তাগুত
আকাশ মালিক
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত করো এবং তাগুত থেকে নিরাপদ বা দূরে থাকো ”। (সূরাআন্-নাহল ১৬, আয়াত ৩৬)
কোরানের আটটি জায়গায় তাগুত طَاغُوت শব্দটির উল্লেখ আছে। তাগুত শব্দটি তুগিয়ান থেকে উদ্ভুত যার অর্থ ‘crossing the border or to pass the limit’ সীমালঙ্ঘন বা সীমা অতিক্রম করা।
শব্দের ক্রিয়ামূল (ত্বগা) এবং বহুবচন । যেমন নূহের সময়ের ঘটনায় কোরানে বলা হয়েছেঃ إِنَّا لَمَّا طَغَى الْمَاء (ইন্না লাম্মা তাগাল মা’) ‘‘যখন জল সীমা অতিক্রম করেছিল”। when the water (of Noah’s Flood) overflowed beyond its limits (সূরা হাক্কা-৬৯, আয়াত ১১)
كَلَّا إِنَّ الْإِنسَانَ لَيَطْغَى (কাল্লা ইন্নাল ইনসানা লাইয়াব তাগা) “সত্যি সত্যি মানুষ সীমালংঘন করে”। (সুরা আলাক ৯৬, আয়াত ৬)
أَلاَّ تَطْغَوْا فِي الْمِيزَانِ (আল্লাত তাগু ফিল মিজান) “ যাতে তোমরা পাল্লায় ওজনে (তুলাদন্ডে) সীমা লঙ্ঘন না করো”। (সুরা আল রাহমান ৫৫, আয়াত ৮)
كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَلَا تَطْغَوْا فِيهِ (কুলু মিন তায়্যিবাতি মা রাজাকনাকুম ওয়ালাত তাগু ফিহা) “ আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না” (সুরা তোয়াহা ২০ আয়াত ৮১)।
اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى (ইজহাবা ইলা ফিরয়াউনা ইন্নাহু তাগা) “তোমরা উভয়ে ফেরআউনের কাছে যাও সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে”। (সুরা তোয়াহা ২০ আয়াত ৪৩)
সীমা অতিক্রম করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে আমরা দেখে নিই কোরানের সেই আটটি আয়াত;
(১) নিশ্চয় হিদায়াত গোমরাহী হতে স্পষ্ট হয়ে গেছে, অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে অবশ্যই সে দৃঢ়তর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরলো যা কখনও ছিন্ন হবার নয় এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারাহ ২,আয়াত ২৫৬)
(২) যারা তাগুতের উপাসনা বর্জন করে আল্লাহর অভিমুখী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ; কাজেই আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও।(সুরা আজ জুমার ৩৯, আয়াত ১৭)
(৩) অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি, এই কারণে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর আর তাগুতকে বর্জন কর। (সুরা আন্-নাহ্ল ১৬, আয়াত ৩৬)
(৪) তুমি বল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও নিকৃষ্ট কিছুর সংবাদ দেব, যা আল্লাহর নিকট প্রতিদান হিসেবে আছে, যাকে আল্লাহ লা‘নত করেছেন এবং যার উপর তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন? আর যাদের মধ্য থেকে বাঁদর ও শূকর বানিয়েছেন এবং তারা তাগুতের উপাসনা করেছে, তারা মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সরল পথ হতে সর্বাধিক বিচ্যুত’।(সুরা মায়িদাহ ৫, আয়াত ৬০)
(৫)যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর (নূরের) দিকে, আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত, তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়; এরাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী, তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে। (সুরা বাকারাহ ২, আয়াত ২৫৭)
(৬) তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যাদেরকে কিতাবের এক অংশ দেয়া হয়েছে, তারা প্রতিমা ও তাগুতের (শয়তানের) প্রতি ঈমান আনে এবং যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বলে, তারা মুমিনদের তুলনায় অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত। (সুরা নিসা ৪, আয়াত ৫১)
(৭)তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে ঐ বিষয়ে, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছিল; তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা (তাগুতকে) প্রত্যাখ্যান করার জন্য কিন্তু শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট করে বহুদূরে নিয়ে যেতে চায়।(সুরা নিসা ৪, আয়াত ৬০)
(৮) যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে আর যারা কুফরী করেছে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে সুতরাং তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে, নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল। (সুরা নিসা ৪, আয়াত ৭৬)
এ পর্যন্ত আমরা যে সকল আয়াত সমুহ পড়লাম তা থেকে ‘তাগুত’ শব্দের মর্ম উদ্ধার করতে বিভ্রান্তির সমুহ সম্ভাবনা আছে। আমাদেরকে জানতে হবে-
(১) যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে (সুরা বাকারাহ ২,আয়াত ২৫৬) এখানে ‘তাগুত’ কী?
(২) যারা তাগুতের উপাসনা বর্জন করে (সুরা আজ জুমার ৩৯, আয়াত ১৭)তাগুত কি ব্যক্তি না বস্তু?
(৩) তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর আর তাগুতকে বর্জন কর। (সুরা আন্-নাহ্ল ১৬, আয়াত ৩৬) তাগুত কি কোনো আদর্শ বা মতবাদের নাম?
(৪) তারা তাগুতের উপাসনা করেছে। (সুরা মায়িদাহ ৫, আয়াত ৬০)তাগুত কি কোনো দেব দেবী, মূর্তি ভাষ্কর্যের নাম?
(৫)যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত (সুরা বাকারাহ ২, আয়াত ২৫৭) তাগুত আর কুফরী কি সমার্থক?
(৬) তারা প্রতিমা ও তাগুতের প্রতি ঈমান আনে (সুরা নিসা ৪, আয়াত ৫১)প্রতিমা বুঝা গেল কিন্তু তাগুত কী?
(৭)তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য (সুরা নিসা ৪, আয়াত ৬০) তাগুত কি প্রচলিত রাস্ট্রীয় আদালত,বিচারক, নিয়ম নীতি বিধান?
(৮) যারা কুফরী করেছে তারা তাগুতের পথে লড়াই করে সুতরাং তোমরা লড়াই কর শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে (সুরা নিসা ৪, আয়াত ৭৬)তাগুত শয়তানের বন্ধু, এর মা’নেটা কী?
এতক্ষণে মোটামুটি বুঝা গেল ‘তাগুত’ শব্দের সাধারণ অর্থে শুধু সীমা অতিক্রম করা তা নয় বরং এর অর্থ ব্যাপক।
ইসলামি থিওলজি অনুযায়ী বা শরিয়তের ভাষায় ‘তাগুত’ ব্যবহৃত হয়েছে ‘একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোনো জীব বা বস্তুকে প্রভু মেনে নিয়ে তার বা তাদের উপাসনা করা’ অর্থে। Idolatry or to the worship of anything except Allah.
তাওহিদ বা ঈমানের মূল ভিত্তি বা পূর্ব শর্ত হলো তাগুতকে অস্বীকার করা, পরিত্যাগ করা বর্জন করা। অপর দিকে মুসলমান হওয়ার প্রথম মন্ত্র কলেমা তায়্যিবার প্রথম শব্দই হলো; ‘লা-ইলাহা’ (নেতিবাচক) কোনো প্রভু নেই। আগে ‘অস্বীকার’ তারপর স্বীকার করা ‘ইল্লাল্লাহ’ (ইতিবাচক) একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। অর্থাৎ ‘তাগুত’ তারা যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে। কিন্তু ‘তাগুত’ এর অর্থ শুধু সীমা লংঘন বা আল্লাহকে অস্বীকার করায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। দেখা যাক কোরানের তাফসিরকারকগণ ‘তাগুত’ শব্দটিকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত ও ব্যাখ্যা করেছেন।
‘তাগুত’ সেই ব্যক্তি বা বস্তু যার উপাসনা বা পূজা করা হয় আল্লাহকে বাদ দিয়ে, হতে পারে সে কোনো ব্যক্তি বা কোনো বস্তু বা শয়তান কিংবা মূর্তি। (তাফসিরে ইবনে কাথির ৩য় খন্ড, পৃষ্টা ২১)
শাইখূল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, “ আল্লাহর কিতাব ছাড়া যার কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়, তাকেই তাগুত নামে আখ্যায়িত করা হয়” – অর্থাৎ আল্লাহর কিতাব ছাড়া বিচার ফায়সালাকারীই তাগুত (মাজমু উল ফতোয়া ৭০১/ ৭৮পৃঃ). মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাব (রঃ) বলেনঃ ‘তাগুত’ প্রধানত পাঁচ প্রকার। প্রথমঃ শয়তান…। দ্বিতীয়ঃ আল্লাহর বিধান পরিহারকারী অত্যাচারী শাসক….। তৃতীয়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফয়সালা করে না…। চতুর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত ইলমে গায়েব- এর দাবী করে…। পঞ্চমঃ আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করা হয় এবং সে উক্ত ইবাদতে সন্তুষ্ট থাকে…। (মাজমূআহ আত-তাওহীদ, ১৪, ১৫পৃঃ)
আল্লামা আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আবা-বাতীন বলেন, “আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের পরিপন্থী সব জাহেলী আইনের মাধ্যমে যারা মানুষের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করে তারাও তাগুতের মধ্যে শামিল।” (মাজমুআতুত্ তাওহীদ ১৭৩/১পৃঃ)
মউলানা মউদুদী তার তাফহিমুল কোরানে সুরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন, “আভিধানিক অর্থে এমন সকল ব্যক্তিকে তাগুত বলা হবে যে নিজের বৈধ অধিকারের সীমানালঙ্ঘন করেছে। কোরানের পরিভাষায় তাগুত এমন বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা লঙ্ঘন করে নিজেই প্রভু বা খোদা হওয়ার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিজুক্ত করে। আল্লাহর মোকাবিলায় বান্দার প্রভুত্বের দাবীদার সাজার এবং বিদ্রোহ করার তিনটি পর্যায় আছে। প্রথম পর্যায়ে বান্দা আল্লাহর শাসন কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে সত্য বলে মেনে নয় কিন্তু কার্যত তার বিধানের বিরুদ্ধাচারণ করে। একে বলা হয় ফাসেকী-ফাসিক। দ্বিতীয় পর্যায়ে সে আল্লাহর কর্তৃত্বকে নীতিগতভাবে মেনে না নিয়ে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো দাসত্ব করে। একে বলা হয় কুফরী-কাফের। তৃতীয় পর্যায়ে সে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ও তার রাজ্যে তার প্রজাদের মধ্যে নিজের হুকুম চালাতে থাকে। একে বলা তাগুত। তাগুতকে অস্বীকার পরিত্যাগ বর্জন না করা পর্যন্ত একজন মানুষ কোনোদিনই মুমিন হতে পারবেনা। আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষ একটি তাগুতের শৃংখলে আবদ্ধ হয়না বরং অনেকগুলো তাগুত তার উপর ঝেঁকে বসে। শয়তান একটি তাগুত। দ্বিতীয়টি মানুষের নফস। নফস তাকে আবেগ ও লালসার দাস বানায়। এ ছাড়া বাইরের জগতে আরো অসংখ্য তাগুত ছড়িয়ে রয়েছে। স্ত্রী, সন্তান, পরিবার, আত্মীয়, পরিচিতজন, বংশ-গোত্র, বন্ধু-বান্ধব, সমাজ-জাতি, রাষ্ট্র-নেতা, শাসক ইত্যাকার সব কিছুই মানুষের জন্যে মূর্তিমান ‘তাগুত’। (মউলানা মউদুদী, তাফহিমুল কোরান, পৃষ্ঠা ২১১)
এক কথায় জীবন হবে আল্লাহর কোরান ও মুহাম্মদের হাদিস অনুযায়ী। এর বাহিরের সকল আচার আচরণ, নিয়ম নীতি, মত পথ, বিধি বিধান সব কিছুই তাগুত। মুহাম্মদ তার সৃষ্ট নতুন ধর্ম ইসলাম ঘোষণা দিয়ে জগতের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করে দিলেন। মুহাম্মদ ও তার আল্লাহর আদেশ নিষেধ অমান্যকারী সারা পৃথিবীর সকল ধর্মের অনুসারী একদল ‘তাগুত’ বা কাফির আর আল্লাহ ও মুহাম্মদকে মান্যকারী অপর দল তাওহিদি মুসলমান। মুহাম্মদ তাদের ভৌগুলিক অবস্থানভিত্তিক নাম রাখলেন ‘দারুল ইসলাম’ ও ‘দারুল হারব’। ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ বলেন,দারুল ইসলাম বলা হয় সেই দেশ বা রাষ্ট্রকে যেখানে ইসলামী বিধান প্রয়োগ করা হয়, আর দারুল হরব বা কুফর বলা হয় যেখানে কুফরী বিধান প্রয়োগ হয়। (বাদায়েউস সানায়ে-৭/১৩১) অর্থাৎ দারুল ইসলাম ঐ রাষ্ট্রকে বলবে, যার অধিকাংশ অধিবাসী মুসলমান, যেখানে মুসলমানদের পূর্ণাঙ্গ আধিপত্ব রয়েছে ও কাফেরদের আধিপত্ব কম এবং যেখানে ইসলামের শাস্তি বিধানও প্রয়োগ করা সম্ভব। আর দারুল হরব বা দারুল কুফর হল ঐ সকল রাষ্ট্র, যেখানে মুসলমানদের বসবাস কম তথা মুসলমানগণ সংখ্যালঘু। সেই সাথে ইসলামের বিধান পালনে স্বাধীন নয়। ইমাম আবু হানীফার বক্তব্য হলো; যদি সর্বদিক থেকে মুসলমানদের নিরাপত্তা থাকে আর স্বাভাবিকভাবে আতংকিত থাকে কুফরী শক্তি, তাহলে সেটি দারুল ইসলাম। পক্ষান্তরে সর্বদিক থেকে নিরাপদ থাকে কুফরী শক্তি আর ভীত থাকে মুসলিমগণ, তাহলে উক্ত রাষ্ট্র দারুল কুফর বা দারুল হরব। উল্লেখ্য ‘কুফর’ শব্দের অর্থ অবিশ্বাস বা অস্বীকার করা। তাহলে পরিষ্কার হয়ে গেল মুসলমান ছাড়া জগতের সকল ধর্মের মানুষই কাফের। এক আল্লাহতে অবিশ্বাস ও আল্লাহর আদেশ নির্দেশ, বিধান অস্বীকার করার নামই কুফর। শুধু এক আল্লহতে বিশ্বাস করলেই মুসলমান হওয়া যায়না, কলেমা তায়্যিবাহর দ্বিতীয় অংশ ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ মুহাম্মদকে আল্লাহর রাসুল বলে স্বীকার করে নিতে হয়। আর আল্লাহর আদেশ নির্দেশ, বিধান মেনে নেয়ার শর্ত হলো নবি মুহাম্মদকে অনুসরণ অনুকরণ।
তাগুত ধংসের বা নির্মূলের প্রথম ও প্রধান শত্রু বা অন্তরায় হলো দেশীয় সংস্কৃতি ও গনতন্ত্র। এ জন্যেই সারা পৃথিবীতে ‘দারুল ইসলাম’ বলতে কোনো দেশ নেই কারণ জগতের কোনো জাতি কোনো সম্প্রদায় তার নিজস্ব সংস্কৃতি, প্রথা, সামাজিক রীতি নীতি নিয়ম বিধান ত্যাগ করে কোরানের বা শরিয়া বিধান কোনো কালেই মেনে নেয়নি বা নিতে পারেনি। এই অর্থে সারা পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রই শয়তানের অনুসারী তাগুতের অন্তর্ভুক্ত।। তাগুতের ব্যাখ্যায় প্রথমেই যে প্রশ্নটি তোলা হয় তা হলো; এই জগতের মালিক কে? যেহেতু দুনিয়ার মালিক আল্লাহ সুতরাং তাতে আইন চলবে একমাত্র আল্লাহর। এ জন্যেই মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সকল দেশেই ইসলামী জিহাদীরা ‘তাগুত’ শব্দটিকে বিশ্বজুড়ে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার নামে রাজনৈতিক স্বার্থে তথা রাজ্য বিস্তার বা রাজ্য দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আর আল্লাহ তো কোরানে ঘোষণা দিয়েই রেখেছেন যে, তোমরা তাগুতের বিরুদ্ধে লড়াই করো। এ লড়াই শুধু অমুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই নয় মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও। কারণ সকল মুসলিম রাষ্ট্রও তাগুতের অন্তর্ভুক্ত যেহেতু কোনো মুসলিম রাষ্ট্রই কোরানকে তার দেশের সংবিধান হিসেবে মেনে নেয়নি, পৃথিবীর কোথাও পূর্নাঙ্গ শরিয়ার আইন বা খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। তাগুত ধ্বংসের নামে এ লড়াই চলে আসছে ইসলামের জন্ম থেকে আজ অবদি।
একদিন সত্য প্রকাশ পাবে, সেদিন নাস্তিকরা হাও মাও করে বিলাপ করবে।
আল্লাহর দাসরাও তাঁর মত সর্বদ্রষ্টা (البصير) নাকি !!!
ধন্যবাদ সৈকত বাক্যটি দেখিয়ে দেয়ার জন্যে। বেখেয়ালবসত ভুলটা হয়েছে। এডিট করে দিয়েছি। বানানের ব্যাপারে ‘তাগুত’ এভাবেই প্রায় সর্বত্র লেখা আছে। বিদেশী শব্দে নতুন নিয়মে যুক্তাক্ষর, দীর্ঘ-ইকার ব্যবহার করা হয়না। ‘তাগুত’ এর বিশ্লেষণ করতে গেলে সাত খন্ড রামায়ণ না হলেো এক খন্ড তো লিখাই যায়। মূল লেখাটি আরো বড় ছিল। একবাক্যে প্রকাশ করতে হলে বলবো- মুহাম্মদের ইচ্ছে অনিচ্ছে, পছন্দ অপছন্দ, তার আদেশ-নির্দেশ, তার জীবনের প্রতিটি কাজ-কর্ম, আচার আচরণ পুরোপুরিভাবে মেনে নেয়া বিশ্বাস করার নামই ইসলাম। আর এর বাহিরের সকল মত পথ, আদর্শ বিধানের নাম ‘তাগুত’। মুহাম্মদ নিজেই তাগুতী ছিলেন তাগুত অনুসরণ করতেন, তিনি তার দেশীয় সংস্কৃতির বাইরে ছিলেন না কিন্তু যতটুকু করলে তার নিজের ব্যক্তিস্বার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার হয় সেইটুকুকে ইসলাম বলে চালিয়েছেন।
তবে সারা দুনিয়ার মুসলমান কোনো দেশেই কোনো কালেই মুহাম্মদের মত-পথ, পছন্দ-অপছন্দ কোনো কিছুই পুরোপুরি মানেনি আজও মানছেনা, কোনোদিন মানবেওনা। জিহাদি জঙ্গীরা যতই মারুক আর মরুক না কেন।
তাগুতের? নাকি ইসলামের? আসলে ইসলামের সাথে বিশেষ করে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মোটেও যায় না। ঢোল, বাজনা, নাচ, অভিনয়, যাত্রা, পালা, সিনেমা কোনটা ইসলামে হারাম নয়?
– বানান।
তাগুত শব্দটিকে ‘ত্বাগু’ত’ লেখলে কিছুটা ভাল হয়।
একটা আয়াত আছে, ইন্নালাজিনা আমানু ইয়ুক্বাতিলুনা ফি সাবিলিল্লাহি ওয়াল্লাজিনা কাফারু ইয়ুক্বাতিলুনা ফি সাবিলি ত্বাগুত।
নিশ্চয়ই মুমিনেরা আল্লাহর পথে সহিংশ যুদ্ধ করে(কতলের যুদ্ধ, ক্বাতিলু) আর কাফিরেরা ত্বাগু’তের পথে।
আরো কিছু বিশ্লেষণ প্রয়োজন ছিল। ধন্যবাদ।
চমৎকার। অনেকদিন পর আবার দেখা গেলো শক্তিশালী লেখক আকাশ মালিক’কে।
তো বলছেন যে ইসলাম এইসব জাতি, সম্প্রদায় ও তার নিজস্ব সংস্কৃতি, প্রথা, সামাজিক রিতিনীতি’র তোয়াক্কা করে না। যা পরোয়া করে তা হলো একমাত্র আল্লার আইন; মানে কোরানের আইন, এই তো? তা’হলে যারা ইসলাম মানবে তাদের অবশ্যই কোরান পড়তে হবে, মানতে হবে। পুরোটাই। একটু আধটু মানলে ওরা কি তা’হলে ইসলাম ধর্ম মানলো না? ইসলামী বিধানের শাস্তি তা’হলে ওদের ব্যাপারে ন্যায্য?
মহা মুশকিল।