আজ ৩০ শে সেপ্টেম্বর। অনেকেই হয়তো জানেন না এই দিনটি ‘Blasphemy Day’ (ফেসবুক, উইকি) হিসেবে পালন করা হয়। বাংলা করলে বলা যায়  ‘মুরতাদ দিবস’।  মুক্তমত প্রকাশের কারণে, বিশেষতঃ ধর্ম এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের সমালোচনার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাগরিক এবং অধিবাসীদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে, মৃত্যুর হুমকি দেয়া হচ্ছে, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হচ্ছে, গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়া হচ্ছে, ঠেলে দেয়া হচ্ছে মৃত্যুমুখে। মৌলবাদীদের পাশাপাশি এর সাথে যোগ হয়েছে  রাষ্ট্রীয় নিপীড়নও।  তাদের স্মরণ করেই এই দিবসটি প্রতিবছর পালন করা হয় ২০০৯ সাল থেকে। ধর্ম পালন করা যদি মানুষের অধিকার হয়ে থাকে, ধর্মের সমালোচনা করাও যে অধিকার – সেটা জোরে সোরে জানানোই এই দিবসের উপজীব্য।

আমি ভাবছিলাম এই ‘ব্লাসফেমি দিবস’ নিয়ে একটা লেখা লিখব।  ব্লাসফেমি দিবসে একটু ব্লাসফেমি করলে মন্দ কি! কিন্তু সকালে উঠেই একটা চমৎকার ইমেইল পেলাম যে আমার লেখার থিমটাই গেল বদলে।  ভদ্রলোকের পাঠানো ইমেইলটি এসেছে সুদূর  পটুয়াখালী থেকে।  সাধারনতঃ আমি কারো ব্যক্তিগত ইমেইল প্রকাশ করি না, কিন্তু ইমেইলটার আবেদন এতই বেশি যে আমি ভদ্রলোকের অনুমতি নিয়ে পাঠকদের উদ্দেশ্যে আজকের দিনে শেয়ার করতে চাইছি। এবারের ব্লাসফেমি দিবসের সবচেয়ে বড় উপহার বোধ হয় এই হৃদয়স্পর্শী ইমেইলটি –

 

“ ভাই,

মানুষমাত্রই বোধ হয় সুখি হতে চায়।  কিন্তু ঠিক কোন রাস্তা ধরে হাঁটলে সুখের দেখা মিলবে সেটা অনেকেই জানেন না, ফলে আমাদের অনেককেই শেষপর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সুখের দেখা না পেয়েই একসময় মারা যেতে হয়।

বছর কয়েক আগে আমিও এরকমের সুখের জন্য উন্মুখ ছিলাম, এদিক ওদিক বিভিন্ন রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম। দিশা খুঁজে পাচ্ছিলাম না সঠিক পথের। ঠিক এমনি সময় আমার চোখে পড়ল আপনার এই ‘মুক্তমনা ব্লগ’।  আজ বলতে দ্বিধা নেই, সত্যকে জানার যে অনাবিল আনন্দ তা আমি খুঁজে পেয়েছি এই মুক্তমনা থেকেই।  আমি এজন্য আপনাকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই, আর কামনা করি আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের।

আমার একটা ছোট মেয়ে আছে। আপনার এবং মুক্তমনার সম্মানে  আমি তাকেও ‘মুক্তমনা’ বলেই ডাকি। তার বয়স সবে দুই বছর হয়েছে।  আমি তাকে মুক্তমনা হিসেবেই গড়ে তুলিতে চাই।  আমি সেই দিনের দিকে তাকিয়ে আছে, যেদিন সে বড় হবে, আর আমায় জিজ্ঞাসা করবে – ‘বাবা এত লক্ষকোটি নাম থাকতে আমার নাম তুমি মুক্তমনা রাখলে কেন?’ আমি সেদিন আপনার কথা বলব, আর আপনার ওয়েবসাইটটি দেখিয়ে বলব – ‘এইজন্য’।

আপনার এবং বন্যা আপার সুখি জীবন কামনা করি।

 

নাসিম
পটুয়াখালী“

 

**************

অনেকক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিলাম ইমেইলটি পেয়ে। কয়েকটা দিন সত্যই ‘ভীষণ রঙিন’।    আজ  বোধ হয়  এমনই একটি দিন। না – আমার বই, কাজকর্ম, লেখালিখি, ওয়েবসাইট – কোন কিছুকেই আমি তেমন বড় কিছু মনে করি না।  আমি নিজেই সন্তুষ্ট নই। মাঝে মধ্যে ভাবি সাইট ফাইট লেখালিখি বন্ধ করে দিলেই বা কি! কিন্তু ঠিক সে সময়গুলোতেই আমি পাই পাঠকদের কাছে থেকে এমন অনুপ্রেরণাময় ইমেইল।  পাই পুনর্বার এগিয়ে চলার শক্তি।

না নাসিম সাহেব ঠিক বলেননি। আমার কিংবা আমার প্রতিষ্ঠিত মুক্তমনা ব্লগের অবদান তেমন নেই। আমাদের অবদানের চেয়েও বেশি হচ্ছে নাসিমদের মত লোকের অনুসন্ধিৎসা, সত্যকে জানার ইচ্ছেটুকু। সেই ইচ্ছেটুকু বেঁচে থাকুক। আর পাশাপাশি আমি সত্যই চাইব, তিনি যেভাবে জীবনকে দেখেন, যেভাবে তিনি সত্য এবং সুখের সন্ধান করছেন, তার মেয়ে মুক্তমনাও একই রাস্তায় হাঁটবে।  জ্ঞান, যুক্তি আর মানবিকতার কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেবে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য। সত্যিকারের মুক্তমনাদের মত প্রতিবাদ করবে যাবতীয় অন্যায় অবিচারের। মুক্তমনা মামোনির জন্য অনেক আদর। তার জীবন সাজুক যুক্তির আলোয়, জীবন গড়ুক মুক্তবুদ্ধির চেতনায়।

শুভ ব্লাসফেমি দিবস। শুভ জন্মদিন মুক্তমনা।

পৃথিবীর সকল মুরতাদদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।

 

অভিজিৎ
মুরতাদ দিবস।
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৩