লিখেছেনঃ আবু জাহেদ
ধর্ম এবং ধর্মীয় ব্যবস্থা নাকি মানুষে মানুষে কোন রকম বিভেদ দৃষ্টি করেনা, যারা এই ধরনের কথাগুলি প্রচার করে চলেছেন তাদের মানবিক বিচার বোধ আশা করে, তাদের জন্য কিছু প্রশ্ন নিবেদন করছি।
ধরে নিন আমি আবু জহেদ আর উনি হলেন শ্রী প্রকাশ রায়। আমাদের এই দু জনের বাড়ি একই দেশে, একই জেলায়, একই গ্রামে। আমার চোদ্দ পুরুষের বসত ভিটা ওই গ্রামেই ছিলো, প্রকাশেরও তাই। একই জল একই আলো একই বাতাসে আমাদের দু জনের বেড়ে ওঠা সমান ভাবে। প্রকাশ আর আমি দেখতে একই রকম, খাওয়া দাওয়া প্রায় একই রকমের, একই রকম মান অভিমান ইচ্ছা অনিচ্ছা আর রুচি। দুজনার শরীরের রক্তও লাল, একই ধরনের জেনেটিক পরিচয়। কিন্তু প্রকাশ হিন্দু আর আমি মুসলিম।
আল্লা ভগবানের পার্থক্য যে কিভাবে এত বিরাট পার্থক্য তৈরী করে দিলো আমাদের মাঝে, সে এক গোলক ধাঁধায় বলা যায়। সেই কারনে পঞ্চাশ মাইল দূরের বশির শেখ আমার আত্বীয় হলেও একই পাড়ার প্রকাশ রায় আমার আত্বীয় হয়না। প্রকাশের একটি মেয়ে আছে, সুন্দর নম্র ভদ্র, ঠিক যেন লক্ষ্মী একটি মেয়ে। আমি আমার ছেলের বিয়ের জন্য পাত্রী খুজছি দূর দূরান্তের গ্রামে, অথচ বাড়ির পাশের প্রকাশের ওই লক্ষ্মী মেয়েটিকে নিয়ে আমি পুত্রবধূ করবার চিন্তাও করিনা, কেননা হিন্দু মুসলিমে বিয়ে হয়না, প্রকাশ আমার কুটুম হতেও পারেনা। জল পানি আল্লা ভগবান বেদ কুরানের পার্থক্য যে সমাজের মানুষের মাঝে কি নিদারুন পার্থক্য তৈরী করেছে তা নিয়ে আমরা খুব কমই ভাবি।
বহুদিন অস্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে থাকলে ওই অস্বাভাবিকতাকেই স্বাভাবিক বলে মনে হয়। সেই কারনে আমরা কেউই এই প্রশ্ন তুলিনা যে, একই মানুষ একই জাতি একই নৃতাত্তিক পরিচয় থাকা সত্বেও আমরা আলাদা কেন ? তবে কেউ যদি কোন ভাবে পারতো আমাদের মাঝখানের আল্লা ভগবানকে সরিয়ে দিতে – তবে আবু জাহেদ প্রকাশ রায়ের মাঝের পার্থক্যও যেত ছুঁটে। আমি এবং প্রকাশ রায় দু জনেই তখন কেবল মাত্র মানুষের মানবিক পরিচয়ে পরিচিত হতে পারতাম ।
আল্লা ভগবানের তলোয়ার ত্রিশুলের আঘাতে এক ভারত কেঁটে তিন টুকরো হয়ে গেল, প্রতিদিন একই রক্ত একই জাতীর মানুষেরা বর্ডার পার হয়ে ভারতের সীমানায় চলে যায়, চোদ্দ পূরুষের বসত ভিটা ফেলে রেখে প্রকাশ রায়েরা চলে যেতে বাধ্য হয়। অনেকে ভাবেন, খুব শখের বশে বুঝি তারা চলে যায় – চোদ্দ পুরুষের বাপ দাদার ভিটা মাটি ছেড়ে কেউ কি সহজে চলে যায় ? যদি প্রকাশ রায় আর আবু জাহেদের মাঝ খানের আল্লা ভগবানের ত্রিশুল তলোয়ার সরিয়ে দেওয়া যেত তাহলে ৪৭ বা তারও আগে থেকে আজ পর্যন্ত স্বদেশী মানুষের বর্ডার পার হয়ে চলে যাওয়া লাগতো না।
ঈশ্বর আল্লা সবকিছু পারেন, কেবল পারেন না মানুষে মানুষে ব্যাবধান ঘোঁচাতে।
চমৎকার বলেছেন , সহমত জানায়। ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন।
একদম খাঁটি কথা। ধর্মগুলো শুধু মুখেই মানবতার কথা বলে, মানবতার পক্ষে অন্যতম বিপজ্জনক মানুষের সৃষ্ট এই ধর্ম।
বাস্তবতাটা চখে ধরিয়ে দেয়ার জন্য লেখক কে ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন।।।।
অাপনাকেও ধন্যবাদ ভালো থাকবেন ।