লেখক : শাহানূর ইসলাম সৈকত
সমকামী ব্যক্তি, তারা আবার মানুষ নাকি? কি পরিবার, কি সমাজ, কি রাষ্ট্র সবখানেই তারা অবাঞ্ছিত। পরিবার থেকেই শুরু হয় সমকামী ব্যক্তিদের প্রতি নির্যাতন। যদি কখনো পরিবারের কোন সদস্য সমকামী বলে চিহ্নিত হয় তবে তাকে বিষমকামী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শুরু হয় নিষ্ঠুর প্রক্রিয়া। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সাথে সাথে বৈষম্য ও বিভিন্ন টোটকা চিকিৎসাসহ জোড়পূর্বক বিবাহ প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন করে তোলা হয় দূর্বিসহ। এতে করে অনেকেই আত্বহত্যা করতে বাধ্য হয়। আর যারা আত্বহত্যা করতে পারে না তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমকামী ব্যক্তিরা সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতি পদে পদে অবহেলা, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে সমকামী ব্যক্তিদের অপরাধীর চোখে দেখা হয়। বিশেষ করে ধর্মীয় মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়ে সমাজ সমকামী ব্যক্তিদের প্রতি জন সাধারণের নেতিবাচক দৃষ্টি ভংগি গড়ে তুলেছে। এমনকি সমকামী ব্যক্তিদের কতল করাও জায়েজ বলে সমাজে প্রচারিত আছে। যার মাধ্যমে একজন মানুষ হিসেবে সমকামী ব্যক্তির বেচে থাকার অধিকারও সমাজ অস্বীকার করে চলেছে।
এদেশে সমকামী ব্যক্তিরা এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে নিজেদের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের কথা প্রকাশ করতে পারে না। পারে না সম্মিলিতভাবে কোন সংগঠন করতে বা তাদের কথা কোথাও উত্থাপন করতে। না পুলিশ প্রশাসন, না আদালত –কোথাও তাদের ঠাই নেই। সবখানেই তারা অপরাধী। তারা কারো প্রতি কোন প্রকার অন্যায়, অবিচার, অপরাধ না করেও শুধুমাত্র নিজেদের ভিন্ন সেক্সুয়ায়াল অরিয়েন্টেশনের জন্য অপরাধী। একদিকে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হুংকার অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় আইনী নির্যাতন। তাহলে সমকামীরা যাবে কোথায়? তারা কি এদেশের নাগরিক নয়?
বাংলাদেশের মহান সংবিধান জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার স্বীকার করে তার পরও সমাজে সমকামী ব্যক্তির বেঁচে থাকার অধিকার আছে বলে মনে হয় না। এমনকি রাষ্ট্র দন্ডবিধির ৩৭৭ ধারা দিয়ে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে সমকামী ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। রাস্ট্র যেখানে সমকামী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্যমূলক মূলক আচরণ প্রদর্শন করে, রাষ্ট্র যেখানে নির্যাতনমূলক আইন প্রণয়ন করে সমকামিদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে সেখানে সমকামী ব্যক্তির আশ্রয় কোথায়?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে মানুষ যতটা না অসাম্প্রদায়িক ছিলো, এখন ততোটাই সাম্প্রদায়িক হয়েছে। আমার মতে বর্তমান বাংদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষই ধর্মান্ধ। আর এই ধর্মান্ধ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিরা যে দেশে আছে, সে দেশে মানুষের যৌন স্বাধীনতা তো দূরে থাক, নিজের পছন্দ মতো জীবনসঙ্গী বেছে নেয়াটাই কষ্ট কর।