ভারতের গৌহাটি প্রবাসী লেখিকা অঞ্জলি লাহিড়ির একটা বই কিনেছিলাম বইমেলা থেকে- নাম জগতজ্যোতি। অঞ্জলি লাহিড়ির পৈত্রিক নিবাস মৌলভিবাজার জেলার ভানুগাছে।
বইটি পড়ার পরে ইন্টারনেটে চার্চ দিয়ে সামহোয়ার ইন ব্লগে বেশ কিছু লেখা পেলাম জগতজ্যোতি দাশকে নিয়ে। এরপরই সচল সদস্য হাসান মোর্শেদের একটা তথ্য সমৃদ্ধ লেখা পেলাম সচলায়তনে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি করে তারকা খ্যাতি পাওয়া বেশ কয়েকজনের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করলাম। জগতজ্যোতি দাশকে সর্বোচ্চ খেতাব দেয়ার ঘোষনা দেয়া হয়েছিল কিনা? দেয়া হয়ে থাকলে পরে কেন দেয়া হয়নি? আজ সেই ঘোষনাকৃত খেতাব ফিরিয়ে দিতে সরকারের সমস্যা কোথায়? এই সব প্রশ্ন নিয়ে আমি এগুতে পারি কিনা? গবেষকবৃন্দ আমাকে সায় দিলেন, সেই সাথে জগতজ্যোতি দাশের একজন সহযোদ্ধার লেখার কপি রেফারেন্স হিসেবে দিলেন।
আমি আমার দিক থেকে স্পষ্ট হলাম, এবার এগুতে পারি। দেখি সরকার স্বীকার করে কিনা।
তথ্য অধিকার আইনে সরকারের দুই মন্ত্রনালয়
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয়
এবং তথ্য মন্ত্রনালয়ে
নিম্নলিখিত তথ্য সমুহ জানতে চাইলাম।
তারা কেউ আমাকে তথ্য না দিয়ে অন্যের উদ্দ্যেশ্যে ঢিল ছুড়ে দিল।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের জবাব
তথ্য মন্ত্রনালয়ের জবাব
তথ্য কমিশনে অভিযোগ করলাম উভয় মন্ত্রনালয়ের বিরুদ্ধে।
তথ্য কমিশন তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিল না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিল।
শুনানীর শুরুতেই বললাম, মন্ত্রণালয়ের নাম মক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় অথচ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কোন তথ্য নেই। কমিশনাররা আমার কথায় একমত হলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাকে তথ্য প্রাপ্তির বিভিন্ন সুত্র বলে দিয়ে, সেসব জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে আমাকে দিতে বললেন। পরেরে শুনানীতে তথ্য নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিলেন।
কিন্তু না, পরের শুনানীতে আমাকে আর ডাকেনি, তথ্য কমিশন রায় পাঠিয়ে দেয়।
রায় পাওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয় আমাকে এই চিঠি দেয়।
কোন তথ্য না পাওয়া সত্ত্বেও, আরেকদিন শুনানীর কথা বলেও তথ্য কমিশন কেন মামলা শেষ করে দিল তা এক বড় বিস্ময়!
জগতজ্যোতি দাশ , আজমিরিগঞ্জ বাজারে রাজাকাররা এভাবে ফেলে রেখেছিল দুইদিন
সিদ্ধান্ত নিয়েছি দুই মন্ত্রনালয়কে আবার কমিশনে হাজির করাব, সেই সাথে বাংলাদেশ বেতারে নতুন করে আবেদন করব। এরপর প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে উচ্চ আদালতে যাব।
কি কপাল আমােদর ??
চমৎকার উদ্যোগ। আপনি যদি সত্যিই উচ্চ আদালতে যান দয়া করে মিডিয়াকে জানিয়ে যাবেন, বিশেষ করে উপরের তথ্য অপ্রাপ্তির বিষোয়গুলোকে ফোকাস করে।
এবং আমি আশা করি আপনি উচ্চ আদালতে যাবেন।
এখানে মাদ্রাসা/মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৩-৪১ গুন বেশি। এখানে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, জাতীয় কোনও দিবস – যথাক্রমে গাওয়া/উচ্চারণ, উত্তোলন, উদযাপন একেবারেই নিষেধ। এটা স্বাধীন বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাকিস্তান।
“জগতজ্যোতি দাশ , আজমিরিগঞ্জ বাজারে রাজাকাররা এভাবে ফেলে রেখেছিল দুইদিন”
এখন জগতজ্যোতিদের কে ২ মাস ঝুলাই রাখার ক্ষমতা ওরা অনেক আগেই অর্জন করে ফেলেছে। তবুও আমাদের সৌভাগ্য যে, জগতজ্যোতি খেতাবের জন্য জান কোরবান করে নাই। দেশের-দশের লাইগাই করছে।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু সেই ৭১ এ, এখনও জারি আছে।
কেনো? আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত খেতাব প্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় গুলোতে থাকবে না কেনো? তাহলে কিসের ভিত্তিতে তাঁকে মুক্তুযোদ্ধা এমনকি রাষ্ট্রীয় খেতাবে স্বীক্রতি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিলো? এসব কি রাষ্ট্রের ইচ্ছাকৃত ত্রুটি? আমি দক্ষিন কোরিয়ার ওয়ার মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম, যেখানে প্রায় ২৫টি দেশের পাঁচশতাধিক যোদ্ধারা কোরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহন করে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। প্রত্যেকের তথ্য, ছবি সেই মিউজিয়ামে আজও সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত! নিজেদের যোদ্ধাদের আলদা মিউজিয়াম প্রতিটি স্থানীয় শহরে তো তাছেই কেন্দ্রীয় ভাবেও তা সংরক্ষিত! আমাদের মতো এমন অবহেলা আমি আর কোথাও দেখিনি! তাইতো বলি, বাংলাদেশীরা যাদের ইহুদী-নাসারার দেশ বলে গালাগালি করে সেখানে যাবার জন্যেই আবার উন্মাদ হয়! দেশপ্রেম শুধু ভারত বিরোধীতার সময় প্রদীপের সলতের মতো উসকে উঠে! একেবারেই পাকিস্তানী অনুভব!
@কেশব কুমার অধিকারী
১। গনমাধ্যমে ঘোষিত প্রথম সর্বোচ্চ খেতাব ধারী (সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ তখন ও নির্ধারিত হয়নি) মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি দাশ। ঘোষনাটা ছিল এমন, দেশ স্বাধীন হলে জগতজ্যোতি দাশকে সর্বোচ্চ খেতাবে ভুষিত করবে সরকার।
১৬ নভেম্বরের (১৯৭১) এর পর থেকে বেশ কয়েকদিন এই ঘোষণা প্রচার করা হয় এবং সেই সাথে রনাংগনের মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করতে জগতজ্যোতি দাশের বিভিন্ন সম্মুখ যুদ্ধের বীরত্বগাঁথা প্রচার করা হয়। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলে তাকে সর্বোচ্চ খেতাব বীরশ্রেষ্ঠ দেয়া হয়নি।
২। গেজেটে প্রকাশিত প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ। পরে এই গেজেট সংশোধন করে সাতজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৩। বংগবীর ওসমানী বীর যোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু ন্যায়পরায়ন ছিলেন না। তার আশেপাশের লোকজনকে খেতাব দিতে ভুল করেননি। রনাংগনে একটি গুলিও না ছুঁড়ে কলকাতায় থেকে ওসমানীর সহকারীর দায়িত্ব পালন করে পদক পেয়েছেন একজন সামরিক কর্মকর্তা যিনি পরে বংগবন্ধুর খুনি হিসেবে আবির্ভুত হন।
৪। সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান কোন খেতাব পাননি।
এভাবে এনালাইসিস করতে গেলে দেখা যাবে, আগে যেমন ব্রিটিশ রাজের ঘোড়ার লাদা পরিস্কার করে অনেকে স্যার উপাধি পেয়েছে, তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অনেক খেতাব অপাত্রে গেছে আবার অনেক যোগ্য লোক তার প্রাপ্য সম্মান পায়নি।