শ্রীচৈতন্য বর্তমান হিন্দু বিশেষ করে বৈষ্ণবদের কাছে একটি মহান নাম। অনেক তথাকথিত “মুক্তমনা” হিন্দুও তার নামে পাগল হয়ে যান এবং নানা মুখে তার গুণকীর্তন করতে থাকেন। তিনি নাকি বিশাল দয়ালু ছিলেন,প্রেমধর্মের প্রচারক ছিলেন,অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার ছিলেন, হিন্দু মুসলমানের মিলন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এর সবই যে পুরোপুরি মিথ্যে বা তিনি খুব খারাপ মানুষ ছিলেন তা নয়। তবে এখানে আমি কয়েকটা ঘটনা তুলে ধরে দেখানোর চেষ্টা করবো যে প্রচলিত শ্রীচৈতন্য ঐতিহাসিক শ্রীচৈতন্য থেকে অনেকটাই আলাদা এবং ভক্তিবাদী রূপের পাশাপাশি তার ছিল চরম সংকীর্ণ ও সাম্প্রদায়িক রূপও।
হরিদাসঃ
হরিদাস মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং শ্রীচৈতন্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন। শ্রীচৈতন্যের ভক্তদের মাঝে তিনি “যবন হরিদাস” নামেই পরিচিত ছিলেন। বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করার অপরাধে “মুলুকের পতি” অর্থাৎ সুলতান বা রাজকর্মচারী তাকে বলেনঃ
“কত ভাগ্যে দেখ তুমি হয়াছ যবন।
তবে কেন হিন্দুর আচারে দেহ মন।।
আমরা হিন্দুরে দেখি নাহি খাই ভাত।
তাহা তুমি ছাড় হই মহাবংশ জাত।।”
-চৈতন্যভাগবত,আদিখণ্ড,১৪শ অধ্যায়।
তিনি হুকুম দেন হরিদাসকে বাইশ বাজারে নিয়ে গিয়ে বেত্রাঘাতে হত্যা করতে হবে। হরিদাসকে সকলের সামনে কঠোর বেত্রাঘাত করা হয় কিন্তু তাতেও তিনি তার সংকল্প থেকে টলেন না। পরে বিরক্ত হয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ইনি চৈতন্যের একনিষ্ঠ ভক্ত হন ও আজীবন চৈতন্যের স্নেহধন্য ছিলেন। এ ছাড়া আরেকজন হরিদাসও চৈতন্যের ভক্ত ছিলেন। তাকে “ছোট হরিদাস” বলা হয়। তিনিও চৈতন্যের খুব বড় ভক্ত ছিলেন কিন্তু চৈতন্যই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ান। কি জন্য শুনতে চান? শুনুন তবে। চৈতন্য নিয়ম করেছিলেন যে তার ভক্তরা কোন অবস্থাতেই নারীর সাথে কথা বলতে পারবে না। হরিদাস একবার চৈতন্যের জন্য এক বৃদ্ধা ভক্তিমতী মহিলার কাছ থেকে ভাল মানের চাল চেয়ে এনেছিলেন। এই নিয়মভঙ্গের অপরাধে হরিদাসকে তিনি ত্যাগ করেন। তিনি বলেনঃ
“হরিদাস কইল প্রকৃতি সম্ভাষণ।
হেরিতে না পারি মুই তাহার বদন।।”
অন্যান্য ভক্তগণের অনুরোধ উপরোধেও তিনি বিন্দুমাত্র টললেন না। বললেন”মানুষের ইন্দ্রিয় দুর্বার,কাষ্ঠের নারীমূর্তি দেখিলেও মুনির মন চঞ্চল হয়। অসংযত চিত্ত জীব মর্কট বৈরাগ্য করিয়া স্ত্রী সম্ভাষণের ফলে ইন্দ্রিয় চরিতার্থ করিয়া বেড়াইতেছে।” এ কথা শুনে মনের দুঃখে হরিদাস প্রয়াগে ত্রিবেণীতে ডুবে আত্মহত্যা করেন।
-বাংলা দেশের ইতিহাস(মধ্য যুগ),৫ম সংস্করণ,পৃষ্ঠা ২৬০।
নারী ও যৌনতা সম্পর্কে প্রায় প্রত্যেক ধর্মগুরুর মধ্যেই এক ধরণের অতি বাড়াবাড়ি ও পাগলামি লক্ষ্য করা যায়। শ্রীচৈতন্যও এর ব্যাতিক্রম নন, চৈতন্যের জীবনীগ্রন্থগুলি থেকে নারী সম্পর্কে এমন আরও বহু অপমানকর ও বৈষম্যবাদী উক্তি তুলে ধরা সম্ভব।আর এই পাগলামির শিকার হতে হয় হরিদাসকে। দয়ালু ও ভক্তের প্রতি সহানুভূতিশীল চৈতন্যের পরিবর্তে এখানে আমরা পাই কঠোর,আত্মম্ভরি ও বদমেজাজি চৈতন্যকে।
সাম্প্রদায়িক শ্রীচৈতন্যঃ
বলা হয়ে থাকে শ্রীচৈতন্য নাকি অসাম্প্রদায়িক ও উদার চেতনার অধিকারী ছিলেন। এ কথা মোটেও সত্য নয়। তিনি হিন্দুদের জাতপ্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন কারণ জাতপ্রথার কড়াকড়ির কারণে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছিল। তিনি চেয়েছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের বিকাশ ঘটিয়ে এই ধর্মান্তরণ প্রক্রিয়া রোধ করতে এবং মুসলিমরাও যেন বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করে হিন্দু সমাজে প্রবেশ করতে পারে সেই ব্যাবস্থা করতে। তাই দেখতে পাই নিচুবর্ণের হিন্দুদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল হলেও মুসলিমদের তিনি যবন, ম্লেচ্ছ ও অস্পৃশ্য বলেই ঘৃণা করতেন। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে।
তখনকার দিনে মুসলমানের স্পর্শ করা খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে হিন্দুরা জাতিচ্যুত হত। চৈতন্যচরিতামৃত থেকে জানা যায় যে সুলতান হোসেন শাহ বাল্যকালে সুবুদ্ধি রায়ের অধীনে চাকরি করতেন এবং কর্তব্য কাজে অবহেলার জন্য সুবুদ্ধি তাকে চাবুক মেরেছিলেন। সুলতান হবার পরে হোসেন শাহের স্ত্রী এই ঘটনা শুনে সুবুদ্ধিকে হত্যা করার পরামর্শ দেন। সুলতান এতে অসম্মত হলে তার স্ত্রী তাকে সুবুদ্ধির জাতি নষ্ট করতে বলেন। এরপর সুলতান মুসলমানের পাত্র থেকে পানি খাইয়ে তার জাতি নষ্ট করেন। সুবুদ্ধি কাশীতে গিয়ে পণ্ডিতদের কাছে প্রায়শ্চিত্তের বিধান চান। একদল বলেন গরম ঘি খেয়ে প্রানত্যাগ করতে আর আরেকদল বলেন যে অল্পদোষে এরকম কঠোর শাস্তির দরকার নেই। এ ঘটনা চৈতন্য শুনতে পান ও সুবুদ্ধিকে বলেন তুমি বৃন্দাবনে গিয়ে “নিরন্তর কর কৃষ্ণনাম সংকীর্তন।” তিনি বলেন যে এতে সুবুদ্ধির পাপক্ষয় হবে ও তিনি কৃষ্ণের চরণ পাবেন। চৈতন্য যদি সত্যিই অসাম্প্রদায়িক হতেন তাহলে তিনি মুসলমানের পাত্রের পানি খাওয়াকে পাপ ভাবতেন না ও পাপ লাঘবের উপায়ও বাতলাতেন না।
এছাড়া দেখি চৈতন্য নিজের জীবনেও মুসলমানের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতেন। নবদ্বীপের মুসলিম কাজী চৈতন্যের গ্রাম সম্পর্কের মামা হতেন এবং মাঝে মাঝে তাদের বাড়িতে আসতেন। তবে এই “কাজী মামা” চৈতন্যের বাড়িতে আসলে যে আসনে বসতেন তা গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে শোধন করতে হতো,পানি চাইলে যে পাত্রে পানি দেয়া হতো তা ভেঙে ফেলা বা শোধন করা হতো। আর খাবারের তো প্রশ্নই ওঠে না। নিমাই পণ্ডিত(চৈতন্যের বাল্য নাম) “কাজী মামার” বাড়ি গিয়ে কিছু খেলে বা পান করলে জাতিচ্যুত হতেন।
-বাংলা দেশের ইতিহাস(মধ্য যুগ),পঞ্চম সংস্করণ,পৃষ্ঠা ৩২৫-৩২৬।
এতে আর যাই হোক,মামা ভাগনের মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয় না। এসব কথা বেশ খোলাখুলিভাবেই চৈতন্যের জীবনীকারেরা উল্লেখ করেছেন। নিম্নবর্ণের হিন্দুদের সাথে উদারভাবে মিশলেও মুসলমানদের থেকে তিনি দূরেই থাকতেন। আসলে চৈতন্য যা করেছেন তা মূলত সমাজসংস্কার ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম। জাতিভেদের কড়াকড়ি ও জাতি নষ্টের কারণে বহু হিন্দু ধর্মান্তরিত হচ্ছিল। এতে হিন্দু সমাজ আস্তে আস্তে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছিল। এটা ঠেকানোর জন্যই চৈতন্যের বৈষ্ণব আন্দোলন হাজির হয়েছিলো। এর মধ্যে কোন উদার, বৈশ্বিক মানবতাবাদ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
নির্যবন করো আজি সকল ভুবনঃ
চৈতন্যকে তার ভক্তরা প্রেম ও ক্ষমার অবতার হিসেবে দেখেন। কিন্তু ইতিহাস বলে অন্য কথা। নবদ্বীপের মুসলিম কাজীর হুকুমে যখন কীর্তন গান নিষিদ্ধ হল ও বৈষ্ণবদের ওপর বিষম অত্যাচার আরম্ভ হল তখন অনেক বৈষ্ণব ভয় পেয়ে অন্যত্র যাওয়ার প্রস্তাব করলেন। কিন্তু চৈতন্য বললেনঃ
“ভাঙ্গিব কাজীর ঘর কাজীর দুয়ারে।
কীর্তন করিব দেখি কোন কর্ম করে।।
তিলার্ধেকও ভয় কেহ না করিও মনে।”
চৈতন্যের আদেশে তার অনুচরেরা যে কাজীর ঘর ও ফুলের বাগান ধ্বংস করেছিল বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবত গ্রন্থে তার বিস্তৃত বিবরণ আছে। কিন্তু বৈষ্ণবদের প্রেমসুলভ মনোভাবের সাথে চৈতন্যের এই উদ্ধত ও হিংসাত্মক আচরণ সুসঙ্গত হয় না সম্ভবত এই কারণে এবং কিছুটা মুসলিম রাজা ও রাজকর্মচারীর ভয়ে তারা এই ঐতিহাসিক ঘটনাটিকে স্বীকৃতি দেন নি এবং বিকৃত করেছেন। বৃন্দাবন দাস ছিলেন গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী-কাউকে ভয় পেতেন না। কিন্তু আরেক চৈতন্য চরিতকার মুরারি গুপ্ত ছিলেন গৃহী। তিনি সুলতান হোসেন শাহের ছেলে নসরত শাহের আমলে চৈতন্যের জীবনী লেখেন। কাজীর ব্যাপার ঘটেছিল তার বাবার আমলে। সুতরাং যদিও বৃন্দাবন দাস লিখেছেন যে কাজীর ঘর ভাঙ্গার ব্যাপারে মুরারি গুপ্ত সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু মুরারি গুপ্ত এই ঘটনার বিন্দুমাত্র উল্লেখ করেননি। সমসাময়িক অন্যান্য চৈতন্য জীবনিকারেরাও এই ঘটনা হয় এড়িয়ে গেছেন নয়ত কোনমতে দায়সারাভাবে উল্লেখ করেছেন। ঘটনার প্রায় একশ বছর পরে বৃদ্ধ কৃষ্ণদাস কবিরাজ তার বিখ্যাত গ্রন্থ “চৈতন্যচরিতামৃত” রচনা করেন। তখন আকবরের রাজ্য কেবল শেষ হয়েছে। সুতরাং মুসলিম সরকারের ভয় কম। এই কারণে তিনি কাজীর ঘটনা,তার ঘর, বাগান ধ্বংসের ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন কিন্তু তিনি লিখেছেন এই হিংসাত্মক ব্যাপারে চৈতন্যের কোন হাত ছিল না বরং এটা কয়েকজন উদ্ধতপ্রকৃতি লোকের কাজ। তার মতে চৈতন্য নাকি খুব ভদ্রভাবে কাজীকে অনুরোধ করেছিলেন যাতে কীর্তন বন্ধ না করা হয়। কিন্তু বৃন্দাবন দাসের চৈতন্যভাগবতে স্পষ্ট আছেঃ
“ক্রোধে বলে প্রভু আরে কাজী বেটা কোথা।
ঝাঁট আন ধরিয়া কাটিয়া ফেলো মাথা।।
প্রাণ লয়া কোথা কাজী গেল দিয়া দ্বার।
ঘর ভাঙ্গ ভাঙ্গ প্রভু বলে বার বার।।”
ভাঙ্গিলেক যত সব বাহিরের ঘর।
প্রভু বলে অগ্নি দেহ বাড়ির ভিতর।
পুড়িয়া মরুক সব গণের সহিতে।
সর্ব বাড়ি বেড়ি অগ্নি দেহ চারি ভিতে।।”
শ্রীচৈতন্য আরও বলেছিলেন”নির্যবন করো আজি সকল ভুবন।”
-বাংলা দেশের ইতিহাস(মধ্য যুগ),পঞ্চম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ২৬২।
প্রেমধর্মের প্রচারক শ্রীচৈতন্য চেয়েছিলেন পৃথিবীকে মুসলমানশূন্য করতে! কৃষ্ণদাসের চৈতন্যচরিতামৃতে কাজীর সম্পর্কে নানা অলৌকিক ও আজগুবি কাহিনী আছে যেমন চৈতন্যের কাজীর সাথে দেখা করা,তার কাছে কীর্তন করার অনুমতি চাওয়া,কাজীর অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা ও সে কারণে কীর্তনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা,কাজীর বৈষ্ণবধর্মে ভক্তি ইত্যাদি। কিন্তু সমসাময়িক বৃন্দাবনদাসের গ্রন্থে এসব অস্বাভাবিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ কাহিনীর কিছুই নেই। একটু যুক্তি খাটালেই বোঝা যায় আসল ঘটনা কি ও পরে তা কি হয়েছে। এখানে কয়েকটি ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার যে চৈতন্য যে কাজীর বৈষম্যমুলক নিয়মের প্রতিবাদ করেছিলেন বা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন তার সমালোচনা আমি করছি না। আমি দেখাতে চেয়েছি যে সময়ে সময়ে চৈতন্য খুবই নিষ্ঠুর হতে পারতেন এমনকি তিনি কাজীকে সপরিবারে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন। কাজীর ঘর ও বাগান ধ্বংসও তার সরাসরি নির্দেশেই হয়েছিলো। কাজী কোনমতে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান বলে প্রাণে বেঁচেছিলেন নইলে চৈতন্য যে রুদ্ররূপ সেদিন ধারণ করেছিলেন তাতে কি হত বলা মুশকিল। পৃথিবীকে নির্যবন করার সেই অভিযান হয়ত কাজীকে হত্যার মধ্য দিয়েই শুরু হত।
ভক্তরা তাদের গুরুকে দেখতে চান শুধুই ভাল গুণের সমাহার হিসেবে। তাই তাদের প্রচারণায় ধর্মগুরুদের অন্ধকার দিকগুলি প্রায়ই ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু প্রগতির অন্যতম শর্ত হল সবকিছুর নির্মোহ বিশ্লেষণ ও সত্যানুসন্ধান। ভাল মন্দকে পাশাপাশি দেখলেই তো বোঝা যাবে কোনটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য আর কোনটা বর্জনযোগ্য। ভাল দিকগুলি দেখে আমরা শিখবো ও উৎসাহ পাবো আর খারাপ দিকগুলিকে এড়িয়ে চলবো। এটাই সভ্যতার বিকাশের পথ। শেষ করছি হুমায়ুন আজাদের আমার একটি প্রিয় উক্তি দিয়ে-
“অনুরাগী আমি অনেকেরই তবে ভক্ত কারো হতে পারিনি।”
পাঠক গন একটা কথা জেনে রাখুন, পূরান কে কপি করে যারা কুরান লিখতে পারে তাদের থেকে এটাই কাম্য মহাপ্রভু নামে,,,,,,,, ছি:
চাঁদ কাজি ও শ্রী চৈতান্য বিষয়ে যা লিখলেন তার সবটা কি ঠিক ? বদ্বীপে বামন পুকুরে চাঁদ কাজীর সমাধির উপর মহাপ্রভু যে চাপাফুল গাছ পুতে দিলেন , তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেতা কি ? ছোট হরিদাসকে যুবতী নারী দুর্বলতার কারনে অতিরিক্ত চাল দান দিতেন । তার অনুসারীরা যাতে সমাজে বদনাম ও বিপথে না যায় তার জন্য একটু করাই ছিলেন । তার এক অনুসারি তান্ত্রিকদের পাল্লায় পরে মদ খাওয়া শুরু করে ছিলেন । যা শাসন করে অর্থাৎ লাথি মেরে ফেলে দিয়ে , কাধে তুলে মদের আসর থেকে নিয়ে এসেছিলেন । পরীক্ষায় ফেল করলে ছেলে মেয়েদের অনেক সময় বাবা মা বকাবকি করেন । অনেক সময় ছেলে মেয়েরা আত্ম হত্যা করে । তাহলে কি আপনি বলবেন মরার জন্য বাবা মা সন্তান দের বকেন ? আপনি মুল ঘটনার কিছুটা বিকৃতি ঘটিয়েছেন । কিছুটা সত্য গোপন বা নিজের মতো করে ব্যাখা করেছেন ।
এগুলো নির্বোধ ও মূঢ় লোকের যুক্তি । নবাব কর্তৃক নিযুক্ত কাজির ঘর বাড়ি ভাঙচুর হল , যারা একাজ করলেন তাঁরা নাকি গৃহী হওয়ার জন্য মুসলমান নবাবের ভয়ে কোন লেখায় লিখলেন না। উল্লেখ করলেন না । ছাগলের যুক্তি ছাড়া আর কি হতে পারে ? এটা অবশ্য লেখকের ক্ষেত্রে হতে পারে । তিনি বিয়ের সুবাদে নিবীর্য হতে পারেন । যিনি নিজে যেমন তিনি অন্যকে তেমন ভাবেন । আর ছোট হরিদাসের ক্ষেত্রে – একথা বলা দরকার যে, তিনি শাস্ত্রবিহিত সন্ন্যাসজীবন পালন করতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন । তাই ছোট হরিদাসকে তাঁর স্বভাব অনুযায়ী সংসার জীবনে প্রবেশ করতে বলেছিলেন । কিন্তু ছোট হরিদাস তা না করে সন্ন্যাস গ্রহন করে মহাপ্রভুর সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন , শাস্ত্র অনুযায়ী সন্ন্যাসের যে নিয়ম প্রচলিত ছিল সেগুলির একটি হল নারীসঙ্গ বর্জন করা । তাই সন্ন্যাসী মহাপ্রভু ছোট হরিদাসের সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন । এতে কোন নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পায় না । ছোট হরিদাস মহাপ্রভুর পরিমণ্ডল থেকে চলে গিয়ে তাঁর নিজের মত থাকতেই পারতেন । প্রেমের অর্থ এই নয় যে খুনীকে বার বার খুন করা সত্ত্বেও আদর করতে হবে । যারা দুষ্কৃতি তাদের প্রতিরোধ করে ঈশ্বর ভক্তদের রক্ষা করা ও ভক্তদের মহিমা ও ঈশ্বরের নাম সংকীর্তন প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর ব্রত । এটা করতে গিয়ে অনাবশ্যক তিনি কাকেও আঘাত করেন নি । যারা জড় বুদ্ধি সম্পন্ন নিন্দুক তাঁরা এগুলিকে অন্য ভাবে দেখেন ।
ভক্তিবাদী হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহনের কারনে আমার বৈষ্ণবদের সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা আছে। বৈষ্ণবেরা যখন কোন হিন্দুদের দ্বারা আমন্ত্রিত হয় সংকীর্তন করার জন্য তখন তাদের জন্য আলাদা চুলায় রান্না করা হয়। এদের অন্ন যদি কেউ (যে বৈষ্ণব নয়) ছুয়ে দেয় তাহলে তারা সেটা আর খায় না (যে ছুয়েছে তাকে কি পরিমান অপমানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় সেটা বলাই বাহুল্য! )।
@বিশ্বজিত দে, বৈষ্ণবেরা শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদিত প্রসাদ ছাড়া অন্ন গ্রহন করেন না । ভগবানকে নিবেদন ভক্তই করতে পারেন । যিনি শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত তিনি সেই ভোগ রান্নার অধিকারী । এবং সেই রান্না শুদ্ধাচারে হওয়া বাঞ্ছনীয় । যদি কোন ভক্ত শুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন থেকে সেই রান্না ছুয়ে ফেলেন তাহলে নিশ্চয় বৈষ্ণবেরা তা শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে গ্রহন করেন । এটা তাদের নিয়ম । আর যদি কেউ অপরিচ্ছন্ন থেকে রান্না ছোঁয় তবে তা বর্জন করাই উচিত । কেন শুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন ও ভক্ত হয়ে কি যন্ত্রণা বোধ হয় ? যদি শুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন ও ভক্ত হয়ে থাকতে আপত্তি থাকে তবে বৈষ্ণবদের সঙ্গে নাই বা গেলেন ? অদের থেকে দূরে থেকে নিজের মত থাকুন না ।
চৈতন্যদেবতো আবার আমাদের বিশিষ্ট ইসলামী কমিউনিস্ট আল্লামা বর্বাদ মাজার লক্ষ্মীনারায়নপুরীর ঠাকুর। তিনি মাঝে মধ্যে চৈতন্যদেবরে নিয়া জামাতে নামাজও পড়েন শুনছি।
একটা কথাই মনে পড়ছে, “ধর্মের কল বাতাসে নড়ে”… আর সেই কল জেগে উঠলে ধর্ম নাশ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা মনে পড়ছে… “গোপন কথাটি রবে না গোপনে…”
কারণ তারা ব্রাহ্মণ। এবং কট্টরপন্থী। তাদের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বৈষ্ণব মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু বর্ণবাদ ব্যতীত কি ব্রাহ্মণের স্বার্থ উদ্ধার হবে? যে হিন্দুধর্মে ব্রাহ্মণের স্বার্থ উদ্ধার হবে না তার তো কোন দরকার নেই। এবং সে মতবাদ প্রচারকারীরও কোন দরকার নেই।
কিন্তু তা বলে চৈতন্যের সাম্প্রদায়িকতাকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই।
একটি কথা বলে রাখি, তা হলো হিন্দু সংগঠন মাত্রই কমবেশী সাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িকতার মাত্রা হিন্দুদের মধ্যে অন্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি।
@আলোকের অভিযাত্রী, আমি মোবাইল ইউসার । তাই এখানে প্রোফাইল খোলা সম্ভব হচ্ছেনা । আমাকে যদি কোন মেইল আইডি দেন তবে আমি মোবাইল থেকে লিখে দেব। তারপর অনুগ্রহ করে যদি কেউ এখানে প্রকাশ করে তবে খুব ভাল হবে। [email protected]
@প্রজাপতি,
মুক্তমনায় প্রোফাইল খুলেই লিখে ফেলা যায় না। নিয়মিত মন্তব্য করলে ও লেখা পাঠালে একসময় সদস্য করে নেয়া হয়। আমার মেইল আইডি আমার প্রোফাইলে দেয়া আছে। তারপরও বলছি। [email protected]. আপনার লেখা পেলে খুশি হব। তবে লেখা প্রকাশ করা তো আসলে এডমিনের উপর নির্ভর করে তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না ভাই। (F) (F)
@প্রজাপতি,
[email protected] এই ঠিকানায় লেখা পাঠান এবং cc করুন [email protected] এই ঠিকানায়।
শ্রীচৈতন্যের মৃত্যুর ব্যাপারে ভেবেছিলাম এই পোস্টে আলোচনা করব। যাহোক আপনি যখন পোস্ট দিবেন তখন ওই পোস্টেই আলোচনা করব। সেটাই বোধহয় ভাল হবে।
বইয়ের নাম:
কাহাঁ গেলে তোমা পাই > সরস্বতী প্রকাশনা, ১৩৮৫ বাংলা
শ্রীচৈতন্য: অনন্ত জীবনের সত্যান্বেষণ। >সুবর্ণ প্রকাশনী, ১৯৯০
সাপ্তাহিক বর্তমান, ১০ই এপ্রিল ২০০৪ এর প্রকাশিত অসীম চট্টোপাধ্যায়, সুভাষকুমার মুখোপাধ্যায়, আচার্য সুনীতিকুমার মুখোপাধ্যায়, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, অমূল্যচন্দ্র সেন এর লেখা।
ডঃ নীহাররন্জন রায় ৫/৮/১৯৭৬ সালে পুরীর আনন্দময়ী আশ্রমের ডঃ জয়দেব মুখোপাধ্যায় কে চিঠিতে লিখেছিলেন, “ঐ গুমখুনের সমস্ত ব্যাপারটাই একটা বহুদিনের চিহ্নিত বহুজন সমর্থিত চক্রান্তের ফল।”
চৈতন্যের মৃত্যু নিয়ে যারাই সত্যসন্ধানে গবেষণামূলক কাজ করেন তাদের মধ্যে অমূল্যচন্দ্র সেন ব্যাক্তিগত লান্হনার শিকার হন, ১৭/৪/১৯৯৫ তে জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের শোচনীয় মৃত্যু হয়।
দুর্গাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নীলাচলে থাকাকালীন চৈতন্যকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল । গোবিন্দ বিদ্যাধর চৈতন্যের অপসারণ চেয়েছিলেন । জগন্নাথ মন্দিরের দ্বাররক্ষক দীনবন্ধু প্রতিহারী চৈতন্যকে হত্যা করেছিলেন ।”
@প্রজাপতি,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আপনার এই ব্যাপারে বেশ পড়াশোনা আছে বোঝাই যাচ্ছে। রেফারেন্সও দিয়েছেন প্রচুর। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে মুক্তমনায় আপনার কোন লেখা দেখলে খুশি হব। ভাল থাকুন। (F) (F)
মুক্তমনাতে আমরা সব সময় সত্য জানতে এবং পড়তে চাই । মহাপ্রভুকে হত্যা করা হয়েছিল> অধিকাংশ ঐতিহাসিক এটাই মনে করেন । এই বিষয় টা নিয়ে মুক্তমনাতে একটি লেখা আশা করি । “মুক্তমনা ছাড়া আর কেউই নেই যারা মহাপ্রভুর হত্যাকান্ড সম্পর্কে কথা বলার সাহস রাখে” ।
@প্রজাপতি,
আমরা তো ভাই চৈতন্য সম্পর্কে সবকিছু লেখার দায়বদ্ধতা নিয়ে মুক্তমনায় আসিনি। আপনার যদি তার সম্পর্কে নতুন কোন তথ্য জানাবার থাকে আপনি সবসময় আমন্ত্রিত। চৈতন্যকে হত্যা করা হয়েছিল এমন তথ্য আমি কোথাও পাইনি। আপনি যদি পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদের রেফারেন্স সহ জানান। আর আপনি বললেন অধিকাংশ ঐতিহাসিক সেরকম ধারণাই পোষণ করেন। যদি তাই হয় তাহলে কি আপনার উচিত ছিল না সেই ঐতিহাসিকদের কয়েকজনের নামোল্লেখ করা এবং তাদের রচনার কোন অংশ উদ্ধৃত করা? তাতে আমরাও আপনার দাবী সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হতে পারতাম আর আপনার প্রতিক্রিয়াটিও যুক্তিযুক্ত হতো। আশা করি আপনার পরবর্তী মন্তব্য থেকে নতুন কিছু জানতে পারবো।
@প্রজাপতি, অাচ্ছা জগন্নাথ মন্দরির েবাহিরে যেসব ভক্তবৃন্দ ছিল তাদের কিভাবে বোঝানো হয়েছে যে প্রভূ চৈতন্য মন্দরিে লীন হয়েছেন ,,দাদা এটা একটু দয়া করে বলবেন ??? :-s
@সপ্তক,
হ্যা। যেকোন উপায়ে ধ্যান করলেই একই ফল পাওয়া যায়। এমনকি শরীরের বিভিন্ন স্থানকে কল্পনা করে ধ্যানও প্রচলিত আছে। আমিও এ ধরনের ধ্যান কিছুটা করেছিলাম। কয়েকদিন নিয়মিত করার পর এমন হয়েছিল যে মনে হত মস্তিস্কে কেউ যেন শীতল পানি ঢেলে দিয়েছে। সেইসময় এক অনির্বচনীয় আনন্দ লাভ হয়। আর মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে যে ইহা উপকারে আসবে তা বলাই বাহুল্য।
কেউ যদি ওই উপায়ে ধ্যান করে আনন্দ পায় তখন সেক্ষেত্রে অন্যজনের তাতে বাধা দেয়া উচিত নয় বলেই আমি মনে করি। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন এই আনন্দকে পুজি করে কেউ কেউ ব্যবসায় নামে আর কখনো কখনো বাধ্য করা হয় এইরকম ধ্যান করতে। যেমন মুসলমানদের ক্ষেত্রে নামায। আর আগে ভারতে হিন্দু ছেলেদের সকালে উঠে ধ্যান না করে খাওয়াই নিষিদ্ধ ছিল।
আসলে আধ্যাতিকতার সাথে মানসিক শান্তির সম্পর্ক টা কি?। কিছুই না। বিশ্বাসের সাথে যেকোন উপায়েই ধ্যান করলে ফল একই পাওয়া যায় । এর প্রমান পাওয়া গেছে, ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুয়াটাস এর একটি সি,ডি ও আছে এর উপরে যা উনারা গবেষণা করে বের করেছেন। আমার কাছে ছিল,হারিয়ে ফেলেছি। তবে আমারও মাগ্রেবের নামাজ পড়ার পর মন খুব শান্ত লাগত । কারন একটাই, বিশ্বাসের সাথে ধ্যান করলে হয়। তবে শুনেছিলাম একনাগাড়ে চল্লিশ দিন পাঁচ অয়াক্ত নামায পড়লে নামাজের নেশা হয়ে যায়।আমার হয়নাই। অনেক আগের কথা এগুলো। কোলকাতার উপন্যাসিক শিরশেন্দুর (দুরবীনের লেখক) এক সাক্ষাৎকার পরেছিলাম, উনি একসময় চরম বিষণ্ণ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, ২৭/২৮ বছর বয়সে আত্যহত্মা করার কথা ভাবতেন। পরে শ্রী চৈতন্য দেবের আখড়ায় গিয়ে মুক্তি পান। কিভাবে তা আর বলেন নাই। এসবই ধ্যান এবং অন্যকিছুর ওপর অন্ধভাবে নিরভর করা যা মানুষের মন হাল্কা করে । দুর্বল চিত্তের মানুসদের জন্য ভালো টনিক । এসব নিয়ে , হো যে সিল্ভা র সিল্ভা মেথড এর রম রমা ব্যবসা আছে, এগুলো স্রেফ ধ্যান আর কিছু না , কিন্তু এরা প্রচার করে এসব মেথডের সাহায্যে সবই সম্ভব। এগুলো প্রতারনা। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান এদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না কারন এর মাধ্যমে মানুষ কিন্তু মানসিক রোগ থেকে কিছুটা হলেও রিলিফ পায়। মানসিক রোগের চিকিৎসকরাও ধর্ম কর্ম করতে বলেন, আবার বেশী করতেও নিরুৎসাহিত করেন। কারন অনেক মানসিক রুগী অতি ধর্ম পালনের কারনে আরও বেশী অসুস্থ হয়ে যান, যেমন বাংলাদেশে দুই বোন রিতা/মিতা একজন ইঞ্জিনিয়ার অন্যজন ডাক্তার ধর্ম করতে গিয়ে মানসিক রুগী হয়ে গিয়েছিলেন । এসব ব্যপারে প্রচুর সচেতনতা জরুরী।
@সপ্তক,
(Y)
মহাপ্রভু যখন এতোই খারাপ লোক ছিলেন তখন কট্টরপন্থী উগ্র হিন্দু ব্রাহ্মণরা কেন তাঁকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ডেকে নিয়ে, পাথরের আঘাতে হত্যা করে, তাঁর লাশ সমুদ্রের জলে ভাসিয়ে দিয়েছিল ? আর তারপর বিগ্রহে লীন হয়ে যাওয়ার মত মিথ্যা কাহিনী প্রচার করেছিল ?
@প্রজাপতি,
মহাপ্রভু এতো খারাপ ছিল একথাটা এখানে কেউ বলেছেন বলে মনে হয় না। শুধুমাত্র মহাপ্রভুর কিছু কাজের সমালোচনা করা হয়েছে। আর আমার সবচেয়ে খারাপ লেগেছে ছোট হরিদাসের ব্যাপারটা। কাজীর ক্ষেত্রে যেই ব্যাপারটা ঘটেছে সেটা হয়ত পরিস্থিতি সাপেক্ষে মহাপ্রভু করতে বাধ্য হয়েছিলেন কিন্তু তবু বলব তিনি কি শুধুমাত্র প্রেম দ্বারা কাজীকে পরিবর্তন করতে পারতেন না?
মহাপ্রভুর চরিত্রের মধ্যে অনেক ভাল গুণ আছে। ভক্ত কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হলেও তিনি তাকে আলিঙ্গন করতে কুন্ঠাবোধ করেননি , এরকম আর কয়জন পারে?
কিন্তু এখানে মহাপ্রভুও মানবিক দোষত্রুটির উর্ধ্বে নন, এই সত্যটাই তোলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
চৈতন্যদেবের কোন গ্রন্থকার এইটা লিখেছিলেন তার একটু রেফারেন্স দেবেন?
চৈতন্যদেবকে যে সমাধিস্থ করা হয় এ ব্যাপারটা প্রায় নিশ্চিত।
@রনবীর সরকার,
(Y) (Y)
চৈতন্যদেবের রুদ্রমূর্তি আরও একবার দেখা যায় জগাই যখন নিতাইকে রক্তাক্ত করেছিল। এবং কাজীর ব্যাপারেও নিমাই খুব ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু নিমাইয়ের তাৎক্ষনিক ক্রুদ্ধবাক্যের অর্থ সব মুসলিমকে ধ্বংস করা এটা ভাবা বোধহয় ঠিক না। কারন পরবর্তীতে নিমাইয়ের প্রভাব কিন্তু অনেক বেড়ে গিয়েছিল এবং মুসলিম নিধন যদি নিমাই সত্যি চাইতে তাহলে সেটা খুব একটা অসম্ভব ছিল বলে মনে হয় না।
সেইসময় বহু নিম্নবর্ণের হিন্দু নিজেদের বর্ণবাদে অতিষ্ঠ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা শুরু করেছিল এবং আমার মনে হয় রাজশক্তির প্রভাবে নয় হিন্দু বর্ণবাদই এই উপমহাদেশে ইসলাম বিস্তারের প্রধান কারন। আর ইসলামের ভ্রাতৃত্বভাবের থেকে চৈতন্যের প্রেমধর্ম সাধারনের কাছে আরও আকর্ষনীয় মনে হয়েছিল। তাই অনেকেই ইসলামের দিকে না ভিড়ে চৈতন্যদেবের দিকেই এসেছিল।
তবে চৈতন্যদেবের ভাববাদ মানুষকে সাময়িক শান্তি দিলেও ইহা পরবর্তীতে প্রভূত ক্ষতিসাধনই করে।
@রনবীর সরকার,
আমিও এই ব্যাপারে আপনার সাথে একমত যে বর্ণবাদের অত্যাচারই নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ইসলাম গ্রহণের মূল কারণ। যদিও জাতি নষ্টের ব্যাপারটাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। মুসলিমরা প্রায়ই হিন্দুদের জাতি নষ্ট করত ও হিন্দু নারীদের অপহরণ করত। এভাবে পুরো পরিবারটি জাতিচ্যুত হয়ে পড়ত ও ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া তাদের অন্য কোন উপায় থাকতো না। আপনার শেষ বাক্যটির জন্য (F) (F) । ধর্মের আধ্যাত্মিক দিকগুলি মানুষকে অনেক পরিস্থিতিতে মানসিক প্রশান্তি দিলেও আসলে শেষ বিচারে সমাজের ক্ষতিই করে।
@আলোকের অভিযাত্রী,
হ্যা এরকম ঘটনাও অনেক ঘটত। সেক্ষেত্রে হিন্দু মেয়েটির তার পরিবারে আর জায়গা হত না। অগত্যা মুসলিম হওয়া ছাড়া তার কোন উপায় থাকত না। এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের একটা ছোট গল্প আছে। গল্পটির নাম এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না। 🙁
@রনবীর সরকার,
মুসলমানী দিদি।
@রৌরব,
‘মুসলমানীর গল্প’।
@ইরতিশাদ,
(Y)
@আলোকের অভিযাত্রী,
একজন মানুষ যদি আধ্যাত্মিকতা নিয়ে সুখে থাকতে পারে তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সমস্যা হয় তখনই যখন সে সমাজের উন্নতির কথা চিন্তা না করে তার আধ্যাত্মিকতাকে ছড়িয়ে দিয়ে অবচেতনভাবেই সমাজের ক্ষতি করে।
@রনবীর সরকার,
আচ্ছা, একজন মানুষ যখন বিশ্বাস করে যে আধ্যাত্মিকতা জীবনে সুখ আনে, তখন আধ্যাত্মিকতার চর্চা করাটাকেই সে সমাজের উন্নতি হিসেবে মেনে নিবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়?
@ব্রাইট স্মাইল্,
হ্যা দিদি সেটাই স্বাভাবিক। আর সেখানেইতো সমস্যা। এটা শুধু আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে নয়। সমাজের অনেক ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটা বেশি ঘটে। উচ্চস্বরের গান আমার খুব বিরক্ত লাগে। অথচ মাঝে মাঝেই আশপাশ থেকে বিরক্তিকর গান কান ঝালাপালা করে দেয়। যারা ওই গান শুনছে তারা আনন্দ পাচ্ছে কেউ কেউ হয়ত মনে করছে এই গান শুনলে অন্যরাও আনন্দ পাবে, কিন্তু এই গান শুনে কেউ কেউ যে চরম বিরক্ত হচ্ছে , কখনো কখনো কাজের ক্ষতি হচ্ছে সেটাই ভাবে না।
আর এখানে আধ্যাত্মিকতা জীবনে সুখ আনে এটা ঠিক বিশ্বাস নয়। অনেকেই এতে সুখ পায়। চৈতন্যদেব যখন তার পার্ষদদের নিয়ে কীর্ত্তন করত তখন ওই সময়ে তাদের সুখানুভূতিগুলো চৈতন্যচরিতামৃতে খুব সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আর সেইসময় সাধারন মানুষের আনন্দের উপকরনেরও বোধহয় অভাব ছিল। আর তাই আধ্যাত্মিকতা আরো ভালভাবে তার স্থান করে নিতে পরেছিল।
আমার মনে হয় ,
এই কথা হয়তো সত্য কিন্তু এখানে একটা কথা খুবই গুরুত্বদিয়ে ভাবা উচিত যে, সেই সময় মুস্লিম/যবন মানেই বিদেশী ও স্বধর্ম নষ্টকারি হিসাবে ধরা হত, যবনত্ব বা ইসলাম ছিল বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের পথে একটি অন্যতম অন্তরায়। আর তখন তো মুসলিম ছোয়া কি তাদের বাতাস লাগেলেও জাত যেত!!!!!!!!! আর নব্য মুসলিমরাও সেটা করতে অনেক মজা পেত 😛 । এই প্রবণতা তৎকালীন যে কোন ভারতীয় মহাপুরুষ/জাতীয়তাবাদীর মাঝে দেখা যায়। এখানে ইসলাম বা মুসলিম না এখানে বিদেশি সংস্কৃতির হুমকিটাই মূখ্য বিষয়। কারণ একটি দেশে নতুন যেকোন সংস্কৃতি সে দেশের প্রাচীন সংস্কৃতির জন্য হুমকি স্বরুপ।
@অগ্নি,
ভাই আপনি আপনার মন্তব্যে শুধুশুধু মুসলিম আর ইসলাম শব্দটির সাথে যবন বা যবনত্ব শব্দটি ব্যবহার করছেন কেন? আমি আমার লেখায় যবন শব্দটি ব্যবহার করেছি শুধু উদ্ধৃতি দেয়ার সময় বা চৈতন্যের জীবনীগ্রন্থগুলিতে ঠিক যেভাবে লেখা আছে তা বোঝানোর জন্য। কাফের বা মালাউন যেমন ঘৃণা উদ্রেককারী শব্দ যবনও কিন্তু ঠিক তেমন। আপনি কি সনাতন ধর্ম বা হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী? যদি বিশ্বাসী হন তাহলে আর কথা বাড়াবো না। কিন্তু যদি নিজেকে মুক্তমনা দাবী করেন তাহলে বলব এটা ঠিক হয়নি।
তো কি আমরা সমস্ত নতুন সংস্কৃতিকে দূরে সরিয়ে রাখবো? সেখানে ভাল কিছু থাকলেও গ্রহণ করব না? সংস্কৃতি প্রশ্নে খুব বেশি মাতামাতি আমার নেই। এটুকু বুঝি যে সংস্কৃতি একটা চলমান ব্যাপার। এর পরিবর্ধন,পরিবর্তন হওয়া উচিত যুগের সাথে সাথে। কোন “বিশুদ্ধ” সংস্কৃতি রাখার চেষ্টা আসলে রক্ষণশীলতা। বহিরাগত মুসলিমরা ভারতীয় সভ্যতার অনেক ক্ষতি করেছে এতে সন্দেহ নেই। প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অনেক কিছুই তাদের হাতে বিধ্বস্ত হয়েছে এটাও সত্যি। কিন্তু ধর্মান্তরিত মুসলিমরা তো এই মাটিরই সন্তান। তাদের শিকড় সংস্কৃতি তো এখানেরই। তাদেরও কি নিকেশ করে ফেলতে চেয়েছিলেন চৈতন্য? আমি আমার লেখায়ই বলেছি যে কাজীর বৈষম্যমূলক নিয়মের বিরুদ্ধে চৈতন্যের প্রতিবাদকে আমি সমালোচনা করছি না। কিন্তু সেজন্য পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানকে খতম করার এই ঘোষণা কিভাবে সঙ্গত হতে পারে? এই উক্তি তো কোরানের সেই বিখ্যাত জিহাদি আয়াতগুলির সাথে মিলে যাচ্ছে।
@আলোকের অভিযাত্রী,
দুঃখিত, আসলে যবন শব্দটি যে অবমাননাকর আমি জানতাম না। আমি আপনার লেখাটির মর্মার্থ বুঝেছি একটু দেরীতে । :))
হ্যা একদম সত্যি । যেমন আমাদের ডিপার্মেন্টে সংস্কৃতে সংরক্ষণের নামে হিন্দি গান বাজানো বা এর সাথে পারফর্ম করতে দেয়া হয় না কিন্তু ইংরেজি হিপ হপ ঠিকি চলে !!! :-X
আর আমরা একি মাটির সন্তান সে বিষয়ে নিশ্চয় কোন সন্দেহ নেই । 🙂 তাই নিজের ভাইকে মারার খায়েশ কারো নেই…………………।
@shantanu paul,আপনি বলছেন যে আপনি একজন ইস্কন ভক্তের সাথে তর্ক বিতর্ক করেছেন কিন্তু পেরে ওঠেন নি।দয়া করে বলবেন কি আপনি যথেষ্ট নির্মোহ ভাবে তর্ক করেছেন কি?তাকে বলুন মুক্তমনার এই পোষ্টাতে কমেন্ট করে তার যুক্তি গুলো যেন একটু প্রকাশ করে।দেখিনা আমরা সবাই মিলে যুক্তি খন্ডন করতে পারি কিনা। আর আমি জানি যে ইস্কনে বিজ্ঞান বিষয়ক যেকোন আলোচনা সাদরে গৃহীত হয় না এবং ভীষণ ভাবে নিরুত্সাহিত করা হয় তবে ঔ ব্যাক্তি কিভাবে ইসকনের ভক্ত হলেন?আমি নিজে একসময় ইসকন অনুরাগী ছিলাম।তখন মুক্তমনের কোন আলো আমার মনে আসার কোন সুযোগ ছিল না।শুধু বিজ্ঞান বিদ্বেষী একটা প্রতিষ্ঠান এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি নি বলে ছেড়ে দিয়েছি।
@অভ্র ব্যাণার্জী,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। তরুণদের মগজ ধোলাই করার জন্য এরা প্রথম প্রথম কিছু আবেগী, ভক্তিবাদী কথা ব্যবহার করে পরে ক্রমান্বয়ে আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সভ্যতার প্রতি মনকে বিষিয়ে দেয়। অবশ্য সুখের কথা হল বেশিরভাগ তরুনই আপনার মত একসময় নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে। যতক্ষণ পর্যন্ত না নিজের যুক্তি বুদ্ধি পুরোপুরি বিসর্জন দেয়া হচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত কোন ধর্মান্ধ প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকা সম্ভব নয়। ভাল থাকুন। (F) (F)
ইসকন্ অনেক শক্তিশালী । তাদের দলে অনেক বড় বড় ডক্টরেট লোক আছে। তারাও অনকে গবেষণা করে। আমি একজনকে জানতাম। উনি মাঝে মাঝে Science Journal এর পেপার আমার কাছে থেকে নিতেন। আপনাদের লেখা আমি পড়ি । কিন্তু আপনাদের Knowledge অনেক সীমিত। ঐ লোকের শতভাগের এক ভাগ ও না । আমি সবসময় তার সাথে তর্ক করি , কিন্তু যুক্তিতে পেরে উঠি না। কারন তাদের লেখাপড়া অনেক
Standard. আপনাদের আরো পড়ালেখা করা দরকার। শুধু কিছু বই পড়লেই সব Knowledge পাওয়া যায় না । Research Paper ও পড়তে হয় । আপনাদের এই সীমিত knowledge নিয়ে আপনারা কখনোই তাদের মোকাবেলা করতে পারবেন না।
@Shantanu Paul,
কি কি যুক্তিতে পেরে উঠেন না সেগুলো কি একটু এখানে বলা যাবে?
@Shantanu Paul,
প্রথম কথা হচ্ছে আমাদের সীমিত জ্ঞান,সাইন্স জার্নাল না পড়া ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা বললেও আপনি আমার এই লেখায় কোন ভুল পেয়েছেন কিনা বা কি ভুল পেয়েছেন সেটা দেখাননি বা কি করলে ইস্কনের লোকদের সাথে মোকাবেলা করা যাবে তাও কিছু বলেন নি। মহা জ্ঞানীর মত শুধু জ্ঞান দিয়ে গেছেন। ইস্কন যে খুব শক্তিশালী একটা সংগঠন তা খুব ভাল করেই জানি। কয়েকবার এদের সাথে কথা বার্তাও হয়েছে। হিন্দু সংগঠনগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবথেকে বিজ্ঞানবিরোধী ও ধর্মান্ধ সংগঠন এটি। এদের পত্রিকা “হরেকৃষ্ণ সমাচার” এর কয়েকটি সংখ্যা পড়ার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে। একটিতে দেখেছিলাম আধুনিক কোমল পানিয়ের পরিবর্তে গোমূত্র পান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং গোমূত্র পানের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। এদের গুরু প্রভুপাদের “জীবন আসে জীবন থেকে” বইটা পড়তে পারেন। দেখবেন আধুনিক বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিকদের কিভাবে কুৎসিত ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে। সাইন্স জার্নাল না পড়েও বিজ্ঞানের অনেক জিনিষ জানা যায়। আপনার পরিচিত ইস্কনের ওই লোককে এই লেখার লিংকটা দিন, তাহলে আমরা তার সাথে সরাসরি আলোচনা করতে পারব অথবা ইস্কনের ওই লোকের সাথে কি কি ব্যাপারে আপনি যুক্তিতে পেরে ওঠেন না সেটা জানানোর জন্য অনুরোধ করছি। তাহলে হয়ত আমরা একটা ফলপ্রসূ আলোচনায় আসতে পারবো। আপনাকে অনন্ত বিজয় দাসের একটা লেখা সাজেস্ট করতে পারি।
http://www.mukto-mona.com/project/Biggan_dhormo2008/chap4/Geeta_ananta.pdf
দেখুন এবার যুক্তিতে পেরে ওঠেন কিনা। শুভেচ্ছা রইল। (F) (F)
@আলোকের অভিযাত্রী,
ইস্কনের অনেক প্রভুদের সাথে আমারও কথা হয়েছিল। ওনাদের লজিকতো আমি অনেক দুর্বলই দেখলাম। Shanto Paul যার কথা বললেন তাকে যদি আমাদের মাঝে পেতাম তাহলে খুব খুশি হতাম।
@আলোকের অভিযাত্রী, ত্যাগ করা গীতা-অনন্ত টিতে ভগবদ্গীতার সম্পর্কে যে স্ববিরোধিতাগুলির কথা লেখা হয়েছে তার প্রত্যেকটির যথাযথ উত্তর বর্তমান । ঠিক বুঝতে না পারলে এই রকম বিশ্লেষণ আসে । আর ইতিহাসে তো নানা মুনির নানা মত । সত্য কি সেটা কি এতে আছে ?
আমার জানামতে সুফিবাদ হিন্দু,পার্সি ধর্ম থেকেই ইসলামে প্রচলিত হয়েছে তাছারা মুসল্মানদের জন্য মুহাম্মদই আদর্শ পুরুষ,মুহাম্মদ ছিলেন সম্পুর্ন ভোগবাদি আর সুফিরা হচ্ছে ত্যাগি এক্ষেত্রে সুফি ইসলামে কতটুকু গ্রহনযগ্য ???
শ্রী চৈতন্যের আরো অনেক স্ববিরোধিতা আছে এবং এই লেখাটা আরেকটু বড় এবং আরো বেশী গবেষনা ধর্মী হলে ভাল হয়।
শ্রী চৈতন্যের গৌরীয় বৈষ্ণব ধর্ম বিদেশে এবং আন্তর্জাতিক ভাবে সব থেকে বড় এবং অর্গানাইজড সংগঠন [ ইস্কন]।
বিবেকানন্দের অদ্বৈত বেদান্ত ভারতে জনপ্রিয় হলেও বিদেশে ইস্কনের কাছে কিছু না। স্টিভ জবস থেকে ম্যাডোনা এদের শিষয়। সুতরাং এদের ঘুঁটি নাড়াতে হলে- আরো গভীরে গিয়ে নাড়াতে হবে।
মূলত এই দিক গুলো লেখক আরো দেখালে ভাল হয়
(১) যৌনতা নিয়ে বৈষ্ণব ধর্মের দুই মুখ- বৈষ্ণব ধর্মর মূলেই আছে পরকীয়া এবং যৌনতা
(২) বৈষ্ণব ধর্ম জাতিভদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করলেও, তারা হিন্দু ধর্মের মূল নির্যাস ছারে নি- ফলে জাতিভদের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন মোটেও সফল হয় নি-কারন জাতিভেদকে টিকিয়েই উনি সবার জন্যে ধর্মের আমদানি করছিলেন। জাতিভেদের বিরুদ্ধে উনি বিদ্রোহ করেন নি। লঘু করেছিলেন। ফলে ইসলামিকরন উনি সফল ভাবে রুখেছিলেন-কিন্ত হিন্দু ধর্ম জাতিভেদ থেকে বেড়তে পারে নি।
(৩) উনার লেখার এবং ভক্তি আন্দোলনের মানবতার মধ্যে সুফী কবিদের ছাপ স্পস্ট। সমস্যা হচ্ছে সুফীরা যেমন স্বীকার করে না, তাদের চিন্তা অনেকটাই পার্সী, হিন্দু এবং গ্রীক দর্শন প্রভাবিত, বৈষ্ণবরাও স্বীকার করে না, তাদের মধ্যে সুফীদের প্রভাব স্পষ্ট। আমি মনে করি চৈতন্যের আন্দোলন মূলত বাংলার সুফী ইসলাম থেকেই অনুপ্রাণিত-কিন্ত এর সপক্ষে আমি কোন গবেষণা করি নি-বা এমন লেখাও পায় নি।আমার চিন্তার ভিত্তি সুফীদের কবিতার সাথে বৈষ্ণব সাহিত্যের ১-১ মিল ।
মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা বড়ই ছোট। অথচ কাজ অনেক। ফলে, অনেক ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকে। এমন একটা ইচ্ছা সুফী এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে এত মিল কি করে এল-সেটা নিয়ে গবেষণা করা।
@বিপ্লব পাল,
স্বীকার করছি লেখাটা আরও বড় ও গবেষণাধর্মী হলে ভাল হতো। বৈষ্ণবদের যৌনতা বিষয়ক ধারণা ও পরকীয়া প্রেমের ব্যাপারটা এলে লেখাটা আরও মানসম্মত হতো সন্দেহ নেই। তবে আমি চেয়েছিলাম মূলত চৈতন্যের ভিন্ন একটা রূপ তুলে ধরতে। উপরোক্ত বিষয়গুলিতে চৈতন্যের কি ধারণা ছিল সে সম্পর্কে কোন স্পষ্ট রেফারেন্স এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই। হাতের কাছে যে বিষয়গুলি পেয়েছি সেগুলো নিয়েই লেখাটা লিখে ফেলেছি। ভবিষ্যতে হয়ত চেষ্টা করবো।
খুব সুন্দর একটা বিষয়। করে ফেলুন না! আমরাও সুন্দর একটা লেখা উপহার পাই।ভাল থাকুন। (F) (F)
@আলোকের অভিযাত্রী,
বৈষ্ণবধর্মের এমন নির্মোহ বিপরীত পাঠ খুব দরকারি। লেখককে এ জন্য সাধুবাদ। লেখাটিকে আরো গভীরতা দিতে বিপ্লবদার কথার সঙ্গে একমত। চলুক। (Y)
@বিপ্লব পাল,
কিন্তু চৈতন্যদেবের গৌড়িয় বৈষ্ণবধর্মতো যৌনতাকে ১৮০ ডিগ্রী বিপরীতে রেখেছিল।
চমৎকার লেখা হয়েছে।
তবে কিছুটা তথ্যবিভ্রাট রয়েছে। যে হরিদাসকে চৈতন্যদেব ত্যাগ করেছিলেন তিনি যবন হরিদাস ছিলেন না। ওই হরিদাসকে ছোট হরিদাস বলা হত। যবন হরিদাস জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চৈতন্যদেবের ভালবাসা পেয়েছিলেন এবং চৈতন্যদেবের অন্যতম ভক্ত ছিলেন।
সম্ভবত প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুই কঠোর যুক্তিবাদী নিমাইকে ভক্তিবাদীতে পরিনত করেছিল।
@রনবীর সরকার,
সম্ভবত এখানে একটা ভুল হয়ে গেছে। যবন হরিদাস ছাড়া অন্যকোন হরিদাস যে চৈতন্যের ভক্ত ছিলেন তা আমার জানা ছিল না। তবে যে হরিদাসের সাথেই হোক না কেন, চৈতন্যের এই ব্যবহার কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ, হতে পারে। নিমাই সম্ভবত আগে ন্যায়শাস্ত্রে পড়াশোনা করেছিলেন। সুতরাং যুক্তিবাদী হওয়াটাই স্বাভাবিক। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
@আলোকের অভিযাত্রী,
এবং আরেকটা মজার ব্যপার আপনার জানা আছে কিনা জানি না। ভক্তিবাদী হবার আগে নিমাই কিন্তু অদ্বৈতাচার্য,মুকুন্দ প্রমুখ কৃষ্ণভক্তদের ধরে ধরে কঠোর যুক্তি দ্বারা উপহাস করতেন। তাই ভয়ে কেউ তখন নিমাইয়ের সামনে পড়তে চাইত না।
@রনবীর সরকার,
না রে ভাই এটা জানা ছিল না। আচ্ছা উনি কি নাস্তিক টাইপের কিছু ছিলেন নাকি আগে? মানে ভক্তিবাদকে অপছন্দ করতেন নাকি সব রকমের ধর্মকর্ম নিয়েই উপহাস করতেন?
@আলোকের অভিযাত্রী,
ছোটবেলায় উনার জপ ও কৃষ্ণনামের প্রতি আসক্তি ছিল। অবশ্য ভক্তিবাদী পরিবারে জন্মগ্রহন করে এই আসক্তি খুব স্বাভাবিক ছিল। উনি খুব অল্প বয়সেই পাঠক্রম শেষ করে সংস্কৃত ব্যাকরন এবং ন্যায়শাস্ত্রে খুব পান্ডিত্য অর্জন করেন। আর সেইসময় নবদ্বীপে ন্যায়শাস্ত্র নতুন এসেছিল এবং এটার খুব সমাদর ছিল। নিমাই অনেক বড় বড় পন্ডিতদের তর্কযুদ্ধে হারিয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেন। এর সুবাদে প্রচুর অর্থকড়িও উপার্জন করেন (সেইসময় অনেক ধনীরা এসব তর্কযুদ্ধের আয়োজন করতেন)।
এইসময়ই তিনি ভক্তিবাদকে চরম উপহাস করা শুরু করেছিলেন। এতে ওইসময়ের নবদ্বীপের ভক্তরা বলাবলি শুরু করলেন এরকম ভক্ত পরিবারে জন্ম নিয়া নিমাই কিনা শুষ্ক নৈয়ায়িকে পরিনত হলেন। তার অত্যন্ত প্রিয়তমা প্রথমা স্ত্রী লক্ষীদেবীর মৃত্যুর পরই নিমাইয়ের উপলব্ধি হল সংসার অসার, মৃত্যুই অনিবার্য সত্য। আর এর পর হতেই নিমাই একটু অন্যরকম হয়ে গেল। মা শচীদেবী নিমাইকে পুনরায় সংসারে আসক্ত করার জন্য বিষ্ণুপ্রিয়ার সাথে বিবাহ দিলেন। কিন্তু নিমাইয়ের সেই উদাসীন ভাব আর কাটল না। পিতার পিন্ডদান করার জন্য গয়াতে যাবার পর সেখানে তার ঈশ্বরপুরীর সাথে দেখা হয়। সেখানে ঈশ্বরপুরীর সাথে তিনি কিছুকাল অতিবাহিত করেন। আর এইটাই নিমাইয়ের পুরো জীবনকে পাল্টে দেয়। চঞ্চল, উদ্ধত, অহংকারী নিমাই ভক্তিরসে পূর্ণ নিমাই হয়ে ওঠেন।
@রনবীর সরকার,
নতুন তথ্য জানানোর জন্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে কখনও এই ব্যাপারে আবার লিখলে আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে বুঝতে পারছি। 🙂
@রনবীর সরকার,
ভুলটা ঠিক করে দিলাম।
চৈতন্যের চেতনা সুরে
সাম্প্রদায়িক ভাবনা ঘুরে। (Y)
@রাজেশ তালুকদার,
সুন্দর কবিতার জন্য ধন্যবাদ। (F) (F)
সাবাস! (Y)
@অভিজিৎ,
শুভেচ্ছা জানবেন। (F) (F)
(Y)
@রৌরব,
শুভেচ্ছা জানবেন। (F) (F)
এই কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম বৌদ্ধধর্ম ও বুদ্ধর সমালোচনা করতে গিয়ে কিন্তু তা না হয়ে একাধারে শুরু হল ব্যক্তিআক্রমন ও বলা হল শুধুই ধর্মগুরুদের গালাগালি করা হচ্ছে।প্রত্যেক মহামানব (!) ক্ষেত্র বিশেষে যেমন যুগের চেয়ে এগিয়ে থাকেন তেমনি সমসাময়িক অনেক বিষয়েই সাধারণের উপরে উঠতে পারেন না।পৃথিবীতে আলাদা ধর্ম বলে কিছুই নেই যুগে যুগে একই ধর্ম সময়ের চাহিদায় ব্যক্তি কতৃক বিভিন্নভাবে ব্যখিত হয়েছে মাত্র।এতে আলাদা মাত্রা দিয়েছে তৎকালীন রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সংস্কৃতি যেমনটা আজকে দিচ্ছে বিজ্ঞান ও দর্শন।স্ববিরোধিতা মানুষের সহজাত বলেই মনে করি তা উন্মোচিত হয় কেবল কর্মক্ষেত্রের ব্যাপকতায়।
@ডেথনাইট, নিচের লেখাটুকু উদ্ধৃতি হবে না।মডুরা দেখবেন আশা করছি।
@ডেথনাইট,
একদম আসল কথা বলেছেন ভাই। মহাপুরুষেরা তাদের যুগের কিছু কিছু ব্যাপারে এগিয়ে থাকলেও বর্তমান যুগের অনেক ব্যাপারেই তারা নিতান্ত নাদান। বর্তমান সভ্যতা বিকশিত হয়েছে মূলত বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী চেতনার উপর ভিত্তি করে তাই এখনকার অধিকাংশ ব্যাপারেই প্রাচীন মহাপুরুষেরা খুব একটা কাজে আসবেন না। তবে ভাই, আমি কিন্তু বুদ্ধের অনুরাগী, ভক্ত নই অবশ্যই। তার সমালোচনাগুলি মাথায় রেখেই বলছি সেই সময়ে তিনি যে জ্ঞান,সৎসাহস ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন তাতে তাকে শ্রদ্ধা না করে উপায় নেই।
@আলোকের অভিযাত্রী, বুদ্ধকে নিয়ে আমার মতামত ঐ টপিকেই দিয়েছি।ফরিদ ভাইয়ের ভাষায়
@ডেথনাইট,
মন খারাপ করার কিছু নেই। ভণ্ডামি আশা করি কোনদিন করবো না। যা নিজে ভাল মনে করি সেটাই বলার চেষ্টা করি। কে কি বলে তাতে বেশি কান না দেয়াই ভাল। ভাল থাকুন। (F) (F)
@আলোকের অভিযাত্রী, দেখুন ফরিদ ভাইয়ের বলা কথাটাই আমার মনের কথা তাই বুঝাতে ওটা কোট করেছি।পৃথিবীতে আলাদা ধর্ম বলে কিছুই নেই যুগে যুগে একই ধর্ম সময়ের চাহিদায় ব্যক্তি কতৃক বিভিন্নভাবে ব্যখিত হয়েছে মাত্র।এটাই বার বার বুঝানোর চেষ্টা করেছি ঐ টপিকে।অযথাই অফটপিকের জন্য দু:খিত।ভালো থাকুন।
@ডেথনাইট,
এটা ভাই অদ্ভূত কথা। সব ধর্মের মূল এক বলে আমার মনে হয় না। তবে হ্যা পরবর্তীতে সবগুলোই একই বিন্দুতে গিয়ে মিলে এটা ঠিক।
মার্ক্সবাদ যদি অনেক আগে আসত এবং বিশেষত ভারতবর্ষে আসত তবে আমার তো মনে হয় ওটাও একটি ধর্ম হিসেবেই বর্তমান সময়ে পরিনত হত।
অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মের মূল প্রবক্তা শুধুমাত্র তার নিজস্ব চিন্তাধারা প্রকাশ করে মাত্র তবে পরবর্তীতে তার অনুসারীদের দ্বারা তা পল্লবিত হয়ে ধর্মে পরিনত হয়। আর বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্রে এটাই ঘটেছে মাত্র।
@রনবীর সরকার, কপিলের সাংখ্যদর্শন পড়ুন তাহলেই বুদ্ধর মতবাদে কোন অমিল পাবেন না।প্রাচীন ভাগবত ধর্মের বিষ্ঞু আদতে সূর্য।বুদ্ধ মানে আলোক প্রাপ্ত বা দিব্যজ্ঞান প্রাপ্তি।বুদ্ধর মূর্তিতেই পিছনেই সূর্যমন্ঢল আছে।আব্রাহামিক ধর্মে ঈশ্বর আলোর প্রতীকে আসেন।ইসলামের পুলসিরাত সহ অনেক বিষয় এসেছে জরথুস্ত্রবাদ থেকে।এভাবে অনেক মিল দেখানো যাবে।যাই হোক গুছিয়ে লিখতে পারলাম না তবুও মূল নিষয়টা বুঝাতে পেরেছি বলেই মনে হয়।নৃতাত্ত্বিক ধারণা থাকলেই ব্যাপারটা বুঝবেন।প্রাচীন ধর্মমত টোটেম ছিল নিরীশ্বরবাদী কিন্তু এতে আত্মা ছিল।পরবর্তী সময়ে প্যাগানিজম ও সূর্যবাদে দেবতার আবির্ভাব কিন্তু তখনও নৈতিকতার ব্যাপার নেই।এটা এসেছে জরথুস্ত্র ও জৈনদের হাত ধরে।অন্যদিকে বস্তুবাদী দর্শনের জন্ম দিল কপিল ও চার্বাক।এদের হাত ধরেই বুদ্ধ এবং ক্রমান্বয়ে আজকের ইসলাম থেকে বর্তমানের এলিয়েন বা নুডুলস দেবতা।
@ডেথনাইট,
আপনাকে দেয়া আমার মন্তব্য কোথায় গেল। 🙁 🙁
@রনবীর সরকার, বুঝলাম না ভাই কি বলতে চাইলেন? 😕
আপনারা দেখছি সব অন্ধকারের যাত্রী। শ্রীচৈতন্যকেও চিৎ করে ফেলেছেন। ছিঃ! ছিঃ!! ছিঃ!!! কোনদিন দেখবো ছাগদুগ্ধ খাওয়া পরমছাগুটারও ছাল তুলে নিচ্ছেন আপনারা।
@ফরিদ আহমেদ,
নির্মোহ এবং সংশয়ী দৃষ্টি : মুক্তমনের আলোয় বিভাগটা তো ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। মুক্তমনার পরবর্তী সংকলনের জন্য এটা নিয়ে কাজ করা যায় কিন্তু। সম্পাদনা শুরু করেন আপনে … 🙂
@অভিজিৎ,
বুদ্ধি খারাপ না। যেভাবে মুক্তমনারা সব মান্যবরদের আলখাল্লা, লুঙ্গি, ধুতি, পাতলুন, নেংটি, নেঙট, বোরকা খুলে নিচ্ছে, তাতে করে নিজের লুঙ্গি বাঁচানোর এটাই মোক্ষম উপায়। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
সেই জন্যই তো আমি লুঙ্গি পরি না, পায়জামাই ভালু পাই 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
কি আর করব বলুন মুক্তমনের আলো অনেকেই সহ্য করতে পারে না। তারা অন্ধকারে থাকতেই বেশি আনন্দ পায়। মহাপুরুষ(!)দের নপুংসক কারবার বেশিরভাগ জায়গাই তুলে ধরতে দেয়া হয় না তাই মুক্তমনাই ভরসা।