সাম্প্রতিক সময়ে একটা বিতর্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, নাস্তিক ব্লগার হত্যায় কি শুধু তাদের লেখালেখি জড়িত নাকি যুদ্ধাপরাধী ইস্যু এর সাথে জড়িত আছে? অনলাইনে অনেককেই বিভিন্ন দৃষ্টিতে বিষয়টা ব্যাখ্যা করবার চেষ্টা করেছে। বিষয়টা বিভিন্ন দৃষ্টিতে কিছুটা জটিল কিন্তু ব্লগার হত্যার সাথে যুদ্ধাপরাধী কিংবা জামাত শিবিরের মতন ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধের ইস্যু কি একেবারে নেই?
ব্লগ জগতে নাস্তিকতা নিয়ে লেখালেখি কি নতুন কিছু? অবশ্যই না। ব্লগের শুরু থেকেই নাস্তিকতা নিয়ে লেখালেখি হয়েছিল। বরং বর্তমান লেখার থেকে তৎকালীন ব্লগে নাস্তিকতা কিংবা ধর্মের সমালোচনা হয়েছে সবচেয়ে বেশি! কামরুজ্জামানের ছেলেও ব্লগিং করত। সেখানেও তর্ক-বিতর্ক অনলাইন ধোলাই সবই হয়েছিল। এবার আসি জঙ্গিবাদ কি বাংলাদেশে নতুন কিছু? অবশ্যই না। বিএনপির আমল থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার শুরু। জঙ্গিবাদের বীজ নম্বই-এর পর থেকেই বপন করা হয়েছিল। এখন শুধু ফল পাচ্ছি কিংবা গাছ বড় হচ্ছে তাই বড় আকারে হাজির হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩০টির মতন জঙ্গি সংগঠন আছে।
জঙ্গি সংগঠন আনসার বাংলা তাদের ফেসবুক পেইজে ঘোষণা দিয়েছে তারা ইসলামের দুশমন ও নবীর বিরুদ্ধে যারা লিখবে সেসব নাস্তিকদের হত্যা করবে। মূল কথায় ইসলামের বিরুদ্ধে লিখলেই হত্যা করবে। সেই সূত্র ধরে আমারা অনেকেই সিদ্ধান্তে আসলাম যে, ইসলামের সমালোচনা করলেই মারা পড়তে হবে। এখানে প্রশ্ন আসে; আনসার বাংলা কি ব্লগার হত্যা করেই তাদের কার্যক্রম শেষ করে নাকি সমাজ ও রাষ্ট্র দখলের উদ্দেশ্য কি তাদের নেই? খেলাফত প্রতিষ্ঠান করার জন্য কি তারা কাজ করছে না?
পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্টদের নাস্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। ওয়াজ মাহফিলেও কমিউনিস্ট মানে নাস্তিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিত। মূল কথা ভিন্ন ধারার প্রগতির চিন্তাকে নাস্তিক ট্যাগ দিয়েই প্রতিহত করত। নাস্তিক যে কেউ ছিল না তা কিন্তু নয় কিন্তু নাস্তিক ট্যাগ দেওয়া সম্পূর্ণ ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কমিউনিস্টদের সাথে সাথে প্রগতির আন্দোলনকে প্রতিহত করা। মুসলীম লীগের বিপরীতে আওয়ামী লীগ যখন জন্ম ছিল তখন এই ট্যাগ খাওয়ার ভয়ে আওয়ামী মুসলীম লীগ নাম করণ করে। যা পরবর্তীতে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ হয়। আর নাস্তিক তকমার কারণে কমিউনিস্টদের উপর দমন পীড়ন চলে পাকিস্তান শুরুর প্রথম থেকে।
জামাত ও ইসলামিক দলগুলোর বিরোধী হওয়ায় বাংলাদেশের লেখক, প্রগতিশীল কর্মীর কপালে নাস্তিকতার তকমা কম পড়ে নি। যারা প্রকাশ্যে নিজেদের নাস্তিক ঘোষণা করেছে সেই সংখ্যা নগণ্য। যারা নিজেদের প্রকাশ্যে নাস্তিক বলে কখনো ঘোষণা দেন নি সেই সংখ্যা সবসময় ছিল বেশি। নাস্তিক, ইসলাম ধ্বংস, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এই শব্দগুলোর সাথে আমরা বাংলাদেশের জন্ম থেকেই পরিচিত। The Colonel Who Would Not Repent: The Bangladesh War and Its Unquiet Legacy বইতে দেখতে পাই; “রোকেয়া কবির ভারতের এক হাসপাতালে এক পাকিস্তান সৈন্যকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তুমি কেন যুদ্ধ করতে এসেছ? প্রশ্নের উত্তরে সৈনিকটি বলে; পূর্ব পাকিস্তানের সবাই হিন্দু হয়ে গেছে!” ভারতের কারণে ৭১-এ নাস্তিক থেকে হিন্দু প্রচারটা বেশি কাজের ছিল। তাই তাজউদ্দীনের খোঁজে যখন পাকিস্তানী সেনারা তাঁর বাড়িতে আসে তখন তাজউদ্দীনের শ্বশুরকে পাকিস্তানী সেনা বলে তোমার জামাই তো হিন্দু। সে ভারতীয় চর। তার আসল নাম তেজারাম। দেশ স্বাধীন হলে ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে, মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছু নেই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে! এসব প্রচার সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। ৯০ সালের দিকে জামাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সকল ক্যাম্পাস দখলে মাঠে নামে। তখন প্রগতিশীল সংগঠনগুলো যেমন-ছাত্র ইউনিয়নের মতন বামপন্থী সংগঠনগুলোকে নাস্তিকদের দল কিংবা এদের সকল কর্মী নাস্তিক হিসেবে তারা প্রচার করতে থাকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে জাহানারা ইমাম যখন আন্দোলন শুরু করেন তখন রাজাকার সাঈদী জাহানারা ইমামকে জাহান্নামের ইমাম। এছাড়া এই আন্দোলনের কর্মীদের নাস্তিক, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযোগ করে।
আহমদ শরীফের সময় মোল্লাদের এতো সাহস ছিল না। লতিফ সিদ্দিকীর কল্লা ফেলে দেওয়ার মতন হুমকি দেওয়ার সাহস তাদের ছিল না। হুমায়ুন আজাদের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়; মুগদা পাড়ায় রাজাকার সাইদি হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করা উচিত বলে বক্তব্য দেয়। লক্ষ্য করুণ মেলে ফেল এই হুকুম দেওয়ার সাহস তখনও এদের ছিল না। আহমদ শরীফের বেলায় অন্য ধর্মীয় সংগঠনগুলো মুরতাদ ঘোষণা করে ফাঁসি দাবী করে ছিল। যা তাদের নিত্য দিনের কর্মসূচী। হুমায়ুন আজাদের উপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে লেখকের উপর প্রথম চাপাতি হামলার ঘটনা ঘটে। আর আগে অনেক লেখকের উপর হামলা কিংবা নির্যাতন হলেও মেরে ফেলার জন্য চাপাতি হামলা সেটাই ছিল প্রথম। বিএনপির আমলে ধরা খাওয়া সকল জঙ্গি অতীতে জামাত-শিবিরের কর্মী ছিল। পরবর্তীতে তারা বোমা হামলার মধ্য দিয়ে নিজেদের সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটায়। এখানে মনে রাখা ভাল হুমায়ুন আজাদ জামাত-শিবির ও ধর্মীয় দলগুলোর ঘোর বিরোধী ছিলেন। হুমায়ুন আজাদের উপর হামলার ৪-৫ বছর পর জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামে একটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ-নেতা শায়খ আব্দুর রহমান হুমায়ুন আজাদ এবং একই সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইউনুসকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন- ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জাতীয় সংসদে হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৩) বইটিকে ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করে বক্তব্য দেন এবং এ ধরনের লেখকদের লেখা বন্ধ করতে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই বইটিতে হুমায়ুন আজাদ তীব্র ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় বাংলাদেশের মৌলবাদী-গোষ্ঠী স্বরূপ চিত্রিত করেন। হুমায়ুন আজাদ বই লিখছেন পাকিস্তান ও মোল্লাদের বিরুদ্ধে কিন্তু রাজাকার সাঈদী অভিযোগ করছে বইটি নাকি ইসলাম বিরোধী! “এক মুরতাদ ছিল। আমরা তাকে সরিয়ে দিয়েছি। এ দেশে সরিয়ে দিলে নানা ঝামেলা হতো। তাই বিদেশে নিয়ে সরিয়ে দিয়েছি।” প্রথাবিরোধী প্রথিতযশা বহুমাত্রিক লেখক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ জঙ্গি হামলায় আহত হয়ে জার্মানিতে মৃত্যুবরণ করার পর এ কথা বলেছিল গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে সাঈদীর দেয়া বক্তব্য ও জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গিদের মিষ্টি বিতরণের দৃশ্য-সংবলিত ভিডিও দেখানো হয়েছে সাঈদীকে। ভিডিও দেখে সাঈদী বাকরুদ্ধ হয়ে যান। এরপর তাৎৰণিক ঘেমে অস্থির সাঈদী অসুস্থতার ভান ধরে শুয়ে পড়ে। তথ্যসূত্র-দৈনিক জনকন্ঠ।
২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চ হওয়ার আগে জামাত-শিবির কিংবা ধর্মীয় সংগঠনগুলো অসংখ্য লেখককে নাস্তিকদের তকমা দিয়েছে। কাদের মোল্লার রায়ের ফলেই গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয়। এই রায়ের আগে অনলাইনে লেখালেখির কারণে আসিফ মহিউদ্দিন ছুরি হামলার শিকার হয়। শাহবাগ সৃষ্টি হওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজিব হায়দার খুন হন। প্রধানমন্ত্রী রাজিব হায়দারের বাসায় যান। পুলিশও খুনি ধরার জন্য তৎপর হয়। ঠিক তখনই ব্লগের কিছু লেখালেখি ‘আমাদের দেশ’ পত্রিকা ছেপে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় যে, ব্লগার মানেই নাস্তিক এবং এই টাইপ লেখালেখি করে। ছাত্র রাজনীতির প্রতি মানুষের একটা নেগেটিভ ধারণা থাকায় মিডিয়া ব্লগার শব্দটি ফোকাস করে। লাকি আক্তার একজন রাজনৈতিক কর্মী কিন্তু মিডিয়ার লোক লাকি আক্তারকেও ব্লগার হিসেবে পরিচয় করেয়ে দিচ্ছিল। ব্লগার শব্দটি যেহেতু নতুন। এছাড়া নোংরা রাজনীতির কালিমা যেহেতু ব্লগার গায়ে নেই সেহেতু এটাই ফোকাস করা হল। এখন কথা আসে হেফাজত ব্লগারদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে কেন গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে দাঁড়াল? গণজাগরণের সংগঠকদের ক্ষুদে অংশ ব্লগার ছিল। এছাড়া এই মঞ্চের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে কয়েক লাখ মানুষ শুধু সমবেত হয়েছে ফাঁসির দাবীকে কেন্দ্র করে। হেফাজতের সুরে বিএনপি নেত্রীও শাহবাগীদের নাস্তিক ট্যাগ দিল। গণজাগরণ যেহেতু যুদ্ধাপরাধী ইস্যু নিয়ে হাজির হয়েছে সেহেতু আদর্শিক ও জামাতের সাথে রাজনৈতিক বিবাহের কারণে বিএনপি এতে যুক্ত হবে না। এবং এটাই ছিল স্বাভাবিক। ‘আমার দেশ’ পত্রিকা ব্লগার মানেই নাস্তিক এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে মাঠে নামে। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জামাতি ব্লগারও অনলাইনে আছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রতিহত করতে তাদের ব্লগার মানেই নাস্তিক এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন পড়ে। গণ-জোয়ারে আওয়ামী লীগসহ অন্যরা ফায়দা নেওয়ার জন্য এসেছিল এবং ফায়দা শেষ হওয়ার পরে চলেও যায় এটাই বাস্তবতা। এখানে খেয়াল রাখা উচিত; বিএনপি নেত্রী যে নাস্তিক ট্যাগ দিল সেই ট্যাগটি মোটেই ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে নয় পুরোটাই রাজনৈতিক। আর এই রাজনৈতিক ক্ষমতা ও ফায়দার জন্য কিশোরগঞ্জের সোয়ালাখিয়া মসজিদের ইমানকেও নাস্তিক ও ইসলামের দুশমন হিসেবে অনলাইনে হাজির করে জামাত-শিবির। এর প্রধান কারণ তিনি গণজাগরণ মঞ্চের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
লক্ষ করুণ, ব্লগারদের লিস্ট তৈরি হয় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ হওয়ার পরেই। এর আগে না। তাহলে স্বাভাবিকভাবে কথা আসে এতো বছর ব্লগে এতো লেখালেখি হল সেই সময় কেন এতো লিস্ট তৈরি হল না। এর সহজ উত্তর হয়তো তারা সুযোগ কিংবা পরিবেশটা পায় নি। যা হেফাজতের উত্থানে মধ্য দিয়ে পরিবেশটা সৃষ্টি হয়। গণজাগরণ মঞ্চের পর হেফাজতের সমমনা সরকারের ওলামা লীগ নাস্তিক ব্লগারদের একটি লিস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এই লিস্টে ৮৪টি নাম যুক্ত করে। এই ৮৪ নামে একজনের দুই তিনটা আইডি যেমন আছেন তেমনি অনেকে নিজেকে নাস্তিক হিসেবে ঘোষণা কিংবা লেখালেখি করে নি এমন মানুষের নামও আছে। তবে এই ৮৪ আইডিগুলোর মধ্যে একটা কমন মিল ছিল; এরা সবাই জামাত শিবির বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী বিচারের পক্ষে। ওলামা লীগের আগে সম্ভবত ২০১২-১৩ সালের দিকে সামু ব্লগে একটা নাস্তিক লিস্ট বানানো হয়। সৌদিতে অবস্থানকারী আহমেদ আরিফ এই লিস্টটা বানায়। তবে ঐ লিস্ট ছিল সামু ব্লগ কেন্দ্রিক। গণজাগরণের পরেই ব্লগ ছোট্ট গণ্ডি থেকে বড় পর্দায় হাজির হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ৪ জন ব্লগার গ্রেফতার হলেও পরবর্তীতে আরও অনেক অনলাইনে এক্টিভিস্ট গ্রেফতার হয়। এবং এদের মধ্যে অনেককে প্রথমে শারীরিকভাবে প্রহার করে তারপর পুলিশের কাছে দেয় জামাত-হেফাজত-পন্থী কর্মী বাহিনী।
পাবলিক যেহেতু যুদ্ধাপরাধী বিচারের কারণে ব্লগারদের সমর্থন করে মঞ্চের পক্ষে অবস্থান করছে সেহেতু এর বিপক্ষ শিবিরের লোকজদের সমর্থন আদায়ের জন্য হেফাজত পাবলিক এটেনশন মাথায় রেখে ব্লগারদের নাস্তিক ঘোষণা করে মাঠে নামে। এবং কোরান, হাদিসের বিভিন্ন রেফারেন্স উল্লেখ করে ধর্মের সমালোচনার জন্য ব্লগারদের ফাঁসি দাবী করে। এবং পরবর্তীতে নাস্তিক হত্যা ওয়াজিব ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। অনলাইনে নাস্তিক ব্লগাররা জামাত-শিবিরের আদি শক্র। মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে মাঠে কিংবা অনলাইনে সুবিধা করতে না পেরে নাস্তিক ব্লগারদের প্রথম টার্গেট করে। গণজাগরণ মঞ্চ হওয়ার পর যতো মানুষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়ার জন্য খুন হল তাদের অধিকাংশকে নাস্তিক ট্যাগ দিয়েই হত্যা করা হয়েছে। উল্লেখ; সিলেটের গণজাগরণ কর্মীকে যখন কুপিয়ে হত্যা করা হয় তখন বলছিল তারা নাস্তিক মারছে। তাহলে একটু ভেবে দেখতে হয় সে ছেলেটা ব্লগিং করে নি সেই ছেলেটি কেন খুন হওয়ার সময় নাস্তিক ট্যাগ খাচ্ছে! একই ঘটনা বগুড়ার গণজাগরণ কর্মীর উপর ঘটে। সমস্যা হল এরা যেহেতু ব্লগিং করত না সুতরাং অনলাইনে এদের নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় নি। কিন্তু আলোচনা না হলেও এদের মৃত্যুর কারণ যে গণজাগরণ মঞ্চ এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়া তা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। বছর খানেক আগে হিজাবের জের ধরে চট্টগ্রামে এক অমুসলিম টিচারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গণজাগারণ মঞ্চের কারণে যতো মানুষ মারা গেল তাদের সবাই মৃত্যু হয়েছে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ইস্যুতে এবং অধিকাংশ নাস্তিক হিসেবে ট্যাগ পেয়েছেন, অথবা ইসলাম বিরোধী ট্যাগ পেয়েছে। এর বাহিরে গোপীবাগের সিক্স মার্ডার, মাওলানা ফারুকী, সর্বশেষ ওলামা লীগের একাংশের নেতা ছুরির আঘাতে আহত হয়। এর খুন গুলো ক্ষমতা ও আদর্শের বিরোধ। যেমন এক পীর আরেক পীরকে ভণ্ড হিসেবে খেতাব দেয় যা পুরোটাই প্রভাব বিস্তারের স্বার্থ।
গণজাগরণ পর যুদ্ধাপরাধী ইস্যু ও ব্লগিং কিংবা নাস্তিক ইস্যুতে যতো মানুষ খুন হল তার মধ্যে ছয়জন ছিল ব্লগিং ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। এছাড়া গণজাগরণ হওয়ার এক বছর পর রাকিব মামুন নামের এক অনলাইন এক্টিভিস্টের উপরও হত্যার উদ্দেশে হামলা চালানো হয়। লক্ষ্য করে বোঝা যাবে যে নিহত সকল ব্লগার গণজাগরণ মঞ্চের সাথে জড়িত ছিল। এদের অনেকে হয়তো ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিক কিন্তু এরা জামাত-শিবির বিরোধী ও ধর্মীয় রাজনীতির বিরোধী ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম সফিউল ইসলাম বোরকা বিরোধী করার জন্য হত্যা করা হয়। এর আগেও জামাত-শিবিরের হাতে রাজশাহীতে অসংখ্য শিক্ষক নিহত হয়। তবে বর্তমান সময়ে মৃত্যুর পর কোন এক ধর্মীয় বিরোধী যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। বলা যায় ব্লগারদের নাস্তিক তকমা যেহেতু প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়েছে এবং একটি নেগেটিভ ধারণা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে সুতরাং হত্যাকারী মৃত ব্যক্তিকে নাস্তিক ঘোষণা করে একটি অংশের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। অন্যরা নাস্তিক ইস্যু শোনা মাত্র নো কমেন্টস শ্রেণিতে চলে যায়।
তাই ব্লগার হত্যা পুরোটাই রাজনৈতিক হত্যা। এটাকে এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। আনসার বাংলা মতন বিভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠনগুলো শুধু নাস্তিক ব্লগার মারে নি, মেরেছে অন্যদেরও। রাস্তা পরিষ্কার করার প্রধান বাঁধা হিসেবে টার্গেট করেছে নাস্তিকদের। কারণ তারা অনলাইনে ধর্মের বিরুদ্ধে যারা লেখে এবং যারা ধর্মীয় রাজনীতির বিরোধী সেই মানুষগুলোকে থামিয়ে দিতে পারলে মানুষের মধ্যে এক ধরণের ভয় কাজ করবে। ফলে কেউ আর প্রকাশ্যে এদের বিরুদ্ধে কিছু লিখবে না। এসব হত্যাকে এরা ইমানী দায়িত্ব হিসেবে হাজির করলেও মূল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক মাঠ দখলের চেষ্টা। আর এই জন্য বেঁছে নেওয়া হয়েছে ব্লগারদের আর হত্যাকারী হিসেবে ব্যবহার করছে একদল ধর্মান্ধ খুনিদের। তাই রাজনৈতিক হিসেবটা বিবেচনা না নিয়ে শুধু ধর্মের জন্য মারা পড়ছে মেরে ফেলছে এমনটা ভাবা সম্ভবত বোকামির শামিল। কারণ রাজনৈতিক স্বার্থ ও ক্ষমতার ফায়দা ছাড়া জঙ্গি সংগঠনগুলোকে কেউ আর্থিক সাহায্য দেয় না।
সাধে কি আর ইসলামিষ্টরা নাস্তিক হত্যার মহোৎসবে মেতেছে? তা, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, এখানে একটি শব্দে স্লিপ অফ টাং বা টাইপো বোধ হয় হয়ে গেল। শব্দটা ধর্মীয় অনুভুতি নয়, হবে ইসলামানুভুতি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত তো হর হামেশা নিত্যদিন খোলা মাঠে, মসজিদে, মাদ্রাসায়, ওয়াজ মাহফিলে আপনি ও আপনার অনুসারীদের চোখের সামনেই হচ্ছে। দুঃখিত মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, ধর্মগ্রন্থের সমালোচনা আমরা করেই যাবো, এতে কারো ধর্মানুভুতিতে আঘাত লাগলে আমাদের কিছু করার নেই। আপনার সমালোচনার জন্যে আমাকে আবার ৫৭ ধারায় এরেষ্ট করবেন না তো?
@আকাশ মালিক
আপনার এই বক্তব্য আমারো। প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ ধর্মের অনুভূতির হেফাজতের কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কমেন্ট করায় অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন।
ভারতীয় নাস্তিক গোবিন্দ পানসারে , নরেন্দ্র ধাবলকার, সতিশ শেঠি, মাল্লেশাপ্পা কালবুর্গির হত্যার বিচার চাই। উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠনগুলোকে নিয়েও কিছু বলুন
ভারতীয় সকল লেখকদের বিচার সবার মতন আমরাও চাই। কিন্তু এখানে আলোচনাটায় ভারতের লেখকরা অপ্রাসঙ্গিক কারণ এখানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ভারতীয় লেখকদের পক্ষে সবার লেখালেখি করা উচিত।
ব্লগার হত্যায় রাজনৈতিক কারণ বা বৃহত্তর রাজনৈতিক লক্ষ্য যদি থেকেই থাকে সেটা কিরকম রাজনীতি? বিনপি-আমলীগের মতো লুটপাটের রাজনীতি? হালুয়া রুটি ভাগাভাগির রাজনীতি? সন্দেহাতীতভাবে বলা যাচ্ছে না। আবার বাংলাদেশ তো আরবদেশগুলোর মতো তেলের ওপর ভাসা দেশ নয়। তাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জ্বালানী তেল রাজনীতিও এক্ষেত্রে কারণ হিসাবে দাঁড়ায় না। তারপরও যদি রাজনৈতিকভাবেই ব্যাখ্যা করতে হয় তাহলে বলতে হবে যারা ফাইনান্স করছে বা মাস্টার মাইন্ড হিসাবে কাজ করছে তারা হয়তো বাংলাদেশের অশিক্ষা-কুশিক্ষাপ্রবণ বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাঁধে ভর দিয়ে ইসলামিক স্টেট তৈরী করতে চায়। তো শেষ পর্যন্ত থলে থেকে কী বেরিয়ে আসলো? ইসলাম। এবং তাই তো হওয়ার কথা। ইসলাম ধর্ম যতটা আধ্যাত্মিক ততটাই রাজনৈতিক। ইসলাম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করলে সেটা সুফিবাদ কিংবা ইশকন টাইপ কিছু একটা হয়ে যায়- ইসলাম আর থাকে না। সুতরাং আমরা মনে হয় অযথাই দু’টো বিষয়কে আলাদা করছি। ইসলাম আর রাজনীতি হরেদরে একই জিনিস।
নাস্তিক হত্যা করা ওয়াজীব। এটাই মূল কারণ। যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই নাস্তিক। তারা আবার একিসাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সোচ্চার সমর্থক। ফলে একটা সরলীকরণ অনেকেই করছেন। কিন্তু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল নাস্তিক নন এমন একজন আন্দোলনকারীকেও (যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির পক্ষের) কিন্তু হত্যা করা হল না। শাহবাগীদের মধ্যে এখন নিজেদেরকে আস্তিক প্রমাণ করবার আপ্রান চেষ্টাও ভীষণভাবে দৃশ্যমান।
তাই যত কথাই বলা হোক , এক ব্র্যাকেটে আনার চেষ্টা করা হোক নাস্তিক হত্যা করাই প্রধান উদ্দেশ্য।এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি কাটিয়ে বাকস্বাধীনতা, সমঅধিকার, মুক্তচিন্তা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার ও দৃঢ় আন্দোলনে সামিল হওয়াই এখন সকল মুক্তমনার কাছে সময় ও ইতিহাসের দাবী।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা লেখা। লেখকের সাথে পুরোপুরি একমত পোষণ করি।
দিনশেষে সকল হত্যাকাণ্ডকেই রাজনৈতিক রূপ দেওয়া যায়। জমির দখল নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে খুনোখুনির পেছনেও অনেকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দায়ী বলে মনে করেন।
রাজীব হত্যা এবং পরবর্তীতে তার লেখালেখির নমুনা প্রকাশের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ফায়দা লুটেছে, তা অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলন শুরুর আগেও নাস্তিক ব্লগারদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এই জঙ্গিদের পরিচয়, অর্থ-যোগানদাতা কিংবা তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান শুধুমাত্র একটি হাইপোথিসিসেই সীমাবদ্ধ। আমরা সবাই ধরেই নিচ্ছি, এই হত্যাকাণ্ডগুলোর পেছনে কোনো সেন্ট্রাল কমান্ড রয়েছে, যারা পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছে। পুলিশ বলছে কতগুলো স্লিপার সেলের মাধ্যমে আক্রমণ করা হচ্ছে, যাদের একটির সাথে অন্যটির কোনো সম্পর্ক নেই। যে কারণে নাটের গুরুদের ধরা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিভিন্ন জনের নাম এলেও একক কোনো সেন্ট্রাল অথরিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কনস্পিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে অনন্তদার সাথে মিলে কিছু পড়াশোনা করেছিলাম। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের একটি বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে, শত্রুকে সবসময় বড় করে দেখানো হয়। শত্রু মাত্রই অসীম ক্ষমতার অধিকারী, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তার হাতের মুঠোয়। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্নও হতে পারে। আমরা নিজেরাও কি নিজেদের অজান্তে নিজেদেরকে মহাপ্রতিক্রমশালী একক কোনো প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি?
বলা হচ্ছে, এই কিলার গ্রুপদের নিজদের মধ্যকার সম্পৃক্ততা কিংবা এদের নিজেদের মধ্যকার সমন্বয় কিভাবে হচ্ছে, তা জানা গেলে মূল হোতাদের ধরা যাবে, এদের সমূলে বিনাশ করা যাবে। কিন্তু এমন যদি হয়, আইডিওলজিক্যাল স্ট্যান্ড ছাড়া এদের নিজেদের মধ্যে আদতেই কোনো সম্পর্ক নেই।
অন্তত এ বছর যতগুলো ব্লগার হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর পেছনে শাহবাগ আন্দোলনকে একটা ফ্যাক্টর হিসেবে গণ্য করতে রাজি নই। ফারাবি বলেছিল, অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকে, আমেরিকা থেকে দেশে আসলে তাকে হত্যা করা হবে। ফারাবি যাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, সেই মান্নান রাহী আজকে অনন্তদাকে হত্যা করেছে বলে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। আমার ব্যক্তিগত ধারণামতে ফারাবির ফেসবুক কমেন্টটি হয়তো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ট্রেন্ড সেটলার।
ফারাবির কমেন্ট হয়তো এক্ষেত্রে কাউকে না কাউকে সত্যিই উদ্বুদ্ধ করেছে এমন পদক্ষেপ নিতে। অভিজিৎদা শাহবাগ আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন, কিন্তু তিনি শাহবাগ আন্দোলনের কর্ণধার কেউ নন। গণজাগরণ মঞ্চও তার আগের জৌলুশ হারিয়েছে, দুজন ভাঁড়ের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অভিজিৎদাকে মেরে ফেললে, শাহবাগ আন্দোলনের বড় কোনো ক্ষতি হবে না এটাই নির্মম সত্য। কিন্তু অভিজিৎদাকে কিংবা অনন্তদাকে মেরে ফেলার মাধ্যমে মুক্ত-বুদ্ধির চর্চাকে যে আরও দশ বছর পিছিয়ে ফেলা যায়। আগামি ১০০ বছরে আর কোনো অভিজিৎ কিংবা অনন্ত আসবে কিনা সেটাই সন্দেহ।
কোনো নির্মম ঘটনা সামাজিক মনস্তত্বের উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। দেখা যায়, কিছুদিন কেউ না কেউ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করেছে। প্রতিক্রিয়াশীলতায় বিশ্বাসীদের মধ্যে একে অন্যের অনুকরণ করার প্রবণতা বেশি। সাম্প্রতিককালে আইসিসের উত্থান কি আমাদের দেশের প্রতিক্রিয়াশীল জনগোষ্ঠীর মনে কোনো নাড়া দেয়নি ঈমানি জোশে হঠকারী কোনো পদক্ষেপ নিতে? মান্নান রাহীর পক্ষে হয়তো ঢাকায় গিয়ে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা সম্ভব নয়। কিন্তু নিজ শহরে বাস করা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ব্যাংকে জব করা অনন্ত বিজয়কে খুঁজে বের করা কঠিন কোনো কাজ নয়। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া আপনার বন্ধুটি যদি হঠাৎ বন্ধুদের সাথে মিটিং করে আপনাকে খুন করার প্ল্যান করে বসে, তাহলে তা ঠেকানোর উপায় কি? ব্লগার হত্যাকাণ্ডের পেছনে যদি অর্গানাইজড কোনো একক শক্তির অস্তিত্ব না থাকে, সেক্ষেত্রে অনুমিত মাত্রার থেকেও মুক্তমনা ব্লগাররা বেশি বিপদে আছে।
কোন লেখক যদি ক্রমাগত এমন সব লেখা প্রসব করতে থাকেন, যাতে করে লেখকের একটা চরিত্র দাঁড়িয়ে যায়, এবং সেই চরিত্রের একটা উদ্দেশ্যও ফুটে উঠে, তবে সেই লেখকের লেখার সারবস্তুর চেয়ে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিশেষতঃ সেই উদ্দেশ্য যদি কোন শক্তির সমান্তরাল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে পরিষ্ফুট হতে শুরু করে।
সুব্রত শুভ’র পুর্ববর্তী আরো একটা লেখায়ও একই প্রভাব, অর্থ্যাৎ, সারবস্তুর তুলনায় উদ্দেশ্য প্রধান হয়ে উঠেছিলো। তা ছিলো হত্যার পেছনে কিছু তথাকথিত ‘উগ্র নাস্তিকের’ ইন্ধন প্রদান। স্বভাবতঃই এসব লেখা পরিহার্য, এবং মুক্তমনার বিপরীতে কাজ করে।
এই লেখাটিও একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সেটি লাশের রাজনীতি।
এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলবার নাই।
দুরের পাখি বেশ ক’দিন আগে চমৎকার একটি লেখা ছেড়েছেন এ বিষয়ে।
আমি এ বিষয়ে একটি আলোচনার আয়োজন করেছিলাম, যা পডকাস্ট হিসেবে এখানে শুনতে পাবেন।
@আরিফুর রহমান
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য ও লিংকের জন্য।
প্রথমত আমি মোটা দাগে বলতে চেয়েছি; ব্লগার হত্যার কারণে শুধু তাদের লেখার জন্য, আবার গণজারণ মঞ্চের ফলেই মারা পড়ছে; হ্যা/না বলে এটার সিন্ধান্তে আসা যাবে না। এই পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে কীভাবে কাজ করেছে তা দেখানোর চেষ্টা করেছি হয়তো আপনি বোঝেন নি কিংবা আমার বোঝানের ব্যর্থতা।
দ্বিতীয়ত আমাদের একটা বড় সমস্যা হল আমাদের কোন মতের সাথে না মিললে আমরা আমাদের বিপরীত পক্ষে তার অবস্থান চিন্তা করি। ব্যক্তির ব্যক্তিগত ভাবনা যে থাকতে পারে তা আমাদের ধারণা নেই কিংবা স্বীকার করতে চাই না। আর লাশের রাজনীতি তো শুধু হেফাজত করে না, সরকারের সাথে সাথে অন্যরাও করে। সেটা আপনিও ভাল জানেন।
আমার ফেবু স্ট্যাটাসটা কপি করছি …
১/ এখন পর্যন্ত যত ব্লগার, নাস্তিক, শাহবাগী খুন হয়েছে- সেখানে এই তিনটা পরিচয়কে একাকার করার চেষ্টা সব দিক থেকেই হয়েছে … বিশেষ করে, ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনকে এরকমভাবে চিত্রিত করা হয়েছে … “শাহবাগী নাস্তিক ব্লগার” (মানে- শাহবাগী মানেই বোলোগার, বোলোগার মানেই নাস্তিক) … সুতরাং শাহবাগের আন্দোলনকারীরা যখন নাস্তিক হত্যাকে শাহবাগীদের হত্যা হিসাবে দেখাতে চায়- তার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে হয়। বিভিন্ন সময়ে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের নাস্তিক হিসাবে প্রচার করে “ইসলামের শত্রুদের” খতমের ডাক দেয়ার কাজটাও ইসলামিস্টরা করেছে। সবচেয়ে বড় কথাম, নাস্তিক নিধন এবং নাস্তিকদের ফাসীর দাবিতে গড়ে ওঠা হেফাজতের উত্থান- সেই শাহবাগ আন্দোলনের সময়েই গড়ে ঊঠেছে। সুতরাং, চাইলেও এই ধারাবাহিক নাস্তিক হত্যার ঘটনায় শাহবাগ আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন রাখা মুশকিল।
২/ শাহবাগ আন্দোলনের বড় রকম ভুল হচ্ছে- তারা নাস্তিকদের কখনোই একুমুলেট করতে পারেনি। বরং, যখনই শাহবাগীদের নাস্তিক আখ্যা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে- তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে, তারা তো নাস্তিক নয়ই- তারা অনেক বড় আস্তিক … ফলে, এই যে ‘নাস্তিক হলেই তাকে হত্যা করা জায়েজ’- একে শাহবাগ আন্দোলন কখনোই শক্তভাবে কাউন্টার করতে পারেনি … ফলে, নাস্তিকরা বিচ্ছিন্ন ফিল করেছে। রাজাকারদের সর্বোচ্চ সাজার দাবির আন্দোলনের বড় সমর্থক- কর্মী হওয়ার পরেও অনেক নাস্তিকই শাহবাগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকতে পারেনি … সুতরাং, যখনই শাহবাগ আন্দোলনকারীরা এখনকার নাস্তিক হত্যার পেছনে শাহবাগ আন্দোলনকে কারণ হিসাবে হাইলাইট করে- সেটার সাথে নাস্তিকরা বড়রকমের দ্বিমত দেখে …
৩/ শাহবাগ আন্দোলনকারীরা আরেকটা কাজ জোরে শোরে করছেন … নিজেদের নাম যখন ইসলামিস্টদের হিটলিস্টে দেখছেন- সাথে সাথে জানাচ্ছেন, তারা আসলে নাস্তিকতো নয়ই, বরং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া নাস্তিকদেরও তারা বিরোধী, তারপরেও তাদের নাম হিটতালিকায় থাকার একমাত্র কারণ তারা শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী … আরিফ জেবতিক, পিয়াল থেকে শুরু করে সর্বশেষ বরিশালের ৬ জনের ছবি পাবলিশ হওয়া এক কবি- সকলেই এই সুরে কথা বলছে … আমার মতে- ‘নাস্তিক হলেই যে তাদের হত্যা করা যায়’- এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করার পেছনে এসবের বড় ভূমিকা আছে …
৪/ এখন পর্যন্ত নাস্তিক হিসাবে হিটলিস্ট করে – হুমকি ধামকি দিয়ে যাদের খুন করা হয়েছে- তারা নাস্তিক বলেই খুন করা হয়েছে! যুদ্ধাপরাধের বিচার তারা চাইতেই পারেন, এমনকি শাহবাগ আন্দোলনের সাথেও যুক্ত থাকতে পারেন- কিন্তু আনসার বাংলা বা এধরণের যারা এই নাস্তিক হত্যার সাথে যুক্ত আছে- তারা খুঁজে পেতে নাস্তিকদেরকেই টার্গেট করেছে … স্রেফ শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী হিসাবে যারা খুন হয়েছে- তাদের খুনের ধরণ একটু ভিন্ন এবং সেগুলোর দায় স্বীকার আনসার বাংলা করেনি …
৫/ বিভিন্ন ধরণের হিটলিস্ট যেগুলো আসছে- সেগুলো সব হেফাজত বা আনসার বাংলা টাইপ সংগঠনের করা না … এখানে নানাধরণের ফোর্স, গোষ্ঠী যুক্ত, জড়িত- নানারকমের গেম, উদ্দেশ্য এর সাথে যুক্ত … এমনও শোনা যায়- পিয়াল/ সিপি গ্যাং নিজেরাও নানা ধরণের তালিকা বাজারে ছেড়েছে, ছাড়ছে … শুরুর দিকে হেফাজত আরিফ জেবতিকের মত কয়েকজন শাহবাগীদের নাম নাস্তিকদের তালিকায় তুলেছিল- কিন্তু সেই ভুল তাদের ভাঙ্গতে সময় লাগেনি … হেফাজতের মধ্যে জামাত- বিএনপি এমন নানা গোষ্ঠী ঢুকে তারা হেফাজতকে যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চেয়েছিল … সেই ব্যাপারে শফি- বাবুনগরি থেকে হেফাজতের স্বীকারোক্তিও আছে … তারা স্পষ্টভাবেই নানা সময়ে জানিয়েছে- যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে তাদের কোন বক্তব্য নাই- প্রচলিত বিচার অনুযায়ী দোষীদের শাস্তি হওয়ার মাঝে তারা সমস্যা দেখে না … কিন্তু আল্লাহ- নবীর বিরুদ্ধাচারণকারীদের তারা ছেড়ে দিতে পারে না … সুতরাং, হেফাজত- কিংবা বিশেষ করে আনসার বাংলার যারা সক্রিয় কর্মী- তারা শাহবাগ আন্দোলন- রাজাকার বিচার নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে বলে মনে হয় না … অন্তত আমি আনসার বাংলার সাইটগু, টুটার একাউন্টগুলোতে ঘুরে এটা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি যে, তারা অনলাইনে যথেষ্ট রিসার্চ করেই টার্গেট ঠিক করে … বেছে বেছেই নাস্তিকদের টার্গেট করে … সেখানে পিয়াল, অঞ্জন রায়, অমুক তমুক মন্ত্রীদের নিয়ে রিসেন্ট তালিকাটা তাদের বানানোর কোন সম্ভাবনাই দেখি না …
৬/ আনসার বাংলা/ হেফাজতের কিলিং সেলের রিক্রুট পুরাটাই নাস্তিকদের বিরুদ্ধে জেহাদী জোশে … সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোন বিষয় নেই বলেই যেকজনকে ধরেছে তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায় ও বুঝা যায় …
৭/ আমি শাহবাগ আন্দোলনের চাইতে ঘাদানিক’র আন্দোলনের সাথে অনেক বেশি যুক্ত ছিলাম … সেই সুদুর জেলাশহরে বসে আমি ঘাদানিকের আন্দোলনের কর্মী হয়েছিলাম … এর স্বাক্ষর সংগ্রহ হচ্ছে আমার লাইফের প্রথম পলিটিকাল এক্টিভিটি … এবং এসমস্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা দৈনিক সংবাদে লেখা আর্টিকেল হচ্ছে আমার লাইফের প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধ … তখন স্কুলে পড়ি … স্পষ্ট মনে আছে … তখনও নাস্তিক প্রসঙ্গ তোলা হয়েছিল … তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে সাড়া দেশে হরতালও হয়েছে … কিন্তু ঘাদানিক’র প্রথম সারিতে থাকা শাহরিয়ার কবির, আহমেদ শরীফ সহ বড় বড় নাস্তিকদের কখনো কোন মোরাল ক্রাইসিসে পড়তে হয়নি … ঘাদানিক আগ বাড়িয়ে দাবি করতে যায়নি যে- তারা আস্তিক … ঘাদানিক’র মঞ্চ থেকে নামাজ- টামাজও পড়তে হয়নি … জাহানার ইমাম নিজে ধার্মিক হওয়ার পরেও- প্রকাশ্যে নিজের ধর্মকর্মের বিবরণ তো দেনইনি, উল্টো জামাতের উত্থাপন করা ব্লাসফেমি আইনের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন … শাহরিয়ার কবির একই সাথে ঘাদানির নেতৃত্ব দিয়েছেন আবার কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে নানা নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন- দাঁড়াতে গিয়ে ইসলামকেও কড়াভাবে সমালোচনা করেছেন … হাসিনা পরে দুই নাম্বারি করেছেন, শাহরিয়ার কবির সহ অন্য নেতারা ৯৬-এ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পরে দালাল বনে গিয়ে ঘাদানিককে ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত ঠুটো জগন্নাথ বানিয়ে রেখেছেন … ঘাদানিককে একটা দালাল সংগঠনে পরিণত করেছেন … এই সমস্ত কিছুর পরেও জাহানারা ইমামের ঘাদানিকের কথা মনে পড়লে এখনো আমার অন্যরকম অনুভূতি হয় … এবারের শাহবাগের আন্দোলনের সময় বারেবারে ঘাদানিকের কথা বেশি বেশি মনে পড়েছে … এই শাহবাগ আন্দোলনের নেতৃত্ব তো একেবারে ইমম্যাচুরড ছিলেনই … তারা ভয়ানকভাবে দায়ী আজকের এমন একটা ভয়াবহ নাস্তিকবিদ্বেষী পরিস্থিতি তৈরির পেছনেও …
৮/ সবকিছু মিলে আমি মনে করি- “আজকের ব্লগার নাস্তিক হত্যার পেছনে শাহবাগ আন্দোলন মূল”- এরকম ইন্টারপ্রিটেশন ভুল এবং ক্ষতিকর। যদি ধরেও নেই যে- শাহবাগীদের টার্গেট করেই হিটলিস্টে তোলা হচ্ছে, তারপরেও বলবো- এই হিটলিস্টে তারা শাহবাগী হিসাবে না, বরং নাস্তিক হিসাবে, ইসলামের শত্রু হিসাবে স্থান পাচ্ছে … ফলে, তাদেরকে শাহবাগী হিসাবে পরিচয় করিয়ে লাভের চাইতে ক্ষতিই বেশি দেখি … নাস্তিক হলেই তাকে হত্যার অধিকার যে কারোর নেই- এটাকে শক্তভাবে মোকাবেলা করতে গেলে- নাস্তিকদের পাশেই দাঁড়াতে হবে … এবং এটা শাহবাগী বা অন্য পরিচয় সামনে এনে নাস্তিক পরিচয় আড়াল করে সম্ভব না বলেই মনে করি …
৯/ শাহবাগ আন্দোলনের কর্মীরা সেই উত্তাল সময়ে যে ভুল করে যাচ্ছিল, আজো সেখান থেকে বের হতে পারছেন না … তাদের উপলব্ধি করা উচিৎ যে, থাবা বাবাকে আস্তিক প্রমাণ করতে ঘটা করে জানাজা পড়ে শাহবাগ আন্দোলনের কোন লাভ হয়নি! তাদের উপলব্ধি করতে হবে, এই আন্দোলন যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে – যে দাবী কোন ধার্মিক দাবী নয় যেহেতু, সেহেতু ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তুলতে পারে এবং একজন নাস্তিকও সেই আন্দোলনে যুক্ত হতে পারে … ফলে তাদের মাঝে নাস্তিক নাই- এমন ঘোষণা আন্দোলনের ক্ষতিই বৃদ্ধি করতেই পারে কেবল! আজো নাস্তিক বিরোধী ইসলামিস্ট জঙ্গীদের মূল টার্গেট যে নাস্তিক সেটা তাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং এই উপলব্ধি থেকে নাস্তিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে … ইসলামিস্টদের মূল টার্গেট কেবল নাস্তিকরা নয়, শাহবাগীরাও- এমনটা যতই তারা দাবী করছেন, ততই তারা নাস্তিকদের মূল টার্গেট বানানোর পক্ষে পরোক্ষে গ্রাউন্ড তৈরি করছেন! কেননা, শাহবাগ আন্দোলনকারীদের এসব দাবী থেকে জঙ্গীরা কেবল এমন প্রেরণাই পেতে পারে যে, ঠিক আছে- ভুলে যেন কোন আস্তিক শাহবাগী তাদের তালিকায় না আসে, জেনুইন নাস্তিক, সে শাহবাগী হোক বা না হোক- খুঁজে বের করতে পারলেই তো হলো!
১০/ আজ নাস্তিক হত্যার এই পরোক্ষ জাস্টিফিকেশন শাহবাগ আন্দোলনকারীরা যে দিচ্ছেন, সেটা একদিন তাদের জন্যে বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে … দাঁড়াবে কি- দাঁড়াচ্ছে বা ইতিমধ্যেই দাঁড়িয়েছে … যে কেউই যে কাউকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করতে পারছে, পারবে … এমনকি ব্যক্তিগত শত্রুতা, বিশেষ কোন স্বার্থসিদ্ধি, কারো জমি- সম্পত্তি ভোগদখল এমন নানা উদ্দেশ্যেও এইরকম নাস্তিক ট্যাগ দেয়াটা সহজ উপায় হিসাবে বিবেচ্য হতে থাকবে … যতই চিৎকার করুন- আমি নাস্তিক না, আমি অমুক- তমুক- সমুক, কোন লাভ হবে না … এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে- যাকেই নাস্তিক দাবি করে নাজেহাল করার চেষ্টা করা হোক না কেন- নাস্তিকদের সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার অধিকারের পক্ষে জোর লড়াই করা … ফলে, যখন নাস্তিক ট্যাগ খেয়ে হিটলিস্টে উঠছেন, তখন আমি অমুক তমুক বলার চাইতে জোর গলায় বলুন- নাস্তিক হলে নাস্তিক, নাস্তিকদেরও বাঁচার অধিকার পুরোমাত্রাতেই আছে …
খোলাখুলিভাবে ভীষণ সত্য কথা গুলো তুলে ধরার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। আপনার লেখা আরও বেশী করে মুক্তমনায় আশা করছি। মডারেট মুক্তমনাদের ভিড়ে নির্জীব হয়ে যাওয়া মুক্তমনাকে আরো প্রাণবন্ত করার জন্য আজ তা জরুরী।
আপনাকে ধন্যবাদ, গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিতে মুক্তমনায় আলোচনা শুরু করার জন্যে …
বেশ কিছুদিন ধরেই, এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত তর্ক বিতর্ক চোখে পড়ছে … কোন তর্ক বিতর্কই আমার দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় নয়, তারপরেও এই ডিবেটকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলার কারণ হচ্ছে- আমরা যারা একই সাথে নাস্তিক এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই- তাদের অনেকের কাছেই এরকম বিতর্ক বিব্রতকর … শুরুতে এ বিষয়ে কথা বলাটায় আমি বেশ আড়ষ্ট বোধ করতাম … একজায়গায় চট্টগ্রামের অঞ্জলি দেবীকেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রার্থী হিসাবে উল্লেখ করায় জিজ্ঞেস করেছিলাম- তার এমন কোন কার্যক্রম কি চোখে পড়েছে? জবাব পেলাম- তিনি যেহেতু প্রগতিশীল, সেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো তিনি চাইবেনই …
আমি অবাক হয়ে চিন্তা করলাম অনেক … শেষ পর্যন্ত অবস্থাদৃষ্টিতে ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রার্থী বনাম নাস্তিক- এই ডিবেট এসে হাজির, কারা জঙ্গীদের মূল টার্গেট? শাহবাগের আন্দোলনকারীরা, শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থকেরা জোর গলায় বলার চেষ্টা করছে- নাস্তিক-ফাস্তিক কোন ব্যাপার না, জঙ্গীরা আসলে এই আন্দোলনকারীদেরই টার্গেট করেছে, নাস্তিকতারে কেবল হাতিয়ার হিসাবে ইউজ করছে … এমন ইন্টারপ্রিটেশনে বেশ অবাক হলাম, উদ্বিগ্ন হলাম এবং বিপন্নবোধ করলাম …
আপনার পোস্টে নানা কিছু, অসংখ্য প্রসঙ্গ আনলেও- যদিও কনক্রিট সিদ্ধান্ত পাচ্ছিনা, তারপরেও নানা বিস্তারের আলোচনাটায় আমার মনে হচ্ছে, আপনার ঝোঁক- সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রার্থীরাই যে জঙ্গীদের মূল আক্রমণের অভিমুখ- তা প্রমাণ করা … বিনীত ভাবেই জানাতে চাই যে, এই প্রবণতা/ ঝোঁকের ভীষণ বিরোধিতা করি এবং একে বিপজ্জনক প্রবনতা হিসাবেই বিবেচনা করি … কারণটা পরের কমেন্টে উল্লেখ করছি … (এটা আগের একটা ফেবু স্ট্যাটাস- সেটাকে আরেকটু এডিট করে কপি করছি) …
আপনার শেষ প্যারার সিদ্ধান্তটা বেশ কনফিউজিং লেগেছে … //ব্লগার হত্যা পুরোটাই রাজনৈতিক হত্যা। এটাকে এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই…// — সত্যি বলতে কি, আমি নিজেকে রাজনীতির মানুষ বলে মনে করলেও এবং যেকোন ঘটনার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সহ আলাপের পক্ষপাতী হওয়ার পরেও, আপনার এই ছোট করে “রাজনৈতিক হত্যা” বলে সিদ্ধান্ত টানায় সন্তুষ্ট হতে পারিনি … কোন ঘটনাই রাজনীতির বাইরে নয়, এমনকি এই একের পর এক নাস্তিক- মুরতাদ হত্যা বা নাস্তিক-মুরতাদ আখ্যা দিয়ে হত্যাও রাজনীতির বাইরে না, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ- এসবও না … কিন্তু সেই রাজনীতিটা কি? বিস্তারিত আলাপে যাওয়ার স্কোপ এখানে নেই- কিন্তু এটুকু বলতে পারি, একে কেবল যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের তথা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষে পরিচালিত “রাজনৈতি হত্যাকাণ্ড” হিসাবে প্রচার করতে চান- তাদের আসল রাজনীতির ভেতরেই ঢুকতে পারবেন না বোধ হয় … বর্তমান বৈশ্বিক কাঠামোতে “রাজনৈতিক ইসলাম” গভীর অধ্যয়নের বিষয়, সেই অধ্যয়ন ব্যতিরেকে সিদ্ধান্ত টানতে গেলে এমনই ভাসাভাসা আলাপই পয়দা হতে পারে …
@নাস্তিকের ধর্মকথা
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
এই ইস্যুতে দুই রকম লেখা দেখলাম। একরকম লেখায় লেখক বলতে চাচ্ছে যারা খুন হয়েছে তারা আসলে নাস্তিক না। এটা কোন বিষয় না মূল বিষয় হল যুদ্ধাপরাধীর বিচার।
আরেক রকম লেখায় লেখকরা বলতে চাচ্ছে; এখানে যুদ্ধাপরাধীদের কোন হিসাব নিকাশ নেই। নাস্তিক ব্লগাররা তাদের লেখালেখির জন্য খুন হচ্ছে। যারা এই দাবীটি করছে তারাই কিন্তু আবার বলছে নাস্তিক মেরে শেষ হওয়ার পর মডারেট কিংবা ছুপা নাস্তিকদের পালা আসবে। তাহলে তারা পরোক্ষাভাবেই স্বীকার করে নিচ্ছে খেলাফত কিংবা জঙ্গিরাষ্ট্র সৃষ্টি করার প্রথম কোরবানী হচ্ছে নাস্তিক ব্লগারা। ক্ষমতা কিংবা রাজনৈতিক হিসেব বাদে অনুভূতিই যদি একমাত্র বিষয় হতো তাহলে তো মডারেটরা শান্তিতে থাকার কথা। কারণ তারা তো নাস্তিকদের মতন লেখালেখি করছে না।
বাংলাদেশে ব্লগার শব্দটা এমন একটা পর্যায় চলে গেছে যেখানে ফারাবীর মতন কোন ছেলেকে যদি ব্লগার হিসেবে মানুষের সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় তাহলেও সেই নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। আমার মূল অবস্থানটা হল; ব্লগার হত্যার পেছনে শুধু ব্লগারদের লেখালেখি জড়িত না, এর সাথে মৌলবাদ বিরোধী দর্শন সেই সাথে এই হত্যার মিছিল শুরু হওয়ার জন্য গণজাগরণ, হেফাজতের উত্থান পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলেছে।
কিছুদিন আগের একটা সংবাদ উপস্থান করি, এই বছর ঢাকা সিটিকর্পোরেশন ঢাকা শহরকে পরিষ্কার রাখতে একটি চমৎকার নিয়ম চালু করে-কোরবানী দিতে হতে নির্দিষ্ট জায়গায়। অথচ এমন চমৎকার ও সুস্থ নিয়মের কথা শুনে আমাদের অসুস্থ সমাজের অসুস্থরা ক্ষেপে গেলেন। অনেকে অভিযোগ করে বলছে এটা কোরবানী’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! ৩০ অগাস্ট ২০১৫ তারিখে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছোট ছেলে মাওলানা হাসানাত আমিনী বলেন-ঈদের দিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন হবে। নির্দিষ্টস্থানে কোরবানী দেওয়ার নিয়ম করার প্রেক্ষিতে হাসানাত আমিনীর বলেন, দুই নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন নাস্তিকদের পরামর্শে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি আরো বলেন-পাড়ায় মহল্লায় পশু কোরবানির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে এদেশে কোরবানি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। তাই নাস্তিক-মুরতাদদের পরামর্শে ধর্মবিদ্বেষী নিয়মনীতি চালু করে কোটি কোটি মুসলমানদের ওয়াজিব বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
তাই আমার মূল বক্তব্য, ব্লগার হত্যার সাথে শুধু ইমানী দায়িত্ব জড়িত না সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট, খেলাফত সৃষ্টি, সাধারণ মানুষের মনে ভয় ভীতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যও জড়িত। শুধু গণজাগরণের কারণেই তারা মারা পড়েছে তা আমারও বক্তব্য না।
সুব্রত শুভ এবং অন্যান্য আলোচকরা, নিজস্ব কোনো মতামত ব্যক্ত না করায় এই আলোচনাটা ‘স্টেলমেট’ অবস্থায় চলেগেছে। আমি লেখকের অপেক্ষায় না থেকে নিজস্ব কিছু মতামত তুলে ধরছি। আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো পরিশুদ্ধ হবে সেই আশা থেকে।
১।
একটা জিনিস আমরা প্রায়ই ভুল করি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন শুরু হয়েছে অনেক আগে, সেই জাহানারা ইমাম এর হাত ধরে। পরবর্তিতে বছরের পর বছর তরুণ ব্লগাররা লেখালিখি, আলোচনার মাধ্যমে এটার পক্ষে যথেষ্ট জনমত সৃষ্টি করে। যার ফলে আওয়ামীলীগ সরকার এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শাহবাগ আন্দোলনের কারণে হয়নি।
শাহবাগ আন্দোলনটা শুরু হয়েছিলো, যখন হতাশ হয়ে এই তরুণরা লক্ষ্য করে যে আইনের ফাঁক গলে এই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বেরিয়ে যাবার বা লঘুদন্ড পাবার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্দোলনটা হয় এসব যুদ্ধাপরাধীদের ফাকফোকর গলে বেরিয়ে যাবার পথ বন্ধ করতে সরকারকে বাধ্য করার উপলক্ষ্যে। সময়টা জাতীয় নির্বাচনের সাথে কোইনসাইড করায় নানান সাতপাচ বিচার করে সরকারও এই আন্দোলনের উপর খড়গহস্ত না হয়ে, পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।
ঐ সময়ে শাহবাগে যে জনসমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছিলো সেটা সরকার চাইলেও দাবাতে পারত না। ফলে পক্ষ নেওয়াটাই সবচেয়ে সেরা পথ হিসাবে দেখা দেয় তাদের সামনে। কিন্তু সরকারের সামনে এই তরুণরা একটা নতুন অমিত শক্তি হিসাবে দেখা দেয়, যে শক্তি তাদের অচেনা। জামায়াত-বিএনপি ও তাদের সমমনা গোষ্ঠির কাছে তো এটা মুর্তিমান আতঙ্কের রূপ নেয়। ফলে জামায়াত পন্থি ইসলামিক জঙ্গিরা হত্যা লীলা শুরু প্রমিনেন্ট ব্লগারদের ধরে ধরে। এবং অবাক হয়ে দেখা যায় আওয়ামী সরকারও তাতে “নীরবতাই সম্মতিরলক্ষণ” দেখাচ্ছে!
কেন সরকারের এই নিস্ক্রিয়তা? কারণ, তারা চায় তারুণ্যের এই অমিত শক্তি বাগে থাকুক। নইলে অভ্যস্ততার রাজনৈতিক অচলায়তন ভেঙ্গে নতুন ভাবে ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে। যোগ্যতর নবীন নেতৃত্ব খুঁজতে হবে। সে ঝামেলা কে পোহাতে চায়? তারচে ব্লগারদের ৫৭ ধারা ফাঁদে আটকে ফেলাটাই আরামদায়ক।
২।
আর ব্লগার হত্যার পিছনের কার্যকরণটা স্রেফ ‘নাস্তিক হত্যা’ বা স্রেফ ‘গণজাগরণ কর্মীদের হত্যা’ এমন সরল রৈখিক নয়। বরং নানাবিধ ফ্যাক্টর এখানে এক সাথে কাজ করছে। আমার পর্যবেক্ষণ এবং সে থেকে উপনীত হাইপোথিসিস গুলো বলি-
যারা খুনোখুনিতে অংশ নিচ্ছে, অর্থাত কিলার সেলগুলো, এরা ধর্মীয়ভাবে মোটিভেটেড। “নাস্তিকদের মারতে হবে” এই নিয়ত থেকেই তারা খুনগুলো করছে।
কিন্তু কয়েকজন যুবক মিলে, আনসারুল্লাহর মত জঙ্গি দল গঠন করে খুনখারাবি পরিচালনার স্বপ্ন দেখলেও, বাস্তবে তাদেরকে অর্গানাইজ করে, প্রশিক্ষণ এবং রীতিমত সাংগঠনিক ভাবে খুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য, আরো বড় কোনো শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা লাগে। যেটা হয়তো জামায়াত বা সমমনা প্রতিষ্ঠিত দলরা দিচ্ছে। এর আরেকটা প্রমাণ রাজিব হত্যা, এবং জাতীয় পর্যায়ে আমার দেশের প্রোপাগান্ডা, আর হেফাজতে উত্থানের সিনক্রোনাইজেশন। এরা মিলেমিশে এইসব পরিকল্পনা না করে থাকলে এভাবে এটা সম্ভব হত না।
জঙ্গিবাদের চাষবাস অনেক আগে থেকেই হচ্ছিলো ভিতরে ভিতরে, শাহবাগ আন্দোলন স্রেফ তাদের কাজে নামার ট্রিগার হিসাবে কাজ করেছে। কারণ ওই সময় অনেক বড় বড় শক্তির এ থেকে লাভবান হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। প্রথম আলোর এক খবরে দেখা যায়, আনসারুল্লাহ নিয়মিত বিরতিতে ব্লগারদের হত্যা করে নিজেদের কর্মীদের চাঙ্গা রাখছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। তার মানে এদের মূল উদ্দেশ্য, এই দেশে আইএস এর মত বর্বর রাষ্ট্র গঠন। আর নাস্তিকদের হত্যা করাটা এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ। কারণ, হত্যার পর পরই জনমনে তাদের ব্যাপারে বিরূপ মনোভাব গড়ে তোলা যাবে সহজেই। আর মডারেটরা মুখে না বললেও, মনে মনে হত্যায় খুশিই হয়। এবং সরকারও সহজে এসব রোধে ব্যবস্থা নেবে না। নেতৃস্থানের কাপুরুষতা, অদূরদর্শিতা, এবং তথাকথিত ধর্মপ্রাণদের জনসমর্থন হারানোর ভয়ে।
তাই স্রেফ গণজাগরণ মঞ্চে ইনভল্ভড ছিলো বলে নাস্তিকরা খুন হচ্ছে তেমন আমি মনে করি না। ওটা এই ঘটনা প্রবাহ শুরুর ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছে, মূল কারণ নয়। আনসারুল্লাহরা কিন্তু একজন নার্সকেও হত্যা করেছে। যিনি সম্ভবত গণজাগরণ কর্মী ছিলেন না। এছাড়া আসিফ মহিউদ্দিনের উপর আক্রমন করেছে, যে প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের ‘মৃত্যুদণ্ডের’ বিরোধিতা করেছিলো।
এ দেশে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থানের পিছনে সবচেয়ে বড় বাধা মুক্তচিন্তার লেখকরা। যারা মৌলবাদের মূল ভিত্তিতেই আঘাত করে চলেছে প্রতিনিয়ত। কোনো প্রধান রাজনৈতিক দলেরই মৌলবাদের ব্যাপারে তেমন কোনো মাথা ব্যাথা নাই। জনগণ যদি মৌলবাদি হয়ে যায়, তারাও পকেট থেকে টুপি বের করে পরে ফেলবে, ঘনঘন হজযাত্রা করবে, মদিনা সনদের বুলি আউড়াবে এবং কোটিকোটি টাকা মৌলবাদীদেরকে ভেট দিয়ে বাগে রাখার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ, পরচলিত রাজনৈতিকদলগুলো তাদের কর্মকান্ড দিয়ে মৌলবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনিচ্ছুক কিংবা অপারগ। মূল ধারার লেখক, বুদ্ধিজীবিরাও গর্তনিবাসী। (মুহম্মদ জাফর ইকবাল সহ হাতে গোনা দুয়েকজনকে সাহস করে মৌলবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কিছু বলতে শোনা যায়। এবং এখন তাদের জীবনও হুমকির মুখে। পুলিশি প্রহরায় চলতে ফিরতে হচ্ছে!) বাকি থাকলো এই ব্লগাররা। যারা তাদের ক্ষুরধার লেখনি দিয়ে, মৌলবাদী চিন্তাচেতনার অসারতা তুলে ধরছে নতুন প্রজন্মের কাছে। এদেরকে সরিয়ে দিলে। আরেকটা ইসলামিক স্টেট গঠনের পিছনে আর কোনো বাধা থাকে না। কারণ বাকি সবাই টুপি-পাগড়ি, হিজাব-টিজাব পরে মনে মনে প্রস্তুত।
তাদের মনে প্রাণে বাজছে একটাই গান, “এসো হে আইএস এসো এসো…”
তবে এইসব সিরিয়াস ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ বাদ দিয়ে যেটা বলা যায় তা হলো:
ধর্মের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভালো মেডিসিন যেমন ধর্মগ্রন্থগুলো অর্থসহ পড়া। তেমনই, এইসব আইএস-ফাইএস এর বিরুদ্ধে সবচে ভালো ট্রিটোমেন্ট হচ্ছে, আইএস এর হাতে পুটুমারা খাওয়া। মুক্তচিন্তকদের মেরেটেরে, আনসারুল্লাহ যদি দেশে ইসলামিক স্টেট কায়েম করে ফেলে, শুধুমাত্র তখনই বাঙালি মুসলমানরা বুঝবে, কতো ধানে কতো চাল। তার আগে না।
একদম ঠিকঠাক বলেছেন । ১০০% একমত । “এতক্ষনে অরিন্দম কহিল বিষাদে” । এক্ষেত্রে অভিজীত রয়ের কথা বিবেচনা যোগ্য, উনি গনজাগরন মঞ্চের সমার্থক ছিলেন, আন্দোলনকারী ছিলেন না ।
আরও কিছু কথা– ব্লগার হত্যা রাজনৈতিক হত্যা এবং যারা রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে জড়িত তাদেরই সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা – এই মতামত মনেপ্রানে পোষন করে ধর্ম সমালোচনাকারী ব্লগাররা যদি আত্মতুষ্টিতে ভোগে তবে সমুহ বিপদ । আততায়ী কোন সময়ে দরজায় কড়া নাড়বে তার কোন ঠিক নেই । কারন “লেখকের শতেক দিন আর ঘাতকের একদিন” ।
নিহত সকল ব্লগার গণজাগরণ মঞ্চের সাথে জড়িত ছিল? অভিজিৎ রায় কিভাবে জড়িত ছিলেন? তিনি অনলাইনে যেভাবে একে সমর্থন দিয়েছেন সেভাবে তো লক্ষ লক্ষ মানুষ দিয়েছে। জামাত-শিবির বিরোধী বা ধর্মীয় রাজনীতি বিরোধী মানুষের সংখ্যা কি খুব কম? তাহলে কেন কেবল অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয়, ওয়াশিকুর, নীল?
একটু বিস্তারিত বলেন। এ বিষয়ে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে আসতে চাচ্ছি।
@সৈকত চৌধুরী
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুধু গণজাগরণের জন্য তারা খুন হয়েছে এটা বলা যাবে না। লেখালেখির কারণ যেমন জড়িত তেমনি এমন পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে গণজারণের বিপরীতে হেফাজতের উত্থান, শাপলাচত্বর সৃষ্টি, নাস্তিক হত্যা ওয়াজিব সবকিছুর সর্ম্পক আছে বলেই মনে করি।…. এবং সমাজে ব্লগারদের নেগেটিভ আকারে উত্থাপন করা হয় কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মধ্য দিয়েই।…….ব্লগ সর্ম্পকে ধারণা না থাকায় ব্লগাদের যেহেতু অধিকাংশ মানুষ নেগেটিভ আকারে দেখছে সেহেতু দেশের এই সংখ্যালঘুর সংখ্যালঘুদের হত্যা করলে ব্লগারদের পাশাপাশি যারা জঙ্গিবাদ বিরোধী কথাবার্তা বলছে তারাও ভয়ে চুপ হয়ে যাবে। অন্যদিকে নাস্তিক ব্লগার শোনা মাত্র কিছু মানুষের সমর্থন এবং অধিকাংশ মানুষ নো কমেন্টস পর্বে চলে যাবে।…. পত্রিকায় দেখলাম জঙ্গিদের চাঙ্গা রাখার জন্য ব্লগারদের হত্যা করা হচ্ছে। এর অর্থ বড় কিছু করার আগে গুটি কয়েক নাস্তিক ব্লগার হত্যা করে ইমানী জোশ বাড়িয়ে নিচ্ছে। ইমানী দায়িত্বের সাথে সাথে রাজনৈতিক মাঠ দখলের আগে জনমনে একটা ভয়ও ঢুকিয়ে দেওয়া যাচ্ছে।
অভিজিৎ রায় অন্যদের মতন লেখালেখির মাধ্যমে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে যুক্ত ছিলেন। অভিজিৎ রায়ের মতন বটবৃক্ষ উপড়ে ফেলার চেষ্টা আজ হোক কাল হোক তারা করতো।তবে অভিজিৎ রায় টার্গেটে পড়ার কয়েকটি কারণ আছে।
১. বাংলাদেশের তরুণদের একটা অংশ অভিজিৎ রায়ের চিন্তা ও লেখালেখির মাধ্যমে প্রভাবিত হচ্ছে।
২. দেশের বাহিরে বসে দেশের নাস্তিকদের জন্য সংগঠনিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা। ব্লগা চালোনো থেকে শুরু করে ও সবার মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা।
৩. অনলাইনে লেখক বানানোর ক্ষমতা। (যা অনলাইনের অনেক বড় লেখদেরও নেই)
@ সুব্রত শুভ,
এর পরে আর বলার কিছু থাকেনা, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। কিছু গোপন কিছু প্রকাশ এমনি ভাবেই চলছিল, তারপর পাঠকদের মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেলেছেন।
এর ব্যাখ্যাটা কী?
তো এখানে রাজনীতি কই?
‘হুমায়ুন আজাদের হত্যার পর মানুষ মিছিল করে প্রতিবাদ করে আর অভিজিত খুনের সময় মানুষ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে’ এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন-
তো মানুষকে বুঝানো যায় কী ভাবে বা আপনার ভাষায় ( অন্য একটি লেখায়) মানুষকে প্রতিবাদী মিছিলে আনা যায় কীভাবে?
@আকাশ মালিক
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এক. গণজাগরণ না হলেও হয়তো ব্লগার মারা পড়ত কিন্তু এখাবে হয়তো হত্যার নৌকা বাতাস পেত না। এর জবাব তো লেখার মধ্যেই আছে।
দুই. ধরেন একুশে অগাস্টে বাংলাদেশে গ্রেনেড হামলা হয়। তো হামলার করে জঙ্গিরা। কারণ হল ইসলামের দুশমন শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলবে (তাদের বক্তব্য আমার না), তো এখানে কী রাজনৈতিক কোন সর্ম্পক নেই?
তিন. আমরা (নাস্তিক ব্লগাররা) ফেইল করছি, গণজাগরণ এখন একটা মৃত ঘোড়া এই সত্যটা স্বীকার করলে কী অপরাধ হয়ে যাবে? চার বছর আগেও শাহবাগে মুক্তমনা ব্লগের ব্যানারে আপনি শাহবাগে দাঁড়াতে পারতেন। এখন কাউকে ডাকলেও নিরাপত্তার কারণে উপস্থিত হবে না। অভিজিৎ রায় মারা যাওয়ার কিছুদিন পর একটা বিজ্ঞান সেমিনার হয়। পত্রিকায় নিউজ দেখলাম আলোচক বা বক্তারা সেমিনারে আসে নাই নিরাপত্তার ভয়ে!
সহজ বাংলা হিসাব, আমার দেশ পত্রিকা যখন ব্লগার মানেই নাস্তিক, গালিবাজ এমনটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করে এর বিপরীতে আমরা শক্ত অবস্থান নিতে পারি নাই। এখানেই আমরা ফেইল করছি। এটা কেউ মানুক বা না মানুক। আমি ব্যর্থতা স্বীকার করি। গণজাগরণ মঞ্চের লক্ষ লক্ষ লোক আনার সাফল্য যেমন ছিল তেমনি লোক চলে যাবার ব্যর্থতাও তাদের আছে। তেমনি আছে ব্লগারদের। এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই।
@ সুব্রত শুভ,
অন্য একটি ব্লগে একজন প্রশ্ন রেখেছিলেন-
একজন উত্তর দিয়েছে এরকম-
কত প্রকার ধানাই পানাই যে দেখলাম জঙ্গীদের বাঁচানোর জন্যে। জঙ্গীবাদের উৎস সন্ধানে সারা দুনিয়া চষে তারা পান আমেরিকার সৃষ্টি আলকায়েদা, শাহবাগের সৃষ্টি হেফাজত, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, জামাত শিবির। আর এখন কেউ কেউ সরাসরি বলছেন এর জন্যে দায়ী স্বয়ং খুন হওয়া নাস্তিকরা বিশেষ করে ইসলামের ধর্মগ্রন্থের সমালোচনাকারীরা। এই কোপাকুপির শুরুটা নাকি করেছে নাস্তিকরা নিজে। আচ্ছা কোপাকুপির ইতিহাসটা জানতে অন্তত ‘রঙ্গীলা রাসুল’ পর্যন্ত তো যাবে। আমরা তো জানি এই খুনাখুনির ইতিহাস অনেক লম্বা, বাংলাদেশের জন্মের অনেক অনেক আগের। দাউদ হায়দারকে যখন দেশছাড়া করা হয় তখন ব্লগার শব্দের জন্মই হয় নি। যুদ্ধাপরাধীর বিচারট্রাইবুন্যালও ছিলনা শাহবাগও ছিলনা। দাউদ হায়দার, প্রফেসার আলাউদ্দিন, তাসলিমা নাসরিন, আরজ আলী মাতুব্বর, আহমেদ শরিফ, কবি শামসুর রহমান, হুমায়ূন আজাদ, রাজিব, অভিজিৎ, অনন্ত, ওয়াশিকুর, নীলাদ্র সবাই সন্ত্রাসী ইসলামের শিকার। উলামা লীগ যে আশিজন লোকের তালিকা দিয়েছে তার সবই ইসলামের কারণে, ইসলামের জন্যে হুমকি মনে করে। কোনটা রাজনৈ্তিক স্বার্থে, কোনটা সম্পত্তির কারণে আর কোনটা ধর্মীয় কারণে খুন এর মধ্যে পার্থক্য করা কি খুবই কঠিন? বলা হয়, ব্লগে ইসলামের সমালোচনা তথা ১৩ সালের আগে নাকি রাস্তায় কোন নাস্তিক কারো দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষ দৌড়ে আসতো নাস্তিককে বাঁচাতে আর এখন মানুষ দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে। কারণটা কী? কারণ আগের নাস্তিকেরা ইসলামের সমালোচনা করতেন না এখনকার নাস্তিকেরা করে। বিশ্বাসের ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ এমনই বে-আক্কেল হতে পারে। রাস্তায় একজন মানুষ সন্ত্রাসীর কবলে পড়লে ঐ বিশ্বাসী বুঝে ক্যামনে যে লোকটা নাস্তিক? আমি ঐ প্রশ্নকারীর উত্তরে বলেছিলাম-
@আকাশ মালিক
সব আমেরিকার সৃষ্টি, জঙ্গিরা বোকা পাঠা, পুঁজিবাদী সিস্টেমের ফল এসব কথাবার্তা আসলে দায় এড়ানো কথাবার্তা। ইসলামে কিতাবের ব্যাক্ষা একেকজন একেজ রকম দেয়। সেই অনুযায়ী জঙ্গিহামলা, কিংবা নাস্তিক জবাই এগুলো কিতাবের ব্যাক্ষা অনুযায়ী পাওয়া সম্ভব। যেমন- ইহুদি নাসাদের ঘৃণা করতে কোরানে বলা আছে। বিধর্মী কলতের ঘটনা বর্ননা করা ও হুমুকের কথা বলা আছে। কেউ এই এটাকে বলে ওটা ঐ যুগের প্রেক্ষাপটে আবার কেউ ব্যাক্ষা করে কোরান যেহেতু চিরন্তন সেহেতু এই কথাবার্তাগুলো সারা জীবনের জন্য। এখন এই রিডিং কিংবা ব্যক্ষা যে যার মতন দিচ্ছে।
ভারতের বজরঙ্গী ভাইজানরা পাঁচজন মানুষকে হত্যা করেছে। নাস্তিকদের মেরে ফেলার মতন কোন কিছু গীতায় নেই (বর্তমানে সমানতীদের একটা বড় অংশ এটাকেই একমাত্র আপডেট ভগবানের কিতাবভাবে) …… সক্রেটিস থেকে আরজ আলী, ইসলাম থেকে বৌদ্ধ ধর্মের মৌলবাদীদের দ্বারা সকল মুক্তচিন্তার মানুষ কম বেশি নাজেহাল হয়েছে। সেই হিসাবে খ্রিস্টানদের পরেই ইসলামের অবস্থান। হয়তো ইসলাম খুব দ্রুত তা ছাড়িয়ে যাবে…..
হেফাজতের উত্থানটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। রাজীব হায়দারের মৃত্যুর পর থেকে হেফাজত আরো ফুলে ফেঁপে উঠে। কিন্তু এই ব্লগার কিলিংগুলো কী সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থহীন তা বিবেচনা ও আলোচনার সাপেক্ষে এই লেখার অবতারনা। খুনের কারণ হিসেবে লেখার লেখির সাথে সাথে কিছুটা হলেও রাজনৈতিক সর্ম্পক আছে এমনটাই বোধ করি………….. একটা খেয়াল করে দেখবেন এখন নাস্তিক ইস্যু কিংবা ইসলামের হেফাজতের ইস্যুতে বিভিন্ন ইসলামিক দল ফোকাসে আসার চেষ্টা করছে।
সুব্রত শুভ
আমারো মনে হচ্ছে আপনি কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেই তাতে পরিষ্কার নন বলে বলতে পারেননি, বা ইচ্ছে করেই বলেননি। আপনি কী বলতে চাচ্ছেন যে সাম্প্রতিক এই নাস্তিক হত্যাগুলোর পিছনে শুধুই ‘সাধারণ’ কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে নাকি বলতে চাচ্ছেন যে ২০১৫ তে যতগুলো নাস্তিক হত্যা হয়েছে তা শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যুর কারণে হয়েছে, না হলে হতো না? এই ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করলে আলোচনা করতে সুবিধা হতো। এইটা নিয়েতো তর্কের ঝড় বয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং অন্যান্য জায়গায়, আমরাও না হয় এখানে আমাদের অবস্থানটা নিয়ে আলোচনা করতে পারতাম।
@বন্যা আহমেদ
প্রিয় বন্যা আহমেদ আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
গণজাগরণ না হলে ব্লগার হত্যা হতো না, এমনটা আমি মনে করি না। কিন্তু ব্লগার হত্যয় গণজাগরণের পর ব্লগারদের বড় পর্দায় আগমণ, মঞ্চের বিরোধীতা করতে গিয়ে ‘আমার দেশ’ পত্রিকা ব্লগারদের যেভাবে নেগেটিভ চরিত্রে হাজির করেছে, এর পর হেফাজতের আন্দোলত ও তান্ডব এগুলো ব্লগার হত্যার পথ আরো সহজ করে দিয়েছে। এমনটাই আমি মনে করি। হুমায়ুন আজাদ আহত হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ করেছে ব্লগাদের বিষয়ে তেমনটি আমরা দেখি নি। এর প্রধান কারণ দুইটা হতে পারে; এক. আমাদের দেশ পত্রিকার কারণে সাধারণ জনগণ ব্লগাদের খুব ভাল চোখে দেখছে না। দুই. মানুষ এই বিষয়ে কথা বলতে নিরাপদ বোধ করছে না।
গণজাগরণ না হলেও হয়তো ব্লগার মারা পড়ত কিন্তু এখাবে হয়তো হত্যার নৌকা বাতাস পেত না। এমনটাই আমার মনে হয়।
বেশ কিছু ব্যাপার নিয়ে খুব দৌড়ের মধ্যে আছি, তাই খুব বেশী কিছু লিখছিনা এখানে। এ নিয়ে আরেকটু বিস্তারিততভাবে লেখার ইচ্ছে রইলো অদূর ভবিষ্যতে। তবে আমিও এব্যাপারে দুই চরমপন্থী অবস্থান দেখে দেখে হাপিয়ে উঠতে শুরু করেছি। আমরা এত সহজে, মতের মিল না ঘটলেই, চরিত্র নিয়ে টানাটানি শুরু করি, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নোংরা কন্সপিরেসি থিওরি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিতে শুরু করি যে কখনো কখনো আসল প্রেক্ষাপটটার কথাই ভুলে যাই। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে চিন্তার কোন গভীরতা ছাড়াই এত সহজে আজকাল সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়া যায় বা পারস্পরিক চরিত্রহনন করা যায় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর গুরুত্বই যেন হারিয়ে যেতে থাকে । সিদ্দ্বার্থ যেমন বলেছে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শত্রুকে সব সময় বড় করে দেখানো হয়’সেটা বোধ হয় ঠিকই। যারাই আমাকে এ নিয়ে কিছু বলতে অনুরোধ করেছেন বা অন্যপক্ষের আক্রমণে উতলা হয়ে উঠেছেন তাদের সবাইকেই দেখেছি উল্টো পক্ষকে বিশাল বড় কোন একটা শত্রুবাহিনী হিসেবে দাঁড়া করিয়ে ই-যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন ।
সে যাই হোক, আমি নিজেও মনে করি যে ধর্ম ব্যাপারটা সবসময়েই রাজনৈতিক কোন প্রেক্ষাপটের সাথে জড়িত, শাহবাগ আন্দোলন বা গণজাগরণ মঞ্চের কারণে রাজীব হত্যার মধ্যে দিয়েই সাম্প্রতিক নাস্তিক নিধন প্রক্রিয়াও হয়তো ট্রিগারড হয়েছে। সে কথা আমি ভল্টেয়ার লেকচারেও উল্লেখ করেছিলাম। একারণে এবং তার উপরে প্রোগ্রেসিভ চিন্তার ব্লগাররাই যেহেতু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন তাই একে একমাত্র কমন ফ্যাক্টর হিসেবে প্রমাণ করতে চাওয়ার প্রচেষ্টা কী সঠিক? যারা বলতে চাচ্ছেন যে এ বছরের নাস্তিক খুনগুলো শুধুমাত্র শাহবাগ আন্দোলনের সাথে আমি সংশ্লিষ্টতার জন্যই ঘটেছে তাদের সাথে দৃঢ়ভাবেই দ্বিমত পোষণ করছি। এদের অনেকেই আবার বলছেন, ‘নাস্তিকদের খুন করা ঠিক না, কিন্তু…’, বা নাস্তিকদের ‘সীমা লঙ্ঘন’ না করে লেখালেখির পরামর্শ দিচ্ছেন বা এই খুন হওয়া ব্লগারদের মিথ্যাভাবে ‘নাস্তিক’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে বলে দাবী করছেন। আমি মনে করি তাদের এই মত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় নাস্তিক হত্যাকে জায়েজ করার পক্ষেই কাজ করছে। তারা একবারো এগিয়ে এসে বলছেন না যে, নাস্তিকরাও তাদের মতই দেশের নাগরিক, তাদের মত নাস্তিকদেরও সমানভাবে বাঁচার অধিকার আছে, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার আছে। আমার মতে এটাই হওয়া উচিত মূল বক্তব্য।
‘পবিত্র’ আনসারুল্লাহ বাহিনী চাপাতি চালিয়ে এবছর যে কটা নাস্তিক নিধন করেছে সেগুলো তারা ‘নাস্তিক’ বলেই করেছে। এর পিছনে কী ধরণের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে সেটা বোধ হয় এখনো আমরা পরিষ্কারভাবে জানিনা। এরা ক্রমবর্ধমান ইসলামী জিহাদী জোশের কারণেই মৃত্যুর শিকার হয়েছেন নাকি মহান ইসলামিক খেলাফতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্লুপ্রিন্টের অংশ হিসেবে খুন হয়েছেন, নাকি এর পিছনে অন্য কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে তা কিন্তু আমরা সঠিকভাবে নির্ধারণ করে উঠতে সক্ষম হইনি এখনো। আমি ব্যক্তিগতভাবে একদিকে যেমন ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি (কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা না রেখে), ঠিক সেভাবেই আমি আবার এ বছরের ব্লগার হত্যাকান্ডগুলোকে ‘নাস্তিক হত্যা’ বলেই চিহ্নিত করতে চাই যতক্ষণ পর্যন্ত না এর পিছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোকে সঠিকভাবে উন্মোচিত করা যাচ্ছে।
নাস্তিক ব্লগার হত্যা হলে তারা প্রকৃত নাস্তিক না কিংবা ভদ্র নাস্তিক এই ট্রামগুলোর বিরোধী। কারণ এই কথাগুলোর মাধ্যমে আমরা পরোক্ষভাবে বলতে চাচ্ছি জঙ্গিরা ভুল করে একটা আস্তিককে নাস্তিক হিসেবে মেরে দিল। তাহলে প্রশ্ন আসে নাস্তিক হলে বা কেউ ঘোষণা করলে তাকে মেরে ফেলা কিংবা শান্তি দেওয়া জায়েজ কিনা।…. ব্লগার নাস্তিক ছিল (যেহেতু সে নিজে ঘোষনা দিয়েছে) এই সত্যটা এড়িয়ে যাওয়া মানে একটা সত্যকে ঢেকে আপোষের পথে হাঁটার চেষ্টা করছি।
সুব্রত শুভ,
ধন্যবাদ আলোচনা পোস্টটার জন্য। ইতিহাস ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর উদাহরণ দিয়ে আপনি মূলত আলোচনা করতে চেয়েছেন সাম্প্রতিক মুক্তমনা, নাস্তিক ব্লগার হত্যার পেছনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিশেষ করে শাহবাগ আন্দোলনের (কয়েক জায়গায় গণজাগরণ মঞ্চ উল্লেখ হয়েছে) সাথে তাদের সম্পৃক্ততা মূখ্য কিনা। আপনার এর আগে ব্লগার হত্যার পেছনে উগ্র নাস্তিকতার দায় আছে কিনা সেটাও মুক্তমনায় বেশ আলোচনা করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলো। সেই পোস্টের মতো আমিও আশা করি এই পোস্টেও আমরা বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলে বিষয়টা সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা করতে পারবো।
পোস্টটা পড়তে পড়তে কিছু বিষয় টুকে রাখছিলাম আলোচনার জন্য। তবে শেষ প্যারায় এসে মনে হলো, উপসংহারে আপনি নিজেও স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন নি। পোস্টটা তাই ‘ব্লগার হত্যায় যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যু’ নিয়ে হলেও আপনি উপসংহারে বলেছেন- তাই ব্লগার হত্যা পুরোটাই রাজনৈতিক হত্যা। নাস্তিক ব্লগার এবং যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যু দুইটা বিষয়ই উপসংহারে অনুপস্থিত। ইসলাম একটি রাজনৈতিক ধর্ম, জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিপক্ষকে হত্যা তাদের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান -এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু এই পোস্টে কী এটা আলোচ্য বিষয় ছিলো?
জাফর ইকবাল স্যারের ভাষ্যমতেই- নাস্তিকতার জন্য নয়, যে কয়জন ব্লগার খুন হয়েছেন তারা গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ততার জন্যই খুন হয়েছেন।– এই অবস্থানকে আপনি সঠিক মনে করেন কি করেন না? যদি করে থাকেন কেনো করেন, যদি না করে থাকেন কেনো করেন না?
@রায়হান আবীর
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
জবাব,
জাফর ইকবাল স্যারের এই মতের সাথে একমত না। প্রধান কারণ; স্যার ওখানে বোঝাতে চাচ্ছেন যারা মারা গেছে তারা নাস্তিক নয়, তাদের বরং নাস্তিক বলা হচ্ছে। এই বিষয়ে তীব্র আপত্তি আছে বিশেষ করে নিহত ৬ ব্লগারের বিষয়ে। হত্যার পেছনে তাদের লেখা-লেখির বিষয় যেমন জড়িত আছে তেমনি এই হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি হয় গণজাগরণের পর হেফাজতের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
শুধু গণজাগরণের জন্য তারা খুন হয়েছে এটা বলা যাবে না। লেখালেখির কারণ যেমন জড়িত তেমনি এমন পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে গণজারণের বিপরীতে হেফাজতের উত্থান, শাপলাচত্বর সৃষ্টি, নাস্তিক হত্যা ওয়াজিব সবকিছুর সর্ম্পক আছে বলেই মনে করি।…. এবং সমাজে ব্লগারদের নেগেটিভ আকারে উত্থাপন করা হয় কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মধ্য দিয়েই।…..তাই এই হত্যাগুলোকে রাজনৈতিক গণ্ডির বাহিরে নিয়ে যাওয়ার যেমন সুযোগ নেই। কারণ ব্লগার খুনের জন্য যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে কী গণজাগরণ, হেফাজতের উত্থানের কোন সর্ম্পক নেই?
” ব্লগার হত্যা পুরোটাই রাজনৈতিক হত্যা।— — — আলোচনা না হলেও এদের মৃত্যুর কারণ যে গণজাগরণ মঞ্চ এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাওয়া তা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।”
১৯৭১ এর ১৪ ই ডিসেম্বরের কুখ্যাত হত্যাযজ্ঞের সাথে সাদৃশ্য আছে।
গঠনমূলক , শক্তযুক্তির লেখাটি পড়ে মনে হল আপনি সমস্যার মূলে হাত দিয়েছেন।
আপনার নিরাপদ সুস্থ জীবন কামনা করি।
@কাওসার
আপনার সুস্থ ও নিরাপদ জীবন কামনা করি।