এ এক বিশেষ একাডেমী। এখানে যেতে হলে পথচারীকে জিজ্ঞেস করতে হবে না “ভাই খান একাডেমীটা কোন দিকে?”, বা কোন ট্রেন বা বাস ধরতে হবে সেটা খোঁজ করারও প্রয়োজন নেই। এই একাডেমীতে আপনি টিমবাকটু, তেঁতুলিয়া বা সান ফ্রান্সিসকো, বা পৃথিবীর যে কোন জায়গা থেকে নিমেষে চলে যেতে পারেন, ইন্টার্নেট সুপারহাইওয়ের কল্যানে, শুধু মাউসের এক ক্লিকে। কি এই একাডেমী? আরে কে এই একাডেমীর খান সাহেব? এটা হল গোটা বিশ্বের জন্য এক ভার্চুয়াল স্কুল। আর খান সাহেব হলেন সেই স্কুলের একমাত্র শিক্ষক। এই বিশ্ব শিক্ষকের নাম সালমান খান, সাল খান নামেই বেশি পরিচিত। বলিউড মার্কা নাম হলেও বলিঊডের সালমান খানের সঙ্গে নাম ছাড়া আর কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না বোধ হয়, বয়সেও প্রায় এক যুগ কনিষ্ঠ। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে এক কিংবদন্তীর নায়কে পরিনত হয়ে গিয়েছেন তিনি। অনলাইন শিক্ষায় এক বিপ্লবাত্মক ধারণা এনেছেন সাল খান। লক্ষ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী তাঁর, গোটা পৃথিবী জুড়ে। পড়ান গণিত থেকে আরম্ভ করে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি সবই। তিনি কাউকে চেনেন না। বিল গেট্স তাঁর এক প্রিয় ছাত্র, খান একাডেমীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি । সেটাও খান সাহেবের জানা ছিলনা। সম্প্রতি জেনেছেন। ইউটিউবে তাঁর ভিডিও টিইউটোরিয়ালের চ্যানেল আছে যেখানে এ পর্যন্ত ৭০২৯ টি মন্তব্য এসেছে। পড়তে শুরু করেছিলাম। যে পর্যন্ত পড়লাম প্রশংসার পর প্রশংসা। 1600+ ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরী ইতিমধ্যে শেষ করে ফেলেছেন তিনি। PBS এ তাঁকে নিয়ে ফীচার হয়েছে। CNN এ নিয়মিত আমন্ত্রিত অতিথি বিশ্লেষক হয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের উপর মতামত দিয়েছেন। MIT ও Harvard থেকে গণিত, তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল, ব্যাবসা প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রী করেছেন। ওয়াল স্ট্রীটে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও আছে তাঁর। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য জন্য জীবন নিবেদিত করার জন্য ওয়াল স্ত্রীটের লাভজনক চাকুরীর মায়া ত্যাগ করে, করপোরেটঁ জগতের হাতছানিকে উপেক্ষা করে এই তরুন বয়সেই নেমে গেলেন তাঁর মহান ব্রতে। প্রতিষ্ঠিত করলেন খান একাডেমী। ক্যালিফর্নিয়ার মাউন্টেইনভিউতে তাঁর বাড়ীর এক ক্লজেটকেই বানালেন তাঁর একাডেমী। এখান থেকেই সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীর জন্য তৈরী করে যাচ্ছেন হাজার হাজার ভিডিও টিউটোরিয়াল। গণিত থেকে ইতিহাস, বিবর্তন, জেনেটিক্স, অর্থনীতি কোনটাই বাদ পড়েনি। এমনকি ফরাসী বিপ্লবের উপরেও। সব ভিডিও পাঠই তাঁর নিজের তৈরী, নিজের কন্ঠে। এই বয়সে এরকম জ্ঞানের পরিধি আমি কখনো দেখিনি কারো মধ্যে। বিস্ময়ে অবাক হতে হয়। তাঁর ইচ্ছা মৃত্যুর আগে কয়েক লক্ষ ভিডিও শেষ করা জ্ঞানের সব শাখায়। কিছুদিন আগে বিপ্লব পাল কর্পোরেট জীবনের অসম্পুর্ণতা নিয়ে লিখেছিলেন ব্লগে। সালমান খান এই অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণতার দিকে সার্থকভাবে নিয়ে যাচ্ছেন বলা যায়। বিশাল জ্ঞানের অধিকারী সালমানের মনের বিশালতারও সাক্ষ্য পাওয়া যায় তাঁর সাইটের প্রায়শ জিজ্ঞাস্যের দুটো জিজ্ঞাস্যেঃ
Are you interested in turning this into a business? Maybe with some VC funding?
I’ve been approached several times, but it just didn’t feel right. When I’m 80, I want to feel that I helped give access to a world-class education to billions of students around the world. Sounds a lot better than starting a business that educates some subset of the developed world that can pay $19.95/month and eventually selling it to some text book company or something. I already have a beautiful wife, a hilarious son, two hondas and a decent house. What else does a man need?
Where are you from? What ethnicity/religion are you?
I was born and raised in New Orleans, Lousiana. My mother was born in Calcutta, India. My father was born in Barisal, Bangladesh.
If you believe in trying to make the best of the finite number of years we have on this planet (while not making it any worse for anyone else), think that pride and self-righteousness are the cause of most conflict and negativity, and are humbled by the vastness and mystery of the Universe, then I’m the same religion as you.
সালমানের ভিডিও টিউটোরিয়াল গুলি ইতিমধ্যেই স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করা শুরু হয়েছে। যাঁর বাবা বরিশালের, মা কোলকাতার, তাঁর টিউটোরিয়াল গুলি কি বাংলায় অনুবাদ করা যায় না? সালমান খান অনুবাদের ব্যাপারে সহায়তার আহবানও করেছেন ঐ প্রায়শ জিজ্ঞাস্যে। বিপ্লব পাল এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। তারই এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি এক্সপার্টিজ আছে বলে আমার বিশ্বাস। বিশেষ করে বিপ্লবের “বিজ্ঞান ও ধর্মঃ সংঘাত নাকি সমন্বয়” ই-বুকের ও অন্যান্য কিছু ভিডিও পর্যালোচনার আলোকেই আমার এই আস্থা।
সালমান খান আমাদের শহরের ছেলে যার বাবা ও মা দুজনই বাংলাদেশী। তার বাবা ছিলেন একজন ডাক্তার আর মা ছিলেন গৃহবধূ । তার মা (মিসেস গুলনার খান) কে আমি ভাল করে চিনি গত ২৫ বছর ধরে। উনার পরিবার স্বাধীনতার আগে কোলকাতাতে ছিলেন। তবে ১৯৪৭ সনের পর এরা ঢাকাতে স্থায়ী ভাবে বাস করতে থাকেন। সালমানের বাবা বরিশাল জেলার লোক। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৬০ দশকের কোন এক সময় এম বি বি এস ডিগ্রি লাভ করে ১৯৭০ দশকের প্রাথম দিকে আমেরিকায় চলে আসেন জীবিকার জন্য। তিনি অকাল বয়সে দেহত্যাগ করেন আমেরিকায়। সালমানের মা নিউ ওর্লিয়ান্সে থেকে জান এবং এখানেই সে বড় হয়। সালমানের মামারা সবাই নিউওর্লিয়ান্সে থাকেন। সালমান এমআইটিতে লেখাপড়া করে কম্পিউটার সাইন্সে। কয়েকবছর আগে সে এক পাকিস্তানী ইমিগ্রান্ট পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে ক্যালিফোর্নিয়াতে বসবাস করতে থাকে। ছেলেটি অত্যন্ত নম্র মেজাজের এবং সে মোটেই অহংকারী নয়। তার এত নাম হচ্ছে শুনে বেশ ভাল লাগলো।
দুটো খবর সালমান খান সম্পর্কে। Google এর 10^100 প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী প্রকল্পের মধ্যে খান একাডেমী শীর্ষ স্থান নিয়ে দু মিলিয়ন ডলার পুরস্কাতর জিতেছে। ভিডিও দেখুন।
দ্বিতীয় খবর আজকের প্রথম আলোয় সালমান খানের উপর একটা ফীচার বেরিয়েছে “স্বপ্ন নিয়ে” পাতায়। সেখানে এই পুরস্কার প্রাপ্তির উপরে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রথম আলোর এক প্রশ্নের উত্তরে খান বলেন “এখন আমরা কিছু পেশাদার প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে পারব, তখন বিশ্বের শীর্ষ ভাষাগুলোয় এ তথ্য অনুবাদ করা যাবে। অনুবাদের কাছে বাংলা ভাষা আমাদের কাছে অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। এ মুহূর্তে তথ্যগুলো বাংলায় অনুবাদের জন্য আমরা সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো শিক্ষক অথবা অনুবাদক খুঁজছি, যাঁরা মূলত আমাদের ভিডিওগুলোকে সরাসরি বাংলায় রূপান্তর করতে পারবেন কিম্বা কিছু অংশ আবার নতুন করে তৈরী করবেন।আমাদের লক্ষ্য, কিছু অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবককে কাজে লাগানো, যাঁদের কাজ মূলত সমন্বয় করব আমরা। আমরা বিশ্বাস করি নিজের দেশের বিরাট জঙ্গোষ্ঠীর সার্বিক অগ্রগতির জন্য সত্যি এমন কোন কাজ কয়ার সুযোগ এখানে মিলবে, যে কারনে এখানে বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্য থেকে নিশ্চয়ই আগ্রহীদের সাড়া পাব।”
@অপার্থিব,
প্রথম আলোর লিংকটি দিতে পারবেন? ধন্যবাদ।
@রৌরব,
অনলাইন সংস্করণে ক্রোড়পত্র থাকে না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ৬ই অক্টোবরের প্রথম আলোর(http://www.prothom-alo.com/) ‘স্বপ্ন নিয়ে” ক্রোড় পত্রে এটা আছে।
আপনারা যদি সত্যি কাজটা বাংলায় করতে চান, এবং আমাকে কোন ধরণের কাজে লাগে, আমাকে ডাকবেন। এইধরণের কাজে যদি কিছুটা হলেও অংশ নিতে পারি, ভালো লাগবে আমার।
[email protected], এই হল আমার ই-মেইল ঠিকানা। ডাকের অপেক্ষায় থাকব আমি। আর অপেক্ষা বৃথা হলে কিছুটা হলেও খারাপ লাগবে। আমাদের পক্ষে কিছু করার থাকলে, করে ফেলাটাই সর্বোত্তম।
:yes:
@বিপ্লব পাল,
একটা আবেগী কথা বলি।
একটা উদ্যোগ নিলে
গ্রামে/শহরে খুঁজে খুঁজে শিক্ষক দের দিয়ে এরকম কাজ করা সম্ভব।
এ ধরনের যে কোন কাজে ডেডিকেট হতে প্রস্তুত আছি।
অপার্থিব ভাইকে অনেক ধন্যবাদ এমন একটি একাডেমীর সন্ধান দেবার জন্য। কিছুক্ষণ একডেমীতে বিচরণ করলাম। আর মনে মনে ভাবলাম- ইস এটা যদি মুক্তমনার মত বাংলা সাইট থাকতো কত ভালোই না হতো।
অপার্থিব তো সন্ধান দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু খান বাবুকে রান করনোর মত ক’জন আছেন এখানে। তাই ভাবার। আমরা লম্বা লেকচার দিতে অনেক ব্যস্ত কিন্তু কাজের বেলায় আর কি বলব? :-Y
এই স্বার্থপর পৃথিবীতে (আমি নিজেও নিজেকে তাই মনে করি) এ ধরনের লোকের সন্ধান পেলে মন আবেগে ভরে ওঠে। জ্ঞানী লোক, ভাল শিক্ষক জগতে অনেকই আছে। তবে নিঃস্বার্থভাবে শেখানোর লোক খুব বেশী নেই।
ধন্যবাদ অপার্থিবকে ওনার সন্ধান দেওয়ার জন্য।
সালমান খানের উইকিপিডিয়া এন্ট্রি নিয়ে পাকিস্তানীদের তৎপরতা দেখে মজা পেলাম ও বিরক্ত হলাম। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সালমান খানকে পাকিস্তানী আমেরিকান বানাতে। উইকি এন্ট্রিতে এক লন্ডনী আইপি ও অন্য নতুন একাউন্ট থেকে যোগ করা হচ্ছিলো, সালমান খানের পরিবারের আদি নিবাস নাকি করাচিতে। অথচ সালমান খানের নিজের সাইটেই আর ফরচুন ম্যাগাজিনের নিবন্ধেও স্পষ্ট করে লেখা আছে তাঁর পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে, আর মায়ের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়।
পাকিস্তানী বিভিন্ন ফোরামেও সালমান খানকে “পাকিস্তানী আমেরিকান” বলে দাবি করার প্রয়াস দেখছি। ব্যাপক বিনোদনমূলক ঘটনা তবে অবশ্য অবাক হবার মতো না … 🙂
অপার্থিবদাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন একজন মানুষের সাথে আমদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। :yes: :yes:
বাবা বরিশালের আর মা কলকাতার ঔরশজাত সন্তান সালমান খানের এমন বিশ্ব-মানবতাবাদী কীর্তি সত্যিই অবাক করার মতো ঘটনা। বিশ্ব-মানবতাবাদের জয় হউক। :yes:
অপার্থিবকে অনেক ধন্যবাদ মু্ক্তমনার সাথে খান একাডেমিকে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। :rose2:
উনার প্রচেষ্টা ভীষন ভাল লাগল।
বর্তমানে অনেক কোর্স ইউটীউবে অনলাইন আছে-নানান সোর্স থেকে। নিং নেটওয়ার্কেও অনেক শিক্ষাভিত্তিক সোশাল নেটোয়ার্ক আছে।
পেডাগগিক এপ্রোচ টু এডুকেশন তবে বোধ হয় খুব বেশীদিন চলবে না। নিং এর এডুকেশনাল নেটওয়ার্কগুলি আস্তে আস্তে আমেরিকান স্টুডেন্টদের ওপর প্রভাব ফেলছে-জ্ঞান এবং শিক্ষার সামাজিক শেয়ারিং ই ভবিষ্যত। আমি ৫ বছর আগে এডভান্ডসড ক্লাসরুম বলে একটা স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক প্রজেক্ট শুরু করেছিলাম নেটে-তখন শ খানেক মতন টিউটোটিরিয়াল নিজে বানিয়েছিলাম-ইচ্ছা ছিল ছাত্ররা নিজেই বানাবে আর বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবে। সেই সাইটে লোক আসত কিন্ত নিজেদের টিউটোটিরাল কেও দিত না। তাই এক বছর বাদে বন্ধ করে দিই-তাছারা তখন আমার হাতে প্রচার যন্ত্রো ছিল না-ইউটীউব ও তখন আসে নি। এখন নিং নেটোয়ার্কে দেখলাম প্রচুর ওই ধরনের শিক্ষা নেটোওয়ার্ক আছে এবং এগুলি করাও সহজ।
শেখার /জ্ঞানের জন্যে জন্যে ওয়াইকিই শ্রেষ্ঠ মাধ্যম-ভিডিও না। তবে ভিডিওর অন্যরকম একটা ভ্যালু আছে। আস্তে আস্তে পঠন পাঠন ওয়াই কি ভিত্তিক হবে। পেডাগগিক শিক্ষার ভবিষ্যত নেই। কিন্ত এগুলি রেফারেন্স হিসাবে বেঁচে থাকবে।
:yes:
খুবই প্রেরণাদায়ক পোস্ট। :yes:
অপার্থিবকে ধন্যবাদ খান সাহেবকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। তার মত নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত লোক আরো বাড়ুক। 🙂
যাঁর বাবা বরিশালের, মা কোলকাতার, – আর যার প্রশংসায় বিল গেটস পর্যন্ত পঞ্চমুখ, তাঁর টিউটোরিয়াল গুলি বাংলায় অনুবাদ করা সত্যই দরকার মনে হচ্ছে। বিপ্লব এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে ভালোই হয়।
অফটপিকঃ লেখাটা ফেসবুকে শেয়ার করতে গিয়ে দেখি এক ব্লগারের ছবি চলে আসতেসে। তাই উপরে খান সাহেবের সাইটের একটা ছবি পোস্টে সংযুক্ত করে দিলাম। আশা করি অপার্থিব কিছু মনে করেননি।
@অভিজিৎ,
পেডাগগিক শিক্ষাটা আমার পছন্দের জায়গা না। যদিও অধিকাংশ সেটাই পছন্দ করে। শিক্ষার ব্যাপারে আমার প্রথম লাইন হল-কেও শেখাতে পারে না-নিজেকে শিখতে হয়। একজন ছাত্রর শেখার সব কিছু ব্যাবস্থা করে দিতে হবে।
কিন্ত তাকে শেখানোর চেষ্টা করলে সে কিছুই শিখবে না।
বাংলায় এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতেই পারে। তবে আমাদের দেশের অংক শিক্ষার মান আমেরিকার থেকে অনেক বেশী উন্নত-তাই অনুবাদ করলে কেও দেখবে না। আমাদের দেশের জন্যে তাদের মতন করেই করতে হবে।
এগুলি তৈরী করা খুব সহজ। আমি সবাইকে তৈরী করতে সাহায্য করতে পারি। অনেকেই এই কাজ করতে পারেন। তবে খান সাহেবের মতন ধৈর্য্য চাই।
আমাদের গ্রামের দিকে অঙ্কের অনেক ভাল ভাল শিক্ষক আছেন। তাদের ভিডিও রেকর্ড করে রাখলে সেটাও কাজের কাজ হতে পারে।
@বিপ্লব পাল,
এই ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। বাংলাদেশে, গ্রামের দিকে তো দূরে থাক, শহরেও ভালো গণিত শিক্ষক নেই। বড় শহরে কিছু থাকলেও হাতে গোনা। যাদের কাছে আবার সবার আক্সেস নেই। আমি নিজেই ভুক্তভোগি। অবশ্য শুনেছি আমাদের গণিত সিলেবাসটা নাকি বেশ আডভান্সড। কে জানে!
@তানভীরুল ইসলাম,
বাংলাদেশের গণিত শিক্ষা মানেতো সূত্র ব্যবহার করতে শেখা,সূত্রের গভীরে কি আছে তা কয়জন শেখে? এটা উপলব্ধি করেছি কোডিং এর জগতে প্রবেশের পর থেকে,আগে কখনো বুঝিনি কতটা অসম্পূর্ণ আমাদের গণিত শিক্ষা।
@তানভীরুল ইসলাম,
আমি ছোটবেলা থেকে অঙ্কের অনেক ভাল শিক্ষক দেখেছি। আমার দাদু যিনি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন-বেশ ভাল অঙ্ক করাতেন। এছারাও মাধ্যমিকে পড়ার সময় শ্যামল বাবু নামে আরেকজন শিক্ষকের কথা মনে পড়ছে-উনি ক্লাসে একটাই অঙ্ক দিতেন-কিন্ত সেটাকে ২-৩ ভাবে করতে হত। উনার থিওরী ছিল একটা অঙ্ক নানান ভাবে করতে পারলে, তবেই তুমি ব্যাপারটা বুঝেছ। পরবর্তীকালে উনার কথার গুরুত্ব বুঝেছি। পরে নরেন্দ্রপুরে ত ভাল শিক্ষক ছিলই-যারা একাধিক বই ও লিখেছেন।
@বিপ্লব পাল,
কিন্তু খান একাডেমীর পেজ ভিউ প্রায় দুকোটির কাছাকাছি, আর এতে আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পরেই ভারতের স্থান। অনুবাদ না করেই। অনুবাদ করলে কি কমত? ভারতে, বিশেষ করে দক্ষিণে ইংরেজী অবশ্য ভাল জানা অনেকেরই। আর পদ্ধতির মানের ব্যাপারে সালমানের অ্যাপ্রোচটা তো নীচুমানের আমেরিকার ট্র্যডিশনাল পদ্ধতি নয়, তার জন্যই তো এটা আমেরিকাতেই সবচেয়ে জনপ্রিয়। আর বিষয়বস্তুর মানের ব্যাপারে, এটা কিন্তু বেসিক লেভেলের জন্য। উচু লেভেলে যেতে হলে তো গোড়ার থেকেই শুরু করতে হবে। বেসিক লেভেলের জন্য সালমানের টিউটোরিয়াল্গুলি খুবই কার্যকরী বলেই তো রায় দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী তার ছাত্রছাত্রীরা ইউটিউবের বিশাল মন্তব্যের ডেটাবেজে।
কাজের কাজ তো অবশ্যই হবে। তবে সালমানের শিক্ষা পদ্ধতির সাফল্যের বা জনপ্রিয়তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সে ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে লেকচার দেয় না। এই ট্রাডিশনাল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মনযোগের সমস্যা হয় আর বোর্ড দেখতে অসুবিধা হয়।
@অপার্থিব,
আমেরিকাতে যেভাবে অঙ্ক শেখানো হয়-তা ন্যাক্কারজনক। অঙ্ক শিখতে গেলে আমি সবাইকে রাশিয়ান পদ্ধতি এবং রাশিয়ান বই পড়তে বলি।
পেজ ভিউ বেশী-সুতরাং জনপ্রিয়-তার মানেই ভারতে এটা কার্যকরী হবে-সেটা আমি মনে করি না। তবে একটা ভাল ব্যাপার আছে-সেটা হচ্ছে -ছাত্র ছাত্রীরা ভিডিওটা পজ করে আবার দেখতে পারে-সেখানে ভিডিও শিক্ষার একটা বাড়তি গুরুত্ব আছে।
আমরিকাতে স্যাটের অঙ্কের যা মান, সেটা বিশ্বমানে খুবী দুর্বল।
@বিপ্লব পাল,
মোটেই সহজ নয়। তৈরী করার যান্ত্রিক পদ্ধতিটা হয়ত। সেটা অশিক্ষিত লোক বা রোবটকে দিয়েও করান যায় । কিন্তু সালমানের টিউটোরিয়ালগুলি জ্ঞানের সব শাখা নিয়েই। এটা একটা ওয়ান ম্যান জব। জ্ঞানের পরিধি কতটা বড় হলে একজনের পক্ষে গণিতের সব টপিক থেকে জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি, এই সবের খুঁটিনাটী সব টপিকের উপর লেকচার তৈরী করা সম্ভব সেটা ভেবে দেখার বিষয়। শেখাতে হলে তো নিজেই ভাল করে জানতে হয়,শিখতে হয়। কজনের এই জ্ঞানের বিশালত্ব আছে? ধৈর্য্যের চেয়ে অনেক বড় ফ্যাক্টর এই জ্ঞানের বিশালত্ব। ধৈর্য্য অনেক রাম যদুর থাকতে পারে। এতে বুদ্ধি বা প্রয়াসের ব্যাপারটা নেই। কিন্তু অল্প সময়ে বিশাল জ্ঞানের অধিকারী হয়াটা বুদ্ধি, মোটিভেশন আর চেষ্টা সব কিছুরই প্রয়োজন। সালমানের এই একাই সব বিষয়ে জ্ঞানার্জন আর সেই জ্ঞানকে এফেক্টিভলি কমিউনিকেট করার ব্যাপারটাই আমার কাছে সবচেয়ে বিস্ময়কর লেগেছে।
@অপার্থিব, আপনার সাথে পুরোপুরি একমত। সালমান খানের মত জ্ঞানের এত বিশাল ক্ষেত্র জুড়ে ভাল ধারণা লাভ করা ও তা সহজবোধ্যভাবে বোঝানো খুব কম মানুষের পক্ষেই সম্ভব। তাই আমার মনে হয়, যে বিষয়ে যার জ্ঞান ভাল এবং প্রকাশ করার ক্ষমতা ভাল সেই বিষয়টির টিউটোরিয়াল অনুবাদ বা প্রয়োজনমতো টিউটোরিয়াল তৈরির দায়িত্ব একেকজনের নেয়া উচিত। আমার যদি কোন বিষয়ে এমন জ্ঞান থাকত তাহলে আমি চেষ্টা করে দেখতাম। শুধু ধৈর্য থাকলেই হবেনা জ্ঞান,বুদ্ধি, শেখানোর ক্ষমতা, সদিচ্ছা ও ধৈর্যের সমন্বয়েই এ ধরনের বড় কাজ সফলভাবে করা সম্ভব।
আবারো সালমান খানের প্রতি এবং খান একাডেমির প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি ।
অপার্থিবকে ধন্যবাদ সাল খানকে মুক্তমনায় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। :yes:
বেশ ইন্টারেষ্টিং!
আসলে সবকিছুর জন্য মন থাকতে হয়!
তাই দেখিয়েছেন তিনি!
লেখাগুলো বাংলায় অনুবাদ হলে আসলেই অনেকের উপকার হোত!
বিষয়টি নিয়ে এখানে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ!
:yes:
এমন উদ্যোগ তো আর হরহামেশা দেখা যায় না, তাই সাধুবাদ জানাতেই হয়। আমি এই প্রথম জানলাম খান একাডেমির ব্যাপারে। সত্যিই অবাক হয়েছি। এমন নামকরা ভার্সিটি থেকে বিরাট বিরাট সব ডিগ্রি নেয়ার পর লোভনীয় চাকুরীর হাতছানি উপেক্ষা করে ক’জন পারে এমন সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে? খান সাহেবের সাফল্য কামনা করি।
অসাধারণ এক মানুষের অসাধারণ উদ্যোগের কথা পড়লাম। সালমান খানের খান একাডেমীর নিয়মিত ছাত্রী হয়ে যাবো ভাবছি। উনার উক্তি দুটি পড়ে উনার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অনুভব করছি। এই একাডেমীর খোঁজ দিয়েছেন বলে লেখককে সাধুবাদ জানাই। :yes:
টুইটারের কল্যানে খান একাডেমির খোঁজ পেলাম কদিন আগে। তাও বিলগেটস এটা নিয়ে কিছু না বললে হয়তো নজরের আড়ালেই থেকে যেত। এমন কত মানিক রতন যে চোখে আড়ালে রয়ে গেছে।
সালমান খান করে দেখিয়ে দিলেন। Even a single person can make a change.
এমন কিছু করার কথা ভাবছি অনেকদিন হলো। এই লেখাটাতে এমন কিছু করার পরিকল্পনা প্রকাশ করার পর অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলেছিলেন। এতজনের আশ্বাস পেয়েও আমার কাজ একটুও এগোয়নি। সালমান খানের প্রতি তাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই।
@তানভীরুল ইসলাম,
:yes: