প্রথম পর্বে খুব সাদামাটা একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এই পর্ব এবং আগামী পর্বে বিষয়টির উপরে কিছু তথ্য -উপাত্ত নির্ভর আলোচনা উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো এবং আন্তর্জাতিক বিতর্ক গুলোর কিছুটা মুক্তমনার পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করবো। আমি শুধু বিতর্কের বিষয় গুলোই উস্কে দিতে চাই, কারন এই বিষয়ে আরো অনেকের মতো আমার নিজেরও কোনও সুনির্দিষ্ট অবস্থান নেই। ইসলাম এবং ইসালামোফোবিয়া এক কথা নয়। ইসলাম একটা অদ্ভুত ধর্ম যা নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত ব্যাখ্যা করে চলেছি, যুদ্ধ করে করে চলেছি। ধর্ম হিসাবে ইসলাম আমাদের কে যতটা পিছু টেনে ধরে, আজকের যুগে অন্য কোনও ধর্ম তা করেনা। ইসলাম ধর্ম শুধু পরিবারের উপরেই নয়, সমাজের উপরেও চাপিয়ে দেয় জগদ্দল পাথরের মতো মধ্যযুগীয় নৈতিকতা, সংস্কৃতি এবং আইন-কানুনের ভার। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর অশান্তি, সন্ত্রাসবাদ এবং পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোতে সামাজিক স্তরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর অনড় সাংস্কৃতিক চর্চা মুসলমান বা ইসলামের অনুসারীদের সম্পর্কে মিশ্র অনুভুতির জন্ম দিচ্ছে ব্যাপক ভাবে। পশ্চিমা বিশ্বে সামাজিক ভাবে গড়ে উঠছে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে এক স্থায়ী ভীতি। ইসলাম এবং মুসলমানদের নিয়ে এই ভিতীর সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নানান ধরনের শব্দ বা বর্গ, তাঁরই একটি হচ্ছে “ইসলামোফোবিয়া”। ইসালামোফোবিয়া হচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে এবং তার অনুসারীদের সম্পর্কে অমুসলিম জনগনের ভাবনা বিষয়ক সাম্প্রতিক একটি সামাজিক ধারণা বা প্রপঞ্চ। মুসলিম জনগোষ্ঠী যাকে মনে করে থাকে একধরনের বৈষম্য আর অমুসলিম জনগণ মনে করেন এই আতঙ্কের বাস্তব ভিত্তি আছে এবং আতঙ্কজনক কোনও কিছু থেকে সাবধান থাকাটা যে কারও অধিকার।
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক ভাবে উচ্চারিত, তবুও “ইসলামোফোবিয়া” শব্দটি প্রায় একশ বছর আগে ফরাসী রাজনৈতিক লেখালেখিতে ব্যবহৃত হয়েছিলো, অবশ্য সেই সময়কার অর্থ আর আজকের অর্থের মাঝে বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। মুসলিম এবং অমুসলিম সবাই খুব ব্যবহার করছেন শব্দ টি কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই শব্দ টি সামাজিক কিম্বা আইনগত কোনও ভাবেই এখনও সংজ্ঞায়িত হয়নি। যেভাবে বর্ণবাদ বা “রেসিজম” কে আইনগত ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, ইসালামোফোবিয়া কে সেভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়নি এখনও। তাই দশজন মানুষ এই শব্দ টি ব্যবহার করলে অন্তত চারটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ খুজে পাওয়া যাবে। আধুনিক শিক্ষিত মুসলমানেরা এই শব্দটি ব্যবহার করছেন প্রধানত এটা বলতে যে –
– পশ্চিমা দুনিয়া মুসলিম সমাজের নামে অহেতুক আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে মুসলিম জনসাধারনের প্রতি এক ধরনের বৈষম্যমুলক আচরন করছে। এটাই ইসালামোফোবিয়া!
আর মুসলিম ধর্মের নন এমন নাগরিকেরা, বিশেষত উন্নত বিশ্বে, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর অমুসলিম নাগরিকেরা বলছেন মধ্য প্রাচ্চ সহ সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের সাথে বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠী বা দলগুলোর সংশ্লিস্টতার কারনে এক ধরনের স্থায়ী ভীতি তৈরি হয়েছে যার বাস্তব ভিত্তি রয়েছে। যদিও বিভিন্ন দেশের অমুসলিম নাগরিক সমাজের অনেকেই এই ভিতির কারনে মুসলিম দের প্রতি কোনও বৈষম্যমূলক আচরনের কথা অস্বীকার করে থাকেন।
মুসলিম সমাজের এই ধারনার বিপরীতে যে প্রধান প্রশ্ন গুলো উঠে আসে তা হোল –
– আসলেই কি আতঙ্ক টি অহেতুক?
– আসলেই কি সারা পৃথিবীর সন্ত্রাসবাদী ঘটনার জন্যে মুসলিম জনগোষ্ঠী দায়ী?
– পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী ঘটনার জন্যে মুসলিম জনগোষ্ঠী আসলে কতটুকু জড়িত? কতটুকু দায়ী?
– আসলেই কি মুসলিম নাগরিকেরা বৈষম্যের শিকার শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কারনে?
আমি একজন সক্রিয় নাস্তিক, পেশায় লেখক নই এবং আমার সামাজিক বিজ্ঞানের চিন্তাপদ্ধতির প্রতি খানিকটা আগ্রহ রয়েছে, তাই আমি বিষয়টিকে একটু খোলামেলা ভাবে দেখতে চেয়েছি, অর্থাৎ আমি কোনও পূর্ব নির্ধারিত ভাবনা নিয়ে বিশয়টিকে তদন্ত করিনি। সংখ্যার প্রতি আমার এক ধরনের প্রীতি আছে, তাই চেষ্টা করেছি খানিকটা পরিসংখ্যান ব্যবহার করে এই প্রশ্নগুলর উত্তর খোঁজার।
মুসলিমদের যুদ্ধপ্রীতি, এবং ইসলাম প্রসার এর ক্ষেত্রে যুদ্ধ এবং বল প্রয়োগের ইতিহাস সবারই জানা। আরব সহ ভারত বর্ষের ইতিহাসে তার বহু নজির আছে। তবে এই আলোচনায় সেসব ইতিহাস খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক এই জন্যে যে “ইসলামোফোবিয়া” একটি সাম্প্রতিক ধারণা এবং মুসলমান জনগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক ইতিহাসই এই প্রশ্নে প্রাসঙ্গিক। তাই আসুন দেখা যাক, সাম্প্রতিক ইতিহাস কি বলে –
জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের সব চাইতে বড়ো ড্যাটাবেইস টি সংরক্ষন করছে আমেরিকার ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় যা Global Terrorism Database বা GTD নামে পরিচিতি পেয়েছে (http://www.start.umd.edu/gtd/ ) । GTD database ১৯৭০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৪২ বছরের তথ্য সংগ্রহ করছে। ইউরোপে আলাদা ভাবে TWEED ড্যাটাবেইস (http://www.nsd.uib.no/macrodataguide/set.html?id=39&sub=1) যা ইউরোপের একটি প্রধান ড্যাটাবেইস, নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় এই ড্যাটাবেইসটি সংরক্ষন করছে প্রায় অর্ধ শতক ধরে, এবং ইউরোপোল (https://www.europol.europa.eu/ ) গত প্রায় এক দশক ধরে এই ধরনের তথ্য ও পরিসংখ্যান সংরক্ষন করছেন । এই সব কয়টি ড্যাটাবেইস ওপেন সোর্স বা উন্মুক্ত, যে কেউ চাইলেই এই ড্যাটা গুলো পেতে পারেন এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। ইউরোপোল ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করছেন যা TE-SAT report নামে গুগোল করলেই পাওয়া যাবে। এই সকল ড্যাটাসেট বা প্রকাশনা গুলো আমেরিকা বা ইউরোপের সরকার বা প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রিত প্রকাশনা তাই এই প্রকাশনার তথ্য গুলোকে অন্তত প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে অথেন্টিক বা নির্ভরযোগ্য ধরে নেয়া যেতে পারে।যদিও সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ এর সংজ্ঞা নিয়ে মুসলিম বা মার্কিন বিরোধী মহলে বিতর্ক আছে। আপাতত সংজ্ঞা বিষয়ক বিতর্ক একপাশে রেখে বরং আলোচনা টিকে এগিয়ে নেয়া যাক।
মুসলমানদের জঙ্গী ততপরতা বা সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে, কোনও সন্দেহ নেই, ২০০১ এর ৯/১১ একটা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত হয়ে আছে এবং থাকবে। নিষ্ঠুরতার, বর্বরতার একটা কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে। একথায় তো কোনও দ্বিমত নেই যে ৯/১১’র আক্রমনের সাথে জড়িতরা সকলেই মুসলমান ছিলেন এবং তার পরে যে গোষ্ঠীটি এই আক্রমনের দায়িত্ব নেয় তাদের সকল প্রকার ব্যাখ্যা – বক্তব্য ধর্ম অনুপ্রানিত বা Religiously motivated ছিল। আমেরিকায় ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ২৩৮২ টি ঘটনা কে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে GTD ড্যাটাবেইস এর মতে, এর মধ্যে সন্দেহাতীত ভাবে ৯/১১ র ঘটনা টি সবচাইতে ভয়াবহতম এবং বর্বর ঘটনা।
খানিকটা বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে ৯/১১ এর আগে বা পরে কখনই ইউরোপে এবং উত্তর আমেরিকার সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে মুসলিমদের ব্যাপক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় না। আগ্রহউদ্দিপক সত্যি হচ্ছে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের গত কয়েক যুগের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের খুব ছোট একটি অংশ হচ্ছে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ বা Religious Terrorism এবং যদি মোট সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে প্রায়শই তা ১০% এর নিচে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে এই ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী ঘটনাগুলোর খুব ছোট একটা অংশ মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা সংগঠিত। আমেরিকায় এটি ঐতিহাসিক ভাবে প্রায় ২% এবং ইউরোপে ১% এরও কম। আমেরিকায় দেশের মাটিতে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের একটা বড়ো অংশের সাথে ইহুদি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় যার পরিমান প্রায় ৫% । অর্থাৎ আমেরিকায় ইহুদি ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দ্বারা সংগঠিত ঘটনা গুলোর সংখ্যা ইসলামিক জঙ্গী ঘটনা গুলোর প্রায় আড়াইগুন। তাহলে আমেরিকা বা ইউরোপের এই সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের সাথে মুলত কারা জড়িত? আমাদের সাধারন ধারনার সাথে বাস্তব পরিসংখ্যান কে মিলিয়ে নেয়ে যেতে পারে।
ইউরোপোল ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ করছে এবং ২০০৬ থেকে গত বছর পর্যন্ত প্রত্যেক বছরে ইউরোপের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার প্রায় প্রায় ৭০% বেশী সংগঠিত হয়েছে “সেপারেটিস্ট” বা বিচ্ছিন্নতাবাদী দের দ্বারা। ফ্রান্স, স্পেন এবং ইংল্যান্ড এই তিনটি দেশে ৮০% এর বেশী সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে যার সবচাইতে বেশী ঘটেছে স্পেনে এবং প্রতিটি ঘটনাই “স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী” দের দ্বারা সংগঠিত। তিনটি গ্রাফ যুক্ত করছি এখানে মেরীল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের GTD database থেকে, ১৯৭০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদের চল বা ট্রেন্ড টি খেয়াল করে দেখুন। প্রথম গ্রাফটিতে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের গত প্রায় ৪০ বছরের সন্ত্রাসবাদী ঘটনার ট্রেন্ড বা চল টি দেখা যাবে। উত্তর আমেরিকা এবং প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী ঘটনার সংখ্যা ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার চাইতে সব সময়েই অনেক কম ছিল ।দ্বিতীয় গ্রাফটি তে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে সংগঠিত প্রায় ৫০ বছরের সন্ত্রাসবাদী ঘটনার পরিসংখ্যান এবং তৃতীয় গ্রাফটিতে উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য -উত্তর আফ্রিকা এই তিন অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদী ঘটনার ঐতিহাসিক চল বা ট্রেন্ড টি লক্ষ্য করা যাবে।
এই তিনটি অঞ্চলের ঐতিহাসিক চল বা ট্রেন্ড টি খেয়াল করে দেখুন মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার সন্ত্রাসবাদী ঘটনাগুলো প্রায় নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইউরোপের চাইতে কম ছিল। এরপরে ২০০২ থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা রকেটের গতিতে ঘটতে লাগলো, কিন্তু এই অঞ্চল গুলোতে তো আগেও ইসলাম অধ্যুষিত জনগোষ্ঠীরই বসত ছিল, কিন্তু তাহলে কেনও ঐতিহাসিক ভাবে ২০০২ সালের আগে এই অঞ্চলগুলোতে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের বিস্তৃতি এতো ভয়াবহ ছিলোনা? আর ২০০২ সাল থেকে কি এমন ঘটতে থাকলো এই অঞ্চল গুলোতে যা এই অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদী ঘটনার হার কে এই রকমের আকাশ্চুম্বি করে তুলল ? আর ২০০২ সালের পরথেকে উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ দুই অঞ্চলেই সন্ত্রাসবাদী ঘটনার সংখ্যা কমে প্রায় ভুমি অক্ষের সাথে মিশে গেলো, কেনও? অর্থাৎ এই চল বা ট্রেন্ডটির পেছনে কি ধর্ম না রাজনীতি কিম্বা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতির কোনও ভূমিকা ছিলো? বলাই বাহুল্য, আমেরিকা এবং তাঁর ইউরোপের মিত্ররা মিলে ২০০১ সালের ৯/১১ ঘটনার পর থেকে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশ গুলোতে গণতন্ত্র ফেরী করতে শুরু করে, যার পপুলার না হয়ে উঠেছে “ডেমোক্র্যাসী এক্সপোর্ট” বা “গনতন্ত্র রফতানী”। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশ গুলোতে সন্ত্রাসবাদী ঘটনাবলীর এই রকেট গতি আর মার্কিন ও তাঁর বন্ধুদের “গনতন্ত্র রফতানী”র সময় কাল টি কাকতালীয় ভাবে মিলে যায়, এটা কি আসলেই দৈব মিল? নাকি এর মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে? এই প্রশ্ন টি নৈর্ব্যক্তিক ভাবে উত্থাপনের সময় এসেছে।
“শাখের করাত” সম্ভবত দুই দিক থেকে কাটে, অর্থাৎ যাওয়ার পথে এবং ফিরে আসার পথে উভয় ভাবেই কাটে। মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম এক অদ্ভুত শাখের করাত, এর অনুসারীরা নিজেরাই নিজেদেরকে সারা পৃথিবী থেকে আলাদা করে তোলে আবার আলাদা হয়ে যাবার পরে সেটা নিয়ে আক্ষেপ করে, বৈষম্যের অভিযোগ তোলে।
লেখাটি পরিকল্পনা করেছিলাম তিন পর্বে শেষ করবো, এখন মনে হচ্ছে, হয়ত চার পর্বে শেষ করতে হবে। আগামী পর্বে, ইউরোপীয় মুসলমানদের “ না ঘরের, না ঘাটের” পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইলো।
মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা টি সম্পূর্ণ আলাদা হওয়া উচিত কারন পুরো মধ্যপ্রাচ্যই (পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সহ) “Conflict Area” হিসাবে চিহ্নিত। ইউরোপ বা নর্থ আমেরিকার দেশগুলো “Conflict Area” নয়। তাই ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ এর স্বরূপ এই দুই বিশ্বে সম্পূর্ণ দুই রকমের। এই নিবন্ধের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইউরোপে ও নর্থ আমেরিকায় “ইসলাম ভিতী” র বাস্তবতা পরীক্ষা করে দেখা।
এ জাতীয় কিছু তথ্য সূত্রের কথা আগেও পড়েছি।
কথা হল, ডাটাগুলিতে সন্ত্রাসী ঘটনা বলতে ঠিক কাদের তালিকাভক্ত করা হয়েছে? ধরা যাক, কথা নেই বার্তা নেই একজন আপাত নিরীহ মানুষ আচমকা নিজ অফিস বা রাস্তায় গুলি করে ডজন খানেক লোক মেরে ফেলল (যেটা আমেরিকার নিয়মিত ঘটনা) সেটাও নিশ্চয়ই সন্ত্রাস। ব্যাক্তিগত ডিপ্রেশন জনিত এই ধরনের বহু ঘটনা আছে। কিংবা ধরেন কোন বিমান ছিনতাইকারী বা অপহরনকারী মানূষ মেরে ফেলল? এসব ঘটনার সাথে কি বোমা মেতে ধর্ম রক্ষা জাতীয় সন্ত্রাসী ঘটনার তুলনা করা যায়?
আরেকটু পরিষ্কার করি। বাংলাদেশে ধর্ম সম্পর্কিত সন্ত্রাসের বড় উদাহরন বাংলা ভাই পর্ব, কিংবা হরকতুল জেহাদ বা হিযবূত তাহরির। পরিসংখ্যান নিলে নিঃসন্দেহে দেখা যাবে যে এসব বাহিনীর হাতে যত জন মারা গেছে সে তূলনায় সমসাময়িক কালে অন্যান্য ঘটনায় লোক মারা গেছে অনেক বেশী (যেমন হয়তবা সাধারন রাজনৈতিক সন্ত্রাস যেমন হামলা/বোমাবাজি/খুন যা আমাদের দেশে ডালভাত)। এখন এই তথ্যের ওপর যদি কনক্লুশন টানা হয় যে ধর্মজনিত সন্ত্রাস আসলে গুরুত্বহীন, এটাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ড্রামাটাইজ করা হয়েছে তাহলে কেমন হয়?
গনতন্ত্র রফতানী করা কোনদিন সম্ভব হত না যদি না সেসব দেশের লোকে না চায়। আরব বসন্তের সব দেশই নিজেরাই গনতন্ত্রের পথে হেঁটেছে, কেউ তাদের বাধ্য করেনি। মুসলমান প্রধান দেশগুলি শাসন ব্যাবস্থার ব্যাপারেও পিছিয়ে আছে, যুগের স্বাভাবিক তাগিদেই দেরীতে বা ধীরে হলেও গনতন্ত্রের পথে তারাও আসছে। অন্য দিকে কট্টর ধার্মিকরা গনতন্ত্র পুরোপুরি অস্বীকার করে, তারা খিলাফতের স্বপ্ন দেখে। মধ্যম দরের ধার্মিকরা গনতন্ত্রে আপত্তি করে না কিন্তু তারা আবার চায় ইসলামি ব্যাবস্থা। বিপরীতে সেক্যুলার ধারার মুসলমানরা চায় ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাবস্থা। কাজেই সঙ্ঘাতের বীজ থেকেই যাচ্ছে, নিজেরা নিজেদের শত্রু বানিয়ে ফেলার এই অদ্ভূত সমস্যা আর কোন ধর্মগোষ্ঠীর ভেতর আধুনিককালে নেই। এ ছাড়াও দেখা যায় সেসব দেশের ভেতর আগে থেকেই ধর্মীয় বা আঞ্চলিক বিভাজন ছিল, এক গ্রুপ স্বৈরাচারের সুযোগে আরেক গ্রুপের ওপর চরম নির্যাতন করেছে, স্বৈরাচার পতনের পর পক্ষ বদল হয়েছে। যেমনটা হয়েছে ইরাকে। মাইনরিটি হয়েও সুন্নী সাদ্দাম বহু বছর মেজরিটি শিয়াদের অত্যাচার করেছে। সাদ্দাম পতনের পর ভোটে স্বাভাবিকভাবেই মেজরিটি শিয়ারা জিতেছে,জিতে শুরু করেছে প্রতিশোধ পর্ব, তার জবাবে সুন্নী গ্রুপদের সন্ত্রাসের পথ নেওয়া। এর বিপরীত চিত্র হল সিরিয়ায়, সেখানে মাইনরিটি শিয়া (তাও বিশেষ একটা সেক্ট) মেজরিটি সুন্নীদের শাসণ করছে, বহু বছর ভয়াবহ অত্যাচার করেছে। সেখানেও গতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলে ফেয়ার ইলেকশনেই অত্যাচারিত সুন্নীরা ক্ষমতায় আসবে, স্বাভাবিক নিয়মেই তারাও প্রতিশোধ নেবে। পালটা হিসেবে দেখা দেবে মাইনরিটি শিয়া গ্রুপের সন্ত্রাস। গনতন্ত্র রফতানীর তত্ত্ব খুব আকর্যনীয় মনে হলেও সাথে সাথে এসবও চিন্তা করা দরকার।
গনতন্ত্র উত্তরন বা রফতানি যাইই বলা হোক তার সাথে সাথে ৭০ দশকের গোড়া থেকে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, ইরানের ইসলামি বিপ্লব, আমেরিকার ইরাক দখল এসবের ভূমিকা আছে।
তবে মোদ্দা কথা হল আপনি ঘরে লাইভ বোমা নিয়ে বসবাস করলে প্রতিদিন সেটা ফাটবে না। কিন্তু সেটা ফাটার জন্য দরকার সামান্য ডেটোণেশন, সেই ডেটোনেশন আসতে পারে নানান সূত্রে।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে। আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নিয়ে অবশ্যই বিতর্ক হতে পারে। অন্তত ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাটাবেইস খুব সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ব্যাবহার করছে বহু বছর ধরে। এখানে ওদের রিপোর্ট থেকে তুলে দিলাম। সম্ভবত আপনার বক্তব্যের সাথে এই সংজ্ঞাটি সঙ্গতিপুরন।
GTD Definition of Terrorism and Inclusion Criteria
The GTD defines a terrorist attack as the threatened or actual use of illegal force and violence by a non‐state actor to attain a political, economic, religious, or social goal through fear, coercion, or intimidation. In practice this means in order to consider an incident for inclusion in the GTD, all three of the following attributes must be present:
১। The incident must be intentional – the result of a conscious calculation on the part of a
perpetrator.
২। The incident must entail some level of violence or threat of violence ‐including property
violence, as well as violence against people.
৩। The perpetrators of the incidents must be sub‐national actors. The database does not
include acts of state terrorism.
In addition, at least two of the following three criteria must be present for an incident to be
included in the GTD:
Criterion 1: The act must be aimed at attaining a political, economic, religious, or social
goal. In terms of economic goals, the exclusive pursuit of profit does not satisfy this
criterion. It must involve the pursuit of more profound, systemic economic change.
Criterion 2: There must be evidence of an intention to coerce, intimidate, or convey some
other message to a larger audience (or audiences) than the immediate victims. It is the act
taken as a totality that is considered, irrespective if every individual involved in carrying out
the act was aware of this intention. As long as any of the planners or decision‐makers
behind the attack intended to coerce, intimidate or publicize, the intentionality criterion is
met.
Criterion 3: The action must be outside the context of legitimate warfare activities. That is,
the act must be outside the parameters permitted by international humanitarian law
(particularly the prohibition against deliberately targeting civilians or non‐combatants).
@মুহাম্মদ গোলাম সারওয়ার,
ধন্যবাদ তথ্যগুলির জন্য।
মনে হচ্ছে যা ভেবেছিলাম তাই। মোটামুটি সব ধরনের সন্ত্রাস যা কোন রাষ্ট্রীয় শক্তির সৃষ্ট নয় সেসবকেই এক সাথে মেলানো হয়েছে। সন্ত্রাস এভাবে জেনারেলাইজড করা হলে এমন ফলাফল অবশ্যই হতে হবে, ইসলামের নামে ঘটিত সন্ত্রাস মোট সন্ত্রাসের অতি নগন্য অংশ এটা বুঝতে আসলে তেমন তথ্য উপাত্তের দরকার হয় না।
এই জাতীয় তথ্য উপাত্তের ওপর ভরসা করে তত্তীয়ভাবে ইসলামোফোবিয়ার তত্ত্ব জাষ্টিফাই করা যেতেই পারে, কেবল বাস্তব জীবনে তার মূল্য কি সেটা উহ্য থাকে এই আর কি।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ আবারো। আমি কোনও কিছুকেই জাস্টিফাই করিনি, অন্তত এখন পর্যন্ত করিনি। আমি যেহেতু এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ নই, তাই আমার খুব শক্ত কোনও মতামত নেই এই বিষয়ে। আমার লেখায় যদি কোনও মতামত স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তার বিপরীতে যেকোনো ভিন্নমত কে আমি স্বাগত জানাই, কারন সেটা বিষয়টির ভিন্ন প্রেক্ষিত বুঝতে সাহায্য করবে।
আপনি কি বলবেন, ঠিক কিভাবে সন্ত্রাসবাদ কে সংজ্ঞায়িত করলে উপাত্ত গুলো আরও বেশী প্রতিনিধিত্ব মুলক হবে?
@মুহাম্মদ গোলাম সারওয়ার,
আপনি ঠিক কোন তত্ত্ব দাঁড় করাতে চাচ্ছেন এমন কিছু বলিনি বা আপনার লেখায় এখনো পাইনি। যে কোন লেখাতেই তত্ব বা তথ্য উপাত্তের সাথে সাধারনত লেখকের নিজের এনালাইসিস থাকে, আপনার টোনটা মূলতঃ আপনি নিজের ধারনা প্রকাশ না করে অন্যান্যদের মতামত জানতে চাচ্ছেন । আমিও সে হিসেবে আমি যা বুঝছি তাইই বলছি।
প্রথমত, যে কোন কিছু নিয়ে আতংক ছড়ালেই স্বাভাবিকভাবেই কিছু না কিছু মাত্রায় ফোবিয়া ছড়িয়েই পড়ে, যার হয়ত অনেক কিছুই ভিত্তিহীন। ইসলাম নিয়েও ফোবিয়া যে একেবারেই নেই এমন হতে পারে না। ইসলামোফোবিয়া অবশ্যই কিছু না কিছু মাত্রায় আছে অস্বীকার করা যায় না। শুধুমাত্র মুসলমান নাম ধারন করার কারনে বহু লোকে নানান মাত্রায় নানান দেশে ভুগেছে এসব নিঃসন্দেহে সেই ফোবিয়ার বহিঃপ্রকাশ।
কথা হল ফোবিয়া লেজিটিমেটেড মানেই মূল ইস্যু আসলে পুরোই কৃত্রিম বা মিডিয়া বা কোন বিশেষ কায়েমি স্বার্থের সৃষ্টি এমন নয়। এই দুটো এক সাথে মেলালেই ফিলোসপিক্যালি ব্যাপারটা বোঝা যাবে। নিঃসন্দেহে দুই দিকেই কিছু চরমপন্থী মতামত আছে যেমন এক গ্রুপ ইসলাম বা মুসলমান মানেই মধ্যযূগীয় বর্বর কোন জাতি বোঝাতে চায় আরেক গ্রুপ তেমনি ইসলামে কোনই সমস্যার কিছু নেই চালাতে চায়। বাংলাদেশের মানুষও এক সময় শায়খ রহমান বাহিনীর বোমাবাজির চরম সময়ে ইসলামোফোবিয়ায় ভুগেছে তা কি অস্বীকার করা যাবে? সে সময় বাসে ট্রেনে হুজুর শ্রেনীর কেউ ব্যাগ হাতে পাশে বসলে লোকে উঠে পালিয়েছে এমন বহু ঘটনা শুনেছি। এটাকেও কি ইসলামোফোবিয়া বলা যায় না? লোকে তখন তথ্য উপাত্ত দেখে সান্তনা পাবার চেষ্টা করেনি যে অন্যান্য সন্ত্রাস আরো অনেক বেশী ঘটে, ইসলামোফোবিক হবার কোন তত্ত্বীয় কারন নেই। কি বলেন? আসলে শুধু % তূলনামূলক বিচারে যথার্থ হলেও অনেক সময়ই শুধু % সংখ্যাগতভাবে খুব মিনিংফুল কিছু নয়। যেমন ধরা যাক কোন সমাজে ১% সুইসাইড বোমাবাজ আছে, বাকি ৯৯% ভাল। ৯৯% ১% এর বিপরীতে অনেক বড় সংখ্যা হলেও সে সমাজের স্বস্থিতে থাকার কোনই কারন নেই; কারন সেই ১%ই যথেষ্ট ভয়ের কারন। আমেরিকায় পার্ল হারবার আক্রমনের পর জাপানী ফোবিয়া আরো অনেক বেশী মাত্রায় ছড়িয়েছিল। জন্মসূত্রে আমেরিকান নাগরিক কিন্তু জাপানী বংশোদ্ভূত লাখের ওপর আমেরিকানকে বিশেষ ক্যাম্পে সরিয়ে এক রকম বন্দী করা হয়েছিল। fফোবিয়ার প্রভাবে নিরীহ লোকের ভোগান্তি খুবই সাধারন, সহজ প্রতিকার নেই। আজ বাংলাদেশে ধরেন কিছু গেরুয়া টিকি ধারী হিন্দু বা বৌদ্ধ লোক র্যান্ডম কিছু বোমা ফাটালো। এর প্রতিক্রিয়া দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কেমন হবে মনে করেন?
– গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন। আমার মতে কার্যকারন বা মোটিভেশন দিয়ে শ্রেনীবিন্যাস করা হলে তা কার্যকরভাবে প্রতিনিধিত্বমূলক হবে, নয়ত ভুল কনক্লুশনে আসতে হবে। আপনি ডাক্তার মানুষ, সে পথেই যাওয়া যাক। পৃথিবীতে প্রতিদিন যত মানুষ মরে তার কতভাগ ক্যান্সার বা এইডসে মরে? নিঃসন্দেহে অতি সামান্য অংশ। এখন আমি যদি তথ্য উপাত্ত দিয়ে সেটা দেখিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করি যে আসলে এইডস ক্যান্সার এসব রোগ নিয়ে মাতামাতি করা ক্যান্সারোফোবিয়া বা এইডোফোবিয়া তাহলে কেমন শোনাবে?
যেমন বাংলাদেশের সাধারন সম্পত্তি ঘটিত কিংবা রাজনৈতিক সন্ত্রাস যত হয় ধর্মজনিত সন্ত্রাস সে তূলনায় ফ্র্যাকশন। কিন্তু তারপরেও ধর্মীয় উগ্রতা জনিত সন্ত্রাস পুলিশের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। তাই না?
এই বিশেষ গুরুত্ব পাবার কিছু কারন আছে। যেমন সম্পত্তিজনিত বা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের টার্গেট র্যাান্ডম কোন ভিক্টিম না, শুধুমাত্র প্রতিপক্ষই ভিক্টিম। এই ধরনের সন্ত্রাস সংখ্যায় বেশী হলেও নেহায়েতই ব্যাক্তিগত বা এলাকাগত (অবশ্য সাম্প্রতিক সময় জামাত শিবির এটাকে বদলে দিয়েছে, তারাও র্যাান্ডম টার্গেট পদ্ধুতি নিয়েছে)। দ্বিতীয় কারন সম্ভবত ধর্মীয় সন্ত্রাস অন্যান্য দুই সন্ত্রাসের তূলনায় প্রতিরোধযোগ্য, বাকিগুলির কার্যকারন আমাদের সমাযে গভীরভাবে নিহীত আছে যা শুধু থানা পুলিশের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। যেমন আমেরিকায় ডিপ্রেশন জনিত র্যারন্ডম কিলিং।
ইসলামের নামে প্রচলিত সন্ত্রাসের তূল্য কি হতে পারে? যেমন আয়ার্ল্যান্ডের IRAর কথা ধরা যাক। সেটা সরাসরি ধর্মীয় না হলেও ধর্মীয় জাতিসত্ত্বা ঘটিত যা মূলত রাজনৈতিক সমস্যা (কিছুটা বর্তমানের ইরাক/সিরিয়ার মত)। IRAর সদস্যরা যদি তাদের দাবী দাওয়া মেটাতে দুনিয়াময় র্যা্ন্ডম বোমাবাজি শুরু করতে তাহলে এটাকেও একই শ্রেনীতে ফেলা যেত। ইতিহাস বলে IRAর সন্ত্রাস মূলত আঞ্চলিক ছিল। কিংবা ধরেন ৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদাসীন। আপনার লেখায় ভিয়েতনামের কথা এসেছে। ভিয়েতনামের লোকে যদি মার্কিন মূলুকে বা মার্কিন মিত্র দেশগুলিতে বোমাবাজি চালাতো তবে সেটাকেও একই শ্রেনীতে দেখা যেত।
জানি না কতটা বোঝাতে পারলাম।
.
ধর্মকে শাসকগোষ্ঠী তাদের নিজেদের সুবিধামত ব্যবহার করে। তালেবানদের সৃষ্টি করেছিলো আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ।মুসলিম ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে তারা এক ধরনের রাজনৈতিক খেলা খেলছে।অনেকটা চোরকে চুরি করতে বলা এবং গৃহস্থকে সজাগ থাকতে বলার মত।
@মুহাম্মদ গোলাম সারওয়ার,
মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোতে তৈল সম্পদ দখল করার জন্য “democracy export” করার অপচেষ্টা আমেরিকা এবং পশ্চীমী দেশগুলো করে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলো দেশাত্মবোধ দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করুক সারা বিশ্ব তাদের সমর্থন করবে। কিন্তু তারা ইসলামের শরণাপন্ন হচ্ছে।এখানেই গণ্ডগোল। ভিয়েতনাম আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কিন্তু ধর্মের আশ্রয় নেয় নি। তাই সারা বিশ্ব তাদের পাশে ছিল। আবার সোভিয়েতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আফগানিস্থানে ধর্মীয় উগ্রতাকে আমেরিকা উৎসাহ দিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যতেও ধর্মীয় উগ্রতাকে আমেরিকা জল সিঞ্চন করেছে তাদের নিজেদের স্বার্থে । কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, আমেরিকা চাইলেই ধর্মীয় উগ্রতা বাড়বে কেন? জমি কি তৈরি ছিল?
যাই হোক লেখা খুব ভাল হচ্ছে। খুব অল্প পরিসরে এত বড় পটভূমি ধরা সোজা নয়। পরের সংখ্যার অপেক্ষায় থাকলাম।
@অনিন্দ্য পাল,
এ বিষয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই ধর্ম গুলোতে, বিশেষত একক গ্রন্থমুখী ধর্ম যেমন ইসলামে, ধর্মীয় চেতনার মাঝে সন্ত্রাসবাদের বীজ আছে, যাকে বহু ভাবেই ভয়ংকর ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
জিহাদের কন্সেপ্ট এমনই এক চীজ, যা অত্যাধুনিক ফ্যাশনদুরস্ত একটা সম্ভবনাময় যুবককে নিমিষেই জঙ্গিতে পরিণত করে ফেলে যদি তার মধ্যে একটুসখানি ধর্মীয় আবেগের অস্তিত্ব থাকে। হয়তো অনেকের পরিচিতজনদের মধ্যে ব্রেইনওয়াশড হওয়া এমন কাউকে না কাউকে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।
একটা গুরুত্বপূর্ণ টাইপো ঠিক করা দরকার,
“যার পপুলার না হয়ে উঠেছে “ডেমোক্র্যাসী এক্সপোর্ট” বা “গনতন্ত্র রফতানী”। ” এই লাইন টি তে “না” এর স্থলে হবে, “নাম”, কিভাবে ঠিক করা যাবে? এডিট অপশন পাচ্ছিনা।
@মুহাম্মদ গোলাম সারওয়ার,
লগইন অবস্থায় প্রথম পাতায় আপনার লেখার নিচে “সম্পাদনা” লেখা অংশটা দেখতে পাবেন।
সেমিটিক ধর্মগুলোতেই সমস্যাগুলো দেখতে পাই। ইসলাম ও ইহুদী ধর্ম মনে হয়েছে খুব উগ্র। বাস্তব জীবনে কোন ইহুদীর সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়নি। তাদের মনোভাব জানি না। তবে খুব নিরহ মুসলিমও এটা বিশ্বাস করে, সারা দুনিয়াতে একদিন ইসলাম কায়েম হবে। ইমাম মাহাদি আসবে। তিনি এসে ইসলাম কায়েম করবেন। সারা দুনিয়ার তখন মুসলিম ছাড়া আর অন্য কোন ধর্ম ও সম্প্রদায় থাকবে না।- এসব থুবই প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা। এসব থেকেই জিহাদের প্রতি মৌন সম্মতি জন্ম নেয়। বাংলাদেশী মুসলিম বিশ্বাস থেকে কমেন্টসটা করলাম। অন্য দেশ বা মহাদেশের কথা জানি না।