রেসিজম, মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে আদি শত্রু এবং মানুষের সবচেয়ে পুরোন সাথী। মানুষ যেদিন হতে ঈশ্বর আর শয়তান নামের দু’জনকে চিন্তা করতে শুরু করলো এবং ভাল ও খারাপ কাজের জন্য যথাক্রমে দু’জনকে দায়ী করতে থাকলো, সেদিন হতে রেসিজম মানুষের চিন্তার সঙ্গী। ছোটবেলায় পড়েছি, “পাপকে ঘৃনা কর, পাপীকে নয়’- এই কথাটি আজো অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়ে রয়ে আছে। যেদিন হতে আমরা ভেবেছি ভাল কাজ হচ্ছে ঈশ্বরের আর খারাপ কাজ হচ্ছে শয়তানের, তখনই আমরা খারাপ কাজের মানুষগুলোকে আলাদা করে ফেলেছি – কারণ তারা শয়তানের উপাসনা করে, ভালোর নয়।
যুগে যুগে রেসিজমের চিন্তা ধারণা নানান ভাবে আমাদের মধ্য দিয়ে বংশ পরম্পরায় বয়ে চলেছে। একদম আদিম সমাজের মানুষ শুধু মাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে প্রকৃতির সাথে বা প্রকৃতির অন্য জীবের সাথে বা এক অন্যের সাথে লড়াই করতো। সেখানে গোত্রবিশেষের বা মানুষের নিজেদের মাঝে বিদ্ধেষের বিশেষ সুযোগ ছিল না। কিন্তু যখন গোত্র গোত্র বিশেষ মিলে সমাজ হল, সমাজ হতে রাষ্ট্র হল, সমাজে আচরণ বিধি হল, সমাজ ও রাষ্ট্রে শাসক এবং শাসিত গোষ্ঠি হল, এরই কোন পর্যায়ে মানুষে মানুষে বিভেদের সৃষ্টি হল।
ধর্মগুলো মানবতার কথা বললেও রেসিজম থেকে সম্পুর্ণ মুক্ত হতে পারলো না। ইহুদী ধর্মগ্রন্থে বলা হয় ইহুদীরা ঈশ্বরের পছন্দের জাতি। গ্রীক পূরাণেও গ্রীক জাতি নিজেদের ঈশ্বরের সন্তান মনে করে। এভাবে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে যে ধরণের হিংসার বীজ রয়েছে, তাতে মনে হয়েছে যে ধর্মগ্রন্থগুলো ঈশ্বরের বাণী হতে পারে না। একজন ঈশ্বরের কাছে তার সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য থাকতে পারে না। শুধু ধর্মগ্রন্থই নয়, দর্শনগুলোও নিজেদের সম্পুর্ণ মুক্ত করতে পারেনি রেসিজম হতে। একারণেই আমরা দেখি এরিষ্টটল, কান্ট, হেগেলের মত বিখ্যাত দার্শনিকদেরকেও রেসিজমের বীজ অন্তরে ধারণ করতে। এরিষ্টটল মনে করতেন যে গ্রীক জাতি প্রকৃতগত ভাবে মুক্ত এবং বর্বর (প্যাগান বা নন-গ্রীক) জাতি প্রকৃতগত ভাবেই দাস। কান্ট এবং হেগেল উভয়েই মনে করতেন যে, কালো মানুষদের বুদ্ধি কম এবং তারা সাদা মানুষের তুলনায় নীচু জাতের।
আমার মতে, রেসিজমের মূলে রয়েছে অন্ধ-বিশ্বাস এবং অহংকার। আমার বিশ্বাস, বা ধর্ম, বা জাত অন্যদের তুলনায় ভিন্ন এবং উৎকৃষ্ট – এই ধরণের চিন্তার প্রতফলনই হল রেসিজম। তাই আমরা দেখি ধর্মযুদ্ধগুলো থেকে শুরু করে বিশ্বযুদ্ধ এবং আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে বা হচ্ছে তার সবকয়টির সাথেই এই রেসিজম ওতপ্রেতভাবে জড়িত। মানবতা হয়েছে লুন্ঠিত। অন্ধ-বিশ্বাসের প্রকৃতিটি বুঝা খুব জরুরী যদি আমরা রেসিজমকে চিহ্নিত করতে চাই। নিজের বিশ্বাসকে অন্ধ ভাবে পালন করে যদি মানবতাকে উপেক্ষা করি এবং মানুষের মাঝে বিভেদের দেয়াল তুলে দেই তবে, নিজের অজান্তেই রেসিজমের বীজ বপণ করে চলবো। এক জন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যিনি কোনদিন হয়তো মিথ্য বলেননি বা অন্যায় করেননি, তিনিও হয়তো একজন নাস্তিককে ঘৃনা করতে পারেন, কিংবা একজন নাস্তিক, নিজেকে মুক্তচিন্তার অধিকারী দাবী করেও, যদি এই ধারণা পোষন করেন যে ধর্মপ্রাণ মানুষই সমাজকে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে, তাহলে তিনিও রেসিজম অন্তরে ধারণ করছেন। ধর্ম নয়, ধর্মের মাঝে বিদ্যমান রেসিজমই দায়ি সভ্যতাকে পেছনে নেওয়ার জন্য।
অন্ধ-বিশ্বাস শুধু মাত্র ধর্ম বা বর্ণেই বিদ্যমান তা নয়। যদি নিজের মতবাদকেই সেরা হিসেবে গন্য করি, , বা সিনিয়র কলিগ হয়ে জুনিয়র কলিগদের তাচ্ছিল্য করি, বা একজন ব্লগার হয়ে সহব্লগারের মতামতকে হেয় প্রতিপন্য করি, বা দেশের সমস্ত রাজনীতিবিদদের চোর মনে করি, বা প্রবাসী সব ভাইয়দের স্বার্থপর মনে করি, বা গরীবলোক মানেই চুরি করে মনে করি, বা কাজের লোকদের যথাযথ সম্মান না দিই, বা বুয়েটের ছাত্র বা ইডেনের ছাত্রী বলে নিজেকে একটু ভিন্ন মনে করি, বা আমার ছেলে কোন অপরাধ করতে পারে না এমন ধারণা মা হিসেবে পোষন করি, বা সকল তরুণদের উচ্ছৃঙ্ঘল মনে করি, বা সকল বুইড়াদের ফালতু মনে করি – এই সবই অন্ধ-বিশ্বাসের প্রতিফলন। আর যখন এই অন্ধ-বিশ্বাষটুকু প্রকট হয়, তখন ভিন্ন মতালম্বী মানুষটিকে আর মানুষ হিসেবে দেখা হয় না – যাহাই রেসিজমের সৃষ্টি করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, নিজেকে মুক্তচিন্তার মানুষ বলে দাবী করলেও, প্রকৃত রেসিজম থেকে মুক্ত থাকা কতটা কষ্টকর। নিজেও যে এর উর্ধ্বে ছিলাম দাবী করি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় কালে অমনোযোগী ছাত্রদের হেয় করেছি, দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেছি সেটা তাদের ভালোর জন্যই করেছি, কিন্তু আজ উক্ত কাজ ভুল ছিল স্বীকার করি। মানবতা এবং অহিংসাকে জীবনের পাথেয় করেছি। সকল মানুষ সমান এবং সকলের সমান ভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে এই পৃথিবীতে, এটা বিশ্বাস করি। শুধু সকল মানুষ নয়, সকল জীবেরই বাঁচার সমান অধিকার রয়েছে বলেই মনে করি। একে অন্যের বিশ্বাস এবং মতামতের উপর সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাশীলতার মাধ্যমেই আমরা পারি রেসিজমকে পেছনে ফেলে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
রেশিজিম নিয়ে অনেক গবেশHনা হয়েছে। পরিবারের প্রভাব ই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাগেছে। এর সাথে ঐতিহাসিক বস্তুবাদের w সম্পর্ক আছে। এত গভীর সাবজেক্ট নিয়ে লিখতে বসে, মনে যা আসে তাই লেখা উচিত্ না। এটা সদালাপের রায়হান বালকের ধর্ম চিন্তার মতন লেখা হবে-আসল তথ্য বা বিজ্ঞান কি বলছে তা নে জেনে, মনে যা আসে তাই লেখ, টাইপের লেখা।
মুক্তমনার পাঠক তথ্য সমৃদ্ধ বিজ্ঞান সম্বলিত প্রবন্ধ আশা করে। না হলে মুক্তমনাw সচলায়াতন হয়ে যাবে।
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লবের মন্তব্য আমার কাছে বেশ রূঢ় মনে হলো। এ ধরনের মন্তব্য যে কোন লেখকেরই লেখার আগ্রহকে দমিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। মুক্তমনায় সব লেখাই যে তথ্য সমৃদ্ধ বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে এমন কোন কথা নেই। প্রত্যেকেই তার অভিজ্ঞতার আলোকে এবং তার নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে যে কোন বিষয়েই যুক্তিসঙ্গত আলোচনা করার অধিকার রাখে। এতে করে কোন ক্ষতিতো নেই বরং লাভের সম্ভাবনাই বেশি।
স্বাধীনের এই লেখাটি আমার কাছে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত, গোছানো এবং চিন্তা-জাগানিয়া বলেই মনে হয়েছে। বোঝাই যায় অনেক চিন্তাভাবনা করে বেশ পরিশ্রম করেই স্বাধীন লেখাটা তৈরি করেছেন। বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রেও তিনি সাম্প্রতিক এবং জরুরী একটা বিষয়কেই বেছে নিয়েছে। এ ধরনের লেখা মুক্তমনার মানকে অধোগামিতো করেই না বরং মুক্তমনার আদর্শকেই সুউচ্চ করে ধরে।
‘তথ্য সমৃদ্ধ বিজ্ঞান সম্বলিত’ মাণদণ্ডে যাচাই করলে মুক্তমনায় আমার লেখালেখির পচানব্বই শতাংশই বাতিলের খাতায় চলে যাবে।
@ফরিদ,
এটা বিষয় নির্বাচনের ওপর নির্ভর করে। কেও যদি, “বাঙালীর বাওয়ালী” বা এ”ওবামা উবাচ” নিয়ে লেখে, তাহলে, সেই লেখাই লিয়ালিজম আসবে-বিজ্ঞান বা তথ্য আসবে না। সেটাই সেখানে অভিপ্রেত। কিন্ত রেশিজম বিষয়টি সমাজ বিজ্ঞানের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সাবজেক্ট-এখানে কিন্ত ব্যাক্তিগত অভিমত দিয়ে শুধু প্রবন্ধ লেখা ঠিক না। তাছাড়া স্বাধীন যেহেতু বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখার ক্ষমতা রাখে, ওর আরো তথ্য এবং বিজ্ঞান সমৃদ্ধ লেখা উচিত। কঠোর সমালোচনা আমি লেখকের ভালর জন্যেই করেছি।
লেখাটা সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভুল লেখা। কারন লেখক জাতির সংজ্ঞাই ঠিক করেন নি।আমি উদাহরন দিচ্ছিঃ
[১] কাজের লোকেদের সন্মান না দেওয়ার সাথে রেশিজমের সম্পর্ক নেই-ওটা শ্রেনী চেতনার সমস্যা।
[২] বুয়েটে বা এলিট স্কুলের ছাত্র হয়ে গর্ব করাটা সামাজিক পরিচিতির সমস্যা
জাতির একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে। হিন্দুরা মুসলিমদের ঘৃণা করে বা উলটোটাও সত্য-এটা রেশিজম না। কারন বাঙ্গালী একটি জাতি-বাঙ্গালী হিন্দু বা মুসলমান আলাদা জাতি না। সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ত একদম না,
সুতরাং জাতি বৈষম্যের নির্বাচিত সংজ্ঞার মধ্যে এই গুলো পড়বে
১। ব্রাহ্মন হয়ে শুদ্রদের ঘৃনা করা-বা আদিবাসি, তপশীলিদের ঘৃণা করা।
২| মুসলমানদের মধ্যে পাঞ্জাবী বা বিহারী মুসলমানদের গালাগাল দেওয়া।
গায়ের রং , গঠন, ভাষা এবং খাদ্য-আলাদা জাতির সংজ্ঞা নির্নয় করে। হিন্দুদের জাতিভেদ বর্ণ বৈষম্যের মধ্যে মূলত গায়ের রঙের জন্যে।
@বিপ্লব পাল,
একটা অফ টপিক কথান বলি, আপনাকে জুতমত পাচ্ছি না বলার তাই এখানেই বলি। যদিও ওবামার নোবেল বিষয়ক লেখায় বলেছিলাম মনে হয় দেখেননি।
ওবামার এই এক বছরের শাসন কাল ইভ্যালুয়েট করে একটা লেখা দেন না? তার কাছে কি কি আশা ছিল আর এর মাঝে কি প্রাপ্তি হয়েছে বা কতটুকু আশাবাদী হওয়া যায় এগুলি নিয়ে। তার হেলথ কেয়ার।।বিদেশ নীতি…রিসেশন ম্যানেজ় করা এইগুলি আর কি।
একটু তেল দেই যদি কাজ হয়, আপনার বিশ্নেষন ধর্মী লেখাগূলি আমার অসাধারণ লাগে।
@বিপ্লব পাল,
আপনার সমালোচনা যুক্তিযুক্ত ও গঠনমূলক বলেই মনে করি।হ্যাঁ স্বাধীন সাহেবের সংজ্ঞা নির্ধারণগুলো সমাজবিজ্ঞানের প্রচলিত সংজ্ঞার সাথে মেলে না।উনি মনে হয় এখানে রেসিজম বলতে ভেদপ্রবণতাকে সাধারনীকরন করেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে বলব আপনার আপাত রূঢ় সমালোচনাগুলো আমার লেখায় যথেষ্ঠ সংশোধন নিয়ে আসে।
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লব’দা
আপনার মতামতের উপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মুক্তমনার সব প্রবন্ধই তথ্য সমৃদ্ধ বিজ্ঞান ভিক্তিক লেখা নয়, বিশেষ করে ব্লগের লেখাতো নয়ই। ব্লগে অনেক ভ্রমন কাহিনী, অত্মজীবনী, গল্প, কবিতা অনেক লেখাই আসে। আপনার কথাটি ঠিক, যে রেসিজম নিয়ে গবেষনা করে লেখা দেওয়া যেত। কিন্তু একেক জনের নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে। আমি এই লেখাটি লিখেছি নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও নিজস্ব জ্ঞান দিয়ে বা নিজস্ব চিন্তা ভাবনা দিয়ে। আমি নিজে কিভাবে সেটা দেখি। আমি যদি আমার বক্তব্যগুলো অন্য কারোর বা বিজ্ঞান ভিক্তিক বলে চালানোর চেষ্টা করতাম তবে আমাকে দোষী করতে পারতেন। সুতরাং এখানে আসলেই আমার মনে যা এসেছে তাই লিখেছি, কিন্তু নিজে যেটা বিশ্বাস করি সেটাই লিখেছি। আমি মনে করি অন্যরা কি বললো তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজে কি উপলব্দি করলাম। তাই নিজের উপলব্দির কথাই বলার চেষ্টা করি।
এবার আমার দৃষ্টভঙ্গীর কথা বলি। আমার লেখার দূর্বলতার কারণে আপনি মনে হয় আমার বক্তব্যটি পরিষ্কার করে ধরতে পারেননি। সেটা আমার ব্যর্থতা স্বীকার করি। খেয়ায়ল করুন আরেকবার। আমি মূলত বলার চেষ্টা করেছি শুধু জাত বা বর্ণ ব্যতীতও রেসিজম হতে পারে। এবং সেটা হতে পারে অন্ধ-বিশ্বাস এবং অহংকার হতে। আমি যে সামাজিক উদাহরন গুলো দিয়েছি সেগুলো আমাদের চারপাশে অহরহই ঘটছে তাই এগুলোকে রেসিজমের আওয়তায় ফেলি না বা রেসিজম হিসেবে গন্য করি না। কিন্তু আমার মতে যদি কারোর মাঝে তার বিশ্বাস খুব অন্ধ বা তীব্র হয় যে সে অন্যকে বা অন্যের মতামতকে হেয় করতে শুরু করে বা অন্যকে আর মানুষু হিসেবে গন্য না করে তবে সেটাও রেসিজম। আমি রেসিজমকে এভাবেই সজ্ঞায়িত করবো। এটাই আমার লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, পুরোপুরি যে সফল হইনি তা বুঝতে পারছি। কিন্তু নুতন লেখক হিসেবে আপনাদের মতামত গ্রহন করলাম। ভবিষ্যতে আরো পরিষ্কার ভাবে বক্তব্য তুলে ধরবো।
@স্বাধীন,
আপনার কথাঃ
এর উত্তর আমি আগেই দিয়েছিঃ
নাস্তিক আর মুক্তমনা শব্দ দুটির অর্থ সমান নয়। একজন নাস্তিক এবং একজন ধর্মবাদী আস্তিক তারা উভয়েই চোর, মিথ্যেবাদী, খুনী, অত্যাচারী, বর্ণবাদী, বৈষম্যবাদী হতে পারেন কিন্তু একজন মুক্তচিন্তার অধিকারী এর কোনটাই হতে পারেন না। যে ব্যক্তি রেসিজম অন্তরে ধারণ করেন তিনি আস্তিক হতে পারেন নাস্তিক পারেন, ধার্মিক, শিক্ষিত, বিজ্ঞানী, হতে পারেন কিন্তু মুক্তমনা নন। সুতরাং মুক্তচিন্তার অধিকারী ব্যক্তিকে রেসিস্ট বলা যায়না।
বুঝা গেল ধর্মে রেসিজম বিদ্যমান আছে এবং রেসিজম ধর্মের একটি অংশ। ধর্মের একটি অংশ বাদ দিয়ে যারা ধর্ম পালন করেন তারা কারা, যে তাদেরকে ধর্ম-প্রাণ মানুষ বলা যায়? ধর্মের সবটুকু পালন করেই তো হবে ধর্মপ্রাণ মানুষ। ধর্মের মাঝে বিদ্যমান রেসিজম আলাদা করার উপায়টা কি? আচ্ছা ধর্মপ্রাণ মানুষের গোতাগোতি মারধর খেয়ে, মনসুর, রুমী, রামকৃষ্ণ বা লালন সেজে ধর্মকে দ্বিখন্ডিত করলাম, রেসিজম আলাদা করে একদিকে রাখলাম, অপরদিকে বাকি রইলো কি? বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ, হিলা বিবাহ, পাথর মারা? দশ হাত লম্বা চুলে জট পাকিয়ে, মাজারে মোমবাতি জ্বালিয়ে, একহাতে গাঁজার ছিলিম আরেক হাতে ডুগডুগি, লাউয়ের বৈরাগী, নাকি ভিক্ষু, বৈষ্ণব সৈন্যাসী? ধর্মের কোন্ অংশ দিয়ে সভ্যতার চাকা সামনে এগিয়ে নেয়া যায়? এতোদিন শুনে ছিলাম, ধর্ম নয় ধর্মের অপব্যবহারকারী দায়ী, এবার শুনা গেল ধর্ম নয়, ধর্মের মাঝে বিদ্যমান রেসিজম দায়ী।
আমরা মুসলমান গরীব জাতি বলে আমাদের নামটা উল্লেখ করতে ভুলে গেলেন? আমাদের আল্লাহও স্বগর্বে ঘোষনা দিয়েছেন – একমাত্র ইসলামই মনোনীত গ্রহনযোগ্য ধর্ম।
আমি বলি- হে সাকী, তোর এই সুরাশুন্য পানপাত্র আমার হাতে আর তোলে দিসনা। ঐ দেখ, বোতল সহ আমি শারাব ছুঁড়ে ফেলেছি।
@আকাশ মালিক,
আপনার প্রথম প্যারাটা অসাধারন লেগেছে।
এটা আস্তিক নাস্তিক মুক্তমনা সবমণাদেরই ভালবাহবে অনুধাবন করা উচিত।
@আদিল মাহমুদ,
উপরে আপনি আমার প্রতি যে মন্তব্য করেছেন তার ‘জবাব’ লিংটি কাজ করছে না তাই এখানে এসে বলছি।
আমার প্রশ্নটি ছিলো -ধর্মপ্রাণ মানুষকি সমাজকে পেছন দিকে নিয়ে যাচ্ছে না? আপনি সমাজের জায়গায় সভ্যতাকে নিয়ে এসেছেন। যাই হোক, ধর্ম না থাকলে সমাজের বা সভ্যতার ক্ষতি হয়ে যাবে এটি একটি বদ্ধসংস্কার মাত্র। যেহেতু ধর্ম একটি কুসংস্কার মাত্র তাই এর দ্বারা মানুষের কল্যাণ হবে বা না থাকলে ক্ষতি হয়ে যাবে এ ধরণের চিন্তা অবান্তর।
ধর্ম যেহেতু মানুষেরই তৈরি তাই কখনো কেউ যদি ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষের কল্যাণজনক কিছু করে তবে তা ধর্মের নয় মানুষেরই সাফল্য –বিষয়টি স্মরণ রাখা উচিত।
?
যেসব তথাকথিত ধর্মে অবিশ্বাসীদের দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তারা মুক্তচিন্তক তো ছিলই না বরং ধর্মের মত অন্য কোনো মতবাদে অন্ধভাবে বিশ্বাস করত যে ধরণের অন্ধবিশ্বাসকে ধর্ম বলা যায়।
বন্ধু, বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবুন।বর্তমানে যে পরিবার ব্যবস্থা দেখা যায় তা মানব ইতিহাসে খুব একটা বেশি দিন আগের নয়। পরিবার না থাকলেই বরং সভ্যতা এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি। কারণ এতে করে মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবধান কমে যাবে। মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা ও দুর্নীতিপরায়নতার জন্য পরিবার ব্যবস্থা কম দায়ি নয়। আবহমান কাল থেকে নারীর যে দুর্দশা তা কি পরিবার ব্যবস্থার ফসল নয়? অদূর ভবিষ্যতে বর্তমান সময়ের মত পরিবার ব্যবস্থা থাকবে বলে আমার মনে হয় না।
যে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ধর্মের জুজু দেখাতে হয় তা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক সম্পর্ক নয়।
আইভি ম্যাডামের জবাবটি পাওয়া মাত্রই জানাবেন আশা করি। ভালো থাকুন।
@সৈকত চৌধুরী,
আইভি ম্যাডামও এখন তেমন কিছু আদৌ বলেছিলেন বলে মনে করতে পারছেন না, আমার ভুল হতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে এখানেই কারো কাছে শুনেছিলাম। খুজে পাওয়া বেশ দুরূহ, তবে পেলে আপনাকে জানাবো।
পরিবার বিহীন সমাজ ব্যাবস্তার কনসেপ্ট এই প্রথম শুনলাম আমি জানি না পরিবারের বিকল্প হতে পারে। আপনি উদাহরনসহ ব্যাখ্যা করলে সুবিধে হয়।
তবে পরিবার যে শুধু মানব সমাজেই দেখা যায় তা নয়, মানুষ ছাড়া অন্য সব প্রানীই যে লীভ টুগেদার নীতিতে চলে এমন নয়। বেশ কিছু প্রানী আছে যারা সারা জীবন পার্টনার চেঞ্জ করে না। অবশ্য ভাই বোন কনসেপ্ট মনে হয় না মানুষ ছাড়া আর কারো আছে। আমার জানামতে অন্য প্রানীদের ছোটবেলার পরেই ভাই বোন ধারনা চলে যায়।
আপনি জানলেন কি করে যে, রেসিজম-ই হল মানবতার বিরুদ্ধে সবচাইতে আদি শত্রু ?
– আসলে মানবতার সবচে’ আদি শত্রু হল(আমি মনে করি) তার অন্তরের কুপ্রবৃত্তি-লোভ,লালসা। আর আমার মতে, অন্তরের এই কুপ্রবৃত্তিকেই সামষ্টিক ভাবে শয়তান নামে অভিহিত করা হয়।
আসলে, আমাদের উচিত ছিলো খারাপ কাজের মানুষগুলোকে আলাদা না করে তাদের অন্তর থেকে তাদের শয়তানকে দূরীভূত করা এবং খারাপ মানুষ গুলোকে ভালো মানুষে রুপান্তরিত করা।
বংশ পরম্পরায়, অর্থাৎ শুধু যে জেনেটিকালি রেসিজম আমাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে তা আমি মনে করি না।আমার মতে, সমাজের মানুষ নানা সামাজিক রীতি তৈরী করে তার মাধ্যমে তাদের অন্তরের কুপ্রবৃত্তিকে চরিতার্থ করার মাধ্যমে রেসিজমকে সমাজে জিইয়ে রেখেছে। এক্ষেত্রে, প্রত্যক প্রজন্মই স্বতন্ত্রভাবে দায়ী।কারণ, মানুষ যদি জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে শয়তান নামক কুপ্রবৃত্তিকে ঝেটিয়ে বিদায় করে অন্তরে সৎ প্রবৃত্তি লালন করতে এবং তা ধরে রাখতে পারে তবে সে রেসিজম মুক্ত হতে পারে, জেনেটিকালি যতই তার মধ্যে রেসিজম প্রবেশ করুক না কেন।
তবে এর কারণ রাষ্ট্র, সমাজ বা গোত্র না- মানুষের স্বার্থ চিন্তা, লোভ এবং তার অন্তরে কুপ্রবৃত্তি লালনই মানুষকে রেসিজমের দিকে ধাবিত করেছে।
একদমই তাই।আমার মতে, মানুষের মাঝেই ঈশ্বর বাস করে। মানুষের মনুষ্যত্বই হল ঈশ্বর, যে নিজের মাঝে ঈশ্বরকে লালন করেছে তাঁর মাঝে কোনো রেসিজম থাকতে পারে না।
ধন্যবাদ।
@মুহাইমীন,
আপনার মত দিলে তো হবে না। শয়তান ইসলামের একটি উদ্ভট ও হাস্যকার ধারণা। কোরানে অনেকবার ‘শয়তান’ এর উল্লেখ আছে।সংগত কারনেই এর অত্যাধুনিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি এটি ইসলামের ধারণা নয়। ইসলামে ইশ্বরের যে ধারণা তার সাথে এটি খাঁপ খায় না। আপনি Abul Kasem এর A Complete Guide to Allah বইটি পড়ে নিতে পারেন। ধন্যবাদ
@সৈকত চৌধুরী,
শয়তান বলতে কোরানে মানুষের selfish desire কেই বুঝানো হয়েছে। কেউ যদি সমালোচনার মনমানসিকতায় না থেকে বোঝার চেষ্টা করত তা হলে বর্তমান অবস্হার সৃস্টি হতো না। হাদিস লেখকরা যা বলে গেছে তাই শেষ কথা না। তাদের কার্যকলাপের মধ্যেই তাদের শয়তানী উদ্দেশ্য ফুটে উঠেছে।
@আইভি,
এটি আপনি পেলেন কোথায়? শয়তান বলতে একটি অভিশপ্ত জ্বিন সম্প্রদায়কেই বোঝানো হয়েছে। ইসলাম শয়তান সম্পর্কে এ ধারণাই দিয়েছে। আধুনিক কালে যেহেতু এগুলো মানুষ খাচ্ছে না তাই এর আপডেটেড ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আপনি কি মনে করেন হাদিস বাদ দিয়ে দিলেই পার পেয়ে যাবেন? আল-লাট তাহলে মহম্মদকে পাটালেন কেন? হাদিস বাদ দিতে হবে- এ অহি পাবার জন্য হেরা গুহার মত এরকম কোন গুহায় গিয়েছিলেন কিনা জানতে ইচ্ছে করে।
কোরান কিন্তু প্রচুর নির্দোষ বিনোদনের ব্যবস্থা করে রেখেছে- পড়ে দেখুন।
শয়তানের যাই হোক একটা ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছেন। এবার ফেরেশতা, জ্বিন, পুলসিরাত, মিজান, বেহেশত, দোজখ, আরশ, কুরছি- এগুলোর দিকে তাকান।
সমালোচনার মানসিকতায় না তাকিয়ে অন্ধভাবে তাকাতে হবে, তাই তো। আর শয়তানের বর্ণনা তো বিশ্বাসীরাই দিয়েছে, কোন সমালোচক দেয় নি।
হাদিস লেখকদের শয়তানি উদ্দেশ্য ছিল? নাউজুবিল্লাহ। এতবড় আউলিয়াগণের উপর এই মন্তব্য আপনি করতে পারলেন?
@সৈকত চৌধুরী,
মানুষের মাঝে ঈশ্বরের বাস–হাঁ প্রচলিত হাদিস দ্বারা পরিচালিত ইসলাম এইভাবে ভাবে না, তবে মুহম্মদ (সাঃ) কর্তৃক প্রচারিত ইসলাম ভাবে। কোরানে আল্লাহর নানাগুনাবলীর কথা বলা আছে বা গুনাবলীর বর্ণনা আছে। এর পিছনেও কিছু কারণ আছে। এই physical world সরাসরি নির্দেশ পায় প্রাকৃতিক নিয়মের (natural law) মাধ্যমে, যা গ্রহনের বা ধারন ক্ষমতা প্রথম থেকেই গ্রোথিত থাকে। জীব-জন্তু এই নির্দেশ পায় তাদের দেয়া instincts এর মাধ্যমে, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম। মানুষের শরীরিক ক্রিয়াকান্ড নির্দেশ পায় অন্যান্য জীবের মতো কিন্তু মানুষের সত্তা, self or personality কোন সরাসরি নির্দেশ পায় না। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রম কেন? কেন একজন নবী বা রসূলের মাধ্যমে indirect guidance পাঠানো হয়? তার কারণ হচ্ছে মানুষকে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা দেয়া হয়েছে। নিজেকে উন্নয়নের (development) চরম শিখরে পৌঁছানো সম্ভব তখনই যখন আল্লহর বা শক্তিময়ের এই গুনাবলীগুলোকে নিজের ভিতর ধারন করা যায়। আর সেই কাজটি করার উপযুক্ত ক্ষেত্র হচ্ছে সামাজিকভাবে বসবাসের মাধ্যমে। যখনই আমরা সমাজে বসবাস করতে যাব তখনই আমরা আমাদের দয়া, মমতা, সহনশীলতা, সৌজন্যতা, পরোপকারীতা, ন্যায়বিচার গুনাবলীগুলো দেখাতে পারব বা চর্চা করতে পারব। এতে যেমন সমাজ ও মানুষের যেমন উপকার করে যাব তেমনি আমরা আল্লাহর এই বৈশিষ্টগুলো নিজেদের মধেয় প্রস্ফূটিত হতে দেখব। ব্যক্তি উন্নয়ন এবং সামাজিক উন্নয়ন আলাদা আলাদা ভাবে ভাবা হয়না বরং দু’য়ের সমন্বয় একত্রে প্রয়োজন।
@আইভি,
কিভাবে? কোরান থেকে রেফারেন্স দেন। বাউলদের দর্শনকে ইসলামে না ঢুকালেও চলতো।
বাদবাকি যা লিখেছেন তা আপনি নিজেই ভালো করে পড়ে দেখেন- কি লিখেছেন। কোন কিছুর লজিকেল ব্যাখ্যা এভাবে হয় না।
না, সৈকত চৌধুরীর সাথে একমত হতে পারলাম না। হ্যা, এটা ঠিক যে ধর্মপ্রাণ মানুষরা ধর্ম সম্পর্কে তাদের ভুল ধারনার কারনে,মানব ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে, সমাজকে অবশ্যই পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে; তথাপি, সব ধর্মপ্রাণ মানুষই যে মানব ধর্ম(মনুষ্যত্ব) সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখে না সেটা ঠিক না।
ধন্যবাদ।
@মুহাইমীন,
একমত পোষণ না করার জন্য ধন্যবাদ। আমি সবসময়ই আন্তরিকভাবেই চাই কেউ আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করুক।
@সৈকত চৌধুরী,
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
প্রথম প্যারাটায় একটু সরলীকরণ হয়ে গেছে বলে মনে হয়।
আমাদেরকে সবার আগে বাস্তববাদি হতে হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষকি সমাজকে পেছন দিকে নিয়ে যাচ্ছে না?
ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী,
এটা একটু বিতর্কিত ব্যাপার।
খুব সাধারন যুক্তি; সভ্যতা তো কেবল এগিয়েই চলেছে, পিছিয়ে চলেছে খুব বড় ধরনের নৈরাশ্যবাদী ছাড়া কেউই মনে হয় বলবে না। ধার্মিকরা তো সভ্যতার আদিঅন্ত থেকেই আছে।
ধর্মকে যদি অন্ধবিশ্বাস বলে মনে করেন; তাহলে যেমন ধরেন ইসলাম, আমি যতটূকু জানি আত্তে ইসলামে আল্লাহর অস্তিত্ত্ব ছাড়া আর কিছু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ বা যুক্তিবাদী হতে নিষেধ করা হয়নি (যদিও অনেকে জেনে বা না জেনেও তেমন অনেক কিছু দাবী করেন)। কোন হাদীসে কি বলল, বা কোরানের ব্যাখ্যা কে কিভাবে করল সেসব কূটকচালি ছাড়া শুধু এ যুক্তিতে কি বলা যায় না যে ইসলাম আলাপ আলোচনা বা যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে বাস্তববাদী হতে বলেছে?
আপনি মনে করেন?
@আদিল মাহমুদ,
না, আদিল সাহেব।সভ্যতা কেবল এগিয়ে চলে নি। এটি অনেকবার পেছনের দিকে চলে গেছে, কখনোবা থেমে গেছে আবার কখনো মন্থর গতিতে, কখনো দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ধর্ম সবসময়ই সভ্যতার গতি উল্টে দিকে প্রবাহিত করতে চেয়েছে। উদাহরণ হিসেবে আমরা ইসলামকে আনতে পারি । মুহাম্মদ কিভাবে একটি বিকাশমান সভ্যতাকে পেছনের দিকে নিয়ে গেছেন তা মুক্তমনার ই-বুক ‘যে সত্য বলা হয় নাই’ তে পাবেন।
আবার আপনি ধর্মবাদিদের হাতে হাইপেশিয়ার মর্মান্তিকভাবে নিহত হওয়া ও আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি ধ্বংস হওয়াকে সভ্যতার কোন দিকে যাওয়া বলে মনে করেন?
ধর্মবিশ্বাসীদের সভ্যতায় যে অবদান তা ধর্মের সাফল্য নয়, কারণ এর উৎস ধর্ম নয়। অতীতে যেসব ধর্মবিশ্বাসী সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তারা অন্তত গোঁড়া ছিলেন না বলেই ধর্মের বাইরে ভাবতে পেরেছেন।
কিছুসংখ্যক চিন্তাবিদ ধর্মের বাইরে এবং ধর্মের বিরুদ্ধে ভাবতে পেরেছিলেন বলেই ইউরুপে এনলাইটেনমেন্ট ও রেনেসা সম্ভব হয়েছিল।
ভাই, অন্ধবিশ্বাস ছাড়া ধর্ম হয় না। কোরানে ‘আল্লাজিনা ইয়ু’ মিনুনা বিল গা’ইবি’ বলে গাইবের বা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাসকে কেনো গুরুত্ব দেয়া হয়েছে? এটা কি অন্ধবিশ্বাস না?
ইসলামে আল্লাহর অস্তিত্ত্ব ছাড়া আর কিছু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ বা যুক্তিবাদী হতে নিষেধ করা হয়নি- এটা আপনি জানলেন কোথা থেকে? আপনি এ কোতুকটি এখানে না করলেও পারতেন। ইসলামে আল্লাহর অস্তিত্ত্ব ছাড়াও আরো অনে-ক কিছু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ বা যুক্তিবাদী হতে নিষেধ করা হয়েছে। দয়া করে কোরান ভালো করে পড়ুন। কোরান, রসুল, পরকাল, ফেরেশতা, জ্বীন এগুলোতে সংশয় প্রকাশ করলে ইমান থাকবে? তাহলে আহমদীয়ারা(কাদিয়ানি) দোষ করলো কি? এত প্রেম ইসলামে আসলো কবে?
আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করতে বা যুক্তিবাদী হতে নিষেধ করা হলো কেন? কেন এটি মুক্তভাবে চিন্তা করা ছাড়াই বিশ্বাস করে ফেলতে হবে?
আপনাকে ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী,
মানব সভ্যতার উথথান পতন হয়েছে সত্য, তবুও গ্রাফিক্যালি চিন্তা করলে কিছু ড্রপ থাকলেও সামগ্রীকভাবে সূচকের উর্ধ্বগতিই চোখে পড়বে। মানব সভ্যতার অনেক বড় ক্ষতি ধর্মের নামে করা হয়েছে কোন সন্দেহ নেই, তাই বলে ধর্ম না থাকলে যে কোন ক্ষতি হত না তাই বা কি করে বলা যায়? কারন ধর্মীয় বা ধর্মবাদীদের দ্বারা সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও ধর্মে অবিশ্বাসীদের দ্বারাও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কি বলেন?
ধর্মের শৃংখল না থাকলে পারিবারিক বন্ধন অতিমাত্রায় শিথিল হয়ে সভ্যতা কি মারাত্নক বিপর্যয়ের মাঝে পড়তে পারে না? আমি বলছি না এটা নৈতিকতা ইস্যু। আমি নিশ্চিত নৈতিকতায় ধর্মের কোন সরাসরি ভূমিকা নেই বা অতি অল্প। বলতে পারেন যে নাস্তিক মানেই কোন পারিবারিক জীবন নেই, বাধাধরা স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার নেই এটা মহাভুল। আমিও জানি আসলেই তাই, লাখ লাখ নাস্তিক দিব্যি আমাদের থেকেও ভাল পারিবারিক জীবন উপভোগ করছেন। তবে সমস্য হবে মনে হয় কয়েক জেনারেশ্ন পরে। আপনি কি বলেন?
আল্লাহর অস্তিত্ত্ব ছাড়া আর সব কিছুই আলোচনার জন্য খোলা এটা আগেই শুনেছিলাম, আইভির কাছে এখানেও শুনেছি, কোরানের ঠিক কোন যায়গায় আছে জানি না, ওনাকে জিজ্ঞাসা করেছি দেখি কি বলেন।
শিয়া সুন্নী কাদিয়ানী হেনতেন এসব কিন্তু কোরানে কোথাও কেউ লিখেনি, এসবই ধর্মকে নিজ স্বার্থে রাজনীতিতে টেনে আনার চরম কুফল, আর সাধারন মানুষের ধর্মীয় নেতাদের প্রতি অন্ধভক্তি। দূঃখ হল আমাদের শিক্ষা এখনো পুরো হয়নি।
@আদিল মাহমুদ,
আল্লাহর অস্তিত্ত্ব সহ যে সকল জিনিষের উপর সন্দেহ প্রকাশ করলে, অন্যকথায় যে সকল জিনিষের উপর যুক্তিহীন ভাবে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করলে আপনার ঈমান থাকবেনা, আপনি মুসলমান হতে পারবেন না সেগুলো হলো- আমানতু বিল্লাহী, ওয়া মালা-ইকাতিহী, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রাসুলিহী, ওয়াল ইয়াওমিল আখেরী, ওয়াল কাদরী খাইরিহী, ওয়া শাররিহী মিনাল্লাহী তায়ালা, ওয়াল বা-সী বা-দাল মাউত।
আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর উপর, তার ফেরেস্তাদের উপর, তার রাসুলগণের উপর, তার কিতাব সমুহের উপর, ভাল মন্দ আল্লাহ প্রদত্ত (অদৃষ্টের) উপর আর মৃত্যুর পরে আখেরাত বা বিচার দিনের উপর।
নিঃসন্দেহে, যুক্তিহীন ভাবে, বিনা শর্তে এই শপথনামা উচ্চারণকারীর নাম মুসলমান।
ভাল এবং মন্দ দুনুটাই আল্লাহ প্রদত্ত, অদৃষ্টে যা লিখা আছে তা-ই ঘটে, অদৃষ্টের উপর মানুষের হাত নেই। এবার যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে ইসলামকে বাস্তববাদী করুন।