“Helping Hands are Better than Praying Lips” -ইংরেজি প্রবাদ
হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তার লাশ দাফন নিয়ে দেশব্যাপী যে ক্যাচাল শুরু হয়েছিল তা নিশ্চয় মনে আছে পাঠকদের। পুরো দেশ যেন হাসিনা-খালেদা পরিবারের মত দুইভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল – শাওন পরিবার বনাম গুলতেকিন পরিবার। এক পরিবার চাচ্ছিল নুহাশ পল্লীতে যেন লেখকের দাফন হয়, অন্য পরিবার চাচ্ছিল ঢাকায়। দুই পরিবারই তাদের সিদ্ধান্তে ছিলেন এক্কেবারে অনড়। গুলতেকিন পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছিলেন দাফন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কিংবা এ ধরণের কোথাও হোক। কারণ সম্ভবত: সেখানে সবাই সহজে যেতে পারবে। কিন্তু হুমায়ূনের স্ত্রী শাওনকে কোনভাবেই রাজি করানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী দাবী মেনে নিয়ে নুহাশ পল্লীতেই দাফনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। সেখানেই সমাধিস্থ করা হয় এই জনপ্রিয় কথা শিল্পীকে।
হুমায়ূন আহমেদকে কোথায় কবর দেয়া হবে সে ব্যাপারটা সে সময় এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো কেন কে জানে! অনেক বিখ্যাত লোকের কবরই কিন্তু তাদের পরিবারের পছন্দমতো জায়গায় হয়নি। বিডিনিউজ২৪.কম নিউজের সম্পাদক রাজু আলাউদ্দিন সে সময় একটি চমৎকার লেখা লিখেছিলেন ‘কবরের জায়গা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?’ শিরোনামে। লেখাটিতে তিনি চমৎকার কিছু উদাহরণ টেনে বলেছিলেন,
পৃথিবীর এমন অনেক লেখক আছেন যারা, এমনকি নিজের দেশেও সমাহিত নন। বিখ্যাত আইরিশ লেখক অস্কার ওয়াইল্ডের কবর প্যারিসে। শুধু ওয়াইল্ডই নন, মার্কিন গায়ক জিম মরিসন, ইরানের প্রথম সারির লেখক সাদেক হেদায়াত, গুয়াতেমালার নোবেল বিজয়ী লেখক মিগেল আনহেল আস্তুরিয়াস, পেরুর কবি সেসার বাইয়েহো প্যারিসেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। আর্জেন্টিনার বিখ্যাত লেখক হোর্হে লুইস বোর্হেস জেনেভায় সমাহিত। আর একেবারে সদ্যপ্রয়াত মেক্সিকোর লেখক কার্লোস ফুয়েন্তেস–লেখকের নিজের ইচ্ছায়–প্যারিসেই সমাহিত হয়েছেন। অনেকেই জানেন কি না জানি না বাংলার রেনেসাঁ যুগের অন্যতম প্রাণপুরুষ বাঙালী লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামমোহন রায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন বৃষ্টলের স্ট্যাপলটনে। তাকে সমাহিতও করা হয়েছিলো বৃস্টলেই।
কিন্তু প্রবাসে সমাহিত হওয়ার কারণে লেখক হিসেবে তারা ম্লান বা বিস্মৃত হয়ে গেছেন–এমনটা বোধ হয় কেউ-ই বলবেন না।
কবরের জায়গাটাকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবার পেছনে কি মাজার-সংস্বৃতির প্রতি আমাদের স্বভাবিক প্রবণতারই একটি পরোক্ষ প্রকাশ?
উদ্ধৃতির শেষ লাইনটি নিঃসন্দেহে চিন্তা-জাগানিয়া। কবরের জায়গাকে এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করার পেছনে আমাদের মাজার-সংস্কৃতির প্রতি আসক্তির ব্যাপারটা কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায়না মোটেই। সেই কবে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ তার লালসালু বইয়ে দেশের সারমর্ম এঁকেছিলেন একটিমাত্র বাক্যে – ‘শস্যের চেয়ে টুপি, বেশী ধর্মের আগাছা বেশী’। টুপি-ধারী মজিদদের দেশে সব ফেলে কবর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে না তো কোথায় উঠবে? লাল সালুর মজিদেরা সংখ্যায় আগের চেয়ে কমেনি, বরং গায়ে গতরে বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জনজীবনে কবরের মাহাত্ম্যও। কিন্তু আজকের লেখাটি হুমায়ূন আহমেদকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে তা নিয়ে নয়, যে ব্যাপারটি আমাকে ভাবিয়েছে সেটা হল – মানুষকে কবর দিলেই কি আর ঘটা করে শ্মশান ঘাটে নিয়ে পুড়ালেই বা কি, এতে তো জগৎ জীবন কিংবা মানুষের কোন উপকারই হচ্ছে না। তার চেয়ে আরো ভাল সিদ্ধান্ত কী এরকম হতে পারে না যদি আমাদের মৃতদেহটিকে মানব কল্যাণে আমরা উৎসর্গ করতে পারি?
আমাদের কৃষক-দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০০–১৯৮৫) কিন্তু চেষ্টা করেছিলেন। আরজ আলী মাতুব্বর লোকটাকে আমার বরাবরই দুঃসাহসী, দুর্দান্ত, দুরন্ত, দুর্বিনীত বলে মনে হয়েছে। অশিক্ষিত সামান্য একজন চাষা নিজ উদ্যোগে স্বশিক্ষিত হয়েছেন। কিন্তু এই শিক্ষা কেবল ‘শমশের আলীদের মত কোরানে বিজ্ঞান খোঁজার শিক্ষায়’ শিক্ষিত হওয়া নয়, বরং মনের বাতায়ন খুলে দিয়ে ‘আলোকিত মানুষ’ হবার ঐকান্তিক বাসনা। আরজ আলী বিনা প্রমাণে কিছু মেনে নেননি, প্রশ্ন করেছেন, জানতে চেয়েছেন। সে প্রশ্নগুলো সন্নিবেশিত করেছেন ‘সত্যের সন্ধান’ বইয়ে। যে প্রশ্নগুলো একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারীরাও করতে ভয় পেতেন, সে সব প্রশ্নগুলো তিনি করে গেছেন অবলীলায়, ভাবলেশবিহীন মুখে।
আমাদের মত শিক্ষিত বলে কথিত সুশীলদের গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিয়েছেন আরজ আলী মাতুব্বর। শুধু জীবিত অবস্থায় নিজেকে আর অন্যদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেননি, তিনি তার মৃত্যুর সময়েও এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, যে সাহস এর আগে কোন শিক্ষিত সুশীলেরা করে দেখাতে পারেনি। তিনি তার মৃতদেহ কবরে দাফন না করে মানব কল্যাণে দান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে লেখা ‘কেন আমার মৃতদেহ মেডিকেলে দান করেছি’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেন –
‘…আমি আমার মৃতদেহটিকে বিশ্বাসীদের অবহেলার বস্তু ও কবরে গলিত পদার্থে পরিণত না করে, তা মানব কল্যাণে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমার মরদেহটির সাহায্যে মেডিক্যাল কলেজের শল্যবিদ্যা শিক্ষার্থীগন শল্যবিদ্যা আয়ত্ত করবে, আবার তাদের সাহায্যে রুগ্ন মানুষ রোগমুক্ত হয়ে শান্তিলাভ করবে। আর এসব প্রত্যক্ষ অনুভূতিই আমাকে দিয়েছে মেডিকেলে শবদেহ দানের মাধ্যমে মানব-কল্যাণের আনন্দলাভের প্রেরণা।’
আমি নীচে আরজ আলী মাতুব্বরের মৃতদেহ দানপত্রটি দিলাম – যা এখনো আমাদের মতো মানবতাবাদীদের জন্য অফুরন্ত প্রেরণার উৎস –
আরজ আলী মাতুব্বরের মতো বাংলার বিবেক, মুরতাদ অধ্যাপক আহমদ শরীফও তার মৃতদেহকে মেডিকেল মানব কল্যাণে দান করে গেছেন। আরজ আলী মাতুব্বরের মৃতদেহ দানপত্রের মতো আহমদ শরীফের সম্পাদিত ( মৃত্যুর চার-পাঁচ বছর আগে) তার ‘অছিয়তনামা’ আর ‘মরদেহ হস্তান্তরের দলিল’ দুটিও বাংলা আর বাঙালির মুক্তবুদ্ধির ইতিহাসে অনন্য কীর্তি।
অসিয়তনামায় তিনি লিখেছিলেন –
“আমি সুস্থ শারীরিক এবং সুস্থ মানসিক অবস্থায় আমার দৃঢ় সঙ্কল্প বা অঙ্গীকার স্থির সিদ্ধান্ত-রূপে এখানে পরিব্যক্ত করছি।
আমার মৃত্যুর পরে আমার মৃতদেহ চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের অ্যানাটমি এবং ফিজিওলজি সংক্রান্ত কাজে ব্যবহারের জন্য ঢাকার ধানমন্ডিস্থ বেসরকারী মেডিকেল কলেজে অর্পণ করতে চাই। … চক্ষুদান এবং রক্তদান তো চালুই হয়েছে। চোখ শ্রেষ্ঠ প্রত্যঙ্গ, আর রক্ত হচ্ছে প্রাণ-প্রতীক। কাজেই গোটা অঙ্গ কবরের কীটের খাদ্য হওয়ার চেয়ে মানুষের কাজে লাগাই তো বাঞ্ছনীয়।”
অধ্যাপক আহমদ শরীফ (১৯২১-১৯৯৯)
গত বছর আহমদ শরীফের মৃত্যুদিবস উপলক্ষে মুক্তমনা ব্লগার অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ লিখেছিলেন তাঁর ‘আহমদ শরীফ: এক দুর্বিনীত সক্রেটিসের প্রতিকৃতি’ নামের ব্যতিক্রমী একটি প্রবন্ধ। সে প্রবন্ধে খুব সঠিকভাবেই তিনি উল্লেখ করেছেন –
‘আর কিছু না হলেও শুধুমাত্র এই দু’টি দলিলের কারণে আহমদ শরীফ বাংলার মুক্তমনাদের পথিকৃত হয়ে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।’
আরজ আলী কিংবা আহমদ শরীফের মত ব্যক্তিত্বরা শুধু ইহজীবনে নয়, এমনকি পরকালকে সামনে রেখে নিজের মৃতদেহ নিয়ে ঋজু চিত্তে বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও আমরা জানি আমাদের চেনা জানা অধিকাংশ মানুষই এভাবে চিন্তা করতে সক্ষম নন। এই অক্ষমতার মূল কারণ হল আত্মা সংক্রান্ত প্রাচীন কুসংস্কারের কাছে নতি স্বীকার। আমার অন্তত: তাই মনে হয়। আমি বছর কয়েক আগে ‘আত্মা নিয়ে ইতং বিতং’ নামে একটি সিরিজ লিখেছিলাম। সে লেখাটাতে আমি দেখিয়েছিলাম – আত্মা ব্যাপারটি মানুষের আদিমতম কল্পনা- যেটা সুসংবদ্ধ রূপ পেয়েছিল গ্রীসে প্লেটোর দর্শনে এসে। প্লেটোর বক্তব্য ছিল যে, প্রাণী বা উদ্ভিদ কেউ জীবিত নয়, কেবলমাত্র যখন আত্মা প্রাণী বা উদ্ভিদদেহে প্রবেশ করে তখনই তাতে জীবনের লক্ষণ পরিস্ফুট হয়। প্লেটোর এ সমস্ত তত্ত্বকথাই পরবর্তীতে খ্রিস্টধর্মের বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থনের যোগান দেয়। প্লেটোর এই ভাববাদী তত্ত্ব অ্যারিস্টটলের দর্শনের রূপ নিয়ে পরবর্তীতে হাজার-খানেক বছর রাজত্ব করে। এখন প্রায় সব ধর্মমতই দার্শনিক-যুগলের ভাববাদী ধারণার সাথে সঙ্গতি বিধান করে। আত্মা সংক্রান্ত কুসংস্কার শেষপর্যন্ত মানব সমাজে ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসে।
অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস (১৯৪৫ -১৯৯৮)
আমি আমার প্রবন্ধে দেখিয়েছিলাম যে, আধুনিক বিজ্ঞানের চোখে অপার্থিব আত্মার কল্পনা ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়া কিছু নয়। বলা বাহুল্য, আত্মার অস্তিত্ব ছাড়াই বিজ্ঞানীরা আজ মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর আচরণ, আচার-ব্যবহার এবং নিজের ‘আমিত্ব’ (self) এবং সচেতনতাকে (consciousness) ব্যাখ্যা করতে পারছে। এমনকি খুঁজে পেয়েছে ধর্মীয় অপার্থিব অভিজ্ঞতার বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় নানা উৎসও। যা হোক, লেখাটি পরে আমার আর রায়হানের লেখা ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইয়েও অন্তর্ভুক্ত হয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মার ধারণার খণ্ডনের পাশাপাশি লেখাটির একদম শেষে এসে বলেছিলাম এই প্রবন্ধের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রয়োজনীয় কিছু কথা –
‘…এমন একদিন নিশ্চয় আসবে যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জীবন-মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করার জন্য আত্মার দ্বারস্থ হবে না; আত্মার ‘পারলৌকিক’ শান্তির জন্য শ্রাদ্ধ-শান্তিতে কিংবা মিলাদ-মাহফিল বা চল্লিশায় অর্থ ব্যয় করবে না, মৃতদেহকে শ্মশান ঘাটে পুড়িয়ে বা মাটিচাপা দিয়ে মৃত দেহকে নষ্ট করবে না, বরং কর্নিয়া, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃত, অগ্ন্যাশয় প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো যেগুলো মানুষের কাজে লাগে, সেগুলো মানবসেবায় দান করে দেবে (গবেষণা থেকে জানা গেছে, মানুষের একটিমাত্র মৃতদেহের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ২২ জন অসুস্থ মানুষ উপকৃত হতে পারে)। এ ছাড়াও মেডিকেলের ছাত্রদের জন্য মৃতদেহ উন্মুক্ত করবে ব্যবহারিকভাবে শরীরবিদ্যাশিক্ষার দুয়ার। আরজ আলী মাতুব্বর তার মৃতদেহ মেডিকেল কলজে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সময় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এ অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে পরবর্তীতে মেডিকেলে নিজ মৃতদেহ দান করেছেন ড. আহমেদ শরীফ, ড. নরেন বিশ্বাস, ওয়াহিদুল হক, গায়ক সঞ্জীব চৌধুরী প্রমুখ। সমাজ সচেতন ইহজাগতিক এ মানুষগুলোকে জানাই আমার প্রাণের প্রণতি’।
আমাদের বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে। তখনো ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ খ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ জীবিত। উনি মারা যান ২০১২ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারি। তাই আমাদের বইয়ে ড. আহমেদ শরীফ, ড. নরেন বিশ্বাস, ওয়াহিদুল হক, গায়ক সঞ্জীব চৌধুরীদের কথা থাকলেও ফয়েজ আহমদের কথা ছিল না। জীবিত অবস্থায় তিনি জনকল্যাণে মরণোত্তর দেহ ও চক্ষু দানের ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন।
ফয়েজ আহমদ মারা যাওয়ার পর প্রদীপ দেব তার ‘ফয়েজ আহমদ: একজন মুক্তমনার প্রতিকৃতি’ শিরোনামের লেখাটিতে লিখেছিলেন –
চিরকুমার ফয়েজ আহমদ ব্যক্তিগত সুখের কথা ভাবেন নি কখনো। সারাজীবন মানুষের জন্য গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থেকেছেন। … সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার জন্য চিরদিন সংগ্রাম করে গেছেন যিনি – মৃত্যুর পরেও মানুষেরই কাজে লাগিয়েছেন নিজের শরীর। চোখ দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন দু’জন মানুষের দৃষ্টি। তাঁর চেয়ে মুক্তমনা মানুষ আমরা আর কোথায় পাবো?
আরজ আলী মাতুব্বর থেকে শুরু করে ড. আহমেদ শরীফ, ড. নরেন বিশ্বাস, ওয়াহিদুল হক, গায়ক সঞ্জীব চৌধুরী, ফয়েজ আহমদের উদাহরণ দেখলে বোঝা যায় মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে মরণোত্তর দেহ দানের আগ্রহ বাড়ছে, প্রতি বছরই দৃষ্টান্ত হিসেবে তালিকায় উঠে আসছে বিদগ্ধজনদের নাম। জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ছে। এর মধ্যে আমার চেনা জানা বাংলাদেশের সেলিব্রিটিদের মধ্যে আছেন যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। শুধু ইহজীবনে যাদু দেখিয়েই আমাদের তিনি মুগ্ধ করেননি, মৃত্যুর পরও কিভাবে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা যায় সেই ভাবনায় মরণোত্তর দেহ দান করে বিমোহিত করে দিয়েছেন তিনি আমাদের। গড়ে তুলেছেন মানব কল্যাণে মরণোত্তর দেহদাতা সমিতি। তিনি এই সমিতির সাধারণ সম্পাদকও বটে।
বাংলাদেশের মত পশ্চিমবঙ্গেও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি মরণোত্তর দেহদান করেছেন। এ মুহূর্তে প্রথমেই আমার যে নামটি মনে পড়ছে তিনি হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।
২০১০ সালের ১০ই জানুয়ারি কলকাতার সল্ট লেকের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার পর কিছু সময় পরেই তাঁর চোখের কর্নিয়া অপসারণ করেন চিকিৎসকরা, তারপর তার দেহ ছাত্র ছাত্রীদের গবেষণার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আমার লেখার নিচে অনামীর মন্তব্য থেকে জানলাম, তার এই অভিলাষের কথা জ্যোতি বসু জীবিত অবস্থাতেই বলে গিয়েছিলেন এভাবে –
“জানিনা আমার অশক্ত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কারো কাজে আসবে কিনা! কিন্তু আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা যে আমার মরদেহ যেন অন্তত গবেষণার কাজে লাগানো হয়।একজন কমিউনিস্ট হিসেবে জানতাম জীবিতকালে মানুষের সেবা করতে পারব। মৃত্যুর পরেও যে মানবতার কাজে লাগা যাবে, এটা জেনে প্রফুল্ল বোধ করছি।”
আমি ইন্টারনেট খুঁজে দেখলাম, কেবল জ্যোতি বসু নয়, পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী অনেক নেতা মরণোত্তর দেহ দান করে রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন লোকসভার সাবেক স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা অনিল বিশ্বাস প্রমুখ।
কিন্তু তারপরেও – দুঃখজনক হলেও দেশে সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্রক্রিয়াটি এখনো জনপ্রিয় করা যায়নি, না এ পার বাংলায়, না ওপারে। বেহেস্তের বা স্বর্গের অলীক হুর-পরীর লোভ, নরক কিংবা দোজখের ভয়, কুসংস্কার আর অপবিশ্বাসের পাশাপাশি অশিক্ষিত এবং অর্ধশিক্ষিত মোল্লা – পুরোহিত আর লালসালুর মজিদদের ছড়ি ঘোরানো যে সমাজে প্রবল সে সমাজে এই ধরণের ব্রাত্য ধারণাকে জনপ্রিয় করাটা কষ্টকরই বটে। কিন্তু উদ্যোগ তো নিতে হবে কাউকে না কাউকে একটা সময়। সেই ভাবনা থেকেই লেখাটির শুরু। আমি নিজেও এ ধারনায় নতুন সৈনিক। এ নিয়ে জানার চেষ্টা করছি। যেটুকু বুঝেছি তার নিরিখেই প্রবন্ধটি লেখা। আমার দৃঢ ধারণা পাঠকেরাই এ প্রবন্ধটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন সুগভীর আলোচনার মাধ্যমে। এই প্রবন্ধটি নেটের এক কোনায় এই মুহূর্তে থেকে গেলেও এই লেখাটিই রূপান্তরিত হয়ে উঠবে শুভবুদ্ধিধারী মুক্তমনা মানুষদের আগ্রহের চারাগাছে। চারাগাছ ধীরে ধীরে বড় হবে, একসময় মহীরুহ হয়ে ছড়িয়ে পড়বে আনাচে কানাচে। লিখতে গিয়ে জন লেননের ‘ইমাজিন’ গানের কথাগুলো মনে পড়ছে খুব –
You, you may say
I’m a dreamer, but I’m not the only one
I hope some day you’ll join us
And the world will be as oneতুমি হয়তো বলবে
আমি স্বপ্নদর্শী, কিন্তু জেনো আমি একা নই
একদিন তুমিও মোর সঙ্গী হবে,
আর পৃথিবীটা হবে এক …
কেন মরণোত্তর দেহ দানকে আমি সামনে আনতে চাইছি এ নিয়ে কিছু বলা যাক। মৃতদেহ নিয়ে আমাদের অফুরন্ত আবেগ থাকতে পারে, স্মৃতি থাকতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা হল মানুষ মরে গেলে মৃতদেহ কারো কোন কাজে আসে না। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে – একটি মানুষ মারা যাওয়ার সাথে সাথে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোরও মৃত্যু ঘটে না; অন্ততঃ সাথে সাথেই নয়। দেখা গেছে মানুষ মারা যাবার পরেও হৃৎপিণ্ড ১৫ মিনিট, কিডনি ৩০ মিনিট, কঙ্কাল পেশী – ৬ ঘণ্টার মত ‘বেঁচে থাকে’। অঙ্গ ‘বেঁচে থাকা’র অর্থ হল তার কোষগুলো বেঁচে থাকা। কোষ বেঁচে থাকে ততক্ষণই যতক্ষণ এর মধ্যে শক্তির যোগান থাকে। শক্তি উৎপন্ন হয় কোষের অভ্যন্তরস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া থেকে। মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ হলে কোষেরও মৃত্যু হয়। যাই হোক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মৃত্যু নিয়ে দার্শনিক আলোচনায় গিয়ে লাভ নেই, মূল কথা হল – মানুষ মারা যাওয়ার পর তার মৃতদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে কাজে লাগানো যায় ইচ্ছে থাকলেই, মানে কারো সদিচ্ছা থাকলে। স্থানান্তরযোগ্য অঙ্গের মধ্যে আছে চোখ (কর্নিয়া), হৃৎপিণ্ড, যকৃত, কিডনি, চামড়া, স্টেমসেল সহ বহু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসের দেওয়া তথ্য থেকে আমি সম্প্রতি জানলাম একটি মৃতদেহের অন্তত: পঞ্চাশটি অঙ্গকে নাকি নানাভাবে অন্য মানুষের কাজে লাগানো যায়।
কিন্তু এই হতচ্ছাড়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে কাজে লাগানোর দরকারটা কি? কারণ হচ্ছে চাহিদা। খোদ আমেরিকাতেই এই মুহূর্তে ১১০, ০০০ জন আমেরিকাবাসী কোন না কোন অঙ্গের জন্য প্রতীক্ষা করে রয়েছে। সুখবর হচ্ছে প্রতিদিন অন্ততঃ ৭৭ জনের দেহে অন্যের দান করা অঙ্গ স্থানান্তর করে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে দুঃসংবাদ হল – প্রতিদিন অন্ততঃ ১৯ জন রোগী এই ‘ওয়েটিং লিস্টে’ থাকা অবস্থাতেই মারা যাচ্ছে, স্থানান্তরযোগ্য অঙ্গের অভাবে।
ইউরোপে প্রতিবছর প্রায় সাতাশ হাজার রোগীর দেহে অন্য কোন কোন সহৃদয় ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া অঙ্গ সংস্থাপন করা সম্ভব হয়, ষাট হাজার রোগী অঙ্গের অভাবে কেবল প্রতীক্ষাই করে যায়, আর অন্ততঃ তিন হাজার রোগী সঠিক সময়ে অঙ্গ-প্রাপ্তির অভাবে মৃত্যুবরণ করে।
এগুলো তো গেল কেবল আমেরিকা আর ইউরোপের হিসেব। বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অঙ্গের চাহিদা কত বেশি তা বোধ হয় না বলে দিলেও চলবে। বাংলাদেশে কিডনি এবং যকৃতের রোগে আক্রান্তদের হার আশঙ্কাজনকই বলা যায়। হয়তো এর পেছনে অনবরত ভেজাল খাদ্য, ময়লা পানি, দূষিত পরিবেশে লাগাতার বসবাসের প্রভাব থাকতে পারে। প্রভাব যাই থাকুক কিডনি আক্রান্ত হলে তাকে কৃত্রিমভাবে ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিসের প্রভাব অনেক সময়ই দেহে হয় নেতিবাচক। কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্টই হয় তখন একমাত্র ভরসা। কিন্তু স্থানান্তরযোগ্য কিডনি না পাওয়া গেলে সেটা হয়ে দাঁড়ায় মূর্তিমান সমস্যাই। মৃতদেহের প্রতি অন্ধ আসক্তি পরিহার করে সামান্য বদান্যতাই দিতে পারে বহু রোগীকে নতুন জীবনের সন্ধান। দরকার কেবল উদ্যোগের।
যকৃতের ক্ষেত্রেও তাই। আমি আমার ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইয়ে জীবন এবং মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেমি ফিস্কের ‘জীবন প্রাপ্তি’র উদাহরণ হাজির করেছিলাম। আশির দশকের ঘটনা এটি। এগারো মাসের শিশু জেমি আর হয়ত বড়জোর একটা ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারত-তার জন্মগত ত্রুটিপূর্ণ যকৃৎ নিয়ে। তার বাঁচবার একটিমাত্র ক্ষীণ সম্ভাবনা নির্ভর করছিল যদি কোন সুস্থ শিশুর যকৃৎ কোথাও পাওয়া যায় আর ওটি ঠিকমত জেমির দেহে সংস্থাপন করা সম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু এতো ছোট বাচ্চার জন্য কোথাওই কোন যকৃত পাওয়া যাচ্ছিলো না। যে সময়টাতে জেমি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছিলো আর মৃত্যুর থাবা হলুদ থেকে হলুদাভ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছিলো সারা দেহে, ঠিক সে সময়টাতেই হাজার মাইল দূরে একটি ছোট্ট শহরে এক বিচ্ছিরি ধরণের সড়ক দুর্ঘটনায় পড়া দশ মাসের শিশু জেসি বেল্লোনকে হুড়াহুড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। যদিও মাথায় তীব্র আঘাতের ফলে জেসির মস্তিষ্ক আর কাজ করছিলো না, কিন্তু দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে কিন্তু রেস্পিরেটরের সাহায্যে ঠিকই কর্মক্ষম করে রাখা হয়েছিলো। জেসির বাবা রেডিওতে দিন কয়েক আগেই একটি যকৃতের জন্য জেমির অভিভাবকদের আর্তির কথা শুনেছিলেন। শোকগ্রস্ত পিতা এতো দুঃখের মাঝেও মানবিক কর্তব্য-বোধকে অস্বীকার করেননি। তিনি ভেজিটেশনে চলে যাওয়া নিজের মেয়ের অক্ষত যকৃৎটি জেমিকে দান করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। জেসির রেস্পিরেটর বন্ধ করে দিয়ে তার যকৃৎ সংরক্ষিত করে মিনেসোটায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হল। জেমির বহু প্রতীক্ষিত অস্ত্রোপচার সফল হলো। এভাবেই জেসির আকস্মিক মৃত্যু সেদিন জেমি ফিস্ককে দান করল যেন এক নতুন জীবন। সেই ধার করা যকৃৎ নিয়ে পুনর্জীবিত জেমি আজো বেঁচে আছে- পড়াশুনা করছে,দিব্যি হেসে খেলে বেড়িয়ে পার করে দিয়েছে জীবনের চব্বিশটি বছর!
পরকালের নানা কিসিমের লোভ তোয়াক্কা করে যে মানবিকতার জন্য উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়, জেসির বাবাই ছিলেন তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। তার নিজের মেয়ে মারা গেলেও ঠিক সেই মুহূর্তের সিদ্ধান্তই দিতে পেরেছিল অজানা অচেনা আরেকটি মেয়েকে নবজীবন। এর চেয়ে বড় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে!
আমি কয়েকদিন ধরেই মরণোত্তর দেহদানের নিয়ম কানুনের কথা ভাবছিলাম, এ নিয়ে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। দেখলাম ব্যাপারটা কঠিন কিছু নয়। আপনি যদি আমেরিকানিবাসী কেউ হন, তবে আপনার জন্য ব্যাপারটা সোজা। সায়েন্স কেয়ার, বায়োগিফট, মায়ো-ক্লিনিক, এনাটমিক গিফট রেজিস্ট্রি সহ বহু জায়গায় আপনি আপনার মরণোত্তর দেহ দান করতে পারবেন। আপনার দেহ দান করতে পারবেন যে কোন অ্যাকাডেমিক কলেজেও। আপনি যদি প্রাপ্তবয়স্ক যুবক বা যুবতী হন, সরাসরি আপনার পছন্দমতো জায়গায় ফোন করতে পারেন, তাদের সাথে কথা বলতে পারেন। যদি কারো সাথে কথা বলে ভাল লাগে, সম্মত হন, তাদের দেয়া ফর্ম আপনাকে পূরণ করতে হবে। তারা আপনাকে ডাকযোগে একটি কার্ড পাঠাবে। সেটা আপনার মানিব্যাগে রেখে দিতে হবে। ব্যাস কাজ শেষ। আপনার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কেউ আপনাকে ঘাঁটাবে না। ধরুন আপনি বায়োগিফটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আপনার মৃত্যুর পর আপনার ওয়ালেটে পাওয়া বায়োগিফটের কার্ড দেখে বা অন্য কোনভাবে তাদের জানানো হলে তারা এসে নিচের পদক্ষেপ গুলো নেবেন –
আপনার যে বায়োগিফটের সাথেই চুক্তিবদ্ধ হতে হবে তা নয়, কার সাথে কথা বলবেন, কাকে পছন্দ করবেন, কাকে মরণোত্তর দেহ প্রাপ্তির জন্য মনোনীত করবেন, সেটা সম্পূর্ণ আপনার উপরেই নির্ভর করছে। মৃত্যুর আগে আপনার দেহে যদি ক্যান্সার এইডসের মত বদ খদ রোগ কিংবা কোন ছোঁয়াচে রোগ বাসা না বেধে থাকে, তবে আপনার শরীর বায়োগিফটের জন্য মনোনীত হবে। আপনার পরিবার পরিজনদের সাথে কথা বলে তারা দেহটি স্থানান্তরের ভার নেবে। পরবর্তীতে মৃতদেহ থেকে সংস্থাপনযোগ্য অংঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিভিন্ন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হবে।
মৃত্যুর সময় আপনার কোন বড় সড় কিংবা ছোঁয়াচে রোগ ছিল কিনা সেটা জানা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মৃতদেহ থেকে পাওয়া অঙ্গ অন্য সুস্থ রোগীর দেহে সংস্থাপন করা হলে কেউ নিশ্চয় এইডস বা ক্যান্সারে মারা যাওয়া মানুষের অঙ্গ গ্রহণ করে নিজের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করতে চাইবে না; তাই না? তাই যে এজেন্সির সাথে আপনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তারা মৃতদেহ গ্রহণ করার আছে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেবে। উপরে যে ধাপগুলো দেখানো হয়েছে তার মাঝামাঝি জায়গায় রক্ত পরীক্ষার উল্লেখ রয়েছে এজন্যই।
তবে একটি বিষয় উল্লেখ করে রাখি- ক্যান্সার, এইডস এ ধরনের রোগে মারা গেলে মরণোত্তর দেহদানের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় তা কিন্তু নয়। এ ধরণের বড় সড় রোগে কেউ মারা গেলে তার মৃতদেহও দান হিসেবে গ্রহণ করা হয়, ক্যান্সার কিংবা এইডসের রিসার্চে সেই শবদেহ কাজ লাগান গবেষকেরা। দেহ কাটাছেঁড়া করে গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারিত করেন গবেষকেরা, শবদেহ বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকেরা পেতে চেষ্টা করেন রোগ নিরাময়ে নতুন আশার ঠিকানা। উদাহরণ দেয়া যাক। সবারই নন্দিত লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন্সকে মনে আছে। এসোফেগাল ক্যান্সারাক্রান্ত হিচেন্স মারা যান ২০১১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর তারিখে। মৃত্যুর আগে তিনি তার মৃতদেহ মেডিকেল রিসার্চের জন্য দান করে যাওয়ার জন্য বলে দেন। হিচেন্সের মৃত্যুর পর তার সাহিত্য-প্রতিনিধি স্টিভ ওয়াসারম্যান খুব ছোট্ট একটা বার্তায় সারকথা বলে দেন, যা হয়তো তখন অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে –
“In accordance with Christopher’s wishes, his body was donated to medical research. Memorial gatherings will occur next year.”
ক্রিস্টোফার হিচেন্স (১৯৪৯ – ২০১১)
ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মত ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে কিছুদিন আগে মারা গেছেন বাংলাদেশের জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদও। কিন্তু তিনি নীরবে নিভৃতে চলে যেতে পারেননি। তার শবদেহ কোথায় কবরস্থ করা হবে তা নিয়ে রীতিমত দুই পরিবারে মল্লযুদ্ধ হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই অস্বস্তিকর মল্লযুদ্ধ থেকে একটি মানুষও উপকৃত হয়নি, একটি রোগাক্রান্ত মানুষকে সুস্থ করা যায়নি, গবেষণার ক্ষেত্রে কানা-কঞ্চিও অগ্রগতি হয়নি, কোন মেডিকেলের ছাত্র শবদেহ কেটে তার জ্ঞান এক রত্তি বাড়াতে পারেননি। কেবল পারলৌকিক প্রশান্তি আর হুর পরীর মিথ্যে আশায় গা ভাসিয়ে দেয়া ছাড়া। আমি পার্থক্যটা এখানেই দেখি।
ক্রিস্টোফার হিচেন্সের ব্যতিক্রমী দান অনুপ্রাণিত করেছে বহু মুক্তমনা মানুষদের। এমনি একজন মানুষ হচ্ছেন এডওয়ার্ড টার্ট। একসময় ক্যাথলিক প্রিস্ট ছিলেন। কিন্তু বাইবেলের ভুজুং ভাজুং বুঝতে তার সময় লাগেনি। একসময় নীরবেই খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করেন তিনি, হয়ে উঠেন মুক্তমনা। ক্রিস্টোফার হিচেন্স মারা যাওয়ার পরে তার শবদেহ মেডিকেল রিসার্চের জন্য দান করার কথা শুনে এডওয়ার্ডও অনুপ্রাণিত হন। তিনি তার মৃতদেহ আমেরিকার বেলর কলেজ অব মেডিসিনে দান করে যেতে মনস্থ করেন। উজ্জীবিত এই বয়োবৃদ্ধ তরুণের উজ্জয়নী ভিডিও রাখা আছে ইউটিউবে, অবশ্যই একবার হলেও সবার দেখে নেয়া দরকার –
httpv://www.youtube.com/watch?v=AL-nEBeCTGk
মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে ছুৎমার্গ কেটেছে বহুদিন হল। দেশের মানুষ এখন মৃত্যুর পরে কর্নিয়া দান করে যেতে ভয় পায় না। একটা সময় কিন্তু এটাও সহজ ছিলো না। সন্ধানীর উদ্যোগে মরণোত্তর চক্ষুদান কর্মসূচী এতোই ব্যাপকতা পেয়েছে যে, যে কোন মেলা বা উৎসবেও তাদের স্টল দেখা যায়, দেখা যায় তরুণ তরুণীদের অনুপ্রাণিত করতে। সেটা তো দরকারিই। বাংলাদেশে বর্তমানে কর্নিয়া-জনিত কারণে অন্ধত্বের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক বলে মনে করা হয়, সে-তুলনায় প্রতি বছর কর্নিয়ার যোগান অপ্রতুল হলেও সংখ্যা কিন্তু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমরা জেনেছি অনন্ত বিজয় দাশের নেতৃত্বে সিলেটের যুক্তিবাদী মুক্তমনারাও কিন্তু মরণোত্তর চক্ষুদান করে ফেলেছেন। এনিয়ে তাদের সচিত্র পোস্ট এখানে –
আমাদের মরণোত্তর চক্ষুদান – অনন্ত বিজয় দাশ
দরকার আরেকটু এগুনোর। মরণোত্তর দেহদান নিয়েও ছুৎমার্গ আর কুসংস্কারের দেওয়াল ডিঙাতে হবে। এবং সেটার পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। তাত্ত্বিকভাবে মরণোত্তর দেহদানের বিষয়টি কঠিন হবার কথা ছিল না। যে কোন নিকটস্থ সরকারি মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগে যোগাযোগ করলেই ব্যাপারটা হয়ে যাবার কথা। কেবল প্রয়োজন পড়ার কথা মরণোত্তর দেহদানে সম্মত ব্যক্তিটির পরিবারের দুজন সদস্যের সম্মতি, সেই সম্মতি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিটকৃত হতে পারে।
হতে পারে কিংবা পারত তো অনেককিছুই, যদি না দেশটার নাম বাংলাদেশ না হয়ে অন্যকিছু হত। যদি না দেশের অধিকাংশ মানুষ গোর আজাব আর পারলৌকিক হুর-পরিতে অবসেসড না থাকত। এই আফটার -লাইফ-অবসেসড মোল্লা-মুমিনেরা কীভাবে সৎ-কর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনই তার প্রমাণ। আরজ আলীর মায়ের মৃত্যুর পরে মৃতদেহের ছবি তোলা নিয়ে নরক-গুলজার করেছিল মোল্লারা। জানাজা পড়তে দেয়নি। তাও তো আরজ আলী মাতুব্বর লিখে রেখে গেছেন বলে সেই সকরুণ ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি। এ ধরণের বহু ঘটনাই রয়ে যায় বিস্মৃতির অন্তরালে।
যেমনটি ঘটেছিল রায়হান রশীদের বাবার ক্ষেত্রে। রায়হানকে অনেকেই জানেন মুক্তাঙ্গন-নির্মাণ ব্লগের সম্পাদক হিসেবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পিএইচডির শেষ পর্যায়ে রয়েছেন, পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্যেরই আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা প্রদানে সক্রিয় নাগরিক পর্যায়ের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ‘ইনটারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম’ (ICSF) এর। সেই রায়হানের বাবা ডাক্তার ছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন মৃতদেহ মাটিতে কবর দিয়ে গলিয়ে পঁচিয়ে নষ্ট করার চেয়ে মেডিকেলে দান করে দেয়াটাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত, যাতে ছাত্ররা অন্ততঃ একটি দেহ পায় শরীরবিদ্যা সঠিকভাবে আয়ত্ত করার জন্য। তার বাবা চেয়েছিলেন বাংলাদেশের ডাক্তারেরা যেন ছাত্রদের জ্ঞানার্জনের কথা ভেবে সামনে এগিয়ে আসেন মরণোত্তর দেহদানের প্রক্রিয়াটির নেতৃত্ব দিতে। যখন রায়হানের বাবা ১৯৯৭ সালে সত্য সত্যই মারা গেলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে মৃতদেহকে মেডিকেলে দান করাতে কারো কোন আপত্তিই ছিল না, বরং সর্বসম্মতিক্রমে তারা মেডিকেলে দেহ দান করাতেই মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু মেডিকেল থেকে ভয়ে এই মৃতদেহ গ্রহণ করা হল না। এলাকার কাওমি মাদ্রাসার মোল্লারা মরণোত্তর দেহদানের মত ‘বে-শরীয়তী’ কাজের জন্য রায়হানদের বাড়ী ঘিরে ফেলেন। অবশেষে মোল্লা-তন্ত্রের হাতে রায়হানদের পরিবারকে নতিস্বীকার করতে হয়েছিল। বলা বাহুল্য, রায়হানের পিতার শেষ ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গিয়েছিল সেদিন। আজও রায়হান সেদিনের কথা মনে করতে গিয়ে বেদনার্ত হয়ে পড়েন।
অথচ দেশের বাইরে কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়। মরণোত্তর দেহদানের ব্যাপারটাকে একটা মহৎ কাজ হিসেবেই দেখা হয়। যেমন মায়ো ক্লিনিকে যারা মরণোত্তর দেহদান করেন, তাদের সম্মানে মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় ছাত্র শিক্ষক এবং কর্মচারীদের পক্ষ থেকে –
কনভোকেশনে অনুষ্ঠান করে পরিবারের কাছে এই মহতী কাজের জন্য সম্মাননা জানানো হয়-
অনেকে দান করে যাওয়া অঙ্গের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পরিবারকে চিঠি লেখেন। আমাদের সংস্কৃতিতে এগুলো অনুপস্থিত তো বটেই, যারা এটা শুরু করতে চায়, তাদের জীবনই বরং বিপন্ন করে তোলা হয়, করে ফেলা হয় একঘরে। কারণ দেশটার নাম যে বাংলাদেশ। হুমায়ুন আজাদের ‘বাঙলাদেশের কথা’ কবিতাটির চরণগুলো মনে পরে খুব …
…ভুলেও কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা জিজ্ঞেস করো না;
আমি তা মূহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, -তার অনেক কারণ রয়েছে।
তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্টভ্রষ্ট ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের কথা, তার রাজনীতি,
অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ,
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না;
আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, – তার অনেক কারণ রয়েছে ।….
তবে এত হতাশার মাঝেও একটি আনন্দের সংবাদ পেলাম ক’দিন আগে। বাংলাদেশের কিছু যুক্তিবাদী সংগঠন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে, সাহস করে এগিয়ে এসেছে অচলায়তন ভাঙার। তেমনি একটি সংগঠন হল জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন। আইয়ুব হোসেন এবং বেলাল বেগ এ প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত বলে জানি। বেনুবর্নার কল্যাণে আমার ওয়ালে শেয়ারকৃত তাদের একটি পোস্টের ব্যাপারে দৃষ্টি নিবদ্ধ হল আমার। আমার সাথে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের কোন কথা হয়নি এ ব্যাপারে, কিন্তু তাদের নোট থেকে দেখলাম, কেউ মরণোত্তর দেহদানে আগ্রহী হলে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন আইনগত-ভাবে ব্যাপারটা পরিচালনা করবে এবং উকিলের মাধ্যমে লিখিত ভাবে ফরম পূরণ করে দেহের ১৪টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার অঙ্গীকার প্রদান করবে। পাঠকদের কেউ আগ্রহী হলে নিজ দায়িত্বে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন –
মরণোত্তর দেহদানে মানব কল্যাণ
জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন
মানুষের মৃত্যুর পর অসার, নিস্পন্দ দেহখানি কবরের মাটিতে গলে মিশে যায়। অথবা সম্প্রদায় বিশেষে অগ্নিদাহ হয়ে ছাইভস্মে পরিণত হয়। মানবদেহের মতো মূল্যবান একটি সম্পদের এভাবে অপচয় হওয়া সমর্থন করা যায় না, যুক্তিযুক্তও নয়। যে কোনো শুভ-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ জীবদ্দশায় যেমন তেমনি মৃত্যুর পরও মানব কল্যাণে অবদান রাখতে পারেন।
মরণোত্তর দেহ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে দান করে এই কল্যাণ সাধনের সুযোগ রয়েছে। মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ বা হাসপাতালে দেহ পৌঁছালে ১৪টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়। অর্থাৎ একটি প্রাণহীন দেহ ১৪ জন বিকলাঙ্গকে সচল করতে পারে।
মরণোত্তর দেহদানের প্রক্রিয়াটি খুব জটিল কিছু নয়। অঙ্গীকার পত্র ও হলফ-নামায় সম্মতিদানের মাধ্যমে নোটারি-পাবলিক করলেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
আগ্রহী যে কেউ আমাদের অফিসে ব্যক্তিগতভাবে অথবা টেলিফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা চাইলে আমরা ফর্ম পাঠাতে পারি, ওটা পূরণ করে স্বাক্ষর ও ছবি সংযুক্ত করে পাঠিয়ে দিন। ফর্মের সফট কপি, স্ট্যাম্প ও নোটারী ব্যয় বাবদ ৩০০ টাকা ফ্লেক্সি লোড করে পাঠালে চলবে। আমরা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে সার্বক্ষণিক সংরক্ষণের জন্য একটি দেহদান পত্র পাঠিয়ে দেব।
দ্রুত যোগাযোগ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শুভবাদী সকল বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আজীবন শুভেচ্ছা।
জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন
১০৮ কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউ
বাংলামটর, ঢাকা
মোবাইল : ০১৫৫২৩৫৮০১৮ / ০১৭১২২৯৬৮১৮
Email: [email protected]
গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করছে আজ –
হাল ছেড়োনা
হাল ছেড়োনা বন্ধু, বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে
দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে …
অন্য গানের ভোর আসবেই।
লেখাটা প্রায় শেষ করে এনেছি, এমন সময় মহানবী গুগল (দঃ) এর কল্যাণে নিউইয়র্ক টাইমসের একটা মজার পুরনো নিউজের দিকে নজর গেল আমার, আমেরিকায় ফাঁসির আসামীরা পর্যন্ত মরণোত্তর দেহদানের কথা সিরিয়াসলি ভাবছে। আমি ভাবলাম, ফাঁসির আসামীরা পর্যন্ত যদি পারে, আমি আপনিই বা বসে থাকব কেন?
হ্যাঁ, আমি মরণোত্তর দেহদানের ব্যাপারটা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আর আমি জানি এই আন্দোলনে আমি একা নই।
একদিন তুমিও মোর সঙ্গী হবে,
আর পৃথিবীটা হবে এক …
আমি আমার মৃত্যু দেহ দান করতে চাই
আমি দেহ দান করতে চাই কিন্তু কি ভাবে করবো
আমি আমার মরা দেহ দান করবো
ভাল পোস্ট
আমিও আমার দেহ দান করবো.. আমি হয়তো থাকবোনা এই পৃথিবীতে কিন্তু হয়তো কোনো অন্ধ আমার দ্বারাই পৃথিবী দেখবে। এটাই জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া..!
আমি আমার সব প্রত্যঙ্গ মৃত্যুর পর মানুষের জন্য দান করে যেতে চাই
আমিও মরনোত্তর দেহদান করেছি। আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলো 🙏
আমিও আমার দেহ দান করে দিব।
সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ, এত কষ্ট করে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য
মানূষের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে যাবো
মানূষের ই দেয়া প্রান…
ইচ্ছে টা ফাইনাল ই
একটা গুরুত্ব পূর্ণ ব্যাপার সামনে আনবার জন্য ধন্যবাদ , তবে কি যে সব যায়গাতে দালাল চক্র কাজ করে , এখানেও তাই, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটু সচেতনতা চাই , আর সাধারণ মানুষকে আরো সচেতন হতে লাগবে। এই রকম লেখা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
আমি করেছি ২০০০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ঢামেকে
খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে। আপনার লেখার মাধ্যমে জানলাম নীরব বীরত্বে গাথা কিছু দুঃসাহসিক মানুষের জীবন। আরজ আলী মাতব্বরের লেখা এবং উনার জীবন যাপন ও সংগ্রাম আমাকে অনেক প্রেরনা দিয়েছে। বলতে গেলে উনার লেখা “সত্যের সন্ধানে” পড়েই আজ আমি অন্ধকারের গলিকে পিছনে ফেলে মুক্তমনের অঙ্গনে পা দিয়েছে। আর অন্ধ বিশ্বাস কে একেবারে ঝেড়ে ফেলতে আপনার লেখাগুলা আমাকে খুব সাহায্য করেছেন।
আমাদের এই অন্ধবিশ্বাসী ধর্ম ঈশ্বর নামের অলীক কল্পনা কে বাদ দিতে গেলে সমাজে তার টিকে থাকায় খুব দুস্কর। নাস্তিকের আজ কোন নিরাপত্তা দেয়না সরকার কিংবা মানুষ। তারা আজ নাস্তিক নিধনে নেমেছেন। আপনাকে অনুরধ করি আপনি যদি মুক্তমনা চর্চা কারির নিরাপত্তা নিয়ে কিছু লিখতেন তবে ভালো হতো।
আমি ইতিমধ্যে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমার দেহদান করেছি এখন আমার মা’ও তার মরোনোত্তর দেহদানের জন্য তৈরি হচ্ছে। আপনার লেখাটা পরে আমার মনের মাঝে যেটুকু চিন্তার কালো মেঘ ছিল তাও সরে গেলো এবং আমার মা’ও মরোনোত্তর দেহদানের জন্য সম্মতি জানালো। ধন্যবাদ।
@জনি ডি’কস্তা, তোমাদের মা ও ছেলের উদারতা আমাদের দেশের মানুষের জন্য কল্যাণ নিয়ে আসবে। শুভেচ্ছা তোমাদের
দাদা সাথে আছি সব সময়…।। যখনি চাইবেন এবং আমি ও প্রস্তুত মরণোত্তর দেহদানের জন্য। দয়াকরে জানাবেন কিভাবে এবং কি কি করতে হবে। ধন্যবাদ এই অসাধারন লিখাটির জন্য। (Y)
আমি ঠিক করেছি পরিবারের সাথে এ নিয়ে কথা বলব।আমার এ ইচ্ছা অনেক আগের কিন্তু বয়স কম দেখে উড়িয়ে দেবে ভেবে বলিনি।এবার বলব।
@সাদিয়া, আমাদের জনবিজ্ঞানে চলে আসুন আমরা আছি আপনার চিন্তার বাস্তবায়নে।
মরণোত্তর দেহদানের কথা অনেকদিন যাবতই ভেবে রেখেছি। কিন্তু অফিসিয়াল কাগজটাই করা হয়ে উঠছে না। এতদিন ভাবতাম, এখনো তো আরো কয়েকটা দিন বাঁচবো, কাগজ একসময় করে নিলেই হবে। কিন্তু করোনা প্যান্ডেমিকে বুঝলাম, আমার ধারণা ভুল। কাজটা ফেলে রেখে লাভ নাই। কাগজটা করে ফেলাই কর্তব্য। জীবনের কোনো ভরসা নাই।
আমি বুঝি না মরোণত্তর দেহ দানে মানুষের সমস্যাটা কোথায়! আর দুঃখ লাগল ফেসবুকে দুই দুই বার শেয়ার করলাম,কিন্তু কেউ ই পরল না।ওদের সব পরার সময় আছে এসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পড়ার সময় নেই।আর অভিদা এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
@সাদিয়া,
দুঃখ পাওয়ার কিছু নাই । এক দিনে কিছুই হয় না, কিছু জিনিষ হয় আস্তে আস্তে
কয়েকটি তথ্য দেওয়া প্রয়োজন বোধ করছি।
পশ্চিমবঙ্গে মরণোত্তর দেহদানে আজ অনেকটাই চল এসেছে।
গত আড়াই দশক ধরে এখানে মরণোত্তর দেহদানের জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। আমাদের ‘যুক্তিবাদী সমিতি’ এ নিয়ে মিটিং, মিছিল, সেমিনার, প্রচারপত্র বিলি, লেখা লেখির মাধ্যমে বহু প্রচার তো করেই, এছাড়া এ নিয়ে এখানে সবচেয়ে বেশি কাজ করে গণদর্পণ নামের একটি সংস্থা যারা শুধুমাত্র এই একটি মিশন নিয়েই কাজ করে, এবং দারুন কাজ করে। ওদের মোটিভেশনে এখনও অবধি বহু মানুষের দেহদান হয়েছে মেডিকেল কলেজে। আর আমাদের মত বিভিন্ন সংঠনের যৌথ উদ্যোগে বহু মানুষ দেহদানের অঙ্গীকার করা হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে। আমি যে শহরে থাকি সে বাঁকুড়া শহরের মেডিকেল কলেজেই শেষ তিন বছরে চল্লিশ জন দেহদানের অংগীকার করেছেন। হতাশা এই যে, একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে যে সংখ্যা পাওয়া উচিৎ ছিল সেটি মোটেও পাওয়া যায়নি। আশা এই যে, সংখ্যার দিক দিয়ে বাড়ছে।
পশ্চিমবঙ্গে সমস্যা অন্য জায়গায়।
অনেকে কুসংস্কারের বেড়া অতিক্রম করে এলেও তাদের বাড়ির লোক যখন দেহ নিয়ে হাসপাতালে যান, সেখানে নেবার লোক থাকেনা। মেডিকেল কলেজের ছুটির সময় বা ছুটির দিন গুলোতে এরকম হয়। কারোর মৃত্যু তো আর কাজের দিনে ১০ টা থেকে ৫ টার মধ্যে হবে তার নিশ্চয়তা নেই।এরকম দু চারটে কেস এ নিউজ পেপারগুলো এমন তেড়েফুড়ে মেডিকেল কলেজের বিরোধিতা করে লেখে যে, মানুষের ধারনা হয়ে গেছে অখানে দেহ নিয়ে গেলে পড়ে থাকবে। হ্যাঁ। এটাও ঠিক । সর্বত্র দেহ সংরক্ষণের পরিকাঠামোও নেই। আবার স্বাস্থ্যদপ্তরে এসব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তাদের বক্তব্য, এমনিতেই আমাদের স্টাফ নেই, তাই কবে কোন দেহদান হবে সেজন্য কোনো স্টাফকে ওই একটা কাজের জন্য বসিয়ে রাখতে পারব না।
অনেক মানুষ এই আশা নিয়ে দেহ দেবার কথা ভাবেন, তার দেহের কিডনি, লিভার, চোখ, হার্ট ইত্যাদি অন্যকে বাঁচাবে। কিন্তু এই পরিকাঠামো আমাদের এখানে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আবার এও ঠিক যে, প্রচুর পরিমানে দেহ গেলে তবেই স্বাস্থ্যদপ্তর তাদের পরিকাঠামো বাড়ানোর কথা ভাববে।
আমাদের মত সংগঠন এখন এই দুই এর মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায়। দুদিকেরই ঠেলা খাচ্ছি আবার দুদিককেই চাপ দিচ্ছি।
@বিপ্লব দাস, আপনার লেখাটা পড়ে মরনোত্তর দেহদানের বাস্তবতাটা জানলাম কেন এখনো এটা এই উপমহাদেশে ওভাবে সচল হয়নি।
এমন অভিজ্ঞতা হলে মানুষ আসলে আগ্রহই হারিয়ে ফেলবে, তার চেয়ে কবর দেয়া বা পুড়িয়ে ফেলাটাকেই কম কষ্টের মনে করবে। ধন্যবাদ আপনার শেয়ারের জন্য।
পশ্চিম বাংলায় শহুরে মানুষদের (হিন্দুদের মধ্যে)দেহদান ব্যাপারটা এখন কোন বিশেষ ব্যাপার নয়. দেহদান আন্দোলনের নেতা ও পত্রিকার (গনদর্পন) সম্পাদক ব্রজ রায়ের সাথে ঘুরে দেখেছি সমস্যাটা দেহদানের দেহ যোগাড় নয়, সমস্যাটা হল দেহটিকে ঠিকঠাক ভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে সংরক্ষণ করা (যাতে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অন্য জীবিত মানুষের কাজে লাগে). কলকাতার দু একটি হাসপাতাল ছাড়া অন্যত্র দেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই বললেই হয়. বড় সর নেতা বা বুদ্ধিজীবির দেহ হলে অবশ্য আলাদা কথা. বরং লোকের গঞ্জনা শুনতে হয়েছে – জীবিত মানুষের জন্য এম্বুলেন্স নেই, হাসপাতালে বেড নেই আপনারা মরা মানুষের ব্যবস্থা করতে এসেছেন. তবে পশ্চিম বাংলার কোন নামী মুসলমান দেহদান করেন নি. শুনেছি (হাতে প্রমান নেই) তিরিশ বছর ধরে পশ্চিম বাংলা বিধান সভার স্পিকার কমরেড হালিম সাহেব প্রথমে দেহ্দানের অঙ্গীকারপত্রে সাক্ষর করলেও পরে প্রত্যাহার করে নেন মুসলমান ভোট হারাবার ভয়ে.যতদুর জানি চার জন মুসলমান পদবী যুক্ত ব্যক্তির দেহদান হয়েছে – এরা সবাই (গৌরী আইয়ুব সহ)মুসলমানের সঙ্গে বিবাহিত হিন্দু নারী (সূত্র – গনদর্পণ). ভারতের বিভিন্ন শহরে সময়ে সময়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেহদান প্রচার অনেক সংগঠন করে থাকে.
দেরিতে পড়লাম, চমৎকার প্রবন্ধ। তবে জ্যোতি বসুর ঘটনা নিয়ে, বা তার আগেও, আনন্দবাজারে পড়েছিলাম, কলকাতায় দান করা দেহগুলোকে ঠিকভাবে ব্যবস্থা করা যায় না, ছাত্রদের কাছে বা অঙ্গ দানের জন্য, বা তার আগে ল্যাবরেটরিতে রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য, ঠিকমত পোঁছনোর ব্যবস্থা করে উঠতে পারে না, হয়তবা মর্গে বহুদিন অকারণে পড়ে থাকে। এদিকে অঙ্গের চাহিদা প্রচুর।
একটি প্রাসঙ্গিক বিবিসি এর ভিডিও শেয়ার করলাম । একটি মৃত মানবদেহ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কত মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে তার সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=8E77m_hVU_Q&feature=my_watch_later_videos&list=WLDA7BD9720824664D
উপরের ভুল লিঙ্কটির জন্য দুঃখিত। ঠিক লিঙ্কটা নীচে দিলাম।httpv://www.youtube.com/watch?v=8E77m_hVU_Q
অভিজিৎ, চমৎকার লেখাটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। একটা কথা ছিল এই প্রসঙ্গে। মরণোত্তর দেহদানের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় অন্তরায় হয়ে ওঠে পরিবারের অসহযোগিতা। প্রাকমৃত্যু ইচ্ছাদি, মরণোত্তর কাজকর্মের নির্দেশাবলী, ইত্যাদি যদি পরিবার থেকে সঠিকভাবে পালন না করা হয়, তাহলে তো সবই বৃথা হয়ে গেল, নয় কি? মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট কিছু সময়ের মধ্যেই আভ্যন্তরীণ প্রত্যঙ্গ যা যা নেওয়ার নিয়ে না নিলে টিশ্যু ডেথ শুরু হয়ে গেলে তখন আর সেগুলোর কোন মূল্য থাকেনা। তাই সময়ের হিসেব রাখার অত্যন্ত প্রয়োজন। এই কথাগুলো পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অনেক আগে থেকে বলে নেওয়া উচিত, এবং পরিষ্কার নির্দেশ দিয়ে রাখা ভাল। মরণোত্তর দেহদান একটি নোব্ল্ এফোর্ট – সেটাকে সফল করার জন্য পরিবার-পরিজনের জ্ঞান এবং সহযোগিতা দুটোই প্রয়োজন।
এই লেখাটা পড়ে মনে পড়ল, মাত্র দুই দিন আগেই এই খবরটা দেখলাম।
সংক্ষেপেঃ
গত বছরের ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ হঠাৎ করে পরপর দুইটা স্ট্রোক করার ১৬ বছরের ক্যালেব বিভার ব্রেইন ডেড হয়ে পড়ে, টেনেসির মেমফিসে। ওর বাবা-মা লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার সায় দেন, তবে তার আগেই ক্যালেবের হার্ট, কিডনি, লাংস, লিভার, প্যানক্রিয়াস আর লিভার ট্যিসু ডোনেট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর ওদিকে কেন্টাকির সাইকিয়াট্রিস্ট চাক শেল্টন অপেক্ষায় ছিলেন একটা সুস্থ হৃৎপিন্ডের। ২৬ তারিখেই ক্যালেবের হার্ট পেয়ে যান চাক শেল্টন। সেই থেকে চাক সুস্থ। তো গত সপ্তাহে এই দুই পরিবার একত্র হয় প্রথমবারের মত। ক্যালেবের মা এপ্রিল বিভার স্টেথোস্কোপ কানে লাগিয়ে চাকের হার্টের স্পন্দন শোনেন, যেটা আসলে তার ছেলেরই হার্ট! কি চমৎকার একটা ব্যাপার!
আর এই লেখাটার ব্যাপারে বলি, আশা করি এইটা একটা বাতিঘর হয়ে থাকবে অনেকদিন, অনেক মানুষের জন্য।
@নড়বড়ে,
চমৎকার এ খবরটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। এ ধরণের খবর যত সামনে নিয়ে আসা যায়, ততই মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। আমার লেখায় জেমি ফিস্কের বাবার যে উদাহরণ দিয়েছিলেম, সেই কাজটি করেছিলেন ক্যালেব বিভারের পরিবারও। ব্রেন ডেড হয়ে যাওয়া সন্তানের হৃদয় অন্যকে দান করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন তারা, আর তার বদৌলতেই চাক শেল্টন সুস্থ হলেন। লেখার উপরে ভিডিওটা দেখলাম। দুই পরিবার একত্রিত হবার পর ক্যালেবের মা এপ্রিল বিভার স্টেথোস্কোপ কানে লাগিয়ে যেভাবে চাকের হার্টের স্পন্দন শুনলেন তা সত্যই আবেগময়। আমরা যে কবে এভাবে চিন্তা করতে পারবে কে জানে!
আপনাকে ধন্যবাদ আবারো!
একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে, সুন্দর লেখটির জন্য ধন্যবাদ। দেহদানকারীর আত্নীয় স্বজন তার মৃত্যুর পর দেহ দিতে না চাইলে দেহগ্রহনকারী সংস্থা আইনের আশ্রয় নিতে পারে কি? প্রশ্নটি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে করছি।
লেখাটি পড়ে খুব ভাল লাগলো। মরনোত্তর দেহ দানে আমি আগ্রহী ছিলাম। একটা উপায় পাওয়া গেল। অভিজিত দা কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
চমৎকার বিষয়টির প্রস্তাবনা করার জন্য সাধুবাদ আপনার অবশ্যই প্রাপ্য!
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিঞ্চিৎ দ্বিমত পোষণ করছি। দীর্ঘদিন চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্র হিসাবে কখনোই মনে হয় নি যে দেশে ডিসেক্সন-উপযোগী ক্যাডাভারের কোনো ঘাটতি আছে।
সারা দেশে প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া যায়। বেশিরভাগ নামপরিচয়হীন ডেডবডিগুলো আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম (এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো) দাফন (বা দাহ) করে – বাকিগুলো মেডিকেল কলেজ সংশ্লিষ্ট ডোম-রা হস্তগত করে নেয়। ছাত্রাবস্থায় লক্ষ্য করতাম, সেমিস্টার শুরুর আগে প্রফেসররা ডোম-দের নির্দেশ দিলে খুব অল্প দিনের মধ্যেই ৩/৪ টি ক্যাডাভার ফরমালিন টাবে উদয় হয়ে যেত।
আবার, ক্যাডাভারগুলো কিছু শ্রেণীর লোকের আয়ের উৎসও বটে। তারা ডেডবডিগুলো রিপিটেডলী ফুটন্ত পানিতে এবং করোসিভ এসিড বাথ করিয়ে মাংস এবং অন্যান্য সফট টিস্যু স্কাল্পিং করে ভেতরের স্কেলিটনটা বের করে নেয়। পুর্ণাঙ্গ স্কেলিটন সেট বেশ চড়া দামে বিকোয়। ইদানীং দেশে যে হারে মোড়ে মোড়ে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠছে – এই ব্যবসার ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল বলেই মনে হচ্ছে। বেশ কিছু কৃমিনালও আছে যারা কবর খুঁড়ে লাশ চুরি করে কংকাল ব্যবসার জন্য।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো – আরেকটু প্র্যাগমাটিকালী আপনার মূল্যবান অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো দানের ব্যাপারে ভাবতে পারেন। আপনি মরদেহ দান করুন বা নাই করুন, বিস্ফোরিত জনসংখ্যার এই দেশের দেশের মেডিকেল ছাত্রদের ক্যাডাভারের অভাব কখনোই হবে না।
আমরা চেন্নাই-ভিত্তিক কিছু টেলিমেডিসিন প্রযেক্ট চালু করেছি। প্রথম দিকে বেশ কিছু উড়ো ফোনকল আসতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। জানতে পেরেছি, দেশের বেশ কিছু লোক অরগ্যান বিজনেসে জড়িত। কোনো ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীটোগী থাকলে এদের কাছে “বিজনেস” ধরিয়ে দেবার জন্য অনুরোধ করেছিলো। টের পেয়েছি, বাংলাদেশে ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য অর্গ্যানের বেশ ভালো ক্রাইসিস বিরাজমান আছে।
বাংলাদেশের আইনের ব্যাপারে জানি না, তবে ভারতে অরগ্যান ট্রেড একটি কৃমিনাল অফেন্স (সংগত কারণেই)। একজন কমেন্টে লিখেছেন কিডনীবাক্কাম গ্রামের কথা – আমাদের টেলিমেডিসিন সেন্টারের লিয়াঁজো অফিসটিও ইঞ্জামবাক্কাম নামে একটি এলাকায় অবস্থিত :)) (এটি অবশ্য চেন্নাই শহরের একটি এলাকা)
যাকগে, অভিজিৎদা উল্লেখ করেছেন একটি বডি থেকে প্রায় ৩/৪ ডজন অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগাক্রান্ত মানুষের উপকারে আসতে পারে (এমনকি জীবনও বাচাঁতে পারে)।
আপনার দেহ আপনার নিজস্ব সম্পত্তি – এটা নিয়ে কি করবেন তা একান্তই আপনার সিদ্ধান্ত। তবে এটাও মাথায় রাখুন – প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে পর্যাপ্ত কিডনী, লিভারের অভাবে। বহু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কর্ণিয়ার অভাবে স্বাভাবিক জীবন যাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যংগের আর্টিফিশিয়াল ক্লোন তৈরী করতে সমর্থ না হচ্ছেন (এই ফিল্ডে অবশ্য খুব দ্রুত অগ্রগতি সাধন হচ্ছে) – ততদিন পর্যন্ত বায়োলজীকাল মানবদেহের কোনো বিকল্প নেই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে দেশে ক্যাডাভারের তেমন কোনো ক্রাইসিস নেই – বরং ঘাটতি আছে অরগ্যান ডোনারের। সন্ধানী-সহ বেশ কিছু সংগঠন চক্ষুদানের ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য ভাইটাল অরগ্যান নিয়ে তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে নি।
ট্র্যান্সপ্লান্টের আরেকটি সুবিধা ভাবতে পারেন। পৃথিবীতে আপনি জীবিত না থাকলেও আপনার কিছু অঙ্গ অন্যের শরীরে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকছে!
আমি মেডিকেল রিসার্চের জন্য দেহদানে নিরুৎসাহিত করছি না – কেবল প্র্যাগমাটিক চিন্তাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেবার অনুরোধ করছি। যে অঙ্গগুলোর প্রচন্ড অভাব – সেগুলোর ব্যাপারে ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত দিন। বাকী দেহটি আপনি চাইলে ডোনেট করে দিতে পারেন – অন্ততঃ জীবাণু, পোকামাকড়ের ফুডচেইনে প্রবেশ করা বা পরিবেশ দূষণের চাইতে ভালো হবে।
আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার কিছু মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে একটু ক্লেরিফাই করার চেষ্টা করা যাক।
এ ব্যাপারটা প্রদীপ দেবের সাথে আলোচনায় কিছুটা উঠে এসেছে (দেখুন এখানে)। সরকারী মেডিকেল কলেজে বেওয়ারিশ লাশ অপ্রতুল না হলেও বেসরকারি কলেজগুলোতে এটা সমস্যাই। সেখানে ছাত্রদের শবদেহ পেতে সমস্যা হয় অনেক, অন্তত আমার খোঁজ খবর তাই বলছে। এমনকি সরকারী মেডিকেল কলেজের ব্যাপারে রাহহান রশীদের পিতার মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। “বিভিন্ন আইনগত এবং পুলিশি ধাপ পেরিয়ে বেওয়ারিশ লাশ যখন এনাটমি ক্লাসে এসে পৌঁছায় তখন শবের ডিকম্পোজিশন বেশ অগ্রসর পর্যায়ে চলে যায়। আর বিভিন্ন দুর্ঘটনা ইত্যাদি থেকে যে সব লাশ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় সেগুলো বলাই বাহুল্য – অক্ষত থাকে না। তাই, পচা গলা বা ক্ষতিগ্রস্ত মৃতদেহ দিয়ে এনাটমি শিক্ষা আসলে খুব আদর্শ পরিস্থিতি না”। তারপরেও আপনার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতেই পারে। আসলে আপনি আমার লেখাটা পড়লে দেখবেন যে আমি লেখাটির মাধ্যমে মরণোত্তর অঙ্গ প্রদানকেই উৎসাহিত করতে চেয়েছি। যদি মৃতদেহ থেকে পাওয়া অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তাৎক্ষণিক-ভাবে ব্যবহারযোগ্য থাকে তবে সেটাকেই প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। শবদেহকে অ্যানাটমির কাজে লাগানো হোক একদম শেষে যদি শবদেহকে একেবারেই অন্য কাজে না লাগানো যায়। সেটার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ আপনি নিজেও করেছেন –
আমার লেখার উপসংহারও আপনার অভিমতের সাথে সঙ্গতি-বিধান করে বলে মনে করি। হয়তো দেখবেন যে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের যে নোটটি দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে মৃত্যুর ছয় ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ বা হাসপাতালে দেহ পৌঁছালে ১৪টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যেই লেখাটা লিখিত হয়েছে। মরণোত্তর দেহ দান মানে কেবল ‘রিসার্চের’ জন্য নয়, বরং মৃতদেহ থেকে অঙ্গ নিয়ে অন্য রোগীদের যদি সুস্থ করে তোলা যায়, সেটাই হওয়া উচিৎ মুখ্য।
আপনার মন্তব্য সবসময়ই অনুপ্রেরণা-দায়ক এবং চিন্তার খোরাক। মুক্তমনায় নিয়মিত লিখলে এবং মন্তব্য করলে খুশি হব। আপনি ইমেইল চেক করতে পারেন।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ!
অফটপিকঃ দুঃখিত, কোনো ইমেল খুঁজে পেলাম না। (কমেন্ট-এর নোটিফিকেশন বাদে)
মুক্তমনায় প্রকাশের উপযোগী কিছু লেখা জমে আছে। গেস্ট আর্টিকল কিভাবে পোস্ট করা যায়?
এ্যাডমিন যদি ইউজার এ্যাকাউন্ট তৈরী করতে চান, সেক্ষেত্রে ডিটেলস –
username: invarbrass (ইনভারব্র্যাস)
ই-মেলঃ এই কমেন্টের মেইল এ্যাড্রেস
বিঃদ্রঃ – লগিন ইউজারনেমটি ইংরেজীতে হলে সুবিধা (ট্যাবলেট/মোবাইলে বাংলা টাইপ মহাঝামেলার)। display name-টি বাংলায় থাকতে পারে।
সামাজিক হস্তক্ষেপ, সাম্প্রদায়িকতা ও কুসংস্কারের হিমমরুর বিরুদ্ধে একটি দুর্দান্ত কলোচ্ছ্বল প্রবন্ধ।
আরো অসংখ্য জেমির বেঁচে উঠবার অনুপ্রেরণা যোগাক এই লেখা। কুসংস্কার মুক্ত হোক আমাদের হৃদয়। শুভকামনা।
@পঁচিশে বৈশাখ,
মুক্তমনায় স্বাগতম!
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
আজকাল সবকিছুকে খন্ডিতভাবে দেখার প্রবনতা বেড়ে যাচ্ছে। পারস্পারিক সম্পর্কগুলো বা অখন্ডভাবটা আপনার লেখায় ওঠে এলো বলে, পরপর কিছু উদ্ধৃতির আশ্রয়। আপনার অনুমান সত্য, অনেক পাঠক এগিয়ে এসেছেন, তাদের তথ্য-ভান্ডার নিয়ে। প্রাণবন্ত আলোচনা এভাবেই হয়তো অন্যকে প্রাণিত করে। মরে গিয়েও প্রাণ, প্রাণকেই বাঁচিয়ে রাখার গান গেয়ে যায়।
httpv://www.youtube.com/watch?v=feFNVH508us
httpv://www.youtube.com/watch?v=uVAjiOLdWrI
@স্বপন মাঝি,
গানগুলো বহুবার শোনা, তবু কখনোই পুরনো হয় না।
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
অভিজিৎ দা আপনাকে ধন্যবাদ, মুক্তমনাদের জন্য প্রয়োজনীয় এ ধরনের একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য। জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনকে অভিনন্দন এ জন্য যে তারা এ ব্যাপারে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যা মরণোত্তর দেহদানে আগ্রহী অনেক মুক্তমনার ইচ্ছা পূরণে সহায়তা করবে।
কিন্তু অভিজিৎ দার এই লেখাটির আড়ালে মুক্তমনাদের জন্য দীর্ঘদিনের একটি বাস্তব সামাজিক সমস্যা লুকিয়ে রয়েছে যা সমাধানের একটি পথ তিনি উল্লেখ করেছেন। এই সমস্যাটি হোল মুক্তমনাদের মৃত্যুর পর তার দেহের সৎকার নিয়ে জটিলতা। আমরা প্রায়শই দেশের বরেণ্য মুক্তমনাদের মৃতদেহ নিয়ে তার আত্মীয় স্বজনদের বিব্রতর অবস্থা ও হাস্যকর পরিস্থিতি দেখতে পাই যা প্রয়াত ব্যক্তিটির জন্য তো বটেই জীবিত মুক্তমনাদের জন্যও অপমান জনক। যে ব্যক্তি আজীবন মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও নাস্তিকতার প্রচার করে গেছেন মৃত্যুর পর তার দর্শনের অপমৃত্যু সত্যই কষ্টকর। সুতরাং ‘মরণোত্তর দেহদান’ একটি মহৎ কাজ এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই, কিন্তু মৃতদেহের সৎকার মুক্তমনাদের জন্য যে একটি সামাজিক সমস্যা এবং এর যে একটি স্থায়ী সামাজিক সমাধান থাকা উচিৎ এ বিষয়টি উঠে আসা জরুরী। এখানে রায়হান রশিদের উপলব্ধিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
এই সামাজিক আন্দোলন শুধু মৃতদেহের সৎকার নিয়ে নয় সামাজিক অন্যান্য বিষয়গুলোও এতে স্থান পাওয়া উচিৎ। রায়হান রশিদ যেমন বলেছেন,
সত্যি তাই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা কিছুতেই বর্তমান সামাজিক হস্তক্ষেপ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারছি না। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের অসাম্প্রদায়িক বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা দিতে পারছি না, আমরা তাদের জীবন থেকে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে পারছি না, জীবন সঙ্গী খুঁজে নেয়ার জন্য ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত সামাজিক পরিবেশ দিতে পারছি না, নিজস্ব দর্শন নিয়ে জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দিতে পারছি না, মৃত্যুর পর দেহ সৎকারের সমস্যা তো রয়েছেই। এগুলো এক একটি সামাজিক সমস্যা। নিজেদের সামাজিক আইডেন্টিটির সমস্যা। আমরা এখনও ধর্ম পালননাকারি মুসলমান বা হিন্দু! অথবা মুক্তমনা মুসলমান বা মুক্তমনা হিন্দু! সুতরাং ধর্মীয় সামাজিকতা তো আমাদের টেনে ধরবেই! বর্তমানে মুক্তমনাদের সামাজিক আইডেন্টিটি বিষয়ে একটি আলোচনা খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করি অভিজিৎ-দা এই বিষয়টির অবতারণা করবেন।
অভিজিৎ দা আপনার লেখার জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করি। আপনার লেখ গুলো অতুলনীয় ।এত ভাল মানের লেখার কাছে আমরা যাই লিখি তুচ্ছ ,তাই মন্তব্য করতে ভয় হয়। তবে আস্তে আস্তে ভয়টা কাটাবার চেষ্ঠা করছি………………..লিখব।
অসাধারণ একটি পোস্ট। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার দু একটি প্রশ্ন ছিলো, সময় করে উত্তর দিলে ভালো হতো।
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আবারো, এই অসামান্য লেখাটির জন্যে।
@শনিবারের চিঠি,
দুঃখিত দেরী হল আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে।
সিগারেট এবং অতিরিক্ত মদ্যপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর, এটা বিভিন্ন পরিসংখ্যানে পাওয়া গিয়েছে। তবে রিলেশনশিপটা পারিসাংখ্যিক, ওয়ান-টু-ওয়ান নয়। অনেকেই সিগারেট পান কিংবা অঢেল মদ্যপান করার পরেও দিব্যি সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকেন। সিগারেট বা মদ্যপান কেন, তেল চর্বি, অতিরিক্ত শর্করা – সবই দেহের জন্য সমস্যা করতে পারে, এবং করে। তারপরেও একেকজনের মেটাবলিজম, দেহের জেনেটিক গঠন এবং সর্বোপরি পরিবেশের সাথে দেহের মিথস্ক্রিয়া ভিন্ন রকম হয় বলে সবার একই অভ্যাসের জন্য একইরকম ফলাফল তৈরি করে না। যতক্ষণ না শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সমস্যা করছে বা বিকল হয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ মরণোত্তর দেহ দানে সমস্যা হবার কথা নয়। তবে বাজে অভ্যাস ছেড়ে দেয়াই কিন্তু ভাল। 🙂
এমনকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সমস্যা করলেও কিন্তু শেষ উপায় আছে – ছাত্রদের গবেষণার জন্য কাজে লাগানো। এই অপশনটা তো বাই-ডিফল্ট থাকছেই।
দেশের বাইরে এটা সম্ভব হলেও সম্ভবতঃ বাংলাদেশে এটা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত করা দুরূহই হবে। দেখবেন রাষ্ট্রযন্ত্রই এইধরনের উইলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অভিভাবক বা আত্মীয়-স্বজনের সহানুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়েছে। তবে এ ধরনের কাজ যত সামনে আসবে, ততই এই অচলায়তন ভাঙবে।
@অভিজিৎ দা, অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি উইলটাতে স্পষ্টভাবে আমার দ্ব্যার্থহীনতার কথাটা উল্লেখ করতে চাই।
@শনিবারের চিঠি, তোমার শুভ উদ্যোগের জন্য অপেক্ষায় আছি, জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনে এসে ফরমটা ফিল-আপ করে যাও। আর হ্যাঁ যখন জানই অতিরিক্ত সিগারেট ও মদপান শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকি তখন ওটা ছেড়েই দাও নিজের সুস্থ জীবনের জন্য। 😛
খুবই দরকারি চেতনা-জাগানিয়া লেখা। মুক্তমনার সবাই এব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতও আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে দেখে খুব ভাল লাগছে। মরণোত্তর শরীর দানের অঙ্গিকার করার অনেক আগে থেকেই মানে আঠারো বছর বয়স থেকেই শুরু হতে পারে নিয়মিত রক্তদান। বাংলাদেশে নিয়মিত রক্তদান করেন এমন মানুষের সংখ্যা শতকরা হিসেবে এক ভাগেরও কম। ক্যান্সার রোগী সহ আরো অনেক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনের অংশ হওয়া যায় রক্তদানের মাধ্যমে। এই দানের আনন্দ যাঁরা পেয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে মরণোত্তর অঙ্গদান ও দেহদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাটা অনেক সহজ। বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে যাঁরা কাজ করেন মরণোত্তর দেহদানের ব্যাপারে জনমত গড়ার ব্যাপারে তাঁদের আগ্রহ খুব বেশি নেই। কারণটা প্র্যাকটিক্যাল। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষায় শব-ব্যবচ্ছেদের জন্য শবদেহের অভাব সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে নেই। তাঁদের কাজ চলে মূলত বেওয়ারিশ লাশ দিয়ে। তাই বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজে মরণোত্তর দানকৃত দেহ পৌঁছে দিলে গ্রহণ করে ঠিকই – কিন্তু নিজেদের উদ্যোগে দেহ সংগ্রহ করে নিয়ে আসার মত জনবল (এবং অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছাও) তাঁদের থাকে না। মরণোত্তর অঙ্গদানের ব্যাপারটা খুবই জরুরি সারা পৃথিবীতেই। এ ব্যাপারে যত বেশি জনমত তৈরি হবে মৃতদেহ নিয়ে কুসংস্কার ততই কমতে থাকবে।
@প্রদীপ দেব,
অনেক ধন্যবাদ। আপনি চমৎকার কিছু পয়েন্ট তুলে এনেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক কথা। সেজন্যই আহমদ শরীফ সম্ভবতঃ ধানমন্ডিস্থ বেসরকারী মেডিকেল কলেজে তার মৃতদেহ অর্পণ করেছিলেন। বেসরকারী কলেজগুলোতে সত্যই শবদেহ পাওয়া একটা মূর্তিমান সমস্যা। কিন্তু শবদেহ কাটাছেঁড়া না করে সার্জারীর প্র্যাকটিকাল জ্ঞানই অর্জন করা সম্ভব নয়।
@প্রদীপ দেব,
শব ব্যবচ্ছেদে বেওয়ারিশ লাশ ব্যবহারের চর্চা বিষয়ে ঠিক এই কথাটাই বলতো আমার বাবা কিন্তু তাঁর উপসংহারটি অবশ্য একটু ভিন্ন ছিল। কারণ, বাবা বলতেন বিভিন্ন আইনগত এবং পুলিশি ধাপ পেরিয়ে বেওয়ারিশ লাশ যখন এনাটমি ক্লাসে এসে পৌঁছায় তখন শবের ডিকম্পোজিশন বেশ অগ্রসর পর্যায়ে চলে যায়। আর বিভিন্ন দুর্ঘটনা ইত্যাদি থেকে যে সব লাশ বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ঘোষণা করা হয় সেগুলো বলাই বাহুল্য – অক্ষত থাকে না। তাই, পচা গলা বা ক্ষতিগ্রস্ত মৃতদেহ দিয়ে এনাটমি শিক্ষা আসলে খুব আদর্শ পরিস্থিতি না। বাবা নিজেই গল্প করেছেন এ ধরণের লাশ দিয়ে ছাত্রাবস্থায় মৃতদেহের নার্ভ-শিরা-উপশিরা ইত্যাদি খুঁজে পাওয়া তার এবং তার সতীর্থদের জন্য কতখানি কঠিন ছিল। একারণেই আসলে বাবা বিষয়টা এতো সিরিয়াসলি নিয়েছিলেন। বাবার একটা কথা এখনো কানে বাজে – “মেডিকেলের ছাত্ররা যদি শেখার কাজটাও উপকরণের অভাবে (এক্ষেত্রে উপকরণ মানে মৃতদেহ) ঠিকভাবে না করতে পারে তাহলে তারা ভবিষ্যতে ভালো ডাক্তার বা সার্জন হবে কিভাবে!”
মানবতার সাথে যুক্তিবাদ মিলে তৈরী হয় চেতনার এক উন্নত স্তর। এই স্তরে প্রবেশের জন্য আপনাকে জানাই সশ্রদ্ধ অভিনন্দন। আমার এই প্রিয় “আমিকে” তো শত চেষ্টায় ও চিরদিন ধরে রাখতে পারবো না। এই “আমি” যদি সকলের মাঝে লীন হয়ে বেঁচে থাকতে পারে তবে এমন চিন্তার চেয়ে সুস্থ চিন্তা আর কী হতে পারে।
শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা নয়, চাই এমন পদক্ষেপ যা মানব কল্যাণের জন্য বহু বছর অপেক্ষার দরকার নেই।এ লেখাটি মুক্ত-বুদ্ধি আন্দোলনের পথ প্রদর্শক। জীবিত অবস্থায় কিছু করে যেতে না পারলেও আমার মৃত দেহ কারও উপকারে লাগবে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে!
তবে রায়হান রশীদের বাবার মত যেন ইচ্ছা অপূরণ থেকে না যায় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। শুধু ব্যক্তির ইচ্ছা নয়,এজন্য রাজনৈতিক অঙ্গিকার ও সামাজিক সমর্থনের প্রয়োজন। আর এ প্রয়োজন মেটাতে য়ামাদের কাজ করতে হবে।
ছেলেমেয়েকে আগেই বলা আছে, এখন শুধু জনবিজ্ঞান সমিতির সাথে যোগাযোগ করা। ধন্যবাদ অভিজিৎ রায়কে এ সংগঠনটির ঠিকানা দেয়ার জন্য।
@গীতা দাস,
(Y)
ক্লাস এইটে এ পড়ার সময় ভারতীয় অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনের প্রচারনা দেখে মরনোত্তর চক্ষুদানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়. উনি খুব সুন্দরভাবে এই প্রচারনা করেছিলেন. মাঝে মাঝে খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি অনেক প্রতিভাবান সামান্য একটি দেহাংশের কারনে হারিয়ে যায়. তখন আবার ও আগ্রহ সৃষ্টি হয়. কিন্তু বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে মরনোত্তর দেহদানের ঝামেলাগুলো শুনে আগ্রহ কমে যায়.
@অভিজিত দা, আপনার লেখার আশায় সবসময় বসে থাকি. এই ধরনের লেখার জন্য ধন্যবাদ. :guru:
আপনার উদাত্ত আহবানে মানুষ জাগুক, এই আশা করছি অভিজিৎ।
কি জানেন, মরণোত্তর দেহদানের আগেও ম্যালা কিছু করা সম্ভব জীবিত অবস্থাতেও। উত্তর আমেরিকায় অবস্থানকারী আগ্রহীরা এই ওয়েবসাইট টা দেখতে পারেন, এখানে আপনার মাথার চুল কিভাবে দান করবেন সে ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। কাটা চুল গুলো দিয়ে চমৎকার পরচুলা বানানো হয় যাদের কেমোথেরাপী বা অন্য কোন কারনে চুল ঝরে গেছে, তাদের জন্যে। কিছু ক্ষেত্রে ১০ ইঞ্চি কিছু ক্ষেত্রে ৬ ইঞ্চি চুলের প্রয়োজন । আমি দু’বার দিয়েছি, খুব কঠিন নয় প্রক্রিয়াটি।
http://www.infobarrel.com/6_Places_to_Donate_Hair_that_Make_Free_Wigs_for_Cancer_Patients,_Those_with_Alopecia,_and_other_Medical_Conditions
@কেয়া রোজারিও,
বাহ, চুল যে দান করা যায়, এটা জানতামই না। ইন্টারমিডিয়েটে ‘The Gift of the Magi’ গল্পটা পরেছিলাম না? ওটাতে গল্পের নায়িকা ডেলার চুল বিক্রি করার উল্লেখ ছিল জিমের জন্য একটা ঘড়ি কেনার আকাঙ্ক্ষায়। ভাবতাম ওগুলো কেবল গল্পেই সম্ভব। এখন দেখছি বাস্তবেও চুল দান করা যায়।
এ লেখাটির বদৌলতে আপনাদের মন্তব্য থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম। ধন্যবাদ আপনাদের।
@কেয়া রোজারিও,
ধন্যবাদ তথ্যটি জানানোর জন্য। উত্তর আমেরিকার অনেক চুল কাটার দোকানেও এধরনের দান করা যায়। আমার স্ত্রী বছর খানেক আগে তার বহুদিনের লালিত কুন্তলরাশি কেমোথেরাপী নেয়া রোগীদের জন্য দান করেছেন।
@মনজুর মুরশেদ,
আপনার স্ত্রীকে আমার শ্রদ্ধা জানাবেন। আ্হা! এই ইচ্ছে টা যদি সংক্রামক হোত!
@কেয়া রোজারিও, এক সময় হবে আমরা আশা রাখি..
(Y)
অসাধারণ, অভিজিৎ! খুব প্রয়োজনীয় একটা কাজ করেছ। এ তথ্যগুলো মুক্তমনাদের খুব কাজে লাগবে। মরণোত্তর দেহদান নিয়ে দেশেবদেশে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে তোমার এই লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, আমার বিশ্বাস।
ধন্যবাদ,আমিও আমার দেহ হান করে যাব।মানবজাতির প্রগতির ব্যাটন হাত থেকে হাতে চলবেই।
মহা গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট, পুরোপুরি একমত। আমি তাই করার চিন্তা করে রেখেছি কয়েক বছর ধরেই, কিন্তু বাংলাদেশে এটা হবে নাকি ইউরোপে এই দ্বিধাচলে পড়ে নির্দিষ্ট কোন সংস্থার সাথে কাগজে কিছু সাক্ষর করা হয় নি, যদিও কাছের মানুষদের বলা আছে–
গুরুত্বপূর্ণ একটা পোষ্ট। আমি যখন ক্লাস নাইনে তখন থেকেই দেহদানের জন্য মনস্থির করি। কিন্তু এর নিয়ম কানুন জানা ছিল না। ইদানিং যা জানলাম, আগরতলা মেডিকেল কলেজে যোগাযোগ করে লাভ হলো না। ওরা বলছে প্রচুর দেহদানের জন্য ফর্ম জমা হয়েছে এখন আর নেওয়া হবে না।
তবে দেহদান করলেও মৃত্যুর পর এর বাস্তবায়ন করা একটা কঠিন কাজ। কারণ সামাজিক কুসংস্কার অন্য ক্ষেত্রে কমে আসলেও। মৃত্যু নিয়ে মানুষের অজানা ভীতি এখনও রয়ে গেছে।
তাই আমার জানা মতো অনেক ব্যাক্তি দেহদান করে গেছেন কিন্তু মৃত্যুর পর তার পরিবার মেডিকেল কলেজে দেহদানের বদলে দাহন করেছে। এর মধ্যে একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি আছেন তিনি হলেন ত্রিপুরার প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী। যিনি দেহদান করে যাওয়ার পরও তার আত্মিয়-সজনরা তার দেহ দাহন করেছে।
এই সমস্যার সমাধান সেদিনই হবে যেদিন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও দুর্বার গতি পাবে। সমাজ থেকে উঠে যাবে আত্মা নামক ভ্রান্তধারণা।
অবশ্যই সাথে আছি।
এত ঝামেলা! সহজে দেয়ার কোন উপায় নাই? আমি দিতে চাই।
পড়ে সুখী হলাম। এমন বিষয় নিয়ে একটা লেখা আপনার কাছ থেকে আসাটা ‘সারপ্রাইজ’ বললেও অত্তুক্তি হবে না। মৃত্যু নিয়ে আজকাল মানুষ তেমন লেখালেখি করে না বললেই চলে। সেখানে মরনোত্তর দেহদান নিয়ে লেখালেখি তো সুদূর পরাহত। আমার পরিচিত অনেকেই যারা ইউরোপে থাকেন তারা কাগজ কলমে মনোত্তোর দেহদান করেছেন। তারা আমাকেও এ ব্যপারে পরামর্শ দিয়েছেন। আমি তাদের প্রশ্ন করেছি যে, মরার পর আমার দেহ দান করার জন্য খুঁজে পাওয়া যাবে এই নিশ্চয়তাটুকু কে দেবে ? না , এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। কিছু কিছু মানুষ তাদের সম্পূর্ন জীবন্ত দেহই দান করে দেন। যেমন, আমার বন্ধুর দুই ছেলেই আজ পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ , তারা জীবিত কি মৃত কেউ জানে না। নেইটোর আইসাফ মিশন থেকে দলের অন্যদের মত তারা জীবিত ফিরে আসেনি, আবার তাদের মৃত্যুও কেউ প্রত্যক্ষ করে নি। তারা যেন বাতাসে মিলে গেছে। সরকারী দলিলে এরা এম আই এ বা মিসিং ইন এ্যাকশন । বাবা মার কাছে নিখোঁজ সন্তান। তবে, গড় আয়ু মাত্র আড়াই সেকেন্ড জেনেও এখনও এদের মত অনেকে এখনও সামনে এগিয়ে যায় , এরা তো তাদের জীবন্ত দেহই তাদের মাতৃভূমিকে দান করে দিয়েছে।
হুমায়ুনের কবর ক্যাঁচাল নিয়ে আমাদের দেশে অবাক কিছু নেই। মৃতদেহ, কবর এসবের আবেগী মূল্য আমাদের সংস্কৃতিতে অত্যাধিক। অনেক সময় আন্দোলন সংগ্রামে ভাল রকমের ষ্টিমুলেটর হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে আসছে। বংগবন্ধুর লাশ ঢাকা শহরে কবর দিতে দেওয়া হয়নি এই আশংকা মাথায় রেখে।
মরনোত্তর অংগ দান তো বহু পরের কথা, অনেকে জীবিত থাকা অবস্থায় রক্তদানের মত আপাতত নিরীহ ব্যাপারেও ধর্মের অনুমোদন খোঁজ করেন। মৃতদেহ হতে অংগ তুলে নেওয়া হলে পরকালে কি সমস্যা হবে কে জানে। আল্লাহ ভগবানের কাছে কি স্পেয়ার পার্টস নেই নাকি? সেটা তো বিশ্বাস করা যায় না, যারা নানান দূর্ঘটনায় নানান অংগ হারিয়ে মারা যান তাদের জন্য স্পেয়ার পার্টস এর ব্যাবস্থা করা গেলে বাকিদের করা যাবে না কেন কে জানে।
@আদিল মাহমুদ,
প্রশ্নটা তো আমারও। যিনি এই পুরো মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, যার কোন লোভ নেই, অভাব নেই, পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান বলে দাবী করা হয়েছে, তার কাছে সামান্য মানবদেহ পৌঁছাতে হলে নিখুঁত অবস্থায় (যদিও তার হতচ্ছাড়া সৃষ্টির অনেক কিছুই নিখুঁত নয়, প্রায়ই তিনি ফাজলামো করে জন্মান্ধ অন্ধ বধির, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী শিশু পৃথিবীতে প্রেরণ করে থাকেন) পৌছাতে হবে কেন, আর কেনই বা তিনি স্পেয়ার পার্টসের অভাবে চুল ছিঁড়ে মরবেন, তা বোধ হয় কারোই বোধগম্য নয়।
তবে মোল্লাদের কনভিন্সড করতে পারবেন বলে মনে হয় না। দেখুন, এখানে তারা ফতোয়া দিয়ে রেখেছে – “মানবদেহের মূল মালিক আল্লাহ। অতএব কোন ব্যক্তির অধিকার নেই যে, আল্লাহর তৈরি দেহকে সে যথেচ্ছ ব্যবহারে দান করে দেবে“। 🙂
@অভিজিৎ,
এইসব ফতোয়া দেখায় কোন লাভ নাই। সত্যের সেনানীদের ডবল গেম পদ্ধুতির কাছে পরাজিত হতেই হবে। এইসব ফতোয়ার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই এবং একই সাথে বিপুল উদ্যমে পূর্নাংগ জীবন বিধান কায়েমের লক্ষ্যে মহা সমারোহে এসবের প্রচার প্রসার চলতেই থাকবে।
ধন্যবাদ আপনাকে সময়উপযোগী এই লেখাটির জন্য | হুমায়ুন আহমেদ মারা যাবার পর এই বিষয় নিয়ে ফরিদ ভাই এর সাথে আলাপ করছিলাম কিভাবে মরনোত্তর দেহ দান করা যায় |
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। ভালো কাজে সব সময় অনেক শব্দ ব্যয় করতে হয় দেখে খুব খারাপ লাগে।
আমি আমার দেহ দান করে দিয়েছি ২০০১-এ!
লেখার জন্যে
(Y)
খুব ভালো লাগলো । এরকম লেখা আরো চাই আপনার কাছ থেকে । অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে ।ভালো থাকুন সতত ।
(F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F)
মরণোত্তর দেহ দানের ইচ্ছে আমার অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কিভাবে করবো সে বিষয়ে একটু দ্বিধা ছিল, কিছুদিন আগে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন নামের সংগঠনের কথা জানতে পারি একটি ফেইজ বুক পেইজের মাধ্যমে। এরপর সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছি, এবার দেশে যাওয়ার পর কাজটা সেরে ফেলবো কিন্তু পরিবারের দুজন সদস্যের সম্মতি লাগবো জেনেতো ভয় পেয়ে গেলাম। কারন আমার পরিবারের সদস্য মা আর ভাই, তাঁরা কোন ক্রমেই অনুমতি দেবেনা। দাদা, এ ছাড়া অন্য কোন রাস্তা আছে কিনা দেহ দান করার। আর যদি এটা ছাড়া কোন অয়ে নাই থাকে তাহলে আর কি করার, বিয়া কইরা লই তারপর সদস্য সংখ্যা বাড়াইয়া চেষ্টা করতে হবে!!! (L)
দাদা, আপনি যে বিষয় নিয়েই লিখেননা কেন, আপনার লেখা পড়ে অনুপ্রেরণা পাই। শুধু আমি না, আশা করি আপনার এই লেখা পড়ে অনেকেই মরণোত্তর দেহ দানে উৎসাহিত হবে।
আমিতো আরো ভাবছি আমার শরীরটা ক্রাইয়নাইজ ( cryonize ) করে যাবো। যদিও অনেক খরচ, সেই সাথে থাকতে হবে আলকোর ( http://www.alcor.org ) এর কাছাকাছি। অনেক ইফস এন্ড বাটস আছে যদিও। তারপরও আমার প্রথম ইচ্ছা থাকবে ক্রাইয়নাইজেসন। নিদেনপক্ষে আমার কল্লাটা।
জ্ঞান বিজ্ঞানের সমসাময়িক অগ্রগতি দেখে আমার মনে হচ্ছে অমরত্ব পেতে আমাদের হয়তো খুব বেশিদিন লাগবেনা। আর নেহাত যদি লাগেই সেক্ষেত্রে আমার তরল নাইট্রোজেনে ডুবানো মস্তিস্ক থেকে আমাকে অন্তত ভার্চুয়ালি জাগিয়ে উঠানো সম্ভব হবে।
অনেক কিছু জানলাম এবং অনেক অনুপ্রেরনা পেলাম দাদা :clap
আমিও অনেকটা মনোস্থির করে ফেলেছি মরণোত্তর দেহদানের ব্যাপারে। কিন্তু পারিবারিক বাধা বিপত্তির জন্য এখনো কিছু করতে পারিনি। আশা করি মৃত্যুর আগে এই বাধা কাটিয়ে উঠতে পারব। অনেক ধন্যবাদ এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লেখার জন্য।
ধন্যবাদ অভিজিৎদা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে লিখবার জন্য। এই বিষয়টি নিয়ে আসলেই একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। বাবার মৃত্যুর পর মরণোত্তর দেহদানকে ঘিরে আমাদের পরিবারের অভিজ্ঞতা থেকে আমার একটি উপলদ্ধি হয়েছে। আমরা নিজেদের যতোই প্রগতিশীল এবং সংস্কারমুক্ত ভাবি না কেন, যতোই নিজেদের ধর্মীয় মৌলবাদ বা যাবতীয় সামাজিকতার বেড়াজাল থেকে immune ভাবি না কেন, আমরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশী প্রতিরোধহীন অবস্থায় পড়ি যখন পরিবারের কেউ মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যু, বিবাহ, এবং জন্ম – এই তিনটে ঘটনা যখন ঘটে, সমাজবদ্ধ প্রাণী হিসেবে তখন আমাদের সমাজকে গোণায় ধরতে হয়, কিংবা সমাজ নিজেই কিভাবে যেন সাপের মতো হয়ে বেহুলার নিঃছিদ্র বাসরঘরে ঢুকে পড়ে। অথচ বাকি সারা বছর বা সারা জীবনই এই আমরাই হয়তো সমাজের খুব একটা তোয়াক্কাই করি না, এমনকি সমাজের উপস্থিতিই হয়তো সেভাবে অনুভব করি না আমােদর জীবনে।
আমার বাবার মৃত্যুর পর মা-ভাই নিয়ে আমাদের যে ছোটো পরিবার, সেখানে কিন্তু এই মরণোত্তর দেহদান নিয়ে কোনো দ্বিমত বা দ্বিধা তৈরী হয়নি। দ্বিমত বা প্রতিরোধটুকু এসেছে সমাজের কাছ থেকে, সমাজ মানে এখানে বৃহত্তর পরিবার, পাড়ার শুভানুধ্যায়ীরা, আমাদের পারিবারিক বন্ধুরা – যারা নিজেরাও কিন্তু কারও অমঙ্গল চান না, আবার এদের কাউকে কাউকে হয়তো অনেক মাপকাঠিতেই আমরা প্রগতিশীলই বলবো। এসব শুভানুধ্যায়ীদেরই একজন গিয়ে সেদিন কাছাকাছি সেই কওমী মাদ্রাসায় খবর দিয়ে এসেছিল, যা আরেকটু হলেই সংঘাতময় একটা পরিস্থিতির দিকে গড়াচ্ছিল।
বলাই বাহুল্য মরণোত্তর দেহদানের ক্ষেত্রে এখানে ধর্মীয় গোঁড়ামী যেমন কাজ করে, তেমনি কাজ করে অজ্ঞতা, তেমনি কাজ করে যুক্তির পরাজয়। এর পাশাপাশি ইমোশনাল একটা দিকও কিন্তু থাকে – যেমন আমাদের পারিবারিক সিদ্ধান্তের বিরোধীদের বেশীর ভাই কিন্তু এটা বলেছিলেন যে – “তোমার বাবার একটা কবরও কি থাকবে না? তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে শ্রদ্ধা জানাবো”? এখন শ্রদ্ধা জানাতে কি আসলে কোনো সাইনবোর্ড লাগে? কিংবা সৌধ? কিন্তু সেটা তো আবেগহীন যুক্তির কথা, আর তা দিয়ে আরেকজন মানুষের ভালোবাসা-শ্রদ্ধার আবেগকেও ঠিক মোকাবিলা করা যায় না। এ কারণে আমি মনে করি – এর জন্য দরকার আবেগের প্রতিও আবেদন রাখতে পারে তেমন যুক্তি। মরণোত্তর দেহদানের বিষয়টি নিয়ে যদি একটিভিজম বা ক্যাম্পেইনের জায়গাটাতে কাজ করতে হয়, তাহলে আমি মনে করি – উন্নত প্রতিযুক্তি উপস্থাপনের পাশাপাশি, ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে ধর্মীয় বিধানের গোঁড়ামীর জায়গাগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি – আবেগের দিকগুলোকেও এড্রেস করা দরকার বুদ্ধিমত্তার সাথে।
এটা তো আসলেই সাধারণ কান্ডজ্ঞানের ব্যাপার যে মানবদেহের এতগুলো অঙ্গ যেখানে পুনরায় ব্যবহার করা যায়, যা আরও অনেকগুলো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে – সেখানে কারও আপত্তি থাকাটা অযৌক্তিক! কিন্তু সেই সাথে এও যদি বোঝানো যায় যে – যে মানুষটা চলে গেল তার শারিরিক অস্তিত্বের কিছু অংশ পৃথিবীতে তখনও থেকে যাচ্ছে, সক্রিয় থাকছে, বেঁচে থাকছে অন্যের শরীরের অংশ হয়ে, নতুন একটা জীবন নিয়ে!
আমার বাবার ক্ষেত্রে আমরা শেষ পর্যন্ত দেহদানে সফল হইনি, শেষ চেষ্টা হিসেবে কিডনীগুলো অন্তত গ্রহণ করার অনুরোধ করেছিলাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে যাতে তা দিয়ে অর্গান ট্রান্সপ্লান্টের একটা চেষ্টা করা যায়। লাভ হয়নি কোনো, এমনকি আমরা পারিবারিকভাবে যাবতীয় পরিবহন/সংরক্ষণ/বিমান ব্যয়-বহন করার প্রস্তাব রাখার পরও। শেষ পর্যন্ত শুধু কর্নিয়া দান করা গিয়েছিল (সন্ধানীর কিছু বন্ধুরা শক্তভাবে পাশে এসে দাঁড়ানোতে), তাও একেবারে শেষ মুহুর্তে, এবং অনেক প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে – কারণ ততক্ষণে পরিস্থিতি অনেক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। রাতের বেলা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সন্ধানীর বন্ধুরা বাসায় অনেকগুলো ফর্ম দিয়ে গিয়েছিল। ফর্মগুলো ছিল কিছু অন্ধ মানুষের কর্নিয়ার জন্য আবেদনের ফর্ম, যাতে আমরা সেখান থেকে আমাদের পছন্দমতো প্রাপক নির্বাচনে সাহায্য করি। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা ফর্ম থেকে নির্দিষ্ট কাউকে বাছাই করার পরিবর্তে অনুরোধ রেখেছিলাম তাদেরই সুবিধামতো যেন প্রাপক নির্বাচন করেন তারা। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে শুধু একটা বিষয় অনুরোধ করেছিলাম আমরা – প্রাপক যদি কোনো শিশু হয় কিংবা এমন কোনো পূর্ণ বয়স্ক হয় যার ওপর তার পরিবারের ভরনপোষণ নির্ভর করে তবে তাদের যেন সম্ভব হলে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। সন্ধানীর বন্ধুরা সেই ক্রাইটেরিয়াকে শ্রদ্ধা জানানোর যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিল (যতদূূর বুঝি এখানে কিছু মেডিকেল ক্রাইটেরিয়া এবং সীমাবদ্ধতাকেও আমলে নিতে হয়) – এবং আমার বাবার দু’টো কর্নিয়া দু’জন মানুষকে দৃষ্টি ফিরে পেতে সাহায্য করেছে, সেটাই আমাদের পরিবারের সান্ত্বনা। পুরো ঘটনাটা বললাম এ কারণে যে – মরণোত্তর দেহদানের ধারণার বিরুদ্ধে আবেগের যে প্রতিরোধ, তারও একটা সমাধান কিন্তু রয়েছে এখানেই। কারণ, এভাবে চলে যাওয়া মানুষের চোখ বেঁচে থাকছে অন্যের চোখের আলো হয়ে – এই দৃষ্টিকোণ থেকেই মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা যায়।
এই বিষয়টি নিয়ে আরেকটা সংগঠনকে খুব শক্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে, আর সেটি হল ডাক্তারদের সংগঠন – “বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)”। চাইলে শক্তিশালী এবং কার্যকর একটা প্রেশার গ্রুপ হয়ে উঠতে পারে তারা। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সে সংগঠনের নেতৃত্বকেও এই বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম মৃত কলিগের পরিবারের সাথে দেখা করে কুশল বিনিময় করার চেয়েও আরও বেশী শ্রদ্ধা প্রকাশ পাবে যদি তারা সাংগঠনিকভাবে ইস্যুটিকে তুলে ধরেন এবং মেডিকেল কলেজগুলোর সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে মরণোত্তর দেহদানের জন্য একটা স্থায়ী এবং সহজ ব্যবস্থা/প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। এখানে ব্যক্তি গুরুত্বহীন, ইস্যুটিই মূখ্য। জানি না এতদিনেও বিএমএ এই বিষয়ে কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছে কি না। কারও জানা থাকলে অনুগ্রহ করে জানাবেন।
@রায়হান রশিদ,
আপনার মন্তব্যের অপেক্ষাতেই ছিলাম মনে হচ্ছে। এখানে এসে এত সময় নিয়ে মন্তব্য করেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনার পিতার ব্যাপারটি জানার পর থেকেই আমার খুব খারাপ লেগেছিল। কীভাবে লিখব, কিংবা কীভাবে লিখলে জটিলতা এড়িয়ে আসল ম্যাসেজটা দেয়া যায় ঠিকমতো বুঝতেই পারছিলাম না। এ ব্যাপারটির সাথে আপনার এবং আপনার পরিবারের যে বিশাল আবেগ জড়িত ছিল, সেতার কথা না হয় নাই বা বললাম। এখন এটা জেনে আমার খুব ভাল লাগছে যে তার মৃতদেহ থেকে অন্তত: কর্নিয়া নিয়ে দান করা হয়েছে অন্ধ মানুষের অন্ধত্ব ঘোচাতে।
কিন্তু সমাজের অন্ধত্ব, আফটার-লাইফ-অবসেসড মানুষজনের মনের অন্ধত্ব ঘোচাবে কে! প্রায়ই ভাবি এ নিয়ে।
আপনি ঠিকই বলেছেন মরণোত্তর দেহদান কর্মসূচীকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে “বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)” এর মত সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। হয়তো সামনে তাদের মধ্য থেকে কোন সুযোগ্য নেতৃত্ব দেয়ার মত কেউ বেরিয়ে আসবেন, যারা ইস্যুটির গুরুত্ব অনুধাবন করবেন, এবং এ নিয়ে কাজ করতে সচেষ্ট হবেন।
মুক্তমনায় এসে মন্তব্য করার জন্য আবারো অভিবাদন জানাচ্ছি। মুক্তমনায় নিয়মিতভাবে আপনার লেখা এবং মন্তব্য পেলে খুব ভাল লাগবে।
@অভিজিৎদা,
আপনার এই পোস্টের কল্যাণে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের কাজসহ বাকি উদ্যোগগুলোর ব্যাপারে জানবার সুযোগ হল। বিষয়টা আলোচনায় এসেছে সেটাই আসলে একটা বড়ো ব্যাপার। এখন একে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ আমাদের সবার। এই পোস্টে মন্তব্যকারীদের বিভিন্ন মন্তব্য পড়ে রীতিমতো অনুপ্রাণিত বোধ করছি। লক্ষ্য করেছি – অনেকেই জানিয়েছেন তারা নিজেদের দেহ হয় ইতোমধ্যেই দানের ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছেন নয়তো ভবিষ্যতে দান করবার দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আজ থেকে ১৫ বছর আগে এটা আমার অন্তত কল্পনারও বাইরের একটা ব্যাপার ছিল। সময় কতোই না বদলেছে এবং আরও বদলাবে। তবে এখানে যারা মরণোত্তর দেহদানের ব্যপারে ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন, তাদের ইচ্ছার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি – সবাই হয়তো সফল হবেন না। কারণ, (কু)/সংস্কার, সামাজিকতা ইত্যাদি ছাড়াও এখনো এই পথ কন্টকাকীর্ণ হয়ে রয়েছে হাজারটা লজিসটিকেল সমস্যা নিয়ে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমার বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন এবং যারা অবগত তাদের অনেকের সাথেই মাঝে মাঝে কথা বলবার সুযোগ ঘটেছে, তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি অনেক কিছু। একটু সময় পেলে আপনি এবং আপনার মতো আরও যারা এই ইস্যুটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন – সবার সাথে ভাবনাগুলো শেয়ার করার ইচ্ছে আছে। আমি নিশ্চিত বিষয়গুলো আপনারও ভাবনায় এসেছে। আশা করি শিগগিরই এই আলোচনায় আবার ফিরে আসতে পারবো।
ধন্যবাদ।
পূনশ্চ: মুক্তমনায় স্বাগতম জানানোর কিছু নেই অভিজিৎদা। সময় পেলেই যে ক’টা সাইটের লেখা নিয়মিত পড়বার চেষ্টা করি তার মধ্যে মুক্তমনা একটি 🙂
অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ প্রবন্ধ। খুব ভাল লাগল।তবে আমাদের এ পর্যায়ে পৌছাতে এখনো অনেক দেরী।
আমরা তো শুধু সুবিধা ভোগী।
অন্যের লাশ dissection করে ANATOMY বিভাগে MEDICAL ছাত্ররা শরীর সম্পর্কীয় মূল ভিত্তি-জ্ঞ্যান যদি অদ্যাবধি ও অর্জন করার সুযোগ না পাইতো, তা হলে আজো আমাদের কবিরাজী,হোমিওপ্যাথি ও হেকিমী চিকিৎসার আওতায় সীমাবদ্ধ থাকিতে হইতো।
শুনেছি, যে বিজ্ঞানী (সম্ভবতঃ তার নাম গ্রে) HUMAN ANATOMY (মানুষের শরীরের কোথায় কী আছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে ভিত্তিমূল শাখাটি এটা বর্নণা করে।) আবিস্কার করেছিলেন, তখনকার দিনে খৃষ্টান ধর্মে মৃত মানুষের লাশ DISSECTION করা মহা পাপ ছিল।
সেই বিজ্ঞানী পাপ কে ভয় করেছিলেননা। তিনি রাতের আধারে কবর থেকে লাশ চুরি করে করে DISSECTION করে করে মানব শরীরের কোথায় কি আছে আবিস্কার করে বর্তমান এই উন্নত চিকিৎসা শাশ্ত্রের মূল ভিত্তি প্রস্তর HUMAN ANATOMY শাখার স্থাপন করেছিলেন।
এই ANATOMY শাখা ব্যতিরেকে বর্তমান চিকিৎসা শস্ত্রের কল্পনা সম্পূর্ণ অবাস্তব ছিল।
এদের অবদানেই তো আজ আমরা এ পর্যন্ত পৌছাইতে পেরেছি এবং আমরা স্বার্থপরের ন্যায় শুধু সুযোগ সুবিধা গুলী ভোগ করে যাচ্ছি।
তবে হ্যা, আমাদের ও উচিৎ শুধু স্বার্থপরের মত নাহয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অন্ততঃ কিছু করে যাওয়া।
কোনো সন্দেহ নেই যে খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ লেখা এটি। এত জরুরি বিষয় নিয়ে লেখার জন্যে লেখককে অভিনন্দন।
দুখের বিষয় যে দেহদান এবং অঙ্গদান জনিত সচেতনতা জনমানসে খুবই বিরল।
আরো খারাপ লাগে যখন দেখি তথাকথিত প্রগতিশীলদের এই নিয়ে কিছু না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে ।
২০১০ সালে যখন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির(মার্কসবাদী) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং পলিটবুরো মেম্বার জননায়ক জ্যোতি বসু মারা যান, তিনি মরণোত্তর দেহদান করে গিয়েছিলেন।
জ্যোতি বাবু মরণোত্তর দেহদান সম্পর্কে বলেছিলেন: “জানিনা আমার অশক্ত শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কারো কাজে আসবে কিনা! কিন্তু আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা যে আমার মরদেহ যেন অন্তত গবেষনার কাজে লাগানো হয়।একজন কমিউনিস্ট হিসেবে জানতাম জীবিতকালে মানুষের সেবা করতে পারব ।মৃত্যুর পরেও যে মানবতার কাজে লাগা যাবে, এইটা জেনে প্রফুল্ল বোধ করছি।”
জ্যোতি বাবুর মতন এত বড় মাপের নেতা যে দৃষ্টান্ত তৈরী করলেন, তার সঠিক প্রয়োগ করে, জনমানসে সচেতনতার প্রচার করার পরিবর্তে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী) অন্য ফাজলামিতে ব্যস্ত!
আজ কাগজে পরলাম তাদের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য শাখার চিন্তা হয়ে দাড়িয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিভাবে ঈদ পালন করে মুসলিম ভোটেরদের নিজের দিকে আকৃষ্ট করছেন।অতএব কমুনিস্ট পার্টি কিভাবে ঈদ পালন করে মুসলিম ভোটের ঝোল নিজের কোলে টানতে পারে, তার দুরূহ গবেষণা চলছে।কমুনিস্ট পার্টির মতন “প্রগতিশীল” রাজনৈতিক দলেরও যদি এইসব কাজে মত্ত থাকে, তাহলে আর বলার কি থাকে?
আমার অন্যতম প্রিয় লেখক, ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক তারিক আলী বলেন: “ইতিহাস কখন সোজা পথে চলেনা।
একেবেঁকে চলে ইতিহাসের প্রবাহ ।দুই পা এগিয়ে অনেক সময় তিন পা পিছিয়ে যায় মানব সভ্যতা।অতএব প্রগতিশীল শক্তিদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে প্রতিক্রিয়াশিলতা রুখে দিতে।”
মরণোত্তর দেহদানও একটা এই রকম বিষয়।সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।অনেক ভালো ভালো দৃষ্টান্তও মাটি হয়ে যায় দুচারটে কুদৃষ্টান্তে।যুক্তি দিয়ে ভেবে দেখলে, কাজটি মহান এবং দেহদানকারী ব্যক্তিকে কোনো ঝন্ঝাট পোহাতে হয়না।(কারণ দুখের বিষয়, তিনি মৃত!)
ভারতের মতন বিশাল দেশে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন, তবু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের যোগ্য মৃতদেহ বা গবেষনার জন্যে মৃতদেহ পাওয়া দুষ্কর।
আরো দুটো ঘটনা মনে পড়ল; একটি সাম্প্রতিক, আরেকটি বেশ কিছুদিন আগের।
২০০৩ সালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় মারা যান।মৃত্যুর পূর্বে তিনি মরদেহ দান করে গিয়েছিলেন।
কিন্তু যখন সেই মরদেহ সংগ্রহ করতে যাওয়া হয়, তা নিয়ে এক বিশ্রী কুনাট্য হয় যার কুশীলব ছিলেন ওনার পরিবার এবং কবির অতিভক্ত আমাদের পশ্চিমবংগের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতাদেবী।
এই সেইদিন মারা গেলেন মহারাষ্ট্রের দোর্দণ্ড কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখ।তিনি যকৃতের ক্যানসারে ভুগছিলেন।
যকৃত প্রতিস্থাপনের জন্যে একজন দাতার খোজ চলছিল।চিকিত্সকদের মতে সঠিক সময়ে সঠিক দাতা পেলে বেচে যেতেন।
যিনি অন্যের দান করা অঙ্গের অপেক্ষায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন, তিনি কিন্তু মারা যাওয়ার আগে বা মারা যাওয়ার পরে তার পরিবারবর্গ, দলীয় কর্মীরা আর দেহদানের পথে পা মারলেননা।মহাসমারহে, ধুম ধাম করে শেষকৃত্য সমাপ্ত হলো।
দেহদান বা অঙ্গদান-এর ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে বড় ছোট সকলেরই এই মনোবৃত্তি।অর্থাৎ যখন আমার বা আমার কোনো প্রিয়জনের দরকার হবে তখন অঙ্গের বা দাতার জন্যে চাতক পক্ষীর মতন চেয়ে বসে থাকব।
কিন্তু নিজের বেলায় বা নিজের প্রিয়জনদের বেলায় মরদেহকে আগুনে দাহ করব অথবা ম্যাগটদের খাদ্য করব।
কিন্তু মরেও শালা কারো উপকারে লাগব না!
@অনামী,
আপনার চমৎকার মন্তব্যটি আমার সামান্য লেখাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের একটা সম্যকচিত্র পাওয়া গেল আপনার মন্তব্য থেকে। জ্যোতি বসু নিজের দেহ দান করে গেছেন, এ ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না। কিংবা হয় জানতাম, কিন্তু লেখার সময় মনে পড়েনি। আমার লেখার তাঁর কথা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিৎ ছিল।
তারিক আলী আমারো খুব প্রিয় একজন লেখক। তার ইতিহাসের বিশ্লেষণ খুবই শক্তিশালী।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়-এর মরণোত্তর দেহদান নিয়ে কূটনাট্যের কথা জেনে খারাপ লাগল। তা মমতা দেবী ঠিক কি ভূমিকা পালন করেছিলেন সে সময়? কেনই বা করলেন?
এ আর নতুন কী! টিপিকাল রাজনীতির ছলাকলা না? মানুষের মৃত্যুর চেয়ে মহাসমারোহে, ধুম ধাম করে শেষকৃত্য করাটাই এদের কাছে মুখ্য। আপনাদের বাংলায় শেষকৃত্য, আর ওপারে চল্লিশা, মিলাদ মাহফলের ছড়াছড়ি। এই আফটার লাইফ অবসেশন যে কবে কমবে কে জানে!
আপনি মুক্তমনায় নিয়মিত মন্তব্য করলে এবং লেখালিখি করলে খুব খুশি হব।
খুব ভালো লাগলো লেখাটি পাঠ করে,সমৃদ্ধ এবং অনুপ্রনিত হলাম
@অনামী,
জ্যোতি বসুর মন্তব্যটা এতোই ভাল লাগলো যে মূল লেখায় অন্তর্ভুক্ত করে দিলাম আপনার রেফারেন্স দিয়ে। 🙂
ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখলাম – কেবল জ্যোতি বসু নয়, পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী অনেক নেতা মরণোত্তর দেহ দান করে রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন লোকসভার সাবেক স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা অনিল বিশ্বাস প্রমুখ।
আপনার কাছে আরো তথ্য থাকলে জানাতে পারেন নির্দ্বিধায়।
ধন্যবাদ আবারো।
@অভিজিৎ
অসাধারণ উদ্যোগ। আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল এখন তা দৃঢ় হল। ধন্যবাদ।
(Y) (Y)
এই মরনোত্তর দেহদানের ব্যাপারটাকে আন্দোলনের মতন করে ছড়িয়ে দিতে হবে। করর দেওয়ার জায়গা আর পাওয়া যাচ্ছে না আর দেহকে পুড়িয়েও লাভ নেই। জ্যোতি বসু সহ ভারতের কমিনিউস্টদের অনেকেই দেহকে মেডিক্যাল কলেজে দিয়ে গেছেন।
আর আত্মার ধারনা বা মিথটি অনেক পুরানো -ঈশ্বরের থেকেও অনেক অনেক প্রাচীন এবং জন্মান্তরবাদের ধারনা থেকে উদ্ভুত। যবে থেকে হোমিনিডদের মধ্যে মৃতর জন্যে রিচ্যুয়াল এসেছে, এই মিথটি তবে থেকে এসেছে। নইলে মৃত্যের জন্যে রিচুয়ালের জন্ম হত না।
প্লেটোর অনেক দিন আগেই এসেছে হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো সভ্যতা। ঋকবেদ এবং প্রাচীন জৈন ধর্মগ্রন্থে আত্মার সংজ্ঞা প্লেটোর জন্মের তিনহাজার বছর আগে থেকেই দেওয়া ছিল। কারন আত্মার ধারনা ছারা পুনঃজন্ম কথাটার মানেই নেই।
আর আত্মার ধারনাটা যাস্ট শুধু মিথ না-এটি একটি দার্শনিক সমস্যার কাল্পনিক সমাধান ও।
সেই দার্শনিক সমস্যাটা হচ্ছে “আমি কে” এই প্রশ্নের কাল্পনিক দার্শনিক সমাধান। কারন আমি আমার দেহ বা মন হতে পারি না -যেহেতু তা ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থাৎ আমার অপরিবর্তন শীল “আই ডি” না থাকলে, আমার সংজ্ঞা কোথা থেকে আসবে?
আজকে আমরা জানি ডি এন এ হচ্ছে আমাদের সেই আই ডি-যা আপরিবর্তনশীল (প্রায়)।
এবং পুঃনজন্ম না সন্তানের জন্মের মাধ্যমেই তা টিকে থাকে। সুতরাং আত্মা, পরজন্ম ইত্যাদি কাল্পনিক হাইপোথিসিসএবং একটি গুরুত্বপূর্ন দার্শনিক প্রশ্নের কাল্পনিক সমাধান হিসাবে, আত্মার ধারনা ভিত্তিহীন।
অন্ততঃ এই লেখাটা শেয়ার দেবার আগে এই গ্লানি নেই, “ শুধু লাইক/ কমেন্ট দিয়ে যাওয়াই enough নয়, Walk the walk” . এই বছরের প্রথম দিকে আমি আমার মরণোত্তর দেহদান/ Organ Donation -র সব কাগুজে কাজ শেষ করেছি । Yea, I’m not the only one, I hope someday you’ll join us and the world will be as one..
দেহ দান করার পূর্বে মেডিকেল কলেজের এনাটমি ডিপার্টমেন্টের ডিসেকশন রুম এবং প্রিজারভেশন রুম ঘুরে দেখার আমন্ত্রন রইল। আপনার দেহ মৃত্যুর পয়র কেমন থাকবে একটু আগেভাগেই জেনে নেয়া ভাল নয় কি?
ধন্যবাদ দাদা। আপনার এ লেখা পড়ে অনেকই অনুপ্রাণিত হবে নিশ্চয়ই।
চমত্কার লাগলো লেখাটা। দাদা, আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি মৃত্যুর পর দেহদান করার। তবে পারিবারিক ভাবে ব্যাপারটাকে মেনে নেবে কিনা জানি না
দাদা, আরেকটা ব্যাপার, লেখাটায় ‘পরকাল’ শব্দটার আগে ‘তথাকথিত’ শব্দ টা ব্যবহার করলে মনে হয় জন্মমৃত্যু ধারণা বিষয়ক কুসংস্কারে আরেকটু শক্তভাবে পেরেক ঠুকে দেয়া হত।
জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের একটি পোষ্টে আমি মন্তব্য করেছিলাম যে আমি মরণোত্তর চক্ষু ও দেহদান করবো।
খুব তাড়িতাড়ি তাঁদের সাথে যোগাযোগ করবো।
আভিজিত্ দা,
লেখাটি ভালো লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ, অভিজিৎ-দা! আমার মতে, মুক্তমনার আন্দোলনে একটি নতুন পালক যোগ করতে যাচ্ছে আপনার এই লেখা।
হ্যাঁ, অভিজিৎ-দা, ছোটবেলায় যাদের দেখেছি উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পাঠ্য এই উপন্যাসটি পড়ে মজিদের ভণ্ডামি নিয়ে আলোচনা করতে, এখন তারাই বলছেন, ‘লাল সালু’ উপন্যাসটি পাঠ্য করে বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্ম নষ্ট করার এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র নাকি চালানো হয়েছিল, তারা তাদের অল্প বয়সে এই বিষয়টি নাকি তলিয়ে দেখেননি, এখন ধর্ম বিষয়ে তাদের এলেম হওয়ার পর লাল সালুর ষড়যন্ত্র সম্যক উপলব্ধি করতে পারছেন! বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু ধর্ম-কেন্দ্রিক কুসংস্কারও যে বাড়ছে (মোল্লাদের দাপট বৃদ্ধির সাথে সাথে), এ বিষয়টিই তার বড় প্রমাণ।
কিন্তু আমার মতে, এই দার্শনিক আলোচনার গুরুত্ব আছে, অভিজিৎ-দা। কারণ তা মানুষকে দার্শনিক যুক্তিবাদ যোগাতে পারে মরণোত্তর দেহদানে উদ্বুদ্ধ করতে।
সত্যি, অভিজিৎ-দা, আমি স্তম্ভিত! এমন নজীর বোধ করি আর একটাও পাওয়া যাবে না যে, একজন পিতা তার সন্তানের মৃত্যুকালীন সময়েও ভেবেছেন আর একটি শিশুর জীবন বাঁচানোর কথা! এই পিতাকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা!
একটি বিষয় জানতে কৌতূহল হচ্ছে। আলোচ্য নিবন্ধটির মেজাজকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে সেই শঙ্কা মাথায় নিয়েই (সেক্ষেত্রে আপনার ক্ষমা পাব ধরে নিয়েই) প্রশ্নটি করছি, যদি পৃথিবীর সব মানুষ মরণোত্তর দেহ দান করে, তাহলে তার সদ্ব্যবহার কিভাবে নিশ্চিত করবে মেডিকাল কলেজ বা অন্য গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান (যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগীর জন্য বা শিক্ষার্থীর জন্যই মরণোত্তর দেহ দরকার হয়)?
যদি দুজন সদস্যের সম্মতি না মিলে, তাদের মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছা কি বাস্তবায়িত করা যাবে না?
অন্যদিকে, বাংলাদেশের মেডিকাল শিক্ষার্থীরা হয়ত অনেক ক্ষেত্রে শ্রদ্ধা জানাবার পরিবর্তে বিদ্রূপ মন্তব্য করে বসবে দানকারী ব্যক্তিকে নিয়ে, যেহেতু মেডিক্যাল সায়েন্স পড়ার পরও ডারউইনকে তারা বিশ্বাস করে না বা ধর্ম-কেন্দ্রিক কুসংস্কার অটুট থাকে ষোলআনা।
এই জিনিসটা ঠিক বুঝতে পারছি না, অভিজিৎ-দা। আপনি অন্যত্র বলেছেন, একটি মানুষ মারা যাওয়ার সাথে সাথে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোরও মৃত্যু ঘটে না; অন্তত: সাথে সাথেই নয়। দেখা গেছে মানুষ মারা যাবার পরেও হৃৎপিণ্ড ১৫ মিনিট, কিডনি ৩০ মিনিট, কঙ্কাল পেশী — ৬ ঘণ্টার মত ‘বেঁচে থাকে’। মানে, একমাত্র কঙ্কাল পেশী ছাড়া অন্যগুলি ছয় ঘণ্টার বেশী বাঁচে না। তাহলে, কিভাবে সেগুলো প্রতিস্থাপন সম্ভব ছয় ঘণ্টার পরও?
পুরো লেখাটি পরে এরকম সম্ভাবনার কথাই মনে হচ্ছিল। আমার শ্রদ্ধা :candle:
Yes, we will, Avijitda!
সুন্দর এবং সময় উপযোগী লেখা। আরোজ আলী মাতব্বরের বই পড়ে অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। আজ আপনার লেখা দেখে আবার মনে পড়লো।
মানুষ হিসাবে কাজটি আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে । সবাইকে সেটা স্মরণ করানোর জন্য ধন্যবাদ ।
@প্রদীপ্ত,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
তোমার লেখাটা পড়ে আমি আবার অভিভুত হলাম। এতো চমৎকার করে তুমি লেখা উপস্থাপন করো যে, জানা কথাটাই আবার নতুন করে জানি। ভালো লাগলো তোমার মরনোত্তর দেহদানের উপ লেখাটা । এখান থেকে কিছু কিছু কোটেশন আমি জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনে দেবো। রেফারেন্সে অবশ্যই তোমার নাম থাকবে। ধন্যবাদ তোমায় অনুপ্রানিত এ লেখার জন্য। আমরা সবাই একই পথের যাত্রী…..
@বেণুবর্না,
ধন্যবাদ। ফেসবুকে তোমার নোটটা না দেখলে জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশনের কাজ সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যেতাম।
ড্রাইভিং লাইসেন্সে অর্গান ডোনার উল্লেখ করা আছে। দেখি দেহদানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যুপূর্ব একটি সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম তিনি বিশ্বাস করেন যে কবর দেয়ার পরে মাটির সাথে মিশে যাবেন। মিশে যাবেন বলেই যদি বিশ্বাস করেন তবে কেনো দেহদান করে জাতির জন্যে একটা ভালো প্রিসিডেন্স করলেন না?
@সফিক,
ধন্যবাদ। আমিও ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সময় ‘অর্গান ডোনেশন’ অপশনটায় টিক মার্ক দিয়েছিলাম। তবে তখন জানতাম না যে পুরো দেহ হান করার জন্য এত সংগঠন ছড়িয়ে রয়েছে। এবারে প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে তাদের অস্তিত্ব এবং কাজ দেখে সত্যই ভাল লাগল।
হ্যা, হুমায়ূন আহমেদ এ ব্যাপারে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে অনেকেই উপকৃত হত। জ্যোতি বসু মৃতদেহ দান করার পর নাকি সেই মাসেই প্রায় তিন হাজার কর্মী নাকি এতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। জ্যোতি বসুর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে তারা নিজের মৃতদেহ অন্যের কাজে লাগাতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের অগনিত পাঠকদের কথা ভেবে তিনিও এ ধরনের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যেতে পারতেন কিন্তু।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সামনে আনার জন্য সাধুবাদ প্রাপ্য। (Y)
সাথেই আছি…
@প্রতিফলন,
ধন্যবাদ পড়ার এবং সাথে থাকার জন্য …