লিখেছেন: খান ওয়াহিদুজ্জামান

অনন্ত বিজয় দাশ ও “যুক্তি” ছোট কাগজের প্রথম সংখ্যার সাথে আমার কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে – বছর ছয়েক আগে একটা ও বছর দুয়েক আগে একটা – মোট দুইটা স্মৃতিচারণ লিখেছিলাম সেই স্মৃতি নিয়া – কিন্তু সেই লেখাগুলো এখন কোথায় আছে কে জানে !!

তাই আজ আবার নতুন করে লিখতে বসলাম – যাইহোক , 2007 সালের মাঝামাঝি থেকে 2008 সাল পর্যন্ত “যুক্তি” ছোট কাগজ বিষয়ে – অনন্তের সাথে আমার কয়েকবার মুঠোফোনে কথা হয়েছে ও দেখা হয়েছে ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে ।

আজিজ মার্কেট থেকে যুক্তি ছোট কাগজের প্রথম সংখ্যার শদুয়েক কপি এবং দ্বিতীয় সংখ্যার আরো শতখানেক কপি বিক্রি করে প্রচার করেছিলাম নিজের স্ব-উদ্যোগে স্ব-প্রণদিত হয়ে । তখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগ কাটাবন কেন্দ্রিক লেখক পাঠক ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিককর্মী বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ কেউই কিন্তু যুক্তি পত্রিকাকে চিনতো না ।

হলো কি – আমি একদিন শাহবাগের আজিজ মার্কেটে ছোট কাগজ কেনার জন্য ঘোরাঘুরি করছিলাম – ঘুরতে ঘুরতে তক্ষশীলায় ঢুকলাম – নতুন কোনো ছোট কাগজ এসেছে কি না খুঁজতে ছিলাম , দেখলাম – এককোনায় ধুলার আস্তরণ সহ অযত্নে পরে থাকা নতুন একটা ছোট কাগজ – নাম “যুক্তি” – যা আগে কখোনো দেখি নাই বা নামও শুনি নাই ।

প্রচ্ছদ দেখেই আমার এতো ভালো লেগে গিয়েছিলো যে – আমি যুক্তি ছোট কাগজটার ভিতরে বাহিরে উল্টে পাল্টে দেখলাম । লেখকসূচীর সবাইকে না চিনলেও লেখার বিষয়সূচী দেখে আরো আগ্রহান্বীত হলাম এবং তখনই পাঁচটি কপি থেকে আমি একটা কিনে আনলাম । পরে যুক্তি ছোট কাগজটা পড়াতে পড়তে এতো ভালো লাগলো যে – সম্পাদকের সাথে কথা বলার আগ্রহ জন্মালো ।

তারপর – ফোন করে আমিই অনন্তকে খুঁজে বের করলাম এবং তাকে শাহবাগে ডেকে আনলাম । তাকে ফোন করে কথা শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে – দেখা করে যুক্তি ছোট কাগজটা নিয়া কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করলাম । একদিন শাহবাগের আজিজ মার্কেটে অনন্তর সাথে দেখা করার জন্য একটা সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে ফেললাম ।

অনন্ত থাকে সেই সূদুর সিলেটে – তাই চাইলেই চট করে সে ঢাকায় চলে আসতে পারে না বুঝি ; তারপরেও সে জানালো যে শীঘ্রই ঢাকা আসবে আমার সাথে দেখা করতে । তো , আমি অপেক্ষা করছি তার জন্য কবে সে যুক্তি নিয়ে ঢাকা আসবে । এর মধ্যে অবশ্য বার কয়েক মুঠোফোনে কথাও হয়ে গেলো আবেগ দমন করতে না পেরে । কারণ , যুক্তি পত্রিকার প্রতিটা লেখা পুনরায় পড়তে চাচ্ছিলাম ।

কারণ , আমি পরবর্তিতে আজিজের তক্ষশিলা থেকে যুক্তির বাকি চারটা কপি কিনে এনে আমার কয়েকজন বন্ধুকে ইতিমধ্যেই উপহার দিয়েছি পড়ার জন্য । আর আমার কাছে থাকা আমার নিজের সংখ্যাটা পড়ার জন্য জোর করে নিয়ে গিয়েছিলো এক বন্ধু কিন্তু ফেরত দেয়ার নাম নাই ।

তাই অনন্তকে তাগাদা দিলাম – যুক্তি ছোট কাগজের কয়েকটা কপি আমার জন্য নিয়ে আসতে বা কুরিয়ার করে পাঠাতে । অনন্ত জানালো যে – প্রথমবার সে নিজেই পত্রিকা নিয়ে আসবে আমার সাথে দেখা করতে , কারণ সেও নাকি আমার সাথে দেখা করে সামনা সামনি কথা বলার আগ্রহ অনুভব করছে ।

তো , অবশেষে আমরা আজিজে দেখা করলাম এবং অনন্তকে দেখে আমার খুব সাধারণ একজন মানুষ মনে হলেও তাঁর সাথে কথা বলে বুঝলাম – সে ছিলো একজন বিদগ্ধ পাঠক ও সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা একজন বিজ্ঞানমনস্ক মন ও মননের যুক্তিবাদী ও অনবদ্য মানসিকতার একজন অগ্রগামী লেখক ।

তার সামান্য ভুরিওয়ালা স্বাস্থ্যবান শরীরের উপর অস্বাভাবিক গোলগাল একটা মুখের হাসি ও কৌতুহলোদ্দীপক চোখের তীক্ষ্ম অথচ হতঃবিহ্বল চাহনি – এখনো আমার চোখে ভাসছে – – সে যেই অঞ্চলে বসবাস করছে সেখানে বসে তার এইরম ব্যতিক্রম মানসিকতা কিভাবে হলো – এইটাই ছিলো আমার কাছে একটা বিস্ময় !!

তখন আমরা চা খেতে খেতে গল্প করছিলাম “যুক্তি”কে নিয়ে – অনন্তকে আমি হাসতে হাসতে জানালাম – তাদের প্রকাশিত ছোট কাগজটা আমি কি অবস্থায় খুঁজে পেয়েছি । অনন্তও হাসতে হাসতে জানালো – হ্যাঁ , ওদের কাছে বেশ কিছুদিন হয় পাঁচটা কপি দিয়েছিলাম কিন্তু ওরা একটাও বিক্রি করতে পারে নাই – আমি কেনার আগ পর্যন্ত ।

কিভাবে এতো চমৎকার প্রচ্ছদের অনবদ্য সুন্দর একটা ছোট কাগজ প্রকাশ করে ফেললো এবং অর্থনৈতিক সংস্থানটাই কিভাবে হচ্ছে এইসব নিয়া অনন্তকে প্রশ্ন করতে সে জানালো – সমস্যা তো আছেই তারপরেও কয়েজন প্রবাসী শুভাকাঙ্ক্ষীর আর্থিক সহায়তায় কাগজটা বের করা সম্ভব হয়েছে এবং পরবর্তী সংখ্যা বের করারও কাজ চলছে –

আমি তখনো ছোট ছিলাম , আরো 13/14 বছর আগের কথা । অনেক কিছুই তো বুঝতাম না , জানতাম না – এবং আমি নিজেও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমার ব্যক্তিগত জীবনে অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলে বুকভরা সমাজ পরিবর্তনের বিশাল স্বপ্ন ছিলো – নতুন যৌবনে সবার যেমন থাকে আর কি !!

আজিজ মার্কেটে অল্প বেতনের ছোট্ট একটা কাজ করে জীবন চালাতাম (কোন প্রতিষ্ঠানে কি কাজ করতাম সেই প্রসঙ্গ এইখানে আর তুলছি না) এবং মঞ্চনাটকের সাথে কাজ করতাম ও লেখার চেষ্টা করতাম – তবে লেখক বা সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে তখোনো কেউ আমাকে চিনতো না ।

আমার জীবনেই অনেক সমস্যা ছিলো , বাবা নাই , গ্রামের বাড়িতে মা ও ছোটবোনকে টাকাপয়সা কিছুই পাঠাতে পারতাম না – এইটা নিয়া অনেক মনঃকষ্টে ভুগতাম । আর তা ভোলার জন্য সারাদিন পেশাগত কাজ শেষ হলেও বাকি সময়টা সারাদিন বাইরে বাইরেই থাকতাম , ঢাকা শহরে টইটই করে ঘুরতাম ।

মঞ্চ , আবৃত্তি , লেখা , আজিজ মার্কেট ছাড়াও ঢাবির জগন্নাথ হল , কাটাবন , শহিদ মীনার , রাজু ভাস্কর্য , টিএসসি , সোহরাওয়ার্দী উদ্যান , নাটমণ্ডল , পাবলিক লাইব্রেরী , চারুকলা , ছবির হাট , জাতীয় যাদুঘর , সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র , উদীচী , মুক্তিভবন , প্রেস ক্লাব , ছাত্র ইউনিয়নের কার্যালয় ইত্যাদি –

এছাড়া – শিল্পীকলা একাডেমী , বেইলী রোড বা নাটক সরনীর মহিলা সমিতি , বেঙ্গল ফাউন্ডেশন , আঁলিয়স ফ্রঁসেস , বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান , শহীদ তাজউদ্দিন চলচ্চিত্র সংসদে ছবি দেখা , শাহবাগ চত্বরে ও পিজি হাসপাতালের কোনের আড্ডা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকতে চেষ্টা করতাম ।

তবু , সেই অবস্থাতেও – স্ব-প্রণদিত হয়ে আমি অনন্তকে বললাম আমাকে কিছু কপি দিতে এবং জানালাম – আমি শাহবাগ এলাকায় এই ছোট কাগজটির বিক্রি ও প্রচারের দায়িত্ব নিতে চাই সেচ্ছাসেবক হিসেবে । কারণ , অনন্তের ভেতর আমি এমন একটা আলোকছটা ও প্রতীভার দীপ্তি এবং জ্ঞানের চমক দেখতে পেয়েছিলাম – যা আমাকে শক্তি ও অনুপ্রেরণা দিয়েছিলো ।

– আর যুক্তি কাগজটার কথা কি বলবো – আমার কাছে সেই প্রথম সংখ্যাটাকে মনে হচ্ছিলো এক অনবদ্য সৃষ্টি । যাইহোক – অনন্তর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিলো না – বুঝতে পারতাম তাকে দেখেই ও তাঁর কথা শুনেই । আমাদের যাবতীয় কথাবার্তা যুক্তি ছোট কাগজটা নিয়া হলেও ব্যক্তিগত দুইএকটা কথা তো প্রসঙ্গান্তরে চলে আসতোই ।

এবং আমরা দুইজনেই রাজধানী ঢাকা থেকে অনেক দূরে বলা যায় মফস্বল এলাকাতেই জন্মানো ও বেড়ে ওঠা – গায়ে গাঁয়ের সরল সোদা গন্ধ লেগে থাকা দুইজন উঠতি যুবক । শহুরে নাগরিকদের ভন্ডামী আমাদের ছুঁতে পারে নাই । আমাদের মন ও মনন তখন একটা সবুজের স্বপ্নে মাতোয়ারা ও দিশেহারা ।

শহুরেদের মেকি অভিব্যক্তি ও মিথ্যা আচরণের বহিপ্রর্কাশ আমাদের আহত করে – তাই শহুরেদের সাথে তখনো নিজেদের মানিয়ে নিতে পারি নাই – তাই গ্রামের কাউকে দেখলে চট করে খুব আপন মনে হয় । তার উপর সে যদি হয় একই মানসিকতার ও একই পথের পথিক ।

অনন্ত আর আমি প্রায় সমবয়সীই ছিলাম । তারপরেও আমার কাছে অনন্তকে আমার চেয়েও বেশী আধুনিক প্রজ্ঞাসম্মত একনিষ্ঠ বুদ্ধিমান গোছালো মনে হতো । মনে হতো আমি অনন্তের কাছে আমি কিছুই না । অনন্তর মেধা ছিলো ওর নামের মতোই অনন্ত অসীম ।

খ্যাতি ও ভোগ বিলাসীতার লোভে উন্মাদ সারবস্তহীন আমাদের সুশীল সমাজ “অনন্ত বিজয় দাস”দের চিনতে না পারলেও – ধর্মান্ধ ইসলামী মৌলবাদী অপশক্তি গুলো ঠিকই বুঝে ফেলে কারা মৌলবাদের ধ্বংস নিশান উড়াতে আসছে , কারা ধর্মান্ধ জাতিকে আলোর পথ দেখিয়ে ধর্মান্ধদের কুস্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাতে আসছে – –

তাই তো , ধর্মান্ধ মৌলবাদি অপশক্তি দ্বারা – আরজ আলী মাতুব্বর , শামসুর রাহমান , আহমদ শরীফ , হুমায়ূন আজাদ , তসলিমা নাসরিন , ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল , আহমেদ রশীদ চৌধুরী (টুটুল) , আসিফ মহিউদ্দীন , সানিউর রহমান ইত্যাদিদের বর্বর আক্রমণের শিকার হতে হয় ;

দাউদ হায়দার , তসলিমা নাসরিন এবং আহমেদ রশীদ চৌধুরী (টুটুল) , আসিফ মহিউদ্দীন , অনন্য আজাদ , সানিউর রহমান , আসাদ নূর , ইত্তিলা ইতু , সবাক পাখি , মাহমুদুল হাসান বাঁধন , শাম্মী হক , আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সহ আরো অনেক নতুন প্রজন্মের ব্লগারদের নিজের ভূমী , দেশ ও সমাজ থেকে পালিয়ে যেতে হয় –

এবং বন্যা আহমেদ , সুপ্রীতি ধর , আরিফুর রহমান , লোপা রহমান সহ অসংখ্য প্রবাসী বাঙালী প্রথাবিরোধী মুক্তচিন্তক লেখকরা (এই মুহূর্তে সবার নাম মনে পড়ছে না , মনে আসলেই এখানে যুক্ত করে দিবো । যাদের নাম বাদ পড়েছে তাঁদের নাম মন্তব্যে লিখে আমাকে একটু অনুগ্রহ করে মনে করিয়ে দিন) – তাদের কাজ ও লেখার জন্য দেশে ফিরে আসতে নিরাপদ মনে তো করেই না উল্টা আতংকিত বোধ করে – –

এবং আহমেদ রাজিব হায়দার (থাবাবাবা) , শফিউল ইসলাম , অভিজিৎ রায় , ওয়াশিকুর রহমান বাবু , অনন্ত বিজয় দাস , নীলয় চ্যাটার্জি নীল , ফয়সাল আরেফিন দিপন , নাজিম উদ্দীন সামাদ , রেজাউল করিম সিদ্দিক , জুলহাজ মান্নান , তনয় মজুমদার , শাহজাহান বাচ্চু – ইত্যাদি আলোর পথযাত্রীদের একে একে বর্বর নিষ্ঠুর নৃসংশভাবে হত্যা করা হয় ।

এছাড়া গনজাগরণ মঞ্চের – জগৎজ্যোতি তালুকদার , জিয়াউদ্দিন জাকারিয়া বাবু সহ আরিফ রায়হান দীপ , অঞ্জলী দেবী চৌধুরী , মীর সানাউর রহমান , সাইফুজ্জামান সহ অসংখ্য ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষকে ইসলামী ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে মৃত্যুকে বরন করে নিতে হয় – যা মানবতা ও মানবাধিকারের জন্য কলঙ্কজনক ।

যাক , প্রসঙ্গে ফিরে আসি – তো , অনন্ত রাজি হলো আমাকে যুক্তি কাগজের কিছু কপি দিতে – এবং তার কিছুদিন পর যুক্তির 20/25টা কপি সহ তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে আজিজে এলো আমার সাথে দেখা করতে – (ওর বন্ধুর নামটা এখন মনে পড়ছে না কিন্তু সে সম্ভবত যুক্তি পত্রিকার একজন ছিলো )।

যুক্তির কপি হাতে পেয়ে আমি তো খুবই খুশি হয়েছিলাম এবং অল্প কয়েকদিনেই সেই কপিগুলো বিক্রি করে ফেললাম । এবং অনন্তকে ফোন করে জানালাম সে যেনো এসে বিক্রির টাকাগুলো নিয়ে যায় এবং আমার জন্য আরো শতখানেক নতুন কপি যেনো নিয়ে আসে ।

পরবর্তীতে অনন্ত – যুক্তি প্রথম সংখ্যার আরো বেশকিছু কপি নিয়ে আসে আর আগের বারের বিক্রির টাকাটা নিয়া যায় । এবং তার কিছুদিন পর একবারে কুরিয়ার করে ও আরেকবার স্ব-শরীরে এসে আরো বেশ কিছু কিছু কপি পাঠিয়ে দেয় । ততদিনে যুক্তির দ্বিতীয় সংখ্যা বেড়িয়ে গেছে – সেইটারো বেশ কিছু কপি দুইবার পাঠায় ।

আমি যুক্তি ছোট কাগজের ওই কপি গুলা সানন্দে বিক্রী করেছি । আজিজ মার্কেটে আসা আমার পরিচিত বিভিন্ন বিদগ্ধ পাঠকদের কাছে ধরে ধরে বিক্রী করেছি , ডেকে ডেকে তাদের কাছে যুক্তি কাগজের গ্রহনযোগ্যতা তুলে ধরেছি । যুক্তির সম্পাদক যে একটা অনন্য কাজ করেছে এবং আমাদের প্রত্যকের যে এই ছোট কাগজটা পড়া একান্ত কর্তব্য সেইটাও বলতে ভুলি নাই – যদ্দূর মনে পড়ে ।

তাদের বেশীর ভাগ লোকই কাগজটা পড়ার পর আমাকে যেচে এসে জানিয়েছেন যে – যুক্তি নামের এমন একটা নতুন ছোট কাগজ দেখে ও এর লেখাগুলো পড়ে তারা বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছেন । তারা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই ধরনের ব্যতিক্রম একটা নতুন ও যৌক্তিক ছোট কাগজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি বলে ।

আমার পরিচিত সেইসব লেখক পাঠক ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিককর্মী বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ ইত্যাদি বিদগ্ধ পাঠকরা এই বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে – তারা জানতেনই না যে ঢাকার আজিজে এমন একটা ছোটকাগজ আছে পরে আছে । এবং পরবর্তীতে তারা – যুক্তির নতুন সংখ্যা কবে বেরুবে সেই খোঁজও করেছেন । – ভাবা যায় !!

2015 সালের 12ই মে ধর্মান্ধ দুর্বৃত্তরা তাকে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে । অনন্ত আজ মৃত হলেও সে যে মরে নাই । সে যে অনন্ত । সে বেঁচে আছে তাঁর কাজের মাঝে , আমাদের হৃদয়ে – এবং সে অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকবে – – যদ্দিন মুক্তচিন্তার চর্চা চলবে –

“যুক্তি” ছোট কাগজ প্রকাশ করা সহ মুক্তচিন্তার জগতে যেই অনন্ত বিজয় দাস এইরম অনন্য অনবদ্য কাজ করেছে – মুক্তচিন্তার উপরে বিভিন্ন বই লিখেছে ও প্রকাশ করেছে –

যেই অনন্ত বিজয় দাশ মুক্তচিন্তার জন্য কাজ করতে গিয়ে – জীবনের উপর মৃত্যুঝুঁকি এসেছে জানার পরেও থেমে থাকে থাকে নাই – সেই অনন্তকে কি করে ভুলি !!

আসলে – অনন্ত বিজয় দাশ ছিলো আমার কাছে একটা আলোর প্রতিক হিসেবে । অনন্তকে কখোনই ভুলতে পারবো না । তাকে ভোলা যায় না । আজ আমাদের সেই অনন্ত বিজয় দাসের পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিকী ।

“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী , ভয় নাই ওরে ভয় নাই ।
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান – ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই ।।”