লেখক: সুমন চৌকিদার।
“কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা, আমরা করলে দোষ!” অর্থাৎ মানুষ নোংরামি করলে পাপ(ঈশ্বরদের বিধান), অথচ ঈশ্বরেরা করলে মহাপবিত্র(!) এবং এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না, কোনো? পৃথিবীতে নাকি ৪২০০ ধর্ম আছে! সেহেতু ৪২০০ জন ঈশ্বর ও ধর্মাবতারও আছে (কারণ ঈশ্বর এবং ধর্মাবতার ছাড়া ধর্ম জন্মে না)। এগুলো প্রত্যেকটিই অপরটিকে অস্বীকার করে, বিশ্বাস করে না এবং একে অপরকে শত্রু মনে করে (ধর্মপ্রচারকদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তা-ই বলে)। তাহলে এতো শত্রু (প্রত্যেকের ৪১৯৯টি) নিয়ে কীভাবে এ পৃথিবী দাঙ্গা-যুদ্ধ, রক্তপাত ছাড়া একটি ঘণ্টাও কাটাবে? বিদ্বানরা বুঝলেও, এ মূর্খ বোঝে না।
ধর্মানুভূতিই শুধু নয়, কোনোপ্রকার অনুভূতিতে আঘাত দেয়া মানবতাবাদিদের ইচ্ছা/কাজ নয়। কিন্তু যেসব অনুভূতি সমাজের মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গল কম করে না কিংবা তা অপব্যবহার করে একের পর এক অপরাধ সংঘঠিত করে; যেমন- স্বধর্মী থেকে ভিনধর্মী হত্যাসহ, ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ায়, এরপরও কী মানবতাবাদিরা চুপ থাকবে? অর্থাৎ যেখানে অন্যায়-অত্যাচার সেখানে তারা প্রতিবাদ করবেই। তা মহাপবিত্র(!) ধর্ম কিংবা ঈশ্বর অথবা ধর্মাবতার যে-ই হোক। এ অনুভূতিটি হয়তো নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকলে তাদের মাথাব্যথা থাকতো না। কিন্তু আমরা কী দেখছি? কথিত এটি সারা বিশ্বকেই আজ নরকে পরিণত করছে। ভিন্নধর্মী তো বটেই স্বধর্মীদের মধ্যেও এ অনুভূতি নিয়ে নিরন্তর রক্তপাত চলছে (বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিসেপ্রায়জন), যা দেখে কোনো মানবতাবাদিরই চুপ থাকা উচিত নয়।
ধর্মানুভূতি একটি মহাবিতর্কিত বিষয়। কারণ ধর্মভেদেই শুধু নয়, ধর্মশিক্ষাভেদেও (স্বধর্মী হয়েও) একেকজনের ধর্মানুভূতি একেকরকম। যেমন- কারোটা হালকা, কারো কট্টর, কারো ভোঁতা, কারো সুচালু, কারো উত্তপ্ত/জ্বলন্ত, কারো দানবীয়, কারো মানবীয়…। বোধকরি, বেশিরভাগেরই এ অনুভূতিটি থাকে সুপ্ত অবস্থায়। যা মাঝেমধ্যে ক্ষমতাধর ও স্বার্থান্বেষী নেতারা (রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয়) কট্টরপন্থি দানবদের সহায়তায় উত্তপ্ত করে যেমন নিজেদের স্বার্থোদ্ধার করে, তেমনি সাধারণদেরও কিছুটা হলেও লভ্যাংশ দেয়। ধর্মানুভূতির চরিত্র অনুযায়ী, এ কাজটি একটুও কঠিন নয় বরং অত্যন্ত সহজ। অর্থাৎ ক্ষমতাশালী, লোভী নেতারা যদি কোনো ব্যক্তি বা সমপ্রদায়ের উপর প্রতিশোধ নিতে চায় কিংবা জমিজমা-ঘরবাড়ি দখল করতে চায়… আর একবার যদি ধর্মানুভূতির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে, তাহলে রামু-উখিয়া, নাসিরনগর ম্যাসাকার ঘটাতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। এতে প্রায় সকল শ্রেণির মানুষকেই শামিল হতে দেখা যায়। কারণ, এতে কেবল যে সামাজিকতা রক্ষা হয় তা নয়; অংশগ্রহণকারী প্রায় সকলেই কমবেশি আর্থিকভাবে লাভবান হয়। আর যেখানে লাভ, সেখানে বাঙালি থাকবে না তো, কারা থাকবে? সম্ভবত, এ অনুভূতিটির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো- বৈদ্যুতিক চুল্লির মতো তাৎক্ষণিক তেঁতে ওঠা এবং মানুষের মানবিক গুণাবলী কিংবা বিচার-বুদ্ধি, সত্যাসত্য, ন্যায়-অন্যায় জ্ঞান… লোপ করা। এমনকি, কথিত অভিযোগের ন্যূনতম বিবরণ শোনার বা জানার প্রয়োজনবোধ করতেই দেয় না, এটি। অর্থাৎ এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মগজের নিয়ন্ত্রণ নেয়; ফলে এ অনুভূতির দাসদের, ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে দেয় না।
কাউকে অপদস্থ-লাঞ্ছিত, ভূমিদখল, নারীদখল, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও, লুটপাট, ধর্মান্তরিতসহ… বহু অন্যায়ের মোক্ষম অস্ত্রও এটি। এমন বিতর্কিত বিষয়টি রক্ষা করতেই পুলিশ বইমেলায়। তারা ধর্মানুভূতিকে বাঁচাতে বা বিশেষ গোষ্ঠির আবদার রক্ষার্থে, কিংবা আরো লেখক, প্রকাশক… যাতে খুন না হয় অথবা রাষ্ট্রের সুনাম রক্ষার্থে, হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খুব ভালো কথা। তবে ধর্মানুসারে এ অনুভূতি অপরিবর্তযোগ্য, জন্মগত, বিশেষ করে জন্মান্ধ। এটি যদি পরিবর্তনযোগ্য হতো, তাহলে ধর্ম নিজেই টালমাটাল হয়ে যেতো। আবার, যে ধর্মালম্বীদের মধ্যে এ অনুভূতি যতো কঠিন ও কট্টর, সেই ধর্মের লোকসংখ্যাও ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যাদের অনুভূতি কম তাদের হ্রাস পাচ্ছে। অতএব ধর্ম ঠিক রাখার জন্য এরকম মারাত্মক অস্ত্র কেউ-ই (সমাজ কিংবা রাষ্ট্র) যে হাতছাড়া করবে না, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। অতএব, প্রায় নিশ্চতভাবেই বলা চলে, রাষ্ট্র যা করছে তাতে ধর্মানুভূতির একচুলও পরিবর্তন হবে না, বরং আরো বাড়বে। এভাবে কড়া পাহারা বসিয়ে, যাদের ধর্মানুভূতি নেই তাদের দমন করা গেলেও; যারা এ অনুভূতি দ্বারা চালিত এবং এর নাম ভাঙ্গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ আনায় সিদ্ধহস্ত, তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন তো? যদিও ৯৯% ধার্মিকদের দেশে (মনে হয়, প্রায় সমসংখ্যকই দুর্নীতিগ্রস্থ) ধর্মানুভূতির বিরুদ্ধে লেখক-প্রকাশকরা যাকিছু লিখুক, তাতে ধর্মানুভূতির কোনোই হেরফের হবে না। তথাপিও রাষ্ট্র কর্তৃক এভাবে পাহরা বসিয়ে সুরক্ষা দিলে, নিশ্চয় এ জাতির অনেক দুঃখ আছে।
ধর্মানুভূতির শ্লোগান তুলে যখন বারবার একই ঘটনার পুনাবৃত্তি ঘটছে, তখন রাষ্ট্রকে দেখা যাচ্ছে নানা ছলনায় এর দায় এড়াতে। অর্থাৎ রাষ্ট্র ও সমাজ ধর্মের সুফল ভোগ করবে কিন্তু দায় নেবে না, খুনিদের বিচার করবে না, বরং ধর্মকে সুরক্ষা দিতেই ব্যস্ত। ধর্ম রক্ষাই যদি হয় রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য, তাহলে সেই রাষ্ট্র সংখ্যালঘুশূন্য হতে বেশিদিন লাগে না (পাকিস্তানে প্রায় শেষ, বাংলাদেশও একই পথে)। মনে হয়, পাকিস্তান এবং আমাদের চিন্তা-চেতনায় বেশি তফাৎ নেই। ধর্ম লালন-পালনের জন্য যে জাতি প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেশ, জাতি ও সমপ্রদায়ের শান্তি ও মঙ্গল কামনা করে, তাদের দেশে এতো অশান্তি, অমঙ্গল, দুর্ঘটনা, নির্যাতন… কেনো? সত্যিই কি একটি বছরও ঈশ্বরেরা এ জাতির প্রার্থনা শুনেছে? না শুনলে, কতো বছর একইভাবে, একই প্রার্থনা করলে শুনবে?
যাহোক, ধর্মানুভূতিতে কথিত আঘাতের অভিযোগে বিগত বছরগুলোতে বইমেলায় যেসকল স্টল ব্যান, প্রকাশক-লেখক গ্রেফতার, যাদের খুন করা হয়েছে… সকলেই জানেন, সেহেতু এ নিয়ে আলোচনা নয়। কারণ এব্যাপারে অনেক বিদ্বান ব্যক্তি পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করেছেন। লেখার মূল বিষয়, শ্রদ্ধেয় এক বিশিষ্ট ব্যক্তির মন্তব্যের উপর কিছুটা আলোকপাত। যা তিনি গতবছর বইমেলায় শামসুদ্দোহা মানিকভাইয়ের অনুবাদকৃত একটি বইয়ের বেলায় করেছেন।
তিনি বলেছেন- “…কয়েকটি লাইন আমাদের বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পড়ে শুনিয়েছেন। আমি কয়েক লাইন শোনার পর আর সহ্য করতে পারিনি। এত অশ্লীল আর অশালীন লেখা। …‘অশ্লীল’ বইটি কেউ যেন না পড়ে|”
আমি তাঁর সাথে একমত। কারণ যা অশ্লীল-অশালীন বক্তব্য, তা কারোই সহ্য হওয়ার কথা নয় এবং অবশ্যই তা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। তবে এজন্য সর্বপ্রথমে যা নিষিদ্ধ হওয়া প্রয়োজন, সেটা চাইলে আরো বেশি খুশি হতাম। যে অশ্লীল বই নিয়ে এ মন্তব্য, তা কিন্তু মানিকভাই লেখেননি, তিনি অনুবাদ করেছেন মাত্র। মানিকভাইয়ের নিজের লেখাগুলো যতোটুকু পড়েছি, তাতে তিনি গ্রন্থ থেকে কোটেশন ছাড়া নিজস্ব খারাপ ভাষা ব্যবহার করেননি। বিশেষ করে মানিকভাইয়ের মতো ভদ্র স্বভাবের মানুষের পক্ষে তা সম্ভবও নয়। এছাড়া, অযথা কেউ খারাপ ভাষা ব্যবহার করতে যাবেনই বা কেনো? যদিও অনেকেই যুক্তিতে না পেরে প্রচণ্ড খারাপ ভাষা, নোংরা গালাগালি করে, তবে সেরকম লোক অন্তত তিনি নন। হয়তো সহ্যশক্তি সকলের সমান নয়।
মানিকভাই ধর্মের কট্টর সমালোচক হতে পারেন, তার তথ্য-উপাত্তে ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে, একপেশে হতে পারে… কিন্তু অপ্রয়োজনে/অযথা অকথ্য ভাষা তিনি ব্যবহার করতে পারেন না বলেই বিশ্বাস। তথাপিও তিনি যদি তা ব্যবহার করেও থাকেন, তাহলে ওসব ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্স কিংবা ধর্মবাণীগুলো ব্যাখ্যার সময় করেছেন। অর্থাৎ ওগুলো ধর্মপুস্তকেরই ভাষা। পাঠক, অন্যের পড়ানো, শিখানো, বিবৃতি, বক্তৃতা শুনে নয়, দয়া করে একটিবার গ্রন্থগুলো “মনোযাগসহকারে” পড়ে দেখুন, এ মূর্খ কী বলতে চাইছে? ওগুলো মনোযোগসহকারে পড়লে, ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে না।
জানি না, অশ্লীল-অশালীনের সংজ্ঞা কী? ক্ষুদ্র জ্ঞানে বুঝি, যেসব শব্দ বা বাক্য নোংরা, অন্যকে অপমান করে, ব্যথা দেয়, হুমকি দেয়, ভয় দেখায়… ইত্যাদি। ধরুন, একজন এলাকার বড়নেতা, কেউ তাকে অমান্য করে, তার অন্যায় কাজেকর্মে দ্বিমত ও প্রতিবাদ করে…। নেতাটি তাকে গালিগালাজ করলেন, ভাতে-পানিতে মারার হুমকি দিলেন, মৃত্যুর হুমকিও দিলেন…। এতে লোকটি দুঃখ পেলো, ব্যথা পেলো, ভয় পেলো…। এসব কী অশ্লীল-অশালীন? যদি না হয়, তাহলে প্রশ্ন নেই। হলে, প্রশ্ন- যখন ঈশ্বরগণ (অবাধ্যকারী/অবিশ্বাসীদের) ওই একইরকম ভাষা ব্যবহার করে হুমকি দেয়, তখন তা অশ্লীল-অশালীন হবে না কেনো?
উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরগণ সর্বশক্তিমান(!) হওয়া সত্ত্বেও (ধর্মপুস্তকগুলোতে) স্বর্গের বিবরণে বহু লোভ এবং নরকের বেলায় বহু ভয়-ভীতি দেখিয়েছে। এরূপ ভাষা/বাক্য পড়ে যদি কেউ বলেন, এসব শালীন কিংবা পবিত্র; তাহলে তাকে কী বলা চলে, এ মূর্খের বোধগম্য নয়। পুরো ব্যাখ্যা দিলাম না, কারণ অশ্লীল-অশালীনতার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে কার ভালো লাগে বলুন তো! অনুরোধ, দয়া করে “মন” দিয়ে পড়ে দেখবেন।
বিদ্বান না হলেও এটুকু বুঝি, প্রকৃত শিক্ষা ও জানার জন্য পড়ার কোনো বিকল্প নেই। শুনে শেখা আর পড়ে শেখার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তবে পড়ার মতো পড়তে হবে, অর্থাৎ হৃদয়ঙ্গম করতে হলে- মন দিয়ে পড়তে হবে, চোখ দিয়ে নয়। যে মারাত্মক ভুলটা আমরা ধর্মশিক্ষার বেলায় করি। অর্থাৎ শুনে শিখি, পড়ে শিখি না। যেজন্য ধর্মশিক্ষা ও ধর্ম প্রয়োগ প্রচণ্ডরকমের গরমিল ও বিভ্রান্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে একই ধর্মালম্বী হয়েও কেউ কাউকে ধার্মিক বলে না। আবার একই গ্রন্থের একটি বাক্য, এক ধর্মজীবি যেমন করে ব্যাখ্যা দেয়, অন্য ধর্মজীবি দেয় তার উল্টা।
এছাড়াও, শিশুরা ন্যূনতম মানবিক জ্ঞান অর্জনের অনেক আগেই ধর্মজ্ঞান জ্ঞানী হয়ে ওঠে। ফলে যে বিশ্বাস জন্মগত, তা অমান্য করা খুবই শক্ত কাজ। কারণ শিশুর প্রাথমিক জ্ঞানার্জন, সবচেয়ে ভরসার স্থান এবং দৃঢ় বিশ্বাসের জায়গা হলো, পবিরার। আর সেখানে যা শিখে, তাতে কোনো ভুল থাকতে পারে, তা কল্পনায়ও আনে না। ঈশ্বরদের অমান্য করার যে মহাকঠিন শাস্তি ও হুমকির কথা ধর্মপুস্তকে বর্ণিত হয়েছে, তাতে ভয়ে কেউ প্রশ্ন করতেও সাহস পায় না। ফলে ইহজীবনেও ওসব আর যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয় না। তাছাড়া মানবিকতা শিক্ষার কোনো সুযোগ কিংবা প্রতিষ্ঠান এদেশে আছে বলে জানা নেই। অথচ আছে হাজার হাজার ধর্মশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে ধর্মকে কীভাবে, কতোখানি কট্টর কিংবা কতোটুকু উদারপন্থায় (অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল করে) শিক্ষা দেয়া হয়, তা ব্যাখ্যার প্রয়োজন বোধ করি না। কারণ এসব অহরহ শুনে শুনেই আমরা চারমভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যে দেশের মানুষের একমাত্র চিন্তা ও দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মশিক্ষাই প্রকৃত মানুষ তৈরি করে, সেদেশের পাঠ্যপুস্তকে যা ঢোকানো হচ্ছে, এতেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
পাঠকগণ! বলতে পারেন, অশ্লীল আর অশালীন ভাষার সবচেয়ে বড় উৎস কোনগুলো? যেদিন মানুষ ওই উৎসের সন্ধান পাবে এবং প্রকাশ্যে তা বলতে পারবে, সেদিন কোনো বই ব্যান হবে না। মানিকভাইদেরও অশ্লীল-অশালীনতার অপবাদে, বিনা কারণে, বিনা বিচারে জেলে পচতে হবে না; অভিজিৎদেরও মরতে হবে না…। পুলিশকেও চোর-ডাকাতসহ কোটি কোটি দুর্নীতিবাজ রেখে, বই পড়ায় সময় ব্যয় করতে হবে না।
আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা বুঝি, ধর্ম বিষয়ে আলোচনা কিংবা সমালোচনা করতে গেলে, ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে উদ্ধৃতির প্রয়োজন হয়। তাই ধর্মগ্রন্থ থেকেই নানা কোটেশন লেখকের বইতে স্থান পায়, সেজন্য লেখক কেনো দায়ী হবে? অতএব, ওই গ্রন্থের চেয়ে মানিকভাইদের ভাষা বেশি অশ্লীল আর অশালীন এবং তারা যে ইচ্ছা করে ওইরূপ ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ধর্ম নিজেই তো একটি বিতর্কিত বিষয়। পৃথিবীতে এতো বিতর্কিত, এতো নোংরা ভাষায় ধর্ম এবং ধর্মসংক্রান্ত পুস্তক ছাড়া অন্য কোনো পুস্তক লেখা হয়েছে কিনা, জানা নেই। তবে হ্যাঁ, ধর্ম সমালোচকরা ওরকম কিছু ভাষা ব্যবহার করতেই পারেন, কারণ রেফারেন্সগুলো নিতে হয় ধর্মপুস্তকগুলো ঘেটেই। অথচ বেশিরভাগ লোকই ধর্মপুস্তকগুলো না পড়েই ওগুলোর ভাষাকে মহাপবিত্র(!) মনে করেন। হয়তো এটা আমাদের একটা প্রধান ও চরম দোষ।
তবে যদি কোন ব্যক্তি অশ্লীল-অশালীন ভাষা ব্যবহার করে, তাকে বাধা দেয়া, হুমকি-ধামকি দেয়া, লেখা ব্যান করা যায়। এরপরও লেখা না থামলে, প্রয়োজন শাস্তি কিংবা খুন করাও যায়… (যা চলমান)। কিন্তু ওই একই কাজ যখন ঈশ্বরদের দ্বারা হয়, তখন কী করা উচিত? কারণ, যারা ধর্ম বিশ্বাস করে না, তাদের প্রতি ঈশ্বরদের যেসব কঠিন হুমকি ও নৃশংস্যতার বিবরণ রয়েছে, জানিনা কোনো মানবতাবাদির পক্ষে তা সহ্য করা সম্ভব কী-না? অথচ আমাদের দেশের বিদ্বানগণ মানিকভাইদের লেখা সহ্য করতে পারছেন না। তাঁরাও মনে করছেন, ঈশ্বরদের লেখাগুলো মহাপবিত্র(!) এবং মানিকভাইদেরগুলো অপবিত্র। অতএব জাতির কপালে যে বহু দুঃখ আছে, তা ১০০% নিশ্চিত।
এ মূর্খের কয়েকটি প্রশ্ন। যেমন, ধর্মানুভূতি বড়, না মানবানুভূতি? কথিত ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়া বইগুলোর মধ্যে সবচাইতে বিখ্যাত ও সর্বশ্রেষ্ঠ কোনগুলো? অথবা, এর মূল উৎস কী? এমন কোনো ধর্মগ্রন্থ আছে কী, যেখানে অন্য ধর্মের সমালোচনা এবং খারাপ ভাষা ব্যবহৃত হয়নি? যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই, ওসব গ্রন্থে সবগুলোই পবিত্র(!) ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন, অশ্লীল-অশালীন ভাষার সংজ্ঞা কী? মহাপবিত্রর সংজ্ঞা কী? যেসব গ্রন্থগুলোকে আমরা মহাপবিত্র(!) বলে মান্য করি, তাতে যদি একটি অশোভন ভাষাও ব্যবহৃত হয়, তাহলে তাকে কী মহাপবিত্র যায়? ধর্মপুস্তক পড়ে বুঝে-শুনে কতো লোক তা মানছে বা ধার্মিক হয়েছে? আশা করি, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে ও জানলে মানিকভাইদের লেখা সহ্য করার ক্ষমতা অবশ্যই বাড়বে।
সবশেষে, দেশ-বিদেশের সকল পণ্ডিতগণের নিকট মানিকভাইদের পক্ষে- একটি চ্যালেঞ্জ। মানিকভাইদের অনুবাকৃত বইতে যেসব অশ্লীল-অশালীন ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে; এরূপ ভাষা যদি ধর্মগ্রন্থ এবং সহায়ক পুস্তকগুলোতে না থাকে, তাহলে মানিকভাইরা প্রকাশ্যে গর্দান পেতে দেবে। আর যদি থাকে, তাহলে আপনারা মানিকভাইদের মুক্তির জন্য অবশ্যই আন্দোলনে যাবে এবং ভবিষ্যতে যারা এসব লিখবে (রেফারেন্স হিসেবে অনর্থক নয়), তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারবেন না। আশা করি গ্রহণ করে বাধিত করবেন।
ক্ষমা চাইছি, মূর্খ আমি, যা বুঝি তাই লিখি, কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য নয়। ধন্যবাদ। সকলে ভালো মনে ও শরীরে সুস্থ থাকুন।
ধর্মকে পোড়াতে গেলে পাটকাটি বা চেলাকাটি দিয়ে হবে না। তারজন্য চাই দাবানল। সেই ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে এবং আগুন জ্বালাবার সাহসী লোক চাই।
অসাধারণ