সহস্র সাবান মাখিলেও বাঙালির গায়ের রঙ ইংরাজের মত বিশ্রী উৎকট ধবল বর্ণ হইতে পারে না ও সহস্র কোট পরিলেও বাঙালির স্নিগ্ধ মনুষ্য-মূর্তি বিকট নেকড়েবাঘ-মূর্তিতে পরিণত হইতে পারে না! – সোনায় সোহাগা, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর
– কোনো মানবিক মানুষ কীকরে অন্য মানুষের গায়ের রঙকে বিশ্রী উৎকট বলতে পারে? যে মানুষ নিজের ও নিজেদের গায়ের রঙকে অতি আশ্চর্যজনকভাবে সুন্দর এবং চমৎকার মনে করে অন্যের ও অন্যদের গায়ের রঙকে মনে করে বিশ্রী উৎকট সে মানুষ কি মানবিক মানুষ? এরকম যে মনে করতে পারে কী রকম তার মানসিকতা? অন্য মানুষের গায়ের রঙ কিংবা চেহারাকে যে ঘৃণা করে সে কেমন মানুষ?
– বাঙালিরাই কি কেবল স্নিগ্ধ মনুষ্য-মূর্তি? পশ্চিমের কোট পরা লোকজনের মধ্যে স্নিগ্ধতা ও মনুষ্যত্ববোধ কি নেই আদৌ? পশ্চিমের লোকেরা সবাই কি নেকড়েবাঘ? অথবা কোট পরলেই কি মানুষ নেকড়েবাঘ হয়ে যায়? অন্যের পোষাক নিয়ে এহেন ঘৃণ্য মন্তব্য যে করতে পারে সে কেমন মানুষ? নিজেকে ও নিজেদেরকে অতি উন্নত মানুষ এবং অন্য ও অন্যদেরকে যে নিচু মানুষ মনে করে সে কেমন মানুষ, কতটুকু মানবিক মানুষ?
অন্য মানুষের গায়ের রঙ ও পোষাক নিয়ে এই হীন কথাগুলি কোনো সাধারণ বাঙালি বলেনি কিন্তু। বলেছেন, অতি উচ্চমার্গের শিল্প সাহিত্য সভ্যতা ভব্যতা রুচি আচার-আচরণ সংস্কৃতি ইত্যাদির তীর্থস্থানতুল্য সুবিখ্যাত জোড়াসাকোর ঠাকুর বাড়ির এক বিখ্যাত সন্তান দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই অভ্যাস অধিকাংশ সাধারণ বাঙালির মধ্যে আরো প্রকট।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরেক ভাই জ্যোতিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীর গায়ের রঙ নাকি শ্যামলা ছিল। এজন্য তাঁকে নানান খোঁচাপূর্ণ কথাবার্তা শুনতে হতো। সে বাড়ির বৌ ও ছেলেদের নিয়মিত হলুদ বাটা, দুধের সর, ময়দার লেয় ইত্যাদি সুস্বাদু খাবার গায়ে গতরে মাখতে হতো ফর্সা হয়ে সুন্দর হবার জন্য। কাদম্বরী দেবী রবিকে ঠাট্টা করে প্রায়ই বলতেন, রবিটা একটুও দেখতে সুন্দর না একদম কালো।
সম্মন্ধ করে বিয়ের ক্ষেত্রে বাঙালিরা সবসময় ফর্সা মেয়ে খোঁজে। গায়ের রঙ কালো হলে অন্য যত গুণাগুণইই থাকুক না কেন সে মেয়ে বিয়ের পাত্রী হিসেবে অনেক কম নাম্বার পায় পাত্র পক্ষের কাছ থেকে। অনেক ক্ষেত্রেই বাদ পড়ে যায়। বাংলাদেশের বাজারে কালো মেয়েদের গায়ের রঙ ফর্সা করার জন্য ক্রিম পাওয়া যায়। টিভি রেডিও এবং পত্রিকায় এসব ক্রিমের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে। দেখানো হয়, একটি মেয়ে আগে কালো ছিল এইসব ক্রিম ব্যবহারের পর ফর্সা হয়ে সুন্দর হয়ে গেছে। কালো রঙের কারণে আগে সুন্দর ছিল না। বিয়ের বাজারে বাদ পড়ে যেতো। এই ক্রিম ব্যবহার করে ফর্সা ও সুন্দর হবার পর বিয়ে হয়েছে। মানুষের গায়ের রঙ, চেহারা ও বাহ্যিকভাবে মানুষ দেখতে কেমন তা নিয়ে এমন ঘৃণ্য বাণিজ্য পৃথিবীর আরো অনেক জায়গায় এখনো বিদ্যমান। বাঙালির মধ্যে তা অত্যন্ত প্রবল।
কোন এক ননদ ও শ্বাশুড়িকে তাদের বধূকে বলতে শুনেছি, এই কালো ও বিশ্রী চেহারার অতি কুৎসিত মেয়েকে ছেলের বৌ করে খুব ভুল করে ফেলেছি। সেই শ্বাশুড়ি ও ননদের গায়ের রঙ কিন্তু বৌটির চেয়ে কালো।
শুধু গায়ের রঙ নয় অন্যান্য অনেককিছুতেই বাঙালি নিজেকে ও নিজেদেরকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে থাকে। এক আত্মীয়ের সাথে একদিন ফোনালাপ হচ্ছিল। আমাকে সে বলছিল, “আজকে এক স্পেনিশ কাজ করেছিল আমার বাসায়। তাকে ভাত খাইয়েছিলাম। থালাবাসন সবচেয়ে খারাপটা দিয়েছিলাম তাকে যাতে সে খাওয়ার পরে সব ফেলে দিতে পারি। করেছিও তাই। সে খাওয়ার পর ছুড়ে ফেলে দিয়েছি তার ব্যবহৃত বাসনকোসন।” আমি তাকে বললাম, কেন আপনার জানা মতো সে লোকের কি কোনো ছোঁয়াচে রোগ আছে, যক্ষা জাতীয় কিছু? সে বলল, না, তা তো নেই। বললাম, তাহলে একজন মানুষের ব্যবহৃত থালাবাসন আপনি প্রবল ঘৃণা ভরে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন কেন? সে বলল, ছিঃ একজন দরিদ্র স্পেনিশ যে থালায় খেয়েছে, যে থাকা স্পর্শ করেছে সে থালায় কি আমি আর খেতে পারি? আমার স্বামী সন্তান কিংবা কোনো আত্মীয়কে খেতে দিতে পারি? আমি বললাম, সেই স্পেনিশ হত্দরিদ্র বলেই কি আপনি তাকে ঘৃণা করে তার ব্যবহৃত থালা ফেলে দিলেন? সে যদি বিত্তবান হতো, হতো দেশের প্রেসিডেন্ট তাহলে কি আপনি তা করতেন? বরং গর্ব করে কি বলতেন না, আজ দেশের প্রেসিডেন্ট আমার বাসায় ভাত খেয়েছে? এবং সেই থালাটি পরম যত্নে তুলে রেখে কেউ আসলে তাদের গর্ব করে বলতেন না, এই সেই থালা যে থালায় প্রেসিডেন্ট ভাত খেয়েছে? তাকে কি তখন সবচেয়ে খারাপ থালায় খেতে দিতেন? একজন মানুষ শুধু দরিদ্র বলেই কি তাকে এমন অচ্ছুৎ মনে করছেন? দারিদ্র কি অপরাধ? আমার সে আত্মীয় আমার একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেয়নি।
আরেক স্বঘোষিত উচ্চশিক্ষিত মহিলাকে খুব দুঃখ করে বলতে শুনেছিলাম, দেখুন তো, আমার পায়ের গোড়ালি কেমন ফেটে গেছে কাজের বুয়াদের মতো। আরেক মহিলা একবার একজনের নাম ‘আকলিমা’ শুনে বলেছিল, আকলিমা কোনো শিক্ষিত ও ভদ্র পরিবারের মেয়ের নাম হতে পারে না। এটা তো কাজের মেয়েদের নাম। খারাপ বা অপছন্দের কিছু হলেই সেটা দারিদ্র ও দরিদ্রদের মতো ঘৃণ্য!
আরেক ভদ্রলোককে অট্টহাসি হেসে বলতে শুনেছিলাম, আমার বাসায় কোনোদিন কোনো কালাইয়া বা কালুনী আসতে পারবে না।
বাঙালির গায়ের রঙ সাধারণত বাদামি। কারো কারো রঙ একটু ফর্সার দিকে। তবু বাঙালির গায়ের রঙ যতই ফর্সাই হোক সাদাদের তুলনায় বাদামি। কিন্তু অধিকাংশ বাঙালিদের দেখি, এই পশ্চিমেও কোথাও আফ্রিকান বা অন্য কোনো দেশের গায়ের রঙ কালো মানুষ দেখলে নাক সিঁটকে বলে, “কালাইয়া, কাউল্লা, কালুনী, কালী! এদেরকে লাগে কেমন, কেমন বিশ্রী? দেখতে যেমন বিশ্রী তেমনি চালচলনও বিশ্রী।’ এরকম আরো কত কি! একজন মানুষের গায়ের রঙ কেমন বা সে দেখতে কেমন তা কোনো ব্যাপার নয়। মানুষের বাহ্যিক রূপ-রঙে মানুষের বিচার হয় না, হয় গুণে। এই অতি সহজ ব্যাপারটা বেশির ভাগ বাঙালি আজো বুঝতে পারে না।
অন্য দেশী মানুষদের সম্পর্কে বাঙালিদের মন্তব্য করতে শুনি, “এদের কোনো বাছবিচার আছে নাকি? এরা যা পায় তা খায়, যা ইচ্ছা তা করে বেড়ায়, যা ইচ্ছা পরে কিংবা পরে না। এদের কোনো জাত পাত আছে নাকি? এমনটা শুধু বাঙালি বিদেশে গিয়ে করে না। বাংলাদেশে আরো বেশি মাত্রায় করে। নিজের অঞ্চলের সবকিছু ভালো আর অন্য অঞ্চলের সবকিছু খারাপ,নিজের পরিবারের সবাই অতি উত্তম আর বাইরের সবাই অতি অধম এরকম বাঙালিরা সবসময় বলে থাকে।
বিদেশে দেখতে পাই, কোনো অবাঙালি মেয়ে যদি কখনো শাড়ি সেলোয়ার-কামিজ পরে বা মাছ ভাত খায় বাঙালির বাসায় এসে তবে বাঙালি মহলে তার ধন্য ধন্য রব পড়ে যায়। কী চমৎকার মেয়ে দেখেছ? অবাঙালি হয়েও শাড়ি পরেছে! ভাত খেয়েছে! আর কোনো বাঙালি মেয়ে যদি শর্ট পরে বা বীচে গিয়ে বিকিনি পরে, বিয়ার খায় তবে তার ছি ছি পড়ে যায়। কেন? বাঙালির সংস্কৃতি কেউ গ্রহণ করলে সে মহান আর কোনো বাঙালি অন্যের সংস্কৃতি গ্রহণ করলে সে খারাপ? বাঙালিরা শুধু নিজেরাই অতি উত্তম, তাদের চেহারা মোবারক অতি উত্তম, তাদের কৃষ্টি-কালসার সবই অতি উত্তম। আর অন্যের চেহারা খারাপ, রঙ খারাপ, খাওয়াপরা খারাপ, রীতিনীত খারাপ। কেন আমাদের অধিকাংশের মানসিকতা এমন ‘আমিই ভালো আমিই ভালো, আমিই সুন্দর, আমিই চমৎকার’ টাইপ?
সুন্দর লিখেছেন
পশ্চিমবঙ্গের কথা বাদই দিলাম দিদি, আমরা কম যাই কিসে। একটু ভেবে দেখুন, আগের যামানায় আমাদের পূর্বপুরুষগন আবুল, আব্দুল ইত্যাদি নাম রাখতো সন্তানের। আজকাল তথাকথিত আধুনিক বা শহুরে পিতামাতা সন্তানের নাম এত সাবেকী রাখতে আগ্রহবোধ করেন না। কারনটা অবশ্য নীলাঞ্জনাদির লেখায় বেশ স্পষ্ট।
ব্যতিক্রমী রচনার জন্য ধন্যবাদ।
মনের মত কিছু কথা লিখেছেন —
রবীন্দ্রনাথ সেই কবেই কালো মেয়েদের নিয়ে গান লিখে গেছেন,আজকাল তো দেখি না কাউকে কালো মেয়েদের নিয়ে লিখতে! সুনীল-শীর্ষেন্দুদের উপন্যাসেও সুন্দরী বলতে শুধু ফর্সা মেয়েদেরই পেয়েছি।
কবি নির্মলেন্দুর কাছে,যা পেতে ইচ্ছে করে, আমি তাকেই বলি সুন্দর । প্রত্যেকটি প্রাণেরই এক-একটা স্বতন্ত্র চেহারা থাকে । সুন্দরের কোনো নির্দিষ্ট চেহারা নেই, সে আপেক্ষিক !
ব্যাপারটা এরকম,আমার যদি কারো কালো হরিণ চোখ চাই তাহলে যার চোখ তাকেই তো আমি চাই।সৌন্দর্য্য তো সেই।হোক সে শ্যামলা কিংবা কালো।
শ্রীলঙ্কায় গিয়ে পাবলো নেরুদা একবার এক কালো তামিল মেয়ের প্রেমে পড়েছি্লেন।নেরুদা মেয়েটিকে হাজার বছরের প্রাচীন ভাস্কর্যের সাথে তুলনা করেন।কবিতায় যার শরীরের বর্ণনা তিনি দেন,
এতো প্রশংসার বানের মধ্যে আমার মন্তব্যটি বেমানান জেনেও বলতে হচ্ছে, উদাহরণ হিসেবে ‘আকলিমা’ নামটি ব্যবহার না করলেঈ ভালো ছিল।
অন্যদিকে , কালো নিয়ে কিন্তু আমাদের ভালোবাসাও কম নয়। যেমন—– কালাই গলার মালা অথবা কালো যদি মন্দ হবে , কৃষ্ণ কেন কালো তবে কিংবা কালোই জগতের আলো বা আমার কালো মানিক।
চমৎকার বলেছেন।
পশ্চিম বাংলায় একটা বিজ্ঞাপন দেখায় (বাংলাদেশেও দেখাবে, যাস্ট ওয়েট ;)) — মেয়েদের সার্থকতা যোগ্যতায় নয়, সার্থকতা রূপে, গুণে, চুলে– এ নীহারের বিশ্বাস। নীহার ন্যাচারাল!
মিডিয়াও প্রচার করে। প্রচার করে ফে*** লাভলির এড।
জয় বাঙালি। 😀
বর্ণবাড বলতে সাধারণত বূঝায় যে, জাতের শ্রেণীগত বিভাজন। যেমন ব্রাহ্মণ, ক্ষটড়ীয়,বৈষয় ও শূদ্র, কিন্তু লেখক গাত্রবর্ণকে বুঝিয়েছেন। বহুযুগ পূর্বে থেকে ,বিশেষ করে আর্যয়গণ ভারতবর্ষে আসার পর গাত্রবর্ণের বিভাজন প্রকট ভাবে দেখা দেয়। আরয্যরা তাদের গৌরবর্ণ গাত্রের জন্য এদেশীয়দের হেয় চোখে দেখত। এটা ইংরেজদের যুগ অবধি বর্তমান ছিল। যদিও ভারতীয়দের সাথে সব রক্ততেরই মিলন ঘটেছে। কিন্তু দেখা যায় সঙ্কর জাতিরাও নিজেদের উচ্চবর্ণ হিসাবে প্রতিষ্টিত করতে চেষ্টার ত্রুটি করেনা। মহাভারত যুগে দেখেছি যে, কৃষ্ণের গাত্র রং কালো থাকা স্তবেও তাকে অবতার রূপে গ্রহণ করা হয়েছিল। তা স্তবেও এই গাত্রবর্ণের বিভেদ ক্মেনি। এখনো দেখা যায়, বিশেষতঃ বিবাহের সময় মেয়েদের গাত্র রং ফর্সা হওয়া চাই। মেয়েরা কিন্তু কালো ব্রকে বিবাহ করতে বাধ্য হয়, ছেলেরা কালো মেয়েকে খুব বেশী পছন্দ করেনা। এরজন্য আমাদের উদার,সহনশীল, রুচিশীলতার ও সমাজের মান্সিক পরিবর্তন বিশেষ ভাবে দরকার। লেখককে এই লেখার জন্য ধন্যবাদ।
দারুন লিখেছেন
ধন্যবাদ
বাংগালী জাতির মত একটি মহান, উদার, সহনশীল, রুচিশীল, সাহিত্যমনস্ক ও হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক জাতি যে কি করে এরকম বর্ণবাদী হতে পারে ভেবে পাচ্ছিনা।
পুরোই স্পিকার হয়ে গেলাম দাদা!! :scratch: ওরা মানে ভারতীয়সহ অন্যরা এরকম হতে পারে, তাই বলে মহান বাংলাদেশের বাংগালীরাও! আবেগে পুরো কাইন্দালছি 😥
গা ভাসানো লেখা না লিখলেই এমন মৌলিক ভাবনায় লেখা যায়। চমৎকার 🙂
ধন্যবাদ, দাদা।
আপনার আবেগী কান্না দেখা আমারও আবেগী কান্না পেয়ে গেলো।
@ নীলাঞ্জনা , ঠিকই লিখেছেন । নিজেরা যে দোষগুলো করি অন্যরা সেগুলো করলেই সে দিকে আঙ্গুল তুলি । এইটাই বোধ হয় মনুষ্য চরিত্র । দক্ষিণ আফ্রিকায় এক সময় সাদারা কালোদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করত । তার বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী প্রতিবাদ করেছিল । এখন শুনতে পাচ্ছি কালোরাই সাদাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করছে ।
কালো মেয়েরা অসুন্দরী এই ধারনাটার জন্য অতীতে কবি-সাহিত্যিকরা অনেকটা দায়ী । তারা সুন্দরী নারীর যে ছবি এঁকেছিল তাতে ফরসা রঙ জরুরি ছিল । মানুষ এখন এই ধারনাটার থেকে কিছুটা মুক্ত হতে পেরেছে । কিন্তু ফরসা হওয়ার ক্রিম বিক্রেতারা তাদের মুনাফার স্বার্থে সমাজের মুক্ত হওয়ার কাজে বাধা সৃষ্টি করছে । কিন্তু কি আশ্চর্য দেখুন বিভিন্ন নারী সংগঠন নারীদের অনেক বিষয়ে এগিয়ে আসলেও এই ক্রিম বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করছে না । মনে হয় অন্য আরও আন্দলেনের মত এটাও কর্পোরেটরা হাইজ্যাক করে নিয়েছে।
লেখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
নাটক সিনেমা বা কবিতা উপন্যাসে নায়িকাকে দেখানো হয় লম্বা ফর্সা দীর্ঘকেশী হিসেবে। নায়কও হবে লম্বা ফর্সা। কবি সাহিত্যিকদের কাছেও এটাই বাংলায় নরনারীর সৌন্দর্য। এঁরাও মানুষের মানুষের কাছে মানুষের বাহ্যিকতা উপস্থাপন করেন। যেন বাহ্যিকতাই আদর্শ হওয়া উচিত! সাধারণ মানুষ তবে এই ভ্রান্ত বলয় হতে বের হবে কিভাবে?
একমত, ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ।
শুধু বর্ণবাদের ভেদাভেদ না সব ধরনের সাম্প্রদায়িক ভেদেরই একটাই উদ্দেশ্য, নিজে কিছু না করে, নিজের বিন্দু মাত্র উন্নতি না ঘটিয়ে অন্যকে দলবেঁধে মন্দ বলা এতে করে একধরনের ভেুয়া শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি জাগে। অনুভূতিটা সস্তা সহজেই পাওয়া যায় তাই প্রায় সব মানব সমাজেই এই প্রবনতা দেখা যায়। এই অনুভূতিটা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হয় কেননা এটাই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বীজভূমি হয়ে দাঁড়ায়। দল ছাড়া এটা হতে পারেনা, এর প্রকাশ দলীয়ভাবেই তাই দেখা যায় বেশি। যেমন উত্তরবঙ্গের লোক হিসেবে আমরা প্রায়ই তফাৎ করি নদীর এপারের আর ওপারের লোক বলে, তেমনি হিন্দু-মুসলমান বলে, সম্ভ্রান্ত আর নিচু শ্রেণীর লোক বলে। একসময় এই মানসিকতা থেকেই সাম্প্রদায়িক অহমিকা গড়ে ওঠে, সেই অহঙ্কার সহিংসতাতেও গিয়ে ঠেকে অনেক সময়।
একদম ঠিক কথা।
আপনার লেখাটি পড়ে ভাল লাগল । আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ও এই ব্যাপার রয়েছে। দেশ ভাগের পরে যারা
পুর্ব বঙ্গ ছেড়ে আসে তাদের কে এখানে বাঙ্গাল বলা হয় , এবং বার বার এই পরিচয়ের কারণে অপমান
করা হয় । দেশ ভাগ তো এই বাঙ্গাল রা করে নি , তারা তো দেশ ভাগ হোক এটা চায় নি, তবে কেন বার
বার তাদের জাত তুলে অপমান করা হয়। এদিকে অপমানের চোটে বাঙ্গাল রা বাধ্য হচ্ছে নিজেদের পূর্বপুরুষ
দের কালচার ভুলতে , আর অদিকে(বাংলাদেশ) এ বিলুপ্ত হচ্ছে হিন্দু বাঙালি, এরা কি মানুষ নয় ?
আপনার লেখাটি পড়ে তাই খুব ভাল লাগল, আরও লিখুন দাদা।
মনের মধ্যে অনেক শান্তি পেলাম।
পশ্চিম বঙ্গে যেমন পূর্ববঙ্গীয়দের বাঙাল বলা হয় হেয় করে তেমনি পূর্ববঙ্গবাসীদের অনেকেও পশ্চিমবঙ্গবাসীদের হেয় ঘটি বলে। আমি বাংলাদেশের একটা দ্বীপে বড় হয়েছি। সেখানে কারুর বাড়ি সমুদ্রে ভেঙে যাবার পরা তারা অন্য জায়গায় বাড়ি করলে তাদেরকে ‘দরিয়া ভাঙা’ ডাকা হয় খুব ঘৃণা ভ’রে। যেন সমুদ্রে কারুর বাড়ি ভেঙে যাওয়া একটা পাপ। এবং সেই অসহায় মানুষগুলি এক একটা ভয়াবহ পাপী।
আ[পনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
বর্ণবাদ সর্বত্র আছে | আমেরিকায় তো অনেক বেশি আছে | ইউরোপেও আছে | ঐসব দেশের বনেদী পরিবাররা ভারতীয়দের অত্যন্ত ঘৃনা করে তাদের রঙের জন্য | এটা দেখেই হয়ত দ্বিজেনবাবু এই কথা বলেছেন | দক্ষিন আমেরিকায় এই একবিংশ শতকেও বর্ণবাদ আছে | শুধু বাঙালির দোষ দিলে হবে না |
ভারতেও অবাঙালি সমাজের মধ্যেও বর্ণবাদ আছে | তারাও ফর্সা মেয়েকেই বিয়ে করে | শুধু বিপাশা বসু ভুল করে সুপারস্টার হয়ে গেছেন |
তবে এই বর্ণবাদ যুক্তিহীন ও ভিত্তিহীন | একে ভুলে যাওয়াই ভালো |
বর্ণবাদ সব জায়গায় আছে। তাই বলে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিও কেন বর্ণবাদী হবেন? দ্বিজেনদ্রনাথ তো ইংরেজদের বর্ণবাদ ও অন্যান্য খারাপ কাজের সমালোচনা করতে পারতেন। তা না করে তাদের গায়ের রঙ ও পোশাক নিয়ে হীন বিদ্রুপ করলেন কেন?
শ্রী যুক্তিবাদী, বর্ণবৈষম্য এখন-ও রয়েছে তখন-ও ছিলো এবং তার তীব্র বীরধিতা করা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু এক বর্ণবৈষম্যের বিরোধীতা করতে গিয়ে যদি আম্মো বর্ণবৈষম্যমুলক মন্তব্য দেই তাহলে তার বিরোধীতা করার অধিকার আর আমার থাকে না কারন আম্মো একই দোষে দুষ্ট। কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত দিয়েই দ্বিজেন ঠাকুরের অমন মন্তব্যকে জাস্টিফাই করা যায় না।
খুব স্পষ্ট লেখা। সীমান্তের এপারে, ভারতেও এই বর্ণবাদ খুব বেশি দেখা যায়। কলকাতার তথাকথিত আঁতেল সমাজেও বাঙাল আর টুম্পা(মেদিনীপুরের মানুষদের বোঝায়) শব্দগুলো বেশ অনায়াসেই বলা হয় দেখেছি। আবার উত্তর বঙ্গে কোচ ও রাজ বংশী মানুষদের ছোট করা হয় বাহে বা বাউ বলে। সেখানেও শোষণ সুধু অর্থনৈতিক না, একই সাথে সামাজিক।
বর্ণবাদ পৃথিবীর সব জায়গাতেই আছে মাত্রা ভেদে। আমাদের বাঙালিদের মধ্যে আছে অতিমাত্রায়।
দারুন বলেছেন। ছোট ছোট উদাহরন এর মাধ্যমে রুঢ় বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছেন।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনার পাঠ-প্রতিক্রিয়ার জন্য।