বছর পনেরো আগে আমার এক সাংবাদিক আত্মিয় গেলেন হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার নিতে তাঁর ধানমন্ডীর আগের বাসায়। রোজার মাস। সাংবাদিক রোজা রেখেছেন। বিকেলের পরের দিকে সময়টা। ঈফতারের আয়োজন প্রায় শেষের পর্যায়ে। হুমায়ূন আরো কিছু বন্ধু সমেত আড্ডা পেটাচ্ছেন, এবং আযানের আগেই খাচ্ছেন। হুট করে তাঁর মনে হলো সাংবাদিক রোজা না তো? জিজ্ঞেস করে জানলেন রিপোর্টার রোজাদার। অগত্যা আযানের পরই আবার খেলেন, রসিকতা করলেন ”তোমার সৌজন্যে আমাদেরও কিছু সওয়াব-টওয়াব হয়ে যেতে পারে।”
তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে পাড় নাস্তিক ছিলেন। জীবনেও ধর্ম-কর্মের ধার ধারেন নাই। ব্যাক্তিগত প্র্যাক্টিসে এসব রাখেন নাই। নাস্তিকদের যেমন ব্যাক্তিগত আইন-কানুন থাকে, দৃষ্টিভঙ্গী থাকে, তারও ছিলো।
বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টি ফেললে আমরা দেখতে পাবো, তাঁর লেখার পরতে-পরতে ধর্ম নিয়ে ফাইজলামী। এক ইউনুস নবীর মাছের পেট থেকে খালাস হবার কথিত ঘটনাটা খুব কম উপন্যাসই আছে যেখানে বিষয়টার কৌতুকময় উপস্থাপন নাই। হিমু ঝামেলায় পরে ফুপার সামনে বা পুলিশ কাস্টডিতে, তাঁর স্মরণ হয় দোয়া ইউনুস পড়ে ইউনুস নবী মাছের পেট থেকে খালাস পেয়েছিলেন, তাই কৌতুক করে হিমুর দোয়া ইউনুস পড়ার কথা মাথায় আসে।
জ্বীন নিয়ে বিস্তর দুষ্টুমী কথাবার্তা লেখা, সেইসাথে এ’ও উল্লেখ করা যে কোরআন শরীফে জ্বীনের উল্লেখ আছে। অর্থ্যাৎ ট্রিটিমেন্টটা হচ্ছে এহেন আজগুবী বিষয় কোরআন স্বীকার করে। যারা জ্বীন নামানোর কথা বলে ধান্দাবাজী করে বেড়ায় তাঁদের ব্যাপারে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন তিনি নিজ পরিবারের। যেখানে জ্বীন একটি মিথ্যা প্রপাগান্ডা হিসেবে প্রমাণিত হয়। অনেকগুলি মিসির আলি গল্পে নায়ক মিসির আলি জ্বীনের অস্তিত্ব ভুল প্রমাণ করে দেখান যে রুগী কোন জটিল মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
হুমায়ূনের লেখায় কথিত বেহেশতের হুরপরীর প্রসঙ্গ এমন ঠাট্টাচ্ছলে উল্লেখ করা হয়, যেকেউ বুঝতে পারবেন হুরের প্রতি লেখকের বিন্দুমাত্র আস্থাও নাই।
মিডিয়া জীবনে হুমায়ূন আহমেদের কাছের মানুষদের কাছেও অনুরূপটাই শুনেছি, তিনি ঘোর অবিশ্বাসী ছিলেন।
কিন্তু…
সেন্টু খাওয়ার বিষয়টা সামনে এসে দাঁড়ায় একাধিকবার। (১) ১৯৯৪ সালে (সম্ভবত) অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের উদ্যোগে একটা সাক্ষাৎকার ভিত্তিক বই প্রকাশিত হয়, ”হাজার প্রশ্নে হুমায়ূন”। মাহফুজ এক জায়গায় প্রশ্ন করেন,
– ”আপনি কি বিশ্বাসী?”
কিছু একটা বলে হুমায়ূন এড়িয়ে যান। মাহফুজ নাছোরবান্দা, এই উত্তর লাগবেই। তখন তিনি বলেন,
– ”হ্যাঁ, আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মাঝে-মাঝেই সন্দেহবাতিকতায় আক্রান্ত হই, আধুনিক মানুষের এই এক সমস্যা”। (স্মৃতি থেকে লিখছি, বাক্যগঠন হুবুহু এমনটা না’ও হতে পারে, তবে মানেটা এ’ই ছিলো)।
(২) দৈনিক প্রথম আলোর একটা কলামে তিনি হুট করে নিয়ে আসেন শতাব্দী প্রাচীন নাইকন ক্যামেরা থিওরি, যা অন্তত ঈশ্বর বিশ্বাসের পক্ষে যায়।
(৩) একই সময়ে কালের-কন্ঠে প্রকাশিত একটা কলাম ”ধর্ম-কর্ম”, কিন্তু সুফীজমের কথা বলে ছেড়ে দেন, নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন না।
(৪) ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস ‘দেয়াল’-এর একটা অংশেও এক নাস্তিক নিয়ে আসেন, কিন্তু বিভ্রান্তীকর ট্রিটমেন্ট দিয়ে শেষ করেন।
(৫) কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করেন লেখায় মাঝে-মাঝে।
(৬) বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস কেন ঈশ্বরকে খারিজ করে দিলেন? এই প্রশ্ন তুলে হুমায়ূন প্রথম আলোতে লিখেন হকিংস ঈশ্বরকে খারিজ করার কেউ নন। ভিন্ন একটি কলামে লিখে বসেন, ”ধর্ম থাকবে ধর্মের জায়গায়, বিজ্ঞান থাকবে বিজ্ঞানের জায়গায়”!
(৭) ২০০৪ এ সাবেক স্ত্রী গুলতেকিনের সাথে বিবাহবিচ্ছেদ প্রসঙ্গে দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত দেশবাসী প্রতি খোলা চিঠিতে উল্লেখ করেন হযরত মুহম্মদও তাঁর স্ত্রীর সাথে বিবাহ-বিচ্ছেদ করেছিলেন। বিষয়টা জাস্টিফিকেশনের অকাট্য যুক্তি বটে!
হুজুর চরিত্র হুমায়ূনের লেখায় ইতিবাচক হয়ে উঠে এসেছে বেশিরভাগই, তবে সেসব হুজুরের ধর্ম-কর্মের কারণে নয়। ব্যাক্তিগত সরলতা, মানসিক সীমাবদ্ধতা, আর পশ্চাতগামী ও সুবিধাবঞ্চিত হিসেবে উঠে এসেছে। ‘এই মেঘ রৌদ্রছায়া’র ঈমাম এক ভয়ে থরথর কম্পমান আল্লাহর বান্দা, যে কম-বেশি বিচ্যুত হন, কোরআন মুখস্ত করার সপ্নে বিভোর এই চরিত্রের আবার ভুজঙ্গবাবুর যাত্রাভিনয় দেখার ইচ্ছাও করে, কিন্তু ধর্মীয় বাধানিষেধের কারণে যেতে পারেন না, মাওলানা ইরতাজুদ্দীন কাশেমপুরী জাতীয় মৌলিক প্রশ্নে এক বিভ্রান্ত পথিক, অখন্ড পাকিস্তানকে তিনি মনে করেন আল্লাহর দেশ, আসমানীরা তিন বোন(?)-উপন্যাসে মসজিদের ঈমাম ঘুষ খেয়ে তাঁর এলাকায় সার্কাস পার্টিকে তাবু খাটানোর অনুমতি দেন ইসলামী আন্দোলনের হুমকি প্রত্যাহার করে। ‘জ্বীন কফিল’ গল্পে ঈমামের স্ত্রী যিনি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পরেন তাঁর স্বামী অনাধুনিক এক হুজুর বলে। রুগী তাঁর সমস্যাসঙ্কুল সময়ে ভিন্ন কন্ঠে তাচ্ছিল্য মাখা হুংকার ছাড়েন, ”মোল্লা আইছে, তারে অযু করার পানি দেও”।
অর্থ্যাৎ, ধার্মিক ক্যারেক্টারগুলি দোষে-গুনে, সুখে-দুখে সাধারণ মানুষ, সুবিধাবঞ্চিত এবং জীবনমুখী।
”শ্রাবণ মেঘের দিন” উপন্যাসে নায়িকার বাবা একজন নাস্তিক। তিনি ঠাট্টাচ্ছলে বলেন, ”আল্লাহপাক অংক শাস্ত্রে কাঁচা, তাই ইসলামী আইনে নারী-পুরুষের সম্পদের হিসাব ভুলভাবে দেয়া কোরআনে। হযরত আলী এই ভুল অঙ্ক সংশোধন করে আল্লাহপাকের ইজ্জত বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।”
কোরআনের এই ভুল সম্পদ বন্টনের আয়াত আমরা সবাই জানি। হুমায়ূন আহমেদ এই ডায়লগের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন পাঠকদের কাছে।
হুমায়ূন অন্তত সংশয়বাদী ছিলেন নিশ্চিতভাবেই। কিন্তু পাঠকদের বিভক্ত না করার, অপ্রত্যাশিত বিতর্ক তৈরি না করার একটা টেকনিক জনপ্রিয় ধারার লোকেরা ভালোই রপ্ত করতে শেখেন। হুমায়ূন তাঁর ব্যাতিক্রম ছিলেন না। অন্যদের তুলনায় আনলে আমরা দেখতে পাবো হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বর নিজেদের বিশ্বাস সংশ্লিষ্ট অবস্থান পরিস্কার করেছিলন বলে সামগ্রিক গণমানুষের কাছে সেভাবে জনপ্রিয় হতে পারেননি। হুমায়ূন আহমেদ যেন সেই জায়গায় যেতে চান না বলেই অস্পষ্ট, মধ্যপন্থী, বিভ্রান্তিকর সব অবস্থান নিয়ে-নিয়ে এই প্রসংগকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যান। এই জনপ্রিয়ধারাটাকে যৌক্তিক করতে, প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে হুমায়ূন প্রেম প্রকাশ করেন মাজার সংস্কৃতি এবং সুফীজমের প্রতি, যাদের সাধারণত কোনধরনের হিংসায় আক্রান্ত হতে দেখা যায় না। হুমায়ূন আহমেদ তাঁদের প্রতি প্রেম প্রকাশ করেন ঠিকই, কিন্তু নিজের অবস্থান সেদিকে কিনা সেটাও স্পষ্ট করেন না। এর ধারাবাহিকতায় লেখক শীর্ষেন্দূ মুখোপাধ্যায়ের পাবনার সনাতন গুরু শ্রী অনুকুল ঠাকুরের বদন্যতায় নবজীবন লাভের উল্লেখ আমরা বারবার পাই। যেই ভাবধারায় ‘ভাব’টাই ঈশ্বর।
হুমায়ূন তাঁর লেখায় লালন সাইয়ের উল্লেখ করেছেন জীবনে একবার। কিন্তু হাসন রাজার প্রতি প্রেম প্রকাশ পেয়েছে বিস্তর। মুলত আধুনিক বাংলায় সামগ্রিক গণমানুষের কাছে হাসনকে পুন-প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনিই। হাসনের গান প্রশ্ন করে ছেড়ে দেয়, ”কানাই তুমি খেইড় খেলাও ক্যানে?” জীবনের উদ্দেশ্য কী হাসন জানেন না, কেবল অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করেন, এর গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা হাসনের নেই, যেকারনে হুমায়ুন আজাদ হাসন রাজাকে জ্ঞ্যানহীন প্রতিভা ঘোষণা করেছিলেন। হাসনের উক্তি লালনের মতো গভীরে যায় না, যেতে পারে না ইন-ফ্যাক্ট। অনেক সমালোচকের দৃষ্টিতে একই সাথে প্রতিভাবান এবং অগভীর হুমায়ূন স্বভাবসুলভভাবে প্রতিভাবান অগভীর হাসনকেই গুরু মানেন।
হুমায়ূন তাঁর লেখায় অসংখ্য বাংলা এবং অন্যান্য ভাষার ব্যাপক জ্ঞানভান্ডারের পরিচয় দেন। প্রচুর রেফারেন্স টানেন, তাঁর পড়াশোনার পরিধী অবাক করার মতো। কিন্তু কখনই কোন ফিলসফারের প্রসংগ টানেননি। শেষ বয়সে একটা প্রথম-আলো কলামে ডিরেক্ট ঘোষণা দিয়ে বসেন, ”ফিলসফি একটা অপ্রয়োজনীয় বিষয়”! আমরা বিস্ময়ে হতবাক হই! লেখকের কাজ ফিলসফিক্যালি ক্লিয়ার থাকা, এবং লেখনীতে সেই সুর ধরে রাখা! তবে এ কী! জনপ্রিয়তাই সার? পাঠক ধরে রাখাই লেখকের উদ্দেশ্য হতে পারে?
হুমায়ূন আহমেদ মাঝে-মাঝে পরিবর্তনকামী কথাবার্তা লিখে থাকলেও তাঁর সংস্কৃতি প্রেম পরিবর্তনকামীতার উর্ধে বিরাজ করে, যা হঠকারী সিদ্ধানে এসে উপনিত হয়। পুরুষতান্ত্রিক ফ্যান্টাসীতে আক্রান্ত হুমায়ূনের তাঁর লেখায় নারী ধূমপায়ী দেখান প্রায়শ, কিন্তু নারীমুক্তির প্রশ্নে স্পষ্ট কোন ধারণায় উপনীত হতে পারেন না। আমরা জানি নারীমুক্তির বুলি বাংলায় জনপ্রিয় নয়। ম্যাস পিপলের কাছে তেমনই অজনপ্রিয় নারী-পুরুষের ঘনিষ্ট অবস্থান। এক হিমু বইতে হিমু গাড়ির ড্রাইভারকে প্ররোচিত করে সামনে একটি গাড়িকে উপুর্যপুরী ধাক্কা দিতে কারণ সেই গাড়িতে এক প্রেমিক-যুগল ঘনিষ্টাবস্থায় বসে আছে।
এসমস্ত সংস্কৃতি-প্রেম, গণমানুষের গড় মানসিকতাকে পূজা অর্পন, এবং জনপ্রিয় ধারায় পাঠক ধরে রাখার টেন্ডেন্সি হুমায়ূন আহমেদকে পশ্চাতগামী করে, বিভ্রান্তীকর ভাবমূর্তী তৈরি করে, এবং সম্ভবত গণমুক্তির প্রশ্নে পরিত্যাজ্যও করে।
মরিলে কান্দিসনা আমার দায়।
এটা দেখে কিছু তো একটা বোঝা যায়
শেষ জীবনে আল্লার ওপর তার অগাধ বিশ্বাস ছিলো।।।
হুমায়ূন নানান সময়ই তার লেখায় বলেছে, প্রকৃতি অনেক কিছু পারে, প্রকৃতি অনেক আজব কিছু ঘটায় । উনি প্রকৃতি এর বদলে পারলে আল্লাহ বলতে পারতেন । কিন্তু বলেননি । কারন উনি ভেবেছেন যে, আল্লাহ শোব্দটা ব্যাবহার করলে হয়তো পাবলিক তাকে আনস্মার্ট ভাববে । এই লেখার লেখকও একজন আস্তিক । দুনিয়ায় নাস্তিক বলে কোন কথা নাই । ময়ারার মূহুর্তের ঠিক আগে, সবাই কালেমা পড়ার চান্স নিবেই নিবে, কারন মৃতুর পরের জীবন থাকতে পারে , এই বিশ্বাস সবার ভিতরেই আছে, কেউ প্রকাশ করে, কেউ করে না ।
হুমায়ুন স্যার এক বইয়ে লিখেছিলেন প্লেনেথাকা অবস্থায় কাবাঘরত নীচে তাহলে নামাজ এর সময় হলে পড়বে কিভাবে।আর এক বইয়ে লিখেছেন নরওয়েতে ৬মাস দিন ৬মাস রাত সেখানে চাদ দেখে কিভাবে ধর্মিয় আচার পালন করবে।এরকম আরো অনেক ।তিনি আস্তিক হন কিভাবে ।আর মিশির আলী সিরিজ কোন আস্তিক লিখতে পারে কি?
হুমায়ুনের বইয়ের তালিকায় সেই বইগুলোর নামগুলোর দিকে তাকান, তিনি কাদের জন্য কি উদ্দেশ্যে লিখেছেন তাতেই সব বোঝা যায়। অপরিণত মনস্ক কিশোরকিশোরী ও অল্পজ্ঞ মানুষের জন্য তার লেখা। উদ্দেশ্য বাজার আর তার টেকা!!!!!!!!
প্রচুর প্রয়োজনীয় বিষয় এখনো চোখের আড়ালে পড়ে আছে। কে আস্তিক কে নাস্তিক এসব নিয়ে আর কত?
তথ্য-সাংবাদিকতার পেশাগত জীবনের শুরুতে আহমদ ছফার একটি দীর্ঘ সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। ১৯৯২ সালের দিকে এটি সাপ্তাহিক প্রিয় প্রজন্মে প্রকাশিত হয়। পরে ছফার সাক্ষাৎকার সংকলনে এবং রচনাবলীতেও এটি স্থান পেয়েছে।সেখানে ছফা খুব স্পষ্ট করে বলেছিলেন,
তো হুমায়ুন আহমেদ এমনই গোজামিলতায় পূর্ণ টইটুম্বর এটি বরং স্বাভাবিক। ভাবনাটিকে উস্কে দেওয়ায় দিগন্ত বাহারকে সাধুবাদ। :good:
হুমায়ুন আহমেদ অবিশ্বাসী ছিলেন এ তথ্য আপনি কোথায় পেলেন?তিনি তো আপাদমস্তক একজন আস্তিক।
লেখাটার উদ্দেশ্য কি সেটা হুমায়ুন আহমেদের ধর্ম বিশ্বাসের মতই অস্পষ্ট বা স্পষ্ট ব্যাপার। কে আস্তিক কে নাস্তিক এসব তর্কে যাওয়া খুব হাস্যকর। নাস্তিক আর আস্তিকের মধ্যে এক অকাট্য অভিন্নতা আছে। সেটা হলো-আস্তিক বিশ্বাস করে ঈশ্বর আছেন, আর নাস্তিক অবিশ্বাস করেন ঈশ্বর আছেন। দুইটি বিষয়ই বিশ্বাস তবে বিপরীতধর্মী মাত্র। বিশ্বাস বিষয়টিই খুব হাস্যকর। আর তা ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বে বিশ্বাসী হোক বা ঈশ্বরের অনস্তিত্ত্বে বিশ্বাসী হোক। না বিশ্বাসের শেকড় উপড়ে ফেলে যুক্তির বীজ-বোপন করারও কোন মানে হয়না। যু্ক্তি স্ব-পক্ষ সমর্থনের কিছু স্টেটমেন্ট মাত্র। সত্য, সত্যই এখানের বিশ্বাসের দরকার নেই, অবিশ্বাসের দরকার নেই, এখানে দারকার নেই যুক্তির। সত্য উপলব্ধি বিষয়, সত্য উপলব্ধি করায় হলো ধর্ম, সত্যকে উপলব্ধি করা মানেই হলো ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা । ধর্ম (সকল ধর্মই) রেডিমেড একটা মানদণ্ড যে মানদণ্ডে কিছু লোক, যারা জ্ঞান আহোরনে চরম অলস তারা এই রেডিমেড মানদন্ডে নিজেদেরকে পরিচালিত করার মাধ্যমে অন্ধত্ত্বের দাসত্ত্ব করার পথ বেছে নেই মাত্র।
হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস অবিশ্বাস পাঠকের মধ্যে সংক্রামিত করতে চাননি বলে আমার মনে হয়। তিনি সবসময় রহস্যময়তার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যারা বলেন “তরুণ পাঠক শিক্ষামূলক লেখা খুব বেশি পায়নি” আমি তাঁদের সাথে একমত হতে পারিনা কারণ জগতের রহস্যময়তা বোঝতে হলে পড়াশুনা ব্যাপক ভাবেই করতে হবে। তিনি মনে করতেন বিগ ব্যাং এর আগে কি হয়েছিল মানুষ একসময় জানতে পারবে। শেষের দিককার এক লেখায় লিখেছিলেন মানুষ একদিন অমরত্বের সন্ধান পাবে। মানুষের সক্ষমতা সম্পর্কে তাঁর অনেক আস্থা ফুটে উঠেছে বিভিন্ন লেখায়। তিনি এয়ো জানতেন যে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে মূর্তি পূজার মত ব্যক্তি পূজারও প্রাদুর্ভাব রয়েছে খুব নিবিঢ় ভাবে। তাই চট করে কোনদিকে পাঠককে ধাবিত করতে চাননি বলেই আমার মনে হয়। পাঠককে ধর্ম ও বিজ্ঞান দুদিকেই পড়াশুনা করতে উতসাহিত করেছেন।
ধর্ম নিয়ে কখনো সখনো তাচ্ছিল্য করার যে বিষয়টা অনেকে বলেছেন সে ব্যাপারে আমার ধারণা সেটা তাচ্ছিল্য বলাটা হুমায়ূন আহমেদের প্রতি অবিচার কারণ তিনি সাধারন মানুষের বিশ্বাসের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি মনে করতেন মানুষের জন্যই লেখালেখি। হিমুর বিপদে দোয়া পরাটা ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ বলে ভাবা যেতে পারে।
লেখক দিগন্ত বাহারকে ধন্যবাদ তাঁর গবেষণাধর্মী লেখার জন্য। লেখক যদি লাল চুল গল্পের রেফারেন্স টানতেন পড়ে আরও মজা পেতাম।
প্রথম প্যারার আর্গুমেন্ট বেশ দূর্বল হয়েছে।
কেউ আস্তিক মানেই ইসলাম, এমনকি নির্দিষ্ট কোন ধর্মে বিশ্বাসী হবে এমন ধরাবাধা কথা নেই। এমনকি নির্দিষ্ট ধর্ম বিশ্বাসী হলেও সেই ধর্মের যাবতীয় সব রিচ্যূয়াল পালন করবে সেটাও নাও হতে পারে। অনেক মুসলমানই রোযা রাখে না, তার মানেই কি তারা নাস্তিক হয়ে গেল নাকি?
এক সন্ধ্যার সেই সাংবাদিক সাহেবের সাক্ষাতেই তিনি কোনদিন ধর্মের ধার ধারেন নাই বলা যায় নাকি? আমার আশেপাশে বহু মুসলমান আছেন যারা বলতে গেলে কোনদিন নামাজ রোজার ধার ধারেন না, মদ্য পান করেন, পুরো উদ্দাম জীবন যাপন বলতে যা বোঝায় অনেকটা সেই রকমের। তারপরেও নিজেদের মুসলমানই বলেন, ঈদের নামায বা কখনো জুম্মার নামাযে যান।
তবে মূল কথা সত্য। হুমায়ুন সাহেব আমার ধারনা অধিকাংশ সময়ে ছিলেন তীব্র সংশয়বাদী। কোন সুপ্রিম পাওয়ার আছে এটা বিশ্বাস করতে চাইতেন, যদিও প্রচলিত ধর্মীগুলির ফাঁক ফোকর ভালই জানতেন। সে কারনেই উনি প্রচলিত ধর্মের নানান বিষয় নিয়ে হালকা মশকরা করতেন, পরকালের জীবন বিশ্বাস করতেন না এবং একই সাথে মাজারেও যেতেন। তার বহু বইতেই মানুশের বা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যার অতীত অনেক ঘটনার উল্লেখ করতেন যা ওনার ইংগিতে কোন সুপ্রিম পাওয়ারের কারসাজি।
আর ওনার প্রকাশভংগী, বিশেষ করে ব্যালেন্সিং পাওয়ার ছিল অসাধারন। ঠিক কিভাবে লিখলে লোকে খাবে ভাল বুঝতেন। ব্যালেন্সও করতে পারেন চমতকারভাবে। কোন বইতে পুরো নাস্তিকের মত লিখে ফেললেন প্রকৃতি এটার জন্ম দিয়েছে……আরেক বইতে কোরানের কোন সূরার বানীতে উনি মোহিত হয়ে গেলেন……এভাবে চমতকারভাবে বড় ধরনের ঝামেলা এড়িয়ে গেছেন সারা জীবন। একই নীতি উনি রাজনীতির বেলাতেও বজায় রাখতেন। দেশের বড় ধরনের নানান রাজণৈতিক গোলযোগে উনি কোনদিন সরাসরি কারো পক্ষে বিপক্ষে যায় এমন কথা বলেননি, আমরা এমন কেন……কেন সকলে এক হয়ে যাই না এই ধরনের হালকা ভাবের কথায় কাজ সেরেছেন। আমার মনে পড়ে একই নীতি উনি এমনকি এক সময় আবাহনী-মোহামেডান খেলার সময়েও জিজ্ঞাসা করা হলে বজায় রেখেছেন, পছন্দের একটা দল আছে তবে সেটা এখন বলবেন না……
এটাও মনে হয়েছে যে শেষ জীবনে অনেকটাই আস্তিক হয়ে গেছিলেন যা খুবই টিপিক্যাল। দূরারোগ্য ব্যাধি বা ঘোরতর বিপদে পড়লে অনেকেরই যেমনটা হয়।
@আদিল মাহমুদ, শুধুই সেই ঘটনাকে ব্যেজ করে বলা হয় নাই কথাটা। একটা উদাহরণ হিসেবে শুধু এসেছে যে তিনি এসব নিয়ে ব্যাক্তিগত জীবনেও এসব নিয়ে রসিকতা করতেন।
মন্তব্যের বাকি অংশে সহমত।
হুমায়ুন আজাদের সৃষ্ট চরিত্রসমূহের অন্যতম চরিত্র মিসির আলী পড়লে কিন্তু, খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করা যায়, হুমায়ুন আহমেদ মিসির আলীর মাধ্যমে নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছেন। মিসির আলীর বৈশিষ্ট্য যুক্তিবাদ, নাস্তিকতা।
এটাই সত্যি যে, হুমায়ুন আহমেদ হয়তো পাঠকপ্রিয়তা হারানোর ভয়েই নিজের বিশ্বাসকেকে প্রত্যক্ষভাবে উন্মোচন করেন নি,কিন্তু তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর আচার-আচরণেই পরোক্ষভাবে তাঁর ধর্ম-বিশ্বাসের প্রমাণ মেলে।
@অলোক অর্ক, হুমায়ুন আহমেদ লিখতে গিয়ে অবচেতন মনের তাগিদে আজাদ লিখা হয়ে গেছে। মাফ করবেন।
হুমায়ুন আহমেদ নাস্তিক ছিলেন না আস্তিক ছিলেন এ নিয়ে তার মৃত্যুর পরে মাথা ঘামানোর কি দরকার।
হুমায়ুন আহমেদ তার ‘দেওয়াল’ বইয়ে লিখেছেন, আমাদের নবি (সাঃ ) নাকি কখনও মাছ খান নি! আরেক জায়গায় লিখেছেন,মরিয়ম নামে তাঁর নাকি একজন স্ত্রী ছিলেন! আরেক জায়গায় লিখেছেন, ফজ রের নামাজ দেরিতে পড়লে অসুবিধা নেই।
মাসুস আখন্দের স্ট্যাটাস তুলে দিলাম-
হুমায়ূন আহমেদের “বিশ্বাস” শিরোনামে মুক্তমনা ডট কম এ একটা লেখা পড়ে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছি। একজন ব্যাক্তি মানুষকে সামান্যতম না জেনে, অথবা ভুল জেনে। শুধু তার লেখা পড়ে আর কান কথা শুনে যুক্তির জাল ফেলে কারো ধর্মীয় বিশ্বাস ব্যাখ্যা করা যায় না।
আমার নিজের দেখা অভিজ্ঞতা, গুরু প্রায়ই মাগরিবের নামাজ পড়তেন। কিন্তু আর্টিকেলটির লেখক লিখলেন তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে পাড় নাস্তিক ছিলেন। জীবনেও ধর্ম-কর্মের ধার ধারেন নাই। ব্যাক্তিগত প্র্যাক্টিসে এসব রাখেন নাই।
এমন মিথ্যা ও ভুল লেখার জন্যে লেখক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।
হুমায়ুন আহমেদ বেশির ভাগ সময় রসিকতা করতেন কারন তিনি খুব ভালো ভাবেই বুঝেছিলেন অর্ধ শিক্ষিত বাঙালি গভীরতা বলতে ইঁদুরের গর্তের গভীরতার বেশি বুঝে। নিজের গণ্ডির বাইরে দেখার দৃষ্টি এদের নাই।
@সিডাটিভ হিপনোটিক্স,
হুমায়ূন আহমেদ মাগরিবের নামাজ পড়তেন বলেই কি ধর্ম নিয়ে রসিকতা করতেন? হুমায়ূনকে গুরু ডাকা হলো কেন তাও তো বুঝলাম না।
@সিডাটিভ হিপনোটিক্স, যতদূর আন্দাজ হয়, মাসুদ আকন্দের সেকেন্ড লাস্ট লাইনে একটা ‘না’ যুক্ত হবে, টাইপো হতে পারে, যাই হোক।
একটা বোঝার ভুল তৈরি হলো কিনা বুঝলাম না, হুমায়ূন আহমেদকে কোন দলভুক্ত করা এই লেখার উদ্দেশ্য না।
এটা হতেই পারে আমার আত্মিয় তাকে একরকম দেখছেন, আবার ভিন্ন লোকে তাকে নামায পড়তেও দেখছেন।
তো?
তিনি আস্তিকই যদি হবেন, তাইলে ”মৃত্যুর পর কিছু নাই, মিশে যাবো”। এমন কথা কেন বললেন? আবার নাস্তিকই যদি হবেন, তাইলে আবার লোকে তাকে নামায পড়তেও কেমনে দেখলো?
তিনি আস্তিক-নাস্তিক যা’ই হোন। নো বিগ ডিল! বিবিধ বিষয়ে তাঁর আন্তরীন সাংঘর্ষিকতাই মুল উপজীব্য। সেই সাংঘর্ষিক নীতি এবং প্রতিভাধর লেখনী, এসবের মিশেলে হুমায়ূন অনন্য। এর বেশি কিছু বলার নাই আসলে।
@দিগন্ত বাহার,
‘মৃত্যুর পর কিছু নাই, মিশে যাবো’ -হতে পারে এটা তার ধর্মীয় জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। আমার জানামতে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরই প্রচুর জ্ঞান থাকা স্বত্বেও নিজ ধর্মের ব্যাপারে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দেখা গেছে (আগ্রহ না থাকার কারণে)। আবার এমনও হতে পারে তিনি লোক দেখানো নামায পড়তেন। সঠিকটা বুঝা মুশকিল।
যাইহোক, একজন অবিশ্বাসীর ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর দুটি অপশন থাকে। তা-হলো:- হয় সে মাটির সাথে মিশে যাবে, না হয় সে জাহান্নামে যাবে। বিশ্বাসীর ক্ষেত্রেও দুটি অপশন থাকে। যথা: হয় সে মাটির সাথে মিশে যাবে, কিংবা জান্নাতে যাবে। সুতরাং সত্য-মিথ্যার ক্ষেত্রে বিশ্বাসীরাই ঝুঁকিমুক্ত। যদি তারা মিথ্যাও হয় তবুও কোন লস/ক্ষতি নেই। অপরদিকে অবিশ্বাসীরা সর্বদাই ঝুঁকির মধ্যে আছে।
আমি সংশয়বাদী নই উপরোক্ত থিওরীর কারণে। এই থিওরীর কোন সীমাবদ্ধতা থাকলে দয়া করে জানাবেন। তাহলে আমি উপকৃত হবো।
তার পড়াশুনো আমার কাছে অবাক করার মত মনে হয়নি, রেফারেন্স টেনেছেন সত্য, কিন্তু রেফারেন্স টানতে অত পড়তে হয় না, দিগন্ত-দা, তা আপনিও জানেন। তার চেয়ে, বরং, হুমায়ুনের মেধা অবাক করত আমায়। এত মেধাবী হয়েও তিনি অত পাঠ করেননি, চিন্তার অতলে ডুব দেননি তেমন, সবসময়ই হাল্কা হালে তরী ভাসিয়েছেন! তাই হুমায়ুন আহমেদ কুন্দেরা বা কামু হয়ে উঠতে পারেননি, হাসন যেমন পারেননি লালন হয়ে উঠতে। তাই বলে হুমায়ুন আমাদের কাছে অপাঙতেয় নন, যেমন নন হাসন। হুমায়ুন যে বিশ্বসারিতে স্থান করে নিতে পারেননি, সে আমাদের দুর্ভাগ্য হতে পারে, তার অপরাধ কিছুতেই নয়।
এখন থেকে ঘন ঘন লেখা চাই, দিগন্তদা! যদি না লিখেন, তাহলে সেও হবে আমাদের দুর্ভাগ্য, প্রতিভার প্রতি সুবিচার না করাটা আপনার অপরাধ বলে গন্য হবে না অবশ্য। 🙂
@গুবরে ফড়িং,
সহমত।
যদিও উনি রহস্য পছন্দ করতেন তবুও কিছু কিছু যায়গায় উনি মোটামুটি সরাসরিও নিজেকে নাস্তিক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ২০১২ সালের মে মাসে আর মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে যায় যায় দিন এ এক সাক্ষাতকারে উনি বলেছিলেন, ///প্রসঙ্গ পাল্টে মৃত্যুর পরের জীবন প্রসঙ্গ আনলে হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ‘মুত্যুর পরে অনন্ত জীবন রয়েছে_ অনেকের কাছেই এ কথা শুনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না। হ্যাঁ, ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তা রয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, মৃত্যুর পর আমি মাটির সাথে মিশে যাব। জানি না, আমার বক্তব্য ধর্মপ্রাণ হৃদয়ে আঘাত হানবে কি না।///
প্রথম আলোর এক সাক্ষাতকারে উনি নিজেকে খাড়া করে কবর দিতে বলেছিলেন। লিঙ্কঃ http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2012-07-23/news/276158
মানুষ আস্তিক থেকে নাস্তিক হয়। নাস্তিক কেমন করে আবার অন্ধবিশ্বাসে ফিরে যায়, সেটা খুবই তাজ্জবের ব্যাপার। হুমায়ুনের ক্ষেত্রে তা আরো বেশি তাজ্জবের। একজন বিজ্ঞানী ও এতো পড়াশোনা জানা একজন নাস্তিক মানুষের কেন শেষ জীবনে এমন পরিবর্তন এসেছিল? নাকি জনপ্রিয়তার জন্য তা করেছিলেন বাইরে থেকে?
হুমায়ুন আহমেদ খেয়ালী টাইপের মানুষ ছিলেন। ধর্ম নিয়ে কখনো তাচ্ছিল্য, কখনো সতর্ক থেকেছেন। তাকে একজন সফল ও প্রখর ব্যাবসায়ী-বুদ্ধিসম্পন্ন সাহিত্যিক বলা চলে; কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না তিনি নাস্তিক ছিলেন। একজন নাস্তিক স্বভাবতই বাস্তববাদী, কিন্তু তার লেখা আধিভৌতিক, রহস্যময়তা ও মোহাচ্ছন্ন। নাস্তিকতায় রহস্যের কোন ঠাই নেই। তার সৃষ্ট মিসির আলী চরিত্রটি ঠিক যেন কুসংস্কারবিরোধী শ্রদ্ধেয় আরজ আলী মাতুব্বরের প্রতিচ্ছবি, কিন্তু বাস্তববাদী মিসির আলীকে তিনি প্রত্যেকবারই অলৌকিকতার কাছে নাকানিচুবানি খাইয়ে ছেড়েছেন।
হুমায়ুন আহমেদের চরিত্রের এই দ্বিমুখী দিক আমাদের বিভ্রান্ত করে, কিন্তু কোন সদুত্তর দেয় না।
ঔপপত্তিক ঐকপত্যের সাথে একমত।
লেখক হুমায়ূন আহমেদ থেকে তরুণ পাঠক শিক্ষামূলক লেখা খুব বেশি পায়নি; যেটা এই পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলো। তিনি যদি আসলেই নাস্তিক হন তাহলে বলতে হয় তিনি সুবিধাবাদী নাস্তিক। তার লেখা সর্বোচ্চ সংশয়বাদীতা পর্যন্ত পেৌঁছুতে পেরেছে (তাও খুব বেশি সংখ্যক নয়)।
তার তৈরি করা দুটি চরিত্র হিমু ও মিসির আলীর জনপ্রিয়তার তুলনা করলে মিসির আলী জনপ্রিয়তা হিমুর অর্ধেকেরও কম হবে। আর এখানেই তাঁর ব্যর্থতা। তিনি তরুণ সমাজের একটি বিরাট অংশকে মোহে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন, বাস্তবতা তেমন একটা শেখাতে পারেননি।
@ঔপপত্তিক ঐকপত্য, হুমায়ূন আহমেদ নিঃসন্দেহে সুবিধাবাদী ছিলেন । তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে নাস্তিক ছিলেন, এই যা; ভালো মানুষ ছিলেন কি না সেটা আরেক বিষয় । তবে ধর্মান্ধদের চেয়ে অবশ্যই কম খারাপ ছিলেন ।
পাঠকদের বিভ্রান্ত করে রাখাতেই তার সাহিত্যজীবনের প্রসার হয়েছিল বলে আমি মনে করি । সারাদিনের খাটনি অশান্তি আর তিক্ততা সহ্য করে সিংহভাগ মানুষই হালকা বিনোদন খোঁজে, ঠিক যেমন হুমায়ূন আহমেদের কোন বাজারি উপন্যাস । তার উপন্যাসে কেউ যেমন শিক্ষামূলক কিছু খোঁজে না, তেমনি তিনিও কোন গুরুতর বিষয় নিয়ে বেশি লেখালেখি করেননি । তবে বিভ্রান্ত পাঠকদের জন্য লেখা বইগুলোতে যে ঠাট্টাগুলো সুচারুভাবে ঢুকিয়ে দিতেন, তাতে তার ব্যাক্তিগত ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আঁচ করা যায় । আমি মনে করি এই ব্যাপারটা তার কাছে প্রাইভেট জোকস ছিল ।