রোহিঙ্গারা মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জনগোষ্ঠী। বর্তমানে সেখানে ৮ লক্ষ এবং বাংলাদেশে ৫ লক্ষের মত রোহিঙ্গা বাস করছে। রোহিঙ্গারা বেশিরভাগই নিরক্ষর, অতি-দরিদ্র। অপরাধ-প্রবণতার অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে তাদের অনেকেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হয়ে বাংলাদেশের ভাবমুর্তির ক্ষতি করছে। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অনর্থ সাধন, উগ্রবাদি কার্যকর্মে জড়িত হওয়া সহ বিভিন্ন ধরণের উপদ্রব সৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষ এদের প্রতি অত্যন্ত বিরক্ত। অনেকে ধর্মীয় কারণে এদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তবে বাস্তবতা হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ যারা রোহিঙ্গাদের উপদ্রব সহ্য করেছেন তাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিরুদ্ধে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে অনলাইন একটিভিস্টরা বেশ দ্বিধা-বিভক্ত। একদল চাচ্ছেন রোহিঙ্গাদের যাতে আশ্রয় দেয়া হয়, অন্যরা ঠিক এর বিপরীত মনোভাব পোষণ করছেন। যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন তাদের যুক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক:
এক
‘রোহিঙ্গারা দেশে ঢুকলে জঙ্গিবাদ বাড়বে’
মায়ানমারে থাকা এই ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন আছে। এদের মধ্যে যদি উগ্রবাদের উত্থান ঘটে তবে সেটা আমাদের জন্যও ভোগান্তি নিয়ে আসবে। সাধারণ মানুষ আসতে না পারুক, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের যে এদেশে ঢুকতে কোন সমস্যা হবেনা সেটা বলাই বাহুল্য।
নিচের ছবি দেখুন, এদেরকে কী জঙ্গি বলে মনে হয়?
জঙ্গিবাদের যে অভিযোগ রোহিঙ্গাদের উপর সেটা খুবই খেলো। এমন তো নয় যে আমাদের দেশে জঙ্গি নেই। আমাদেরকে যারা হত্যা করছে, যারা চাপাতি নিয়ে ঘুরছে এরা তো বাঙালি, তাই না? এদেশে এতটাই জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটেছে যে তারা দেশের ৬৩ টি জেলায় একযোগে হামলা চালাতে সক্ষম। ঘোষণা দিয়ে, তালিকা করে দিনের পর দিন হত্যাযজ্ঞ চালাতে সক্ষম, সেখানে রোহিঙ্গারা দেশে ঢুকলে জঙ্গিবাদ বাড়বে এ ধরণের অভিযোগ হাস্যকর শোনায়। জঙ্গিবাদ বাড়ার বাকি আর কী কিছু আছে?
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করুক আর না করুক তাদের মধ্যে যাতে জঙ্গিবাদ না ছড়ায় সেটা নিয়ে পরিকল্পনার প্রয়োজন। যারা দেশের মধ্যে আছে তাদেরকে বিশেষ তদারকির মধ্যে রাখাও দরকার। রোহিঙ্গাদেরকে উগ্রবাদি কার্যক্রমে যুক্ত করার ষড়যন্ত্র অনেক আগ থেকেই চলে আসছে। জামাতি ও বিভিন্ন ইসলামি এনজিও সাহায্যের নামে এগুলো করে যাচ্ছে।
শুধু রোহিঙ্গা নয়, ধর্মীয় উগ্রপন্থা থেকে রক্ষার জন্য সকলের মধ্যেই সেক্যুলারিজমের ব্যাপক চর্চা দরকার। সকল মুসলিম সমাজের জন্য এটি অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে।
দুই
‘রোহিঙ্গারা অপরাধ-প্রবণ। তারা দেশে ঢুকলে অপরাধ ও উপদ্রব বেড়ে যাবে’
এটা হয়তো ঠিক যে দেশের প্রচুর মানুষ রোহিঙ্গাদের উপর বিরক্ত। কিন্তু অসহায় মানুষদের মধ্যে অপরাধ-প্রবণতা থাকলেও তাদের আশ্রয় দিতে হয়। কারণ আমরা মানুষ, আর মানুষ হওয়া একটা যন্ত্রণাপূর্ণ ব্যাপার।
রোহিঙ্গাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে তাদের এই প্রবণতা কমবে। শিক্ষার হার বাড়ানো, নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা ধীরে ধীরে তাদেরকে সে প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। এমনকি মায়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও কিভাবে শিক্ষার হার বাড়ানো এবং অশিক্ষা ও ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তি দেয়া যায় তা নিয়ে ভাবা দরকার। রোহিঙ্গাদের জঙ্গিবাদী মাদ্রাসাগুলো বন্ধের জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়াও দরকার।
আমাদের দেশের মানুষ এতই অপরাধ-প্রবণ যে যখন রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এটি বলা হয় তখন বিব্রত বোধ করি।
তিন
‘রোহিঙ্গারা দেশে দারিদ্র্য বাড়াবে, সাধারণ মানুষের কাজের সুযোগ কমে যাবে’
মাত্র ৮ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশের ১৬ কোটির তুলনায় খুব একটা বড় নয়। আর এই ৮ লক্ষের মধ্যে হয়ত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায় প্রতি বছর। এদের মধ্যে যেহেতু শিক্ষার হার খুব কম তাই তারা শুধু নিম্নবিত্ত মানুষদের সাথেই প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম। যদি রোহিঙ্গাদেরকে শরণার্থী ক্যাম্পে রাখা হয়, ক্যাম্পগুলো ভিন্ন জেলায় স্থাপন করা হয়, এদেরকে বিভিন্ন জেলায় স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম হবে।
চার
‘রোহিঙ্গারা পাকিস্তানপন্থী’
ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যার পরও যেখানে আমাদের দেশের প্রচুর মানুষ পাকপন্থী সেখানে নিরক্ষর এবং পাকিস্তানিদের হাতে নির্যাতিত না হওয়া মুসলমানদের পাকিস্তানের প্রতি আগ্রহকে খুব একটা গুরুত্ব না দেয়াই ভাল। বরং এদেরকে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হোক।
এখন আসি ভিন্ন আলোচনায়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমাদের কী করা উচিত?
১। বাংলাদেশ সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের ব্যাপারটি তুলে ধরা। মায়ানমারের উপর চাপ বৃদ্ধির সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
২। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে অন্যান্য দেশে আবাসনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ।
৩। রোহিঙ্গাদেরকে কিছুটা হলেও শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা – এদের অবস্থা বড্ড শোচনীয়।
৪। সেক্যুলারাইজেশন, উগ্রপন্থা থেকে রক্ষা। মাদ্রাসার কবল থেকে বাচানো।
৫। অবস্থা স্থিতিশীল হলে রোহিঙ্গাদেরকে কিভাবে নিরাপদে মায়ানমার প্রত্যাবর্তন করানো যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ। রোহিঙ্গাদের অনেকেই ফিরতে চায় না, কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকলে নিজ দেশে ফিরে না যাওয়ার কোন কারণ থাকতে পারেনা। তাই এজন্য মায়ানমারের প্রতি চাপ দেয়ার কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু বাংলাদেশ বরাবরের মত এক্ষেত্র চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা দেখাচ্ছে।
ব্লগার হত্যায় অংশ নেয়া হেফাজতিসহ কিছু মানুষের খুব আবেগ দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রতি কারণ এরা মুসলমান। অথচ এদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে দিনের পর দিন, এগুলো নিয়ে তাদের কোনো বিকার নেই। রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের কোনো অনুভূতি থাকত না যদি এরা অমুসলিম হত তখন বরং এরা নিজেরাই চাপাতি নিয়ে সীমান্ত পাহারা দিত। দেশের মধ্যে যখন মানুষ বিপদগ্রস্থ তখন তারা ফিলিস্তিনে কেউ নিহত হলে সেটা নিয়েই শুধু প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আবার মুসলমানদের হাতে হাজারো মুসলমান যখন নিহত হয় তখন তাদের কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যায় না, পাকিস্তান কর্তৃক একাত্তরে এদেশে চালানো গণহত্যাকেও তারা অবজ্ঞা করতে চান। তাই বলি, ধমানুভূতি জিনিসটাই ভয়ংকর, সেটা মানবতাবোধকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলে।
আমরা দেখবো মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। রোহিঙ্গা সমস্যাকে উটকো সমস্যা বলে মনে করার কোন কারণ নেই। আশেপাশের কোন দেশে বিপর্যয় ঘটলে তা যে আমাদেরকে স্পর্শ করবে সেটা স্বাভাবিক এবং এই একই ধরণের সমস্যায় রয়েছে অনেক দেশই। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ ভারতে চলে যায় প্রতি বছর, শুধু হিন্দু নয় মুসলমানরাও। পাকিস্তানে এখনো বিশাল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে, স্বাধীনতার পরেও কিন্তু অনেকেই চলে গেছে রোজি-রোজগারের সন্ধানে। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে উন্নত দেশগুলোতে।
আগে মানুষ, তারপর দেশ। মানুষকে বাচতে দিতে হবে। যখন কিছু মানুষ হাড় জিরজিরে মহিলা-শিশুদের নিয়ে জীবন বাচানোর জন্য একটা ভাঙ্গা নৌকায় পানিতে ভাসতে ভাসতে আমাদের দেশে পাড়ি জমায় তখন এদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার কোনো মানবিক যুক্তি আমার জানা নেই।
রোহিঙ্গাদের জীবনাচরণ, সংস্কৃতি সব কিছু বড্ড বেশি মিলে যায় এদেশের মানুষের সাথে। একজন রোহিঙ্গার ছবি দেখলাম মাটে কাজ করছে, না বলে দিলে বোঝা কঠিন যে সে বাঙ্গালদেশি নয়। রোহিঙ্গাদের ভাষা মোটামুটি বুঝি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে পুরাই মিলে যায়। যখন একটা বোধগম্য ভাষায় কেউ এসে বাচার আকুতি জানায় তখন এদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার দৃশ্যটা কেমন হতে পারে ভেবে দেখুন!
এই রোহিঙ্গা শিশুটাকে দেখে মনটা ভার হয়ে আছে। মায়ের কোল মনে করে মাটিকে জড়িয়ে ধরেছে শিশুটি, এই মাটির উপর মানুষ হিসাবে সবার সম-অধিকার আছে।
পৃথিবীর সর্বত্রই মানুষগুলো বেচে থাকুক। মানুষ বেচে থাকলে তারা ভবিষ্যতে একটা মানবিক পৃথিবী তৈরি করবেই।
মানবতার দৃষ্টি থেকে একমত পোষণ করছি । কিন্তু কয়েকটি কথা না বললেই নয় । প্রথম কথা আট লক্ষ জনগণ কিন্তু মোটেও কোন কম সংখ্যা নয় । আর সেই জনসংখ্যা যখন শুধু বোঝা হয়ে আসতে চলেছে বাংলাদেশের জন্য , তখন শুধু মানবতার দৃষ্টিই যথেষ্ট নয় । বাস্তবতা কে মনে রাখাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা দীক্ষার ব্যাবস্থা ? কে করবে সেটা ? মায়ানমার সরকার এদেরকে কখনোই আর নাগরিক সুবিধা দেয়ার মত অবস্থায় নেই । বাকি রইল বাংলাদেশ । বাংলাদেশ যখন নিজের সুবিধাবঞ্চিত পরিবার গুলির শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে ব্যার্থ হচ্ছে , মাদ্রাসায় পড়া বড় একটা অংশ কে কর্মক্ষম এবং উৎপাদনশীল জনস্রোত এ সামিল করতে ব্যার্থ হচ্ছে তখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা দীক্ষা অনেকটা কল্পনার মত । লেখকের কথা মানছি যে , রোহিঙ্গা রা বাস্তুহারা এবং গরীব । তারা হয়তো নিম্নমধ্যবিত্ত , মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত দের সাথে প্রতিযোগীতায় আসতে সক্ষম হবে না । কিন্তু তারা প্রতিযোগীতা করবে আমাদের দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের সাথে ।
শিক্ষাপ্রদ পোস্ট।
নিরপেক্ষভাবে একটা মানবিক আবেদনমূলক লেখা পোষ্টের জন্য লেখককে ধন্যবাদ। আপনার বক্তব্য আর মন্তব্যগুলোর সাথে সম্পূর্ণ একমত। রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর অত্যাচার সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লংঘণ। রোহিঙ্গাদের জায়গা দিলে হয়ত আমাদের কিছু অসুবিধা হবে, কিন্তু নির্যাতনের শিকার একটি অসহায় জনগোষ্ঠির দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো আমাদের কর্তব্য।
না আমি সমর্থন করতে পারলাম না, শুধু একটি ছবি দেখিয়ে সব প্রমান করা যায় না। সব রোহিঙ্গাদের কক্ষনই মারা হয় নি। জাতিসংঘ বলেছে, মিয়ানমার জিহাদি রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়া করতে চায়। ইসলামি জিহাদ ছেড়ে এখন তারা মৃত্যুর মুখে পালাচ্ছে। কিছু দিন আগেও এই রোহিঙ্গাদের হাতে জীবন দিয়েছে মিয়ানমারের বৌদ্ধ মংকরা। ধর্ষিতা হয়েছে বৌদ্ধ নারীরা এই রোহিঙ্গাদের হাতে। শাসক দলের নেত্রী অং সান সু চির এই সঠিক ভূমিকা বাংলাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। বাংলাদেশের অনেকেই বলছেন, তার নোবেল শান্তি পুরষ্কার ফিরিয়ে নেয়া হোক। নোবেল কমিটি কখনোই তা করবে না। বরং সু চি তার দেশপ্রেমের চুড়ান্ত পরীক্ষায় পাশ করেছেন। ধর্মান্ধ বা উগ্র ইসলামি মৌলবাদী বিশ্ব শক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন নি। এখানেই নিজের দেশ রক্ষায় সফল সু চি।এখানেই অহিংস গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চির বিচক্ষণতার কাছে গান্ধী, ট্রাম্প সবাই ম্লান হয়ে যায়। ইসলামি মৌলবাদকে চিরতরে রুখতে হলে ইসলামি জংগিদের Culling করা প্রয়োজন। কর্ম সুত্রে আমার তাইওয়ান , সিওল এ সব জায়গা চেনা আছে, সেখাণকার এক ক্লায়েন্ট বলেছে আমাকে যে কক্ষনো শুনবেন না যে টোকিও , সিওল , তাইপেই তে ইস্লামিস্ট দের হামলা বা গণ্ডগোল । কারন অলিখিত ভাবে ইসলাম এসব জায়গায় ১০০% নিষিদ্ধ। খারাপ ভাবেই বলছি ইসলাম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে লাগবেই লাগবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য। আমি সু চি কে সমর্থন করলাম ।
আপনার মন্তব্য পড়ে হাসলাম। কিভাবে একটা বিশাল সংখ্যক মানুষের উপর এত দিন থেকে চলে আসা সীমাহীন নিপীড়ণ, অমানুষিক অত্যাচারকে এত সহজে অস্বীকার করে ফেলতে পারেন? শুধু এই একটি ছবি নয়, অসংখ্য ছবি, প্রমাণ দেয়া সম্ভব। আমি ব্যক্তিগতভাবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অনেক খবর নিয়েছি, এবং সেগুলো অত্যন্ত অত্যন্ত করূণ।
শুনেন, আপনি হয়ত জানেন ধর্মে আমার ব্যাপক এলার্জি আছে, সেটা আমৃত্যু থাকবে। কিন্তু ধর্মগুলো অতিশীঘ্রই হারিয়ে যাবে। ভয় না পেয়ে নির্দ্বিধায় মানুষের পক্ষে দাঁড়ান, মানবতার পক্ষে দাঁড়ান।
আশ্রয় দেওয়া হোক কিন্তু কোনো মৌলবাদী কার্জ কলাপ দেখলেই ততখনাত বিতাড়ন করা হোক, এই শ্রতেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হোক। ধর্ম মানে আফিম কিন্তু ইসলাম মানে হেরোইন। ইউরোপে যে সব সিরিয়ান শরণার্থী রা গিয়েছে শুরু করেছে শ্লীলতা হানি , চুরির মত অনেক নিচ নোংরা কাজ। তাই সাবধান করাচ্ছিলাম , দয়া করুনা এক দিকে , বাস্তব সেন্স আরেক দিকে। না হলে বাংলাদেশেও “তাহ্রুশ” খেলা শুরু করে দেবে রোহিঙ্গারা।
আপনার মন্তব্য একপেশে! ইসলামি জঙ্গিদের অপরাধের জন্য সাধারণ রোহিংঙ্গা মুসলিমরা কেন এভাবে নির্যাতিত হবে? একটা সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের অপরাধে পুরো সম্প্রদায়কে দোষী করা কতটা যৌক্তিক? ধর্ম হিসাবে ইসলামের সমালোচনা অবশ্যই করতে পারেন; কিন্তু নিরাপরাধ মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতন সমর্থন করা কোনমতেই মানবিক নয়।
সবার মন্তব্য পড়লাম আর আমার মন্তব্যের জবাবও দেখলাম। না নিরিহ মানুষ হত্যা মেনে নেওয়া যায় না। তাও বলব যে ইসলাম নামের রোগ জোর করে হলেও ছাড়াতেই লাগবে। রোজা রাখা — বন্ধ, বোরখা হিজাব —– বন্ধ , টুপি — বন্ধ। গণতান্ত্রিক নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক, সে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে হলেও। কারন বহু মুসলিম শরণার্থী অন্য দেশে আশ্রয় পেয়ে কয়েক বছর পর থেকেই বিভিন্ন অশান্তি শুরু করে, যেমন নরওয়ে , ফ্রান্স এইসব জায়গায় শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর যদি কোনো মৌলবাদী পথ তাদের কেউ নেয় , স্রেফ লাথি মেরে বের করে দেওয়া হবে, সেই শ্রতেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হোক।
ধন্যবাদ লেখাটার জন্যে …
বাস্তবতা হচ্ছে- মিয়ানমারে যখন কচু কাটা হচ্ছে- তখন বাঁচার জন্যে রোহিঙ্গারা এইদেশে বর্ডার পার হয়ে আসার চেস্টা করবেই। যতই ফিরিয়ে দেয়া হোক না কেন- তারা অন্য যেকোন উপায়েই হোক- বারেবারে চেস্টা করবে। এটা এমন না যে- বাংলাদেশ কোন স্বর্গ রাষ্ট্র, এইখানে আসলেই তারা থাকা- খাওয়া- কাজ এসবের দারুন সব সুব্যবস্থা পাবে, এসবের নিশ্চয়তা দিয়ে দেবে বাংলাদেশ! বরং তারা জানে- বাংলাদেশের সরকার এদেরকে কি চোখে দেখে, বাংলাদেশের মানুষ এদের কি চোখে দেখে ! তারপরেও তারা বাংলাদেশে আসতে চায়- তার একমাত্র কারণ- মিয়ানমারে তারা নিরাপদ নয়।
ফলে- যেভাবে রোহিঙ্গারা দেশে ঢুকছে- তারই ভয়ানক ফল বাংলাদেশ ভোগ করছে- সামনেও আরো করবে! সরকারীভাবে যখন শরণার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া না হয়- তখন সেই শরণার্থীরা রাষ্ট্রের তথা সরকারের দৃষ্টির বাইরে থাকে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। এদেরকে দিয়েই বাস্তবে নানা অপরাধমূলক কাজে কর্ম করানো সম্ভব হয়। ফলে- এই অনিবন্ধিত প্রবেশকারী রোহিঙ্গারাই জঙ্গী রিক্রুটারদের টার্গেটে থাকে, নানা মাফিয়া- চোরাকারবারি গোষ্ঠীর নজরে থাকে। উল্টোদিকে এরকম রোহিঙ্গাদের এই দেশে এসে কোনরকমে টিকে থাকার জন্যে যেনতেন কাজের দরকার, যেনতেন শেল্টার দরকার, ফলে মরিয়া হয়ে তারা যেকোন কিছুতেই জড়িয়ে পড়ে। এইসব বন্ধ করার একটাই উপায়- বাংলাদেশ সরকারকে ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা উচিৎ। টেকনাফ- কক্সবাজার- চট্টগ্রামে যদি চাপ বেশি হয়ে যায়- দেশের অন্যান্য জায়গায় এদেরকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারে। এইসব রিফিউজিকে রাখার জন্যে বিশাল জায়গার প্রয়োজন হয় না, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বড় সড় ক্যাম্প করে করে এদের রাখা যায়। যেখানে নিয়মিত হাজিরা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক- শরণার্থী হিসেবে নিয়ম-কানুন ভাঙলে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারটাও জারি রাখলে- কিছুটা কন্ট্রোলে রাখা সম্ভব।
সরকারীভাবে যখন এই রিফুজিদের গ্রহণ করা হয়- তখন বাংলাদেশ অটোমেটিকভাবে আন্তর্জাতিক ফোরামে ভয়েস রেইজ করার ব্যাপারে লেজিটেমেসি অর্জন করে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে- অনেক সংস্থাও এই রিফিউজিদের ক্যাম্প করা, তাদের খাবার দাবার থেকে শুরু করে নানা দরকারের প্রয়োজনীয় ফান্ড দিতে পারে- যেইটা এখনকার অবস্থায় সম্ভব না। বাংলাদেশ এর আগে- যতবার এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে- সবই সরকারিভাবে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার কারণেই … শরণার্থী ক্যাম্পের শরণার্থী জীবন কোন চিরস্থায়ী ব্যবস্থা না- ফলে এক দেশ থেকে একটা জনগোষ্ঠী আরেকটা দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে মানেই- সেই দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটা ফোরামে তাকে একরকম জবাবদিহি করতে হয়- সেই শরণার্থীদের ব্যাপারে …
এটা বুঝা উচিৎ- অবৈধ অভিবাসী যত বড় সমস্যাই হোক- এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কথা বলার বা চাপ তৈরির স্কোপ খুব কম- কেননা এটাকে আভ্যন্তরীন সমস্যা ধরা হয়- অবৈধভাবে প্রবেশ বন্ধ করা- তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া- সবই অভ্যন্তরীন ব্যাপার ধরা হয়। কিন্তু, শরণার্থী সমস্যাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আলাদাভাবে গুরুত্বের সাথেই দেখা হয় …
ধন্যবাদ আপনাকে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিরুদ্ধে যারা কোমর বেঁধে নেমেছেন এদের দেখে ভয় পেয়ে গেছি। বেশ কিছু প্রশ্ন জাগছে মনে।
এই জগতের প্রাণীদের মধ্যে মানুষজাতি’ই প্রধান। অথচ এই মানুষেরাই অত্যন্ত বিবেকহীন। শুধু নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে চলে। তাঁর মধ্যে কিছু সংখ্যকের মনুষ্যত্ব আছে। তারাই মানুষের জন্য কিছু চিন্তা ভাবনা করে। অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। তবে মানব ধর্ম পালন করা হয়। তথাকথিত ধর্মকে বাদ দিয়ে আমাদের মানব ধর্ম পালন করা উচিত। কেননা ঐ সমস্ত ধর্মীয় নেতারা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্ঠি করে হানাহানির পর্যায়ে নিয়ে যায়। সেখানে মানবতার ধর্ম লঙ্ঘিত হয়। আমাদের সকলের উচিত সেইদিকে লক্ষ্য রাখা যেন প্রত্যেকটা মানুষ চেতনা ও বিবেক সম্পন্ন মানুষ হয়। যে কোন অসহায় ও নিপীড়িত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া মানবতার ধর্ম, সেখানে স্খলন হওয়া ঠিক নয়। প্রত্যেক মানুষের নিজ নিজ জন্মভূমিতে বাস করার অধিকার আছে ও থাকবে। এই অধিকার থেকে তাকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না বা করা উচিত নয়। সেখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খৃষ্ঠান যে কেউ হউক না কেন? সরকার আসে নাগরিকদের সমর্থনে, সুতরাং প্রত্যেক নাগরিক বা দেশবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করা সরকারের উচিত। এই ব্যাপারে সরকাররে উপর চাপ সৃষ্ঠি করতে হবে, সেটা হবে বিশ্বব্যাপী। এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এশিয়া মহাদেশ, এর জন্য প্রতিবাদের আওয়াজ এখান থেকেই তুলতে হবে। আসুন আজ সবাই মিলে ( এখানে কোন ধর্মের বাঁধন রাখা হবে না) বলি,’আমরা মানুষ, আমাদের ধর্ম মানবতা, অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের পাশে আমরা আছি ও থাকবো।
হ্যা, মানুষের জন্যই দেশ। আগে মানুষ, পরে দেশ। ধন্যবাদ আপনাকে।
চমৎকার লেখা। তবে অরণ্যে রোদন মনে হয়, বাঙলাদেশ সরকার কিংবা বাঙালিদের এতো মানবতা নেই যে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা মারা গেলে তাদের কিছু এসে যাবে।
সহমত।
আমাদের দেশের মানুষ অপরাধ-প্রবণ হলেও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয় বলে আপনি উল্লেখ করেছেন তা অমূলক নয়। তবে শতকরা কত ভাগ রোহিঙ্গা এসব করে তা বুঝতে হবে। বুঝাতে হবে।
আর আপনি বলেছেন — “
শুধু কি এজন্যই আশ্রয় দেয়ার সুপারিশ? এদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সাথে ধর্ম ছাড়া সংখ্যাগুরুদের আর কোন পার্থক্য নেই। কাজেই আমাদের দেশের বৃহত্তর জনগোষ্টি ও সরকারের এসব যুক্তিতে মন গলবে না। টলবে না।শুধু ধর্ম এক বললে যতটা টলানো যাবে।
যাহোক, এসব যুক্তি তর্ক নয়। মানুষ মানুষের জন্য। ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার বলেই এগিয়ে আসতে হবে।
ভাবছি সত্যি সত্যি যদি ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে বাচানো যেতে তবে প্রচণ্ড বিরাগ হওয়া সত্ত্বেও একবার ধর্মের দোহাই দিতাম। কিন্তু বাস্তবতা খুবই ভিন্ন। ধর্ম কাজ করেনি নিপীড়ণ বন্ধে। মুসলমানরা নিজেরা যদি একে অপরকে সাহায্য করে সুখে থাকত তাহলে সেটা আসলেই অত্যন্ত আনন্দের খবর হত। কিন্তু কোথায় কী? মধ্যপ্রাচ্যের ধনি দেশগুলো অপরাপর মুসলিমদের প্রতি ফিরেও তাকাচ্ছে না একবার। বাংলাদেশের মানুষ ওসব দেশে গেলে সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়। একাত্তর দেখেন, না, কাজ হয়নি। ধর্ম জিনিসটাই এমন সেটা শুধু আকামে লাগে। এখন যারা রোহিঙ্গাদের ধর্ম পরিচয় সামনে নিয়ে এসে দরদ দেখাতে চাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন, ওদেরকে সর্বাগ্রে দমাতে হবে।
আর একটু যোগ করছি।
রাষ্ট্রসংঘ এখানে বাংলাদেশ এবং মায়ানামার এই দুই দেশকে বলতে পারে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য। এই মানুষগুলির দায়িত্ব এই দুই দেশ অস্বীকার করতে পারে না ।
রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে কি করা উচিৎ আমার কাছে জানতে চেয়েছেন ।
দেখুন উচিতের তো শেষ নেই, তবু —
সমস্ত পৃথিবীতে সীমান্ত তুলে দিতে হবে । যাতে যে কোন মানুষ যে কোন জায়গায় থাকতে পারে । কিন্তু এই মুহূর্তে এটা আকাশ কুসুম কল্পনা।
নিদেন পক্ষে ভারত – পাকিস্তান – বাংলাদেশ – মাঈণামাড় এই চার দেশ যদি ইউরোপের মতো সীমান্ত রোহিত দেশ হয় তা হলে তাদের সমস্যা সমাধান হয়। কিন্তু এটাও আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র ।
আমরা আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক কিছু বোলতে পারি ।মানুষ গুলোর জন্য কষ্ট হলেও এই বিরাট দুনিয়ায় তার মূল্য কাণা কড়িও নয় ।
তবে রাষ্ট্রসংঘ এখানে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারে।
রহিঙ্গা দের মধ্যে জনসংখ্যার হার বেশি তার নির্ভরযোগ্য তথ্য জানতে চেয়েছেন ।
উইকি জানাচ্ছে –
Demographics[edit]
Those who identify as Rohingyas typically reside in the northernmost townships of Arakan bordering Bangladesh where they form 80–98% of the population. A typical Rohingya family has four or five surviving children but the numbers up to twenty eight have been recorded in rare cases.[3][101] According to David Price of Harvard University, Rohingyas have 37% more children between 0 and 9 years old than Myanmar’s national average.[3] As of 2014, about 1.3 million Rohingyas live in Myanmar and an estimated 1 million overseas. They form 40% of Rakhine State’s population or 60% if overseas population is included.
এছাড়া উৎসাহী পাঠক ঐ সাইটে অন্য কাগজ (THE GUARDIAN, THE HINDU, TIMES OF INDIA) দেখতে পারেন। সেখানে আরও ভয়াবহ চিত্র দেওয়া আছে ।
শতকরা ৩৭ ভাগ বেশি বাচ্চাকাচ্চা এমন কোনো বড় ব্যাপার না। দেখতে হবে জনসংখ্যা কী হারে বাড়ছে। প্রতিবছর অসংখ্য রোহিঙ্গা অপমৃত্যুর শিকার হয়। বিভিন্ন দেশে সাগর পথে পাড়ি জমাতে গিয়ে মারা যায়, কালে-ভদ্রে এসব খবর পত্রিকায় আসে।
জনসংখ্যা যদি কোনো জনগোষ্ঠির মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে তবে এর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া যায়, কিছু কড়া আইনি পদক্ষেপও কিন্তু আগে এর প্রয়োজন হতে হবে তো!
সীমান্ত-টিমান্ত এগুলো পরে উঠবে, আগে যেসব মৃত্যুমুখে পতিত মানুষ আশ্রয় চাচ্ছে তাদের আশ্রয় দেয়া হোক, এরা বাচুক।
আমাদের দেশটা আহামরি কোনো স্বর্গ নয় যে রোহিঙ্গারা এখানে এসে একদম বিশাল একটা কিছু পেয়ে যাবে। বেশির ভাগই এসে কোনো একটি ঝুপড়ি ঘরে বাস করে মানবেতর জীবন-যাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে মানুষের ঘৃণা। আমরা অনলাইনে কিছু ইমানদারদের তৎপরতায় মনে করতে পারি এদেরকে হয়ত দেশে খুব আদরে রাখা হয় কিন্তু বাস্তবতা খুবই ভিন্ন। আমাদের দেশের মানুষের মত রেসিস্ট আর দুনিয়ায় নেই। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ মানুষ একটুও সহ্য করতে চায় না।
নারী-শিশু বোঝাই নৌকা নিয়ে যারা এসে সীমান্তরক্ষীদের প্যাঁদানি খায় তারা আসলেই অসহায়। এরা দালালকে টাকা দিয়ে নির্বিঘ্নে দেশে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করতে অসমর্থ। এদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার অর্থই হচ্ছে হয়ত নৌকা ডুবে তারা মারা যাবে অথবা ভাসতে ভাসতে পশু-পাখির মত কোথাও গিয়ে থাকবে।
এরপর বাস্তবতা হচ্ছে রোহিঙ্গারা দেশে প্রবেশ করছেই। বিবসিতে প্রকাশিত এক সংবাদে দেখলাম দশ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে এ বছর। তাহলে অসহায় মানুষগুলোকে ফিরিয়ে দেয়ার আর কোন মানে থাকল যাদের সংখ্যা বেশ নগণ্য?
আরেকটা প্রচার দেখলাম এরা নাকি খুবই জঙ্গি। সন্দেহ নাই এদের মধ্যে কিছু জঙ্গি গ্রুপ আছে, কিছু রোহিঙ্গা জঙ্গিবাদি কার্যক্রমের সাথে যুক্ত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের তুলনায় তাদের মধ্যে জঙ্গি প্রাদুর্ভাব অনেক কম, বেশির ভাগ মানুষ ধর্ম-কর্ম বুঝেই না, শুনেছে শুধু যে সেও মুসলমান, এতটুকুই। নিরক্ষর ও দরিদ্র হওয়ায় এদেরকে ব্যবহার করা সহজসাধ্য তাই তাদের মধ্যে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিছু উদ্যোগ নিলে এর নিরাময় অসম্ভব ছিল না।
এটা একটা সমস্যা বটে। কোন এক সম্প্রদায় কোন এক দেশে বসতি স্থাপন করলে কিছুদিন পরে তারা সেই দেশের ওই অংশ দাবি করে। এক ই অবস্থা হয়েছিল শ্রীলঙ্কায় । তামিল জাতির লোকেরা শ্রীলঙ্কায় গিয়ে একটি অংশ (জাফনা) স্বাধীন বলে দাবী করে । কিন্তু তার পরিনাম হয়েছিল ভয়াবহ।
রোহিঙ্গারা ঠিক কবে থেকে মাইনামার থাকতে শুরু করেছিল ঐতিহাসিক রা তার হিসাব করুক । কিন্তু ওই দেশটা বারমিসদের । এটা তো ঠিক। পৃথিবীতে একদিন কোন বর্ডার থাকবে না – মানব জাতি এক হয়ে যাবে – এমন স্বপ্ন থাকা ভালো। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে এক দিন সীমান্ত বিহীন পৃথিবী আমরা পাব । কিন্তু যতদিন সেটা না পাব ততদিন সীমান্ত ধরেই নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
আর একটি বিষয় অনুল্লেখ রয়েছে। যতটুকু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মহার অত্যন্ত বেশি। মাত্র একদশকের মধেই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। যে কোন দেশের জন বিন্যাস বদলে যাওয়া কিন্তু বিশেষ সমস্যা সৃষ্টি করে । এই ব্যাপারে লেখকের মত কি জানতে ইচ্ছা করছে।
এ সম্ভাবনা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে খুবই কম। এমন কিছু ঘটতে পারে কেবল সুষ্টু ব্যবস্থাপনার অভাবে। এছাড়া এদেরকে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা যদি অব্যাহত রাখা হয়, অন্যান্য দেশে পাঠানো হয় এবং আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয় তবে সে সম্ভাবনা আসবে কোত্থেকে?
এর মানে কি এক দেশের মানুষ বিপদাপন্ন হলেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আরেক দেশে যেতে পারবে না?
এ ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য তথ্য চাচ্ছি। আমার জানা মতে, রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অতি সামান্য। এসব তথ্য পাওয়ার পর উত্তর দিচ্ছি।
সাথে আপনার একটা মতামত চাচ্ছি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কী করা উচিত বলে মনে হয় আপনার?
শুন হে মানুষ ভাই
সবার উপর মানুষ সত্য
তাহার উপর নাই।
বাংলাদেশের শরনার্থী নীতিমালা কী আমরা জানি না। জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের কী চুক্তি আছে তাও জানি না। মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক কী সেটাও পরিষ্কার নয়। কিন্তু এইসব অসহায় মানুষগুলোকে আশ্রয় না দিলে তারা যাবে কোথায়?
ধন্যবাদ।
এটাই। এদেরকে তো বাচতে হবে।
মানুষ মানুষের জন্য, সে যে ধর্মেরই হোক।
বিপদগ্রস্থ অসহায় মানুষ অন্য সক্ষম মানুষের কাছে আশ্রয় না পেলে এই মানব জীবনের অর্থ কি? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বার্মাতে (আজকের মায়ানমার) অসহায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ আশ্রয় পেয়েছিলো এইসব অতি দরিদ্র্র রাখাইন বাসীদের কাছে। সেই নাফ নদী পার হয়েই, উল্টোদিকে। ওদের কাছে নুনভাত ছাড়া দেবার আর কিছুই ছিল না। আর ছিলো পাতায় ছাওয়া, মাটিতে গর্ত করা শৌচাগার। বস্তিতে, গলিতে, কুঁড়ের স্যাঁতসেতে মাটির বারান্দায় শুয়েছে উদ্বাস্তু বাংলাদেশের তাড়া খাওয়া মানুষ, মাসের পর মাস। এ কথা আমি শুনেছি সেই রাখাইন থেকে ভেসে আসা এক গরিব কামারের কাছে; যে আজ মার্কিন নাগরিক, ছিলো রোহিঙ্গা শরনার্থী। মানুষের জন্য মানুষ যদি না পাশে দাড়ায় তবে কি অর্থ এই মানব জীবনের? শরণার্থী, উদ্বাস্তু, আশ্রয়প্রার্থী এদের সবার প্রথম পরিচয় সে মানুষ এবং অতঃপর বিপদগ্রস্থ, যা তারা নিজ থেকে তৈরী করেনি। এদেরকে নিয়ে খেলা করা আসলে অপরাধই বটে।
সাধারণ মানুষের ভালো হোক।
সৈকত’কে ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ কাজী দা।
:rose:
দুঃখজনক হলেও সত্য, ধর্মান্ধ ইসলামী দলগুলোর মতো অনেক সরকারপন্থী সেক্যুলারও রোহিঙ্গাদের মুসলিম পরিচয়কে মুখ্য করে তুলছে, এবং জঙ্গিবাদের ধুয়ো তুলে নিরীহ নারী-শিশুকেও এরা আশ্রয় দিতে রাজি হয় না। ইসলামিস্টদের মতো এরাও একই একচোখা মানবতার দোষে দোষী।
সত্য হচ্ছে, বিজিবির চোখ এড়িয়ে হাজারো রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অথচ বিজিবি যদি তাদের পুশব্যাক নীতির বদলে এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্রহণ করে, শরণার্থীদের জন্য পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা করে তবে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের খুব সহজেই উগ্রবাদের দিকে উদ্বুদ্ধ্ করা সম্ভব, অতীতেও তা হয়েছে।
একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে জাতি-ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে নিপীড়িত আশ্রয়প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। যে রাষ্ট্র সজ্ঞানে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, সে রাষ্ট্র আর যাই হোক, মানবিক হতে পারে না।
ধন্যবাদ।
আপনার এই নির্মোহ বিশ্লেষণ ভালো লাগল ।তবে একটি ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায় :যে সব মৌলবাদী সংগঠন রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য দাবি জানাচ্ছে তাদের নীতি এবং উদ্দেশ্য মানবতার জন্য নয় । ধর্মের জন্য তাদের এই অবস্থান ।যা আপনি তুলে ধরেছেন ।আর তারা এদের তাদের কথার মায়াজালে ফেলে ইসলাম বিস্তারের কাজেই লাগাবে ।এখন কথা হচ্ছে সরকার এদের যদিও বা আইনগত ভাবে থাকা র অধিকার দেয় কিন্তু তাদেরকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে মৌলবাদের কবল থেকে মুক্ত রাখতে পারবে তো? যেখানে নিজের দেশের বেশ সংখ্যক শিশুদের কে এখনো শিক্ষার নামে মৌলবাদ শেখানো হচ্ছে ।
সরকার এ ব্যাপারে মোটেও সচেতন নয়। তারা অনেক ক্ষেত্রেই মৌলবাদকে বরং উৎসাহিত করছে।
এগুলো নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি দরকার।