ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাগের পর দুই দেশের মানুষকে শুধু ধর্ম পরিচয়ের কারণে প্রায় ২০ মিলিয়নের অধিক মানুষ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এতো বেশি মানুষের দেশ ত্যাগের রেকর্ড পৃথিবীর আর কোথাও নেই। পূর্ব বাঙলা বর্তমানে যা বাংলাদেশ সেই অঞ্চলের একটি বড় অংশ ৪৭-এ দেশ ত্যাগ করে পশ্চিম বঙ্গে আশ্রয় নেয়। অদ্ভুত বিষয় হল, পূর্ব বাঙলা থেকে আগত শরণার্থীর সুযোগ-সুবিধার প্রতি কংগ্রেস সরকার ততটা আন্তরিক ছিল না। যতোটা ছিল পাঞ্জাব কিংবা পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থী মানুষগুলোর প্রতি। এ কথা সত্য পূর্ব বাঙলার মানুষ পাঞ্জাবের মতন এতো রক্ত দিতে হয় নি। তবে পূর্ব বাঙলায় যে রক্তপাত হয় নি তা বলা যাবে না। কারণ কলকাতার বিভিন্ন ঘটনা কিংবা গুজবের জের ধরে কয়েক লাখ মানুষের উপর দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়েছে। যেমনটা হয়েছে পশ্চিম বাঙলার মুসলিমদের উপর। বাংলাদেশের ৭১স্বাধীনতা যুদ্ধে ১০ মিলিয়নের উপর মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় সবাই নিজের বাস ভূমিতে ফিরে আসে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ত্যাগের স্রোত ৪৭ থেকে শুরু হলেও সেই স্রোত আজও থামে নি। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের নীরব দেশ ত্যাগে তা প্রমাণ হয়। এছাড়া ভারতে কিছু হলে এই প্রতিক্রিয়ার ঝড় এই দুই দেশের সংখ্যালঘুদের উপর দিয়ে যায়। যেমন-ভারতের এক বাবরি মসজিদের বিপরীতে বাংলাদেশে কয়েক হাজার মন্দির ভাঙার ঘটনা ঘটে।
গত সপ্তাহে বিবিসি’র খবরে পড়লাম স্লোভাকিয়া মুসলমান শরণার্থী গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।তাঁরা সিরিয়া থেকে শুধুমাত্র খ্রিস্টান শরণার্থী গ্রহণ করবে। স্লোভাকিয়া জানিয়েছে যে, মুসলমানরা যে দেশে থাকে সে দেশকে নিজের মনে করতে পারে না। আরও ব্যাখ্যা চাইলে জানিয়েছে যে, স্লোভাকিয়ায় মসজিদ নেই তাই মুসলমানরা কমফোর্ট ফিল করবে না। স্লোভাকিয়া এই সিদ্ধান্ত অমানবিক। কারণ বিপদগ্রস্ত কোন মানুষকে ধর্ম দেশে আশ্রয় দেওয়া একটি অমানবিক পন্থা। তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আলোকে কেন এমন পথে স্লোভাকিয়া হাঁটল তা কিছুটা আলোচনা করা যেতে পারে। মাস তিনেক আগে যুক্তরাজ্য নতুন আইন ঘোষণা করে। এই আইনের ফলে অনেক বাংলাদেশীর যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বার্ষিক ১৩ হাজার পাউন্ডের পরিবর্তে যুক্তরাজ্যে কাজ করবার ভিসায় দেখাতে হবে ৩৫ হাজার পাউন্ড। এছাড়া বর্তমান আইনের ফলে যুক্তরাজ্যে পড়তে গিয়ে থেকে যাওয়াটাও এখন কঠিন হয়ে পড়বে!
কয়েক মাস আগে বাংলাদেশীসহ আট হাজার রোহিঙ্গা সাগরে ভেসে মারা যাচ্ছিল। ফিলিস্তিন, ইরাকের মানুষগুলোর জন্য প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি করলেও এই অসহায় মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয় নি ইন্দোনেশিয়ার সরকার। এমনকি জাতিসংঘের আহ্বানে করবার পরও অস্থায়ী ভাবে নিজ ভূখণ্ডে একটু মাথা গোঁজার ঠাই দিতে তাদের আপত্তি ছিল! সাহায্যে হাত প্রথম বাড়ায় ফিলিপাইন। ঠিক একই সময়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কয়েকদিন আগে ঘোষণা দিয়েছে আগামী দুই বছরে প্রায় ২০,০০০ শরণার্থীকে তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিবে । এর জন্যে তাঁরা বাজেট বরাদ্দ রেখেছে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর। এইখানে উল্লেখ্য যে এই শরণার্থীদের একটা বড় অংশ আসছে অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি হতে ।
ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে জার্মানি, সুইডেন। এখনো দিচ্ছি। জার্মানি আশ্রয় দেয় প্রায় দশ লাখ! দুই দিন আগে জার্মানির একটি আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে সারা মিডিয়ায় তোলপাড় হচ্ছে। কোন এক মুসলিম শরণার্থী তার সঙ্গে একটি কোরান নিয়ে এসেছে। সেই একই আশ্রয়কেন্দ্রের ভিন্ন কোন ধর্মালম্বীদের কেউ একজন সেই কোরান নিয়ে টয়লেটে রেখে এসেছে। এরপর মুসলিম শরণার্থীরা সেই আশ্রমে থাকা ভিন্ন ধর্মালম্বী শরণার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে তাদের নাজেহাল করছে, পেটাচ্ছে, ভাংচুর করছে- তথ্যসূত্র- সেটডিএফ টিভি চ্যানেল। এই ঘটনা প্রচার হওয়ার পর থেকে এসব শিশুদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারনা হয়েছে, জার্মানিতে শান্তিতে থাকার দিন শেষ হয়েছে। এসব শরণার্থীরা জার্মানিকেও সিরিয়ার মতো যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে পরিণত করবে।
জার্মানির জার্মানদের মতন ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোও এই শরণার্থী মানুষগুলোর উপর ভেতরে ভেতরে রুষ্ট হচ্ছে। এর মূল কারণ- যারা আসে তাদের বড় অংশটি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মুসলিম। এদের মধ্যে প্রচণ্ড ধর্মানুভূতি বিদ্যমান এবং বেশির ভাগই ধর্ম-কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করে। এই বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে লেখে একটা সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হয় তাহলো বেশির ভাগ মানুষ ভাবে শুধু বদনাম করার জন্য এই লেখার অবতারণা। যারা এমনটি ভাবছেন তাদের স্মরণে রাখা ভাল যে, যুক্তরাজ্যে নতুন আইনের ফলে ভুক্তভোগী শুধু ধর্মান্ধরা নয় ভুক্তভোগী হবো ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই। চিন্তা-চেতনায় পিছিয়ে পড়া, অনুন্নত চিন্তা ভাবনার সাথে জিহাদি জোশের সংমিশ্রণে এদের একটা গ্রুপ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করে। সবাই যে অপরিবর্তিত হয় না তাও না। অনেকে ইউরোপিয়ানদের মতনই জীবন-যাপন করেন। কিন্তু একটা বড় অংশ কখনো নিজেদের পরিবর্তন করতে চায় না। উল্টো সামাজিক সংকট সৃষ্টি করে সবার জন্য বিপদ ডেকে আনে।
এক সাংবাদিকের মুখে সুখে শুনলাম ৭১ সালে নরওয়েতে অনেক পাকিস্তানী আশ্রয় পায়। সে সময় নরওয়েতে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ পাওয়া যাচ্ছিল। অন্যদিকে তাদের অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। ৭১এর যুদ্ধ ও পাকিস্তান সেনা বাহিনীর অত্যাচার বর্ণনা করে নিজেদের পশ্চিম পাকিস্তানের আটকে পড়া বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের অনেকে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। নরওয়ের সরকারও তাদের নিয়ে আসে। এছাড়াও এই দেশটি মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষগুলোকেও অতীতে আশ্রয় দিয়েছে। মজার বিষয় হল গত বছর নরওয়েতে ধর্ষকের তালিকায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের অবস্থান সবচেয়ে উপরে।
‘রেড ক্রস’ সংস্থাটির সাহায্য সবচেয়ে বেশি নেয় আশ্রয়প্রার্থী মুসলিমরা। অথচ এই রেড ক্রস সংস্থাটি মুসলিম দেশগুলোতে ‘রেড ক্রিসেন্ট’ নামে কার্যক্রম চালাতে হয়। ক্রস যেহেতু খ্রিস্টানিয় প্রতীক সুতরাং অনুভূতি প্রবণ মুসলিম দেশগুলো ক্রস নামটি ঢুকতে দেয় নি। অথচ এই রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠানগুলোতে খ্রিস্ট ধর্মের কোন প্রচার কখনো দেখি নি। যাই হোক আমাদের ক্ষুদ্র মনের প্রতিফলন রাষ্ট্রীয় আইনেও প্রতিফলন হয়। সুইজারল্যান্ড-এর পতাকায় ক্রস আছে। সৌদি আরবের পতাকায় একটি বড় তলোয়ার আছে। তলোয়ার কতোটুকু মানবিকতার প্রতীক হয়ে উঠে তা জানা নেই। এছাড়া সৌদি আরবে কোন অমুসলিমদের উপাসনালয়, স্কুল প্রতিষ্ঠান করার বিষয়ে নিষেধ আছে। এই নিয়ে কারো কোন আপত্তি নেই। যাই হোক আশ্রয় প্রার্থী মুসলিম জনগোষ্ঠীর এক অংশ দাবী করে বসল সুইজারল্যান্ডকে তার পতাকা বদলাতে হবে! কারণ এতে ক্রস আছে যা তাদের ধর্মানুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক! এই ঘটনায় লন্ডনের এক মেডিক্যাল স্কুলের ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। মেডিক্যাল স্কুলে ১৩জন মুসলিম ছাত্র বিবর্তনবাদ পড়ানোর প্রতিবাদে ক্লাস করবে না। তিন বছর আগে এমন একটা নিউজ দেখেছিলাম। সম্ভবত ২০১২ সালে কানাডা ঘোষণা করল যে, নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় অবশ্যই মুখ দেখাতে হবে। লক্ষ্য করুণ এখানে কানাডা বোরকা, হিজাব কোন কিছুই নিষিদ্ধ বা নিষেধ করে নি। শুধু বলেছে, নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় মুখ প্রদর্শন করতে হবে। এর প্রতিবাদে অনেকে জিহাদি জোশে সমালোচনায় ফেটে পড়লেন।
যুক্তরাজ্যের পর সুইডেন হল দ্বিতীয় দেশ যেখান থেকে অধিক সংখ্যক তরুণ-তরুণী সিরিয়ায় যুদ্ধ করতে গেছে। সুইডেনের পতাকা নিয়েও কিছু জিহাদি গ্রুপের আপত্তি আছে। এছাড়া সুইডেনের শহরগুলোতে মুসলিমরা মসজিদগুলোতে ইউরোপের সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা করতে শেখায়। ইংল্যান্ডের মতন জার্মানির পুলিশ অফিসেও অসংখ্য নিখোঁজ তরুণ, তরুণীর ছবি ঝুলছে। যারা জার্মানি থেকে মিসিং। মজার বিষয় হল সবাই জানে এরা সিরিয়ার আইএসআইএল এ যোগ দিতে গিয়েছে কিন্তু এরা যখন ফিরে আসছে তখন বাঁধা দিতে পারছে না। কারণ আইনগত-ভাবে আপনাকে বাঁধা দিতে হলে রাষ্ট্র বা পুলিশকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি ISIL এ যোগ দিয়েছেন। সে সুযোগ যেহেতু নেই (তদন্ত করতে তো আর সিরিয়ায় যাবে না কেউ) সেহেতু তারা ফিরে আসার সুযোগও পাচ্ছে। আইএসআইএল হুংকার দিয়েছিল যে, আশ্রয়প্রার্থী মানুষগুলোর মাধ্যমে তারা তাদের সদস্য ইউরোপের দেশগুলোতে ঢুকিয়ে দেবে। মজার বিষয় হল ইউরোপেই এখন আইএস-পন্থী তরুণ-তরুণীর জন্ম হচ্ছে। আর এতে সহায়তা করছে মসজিদ ও বিভিন্ন ইসলামিক সংস্থা। ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোতেও জিহাদি পন্থীদের কারণে সামাজিক সংকট শুরু হয়েছে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম ইতালি। যেখানে খ্রিস্টানদের চার্চ আক্রমণের মতন ঘটনাও ঘটেছে।
মুসলিম দেশগুলো কোনটাই মানুষের বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না। এছাড়া লেখালেখির কারণে অসংখ্য মানুষকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়, হত্যা করা হয়, লেখা-লেখির কারণে জেল খাটানো হয়। পিছিয়ে পড়া ধর্মান্ধ-গোষ্ঠী যখন ইউরোপ কিংবা অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রে আশ্রয় নেয় তারা ত্যাগের সাথে সাথে নিজেদের ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি কোনটাই ত্যাগ করে আসতে পারে না। ফলে ইউরোপের রাস্তায় মাঝে মধ্য শরিয়া আইন চাই, গণতন্ত্র মানি না! এমন পোস্টারের দেখা মেলে। এছাড়া রাস্তায় রাস্তায় অনেকে ধর্ম প্রচার করে বেড়ায়। এই সংকটটি যুক্তরাজ্যে আরও বেশি মাত্রায় জেঁকে বসেছে। সেখানে কিছু এলাকায় জোর করে বোরকা পরা ও এই এলাকায় মদ খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে! ফলে ভবিষ্যতে একটা বড় আকারে সংকট হিসেবেও এরা হাজির হচ্ছে।
লেখাটা পড়ে অনেকের হয়তো মনে আসতে পারে লেখাটা মুসলিম বিরোধী লেখা। এখানে মূলত আশ্রয় প্রার্থীদের চিত্রটা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। দশ লক্ষ কেন এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিলেও কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। যদি তারা মানুষের স্বাধীনতা, সহনশীলতা বিশ্বাসী হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য কিছু অংশের জন্য বদনামের ভাগীদার হচ্ছে সবাই। আজ যুক্তরাজ্য, স্লোভাকিয়া তার নীতি পরিবর্তন করেছে হয়তো এমন সংকটের মুখোমুখি হয়ে অন্য দেশগুলো তাদের নীতির পরিবর্তন আনবে। কারণ স্থানীয় মানুষের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থী মানুষগুলোর প্রতি এক ধরনের নেতিবাচক ধারনা জন্ম নিচ্ছে এবং এই দায় আশ্রয়প্রার্থীদের। ভোটের রাজনীতির কারণে, উদারনীতির সুযোগ নিয়ে একটা অংশ জিহাদে নেমে পড়ছে কিন্তু এর দায় নিতে হচ্ছে সবার। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভুক্তভোগী হচ্ছে সবাই। ইউরোপের সাগরে ভেসে শুধু মানুষ আসছে না সাথে আসছে সংকট,আসছে অন্ধকারও।
এখানে দেখছি জিহাদ সম্পর্কে অনেকের ভ্রান্ত ধারণা আছে…
জিহাদ মানে এই নয় যে অমুসলিম দের উপর তরোয়াল চালাতে হবে.
জিহাদ মানে অত্যাচারী অমুসলিমদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই,
আবার নিজের নাফসকে /আত্মা কে কূকরমের হাত থেকে দূরে রাখা, আবার অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরে লেখাও জিহাদ, আরও ভালো কাজের প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে খারাপ কাজের পরাজয়ও জিহাদ
কিন্তু কিছু ইসলামী নামধারী /পোশাক পড়া জঙ্গি ও মিডিয়ার অপব্যবহার এর মানে সাধারণ মানুষ কে অন্য করে দেখাচ্ছে
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় , সময়োপযোগী ও ভাবনা জাগানিয়া লেখা। তবে সাবধানে থাকতে হবে সুব্রত শুভ।
লেখকের লেখা খুব ভালো হয়েছে এবং সময় উপযুক্ত। শরণার্থী সমস্যা সর্ব যুগে কম বেশী ছিল। রাজনৈতিক কারনের জন্য এই সমস্যা তৈরি হয়। অতীতে চীন, ম্নগ্লীয়া ও পূর্ব ইউরেশিয়া থেকে বহু শরণার্থী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক ভাবে বা অরাজনৈতিক ভাবে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সেই ট্রেডিশ্ন এখনো চলে আসছে। এখন অবশ্য রাজনীতির সাথে ধর্ম যোগ হয়ে গেছে। বিংশ শতাব্দীর মধ্য থেকে ভারত-পাকিস্থানের স্বাধীনতা পাওয়ার সময় থেকে শরণার্থী সমস্যা আবার প্রবল ভাবে দেখা দেয়। বিশেষ করে হিন্দু শরণার্থী মুস্লমান শরণার্থী থেকে বহুগুণ বেশী ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থান থেকে ইচ্ছকৃত ভাবে জোর পূরবক হিন্দুদের বের করে দেওয়ার প্নথা হিসাবে তাদের উপর যে অত্যাচার করা হয়েছিল, তা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথায় ও হয়নি। নেহারু সরকার বাঙ্গালীদের প্রতি স্মান ব্যবহার করেনি, যা পাঞ্জাবিদের ক্ষেত্রে করেছে। ভারত থেকে সেই অনুযায়ী মুস্তলমানরা শরণার্থী হয়ে পাকিস্থানে আশ্রয় নেয়নি। স্বত্বেও ৭০ সালে ভারত বাংলাদেশের যুদ্ধে সর্ব দিক দিয়ে সাহায্য করেছে, তা অতুলনীয়। অথচ বানলাদেশের একটা শ্রেণী এখনো ভারত বিদ্বেষী। তারা উপকারীর উপকার সবীকার করেনা। ৭০সালের যুদ্ধে কয়েক লক্ষ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, ভারত তার সীমিত শক্তি দ্বারা লক্ষ লক্ষ লোকদের আশ্রয় দিয়ে খাওয়ার দিয়ে সাহায্য করেছিল, তার তুলনা হয়না। অথচ বাংলা দেশের স্বাধীনতার প্র কোটি কোটি হিন্দু বিতাড়িত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তারজন্য পৃথিবীর করো মনে আঘাত লাগেনি বা এদের জন্য সমবেদনা জানায়নি; কেননা এরা হিন্দু ছিল।
আথচ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলমান শরণার্থীদের জন্য পৃথিবীর সবাই কেঁদে মরছে। হয়তো সবাই ভাববেন আমি জাতিগত ভাবে ভাগ করে কথা বলছি। আসলে তা নয়, আমি বলতে চাইছি যে বর্তমানে তথাকথিত জাতিগত শরণার্থী ছাড়াও আর এক ধরনের শরণার্থী আছে, যার উল্লেখ লেখক করেননি। তা হল যারা ধর্মের সমালোচনা করে রাষ্ট্রের বিরাভাজন হয়ে বিতাড়িত হন বা হতে বাধ্য হন বা যারা নিজেদের নাস্তিক বলে চিহ্নিত করেন বা ঘোষণা করেন। এদের জন্য কেউ ভাবেন কি? তারা নিজেদের শিক্ষার উপর নির্ভর করে ইউরোপ বা আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নিজেদের জীবনের সুরক্ষার জন্য নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তারা জোট ব্দধভাবে আন্দোলন করতে গিয়েও বিশবের কাছে সেইরুপভাবে সাহায্য পায়নি বা পাচ্ছেনা। আথচ রোহিঙ্গা মুস্লিম দের জন্য, বা মধ্য প্রাচ্যের মুসলমানদের জন্য সবার চোখে জল ঝরে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া স্থান দেয়নি – কেন? ের মধ্যেও রাজনীতি লুকিয়ে আছে। একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলে, তার উত্তর পেয়ে যাবেন। আজ স্লোভাকিয়া মুসলমান শরণার্থী গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, জার্মানি ও আন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিও তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলে ভবিষৎতে শ্রনাত্রথী না নেওয়ার কথা বলছে। তার একটাই কারন যে, মুসলমানরা শরণার্থী হয়ে ঢুকে, শ্রনারথীর টাকায় জীবন নির্বাহ করে, সেই দেশের অকল্যাণ করার চেষ্টা করে।
এখানে মনে রাখবেন মুসলিম বিরোধীতা করা হচ্ছেনা। আশা করি সর্ব স্তরের শ্রনাথীদের জন্য এক চিন্তা ও এক বিষয় হওয়া উচিত।
সুঁই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর নাম হলো ইউরোপে শরনার্থী সমস্যার নাম। ঢুকবে শরনার্থী হয়ে তারপর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মানিতে থাকবে, মসজিদে যাবে, ইসলামিক স্কুলে বাচ্চাকে পড়াবে, হালাল মাংস খুঁজবে, ইউরোপের সমাজে ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা প্রচলন করার জিহাদে নামবে এরা। সোমালিয়ানদের কীর্তিতো নিজের চোখেই দেখা
আপনার মন্তব্য সঠিক। অত সহজ ও সরল ভাবে বলার জন্য ধন্যবাদ।
সোমালিয়া কিংবা আফ্রিকানগুলো আরেক কাঠি সরেস।
অাপনাদের মত মানুষের জন্যে অাজ জিহাদ নামক শব্দের অপব্যাবহার করছে মানুষ। অাগে নিজে জানুন তারপর মন্তব্য করবেন। যত্ত সব……
শরণার্থী সমস্যার পেছনে কাজ করে একটি রাজনীতি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই রাজনীতি প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্মকে ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিতার বলে। আর ধর্ম যেহেতু জোর যার মুল্লুক তার টাইপের, সেহেতু রাজনীতিবিদদের কাজগুলোও সহজ হয়ে যায়। সাতচল্লিশের দেশভাগের কারণে যে বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু মানুষ এখনও শিকড়হীনই থেকে গেলো, তার গোড়ায় রয়েছে কংগ্রেস মুসলিম লীগের রাজনীতি। দুটো দলই হিন্দু-মুসলমান ধর্মকে সামনে এনে, প্রকাশ্য দাঙ্গা বাঁধিয়ে প্রমাণ করেছিলো- দুটো অালাদা ধর্ম পরিচয়ের মানুষের পক্ষে একই দেশে থাকা সম্ভব নয়। কেবল রাজনীতি দিয়ে অতোখানি বোঝানো যেতো না। তাই অবলীলাক্রমে ব্যবহৃত হয়েছে ধর্ম এবং তাতেই রাজনীতিবিদদের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
So called political correctness কিংবা ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে সমগ্র পাশ্চাত্যজুরে লিবারেল, উদার গনতান্ত্রিক ও মধ্যবামপন্থী দলগুলো এই মুসলমান শরণার্থী ও অভিবাসী সম্প্রদায়কে সমর্থন করার প্রতিযোগীতায় অবর্তীণ হয়েছে। ভোটব্যাংকও এর একটি কারণ।
যদিও গত ৫০ বা তার বেশী বছর চলে গেলেও এই বিশেষ সম্প্রদায়টি কিন্তু পশ্চিমা উদার মানবতাবাদকে গ্রহণ করেনি। কিছু ব্যতিক্রম বাদে। যার প্রমাণ হাজার হাজার পশ্চিমা মুসলমান তরুনদের ISIS এ যোগদান। আমার মনে হয় পশ্চিমা বিশ্ব একদিন এর স্বরূপ বুঝবে। যদিও ততদিনে হয়ত অনেক দেরী হয়ে যাবে।
খুবই মূল্যবান এবং জরুরি লেখা | কিন্তু আশ্রয়প্রার্থীরা কেন আরো বেশি করে নিজেদের ধর্মের ঘেরাটোপ থেকে বেরোতে পারছেনা সেইটা নিয়ে কি কোনো গবেষণা হয়েছে? এইখানে কি আইডেন্টিটি ক্রাইসিস কাজ করছে? কেন এরা উন্নত এবং মানবিক রাষ্ট্রে বাস করেও পশ্চাদপদ ধর্ম এবং চিন্তাভাবনায় আচ্ছন্ন? শুধু ইসলামকে দায়ী করলে মনে হবে আংশিক কারণের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করা হচ্ছে | ইসলাম বা যেকোনো ধর্মীয় চেতনা অবশ্যই মুক্ত গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্রের ধারণার পরিপন্থী| কিন্তু তরুণ প্রজন্মের এই বিপথগামিতার পিছনে আরো গভীর এবং জটিল কারণের সমষ্টি আছে যেইটাকে না অনুধাবন করলে এগোনো যাবেনা | কোন alienation প্রক্রিয়া এদের সমাজের থেকে বিচ্ছিন্ন করছে সেইটা বুঝতে হবে |
@অনামী
আপনার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত এখানে ইসলামকে দায়ী করা হচ্ছে না। এখানে রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে কথা হয়েছে। কেউ ইসলাম ধর্ম মানলেই যে জিহাদ করবে তা তো না। ধর্ম যতোক্ষণ ব্যক্তি কেন্দ্রিক থাকবে ততক্ষণ কোন সমস্যা হয় না। যখনই রাজনৈতিক ভাবে ধর্ম আবির্ভূত হয় তখনই সমস্যার শুরু। পিছিয়ে পড়ার অথবা ধর্মান্ধ হওয়ার মূল কারণ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তো আছেই। হয়তো অনেকেই বলবেন অভাবের তাড়নায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি এই দেশগুলো শরনার্থীর ভরসপোষনের কথা মাথায় রেখেই আশ্রয় দেয়। অনুন্নত অশিক্ষিত ও পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষ হওয়ার ধর্মবোধ বেশি তারউপর একটা নতুন চ্যালেঞ্জের লাইফ সামনে আসায় আরো বেশি ধর্মমুখী হয়ে পড়ে। তার উপর ওহাবীপন্থীদের বিভিন্ন সংস্থা ও মাথা ধোলাই তো আছেই। সব কিছু মিলিয়ে এই ক্রাইসিস খুব সহজে মেটানো যাবে না।
@অনামী,
এইক্ষেত্রে আইডেন্টি ক্রাইসিস ব্যাপারটা ঠিক কিভাবে কাজ করে?আইডেন্টি ক্রাইসিস ফিল করলে পরে,কেন বাস-ট্রেনের সাধারণ মানুষের উপর বোমা মারতে হয়,সেটা ঠিক পরিষ্কার না।একই মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেও খ্রিষ্টান বা ইয়াজিদি বা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষগুলো কেন আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ফিল করে না সেটাও ভেবে দেখা দরকার।প্রতিবছর বহুসংখ্যক বাদামী চামড়ার ভারতীয় ভাগ্য ফেরাতে পশ্চিমা দেশগুলোতে যায়,বাদামী চামড়ার হওয়ার সত্ত্বেও এরা কেন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে না,কেন আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ফিল করে না?
সারা পৃথিবীতে মুসলিমরা যেখানেই সংখ্যালঘু সেখানেই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ফিল করে এবং যেখানে সংখ্যাগরিষ্ট সেখানে করে না।বাস্তবতা হল মুসলিমরা যে ধর্মীয় সংস্কূতি মনেপ্রাণে লালন করে তা পশ্চিমা সেকুলার সংস্কূতির সম্পূর্ণ বিপরীত, মুসলিমরা এটা ভাল করেই জানে,এবং সচেতন ভাবেই এসব থেকে দুরে থাকে।সাংস্কৃতিক পার্থক্য যেখানে ব্যাপক সেখানে পশ্চিমারা ঠিক কি করলে পরে মুসলিমরা এই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ফিল করবে না?মুসলিমদের সংস্কৃতিতে নিজেদের কনভার্ট করা একটা সমাধান হতে পারে।কিছুদিন আগে বিবিসি ওয়াল্ডের নিউজে দেখছিলাম, এক বৃটিশ খ্রিষ্টান মা,তার প্রতিবেশী মুসলিম বান্ধবীদের প্রতি একাত্বতা প্রকাশের জন্য এক মাস হিজাব পরে চলাফেরা করছে।এই মেয়েটার ছোট বাচ্চা দুটো প্রথমে তাকে হিজাব পরা দেখে কিছুটা ভয় পেয়েছিল।কিন্তু তাতে সে হিজাব বাদ ছাড়েনি, এমনকি সে চার্চেও যেতো হিজাব পরে।নিউজের শেষদিক প্রতিবেদক ওর মুসলিম বান্ধবীকে প্রশ্ন করে,তার বান্ধবীর মত সেও এরকম ব্যাতিক্রম কিছু করবে কিনা।উত্তরে মুসলিম বান্ধবী পরিষ্কার জানিয়ে দেয়,একদিনের জন্যও তার পক্ষে হিজাব ত্যাগ করা সম্ভব না।
আইডেন্টিটি ক্রাইসিস দূর করার অন্য একটা ইফেকটিভ সমাধান হতে পারে কোনভাবে মুসলিমদের সংখ্যা ৫০ ভাগের বেশী করে দেওয়া।
“সুইজারল্যান্ড-এর পতাকায় ক্রস আছে। সৌদি আরবের পতাকায় একটি বড় তলোয়ার আছে। তলোয়ার কতোটুকু মানবিকতার প্রতিক হয়ে উঠে তা জানা নেই। এছাড়া সৌদি আরবে কোন অমুসলিমদের উপাসনালয়, স্কুল প্রতিষ্ঠান করার বিষয়ে নিষেধ আছে। এই নিয়ে কারো কোন আপত্তি নেই। যাই হোক আশ্রয় প্রার্থী মুসলিম জনগোষ্ঠীর এক অংশ দাবী করে বসল সুইজারল্যান্ডকে তার পতাকা বদলাতে হবে! কারণ এতে ক্রস আছে যা তাদের ধর্মানুভূতির সাথে সাংঘর্ষিক! ”
মূল্যবান মন্তব্য,ভাব্বার অবকাশ আছে।
নিজেদের বেলায় ষোল আনা