আমাদের দেশে বিদ্যমান স্ববিরোধী রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুতর কিছু স্ববিরোধী ও অসঙ্গত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যেমন-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি গণতন্ত্রের পরিপন্থী? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনে কি স্বৈরতন্ত্র, দুর্নীতি-দু:শাসন, দলতন্ত্র, একদলীয় তামাসার নির্বাচন ও নিরঙ্কুশ পরিবারতন্ত্রকে মেনে নিতে হবে?
গতানুগতিক ধারার বৃহৎ রাজনৈতিক দল কিংবা জোটগুলো নানা কূটকৌশলের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে যে, মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরোধীতা কিংবা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাইতে হলে যেন বিগত দিনের আওয়ামী লীগের যত অপশাসন, অপকর্ম, দুর্নীতি-দু:শাসন, ব্যক্তিতন্ত্র ও নিরঙ্কুশ পরিবারতন্ত্রকে মেনে নিতে হবে। আর এসবের বিরোধীতা করলে মনে হবে, আপনি যেন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আড়ালে বিএনপি-জামাত-শিবির পরিচালিত নৈরাজ্যকর আন্দোলনকে সমর্থন করে প্রকারান্তরে যুদ্বাপরাধীদের বিচারের বিরোধীতা করছেন। আওয়ামী লীগ তো একথাকে রাজনৈতিক আপ্তবাক্যে পরিণত করেছে। অধিকন্তু যারা বিগত দিনের দু:শাসনের সমালোচনা করছেন, আওয়ামী লীগ তাদেরকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীতাকারী হিসাবে চিহ্নিত করছেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাদের কোরাসে গলা মিলিয়েছেন দেশের কিছু প্রতীতযশা সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি। নাগরিক সমাজের মধ্যে যারা এ মত সমর্থন করছেন না, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে। এক অভূতপূর্ব কিংকর্তব্যবিমূঢ়করা পরিস্থিতি বৈকি। এ প্যারাডক্স থেকে জাতিকে অবশ্যই মুক্ত করে সত্যের সন্ধান দিতে হবে।
এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা এবং চুড়ান্ত পর্যায়ে নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। সেদিনের আওয়ামী লীগ নামক দলের মূল নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং জাতিগত শোষণ থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার চেতনায় উদ্বুদ্ধ নেতা-কর্মীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি আদর্শিক দল ছিল আওয়ামী লীগ। বলাবাহুল্য, উক্ত স্বাধিকার আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ-এ ধারাবাহিক লড়াইয়ের মাধ্যমে যে জাতীয়তাবোধ জাতির মানসে অঙ্কুরিত হয়েছিল, তারই চুড়ান্ত পরিণতিতে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের উদ্ভব। এতদ্ব্যতিতও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও সশস্ত্র লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আরো কিছু চেতনা বা মূল্যবোধ-গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি-আমাদের জাতীয় মানসে সঞ্চারিত হয়েছিল। যেহেতু জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিতে আমাদের মুক্তির লড়াইটি ছিল সংখ্যালঘু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর মুক্তির লড়াই, সেহেতু এ আন্দোলনের মর্মগত চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক। একটি জাতিগত শোষণের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন, সে আন্দোলনের অপরিহার্য রণনীতি হবে শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ এবং নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদ বিষয়গতভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ। বস্তুত: এ সকল চেতনা বা মূল্যবোধই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বলা বাহুল্য, সমাজ ও সভ্যতার বিকাশের সমকালীন প্রেক্ষাপটে এসকল চেতনা ছিল প্রগতিশীল ও আধুনিক। যারা সেদিন প্রত্যক্ষভাবে আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল, তারা এসব ভাবাদর্শের বিপরীতে মধ্যযুগীয় ভাবাদর্শে আচ্ছন্ন হয়ে ধর্মরাষ্ট্র কায়েম করার স্বপ্নে বিভোর ছিল। বস্তুত: তাদের এ চেতনা অবৈজ্ঞানিক ও পশ্চাৎপদ। কিন্তু সমাজ-সভ্যতার বিকাশের গতি গুণগত পরিবর্তনের দিকে । এটাই হল বৈজ্ঞানিক সত্য। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, চেতনা স্থবির নয়, সতত: বিকাশমান এবং এ বিকাশ স্বত:স্ফূর্ত ও উর্ধ্বমুখী। বস্তুর পরিবর্তনের সাথে চেতনারও পরিবর্তন ঘটে। সামাজিক সত্ত্বার পরিবর্তন সামাজিক চেতনারও পরিবর্তন ঘটায়। তাই তেতাল্লিশ বছর পর একাত্তুরের চেতনার বিকশিত রূপ আজ আমাদের খুঁজে নিতে হবে। তা না হলে, আমরাও আবার প্রতিক্রিয়াশীল বা রক্ষণশীলতার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হব। সে প্রসঙ্গ ভিন্ন।
আজ কিন্তু সবচেয়ে জরুরী যে বিষয়টি আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তাহল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সত্যিকার ধারক-বাহক কারা তা চিহ্নিত করা। কেবল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলা কিংবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা বা করাকে সমর্থন করা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হওয়ার একমাত্র প্রমাণ ? নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্তর্নিহিত যে দর্শন, সে দর্শনকেও ধারণ করতে হবে।
কী সে দর্শন?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি হয় ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র, তাহলে আধুনিকতা ও বিজ্ঞান মনস্কতাই হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্তর্গত দর্শন। সুতরাং রাষ্ট্রধর্মে যারা বিশ্বাস করে, দেশের সংবিধানে যারা বিসমিল্লাহ সংযোজিত করে, ক্ষমতারোহনের পথকে মসৃণ করার জন্য ফতোয়া দেওয়ার অধিকার দিয়ে যারা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সাথে চুক্তি করে, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা স্বীকৃতি প্রদান সহ যারা ব্লাসফেমী আইন প্রণয়নের লিখিত অঙ্গীকার করে, যারা ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সাথে জোট করে, তারা আর যাই হউক, কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমরা আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার চারটি মুলনীতি হিসাবে সংযুক্ত করেছিলাম। কিন্তু কেবল এ ৪টি নীতিমালা দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মর্মবস্তু উপলব্ধি করা যাবে না। আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে দর্শন, তা হল সমাজ প্রগতির দর্শন।যে কোন পশ্চাৎপদতা, ধর্মান্ধতা, মতান্ধতা, অতীতমুখীতা, স্মৃতিকাতরা, ঐতিহ্যপ্রীতিসহ সকল প্রকার গোঁড়ামী অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। ফলত: মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, যে কোন প্রকার শোষণ-নির্যাতন, বৈষম্য, স্বৈরতন্ত্র, দলতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ইত্যাকার বিষয়গুলোও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা মোটা দাগে বিভাজন রেখা টেনে বলতে পারি, দেশের বৃহৎ বিরোধী দল ও তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জোটের অন্তর্গত ইসলামী দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার সাংগঠনিক ক্ষমতা বা যোগ্যতাও তাদের নেই।( এখানে আধার ও আধেয় এর দ্বান্দ্বিকতা স্মর্তব্য)
বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে তাদের পরিচালিত আন্দোলনের নামে সহিংসতা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনের আড়ালে জামাত-শিবির চক্র আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে।
তার বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মাহজোটের অন্তর্গত ধর্ম ভিত্তিক দল, পতিত স্বৈরাচারী দল ও তার অপভ্রংশ দলগুলোকে কোন অবস্থাতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল বলা যায় না।
বাকী থাকে কেবল আওয়ামী লীগ ও তার সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগীর রাজনীতিতে যোগ দেওয়া কতিপয় বাম দল। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ কি বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে?
দু:খজনক সত্য হল-না, বর্তমান আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না। খেলাফতে মজলিসের সাথে আওয়ামী লীগের পাঁচ দফা চুক্তির কথা নিশ্চয় আমরা এত তাড়তাড়ি ভুলে যাই নি। সর্বশেষ দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে রচিত বাহাত্তুরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার পরও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম,সংবিধানে বিসমিল্লাহের সংযোজন করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করার পর আওয়ামী লীগ যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে, তার কি আর কোন প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন আছে?
সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করতে হলে আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকতে হবে এ ধারণা একটি চরম বিভ্রান্তি ও প্রতারণা। মৌলবাদী ধর্ম ভিত্তিক দলগুলো যেমন ইসলাম ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করছে এবং এটাই তাদের একমাত্র রাজনৈতিক পুঁজি, ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুঁজি করে বর্তমান আওয়ামী লীগ তার আদর্শহীন দেউলিয়া রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন কি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত বিষয়টিকে তারা তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কাজে লাগাতে চাচ্ছে। কিন্তু তাদের এসব অপকৌশল চুড়ান্ত পর্যায়ে বুমেরাং হতে বাধ্য। তাদের দ্বারা আর যাই হউক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথ ধরে একটি আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন সমাজ হবে না।
তাই এ দুই জোট ও মহাজোটভূক্ত দলগুলোর বাইরে যে কয়টি দল-আপাতত: যত ছোটই তারা হউক না কেন-এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে-সে সকল বাম-উদারনৈতিক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল বু্দ্ধিজীবি-পেশাজীবি, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্রুত একটি বিকল্প জোট গঠন করে চলমান অতিশয় রুগ্ণ রাজনীতির বিপরীতে সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমজনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে বিকল্প ধারা সৃষ্টির প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামলে পরিবর্তনের একটি গণজাগরণ সৃষ্ঠি হতে পারে। এ ছাড়া চলমান রাজনৈতিক সংকটের দুষ্ঠচক্র থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়ার আশু কোন বিকল্প আছে বলে মনে হয়না।
আপনার বিকল্প ধারার কথা ভালো লেগেছে তবে ভোটের দৌড় প্রতিযোগিতায় সকলকেই আদর্শ বিবর্জিত পন্থা অবলম্বন করতে দেখা গেছে। এর কারন ক্ষমতা পাবার লোভের চেয়ে যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় গিয়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করার লিপ্সা কাজ করে বলে আমার মনে হয়।কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে কখনো সে আদর্শের কথায় সবাই ভুলে যায়। সে ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় নতুন জোট ভোটের দৌড় প্রতিযোগিতায় কতটুকু আদর্শিক থাকবে তা প্রশ্নবোধক চিহ্ন দাড় করিয়ে দেয়।
@শামীম আহমেদ,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি গণজাগরণ সৃষ্টি করতে পারলে সব চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ভেসে যাবে। সত্তুরের নির্বাচনে আঃ লীগকে হারানোর জন্য পাকিস্তানী সামরিক জান্তা অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করেছিল।কিন্তু গণজোয়ারে সব খড়কূঠোর মত ভেসে গেছে। ভারতের আম আদমি পার্টির দিকে থাকান।
লেখাটি পড়লাম। আগেও আমি আপনার একটি লেখায় মন্তব্য করেছিলাম যা আপনি ব্যক্তিগতভাবেও নিতে পারতেন। আপনার বদ্যান্যতায় তা নেননি বলে আমি কৃতজ্ঞ।
আজকেও আমি একটি কঠিন মন্তব্য করতে চাই । তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে, দুঃখ প্রকাশ করে নিচ্ছি।
আপনি গণফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম সম্পাদক।গণফোরাম যাদের সাথে এখন একই মঞ্চে কথা বলে তাদের অনেকেই নেতিবাচক রাজনৈতিক চর্চা করে। কাজেই আপনার এ সব প্রস্তাব আমার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে আপনার পার্টিকে নেতিবাচক রাজনৈতিক চর্চার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অথবা আপনাকে গণফোরাম থেকে বেরিয়ে নিরপেক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতে হবে।
@মোঃ জানে আলম,
আপনার একটি প্রতি মন্তব্য আমার ই মেইলে গেছে, কিন্তু এখানে নেই। আমার কিছু কথা ছিল প্রতি মন্তব্য নিয়ে। যাহোক, সংক্ষেপে —-
# আমি ডঃ কামাল হোসেনের ভাল কাজগুলোর কথা জানি এবং সাথে আরও যোগ করতে চাই যে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে রীট নারীপক্ষ’র জন্য উনিই কাজ করেছিলেন। এমন আরও অনেক অনেক রয়েছে। উনাকে আমি শ্রদ্ধা করি।
এ জন্য এখন নেতিবাচক রাজনৈতিক চর্চা করে এমন অনেকের সাথে একই মঞ্চে কথা বলা সমর্থনযোগ্য নয়।
# আর আমি বলিনি যে গণফোরাম সরাসরি নেতিবাচক রাজনীতি করে।
@গীতা দাস,
ধন্যবাদ গীতাদি। আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরো পরিস্কার করি। বিকল্প একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান অপরিহার্য। সে কাজ গণফোরামের নেতৃত্বেই হতে হবে সে dogma আমাদের নেই। আমরা বিগত ২০ বছর ধরে চেষ্টা করছি। আমরা না পারলে কাউকে না কাউকে পারতে হবে।
আলম সাহেব, এই অন্য কেউটা কে যদি একটু পরিষ্কার করতেন তবে বুঝতে সুবিধা হত। যখন আপ্নারা ২০ বছর ধরেও পারেন নি, তখন অন্য কেউ যে পারবে এটা মনে করা কতটা যুক্তি সঙ্গত? এই দেশের মানুষের মধ্যে পরধর্ম, পরমতসহিষ্ণুতা প্রায় শুন্যের কোঠায়। সেখানে এই দেশে এমন কিছু আশা করা হয়ত দোষের কিছু নয়, কিন্তু সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে বর্তমান অবস্থায় আদৌ ৩য় শক্তির উত্থান ঘটানো কি সম্ভব, যেখানে এই দেশে নিরপেক্ষ মানুষ পাওয়া খুবই দুষ্কর?
ডঃ ইউনুসও ফখরুদ্দীনের আমলে অনেক বাগাড়ম্বর করেছিলেন, কিন্তু তিনি কি আদৌ নিরপেক্ষ থাকতে পেরেছিলেন, অথবা আদৌ মানুষের কথা চিন্তা করেছিলেন আম আদমীর নেতার মত? ইউনুস সাহেবের মত মানুষ হয়ত কিছু পারবেন না জিনি অর্থনীতিবিদ হয়ে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেয়ে নিজের ঢোল নিজেই পেটান, সেখানে আর কে আছে যিনি কিনা বিপ্লব ঘটাতে পারবেন?
এখন যদি বলেন বলেন জনতার কথা, তবে সবিনয়ে একটা কথা বলতে চাই যে, গনতন্ত্র যদি হয় সংখ্যা গরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত সরকার, আর সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো যদি হয় গনতান্ত্রিক সংস্কৃতি, ত্যবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যদি জিজিয়ার পক্ষে ভোট ( তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম) দেয়, সেটাকে সম্মান করে গনতন্ত্র চর্চা করা কতটা বাস্তব সম্মত?
আচ্ছা গনতন্ত্র কি সব নাগরিকের মতামত দেবার অধিকার দেয়? সেক্ষেত্রে আমি একজন সাধারন নাগরিক হিসাবে মতামত দিচ্ছি এবং দাবী জানাচ্ছি যে যেকোন মুল্যের বিনিময়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করা হোক, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য দেশের সব সেনাসদস্য কে মোতায়েন করা হোক, এবং দরকার হলে সব সন্ত্রাসীদের গুলি করে মেরে ফেলা হোক সাধারন নিরাপরাধ মানুষের জীবন বাঁচাতে; সেটা যদি সাময়িক ভাবে একটা পরিবারতন্ত্রকে ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমেও হয়, তবে নাগরিক হিসাবে আমার এই মতামতকে( এটাকে আমার ভোট বলতে পারেন) কতটা সম্মান দেয়া হবে? আদৌ সম্মান দেয়া হবে, নাকি অগণতান্ত্রিক কথা বলার অপরাধে ধিক্কারের চাবুক দিয়ে চাবকে রক্তাক্ত করে দেয়া হবে ( সুশীলদের দ্বারা)? জানতে খুবই ইচ্ছা হচ্ছে।
এটা শুধুই আমার নিজের মতামত এবং আপনার কাছে কিছু মুল্যবান মতামতের আশায় মন্তব্যটা করা,কাজেই আশা করি আমার মন্তব্যটাকে সেভাবেই বিবেচনা করবেন। ধন্যবাদ।
@অর্ফিউস,
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে আপনার এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হলে অনেক কথা লিখতে হয়। আমি কিন্তু এক আংগুলে গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে অভ্র ফন্টে লিখতে পারি। তাই বিষদ কিছু লিখতে কষ্ট লাগে। তবুও আপনার প্রশ্নের জবাবে কিছু না লিখলে অন্য পাঠকেরা হয়ত ভাববেন, এ প্রশ্নের কোন জবাব আমার জানা নেই।
দেখুন, কোন কাজ আমি না পারলে আপনি পারবেন না,এটা কোন যুক্তি নয়। বিশেষভাবে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার জন্মের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা কে বা কারা রাখবে তা পূর্ব থেকেই নির্ধারিত করে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং তা সম্ভবও নয়। মানুষই ইতিহাস সৃষ্টি করে বটে,তবে সে তার খেয়াল-খুশী মত ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে না। তার জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী প্রেক্ষিত। সোহরোয়ার্দী, মওলানা ভাষানী ও এ,কে, ফজলুল হক সাহেব প্রমুক শেখ মুজিবেরও নেতা ছিলেন। কিন্তু তারা যে কাজ পারেন নি, শেখ মুজিব সে কাজ করেছে। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্র্রের জন্ম। এর জন্য উপরোক্ত নেতাদের যোগ্যতা বা কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সুবিচার হবে না। মনে রাখতে হবে, সে সকল নেতৃবৃন্দ যখন এ জাতির স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনীতি করছিলেন, তখন বাঙালি জাতি রাষ্ট্র জন্ম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি হয় নি। তারা চাইলেও সেটা হত না। এমন কি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে ভাষনটি ৭ ই মার্চ দিয়েছিলেন, সেট যদি তিনি তৎপূর্বে আওয়ামী লীগ যখন ৬ দফার ম্যাণ্ডেট হিসাবে নির্বাচনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, তার পরও দিতেন, তাও হঠকারিতা হয়ে বুমেরাং হত । কারণ তখন জনগণ ৭ই মার্চের ভাষন ধারণ করার মত মানষিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। ২৫ মার্চের আগে, স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও একই অবস্থা দাঁড়াত।
এ উদাহরণগুলো দিলাম এ কথা বুঝানোর জন্য যে, কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি গোষ্ঠী চাইলে তাদের খেয়াল খুশী মত ইতিহাস সৃষ্ঠি করতে পারে না, তার জন্য প্রয়োজন ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত ও সমসাময়িক বাস্তবতা।
এবার আপনার মূল প্রশ্নে আসি। তৃতীয় বিকল্প গণফোরাম সৃষ্টি করতে না পারলে যে অন্য কেউ পারবে না, এটা ঠিক নয়। তবে কে পারবে সেটা ইতিহাস নির্ধারণ করে দেবে। আবারো বঙ্গবন্ধুর উদাহরণ দিই। বঙ্গবন্ধু কিন্তু আওয়ামী লীগেরও ১ম সারির নেতা ছিলেন না। এমন কি খন্দকার মোশতাক ও আওয়ামী রাজনীতিতে তার জৈষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক কাজ, জনগণের আশা আকক্সক্ষার প্রতিফলন করে ৬ দফা প্রণয়ন, যে ৬ দফা নিয়ে আওয়ামী লীগেও বিতর্ক ছিল এবং পাশাপাশি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস আপোষহীন ভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে শেখমুজিব বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পেরেছেন, হয়েছেন বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা।
আমাদের আরো একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, সমাজের বিকাশ বৈজ্ঞানিক সূত্র মেনে চলে। আদিকাল থেকে ক্রম বিকাশের মাধ্যমে মানব সমাজ আজ যে পর্যায়ে পৌছেছে, তার সবটাই কিন্তু সামাজিক বিপ্লবের পথ ধরে হয় নি। কোন কোন ক্ষেত্রে বিপ্লব আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে বটে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বিবর্তন সমাজ-সভ্যতাকে আজকের এ পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে, বিবর্তন কেন হবে এবং এ বিবর্তনের গতিপথ কোন দিকে ? স্বাভাবিক বিকাশের পথ ধরে সমাজে যখন কোন অসঙ্গতি বা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, যা স্বাভাবিক বিকাশের পথে বাঁধা সৃষ্টি করে, তখন সে সমাজ স্বকীয় বিকাশের স্বার্থে সে অসঙ্গতি বা বাঁধা দূর করতে চায়, যার ফলে একটি পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বহি:স্থ কোন কারণ তথা কোন জনগোষ্ঠী যদি বিপ্লবের মাধ্যমে সে অসঙ্গতি দূর করতে ব্যর্থ হয়, তখন সমাজ ক্রমে সে অসঙ্গতি ভেঙ্গে নিজে রূপান্তরিত হতে থাকে-যদিও খুব শ্লথ গতিতে। আদিম কৌম সমাজ থেকে দাস সমাজ, দাস সমাজ থেকে সামন্ত সমাজ এর পথ বেয়ে বিশ্বসমাজ যে আজ আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজে এসে উপনীত হয়েছে, এ বিবর্তনের পথ ধরেই। আবার কোন কোন পুঁজিবাদী সমাজে ইতোমধ্যে বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র বিনির্মিত হয়েছে এবং তারও আবার পরিবর্তন ঘটেছে বাস্তব সম্মত নানা কারণে- সে প্রসঙ্গ ভিন্ন ।
এবার আপনার প্রশ্নে আসি। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে বর্তমান অবস্থায় আদৌ ৩ য় শক্তির উত্থান ঘটানো সম্ভব কিনা ?
এ প্রশ্নের জবাবেও আবার সে ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতের প্রশ্ন। একদা ভেতো বাঙালি, আর ভীরু বাঙালি বলে আমাদের অপবাদ ছিল। কেউ কি ভেবেছিল সে ন্যুব্জদেহ, ক্যুব্জপৃষ্ঠ বাঙালিরা দুনিয়ার অন্যতম সেরা সেনা বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে সশস্ত্র যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারবে? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হ্যা, পেরেছিল। কারণ, সে দিন বাঙালিরা কেবল চেয়েছিল বলে পেরেছিল, সে কথাটি সঠিক না। সমসাময়িক ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতের দাবী ছিল বিদ্যমান সামাজিক অসঙ্গতি দূর করা। তাই সেটা সম্ভব হয়েছে।
আপনার মন্তব্যে ড.ইউনুসের প্রসঙ্গ অবান্তর। ড. ইউনুছ দেশ-জাতিকে উদ্ধার করার কোন ঠিকাদারী নেন নি। একজন ব্যক্তি হিসাবে নারীর দারিদ্র ও পশ্চাৎপদতা দূরীকরণে তার যে ভূমিকা, জোর করে তা অস্বীকার করার মধ্যে ব্যক্তিগত ইর্ষাপরায়নতা ছাড়া কিছুই নেই।
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য-হ্যা, Majority people should be allowed even to do wrong. এটাই হল গণতন্ত্র। পশ্চিমা গণতন্ত্রের এটি হল অন্তর্নিহিত দুর্বলতা। সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষকে সচেতন করা ছাড়া প্রগতিপন্থীদের হাতে কোন বিকল্প নেই। আর মনে রাখতে হবে-একজন রোগীকেও তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঔষধ খাওয়ানো যায় না। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই দীর্ঘস্থায়ী হয় না-তা যত কল্যাণমুখী হউক না কেন। দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ কিন্তু এটাও।
আপনার প্রশ্ন-আচ্ছা গণতন্ত্র কি সব নাগরিকের মতামত দেবার অধিকার দেয়। অবশ্যই ।
সব মানুষের মতামত দিতে না পারলে গণতন্ত্র থাকে না। তবে সব মানুষের মতামত যখন ভিন্ন ভিন্ন হয়, তখন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত মেনে নেওয়া ছাড়া সংখ্যালঘিষ্ঠের কোন বিকল্প থাকে না। গণতন্ত্র ও মানাবাধিকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখানেই। মানবাধিকার অনুসারে একজন মানুষের মতামত বা ইচ্ছাকে অস্বীকার বা অসন্মান করা যায় না। যাক, সে ভিন্ন প্রসঙ্গ।
আপনি লিখেছেন- সেক্ষেত্রেক্ষে আমি একজন সাধারন নাগরকি হসিাবে মতামত দচ্ছি এবং দাবী জানাচ্ছি, যে যকেোন মুল্যের বনিমিয়ে সাম্প্রদায়কি শক্তিকে প্রতহিত করা হোক, মানুষরে জানমালরে নরিাপত্তা নশ্চিতি করা হোক, বশিষে করে র্ধমীয় সংখ্যালঘুদরে রক্ষার জন্য দশের সব সেনাসদস্য কে মোতায়নে করা হোক, এবং দরকার হলে সব সন্ত্রাসীদরে গুলি করে মরে ফলো হোক সাধারন নিরাপরাধ মানুষরে জীবন বাঁচাত; সেটা যদি সাময়িক ভাবে একটা পরবিারতন্ত্রকে ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমেও হয়, তবে নাগরকি হসিাবে আমার এই মতামতক( এটাকে আমার ভোট বলতে পারনে) কতটা সম্মান দয়ো হব? আদৌ সম্মান দয়ো হব, নাকি অগণতান্ত্রকি কথা বলার অপরাধে ধিাক্করের চাবুক দিয় চাবুকে রক্তাক্ত করে দয়ো হবে ( সুশীলদরে দ্বারা)? জানতে খুবই ইচ্ছা হচ্ছ।”
আপনার এ মন্তব্য বা ধারণা মারাত্বক বিভ্রান্ত্রিকর ও চরম বিপদজনকও বটে। সাময়িকভাবে বা স্থায়ী ভাবে কোন পরিবারতন্ত্রকে মেনে নিয়ে আপনার কথিত সমস্যার সমাধান হবে না। তার জন্য প্রয়োজন একটি শিকড়-নাড়া সাংস্কৃতিক বিপ্লব। সে বিষয়ে আমার একাধিক লেখা মুক্তমনায় আছে। পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
ধন্যবাদ।
@মোঃ জানে আলম, ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান সময় ব্যয় করে আমাকে উত্তর দেয়ার জন্য।
বিপদজনক কিনা জানিনা, তবে বিভ্রান্তিকর ( এই বিষয় নিয়ে আমার বর্তমান চিন্তাভাবনা) যে এই অভিযোগ আমি বিনা প্রশ্নে মেনে নিচ্ছি, কারন আমি নিজেই বর্তমানে ভয়াবহ ধরনের বিভ্রান্তিতে ভুগছি কিছুদিন আগে সরকার পতন ঘটানোর তথা গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে গনহত্যা আর ক্রমাগত অবরোধ দিয়ে দেশ প্রায় অচল করে দেয়ার জন্য।
কাজেই গনতন্ত্র এবং মানবাধিকার এই দুটির মধ্যে আপনি যে দ্বন্দের কথা বললেন, সেখানে আমি মানবাধিকারের পক্ষ আপাতত নিয়ে যেভাবেই হোক( অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি হলেও) পরিত্রানের পথ খুজতে চাচ্ছি, সেটার ফলাফল হয়ত মোটেও ভাল হবে না, তবে ডুবতে বসা অনেক মানুষ হাতের কাছে যা পায় তাই নিয়েই ভেসে থাকতে চায়। নিজে হয়ত আজ ডুবি নাই ধর্মীয় সংখ্যাগুরু পরিবারে জন্ম নেয়ার কল্যানে,কিন্তু কাল যে ধর্মনিরপেক্ষতা বা মানবাধিকার চর্চা করার অপরাধে আমাকেই জবাই করা হবে না, এরই বা নিশ্চয়তা কি?
ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। অনেকেই এই বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চান, যেটা আপনি করেননি। গনতন্ত্রের দুর্বলতা আর মানবাধিকারের সাথে এর দ্বন্দের বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করেছেন।
গণতন্ত্রের কোন বিকল্প হয়ত নেই কিন্তু, গনতন্ত্রের যে দুর্বলতা যেটা কিনা আমাদের ভোগাচ্ছে এখন মারাত্বক ভাবে, আর এতে মানবাধিকারের একেবারে তলানীতে ঠেকেছে। বেশিরভাগ মানুষকে এমনকি ভুল পথ এবং ভুল কাজ করার অধিকার দেয়া হচ্ছে, আর তার ফলেই বেশিরভাগের ম্যনান্ডেট নিয়ে কিছু সুবিধাভোগী ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক একনায়ক আজ সেই দুর্বলতার সুফল ভোগ করছে।
যেখানে মানবাধিকার ক্রমাগত ভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে, সেখানে না একদিন সমাজতন্ত্রের মত গণতন্ত্রও অচল হয়ে যায় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়! তবে ভাল বিকল্প ছাড়া গনতন্ত্রের চির কবর রচনা হোক এটা আমরা কেউই মেনে নিতে চাইব না।
নিশ্চয়ই আপনার লেখাগুলো পড়ব। শিকড় নাড়া সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্বপক্ষে আমি নিজেও চিরকালই ছিলাম, এখনও যে নাই তা কিন্তু নয়। সমস্যা হল আমি উদ্বিগ্ন একটা জিনিস নিয়েই যে এই জিনিস এই দেশে সফল হতে অনেক সময় লেগে যাবে। আমার জীবদ্দশাতে এটা হবে কিনা সেটা আমার জানা নেই।
আবার ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান মতামতের জন্য। ভাল থাকবেন।
@গীতা দাস,
আমার লেখাটি পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যের জবাবে বলতে হয়-আমি গণফোরাম করলেও আমার কোন নিবন্ধে আমি গণফোরামের নেতৃত্ব বিকল্প রাজনৈতিক জোট গড়ে তোলার কথা বলিনি।কারণ মুক্তমনাকে নিজ দলীয় রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের ক্ষেত্রে পরিণত করতে চাই না। তাই এ পর্যন্ত আমার সকল প্রবন্ধ-নিবন্ধ আমি একাডেমিক স্টাইলে লিখেছি। এ ক্ষেত্রে আমার দলীয় পরিচয় কি আদৌ প্রাসঙ্গিক?তারপরও গীতদি, আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি-গণফোরাম এখনো কোন দলের সাথে জোটবদ্ধ নয়। তবে বিগত একুশ বছর ধরে চেষ্টা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সেক্যুলার,দেশপ্রেমিক,বাম,গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে তুলতে।কেন তা সম্ভব হয়নি সে ইতিহাস এত দীর্ঘ যে এখানে লেখা যাবে না। আপনি হয়ত জানেন না,তথাকথিত মহাজোটের অন্তর্গত যে ১৪ দলীয় জোট তার অন্যতম শরীক দল ছিল গণফোরাম। কিন্তু আঃলীগ যখন ১৪দলের ঐক্যের ১৬ দফা শর্ত ভঙ্গ করে এরশাদের জাতীয় পার্টি সহ কতিপয় ইসলামী দল নিয় মহাজোট করে,খেলাফতে মজলিসের সাথে ৫ দফা চুক্তি করে তখন গণফোরাম ঐ জোট থেকে বের হয়ে আসে। দিদি হয়ত জানেন না,৪দলীয় জোটের পক্ষে নির্বাচন কমিশণার আজিজ যে ১কোটি ২০ লক্ষ ভূঁয়া ভোটার তালিকাভূক্ত করেছিল তার বিরুদ্ধে রীট মামলার বাদী গণফোরাম সমর্থকএক স্কুল শিক্ষক।মামলা পরিচালনা করেন ড.কামাল হোসেন। সেদিন সে ভোটার লিস্ট বাতিল না করলে মহাজোট ক্ষমতার মুখ দেখত না। দিদি হয়ত আরো জানেন না,আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের যে রায়ের ফলে সাংসদ প্রার্থীরা যে ৮টি বিষয়ে হলফ নামা দিতে বাধ্য হন,সে মামলার বাদী গণফোরাম চট্টগ্রাম দঃ জেলা শাখার সভাপতি এড.আব্দুল মোমেন চৌধুরী ।ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গং দের চক্রান্তে আপীল বিভাগ যখন হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আদেশ দিলে ড.কামাল সে আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে বসে পড়ে সে আদেশ পরিবর্তন না করলে আদালত ত্যাগ করবেন না বলে ঘোষণা দেন। তার এ অবস্থান দেখে আধা ঘন্টার মধ্যে বিচারপতিরা এজলাসে ফেরত এসে তাদের নিজেদের আদেশ নিজরা বাতিল করেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এ একটি নজির বিহীন ঘটনা। এসব কি নেতিবাচক রাজনীতি?