উগো চাবেস এর অকালে মৃত্যুর পরে বাংলাদেশে অনেকে ন্যাযত: শোক করেছেন। কিন্তু তার অবদানের কথা বলতে গিয়ে যে তীব্র উচ্ছাস দেখা গেছে তার যুক্তি সংগতা নিয়ে প্রশ্ন খুব একটা আসে নি। স্বভাবগত ভাবে পশ্চিমবিদ্বেষী বাংলাদেশীদের কাছে চাবেস যে হিরো হবেন এটা স্বাভাবিক। বাংলাদেশীদের কাছে গাদ্দাফী, সাদ্দাম, আহমেদিনাজাদ এমনকি বিন লাদেন ও হিরো। আমি এখানে চাবেস এর নিন্দা করার জন্যে এই পোস্ট লিখছি না। শুধুমাত্র তার অবদানকে কিছুটা বাস্তবতার নিরীখে দেখার জন্যে এই ছোট পোস্ট টি। মূলত অর্থনীতির কিছু দিকই আমি উল্লেখ করবো।
বেনেসুয়েলা’র গত এক যুগের অর্থনীতি কে বুঝতে হলে সবচেয়ে ভালো হবে এর কাছাকাছি আরেকটি দেশের অর্থনীতির সাথে তুলনা করলে। ল্যাটিন আমেরিকার আরেকটি দেশ মেক্সিকো। কাছাকাছি দেশ ও ইতিহাস ছাড়াও এই দুটি দেশের মধ্যে বড়ো মিল হলো যে দুটি দেশই অন্যতম তেল রপ্তানীকারী দেশ। ২০০৯ সালে বেনেসুয়েলা ছিলো ১৩ তম তেল রপ্তানীকারক ( ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন) আর মেক্সিকো ছিলো ১৭ তম ( ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ব্যারেল) [1] উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বেনেসুয়েলা তে পাওয়া গেছে পৃথিবীর সম্ভবত সবচেয়ে বড়ো তেলের ভান্ডার। নতুন হিসাব অনুসারে বেনেসুয়েলা’র পরিক্ষীত তেলের মজুদ সৌদী আরবের চেয়েও বেশী।
মেক্সিকো আর বেনেসুয়েলা তুলনা করা খুব উপযোগী একারনে যে গত একদশকে এই দুটি দেশ অর্থনীতির দিক দিয়ে সম্পূর্ন দুটি ভিন্ন দিকে যাত্রা করেছে। ৯০ এর দশকে আমেরিকা আর কানাডার সাথে মুক্ত বাজার নাফটা ( NAFTA) চুক্তির পর মেক্সিকো তার অর্থনীতিকে অনেকটাই উন্মুক্ত দেয় বিদেশী ইনভেস্টমেন্ট এর জন্যে। অনেক রাষ্ট্রীয় সেক্টরকে বিরাষ্ট্রীয়করন করা হয়। অন্যদিকে বেনেসুয়েলা’র অর্থনীতির দিকপথ তো মোটামুটি সবার জানা।
উল্লেখ করে নেয়া দরকার যে মেক্সিকোর বর্তনাম জনসংখ্যা সাড়ে এগারো কোটি আর বেনেসুয়েলার তিন কোটি। মেক্সিকোর জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশী।
এখন এক যুগ পরে এই দুই অর্থনীতির কিছু সংক্ষিপ্ত তুলনা দেখা যাক। [2]
২০০০ ২০০১ ২০০৯ ২০১০ ২০১১
বাৎসরিক মাথাপিছু আয় (পিপিপি)
মেক্সিকো ৮৭৮০ ৮৮৯০ ১৩৫৩০ ১৪৩৫০ ১৫৩৯০
বেনেসুয়েলা ৮৩৮০ ৮৬৬০ ১২৩৩০ ১১৯৯০ ১২৪৩০
মোট রপ্তানীর মধ্যে তেল রপ্তানীর অংশ
মেক্সিকো ৯% ৮% ১৩% ১৪% ১৬%
বেনেসুয়েলা ৮০% ৮০% ৯৫% ৯৩%
তেল ছাড়া অন্য পন্য ও সার্ভিস এর
রপ্তানীর বৃদ্ধি
মেক্সিকো % ১৬% -৩% -১৩% ২১% ৬%
বেনেসুয়েলা ৫% -৩% -১% -১৩% -১২%
উপরের চার্ট টিতে যদি কারও বুঝতে কিছু অসুবিধা হয় তবে আরও একটি সহজ পরিসংখ্যান দিচ্ছি, সৌদি আরবের বাৎসরিক রপ্তানীর ৯০% আসে তেল গ্যাস থেকে, বেনেসুয়েলার ৯৫% ।
এই অগাধ তেলের রিজার্ভ এর কারনে চাবেস এর অন্তর্ধান এর পরেও বেনেসুয়েলা যে অচিরেই পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ এ পরিনত হবে এব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।
অন্যদিকে বর্তমানে মেক্সিকোর রপ্তানীর প্রধান তিন পন্য হলো ইলেকট্রনিক্স, গাড়ী এবং মেশিনারী। এই তিন ক্যাটেগরীতেই সর্বমোট রপ্তানীর প্রায় ৬০%।
বর্তমানে মেক্সিকোর ম্যানুফ্যাকচারিং এতোটাই শক্তিশালী যে মেক্সিকোর রপ্তানী বানিজ্য বিশ্বের রপ্তানী সুপারপাওয়ার চীনকে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতা করছে।
Mexico: China’s unlikely challenger
By Adam Thomson
Latin America’s second-largest economy has emerged as a powerful exporter
http://www.ft.com/cms/s/0/9f789abe-023a-11e2-b41f-00144feabdc0.html#axzz2N6BlnKmu
মেক্সিকোর অর্থনীতি বেনেসুয়েলার তুলনায় অনেক ডাইভার্সিফাইড ই শুধু নয় অনেক এফিশিয়েন্ট ও। অর্থনীতি তে একটা দক্ষতার হিসাব আছে GDP per unit of energy use যেটা হিসাব করে যে একটি অর্থনীতি এক কেজি সমপরিমান তেল এর এনার্জি খরচ করে অর্থনীতে কি পরিমানে সম্পদ সৃষ্টি করে। এই হিসাবে দেখা যায় যেখানে মেক্সিকো এক কেজি তেল থেকে ৮ ডলারের মতো জিডিপি সৃষ্টি করে সেখানে বেনেসুয়েলা করে ৪ ডলার মাত্র। এখানে এটা উল্লেখ করাও দরকার যে গত এক দশকে মেক্সিকো’র অর্থনীতির বৃদ্ধির এক বড়ো কারন হলো আমেরিকার সাথে ফ্রী ট্রেড চুক্তি এবং মেক্সিকোতে আমেরিকান ইনভেস্টমেন্ট। ২০০১ সালে আমেরিকা নাফটা চুক্তিকে সম্প্রসারন করে পুরো দক্ষিন আমেরিকা (কিউবা বাদে) কে এর আওতায় আনতে উদ্যোগ নেয়। প্রধানত চাবেস এর তীব্র বিরোধিতার কারনেই এই সম্প্রসারন সফল হয় নি।
উগো চাবেস বেনেসুয়েলার জন্যে অনেক অবদান রেখেছেন এব্যাপারে সন্দেহ নেই। যারা ল্যাটিন আমেরিকার ইতিহাস সম্পর্কে জানেন তারা জানেন যে পৃথিবীতে মধ্যপ্রাচ্যের পর সম্ভবত এই অন্চলটিই অর্থনীতির বিবর্তনে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিলো। ৫০০ বছর আগে স্পেনিশ-পর্তুগীজ কলোনীর পত্তনের পর থেকেই এই অন্চলের অর্থনীতিগুলো মোটামুটি ভাবে বড়ো বড়ো অভিজাত পরিবারগুলির কুক্ষিগত ছিলো। এই অভিজাততন্ত্রের হাত থেকে মুক্তির জন্যে গত ২০০ বছর ধরেই সংগ্রাম চলছে। কোন কোন দেশ এই অর্থনীতির পরিবর্তনে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে অন্যদিকে কোস্টারিকা, চিলি এসব দেশ অনেক এগিয়ে গেছে বেশ আগেই। বেনেসুয়েলার অভিজাত তন্ত্রে আঘাত হানা চাবেস এর বড়ো সাফল্য সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
তবে চাবেস এর অর্থনীতিকে সফল বলতে গেলে গাদ্দাফী, সৌদী বাদশাহ এদেরকেও সফল অর্থনীতির দিকপাল বলতে হবে। পায়ের নীচে তেলের অগাধ সাগর থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্ভট তন্ত্রও ব্যর্থ হতে অনেক সময় লাগে।
References:
[1]http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_countries_by_oil_exports
[2] http://www.worldbank.org/
http://www.ft.com/cms/s/0/9f789abe-023a-11e2-b41f-00144feabdc0.html#axzz2N6BlnKmu
মন্তব্যসহ সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়লাম ………আগামীতে চাভেজের শাসনামলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণ জানার অপেক্ষায় থাকলাম।
নিরপেক্ষ বিশ্লেষণের জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
পূর্ণ সমর্থন করি। সাধারণ মানুষ সাফল্যটুকুই দেখে। কিন্তু কতটা রিসোর্সের বিনিময়ে সাফল্য এলো সেটা দেখে না।
(Y) বিশ্লেষনটা ভাল লাগল সফিক!
চার্টটা ভাল করে আসেনি। আমি সাধারণতঃ যা করি তা হল, ওয়ার্ডে টেবিল তৈরি করে ওটার একটা স্ক্রিনশট ছবি আপলোড করে পোস্ট করে দেই, যেভাবে আপনি চার্টের ছবিটা দিয়েছেন।
উগো শ্যাভেজকে নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে এটা মুক্তমনাতেই বোধ হইয় সম্ভব। দেশের পত্রিকায় দেখি কেবল এন্তার স্তব, আর মার্কিন পত্রিকায় দেখি কেবল অন্ধবিদ্বেষ! 🙁
@অভিজিৎ,ধন্যবাদ চার্ট এর ব্যাপারে সাহায্যের জন্যে। লেখা বা মন্তব্যের মধ্যে প্রায়ই নিজস্ব বানানো চার্ট দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু কেমন করে করবো এটা বুঝে উঠতে পারি নি।
চাভেজের উপরে আলোচনাতেই ফুটে উঠে বাংলা মিডিয়া জগতে মুক্তমনার একান্ত স্বকীয়তা।
আমি সফিকের সাথে একমত এবং নিজে একটি পোষ্ট দিয়েছি, শাভেজের ওপর। শাভেজ ভাল লোক ছিলেন। সাচ্চা লোক ছিলেন। কিন্ত তার অর্থনীতি সম্পূর্ন ব্যার্থ এবং তেল নির্ভর-এই নিয়ে বিতর্ক করার ও অবকাশ নেই। তাকে দেবতা বানানো আরেকধরনের বাঙালী বামপন্থী আদিখ্যেতা যারা খুব বেশী বিচার বিবেচনা না করেই মানুষকে দেবতা বানাতে ওস্তাদ।
ভেনেজুয়েলার হুগো চাভেজ সর্ম্পকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে আরও বিস্তৃত জানার আগ্রহ ছিলো এই লেখাতে। তবে আরো একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার সেটা হলো দেশটিতে কিলিং আর মারডার রেইট বৃদ্ধি পেয়েছিলো অসম্ভবভাবে যেটা নাকি ইরাককেও ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো। যাই হউক, আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকার পরিকল্পনার পথ প্রসস্ত করতে হলেতো দেশে বিপ্লব ঘটাতেই হয়।
কাল ইরতিশাদ ভাই এর পোষ্ট পড়ে ভেবেছিলাম যে চ্যাভেজের শাসন সম্পর্কে আমার অনেক ভুল ধারনা ছিল, সম্ভবত পশ্চীমা মিডিয়ার কল্যানে। বিস্তারিত জানতাম না, তবে ধারনা ছিল যে অগাধ তেল থাকার পরেও জনসাধারন সে দেশে তেমন একটা ভাল নেই। ইরতিশাদ ভাই এর পোষ্টের পর সে ধারনা অনেকটা বদলায়, তবে আরেকটু খুটিনাটি জানার ইচ্ছে ছিল। শ্যাভেজের আমলেই ২০০৪ সালে মনে হয় ভেনেজুয়েলায় সর্বোচ্চ বেকারত্ব (১৮ এর ওপর ছিল)।
মনে হচ্ছে আপনার লেখায় মোটামুটি ব্যালেন্স চিত্র এসেছে।
@আদিল মাহমুদ,ভেনেজুয়েলার সাধারন লোকজন যে দেশের তেল সম্পদের আরও সুষম বন্টনের ফলে অনেক উপকৃত হয়েছে এবং চাবেজ যে আসলেই সে দেশে বেশ জনপ্রিয় এ সম্পর্কে কারও দ্বিধা থাকা উচিৎ নয়। কিন্তু চাবেজ ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন এনেছেন এটা বলার কোনো অবকাশ নেই। দেশে অপরিসীম খনিজ সম্পদ থাকলে অনেক রকমের পরিবর্তনই সম্ভব। আসল কষ্টকর দিক হলো অর্থনীতিতে রিফর্ম এনে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি প্রতিযোগী অর্থনৈতিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। মেক্সিকো, দ: কোরিয়া, ইসরায়েল, তুরষ্ক এসব দেশকে আমেরিকার ক্লায়েন্ট দেশ বলে উড়িয়ে দিলে সেসব দেশের সরকার ও জনগন যে কষ্টকর পরিবর্তনের মধ্যে যেয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে সফলতা অর্জন করেছে, সেই অর্জন কে তুচ্ছ করা হয়।
ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশেই গত এক দশকে অভূতপূর্ব অর্থনীতির উন্নতি হয়েছে। এই উন্নতি এসেছে বাজার অর্থনীতির পথ ধরেই। ব্রাসিল এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লুলাও একজন বামপন্থী, দেশের পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর জীবন ও আয় উন্নত করার জন্যে তিনিও অনেক কিছু করেছেন এবং ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও তিনি এখনও অত্যেন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু লুলা ব্রাসিলের পরিবর্তন করেছেন বাজার অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেই এবং দিন রাত আমেরিকা কে শাপ শাপান্ত না করেই।
তবে আমি চাবেস এর প্রতি সহানুভুতিশীল একটি বিশেষ কারনে। চাবেস এর রক্তে বইছে আমেরিন্ডিয়ান (আমেরিকার আদিবাসীদের) রক্ত। তার চেহারাতেও রয়েছে সেই ছাপ, সাদা স্প্যানীশ ভাব তেমন একটি নেই। উ: ও দ: আমরিকার ইতিহাস যারা জানেন তারাই জানেন যে এই আমেরিকার প্রাক্তন আদিবাসীরা কি রকম ভয়াবহ গনহত্যা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিলো। এক হিসাব মতে কলম্বাস আসার আগে দুই আমেরিকায় আদিবাসী ছিলো ১০ কোটি, সেই সংখ্যা ১৯০০ সালে নেমে আসে বিশ লাখেরও নীচে (http://en.wikipedia.org/wiki/Genocides_in_history#Americas)।
এছাড়া ৫০০ বছরের তীব্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য তো আছেই। এখনো দ: আমেরিকার সব রকমের বিখ্যাত লোকদের মধ্যে আদিবাসী চেহারা খুজে পাওয়া দুষ্কর। ফিডেল ক্যাস্ট্রো, চে গুয়েভারা ইত্যাদিকে তো ইউরোপীয়ান ছাড়া অন্য কিছু মনে হওয়া কঠিন।
সেই আদিবাসীদেরই একজন, চাবেস যে ল্যাটিন আমেরিকার এক প্রবাদতুল্য জনপ্রিয় নেতা হয়েছেন, এই ঘটনায় ইতিহাসে দায়, একেবার সামান্য হলেও কিছুটা মিটেছে।
অর্থনীতির সারনীর উপড়ে ভিত্তি করেই যদি কথা গুলো বলতে হয় তাহলে সৌদী বাদশাহীকেই ধন্য ধন্য করা চলে উগো চ্যাভেজকে নয়।
আর এই কারনেই বোধহয় ওদের জাতীয় ঐক্য একটা বড় শক্তি। যা আগামীতে এগিয়ে যাবার নিয়ামক হয়তো হবে। মেক্সিকোর ক্ষেত্রে ঠিক ওরকম হবে কিনা জানিনা।
তাই উপড়ের মন্তব্যটা একটু আগাম হলো না কি? সবটাই নির্ভর করছে নেতৃত্ত্ব আর দুরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিকল্পনার উপড়ে।
আর একটা ব্যাপার, মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা আর সৌদি আরব তাদের তেলের উৎপাদন এবং তৎসংক্রান্ত ব্যবসা শুরু করে যথাক্রমে মোটামুটি ১৯১০, ১৯২০ এবং ১৯৪০ সাল থেকে। মেক্সিকোর তেল ছাড়াও ৬০ শতাংশ রপ্তানী বানিজ্যের পণ্য আসে আপনার তথ্যমতে গাড়ী, মেশিনারী আর ইলেক্ট্রনিক্স থেকে। যেখানে ভেনেজুয়েলার আর সৌদী আরবের আছে শুধু তেল! যদিও ভেনেজুয়েলার অন্যান্য ব্যবসা সহ কৃষি সম্পদও ছিলো। রপ্তানী আয়ের ক্ষেত্রে মেক্সিকো আর ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে এমন কিছু আকাশ পাতাল তফাৎ নেই (আপনার সারনী দ্রষ্টব্য)। তেল সম্পদ আহরণের পরবর্তীতে নীতিগত বা পরিকল্পনা গত সমঞ্জস্য কিন্তু সৌদি আরব আর ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে বেশ দৃশ্যমান! উভয় দেশ শুরু থেকেই তেলের ব্যবসা নির্ভর হয়ে পরে অন্যান্য উৎপাদন গুলো বিষর্জন দিয়ে। যা সৌদি আরবে জন্ম দেয় বড় বড় ধনী শেখের আর ভেনেজুয়েলায় অভিজাত শ্রেণী। ভেনেজুয়েলার এই একক ব্যবসা নির্ভরতাকেই বলা হয় Dutch Disease. সৌদিতে সেই অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি, তবে বিশাল বিদেশী শ্রম নিয়োগের ফলে ওদেশে ইদানীং অন্যান্য ব্যবসা, শিক্ষা-সংস্কৃতির বড় একটা অংশ হয়ে পড়েছে বিদেশ নির্ভর। ভেনেজুয়েলায় চ্যবেজের সাফল্যটা এখানেই। ১৯৯৯ থেকে বিগত চৌদ্দ বছরে তিনি ভেনেজুয়েলার সেই আবহমান নেতিবাচক দিকটায় হস্তক্ষেপ করে ক্ষতটাকে সারিয়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। কোন বিদেশী শ্রম বিনিয়োগ ছাড়াই। উগো চ্যবেজ কে নিয়ে যারা মাতোয়ারা তারা মার্কিন বিরোধিতার কারনে যতোটা না, তার এই সব পরিকল্পনাই বোধ করি উচ্চকীত ছিলো তাদের মনে, আমার তাই মনে হয়।
বাংলাদেশে গ্যাস ছিলো, না গড়ে উঠেছে গ্যাস নির্ভর ধনীক শ্রেনী না হয়েছে শিল্প-কারখানা। তবে সবাই মিলে নিজের সম্পদ নিজেরাই চুরিকরে সাবার করে দিয়েছি। কারণ আমাদের উগো চ্যাবেজ যে নেই!
১৯৭১ এ বাংলাদেশের জন্মের যুদ্ধটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ছিল মুক্তিযুদ্ধ; স্বাধীনতার যুদ্ধ, যোদ্ধাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা। পাকি শাসক হারামজাদাদের কাছে ছিল ওটা বিধর্মীদের আস্ফালন, ওদের চোখে বাঙালি আর মুক্তিযোদ্ধারা ছিল ঘৃণ্য দুষ্কৃতিকারী। পাকি সাহায্যকারীদেরও ছিল সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি।
হুগোকে কার বা কাদের চোখে দেখা হবে তার ওপর নির্ভর করবে ওই সব ডাটা বিচার। মেক্সিকো মার্কিনিদের পোষ মানা পাখি, অন্য আরো অনেক প্রায় বিক্রি হয়ে যাওয়া বিকল্প সরবরাহকারীদের মতই আর একটা শক্তি। অন্যদিকে আমেরিকার চোখে তাদের শত্রু, অপ্রিয় ভেনেযুয়েলা স্রোতের বিপরীতে নিজ শক্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক গর্বিত বিপ্লবী শক্তি।
এই ভিডিওটা দেখুন: httpv://www.youtube.com/watch?v=fNlQpLPS0Ik
@কাজী রহমান,
আগের ভিডিও লিঙ্কটা ঠিক মত আসেনি।
এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেনঃ
@কাজী রহমান,উগো চাবেস এর মার্কিন বিরোধিতা নিয়ে আমি কোনো কথা এখানে বলি নি। এটা ছিলো শুধু তার তথাকথিত অর্থনীতি নিয়ে কিছু কথা। এখানে শুধু একটা কথাই বলেছি যে যে দেশ নেতা দেশের রপ্তানীকে ৮০% তেল নির্ভর থেকে ৯৫% তেল নির্ভরতায় নিয়ে যায় সে আর যাই হোক অর্থনীতির মিরাকল ওয়ার্কার নয়।
দেশের তেলের সাগর থাকলে আরাম করে অনেক রকম বিশ্ব বিপ্লবই করা যায়। তেলের সাগর না থাকলে অবস্থা হয় কিউবার মতো, যে কিনা কখনো রাশিয়ার কাছে ভিক্ষা করে আবার কখনো বেনেসুয়েলার কাছে ভিক্ষা করে কোনো রকমে দিন গুজরান করে। না হলে আরও অবস্থা হতে পারে উ: কোরিয়ার মতো, যেখানে দুর্ভিক্ষে পিতা-মাতা নিজ সন্তানকে হত্যা করে ভক্ষন করে।
বিশ্ব-বিপ্লবী দের মধ্যে, হোক সেটা ইসলামী কিংবা সমাজতন্ত্রী, ডাটা আর তথ্যের প্রতি অদ্ভুদ এলার্জি দেখা যায়। আর কিছু মনোপূত: না হলেই তো দালাল-কাফের বাণী তো আছেই।
১.পায়ের নিচে সম্পদ থাকলেই যে অনেক সময় অনেক কিছুই করা যায়না এটার জন্য নাইজেরিয়া রাষ্ট্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট। অগাধ তেল নাইজেরিয়াতেও আছে, কিন্তু তার কি হয় একটু ঘাঁটলেই জানা যাবে। এমন আরও দেশ আছে যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতার অভাব নাই; তবে যার লাভ শুধু গুটিকয়েক মানুষ এবং বিদেশীরা ভোগ করে। যদিও আরও উদাহরণ আছে।
২.গাদ্দাফীর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমারাও খুব বেশি সমালোচনা করেনি। আর আরব শেখদের যতই সমালোচনা করেন, সে দেশের নাগরিকরা অখুশি নয়। আর তাদের সাথে চাভেজের আরেকটি পার্থ্যক্য হল ব্যাক্তিগত সম্পদের পাহাড় না গড়া। এদিক থেকে সে ইউনিক, পৃথিবীতে এমন উদাহরণ খুব কম।
৩.মেক্সিকো হল আমেরিকার ডি ফ্যাক্টো ক্লায়েন্ট রাষ্ট্র। দেশটার অর্ধেক তারা দখল করে নিয়েছে সেই ১৫০ বছর আগে। একটি স্থিতিশীল মেক্সিকো আমেরিকার নিজের জন্যই প্রয়োজন আবার খুব শক্তিশালী যেন না হয়ে যায় তাও সে লক্ষ রাখে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশকে আমেরিকা যেমন ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে সেভাবে মেক্সিকোকে করা যায়না ভৌগলিক কারণে।
৪. মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইসরাইল এসব দেশের অর্থনৈতিক উত্থানের সাথে অন্যান্য দেশের উত্থান তুলনা দেওয়া ঠিকনা।
৫.শুধু জিডিপি পার ক্যাপিটা দিয়ে অর্থনৈতিক হিসেব করলে দেশের সঠিক চিত্র পাওয়া যায়না। আরও অনেক ফ্যাক্টর আছে যেমন গিনি ইনডেক্স। মেক্সিকোর ইনডেক্স কিন্তু ভেনেজুয়েলা থেকে বেশি। মেক্সিকোর ৫২ এর কাছাকাছি এবং ভেনেসুয়েলার ৪৪ এর সামান্য উপরে অর্থাৎ প্রায় ৮ পয়েন্ট পার্থ্যক্য। এর মানে মেক্সিকোতে আয় এবং সম্পদের অসমতা ভেনেজুয়েলা থেকে বেশি।
৬. উগো চাভেজের সবচাইতে বড় সাফল্য অর্থ ব্যবস্থার এবং সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনের ব্যবস্থা করা
এবং দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকাকে যুক্তরাষ্ট্রের hegemony থেকে বের করে আনার notion সৃষ্টি করা।
সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে আর কখনো দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার দেশ গুলোতে যা ইচ্ছা তা করতে পারবেনা যেমনটা তারা করেছিল গত শতাব্দী পুরো সময় এবং তার আগের শতাব্দীর শেষ ভাগে। এই পুরো সময় যুক্তরাষ্ট্র করেনি এমন কোন কাজ নেই কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই। ল্যাটিন আমেরিকার, বিশেষত দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে আগের মত আর ভিত নয়। হুগো চাভেজ দ্বিতীয় ফ্যাক্টরটির জন্যই বিশ্ব ইতিহাসে স্থায়ী জায়গা করে নিবে যদি এই অবস্থা বজায় থাকে।
@সংবাদিকা, গুড জব! আমি এই পয়েন্টগুলো নিয়ে বলতে চাইছিলাম। আপনি আরো ভালোভাবে সেটা বলে দিয়েছেন।
চাবেস-এর অবদান আছে বলেই এই দক্ষিণ এশিয়ায় বসে আমরা তাকে নিয়ে আলোচনা করছি। চাবেস-এর উন্নয়ন পদক্ষেপগুলো টেকসই নয়, সেখানে তত্ত্বগত গলদ আছে। তবে চাবেস-এর সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ বোধকরি কম।
আমরা বাংগালীরা বরাবর ই আবেগপ্রবন জাতি। হুজুগে আমরা অনেক কিছু ভাবি ও করবার উদ্দোগ গ্রাহান করি কিন্তু সে উদ্দম আর বেশিদিন থাকেনা। শ্যাভেজের কাছে আমাদের স্থির লহ্মএ আবেগকে পরিচালোনা শিখতে হাবে।
পায়ের নিচে তেল থাকলে কি হয় তা আমরা বিভিন্ন দেশের পরিনতি দেখলেই বুঝতে পারিlসাম্রাজ্যবাদীদের কূটকৌশল একটি জাতিকে কোথায় নামাতে পারে তাও আমরা জানিl
উগো চাবেস তার জাতিকে ক্ষমতালোভী মুনাফাখোরদের আর্থ সামাজিক কূটকৌশলের ফাঁদ থেকে উদ্ধার করেছিলেনlতাই আমাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদের দালালরা যখন রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং জাতির সেবার নামে দেশীও সম্পদ লুট করে তখন উগো চাবেসের মত একজন পথনির্দেশকের প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করিl
ধন্যবাদ সফিক ভাই লেখাটির জন্য।আসলে হুগো শ্যাভেজের মত কিছু লোকের জন্য বাংলাদেশের কিছু মানুষের অতিশয়ক্তি আমাদের হুজুগের কথাই মনে করিয়ে দেয়।আমাদের দেশের মানুষ কেমন জানি এক চোখে সব দেখে, এটা খুবই দুঃখ জনক। এমন আরো কিছু লেখা দিন যাতে মার্ক্সবাদের অন্ধ ভক্ত দের বিরুদ্ধে কিছু একটা বলার থাকে বিরোধী পক্ষের।বাংলায় কিছু লেখা পেলে সবারই বুঝতে সুবিধা হবে।সুন্দর লেখাটির জন্য অনেক শুভেচ্ছা। (F)
লেখককে ধন্যবাদ অর্থনৈতিক পর্যালোচনার জন্য। আমার মনে হয় অধিকাংশ বাঙ্গালীই চ্যাভেজ সম্পর্কে না জেনেই তাকে পছন্দ করতে ভালবাসে। জেনে, বুঝে ভালবাসা আর অন্ধ ভালবাসা যুক্তিদিয়ে পার্থ্যক্য করা উচিৎ বৈ কি।