লিখেছেন – সুষুপ্ত পাঠক
প্রিয় দেশনেত্রী, তিরিশ লক্ষ শহীদের প্রাণ আর দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে আপনি একবার-দুবার নয়, তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। আপনি কোন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নন, মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডারের স্ত্রী । শুধু তাই নয়, আপনি এবং আপনার দল বরাবরই বলে এসেছেন আপনার স্বামী জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। মাননীয় দেশনেত্রী, আমি আপনার কথাই মেনে নিয়েছি।
যার স্বামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, যে দল মুক্তিযোদ্ধাদের দল, তারা থাকতে আমরা পুরো দেশের মানুষ কেন স্বাধীনতা- সার্বভৌম নিয়ে চিন্তিত হতে যাবো? দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তির প্রধান নেত্রীর দেশপ্রেম নিয়ে বাংলার মানুষ কোনকালেই সন্দেহান ছিল না। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি তাই চিরকাল দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকবে বাংলাদেশ নিয়ে। তাদের আশা তাই কোনদিনই পূরণ হবে না।…
প্রিয় দেশনেত্রী, আপনি একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন, দেশের স্বাধীনতা সর্বভ্রৌম আজ নাকি বিপন্ন। আপনি আপনার প্রতিপক্ষকে ‘দেশ বিক্রির’ জন্য বারবার অভিযুক্ত করেছেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কাছে শেখ হাসিনার দেশ বিক্রির আশংকার কথা আপনি যখন এদেশের মানুষকে ৯১’ সালের নির্বাচনের আগে ঘন ঘন বলতে লাগলেন, এদেশের মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভ্রৌম রক্ষার জন্য আপনাকেই ভোট দিয়ে সরকার গঠনের জন্য সংসদে পাঠায়। তখনই বুঝেছি, বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার চেয়ে আপনাকেই বেশি বিশ্বাস করে স্বাধীনতা ও সার্বভ্রৌম রক্ষার ব্যাপারে। বাংলাদেশের মানুষের এই আস্থার কথা আপনি নিশ্চয় ভুলে যাননি।
প্রিয় আপোষহীন নেত্রী, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আপনার ভূমিকার কথা জাতি ভুলে যায়নি। আপনি আমাদের তাই গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলনেরও নেত্রী। স্বৈরাচারের সঙ্গে আপনি কোন আপোষ করেননি বলে আপনাকে আমরা ডাকি ‘আপষহীন নেত্রী’। আপনি কখনো আপোষ করতে পারেন না, মাথা নত করতে জানেন না। নিন্দুকেরা যত যা-ই বলুক, আপনার জনসভায় আজো লক্ষ লক্ষ লোকের জনসমাগম হয়। আপনার ডাকে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া কার্যত অচল হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র আপনার আহ্ববানে হাসতে হাসতে মরতে পারে আপনার দলের কর্মী বাহিনী। আপনার জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা তাই প্রশ্নাতীত।
প্রিয় আপোষহীন নেত্রী, ৯১-তে ক্ষমতায় আসলেন আপনি, আর ৯২-তে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম শুরু করলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানো ইতিহাসখ্যাত ৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল তথা ঘাতকদের ফাঁসির দাবী নিয়ে এক অহিংস গণআন্দোলন। প্রায় ঘুমন্ত একটা জাতিকে টেনে তুলে জাগালেন। নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শপথ নিয়ে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই আন্দোলনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী, পেশা নির্বিশেষে গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। বর্জকন্ঠে গণমানুষের একটাই দাবী তখন, ‘গোলাম আযমের ফাঁসি চাই!’
প্রিয় দেশনেত্রী, বাংলাদেশে আমার সমবয়েসী যারা, সেই গণআন্দোলনকালে যাদের কিশোরকাল তখন, তাদের সবার মনে আছে, একটা পরিবর্তন আসছিল সব দিক থেকে। নতুন নতুন কাগজ বেরুচ্ছে। নতুন নতুন কবিতা লেখা হচ্ছে। নতুন একটা ধারা। প্রায় মুক্তিযুদ্ধ বিমুখ একটা প্রজন্ম হঠাৎ করেই চেতনা ফিরে পেলে যেন। এই পত্রের লেখক কিশোর এক আন্দোলনকারী, অনভিজ্ঞ হাতে আঁকাবাঁকা লেখায় পোস্টার লেখে ‘গোলাম আযমের ফাঁসি চাই!’, ‘রাজাকার তুই বাংলা ছাড়!’। দোকান থেকে আটা কিনে জ্বাল দিয়ে বেরিয়ে পড়ে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটতে রাতের আঁধারে। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে এইরকম নিভৃতচারী আন্দোলনকারীর জন্ম দিয়েছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের রক্তে প্রবেশ করে দিয়েছিলেন তিনিই। নতুন করে চিনিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন এই দেশকে। তার আন্দোলন আপনার বিরুদ্ধে ছিলো না, ম্যাডাম।
প্রিয় আপোষহীন নেত্রী, আপনার অজানা নয় কে এই জাহানারা ইমাম। রুমির কথা আপনি জানেন না সেকথা বিশ্বাস করা যায় না। আপনি নিশ্চয় শুনে থাকবেন, রুমিকে মুক্তিযুদ্ধে তিনি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে পৌঁছে দেন। আমি যখন কথাটা লিখছি আমার গাটা কাঁটা দিয়ে উঠছে। ‘বাংলাদেশ’ এইরকম অসংখ্যা মায়ের সন্তান উৎসর্গের দামে কেনা। আপনাকে এসব বলা ধৃষ্টতা আমার! মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদানও তো কোন অংশে কম নয়। আপনি তাই জানেন যুদ্ধ কাকে বলে। নিজের কিছু হারালে কেমন লাগে। জাহানারা ইমামের ব্যথাটা আপনার থেকে কে আর বেশি বুঝবে?
প্রিয় দেশনেত্রী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর এর আগেও অনেক বড় বড় অবিচার হয়েছে। কিন্তু এবারেরটা অনেক বেশি মর্মস্পর্শী, বেদনাদায়ক। একাত্তরের এক সন্তানহারা মা বিচারের দাবী নিয়ে শরীরে ক্যান্সার সঙ্গি করে পথে-প্রান্তরে দৌড়ে বেরিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি হলেন ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’! তাঁর নামে হলো রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম, পাকিস্তানী নাগরীক গো. আযম সসন্মানে তার নাগরিত্ব ফিরে পেলেন। যিনি আপনারই স্বামীর আমলে বিনা পাসপোর্টে-ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন। মাথায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ নিয়ে শহীদ জননী চির শায়িত হলেন বাংলার ‘সব সহা মাটিতে’। কিন্তু রেখে গেলেন অনির্বাণ এক শিখা- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা! প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যে শিখায় দ্বীপ্ত হতে থাকবে। ২০১৩ সালের শাহবাগ সেই শিখার দ্বীপ্তিতেই আলোকিত করলো গোটা দেশকে।
প্রিয় দেশনেত্রী, আপনার পূর্বের সমস্ত ভূমিকাকে আমরা কেবল এই বলে সাফাই করেছি, আপনাকে ভুল বুঝানো হয়েছে। এমন কি ২০০১ সালে আপনার নিজামী, মুজাহিদকে নিয়ে সরকার গঠনকে মহা রাজনৈতিক ভুল বলেই ধরে নিয়েছি। নষ্ট রাজনীতি বলে গাল দিয়েছি। রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দেখে ক্ষোভ ধরে রাখতে পারিনি। তবু বিশ্বাস করেন প্রিয় নেত্রী, তবু আপনাকে একেবারে খরচের খাতায় ফেলে দিতে পারিনি। ক্ষমতার রাজনীতির নোংরা চেহারা, আপোষের রাজনীতির করুণ দশা ইত্যাদি বলে সমালোচনা করেছি আপনাকে। আপনি এবং আপনার দলকে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেবার কথা ভেবেছি। আপনি শুধরাবেন শেষ পর্যন্ত, এই আশা ছিলো দেশনেত্রী। এদেশে কে না পৃষ্ঠপোষকতা করেছে দালালদের? কার হাত নোংরা নয় ঘাতককে করমর্দনে? গত ৪২ বছরের ইতিহাস ঘাতক-দালালদের পূর্ণবাসনের ইতিহাস।
প্রিয়,দেশনেত্রী, এমন দিন আসবে জানতাম। যেদিন সব শেয়ালই হুক্কা হুয়া বলে রা করে উঠবে। সময় হলেই যার যার জায়গা থেকে একই রবে ডেকে উঠবে জানা ছিল। ‘২০১৩ শাহবাগ’ ঘাতক দালালদের এমন এক জায়গায় নিয়ে গেলো যাকে সহজ কথায় ‘অস্তিত্ব’ সঙ্কট’ বলে অভিহত করা যায়। ৭১’-এর পর আর কখনো এমন অবস্থায় ঘাতকরা পড়েনি। ঘাতকরা আর তাদের পৃষ্ঠপোষকরা জানে এইবার খেলার শেষ রাউন্ড। এ রাউন্ড নক্আউট রাউন্ড। যারা জিতবে তারাই ‘রামায়ন’ লিখবে। কাজেই আর লুকোছাপা, ন্যাকামী, ঘোরানো-প্যাঁচানোর দিন শেষ। সময় হয়েছে সগোত্রীয় রবে একত্রে ডেকে উঠার। আমরা দেখলাম কত পরিচিতি মুখ আমাদের বিস্মত করে দিলো। কত নিরপেক্ষ ভদ্রলোক হিতাহিত জ্ঞান হারালেন। কত বৃদ্ধিজীবি তার পঁচনটা মেলে দেখালেন আড়াল থেকে। জাতির জীবনে এমন সময় খুব কমই আসে। এ যুদ্ধের সময়! এখন যুদ্ধের সময়!
প্রিয় দেশনেত্রী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ার মধ্যে অন্যায় কিছু আছে কি? কুখ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লার গুরু পাপে লঘু দন্ডে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দেশের মানুষ। ক্ষোভের আগুনে তরুণদের বুকের ভেতরটা জ্বলতে থাকে অহর্নিশি দাবানলের মতো। একজন দুজন করে জড় হতে থাকে শাহবাগে, স্রেফ একটা প্রতিবাদ জানাতে। দেখতে দেখতে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ নানা শ্রেণী-পেশার, ছাত্র-যুবা, তরুণ-বৃদ্ধ তাদের ক্ষোভ আর প্রতিবাদ জানানোর জন্য এসে হাজির হয় শাহবাগে। শুরু হয় এক অনন্য ইতিহাস, বিশ্ববাসী অবাক চোখে চেয়ে দেখে অহিংস আন্দোলন কাকে বলে। কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়। সারা বাংলাদেশের তখন এক দাবী, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই!’ আপনার নিশ্চয় তখন জাহানারা ইমামের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল, ম্যাডাম, তাই না?
এবার কিন্তু ভুল করলেন না ম্যাডাম! আপনি স্বাগত জানালেন ‘শাহবাগকে’। আমরা আশ্বস্ত হলাম অবশেষে। ঘাতকরা এখন পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। । আপনার বাচাল নেতাদের সাবধান করে দিলেন শাহবাগ নিয়ে যেন উল্টাপাল্টা কোন কথা না বলা হয়। সারা দেশের মানুষ তখন দেখছে গোটা দেশ একটাই দাবীতে একমত ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই!’
আমরা জানতাম ম্যাডাম, যত রাজনৈতিক ঐক্যই হোক না কেন, ওসব ভোটের রাজনীতির কুটচাল। যখন সময় হবে ঠিক আপনি ওদের সংস্পর্শ ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন। হলোও তাই, শাহবাগকে আপনি স্বাগত জানালেন। ঠিক এইরকম অবস্থায় আপনি সিংগাপুরে গেলেন চিকিৎসার জন্য।
প্রিয় দেশনেত্রী, ৭১-এর কুখ্যাত রাজাকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর সারাদেশে ঘাতকদের চ্যালারা ফের ৭১-কে মনে করিয়ে দেয়। নজিরবিহিন সন্ত্রাসের কবলে পড়ে প্রিয় মাতৃভূমি। যে ভয়াবহতা, নৃশংসতা চালায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি তার প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্র কঠরভাবে হস্তক্ষেপ না করলে রাষ্ট্রের সমস্ত আইনী কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে। শাসনকার্য ভেস্তে যাবে। ব্যর্থ হবে রাষ্ট্র । রাষ্ট্র তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় যা যা প্রয়োজনীয় তাই করেছে। আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এসব আপনি ভালো জানেন আমাদের থেকে। আপনার রাজনৈতিক মিত্র একাত্তরের ঘাতক শক্তি জামায়াত ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির যে তান্ডব চালায় তা কোন রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। দাবী উঠে নিষিদ্ধ করা হোক এই দলকে। একাত্তরের পুরোনো চেহারায় ফিরে এসেছে এই ফ্যাসিস্ট দলটি। জামায়াতের নিষিদ্ধের দাবী তখন এক দাবীতে পরিণত হয়। ম্যাডাম, এমন সময় আপনি সিংগাপুর থেকে দেশে ফিরে এলেন।
কিন্তু গণেশ যে উল্টে গেছে তা আমাদের জানা ছিল না।
বিদেশ থেকে ফিরে এসে আপনি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে ঘোষণা করলেন, বন্ধ করুন এই গণহত্যা!
আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ম্যাডাম। নতুন করে গণহত্যার সজ্ঞা জানতে চাইলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। জামায়াত শিবিরের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকে রাষ্ট্রের আত্মরক্ষার মোকাবেলাকে আপনি ‘গণহত্যা’ বলে চিহ্নিত করলেন। যারা এদেশে গণহত্যা চালিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, অগণিত মানুষকে বদ্ধভূমিতে পাঠিয়েছে, আজ তারাই যখন সেই পুরোনো চেহারায় ফের আবির্ভূত হয়েছে, তাদেরকে আড়াল করতে আপনি বললেন, ‘গণহত্যা!’ বাংলাদেশের ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিপরীতে আপনি আরেকটি গণহত্যা খাড়া করলেন, ম্যাডাম!
হঠাৎ শাহবাগও আপনার চক্ষুশূল হয়ে উঠলো ভোজবাজীর মত। আপনি রণহুংকার দিলেন, ‘বন্ধ করুন এই ‘মঞ্চ-ফঞ্চ!’, ‘নষ্ট ছেলেরদল’ ‘নাস্তিক, ধর্মহীন’ ‘নাস্তিকচত্তর’ বিরামহীন চলতে লাগলো আপনার বিষেদাগার। একদা সামরিক শাসনের ছায়ায় জন্ম নেয়া আপনার দল বিএনপি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক একটি দলে প্রতিষ্ঠিত এবং গণতন্ত্র আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে আপনি মঞ্চ- সমাবেশ করার জনগণের সাংবিধানিক অধিকারকে সরাসরি বিরোধীতা করলেন, এবং এই ‘নষ্ট ছেলেদের’ পাল্টা আপনি নিজেই একটা মঞ্চ করার ঘোষণা দিয়ে বসলেন। বাহ্ দেশনেত্রী!
সেই মঞ্চ নিশ্চয় শাহবাগ মঞ্চকে প্রতিরোধ করবে, ম্যাডাম? যে মঞ্চ গো. আযম আর তার চ্যালাদের ফাঁসির দাবী করে আসছে তাকেও প্রতিরোধ করবে? আপনি ক্ষমতায় গেলে নতুন করে টাইব্যুনাল গঠন করবেন এই ‘গণহত্যাকারীদেরকে’ সায়েস্তা করার জন্য। এতে করে কি আপনি ঘাতকদের নেত্রীতে পরিণত হলেন না? আপনার সমাবেশে ঘাতকদের মুক্তির দাবী উঠে। শত অনুরোধেও আপনি ঘাতকদের সঙ্গ ছাড়তে নারাজ। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে আপনি ঢালাওভাবে নাস্তিক, নষ্ট বলে উল্লেখ করে কাদের রক্ষা করতে চান? বাংলাদেশের মানুষ এই প্রশ্নের উত্তরের একদম দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছে, প্রিয় দেশনেত্রী!
আমি জানি এত কিছুর পরেও আপনার জনসভায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হবে। আপনার নামে জয়োধ্বনি হবে। ফের শাসন ক্ষমতা উঠবে আপনার হাতে। বাংলার ঘাতকরা আবার গাড়িতে পতাকা দুলিয়ে প্রকাশ্যে বুক ফুঁলিয়ে ঘুরে বেড়াবে। আপনার জনসমর্থন তাতে এতটুকুও কমবে না।
প্রিয় দেশনেত্রী, আর কেন ঘটা করে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া! কেনই আর ১৬ ডিসেম্বর? ২৬ মার্চ? তিরিশ লাখ মানুষের প্রাণ আর দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম যারা কেড়ে নিয়েছে আজ তাদের হাতেই আপনার হাত! কেন আর তবে আনুষ্ঠানিকতা?
প্রিয় আপোষহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের প্রতি সমস্ত বিশ্বাস রেখে, আপনার নাগরীক অধিকারের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সবিনয়ে অনুরোধ, প্রিয় দেশনেত্রী, এই অগ্নিঝরা মার্চে বাংলার কোন শহীদ বেদিতে আপনার স্পর্শ যেন না পড়ে! আপনি ফিরে যান! আপনাকে ফিরে যেতে হবে এই মার্চে। শহীদদের সম্মানার্থে আপনি ফিরে যান! দোহাই, এই নাস্তিক,নষ্টদের মিনার থেকে আপনি ফিরে যান!
ockquote>কেন আর তবে আনুষ্ঠানিকতা?
সাংঘাতিক একটি প্রশ্ন। তবে আমার মনে হয়, এই আনুষ্ঠানিকতা আরও কিছুদিন চলবে। ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর মিশন পুর্ণাংগ সফল হবে। আজ তাদের এক এমপি প্রকাশ্যে টিভি মিডিয়ায় তিরিশ লাখ শহীদ হওয়ার ঘটনাকে বানানো তথ্য বলছেন এবং তারপরও বহাল তবিয়তে বাংলাদেশের এমপি পদে আসীন আছেন। পুরুষ্কার হিসেবে তিনি হয়ত সামনে মন্ত্রী হবেন। তিনি হয়ত তখন রাজাকারদের সন্মাননা জানাবেন পাকিস্তান রক্ষায় সাহসী ভূমিকার জন্য এবং পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হাতকড়া লাগাবেন।
তারা যে তাদের মিশনে কতটা সফল, তার একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রমাণ হল, কাদের সিদ্দিকিকে কিনে নেয়া।
তবে যেখানে আ’লীগ, বামদলসহ সকল মুক্তিযুদ্ধ-পন্থী দল ব্যর্থ ও পরাস্ত তাদের কাছে, সেখানে শাহবাগ কোন পূর্বানুমান ছাড়াই গড়ে তুলেছে প্রতিরোধের দেয়াল। ১৯৭১ এ মুক্তি যেমন ছিল একটি মূর্তমান আতঙ্ক খানসেনা আর রাজাকারদের জন্য, আজ শাহবাগও তেমনি একটি মূর্তমান আতঙ্ক ‘বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর’ নায়কদের কাছে।
তাই আমরা যারা স্বাধীনতাকামী মানুষ, তাদের কাছে শাহবাগ, শাহবাগের তারুণ্যই একমাত্র ভরসা, যেমনটা ছিল ১৯৭১ এ আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। শাহবাগকে আমাদের সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে। নিজেদেরই জন্য।
@কাজি মামুন,
হামিদুর রহমান কমিশনের কাছে জেনারেল নেয়াজী স্বীকার করেছিলেন ৭১-এ তারা ১২-১৫ লক্ষ বাঙালীকে হত্যা করেছে। পাকিস্তানীরা যতটা পারবে সংখ্যাটা কমাতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরও নিয়াজীর কথাটাই যদি আমরা মেনে নেই সংখ্যাটা ৩ লক্ষ ছিল কিনা সেটা পরিষ্কার। এইসব যত আমরা জানবো এবং অপরকে জানাবো ততই এইসব দল ও তাদের এমপিরা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবে। আমাদের উচিত শুধু লেখালেখির মাধ্যমে এইসব সত্যকে সহজ লভ্য করে তুলে অন্যের কাছে পেৌঁছে দেয়া। ধন্যবাদ আপনাকে।
চমৎকার! (Y)
@কেশব অধিকারী,
ধন্যবাদ।
এই অগ্নিঝরা মার্চে আবার গর্জে উঠতে হবে।
@ফোবিয়ান যাত্রী,
দোষরদের বয়কট করুন।