“Helping Hands are Better than Praying Lips” -ইংরেজি প্রবাদ

হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তার লাশ দাফন নিয়ে দেশব্যাপী যে ক্যাচাল শুরু হয়েছিল তা নিশ্চয় মনে আছে পাঠকদের। পুরো দেশ যেন হাসিনা-খালেদা পরিবারের মত দুইভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল – শাওন পরিবার বনাম গুলতেকিন  পরিবার। এক পরিবার চাচ্ছিল নুহাশ পল্লীতে যেন লেখকের দাফন হয়, অন্য পরিবার চাচ্ছিল ঢাকায়। দুই পরিবারই তাদের সিদ্ধান্তে ছিলেন এক্কেবারে অনড়। গুলতেকিন পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছিলেন দাফন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কিংবা এ ধরণের কোথাও হোক। কারণ সম্ভবত:  সেখানে সবাই সহজে যেতে পারবে। কিন্তু হুমায়ূনের স্ত্রী শাওনকে কোনভাবেই রাজি করানো যায়নি।  শেষ পর্যন্ত  অবশ্য হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী দাবী মেনে নিয়ে নুহাশ পল্লীতেই দাফনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। সেখানেই সমাধিস্থ করা হয় এই জনপ্রিয় কথা শিল্পীকে।

হুমায়ূন আহমেদকে কোথায় কবর দেয়া হবে সে ব্যাপারটা সে সময় এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো কেন কে জানে! অনেক বিখ্যাত লোকের কবরই কিন্তু তাদের পরিবারের পছন্দমতো জায়গায় হয়নি। বিডিনিউজ২৪.কম নিউজের সম্পাদক রাজু আলাউদ্দিন সে সময় একটি চমৎকার লেখা লিখেছিলেন ‘কবরের জায়গা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?’ শিরোনামে। লেখাটিতে তিনি চমৎকার কিছু উদাহরণ টেনে বলেছিলেন,

পৃথিবীর এমন অনেক লেখক আছেন যারা, এমনকি নিজের দেশেও সমাহিত নন। বিখ্যাত আইরিশ লেখক অস্কার ওয়াইল্ডের কবর প্যারিসে। শুধু ওয়াইল্ডই নন, মার্কিন গায়ক জিম মরিসন, ইরানের প্রথম সারির লেখক সাদেক হেদায়াত, গুয়াতেমালার নোবেল বিজয়ী লেখক মিগেল আনহেল আস্তুরিয়াস, পেরুর কবি সেসার বাইয়েহো প্যারিসেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। আর্জেন্টিনার বিখ্যাত লেখক হোর্হে লুইস বোর্হেস জেনেভায় সমাহিত। আর একেবারে সদ্যপ্রয়াত মেক্সিকোর লেখক কার্লোস ফুয়েন্তেস–লেখকের নিজের ইচ্ছায়–প্যারিসেই সমাহিত হয়েছেন। অনেকেই জানেন কি না জানি না বাংলার রেনেসাঁ যুগের অন্যতম প্রাণপুরুষ বাঙালী লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামমোহন রায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন বৃষ্টলের স্ট্যাপলটনে। তাকে সমাহিতও করা হয়েছিলো বৃস্টলেই।

কিন্তু প্রবাসে সমাহিত হওয়ার কারণে লেখক হিসেবে তারা ম্লান বা বিস্মৃত হয়ে গেছেন–এমনটা বোধ হয় কেউ-ই বলবেন না।

কবরের জায়গাটাকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবার পেছনে কি মাজার-সংস্বৃতির প্রতি আমাদের স্বভাবিক প্রবণতারই একটি পরোক্ষ প্রকাশ?

উদ্ধৃতির শেষ লাইনটি নিঃসন্দেহে চিন্তা-জাগানিয়া। কবরের জায়গাকে এতো গুরুত্বপূর্ণ  মনে করার পেছনে আমাদের মাজার-সংস্কৃতির প্রতি আসক্তির ব্যাপারটা কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায়না মোটেই। সেই কবে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ তার লালসালু বইয়ে দেশের সারমর্ম এঁকেছিলেন একটিমাত্র বাক্যে –  ‘শস্যের চেয়ে টুপি, বেশী ধর্মের আগাছা বেশী’।  টুপি-ধারী মজিদদের দেশে সব ফেলে কবর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে না তো কোথায় উঠবে? লাল সালুর মজিদেরা সংখ্যায় আগের চেয়ে কমেনি, বরং গায়ে গতরে বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জনজীবনে কবরের মাহাত্ম্যও।  কিন্তু আজকের লেখাটি হুমায়ূন আহমেদকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে তা নিয়ে নয়, যে ব্যাপারটি আমাকে ভাবিয়েছে সেটা হল –  মানুষকে কবর দিলেই কি আর ঘটা করে শ্মশান ঘাটে নিয়ে পুড়ালেই বা কি, এতে তো জগৎ জীবন কিংবা মানুষের কোন উপকারই হচ্ছে না। তার চেয়ে আরো  ভাল সিদ্ধান্ত কী এরকম হতে পারে না যদি আমাদের মৃতদেহটিকে মানব কল্যাণে আমরা উৎসর্গ করতে পারি?

আমাদের কৃষক-দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০০–১৯৮৫) কিন্তু চেষ্টা করেছিলেন।  আরজ আলী মাতুব্বর লোকটাকে আমার বরাবরই  দুঃসাহসী, দুর্দান্ত, দুরন্ত, দুর্বিনীত বলে মনে হয়েছে। অশিক্ষিত সামান্য একজন চাষা নিজ উদ্যোগে স্বশিক্ষিত হয়েছেন। কিন্তু এই শিক্ষা কেবল ‘শমশের আলীদের মত কোরানে বিজ্ঞান খোঁজার শিক্ষায়’ শিক্ষিত হওয়া  নয়, বরং  মনের  বাতায়ন খুলে দিয়ে ‘আলোকিত মানুষ’ হবার ঐকান্তিক বাসনা।  আরজ আলী বিনা প্রমাণে কিছু মেনে নেননি, প্রশ্ন করেছেন, জানতে চেয়েছেন।  সে প্রশ্নগুলো সন্নিবেশিত করেছেন ‘সত্যের সন্ধান’ বইয়ে। যে প্রশ্নগুলো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারীরাও করতে ভয় পেতেন, সে সব প্রশ্নগুলো তিনি করে গেছেন  অবলীলায়, ভাবলেশবিহীন মুখে।

আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০০–১৯৮৫)

আমাদের মত শিক্ষিত বলে কথিত সুশীলদের গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিয়েছেন আরজ আলী মাতুব্বর। শুধু জীবিত অবস্থায় নিজেকে আর অন্যদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেননি, তিনি তার মৃত্যুর  সময়েও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, যে সাহস এর আগে কোন শিক্ষিত সুশীলেরা করে দেখাতে পারেনি। তিনি তার মৃতদেহ কবরে দাফন না করে মানব কল্যাণে দান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে লেখা  ‘কেন আমার মৃতদেহ মেডিকেলে দান করেছি’ শীর্ষক  প্রবন্ধে তিনি বলেন –

‘…আমি আমার মৃতদেহটিকে বিশ্বাসীদের অবহেলার বস্তু ও কবরে গলিত পদার্থে পরিণত না করে, তা মানব কল্যাণে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমার মরদেহটির সাহায্যে মেডিক্যাল কলেজের শল্যবিদ্যা শিক্ষার্থীগন শল্যবিদ্যা আয়ত্ত করবে, আবার তাদের সাহায্যে রুগ্ন মানুষ রোগমুক্ত হয়ে শান্তিলাভ করবে। আর এসব প্রত্যক্ষ অনুভূতিই আমাকে দিয়েছে মেডিকেলে শবদেহ দানের মাধ্যমে মানব-কল্যাণের আনন্দলাভের প্রেরণা।’

আমি নীচে আরজ আলী মাতুব্বরের মৃতদেহ দানপত্রটি  দিলাম –  যা এখনো আমাদের মতো মানবতাবাদীদের জন্য অফুরন্ত প্রেরণার উৎস –

আরজ আলী মাতুব্বরের মতো বাংলার বিবেক, মুরতাদ অধ্যাপক আহমদ শরীফও তার মৃতদেহকে  মেডিকেল মানব কল্যাণে দান করে গেছেন। আরজ আলী মাতুব্বরের মৃতদেহ দানপত্রের মতো আহমদ শরীফের সম্পাদিত ( মৃত্যুর চার-পাঁচ বছর আগে)  তার ‘অছিয়তনামা’ আর ‘মরদেহ হস্তান্তরের দলিল’ দুটিও বাংলা আর বাঙালির মুক্তবুদ্ধির ইতিহাসে অনন্য কীর্তি।

 

অসিয়তনামায়  তিনি লিখেছিলেন –

“আমি সুস্থ শারীরিক এবং সুস্থ মানসিক অবস্থায় আমার দৃঢ় সঙ্কল্প বা অঙ্গীকার স্থির সিদ্ধান্ত-রূপে এখানে পরিব্যক্ত করছি।

আমার মৃত্যুর পরে আমার মৃতদেহ চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের  অ্যানাটমি এবং ফিজিওলজি সংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের জন্য ঢাকার ধানমন্ডিস্থ বেসরকারী মেডিকেল কলেজে অর্পণ করতে চাই। … চক্ষুদান এবং রক্তদান তো চালুই হয়েছে। চোখ শ্রেষ্ঠ প্রত্যঙ্গ, আর রক্ত হচ্ছে প্রাণ-প্রতীক। কাজেই গোটা অঙ্গ কবরের কীটের খাদ্য হওয়ার চেয়ে মানুষের কাজে লাগাই তো বাঞ্ছনীয়।”

অধ্যাপক আহমদ শরীফ (১৯২১-১৯৯৯)

গত বছর আহমদ শরীফের মৃত্যুদিবস উপলক্ষে মুক্তমনা ব্লগার অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ লিখেছিলেন তাঁর ‘আহমদ শরীফ: এক দুর্বিনীত সক্রেটিসের প্রতিকৃতি’ নামের ব্যতিক্রমী একটি প্রবন্ধ। সে প্রবন্ধে খুব সঠিকভাবেই তিনি উল্লেখ করেছেন –

‘আর কিছু না হলেও শুধুমাত্র এই দু’টি দলিলের কারণে আহমদ শরীফ বাংলার মুক্তমনাদের পথিকৃত হয়ে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।’

আরজ আলী কিংবা আহমদ শরীফের মত ব্যক্তিত্বরা শুধু ইহজীবনে নয়, এমনকি পরকালকে সামনে রেখে নিজের মৃতদেহ নিয়ে ঋজু চিত্তে বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও আমরা জানি আমাদের চেনা জানা অধিকাংশ মানুষই এভাবে চিন্তা করতে সক্ষম নন। এই অক্ষমতার মূল কারণ হল আত্মা সংক্রান্ত প্রাচীন কুসংস্কারের কাছে নতি স্বীকার। আমার অন্তত: তাই মনে হয়। আমি  বছর কয়েক আগে ‘আত্মা নিয়ে ইতং বিতং’ নামে একটি সিরিজ লিখেছিলাম।  সে লেখাটাতে আমি দেখিয়েছিলাম – আত্মা ব্যাপারটি মানুষের আদিমতম কল্পনা-  যেটা সুসংবদ্ধ রূপ পেয়েছিল গ্রীসে প্লেটোর দর্শনে এসে। প্লেটোর বক্তব্য ছিল যে, প্রাণী বা উদ্ভিদ কেউ জীবিত নয়, কেবলমাত্র যখন আত্মা প্রাণী বা উদ্ভিদদেহে প্রবেশ করে তখনই তাতে জীবনের লক্ষণ পরিস্ফুট হয়।  প্লেটোর এ সমস্ত তত্ত্বকথাই পরবর্তীতে খ্রিস্টধর্মের বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থনের যোগান দেয়। প্লেটোর এই ভাববাদী তত্ত্ব অ্যারিস্টটলের দর্শনের রূপ নিয়ে পরবর্তীতে হাজার-খানেক বছর রাজত্ব করে। এখন প্রায় সব ধর্মমতই দার্শনিক-যুগলের ভাববাদী ধারণার সাথে সঙ্গতি বিধান করে।  আত্মা সংক্রান্ত কুসংস্কার শেষপর্যন্ত মানব সমাজে ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসে।

সঞ্জীব চৌধুরী (১৯৬৪ – ২০০৭)

অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস (১৯৪৫ -১৯৯৮)

আমি আমার প্রবন্ধে দেখিয়েছিলাম যে,  আধুনিক বিজ্ঞানের চোখে  অপার্থিব আত্মার কল্পনা ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়া কিছু নয়। বলা বাহুল্য, আত্মার অস্তিত্ব ছাড়াই বিজ্ঞানীরা আজ মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর আচরণ, আচার-ব্যবহার এবং নিজের ‘আমিত্ব’ (self) এবং সচেতনতাকে (consciousness) ব্যাখ্যা করতে পারছে। এমনকি খুঁজে পেয়েছে ধর্মীয় অপার্থিব অভিজ্ঞতার বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় নানা উৎসও।  যা হোক, লেখাটি পরে আমার আর রায়হানের লেখা ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইয়েও অন্তর্ভুক্ত হয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মার ধারণার খণ্ডনের পাশাপাশি লেখাটির একদম শেষে এসে বলেছিলাম এই প্রবন্ধের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রয়োজনীয়  কিছু কথা –

‘…এমন একদিন নিশ্চয় আসবে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জীবন-মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করার জন্য আত্মার দ্বারস্থ হবে না; আত্মার ‘পারলৌকিক’ শান্তির জন্য শ্রাদ্ধ-শান্তিতে কিংবা মিলাদ-মাহফিল বা চল্লিশায় অর্থ ব্যয় করবে না, মৃতদেহকে শ্মশান ঘাটে পুড়িয়ে বা মাটিচাপা দিয়ে মৃত দেহকে নষ্ট করবে না, বরং কর্নিয়া, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃত, অগ্ন্যাশয় প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যেগুলো মানুষের কাজে লাগে, সেগুলো মানবসেবায় দান করে দেবে (গবেষণা থেকে জানা গেছে, মানুষের একটিমাত্র মৃতদেহের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ২২ জন অসুস্থ মানুষ উপকৃত হতে পারে)। এ ছাড়াও মেডিকেলের ছাত্রদের জন্য মৃতদেহ উন্মুক্ত করবে ব্যবহারিকভাবে শরীরবিদ্যাশিক্ষার দুয়ার। আরজ আলী মাতুব্বর তার মৃতদেহ মেডিকেল কলজে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সময় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এ অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে পরবর্তীতে মেডিকেলে নিজ মৃতদেহ দান করেছেন ড. আহমেদ শরীফ, ড. নরেন বিশ্বাস, ওয়াহিদুল হক, গায়ক সঞ্জীব চৌধুরী প্রমুখ। সমাজ সচেতন ইহজাগতিক এ মানুষগুলোকে জানাই আমার প্রাণের প্রণতি’।

ওয়াহিদুল হক (১৯৩৩ – ২০০৭)

আমাদের বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে। তখনো ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ খ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ জীবিত। উনি মারা যান ২০১২ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারি। তাই আমাদের বইয়ে ড. আহমেদ শরীফ, ড. নরেন বিশ্বাস, ওয়াহিদুল হক, গায়ক সঞ্জীব চৌধুরীদের কথা থাকলেও ফয়েজ আহমদের কথা ছিল না।  জীবিত অবস্থায় তিনি জনকল্যাণে মরণোত্তর দেহ ও চক্ষু দানের ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন।

ফয়েজ আহমদ (১৯২৮-২০১২)

ফয়েজ আহমদ মারা যাওয়ার পর প্রদীপ দেব তার ‘ফয়েজ আহমদ: একজন মুক্তমনার প্রতিকৃতি’ শিরোনামের লেখাটিতে  লিখেছিলেন –

চিরকুমার ফয়েজ আহমদ ব্যক্তিগত সুখের কথা ভাবেন নি কখনো। সারাজীবন মানুষের জন্য গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থেকেছেন। … সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার জন্য চিরদিন সংগ্রাম করে গেছেন যিনি – মৃত্যুর পরেও মানুষেরই কাজে লাগিয়েছেন নিজের শরীর। চোখ দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন দু’জন মানুষের দৃষ্টি। তাঁর চেয়ে মুক্তমনা মানুষ আমরা আর কোথায় পাবো?

আরজ আলী মাতুব্বর থেকে শুরু করে ড. আহমেদ শরীফ, ড. নরেন বিশ্বাস, ওয়াহিদুল হক, গায়ক সঞ্জীব চৌধুরী, ফয়েজ আহমদের উদাহরণ দেখলে বোঝা যায় মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে মরণোত্তর দেহ দানের আগ্রহ বাড়ছে, প্রতি বছরই দৃষ্টান্ত হিসেবে তালিকায় উঠে আসছে বিদগ্ধজনদের নাম। জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ছে। এর মধ্যে আমার চেনা জানা বাংলাদেশের সেলিব্রিটিদের মধ্যে আছেন যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। শুধু ইহজীবনে যাদু দেখিয়েই আমাদের তিনি মুগ্ধ করেননি, মৃত্যুর পরও কিভাবে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা যায় সেই ভাবনায় মরণোত্তর দেহ দান করে বিমোহিত করে দিয়েছেন তিনি আমাদের। গড়ে তুলেছেন মানব কল্যাণে মরণোত্তর দেহদাতা সমিতি। তিনি এই সমিতির সাধারণ সম্পাদকও বটে।

জুয়েল আইচ

বাংলাদেশের মত পশ্চিমবঙ্গেও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি মরণোত্তর দেহদান করেছেন। এ মুহূর্তে প্রথমেই আমার যে নামটি মনে পড়ছে তিনি হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।

জ্যোতি বসু (১৯১৪ – ২০১০)

২০১০ সালের ১০ই জানুয়ারি কলকাতার সল্ট লেকের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর কিছু সময় পরেই তাঁর চোখের কর্নিয়া অপসারণ করেন চিকিৎসকরা, তারপর তার দেহ ছাত্র ছাত্রীদের গবেষণার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।  আমার লেখার নিচে অনামীর মন্তব্য থেকে জানলাম,  তার এই অভিলাষের কথা জ্যোতি বসু জীবিত অবস্থাতেই বলে গিয়েছিলেন  এভাবে –

“জানিনা আমার অশক্ত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কারো কাজে আসবে কিনা! কিন্তু আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা যে আমার মরদেহ যেন অন্তত গবেষণার কাজে লাগানো হয়।একজন কমিউনিস্ট হিসেবে জানতাম জীবিতকালে মানুষের সেবা করতে পারব। মৃত্যুর পরেও যে মানবতার কাজে লাগা যাবে, এটা জেনে প্রফুল্ল বোধ করছি।”

আমি ইন্টারনেট খুঁজে দেখলাম, কেবল জ্যোতি বসু নয়, পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী অনেক নেতা মরণোত্তর দেহ দান করে রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন লোকসভার সাবেক স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা অনিল বিশ্বাস প্রমুখ।

কিন্তু তারপরেও – দুঃখজনক হলেও দেশে সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্রক্রিয়াটি এখনো জনপ্রিয় করা যায়নি, না এ পার বাংলায়, না ওপারে।  বেহেস্তের বা স্বর্গের অলীক হুর-পরীর লোভ, নরক কিংবা দোজখের ভয়, কুসংস্কার আর অপবিশ্বাসের পাশাপাশি অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত মোল্লা – পুরোহিত আর লালসালুর মজিদদের  ছড়ি ঘোরানো  যে সমাজে প্রবল সে সমাজে এই ধরণের ব্রাত্য ধারণাকে জনপ্রিয় করাটা কষ্টকরই বটে।  কিন্তু উদ্যোগ তো নিতে হবে কাউকে না কাউকে একটা সময়। সেই ভাবনা থেকেই লেখাটির শুরু।  আমি নিজেও এ ধারনায় নতুন সৈনিক। এ নিয়ে জানার চেষ্টা  করছি। যেটুকু বুঝেছি তার নিরিখেই প্রবন্ধটি লেখা।  আমার দৃঢ ধারণা পাঠকেরাই এ প্রবন্ধটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন সুগভীর আলোচনার মাধ্যমে। এই প্রবন্ধটি নেটের এক কোনায় এই মুহূর্তে থেকে গেলেও এই লেখাটিই রূপান্তরিত হয়ে উঠবে শুভবুদ্ধিধারী মুক্তমনা মানুষদের আগ্রহের চারাগাছে। চারাগাছ ধীরে ধীরে বড় হবে, একসময় মহীরুহ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে আনাচে কানাচে। লিখতে গিয়ে জন লেননের ‘ইমাজিন’ গানের কথাগুলো মনে পড়ছে খুব –

You, you may say
I’m a dreamer, but I’m not the only one
I hope some day you’ll join us
And the world will be as one

তুমি হয়তো বলবে
আমি স্বপ্নদর্শী, কিন্তু জেনো আমি একা নই
একদিন তুমিও মোর সঙ্গী হবে,
আর পৃথিবীটা হবে এক …

কেন মরণোত্তর দেহ দানকে আমি সামনে আনতে চাইছি এ নিয়ে কিছু বলা যাক। মৃতদেহ নিয়ে আমাদের অফুরন্ত আবেগ থাকতে পারে, স্মৃতি থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হল মানুষ মরে গেলে মৃতদেহ কারো কোন কাজে আসে না। কিন্তু  গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে – একটি মানুষ মারা যাওয়ার সাথে সাথে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোরও মৃত্যু ঘটে না; অন্ততঃ সাথে সাথেই নয়। দেখা গেছে  মানুষ মারা যাবার পরেও হৃৎপিণ্ড ১৫ মিনিট, কিডনি ৩০ মিনিট, কঙ্কাল পেশী – ৬ ঘণ্টার মত ‘বেঁচে থাকে’।  অঙ্গ ‘বেঁচে থাকা’র অর্থ হল তার কোষগুলো বেঁচে থাকা। কোষ বেঁচে থাকে ততক্ষণই যতক্ষণ এর মধ্যে শক্তির যোগান থাকে। শক্তি উৎপন্ন হয় কোষের অভ্যন্তরস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া থেকে। মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ হলে কোষেরও মৃত্যু হয়।  যাই হোক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মৃত্যু নিয়ে দার্শনিক আলোচনায় গিয়ে লাভ নেই, মূল কথা হল – মানুষ মারা যাওয়ার পর তার মৃতদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে কাজে লাগানো যায় ইচ্ছে থাকলেই, মানে কারো সদিচ্ছা থাকলে।  স্থানান্তরযোগ্য অঙ্গের মধ্যে আছে চোখ (কর্নিয়া), হৃৎপিণ্ড, যকৃত, কিডনি, চামড়া, স্টেমসেল সহ বহু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।  আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসের দেওয়া তথ্য থেকে আমি সম্প্রতি জানলাম একটি  মৃতদেহের অন্তত: পঞ্চাশটি অঙ্গকে নাকি নানাভাবে অন্য মানুষের কাজে লাগানো যায়।

কিন্তু এই হতচ্ছাড়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে কাজে লাগানোর দরকারটা কি? কারণ হচ্ছে চাহিদা। খোদ আমেরিকাতেই এই মুহূর্তে ১১০, ০০০  জন আমেরিকাবাসী কোন না কোন অঙ্গের জন্য প্রতীক্ষা করে রয়েছে।  সুখবর হচ্ছে প্রতিদিন অন্ততঃ ৭৭ জনের দেহে অন্যের দান করা অঙ্গ স্থানান্তর করে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে।  অন্যদিকে দুঃসংবাদ হল –  প্রতিদিন অন্ততঃ ১৯ জন রোগী এই ‘ওয়েটিং লিস্টে’ থাকা অবস্থাতেই মারা যাচ্ছে, স্থানান্তরযোগ্য অঙ্গের অভাবে।

ইউরোপে প্রতিবছর প্রায় সাতাশ হাজার রোগীর দেহে অন্য কোন কোন সহৃদয় ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া অঙ্গ সংস্থাপন করা সম্ভব হয়, ষাট হাজার রোগী অঙ্গের অভাবে কেবল প্রতীক্ষাই করে যায়, আর অন্ততঃ তিন হাজার রোগী সঠিক সময়ে অঙ্গ-প্রাপ্তির অভাবে মৃত্যুবরণ করে।

এগুলো তো গেল কেবল আমেরিকা আর ইউরোপের হিসেব।  বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অঙ্গের চাহিদা কত বেশি তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলবে।  বাংলাদেশে কিডনি এবং যকৃতের রোগে আক্রান্তদের হার আশঙ্কাজনকই বলা যায়। হয়তো এর পেছনে অনবরত ভেজাল খাদ্য, ময়লা পানি, দূষিত পরিবেশে লাগাতার বসবাসের প্রভাব থাকতে পারে।  প্রভাব যাই থাকুক কিডনি আক্রান্ত হলে তাকে কৃত্রিমভাবে ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিসের প্রভাব অনেক সময়ই দেহে হয় নেতিবাচক। কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্টই হয় তখন একমাত্র ভরসা। কিন্তু স্থানান্তরযোগ্য কিডনি না পাওয়া গেলে সেটা হয়ে দাঁড়ায় মূর্তিমান সমস্যাই। মৃতদেহের প্রতি অন্ধ আসক্তি পরিহার করে সামান্য বদান্যতাই দিতে পারে বহু রোগীকে নতুন জীবনের সন্ধান। দরকার কেবল উদ্যোগের।

যকৃতের ক্ষেত্রেও তাই।  আমি আমার  ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইয়ে জীবন এবং মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেমি ফিস্কের ‘জীবন প্রাপ্তি’র উদাহরণ হাজির করেছিলাম। আশির দশকের ঘটনা এটি। এগারো মাসের শিশু জেমি আর হয়ত বড়জোর একটা ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারত-তার জন্মগত ত্রুটিপূর্ণ যকৃৎ নিয়ে। তার বাঁচবার একটিমাত্র ক্ষীণ সম্ভাবনা নির্ভর করছিল যদি কোন সুস্থ শিশুর যকৃৎ কোথাও পাওয়া যায় আর ওটি ঠিকমত জেমির দেহে সংস্থাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু এতো ছোট বাচ্চার জন্য কোথাওই কোন যকৃত পাওয়া যাচ্ছিলো না। যে সময়টাতে জেমি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছিলো আর মৃত্যুর থাবা হলুদ থেকে হলুদাভ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছিলো সারা দেহে, ঠিক সে সময়টাতেই হাজার মাইল দূরে একটি ছোট্ট শহরে এক বিচ্ছিরি ধরণের সড়ক দুর্ঘটনায় পড়া দশ মাসের  শিশু জেসি বেল্লোনকে হুড়াহুড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। যদিও মাথায় তীব্র আঘাতের ফলে জেসির মস্তিষ্ক আর কাজ করছিলো না, কিন্তু দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে কিন্তু রেস্পিরেটরের সাহায্যে ঠিকই কর্মক্ষম করে রাখা হয়েছিলো।  জেসির বাবা রেডিওতে দিন কয়েক আগেই একটি যকৃতের জন্য জেমির অভিভাবকদের আর্তির কথা শুনেছিলেন। শোকগ্রস্ত পিতা এতো দুঃখের মাঝেও মানবিক কর্তব্য-বোধকে অস্বীকার করেননি। তিনি ভেজিটেশনে চলে যাওয়া নিজের মেয়ের অক্ষত যকৃৎটি জেমিকে দান করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। জেসির রেস্পিরেটর বন্ধ করে দিয়ে তার যকৃৎ সংরক্ষিত করে মিনেসোটায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হল।  জেমির বহু প্রতীক্ষিত অস্ত্রোপচার সফল হলো। এভাবেই জেসির আকস্মিক মৃত্যু  সেদিন  জেমি ফিস্ককে দান করল যেন এক নতুন জীবন। সেই ধার করা যকৃৎ নিয়ে পুনর্জীবিত জেমি আজো বেঁচে আছে- পড়াশুনা করছে,দিব্যি হেসে খেলে বেড়িয়ে পার করে দিয়েছে জীবনের চব্বিশটি বছর!

পরকালের নানা কিসিমের লোভ তোয়াক্কা করে যে মানবিকতার জন্য উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়, জেসির বাবাই ছিলেন তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। তার নিজের মেয়ে মারা গেলেও ঠিক সেই মুহূর্তের সিদ্ধান্তই দিতে পেরেছিল অজানা অচেনা আরেকটি মেয়েকে নবজীবন। এর চেয়ে বড় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে!

আমি কয়েকদিন ধরেই মরণোত্তর দেহদানের নিয়ম কানুনের কথা ভাবছিলাম, এ নিয়ে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। দেখলাম ব্যাপারটা কঠিন কিছু নয়। আপনি যদি আমেরিকানিবাসী কেউ হন, তবে আপনার জন্য ব্যাপারটা সোজা। সায়েন্স কেয়ার বায়োগিফট, মায়ো-ক্লিনিক, এনাটমিক গিফট রেজিস্ট্রি সহ বহু জায়গায় আপনি আপনার মরণোত্তর দেহ দান করতে পারবেন।  আপনার দেহ দান করতে  পারবেন যে কোন অ্যাকাডেমিক কলেজেও। আপনি যদি প্রাপ্তবয়স্ক যুবক বা যুবতী হন, সরাসরি আপনার পছন্দমতো জায়গায় ফোন করতে পারেন, তাদের সাথে কথা বলতে পারেন।  যদি কারো সাথে কথা বলে ভাল লাগে, সম্মত হন, তাদের দেয়া ফর্ম আপনাকে পূরণ করতে হবে। তারা আপনাকে ডাকযোগে একটি কার্ড পাঠাবে। সেটা আপনার মানিব্যাগে রেখে দিতে হবে। ব্যাস কাজ শেষ। আপনার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কেউ আপনাকে ঘাঁটাবে না।  ধরুন আপনি বায়োগিফটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।  আপনার মৃত্যুর পর আপনার ওয়ালেটে পাওয়া বায়োগিফটের কার্ড দেখে বা অন্য কোনভাবে তাদের জানানো হলে তারা এসে নিচের পদক্ষেপ গুলো নেবেন –


আপনার যে বায়োগিফটের সাথেই চুক্তিবদ্ধ হতে হবে তা নয়, কার সাথে কথা বলবেন, কাকে পছন্দ করবেন, কাকে মরণোত্তর দেহ প্রাপ্তির জন্য মনোনীত করবেন, সেটা সম্পূর্ণ আপনার উপরেই নির্ভর করছে। মৃত্যুর আগে আপনার দেহে যদি ক্যান্সার এইডসের মত বদ খদ রোগ কিংবা কোন ছোঁয়াচে রোগ বাসা না বেধে থাকে, তবে আপনার শরীর বায়োগিফটের জন্য মনোনীত হবে। আপনার পরিবার পরিজনদের সাথে কথা বলে তারা দেহটি স্থানান্তরের ভার নেবে। পরবর্তীতে মৃতদেহ থেকে সংস্থাপনযোগ্য অংঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিভিন্ন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে সুস্থ  করে তোলার চেষ্টা করা হবে।

মৃত্যুর সময় আপনার কোন বড় সড় কিংবা ছোঁয়াচে রোগ ছিল কিনা সেটা জানা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মৃতদেহ থেকে পাওয়া অঙ্গ অন্য সুস্থ রোগীর দেহে সংস্থাপন করা হলে কেউ নিশ্চয় এইডস বা ক্যান্সারে মারা যাওয়া মানুষের অঙ্গ গ্রহণ করে নিজের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করতে চাইবে না;  তাই  না? তাই যে এজেন্সির সাথে আপনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তারা মৃতদেহ গ্রহণ করার আছে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেবে। উপরে যে ধাপগুলো দেখানো হয়েছে তার মাঝামাঝি জায়গায় রক্ত পরীক্ষার উল্লেখ রয়েছে এজন্যই।

তবে একটি বিষয় উল্লেখ করে রাখি-  ক্যান্সার, এইডস এ ধরনের রোগে মারা গেলে মরণোত্তর দেহদানের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়  তা কিন্তু নয়।  এ ধরণের বড় সড় রোগে কেউ মারা গেলে তার মৃতদেহও দান হিসেবে গ্রহণ করা হয়, ক্যান্সার কিংবা এইডসের রিসার্চে সেই শবদেহ কাজ লাগান গবেষকেরা। দেহ কাটাছেঁড়া করে গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারিত করেন গবেষকেরা, শবদেহ বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকেরা পেতে চেষ্টা করেন রোগ নিরাময়ে নতুন আশার ঠিকানা।  উদাহরণ দেয়া যাক। সবারই নন্দিত লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন্সকে মনে আছে।  এসোফেগাল ক্যান্সারাক্রান্ত হিচেন্স মারা যান ২০১১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর তারিখে। মৃত্যুর আগে তিনি তার মৃতদেহ মেডিকেল রিসার্চের জন্য দান করে যাওয়ার জন্য বলে দেন। হিচেন্সের মৃত্যুর পর তার সাহিত্য-প্রতিনিধি স্টিভ ওয়াসারম্যান  খুব ছোট্ট একটা বার্তায় সারকথা বলে দেন, যা হয়তো তখন অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে –

“In accordance with Christopher’s wishes, his body was donated to medical research. Memorial gatherings will occur next year.”

ক্রিস্টোফার হিচেন্স (১৯৪৯ – ২০১১)

ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মত ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে কিছুদিন আগে মারা গেছেন বাংলাদেশের জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদও। কিন্তু তিনি নীরবে নিভৃতে চলে যেতে পারেননি। তার শবদেহ কোথায় কবরস্থ করা হবে তা নিয়ে রীতিমত দুই পরিবারে মল্লযুদ্ধ হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই অস্বস্তিকর মল্লযুদ্ধ থেকে একটি মানুষও উপকৃত হয়নি, একটি রোগাক্রান্ত মানুষকে সুস্থ করা যায়নি, গবেষণার ক্ষেত্রে কানা-কঞ্চিও অগ্রগতি হয়নি, কোন মেডিকেলের ছাত্র শবদেহ কেটে তার জ্ঞান এক রত্তি বাড়াতে পারেননি। কেবল পারলৌকিক প্রশান্তি আর হুর পরীর মিথ্যে আশায় গা ভাসিয়ে দেয়া ছাড়া। আমি পার্থক্যটা এখানেই দেখি।

ক্রিস্টোফার হিচেন্সের ব্যতিক্রমী দান অনুপ্রাণিত করেছে বহু মুক্তমনা মানুষদের। এমনি একজন মানুষ হচ্ছেন এডওয়ার্ড টার্ট। একসময় ক্যাথলিক প্রিস্ট ছিলেন। কিন্তু বাইবেলের ভুজুং ভাজুং বুঝতে তার সময় লাগেনি। একসময় নীরবেই খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করেন তিনি, হয়ে উঠেন মুক্তমনা।  ক্রিস্টোফার হিচেন্স মারা যাওয়ার পরে তার শবদেহ মেডিকেল রিসার্চের জন্য দান করার কথা শুনে এডওয়ার্ডও অনুপ্রাণিত হন। তিনি তার মৃতদেহ আমেরিকার বেলর কলেজ অব মেডিসিনে দান করে যেতে মনস্থ করেন। উজ্জীবিত এই বয়োবৃদ্ধ তরুণের উজ্জয়নী ভিডিও রাখা আছে ইউটিউবে, অবশ্যই একবার হলেও সবার দেখে নেয়া দরকার –

httpv://www.youtube.com/watch?v=AL-nEBeCTGk

মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে ছুৎমার্গ কেটেছে বহুদিন হল। দেশের মানুষ এখন মৃত্যুর পরে কর্নিয়া দান করে যেতে ভয় পায় না। একটা সময় কিন্তু এটাও সহজ ছিলো না।  সন্ধানীর উদ্যোগে মরণোত্তর চক্ষুদান কর্মসূচী এতোই ব্যাপকতা পেয়েছে যে, যে কোন মেলা বা উৎসবেও তাদের স্টল দেখা যায়, দেখা যায় তরুণ তরুণীদের অনুপ্রাণিত করতে।  সেটা তো দরকারিই। বাংলাদেশে বর্তমানে কর্নিয়া-জনিত কারণে অন্ধত্বের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক বলে মনে করা হয়, সে-তুলনায় প্রতি বছর কর্নিয়ার যোগান অপ্রতুল হলেও সংখ্যা কিন্তু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।  আমরা জেনেছি অনন্ত বিজয় দাশের নেতৃত্বে সিলেটের যুক্তিবাদী মুক্তমনারাও কিন্তু মরণোত্তর চক্ষুদান করে ফেলেছেন।  এনিয়ে তাদের সচিত্র পোস্ট এখানে –

আমাদের মরণোত্তর চক্ষুদান – অনন্ত বিজয় দাশ

দরকার আরেকটু  এগুনোর। মরণোত্তর দেহদান নিয়েও ছুৎমার্গ আর কুসংস্কারের দেওয়াল ডিঙাতে হবে। এবং সেটার পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।  তাত্ত্বিকভাবে মরণোত্তর দেহদানের বিষয়টি কঠিন হবার কথা ছিল না। যে কোন নিকটস্থ সরকারি মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগে যোগাযোগ করলেই ব্যাপারটা হয়ে যাবার কথা। কেবল প্রয়োজন পড়ার কথা মরণোত্তর দেহদানে সম্মত ব্যক্তিটির পরিবারের দুজন সদস্যের সম্মতি, সেই সম্মতি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিটকৃত হতে পারে।

হতে পারে কিংবা পারত তো অনেককিছুই, যদি না দেশটার নাম বাংলাদেশ না হয়ে অন্যকিছু হত। যদি না দেশের অধিকাংশ মানুষ গোর আজাব আর পারলৌকিক হুর-পরিতে অবসেসড না থাকত। এই আফটার -লাইফ-অবসেসড মোল্লা-মুমিনেরা কীভাবে সৎ-কর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনই তার প্রমাণ। আরজ আলীর মায়ের মৃত্যুর পরে মৃতদেহের ছবি তোলা নিয়ে নরক-গুলজার করেছিল মোল্লারা। জানাজা পড়তে দেয়নি। তাও তো আরজ  আলী মাতুব্বর লিখে রেখে গেছেন বলে সেই সকরুণ ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি। এ ধরণের বহু ঘটনাই রয়ে যায় বিস্মৃতির অন্তরালে।

যেমনটি ঘটেছিল  রায়হান রশীদের বাবার ক্ষেত্রে। রায়হানকে অনেকেই জানেন মুক্তাঙ্গন-নির্মাণ ব্লগের সম্পাদক হিসেবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পিএইচডির শেষ পর্যায়ে রয়েছেন, পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্যেরই আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদানে সক্রিয় নাগরিক পর্যায়ের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ‘ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম’ (ICSF) এর। সেই রায়হানের বাবা ডাক্তার ছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন মৃতদেহ মাটিতে কবর দিয়ে গলিয়ে পঁচিয়ে  নষ্ট করার চেয়ে মেডিকেলে দান করে দেয়াটাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত, যাতে ছাত্ররা অন্ততঃ একটি দেহ পায় শরীরবিদ্যা সঠিকভাবে আয়ত্ত করার জন্য। তার বাবা চেয়েছিলেন বাংলাদেশের ডাক্তারেরা যেন ছাত্রদের জ্ঞানার্জনের কথা ভেবে সামনে এগিয়ে আসেন  মরণোত্তর দেহদানের প্রক্রিয়াটির নেতৃত্ব দিতে। যখন রায়হানের বাবা ১৯৯৭ সালে সত্য সত্যই মারা গেলেন,   পরিবারের পক্ষ থেকে মৃতদেহকে মেডিকেলে দান করাতে কারো কোন আপত্তিই ছিল না, বরং সর্বসম্মতিক্রমে তারা মেডিকেলে দেহ দান করাতেই মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু  মেডিকেল থেকে ভয়ে এই মৃতদেহ গ্রহণ করা হল না। এলাকার কাওমি মাদ্রাসার মোল্লারা মরণোত্তর দেহদানের মত  ‘বে-শরীয়তী’ কাজের জন্য রায়হানদের বাড়ী ঘিরে ফেলেন। অবশেষে মোল্লা-তন্ত্রের হাতে রায়হানদের পরিবারকে নতিস্বীকার করতে হয়েছিল। বলা বাহুল্য, রায়হানের পিতার  শেষ ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গিয়েছিল সেদিন। আজও রায়হান সেদিনের কথা মনে করতে গিয়ে বেদনার্ত হয়ে পড়েন।

অথচ দেশের বাইরে কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়। মরণোত্তর দেহদানের ব্যাপারটাকে একটা মহৎ কাজ হিসেবেই দেখা হয়।  যেমন মায়ো ক্লিনিকে যারা মরণোত্তর দেহদান করেন, তাদের সম্মানে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় ছাত্র শিক্ষক এবং কর্মচারীদের পক্ষ থেকে –

কনভোকেশনে অনুষ্ঠান করে পরিবারের কাছে এই মহতী কাজের জন্য সম্মাননা জানানো হয়-

অনেকে  দান করে যাওয়া অঙ্গের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পরিবারকে চিঠি লেখেন।  আমাদের সংস্কৃতিতে এগুলো অনুপস্থিত তো বটেই, যারা এটা শুরু করতে চায়, তাদের জীবনই বরং বিপন্ন করে তোলা হয়, করে ফেলা হয় একঘরে।  কারণ দেশটার নাম যে বাংলাদেশ। হুমায়ুন আজাদের ‘বাঙলাদেশের কথা’ কবিতাটির চরণগুলো মনে পরে খুব …

…ভুলেও কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা জিজ্ঞেস করো না;
আমি তা মূহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, -তার অনেক কারণ রয়েছে।
তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্টভ্রষ্ট ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের কথা, তার রাজনীতি,
অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ,
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না;
আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, – তার অনেক কারণ রয়েছে ।….

তবে এত হতাশার মাঝেও একটি আনন্দের সংবাদ পেলাম ক’দিন আগে। বাংলাদেশের কিছু যুক্তিবাদী সংগঠন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে, সাহস করে এগিয়ে এসেছে অচলায়তন ভাঙার। তেমনি একটি সংগঠন হল  জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন। আইয়ুব হোসেন এবং বেলাল বেগ এ প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত বলে জানি।  বেনুবর্নার কল্যাণে আমার ওয়ালে শেয়ারকৃত তাদের একটি পোস্টের ব্যাপারে দৃষ্টি নিবদ্ধ হল আমার।  আমার সাথে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের কোন কথা হয়নি এ ব্যাপারে, কিন্তু তাদের নোট থেকে দেখলাম, কেউ মরণোত্তর দেহদানে আগ্রহী হলে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন  আইনগত-ভাবে ব্যাপারটা পরিচালনা করবে এবং উকিলের মাধ্যমে লিখিত ভাবে ফরম পূরণ করে দেহের ১৪টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার অঙ্গীকার প্রদান করবে। পাঠকদের কেউ  আগ্রহী হলে নিজ দায়িত্বে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন

মরণোত্তর দেহদানে মানব কল্যাণ

জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন

মানুষের মৃত্যুর পর অসার, নিস্পন্দ দেহখানি কবরের মাটিতে গলে মিশে যায়। অথবা সম্প্রদায় বিশেষে অগ্নিদাহ হয়ে ছাইভস্মে পরিণত হয়। মানবদেহের মতো মূল্যবান একটি সম্পদের এভাবে অপচয় হওয়া সমর্থন করা যায় না, যুক্তিযুক্তও নয়। যে কোনো শুভ-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ জীবদ্দশায় যেমন তেমনি মৃত্যুর পরও মানব কল্যাণে অবদান রাখতে পারেন।

মরণোত্তর দেহ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে দান করে এই কল্যাণ সাধনের সুযোগ রয়েছে। মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ বা হাসপাতালে দেহ পৌঁছালে ১৪টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়। অর্থাৎ একটি প্রাণহীন দেহ ১৪ জন বিকলাঙ্গকে সচল করতে পারে।

মরণোত্তর দেহদানের প্রক্রিয়াটি খুব জটিল কিছু নয়। অঙ্গীকার পত্র ও হলফ-নামায় সম্মতিদানের মাধ্যমে নোটারি-পাবলিক করলেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।

আগ্রহী যে কেউ আমাদের অফিসে ব্যক্তিগতভাবে অথবা টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা চাইলে আমরা ফর্ম পাঠাতে পারি, ওটা পূরণ করে স্বাক্ষর ও ছবি সংযুক্ত করে পাঠিয়ে দিন। ফর্মের সফট কপি, স্ট্যাম্প ও নোটারী ব্যয় বাবদ ৩০০ টাকা ফ্লেক্সি লোড করে পাঠালে চলবে। আমরা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে সার্বক্ষণিক সংরক্ষণের  জন্য একটি দেহদান পত্র পাঠিয়ে দেব।

দ্রুত যোগাযোগ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শুভবাদী সকল বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আজীবন শুভেচ্ছা।

জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন
১০৮ কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ
বাংলামটর, ঢাকা
মোবাইল : ০১৫৫২৩৫৮০১৮ / ০১৭১২২৯৬৮১৮
Email: [email protected]

 

গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করছে আজ –

হাল ছেড়োনা
হাল ছেড়োনা বন্ধু, বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে
দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে …

অন্য গানের ভোর আসবেই।

লেখাটা প্রায় শেষ করে এনেছি, এমন সময় মহানবী গুগল (দঃ) এর কল্যাণে নিউইয়র্ক টাইমসের একটা মজার পুরনো নিউজের দিকে নজর গেল আমার, আমেরিকায় ফাঁসির আসামীরা  পর্যন্ত মরণোত্তর দেহদানের কথা সিরিয়াসলি ভাবছে।  আমি ভাবলাম, ফাঁসির আসামীরা পর্যন্ত যদি পারে,  আমি আপনিই বা বসে থাকব কেন?

হ্যাঁ, আমি মরণোত্তর দেহদানের ব্যাপারটা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আর আমি জানি এই আন্দোলনে আমি একা  নই।

একদিন তুমিও মোর সঙ্গী হবে,

আর পৃথিবীটা হবে এক …