২০২০ খৃষ্টাব্দ
মেরী এবং জেমস স্মিথ দম্পতি পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছে বছর দুই-এক আগে – লস এঞ্জেলসে থাকে। এরই মধ্য মেরী সুবিখ্যাত এক চলচ্চিত্র পরিচালকের অধীনে একটি চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার আবাহন পায়- এখন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে। মেরীর স্বামী জেমসও কম ব্যস্ত নয়। জেমস লব্ধপ্রথিষ্ঠ চলচ্চিত্র প্রযোজক সেই সাথে একাধারে- পরিচালক, শখের অভিনেতা, লেখক এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সোশ্যাল ইস্যুতে ব্যস্ত এবং সবচাইতে বড় ব্যাপার কোটিপতি। মেরীর প্রথম বিয়ে; যদিও এর আগে একজন নৃত্য পরিচালক এবং চরিত্রাভিনেতার সাথে দীর্ঘ ১৪ বছর ছিল ডোমেস্টিক পার্টনার হিসেবে; জেমসের এটা দ্বিতীয় বিয়ে। স্মিথ দম্পতি চিন্তা ভাবনায় আধুনিক উদার প্রগতিশীল তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুজনই খুবই চিরাচরিত পারিবারিক ভাবধারায় বিশ্বাসী- তারা মনে করে পরস্পরের মাধ্যমে সন্তান না হলে সম্পর্কে পূর্ণতা আসেনা। এজন্য দুজন ঠিক করল সন্তান নেবে। কিন্তু ব্যস্ততা-ক্যরিয়ার ইত্যাদির জন্য মেরী চিন্তায় পরে যায়, দীর্ঘ দশ বছর পর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট- আবার তার বয়স এখন ৩৯ পার হয়ে গিয়েছে। আগের পার্টনারের সাথে তার কথাই ছিল কোন সন্তান নেবেনা- যার সাথে ছাড়াছাড়ির ৪ বছর পর জেমসের সাথে পরিচয় এবং কয়েক মাসের মাথায় বিয়ে হয়। এখন বিয়ের পর সন্তান নিতে চাপ দিচ্ছে জেমস।
এক বন্ধু এক পরামর্শ দেয় মেরীকে। আধুনিক জেমসের এতে কোন আপত্তি নেই। তার কাছে দুজনের সন্তান হলেই হয়। দুজনের টান তাহলে পাকাপোক্ত হয়, যদিও তার তখন মনে হয়নি দুটি সন্তান থাকা সত্ত্বেও সাবেক সহধর্মীনির সাথে তার কেন বিবাহবিচ্ছেদ হল- তবে এটা সত্য, বোঝাপড়া কিংবা সমঝোতা-অতীত ব্যাপারের কোন ব্যাখ্যাই থাকেনা।
স্মিথ দম্পতি এক বিখ্যাত ডাক্তারের পরামর্শ মত ভারতের একটি বেসরকারি ব্যবসায়ী সংস্থার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে ভারতে আসল। কোম্পানিটির চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালে যোগাযোগের পর, সংস্থাটি বাছাই করে আরতি দেশপান্ডে নামক এক মহিলার সাথে স্মিথ দম্পতির পরিচয় করিয়ে দেয়। চুক্তি অনুযায়ী সন্তান জন্ম না হওয়া পর্যন্ত স্মিথ দম্পতি আরতিকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিবে, মাসে মাসে। সুস্থ সন্তান জন্মের পর এক কালীন টাকা দিবে। এর মধ্য সন্তান কিংবা আরতির শারীরিক কোন সমস্যা হলে স্মিথ দম্পতির কোন দায় থাকবেনা কিংবা এর দায়ও তারা নেবেনা।
মেরী খুবই খুশি – এই মধ্য বয়সে প্রথমবারের মত সন্তান ধারণ করা অনেক বিপজ্জনক- ডাক্তাররাই বলে। তার উপর ক্যারিয়ারের ব্যস্ততা। কয়েকদিন পরই সে ডিম্বাণু দিবে যা তার স্বামীর শুক্রাণুর সাথে নিষিক্ত করে আরতির জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হবে।
মেরী, জেমস এবং আরতির শারীরিক পরীক্ষাও চলছে। এর মাঝে স্মিথ দম্পতি ভারত ভালোই উপভোগ করছে। ভারতের সুশীল সমাজ খুবই সমৃদ্ধিশালী এবং প্রগতিশীল- তবে চরম দারিদ্র লক্ষ্য করার মত। সবচাইতে আশ্চর্যজনক হল রোলস রয়েস ফ্যান্টমের সাথে সাথে একই রাস্তায় মুক্ত গো-শাবক চলাচল। যদিও তাজ হোটেলের আশে পাশে সব কিছু সহসা বোঝা যায়না। ভারতের বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালকের সাথে জেমসের দেখা হয়েছে। জাতীয় পত্রিকায় বিনোদন পাতার শীর্ষ খবর এটাই ছিল, যে, বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালক জেমস স্মিথ ভারতের সাথে যৌথ প্রযোজনায় এক বিগ বাজেট ফিল্ম করতে সপত্নী ভারতে এসেছেন। যদিও আসল ব্যাপারটি কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হল।
কয়েক সপ্তাহ পর শারীরিক অবস্থার ফলাফল দেওয়ার পর ডাক্তার যা বলল তা শোনার জন্য স্মিথ দম্পতি মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। মেরীর কি যেন একটি জেনেটিক সমস্যা আছে। যার ফলে ভূমিষ্ঠ সন্তান জেনেটিক সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ। মেরীর মাথায় যেন বাজ পরল। জেমস এক কথা, তার আগের ঘরের সন্তানরা খুবই সুস্থ- একজন ইতিমধ্যে একজন স্কুল চিয়ার লিডার টিমের সদস্য। সে কোন মতেই চায়না তার তৃতীয় সন্তান অসুস্থ হয়ে জন্মাক।
জেমস তার স্ত্রীকে কে সন্তান নিতে নিরুৎসাহ করল; তবে মেরী এখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ; এটা তার মর্যাদার ব্যাপার। সে নিজেও আশ্চর্য হল- কেন এতদিন সে অনুভব করেনি মা হওয়া একটি মেয়ের জন্য সবচাইতে মর্যাদার ব্যাপার। সে ডাক্তারকে অনুনয় করল- “কোন উপায় কি নেই?” “আছে” ডাক্তার বলল- একটি উপায় আছে- ৩-৪ বছর সীমিত মাত্রায় প্রচলন হয়েছে। মেরীর ডিম্বাণুর মাইটোকন্ড্রিয়া DNA যদি সুস্থ কারোরটি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা যায়; তাহলে বিপদের মাত্রা ১০ শতাংশে কমে আসতে পারে। তবে এতে মাইটকন্দ্রিয়াল DNA দাতার কিছু বৈশিষ্ট্য পাবে সন্তান। তবে যেহেতু নিউক্লিয়াসের DNA মূলটি থাকবে,তাই মূল বৈশিষ্ট্য বদলাবেনা। এটা যেকোনো সুস্থ মহিলার হতে পারে। এমনকি আরতিরও এর হতে পারে। মেরী চিন্তা করে দেখল এবং মত দিল, আরতির থেকে নেওয়া যাবেনা। সে তার বন্ধু এবং এক সময়ের রুম মেট পেট্রিশিয়া কে জানালো এই বিষয়ে। পেট্রিশিয়া রাজী। ইউরোপ কিংবা চীনে যেতে হবে- ইন্ডিয়াতে এর ব্যবস্থা নেই আবার আমেরিকাতে এটা বে-আইনি।
স্মিথ দম্পতি ইউরোপে রওনা হল তাদের বন্ধু পেট্রিশিয়াও ইউরোপে আসল। এক বিখ্যাত হাসপাতালে মেরীর ডিম্বাণুর মাইটোকন্ড্রিয়াল DNA প্রতিস্থাপিত করা হল পেট্রিশিয়ার মাইটকন্ড্রিয়াল DNA দিয়ে। এরপর তারা ডিম্বাণু হিমায়িত অবস্থায় বিশেষ ভাড়া করা বিমানে ভারতে রওনা দিল। ভারতের এক বিখ্যাত হাসপাতালে মেরীর ডিম্বাণু, যা পেট্রিশিয়ার DNA দ্বারা শুদ্ধি প্রাপ্ত- জেমসের শুক্রাণু দিয়ে IVF পদ্ধতিতে নিষিক্ত করে আরতির জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
স্মিথ দম্পতি আমেরিকায় ফিরে যায়- তার আগে জেমস তার নতুন ছবির জন্য এক বিখ্যাত ভারতীয় প্রযোজকের সাথে চুক্তি করে যায়। স্মিথ দম্পতি নিয়মিত আরতির খবর রাখে এবং টাকা পাঠায়। ইতিমধ্যে মেরীর পরিচালিত (সহকারী হিসেবে) সিনেমা শেষ হয়- যা বক্স অফিসে খুবই হিট হয়- মেরী আসা করছে শীঘ্রই নিজেই সিনেমা পরিচালনা করবে। জেমসও তার ব্যবসা বাণিজ্য এবং সামাজিক কাজে আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছে।
৯ মাস পর আরতি দেশপান্ডে সন্তান ভূমিষ্ঠ করে- স্মিথ দম্পতি উপস্থিত ছিল সেই সময় এবং অবশ্যই কঠোর গোপনীয়তায়। সন্তানটি সুস্থ-এবং স্বাভাবিক হয়েছে। স্মিথ দম্পতি খুবই খুশি- তারা প্রতিশ্রুত অর্থের দ্বিগুণ অর্থ প্রদান করে আরতিকে। দ্বিগুণ অর্থ পেয়ে আরতি এবং তার স্বামী অর্জুন দেশপান্ডে খুবই খুশি- তাদের নিজ সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ফিক্সড ডিপোজিট খুলতে পারবে। তারা স্মিথ দম্পতির সন্তানের মঙ্গল কামনা করল।
আমেরিকা ফিরে যাবার পর, জেমস আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করল তৃতীয় বারের মত পিতা হবার এবং এও ঘোষণা করল যে এটা এক ভারতীয় ভদ্রমহিলা সারোগেট হিসেবে সহায়তায় করেছেন – তবে কেন যেন অন্য ব্যাপারটি কোন কারণে চেপে গেল , হয়ত এটাতে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে- হাজার হোক আমেরিকায় এটা বেআইনি। স্মিথ দম্পতি তাদের সন্তানদের নাম নিবন্ধন করল “অ্যালোন্সো স্মিথ” নামে যার জন্মস্থান মুম্বাই, ভারত। পেট্রিশিয়া দেখতে আসল তার বান্ধুর সন্তানকে। মেরী , তার বন্ধু পেট্রিশিয়া কে ধন্যবাদ জানাল সুস্থ DNA দানের জন্য; পেট্রিশিয়াও শুভকামনা জানালো সন্তানকে এবং বলল, সেও খুব খুশি তার বন্ধু- যে সন্তানের মা- সেও তার সাথে এক রকম ভাবে সম্পর্কিত।
এরমধ্য একটি অসুবিধা হয়ে গেল- সন্তানকে তো দুইমাস মায়ের দুধ দিতে হবে- জেমস স্মিথ এবং পেট্রিশিয়া কারো ত বুকে দুধ হয়নি- স্বাভাবিক কারণেই, কেননা তারা গর্ভধারণ করেনি। সন্তানকে দুধ খাওয়ানো জন্য হুয়ানা পেরেজ নামে এক মেক্সিকান ইমিগ্রান্ট ঠিক করা হল, যে নিজেও নতুন মা। সে খুবই কষ্ট করছে তার নিজ পরিবারের জন্য- তার স্বামী পোর্টে কাজ করে। হুয়ানা পেরেজ শুধু দুধ খাওয়াবেনা- ন্যানি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবে। হাজার হোক মেরী এবং জেমস স্মিথের শিডিউল এত বেশি যে তাদের সন্তানকে নিয়মিত দেখাশোনা করা সম্ভব হবেনা।
২০৪২ খৃষ্টাব্দ
২২ বছর পর অ্যালোন্সো স্মিথ যখন কলেজ পাশ করল – মেডিসিন স্কুলে ভর্তি হতে অন্য স্টেটে যাবে। যাত্রার আগের দিনই অ্যালোন্সো তার মায়ের সাথে দেখা করে এসেছে। অ্যালোন্সো স্মিথ জন্মের ১০ বছর পর তার বাবা জেমস স্মিথ এবং মা মেরী স্মিথের ডিভোর্স হয়ে যায়- এর কিছুদিন পর তার বাবার আরেকজনের সাথে বিয়ে হয় কিন্তু ওর সাথেও ডিভোর্স হয়ে যায়। জেমস স্মিথ এর পর আর বিয়ে করেনি তবে এখন সঙ্গী হিসেবে এক গার্লফ্রেন্ড আছে, যে অ্যালোন্সো স্মিথের চেয়ে বয়সে বছর দশেক বড়- সাবেক প্লেবয় মডেল উরসুলা ক্র্যাফোর্ড !! অবশ্য অ্যালোন্সো স্মিথের মা আরেকজনকে বিয়ে করেছে পরে- ভালোই আছে, ভদ্রলোক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, ধনীই তবে তার বাবার মত ধনকুবের নয়।
অ্যালোন্সোর জন্য তার বাবার অন্যরকম টান ছিল সবসময়- হয়ত অ্যালোন্সো স্মিথ খুবই মেধাবী সেজন্য। হয়ত মেধাবী!- ইউসি বার্কলে হতে বায়োলজি এবং ম্যাথ এ পাশ করে সে জন হপকিন্স মেডিক্যাল স্কুলে মেডিসিনে পড়তে যাচ্ছে।
অ্যালোন্সো স্মিথের ফ্লাইটের আগের দিন তাকে তার বাবা তার অতীত সম্পর্কে সব বিষয় খুলে বলল। যদিও সে আগেই বিষয়টি বিভিন্ন ভাবে জেনে গিয়েছে, তবে বাবার কাছ থেকে আরো বেশি বিস্তারিত শোনার ব্যাপারটা অন্যরকম।
অ্যালোন্সো স্মিথকে বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে তার বাবা এবং মা দুজনই উপস্থিত ছিল- সঙ্গে তাদের গার্ল-ফ্রেন্ড এবং স্বামীও এসেছিল।
অ্যালোন্সো স্মিথের বাবা তাকে নিজের প্রাইভেট বিমানে পৌঁছে দিতে চেয়েছে, তবে সে রাজী হয়নি। ভার্জিন আমেরিকার বিমানে সিটে বসার পর কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে যায়। হালকা ঘুম থেকে উঠার বিমানের আতিথ্যকর্তী হতে ড্রিঙ্কস চাইল- বিমান ইতিমধ্যে ফ্লাইবাই স্টেট গুলর উপরে। বিমানবালা ড্রিঙ্কস নিয়ে আসল- তাকে এবার ভালো ভাবে দেখে চমকে গেল!!! অনন্য এক বামা- সমসাময়িক যেকোনো হলিউড নায়িকা থেকে বেশি সুন্দরী, সবচাইতে বড় কথা এ একেবারে ন্যাচারাল- হলিউডি স্টার কিংবা সুপার মডেল দের মত প্লাস্টিক সার্জারি করে এক মিলিমিটার মেকআপ দেওয়া কৃত্রিম সুন্দরী নয়। আচ্ছা সে কেন বিমানবালা হল। সে তো ইচ্ছে করলে অভিনেত্রী হতে পারত- হয়ত অভিনয় পারেনা। নিদেন সুপার মডেল হতে পারত- হয়ত তার মডেলিং পেশা পছন্দ নয়। কেন সে গত চার বছরে বার্কলেতে এমন মেয়ে দেখেনি। সুন্দরী দেখেছে, কিন্তু এরকম নিখুঁত দেখেনি। আচ্ছা সৌন্দর্য আর মেধার যদি সম্মেলন ঘটত তাহলে কি এমন ক্ষতি হত??
পরক্ষনই তার নিজের কথা মনে পরল তার জন্মের ব্যাপারে- কি না অ্যাডভেঞ্চারস ছিল—- তার জন্ম এবং বেড়ে উঠায় সরাসরি জড়িত কারা-
১. জেমস স্মিথ – বায়োলজিক্যাল ফাদার। বাবার সামান্য আলুর দোষ থাকলেও সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব অবহেলা করেছে এমন কথা কেউ বলতে পারবেনা। তিন সন্তানই যার যার ক্ষেত্রে সফল। বর্তমানে এক মেয়ে বন্ধু উরসুলা ক্র্যাফোর্ডের সাথে থাকে। হাফ সিস্টার দুজন যারা কিনা প্রথম বিয়ের।
২. মেরী স্মিথ উইলিয়ামস – বায়োলজিক্যাল মাদার- নিজের মা। শত ব্যস্ততার মাঝেও যে প্রতিদিন অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় দিত। মা সবসময়ই একটা “কিপ ইন টাচ” রেখেছে- এমনকি বাবার সাথে ডিভোর্স হয়ে যাবার পরও। স্টেপ ব্রাদার এবং একজন স্টেপ সিস্টার। বর্তমান স্বামী রবিন উইলিয়ামস।
৩. পেট্রিশিয়া জনসন – জেনেটিক মাদার। ছোট কালে দেখা হলেও প্রায় দশ বছর যাবত দেখা নেই- সুদূর ফ্লোরিডা থাকে। স্বামী জন জনসন । পেট্রেশিয়ার দুই ছেলে কিংবা জেনেটিক ব্রাদার ??
৪. আরতি দেশপান্ডে – সারোগেট মাদার। যেকিনা তাকে ৯ মাস পেটে ধরে কষ্ট করেছে। ভালোবাসার জন্য নয়- অর্থের জন্য। জীবনেও দেখা হয়নি। স্বামী অর্জুন দেশপান্ডে। দেশপান্ডে দম্পতির চার সন্তান।
৫. হুয়ানা পেরেজ – ফোস্টার মাদার। আশৈশব ন্যানি হিসেবেও ছিল। দেড় বছর বুকের দুধও দান করেছে। রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ভর্তি হবার পর হিউস্টনে স্থায়ী ভাবে চলে গিয়েছে, স্বামী কার্লোস পেরেজ এবং একমাত্র সন্তান নিয়ে ভালই আছে- ছোটকালের ভালো বন্ধু ছিল তাদের সন্তান জুয়ান।
আচ্ছা, অ্যালোন্সো স্মিথ মনে মনে চিন্তা করল, যদি স্পার্মেও জ্যানেটিক মডিফিকেশন করা হত তাহলে সে দেখতে কেমন হত!! অথবা কয়েকজন মহিলা এবং পরুষের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু মডিফাই করে কি পারফেক্ট চাইল্ড করা সম্ভব?? এটা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করলে এর কাস্টমাররাই বা কারা হবে??? প্রকৃতই সন্তান জন্মদানে অসুবিধায় পরা দম্পতিদের সাথে সাথে- গে, লেসবিয়ান কিংবা পলিমোরি কপলরা হতে পারে।
কিংবা যদি কোন বিশেষ গোষ্ঠী দীর্ঘ মেয়াদে নিজেদের বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য হাজার-হাজার এমন বাচ্চা উৎপাদন করতে চায়- আক্ষরিক ভাবেই প্রোডাক্ট হিসেবে তাহলে এর নৈতিক দিকই কি হবে। কিংবা কৃত্রিম জরায়ু-ডিম্বক-শুক্রানু অথবা মানব সন্তান উৎপাদনের আধার কি তৈরী করা সম্ভব! বিজ্ঞানীরা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অ্যান্ড্রয়েড উৎপাদন করার গবেষণায় লিপ্ত- আচ্ছা যদি এটা না করে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল স্কেলেই মানব শিশু উৎপাদন করা হয় সেমি সিনাথেটিক কিংবা ন্যাচারাল ভাবেই- এর নৈতিক ভিত্তিই বা কি হবে!!! ক্লোনিং প্রযুক্তিতে তো আক্ষরিক ভাবেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল দক্ষতা লাভ করা সম্ভব এটা আরো বেশি ব্যাপক এবং কার্যকর !!!!!!!!
যদি DNA সব কিছুর নিয়ামক হয়- তাহলে আইনস্টাইন-প্ল্যাঙ্ক কিংবা পাস্তুর-ডারউইনের সন্তানদের তাদের বাবার সামান্য কিছু পাওয়ারও কথা ছিল- এমন হলনা কেন?? নেলসন ম্যান্ডেলার সন্তান কিংবা নাতিরা তাঁর নেতৃত্ব গুণাবলির ধারেকাছেও কেন যায়নি। অন্যদিকে, আবার বোর-কুরীর সন্তানেরা তাদের বাবা-মা দের মতই মেধার সাক্ষরতা রেখেছে…… এটাও একটা গবেষণা।
কেপলার- গ্যালিলিওর পর কোন ভৌত বিজ্ঞানী আর সমাজ বিরোধিতার সম্মুখীন হননি; পক্ষান্তরে জৈবিক কিংবা চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো মানুষের জন্য কেন যেন এক অস্বস্তির কারণ, যদিও সাধারণ মানুষদের নিজেদের প্রয়োজনেই এদের কাছেই সবার আগে আসতে হয়। অনেক মানুষের কাছে লাশ কাটাকাটি অনৈতিক মনে হয়- কিন্তু ঠিকই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হয়। মানুষকে নিয়ে পরীক্ষা না করলে চিকিৎসা বিজ্ঞান কি আজকের অবস্থায় আসতে পারত!!
বিজ্ঞান লেখকরাও যেন কেমন… তাদেরও জৈব বিজ্ঞানে কেমন যেন অস্বস্তি…… যদিও খুব কম সংখ্যক লেখকই মৌলিক “বিজ্ঞান কল্পকাহিনী” লেখেন, বেশিরভাগই কুপমুন্ডুক্তার প্রমাণ দিয়ে অন্যর লেখা কিংবা নাটক সিনেমা থেকে কাহিনী “কাট-পেস্ট” মারে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। যারা জীববিজ্ঞান জগতের বিশেষজ্ঞ নয় তাদের কেমন যেন অনীহা; হতে পারে এটা একটা আবছা ভীতির সঞ্চার করে মানুষের মাঝে। বুঝুক কিংবা না বুঝুক স্কুল শিক্ষার্থীরাও কোয়ান্টাম-রিলেটিভিটি ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে কিন্তু কেউই আড্ডায় জেনেটিক্স-ইভল্যুশন নিয়ে কথা বলতে চায়না। সব ধরনের বিজ্ঞান দিনে দিনে এমন বদলে যাচ্ছে! যা কিছুকাল যা কিছুকাল আগেও মানুষের কাছে আচাভুয়ার বোম্বাচাকের চেয়ে বেশি কিছু ছিলনা তা এখন বাস্তব।
অ্যালোন্সো স্মিথ চিন্তা করল মূহুর্তেই- মেডিসিনে সম্বোধি জ্ঞানার্জনের পরই এ নিয়ে গবেষণা শুরু করতে হবে, তার ভবিষ্যৎ গবেষণা এসব নিয়েই হতে হবে। একেবারে নতুন- যেখানে নৈতিকতা এবং বিজ্ঞান পরস্পর সংঘর্ষ করবে- তবে কোনমতেই যেন তা মানব অকল্যাণে ব্যবহৃত না হয় তা লক্ষ রাখতে হবে। বিমান সম্ভবত এখন গ্রেট প্লেইন অতিক্রম করছে- নাহ ঐ বিমানবালাকে আবার ডাকতে হবে…… ড্রিঙ্কস দরকার…… তাকে দেখাও দরকার… তার সাথে পরিচয় হওয়াও দরকার।
————————X————————
আগ্রহীদের জন্যঃ
সাধারণ (উইকিপিডিয়া জ্ঞানকোষ) –
১। Human genetic engineering
২। Transhumanism
৩। Human cloning
সাধারণ (ম্যাগাজিন) –
১। Warning: Genetically Modified Humans
২। Human Cloning and Scientific Corruption
বিস্তারিত (টেকনিক্যাল জার্নাল) –
১। Human genetic engineering
২। Transhumanism, medical technology and slippery slopes
৩। Cloning, sequencing, and expression of the gene coding for the human platelet alpha 2-adrenergic receptor
আমাদের সম্পর্ক বা ভালবাসার বলয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভালোবাসার সিংহভাগ আর পরিবারে কেন্দ্রিভুত থাকছেনা, আমাদের অবচেতন জিন কি উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে অত ভালবাসা না থাকলেও আমরা বংশবৃদ্ধি করতে পারছি ও তাদের রক্ষা করতে পারছি। আমার তো মনে হচ্ছে জেনেটিকিলি সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজন কমে আসছে।
বৈচিত্র্য আনছে মনে হয়।
লেখাটা দারুন হয়েছে (G)
ভাল লিখেছেন।আমিও স্বাভাবিক ভাবেই মায়েদের গর্ভধারনকেই সমর্থন করি। পশ্চিমা দেশে যে এক ঢঙয়ের ধুয়া উঠেছে যে, শুধু কেন মেয়েরাই গর্ভধারন করবে, এই ধুয়াটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয় না কোনদিনই।( যদি সেইসব মেয়েরা চায় তবে পুরুষও গর্ভ ধারন করতে রাজী হতে পারে, তবে এর তো কোন উপায় দেখি না কারন পুরুষের জরায়ু নেই :-D)
এইযে গল্পের দরিদ্র মহিলা যদি অন্যের ভ্রুন নিজের গর্ভে ধারণ করল টাকার জন্য, এতে তার সম্মান হানি না হলে, ধনী মহিলার সম্মান হানির কারন দেখি না আমি।
অতি আধুনিকতার নাম দিয়ে নানা ধরনের সর্বনাশ করার রাস্তা দেখা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হল পরিবার প্রথার বিলোপ।ব্যাপারটি খুবই ভৌতিক,কারন পরিবারে শিশুর যতটা মানসিক বিকাশ হয়, ততটা আর কোথাও হয় না। কুকুর বেড়ালের প্রতি প্রেম আর বাচ্চার প্রতি প্রেম এক হতে পারে না।
ভাল কথা সংবাদিকা, আমি কি আপনার লেখাটা ধরতে পেরেছি, নাকি অনর্থক বিষয়হীন ভাবে কথা বলে গেলাম বুঝতে পারছি না।
তবে লেখাটা আমার ভাল লেগেছে, আর যদি আমি ধরতে পেরে থাকি এই লেখাটার ইঙ্গিতকে তবে লেখাটার জন্য আপনাকে শুভেচ্ছা। (F)
@অর্ফিউস,
আসলে এটা নিয়ে সবাই এখনো দো- টানায়। বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কার সাথে সাথেই মানুষ গ্রহণ করতে পারেনা- সব যুগেই এমন হয়েছে। হয়ত পরবর্তীতে গ্রহণ করে আস্তে আস্তে। বিজ্ঞানের মঙ্গলময় ব্যবহারই আমাদের কাম্য।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂
:thanks:
প্রথমে বুঝতেই পারিনি মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি !!!!
আসলেই- বিজ্ঞানকে পরিপূর্ণ ভাবে আত্তীকরণ কোন যুগেই করা হয়নি। সকল যুগেই বাধা ছিল – এমনকি, এখনো এই একবিংশ শতাব্দীতেও নানা রকম বাধা এবং আইন। কোন যুগের নৈতিক ট্যাবু অন্য আরেকটি যুগে হয়ত সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন মন্দ কাজে বিজ্ঞানকে যেন ব্যবহার না করা হয়।
যদিও গল্পের ছলে, তবে হিউম্যান জেনেটিক্স মডিফিকেশন ব্যাপারটি সহজ ভাষায় আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলে ভাল হত। (G)
@তানি,
এটা বোধয় আমারই ব্যর্থতা, যে, আমি মূল প্রতিপাদ্য আপনার পড়া শেষ হবার পরও বোঝাতে পারিনি। আমি আসলে কোন বৈজ্ঞানিক বিষয়ের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য লেখিনি- মুল উদ্দেশ্য জীব/চিকিৎসা বিজ্ঞান নয়, সামাজিক বিজ্ঞান।
লেখার মূল প্রতিপাদ্য- হিউম্যান রিপ্রোডাকশন সাইন্স, মেডিসিন এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কি মানুষের সামাজিক এবং আত্মিক সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনছে কিংবা আরো অচিন্তনীয় কিছু??
আমি আগেই বলেছি – বিজ্ঞানের কিছু ব্যাখ্যা করা আমার উদ্দেশ্য ছিলনা। আশাকরি মুক্তমনার কোন পাঠক/লেখক, যারা বিশেষজ্ঞ কিংবা এ বিষয়ের উপর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র তাদের কেউ এ ব্যাপারে লিখবেন। তবে মুক্তমনার আর্কাইভেও পেয়ে যেতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত লেখা- বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাতে মুক্তমনার আর্কাইভ মোটামুটি সমৃদ্ধ।
গিফট এর জন্য ধন্যবাদ 🙂 (F)