অপবিজ্ঞান তথা Pseudoscience হল সেইসব তত্ত্ব যা বিজ্ঞান হিসেবে দাবী করা হয় কিন্তু সেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। সাধারণত সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য, বই বিক্রয় বাড়ানোর জন্য, প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে কিংবা ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অপবিজ্ঞান, বিজ্ঞানের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। নিজেদের অজান্তেই আমরা সাধরণ মানুষ প্রতিনিয়ত অপবিজ্ঞানের শিকার হচ্ছি। এমন অনেক কিছুই আছে যা আমরা বিজ্ঞান বলে জানি কিংবা আমাদেরকে জানানো হয় কিন্তু সেটা আসলে বিজ্ঞান নয়। এধরনের অপবিজ্ঞানের ফাঁদ থেকে দুরে থাকার জন্য আজ এই লেখার অবতারনা করছি।
অপবিজ্ঞান সেই তত্ত্বকেই বলা হবে যা বিজ্ঞান হিসেবে উপস্থাপন করা হবে, যার সাথে বৈজ্ঞানিক অন্যান্য তথ্য উপাত্তের সম্পর্ক দেখানো হবে কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার সত্যতা প্রমাণ করা যাবে না। অপবিজ্ঞানের সবচেয়ে স্থূল উদাহরন হচ্ছে বৈজ্ঞনিক ভাবে ধর্মের ব্যখ্যা হাজির করা। অনেক সময় অপবৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাথে এত গভীরভাবে জড়িয়ে যায় কিংবা এবং বৈজ্ঞানিক ভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সেগুলোকে পরীক্ষিত বিজ্ঞান থেকে সহজে আলাদা করা যায় না। তবে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের ভিতর থেকে অপবিজ্ঞানের বিষয়গুলো দুর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে অবশ্য এই অপবৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো সনাক্তকরণ বেশ সহজ হয়ে যাচ্ছে। অপবৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোর তালিকা বর্ণনা করতে গেলে একটা মোটা বই লিখে ফেলা যাবে। তাই এখানে শুধু অতি গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের জীবন ঘনিষ্ট কিংবা প্রতারণার হাত থেকে বাঁচার জন্য যেটুকু জানা দরকার সেটুকুই আলোচনা করব।
জোতিষশাস্ত্র: সবচেয়ে প্রকট, নগ্ন অবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যেটা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে প্রভাব বিস্তার করে আছে তা হল জোতিষশাস্ত্র। জোতিষশাস্ত্র অত্যন্ত প্রাচীন একটি তত্ত্ব। এর সাথে বিজ্ঞান কোনো ভাবেই খাপ খায় না। তথাপি এটা আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীব্যাপী বহুলভাবে সমাদৃত। এমন কি শিক্ষিত শ্রেণীর বিশাল একটা অংশ জোতিষশাস্ত্রের ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। সাধারন মানুষের নির্ভরতা সুযোগ নিয়ে অনেকেই জোতিষচর্চার ব্যবসা ফেঁদে যুগ যুগ ধরে আমাদেরকে ঠকিয়ে আসছে। ইদানিং একে গণিতের একটি শাখা সংখ্যাতত্ত্বের সাথে মিলিয়ে বৈজ্ঞানিক ফ্লেভার দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের সর্বাধিক প্রচলিত দৈনিক হিসেবে দাবীকৃত পত্রিকাটির হোম পেইজে রাশিচক্রের বিশাল লোগো সবারই চোখে পড়ে থাকবে।
সমতল পৃথিবী তত্ত্ব: পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সংগঠন আছে যারা পৃথিবী সমতল দাবী করে। এই ব্যপারে তারা প্রচারনা চালায় এমনকি যুক্তিও হাজির করে।
সৃষ্টিতত্ত্ব: এই তত্ত্ব অনুসারে পৃথিবীতে প্রত্যেকটি প্রজাতি, কোন একজন বুদ্ধিমান সত্ত্বা কর্তৃক আলাদা আলাদা ভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ বৈজ্ঞানিক ভাবে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, পৃথিবীতে প্রাকৃতিক নিয়মে সরল পর্যায়ে প্রাণের উৎপত্তি ঘটেছে এবং ধীরে ধীরে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় অন্যান্য প্রজাতির বিকাশ হয়েছে। সৃষ্টি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য সৃষ্টিতত্ত্ববাদীরা এখনো সারা পৃথিবীতে বহুলমাত্রায় সক্রিয় আছে। বিংশ শতাব্দীর একটা বড় সময় ধরে বাইবেলীয় সৃষ্টিতত্ত্ববাদীরা সারা আমেরিকায় বিবর্তন বিরোধী প্রচার চালায় এবং স্কুলের পাঠসূচী থেকে বিবর্তন সরিয়ে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিবর্তনবাদীদের যুক্তির কাছে তাদের পরাজয় স্বীকার করতে হয় এবং আদলতের মাধ্যমে বিবর্তন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল: বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে প্রকৃত পক্ষে কোন রহস্য নেই। অথচ এটার ব্যাখ্যা হিসেবে যেসব উদ্ভট থিউরী দেয়া হয়েছে তার কয়েকটি হল:
১. এখানে এলিয়েন উপস্থিত আছে।
২. এখানে স্থান-কাল কুন্ডলীকৃত হয়ে আছে। সেকারনে স্থান ও কালের বিভ্রম তৈরি হয়।
৩. কোন কোন লেখক বিভিন্ন বৈজ্ঞনিক তত্ত্ব উল্লেখ করে দাবী করেছেন এখানে ওয়র্মহোল আছে! ইত্যাদি ইত্যাদি….।
জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার: অনেকেই ধারনা করে থাকেন জলবায়ু পরিবর্তনের যে দাবী করা হয় সেটা আসলে ভিত্তিহীন! আর যদি পরিবর্তন হয়েই থাকে তার সাথে কার্বনডাই-অক্সাইডের কোন সম্পর্ক নাই।
চাঁদে অবতরনের সন্দেহ-তত্ত্ব: এটা conspiracy theory বা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সবচেয়ে উল্ল্যেখযোগ্য উদাহরন। চাঁদে অবতরনের যখেষ্ট প্রমাণ ও উপাত্ত থাকা সত্ত্বেও বই ও ম্যাগাজিনের কাটতি বাড়ানোর জন্য একটি শ্রেণী এই ঘটনা মিথ্যা বলে প্রচার চালায়। এছাড়াও এর সাথে রাজনীতিও জড়িত। এমনকি এই ঘটনার বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমানও হাজির করা হয়!
আধ্যাত্মিকতা: অনেকেই ভাবেন আত্মার সাথে আত্মার যোগাযোগ ঘটে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে। আধ্যাত্মিক উপায়ে অনেককিছু অর্জন করা যায়। যদিও এধরনের কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমান এখনো পাওয়া যায় নি।
হোমিওপ্যাথি: হোমিও প্যাথি চিকিৎসার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। এর ভিত্তি হল বিশ্বাস। অর্থাৎ আমি যদি বিশ্বাস করি যে আমার রোগ ভালো হয়ে যাবে, তাহলে আমার রোগ ভালো হয়ে যাবে। আর ওষুধ হিসেবে যা দেয়া হয় সেটা আসলে placebo। মেডিকেল সায়েন্সে faith healing (placebo এর মাধ্যমে) এর যেটুকু গুরুত্ব আছে হোমিওপ্যাথি আসলে সেটুকুই করতে পারে।
অতিন্দ্রীয় ক্ষমতা: টেলিপ্যাথি, পূর্ববোধ, আধ্যাত্মিক কিছু কিছু বিষয় এর অন্তর্গত। অনেকেই এব্যাপারগুলোর সত্যতা দাবী করলেও এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে সত্যতা যাচাই করা যায় নি।
বিজ্ঞান পুঁজি করে ব্যবসা: সবচেয়ে প্রকৃষ্ট উদাহরন হল হরলিক্স। হরলিক্স থেকে যে পুস্টি পাওয়া যায় দৈনন্দিন সুষম খাবার থেকে তার চেয়ে অনেক ভালো পুস্টি পাওয়া যায়। একটু সচেতন হলেই দেখতে পাবেন হরলিক্স খায় এমন বাচ্চা আর হরলিক্স খায় না এমন বাচ্চার সুস্থতার মধ্যে আদৌ কোন পার্থক্য নেই। সেই সাথে বলে রাখি, বয়সের তুলনায় মাত্রা-তিরিক্ত লম্বা হওয়া এক ধরনের রোগ। হরমোন imbalance এর কারনে এটা হয়ে থাকে। গত শতাব্দী ধরে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞান জগতে যখন যে নতুন জিনিসটি আবিষ্কার হয় সেটা দিয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞাতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসা হয়। মেরী কুরি যখন রেডিয়াম আবিষ্কার করেন তখন রেডিয়াম চকলেট, রেডিয়াম ক্রিম, রেডিয়াম কসমেটিক বের হয়ে গিয়েছিল! কিছদিন আগেও আমাদের দেশের বয়ষ্ক লোকজন বাতের ব্যথার উপশমের জন্য এক ধরনের চুম্বক যুক্ত ব্যন্ড পরতেন, যা প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। যখন ইলেক্ট্রিসিটি আবিষ্কার হয়েছিল তখন একধরনের ব্যবসায়িক মহল ইলেক্ট্রিক শকের মাধ্যমে (!) রোগ নিরাময়ে পদ্ধতির প্রচলন ঘটিয়েছিলো। (সব ভুক্তভোগীর প্রতি আমার সমবেদনা)। বিজ্ঞান পুঁজি করে ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট দেয়ার একটা ইচ্ছা থাকল।
পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই: সাধু সাবধান!
সংশয় এবং অবিশ্বাস দীর্ঘজীবি হোক। সবাই বিজ্ঞানের সংস্পর্শে আসুন এবং অপবিজ্ঞান থেকে দুরে থাকুন।
তথ্যসূত্র:
http://www.nsf.gov/statistics/seind02/c7/c7s5.htm#c7s5l2
http://www.astrosociety.org/education/resources/pseudobib05.html#10
http://web.archive.org/web/20071122222054/http://liftoff.msfc.nasa.gov/News/2001/News-MoonLanding.asp
http://www.sciencemag.org/content/291/5513/2515.full
http://www.worldcat.org/title/environmental-science-under-siege-fringe-science-and-the-104th-congress/oclc/57343997
http://en.wikipedia.org/wiki/Alternative_medicine
http://en.wikipedia.org/wiki/Homeopathy
http://en.wikipedia.org/wiki/Pseudoscience
http://www.experiment-resources.com/junk-science.html
১৫ টাকার কারেন্ট এফেয়ারস পড়ে চাদে যাবার কন্সপিরেসির বিষয়টা জেনেছিলাম। তখন তরুন মন খুব বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। হায়রে কাটতি। মানুষ এই কাটতি বাড়াতে আর কত নীচে নাম্বে কে জানে।
কিন্তু রাশিফলের সাথে মাঝে মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর মিল কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? নাকি আমাদের অবচেতন মস্তিস্ক বিশ্বাস থেকে রাশিফলের ছকে সকল ঘটনা মিলিয়ে নেয়?
সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ রইল।
@রূপম (ধ্রুব),
হতে পারে। পপারের বিষয়ে আমার জ্ঞান পরোক্ষ। জানিনা…তবে প্রবাবিলিস্টিক স্টেটমেন্টকে ডিটারমিনিস্টিক বানিয়ে পপারের সার্টিফিকেট নেয়া সম্ভব কি? অর্থাৎ—
আমার (মেটা)-প্রেডিকশন হল যে আগামী বছর অন্তত তিনশ দিনের প্রেডিকশন ঠিক হইবেক।
সম্ভবত-র কিছু নাই।
@রৌরব,
এর জন্যে একদিনের প্রেডিকশান ঠিক হওয়া বলতে কী বোঝায় সেটা আগে নির্দিষ্ট করা দরকার। একটা প্রেডিকশানও তো একশভাগ সঠিক না।
তবে এইভাবে তিনশটা স্যাম্পল ব্যবহার করে হাইপোথিসিস টেস্টিংয়ের ফলে একটা প্যাঁচ দেখতে পাচ্ছি। যদিও আপনি বলছেন যে তিনশটা স্যাম্পলে প্রেডিকশান একটা বিশেষ থ্রেসহোল্ড পার না হলে আপনি তত্ত্বের মিথ্যাত্ব মেনে নিবেন, কিন্তু হাইপোথিসিস টেস্টিংয়ে নাল হাইপোথিসিস রিজেকশান মানেই কিন্তু নাল হাইপোথিসিস ফলসিফাই হওয়া না। বরং নাল হাইপোথিসিস আদৌ ফলসিফাই করা যায় কিনা ভাবতেছি। :-s
@রূপম (ধ্রুব),
ধরেন মোটাদাগের কোন প্রেডিকশন — তাপমাত্রার রেইঞ্জ ইত্যাদি।
নাল হাইপোথিসিসের দিকে যাওয়া মানে একটা স্ট্যাটিস্টিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাডপ্ট করা যেটা কিনা এভয়েড করছিলাম (এবং আপনি ধরেছেনও সেটা ঠিক)।
কিন্তু, এটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। নাল হাইপোথিসিস আদৌ ফলসিফাই করা যায় না কেন? উইকিপিডিয়ায় দেখলাম বলছে নাল হাইপোথিসিস প্রমাণ করা যায়না, আপনি বলছেন ফলসিফাই করা যায় না। বেচারা যাবে কোথায়?
@রৌরব,
এই লোকের প্রতি এতো দরদ দেখাইয়েন না। যেই স্যাম্পল সেটটা নাল হাইপোথিসিসের বিপরীতে গেলো, সেটা নাল হাইপোথিসিস সত্য হলে ঘটার সম্ভাবনা অনেক অনেক কম হলেও প্রবাবিলিস্টিক ফ্রেইমওয়ার্কে শূন্য না।
এইটা দেখেন –
http://www.statisticalmisconceptions.com/sample2.html
@রূপম (ধ্রুব),
সাবস্ক্রিপট না দিতে পারায় নাল-হাইপোথেসিস-এর যে নাম খাড়া করেছেন তা দেখে Ho-ho করে হাসতে হয়েছে আমাকে।
এখন বুঝছি। নাল হাইপোথেসিস এক্সট্রিম কেইস ছাড়া প্রমাণ-অপ্রমাণ করা সম্ভব না কারণ সেটা একটা অসীম সেটের ওপর প্রেডিকশন, এবং এমন ধরণের মেজার ইনভলভ করে, যার জন্য ওই পুরো অসীম সেটটাই দেখা দরকার (প্রমাণ-অপ্রমাণ দুই ক্ষেত্রেই)।
ওকে…আমার মতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হল রাজা আর এরা সব পারিষদ। এরা বলতে নাল হাইপোথিসিস টাইপের সব বৈজ্ঞানিক প্র্যাকটিস। এসব হল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি-র উপর দাঁড়ানো লিংগুইস্টিক-সাংস্কৃতিক-অভিজ্ঞতাসঞ্জাত টুল। এসব কিছুকে ’বিশুদ্ধ’ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি-র ভাষায় রূপান্তরিত করা সম্ভব (যদিও তা খুব ক্লান্তিকর হবে)।
@রৌরব,
আমি তো খালি কপি পেস্টিইনা করলাম। বড় জ্বালা :-X
নেন – $latex H_o $
নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সন্দর একটা পোস্ট দিয়েছেন ধন্যবাদ ।তবে হোমিওপ্যাথির ব্যপারটা বুঝলামনা কেন ,ইটালিতে আমি অনেক ডাক্তারকে দেখেছি কিছু কিছু হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রেস্কাইব করতে ,আমার ছোট মেয়ের জন্মের পরে অসুস্থ হলে কোন ঔষধে যখন কাজ হলনা তখন এই হোমিওপ্যাথ ঔষধেই সুস্থ হয় এই ইটালিতেই ।ব্যপারট একটু পরিস্কার করা যায় কি?
@আস্তরিন,
আপনাকে ধন্যবাদ। আমি এখানে আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছি না। উপরের একাধিক মন্তব্যে সৈকত চৌধুরী কিছু লিংক এবং ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেগুলো দ্রষ্টব্য। বিশেষ করে এই সহজবোধ্য লেখাটি অবশ্যই পড়ে দেখবেন।
হোমিওপ্যাথি কতটা বিজ্ঞানসম্মত?
অনেক ভালো লিখেছেন। অনেক ভালো লাগে এমন লিখাগুলো পড়তে।
লেখককে অনেক ধন্যবাদ! লেখাটিতে যে লিস্টটি দেয়া হয়েছে, তা শুধু জ্ঞানবর্ধকই নয়; বড় ধরনের ভুল-নিবারকও বটে। চলতে ফিরতে আমরা অনেক ধরনের প্রতারণার হাতছানি পেয়ে থাকি; তো এই লিস্টটা মস্তিষ্কের কোষে শক্ত করে ধরে রাখলে বিপদে পড়ার আশংকা কম!
কিন্তু কেন? এর ঔষধগুলোর ভিতর কোন রোগ-নিরাময়যোগ্যতা নেই? তাছাড়া, ঔষধি গাছ নির্ভর অন্যান্য প্রচলিত চিকিৎসার ব্যাপারেই বা বিজ্ঞান কি বলছে?
@কাজি মামুন,
হোমিওপ্যাথি বিষয়ে সৈকত চৌধুরী উপরের একটি কমেন্টে একটি প্রবন্ধের লিংক এবং একটি ভিডিও লিংক পোস্ট করেছেন, সেগুলো দ্রষ্টব্য।
হোমিওপ্যাথি এবং “ঔষধি গাছ নির্ভর” চিকিৎসাবিদ্যা এক জিনিস নয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান “ঔষধি গাছ নির্ভর” পদ্ধতির পথ ধরেই এসেছে। তবে যেহেতু চিকিৎসা ব্যবস্থার ত্রমাগত উন্নতি ঘটছে তাই সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করাটাই যুক্তিযুক্ত।
অপবিজ্ঞান নিয়ে বলার আগে প্রথমেই বলুন বিজ্ঞান কি জিনিষ ? বিজ্ঞান কি কখনও সত্য – অসত্য নিয়ে কাজ করে ?
জলবায়ুবিদ্যা কি আদৌ বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে ( সিরিয়াস উত্তর আশা করছি) ? সন্দেহ এবং সংশয়বাদ কি করে অপবিজ্ঞান হয় যেগুলো কি না বিজ্ঞানের মূলমন্ত্রগুলোর অন্যতম ?
@সংশপ্তক,
বিজ্ঞান হচ্ছে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে লব্ধ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যৌক্তিক পথে এগিয়ে যাওয়া। বিজ্ঞান সত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, এই হিসেবে সত্য-অসত্য নিয়ে কাজ করে বলা যেতে পারে। সত্য প্রতিষ্ঠায় বিজ্ঞান নতুন পর্যবেক্ষণের সাথে পূর্বতন তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগায় একই সাথে পূর্ববর্তী ভুল-ত্রুটিগুলো দূর করার চেষ্টা করে। অপর দিকে অপবৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোকে অনেকটা বৈজ্ঞানিকভাবে উপস্থাপন করা হয় কিন্তু সেগুলো পরীক্ষালব্ধ নয় কিংবা প্রমাণযোগ্যও নয়।
আমি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বিশেষ দিকের কথা উল্লেখ করেছি সেটা হল বৈশ্বিক উষ্ণতা। এই বিষয়টি অবশ্যই বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে। কারন বৈশ্বিক উষ্ণতার ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের মাধ্যমেই দেয়া হয়।
আমার পোস্টের শেষ লাইনে কিন্তু আমি নিজেই বলেছি “সংশয় ও অবিশ্বাস দীর্ঘজীবি হোক।” কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি তত্ত্বের প্রতি সংশয় ও অবিশ্বাস স্থাপনের জন্য অবশ্যই উপযুক্ত ভিত্তি থাকতে হবে। যে তত্ত্বটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নয় কিন্তু আমাদের মধ্যে তার প্রচলন রয়েছে এবং যাকে বিনা যুক্তিতে সত্য বলে ধরে নেয়া হয় তার প্রতি অবশ্যই সংশয় ও অবিশ্বাস স্থাপন জরুরী। আমার মনে হয় আমার পোস্টে আমি এই মেসেজটিই দিতে চেয়েছি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@বেঙ্গলেনসিস,
বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাকৃতিক ভাবেই হতে পারে। ৫৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে কোন বরফ ছিলো না। নিচে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের আর্টিকেলটা পড়ে দেখতে পারেন। খুবই ইন্টারেস্টিং।
56 million years ago a mysterious surge of carbon into the atmosphere sent global temperatures soaring. In a geologic eyeblink life was forever changed.
তাই শুধু মানব সৃষ্ট কার্বণই যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ঘটাচ্ছে এটা ঠিক না। বরং সঠিক ভাবে বললে বলা যায় আমরা পুরো প্রক্রিয়াটাকে হয়ত ত্বরাণ্মিত করছি। আর কেউ যদি এতে সন্দেহ প্রকাশ করে তাতেও কোন অসুবিধা দেখি না।
@হোরাস,
হ্যাঁ, এই ব্যাপারটি আমি আগে দেখেছি। আমি আসলে এই ব্যাপারটিকে অস্বীকার করতে চাইনি। আমার লেখা খুব বেশি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে বোধ হয়। আমি বলতে চেয়েছি, অনেকেই শুধু এই ঘটনাটিকেই বৈশ্বিক উষ্ণতার কারন ভেবে থাকে। আর মানবসৃষ্ট কার্বন-ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ হেতু যে নিঃসরণ ঘটছে সেটাকে অস্বীকার করে।
@হোরাস,
প্রাকৃতিক ভাবে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় কথাটি ঠিক। আমাদের শেষ বরফ যুগ হয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার বছর আগের কাছাকাছি। গ্লেসিয়ার টাইম স্কেল হিসেবে বরফ যুগের পর থেকে বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়েছে কথাটি ঠিক। কিন্তু সেই হার অনেক কম। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রেভুল্যাশনের পর থেকে বিশ্বের তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে সেটা প্রাকৃতিক হারের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। এবং এর মূল কারণ গ্রিন হাউজ গ্যাস। আরো বিস্তারিত জানার জন্যে সচল জাহিদের জলবায়ু পরিবর্তন সিরিজটি পড়ার অনুরোধ রইল।
@স্বাধীন,
আমি আপনার সাথে একমত। প্রাকৃতিক হারকে আমরা অনেক বেশি ত্বরাণ্মিত করছি। আমিও সেটাই বলছি। তবে কেউ যদি যুক্তি দেয় মধ্য যুগের Medieval Warm Period বা তৎ পরবর্তি Little ice age প্রাকৃতিক কারনে হতে পারলে এখনকারটা পারবে কেন তবে তাকে স্যুডো সায়েন্স বলে ট্যাগিং করার কারণ দেখি না।
@সংশপ্তক,
জলবায়ুবিদ্যা ঠিক কি কারণে আদৌ বিজ্ঞানের পর্যায়ে পড়ে না জানার আগ্রহ প্রকাশ করছি। সিরিয়াসলি জবাব আশা করছি।
@স্বাধীন,
খুবই সহজ। জলবায়ুবিদ্যায় এমন কোন তত্ত্ব নেই , ফর্মূলা নেই যা কিংবা পরীক্ষন যোগ্য তথা ফলসিফাইয়েবল । যেমন, নিচের হাইড্রোকার্বন কম্বাসশনের চমৎকার ফর্মুলাটা দেখুন :
C3H8 + 5O2 → Energy + 3CO2 + 4H2O
জলবায়ুবিদ্যা এরকম কোন ফর্মূলা দেখাতে পারেনি যারা কিনা কার্বন এমিশন নিয়ে গলাবাজী করছে।
বিজ্ঞান হতে হলে ফলসিফাইয়েবল হতে হবে – এখানে কোন ছাড় নেই। গনভোট রাষ্ট্রবিদ্যার অংশ, বিজ্ঞানের নয়। পৃথিবীর ৯০% মানুষ কিছুকে বিজ্ঞান বলে দাবী করলেই সেটা বিজ্ঞান হয়ে যায় না।
@সংশপ্তক,
খুবই ভুল কথা। উপরের প্রশ্নতেই এই বিষয়ের উপর আপনার অজ্ঞতার প্রমান পেয়েছিলাম, তারপরেও নিশ্চিত হবার জন্যে আবারো জানতে চেয়েছিলাম। জলবায়ু বিদ্যা আর সকল বিজ্ঞানের মতোই বিজ্ঞান। জলবায়ু বিদ্যারও তত্ত্ব আছে, সেগুলোর প্রেডিকশান আছে, ফর্মূলা আছে সেগুলোর ফলসাবিয়ালিটিও আছে। আপনি জলবায়ু বিদ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে Pacific Institute for Climate Solutions (PICS) এর এই Climate Insights 101 কোর্সটি দেখুন। খুবই ইন্টারএকটিভ একটি কোর্স। একদম বেসিক থেকে এখানে শুরু করেছে। সাথে এই স্পেশাল জার্নালটি দেখতে পারেন। । তারপরেও প্রশ্ন থাকলে আমি জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো।
@স্বাধীন,
আমার ‘অজ্ঞতার’ প্রমান পেয়ে কমপিউটার নির্ভর ক্লাইমেট ‘মডেল’কে যেহেতু ফলসিফাইয়েবল তত্ত্ব বলে দাবী করছেন , শুধু একটা ক্লাইমেট তত্ত্বের নাম উল্লেখ করুন যেখানে ইম্পিরিক্যালি দেখানো হয়েছে যে , x পরিমান CO2 এমিশন থেকে y পরিমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যা আপনার দেয়া দার্শনিক প্রবন্ধে কিংবা ওয়েব সাইট লিংক এ দেখানো হয় নি।
@সংশপ্তক,
এই আলোচনাটা ইন্টারেস্টিং লাগছে।
কম্পিউটার মডেল যদি প্রেডিকশন করে (যেমন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস), তাহলে সেটা ফলসিফাইয়েবল তত্ত্ব নয় কেন?
@রৌরব,
আবহাওয়া একটা খুবই জটিল ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ প্রক্রিয়া যার পূর্বাভাস ৫ দিনের বেশী দেয়া যায় না এবং সেটাও দেয়া হয় অতীতের পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে (রিগ্রেশন মডেল ?)। এটাকে প্রেডিকশন না বলে prophecy বলতে পারেন যেটা সত্য হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এক মাস পর পৃথিবীর কোন একটা নির্দিষ্ট জায়গায় হারিকেন হবে কি না সেটা সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রেডিক্ট করার মত মডেলের অস্তিত্ব এখনও নেই ।
@সংশপ্তক,
কিন্তু সেটা ফলসিফায়েবল তো? ফলসিফায়েবল, এবং (অনেক ক্ষেত্রে) ফলস।
@রৌরব,
ফলসিফাইড ফলস তত্ত্ব নিয়ে তাহলে ট্যাক্স পেয়ারের ট্রিলিয়ন ডলার জলে ফেলা কেন ?
@সংশপ্তক,
ভাল প্রশ্ন। কিন্তু এটা আপনি কি আবহাওয়া পূর্বাভাসের ব্যাপারে বলছেন, নাকি ক্লাইমেট চেঞ্জ? আবহওয়া পূর্বাভাসটাকে যথেষ্ট উপকারী ও সফল একটা বিদ্যা মনে করা যায় না কি?
@রৌরব,
হ্যা , আবহওয়া পূর্বাভাসএকটা Risk managment tool হিসেবে মন্দ নয় । কিন্তু ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ’ একটা এন্টারপ্রাইজ।
@সংশপ্তক,
সহমত, কিন্তু কেন সেটা কি জানেন? নীচে বলেছি কেন সেটা হয়।
ভুল। আপনি নীচে বলেছেন ক্লাইমেট মডেল সম্পর্কে আপনি জানেন, কিন্তু আপনার এই মন্তব্যগুলো বলছে যে আপনার এই বিষয়ের উপর জ্ঞান সীমিত। আপনি তারপরেও একের পর এক ভুল তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ওয়েদার ফোরকাস্টিং মডেল এবং ক্লাইমেট মডেল ফিজিক্সের, তথা, ফ্লুইড মেকানিক্স, থার্মোডাইনামিক্স এর একাধিক তত্ত্ব ব্যবহার করে তার আউটপুট দিয়ে থাকে। ইনপুট হিসেবে নেয় যে কোন সময়ের আবহাওয়ার অবস্থা। আপনি যদি আগামী পাঁচ দিনের প্রেডিকশান করতে চান তাহলে আজকের আবহাওয়ার তথ্য দিলে মডেল আগামী পাচ দিনের আবহাওয়া সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে। হ্যাঁ, এটা সত্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে মডেল এর ফলাফল মিলবে না। সেটারও কারণ আছে। কারণ মডেলে আমরা সব প্রসেস সঠিক ভাবে প্রকাশ করতে পারি না নানান সীমাবদ্ধতার জন্যে। তাই আনসার্নিটি থাকবেই। কিন্তু এটি পরিসংখ্যান বেইজড মডেল এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। ক্লাইমেট মডেল কি তার জন্যে এই লেকচারটি দেখুন।
উপরের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
এই বক্তব্য ঠিক আছে। কিন্তু সেটা মডেলের সীমাবদ্ধতার কারণে নয়? সমস্যা হচ্ছে যে আবহাওয়া প্রসেসটাই সর্বোচ্চ পাচঁ দিনের একটি সিস্টেম। এ কারণেই পাঁচ দিনের বেশি প্রেডিক্ট করা সম্ভবপর নয়।
@স্বাধীন,
আপনি এখনও আমার মূল প্রশ্ন ( ২ বার ) এড়িয়ে একের পর এক দার্শনিক উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। আমি জানতে চাইলাম , শুধু একটা ক্লাইমেট তত্ত্বের নাম উল্লেখ করুন যেখানে ইম্পিরিক্যালি দেখানো হয়েছে যে , x পরিমান CO2 এমিশন থেকে y পরিমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় । আপনি উত্তর এখনও দেন নি। আগে এই উত্তরটা দিন , তারপর ফিজিক্সের, তথা, ফ্লুইড মেকানিক্স, থার্মোডাইনামিক্স ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহভরে আলোচনা করবো । ও হ্যা , অরবিটাল মেকানিক্স এর প্রসঙ্গ আনেন নি
এক বারও। সেটা নিয়েও তখন কথা হবে।
@স্বাধীন,
(এবং @সংশপ্তক)
কোন একটা মডেল কিসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি সেটা তো তার বৈজ্ঞানিকতা প্রমাণে শেষ বিচারে অর্থহীন। সংশপ্তক আগে লিখেছেন আবহাওয়া মডেলগুলি পরিসংখ্যান ভিত্তিক (as if সেটি একটি দোষ), আপনি এখন লিখছেন সেটি পদার্থবিদ্যার নানান সূত্রের ওপর নির্মিত (as if সেটি একটি গুণ)। সঠিক প্রেডিকশনের ক্ষমতাই বিজ্ঞানের একমাত্র যাচাই পদ্ধতি।
@রৌরব,
নিশ্চয়ই , আমি তো সেটাই জানতে চাইছি – ক্লাইমেট মডেলগুলো বলতে পারে কি না যে, x পরিমান CO2 এমিশন থেকে y পরিমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
@রৌরব,
এই কথাতে দ্বিমত নেই। তবে অনেক মডেল বা গানিতিক সূত্র লিমিটেড প্রেডিকশান দেয় নানান সীমাবদ্ধতার কারণে। সেগুলো শত ভাগ প্রেডিকশান দেয় না বলে বাতিল করে দিতে পারবেন না। যতক্ষণ একজন মডেলার সেই সীমাবদ্ধতাগুলো জেনে সেই প্রেডিকশানকে ব্যবহার করে সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় যখন কেউ সেই প্রেডিকশানকে সম্পূর্ন সত্য ধরে নিয়ে এগোয়।
@রৌরব,
(বিসমিল্লা বইলা শুরু করলাম)
(Y)
উৎসের গুণগত বিচার দুইনম্বর প্যাঁচ। দুইনম্বর এই কারণে যে এটা যে ফলসিফায়েবিলিটি নির্ধারণে একটা ফ্যালাসি, সেইটা দর্শানো সহজসাধ্য। কিন্তু দুইনম্বর প্যাঁচ হইলো – প্রবাবিলিস্টিক প্রেডিকশন দেয়া তত্ত্ব ফলসিফায়েবিলিটির মান উত্তীর্ণ হয় না – এমন চিন্তাভাবনা। এর পিছনে সম্ভবত এমন ভাবনা কাজ করে যে প্রেডিকশান হয় একশভাগ সত্য হবে, নয়তো সেটা ফলসিফাইড। কিন্তু ফলসিফায়েবিলিটির জন্যে প্রেডিকশানের এমন বাইনারিমূর্তি ধারণের বাধ্যবাধকতা আছে কি? এটাই বেশি বিচার্য যে পর্যবেক্ষণ থেকে যাচাই করা যায় কিনা। বহু ক্ষেত্রে প্রেডিকশানের অ্যাকুরেসিটাই বিচার্য। একশভাগ সঠিক নয়তো বেঠিক, এইভাবে তত্ত্বকে ফেলে দেয়া হয় না। দুইটা তত্ত্বের মধ্যে যেটার প্রেডিকশান অ্যাকুরেসি বেশি, সেটা অধিক গ্রহণযোগ্য। যদিও একটাও একশভাগ সঠিক প্রেডিকশান দিতে সক্ষম না। সত্যি কথা বলতে একশ ভাগ সঠিকতার ব্যাপারে এই যে শুচিতা, এটা জগতের উপর একটা ডিটার্মিনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা থেকে সম্ভবত উৎসারিত। এটা ঠিক যে বহু কিছু আমরা নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করতে পারি। কিন্তু তেমনটা সার্বিকভাবে পোষণ করার কোনো ভিত্তি নাই। বহুদিন হলো আমরা অনির্দিষ্টতা বা আনসার্টেইনটি নিয়ে ডিল করছি। সেটা আমাদের তত্ত্ব বা পর্যবেক্ষণ যন্ত্রের দুর্বলতা হোক আর প্রকৃতির ইনহেরেন্ট অনির্দিষ্টতা হোক, তত্ত্বের কাছে এই মুহূর্তে একশভাগ সঠিকতা দাবি করার সুযোগ নাই। আর এই অসুযোগ সেই তত্ত্বকে অফলসিফায়েবল করে কি না এই তর্ক একেবারে নির্বোধ না। অন্তত পপার এই নিয়ে তর্ক জুড়ে দিচ্ছেন এমনটা সহজেই কল্পনা করা যায়।
@রূপম (ধ্রুব),
সহমত। (Y) ।
@রূপম (ধ্রুব),
সোবহান্নাল্লাহ বলিয়া নেই আপনাকে দেখিয়া আগে।
না রে ভাই, আমি আপনার মতই কোয়ান্টিটেটিভ বলিয়াই আমার ধারণা। আমার কোন সমস্যা নাই বলিতে যে…
আবহাওয়ার ঙরাচু মডেল আগামী সাড়ে চার দিনের পূর্বাভাস সাড়ে ছেষট্টি পার্সেন্ট সঠিকতায় দিয়া থাকে, এবং ইহা exactly to that extent বৈজ্ঞানিক।
তবে…
এখানে যেন অন্য কি বলছেন মনে হচ্ছে। খোলাসা করবেন নাকি? এজায়গাটা বেশি ঘিঞ্জি লাগলে থ্রেডটা নিচে নিয়ে যেতে পারেন সচ্ছন্দে।
@রৌরব,
এখানে আসলে প্যাঁচের একটা হেজামোনি লাগাইয়া দিছি কিছুটা। বলতেছি যে যেই ধরনের প্রবাবিলিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাইলাম আমি ভাবতেছিলাম যে পপার সেইটা মানতে খুঁত খুঁত করতেন। অনুমান। নিশ্চিত না। তারপরেও এইটা খুব প্রাসঙ্গিক তর্ক, আরো বহুজনেই সামনে এই তর্ক করবেন, এইটা কল্পনা করতে পারতেছি। এই অর্থে সম্ভবত একেবারে নির্বোধ তর্ক না। তয় এই প্যাঁচটা না লাগাইয়া শেষ করতে পারতাম আসলে এই বইলা যে, সাড়ে ছেষট্টি পার্সেন্ট সঠিকতাপূর্ণ তত্ত্ব কন্সিস্টেন্টলি সাড়ে ছেষট্টি পার্সেন্ট কাজে দেয়, যা যেকোনো পীরের (যা কিনা বলা যায় ৫০% সঠিক) প্রফেসির চেয়ে অধিক সঠিক ও কাজের, ফলে প্রবাবিলিটি রুলস, ডিল উইথ ইট!
@রূপম (ধ্রুব),
নিচে দেখেন।
@সংশপ্তক,
এই মন্তব্যের জবাবে কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না। কেন যেন মনে হচ্ছে সহজ বিষয়টুকু আপনি বুঝতে অপরাগ। কম্পিউটার নির্ভর ক্লাইমেট মডেল বলে কি বুঝাচ্ছেন সেটাও ধরতে ব্যর্থ হচ্ছি। যে কোন নিউমেরিকাল মডেলই এক বা একাধিক ইম্পিরিকাল অথবা থিউরিটিক্যাল তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। ক্লাইমেট মডেলগুলোও তাই। আর আমি যে স্পেশাল ইস্যুটির লিঙ্ক দিয়েছি সেগুলো সব সাইন্টিফিক জার্নাল, পিয়ার রিভিউড। এটাকে দার্শনিক প্রবন্ধ কেন বলছেন সেটাও বুঝতে পারছি না। ক্লাইমেট চেইঞ্জ হাইড্রোলজিকাল সাইন্সের একটা অংশ মাত্র। হাইড্রোলজি, হাইড্রোলিক্স, ফ্লুইড মেকানিক্স এগুলো পিউর ফিজিক্সেরই অংশ।
আমি যে সাইটটির লিঙ্ক দিয়েছি সেটার প্রথম লেকচারটি দেখুন তারপরেও আপনার প্রশ্নের জবাব না পেলে আমি আপনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমি যে সাইটিটির লিঙ্ক দিয়েছি তারা ইউনিভার্সিটি অফ ভিক্টোরিয়া, কানাডার একটি রিসার্চ গ্রুপ যারা শুধু ক্লাইমেট চেইঞ্জ নিয়েই গবেষণা করছে। প্রথম লেকচারের পুরোটিই আপনার কার্বন ও গ্রীন হাউজ গ্যাসের এফেক্ট নিয়ে। লেকচারটি না দেখেই আমার কাছে তত্ত্ব চাওয়া দুঃখজনক। 🙁 লেকচারটি না দেখতে চাইলে সচল জাহিদের সিরিজটি পড়তে পারেন। জাহিদের লেখাটি এই লেকচারগুলোকে ভিক্তি করেই লেখা। বিশেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে আপনার প্রশ্নের জবাব রয়েছে।
@স্বাধীন,
আমি যেটা জানতে চাইছি সেটাই তো পা্চ্ছি না । আমি ক্লাইমেট মডেল সম্পর্কে না জেনে আপনার সাথে তর্ক করছি না।
শুধু একটা ক্লাইমেট মডেলের নাম উল্লেখ করুন যেখানে ইম্পিরিক্যালি দেখানো হয়েছে যে , x পরিমান CO2 এমিশন থেকে y পরিমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় – cause and effect । এর বেশী কিছু আমি চাই ছি না।
@সংশপ্তক,
আমি সন্দেহ প্রকাশ করছি আপনার সে জানায়। উপরের আরেকটি মন্তব্য দ্রষ্টব্য।
আপনার এই প্রশ্নটিও পরিষ্কার নয়। একটি কার্বন ডাই অক্সাইড অনু কি পরিমান তাপ এবজর্ব করে সেটা থার্মোডাইনামিক্স এর অংশ। সেখান থেকে সেটি বলে দেওয়া সম্ভব। এই ভিডিওটিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তাপ শোষণ করে। তাই আপনার প্রশ্নটি ক্লিয়ার নয় আমার কাছে। আপনি কি কার্বন ডাই অক্সাইড যে তাপ শোষণ করে সেটি সম্পর্কে সন্দিহান নাকি সন্দিহান যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড আসলেই বেড়েছে কিনা? রিসার্চাররা গত কয়েকশত বছরের ডাটা থেকে এটাও পরিষ্কার দেখিয়েছে যে কি পরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়েছে। শুধু একটা ক্লাইমেট মডেল জানতে চাওয়াটাই ভুল। কারণ সব মডেলেরই বেসিক কাছাকাছি। আপনার প্রশ্নটি আবার নুতন ভাবে উপস্থাপন করুন। দেখি আবারো বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবো।
@স্বাধীন,
শুধু একটা মডেলের নাম বলুন না কেন। তারপর সেই মডেল নিয়ে আলোচনা হবে।
@সংশপ্তক,
ওয়েল, সে ক্ষেত্রে আমাকে সময় নিতে হবে। আমি এই পর্যন্ত যা বলেছি তা ছিল ইন-জেনেরাল ধারণা থেকে। আপনি যখন মডেলের স্পেসিফিক অংশ নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী, সেক্ষেত্রে আমাকে আরো ডিটেইলস জানতে হবে। জেনে আবার মন্তব্য করবো।
হোমিওপ্যাথি নিয়ে সুমিত্রা পদ্মনাভন এর হোমিওপ্যাথি কতটা বিজ্ঞানসম্মত?
রিচার্ড ডকিন্স বলছেন হোমিওপ্যাথি নিয়ে
httpv://www.youtube.com/watch?v=8KbLHii8M2A
‘জ্যোতিষতত্ত্ব ও হোমিওপ্যাথি ভুয়া’
@সৈকত চৌধুরী,
সবগুলো লিংকের জন্য ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী, চমতৎকার ভিড্যু!
ধন্যবাদ।
জোতিষশাস্ত্র নিয়ে প্রচুর লেখেছেন প্রবীর ঘোষ।
সমতল পৃথিবীতে বিশ্বাসী পাগল-ছাগলদের সাইট।
চাঁদে অবতরণ সম্পর্কিত কন্সপিরেসি থিওরির জবাব এখানে আছে
Third-party evidence for Apollo Moon landings
Examination of Apollo Moon photographs
টেলিপ্যাথিতে বিশ্বাস করেন ড. আমিনুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, দর্শন বিভাগ, ঢা.বি.
উনি বেশ মুমিনও বঠে! এখন সাধারণ মানুষকে কি বলব?
পৃথিবী নয় সূর্য ঘোরে- এরকম বিশ্বাসী মানুষেরও কিন্তু অভাব নেই।
@সৈকত চৌধুরী,
(Y)
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও নিজ সন্তানকে হরলিক্স খাওয়ান।
উদ্ভিদ বিদ্যা ও প্রানিবিদ্যা বইয়ের লেখক শ্রেনীকক্ষে ডারউইনকে বানরের সাথে তুলনা করেন।
পিএইচডি ডিগ্রিধারি আমার lab-mate হোমিও চিকিৎসা নেন।
ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে আর মন্তব্য দীর্ঘায়িত করতে চাই না। তবে একটু বলতেই হয়, পিএইচডি করতে দক্ষিন কোরিয়ায় এসেছি। এখানকার বাংলাদেশ কমিউনিটির সবাই মোটামুটি পিএইচডির ছাত্র। আমি এখন পর্যন্ত নিজের ধর্মীয় অবস্থান ব্যক্ত করার সাহস করতে পারি নি। 🙁
@সৈকত চৌধুরী,
ঠিক আছে কিন্তু মুক্তমনায়ও এই বিষয়ে লেখা থাকা উচিত বলেই মনে করি।এই বিষয়ে
http://www.independent.co.uk/opinion/the-real-romance-in-the-stars-1527970.html
http://www.beliefnet.com/Faiths/Hinduism/2001/01/British-Physicist-Debunks-Astrology-In-Indian-Lecture.aspx
লেখাদুটা বেশ কাজের।আপাতত একজন বলল প্রবাল পরতে ।আর হরলিক্সের কথা কি বলব টিভির বিজ্ঞাপনেতো তা রেগুলার খাবার মহয়ে গেছে।
@সৈকত চৌধুরী,
এইটা কি শুনি :))