:: হাইপেশিয়া :: রুকসানা/আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট :: অ্যাডা :: তসলিমা নাসরিন :: হুমায়ুন আজাদ :: দালাইলামা :: সুরের রাণী মমতাজ ::
বড় রাস্তার পাশের গলিতে কিঞ্চিৎ ভিতরদিকটায়, আলেকজান্দ্রিয়ার মাতালদল রোমান সাম্রাজ্যের সর্বনাশা পতনের পথে যাওয়ার জন্য কারা দায়ী এবং অরেস্টেসের মত অপরিপক্ক গভর্নর কিভাবে জনতার কাছে রাতে-দিনে নাকাল হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে তুমুল তর্কে লিপ্ত হয়েছে। তর্ক না বলে প্রলাপ বলাই ভালো। হঠাৎ করে অপেক্ষাকৃত বয়স্কজন হাত তুলে সবাইকে চুপ করতে বলে এবং কান পেতে শুনতে চেষ্টা করে কোন দিক থেকে আওয়াজটা আসছে। মাতালদলের প্রলাপের শব্দ কমে আসলে রাস্তার উপর জনতার কোলাহল ক্রমাগত বাড়তে থাকলো। শহরের ভদ্রমহিলারা উঁকি মারলো বাসার ছাদ থেকে, ফেরিওয়ালারা তাদের কেনা-বেচা বন্ধ করে হতভম্বের মত তাকিয়ে থাকলো, বোতল হাতে বেরিয়ে এসে মাতালকূল শিরোমণি চেঁচিয়ে বললো, যা, নিয়ে যা বেজন্মাটাকে, জন্মের মত করে শিক্ষা দিয়ে দে। রাস্তার উপর দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে, চুলের মুঠি ধরে, পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ভদ্রবসনা নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ক্রোধোন্মত্ত এক দল। যারা এখনো চিনতে পারেনি, জনতার ভীড় ঠেলে খানিকটা সামনে এসে তারা দেখতে পায়, রাস্তার ধূলো মেখে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া রক্তাক্ত এই নারী আর কেউ নয়, আলেজান্দ্রিয়ার বহুল আলোচিত ‘হাইপেশিয়া’।
গ্রীকদেশীয় বিদ্বান বাবা থিয়নের কাছে গণিত আর জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগৎ দেখার পাশাপাশি খুব ছোটবেলা থেকেই হাইপেশিয়া দেখেছিলো যুক্তির অপার সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্য প্রচারের জন্য আলেকজান্দ্রিয়ার মিউজিয়াম আর লাইব্রেরীকে বানিয়ে নিয়েছিলো নিজের পাঠশালা। তাঁর প্রজ্ঞার আলোয় আলোকিত হতে দুর-দূরান্ত থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার সেই পাঠশালায় ছুটে এসেছিলো জ্ঞানপিপাসুরা। দিনে দিনে বাবার কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞানের গন্ডি অতিক্রম করে হাইপেশিয়া বিচরণ করে দর্শনের অবাক রাজ্যে। অচিরেই খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত আলেকজান্দ্রিয়ায়, আস্তে আস্তে সাধারণ জনতা এসে মন্ত্রমুগ্ধের মত হাইপেশিয়ার মুখ থেকে শুনতে থাকে সক্রেটিস, প্লেটো আর দর্শনের যতসব অমৃতবাক্য।
ছবি:শিল্পীর কল্পনায় হাইপেশিয়া, ছবির সৌজন্যেঃ www.smithsonianmag.com
খোদ আলেকজান্দ্রিয়ার গভর্নর অরেস্টেস সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন হাইপেশিয়ার সাথে। হাইপেশিয়ার ছাত্রদের মাঝেই আছে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা অভিজাত আর প্রভাবশালীদের সন্তান-সন্ততিরা, যারা পরবর্তীতে প্রশাসনের নামী-দামী সব আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। তাই, প্যাগান ধর্মাবলম্বীদের অনুরাগভাজন, সুন্দরী, সৌম্য, সম্ভ্রান্ত হাইপেশিয়ার সাথে প্রণয়ের ভাব জমাতেও কম চেষ্টা করেননি অরেস্টেস। কিন্তু যার রক্তের মাঝে জ্ঞানের পিপাসা আর যুক্তির আলোড়ন, প্রণয়ের প্রেমপ্রাসাদে বন্দী হবার তার সময় কোথায়। শুধু অরেস্টেস নয়, ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত হাইপেশিয়ার প্রেমে পড়েছিলো তার নিজের ছাত্রদের মধ্যকার অনেকেই, কিন্তু কঠিন ভাষায় তাদের কাছে অপারগতা আর অনীহা প্রকাশ করে হাইপেশিয়া। প্রেমপ্রত্যাশী এক যুবককে সকলের সন্মুখে ঋতুস্রাবের কাপড়ের টুকরো তুলে ধরে হাইপেশিয়া বলেছিলো, “দেখ, এই কাপড়ের টুকরায় তাকিয়ে দেখ! কই, আমিতো কোথাও সৌন্দর্য দেখতে পাই না, দৈহিক কামনা বাসনার মধ্যে সৌন্দর্য থাকতে পারে না।”
কিন্তু একজন নারীর অপরিসীম প্রভাব আর প্রতিপত্তিতে, অহংকারী-অনমনীয় মনোভাবে সবার আগে যে প্রতিষ্ঠানের গায়ে আগুন ধরে ওঠার কথা, যার অহমিকায় সবচেয়ে বেশি আঘাত লাগার কথা, জ্বলে উঠলো নব্য প্রতিষ্ঠিত এবং দ্রুত শাখা-প্রশাখা বিস্তারকারী সেই চার্চ। প্যাগান ধর্মাবলম্বী হিসেবে চিহ্নিত, ৩৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী হাইপেশিয়ার এমন একটা সময়ে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করলো যখন খ্রিস্টান আর প্যাগান ধর্মাবলম্বীরা পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত; ঘাত-প্রতিঘাত চলতে লাগলো আলেকজান্দ্রিয়ার খিস্টান এবং অন্য ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মধ্যে। এসবের মধ্যে হঠাৎ একদিন রোমান সম্রাট থিওডোসিয়াস ডিক্রি জারি করে খ্রিস্টানধর্ম ছাড়া অন্য সবধর্মের আচার-আচরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। সুযোগসন্ধানী, প্রতিহিংসাপরায়ণ আলেক্সান্দ্রিয়ার আর্চবিশপ থিওফিলাস এই সুযোগে সম্রাট থিওডোসিয়াস’র কাছ থেকে প্যাগান টেম্পল সেরাপিয়াম ধ্বংসের নির্দেশ আদায় করে নিলো।
এই ‘সেরাপিয়াম’-এ ছিলো হাইপেশিয়ার পাঠশালা; আলেকজান্দ্রিয়ার জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু। ধর্মান্ধ উন্মত্তরা যুগ যুগ ধরে যেই জিনিসকে ভয় পেয়ে এসেছে, যখনি সুযোগ পেয়েছে সবার আগে যে জিনিসটা ধ্বংস করেছে, যেই জিনিসটা তাদের কাছে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সেই আবাসস্থল-“পুস্তক”; যে পুস্তক মানুষকে প্রশ্ন করতে শেখায়, মানুষকে বিতর্ক করতে শেখায়, মানুষকে যৌক্তিক হতে শেখায়, অন্ধ বিশ্বাস থেকে সরে আসতে শেখায়। বার বার ধ্বংস হতে থাকা আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরীর পুস্তকগুলির অনেকাংশ সুরক্ষিত ছিলো এই ‘সেরাপিয়াম’-এ। উন্মত্ত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা রোমান সৈনিকদের সহায়তায়, চার্চের প্রত্যক্ষ নির্দেশে আগুন জালিয়ে মুহূর্তেই ধূলোয় মিশিয়ে দিলো ‘সেরাপিয়াম’-এ রক্ষিত লক্ষ লক্ষ পুস্তকের পাতা। লুটপাট করতে শুরু করে দিলো যে যেদিকে পারলো। কিন্তু একদল মূর্খের কাছে লাইব্রেরীতে লুট করার কিই-বা আর থাকে, পুস্তকের পাতা-তো তাদের কাছে কাগজের উপর কালির আঁচড় ছাড়া কিছুই না। তাই যেখানে সেখানে ভাংচুর করে, যাদেরকে ভিতরে খুঁজে পেলো তাদেরকে হত্যা করে, তাদের রক্তে শরীর ভিজিয়ে খুনের নেশা মেটালো আক্রমণকারীর দল। অপরদিকে, যার কাছে পুস্তকের পাতা জীবনের চেয়েও দামী সেই হাইপেশিয়া সমস্ত শরীরে করে, দু’হাতে করে, যেভাবে যেমন করে পেরেছে পুস্তক আগলে ধরে পরিত্যাগ করলো তার প্রিয় পুস্তকাগার।
‘থিওফিলাস’-এর মৃত্যুর পর ৪১২ খ্রিস্টাব্দে তার যোগ্য উত্তরসূরী এবং নিজের ভাইয়ের ছেলে সিরাল আলেকজান্দ্রিয়ার আর্চবিশপ হিসেবে অধিষ্ঠিত হলো। অগ্রজদের দেখানো পথে হেঁটে, ধর্মকে নোংরা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ‘সিরাল’ সফলভাবে ইহুদী ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে নির্বাসিত করতে সমর্থ হলো। কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ার গভর্নর রোমান সম্রাটের প্রতিনিধি ‘অরেস্টেস’কে তখনো হাতের মুঠোয় আনতে পারেনি ‘সিরাল’। তার উপর অরেস্টেস’র সাথে আছে খ্যাতিমান ও প্রভাবশালী ‘হাইপেশিয়া’ এবং তার সম্ভ্রান্ত উচ্চবর্গীয় অনুসারীবৃন্দ। নানা কৌশলে অরেস্টেস’কে চার্চের কাছে মাথা নত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ‘সিরাল’ এবং তার অনুসারীরা বুঝে উঠে, হাইপেশিয়াকে ঠেকাতে না-পারলে অরেস্টেস’র সাথে সম্পর্ক প্রতিস্থাপনের সকল প্রচেষ্টা অর্থহীন হয়ে যাবে।
ধর্মকে পুঁজি করে ফুলে-ফেঁপে ওঠা ‘সিরাল’ দিনে দিনে সাধারণ মানুষের উপর তার প্রভাব বাড়াতে থাকে একটু একটু করে। অন্যদিকে, খ্রিস্টান ধর্ম যাকে নিজের অবস্থান থেকে একবিন্দুও টলাতে পারেনি, প্রগতিশীল চিন্তায় অভ্যস্ত সেই হাইপেশিয়া দিনে দিনে চার্চের আক্রোশের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বন্ধু-বান্ধব, গুণগ্রাহী এমনকি শেষ পর্যন্ত ‘অরেস্টেস’-ও তাকে অনুরোধ করে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা এবং শিক্ষাদান থেকে বিরত থেকে সে যেন চার্চের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করে। কিন্তু যুক্তি আর জ্ঞানের আলো যাকে একবার আলোকিত করে ফেলেছে সেকি আর কোনোদিন অন্ধকারের পথে পা বাড়াতে পারে। কোন কিছুই ‘হাইপেশিয়া’কে হার মানাতে পারলো না, অনড় থাকলো সে নিজের অবস্থানে। এমন তেজস্বী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, বিদূষী, মহীয়সী নারীকে বরদাস্ত করতে পারে সে ক্ষমতা অন্তত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা কোনো উপাসনালয়ের থাকতে পারে না। অবশেষে,‘সিরাল’-এর ঈশারায় তার অনুসারী ধর্মের সৈনিকদের আক্রমেণের লক্ষ্যে পরিণত হয় আলেকজান্দ্রিয়ার আলোকবর্তিকা হাইপেশিয়া। সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ৪১৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চের প্রকাশ্য দিবালোকে ‘সিরাল’-এর একদল অন্ধ অনুসারী রাস্তায় হঠাৎ পেয়ে গেলো ‘হাইপেশিয়া’-কে।
ছবি:আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তায় লাঞ্ছিত হাইপেশিয়া।
ছবির সৌজন্যেঃ http://www.smithsonianmag.com
চুলের মুঠি ধরে রথগাড়ী থেকে নামিয়ে সিরাল’র অনুসারীরা সহস্র জনতার মধ্যদিয়ে টানতে টানতে তাঁকে এবার নিয়ে যাচ্ছে খ্রিস্টানদের তথাকথিত উপাসনালয় সেজারিয়াম-এ। আলেকজান্দ্রিয়ার মাতালেরা আরো খানিকটা উচ্ছ্বসিত হয়ে এবার দলবেঁধে সমস্বরে বলতে থাকলো, যা, নিয়ে যা, জন্মের মত করে শিক্ষা দিয়ে দে। অন্যদিকে, প্রিয় শিক্ষকের অপরিসীম অপমান শিষ্যরা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো আর চোখের পানি মুছলো। প্রতিবাদ করতে গেলে ধর্মান্ধের দলের সন্মুখে পড়ে প্রাণ দেয়া ছাড়া এ-মুহূর্তে অন্য কোনো উপায় নেই।
উৎস্যুক জনতার সাথে সাথে তারাও তাকিয়ে দেখলো, প্রচন্ড এক লাথি দিয়ে হাইপেশিয়াকে ছুঁড়ে ফেলা হলো সিজারিয়াম’র মেঝেতে। দুইপাশ থেকে দুইজন টেনে ছিঁড়ে ফেললো পরিধেয় বস্ত্র। বিবস্ত্র হাইপেশিয়া লজ্জায় মুখ ঢাকার জন্য খুঁজে ফেলো না কোনা আড়াল। কাঁপতে থাকা হাইপেশিয়ার জন্য উন্মত্ত ধর্মবীররা এবার মেঝে থেকে হাতে তুলে নিলো পাথরের ফলক। একদল পাথর দিয়ে আঁচড়ে আঁচড়ে তুলে ফেললো তাঁর শরীরের সমস্ত চামড়া। ততক্ষণে যন্ত্রণায় কাতর হাইপেশিয়া’র আর্তনাদে ভারী হয়ে গেছে সিজারিয়াম’র ভিতরটা। কিন্তু চার্চের সাথে বিরোধ সৃষ্টিকারী এই অহংকারী নারীর জন্য শুধু এতটুকু শাস্তিইতো যথেষ্ট নয়। হিংস্র মানব সন্তানেরা হায়েনার মত চার পাশ থেকে টেনে খন্ড-বিখন্ডিত করে ফেললো হাইপেশিয়া’র সমস্ত শরীর। অনেক আগেই মৃত্যুর অন্ধকারে তলিয়ে গেছে আলেকজান্দ্রিয়ার আলো। তবু হায়েনাদের যেন ক্রোধ মিটেনা। তাই, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুড়িয়ে ছাঁই করা হলো। তারপর আলেকজান্দ্রিয়ার আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া হলো হাইপেশিয়া’র দেহভস্ম, আকাশ-বাতাসকে জানিয়ে দেয়া হলো চার্চের সাথে বিরোধে লিপ্ত হবার কি পরিণতি।
তথ্যসূত্র
ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০১১
[email protected]
** কাহিনীর বেশ কিছু অংশ নিয়ে মতবিরোধ আছে, বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্নরূপে বর্ণিত হয়েছে এই কাহিনী, আমি সূত্রগুলো যথাসম্ভব বিশ্লেষণ করে নিজের মত করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
What is the religion of Hypesia ? Was she Atheist or pagan ?
@shafayet,
যতদূর জেনেছি, প্যাগান বলেই ধারণা করা হতো।
(Y) (Y) সেই হাইপেশিয়ার মত হাজারো নারী জেগে উঠুক আমাদের দেশ তথা সারা পৃথিবীতে।
আমি মোবাইলের মাধ্যমে মুক্তমনার লেখাগুলো পড়ি।যদিও তা সময়সাপেহ্ম ও কিছুটা ঝামেলার।তবুও আপনাদের মত প্রতিভাবান,সৃজনশীল লেখকদের কলাম পড়তে এখানে বার বার ছুটে আসি।ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য।
@বালির বাধ,
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন। 🙂
@মইনুল রাজু,
খনাকে নিয়ে সিরিজে যেন একটা লেখা থাকে। যদিও খনা চরিত্রটা সত্য কিনা সেটা সম্পর্কে আমি নিজেও নিশ্চিত নই।(খনা-মিহিরের যুগল সমাধিস্থল অবশ্য একটা পাওয়া গেছে শুনেছি) তবে খনা চরিত্র তৎকালে ভারতবর্ষের বিদুষী নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং পুরুষশাসিত সমাজে একজন বিদুষী নারীর পরিনতি তুলে ধরে।
খনা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু যদিও জানা যায়নি,(অধিকাংশই উপকথা), তবুও আমার মনে হয় আপনি একটু গবেষনা করে একটা লেখা দিতে পারেন।
@রনবীর সরকার,
অনেক ধন্যবাদ। ‘খনা’ আমার নিজেরো খুব পছন্দের চরিত্র। কিন্তু, এই বিদেশের মাটিতে বসে আমার মনে হয় না, আমি পড়ার জন্য খুব বেশি কিছু পাব।
তবে, আপনার জন্য আশার কথা হচ্ছে, যতদূর মনে পড়ে এই মুক্তমনাতেই ‘খনা’-কে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই কেউ একজন লিখেছিলেন। একটু খুঁজে দেখলেই পেয়ে যেতে পারেন। 🙂
@মইনুল রাজু,
রণদীপম দা লিখেছিলেন। এখানে দেখুন।
@মিঠুন,
ঠিক এই লেখাটার কথাই বলছিলাম।
অনেক ধন্যবাদ লিঙ্কটা দেবার জন্য।
🙂
আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি কবে ধ্বংশ হয়েছিল? বিভিন্ন গল্প পাওয়া যায়।
১ম গল্পটি হলো , খৃষ্টপূর্ব ৪৮ সালে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি পুড়ে ধ্বংশ হয়ে গিয়েছিল। জুলিয়াস সীজারকে এর জন্য দায়ী করা হয়।
২য়টি – আপনার এই পোস্টে দেয়া গল্পটি। তবে কে বর্ণনা করেছে তারপরে নির্ভর করে কে দায়ী আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি ধ্বংশের জন্য। এক মতে ৪র্থ শতাব্দির শেষে খৃষ্টান , ইহুদী ও প্যাগানদের নিজেদের মধ্যে মারামারিকেই দায়ী করা হয় , যার পিছনে রাজনীতি ও জড়িত ছিল। এক প্রাচীন লেখকের দাবী মতে , আলেকজান্দ্রিয়ার লোকেদের মত মারামারি পছন্দ করে , এমন লোক দুনিয়ার আর কোথাও ছিল না।
৩য়টি- শেষ যে ব্যাক্তিকে দোষারোপ করা হয় , উনি হলেন মুসলিম খলিফা ওমর , যার নির্দেশে ৬৪০ খৃঃ এটাকে পুড়িয়ে দেয়া হয়। ৬মাস লেগেছিল লাইব্রেরীর সকল বই ও প্যপিরাস পুড়িয়ে পাবলিক স্নানাগারগুলোর পানি গরম করার কাজে।
কোন গল্পটা সত্য? হাইপেশিয়া নামে কেউ কি ছিল? আমি জানি না।
@ফারুক,
সবগুলিই সত্যি হতে পারে। ধ্বংসযজ্ঞ চালানো তো কারো একার সম্পত্তি না।
যতদূর জানি হাইপেশিয়ার অস্তিত্ব সন্দেহের বিষয় নয়। তবে ঠিক কি ঘটেছিল সেটা হয়ত তর্ক সাপেক্ষ।
@রৌরব,
তা পারে , তবে কিনা ৩টি গল্পের সময়কালের পার্থক্য প্রায় ৭০০ বছর। তারপরে আবার দুটি গল্পের ভিলেনরা হলো ধর্মান্ধরা। ভাবনার বিষয় বটে।
“So who did burn the Library of Alexandria? Unfortunately most of the writers from Plutarch (who apparently blamed Caesar) to Edward Gibbons (a staunch atheist or deist who liked very much to blame Christians and blamed Theophilus) to Bishop Gregory (who was particularly anti-Moslem, blamed Omar) all had an axe to grind and consequently must be seen as biased. ”
খুব সম্ভবত ন্যাশনাল জিওগ্রাফীর মতে ভুমিকম্পই ধ্বংশের জন্য দায়ী। তাদের মতে ভুমধ্যমহাসাগরে লাইব্রেরীটি ডুবে গিয়েছিল। তার কিছু ধ্বংশাবশেষ তারা দেখিয়েছিল , যতদুর মনে পড়ে।
@ফারুক,
তাতে কি? একই লাইব্রেরী বারবার ধ্বংস হতে পারেনা? সলোমনের মন্দির, সোমনাথে মন্দির একাধিক বার ধ্বংস হয়েছে।
এর কোন গল্পই সত্যি না হতে পারে অবশ্যই। সেটা ভিন্ন ব্যাপার। আপনার দেয়া উদ্ধৃতিটি কার?
@রৌরব,
কেন পারবে না , আবশ্যই পারে। তবে কিনা মন্দির আর লাইব্রেরীতে গুনগত কিছু পার্থক্য আছে। মন্দির যত সহজে পুনঃস্থাপন করা যায় , লাইব্রেরী যায় না। কারন তখনকার দিনে ছাপাখানা ছিল না, বই হাতে লিখতে হতো। এখনকার মতো মনে করলাম আর বইমেলা বা পুস্তক বিক্রেতার দোকানে গেলাম ও বই কিনলাম , এত সহজ ছিল না বই সংগ্রহের ব্যাপারটা। শোনা যায় তৎকালীন আলেকজান্দ্রিয়া শাসকের নির্দেশে কোন পর্যটকের কাছে কোন বই বা পান্ডুলিপি পাওয়া গেলে , তা বাজেয়াপ্ত করা হতো। সরকারী অনুলিপি লেখকরা দ্রুত সেই বই/পান্ডুলিপির অনুলিপি লিখে আসলটা রেখে দিয়ে নকলটা প্রকৃত মালিককে ফেরৎ দিত।
@ফারুক,
নিশ্চয়ই সহজ ছিল না, তবে সময়ের পার্থক্যটাও কম নয়। টলেমায়িক মিশরে ৩০০ বিসির দিকে প্রথম এই লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তারপর ২৫০ বছর পরে সিজার ধ্বংস করেছেন বলে কথিত। ২৫০ বছরে ধ্বংসযোগ্য প্রথম লাইব্রেরীটি যদি গড়ে তোলা যেতে পারে, তাহলে হাইইপেশিয়ার আমলে, অর্থাৎ আরো ৪০০ বছর পরে, কিছু বই-টই বোধহয় যোগাড় করে ফেলেছিলেন তাঁরা।
@ফারুক,
ইতিহাসের এই সমস্ত ব্যাপারগুলিতে রেফারেন্সের উপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। আমি সক্রেটিসকেও দেখিনি, এখন আমি যদি বলি যে সক্রেটিস বলে কেউ ছিলো না, তাহলে কারোরই কিছু করবার নেই। সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
তবে, এটা ঠিক যে, ক্ষেত্রবিশেষে ইতিহাস ব্যাপক আকারে পরিবর্তিত হয়ে যায়, বিশেষ করে সেখানে যদি কারো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় থাকে।
আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইব্রেরী সম্পর্কে জানতে আমি উইকিপিডিয়াতে দেখেছি(http://en.wikipedia.org/wiki/Library_of_Alexandria) এবং সেটাই আমার কাছে যথেষ্ট মনে হয়েছে। এছাড়া, ইতিহাসের এইসব বিষয়ে আমার জ্ঞান খুব সামান্য।
ভালো থাকবেন। 🙂
@মইনুল রাজু, আপনার সাথে একমত , সেকারনেই বলেছি এর উত্তর ‘আমি জানি না’।
আসলেই আপনার এই লেখা আমার বরাবরের মতৈ ভাল লেগেছে। আপনার লেখার হাত ভাল। তবে কিনা আমার স্বভাবই হলো স্রোতের বিপরীতে চলা। কিছু মনে করবেন না। ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।
@ফারুক,
মুহাম্মদের তৈরী আরব মরুদস্যুদের সন্ত্রাসী তান্ডবের ইতিহাস কিছুটা যে সত্য বলা হয়নি বইয়ে লেখা আছে, আর কিছুটা এখানে দেখুন-
httpv://www.youtube.com/watch?v=warAeok0yT4&NR=1
httpv://www.youtube.com/watch?v=2DSN4qz3Pps
httpv://www.youtube.com/watch?v=GkTnD6iXVv4&feature=related
@আকাশ মালিক,
মরুদস্যু শব্দটি খুবই হাসির এবং যথোপযুক্ত। জলদস্যু ও ভূমিদস্যুর নাম শুনেছি কিন্ত মরুদস্যু এ প্রথম শুনলাম।হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেছে।:lotpot: আমার মনে হয় তাদের এতোগুলো পত্নী ও উপপত্নীর ভরন পোষন জোগাতে বাধ্য হয়ে দস্যুবৃত্তির পথ খুঁজে নিতে হয়েছিল।
@তামান্না ঝুমু,
একাধিক পত্নী ও উপপত্নীর ভরন পোষন করার দায়িত্ব যে আরবদেরকে মরুদস্যুর জীবন বেছে নেওয়ার পথে এগিয়ে দিয়েছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে পরকালের বেহেস্তে ঢালাও সুরা আর নারী প্রাপ্তির আশ্বাসবাণীও একটা ফ্যাক্টার।
@আকাশ মালিক, সবার সব কথা , আর কানার দুই চোখের কথা। আমরা এখানে মরুদস্যুদের নিয়ে আলোচনা করছি না। Grow up man.
@ফারুক,
ওমর, আবু বকর, খালিদ বিন অলিদ, আমর ইবনে আস, এদের নাম পছন্দ হয় নাই বুঝি? রোমান, মিশর, পারসিয়ানদের হাজার বছরের সনাতন সভ্যতা মরুভুমির ডাকাতদের কর্তৃক ধ্বংসের ইতিহাস তাদেরই মুখে শুনতে ভাল লাগেনা বুঝি? এই ইতিহাস আরো একবার পড়ুন, বুঝতে পারবেন মুসলমানদের মাঝে আরেকজন হাইপেশিয়ার জন্ম কেন হলোনা।
@ফারুক,
আপনার কি মনে হয় আকাশ সাহেবের দেয়া ইউ টিউব লিঙ্কগুলি এই থ্রেড এর থেকে অপ্রাসঙ্গিক?ইসলাম ডিফেণ্ড করার লক্ষ্যে খেলতে নেমে তালজ্ঞান শুন্য হয়ে অনর্থক লাফালাফি করছেন।আকাশ সাহেব কে কানা বলে উপহাস করার সঙ্গে সঙ্গে আবার Grow up man বলে উপদেশও দিয়েছেন। আকাশ সাহেব যে যথেষ্ঠ প্রজ্ঞার অধিকার রাখেন তার পরিচয় মুক্তমনার আর্কাইভে রাখা তাঁর প্রবন্ধগুলি।ইউ টিউব থেকে ভিডিও গুলিতে দেখুন বক্তা ইসলামিক সেনা কত্তৃক আলেকযান্দ্রিয়া ধ্বংস হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।নাকি ওসব বাজে কাজ ইহুদিরা করেছিল বলে হাত ধুয়ে ফেলবেন।
আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছি যে ক’জন মানুষ দ্বারা তার একজন হচ্ছেন হাইপেশিয়া যদিও উনার সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কিছু আমি জানতে পারিনি ঘাটাঘাটি করেও। যতবার এই কাহিনি শুনি একই সাথে ঘৃণা, রাগ, ক্ষোভ জাগে ওই বর্বরদের জন্য আর হাইপেশিয়ার জন্য অনুভব করি শ্রদ্ধা, আর চোখে জনে অশ্রু।
আমি আমার এক সন্তানের নাম ঠিক করে ফেলেছিলাম ঠিক যখন হাইপেশিয়ার কাহিনি শুনি। আমার মেয়ের নাম হবে হাইপেশিয়া। জানিনা এই নামকরণের সার্থকতা দিতে পারব কিনা, কিন্তু চেষ্টার ত্রুটি থাকবেনা।
অনেক ধন্যবাদ এই সিরিজটায় হাত দেবার জন্য (F)
পরের পর্বগুলো তাড়াতাড়ি দিন। নইলে :-[
@লীনা রহমান,
আপনার যদি তিনটা মেয়ে হয়, তাদের কি কি নাম রাখতেন জানতে পারলে সিরিজটা লিখতে সুবিধা হতো। :))
সত্যি কথা হচ্ছে, অন্য সিরিজগুলো যেখানে একদিন বসে পাঁচ পর্বও লিখে ফেলা যেত, সেখানে এই সিরিজটা পাঁচ দিন বসে এক পর্ব লেখাও কঠিন। বেশ কিছু পড়াশোনা করতে হয়, বুঝতেই পারছেন। তারপরও, তাড়াতাড়ি লিখতে চেষ্টা করবো। 🙂
@মইনুল রাজু, মেয়ের নাম হাইপেশিয়া, আরেকটা হলে নাম হবে এথেনা। ছেলের নাম থুকিডাইডিস হবে কিনা এটা নিয়ে বিতর্ক চলছে, আমারে সবাই থুকির মা বলবে এটা আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছেনা। 😛
আমার যে কয়েকজন নারীকে খুব বেশি পছন্দ তারা হচ্ছেন মেরী ওলস্টোনক্রাফট, মেরী কুরি, বেগম রোকেয়া, হাইপেশিয়া, সিমন দ্যা বোভোয়ার।
মেয়ে আরেকটা হয়ে গেলে নাম মেরী রাখতে পারি, আর ছেলের নাম মাইকেল হতে পারে,(আমি মাইকেল মধুসূদনকে অনেক অছন্দ করি, আর যেকোন সিরিয়াল বা সিনেলায় কেন যেন মাইকেল নামের পাবলিকদের আমার চরম পছন্দ হয়, যেমন গডফাদার ছবির মাইকেল কর্লিয়নি, প্রিজন ব্রেক সিরিয়ালের মাইকেল স্কফিল্ড এমন)
(আমি দুঃখিত এই লেখাটাকে এইরকম নিজের হিজিবিজি ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা দিয়ে ভরিয়ে দেয়ার জন্য (*) )
@লীনা রহমান, এখানে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির পদধুলি পড়বে? এই মানুষটার প্রতিভা, জ্ঞানতৃষ্ণা ও কাজের সামনে আজীবন আমি অসহায় বোধ করেছি। জ্ঞানের কোন শাখায় নেই তিনি? এভাবে মানুষ পারে কেমন করে খন বুঝিনা, কেমন যেন লাগে, প্লিজ উনাকে আনবেন প্লিজ প্লিজ প্লিজ
(বিঃদ্রঃ এইটা আমার পোলার নাম। নিজের ত কোন ক্ষমতা নাই উনাদের আর কিছু নিজের জীবনে চর্চা করার তাই অক্ষমের মত নামগুলো ধার করছি 🙁 )
@লীনা রহমান,
রোকেয়া, ভিঞ্চি কে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। যাদের কথা একটু কম হয়েছে, তাদেরকে নিয়ে লেখার বেশি ইচ্ছা। দেখা যাক। 🙂
@লীনা রহমান,
😀
ভাইয়া, সাথে আছি এই সিরিজে। 🙂
@নীল রোদ্দুর,
সিরিজে স্বাগতম আপনাকে। পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য আগাম আমন্ত্রণ রইলো। 🙂
মইনুল রাজুর ভিন্ন স্বাদের লেখা বা সিরিজ। স্বাদ ভিন্ন হলেও ভালোই লাগছে। চলুক।
@ইরতিশাদ,
ইরতিশাদ ভাই,
আসলে একটু চেষ্টা করে দেখছি, ভিন্ন ধারায় লিখতে পারি কি-না। মনে হচ্ছে খুব দ্রুতই ব্যর্থ হবো। 😛 দেখা যাক। 🙂
@মইনুল রাজু,
আমার ভালবাসা হাইপেশিয়ার জন্য (F)
আপনার জন্য (D)
@কাজী রহমান,
আপনার জন্য (C)
ভালো থাকুন। 🙂
@মইনুল রাজু,
ঠিক আছে। ব্ল্যাক কফি তো?
আমার কন্যাকে হাইপেশিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। সে এখন তার মহা ভক্ত। আমি শঙ্কিত (সত্যি কথা)। দেখা যাক। :))
@কাজী রহমান,
শঙ্কিত হবার কিছু নেই। এখনকার যুগে আমরা আছিতো, অত সহজে অন্যায় হতে দেব না। আপনার কন্যার জন্য শুভকামনা। 🙂
@মইনুল রাজু,
আমি জানি। ধন্যবাদ।
বৈশাখী মেলা, বই মেলা, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি ছাড়াও অন্য সব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গুলোর ব্যাপ্তি আর শক্তি দেখে মন ভরে যায়। মৌলবাদীরা বেশ দেরি করে ফেলেছে বলে আমার বিশ্বাস। বাঙালি, আমরা এখন আমাদের সাংস্কৃতিক বলয়ে সুরক্ষিত, এমনটাই ভাবতে চাই। পরবর্তী লেখাগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।
হাইপেশিয়াকে নিয়ে লিখছেন, মন্তব্য না করে আর থাকা যায় না। সিরিজে নিয়মিত হলাম। (Y)
@স্বাধীন,
না, পুরোটা হাইপেশিয়াকে নিয়ে লিখবো না। বিভিন্ন ধরণের দশজনকে নিয়ে লিখবো। পরবর্তী পর্বগুলোর জন্য আগাম আমন্ত্রণ রইলো। 🙂
@মইনুল রাজু,
হাইপেশিয়াকে নিয়ে কি আরেকটা পর্ব হবে? না পরের পর্ব অন্যজন আসবে?
@রনবীর সরকার,
পরের পর্বে অন্যজন আসবে। 🙂
অন্ধবিশ্বাস মানুষকে কেমন করে পশু করে দেয় তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হাইপেশিয়ার কাহিনী। হাইপেশিয়া সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি অভিজিৎদার লেখা হতে। তবে আপনার লেখায় হাইপেশিয়ার উপর নির্যাতনটা অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে ফুটে উঠেছে। সত্যি কথা বলতে অনেক কষ্ট পেলাম।
জ্ঞানতাপসী হাইপেশিয়ার প্রতি রইল অন্তরের শ্রদ্ধাঞ্জলী।
আচ্ছা যেদিন এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল, সেটা কোন তারিখ ছিল তা কি জানা গেছে?
@রনবীর সরকার,
এটা লিখতে গিয়ে আমাকে অনেক পড়তে হয়েছে, কিন্তু কোথাও আমি তারিখটা খুঁজে পাইনি; সর্বোচ্চ মার্চ মাস জানতে পেরেছি। সত্যি বলতে কি, হাইপেশিয়ার মৃত্যু এভাবে হয়েছে কি-না সেটা নিয়েও মতবিরোধ আছে। তবে বেশিরভাগ সূত্রেই হাইপেশিয়ার মৃত্যুর বর্ণনা এভাবেই দেয়া আছে।
@মইনুল রাজু,
১ মার্চ হল আন্তর্জাতিক যুক্তিবাদী দিবসের প্রাক্কালে আপনার লেখাটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং মুক্ত- মনায় আন্তর্জাতিক যুক্তিবাদী দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ আয়োজনের প্রত্যাশা ছিল যা আপনি কিছুটা পূরণ করেছেন । এ জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এমন অনেক মানুষ পাবেন, তবে আমার অনুরোধ থাকবে নারীদের প্রাধান্য দিতে।
@গীতা দাস,
গীতা’দি, পুরুষশাসিত বিশ্বসমাজে নারীদেরকেইতো সবচেয়ে বেশি দমিয়ে রাখা হয়, তাদের অবদান অস্বীকার করা হয়; তারাই সবচেয়ে বেশি অপ্রকাশিত থাকে। অতএব, স্বাভাবিকভাবেই হয়তো নারীদের প্রাধান্য চলে আসতো। কিন্তু, এখন আমি সেটা আরো নিশ্চিত করবো।
@মইনুল রাজু,
আশা করি আপনার প্রচেষ্টা সফল হবে।
আমি কিছু নাম প্রস্তাব করতে চাই।
অং সাং সুচী
ইন্দিরা গান্ধি
ইভা পেরন
জেন অষ্টিন
আনা ফ্রাঙ্ক
বিজয়া লক্ষী পন্ডিত
অনেক দিন আগে “সংবাদে” রোকেয়ার সমসাময়িক এক গৃহবধূর এক
অসামান্য জীবন ইতিহাস পড়েছিলাম। গৃহকর্ম, সন্তান পালনের পাশাপাশি এই
গ্রাম্য বধূটি যেভাবে লেখাপড়া শিখেছিলেন তা গল্পকেও হার মানায়!
তার নাম সম্ভবত রাশমনি(ভূলও হতে পারে)।
এ ব্যাপারে দৈনিক সংবাদ হয়ত সাহায্য করতে পারে
@লাইজু নাহার,
অনেক ধন্যবাদ।
সম্ভবত রাশমনি হাজং ও রানী রাশমনি নামে দুটো চরিত্র আছে। 🙂
@মইনুল রাজু,
ওপরে এই রাসসুন্দরী দেবীর কথাই বলতে চেয়েছি!
রোকেয়ার জন্মের একাত্তর বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন রাসসুন্দরী দেবী (১৮০৯-১৯০০)। তিনি পাবনা জেলার পোতাজিয়া গ্রামের মেয়ে ছিলেন। মাত্র বারো বছর বয়সে বিয়ে হয় ফরিদপুর জেলার রামদিয়া গ্রামে। তাঁর আত্মকথা ‘আমার জীবনে’ তিনি লিখেছেন,–‘আমার অদৃষ্টক্রমে তখন মেয়েছেলেতে লেখাপড়া শিখিত না। তখনকার লোক বলিত, বুঝি কলিকাল উপস্থিত হইয়াছে দেখিতে পাই। এখন বুঝি, মেয়েছেলেতেও পুরুষের কাজ করিবেক।’ (অন্তঃপুরের আত্মকথা)।
জ্ঞানের পিপাসা তাঁর মধ্যেও ছিল। “ … এমনকি যদি একখানি লেখা কাগজ দেখিতাম, তাহাও লোকের সম্মুখে তাকাইয়া দেখিতাম না, পাছে কেহ বলে যে লেখাপড়া শিখিবার জন্যই দেখিতেছে।… এই পুস্তকের পাতা যদি আমার হাতে কেহ দেখে তাহা হইলে নিন্দার একশেষ হইবেক … ঐ তালপাতাটি একবার দেখি, আবার ঐ পুস্তকের পাতাটিও দেখি, আর আমার মনের অক্ষরের সঙ্গে যোগ করিয়া দেখি, আমার সকল লোকের কথার সঙ্গে যোগ করিয়া মিলাইয়া মিলাইয়া দেখি। … মেয়েছেলে বলিয়া কি এতই দুর্দশা। চোরের মতো যেন বন্দী হইয়াই থাকি, তাই বলিয়া কি বিদ্যা শিক্ষাতেও দোষ?” (অন্তপুরের আত্মকথা)।
রাসমনির সময়ে রানী ভিক্টোরিয়া ছিলেন শাসক। কলকাতা শহরে মেয়েদের স্কুল খুলে শিক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলেও পুরুষদের তীব্র ও তীক্ষ্ম ব্যঙ্গোক্তি এবং সমালোচনা পড়লে আজকের নারীর কাছে হাস্যকর মনে হবে। রাসমনি তো গ্রামের ঘরের বউ, ভাইদের মুখে শুনে শুনে অক্ষর শিখছেন, ছেলের লেখা তালপাতা চুরি করে অক্ষর লেখা শিখেছেন। সংসারের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর গভীর রাতে নিজে নিজেই লেখাপড়া শিখতেন। একটা পুঁথি পড়ার জন্যও তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়েছে।
সূত্রঃ আর্টস.bdnews24.com
@লাইজু নাহার,
খুবই ব্যতিক্রমী মনে হচ্ছে। আমি উনার ব্যাপারে আসলেই দেখি কিছুই জানতাম না। দেখি, চেষ্টা করবো আরো তথ্য সংগ্রহ করতে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
হাইপেশিয়ার কাহিনীর সাথে কেন জানিনা আমাদের তসলিমা নাসরিণের সাদৃশ্য পাচ্ছি।
@আবুল কাশেম,
কিছু জিনিসের মিল আছে। কিন্তু প্রতিভাবান হবার পাশাপাশি হাইপেশিয়া অত্যন্ত অভিজাত এবং প্রভাবশালীও ছিলেন। তার উপর হাইপশিয়ার বিজ্ঞান কিংবা গণিতে যে অবদান আছে, তসলিমার সেটা মনে হয়না সে পরিমাণে আছে। তবে নিঃসন্দেহে তসলিমা নাসরিন সমাজ পরিবর্তনে অগ্রবর্তী এবং সাহসী ভূমিকা রেখে চলেছেন এবং মানুষজনের আক্রোশের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। সে-দিক থেকে ব্যাপারটা হাইপেশিয়ার মতই।
@মইনুল রাজু,
আপনার কথার সুত্র ধরেই বলতে চাই, যে নারী দুর্বিনীত সাহসের সাথে নিজের মনোভাব অকপটে প্রকাশ করে, অপ্রিয় সত্য কথা বলে সমাজে বিরাগভাজন হয়েছেন, দেশের মৌলবাদী এবং সফিষ্টিকেটেড বুদ্ধিজীবি এবং শিক্ষিত শ্রেনীর রোষানলের শিকার হয়েছেন সেই তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে কিছু লিখবেন আশা করছি।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আমি নিজের মত করে কাহিনী সাজিয়ে লিখছি। জীবিত অবস্থায় কাউকে নিয়ে কাহিনী লিখাটা একটু বেমানান মনে হচ্ছে। তারপরো মনে থাকবে।
ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂
হাইপেশিয়ার নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িয়ে আছে আলেক্সজান্দ্রিয়ার সেই অসাধারন লাইব্রেরীর ধ্বংশকান্ড। পুরো সভ্যতাকেই হাজার বছর পিছিয়ে দিয়েছে… সেই চেষ্টা এখনো চলছে.. বিভিন্ন রঙে বিভিন্ন মোড়কে ..
@কাজী মাহবুব হাসান,
এখনকার আধুনিক বিশ্বে নাকি আলেক্সান্দ্রিয়ার লাইব্রেরীর মাত্র এক শতাংশ বই টিকে আছে। জুলিয়াস সিজারের সময়ও একবার পুড়েছিলো আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরী। এই সমস্ত ক্ষতি আসলে পূরণ হবার নয়।
আফসুস, যদি হজরত ওমর ও মুয়াবিয়ার (রাঃ) আলেকজান্দ্রিয়া দখল করার ছবি দেখতে পেতাম-
httpv://www.youtube.com/watch?v=Paztsjhqwgk&feature=related
@আকাশ মালিক,
এই ভিডিওটা আগে দেখিনি, যদি ‘অ্যাগোরা’ মুভিটা দেখেছি। ওমরের দখল নিয়ে কোনো ভিডিও কি নেই, ওটাতো হাইপেশিয়ার-ও পরের কাহিনী?
মুভিটা কি দেখেছেন?
@শ্রাবণ আকাশ,
দেখেছি, আমার খুব ভালো লেগেছে। 🙂 কিন্তুর মুভ্যির পরিসমাপ্তি বাস্তবের মত করে করা হয়নি, যদি হাইপেশিয়ার মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক।
মইনুল রাজু,
বছর কয়েক আগে আমাদের অভিজিৎ রায় মনে হয় “হাইপোসিয়ার” উপর একটি লেখা লিখেছিল।তখন থেকে হাইপোসিয়া স্বমন্ধে অল্প অল্প জানি।
এবার মনে হয় ভালোভাবে সভ্যতার এমন এক বিদুষী নারীর কথা আপনার লেখার মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারব পর্ব ১ হিসাবে দেখে।
১ম পর্ব লেখাটি পড়তে পড়তে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায় আর সাথে সাথে এক অনন্ত ধিক্কার ও থুথু মুখ থেকে বের করে বেজন্মা আব্রাহামিক ধর্মের সকল পশুদের থেকেও অধ্ম পান্ডাদের মুখে চুঁড়ে দিলাম।:guli:
তাইতো ক্ষন-জন্মারা কুকুর-:-[ বিড়ালের মতো ইতিহাসে আস্থাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হয় আর হাইপোসিয়ার মতো জ্ঞানের আলোকবর্তিকারা মানুষের সভ্যতা যতদিন থাকে ততদিন বাঁচে থাকে।জয়তু হাইপোসিয়া।
রৌরবের মতো আমিও বলব আমারো এক দারুন প্রিয় চরিত্রকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য একরাশ ফুলের শুভেচ্ছা।(F) (F) (F) (F) (F)
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
মামুন ভাই, এবার যখন বইমেলার কথা লিখছিলেন, আমি মনে মনে ভাবছিলাম, আমি থাকলে প্রতিদিন আপনাদের সাথে যোগ দিতে পারতাম। কি আর করা, এবার না-হলেও হবে হয়তো কোনো একদিন। 🙂
@মইনুল রাজু,
থাকলে সত্যি আরো বেশী মজা হতো।
আশায় আশায় দিন চলে যায়……
এই সিরিজটি খুব চমৎকার হবে মনে হচ্ছে। আমার প্রিয় একটি চরিত্রকে চমৎকারভাবে উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ (F) ।
@রৌরব,
আমাদের দেশে যাদেরকে নিয়ে খুব বেশি রকমের কথাবার্তা হয়নি, সিরিজটাতে এমন কিছু মানুষকে নিয়ে লিখতে চেষ্টা করবো। আপনাদের জানা এরকম কোনো চরিত্র থাকলে জানাতে ভুলবেন না যেন। 🙂
@মইনুল রাজু,
কোন ধরণরে মানুষ? বিদ্রোহী? না কোন অর্থে মহৎ হলেই চলবে?
@রৌরব,
না বিদ্রোহী না, মহৎও না, ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ। যারা নামে সুপরিচিতও হতে পারে কিন্তু কাহিনী ঠিক মত সকলের পক্ষে জেনে ওঠা হয়নি।
@মইনুল রাজু,
আমার প্রিয় কিছু লোকের নাম দিলাম বিবেচনার জন্য:
জর্জ অরওয়েল
এডমুন্ড বার্ক
টমাস পেইন
মন্তেস্কু
দিদেরো
দোনাতেলো
@রৌরব,
অনেক ধন্যবাদ। 🙂