“ আজকের সকালটা অন্যরকম।” বলল অনিন্দিতা।
“ হুম। সূর্যটা কি সুন্দর উঠেছে। কত বড় লাগছে। ” পাশ থেকে বলল পলাশ।
অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের বুক থেকে সূর্যোদয় ওদের ভিতর আলোড়ন ফেললো। ভেতো বাঙ্গালী সন্তান এতদিন দেখেছে কুয়াকাটা আর কক্সবাজারে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত।
শান্তশিস্ঠ ইয়ামিন কিছু বলল না। ছবি তোলায় ব্যস্ত। ওদিকে তন্ময় ব্যস্ত ফেসবুকিং এ। মানে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছে।
অনিন্দিতা ঘোষ, পলাশ গোলদার, ইয়ামিন হামিদ আর তন্ময় শেখর বিশ্বাস বাংলাদেশের চার মেডিকেল শিক্ষার্থী। ওরা এখন দক্ষিণ আমেরিকার সব থেকে বড় দেশ ব্রাজিলে এবং এই মুহূর্তে মারাকানা স্টেডিয়ামের শহর রিও ডি জেনিরোতে।
ওরা এখানে এসেছিল একটি মেডিকেল স্টুডেন্টদের কনফারেন্সে যোগ দিতে। BRAINCOMS – Brazilian International Congress of Medical Students এর সম্মেলনে। বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিল চাট্টিখানি কথা নয়। বিশাল দূর। মোট খরচ পড়ে চার লাখ টাকার মত। তবে আয়োজক কমিটি ওদের যাতায়াত আর থাকা খাওয়ার খরচ দিতে রাজি হয়েছে। এই সম্মেলনে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকেই অংশ নেয়। দূর এশিয়ার বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে এটাই তো ওদের কাছে অনেক।
BRAINCOMS সম্মেলন হয় ব্রাজিলের সব থেকে বড় শহর সাও পাওলোতে।
অনেক গুলো রাজ্য নিয়ে গঠিত ব্রাজিল, সাও পাওলো হল সাও পাওলো রাজ্যের রাজধানী। ব্রাজিলে এটাই সবচে’ বড় আর জনবহুল শহর। সাও পাওলো শহরের মানুষদের বলা হয় “পলিস্তানো” আর সাও পাওলোর ডাকনাম হল “সামপা”। ব্রাজিলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র এই শহর। সাও পাওলো যদি একটা দেশ হতো তবে এর অর্থনীতি হল বিশ্বের ৪৭তম, যা কিনা মিশর আর কুয়েতের উপরে, হাঙ্গেরী বা নিউজিল্যান্ডের সমান আর ইসরায়েলের প্রায় ৮৫%!
এই শহর গাড়িসমুদ্রের জন্য বিখ্যাত। ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম এর কাছে কিছুই না। শহরটিতে সন্ধ্যায় চলাফেরা মানেই ভয়াবহ বিড়ম্বনা। তখন শহরের ভেতরে-বাইরে অন্তত ১৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। এই দৈর্ঘ্য কোনো কোনো দিন ২৯৫ কিলোমিটারও হয়। গাড়ি থামানোর নির্দেশক লালবাতি বহু দূর থেকেও নজরে পড়ে। থেমে থেমে চলার বিড়ম্বনা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সইতে হয়। সেই কারনেই এখানে হেলিকপ্টারের ব্যবসা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বর্তমানে প্রায় চারশত হেলিকপ্টার বছরে সত্তর হাজারের মতো ফ্লাইট পরিচালনা করছে, উঁচুতলা ভবনের ছাদে প্রায়শই তাই দেখা যায় ছোট ছোট হেলিপ্যাড। এই শহরে অবশ্য ওরা এই ঝামেলায় পড়ে নাই। ওদের হোটেল ছিল ওদের সম্মেলন কেন্দ্রের কাছেই। ভালোভাবেই সম্মেলনে তারা নিজের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছে এবং পোস্টার প্রেজেন্টেশনে প্রথম পুরষ্কার জিতে নিয়েছে অনিন্দিতা।
সম্মেলনের পর ওরা এসেছে ব্রাজিলের আরেক বড় শহর রিও ডি জেনিরোতে। সাও পাওলো থেকে ৪৩৩ কিলোমিটার দূরে। ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহর বিখ্যাত বস্তির জন্য। এইগুলোকে বলে ফাভেলা। এই ফাভেলাগুলোই ছিল এককালে মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্য। ওদের আগেই বলা হয়েছিল এই ফাভেলাগুলোতে ঘোরার সময় যেন ক্যামেরা গলায় না ঝুলিয়ে বের হয়। ওরা এত ঝামেলার মধ্যে যায় নাই। ফেভেলা ছাড়া আরও দর্শনীয় স্থান আছে এই রিওতে। এই মুহূর্তে ওরা এর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
পাহাড়ের চূড়ায় দু’দিকে দু’হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিশাল যিশু মূর্তি ‘ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার’। ২০০৭ সালে বিশ্বের মানুষের ভোটে ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার নির্বাচিত হয় নতুন সপ্তাশ্চর্যের এক আশ্চর্য হিসেবে। রিও ডি জেনিরো শহরের পাশে ২ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু কর্কোভাডো পাহাড়ের ওপর স্থাপিত এই সুবিশাল যিশু মূর্তিটি ১২৫ ফুট উঁচু আর পাশে ১২০ ফুট। যিশু মূর্তির ওজন ৬৩৫ টন।
আটলান্টিক সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যিশুর মুখমণ্ডল পর্যটকদের কাছে ভেসে ওঠে মেঘের ফাঁক দিয়ে। তারপর একটু একটু করে সরে যাওয়া মেঘের ফাঁক দিয়ে একটা হাত, তারপর আরেকটা হাত, তারপর ভেসে ওঠে গোটা শরীর। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি।
পলাশ বলল, “বিশ্বনন্দিত যে সমস্ত স্থাপত্যশিল্প পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার অধিকাংশই ফরাসিদের হাতে নির্মিত। নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অব লিবার্টি, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার, এমনকি ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারও ফরাসিদের তৈরি। যিশু মূর্তির ভাস্কর্যটি তৈরি করেন ফরাসি ভাস্কর পল ল্যান্ডৌস্কি। ”
অনিন্দিতা বলল, “ ঠিক বলেছিস। আমার সৌভাগ্য বাকি দুইটাকেও দেখেছি নিজের চোখে।”
ইয়ামিন বলল, “ আশ্চর্যের বিষয় ভাস্কর্যটি তৈরি করতে কোনো ইস্পাত ব্যবহার হয়নি বরং ব্যবহার করা হয়েছে রি-ইনফোর্সড কংক্রিট। সোপ স্টোন বা সাবান পাথরে এর উপরিভাগ নির্মিত বলে ক্রাইস্টের শরীর অতি মসৃণ। ”
পলাশ বলল, “ শুনেছি ভাস্কর্যের গায়ে হাত ছোঁয়ালে সাবানে হাত ছোঁয়ানোর অনুভূত হয়। যদিও এ পাথরে শরীর ধোয়া যায় না কিন্তু ব্রাজিলীয়রা বিশ্বাস করে বৃষ্টির দিনে ক্রাইস্টের গায়ে সাবানের ফেনা দেখা যায় এবং তিনি নিজেকে পরিষ্কার রাখেন। ”
আবার তারা যীশুর ভাস্কর্যের দিকে তাকালো। ভাস্কর্যটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন যীশু তার দুই হাত প্রসারিত করে শহরটিকে আলিঙ্গন করছেন।
“আজ সত্যি এক অন্য রকম সকাল।” অনিন্দিতা বলল।
ঠিক আট মিনিট ২০ সেকেন্ড পর তারা তাদের সূর্যের পরিণতি জানতে পারলো। যে সূর্যের আয়ুষ্কাল ছিল আরও ৫০০ কোটি বছর সে সূর্য যখন কোন অজানা কারণে তার জ্বালানী হারিয়ে লোহিত দানব হয়ে তার গ্রহমণ্ডলকে গ্রাস করলো।
সত্যি সেদিন ছিল অন্য রকম এক সকাল। কারণ এরপর আর কোন সকাল আসে নি পৃথিবীর কোন মানুষের জীবনে।
হয়ত ঢাকায়ও এমন হবে, তবে তা হবে কেবল ধনীদের জন্যই।
হয়ত এজন্যই জনপ্রিয় ভোটে ঢুকে পড়েছে সপ্তাশ্চর্যের লিস্টে (সম্ভবত সবচেয়ে সমালোচিত হয়েছে এই সপ্তাশ্চর্যটি); মেঘের মধ্য থেকে আস্তে আস্তে যীশুর অভ্যুদয়- ব্যাপারটা ভাবলেও রোমাঞ্চিত হতে হয়, হয়ত আমিও ভোট দিতাম স্বচক্ষে দেখলে।
যা হতে পারত সুন্দর একটি ভ্রমন কাহিনি, তাকে কেন জোর করে মাত্র একটি লাইনের বিনিময়ে ফিকশন বানানো? এইটা কিছু হইল?
@কাজি মামুন,
আমি সায়েন্স ফিকশন লিখব বলেই গল্পটা শুরু করেছিলাম। এক্সপ্রেইমেন্ট বলতে পারেন। :lotpot: :lotpot: :lotpot: :lotpot: :-X :-X :-X
গল্পটি পড়ে মনে হলো লিখতে লিখতে হঠাৎ লেখককের মনে হলো সায়েন্সফিকশন টাইপ কিছু করে ফেলি! যে থিম নিয়ে শেষ পরিণতি হলো গল্পটার সেটা কিছুতে গোছানো মনে হয়নি। তার উপর এত ছোট পরিসরে পরিসংখ্যান আর ইতিহাস গল্পটাকে ভারাক্রান্ত করে ফেলেছে। খুব ভাল একটা গল্প হতে পারতো… মুক্তমনার গল্প আমার প্রিয় বিষয়, তাই দেখলেই পড়ে ফেলি।
@সুষুপ্ত পাঠক,
আমি সায়েন্স ফিকশন লিখব বলেই গল্পটা শুরু করেছিলাম। ভবিষ্যতে এই রকম টার্ন নেওয়ার আগে কয়েকবার চিন্তা করবো। ;-( ;-( ;-( ;-( ;-( ;-( ;-( ;-( ;-(
লেখায় ভূগোল এবং ঐতিহ্যগত তথ্য গুলো সঠিক তো???
আমি কিন্তু আবার অনেক কিছুই নিজের অজান্তে মনে রেখে দেই। তথ্য ভুল হলে কিন্তু ভবিষ্যতে বিপদে পড়ে যেতে পারি 😛
কিছুক্ষন পর কি ঘটবে কেউ তা জানেনা। জানলে কি আর মড়ার কিছুক্ষণ আগেই ছবি তোলা বা ফেসবুকিং করতো কেউ :/
* বানানটি ভুল; শান্ত শিষ্ট হবে 🙂
সত্যি সত্যি নাকি???
হাউ ফানি :-s
এমন সকাল আমি দেখতে চাইনা ভুলেও। নো নেভার 😕
গল্পটি ভালো হয়েছে 🙂
তবে কেন যেন মনে হচ্ছে আরেকটু বড় এবং আরও কিছু মাল মশলা থাকলে গল্পটি বেশী ভালো হত 🙂
নতুন সকালের শুভেচ্ছা (F)
@এম এস নিলয়,
আপনাকেও নতুন সকালের শুভেচ্ছা। (F) (F) (F) (F) (F) (F) (F)