আমাকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর পর আমার বন্ধুরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হয়তো ফেসবুকে কিছু দুঃখী স্ট্যাটাস লিখবে। তাদের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন হবে, হয়তো শোক আর প্রতিবাদ জানাতে কালো করা হবে কিছুদিন কিংবা আমার কোন ছবি ঝুলবে সেখানে। তাদের মৃত বন্ধুদের তালিকায় আরও একটি নাম আর তারিখ যোগ হবে, ইতিহাস ঠিক রাখার খাতিরে। কেউ কেউ ইভেন্ট খুলবে, হত্যার প্রতিবাদে কর্মসূচী, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ইত্যাদি প্রভৃতি। হয়তো আমার ছবি ঘুরবে ফেসবুকের হোমফিডে, যারা আমাকে জানতো না বা চিনতো না তারাও আমাকে তখন জানবে চিনবে। তবে কতদিন হোমফিডে ছবি থাকবে তা নির্ভর করবে ক্রিকেট কিংবা সালাহউদ্দিন-এর ফিরে আসার খবরের গুরুত্বের ওপর। পত্রিকার উদ্দেশ্য ব্যবসা, কে খুন হলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কী খাবে জনতা সেটাই তাদের লক্ষ্য। সুশীলজনেরা স্ট্যাটাস লিখবে, কারো অনুভূতিতে আঘাত পায় এমন কিছু কারো লেখা ঠিক নয়। টিভিতে টকশো হবে। খাঁটি পেয়ারা বান্দারা লিখবে, সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যারা লেখবে তাদের সৃষ্টিকর্তার দুনিয়ায় জায়গা নাই। প্রাকৃতিক নিয়মে আস্তে আস্তে শোকতাপ স্তিমিত হয়ে আসবে। সবাই ভুলে গিয়ে নিত্যদিনের কাজে মন দেবে, জীবনের ডাক বড় ডাক। একে উপেক্ষা করার শক্তি কারো নেই। মনে মনে অপেক্ষায় থাকবে সবাই, এবার কার নাম ……… হু ইজ নেক্সট?
আমার শূন্যতা নিয়ে ভগ্ন হৃদয়ে পথ চেয়ে বসে থাকবে আমার মা। ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরিয়ে আকাশ যখন ধরণী পবিত্র করতে ব্যস্ত থাকবে, অসীম নীলের সাথে শুভ্র জলধারা দিয়ে চেষ্টা করবে এই পৃথিবীর পাপ ধুয়ে দিতে, তখন হয়তো কোন টগবগে তরুণ তার শোবার ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে পাশের বাসার ছাদে খোলা চুলে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা লাজুক তরুণীটির দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকতে বিভোর। অন্য পাশের ফ্ল্যাট থেকে হাঁক শোনা যাবে বৃষ্টির আওয়াজ ভেদ করে,
কী, বৃষ্টি দেখেছো আজ? -অফিস যাবো না ভাবছি। একটু খিচুড়ি করো না আজ, সাথে গরম গরম গাওয়া ঘি, বেগুন ভাজা, ডিম ভাজা আর সর্ষের তেলে ইলিশ ভাজা।
এই শুনে আমার মা ডাক ছেড়ে বিলাপ করে কাঁদবেন, অনন্ত আমার অনন্ত! আমার অনন্ত বড্ড বৃষ্টি আর খিচুড়ি ভালবাসতো। দিনের শেষে শুধু সেই মনে রাখে যার ঘর শূন্য হয়, বুক শূন্য হয়, কোল শূন্য হয়।
তানবীরা তালুকদার
১৩/০৫/২০১৫
(এই লেখাটি ১৪ই মে বাংলা নিউজের “মুক্তমত” বিভাগে ছাপা হয়েছে)
খুব খারাপ লাগছে মন আমার। এই জন্যে এখাআনে এলে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।
মন ভাল হওয়ার মত কোন খবর গোটা ২০১৫ এ হয়নি
“আমার শূন্যতা নিয়ে ভগ্ন হৃদয়ে পথ চেয়ে বসে থাকবে আমার মা”, লেখিকার আবেক পূর্ণ লেখা, মনের গভীরে দাগ কেটে দেয়। লেখার কালিতে চোখের উপর ভেসে উঠে সেই ছবি, যা ভুলা যায়না কখনো। ধন্যবাদ ।
শ্বাশত ছবি। পত্রিকাতে পড়লাম অনন্তের মা কান্না থামাতে পারছেন না, বাবাও না
প্রবাদ বাক্য আছে, সন্তানের কিছু হলে, কেঊ জানেনা, জাণে আগে মা’য়, মায়ের মণ সন্তানের প্রতি নিবদ্ধ থাকে। সন্তান হারার যন্ত্রণা মা-বাবা ছাড়া আর কেঊ জানেনা। আপনি খোঁজ রাখেন, আপণাকে ধন্যবাদ।
” দিনের শেষে শুধু সেই মনে রাখে যার ঘর শূন্য হয়, বুক শূন্য হয়, কোল শূন্য হয়। “ একদম সত্যি কখা। আমরা আসলে এক হতভাগা জাতি। আমরা গাছের ডালের আগায় বসে সেই ডালের গোড়া নিজেরাই কাটি। আমরা এটাও বুঝি না কত শত বছর অপেক্ষা করলে একজন অভিজিৎ রায় এই ভূমিতে আসেন, কত সাধনার ফলে একজন অনন্তকে পাওয়া যায়। বুঝিনা বলেই তাদের কদর হয়না। তারই আক্ষেপে তাঁরা চলে যান অনন্তে। যার যায় সেই জানে। আর কোন মায়ের কোল এভাবে খালি না হোক, আর কোন স্ত্রীকে যেন তার স্বামীর নিথর দেহের ভার বইতে না হয়, আর কোন সন্তান যেন পিতার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত না হয় পরম করুনাময়ের নিকট এই প্রার্থনা করি।
প্রার্থণা করুন, নো হার্ম — তাও যদি কিছু ভাল হয়, মন্দ কী
হৃদয় ছোঁয়ে যাওয়া এমন একটি চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম এটি আপনার প্রাপ্প ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ , তাবীরা ।
ভাল থাকবেন
এতকিছুর পর আসলে পিছনে হটার আর উপায় নাই ।
সেই …………অভিজিৎ ভাই, বাবু, অনন্ত সেই রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে গেছে
শোকের আবহে কাব্যিক জীবনপ্রবাহের চিত্রটা ভালোই ফুটিয়েছেন। আপনার কলমে সুন্দর সাহস বসে আছে দৃপ্ত ভঙ্গিতে।
কলম চলুক।
সাহস হারিয়ে ফেলছি, মন ভেঙ্গে যাচ্ছে ভাই
ধর্মের উৎপত্তির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগ থেকেই এই ব্যবস্থাটা সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কাল্পনিক ভয় সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের শাসন ও শোষণ করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে । তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি ধর্মীয় বিশ্বাসের আসলে কোন ভিত্তি নাই ।
তর্কের খাতিরে যদি মেনে নেই বিশ্বাসের ভিত্তি রয়েছে , তারপরও যদি আমি না মানি বা এর বিরুদ্ধাচারন করি এর অর্থ এই নয় যে এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনুভুতিতে আঘাত লাগার কারনে কোন ব্যক্তি বা গোষ্টি আমাকে হত্যা করার অধিকার রাখে ।
যেখানে বাংলা দেশের সংবিধান এ দেশের প্রতিটা নাগরিক কে ন্যায় বিচার ও জান মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছ সেখানে কোন ব্যক্তি বা গোস্টি দ্বারা হ্যতার হুমকি ও হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়া মানেই স্পষ্টতই বাংলাদেশের সংবিধানকে অস্বীকার করা ।
আর কোন রাষ্ট্রে যখন এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটতে থাকে তখন ধরে নিতে হয়, বর্তমান রাষ্ট্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্টানগুলি বাংলাদেশের সংবিধান রক্ষার যোগ্যতা রাখে না ।
ধর্মীয় বিশ্বাস ভীত্তিহীন – কথাটি সম্পূর্ণ সমর্থনযোগ্য নয়
অসম্পূর্ণভাবে সমর্থনযোগ্য?
@সন্দ্বীপ বোস,
ধর্মীয় বিশ্বাসের কিছু অসম্পূর্ণ ভিত্তি দেখান।
ধর্ম হছে বিশ্বাস , বিশ্বাস পুনজন্মের ,বিশ্বাস পাপ পূর্ণের বিচারের, বিশ্বাস স্বর্গ নরক প্রাপ্তির, বিশ্বাস দেব-দেবি , ফেরেস্তা ও নানা ধরনের সুপার ন্যচারাল প্রাণী, মন্দির, মসজিদ , গির্জা , পুরুহিত, নিদৃষ্ট পোশাক , প্রার্থনার ভঙ্গী , ধর্ম গ্রহ্নত , পশুবলী ও তীর্থস্থান সব কটি ধর্মেই এই উপাদান গুলো সমভাবে বিদ্যমান । তারপরও ধর্মগুলো একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং প্রত্যেকটা ধর্মই নিজ নিজ বিশ্বাসকেই সর্বশ্রেষ্ট বলে দাবী জানাছে । এই উপ-মহাদেশের সনাতন ধর্মগুলোতে স্বয়ং ঈশ্বর মনুষ্য রূপে অবতরণ করছে এবং আব্রাহামিয় ধর্ম গুলোতে স্বয়ং ঈশ্বরের সাথে কথা হয়েছে বা দেখা হয়েছে তা ও আবার গোপনে ।
এই বিষয় গুলোর ভিত্তি কি ? তা আপনার এতদিনের অর্জিত জ্ঞানের আলোকে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আশা করি জবাব পেয়ে যাবেন ।
প্রশ্ন করতে হলে ভাবতে হয় আর সমস্যা এখানেই। তারচেয়ে চোখ নাক কান গুঁজে বিশ্বাস করা বেশি সহজ
তানবীরা , এই সহজ কাজটাতো সমাজের অনেক জ্ঞানী গুণীরাই করছে আপনিও করুন না ।
তবে যদি নিজের স্বতন্ত্র ভাবনা আর বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটাতে চান সে ক্ষেত্রে ঝুকিতো নিতেই হবে ।
এখন আর পিছনে হটার উপায় নেই তাই ঝুঁকি নিলাম
যে কোন হত্যাকাণ্ডই জঘন্য অপরাধ।এমন মৃত্যু কারোই কাম্য নয়।তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার না, মুক্তমনার প্রকৃত উদ্দ্যেশ্য কি কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা নাকি এই সমাজ বা রাষ্ট্রের গুটিকতক মানুষ যারা ধর্মকে পুজি করে ব্যবসা করে তাদের উদ্দেশ্য যুদ্ধ।
আর আমি একটা বিষয় বিশ্বাস করি যে কারো মতাদর্শে আঘাত করার আগে তার বিশ্বাসের জায়গাটি সম্পর্কে জানা উচিত।
মুক্তমনার প্রকৃত উদ্দেশ্য বড় বড় করে নীড়পাতায় লিখে দেয়া আছে। সেটা ঠিকমতো না পড়ে কমেন্ট দেয়া বা উপদেশ দেয়া কি উচিত?
পাকনা আলাপ আমার পোস্টে না, অন্যদিকে রাস্তা মাপেন।
লেখাটী পড়ে আবারও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম।
আর কী করার আছে দিদি আমাদের
মরবে । মরতে থাকবে । আজ একজন , কাল আরেকজন , এভাবেই চলবে । সাত বিলিয়নে দু’একজন মরলে কারই বা কী আসে যায় !!!!!
…….
দিনের
শেষে শুধু সেই মনে রাখে যার ঘর
শূন্য হয়, বুক শূন্য হয়, কোল শূন্য হয়।
সেই ………যার ঘর শূণ্য হয় সেই জানে
অভিজিৎ -অনন্তদের বিনাশ নেই। কলম চলবে
কলম চলুক
যারা নূতনের বার্তাবহ,পাপশক্তি তাদের ওপর নির্যাতন-লাঞ্ছনা-অত্যাচার করবেই।
তবু মানুষকে দমে গেলে চলবে না। মনে রাখতে হবে,জীবনে অন্ধকার সত্য নয়, আলোকই সত্য। লক্ষ কোটি ধিক্কার-লাঞ্ছনা গ্লানি-কটুক্তিকে উপেক্ষা করে’ নূতনের আলো একদিন মানুষের ঘরে ঘরে অবশ্যই পৌছবে।
শ্রী শ্রী আনন্দমূ্র্ত্তি
হয়তো, আমরা হয়তো সেদিন দেখে যেতে পারবো না
আমাদের কলম থামবে না, আমরা থামব না।
না, পেছনে হটার আর পথ নেই
একটা মুক্তমনের মত্যু হাজার টার জন্ম দেবে।
তারপরও এ মৃত্যু মেনে নেয়া কষ্টকর
আরো অনেক মুক্তমনারও জন্ম হবে। 🙂
একজন মুক্তমনার সাথে শ’খানেক ছাগুর জন্ম হয় কিংবা তার বেশি