যে বিষয়টির অবতারনা করতে যাচ্ছি, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেটি নতুন কোন বিষয় নয়, নয় অধিকাংশ ধর্মমুখী দেশের প্রেক্ষাপটেই, তা হলোঃ ধর্মবাদীদের বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানমনস্কতা দখলের অপচেষ্টা। ধর্ম ও বিজ্ঞান মূলগতভাবেই সাংঘর্ষিক জেনেও এই স্ববিরোধী চেষ্টা তারা করে যায় নিজেদের অপরিবর্তনযোগ্য ধর্মকে সময়োপযোগিতা ও আধুনিকতার খোলস পরানোর জন্য। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্কতা তো কোনো খোলস নয়, বরং এক ধরণের আদর্শ ও এক ধরণের চিন্তনকাঠামো যা শুরু হয় আগ্রহের সবকিছুকে প্রশ্ন করা দিয়ে, যা মানুষকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি-উপকরণসমুহ ব্যবহার করে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টায় নিয়োজিত রেখেছে মানব সভ্যতার শুরু থেকেই। বিজ্ঞানমনস্কতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ন দিক হলো বর্জন করতে পারা, যা কিছু বিজ্ঞানসিদ্ধ নয়, প্রামাণিক নয় তেমন সবকিছুকে; যার ভিত পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষা-প্রমাণ নির্ভর নয়, বরং বিশ্বাস নির্ভর যা মৌলিকভাবেই বিজ্ঞানের সাথে সংঘর্ষপূর্ণ। আমার আজকের রচনার অন্যতম বিষয় হচ্ছে- ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই বিশ্ববিদিত বৈপরীত্য থাকা সত্ত্বেও কিভাবে আমাদের দেশের ধর্মমনস্ক লেখকেরা বিজ্ঞানের কিছু বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করে লেখালেখি করে নিজেদের বিজ্ঞানলেখকের মর্যাদায় আসীন করে? তাদের এই দ্বিমুখী অবস্থান কেন একই সাথে স্বাদর্শবিরোধী ও অসততা? এবং কেন আমাদের দেশের পশ্চাৎমুখী সেকেলে মানদন্ড এসব ভন্ডকে উচুঁতে তুলে ধরে যাদেরকে পেছনে ফেলে আমাদেরকে আলো হাতে সেই পথের অভিযাত্রী হতে হবে যে পথ বিনির্মাণের জন্য আজীবন কাজ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন অভিজিৎ রায় এর মত প্রকৃত বিজ্ঞানমনস্ক সত্ত্বা, আমাদের পৃথিবীর আরেকটি প্রিয় নক্ষত্র।
স্ববিরোধীতা ও ভন্ডামীর প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে, বিজ্ঞানমনস্ক কারা সেটা জেনে নেয়াটা জরুরী। আমরা কাদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক বলব? শুরুতেই উদাহরণ টানা যাক। আমার অন্যতম প্রিয় সাহিত্যিক-কবি-প্রাবন্ধিক হুমায়ুন আজাদ, যাকে বাংলাদেশীরা অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন ভাষাবিদের মর্যাদা দেয়, যিনি ছিলেন একজন অনন্য বিজ্ঞানমনস্ক মনীষী, যদিও তাঁর শিক্ষা ও কর্ম জীবনের বিষয় মৌলিক বিজ্ঞান ছিল না, তিনি ছিলেন বাংলার শিক্ষক। অন্যদিকে হুমায়ূন আহমেদ একজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী বিজ্ঞানের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও আমরা তাকে বিজ্ঞানমনস্ক বলতে আপত্তি জানাই। কারণ সরল, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করা আর বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া এক কথা নয়, বাংলা-সাহিত্যে পড়ালেখা করেও একজন বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারেন, ব্যক্তিজীবন ও ব্যক্তিচৈতন্যে বিজ্ঞানকে লালন করে, অন্ধভাবে কোন কিছু বিশ্বাস-আন্দাজ না করে বিজ্ঞানের ওপর আস্থা রেখে, কৌতুহলী দৃষ্টিতে কোনকিছু পর্যবেক্ষণ করে তার প্রামাণিক-যাচাই হবার আগ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে না এসেও একজন ব্যক্তি বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারেন। ঠিক এ কারণেই একজন ধর্মবাদী, তা সে যতই বিজ্ঞানবিষয় বই লিখুক না কেন, কখনই নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক বলার যোগ্যতা রাখে না, সে বরং একজন স্ববিরোধী ভন্ড, মূলত একজন বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানমনস্কতারই শত্রু।
বাংলাদেশে শিল্পী-সাহিত্যিক ও সৃজনশীল বিষয়ে কাজ করা মানুষের কাজের সমালোচনায় তার ব্যক্তিক জীবন-আদর্শ-চেতনাকে আলাদা রাখা হয়। বিষয়টা এমন যে, তাদের শিল্পকর্ম-সাহিত্য এর সাথে ওসবের কোনো সম্বন্ধ নাই। অর্থাৎ একজন মানুষের কাজ তার ব্যক্তিত্ব-ভাবনা-উপলব্ধির প্রতিফলন নয়, যেন ওসব দৈবভাবে পাওয়া, যেমনটি পেয়ে এসেছিলেন ধর্মপ্রবর্তকেরা, এযুগের ভন্ড-পীরেরা। কিন্তু আমরা জানি, এটা কখনই সম্ভব নয়। যদি একজন মানুষের কাজের মাঝে তার সার্বিক ব্যক্তিমানসের প্রকাশ না ঘটে, উল্টো দিক থেকে বললে, একজন মানুষ তার ব্যক্তিমানস থেকে যদি তার কাজের জন্ম না দেয় সেক্ষত্রে আমাদেরকে সেসব মানুষের ব্যক্তিত্ব ও কাজকে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করে কিছু সিদ্ধান্তে উপনিত হতে হবে, তাদের গ্রহনযোগ্যতা নিরুপণে।
প্রথমতঃ এ দুটি অবিচ্ছিন্ন বিষয়কে তারা কেন আলাদা করে? অর্থাৎ তারা কেন তাদের ব্যক্তিমানসের পরিমন্ডলের বাইরে নিজেদের কাজের উপনিবেশ স্থাপন করে?
দ্বিতীয়তঃ তাদের এ ধরণের স্বকীয়তাহীন কাজের উদ্দেশ্য কি এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল কি? এবং
তৃতীয়তঃ এদেরকে ঠিক কি কারণে বর্জন করা উচিত?
যারা নিজেদের কাজের সাথে ব্যক্তিচেতনার মেলবন্ধন ঘটায় না তারা মূলত বিষয়টা সচেতনভাবেই করে থাকে। এবং তার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। দেইল্লা রাজাকার কেন আল্লামা সাঈদী হয়ে ওঠে এদেশে তা আমরা সকলেই জানি, দেশদ্রোহী থেকে মুসল্লিদের প্রিয় ওয়াজী হয়ে ওঠাটা শুরুতে এদেশে তার অস্তিত্ব রক্ষার্থেই হতে হয়েছিল, তারপরে পুরোটাই ছিল ধর্মোব্যবসার নিমিত্ত। আমরা জানি রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কিভাবে হেফাজত তোষণকারী হয়ে ওঠে। নারী নেত্রী ফরিদা আকতার ব্যক্তিজীবনে কমিউনিজম ও নারীমুক্তির কথা বলে কিভাবে হেফাজতের ১৩ দফায় মিনমিনিয়ে সুর মেলায়। এই যে ভেতরে একটা কিছু লালন করা, বাইরে ভিন্নকিছুর খোলশ পরা এবং বলা ও করার সময় আরেক রুপ ধারণ করা, এই বিচ্ছিন্নতার মূল কারণ এটাই- অসততা। এদেশে প্রগতিশীল আন্দোলন ও বিজ্ঞান আন্দোলনের উন্মেষের নামে ভেতরে ভেতরে যা হচ্ছে সে ক্ষেত্রটিতেও আমার পর্যবেক্ষণ মতে উপরের উদাহরণগুলোর সাথে বেশ খাপ খায়। এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু থেকে মুক্তির চেতনার পাশাপাশি যে জাতিক চরিত্রটি একই সাথে বেড়ে উঠেছিল তা হলো স্ববিরোধিতা। যার রুপ ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল বড় ও ভয়ংকর একটা সংখ্যাগোষ্ঠীর দেশদ্রোহীতা, যাদের আমরা রাজাকার নামে চিনি। স্বাধীনতা উত্তর সময়ে এই স্ববিরোধীতা ভিন্ন ভিন্ন রুপে দেশে আবির্ভুত হয়েছে, এবং সেই দেশদ্রোহী গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রসারের নামে আকাশ-পাতাল কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি বিজ্ঞানের অস্তিত্ববাচক বিষয় ‘বিবর্তনবাদ’ যেন পড়ানো না হয় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেক্যুলার সেক্যুলার বলে মুখে ফেনা তোলা রাষ্ট্রযন্ত্রে আধুনিক শিক্ষা নয় বরং জঙ্গিবাদীতার সূতিকাগার মাদ্রাসা শিক্ষাকে উৎসাহিত করা হয়েছে, রাজধানী ঢাকাকে মসজিদের শহর করা হয়েছে। ধর্মের দাওয়াত দেয়ার মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে বোমাবাজি-গুপ্তহত্যা-সাম্প্রদায়িক হামলার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করছে জেএমবি, হিযবুত তাহেরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এর মত জঙ্গিবাদী ধর্মোন্মাদী সংগঠন। এভাবেই এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ত্বকে অস্বীকার করা জামায়াতে ইসলাম এর পাশাপাশি অধিকাংশ বড় রাজনৈতিক দলই প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ্য মদদে কয়েকটি প্রজন্মকে স্ববিরোধী করে তুলেছে চিন্তা-চেতনা-আদর্শ-ব্যক্তিজীবনে।
এই প্রজন্মসমূহের অধিকাংশের না আছে উদার দেশাত্মবোধ, না আছে ধর্ম সম্পর্কে যথাযথ ধারণা, না আছে বিজ্ঞানমনস্কতা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদ্রাসা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বুয়েটের শিক্ষক-কাম-ধর্মমনা বিজ্ঞানলেখক পর্যন্ত এই প্রজন্মের সদস্যের ছড়াছড়ি। এদের অনেকে তাদের স্ববিরোধীতা সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদেরকে আমরা অন্ধ বলি, ক্ষেত্রে বিশেষে ধর্মান্ধ, আর বাকি যারা স্ববিরোধীতা সম্পর্কে সচেতন থেকেও কাজ করে যান সেসব শিক্ষিতজনদের আমরা (ইসলামি) শিক্ষাবিদ, (ধর্মবাদী) বিজ্ঞান লেখক, (বাজারী) সাহিত্যিক, (হিজাবী) শিল্পী, (হেফাজতি) সমাজ কর্মী এমন বিভিন্ন পরিচয়ে অভিহিত করি। এদের স্ববিরোধীতা কখনও তাদের কোনো কাজে জনগনের সামনে প্রকাশ পায়, কখনওবা তাদের ব্যক্তিজীবন ও ব্যক্তিচেতনার কারণে বিস্ফোরিত হয়। তখন সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ে! ভাবটা এমনঃ হঠাৎ করে উনি এমন খারাপ হলেন কেন? আবার হাতেগোনা কিছু প্রকৃত জ্ঞানী-মানুষ বিন্দুমাত্র বিচলিত হন না, কারণ এই আপাতদৃশ্যমান পরিবর্তনকে তারা অতীতেই সম্ভবপর ধরে নিয়েছিলেন, কারণ তারা জানেন ব্যক্তিচেতনা ও তার কাজ-কাজের উদ্দেশ্য অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। এদের মত করে এইসব অসৎ স্ববিরোধী মানুষগুলোকে চিনি না বলে আমরা চানাচুর বিক্রেতাকে বাংলার মার্কুয়েজ বলে পারলে কাঁধে তুলে নাচি, আর আমৃত্যু ব্যক্তিচেতনাকে কর্মে-কথনে-লেখায়-আন্দোলনে ফুটিয়ে তোলা বিজ্ঞানবিষয়ে পড়া-গবেষণা করা একজন পলিম্যাথকে একজন অনন্য মুক্তমনা অভিজিৎ রায়কে তার সৎ-স্পষ্টবাদীতার জন্য খুন করে গণমাধ্যমে তাকে শুধুমাত্রই একজন ব্লগার বলে অভিহিত করি। এভাবেই আমাদের জনপ্রিয়তার দুর্বল মানদন্ড আমাদের দেশকে স্ববিরোধী-ভন্ডদের অভায়ারণ্যে পরিণত করে।
আমাদের দেশের দিকে তাকালেই প্রতিটি সেক্টরে এই স্ববিরোধী ভন্ডামীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যার পেছনের উদ্দেশ্য ও সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়াও আমরা দেখতে শুরু করেছি। এদেশে বিজ্ঞানচর্চার দিকে নজর দেয়া যাক। বর্তমানে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের ধর্মও আছে, ইসলাম। এই ঈমানদার রাষ্ট্রে তাই বিজ্ঞান ও মুক্তচর্চা নয় বরং অসাম্প্রদায়িকতার মাথা খেয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনাটা বেশি ধর্তব্য। নব্য পদক্ষেপ ৫০০শত মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা। তবুও দেশকে আধুনিক ও সেক্যুলার চিত্রায়ণের জন্য কিছু কাজ করা হচ্ছে, বেসরকারী উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত বেশকিছু অলিম্পিয়াড-প্রতিযোগীতার জনপ্রিয়তা সম্পর্কেও আমরা কম বেশি অবগত যদিও এমন বেশ কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ। পাশাপাশি দেশবিরোধী ও ধর্মকে উপজীব্য করে রাজনীতি ও ব্যবসা করা গোষ্ঠীসমূহও বিজ্ঞানচর্চার টোপ ফেলে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহীদের তাদের মৌলবাদী পথের পথিক করছে। এভাবেই জামায়াতে-ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের মত এইসব গোষ্ঠীর কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে স্কুল-মাদ্রাসা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল-বুয়েট ছেয়ে গেছে। এদের এজেন্টরা যেখানেই বিজ্ঞান-বিষয়ক কোনো উদ্যোগ এর সন্ধান পায়, সেখানেই মুখোশ পরে অনুপ্রবেশ করে নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির উপযোগী-কাঠামো তৈরি করে নেয়। অজ্ঞানীরা জানেও না তারা মৌলবাদের বিষাক্ত ছোবলের আয়ত্ত্বের ভেতরে শ্বাস নিচ্ছে।
আরেকটি মাঝামাঝি গোষ্ঠী আছে এদেশে, যাদের ভাব ও ব্যঁজনা দেখলে মনে হয় তারাই এদেশে বিজ্ঞানচর্চার দায়িত্বভার হাইজ্যাক করেছে, বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরীর ঠিকাদারিত্ব নিয়েছে। এই জনপ্রিয় গোষ্ঠীকে ঠিক মধ্যপন্থী বলা যাবে না, কারণ ধর্ম ও বিজ্ঞানের আলোচনায় এরা কখনও ধর্মকে টানে না। বিজ্ঞানের বিপরীতে তারা যে শব্দটা ব্যবহার করে সেটি হলো ‘কুসংস্কার’। এর মানে এই নয় যে তারা ধর্মকে ‘কুসংস্কার’ বলছে, বরং এর মানে এই যে, তারা ধর্মকে সুরক্ষা দিয়ে, একাধারে ধর্মের মৌলবাদী ছোবল থেকে নিজেদের গর্দানও বাঁচাতে যেমন সক্ষম হয়, তেমনি বিজ্ঞানচর্চার নামে তারা নিজেদেরকে আধুনিক একবিংশ শতকের মানুষ হিসেবে তুলে ধরতে পারে। এরা নাস্তিকতা ঠিক পছন্দ করে না। ধর্ম ব্যবসায়ীরা যেমন বিজ্ঞানী-বিজ্ঞানলেখক-নাস্তিকদের এক কথায় বিজ্ঞানমনস্কদের সহ্য করতে পারে না তার ব্যবসার ব্যঘাত ঘটাবে বলে, এই তথাকথিত-স্বঘোষিত বিজ্ঞানমনস্ক গোষ্ঠীও নাস্তিকদের সহ্য করতে পারে না কারণ তারা মনে করে নাস্তিকদের স্পষ্টবাদীতা তাদের ব্যবসায় ব্যঘাত ঘটাবে। কার্ল মার্কস ধর্মকে আফিম বলার পরেও এদেশের বামপন্থীরা যেভাবে নাস্তিকদের ঘৃণা করে ধর্মবাদের সাথে সঙ্গম করে, এরাও ঠিক ‘হাজার বছরের কুসংস্কার (ধর্ম শব্দটা এরা ব্যবহার করে না পূর্বেই বলেছি) হুট করেই দূর হবে না’- বলে নাস্তিকদের ঘৃণা কোরে ধর্মের প্রসঙ্গে শৈথিল্য ও সদ্ভাব বজায় রাখে। ব্যক্তিগতভাবে এই গোষ্ঠীটাকে আমি জঙ্গী সংগঠনগুলোর চেয়েও বেশি বিপদজনক মনে করি। কারণ মৌলবাদীদের অবস্থান স্পষ্ট, নাস্তিকদের যেমন, কিন্তু এরা বাতাস বুঝে কোন দিকে পাল তুলবে সেটা বলা মুসকিল এবং প্রতিক্রিয়া স্বরুপ কি ক্ষতি হবে সেটাও আগের থেকেই অনুমান করে সাবধানতা অবলম্বন করা যায় না। তাই এদের অনেকের সাথে মৌলবাদীদের সখ্য হয়। জিরো টু ইনফিনিটি এর সাথে মৌলবাদী ব্লগার ত্রিভূজের সম্পৃক্ত থাকা তারই একটা ভয়াবহ নজির হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
ধর্মবিষয়ক লেখক ও বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক গোষ্ঠীর লেখার বিষয়ের পার্থক্যটা সংগাতেই স্পষ্ট, কিন্ত এদের ভেতরে চর্চাগত একটা মিলও দেখতে পাওয়া যায়, উপোরক্ত ছদ্ম-মধ্যপন্থী গোষ্ঠীর বিজ্ঞান-লেখকদের কারনে, যারা লেখে বিজ্ঞান বিষয়ে কিন্তু ধর্ম বিষয়ক লেখকদের মত তারাও মনস্তত্বে চর্চা করে মধ্যযুগীয়-ধর্মকে। ঠিক এ কারণের বারবার সততার প্রশ্ন উঠে আসে। অভিজিৎ রায় হত্যা পরবর্তী সময়ে বুয়েটের যে শিক্ষক আলোচনায় আসেন, আমি তার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে আঁতকে উঠি। ধর্ম এর জায়গায় লেখা মুসলিম-সুন্নী! তার অনেক ভক্ত-শিষ্যকে আমি চিনতাম, তাদের ঐ অস্পষ্ট চেতনার জগৎটা সম্পর্কেও আমার ধারণা ছিল, এরপরে একে একে তার বেশকিছু ভক্তবৃন্দের প্রোফাইল দেখলাম, তার সহধর্মিনীরটিও তার থেকে ভিন্ন নয়। এই ভদ্রমহিলা তার এক নাতিদীর্ঘ স্ট্যাটাসে অভিজিৎ রায়কে দাদা সম্বোধন করে একটি বাক্যতে লিখেছেন যে, তার দাদা যেখানেই থাকুন না কেন যেন তার ও তার হাজবেন্ড এর জন্য প্রার্থনা করেন যেন তারা সকল ভুল বোঝাবুঝি অবসান তারা করতে পারেন। একজন সদ্য প্রয়াত নিধার্মিক-নাস্তিক মানুষকে প্রার্থনা করাতে চাওয়ার মাধ্যমে এভাবে স্মরণ করা ভদ্রতা-সম্মানবোধের খাতিরে ঠিক কোন স্তরে পরে সেটা বোঝাই যায়। বুয়েটের শিক্ষক ভদ্র লোকটি অভিজিৎ রায় এর হত্যার পরে অনেকদিন মুখ খোলেন নি, পরবর্তীতে তিনি তার ভয়ের কথা জানিয়েছেন ও উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলা বিষয়ক পোস্ট দিয়েছেন। এ ধরণের ব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করে এই গোষ্ঠী নিয়ে ভাবি, ধর্মবিশ্বাস ও এই মানসিক স্থুলতায় তারা কিভাবে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করার সাহস পান? উত্তরটা বেশ উপলব্ধি করা যায়, মৌলবাদীরা এদের নিয়ে সংকীত নয়, কারণ এরা ব্যক্তিচর্চা-চেতনা ও কাজে বিজ্ঞানমনস্ক নয় যে এদের অস্তিত্ব দেশে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরীতে ভূমিকা রাখবে। আর এরা ভিত, পরাজিত, এদেরকে নতুন করে ভয় দেখানোর দরকার পরে না মৌলবাদীদের বরং এদের সাহচর্যে মৌলবাদীরা চলাফেরা করে। অপরদিকে অভিজিৎ রায় এর বলিষ্ঠ ও স্পষ্ট উচ্চারণ আমার স্মৃতি-চেতনায় ভাস্মর হয়ে ওঠে, যার মূলে রয়েছে নিজের আদর্শ ও চেতনার প্রতি দায়বদ্ধতাজাত সততা, “যারা ভাবে বিনা রক্তে বিজয় অর্জিত হয়ে যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের মত জিনিস নিয়ে যখন থেকে আমরা লেখা শুরু করেছি, জেনেছি জীবন হাতে নিয়েই লেখালিখি করছি।”
বিজ্ঞানকে-নতুনকে-সত্যকে গ্রহনের মানদন্ড হতে হবে সততা ও শক্তি। বর্তমানে আমাদের দেশে এ দুটোরই বড় অভাব। তাইতো এদেশ হয়ে যাচ্ছে মৌলবাদীদের যারা জন-সাধারণের ভয়কে কব্জা করে টিকে আছে। এদেশ হয়ে যাচ্ছে সেই সব সুবিধাবাদী-স্ববিরোধী-ছদ্মমধ্যপন্থী-ভন্ড গোষ্ঠীর যারা দুর্নীতিপরায়ন এই দেশেকে নিজেদের অসততা চাষ করার উর্বর ক্ষেত্র বানিয়েছে। যখন এরা ঘোষণা দিয়ে এক হবে, সেদিন না থাকবে বিজ্ঞান, না থাকবে দেশপ্রেম, না থাকবে দেশ। বাংলাদেশ হবে বাংলাস্তান।
তাই আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা ছদ্ম-বিজ্ঞানমনস্ক হবো, নাকি প্রকৃত বিজ্ঞানমনস্ক। আমাদের এখনই ঠিক করতে হবে আমরা কোন পথে হাটব, কোন পথের সাথে আমার বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দেবো, আমাদের এখনই বাছাই করতে হবে সে পথ, যে পথ হবে স্ববিরোধী ভন্ডদের দেখিয়ে দেয়া পথ নাকি একজন সৎ ও সাহসী অভিজিৎ রায় এর বিনির্মিত পথ, যে পথে হেটে তিনি মৃত্যুকে পর্যন্ত জয় করে আমাদের চেতনায় ভাস্মর থাকবেন ঠিক ততদিন যতদিন এদেশে মুক্তমনের চর্চা থাকবে। আসুন, আমরা অভিজিৎ অভিমুখে অভিযাত্রী হই।
ধর্মীয় কট্টর পন্থিরা মিথ্যা কিংবা অন্ধবিশ্বাস যাই ধারণ করে চলুক না কেন- তারা অনেক সুসংগঠিত, তাদের ভিত্তি অনেক মজবুত! সেই তুলনায় Atheist Group অনেক দূর্বল, অনেক Scatter .
বিজ্ঞান ও ধর্মের পারস্পারিক সংঘর্ষ মনে হয় একটি চলমান প্রক্ক্রিয়া।কবে এর বিলুপ্তি ঘটবে কেউ জানে না।মনে হয় মানবজীবনে এর বিলুপ্তি হওয়া সুদূরপরাহত।
সমস্যা হচ্ছে যখন ডিগ্রিধারী এবং ছদ্দবিজ্ঞানী ও রাষ্টীয় সংস্থা একে ডিপেন্ড করে গনমানুষের উপর মানসিক ও শাররিক অত্যাচার চালায়…।।
জোর পূর্বক যত বিজ্ঞান ও ধর্মের সঙ্গম ঘটানোর চেষ্টা চলবে তত বাবু, অভিজিৎ, রাজীব, আজাদদের জীবন যাবে….
হ্যা, এবং ঠিক এ কারণেই প্রকৃত প্রগতিশীল ও নাস্তিকদের কমিউনিটিটা এত ছোট। তাই এদের সামষ্টিক অণুনাদ-আওয়াজ ছোট।
মৌলবাদীদের পরিকল্পনা দীর্ঘ-মেয়াদী, বিশ-পঞ্চাশ শত বছরের, তারা জানে বিজ্ঞানের প্রসার ও প্রচারও দু-রাতের বিষয় নয়। তাই তারা মুক্তমনাদের ভয় পায়। এবং ঠিক এ কারণের দেশপ্রেমের ইজারা নেয়া আওয়ামী লীগের মত দলের কাছে মুক্তমনাদের কোন দাম নেই। তারা অর্থ-সন্ত্রাসী ক্ষমতা বোঝে, হেফাজতী-মৌলবাদী মহাত্রাস বোঝে, গদি হারানোর ভয় পায়, তাই সমীহ করে। তাই ছোট মুক্তমনা কমিউনিটির সদস্যদের গ্রেফতার, তাদের মরতে দেয়ার পরোক্ষ ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব নেয়।
ছদ্ম-মধ্যপন্থী যে গোষ্ঠীর কথা আমি এই লেখায় বলেছি, তাদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এবং এদের অবস্থানটা বেশি বিপদজনক, কারণ এদের বুঝে উঠতে অনেকে সময় লাগিয়ে ফেলে। আর, এদের উপস্থিতি মূলত মৌলবাদীদের সেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে, যা আমি শুরুতে বলেছি। আর একেকজন করে মুক্তমনার লাশ প’রে।
একটা জিনিস একই সাথে সাদা এবং কালো হতে পারে না। যে বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে, সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করতে চাইবে সে কোন কিছু নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করবে না। বিশ্বাস ধর্ম, প্রশ্ন-যুক্তি বিজ্ঞান।
বাংলা সিনেমার ডাক্তারদের মত, আমার হাতে এখন কিছু নেই, বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে, দোয়া করুন টাইপ সংলাপ শুধু মানুষের দুর্বল মনের গোঁজামিলের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
সমস্ত মিডিয়াতে, ধর্মসম্মত বিজ্ঞান কিংবা বিজ্ঞানসম্মত ধর্মের প্রবন্ধের জয় জয়কার দেখে মনে হয়, অভিজিৎ ভাই কাদের জন্যে প্রাণ দিলেন?!
হিরন্ময় তোমার লেখাটায় মন্তব্য করতে দেরী হলো এই জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এখানে এসে মন্তব্য দেখে বিস্মিত হচ্ছি।
মুক্তমনায় বিজ্ঞান আর ধর্ম সাংঘর্ষিক নয় এই বিষয়টি যাচাই করতে কোন ব্যক্তিকে বিশেষভাবে দেখতে হবে এই জাতীয় মন্তব্য আমি কোন সময়ই আশা করিনি বিদগ্ধ কারো কাছ থেকে। হতাশা কেবল বাড়ছে; বিতর্ক করতে পারিনা বলে মুক্তমনায় কিছু লিখতে ভয়ই হয়। অযথা যুক্তির প্যাচে ডুবে যেতে যেতে মনে হয়, কি আসলে জানার চেষ্টা করছি আমরা। ধর্ম ( যাকে সিংহভাগ মানুষ ধর্ম বলে ) আর বিজ্ঞান এই সাথে লালন করা মানুষগুলোর কগনিটিভ ডিসোন্যান্স তাদের ইন্টেগ্রিটিকে আক্রান্ত করে এই সাধারণ যুক্তিটি খুব সহজবোধ্য। এই স্ববিরোধিতা কখনোই বৈজ্ঞানিক সততার পরিচয় বহন করেনা। বহু মানুষ এটি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছে, এখানে আসলেই আর কোন যুক্তির অবকাশ নেই। ধর্ম তার নিজের তাগিদে বিজ্ঞানের সাথে অ্যাকোমেডশন করার চেষ্টা করেই যাচ্ছে,এর পেছনে শক্তিশালী রাজনৈতিক লবি যেমন আছে,তেমনি আছে প্রচুর অর্থ। প্রচুর বিজ্ঞানী আছেন, আমি যেহেতু জীববিজ্ঞান কেন্দ্রিক লেখালেখি করছি, যেখানে যেমন একগ্রুপ ধর্ম আর বিজ্ঞানকে পৃথক ক্ষমতার বলয়ে রেখেছেন, অন্যগ্রুপ বিজ্ঞান আর ধর্মকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখেছেন, এরা অনেকেই বিখ্যাত লেখক, যেমন কেনেথ মিলার..যিনি বিবর্তন আর ইশ্বর বিশ্বাসে কোন সমস্যা দেখছেন না, বা বিখ্যাত গুল্ড যিনি বিজ্ঞান ও ধর্মকে নন ওভারল্যাপিং ম্যাজিস্টেরিয়া হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, কিছু মানুষ আছেন যারা আবার এই বিতর্কে নীরব থেকে ধর্মকে প্রকারন্তরে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। আবার দেখো অন্যদিকে কার্ট ওয়াইজও আছেন, যিনি গুল্ড এর ছাত্র হার্ভার্ড পাশ ভূতাত্ত্বিক, তিনি বিজ্ঞান আর ধর্মকে একসাথে ধরে রাখেননি, বরং সৎ মৌলবাদী হিসাবে বিজ্ঞান থেকে সরে গেছেন। তিনি এই স্ববিরোধিতা ধরে রেখে কোন ভন্ডামি করেননি। আমাদের এমনকি কারো রেফারেন্স এরই প্রয়োজন নেই। কেউ যদি এই ধরণের কগনিটিভ ডিসোন্যান্স নিয়ে কোন বিজ্ঞান বই লেখে, সেই বই আমি অজান্তে হয়তো পড়তে পারি, কিন্তু সজ্ঞানে কখনোই না। কারণ তার লেখা যতই মোহনীয় হোক না কেন, সেই ব্যক্তিমানুষটির চিন্তা ও তার আদর্শগত অবস্থান আমরা জন্য বিবেচ্য বিষয়, তার হঠকারী অবস্থান তার সৃষ্টি দিয়ে বিচার করার কোন দরকার নেই, কারণ আমাদের হাতে অসংখ্য সৎ লেখকের বিকল্প আছে। ডকিন্স সম্ভবত বলেছিলেন, জীববিজ্ঞানে ঈশ্বরের কোন অবস্থান নেই, পদার্থ বিজ্ঞানের র্যাবিট হোলে এখনও তিনি লুকিয়ে আছেন, কথাটা আজ নতুন করে অনুভব করলাম। স্টিফেন ওয়াইনবার্গ যেমনটি বলেছিলেন, বিজ্ঞান ঈশ্বর বিশ্বাসকে অসম্ভব করে তোলে না, এটি ঈশ্বর অবিশ্বাসকে সম্ভব করে তোলে। বিজ্ঞানের এই সহজ আশীর্বাদটি বিজ্ঞানের মত একটি বিষয় নিয়ে কাজ করা কোন মানুষকে সত্যটি দেখাতে পারেনা, সে যত সুন্দর লেখকই হোক না কেন, সে বিজ্ঞান মনস্ক না। আর আমাদের ছোট এই জীবনে তাদের জন্য সময় দেয়া নির্বুদ্ধিতা। এই ভূলের মাশুল সমাজ দিচ্ছে বহুদিন ধরে। মুক্তমনায় তোমার লেখা দেখে খুবই ভালো লাগছে, আশা করি দমে যাবে না আমার মত এখানে লিখতে এসে। আমার শুভকামনা সব সময় তোমার সাথে।
আমার মন্তব্যের কারণে এখানে লেখালেখিতে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়ে থাকলে, আমি খুবই দুঃখিত। ভবিষ্যতে আরো পড়াশোনা করে মন্তব্য করব। আমার অনেক ধারণাই সম্ভবত অজ্ঞানতাপ্রসূত এবং পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না পারার ফল।
ধর্মমানা বিজ্ঞানলেখকদের চেনার উপায় কী? তাদের বর্জন করারও উপায় কী? আমরা কি লেখক দেখে বিবেচনা করবো? নাকি লেখা পড়ে?
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আমার লেখায় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে বোধ করি।
আপনি একজন ভন্ড লোককে যেভাবে, যে উপকরণ ও বিচার-বিশ্লেষণে খুঁজে বের করবেন, তার পরিচয় উন্মোচিত করেন, ঠিক সেভাবেই এসব ধর্মমনা বিজ্ঞান-লেখকদের পরিচয় পাবেন। আমরা জানি, স্ববিরোধী একজন ভন্ড মূলত তার ভন্ডামীর শুরু করে নিজের সাথেই ভন্ডামী করে, নিজের অবস্থান-চিন্তন-আদর্শ-কাজ এর সাথে ভন্ডামী করে। এ ধরনের স্ববিরোধী ভন্ডামীর খুব ভাল উদাহরন সে, যে ধর্ম মানে, নিজের ধর্মীয় পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরে, আবার নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক বিজ্ঞানলেখক বলে, যেখানে বিজ্ঞান ধর্মবিরোধী।
এদেরকে বর্জন করার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে, এদের ফাঁদে পা না দেয়া। এছাড়া, এরা নিজেদের যে পরিচয়ে সবার সামনে তুলে ধরে আদতে ধর্মের বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞান-বিজ্ঞানমনস্কতার অপমান করে বিজ্ঞান সম্পর্কে মানুষকে ভুল উপলব্ধি তৈরীতে, ভুল প্রতিবিম্ব তৈরীতে ভূমিকা রাখে ঠিক সেই পরিচয়ে তাদের গ্রহণ না করা, তাদেরকে নৈতিক স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। বিজ্ঞানের স্বার্থে এ ধরণের ভন্ডদের থেকে নিজেদের মনস্তত্ব নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
আমার একজন প্রিয় শিল্পী মানুষ আমাকে শিখিয়েছেন, প্রকৃত শিল্পীরা নিজেকেরকে, নিজেদের জীবনকেই একটা আস্ত শিল্পকর্ম করে গড়ে তোলেন। যে নিজে শিল্প হতে পারে নি, সে কিভাবে শিল্পী হবে? ঠিক তেমনি বিশ্বাসে ধর্মের চিজাদি লেহন করে কিভাবে একজন ধর্মমনা বিজ্ঞানমনস্ক হবে? হবে না। তার বিজ্ঞান-লেখাও হবে না সততা ও নৈতিকতার ফলশ্রুতি।
আপনি তাদের ব্যক্তি অবস্থান হোক বা লেখা- যে কোন একটি দেখেই তাদের পরিচয় উদ্ঘাটন করতে পারবেন। এরা উপরে উপরে স্ববিরোধী বিজ্ঞানমনস্ক, ভেতরে ভেতরে মৌলবাদী। সেটা তাদের লেখাতে ছাপ রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক।
ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী কে নিয়ে আমার বিস্তারিত কিছু বলা উচিত। কারণ, অভিজিৎ দা’র মতো আমার সাথেও উনার যোগাযোগ ছিল। এই জানুয়ারিতে দেশে ছিলাম যখন তখনও যোগাযোগ হয়েছিল। হয়ত বিস্তারিত কোনো ব্লগে লিখব। এখানে আপনার লেখার সাথে প্রাসঙ্গিক দুয়েকটা কথা বলতে চাই।
এই কথাটা খুব খারাপ লেগেছে, এবং এর পিছনে আপনার যে মত কাজ করছে তাও আমি সমর্থন করি না। একজন বিজ্ঞান লেখক যদি পুরোদস্তুর ধার্মিক মুসলমান হন তাতে আমার মতে কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশের ইতিহাসেই এমন অনেকে ছিলেন যারা প্রচণ্ড ভালো বিজ্ঞান লেখক ও মানবতাবাদী ছিলেন এবং একইসাথে ছিলেন প্রায় ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ধার্মিক। সবচেয়ে ভালো উদাহরণ নিশ্চয়ই কাজী মোতাহার হোসেন, যিনি ‘গণিতশাস্ত্রের ইতিহাস’ নামক অনবদ্য বইটি লিখেছিলেন, এবং প্লেটোর প্রেমের সংলাপ, সমকামের সংলাপ সিম্পোজিয়াম বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন, এবং হয়ত প্রায় নিয়মিতই নামাজ পড়তেন। কেউ তার ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম, বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানমনস্কতা কে পাশাপাশি রাখার মতো সিস্টেম তৈরি করে নিতেই পারেন। আমি জানি যারা এমন সিস্টেম তৈরি করতে যান তাদের অনেকের মধ্যেই ভণ্ডামি, কপটতা আছে, কিন্তু সবার মধ্যেই তা আবশ্যিকভাবেই থাকবে এটা মানতে পারি না। আমি জানি মুক্তমনাতে অনেকেই আমার সাথে এ ব্যাপারে দ্বিমত করবেন, এবং এ নিয়ে আশাকরি মুক্তমনাতেই আরো বিস্তারিত আলোচনা হবে ভবিষ্যতে।
ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী যত ধার্মিকই হোন না কেন, সেটার কারণেই তার বিজ্ঞানলেখক পরিচয়কে কালিমাযুক্ত হতে হবে, সেটা একেবারেই মানা যায় না। তিনি ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান শব্দকোষ’ লিখেছিলেন যেটা আমি এখনো জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে কিছু লিখতে গেলে ব্যবহার করি। এখন উনি ধার্মিক না কি নির্ধার্মিক সেটার উপর এই বইয়ের গুরুত্ব একেবারেই নির্ভর করে না, ঠিক যেমন কাজী মোতাহার ধর্ম মানতেন কি না তার উপর ‘গণিতশাস্ত্রের ইতিহাস’ বইটির গুরুত্ব কোনোভাবেই নির্ভরশীল নয়। তবে উনার পরিচয় যে কারণে কালিমাযুক্ত হতে পারে সেটা হলো অভিজিৎ দা হত্যার পর উনার অক্রিয়তা।
ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী কে আমি যেভাবে চিনতাম, তাতে অভিজিৎ দা হত্যার পর উনার আচরণে খুব আশাহত হয়েছি। উনি যে আড্ডা আয়োজন করেছিলেন তা থেকে বোরোনর পথেই অভিজিৎ দা নিহত হয়েছেন, সুতরাং অন্য সবার চেয়ে এই ব্যাপারে উনারই সোচ্চার হওয়া দরকার ছিল সবচেয়ে বেশি। অথচ উনিই ছিলেন সবচেয়ে অক্রিয়। আমি আশা করেছিলাম উনি তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে যাবেন অভিজিৎ দা, বন্যা আপাকে দেখতে, অজয় রায়ের সাথে এত দেরিতে দেখা না করে কাজটা আরো আগে করবেন। উনি যেহেতু প্র্যাক্টিসিং মুসলমান, সেহেতু অভিজিৎ দা’র সাথে যে উনার ভালো যোগাযোগ ছিল সেটা সদর্পে সবাইকে জানালে সেটা বাঙালি মুসলমান সমাজের জন্যই আরো ইতিবাচক হতো। মুসলমানেরা বুঝত যে বাংলাদেশে এখনো নাস্তিক-ধার্মিক একত্রে আড্ডা দিতে পারে। তার কিছুই হলো না, উনি চুপ রইলেন।
কখন সক্রিয় হলেন ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী? অভিজিৎ রায় হত্যার পর নয়, যখন উনার নিজের স্বার্থে আঘাত লাগল তখন। আমি বারবার এটা দেখে বিস্মিত হচ্ছি যে, এরকম একটা হত্যার দৃষ্টান্ত চোখের সামনে থাকার পরও ফারসীম মান্নান এবং ফারহানা মান্নান নিজেদের হয়রানি নিয়েই বেশি চিন্তিত। রাস্তায় আততায়ীর চাপাতির কোপে নিহত হওয়ার ঘটনার চেয়ে উনাদের লেখাতে নিজেদের অাভিজাত্য-সম্মান রক্ষা ও হয়রানি-মুক্তির কথা অনেক অনেক বেশি। ফারহানা মান্নান তো ঘোষণাই দিয়ে দিলেন যে, “যা হচ্ছে এরপর আমি নিশ্চিত আর কোন ফারসীম ও ফারহানার সাথে আর কোনোও অভিজিৎ ও বন্যার বন্ধুত্ব হয়তো কখনই গড়ে উঠবে না।” হ্যাঁ, হয়তো নয়, আমি একেবারে নিশ্চিত, আর কোনোদিন কক্ষনো গড়ে উঠবে না। খোদা হাফেজ।
মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা।
আপনি শুরুতে প্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু আপনার মন্তব্যে স্পষ্ট যে, আপনি আমার লেখার মূল টোন ও কয়েকটি বিষয় এতটুকু ধরতে পারেন নি, বা ধরতে পারলেও উপরোক্ত মন্তব্যে সেটা আমলে আনেন নি। তাই আমাকে ধরে ধরেই বলতে হচ্ছে, খন্ড মন্তব্য করতে হচ্ছে।
লিখেছেন ‘একজন বিজ্ঞান লেখক যদি পুরোদস্তুর ধার্মিক মুসলমান হন তাতে আমার মতে কিছু যায় আসে না।’
অন্যদিক থেকে বলি, আপনার আমার কিছু যায় আসবার জন্য তারা হয়ত লেখেন কিনা সেটা এই রচনার আলোচ্য নয়। আর মুসলিম কেন? অনেক ধর্মের ধার্মিক-বিজ্ঞানীই বিজ্ঞানবিষয়ে লিখতে পারেন। NASA-এর মত প্ল্যাটফর্মে ৮% বিজ্ঞানী ঈশ্বরেও বিশ্বাস রাখেন। এমন অনেক উদাহরণই টানা যাবে। পুরোদস্তুর ঈমানদার মুসলিমেরা যে বিজ্ঞানবিষয়ে লিখতে পারেন সেটা আমি নাঙ্গাকাল থেকেই দেখে এসেছি। আমাদের স্কুল-কলেজের প্রায় সকল বিজ্ঞানবইই ধার্মিকদের লেখা। কিন্তু এই লিখতে পারা বলতে আমি শুধু মাত্র তাদের লেখার-জ্ঞানের সামর্থ্যকেই বোঝাচ্ছি। তারা নীতিগতভাবে চেতনাগতভাবে আদর্শগতভাবে লিখতে পারে কিনা সেটার আলোচনা উপরেই আছে, এবং উপরের মূলসুর যা আপনি আপনার মন্তব্যে আমলে আনেন নি- এরা আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে বিন্দুমাত্র বিজ্ঞান্মনস্কও নয়।
জনাব ফারসীম এর মত লেখকেরাও বিজ্ঞানের বই লেখে। লিখবেও। সে সাধারণ বিজ্ঞানের বই না লিখে ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান শব্দকোষ’ এর মত রেফারেবল বই লিখেছে বলে তাকে আপনি অসাধারণ বিজ্ঞানলেখকও বলুন, তাতে আমার আপত্তি না থাকতে পারে। কিন্তু এ ধরনের বই লেখায়, সে সুন্নী-মুসলিম-বিজ্ঞানলেখক থেকে বিজ্ঞানমনস্ক বিজ্ঞানলেখক হয়ে যায় নি। বিজ্ঞান ও ধর্ম মৌলিকভাবেই সাংঘর্ষিক জেনেও তারা বিজ্ঞানের বই লেখে। অনেকে পড়ে। এবং বিজ্ঞানবিষয়ে লেখার দরুন শব্দগতভাবে তাদেরকে বিজ্ঞানলেখকও বলা যাবে। এই যে বিষয়অন্তর্ভুক্তির নামাকরন, এটা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হতে পারে?
আমি তো শুরুতেই বলেছি, ‘ ধর্ম ও বিজ্ঞান মূলগতভাবেই সাংঘর্ষিক জেনেও এই স্ববিরোধী চেষ্টা তারা করে যায়… এবং আপনার কথাতে মনে হচ্ছে ঠিক এ কারণেই তাদেরকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। দুঃখিত, স্ববিরোধী হতে পারলাম না।
হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি যে আমার আগের মন্তব্যে আপনার লেখার মূলভাবটি ধর্তব্যের মধ্যে আনিনি। আর ঐ “কিছু যায় আসে না” বলাটা পুরোই অতিরঞ্জন হয়েছে। অবশ্যই কিছু আসে যায়। আসলে ঐ ফেসবুক প্রোফাইলে মুসলিম-সুন্নী লেখাটায় আপনি আঁতকে উঠেছেন, এটা মানতে পারিনি বলেই বোধহয় যুক্তির চেয়ে আবেগটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। এবারে আপনার মূলভাবটি অনুসরণ করেই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি।
আপনি বলেছেন:
১। ধর্ম ও বিজ্ঞান মূলগতভাবেই সাংঘর্ষিক।
২। সুতরাং কেউ একইসাথে বিজ্ঞানমনস্ক ও ধর্মমনস্ক হতে পারে না।
৩। ধর্মমনস্ক কেউ অনেক বড় বিজ্ঞানী, বা বিজ্ঞান লেখক হতে পারে, কিন্তু তাকে বিজ্ঞানমনস্ক বলা যাবে না।
এই যুক্তিটা খুবই সরল এবং শক্তিশালী। এখানে কোনোটাকে অস্বীকার করাটা আসলেই স্ববিরোধিতা হবে, যে কারণে আমার আগের মন্তব্যে স্ববিরোধিতা ছিল। এই যুক্তি মেনে নিয়েছি বলেই আমি নির্ধার্মিক। কিন্তু নিজেকে ছাড় না দিলেও আমি এ ব্যাপারে অন্য মানুষদের কিছুটা ছাড় দিতে রাজি আছি। কেউ যদি তার ব্যক্তিগত ধর্মের সংজ্ঞা নিজের মতো করে সম্পূর্ণ পাল্টে নিয়ে এমন করে ফেলে যে, তার ব্যক্তিগত জীবনে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার পরও তার সেই ধর্ম অবস্থান করতে পারে তাহলে আমি তাকে ভণ্ড বলতে চাই না, যদিও হয়ত তখনও তার মধ্যে কিছুটা স্ববিরোধিতা রয়েই যাবে। তবে যিনি নিজের ধর্মকে এতটা পাল্টে নিয়েছেন তার উচিত সবাইকে জানানো যে তার ধর্ম অন্য সবার ধর্মের মতো নয়। তাহলে সবাই বুঝবে যে ধর্ম একটা নমনীয় জিনিস হতে পারে যা সবাই যার যার মতো পালন করবে। এমনকি কোনো বিশ্বাসী মুসলমান যদি প্রকাশ্যে মদ্যপান করে, বিয়েবহির্ভূত সেক্স করে, এবং মৌলবাদী না হয়, ইসলামের সকল কিছুকে সমর্থন না জানায়, তাহলে আমি তাকে ভণ্ড বলতে নারাজ। হাজার হোক পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, কোনো প্রবল গোঁড়া ধর্ম হঠাৎ করে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, বরং সব হয়েছে ধীরে ধীরে, গোঁড়া ধর্মগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নমনীয় থেকে নমনীয়তর হতে থেকেছে। এই ধর্ম পাল্টে নেয়া, ধর্মকে নমনীয় করাকে আমি স্বাগতই জানাই। আর যারা ধর্মকে নমনীয় করে নেন তাদের মধ্যেও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ থাকতে পারেন, যদিও তার মধ্যে কিছুটা স্ববিরোধিতা হয়ত থেকেই যাবে। কিন্তু মানুষ মাত্রই স্ববিরোধী।
এক্ষেত্রে বার্ট্রান্ড রাসেলের কথা মনে পড়ে। উনি Religion and Science বইয়ে বলেছিলেন সবগুলো বড় ঐতিহাসিক ধর্মের তিনটি জিনিস আছে: “(১) একটি প্রতিষ্ঠান, (২) একটি মতবাদ, (৩) ব্যক্তিগত নৈতিকতার একটি বিধিমালা।” তার মতে যে সমস্ত ধর্মে বিভিন্ন অনুপাতে এই তিনটি জিনিসই বিদ্যমান সেগুলোর সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ অনিবার্য। কিন্তু একটি বিশুদ্ধ ব্যক্তিগত ধর্ম যদি বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণযোগ্য কোনো দাবী উত্থাপন না করে তাহলে, রাসেলের মতে, তা সর্বোৎকৃষ্ট বৈজ্ঞানিক যুগটিতেও নির্ঝঞ্জাটে থাকতে পারবে। এমন বিশুদ্ধ ব্যক্তিগত ধর্ম বাস্তবে নেই, কিন্তু কেউ যদি তার ধর্মকে তেমন করে নিতে চায় তাহলে করুক না। যেকোনো ধর্মকে প্রত্যেক মানুষের নিজের করে নেয়ার অধিকারকে আমি স্বীকৃতি দিতে চাই। এটা আমার দুর্বলতা। কারণ আমি দেখেছি যুগে যুগে অতিসামান্য পরিমাণে হলেও কিছু মানুষ কিভাবে ধর্মকে নিজের করে নিয়েছে।
অনেক মুসলমান হয়ত আমার কথাকে ভুল বুঝে প্রচার করতে পারেন যে, আমি ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ নেই বলছি, বা সকল মুসলমান বিজ্ঞানমনস্ককে ছাড় দিচ্ছি। আমি জানি, প্রায় সব মুসলমান বিজ্ঞানীচর্চাকারীই প্রকৃত অর্থে বিজ্ঞান কি বুঝেন না এবং বিজ্ঞানমনস্ক নন, এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এবং আমার এই কথাকে অপব্যবহার করে হয়ত অনেকে মৌলবাদীও নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক ভাবা শুরু করবেন। কিন্তু কি আর করার!
আমি কিন্তু ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী অসাধারণ বিজ্ঞান লেখক সেটা বলিনি, উনার কেবল ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান শব্দকোষ’ টাই আমি পড়েছি, এবং সেটার জন্য উনাকে অসাধারণ বলা যাবে না। আমি আসলে অসাধারণ বলতে চেয়েছিলাম কাজী মোতাহার হোসেন কে। আর আমি উপরে যে ধরণের ব্যক্তিধর্ম বিশিষ্ট বিজ্ঞানমনস্কের কথা বলেছি ফারসীম মান্নান যে তেমন সেটাও কিন্তু আমি জানি না। হতে পারে, উনি গোঁড়া ধার্মিক, বা অতিমাত্রায় স্ববিরোধী, আমি আসলেই জানি না। আমি শুধু এই সুযোগে ধর্মকে নমনীয় করে নেয়া মানুষের পক্ষে আমার কথাটা বলতে চেয়েছিলাম। এবং এই পক্ষে কথা বলার কারণে সবাই অটোমেটিক ছাড় পেয়ে যাবে না; প্রত্যেকের প্রতিটি বিশ্বাসকে আলাদা আলাদা ভাবে বিজ্ঞানের মুখোমুখি হতে হবে, এবং কেবল তখনই বুঝা সম্ভব তিনি স্ববিরোধী কি না।
তবে এখানে অসংলগ্ন কথাবার্তা থাকতে পারে, আবারও বলছি। ব্যাপারটা নিয়ে আমি নিজেও পুরোপুরি পরিষ্কার নই। ভেবেচিন্তে একটা বড় আকারের লেখা তৈরির পথে আছি। সেটার জন্য আরো সময় লাগবে। তবে আমার মোদ্দাকথা হচ্ছে:
১। ‘ধর্ম’ এবং বিজ্ঞান মূলগতভাবেই স্ববিরোধী।
২। তাই কেউ একইসাথে ধর্মমনস্ক ও বিজ্ঞানমনস্ক হলে তিনি হবেন স্ববিরোধী।
৩। তবে কেউ চাইলে ধর্মকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত করে নিয়ে তাকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে পারেন যাতে বিজ্ঞানের সাথে তার বিরোধ কমে যায়। তখন তিনি অপেক্ষাকৃত কম স্ববিরোধী হবেন। ক্ষেত্রবিশেষে হয়ত বিরোধটা তার কাছে একেবারেই থাকবে না। কিন্তু এই ধর্মের সাথে প্রতিষ্ঠিত ধর্মের মিল থাকবে খুবই কম।
আমার উপরের আপনাকে করা প্রথম মন্তব্যটি আপনার মন্তব্যের বাকি অংশটুকুরও উত্তর দিয়ে দেয়।
তারপরেও আলোচনা করছি।
আপনি এদেশের অনেক বিজ্ঞান লেখক ও মানবতাবাদী থাকবার কথা বলেছেন যারা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ধার্মিক। উদাহরণ হিসেবে কাজী মোতাহার হোসেন এর নামোল্লেখ করেছেন, এই লিস্ট, আরো বড় হতে পারে, সে বিষয়টিতেও আমি জ্ঞাত। বিদ্বেষ-হিংসা-সংহারী ধর্মের কোন অনুসারী মানবতাবাদী হলেও তাতে তার ধর্ম যেমন ভাল হয়ে যায় না (যদিও সে ধর্মের গায়ে পুষ্প-চন্দন ঠিকই অর্পিত হয়, যা দেখে অনেকে ধার্মিক হতে অনুপ্রাণিত হতে পারে তাদের মত মানবতাবাদী না হয়েই, এটাই স্ববিরোধী চর্চার ভয়ংকর দিক), ঠিক তেমনি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে অনেকে বিজ্ঞানসহ আপনার মত উদাহরণ টানার যোগ্য অনেক কিছু লিখলেও তারা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে যায় না, বরং তাদের স্ববিরোধীতাটা না বুঝে অনেকে ভেবে বসতে পারে ধর্ম ও বিজ্ঞান একে অন্যের সমতুল।
লিখেছেন ‘কেউ তার ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম, বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানমনস্কতা কে পাশাপাশি রাখার মতো সিস্টেম তৈরি করে নিতেই পারেন। আমি জানি যারা এমন সিস্টেম তৈরি করতে যান তাদের অনেকের মধ্যেই ভণ্ডামি, কপটতা আছে, কিন্তু সবার মধ্যেই তা আবশ্যিকভাবেই থাকবে এটা মানতে পারি না।’ হ্যা, সেটা করে তিনি মনে মনে তৃপ্তি পেতে পারেন। তার সময় ও পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের অনেকের বাহবাও পেতে পারেন। কিন্তু তাতে ধর্মমনস্কতা ও ছদ্ম-বিজ্ঞানমনস্কতা হয়ে যাবে না বিজ্ঞানমনস্কতা।
কাজী মোতাহার হোসেন, আরজ আলী মাতুব্বর সহ অনেকেই তাদের সময়কে পেরিয়ে গিয়েছিলেন। সেসময়ের মানুষেরা তাদের প্রতি যতনা কৃতজ্ঞ ছিল, এসময়ের মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা তার চেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ চিত্তে তাদের স্মরন করেন। আমিও তাদের বাইরে নই। কিন্তু তাদের প্রতি আমার এই ধন্যবাদ জ্ঞাপন, তাদের স্ববিরোধীতাটা বেশ মাথায় রেখেই জ্ঞাপিত। তাদের সময় সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। সেসময়ের প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় আনতে পারি। কিন্তু সময়-বিজ্ঞান এগিয়ে যায়, কারও জন্যে অপেক্ষা করে না। এটাই নিয়ত আত্মশুদ্ধির আগুনে সুন্দর হয়ে ওঠা বিজ্ঞানের চমৎকার দিক, যে আগুনে কালিক ধর্মপ্রচারক-সমাজচিন্তক-রেনেসানদেরও স্ববিরোধীতা ও বিভিন্ন দুর্বলতা ধরা পরে।
নাসা’র ঐ ৮% বিজ্ঞানীদের কথা আবার আনতে পারি। তাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা- ভাবনার টুল অবশ্যই বৈজ্ঞানিক- তেমন অনেক দিক বিবেচনায় তারা বিজ্ঞানমনস্কও। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্কতা তো একটা সার্বিক বিজ্ঞানভিত্তিক জীবন দর্শন। তাই ঈশ্বর এর অস্তিত্বে, পরোকালের পক্ষে একটাও প্রমান না থাকার পরেও তারা এইসব যে মেনে নেন- সেটা তাদের বিজ্ঞানী হওয়াতেই প্রামাণিত হয়ে যায় না, স্বত্বঃসিদ্ধ হয়ে যা না, বরং তাদের বিজ্ঞানমনস্কতাকেই প্রশ্ন বিদ্ধ করে। তাদের স্ববিরোধীতাটা ধরা পরে। বিজ্ঞানীদের এমন বিশ্বাসের জায়গাটা একান্তই চিরায়ত-চর্বিত মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। সেখানে না আছে বিজ্ঞান, না থাকতে পারে বিজ্ঞানমনস্কতা।
-এটা মেনে নেয়াই সততা। এটা মেনে নেয়াই বিজ্ঞানমনস্কতা, যেহেতু বিজ্ঞান কোন ভাবভিত্তিক-অপ্রমাণিক দর্শন নয়।
শুভ কামনা।
“বিদ্বেষ-হিংসা-সংহারী ধর্মের কোন অনুসারী মানবতাবাদী হলেও তাতে তার ধর্ম যেমন ভাল হয়ে যায় না।” — আমি বলিনি যে ভালো হয়ে যায়, আমার মতে কাজী মোতাহার হোসেন বা আবদুল ওদুদের ধর্ম “বিদ্বেষ-হিংসা-সংহারী” ছিল না। আর তারা ধার্মিক ছিলেন বলেই তাদের কারণে গোটা ইসলাম ধর্ম শুদ্ধ হয়ে যাবে সেরকম কোনো সরলীকরণও আমি করেছি বলে মনে পড়ছে না। ধর্মকে আমি একটা মনোলিথ হিসেবে দেখি না, এবং সবার নিজ নিজ ধর্ম তৈরি করে নেয়ার অধিকারকে স্বাগত জানাই।
আর যারা “ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম, বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানমনস্কতা কে পাশাপাশি রাখার মতো সিস্টেম তৈরি করে” নেন তাদের অধিকাংশ ছদ্ম-বিজ্ঞানমনস্ক হলেও, তাদের সবাইকে আমি তেমন মনে করি না। মোটকথা তাদেরকে আবশ্যিকভাবেই ছদ্ম-বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
আপনি মোতাহারদের যুগকে যেমন পশ্চাদপদ দেখালেন আমি সেরকম মনে করি না। আমি মনে করি ১৯২০–১৯৪০ এর ঢাকা আজকের ঢাকার চেয়ে প্রগতিশীল ছিল। আর আপনি বোধহয় মনে করছেন, আমি শিখা গোষ্ঠীর লোকদের মতো করে বিজ্ঞানের পাশাপাশি ইসলামকেও গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। সেরকম তো কক্ষনোই নয়, আমি নিজে তো কোনো ধর্মকে সার্বিকভাবে সমাজের জন্য শুভ মনে করি না। কিন্তু, কেউ যদি একটা ধর্ম নিজের জন্য বানিয়ে নেয় তাহলে কেবল সেই কারণে তার উপর আমি কোনো ভণ্ডামি আরোপ করব না; এটুকুই আমার কথা।
পরিশেষে রাসেলের কথাই বলি, “একটি বিশুদ্ধ ব্যক্তিগত ধর্ম যদি বিজ্ঞান দ্বারা যাচাইযোগ্য কোনো দাবী উত্থাপন না করে তাহলে তা সর্বোৎকৃষ্ট বৈজ্ঞানিক যুগটিতেও নির্ঝঞ্জাটে টিকে থাকতে পারবে।”
রাসেলের উক্তিটার মধ্যে আমি নিজেই এখন ঘাপলা খুঁজে পাচ্ছি। ভাবছি, আসলেই কি এমন কোনো দাবী উত্থাপন করা সম্ভব যেটা বিজ্ঞান দ্বারা যাচাইযোগ্য না? অভিজিৎ দা চলে যাওয়ার পর থেকেই আমি ধর্ম আর বিজ্ঞান নিয়ে নতুন করে পড়তে শুরু করেছি। সুতরাং আমার অবস্থা এখনও ‘নতুন মুসলমানের’ মতো। সুতরাং আমার কথা কেউ লবণ ছাড়া গ্রহণ কইরেন না।
এটা ঠিক যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমার অভিমত হলো বয়কট নয়, সতর্কতা দরকার। আর দরকার আগের চেয়েও তীব্র গতি। গতি লেখাতে ও মুক্তমনার মান অব্যাহত রাখাতে। শিল্পী আসমা সুলতানা মিতা ঠিকই বলেছেন। এধরনের পরিচয়েই আজ বাংলাদেশ। সেই বৃত্ত থেকে বেরোতে হবে। তবে আজ সত্যিই আমাদের আশে পাশে যারা ছিলো বন্ধু সজ্জ্বন পরিচয়ে তাদের অনেকের মুখোশ খুলে পড়েছে! একে ইতিবাচক ভাবেই দেখতে হবে। অভিজিৎদার দেখিয়ে যাওয়া পথ ধরেই আমরা চলবো, মুক্তমনা সে পথেই এগিয়ে যাবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যা, অনেকের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে, আবার নতুন নতুন অনেক মুখোশধারী আমাদের পথ মাড়ানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ওদের এই চক্রব্যুহ এই দেশের মৌলিক পরিবর্তন ভিন্ন ভাঙ্গা সম্ভব নয়। তার জন আমাদের সততা ও সাহসিকতার মাধ্যমে কাজ করে যেতে হবে যেমন করেছেন অভিজিৎ রায়।
আমাদেরকে তৈরী হতে হবে, সমমনা মানুষদের সাথে একজোট হতে হবে। দেশে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ কে জনপ্রিয় করায় ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে করে মুক্তচর্চার প্রতি মানুষ সহনশীল হয়।
শুভ কামনা।
অভিজিৎদার দেখিয়ে যাওয়া পথ ধরেই আমরা চলবো, মুক্তমনা সে পথেই এগিয়ে যাবে।
সহমত !
খুব ভালো লিখেছো হিরন ।
আমরা আমাদের প্রিয় এক নক্ষত্রকে হারালাম । দেশের মুখোশধারী মানুষেরা (যা সংখ্যায় অধিকাংশ), মুখোশ বিহীন মানুষদেরকে খুব ভয় করে। আমি শিল্পকলার জগতের মানুষ , দেশে সেই জগতটার একটা বৃত্ত আছে, সেই বৃত্তে কেউ আটকা পড়লে, শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে, এমনি বিষাক্ত সেই বৃত্ত … সংকীর্ন, বিকৃত মানসিকতার সব মানুষের দল নিজেকে শিল্পী বলে পরিচয় দেয় । তারা নামাজ রোজা করেন, আবার শিল্পচর্চা করেন । হিজাবও পরেন । আগে অবশ্য তেমন কিছুই পরতেন না ।
ফারসিম ও ওনার স্ত্রী (যিনি নিজেকে সুন্নি শিল্পী বলে পরিচয় দেন )বছর দুয়েক আগে হয়তো আমাকে বন্ধু হবার অনুরোধ করেছিলেন । তাদেরকে ফেসবুকে জায়গাও দিয়ে ছিলাম কিছু দিনের জন্য । কিন্তু তাদের মধ্যে নিজেদেকে বাড়িয়ে দেখানোর প্রবনতা প্রবল । মানুষকে ব্যবহার করে নিজের নাম বিক্রি করাও তাদের পেশার অংশ । গড ডিল্যুশন প্রকাশে বাধা দেয়ায় তার সূক্ষ্ণ চাল থাকতে পারে বলে আমি মনে করি । সে অনেক কথা…তাকে অবশ্য বছর দুই আগেই বাতিল করেদিয়েছে ।আমার অসম্ভব ভন্ড মনে হয় মানুষটাকে ।
বিজ্ঞানচর্চাকারী, শিল্পচর্চাকারী, লেখক, কবি, সবাই কেমন যেনো শেষ পর্যন্ত একটা বৃত্তে আটকে আছে । যারা শুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা করেন , শিল্পের চর্চা করেন, বিজ্ঞানের চর্চা করেন, বাংলায় লেখার চর্চা করেন তাদের সংখ্যা এত কম যে তারা সহজেই সেই বিরাট সংখ্যার আবদ্ধ মানসিকতার হিংস্রতার শিকার হন এবং অকালে প্রাণ হারান ।
হুমায়ূন আহমেদ আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ লেখক । তাসলিমা নাসরিন শ্রেষ্ঠ নারীবাদী লেখক । আমাদের শিল্পীরা দোকানের ফিতা কাটতে ব্যাস্ত । তারাও জনপ্রিয় শিল্পী । আমাদের বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মাজাহার ও তার স্ত্রী । আমাদের অভিনেতা অনন্ত জলিল । অভিনেত্রি শাওন । আমাদের বিজ্ঞানী ফারসিম । আমাদের গায়িকা মিলা । আমাদের উপস্থাপক তুষার । আমরা আমাদের দেশ কে বিশ্বের কাছে কিভাবে উপস্থাপন করছি এদের মাধ্যমে!
সেখানে একজন নির্ভীক , সৎ, সাহসী, জ্ঞানী ও স্মার্ট মানুষকে তো অধিকাংশের কাছে উদ্ভট মনে হবেই । আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাতে হবে শৈশব থেকে । আমাদের শূন্য থেকে শুরু করত হবে পথচলা…. না হলে আমরা একের পর এক প্রিয় নক্ষত্রদের হারাতেই থাকবো …
((শুভকামনা))
ব্লগারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবীতে একটি “ব্লগার সমাবেশ” করা যেতে পারে, যেই সমাবেশ থেকে অভিজিৎ দা সহ সকল ব্লগার হত্যার বিচার দ্রুত করার দাবী জানানো হবে। সমাবেশে অভিজিৎ দা’র বাবাকে বিশেষ অতিথি করা যেতে পারে, এছাড়া কিছু লোকাল নেতাদের অামন্ত্রণ করা হবে। তারাও বক্তৃতা দিবে। সমাবেশটি অামাদের রংপুর মেডিকেল কলেজের গ্যালারীতে করা যেতে পারে। সবার সমর্থন থাকলে কলেজ প্রশাসন ও স্থানীয় ছাত্র নেতাদের অনুমতি নেয়া অামার কাছে অসম্ভব কিছু নয়। এভাবে অামাদের অান্দোলনের জন্য জনমত গঠন করা যেতে পারে। সবার মতামত অাশা করছি। ধন্যবাদ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভাল উদ্যোগ। এটা স্বাভাবিক যে রংপুরে তেমন কিছু করতে আপনাকে রংপুরস্থ প্রগতিশীল-মুক্তমনা ব্লগারদের খুঁজে বের করতে হবে। সংখ্যা বলে দেবে সমাবেশ সম্ভব হবে কিনা। আর ঢাকাতেই মুক্তমনা-ব্লগাররা নিরাপদ বোধ করেন না, সেখানে দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে পরিস্থিতি এর চেয়ে ভাল হবার কথা না।
আমার মনে হয়, সবার প্রথমে দরকার নিজ নিজ এলাকার সমমনা মানুষগুলোকে খুঁজে বের করা, একজোট হওয়া। এবং এলাকার যারা হিংস্র মৌলবাদী আছে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা। এভাবে সারা দেশে রেজিস্টেন্স গড়ে তুলতে হবে।
অভিজিৎ রায় এর অভিজিৎ রায় হয়ে ওঠাটা সারা জীবনের পরিশ্রম। আমাদেরও অস্থির হওয়া চলবে না, নিজেদের তৈরী করতে হবে, জোট বাধতে হবে, বুদ্ধিমত্তার সাথে এগুতে হবে।
শুভ কামনা।