দেশের মানুষ পুড়ছে আগুনে। পেট্রোল বোমা ও ককটেল ছুড়ে মারা হচ্ছে সাধারণ মানুষ কিংবা মনুষ্যবাহী যানবাহনকে লক্ষ্য করে। আগুনে দগ্ধ মানুষ-কেউ অক্কা পাচ্ছে অকালে, আর কেউ অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেডিকেল হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে-প্রহর গুণছে আসন্ন মৃত্যুর।
আমাদের জনদরদী নেতা-নেত্রীরা-যারা সুশোভিত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসায় কিংবা অফিস কক্ষে বসে এসব লোমহর্ষক দৃশ্য উপভোগ করছেন নিরুদ্বেগে-এসব গণহত্যার দায়িত্ব তারা কেউ নিতে চান না একদম। অবশ্য তারা ইতোমধ্যে জীবন্ত দগ্ধ মানুষের রুহের মাগফেরাত কামনা করে গায়েবানা জানাজা ও দোয়া মাহফিল করেছেন-সারা দেশে-আল্লাহ যেন তাদের বেহেস্ত নসীব করে। দেশের নিরীহ জনগণের সাথে কি নিষ্ঠুর ও নির্লজ্জ তামাশা !
কারা মারছে এ পেট্রোল বোমা ও ককটেল-সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে ? আওয়ামী লীগ বা সরকার বলছেন- জামাত শিবির ও বিএনপি জোট।
যেহেতু বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের সময় এগুলো মারা হচ্ছে-মানুষ যাতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রাস্তায় বের না হয়-যাতে হরতাল অবরোধ সফল হয়, সেহেতু এ সন্ত্রাসী হামলার দায় অপরিহার্যভাবে বর্তায় আন্দোলন আহ্বানকারী দল বা জোটের উপর।
আবার কোথাও কোথাও সরকারী দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীও বোমাসহ গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে। তাই বিএনপি বলছে-সরকারী দল বা সরকারী এজেন্সী এসব করছে।
উভয় পক্ষই তীব্র নিন্দা করছে বোমাবাজদের। কঠোর শাস্তির দাবীও করছে তারা। তবে এ বোমাবাজ কারা? এরা কি ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা কোন এলিয়েন ? যদি তাই হয়, তারাই বা কেন এদেশের গরীব আমজনতার উপর এত ক্ষুদ্ধ হল?
জানি এসব প্রশ্নের কোর সদুত্তর নেই।
উদর পূর্তির আদিম তাগিদে রাস্তায় বের হওয়া অতিসাধারণ মানুষ-রিক্সাওয়ালা, ভ্যানগাড়ী ওয়ালা, ট্রাক-বাস-টেক্সি-লেগুনা ড্রাইবার-যানবাহনের নিরীহ যাত্রী-নারী-শিশু আবাল বৃদ্ধ-বণিতা-সমাজের সর্বস্তরের গরীব মানুষ দগ্ধ হচ্ছে এসব পেট্রোল বোমার আগুনে-প্রাণ দিচ্ছে অকাতরে।
অথচ দুর্নীতির বরপুত্র, এমনিতেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যে মারা গেল-তার দেশে ফেরার মিছিলে, গাড়ী বহরে, জানাজায়, কোথাও একটি পেট্রোল বোমা ফুটল না-যদিও অবরোধ তখনো বহাল ছিল।
২০১৪ ইং সালের ৫ ই জানুয়ারী তারিখে, দেশে অনুষ্ঠিত হল একটি জাতীয় নির্বাচন-যে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির পরিমাণ ছিল গড়ে ৫-১০ শতাংশ; অবশ্য লজ্জার মাথা খেয়ে, সরকারী দল, এমন কি প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দাবী করছেন ৪০ শতাংশ ভোটার নাকি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এ নির্বাচনে ১৫৪ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে একটি অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এমন একটি জাতীয় নির্বাচন, যেটাতে দেশের অর্ধেক মানুষ তাদের ভোটাধিকারও প্রয়োগ করার সুযোগ পায় নি।
নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের নেতারাসহ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী একাধিক বার বলেছিলেন-এ নির্বাচন হবে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। অর্থাৎ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য এ নির্বাচন ছিল অপরিহার্য। অথচ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর তারা সুর পাল্টে এখন বলছেন, ২০১৯ ইং সালের আগে, অর্থাৎ বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্তির একদিন আগেও কোন নির্বাচন নয়।
নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করা বিএনপি’এর নেতৃত্বাধীন জোট বলছে-দেশে চলছে একদলীয় স্বৈরশাসন-গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করবেন তারা। তারা নাকি মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছে।
বড় দুর্ভাগা এ দেশের মানুষ। রক্ত দিয়ে, সম্ভ্রম দিয়ে, তারা এদশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। কিন্তু তার সুফল থেকে তারা আজ বঞ্চিত। আজকের বাংলাদেশ তাদের সে স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়। এমন দুর্নীতিগ্রস্থ, সন্ত্রাসাক্রান্ত, রাষ্ট্রধর্মের তকমা আটা ধর্মান্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়েতো তারা যুদ্ধ করে নি। আজ স্বাধীনদেশেও গণতন্ত্রের জন্য তাদের জীবন দিতে হয়। আর সে তথাকথিত গণতন্ত্রের সিড়ি বেয়ে ক্ষমতায় যায় দুর্নীতিতে আকণ্ঠ-নিমজ্জিত লুটেরা রাজনৈতিক নেতারা।
তারা এখনো চিনতে ভুল করে, কে বা কারা আসলে তাদের প্রকৃত বন্ধু।
তারা ভুলে যায়-যে সমস্ত দল বা নেতা-নেত্রীরা দেশনেত্রী ও জননেত্রীর তকমা এটে অহরহ তাদের জন্য মায়াকান্না কাঁদে, তারা সকলেই আসলে মুখোশধারী দক্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রী। মুখোশের আড়ালে তাদের চেহারা বড়ই খুৎসিৎ, বড়ই নোংরা। আসলে তারা কেউই জনগণের সুখ-দু:খ, ভূত-ভবিষ্যত নিয়ে আদৌ চিন্তিত নয়।
তাদের সকল চিন্তা কেবল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তারা কিভাবে আকঁড়ে ধরে রাখবে, কিংবা কিভাবে ক্ষমতা লাভ করবে। তারা গণতন্ত্রের জিকির করে, অথচ তারা কেউই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
তাদের স্ব স্ব দলে গণতন্ত্রের লেশমাত্র চর্চা নেই। তাদের কাছে গণতন্ত্রের একটিই সংজ্ঞা-তাহল এদেশের সহজ-সরল আম জনগণকে ভোলবাল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করে, কোন রকমে বোকা বানিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। এক্ষেত্রে তাদের কেউ ব্যবহার করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, আর কেউ ব্যবহার করছে ধর্ম ও তথাকথিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে ।
তাদের দলের কোন নেতা কর্মীদের ভোটে নির্বাচিত হয় না। নেত্রীরা তাদের নিয়োগ দেন। একটি কর্পোরেট অফিসের কর্মকর্তার মত তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হন-কখনো স্থায়ীভাবে, কখনো ভারপ্রাপ্ত হয়ে ।
তাদের দলে আলোচনা-সমালোচনার কোন সুযোগ নেই। তাদের নেত্রীর বাণী তাদের কাছে বেদবাক্য সম। হীরক রাজার দেশের মত, তাদের আপ্ত বাক্য হল-নেত্রী (রাজা) বলেন যা-করতে হবে তা।
তারা দিনের পর দিন কার্যকরী কমিটির সভা করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না-সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার অর্পন করেন তাদের নেত্রীর উপর। তারা বিশ্বাস করে, তাদের নেত্রী কোন ভুল করতে পারে না-the queen can do no wrong।
তারা বিশ্বাস করে-তাদের নেত্রী ও তদীয় নিকটাত্মীয়রা ধোয়া তুলসী পাতা। তারা কোন অন্যায়, দুর্নীতি করতে পারে না। করলেও সেটা কোন গ্রাহ্য বিষয় নয়। রাজা-বাদশাহদের ছেলেপুলেদের নাকি একটু-আধটু দোষ থাকতেই পারে।
তাদের কাছে দুর্নীতি খারাপ কাজ বলে আর নিন্দনীয় নয়। এ গরীব দেশের গরীব মানুষদের ভাগ্য বিড়ম্বিত করে, হাজার হাজার কোটি টাকা যারা বিদেশ পাচার করে, যারা শত কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে জাতীয় নানা উন্নয়ন প্রজেক্ট বিদেশী বিশেষ কোন কোম্পানীকে টেন্ডার পাইয়ে দেয়, এ সকল ব্যক্তিদের তারা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে না। বরং তাদের কাছে তারা আজ সর্বাপেক্ষা সন্মানিত ব্যক্তি। তাই তাদের জানাজায় লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের জন্য জেলায় জেলায়, থানায় থানায় গায়েবানা জানাজা হয়। সারাদেশ ছেয়ে যায় শোকের কালো ব্যানারে। অথচ আগুনে পুড়ে কয়লা হওয়া নিরাপরাধ মানুষগুলোর জন্য কোথাও কোন কাল ব্যানার নেই।
আমাদের আজ বুঝতে হবে-কেবল ভোটাধিকার নিশ্চিত হলেই গণতন্ত্র অর্জিত হবে না। ভোট দিয়ে সরকার গঠন করলেও সে সরকার যদি ক্ষমতায় দিয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়, দলবাজি করে, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়, ক্রস ফায়ারে মানুষ মারে-তাহলে সে সরকার তো আর গণতান্ত্রিক থাকে না। আজ যারা ক্ষমতার মসনদে বসে গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দিচ্ছে বলে দাবী করছে, আর যারা গণতন্ত্র কায়েমের জন্য আমাজনগণকে জিম্মি করে, বলির পাঠা বানিয়ে তথাকথিত আন্দোলন করছে-তাদেরকে বহুবার আমারা ক্ষমতায় দেখেছি। ক্ষমতায় থাকার অবস্থায় তারা কেউই গণতান্ত্রিক আচরণ করে নি বা করছে না। কেউই আইনের শাসন কায়েম করার কোন উদ্যোগ নেয় নি। অপারেশন ক্লিন হার্ট থেকে ক্রস ফায়ার, এসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কারা কারা করেছে সব আমাদের জানা আছে। দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও দলবাজি তাদের অলঙ্কার। ঘুষ, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, হাট-বাজার এর ইজারা, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ ইত্যাদি আজ রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমার্থক হয়ে গেছে। তাই তাদের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলে, জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। বরং জনগণ বারংবার উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে নিক্ষিপ্ত হবে।
ভাবতে অবাক লাগে-এদেশের আমজনগণ-একাত্তুরে যারা রুখে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানী হায়না ও তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর রাজাকারদের বিরুদ্ধে-সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল দেশের স্বাধীনতা, তারা আজ সবকিছু যেন মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে। সকল অন্যায় অবিচার মুখ বুজে সহ্য করার এক নিষ্ক্রিয়তা তাদেরকে যেন বুদ্ করে রেখেছে।
না-যাদের ধমনীতে এখনো শহীদের রক্ত, বুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, তারা কখনো পরাভব মানে না-মানতে পারে না।
আসুন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল আমজনতা রুখে দাঁড়াই্- জনগণকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার জন্য প্রচণ্ড ঝাকুনি দিই-আর তারস্বরে বলি -এদেশ আমার-আমিই বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্র, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি-সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। সংঘাতময়, আদর্শহীন দুর্নীতিপরায়ন ও দুর্বৃত্ত কবলিত এ রাজনীতির বিরুদ্ধে আর একটি গণজাগরণ সৃষ্টি করি। এ ছাড়া মুক্তির কোন বিকল্প নেই।
‘আসুন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল আমজনতা রুখে দাঁড়াই- জনগণকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার জন্য প্রচণ্ড ঝাকুনি দিই-আর তারস্বরে বলি -এদেশ আমার-আমিই বাংলাদেশ।’
এ লাইনটুকু পড়ে খুবই অবাক হলাম এবং সাথে সাথে আশ্চার্যও হলাম লেখকের এমন কথা বলার সাহস দেখে। বাংলাদেশের একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে এমন কথা বলার বাস্তবে কি আমার বা আমাদের মত সাধারন জনগনের কোন অধিকার আছে? যদিও নিজের মনের মধ্যে এমন কিছু উদয় হয় বলার জন্য, তবে সর্বোচ্চ বাত রুমের দড়জা ভাল মত বন্ধ করে চিৎকার করে বলতে পারি, যেন অন্য কারও কান পর্যন্ত না পৌছায়, শুধুই মনের শান্তির জন্য, নিজেকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বলতে পারি। কেননা এদেশের প্রকৃত মালিক গনের কানে পৌছলে আস্ত রাখবে না। হয় দেশ থেকে বিতারিত করবে, না হয় পুড়ো পৃথিবী থেকে বিতারিত করবে।
বর্তমানে আমাদের দেশের মালিকতো শুধু মাত্র দুইটি পরিবার, শুধু মাত্রই দুইটি পরিবারেরই উত্তরাধিকারীগন। শুধু মাত্র তাদেরই পৈতৃক সম্পত্তি। এ কথা বলার অধিকারও শুধু মাত্র ঐ দু’টি পরিবারের উত্তরাধিকারীদেরই আছে। আমরা সাধারন জনগন তো কেবল মাত্র দু’পরিবারের সম্পত্তি ভাগাভাগিতে ব্যবহারের বস্তু বিশেষ। কার পরিবারের পাল্লায় আমাদের দেহের ওজন (মনের ওজন নয়) বেশি পড়ে, তা অবশ্য বিবেচিত হয় শুধু মাত্র সম্পত্তির দখল দারিত্ব অর্জনের জন্য। দু’পরিবারের ক্ষমতা দখল নিয়ে সৃষ্ট বিবাদ মেটানোর জন্য। তাতেও আমাদের রক্ষা নেই। কোন পরিবার আবার ক্ষমতা পাওয়ার পর এমন দাড়িঁ পাল্লায় উঠার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়। ভয়ে যদি অন্য পরিবারের পাল্লায় উঠে যাই? যদি ক্ষমতা অন্য পরিবারের ভাগে চলে যায়? এরপরও আমরা চুপচাপ থেকেও শান্তি পাই না! অন্য পরিবারের দ্বারা অত্যাচারিত হতে থাকি। পুড়ে মরতে থাকি নিক্ষেপিত প্রেট্রোল বোমায়। বের হতে পারিনা ঘর হতে। বের হলেও আতংক বিরাজ করে মনে সারাক্ষন কখন পুড়ে মরব এই ভয়ে। পরিবারও দুঃচিন্তায় থাকে সারাক্ষন, সুস্থ শরীরে ফিরে আসবে? না কি লাশ হয়ে ফিরবে অন্য হতভাগা নিরীহ জনেরই মত? এত আতংক নিয়ে কিভাবে বাঁচবো আমরা সাধারন জনগন?
লেখায় গনতন্ত্র রক্ষা ও গনতন্ত্র পূনঃউদ্ধার শব্দ গুলিও ব্যবহৃত হয়েছে এবং রক্ষা ও উদ্ধারের প্রদ্ধতিও আলোচিত হয়ছে।
আমি বুঝতে পারিনা আমাদের দেশে প্রকৃত যে শাসন ব্যবস্থা চালু আছে, সেটাকে গনতন্ত্র আখ্যায়িত করা হয় কোন যুক্তিতে? পৃথিবীর কোন দেশের বা কোন বইয়ের গনতন্ত্রের সংজ্ঞার সাথে কি কোন মিল খুজে পাওয়া যায় আমাদের দেশের প্রচলিত গনতন্ত্র? আসলে গনতন্ত্রের মুখোশ পরিহিত পরিবারতন্ত্র, গনতন্ত্রের ফাক খুজে বের করা এক অভিনব পরিবারতন্ত্রই মাত্র। আমি রাজতন্ত্রও বললো না, কেননা বর্তমানে পৃথিবীর যে সকল দেশে রাজতন্ত্র প্রচলিত আছে, সেগুলোর অধিকাংশই রাজতন্ত্রের আড়ালে আধুনিক গনতন্ত্রের চর্চা করছে।
বস্তুত আমাদের দেশের জনগন কে মহান দু’জন পরলোক গত ব্যাক্তির অর্জিত সাফল্য দ্বারা, তাঁদের গুনাবলী ও জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। একজন তাঁর সারাজীবনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে, নির্যাযিত হয়ে, জেল খেটে, মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম অবদান রেখে এবং শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য মৃত্যুবরন করে সাধারন জনগনের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। আর বর্তমানে তাঁর পরিবারের যোগ্য(!) উত্তরসুরী উক্ত ইমেজ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-চেতনা ইত্যাদি ব্যবহার করে দেশের ক্ষমতার একমাত্র দাবিদার এবং মালিক হচ্ছেন।
অপর পরিবার একজন সামরিক সেনা অফিসার কর্তৃক গৃহিত ক্ষমতা এবং তার পরবর্তিতে অতি সুকৌশলে বেকুব সাধারন জনগনের হৃদয়ে জায়গা করে অর্জিত জনপ্রিয়তা কে কাজে লাগিয়ে দেশের ক্ষমতার ভাগিদ্বার হয়েছেন। বর্তমানেও কেবল মাত্র ঐ পরিবারেরই সুযোগ্য(!) উত্তরাধীকারিই কেবল ক্ষমতা পাওয়ার অধিকার রাখেন।
এ দুই পরিবার হতে ইতি মধ্যে অবশ্য আমাদের ভবিষ্যত ক্ষমতার মালিক গনও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছেন, পরিচিত হচ্ছেন হতভাগা জাতির সাথে, আশ্বস্ত করছেন এই বলে, ‘অপেক্ষা করুন, আমরা দু’জনও তৈরী হয়ে আছি, আমাদের পূর্বসুরীদের ভাগাভাগি খেলা শেষ হলেই আমরা মাঠে নামবো। শুরু করবো আমরা দু’জন, ক্ষমতা ভাগাভাগি খেলা, রেহাই দিব না কোন দিনও, যতদিন বেঁচে থাকবে আমাদের বংশধর, আর সাথে এ দেশের বেকুব-অর্থব সাধারন জনগন।’
আসলে স্বাধারণ জনগন অসহায়। দেশ প্রধান দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। দেশের মানুষ হয় আওয়ামীলীগ না হয় বিএনপি এই দুই দল ছাড়া অন্য কোন দলের কথা চিন্তাও করতে পারে না। আরেকটা বড় ব্যাপার হল দেশের বেশির ভাগ মানুষই অশিক্ষিত এবং খেটে খাওয়া মানুষ। যেখানে দিনের খাবার ব্যবস্থা করতে হয় দিনে দিনেই, যেখানে সারাদিন পরিশ্রম করার পর রাতে ভাবতে হয় ভালোয় ভালোয় যেন আগামীকালটা কোন রকমে খাবার জোগাড় করতে পারে, সেখানে স্বাধারন মানুষ রাজনীতি নিয়ে ভাববে কখন? আর যারা একটু ভালো অবস্থায় আছে, যারা মধ্যবিত্ত তারা কোন রকমে দিন কাটায় ফলে রাজনীতি নিয়ে বা দেশকে নিয়ে ভাবলেও ব্যক্তিগত ভাবে কোন কিছু করার সাহস পায় না। মান সম্মান নিয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকতে পারলেই নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করে। ফলে তারা কেউ এই প্রধান দুই দলের বাইরে যেতে পারে না। কারণ এই দেশে আর কোন দল নেই । নতুন দল তৈরীও হয় না আর যদি নতুন দল তৈরীও হয় তবুও এই স্বাধারণ মানুষগুলো কোন নতুন দলের উপর ভরসা রাখতে পারে না। ফলে এই দেশে দলও দুইটা, মানুষও এই দুই দলের কাছে জিম্মি।
স্বাধারণ মানুষ জানে যে, তাদের এই দুই দলের কাছ থেকে মুক্তি নেই। আর এই দুই দলের একটি আরেকটির থেকে খুব একটা পার্থক্য নেই । যেন মুদ্রার এক পিঠ ও অন্য পিঠ। যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন স্বাধারণ মানুষের অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না। আর এটা অশিক্ষিত, মূর্খ জনগন খুব ভালো করেই জানে। তাই খেটে খাওয়া অশিক্ষিত মানুষগুলো মুখ বুজে সব অন্যায় সহ্য করে যাচ্ছে। যারা শিক্ষিত সচেতন নাগরিক তারা সংখ্যায় কম হওয়ায় প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাচ্ছে না। আর এই ব্যর্থতার জন্যও অনেক সচেতন মানুষ বাইরে এসে প্রতিবাদ করার ভরসা পাচ্ছে না বলে তাদের প্রতিবাদ অপ্রকাশিতই থেকে যাচ্ছে।
এতো হতাশার পরেও আশার কথা হচ্ছে দেশে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আর এদের মধ্যে বড় সংখ্যার মানুষ সচেতন হচ্ছে। যদিও এই বৃদ্ধি পাওয়া সচেতন মানুষগুলো অন্তরালে থেকে যাচ্ছে (কিন্তু একটা বড় সংখ্যা মাঠে নেমে প্রতিবাদ যানাচ্ছে) তবুও একথা আশার সাথে বলা যায় যে, এই শিক্ষিত সচেতন মানুষগুলোর সংখ্যা যতই বাড়তে থাকবে ততই প্রতিবাদীদের সংখ্যা বাড়বে। এবং এক সময় মানুষ দিন বদলের আশার আলো দেখতে পাবে। ফলে যারা অন্তরালে থেকে গেছে তারাও বাইরে এসে প্রতিবাদীদের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলবে।
যেদিন দেশের বড় সংখ্যার মানুষ শিক্ষিত সচেতন নাগরিকে পরিণত হবে সেদিনই এদেশ এই প্রধান দুই দলের কুৎসিত রাজনীতির হাত থেকে মুক্ত হতে পারবে।
দেশের মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে এবং সচেতন মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে । আর তাই অশুভ ক্ষমতার রাজনীতির মানুষগুলোর কাছ থেকে দেশের স্বাধারণ মানুষের মুক্তির দিন ক্রমেই নিকটে চলে আসছে।
বর্তমানে অশিক্ষিত অচেতন (নুংরা রাজনীতির, দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতালোভী এবং ভীতু) মানুষের সংখ্যা বেশী । কিন্তু যেদিন শিক্ষিত সচেতন মানুষের সংখ্যা বেশী হবে সেদিন প্রতিবাদীর সংখ্যাও বেশী হবে । আর সেদিনই এদেশে জিম্মি হওয়া স্বাধারণ অসহায় মানুষগুলো এই অশুভ দুই রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মুক্তি পাবে।
আর ততদিন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
কে কার বা কাদের সাথে নিষ্ঠুর তামাশা করছে ঠিক বুঝতে পরলাম না। যদি বলেন আমাদের নেতা নেত্রীরা সাধারণ জণগনের সাথে নিষ্ঠুর তামাশা করছেন।তবে বলবো আপনি ভুল বলছেন। আসলে আমরা সাধারণ জণগনই নেতা নেত্রীদের কাছে আমাদের উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছি।
প্রতিদিন যে সব নেতা নেত্রীর নির্দেশে আমারা পুড়ে কয়লা হচ্ছি সে সব নেতা নেত্রীর পুত্র বা কন্যার জানাযায় আমরা লক্ষ লক্ষ জনাতা হাজির হচ্ছি। আর আমাদের নেতা নেত্রিরা তাই দেখে আরো দিগুন উৎসাহে আমাদের পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিচ্ছেন।অথচ তাদের নির্দেশে পোড়া ব্যাক্তির জানাযায় আমরা ৫০০ জন হাজির হচ্ছিনা।পোড়া ব্যক্তি গুলোকে একটি টাকা দিয়ে সাহায্য করছি না।
এরপর যখন এসব নেতা নেত্রীরা নির্বাচনে দাঁড়াবে আমরা লক্ষ লক্ষ জনতা গরু ছাগলের মত পালে পালে গিয়ে তাদের ব্যলট বাক্স ভরিয়ে দিয়ে আসবো।তাদেরকে রাজা বা রাণী বানানোর উৎসাহ দেখে বিশ্বের কোন ব্যক্তি বুঝতে পারবে না যে এই রাজা রাণীরা আমাদের নিয়ে এতদিন এরকম নিষ্ঠুর তামাশা করেছে।
“মুক্তমনা” নামে মন্তব্য করলে সেটাকে ব্লগ কতৃপক্ষের বক্তব্য বলে মনে হতে পারে তাই এই নিকনেমটা থেকে ভবিষ্যতে মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না। লেখককে নিকনেম বদলাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
@মুক্তমনা মডারেটর,
শব্দটা বোধ হয় ‘হবেনা’।
ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ঠিক করে দেয়া হলো।
@মুক্তমনা মডারেটর,
একজন মুক্ত মনের মানুষ হিসাবে “মুক্তমনা” নামটি বেছে নিয়িছেলিাম, এতে কােন সমস্যা থাকতে পারে তখন বুঝিনি।কিছিদিন পর মডারেটর মেইল করে জানালেন এই নামটি ব্যবহার করলে সমস্যা হতে পারে তাই আমার “মুক্তমনা” নামের সাথে “অতিথি” শব্দটি যোগ করা হয়েছে। খুশি মনে মেনে নিলাম।তারপর থেকে আমার “মুক্তমনা” নামের সাথে”অতিথি” শব্দটি যােগ হয়ে মন্তব্য প্রকাশিত হলাে।
এতদনি পর মডারেটর জানালেন যে আর “মুক্তমনা” নামটিও ব্যবহার করা যাবে না। এবার আর খুশি হতে পারলাম না।এখন মনে হচ্ছে মুক্তমনা ব্লগ ঠিক আমার সাথে মুক্ত মনের পরিচয় দতিে পারলাে না। ধন্যবাদ।
@মুক্তমনা(অতিথি),
ভুল বোঝাবুঝির জন্য দুঃখিত। নামের সাথে অতিথি যুক্তকরা হয়েছিলো ঐ মন্তব্যের জন্য একটি সাময়িক সমাধান হিসাবে। অন্য পাঠকদের মাঝে আপনার মন্তব্যগুলো মুক্তমনা সাইটের অফিশিয়াল মন্তব্য মনে হতে পারে। সেই সম্ভাবনা এড়াতে আপনাকে নিক নেমটি পরিবর্তনের অনুরোধ করা হয়েছে।
হতাশার জন্য লিখাটি সম্পুর্ন পড়তেই পারলাম না।আর কত!