মানুষ তার মেধা আর প্রজ্ঞাকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছে তার দূরন্ত রূপ, সাথে সাথে স্থাপত্যকলার বিস্ময় আর গর্ব, প্রযুক্তির শীর্ষতম বাস্তবায়ন ক্যালিফোর্নিয়ান শহর স্যান ফ্র্যান্সিসকোর গোল্ডেন গেইট ব্রিজ। নির্মাণকালীন সময়ে এটি ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু আর দীর্ঘ সাসপেনশান(ঝুলন্ত) ব্রিজ। সে-সময়কার প্রযুক্তি আর ব্রিজ এলাকার চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতে প্রায় অকল্পনীয় ঠেকলেও, মানুষ কিন্তু ঠিকই তৈরী করে ফেলেছিলো সেই ব্রিজ। তবে, ব্রিজ মানুষ তৈরী করলেও ‘গেইট’ কিন্তু তৈরী করেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থপতি, সবচেয়ে বড় শিল্পী-প্রকৃতি। প্রকৃতির চেয়ে আর বড় কোনো শিল্পী নেই। দুইপাশের দুই স্থলভূমির মাঝখানে ভেদ করে প্রশান্ত মহাসাগরের জলরাশি প্রবেশ করেছে এখানকার স্যান ফ্র্যান্সিসকো বে (bay) এরিয়াতে। প্রকৃতির দেয়া সেই অপূর্ব প্রবেশ পথেরই মানুষের দেয়া নাম গোল্ডন গেইট। মানুষ সেই প্রবেশপথের নামকরণের সাথে তার উপর তৈরী করেছে বিস্ময়কর এক সেতু।
- ছবিঃ বামে ক্যালিফোর্নিয়ার মানচিত্রে গোল্ডেন গেইটের অবস্থান, ডানে বড় করে দেখানো
অনন্য গোল্ডেন গেইটের উপর যদি ব্রিজ বানাতে হয়, তাহলে সেই ব্রিজকেও হতে হবে অনন্য। কিন্তু, প্রকৃতি যেমন করে নিজের খুশি মত বিনা খরচে জটিল সব স্থাপনা সৃষ্টি করে ফেলে, তেমন করে সৃষ্টি করতে পারে না মানুষ। প্রকৃতির প্রয়োজন হয় শত-সহস্র বছর সময়ের; মানুষের প্রয়োজন হয় বুদ্ধির, বিচার-বিবেচনার; প্রয়োজন হয় কঠোর পরিশ্রমের আর সর্বোপরি প্রয়োজন হয় অর্থের। ১৯৩০ সালের দিকে যখন এই ব্রিজ তৈরী কথা হচ্ছিল, তখনকার অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থার মধ্যে আমেরিকার কেন্দ্রীয় কিংবা রাজ্য সরকারের পক্ষে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্রিজ নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫ মিলিয়ন ডলার দেবার সামর্থ ছিল না। সেই সময়ের হিসেবে সেটা অনেক টাকা। কিন্তু, যাদের বর্তমানে স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের গর্বের উপলক্ষ হবে এই ব্রিজ, সেখানকার মানুষজনই-বা কিছু না করে বসে থাকবে কেন! স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের বাড়ী-ঘর-সম্পত্তি, খামার-ব্যবসা-ভূমি, যার যা কিছু আছে সব ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে জোগাড় করে ফেললো প্রয়োজনীয় অর্থ।
শেষ পর্যন্ত টাকা হলো, নকশা হলো, প্রস্তাবনা হলো, বাকী সব কিছুও প্রস্তুত হলো। কিন্তু, কাউকে না কাউকেতো বেঁকে বসতে হবে। এত বড় একটা কর্মে কেউ বেঁকে বসবে না সেটা যে শুনতেও খারাপ শোনায়। অতএব, বেঁকে বসার ঐতিহ্যবাহী ধারা অনুসরণ করে বেঁকে বসলো আমেরিকান ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টগুলো। আর্মি, নেভী, এয়ার ফোর্স। তারা আবার একসাথে বেঁকে বসে না। আলাদা আলাদা করে বেঁকে বসে। সবাই যখন খেলা শুরুর জন্য মাঠে নেমে গেছে, তখন মিলিটারি বলে আমরা খেলবো না। তাদের যুক্তি- বোম মেরে যদি এই ব্রিজ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়, তাহলে সব জাহাজগুলো বে-এরিয়ার ভিতরে আটকা পড়ে থাকবে, বের হবার উপায় থাকবে না, অতএব এই ব্রিজ করা ঠিক হবে না। ভাগ্যিস সে-সময়কার আমেরিকাতেও পলিটিশিয়ান নামক মানুষগুলো ছিলো। তারা যখন গাল ফুলিয়ে থাকা কিশোরীর মত, কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো চকলেট কিনে দিবো, তখন মিলিটারি বললো, ঠিক আছে আমরা খেলবো, তবে, ব্রিজে উজ্জ্বল রঙের ডোরা কাটা দাগ করে দিতে হবে। রেফারী পলিটিশিয়ানরা বললো, ঠিক আছে, এমন উজ্জ্বল রঙ করে দেব, মঙ্গল গ্রহ থেকেও দেখা যাবে।
মিলিটারি যখন এদিকে রঙ নিয়ে কিছু একটা বলাবলি করছে, ওদিকে নেভি’রতো প্রায় জাত যায় যায় অবস্থা। এবার যে ওদের অভিমান করার পালা। ওরা বলে, এত কিছু বুঝিনা, ব্রিজে ডোরা কাটা রঙ হবে হোক। কিন্তু, সে রঙ হতে হবে কালো আর হলুদ, এ আমাদের সাফ সাফ কথা। কিন্তু, কালো আর হলুদ রঙ কেন? তার জন্যতো একটা যুক্তি থাকতে হবে। রামগরুড়ের ছানা আর ঘোড়ার ডিম অধ্যুষিত দুনিয়ায় যুক্তির কি আর অভাব আছে। ওরা বলে, যেহেতু এই এলাকাটা ব্যাপক কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, একমাত্র কালো আর হলুদ রঙ করলেই আমাদের নেভি ক্রু’রা সেটা দেখতে পাবে। সমাধান যেভাবে হবার কথা ছিলো সেভাবেই হোলো। পলিটিশিয়ানরা খানিকটা চকলেট বেশি করে কিনে নিলো। যা বাবা চকলেট খা, তারপরও শান্ত থাক।
এইতো গেলো মিলিটারি আর নেভি। রইলো বাকী এক। এয়ার ফোর্স। নেভি যেহেতু বললো কালো, তাদেরকে বলতে হবে সাদা; নেভি যেহেতু বললো হলুদ, তাদেরকে বলতে হবে লাল। অতএব, তারা এসে বায়না ধরলো গোল্ডেন গেইট ব্রিজের রঙ হবে লাল আর সাদা। একমাত্র এই কালার কম্বিনেশান হলেই বৈমানিকরা সেটা আকাশ থেকে পরিষ্কার দেখতে পাবে। কিন্তু, অভিমানী কিশোরী আর বিদ্রোহীদের বালকের মন বুঝতে পারা রাজনীতিবিদরা সে-সময় শুধু মুচকিই হেসে গেছেন।
- ছবিঃ উপরে দুটি ছবি উইকিপিডিয়া এবং নীচের ছবিটি হিস্ট্রি ডট কম এর সৌজন্যে
তবে, ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টগুলোর কথা যে একদম ফেলনা ছিলো তা কিন্তু নয়। সেই সময় গোটা বিশ্বই অস্থির সময় পার করছিলো। বিশেষ করে সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরী হবার সময়। প্রতিরক্ষা বিভাগগুলোকে বুঝে-শুনে কদম ফেলতে হচ্ছিলো। অন্যদিকে, প্রতিনিয়তই গোল্ডেন গেইট এরিয়া ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায়, ব্রিজ হলে সেটা যে নৌ-চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। তবে, সেটার অন্য সমাধান ছিলো। মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলাতো আর সমাধান হতে পারে না। অবশেষে, অত্যন্ত যৌক্তিক-মহাযৌক্তিক লাল, সাদা, কালো, হলুদ ডোরা কাটা, বিভিন্ন রং-বেরঙের প্রস্তাবের পর, ডোরা আর কাটা কুয়াশার মত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়ে গোল্ডেন গেইট ব্রিজের একমাত্র রঙ হলো ‘ইন্টারন্যাশনাল অরেঞ্জ’।
- ছবিঃ মাত্র পাঁচ মাইল দূরেও রৌদ্রজ্জ্বল শহর, কিন্তু গোল্ডেন গেইট যেন মেঘ-কুয়াশার বাড়ী
সব সমস্যা সমাধান। এবার ব্রিজ নির্মাণের পালা। মূল ডিজাইনার কবি এবং প্রকৌশলী জোসেফ স্ট্রস। এ-পর্যায়ে আসার অনেক আগে, সেই সময়কার স্যান ফ্র্যান্সিসকোর শহর প্রকৌশোলীরা গোল্ডেন গেইট ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট পেশ করে। সে টাকা জোগাড় করা সে সময়ে ছিলো অসম্ভব। তার উপর সমস্যা হলো গোল্ডেন গেইট এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রচণ্ড জলস্রোত। উপরে প্রতিকূল কুয়াশাচ্ছন্ন, মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশতো আছেই। সব মিলিয়ে সেখানে ব্রিজ হবার কোনো সম্ভাবনাই তারা দেখেননি। কিন্তু, সব কিছু সত্ত্বেও স্ট্রস এগিয়ে এসেছিলে ব্রিজ করার জন্য। তাও আবার ৩৫ মিলিয়ন ডলারে। একজন কবির পক্ষে অবাস্তব কল্পনা করা মানায়, কিন্তু, স্ট্রস যে শুধু কবি নন, প্রকোশলীও বটে। তাই, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য এর চেয়ে খাঁটি মানুষ আর কে হতে পারতো!
কবির মন মানবিক। সে সত্য সমুন্নত রেখে, অন্য আর সবকিছুর সাথে সাথে স্ট্রস গুরুত্ব দিলেন নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যাপারে। ১৯৩০ এর দশকে একটা অলিখিত নিয়ম ছিলো, প্রতি এক মিলিয়ন ডলার প্রজেক্টে এক জন মাত্র শ্রমিকের দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু গ্রহণযোগ্য হতে পারে। অতএব, ৩৫ মিলিয়ন ডলারের গোল্ডেন গেইট প্রজেক্টে সর্বোচ্চ ৩৫ জনের মৃত্যু গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু, স্ট্রস ততটুকু মানতেও নারাজ। তিনি একশ তিরিশ হাজার ডলার খরচ করে কনস্ট্রাকশান এরিয়ার নীচে নেট ঝুলানোর ব্যবস্থা করলেন। পরবর্তীতে সেটি ১৯ জন শ্রমিকের জীবনও রক্ষা করেছিলো। যারা নিজেদেরকে “Halfway to Hell Club” এর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিন্তু, তারপরও গোটা ব্রিজ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ১১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর মাঝে, ৫টন ওজনের স্তম্ভ সেতু থেকে ভেঙ্গে পড়ে নেট ছিঁড়ে গেলে, একই দিন মৃত্যু ঘটে ১০জন শ্রমিকের। সেই সময়কার অন্য আর সব নির্মাণ ব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে এটি ছিলো রেকর্ডধারী নিরাপদ প্রজেক্ট। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্মিত, ১৯৩৭ সালের ২৭ শে মে উন্মুক্ত করে দেয়া, ছয় লেন বিশিষ্ট এই গোল্ডেন গেইট ব্রিজের উপর দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিনে এক লক্ষেরও বেশি যান চলাচল করে থাকে। গোল্ডেন গেইট ব্রিজ নির্মাণের সময় যারা কাজ করেছিলেন বর্তমানে তাদের মধ্যে কেউই বেঁচে নেই। সর্বশেষ, ২০১২ সালের এপ্রিলে একমাত্র বেঁচে থাকা ব্যক্তি জ্যাক বেলেস্ট্রেরির মৃত্যু হয়।
- ছবিঃ গোল্ডেন গেইট ব্রিজের মূল ডিজাইনার জোসেফ স্ট্রস
এত গেলো দূর্ঘটনা কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা। অপরদিকের, অত্যন্ত অনাকাঙ্খিত এক সত্য হলো, গোল্ডেন গেইট ব্রিজ আত্মহত্যা করার জন্য বিশ্বের অন্যতম কুখ্যাত এক স্থান। ১৯৩৭ সালে ব্রিজ চালু হবার মাত্র তিন মাসের মাথায় ‘উবার’ নামক এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে এখনো পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ এর বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। এখনো প্রতি দুই সপ্তাহে গড়ে একজন করে আত্মহত্যা করে এখানে। ২৪৫ ফুট উঁচু ডেক থেকে লাফ দেয়ার ফলে ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে পানিতে আঘাত লেগে থাকে। তবে, বেশিরভাগই মৃত্যুবরণ করে ভয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মত ঠাণ্ডা তাপমাত্রায়। এখনো পর্যন্ত আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের মধ্যে শতকরা মাত্র ২ ভাগ কোনো ভাবে বেঁচে গেছেন, কিন্তু তাতে করে পরবর্তীতে তারা আর সুস্থভাবে হাঁটাচলা করতে সমর্থ হননি। সারা রাটলেজ নামক একজন প্রথমবার আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে যান এবং হাঁটতেও সমর্থ হন। তাতে করে তিনি হেঁটে গিয়ে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় আত্মহত্যা করেন। বর্তমানে, পরামর্শ সেবা প্রদানের জন্য ব্রিজে রাখা আছে ১১টির মত টেলিফোন, আত্মহত্যাকারী যদি শেষ মূহুর্তে টেলিফোনে কিছু বলার চেষ্টা করেন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পরামর্শপ্রদানকারীরা আত্মহত্যাকারীদের নিবৃত্ত করার সমস্ত চেষ্টা করে থাকেন।
- ছবিঃ রোদেলা দিনের পড়ন্ত এক বিকেল গোল্ডেন গেইট ব্রিজ
ছয় লেন বিশিষ্ট গোল্ডেন গেইটের ঠিক মাঝখানে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থেকে আমি শুনছিলাম পেছনের দিকে দ্রুতগতিতে চলে যাওয়া গাড়ির শব্দ। ব্রিজের একদিকে ছোট্ট অ্যালক্যাটরাজ আইল্যান্ড। তার চারপাশে সাদা পাল তোলা নৌকাগুলো রূপার মত চকচক করছে। অন্যদিকে, সুবিশাল প্রশান্ত মহাসাগর। বামে পাহাড়, ডানে রূপসী শহর স্যান ফ্র্যান্সিসকো। যেখান থেকে লাফিয়ে পড়ে মানুষ আত্মহত্যা করে, সেরকমই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে অনেক নিচে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে চেষ্টা করলাম, আত্মহত্যার জন্যই কি এই ব্রিজ। মনে হলো, নাহ্! এই পৃথিবী অতিরিক্ত রকমের সুন্দর একটা জায়গা!! আত্মহত্যা’তো দূরে থাক, বরং একটা সেকেন্ডও বেশি বেঁচে থাকার সুযোগ পেতে ৩৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজী আছি!!! স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে থাকুক সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর মানুষগুলো। কারো জীবনে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার উপলক্ষ্য না আসুক। যে মানুষের কীর্তি আর মহিমা ঘোষণা করতে সটান দাঁড়িয়ে আছে গোল্ডেন গেইট ব্রিজ, আত্মহত্যার মত এমন এক আমানবিক কাজ সে মানুষকে যে মানায় না। আর কিছু না হোক, এক অর্থে শুধুমাত্র বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে পারাটাই কম গৌরবের ব্যাপার নয়, কম সাফল্যের ব্যাপার নয়; তার মানেই ‘জীবন’! তার নামই ‘জীবন’!! অমূল্য সে জীবন!!!
মইনুল রাজু (ওয়েবসাইট)
[email protected]
স্টেইটস্ অব আর্ট সিরিজের অন্যান্য পর্বগুলিঃ
:: নিউইয়র্ক (প্রথমার্ধ) :: নিউইয়র্ক (দ্বিতীয়ার্ধ) :: পোর্টল্যান্ড (ওরিগন) :: সিলিকন ভ্যালি (ক্যালিফোর্নিয়া) :: ওয়াশিংটন ডিসি :: ডেট্রয়েট (মিশিগান) :: রিচ্মন্ড (ভার্জিনিয়া) :: লস এঞ্জেলেস (ক্যালিফোর্নিয়া) :: কলাম্বাস (ওহাইও) ::
গোল্ডেন গেটের কাহিনী দারুণ লাগল। এই বছরের শেষদিকে যাচ্ছি সেখানে, নিজে চোখে দেখে আসব। ধন্যবাদ। 🙂
@কৌস্তুভ,
যদি ড্রাইভ কর থাকেন, এক ঘণ্টার দূরত্বে সসালিটো, মুয়ির উডস্ এবং দেড় ঘণ্টার দূরত্বে নাপা ভ্যালি আছে। সবগুলো জায়গা খুব সুন্দর। প্ল্যান এর মধ্যে রাখতে পারেন। 🙂
পরামর্শ তো অতি উপাদেয়, বিশেষ করে নাপা ভ্যালির নামডাক অনেক শুনেছি, তবে আমি তো ড্রাইভ করিনা… কোনো বন্ধুকে পাকড়াও করতে পারি কিনা দেখি।
গোগ্রাসে গিলেছি।
আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকি।
@সৈকত চৌধুরী,
শুনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
বরাবরের মতই আপনার বর্ণনা ভাল লেগেছে| বিশেষ করে, চকলেট কিনে দেবার ব্যাপারটা |
@অঙ্কন,
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন। 🙂
রাজু ভাই, অসাধারণ। নিজেরাই সম্পতি বন্ধক দিয়েছে ! বাহ, কবি এবং প্রকৌশলী ডিজাইনার । জীবন জয়ী হয় , এটাই ভেবে আসছি এতদিন। আত্মহত্যার কথা পড়ে বিউগলের করুণ সুর শুনছি।
@নটরাজ,
কর্তৃপক্ষ ব্রিজের নীচে নেট লাগানোর চিন্তা ভাবনা করছে। কিন্তু, যতই আত্মহত্যা ঠেকানোর চেষ্টা করুক, কেউ নিজের জীবন বিসর্জন করতে চাইলে কেউতো আর সেটা ধরে রাখতে পারবে না। আমার নিজেরও এই ব্যাপারটা জেনে খুব খারাপ লেগেছিলো।
স্যান ফ্র্যান্সিসকো আমার প্রিয় শহরগুলোর একটা। আমি এখনো পর্যন্ত মন হ্য় পাঁচ-ছয়বার গিয়েছি এই ব্রিজের জায়গাটাতে, আসলেও খুব সুন্দর।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। 🙂
চমৎকার লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। অনেক নতুন তথ্য জানলাম।
আচ্ছা ‘ইন্টারন্যাশনাল অরেঞ্জ’ কি সাধারণ কমলা নয়? নাকি অন্য কিছু?
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভিজিৎ’দা।
ইন্টারন্যাশনাল অরেঞ্জ সাধারণ অরেঞ্জ এর চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। উদ্ধারকার্য পরিচালনাকারী দলের সদস্যরা এই রঙয়ের পোশাক পরে থাকে। তবে নাসার নভোচারীরাও এখন ইন্টারন্যাশনাল অরেঞ্জ কালারের ড্রেস পরে থাকে। মূল কারণ, ভূপৃষ্ঠের রঙ বা প্রকৃতির মধ্যে এই রঙ অনেক বেশি দৃশ্যমান হয়ে ফুটে উঠে, তাই তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ।
কিন্তু, প্রচলিত ইন্টারন্যাশনাল অরেঞ্জ এর চেয়ে গোল্ডেন গেইট ব্রিজের ইন্টারন্যাশনাল অরেঞ্জ এর উপদান একটু ভিন্ন। ব্রিজ কর্তৃপক্ষ কালার কোড সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। যে-কোনো পেইন্ট স্টোর সেটা তৈরী করে নিতে পারবে।
ব্রিজে ব্যবহৃত ইন্টারন্যাশনাল অরেঞ্জ কালার কোডঃ C= Cyan: 0%, M =Magenta: 69%, Y =Yellow: 100%, K = Black: 6%
সাধারণ অরেঞ্জ কালার কোডঃ C= Cyan: 0%, M =Magenta: 35%, Y =Yellow: 100%, K = Black: 0%
লেখাটা পড়ে খুঁজতে গিয়ে নেট থেকে এই কবিতাটা পেলাম, ‘স্বর্ণালী তোরণ’ নিয়ে লেখা। তার কিছু অংশ…
Written by Joseph P. Strauss, Chief Engineer, Golden Gate Bridge and Highway District
The Mighty Task is Done
Written upon completion of the building of the Bridge in May 1937
At last the mighty task is done;
Resplendent in the western sun
The Bridge looms mountain high;
Its titan piers grip ocean floor,
Its great steel arms link shore with shore,
Its towers pierce the sky.
@পঁচিশে বৈশাখ,
পুরো কবিতা এখানে পাবেন। অন্য কোনো পাঠক উৎসাহী হলেও পড়ে দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ আপনাকে কবিতার ব্যাপারটা মনে করিয়ে দেবার জন্য। ভালো থাকবেন। 🙂
@মইনুল রাজু,
শুভকামনা আপনাকেও। 🙂
চমৎকার লাগলো।
রঙ সমস্যার সমাধান কেমন করে হল? এটা জানতে ইচ্ছে করছে।
@পঁচিশে বৈশাখ,
রঙ সমস্যার সমাধান নিয়ে ওদের ওয়েবসাইটে যে তথ্য দেয়া আছে সেটা সরাসরি তুলে দিলাম।
রাজু ভাইর লেখা সবসময়েই জোশ লাগে। এইটাও ব্যাতিক্রম না।
আচ্ছা এই ব্রিজটাই কি এক্স-ম্যান মুভির একটা পার্টে ভাইঙ্গা টাইঙ্গা একাকার কইরা ফেলায় না?
@সাইফুল ইসলাম,
X-Men: The Last Stand (2006) এই মুভ্যিটাতে ছিলো। ওদের সাইটে অবশ্য নাম করা অনেক মুভ্যির কথাই বলা আছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। 🙂
@মইনুল রাজু,
বরাবরের মতোই চমৎকার লেখা। লেখাটা পড়ে এই ব্রিজে আত্মহত্যার উপর কিছু ডকুমেন্ট দেখলাম। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। নিচের ক্লিপের শেষে ব্রিজটি আছে-
httpv://www.youtube.com/watch?v=Sp0beoI_mr0
@আকাশ মালিক,
এটি নাকি আত্মহত্যার জন্য বিশ্বের এক নম্বর স্থান। শুধু তাই নয়, গোল্ডেন গেইট ব্রিজ দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপানের ‘আওকিগাহারা ফরেস্ট’ এর থেকে বেশ খানিকটা এগিয়েই নাকি প্রথম স্থান দখল করে আছে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
লেখাতে শব্দের ব্যবহার আর উপস্থাপনা শৈলী মনকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো স্বর্ণাভ রহস্যের কাছে। কী অনুপম আপনার লেখনী। অনেক অনেক শুভ কামনা আর সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা।
@শনিবারের চিঠি,
‘স্বর্ণাভ রহস্য’-দারুণ বলেছেন! 🙂 ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন। 🙂
সুন্দর সুন্দর। অসহ্য সুন্দর।
@প্রদীপ দেব,
ধন্যবাদ ধন্যবাদ। অজস্র ধন্যবাদ। 🙂
খুবই সুন্দর হয়েছে লেখাটি। (F)
@ভক্ত,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন। (F) (C)
ওয়াও।। মুগ্ধ হয়ে গেলাম এই সোনালী সেতু দেখে এবং পড়ে।।[img]undefined[/img]
@রুচী,
আসলেও মুগ্ধ হবার মত, আমি লেখাতে খুব সামান্যই তুলে ধরতে পেরেছি। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। 🙂
দারুণ,এই সিরিজের সব থেকে ভালো লেখা এটা!! এই গোল্ডেন ব্রিজের কাহিনীতে আমাদের দেশের সাথে উন্নত দেশের পার্থক্য স্পষ্ট করে ফুটে উঠেছে,বিশেষ করে টাকার সংকট থাকার পরেও শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য এত ব্যবস্থা নেয়াতে।
ঠিক,একমাত্র মানসিকভাবে চরম দূর্বল হলেই মনে হয় মানুষ আত্মহত্যা করে।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমার মনে হয় আত্মহত্যা মানে নিজের মহামূল্যবান জীবনের প্রতি অবিচার করা, সেটাকে নিয়ে উপহাস করা।
ধন্যবাদ রামগড়ুড়ের ছানা।
এত সুন্দর একটা লেখার জন্য আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।আপনার লেখায় বোধয় এই প্রথম কমেন্ট করছি।এই লেখাটা ভাল লাগায় উপরে লিংক দেখে অন্য লেখাগুলোও পড়লাম।আসলেই অনবদ্য।
“বামে পাহাড়, ডানে রূপসী শহর স্যান ফ্র্যান্সিসকো। যেখান থেকে লাফিয়ে পড়ে মানুষ আত্মহত্যা করে, সেরকমই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে অনেক নিচে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে চেষ্টা করলাম, আত্মহত্যার জন্যই কি এই ব্রিজ। মনে হলো, নাহ্! এই পৃথিবী অতিরিক্ত রকমের সুন্দর একটা জায়গা!! আত্মহত্যা’তো দূরে থাক, বরং একটা সেকেন্ডও বেশি বেঁচে থাকার সুযোগ পেতে ৩৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজী আছি!!! স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে থাকুক সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর মানুষগুলো। কারো জীবনে এমন কঠিন সিদ্ধান্তনেবার উপলক্ষ্য না আসুক। যে মানুষের কীর্তি আর মহিমা ঘোষণা করতে সটান দাঁড়িয়ে আছে গোল্ডেন গেইট ব্রিজ, আত্মহত্যার মতএমন এক আমানবিক কাজ সে মানুষকে যে মানায় না। আর কিছু না হোক, এক অর্থে শুধুমাত্র বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে পারাটাই কম গৌরবের ব্যাপার নয়, কম সাফল্যের ব্যাপার নয়; তার মানেই ‘জীবন’! তার নামই ‘জীবন’!! অমূল্য সে জীবন!!!”
আত্মহত্য সম্পর্কে আমার মতামত একদম আপনার মত নয়,তবে আপনার লেখনীর যাদুতে এই ধারাতেই ভেসে যেতে ইচ্ছা করছে।ভাল থাকুন।ভাল করে লিখতে থাকুন।শুভ কামনা রইল।
@অনিরুদ্ধ,
আত্মহত্যা নিয়ে আমার নিজেরও আরো অনেক বিশ্লেষণ আছে, এ লেখার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে বিস্তারিততে যাইনি। তবে, সকল বিশ্লেষণের পরে মনে হয়েছে আত্মহত্যা কোনো অপশান-ই নয়, সেটা বিবেচিত-ই হবার নয়। সাথে সাথে এটাও বুঝি যে, কি পরিমাণ কষ্ট পেলে মানুষ জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমার মনে হয়, সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নেবার সময়ে মানুষ জীবনের পজিটিভ দিকগুলোর কথা চিন্তা করতে ভুলে যায়।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্যও শুভকামনা থাকলো। 🙂
বাহ! সোনালী তোরনের এই গল্প তো জানতাম না। খুব ভালো লেগেছে। আপনার এই সিরিজটা আমি নিয়মিত পড়ি কিন্তু মন্তব্য বোধহয় এবার ই প্রথম করলাম।
ভালো থাকবেন, আরো লিখতে থাকবেন, এই আশা করি।
@বিলম্বিতা,
আপনার ‘সোনালী তোরণ’ শব্দগুলো শুনে হঠাৎ বেশ চমকপ্রদ লাগলো। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ। 🙂