবে যেন এ জাতীয় একটা কথা বলেছিলেন যে বিবর্তনবাদ বুঝতে গেলে মানসিক প্রস্তুতি বা পরিপক্কতা প্রয়োযন বা এমন কিছু একটা। আমার নিজেরও মনে হয় এই জিনিসটার অভাবেই অনেকে ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না।
@আদিল মাহমুদ,
আমার ওই পুরোনো লেখাটা পড়ার জন্য আর উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। সময় পেলে নিশ্চয়ই লিখবো আবারো। আর আমি যেটা বলতে চেয়েছিলাম তা হলো, আমাদের চিন্তা-চেতনার স্তরে একটা বিশেষ উত্তরণ না ঘটাতে পারলে বিবর্তন আর প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব মেনে নেওয়াটা কঠিন হওয়ারই কথা। আর এই উত্তরণ ঘটানোর পথে ধর্মীয় চিন্তাধারা হচ্ছে একটা বিরাট বাধা। তাই আমি মনে করি – সার্বিক ভাবে বিজ্ঞান, আর বিশেষ ভাবে বিবর্তন তত্ত্বই পারে আমাদের দার্শনিক আর সাংস্কৃতিক শিক্ষার মানে উত্তরণ ঘটাতে । আমার এই লেখাটাও, একটু লম্বা যদিও, পড়ে দেখতে পারেন।
বিগ ব্যাং আবিষ্কারের পরেও আমরা একইভাবে ভেবেছিলাম যে আমরা সব জেনে ফেলেছিলাম। আসলে বিজ্ঞান তো ক্রম-অগ্রসরমান একটা বিষয়, তাই নতুন নতুন জ্ঞানের আবিষ্কার তো পুরান তত্ত্বগুলোকে নতুন করে ঝালাই করবেই।
এভল্যূশনারি ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বা এভু ডেভু এর খবর এখনো সাধারণ মানুষের কাছে পৌছোয় নি।
অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী লেখা। সুন্দর সূচনা।
বন্যা আপা,
প্রিয়নের কি হবে, তার ডি.এন.এ, আর.এন.এ কিছু নাই। সে কোন কাতারে পরল?
@ফুয়াদ, আপনার প্রশ্নটা কিন্তু ঠিকমত বুঝতে পারিনি। প্রিয়ন হচ্ছে খুব আদিম প্রোটিন যার মধ্যে ডিএনএ বা আরএনএ নাই। কিন্তু পরিবেশের উপর নির্ভর করে তারও যে বিবর্তন ঘটে তা কিন্তু বিভিন্ন ধরণের ম্যাড কাউ রোগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। এখানে যে প্রাণীদের নিয়ে কথা হচ্ছে তাদের সবাই জটিল প্রাণীর মধ্যে পড়ে, যাদের জেনেটিক তথ্য সম্বলিত ডিএনএ আছে। আমি তো এখানে কোন ভাগ দেখাই নি, শুধু এভু ডেভু কিভাবে বিবর্তনের বেশ কিছু প্রশ্নের আরো বিস্তারিত বা এক্সপেরিমেন্টাল উত্তর দিচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা করেছি।
‘কোন কাতারে পড়ল’ বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন তা একটু বুঝিয়ে বললে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। অভিজিতের ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইটাতে প্রিয়ন নিয়ে কিছু কথাবার্তা ছিল মনে হয়।
@বন্যা আহমেদ,
এভু ডেভু দিয়ে কিভাবে প্রিয়নকে ব্যাক্ষা করা যায়। তাই জানতে চাইতেছি। আর প্রিয়ন তার বিবর্তনের সৃতি কোথায় ধরে রাখে অথবা কোন সৃতির আলোকে সে কপি হয় তা ই জনতে চাইতেছি। নিচে পৃথিবী ভাই একটি ভাল কথা বলেছেন যে অন্য কোন এজেন্ট থাকতে পারে। কিন্তু প্রিয়নে আমরা কি কোন প্রটিন ব্যাতীত অন্য কিছু পাই।
প্রিয়নের বিবর্তনে কিভাবে এভু ডেভুর ব্যাক্ষা ব্যাবহার করা হতে পারে?
আরেকটি বিষয় মাথায় ঘুরতেছে, তা হচ্ছে এক ধরনের মলিকোল (অজৈব্য) আছে যা নির্দিষ্ট দ্রবনে দিলে নিজের কপি করতে পারে বা কপি হতে থাকে, উদাহারন গুলি ভুলে গিয়েছি, যখন পড়ে ছিলাম তখন-ই মনে হয়েছিল, বিবর্তনের সাথে এর কোন মিল দেখানো যেতে পারে। এ বিষয়ে আপনার কি মত?
@ফুয়াদ,
এভুডেভু নিয়ে না হলেও প্রিয়ন নিয়ে আমি আমার বই “মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে” বইয়ে ডিটেল বলেছি। আপনি দেখে নিতে পারেন। প্রিয়ন অনেকটা ভাইরাসের মত কাজ করে। যদিও এদের আকার এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচাইতে ছোট ভাইরাসের একশ ভাগের এক ভাগ থেকে শুরু করে এক হাজার ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত। আর এগুলো এতই সরল যে এর মধ্যে জেনেটিক উপাদানও নাই, এগুলো স্রেফ প্রোটিন দিয়ে তৈরী। ভাইরাস আর ভিরইডসের মত এরাও জীবকোষে ঢুকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার দখল নিয়ে নেয়। গবাদি পশু বিশেষত ভেরার মধ্যে স্ত্রাপি এবং গরুর মধ্যে ‘ম্যাড কাউ’ রোগের জন্য এই প্রিয়নগুলোকে দায়ী করা হয়। এখন কিভাবে প্রিয়ন কাজ করে তা বুঝতে হলে প্রাণ উৎপত্তির প্রারম্ভে কিভাবে আদি প্রোটিনগুলো রেপ্লিকেশনের ক্ষমতা অর্জন করেছিলো তা বুঝতে হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব আছে। স্যান ডিয়াগোর ইন্সটিটিউটের রেজা ঘাদিরি (Reza Ghadiri ) এবং অন্যান্যরা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে কিছু পেপটাইডের অর্থাৎ প্রোটিনের শিকল সত্যি সত্যি নিজে থেকে প্রতিরূপায়ন ঘটাতে পারে। আমি তাদের গবেষণার কথা আমার বইয়ে উল্লেখ করেছিলাম। দেখে নিতে পারেন। এ ছাড়া এবারের ডিস্কোভার ম্যাগাজিনেও তাদের পরীক্ষা নিয়ে ছোট একটি নিউজ দেয়া হয়েছিলো।
আপনি যেটার কথা বলছেন তাকে বলে ক্রিস্টাল বা কেলাস। এটা নিয়েও আমি আমার বইয়ে লিখেছি। জড় পদার্থের ক্ষেত্রে কেলাস ক্ষুদ্র মাপের কেলাস কণাকে আশ্রয় করে ‘জন্ম’ নেয়। আবার অনাদরে ফেলে রাখলে কেলাসের জ্যামিতিক অবয়ব বিনষ্ট হয়, যা এক প্রকার ‘মৃত্যু’। কেলাসের বৃদ্ধি তো আছেই। কেলাসের কণা তরল দ্রবণের মধ্যে অথবা গলিত পদার্থের মধ্যে তার স্বজাতিকে নির্বাচন করে ‘অবিকল নকলরূপী ভবিষ্যতের সৃষ্টি করতে’ পারে- ফলে জন্ম নেয় দ্বিতীয় প্রজন্মের কেলাস। কিন্তু এত মিল থাকা সত্ত্বেও আমরা সকলেই জানি কেলাস জীবিত পদার্থ নয়, এবং জীবজগতের বিবর্তনের সাথে কোন সম্পর্ক নেই – কারণ কেলাসের খাদ্য-শোষনের ব্যবস্থা নেই, বিপাক প্রক্রিয়া নেই, নেই আর কোন জটিল শারীরিক প্রক্রিয়া।
@ফুয়াদ, আচ্ছা, এবার মনে হয় বুঝলাম আপনার প্রশ্নটা। এভু ডেভু খুব নতুন ফিল্ড, আমি নিজেও পড়ছি গত এক বছর ধরে। এর উপরে ৫-৭টা বই এবং সাইন্স জারনালগুলোর লেখা পড়ে এখন পর্যন্ত যা বুঝলাম, এরা এখনও অপেক্ষাকৃত জটিল প্রাণী, যাদের ডিএনএর বিবর্তন ঘটে গেছে তাদের নিয়েই কাজ করছে। অর্থাৎ ভ্রূণাবস্থায় কোন জিন অথবা জিনের সুইচ কোন গঠন তৈরির জন্য দায়ী এবং তারা কিভাবে জীবের বিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে এ নিয়েই তাদের কাজ। এখান থেকে নতুন যে বিষয়টা উঠে আসছে তা হলো, জৈব-বৈচিত্রের জন্য নতুন নতুন জিন তৈরির দরকার নেই, বিদ্যমান জিনের এদিক-ওদিক করেই প্রকৃতিতে অনেক জটিল বৈশিষ্ট্য এবং সেখান থেকে নতুন নতুন প্রজাতি তৈরি হতে পারে। এ ব্যাপারে আমি এখন পর্যন্ত যা পড়েছি তাতে করে মনে হচ্ছে না যে এভু ডেভুর বিজ্ঞানীরা প্রিয়নের মত আদিম প্রকৃতির প্রাণী নিয়ে এখনও কাজ করছেন। হয়ত ভবিষ্যতে করবেন বা আমি আরও পড়লে এব্যাপারে আরও কিছু জানতে পারবো।
প্রশ্নটার জন্য ধন্যবাদ, আমাকে আলাদা করে এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হল, এ ধরণের প্রশ্নগুলো আসলে কন্সেপ্ট ক্লিয়ার করতে সাহায্য করে।
@বন্যা আহমেদ,
অনেকদিন পর লেখাটায় মন্তব্য করছি বলে দুঃখিত। হয়তো এরমধ্যেই আপনি বা আর কেউ অন্য কোথাও এ সম্পর্কে বলেছেন…
কোথাও প্রিয়ন নিয়ে লেখা পড়লেই আমার পাড়ার বখাটে ছেলেটির কথা মনে পড়ে যায়। বখাটে ছেলেটির সংস্পর্শে এসে সুবোধ ছেলেগুলোও বখাটে হয়ে যায়; পাড়ায় বখাটের সংখার সূচকীয় বৃদ্ধি ঘটে। আসলে প্রিয়ন কোন প্রানী নয়, আমাদের দেহেরই একটি প্রোটিন যার সেকেন্ডারী স্ট্রাকচার আদি প্রোটিন থেকে আলাদা। আদি স্বাভাবিক প্রোটিনটি প্রিয়নের (সংক্রমনের মাধ্যমে ছড়ানো) সংস্পর্শে এসে নিজের সেকেন্ডারী স্ট্রাকচারটি ওই প্রিয়নের স্ট্রাকচারে পালটে নেয়। মূলত এভাবেই নতুন প্রিয়ন তৈরী হয়। আমার জানা যদি ভুল না হয়ে থাকে, কখনও কখনও আদি প্রোটিনের ডিএনএ মিউটেশনও স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রিয়ন তৈরী করতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষনা থেকে জানা যাচ্ছে যে একই প্রিয়নের সেকেন্ডারী স্ট্রাকচারের ভাঁজ (ফোল্ডিং) বিভিন্ন রকমের হতে পারে। ভাঁজের ধরন প্রিয়নকে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে সাহায্য করে। ধরা যাক প্রিয়নের একধরনের ভাঁজ কোষের প্রোটিন ভেঙ্গে ফেলার যে স্বাভাবিক পদ্ধতি তা প্রতিরোধ করতে পারে, কিন্তু একই আদি প্রোটিন থেকে আসা অন্যসব ভাঁজের প্রিয়নগুলো তা পারে না। এক্ষেত্রে ডারউইনের থিউরী মেনে প্রথম ধরনের ভাঁজের অধিকারী প্রোটিনগুলো টিকে যাবে এবং আদি প্রোটিন থেকে অবিকল নিজের মত ভাঁজের প্রিয়ন বানাবে। অন্যসব ভাজের প্রিয়নগুলোকে কোষের প্রোটিন বিধ্বংসী পদ্ধতি ভেঙ্গে ফেলবে; তাই তারা আর নিজেদের ভাঁজের প্রিয়ন বানানোর বা সংখা বৃদ্ধির সুযোগ পাবে না। যদি এই গবেষনাগুলো থেকে পাওয়া তথ্যগুলো ঠিক হয় তাহলে বোঝাই যাচ্ছে ডিএনএ মিউটেশন ছাড়াও প্রোটিনের অভিযোজনের ক্ষমতা রয়েছে।
@ফুয়াদ, ডিএনএ-আরএনএ ছাড়াও বিবর্তন ঘটতে পারে। গ্লাসগাউয়ের রসায়নবিদ গ্রাহাম কেয়া্র্নস স্মিথ তাঁর “Seven clues to the Origin of life” গ্রন্থে প্রস্তাব করেছেন যে ডিএনএ-আরএনএর আগেও কিছু replicating agent ছিল যারা বেঁচে থাকার সংগ্রামে DNA-RNA এর মত পারদর্শী না হওয়ায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই প্রকল্প এখনও প্রমানিত হয়নি, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অন্তত নেওয়া যায় যে DNA-RNA ছাড়াও অন্য replicating agent থাকতে পারে।
@পৃথিবী,
হ্যা আমি এগুলো নিয়েয় চিন্তা করতেছি। বন্যা আপাকে করা প্রশ্নগুলি একটু দেখতে পারেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
“Seven clues to the Origin of life” আচ্ছা এই বইটি কি অনলাইনে পাওয়া যাবে?
অথবা উনার প্রস্তাবনার যুক্তি বা কারন গুলি কি আপনি জানেন? যদি জেনে থাকেন, তাহলে একটু শেয়ার করেন আমাদের সাথে।
@ফুয়াদ, আমি আসলে উনার প্রস্তাবনা সম্পর্কে জেনেছি রিচা্র্ড ডকিন্সের “ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার” বইটি থেকে। স্মিথ সাহেব একটা প্রকল্প উপস্থাপন করেছেন যা প্রমান করার দায় বিজ্ঞানীদের উপর বর্তায়। আমি যেহেতু বিজ্ঞানী না, তাই আমি তত্ত্বের দিকেই বেশি আগ্রহী।
ডকিন্স বইটির Origins and miracles অধ্যায়টির পুরোটাতেই এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং এর স্বপক্ষে স্মিথ যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা ব্যাখ্যা করেছেন(আমার যতদূর মনে পড়ে, তিনি অভিজিতদার ক্রিস্টালের কথাই বলেছেন)। আপনি বিদেশে থাকলে বইটা টরেন্ট দিয়ে নামিয়ে নিতে পারেন, ডকিন্সের বই খুবই সহজলভ্য।
দারুণ লাগল।বন্যা আপার কাছ থেকে একটা অসাধারণ সিরিজের অসাধারণ সূচনা।পরের পর্ব গুলোর আশু আগমন চাই।
খুবই তথ্যবহুল লেখা।
বহুবাদ শোনা একটি কথার ব্যাখ্যা মনে হয় এবার পাওয়া যাবে। প্রায়ই শুনি গরিলা না কিসের সাথে মানুষের ৯৭% জীনগত মিল, জবা ফুলের সাথে মনে হয় ৩০% মিল। সংগত কারনেই মনে প্রশ্ন আসত যে আমার সাথে জবা ফুলের ৩০% মিল এমন কথার মানে কি? আমি তো সাদা চোখে তেমন মিল দেখি না।
অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বে এর পূর্ণ সমাধান পাবার আশায়। পাওয়া না গেলে তো প্রশ্নবান তোলা রইল।
তবে এ মুহুর্তে আমার ইচ্ছে করছে কোনভাবে আমার জীনে একটু অদল বদল করে যদি পিঠে এক জোড়া পাখা গজানো যায়। আকাশে উড়ে বেড়াবার শখ বহুদিনের। সম্ভব কিনা জানালে বাধিত হব।
@আদিল মাহমুদ, আচ্ছা আপনি এত কষ্ট করেন কেন বুঝিনা, ব্লগে এসে লেখার আগে ঘরের লোককেই তো জিগাইতে পারেন। আপনার কুত্তাটা তো আপনার চেয়ে বিবর্তন সম্পর্কে বেশি পড়াশোনা করসে এবং বেটার ধারণা রাখে। আমি নিশ্চিত যে আপনার প্রশ্নের জবাবটা উনি জানবেন।
@বন্যা আহমেদ,
সে খুব মুডি। আপনার মতন সদাশয় না। মুড ভাল থাকলে মাঝে মাঝে সাহায্য করে, আর নয়ত দাত খিচায়। আর আপনার বই তার আয়ত্বের থেকে নিয়ে যাবার পর থেকে এমনিই তার মেজাজ বেশী ভাল নেই।
আর; ‘উনি’ কিন্তু “কুত্তা” নন মোটেও; একজন সম্মানিতা কুকুরী।
চমৎকার লেখা, অসাধারণ বর্ণনায় অনেক গুলো কঠিন বিষয়কে সহজ করে লেখার জন্য ধন্যবাদ।
স্বজাতির প্রাণীর প্রতি তার ন্যুনতম কৃতজ্ঞতাবোধ না দেখিয়ে এসব বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই শুধু ইঁদুরকে মানুষ বানিয়েই ফেলে নাই, মানুষকে ভেড়া বানিয়েছে, এমন কি ছাগল ও গরু পর্যন্ত বানিয়ে ছেড়েছে। ভেড়া হওয়ার জন্য কাউকে আর আদিকালের কামরূপ-কামাক্ষ্যার কূহকিনীর কাছে যেতে হবে না। কি সব্বোনেশে কারবার রে বাবা!
বন্যা,
দারুন হয়েছে, শীতের প্রত্যুষে চুলা থেকে নামানো গরম পিঠার মতোই গোগ্রাসে গিললাম। হিউম্যান জেনোম প্রজেক্টের খবর ভাসা ভাসা জানেলও এই এভু ডেভুর খবর কিছুই জানতাম না।
ভাল লাগেলা বন্যা ধন্যবাদ অাপনাকে।
অন্যদেরকে বলছি বৈজ্ঞানিক অাবিষ্কারের খবরের মধুর রসে মন রাঙগাতে অসুবিধে হয়, যাদের এ লেখাটা বুঝতে অসুবিধা হয় তারা কষ্ট করে ইবুকে রাখা বিবতর্নের পথ ধরে বইটি একবার ভাল করে পড়ে নিবন।
@আব্দুল হক,
:yes: :yes: :yes: :yes: :yes:
তাহলে রোবোটিক্স করে লাভ নেই-জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে সুপার ম্যান বানানোই ভাল। তাতে অনেক বেশী লাভ আছে।
সুপারম্যান বানানোতে অনেক অনেক ঝামেলা আছে। ঝুকি, মানবাধিকার এসবের কথা উঠবেই, এছাড়া ঝুকিপূর্ণ কাজে বুদ্ধিমান ডিজিটাল রোবট নিয়োগ দেয়াই যুক্তিযুক্ত।
একটা কথা তোকে স্পষ্ট করে বলে দেই – তুই যদি আমার বন্ধু না হতি এই লেখাটা কিন্তু আমি মোটেই পড়তাম না! এখন, বাধ্য হয়ে পড়ে, একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি – ইয়ে, ভালো হইসে, পরের পর্বটাও মনে হয় পড়েই ফেলবো 🙁
@ ওরে স্নিগ্ধা, এটা কি করলি তুই? গল্প কবিতা সাহিত্যের উচ্চমার্গ থেকে কোথায় নামলি তুই? তোর এই ‘ফ্রি ফল’ আমার পক্ষে সহ্য করা কঠিন। স্টিফেন যে গুল্ড ধর্ম আর বিজ্ঞানকে ‘Nonoverlapping Magisteria’ বলতো, আমি তোর আর আমার ইন্টেরেষ্টকেও সারাজীবন এরকমই ‘Nonoverlapping’ বলে মনে করতাম। দিলি তো সব শেষ করে!
@বন্যা আহমেদ,
শোন, ‘ফল’টা ফ্রি ছিলো না রে – ধাপে ধাপে ধাক্কা খাইতে খাইতে পড়সি রে 🙁 যাকগা – ইন্টারেস্ট এখনও nonoverlapping ই আছে, দুশ্চিন্তা করিস না – তুই লিখবি মানব বিবর্তনের (আচ্ছা, তুই আদম-হাওয়া কাপলটাকে পছন্দ করিস না কেন বল তো? আমার তো বেএএশ লাগে!) উপর মহৎ সব বই, আর আমি …… আমি …… মানে, আমি পড়বো দস্যু মোহন, কিংবা ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, কিংবা ড্যানিয়েল স্টীল ………
@স্নিগ্ধা, তুই বোধ হয় জানিস না যে, আদম হাওয়া মোটেও কোন সুখী কাপল ছিল না। সাপের প্ররোচনায় হাওয়া আপেল খাওয়ায় আদমকে পৃথিবীতে ডিমোটেড করানোর কারণে আদম অনেক ডিপ্রেসড থাকতো এবং সবসময় এই ‘সিন’ এর জন্য হাওয়াকে দোষারোপ করতো। তারপর হাওয়া জোর করে তাকে সাইকিয়াট্রিষ্টের কাছে পাঠানোর পর তাদের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। কড়া আ্যন্টিডিপ্রেসেন্ট এর প্রভাবে আদম হাওয়াকে প্রায়ই মৌখিক এবং শারীরিকভাবে অত্যাচার করতো, তাদেরকে প্রায়শই ম্যারেজ কাউন্সিলার এর অফিসে বসে থাকতেও দেখা যেত, কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয় নাই। আদমের পাজড়ের হাড়টা তো আর হাওয়া খুলে দিয়ে হেটে চলে যেতে পারে না, তাই তার পক্ষে ডিভোর্স করাও সম্ভব হয় নাই কোনদিন…… বেচারা হাওয়া!!!
কোন কাপল সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে তাদের ভিতরের খবরগুলা একবার জেনে নেওয়ার চেষ্টা করিস। আর এরপরও যদি তোর এই কাপলটাকে ভালো লাগে তাহলে কর্নেলে তোর ডিপার্টমেন্টের নারীবাদীদের কিন্তু খবর দিব।
বন্যা, পড়লাম । বরাবরের মতোই সুখপাঠ্য । তোমার লেখার ষ্টাইলের জন্যই বিবর্তনের মত খটোমটো বিষয় ও পড়তে ভালো লাগে । ভাবতে ভালো লাগে বিবর্তনের মত বিষয় তুমি বাঙ্গালী/বাংলাদেশীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছ । আমাদের এখনকার প্রজন্মের জন্য তাই আশার আলো দেখি-যারা আমাদের মত অন্ধকারে হাবুডুবু খাবে না ।
:yes:
@নন্দিনী, কি আশ্চর্য, নন্দিনী… অনেকদিন পর। খুব ভালো লাগলো তোমাকে দেখে। আছো কেমন?
৩ বছর আগে বিবর্তনের বইটা লেখার সময় মনে হত দেশে কেউ এটা নিয়ে কিছু বলে না কেন। এখন তো দেখি অনেকেই এসব বিষয় নিয়ে লিখছে, জানতে চাচ্ছে, এই ব্লগেই দেখো কতজন লিখছে। দেশে গিয়ে এবার খুবই ভালো লাগলো, হাজারও ঝামেলা আর সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দেশে এত ভালো লাগবে তা কিন্তু আগে বুঝতে পারি নাই।
@বন্যা আহমেদ,
সেটাই ।
আমার মনে হয় কি জানো?”ধর্ম’ নিয়ে চিৎকার কম করে বাঙ্গালীদের, বিশেষ করে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের যদি কোনমতে ‘বিবর্তন’ এর প্রতি আগ্রহী করে তুলে যায় তাহলেই অনেকটা কেল্লাফতে । 🙂
অসাধারণ সূচনা। সন্দেহ নাই যে, এভল্যূশনারি ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি তথা এভু ডেভু এর গুরুত্ব এখন সবচেয়ে বেশি। এটা ছাড়া কিছু হবে না।
বিবর্তন বিরোধীরা সাধারণত মাথা মোটা টাইপের হয়, জানে না কিচ্ছু। সুনির্দিষ্ট তত্ত্বের মাধ্যমে অতীতকে ব্যাখ্য্যা করার বিষয়টা তাদের কাছে অনেক জটিল লাগে। কিন্তু চোখের সামনে ঘটছে এবং বিবর্তনের প্রায়োগিক উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে- এগুলো তুলে ধরলে তাদের আর কিছু বলার থাকে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিবর্তনের প্রয়োগ এদিক থেকে একটা বড় প্রমাণ হিসেবে কাজ করে, এভু ডেভুটা সবার কাছে বোধগম্য করে তোলাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, রকেট নিক্ষেপ না করে দেখালে সাধারণ মানুষকে কোনভাবেই বোঝানো যেতো না যে, নিউটনের তৃতীয় সূত্র সত্যি। সূত্র কেউ জানতে চায় না, সূত্র কি কাজে দেয় এটাই সবার দেখতে চায়। এভু ডেভু নিয়ে লেখাটা তাই এমন হতে হবে যাতে সবাই চোখের সামনে দেখতে পায় সবকিছু।
এই লেখা পড়ে এভু ডেভুর সংজ্ঞা এবং এটা ঠিক কি নিয়ে কাজ করে সেটা বোঝা গেছে, পুরা ক্লিয়ার। সাথে সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন পাওয়া গেছে। পরের পর্বগুলোতে এই পর্বে উল্লেখিত সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সেই আশাই করছি। ভ্রূণতত্ত্ব কিভাবে বিবর্তনে বিপ্লব এনেছে সেটাই এখন মূল প্রশ্ন? দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম…
@শিক্ষানবিস,
” কিন্তু চোখের সামনে ঘটছে এবং বিবর্তনের প্রায়োগিক উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে- এগুলো তুলে ধরলে তাদের আর কিছু বলার থাকে না।”
এক্কেবারে খাটি কথা। অভিজিতকে কিছুদিন আগে বলেছি। ১০০ টা বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীর প্রতিষ্ঠিত গবেষনাপত্রের থেকে একটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ একজন সাধারন মানুশের কাছে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সত্যি কথা বলতে আমি নিজে, এবং আরো বহুজনে একই কারনে বিবর্তনবাদের প্রতি এ কারনেই আমার ধারনা তেমন আগ্রহ বোধ করে না।
বিবর্তনবাদের প্রয়োগের খবর এভাবে আরো বেশী বেশী করে দিতে হবে। তাতে আর হারুন ইয়াহিয়া টাইপ বিজ্ঞানীদের যুক্তি কারো কষ্ট করে খন্ডন করতে হবে না।
এখনও অনেক মানুষের ধারণা বিবর্তন প্রত্যক্ষ্ করা যায়না বা কোনো গবেষণায় প্রয়োগ করা যায় না। সময় এসেছে মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বিবর্তনের প্রয়োগ দেখিয়ে দেবার