বাংলাদেশ, বিশেষত দেশের ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল অংশ, দুটি অত্যন্ত নৃশংস ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠন, যেমন ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদা (এআইকিউএস) এবং ইসলামী রাষ্ট্র (আইএস) দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। এই উভয় সংগঠনই সুন্নি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এবং তারা বাংলাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন ধরণের কৌশল অনুসরণ করে থাকে। আইএসকে একটি মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যারা আহমদীয়া, বিদেশী নাগরিক এবং অন্যান্য অমুসলিমকে অমানবিকভাবে আক্রমণ করে এবং হত্যা করে। আল-কায়েদা অন্যদিকে নিজেদেরকে তৃণমূল আন্দোলন বলে মনে করে এবং তারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, নাস্তিকতা বা কোন প্রগতিশীল মূল্যবোধ উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিদের উপর আক্রমণ চালিয়ে থাকে। আল কায়েদা এদেশের প্রগতিশীল জনগোষ্ঠীর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে সুন্নি জনগোষ্ঠীর মানসপটে প্রভাব সৃষ্টি করতে চায় যারা তাদের পাশে থাকবে।
২০১২ সাল থেকে, আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (এআইকিউএস) বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী আন্দোলনের নেতাদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা কেবল ব্যক্তিটিকে নীরব করে নয় বরং তার প্লাটফর্মটি সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব তৈরি করেছে। এ প্রক্রিয়ায়, তারা বাংলাদেশী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন এবং তাদের কাছ থেকে নৈতিক সমর্থন লাভের আশা করে।
নিলয় নীল চ্যাটার্জী যুক্তি, বিজ্ঞান ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রচারের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি নাস্তিকতা, নারীবাদ, মানবতাবাদ এবং ধর্মের বিভিন্ন প্রতিহিংসামূলক দিসহ বিভিন্ন বিষয়ে লিখতেন। তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ করতেন এবং ছদ্ম-বিজ্ঞান ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। উপরন্তু, তিনি সহযোদ্ধাদের সাথে মিলে প্রগতিশীল চিন্তাধারা প্রসারে করতে একটি প্রকাশনা সংস্থা গঠন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশের প্রগতিশীল ধারার সদস্য ছিলেন। নিলয়ের আগে ও পরে একই আদর্শে উদ্ধুব্ধ অনেকে এর আগে প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন। – রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, জুলহজ মান্নান, মাহবুব তনয়, ফয়সাল আরেফিন দীপন, নাজিমউদ্দিন সামাদ এবং আরো অনেকে।। নিলয়ও এদের কাতারে যোগ দেন যখন ৭ আগস্ট, ২০১৫ সালে নিজ বাসায় জীবনসঙ্গিনীর সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
তাঁর মৃত্যুর আগে নিলয় পুলিশের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন, তিনি তাঁর অনুসরণকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ শুধু তার অভিযোগ নিবন্ধন করতে অস্বীকার করেই নি, একই সাথে তাকে দেশ ছাড়ারও পরামর্শ দেয়। নাস্তিক লেখক এবং ব্লগারদের হত্যার কথা উপেক্ষা করা সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কৌশল ছিল। আমাদের ধারণা ধর্মান্ধ এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ভয়ে ভীত হয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র এবিষয়ে নীরবতা পালন করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষ বরং হত্যাকাণ্ডের উসকানি দিয়েছে নাস্তিকদের রচনাগুলি পর্নোগ্রাফি হিসেবে তুলনা করে এবং ঘোষণা করে যে নাস্তিকরা নিজেদের উপর এই বিপদ টেনে এনেছে। নিলয় মারা গেলে পুলিশের মহাপরিদর্শক একটি সংবাদ সম্মেলন করেন এবং ব্লগারকে সীমা অতিক্রম না করার জন্য বলেন।
দুর্ভাগ্যবশত, আনসার বাংলার মতো গোষ্ঠীগুলো এখন সব সীমা অতিক্রম করছে। এর পেছনে রাষ্ট্রযন্ত্রের নৈতিক সমর্থনও প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। জঙ্গিরা নিলয় নীলের মত মানুষকে একের পর এক হত্যা করে এবং প্রতিবারই বাংলাদেশ সরকার এই ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছে যে, এই লেখক ও কর্মীরা নিজেরাই নিজেদের খুনের জন্য দায়ী।
আজ অবধি রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ড বাদে আর কোন হত্যাকাণ্ডেরই রায় হয়নি। নিলয় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে পুলিশের গালিফতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আজ অবধি তারা আদালত থেকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে ২৩ বার সময় নিয়েছে। সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আগামী ১৭ই সেপ্টেম্বর। বাকি মামলাগুলোর অনেকগুলোতে আবার আসামী ধরা পড়েনি, কিংবা সনাক্ত হয়নি। অভিজিৎ হত্যা মামলার প্রধান আসামী পুলিশের সাথে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। অনন্ত বিজয় মামলার প্রধান অভিযুক্ত আসামীদের দুজন উচ্চ-আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়, পরে তাদের পৃথক মামলায় আটক করা হয়। জুলহাজ-তনয় হত্যাকারীদের আজ অবধি সনাক্ত করা যায়নি।
ঢাকার হোলি আর্টসান বেকারি ও রেস্টুরেন্টে বিগত ১ জুলাই আইএস দ্বারা পরিচালিত জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ সরকার ঘুম থেকে জেগে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিলয় হত্যাকাণ্ডে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। যদি বাংলাদেশ সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতে সাহস না পান, তবে আমরা দেশের ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল শক্তি নিজেরাই আমাদের নিহত সহযোদ্ধাদের অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে আমৃত্যু কাজ করে যাবো।
নিলয় মারা গেছে, কিন্তু হাজারো নিলয় এখনো বেঁচে আছে । বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিজের বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও মানবিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য একদিন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে রয়েছি যেখানে ধর্মান্ধতার কোপানলে অনেক তাজা প্রাণ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু জ্ঞান ও যুক্তির আলোকে আমরা আবারো বিজয় ছিনিয়ে আনব। হাজারো চাপাতির আঘাতেও নিলয়ের উচ্চারিত একটি শব্দকেও স্তব্ধ করা যাবে না।
কেবল আজ নয় হাজার হাজার বছর ধরে নিলয়দের হত্যা হয়ে চলেছে ।
তবুও মুক্তমনাদের কলম থামেনি ।
নিলয় হত্যায় মোল্লারা জিহাদ প্র্রতিষ্ঠা করতে পারলো কি না জানি না, তবে এটি জানি, নিলয়, তথা অভিজিৎ চেতনার মৃত্যু নেই। কলম চলবে।
এই বাক্যটা সত্য হোক।
একটা নিলয়ের হত্যা হাজার নিলয়ের জন্ম দিবে …
জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাঁসি
বেশ কয়েকবার নীলয়দার সাথে দেখা হয়েছিল, আড্ডা হয়েছিল। যুক্তিবাদী সমিতি করার জন্য তিনি যে সভার আয়োজন করেছিলেন সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল শাহবাগ আন্দোলনের সময়। নষ্ট দেশে জন্মানো এক প্রতিভা।
ওনার সাথে কি আলোচনা হয়েছিল দাদা ???????
কে হিন্দু কে নাস্তিক কে বৌদ্ধ কে খ্রিষ্টান কে ইহুদি কে মুসলিম? আমরা সবাই মানুষ, আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় এটিই। এই পরিচয় নিয়েই যদি আমরা সামনে এগুতে পারতাম তাহলে কতই না ভালো জানত আমাদেরকে পশ্চিমারা। কিন্তু আজ আমরা পশ্চিমাদের কাছে এক কলহবাজ-কপটতাপরায়ণ জাতি হিসেবেই পরিচিত। আমরা না দিতে পারি সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা দিতে না করতে পারি আমাদের অর্থব্যবস্থাকে উন্নত করতে না পারি উচ্চশিক্ষিত হতে, যদিও নামে মাত্র উন্নয়ন এবং শিক্ষিত মানুষ আমরা দেখতে পাই অনেক, এই শিক্ষিত মানুষদের ৯৫ শতাংশই হন বা থাকেন মধ্যমপন্থী ইসলামবাদী (মোডারেট মুসলিম) যারা ঈদের নামাজ, তারাবীর নামাজ, ৩০টি রোজা রাখা সহ জুম্মার নামাজ এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার জন্য জোরাজুরি করেন সবাইকে। এইসব মানুষদের কারণেই বাংলাদেশের সমাজটা এখনো পিছিয়ে পড়ে আছে, ইসলামের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ কোনো নতুন কিছু করতে গেলেই বা করে ফেললেই প্রথমেই এই মোডারেট মুসলিমরাই মেজাজ দেখান এবং ঘোর বিরোধিতা করেন, তারপর তাদের কথা শুনে মৌলবাদী মুসলমানেরা প্রশ্রয় পায় এবং প্রথমে বিভিন্ন ফতোয়া দেয় এবং পরে খুন করতে উদ্যত হয়, অবশেষে খুন করেও ফেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সুতরাং একজন বা বড়জোর দশজন মৌলবাদী মুসলমান তৈরির পেছনে থাকে কোটি কোটি মোডারেট মুসলিমদের পরোক্ষ সমর্থন। মোডারেট মুসলিমরা আবার বলেন জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ ইসলাম সমর্থন করেনা, এর অনুমোদনও ইসলাম দেয়না ইত্যাদি শান্তিমূলক কথাবার্তা যেগুলো একজন ইসলাম সম্বন্ধে অল্প জানা সহজ-সরল মানুষকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট নয় কমপক্ষে সহানুভূতি আনতে সাহায্য করে, সে হতে পারে একজন হিন্দু বা ইহুদি বা একজন খ্রিষ্টান বা একজন বৌদ্ধ বা একজন অল্প জানা মুসলিম বা একজন কমজানা নাস্তিক বা অজ্ঞেয় (যে পড়াশোনা ছাড়াই নাস্তিক বা অজ্ঞেয় হয়েছে)।
একটা জিনিস সব সময় চোখে পড়ে ফেসবুক, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং টিভি মিডিয়াতে যে নাস্তিকরা ইসলামের সমালোচনা করে ভুল করছে (সরাসরি বলা না হলেও পরোক্ষভাবে বলা হয়), তারা নিজেরাই নিজের মৃত্যু ডেকে আনছে, তারা নারীদের স্বাধীনতা চায়, সমকামিতার বৈধতা দিতে চায় ইত্যাদি কথা বলার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের মোডারেট মুসলিম সমাজটাকে আরো বেশী মোডারেট ইসলামী করে ফেলে বা ঐ কুয়োর মধ্যেই রেখে দেয়, এতে করে যুক্তিবাদী নাস্তিকদের লেখা ব্লগে খুব কম মানুষই আগ্রহ এবং আকর্ষণ পোষণ করে এবং সাইটগুলোতে ঢোকে, নাস্তিকরা যে এত পরিশ্রম করে লেখে এবং যুক্তি প্রদর্শন করে তা বৃথা হয়ে যায় এ দেশের অধিকাংশ মানুষের না পড়ার কারণে, নাস্তিকরা যে সমাজটাকে আলোকিত করবে, সমাজটাকে সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ এবং মানবতাবাদী বানাবে সেটা বোঝানে কথিত শিক্ষিত স্যার এবং ম্যাডামেরা, ম্যাডামেরা আবার হিজাব পরে শৈলীতা দেখান, কখনো তাদের মাথায় চিন্তা আসেনা যে যে-হিজাব তারা পরিধান করেন সেটা ইসলামী মৌলবাদকে উস্কে দেয় অর্থাৎ মৌলবাদের পথ ত্বরান্বিত করে। যে কোনো তরুণ (বা সংখ্যালঘু ক্ষেত্রে তরুণী) ইসলামের এই মধ্যমপন্থী ভার্সন দেখে ঐ ধর্মের প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয় এবং পরে ইসলাম নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করে তাদের মাথায় উগ্রবাদের চিন্তাটা চলে আসে, তারা যদি নিরপেক্ষভাবে গবেষণা করত তাহলে তারা উগ্রপন্থী মুসলিম না হয়ে নাস্তিক কিংবা অজ্ঞেয় হত।
নাস্তিকতাবাদ বা অজ্ঞেয়বাদ একজন মানুষকে নৈতিকতা শেখায়না সেটা সত্য তবে নাস্তিকতাবাদ এবং অজ্ঞেয়বাদ অন্তঃত এটার নিশ্চয়তা দেয় যে কোনো অলৌকিক পরমসত্ত্বা তাকে তার সকল কাজকর্মের জন্য একদিন জিজ্ঞেস করবে এবং তার নির্দেশনামা অনুযায়ী সে কাজ করলে সে পাবে অনন্ত সুখের বেহেশ্ত এবং তার নির্দেশাবলী না মেনে জীবনযাপন করলে অন্তহীন কষ্টের জায়গায় সে যাবে সেটা হচ্ছে দোজখ, এগুলো যে মানুষেরই চিন্তাপ্রসূত ধারণা। অপরদিকে মানবতাবাদ বা মানবিকতাবাদ বা মানবিক মূল্যবোধ মানুষের মধ্যে আপনাআপনিও আসতে পারে আবার নীতিশাস্ত্রবিদ্যা (ধর্মের ছোঁয়াহীন) চর্চার মাধ্যমেও আসতে পারে। অপরদিকে একটা ধর্ম মানুষকে ঈশ্বরপ্রদত্ত বিভিন্ন অস্বাভাবিক কার্যকলাপে জড়াতে শেখায় যেমন নাস্তিক হত্যা করলে নিশ্চিত স্বর্গ লাভ করা যাবে। এটা এক দিয়ে নৈতিকতা ধরা যায় যদি মানুষ বিশ্বাস করে যে আসলেই একজন পরমসত্ত্বা এই নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি আমাদের ভালোর জন্যই এ বিধি প্রণয়ন করেছেন তা যত কঠোরই হোক আমাদের সবাইকে মানতে হবে, আবার শয়তান নামের আরেক পরমসত্ত্বার অবতারণা করা হয়েছে ধর্মে, বলা হয়েছে সে নাকি মানুষকে অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করে। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় প্রমাণিত হয়েছে যে অপরাধ করার মন-মানসিকতা মানুষ তার নিজের অবচেতন মনেই তৈরি করে নেয়।
যে কোনো মানুষ হোক সে নারী বা পুরুষ বা হিজড়া তার যে কোনো বিষয় সেটা ধর্মই হোক আর যাই হোক না কেন সমালোচনা করার অধিকার আছে, একজন মানুষের ধর্ম জন্মসূত্রে প্রাপ্ত বা সমাজ দ্বারা প্রাপ্ত বলেই সে সেটা সারা জীবন অন্ধভাবে পালন করে যাবে কোনো প্রশ্ন- উত্তর এবং বিস্তারিত চিন্তাভাবনা এবং সমালোচনা ছাড়াই তা কেন হবে? মানুষকে এসবের অধিকার দেওয়া আমার আপনার সকলেরই দায়িত্ব, আমরাও মানুষ তারাও মানুষ, অন্য যে কোনো প্রাণীর চেয়ে আমরা অনেক উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী , আমাদের মধ্যেই ধর্ম আছে অন্য প্রাণীদের মধ্যে নেই, তারা এসব তৈরি করার ক্ষমতা রাখেনা। মানুষের সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে পড়লে জানা যায় যে মানুষদের মধ্যে একসময় কোনো ধর্মই ছিলোনা, ধীরে ধীরে মানুষ বিভিন্ন জিনিসকে ভয় পেয়ে এবং ওগুলোর কারণ জানতে না পেরে ধর্ম বানানো শুরু করেছে, এভাবে আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে একেশ্বরবাদী ধর্মের উদ্ভব হয় যা আজ অবধি পৃথিবীতে বিভিন্ন ঝামেলা এবং দাঙ্গার কারণ। কই এই ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং ইসলাম ধর্মে বর্ণিত ঈশ্বর তো মোজেস, যীশু এবং মহাম্মাদের পরে অন্য ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেনি। কেন করেনি? যুগে যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে এত শাখা-প্রশাখার বিস্তার হলো সেগুলো দেখে কেন ঈশ্বর কোনো প্রেরিত পুরুষ পাঠালোনা? কেন ঈশ্বর ফ্রান্স-জার্মানীর ওপর বড় ধরণের গজব বা আজাব নাজিল করেননা? কেন তিনি স্বাধীনচেতা কোনো মানুষের ওপর বেজার হননা? এসব কিছু দেখে ঐসব ধর্মের ঐশীবাণী বলে প্রচলিত আইন-কানুনগুলো পড়েই মানুষ হিংস্র হয়, কাজগুলো কৃতকারী মানুষদের ওপর চড়াও হয় স্ব-ধর্মের ঈশ্বরের নাম নিয়ে, অত্যাচার করে, খুন করে বা ফ্রান্স-জার্মানীতে বোমা হামলা করে তাদের ঈশ্বরের তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অথচ তারা কখনোই এসব নিয়ে নিরপেক্ষভাবে মাথা ঘামায়না, তারা চিন্তা করতে পারে যে ঈশ্বর কেন তাদের সাথে কখনো যোগাযোগ করেনা, এত বন্দেগী এত ইবাদত এত স্তবস্তুতি করার পরেও কেন? নারীরা আপাদমস্তক বোরকা পরে আল্লাহকে খুশী করার জন্য, তারা ভাবতে পারে যে আমার এই চেহারাসহ পুরো শরীর ঢাকার সাথে আল্লাহর কি? আর পরপুরুষ নজর দিবে তাই বলে আমি আমার শরীরচেহারা সবসময় এইভাবে ঢেকে রাখবো? পরপুরুষ তো আমার এই বোরকা খুলে ফেলে দিতে পারে। এই জন্য আবার ইসলাম ধর্মে নারীদের ঘরের বাইরে বেশি একটা বেরোনোর অনুমতি নেই। কি অস্বাভাবিক এবং অসহ্য অবস্থা এই ধর্মের।
মানুষ যতদিন না যুক্তিবাদী-নিরপেক্ষ হবে এবং ধর্মের ব্যাপারে আসল সত্যটা জানতে পারবে ততদিন পর্যন্ত তারা ঈশ্বরকে খুশী করার জন্য নারীদেরকে বোরকা পরানো থেকে শুরু করে অন্যান্য ধর্মের মানুষ খুন সহ তাদের ধর্মের সমালোচনাকারী নাস্তিক বা অজ্ঞেয়দেরকেও মেরে ফেলতে চাইবে বা মেরে ফেলবে। আর এগুলোর সবকিছুর জন্য যে মোডারেট মুসলিমদের (বা ইহুদি বা খ্রিষ্টান তবে সাধারণত মুসলিমরাই বেশি) ভূমিকাই সবচেয়ে বড় তা আমাদের সকলকেই বুঝতে হবে কারণ তারাই সবসময় ধর্মের বিভিন্ন উপাদানগুলোকে সমাজের সাথে মিশিয়ে দেওয়ার কাজ করে।