একজন মানুষ কি জন্ম থেকেই মৌলবাদী হয়ে গড়ে ওঠে?অবশ্যই না।ধর্ম,ভাষা,প্রথা ইত্যাদি ছাড়াই একটা মানুষের জন্ম হয়।যে পরিবার বা সমাজে সে লালিত পালিত হয় সেই পরিবার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাই তার মধ্যে ভাষা,ধর্ম আর নানা রকম প্রথার বীজ বপন করে।এরপর সমাজের নানারূপ সংগঠনের পরিচর্যায় সেই বীজ মহিরূহে রূপান্তরিত হয়।খুব অল্প সংখ্যক মানুষই পরবর্তীতে সঠিক শিক্ষা লাভ করে সেই প্রথা কিংবা ধর্ম কে চ্যালেঞ্জ করবার সক্ষমতা অর্জন করে।কাজেই কোন মানুষ মৌলবাদী হবে কিনা,কিংবা হলেও তার মাত্রা কতটুকু হবে সেটা নির্ভর করে পারিবারিক শিক্ষা তথা শিশুকালে প্রাপ্ত শিক্ষা হতেই।একই ভাবে একজন মানুষ মুক্তচিন্তা করতে সক্ষম হবে কিনা সেটাও অনেকাংশে নির্ভর করে ঐ শিশুকালে প্রাপ্ত শিক্ষা হতেই।ছোটবেলা থেকে যদি পরিবারে উদার মানবিক শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং শিশুটি যদি বই কে সঙ্গী করে বড় হতে পারে তাহলে আপনা-আপনিই তার মধ্যে মুক্তচিন্তা এবং যুক্তিবদ্ধ চিন্তা করার সক্ষমতা তৈরি হবে।তাই মৌলবাদ বলি আর মুক্তচিন্তা- দুটোর শিকড়ই লুকিয়ে আছে একদম শিশু বয়সে,পরিবারের শিক্ষায়।আমাদের দেশে মৌলবাদের তীব্র বিস্তার,জঙ্গিবাদ এবং চরমপন্থা আর সাধারণের ধর্মান্ধতা- সব কিছুর সূত্রপাত ঘটে ঐ শিশুকালেই।
মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া একটি শিশু প্রথমেই শিক্ষা লাভ করে সেই শ্রেষ্ঠ,তার হিন্দু সহপাঠিটি তার থেকে নিকৃষ্ট।সে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত,শেষ নবীর উম্মত কিন্তু ঐ হিন্দু বন্ধুটি অভিশপ্ত।বেশি গোড়া পরিবার হলে হিন্দু সহপাঠীটির সাথে বন্ধুত্ব করতেও নিষেধ করা হয় তাকে।এভাবে প্রথমেই অন্য ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব এবং নিজ ধর্মের ভিত্তিহীন শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বড় হতে থাকে সে।তার ভিতরে বপিত এই ঘৃণার বীজে জলসিঞ্চন করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।কোমলমতি শিশুদের পাঠ্যবই এ শেখানো হয় ঘৃণার বাণী।সে দেখে ‘ধর্ম শিক্ষা’ নামে বিষয়টি সবার জন্য এক নয়।সে যে বইটি পড়ছে,তার হিন্দু সহপাঠীটি সেই বইটি পড়ছেনা।এভাবে সে শিখে যায় ‘বিভাজন’।ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের বই-এ অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়নি।অন্য কোন ধর্মের বই-এ নরকের বিভৎস বর্ণনা দিয়ে শিশুদের মস্তিষ্কের বারোটা বাজানো হয়নি।এভাবে ছোট থেকে একেবারে মাধ্যমিক পর্যন্ত সে বিভাজন,অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ,নিজের ভিত্তিহীন শ্রেষ্ঠত্ব শিখতে শিখতে বড় হয় এবং তার মধ্যে এই ক্ষতিকর চেতনা গুলো চিরস্থায়ী রূপ নেয়।বন্ধ হয়ে যায় চেতনার বিকাশ।এতো বললাম সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা।মাদ্রাসা শিক্ষার কথা তো বলাই বাহুল্য!
আমাদের দেশে বাঙলা বর্ণমালা শেখানোর আগে শিশুকে শেখানো হয় আরবি বর্ণমালা,শিশুর বেহেশত নিশ্চিত করতে ছোটবেলায় মোল্লা রেখে কোরান খতমের ব্যবস্থা করা হয়।এভাবে শিশুটি দুর্বোদ্ধ আরবি অক্ষর চিনে পড়তে পারে ঠিকই কিন্তু অর্থ তার কাছে অজানাই থেকে যায়! এবং এই ভাষা কে সে গণ্য করে পবিত্র ভাষা হিসেবে।আরবি ভাষা মাটিতে রাখা যাবেনা,নীচে পড়ে থাকলে তুলে চুমু খেতে হবে,আরবি ভাষা পবিত্র ভাষা ইত্যাদি বিচিত্র মনস্তাত্তিক অপশিক্ষা তার মনের মধ্যে আসন গেড়ে বসে।আর তাইতো আমাদের সরকার দেয়ালে প্রস্রাব ঠেকাতে দেয়ালে দেয়ালে আরবি লিখে রাখার হাস্যকর পরিকল্পনা করতে পারে!
আমাদের দেশে বই পড়ার চর্চাটা খুব কম বলে (যারাও পড়ে তাদের বেশির ভাগের দৌড় কিছু অপন্যাস পর্যন্তই) এই অযৌক্তিক অপশিক্ষাকে মোকাবিলা করার মত মানসিক সক্ষমতা শিশুদের মধ্যে গড়ে উঠতে পারেনা।যেসব ছেলেমেয়ে ছোটবেলা থেকে প্রচুর ‘আউটবই’ পড়ে কিংবা যাদের পরিবারে নানা বিষয়ে নানা রকম বই পড়ার চর্চাটা আছে সেই ছেলেমেয়ে গুলোর মধ্যে এই সকল অযৌক্তিকতাকে চ্যালেঞ্জ করার সক্ষমতাও তৈরি হয়। একারণেই বাইরের বই কে তথাকথিত ‘গুরুজন’ দের এত ভয়!লাইব্রেরীকে এত ভয়!সরকার যেহেতু মৌলবাদী চেতনা কে জিইয়ে রাখতে চায় নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে সেকারণে একটা এলাকায় দশটা মসজিদ স্থাপনে তাদের যে আগ্রহ,ঐ এলাকায় একটা লাইব্রেরী স্থাপনে সেই প্রচেষ্টা বা বরাদ্দ নেই!ঢাকা শহরে দশ কিলোমিটারের মধ্যে একশটা মসজিদ পাওয়া যাবে কিন্তু একটাও লাইব্রেরী পাওয়া যাবেনা।সেই পরিকল্পনাও কারও আছে বলে মনে হয়না।
যেকোন সমস্যা সমাধান করতে হলে আগে সমস্যাটাকে স্বীকার করে নিতে হয়।তাহলেই সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করা যায়।কিন্তু আমাদের দেশে মূল সমস্যার দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেনা,আমরা বারবার চিৎকার করে বললে আমদের গলা টিপে ধরছে রাষ্ট্রযন্ত্র।মূল সমস্যাকে জিইয়ে রেখে একশ জঙ্গিকে ফাঁসিতে ঝুলালেও কোনই লাভ হবেনা।এই সমস্যার সমাধান ব্যক্তি উদ্যোগে করা যাবেনা।এর জন্য রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ দরকার।’নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টাকে রেখে ধর্ম শিক্ষা অংশটুকু জাতিয় পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিতে হবে।রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিক কে নৈতিক করে গড়ে তোলা,ধার্মিক করে নয়।ধর্ম নাগরিকের ব্যক্তিগত ব্যাপার,নাগরিকগণ সেটা ব্যক্তিগত ভাবে চর্চা করবে।রাষ্ট্রীয় পাঠ্যক্রমে ধর্ম শিক্ষা রাখার কোন যৌক্তিকতা নেই।বরঞ্চ এর স্থলে নৈতিক শিক্ষাকে জোরদার করা জরুরি।ধর্মের প্রসারে সরকার যেভাবে অগ্রগামী,শিক্ষার প্রসারে তেমনটি নয়।প্রতি উপজেলায় একটি মডেল মসজিদ এর থেকে একটি মডেল লাইব্রেরি দেশের উন্নয়নের সম্ভাবনা হাজার গুণে বাড়িয়ে দেবে।সরকারের কি সেরকম কোন পদক্ষেপ আছে?
ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে শিশুদের মধ্যে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের কাজ চলছে দেশে।কিন্তু সেগুলো অপ্রতুল।রাষ্ট্রীয় ভাবেই এই কাজটি করতে হবে।মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক করার দাবি আজকের নয়।কিন্তু সরকার সেই দাবিতে কর্ণপাত করার প্রয়োজন মনে করেনি।যদি করত তাহলে আজকে হয়তো মৌলবাদের এই আস্ফালন দেখতে হতনা।
মৌলবাদী চিন্তার বিপরীতে আধুনিক যুক্তিবাদী মানবিক চেতনা গড়ে তোলা সম্ভব সুশিক্ষা-প্রচুর পরিমাণে বই পড়ার অভ্যাস আর সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে।ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ে এই আন্দোলন চললেও সামগ্রিক ভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এমন কোন পদক্ষেপ নেই।যেমন,মুক্তমনা একটি সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের উদাহরণ।আমাদের বিভিন্ন প্রগতিশীল ব্লগ ফোরাম গুলো এর উদাহরণ।পাড়ায় মহল্লায় ব্যক্তিউদ্যোগে গড়ে তোলা লাইব্রেরী গুলো এর উদাহরণ,গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন এর উদাহরণ।যেহেতু মৌলবাদী গোষ্ঠিটি দলে ভারি এবং শক্তিশালী তাই তাদের বিরূদ্ধে যারাই দাঁড়াবে তাদের উপরে নেমে আসবে অত্যাচারের খড়গ।তেমনটিই দেখতে পাচ্ছি আজ আমরা।হুমায়ুন আজাদ স্যার থেকে দীপন- এই যুদ্ধেরই শহীদ।লড়াইটা অসম কিন্তু নিঃসন্দেহে আমরা শুভ শক্তি।আর ইতিহাস সাক্ষী যে শুভ শক্তির জয় অবশ্যাম্ভাবী।
রাষ্ট্রযন্ত্র আমাদের বিপক্ষে।কাজেই লড়াইটা আরও কঠিন।থেমে গেলে চলবেনা।ব্যক্তি উদ্যোগেই আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে- নিজ নিজ পরিবার,নিজ নিজ এলাকা মহল্লা থেকে,নিজ নিজ গন্ডী থেকে।এতে জীবন সংশয় হতে পারে,হচ্ছেও।কিন্তু পিছুহটার উপায় নেই।কারণ আমাদের সমাজে মুক্তচিন্তা আমরা লাভ করিনা,অর্জন করে নিতে হয়।কাজেই মুক্তচিন্তার মানুষদের দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি।সেই দায়বদ্ধতা থেকেই মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েও আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।আপাত কলম-চাপাতির এই অসম লড়াই!
তোমাদের থামতে নেই। সকাল হবেই।
ধর্ম নিয়ে কোনো কথা বলা কিংবা কোনো কিছুর ব্যাখ্যা করা মানে ‘তুমি বেশী বোঝো’ কিংবা ‘হাদিস-কুরআন না পড়ে কথা বলছো’—এ ধরণের কথা সবসময়ই শুনতে হয় আবার যদি নাও বা বলতে চান সেখানেও সমস্যা ‘তুমি কেনো কথা বলবে না কেনো!’ এটাই এখনকার দৃশ্যাবলী। ব্যাপারটা অনেকটা অঞ্জন দত্তের গানের কথার মতো ‘পেছনে আমার কানাগলি আর সামনে গাঢ় অন্ধকার’। কম বা বেশী জানা-জানির বিষয় না; কতোটুকু জানছেন নিজের বোধশক্তি দিয়ে সেটাই গুরুত্ববহ। আর আমরা বাংলাদেশী বাঙালীরাতো আবার ধর্মভক্ত আর ধর্মপরায়ণের মারপ্যাঁচের মধ্যে আছি। যতদিন পর্যন্ত ‘ভেতরের মানুষকে আমরা রোদে’ না দিবো ততোদিন অব্দি মৌলবাদের গোঁড়ামী থেকে পরিত্রাণ পাবার কোনো সুযোগ দেখি না। এখনতো আবার যে অবস্থা হচ্ছে তাতে তো ‘পান থেকে চুন খসলেই খুন’। তাই কী বলা উচিৎ বা অনুচিৎ সেটা নিয়েই মনে হয় গবেষণা করতে হবে, অন্তত আমার সেটা মনে হয়। যদি প্রাণ খুলে কথা বলাটা অন্যায় হয়, যদি কোনো অন্যায়কে অন্যায় বলাটা অপরাধ সেখানে আর কী বলা যেতে পারে সেটাই নিয়েই আমি দ্বিধান্বিত।
ধর্ম হলো মগজ ধোলাই মেশিন এবং যাযক শ্রেনি সেই মেশিনের অপারেটর
ওপরে উল্লেখিত কোন বাক্যের সাথেই একমত নই। ঘৃণা বিদ্বেষের ইস্যুতে কোন একটি ধর্মকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। প্রতিটি ধর্মই নিজেকে শ্রেষ্ট ও একমাত্র গ্রহনযোগ্য ধর্ম বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। আর এটাই একটি বিদ্বেষী বাক্য। নিজেকে সুপিরিওর দাবী করার মা’নেই তো অন্যরা ইনফিরিওর। আমি শ্রেষ্ট মা’নেই অন্যরা নিকৃষ্ট। হিংসা-ঘৃণা, বর্ণ-বৈষম্য, জাতি বিদ্বেষ, প্রতিটি ধর্মের প্রচার, প্রসার, সফলতার পাথেয়। এই পথ ধরেই তারা জন্মেছিল আর আজও টিকে আছে। জন্ম থেকেই আল্লাহ, ভগবান, ইশ্বর কিলাকিলি, মারামারি খুনাখুনি করে আসছেন আজও করছেন। এই ইতিহাস এই ঘটনাবলি তাদের ধর্মগ্রন্থেই লিপিবদ্ধ আছে। এখানে তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল, মনুসংহিতা বা কোরান কেউ কারো চেয়ে কম নয়।
একটু বেশী অতিরঞ্জিত হয়ে গেলনা? আমাকে আমার (ধর্মগ্রন্থ না বুঝা পড়া) পরিবারের কেউ এমন শিক্ষা জন্মকালে দেয় নি। ‘হিন্দু বাড়িন্ত যাত্রা গান হইতো / নিমন্ত্রণ দিতো আমরা যাইতাম এমন দিন আসলেই এই বাংলায় এক সময় ছিল। মুসলমানদেরকে মনসার বন্দনা বা মা কালীর স্তুতি গান গাইতে নিজের চোখেই দেখেছি। সাম্প্রদায়ীকতার সবক আমি পেয়েছি বড় হয়ে ধর্মগ্রন্থ পড়ে। আর ধর্মগ্রন্থ বুঝে না পড়া মানুষের সংখ্যা এখনও বেশী তাই আজও অসাম্প্রদায়ীক সাম্যবাদী মানুষ সংখ্যায় কম হলেও সকল ধর্মেই কিছু কিছু আছেন।
ইহুদীদের সাথে খৃষ্টানদের, আর্যদের সাথে অনার্যের বৌদ্ধদের সাথে হিন্দুদের যুদ্ধের ইতিহাস সেটা সাক্ষ্য দেয় না।
হিন্দুর ঘরে মুসলমানের পদচিহ্ন গোবর দিয়ে পবিত্র করা কে শিখিয়েছে? কলাপাতা উল্টিয়ে খাওয়া কে শিখায়? বর্ণ বিদ্বেষের জন্মদাতা তো হিন্দুদের ভগবান নিজেই। একজনকে পা থেকে আর একজনকে মাথা থেকে সৃষ্টি করে দেখিয়ে দিয়েছেন জাত-পাত, উৎকৃষ্ট নিকৃষ্ট, অধম-উত্তম কাকে বলে।
মুসলমান পরিবারে শিশুকালে আরবী শিক্ষা নিয়ে যা বলেছেন তা অন্যান্য ধর্মেও আছে। সোসিওলজির ছাত্র ছিলাম বিধেয় বিভিন্ন সমাজের জীবনাচরণ অনুসন্ধান করতে হয়েছে। ইহুদী সমাজের অবস্থা দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আমার কথা হলো, এই জাতিবিদ্বেষ, বর্ণপ্রথা এই সাম্প্রদায়ীক শিক্ষা সকল ধর্মেই আছে, সকল ধর্মগ্রন্থেই রক্তের দাগ আছে, ইসলাম বা মুসলিম আলাদা কিছু নয়।
আপনার প্রবন্ধের নিচের প্রস্তাবনা- ‘স্ব স্বপরিবার থেকে অসাম্প্রদায়ীক সাম্যবাদি সমাজ গড়ে তোলার উদ্যোগ’ এর সাথে পুরোপুরি একমত।
আমি অনিকিনের সাথে একমত। সরকারের কাছে চাইতে পারি, কিন্তু আশা করা উচিত হবে না। আমাদের মূল ভরসা করতে হবে আমাদের নিজেদের উপরই। নিজের পরিবার এবং অনান্য নিকটজনের মধ্যে বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। যাদের আয়ত্বের মাঝে অল্পবয়সী স্কুলে যাওয়া ছেলে মেয়ে আছে, তাদের প্রথাগত শিক্ষার বাইরের জিনিষগুলো শেখাতে সচেষ্ট হতে হবে। ধর্মের উপর ফোকাস করার দরকার নেই। একটি শিশু মনে এইসব দ্বন্দ তার জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে। সাধারণ জ্ঞান এবং প্রয়োজনীয় জ্ঞান দিতে পারলেই বাকি পথটা সে নিজেই অতিক্রান্ত হতে পারে সময় মত।
আমি এ ব্যাপারে অনেক ভেবে দেখেছি, ব্যাক্তিগত উদ্যোগেই এই কাজটা অব্যার্থ ভাবে সফলতা লাভ করতে পারে। এই লাইনে অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। শুরুটা ধীর লয়ে হবে, এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু অগ্রগতি ‘এক্সপোনেনশিয়াল’ বক্রে অবশ্যম্ভাবী। আমাদের ধৈর্য হারানোর কোন কারণ নেই…।।
ঠিক তাই। ধর্ম না,তাকে বিজ্ঞান ও মানবতা শিক্ষা দিলে আপনা আপনিই সে ধর্মের ছলনা গুলো বুঝতে সক্ষম হবে।নিজ নিজ পরিবার থেকে কাজটা শুরু করতে হবে।সেই সাথে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে বলয়ের মধ্যের মানুষ গুলোর মধ্যে।কয়েকজন একত্রিত হয়ে এলাকাভিত্তিক লাইব্রেরি তৈরি করে সাংস্কৃতিক চর্চা শুরু করতে পারলেও সেটা কাজে দেবে।এভাবে আস্তে আস্তে অচলায়তন ভাংতে হবে।কাজটা করতে হবে আমাদের কেই
সেই সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে খালাস হতে চাওয়া ? সরকার যা করছেনা, করবেনা তা করতে বলা ?
ব্যক্তিগত উদ্যোগে আপনি কার্যকর কি করতে বলছেন , যাতে মানুষের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে স্থায়ী একটা পরিবর্তন আনা যায় ?
হ্যা। সরকার যেহেতু কাজ গুলো করছেনা বা করবেনা তাই ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদের পক্ষে সর্বোচ্চ যতটা করা সম্ভব ততটাই করতে হবে।প্রথমত,লেখা চালিয়ে যেতে হবে এবং এই লেখা গুলো মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।দ্বিতীয়ত,পাড়ায় মহল্লায় ব্যক্তি ও সংগঠন ক্লাবের উদ্যোগে লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে।প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ এলাকায় এই কাজের দায়িত্বটুকু নেয় সেটাই অনেক কিছু (আমি এরকম একটি কাজ শুরু করেছি,সংগত কারণেই এলাকার নাম বলছিনা)।এই ক্লাব এবং লাইব্রেরি গুলো এলাকা এবং নিকটস্থ স্কুল গুলোতে বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালিত করতে পারে।সর্বপরি,নিজ নিজ পরিবারের শিশুদের,ছোট ভাই বোন সন্তানদের মুক্তচিন্তায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে।ভাবলে এমন আরও অনেক পদক্ষেপ বের হয়ে আসবে আপাত দৃষ্টিতে হয়তো ক্ষুদ্র কিন্তু এর প্রভাব সামান্য নয়…
জানও একদিন আপনারা জিতবেই কিছু বিলম্ব হচ্ছে মাত্র,সূর্যকে যেমন খনিকের জন্য গ্রহ ভোক্ষনন করে কিন্তু সেটা কিছু খনের জন্য,মানুষ জানে সূর্য আবার আলো ছড়াবে তাউ তারা ভয়ভিত হয়মা,পশু গুলো ভয়ভীত হয়ে দিশেহারা হয়ে যায় মৌলবাদিরাও ঠিক পশুর গ্রহের মতো ক্ষননিকের অন্ধকার জানি আলো আসবেই
আমার সংগ্রাম
তোমার দুর্গন্ধ যুক্ত ধর্মান্ধ মনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে
দিব্যি চলমান আমার আপোষহীন, আবেগহীন দুরন্ত সংগ্রাম।
আমার অবাক বিস্ময় আমার কৈশোর, আমার যৌবন
তুমি দেখেছ তার প্রসব কাহিনি,দিয়েছিলে কি কোন নাম?
তুমি বকধার্মিক, তুমি ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ী,
ধর্মের আঘাতে কেন হব আমি ধরাশায়ী?
ছোট ছোট হলুদ ব্যাধিতে, এই কেমন ধর্ম?
দলা দলি, হানা হানি, এই কেমন তোমার কর্ম।
আমার শৈশব, দুরন্ত কৈশোর জীবন হয়েছিল উৎসবহীন
বছরের পর বছর ধরে পড়িয়েছ আমায় ধর্মান্ধতার শিকল,
প্রতিবার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে,যখন স্মৃতিগুলো মনে পড়ে,
প্রতি ক্ষণে ক্ষণে ধর্মের বড়িতে করেছিলে জীবনটা বিকল।
এখন আমি বুঝেছি জীবন, বুঝেছি যৌবন,
স্মৃতির পাতায় যদিও জমা ধূলোর আস্তরণ।
শিকল ভেঙ্গেছি বলেই যতই বল, আমি বাম,
মৌলবাদ নিঃশেষ পর্যন্ত চলবে আমার সংগ্রাম।
শিকল ভেঙ্গেছি বলেই যতই বল, আমি বাম,
মৌলবাদ নিঃশেষ পর্যন্ত চলবে আমার সংগ্রাম…
মুক্তচিন্তার মানুষদের দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি।………….সত্যিই তাই