কবিতা এখন লিখতে হয়না কবিতার জন্ম হয়ে যায়।
উর্বর মাটির জরায়ু ফুঁড়ে যেভাবে
রোপিত শষ্যের বীজ
অংকুরিত হয় তেমনি বাংলাদেশের হাট মাঠ ঘাট
জলা জংলা
আর সভ্যতার নোনাধরা ইটের পাঁজর ছিড়ে জন্ম
নিচ্ছে অসংখ্য অসংখ্য জীবন্ত কবিতা।
‘আব্বা তুমি কান্না করতেছ যে’ এ সময়ের
রোমহর্ষক এক কবিতার শিরোনাম।
‘যেতে হয় আম্মা যাচ্ছি, ফিরে আসব ইনশাল্লাহ,
আমার জামাইকে গালি দেন কেন?
আমার জামাই নির্দোষ,
তাকে মারছেন কেন? এ সবই সেই কবিতার টুকরো
টুকরো অংশ। হৃদস্পন্দনের শব্দের মতো
পুলিশী গাড়ির অবিরাম সাইরেন,বারোয়ারী গালি,বন্দুক
কক করার শব্দ, হুইশেল, গুলির আওয়াজ,
‘ও আল্লাগো’ বলে কারো মরণচিৎকার
সেই অমর কবিতারই বিচ্ছিন্ন পংক্তিমালা। অতঃপর
একজনের
ফিরে না আসার গল্পে মানুষ ব্যথিত হয়; ঊন-মানুষেরা
আত্নগ্লানিতে ম্রিয়মাণ থাকে আর
অমানুষেরা প্রতিহিংসার
উল্লাস এবং আত্নতৃপ্তিতে আলোড়িত হয়। এভাবেই
স্পষ্ট হয়ে ওঠে
জাতির মনন জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো কৃষ্ণপক্ষকাল।
কবিতা এখন লিখতে হয়না, কবিতার
জন্ম হয়ে যায়।
কবিগণ এখন ইতিহাস প্রিয়তমা আর চাঁদ বিষয়ক
জাবর কাটা শেষে পরিপূর্ণ
বিশ্রামে যান অথবা বঙ্গভবন গণভবনের ইফতার
পার্টিতে নিরন্তর তেলেভাজায় ভুঁরিভোজ
করুন, বিনিময়ে অভিধানের ঝুড়ি
উপোড় করে প্রশংসার সমস্ত প্রতিশব্দ নিয়ে করে
যান রাজার মহিমা প্রকাশ।
কবিরা ঘুমান এখন;
কবির সাথে এখন আর কবিতার কোনো সম্পর্ক নেই।
কবিতা এখন আর কল্পবিলাসেরও
কোনও বিষয়বস্তু নয়; নয় উঞ্ছবৃত্তির বিনিময় পণ্য।
কবিতা এখন নিজ থেকে জন্ম নেয়া
স্বায়ম্ভুব সত্য। হয়তো
এভাবেই বুকভাঙ্গা সব কবিতার শেষে একদিন ভিন্ন
রকম একটি কবিতার
জন্ম হয়ে যাবে। যে কবিতার খসড়া রচিত হয়েছিল
অগনন মানুষের রক্ত সম্ভ্রম আর
অশ্রুর অক্ষরে।
(কবিতার সাথে যুক্ত ছবিটি আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদারের একটি ঐতিহাসিক ছবির ক্রপ করা অংশ)
চমৎকার। সময়পযোগি, প্রতিবাদী এবং শক্তিশালী।
ধন্যবাদ।