কাপছে দেখো হাঁটুখানি শিবির জামাতের
দুরুদুরু করছে দেখো দিলটা রাজাকারের
হচ্ছেটা কী চারিপাশে? দিচ্ছে কারা ঘের?
কোথা থেকে এলো ফিরে বিচ্ছুগুলো ফের?
রাজনৈতিক দাবী আদায়ের আন্দোলন যে কতখানি শৈল্পিক, কতখানি নয়নাভিরাম, কতখানি মাধুর্যময়, কতখানি মার্জিত, কতখানি আবেগী, কতখানি উচ্ছ্বাসময়, কতখানি সহযোগিতাপরায়ন আর কী পরিমাণ সৃষ্টিশীল হতে পারে, শাহবাগ আর বাংলাদেশের মানুষ তা বুঝিয়ে দিল। নিরস্ত্র মানুষের সম্মিলিত শক্তি যে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের চেয়েও বহু গুণে শক্তিশালী, অনেক বেশি কার্যকর, অনেক বেশি ফলপ্রসু, তাও বুঝিয়ে দিল এই প্রজন্মের তরুণেরা। হাতের সাথে হাত মিলিয়ে, কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে নীরবে দৃঢ়চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের শক্তি পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তিধর, বেশি তেজস্বি। আগ্নেয়গিরির আগুনস্রোত লুকিয়ে থাকে সম্মিলিত মানুষের ভালবাসাময় বুকে। এই আন্দোলন অনাগত দিনে পৃথিবীর সকল প্রান্তের সকল গণ আন্দোলনের ব্যকরণকেই পালটে দেবে। পালটে দেবে আন্দোলনের সব পাঠ্যবইকে।আগামী সময়ে দুনিয়ার বহু প্রান্তে, বহু দেশে,বহু বিষয় নিয়ে মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। সেই সব আন্দোলনে তারা অনুকরণ করার চেষ্টা করবে শাহবাগের এই অনুপম, অদৃষ্টপূর্ব আন্দোলনকে।সেইসব মানুষেরা বিশুদ্ধ শ্রদ্ধা নিয়ে স্মরণ করবে বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষদের। এ বিষয়ে আজ আমার কোনো সন্দেহ নেই,নেই কোনো দ্বিধা, নেই কোনো সংশয়, সংকোচ।জয়তু বাংলাদেশ!!! জয়তু নতুন প্রজন্ম!!!!
সংস্কৃতিগত এবং রাজনৈতিকভাবে এতো সমৃদ্ধ একটা দেশ কীভাবে পাকিস্তানের মত একটা মাথামোটা, অরুচিশীল, অমার্জিত, যুদ্ধবাজ, উদ্ধত, দেমাগী, বর্বর, ধর্মান্ধ সংস্কৃতির, মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার একটা দেশের সাথে তেইশ বছর থেকেছে, সেটাই এক পরম বিস্ময় আমার। তার চেয়েও অপার বিস্ময় হচ্ছে, এই নিম্নরুচিসম্পন্ন, গ্রাম্য মোড়লের মত আচরণগত, দিন দিন অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যাওয়া দেশটার প্রতি এখনো কিছু মানুষের প্রেমপিরিতির বাহার দেখে। কী অবলীলায় না তারা ভালবাসে তাদের পাকি ভাইদের, কী অবলীলায় না তারা গদগদ প্রেমে মত্ত হয় তাদের সাথে। আমি শুধু অবাক বিস্ময়ে দেখি আর শুধু ভাবি, কীভাবে পারে? কীভাবে এরা এই কাজটা করতে পারে?
এদের কি একবারো মনে হয় না একাত্তরের কথা? একবারো কি মনে পড়ে না তিরিশ লাখ মৃত স্বজনের কথা? একবারো কি এদের সামনে এসে দাঁড়ায় না সেই সব আত্মত্যাগী শহীদেরা? স্মৃতিতে কিংবা স্বপ্নে? কিংবা মনের আয়নায় ক্ষণিকের ভুলে? সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ মা বোনের কথাও কি মনে পড়ে না তাদের? কি নির্মমতা দিয়ে, কি পরিমাণ নিষ্ঠুরতা দিয়ে, কি পরিমাণ লালসার তরল ঢেলে তারা অশুচি করেছে আমাদের মা-বোনদের? তাদের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে পিশাচের মত, সব স্বপ্নকে বুটের নীচে পিষে পিষে। সেই সব বীরাঙ্গণারা কি একবারো আসে না এদের মনোভূমিতে? একবারো কি কোনো বীরাঙ্গণা তাদের কাছে এসে অশ্রুসজল চোখে বলে না, বাবারা, আমাদের কষ্টগুলো কি তোমাদের একটুও পোড়ায় না? কি করে পারো আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে দেওয়া মানুষদের ভালবাসতে? আমরা কি তোমাদের কেউ না? এতই পর?
যে সব তরুণেরা পাকিস্তানের খেলার সময় আমাদের মাথা গ্লানিতে হেট করে দিয়ে পাকিস্তানের রঙিন পতাকা গালে আঁকে, চাঁদ-তারার কুৎসিত পতাকা আন্দোলিত করে স্টেডিয়ামে নাচানাচি করে, যে তরুণীটি আফ্রিদির সান্নিধ্য পাবার জন্য, তার বাহুলগ্না হবার জন্য মরিয়া হয়ে “ম্যারি মি, আফ্রিদি” বলে শরমহীন হরমোনের প্রদর্শনী ঘটায়, তারা কি একবারও ভাবে না এসব কথা? একবারো কী ভাবে না শহীদদের কথা? বীরাঙ্গণাদের কথা? বনে জঙ্গলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করা সেই সব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা? এগুলো করার সময় একবারো কি তাদের মনে পড়ে না যে, একদা এই মাঠেই ক্রিকেট খেলতো দুজন স্বপ্নবাজ তরুণ। জুয়েল আর মুশতাক। শুধুমাত্র আমাদের কারণে, দেশের কারণে ক্রিকেটের মাঠ ছেড়ে বিপজ্জনক রণাঙ্গণে গিয়েছিল তারা। আমাদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের একটি নিজস্ব দেশ দেবার উদ্দেশ্যে ব্যাট আর বল হাত থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল তাঁরা। তার বদলে হাতে তুলে নিয়েছিল রাইফেল আর গ্রেনেড। জুয়েল আর মুশতাককে এই পাকিস্তানিদের পূর্বপুরুষেরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এসব কি একবারও মনে পড়ে না এই সব কুলাঙ্গার বাঙালিদের? একবারো কি এদের মনে পড়ে না গগন নামের একটা নিরীহ ছেলের কথা? দেশ থেকে বহু দূরে, সুদূর বেলজিয়ামে বাংলাদেশ নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেছিল একদল পাকিস্তানি। গগন, আমাদের প্রিয় গগন, নিরীহ নির্বিরোধী একটা ছেলে, সহ্য করতে পারে নি দেশের সেই অপমান। প্রতিবাদ করেছিল সে সেই সব বাজে কথার। এই অপরাধে বেলজিয়ামের রাস্তায় গগনকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরেছিল পাকিস্তানিরা দলবেঁধে। এই যে এতো কিছু, এতো রক্তের দাগ, অপমান, অত্যাচার, নির্যাতন, এতো কিছুর পরেও পাকিস্তান প্রেম থাকে কী করে কিছু মানুষের মধ্যে? এই ব্যর্থতা আসলে কাদের? তাদের নাকি আমাদের?
পাকিস্তানপ্রেমী বাঙালিদের বলছি। দয়া করে আপনাদের মেরুদণ্ডহীনতা, নির্লজ্জতা, চাটুকারিতা, ভিন্নদেশের প্রতি গদগদ প্রেমময়তা দিয়ে আমাদের আর অপমান করবেন না। যদি কারো পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উদ্দাম নাচানাচি করার ইচ্ছা থাকে, যদি কারো পাকিস্তানি সুদর্শন আর সুঠাম ক্রিকেটারদের কণ্ঠলগ্না হতে প্রবলভাবে ইচ্ছা করে, যদি কারো পাকিস্তানিদের সাথে উর্দুতে বাতচিত করার খায়েশ থাকে, সোজাসুজি পাকিস্তানে চলে যান। মন-মনন পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করে দিয়ে, শুধু দেহটাকে বাংলাদেশে রেখে লাভটা কী? আপনাদেরও এতে কোনো লাভ নেই, আমাদেরও লাভ নেই। দুই পক্ষেরই ক্ষতি।
একাত্তর সালে জামাত যে সব অপকর্ম করেছে, তাতে এই সংগঠনের অস্তিত্ব বিলোপ হয়ে যাবার কথা ছিল স্বাধীনতার পরপরই। কিন্তু আমাদের নেতৃতের ব্যর্থতার কারণে তা হয় নি। বরং দিন দিন জামাত পুষ্ট হয়েছে। অস্ত্রশস্ত্রে নিজেদের সজ্জিত করেছে সশস্ত্র ইসলামি বিপ্লব করার বাসনায়। জামাত শিবির বাংলাদেশে কী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তা আশির দশক থেকে যাদের স্মৃতি আছে তাদের জানতে আর বাকি নেই। একে প্রতিহত করার জন্য অনেক সময় সশস্ত্র প্রতিরোধও করা হয়েছে। কিন্তু জামাত-শিবিরের উত্থান ঠেকানো যায় নি তাতে করেও। বিষফোঁড়ার মত উঠে এসেছে চামড়া ভেদ করে। তবে এখন ভিন্ন ইতিহাস। জামাত কাহিনি এখন শেষপ্রান্তে। এই সংগঠনের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে। সেই আশির দশক থেকে জামাতের সশস্ত্র আগ্রাসনকে আমরা সশস্ত্রভাবে প্রতিহত করার যে চেষ্টা আমরা করেছি, এখন বোঝা গেছে যে, ওটা ছিল ভুল পদ্ধতি। চেতনার বিকাশ না ঘটিয়ে শুধু অস্ত্র দিয়ে মৌলবাদকে প্রতিহত করা যায় না। কারণ তারা অস্ত্রে আমাদের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী, আচরণে আরো বেশি আক্রমণাত্মক। শাহবাগ আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়েও ভয়ংকর আস্ত্র নিয়ে এসেছে। প্রতিটা বাঙালির হৃদয়ে শুদ্ধ চেতনার বিকাশ ঘটিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে নতুনভাবে সামনে নিয়ে এসেছে,সবার হাতে হাতে নয়, দেশপ্রেমের স্নিগ্ধ মোমবাতি জ্বেলে দিয়েছে সবার অন্তরের ভিতরে। আর এতে করে বহুকাল পরে মানুষ জেগে উঠেছে, ঘৃণাভরে তাকিয়েছে জামাতিদের প্রতি। কোটি কোটি মানুষের ঘৃণার চাপ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। জামাতের মত দানবও এই ঘৃণার সুনামিতে ভেসে যাচ্ছে অথই সাগরে। মরার আগে মরণ কামড় দেবে হয়তো, কিন্তু মৃত্যু অনিবার্য। আমরা ওদের মূল স্রোত থেকে আলাদা করে দিয়েছি। আর কোনোদিনই তাদের পক্ষে মুল স্রোতে আসা সম্ভব হবে না। ছোট্ট একটা বাচ্চাও এখন জানে রাজাকার কী, তাদের কী প্রাপ্য। কাজেই, আর কদিন পরেই জামাত শিবির যে ইতিহাস হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমার অন্তত কোন্নো সন্দেহ নেই। মুসলিম লীগ বলে এখন যেমন কিছু নেই, জামাত শিবির বলেও আর কিছু থাকবে না এই বাংলাদেশে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মাঝে, এমন কি ছোট ছোট বাচ্চাদের চোখেও রাজাকারদের প্রতি যে ঘৃণার আগুন আমি দেখলাম এ কদিনে, এই আগুনের তেজ এড়ানো জামাতিদের র্কম নয়। অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের আর অস্ত্র না ধরলেও চলবে আর। তুই রাজাকার বলে, এর সাথে যে ঘৃণা ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে, ওতেই মরণ বিষ মেশানো আছে জামাত শিবিরের জন্য।
সারা দেশের মানুষকে এক সুতোয় বেধে যেভাবে এক জমিনে এনে ছেড়েছে শাহবাগ, তার তুলনা মেলা ভার। মানুষের সাথে মানুষের এমন সম্মেলন এর আগে ঘটেছে শুধু একাত্তরে। তবে এবারের আন্দোলন বড় অদ্ভুত। মানুষের সাথে মানুষের সম্মিলনে, মানুষের সাথে মানুষের হাতের বন্ধনে, মানুষের সাথে মানুষের কাঁধের মিলনে যে অমিত শক্তি সঞ্চারিত হয়, যে অমিত বিক্রম তৈরি হয়, যে উন্মাদনার জোয়ার আসে তা অবিশ্বাস্য। মাত্র কিছুদিন আগেও কেউ কল্পনা করতে পারে নি যে, মৃত, শুষ্ক নদীতে এমন ভরা যৌবন আসবে। তীব্র জোয়ারে ভেসে যাবে চারিপাশ। কল্পনারও অতীত সব অদ্ভুত সৌন্দর্যময় কর্মসূ্চী আসবে একের পর এক, আর গোটা দেশ এক হয়ে গিয়ে সফল করে তুলবে সেই সব কর্মসূচী। নেতা কে হবে তা নিয়ে কামড়াকামড়ি নেই। যে যোগ্য সেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। ছেলে না মেয়ে, কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামচ্ছে না। যোগ্য নেতার পিছনে স্লোগান দিচ্ছে সবাই সমস্বরে। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, সবাই একাকার হয়ে গিয়েছে এই আন্দোলনে। বাবার ঘাড়ে চড়ে পিচ্চিবুড়ো আসছে বিশাল ভাব নিয়ে, কিশোরী আসছে বীরদর্পে জনকের হাত ধরে, স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা আসছে দল বেধে, আসছে মাদ্রাসা থেকে ছাত্র-শিক্ষকেরারা, জড়ো হচ্ছে পাহাড়ি ছাত্ররাও। বৃদ্ধা আসছে নাতিকে নিয়ে। গর্ভবতী মা আসছে অনাগত শিশুকে নিয়ে, যেন চেতনার এই জাগরণ সঞ্চারিত হয় তার গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে, সদ্যবিবাহিতা তরুণী চলে আসছে স্বামী অফিস যাবার পরে লুকিয়ে। কোনো মা হয়তো নিয়ে আসছেন বাসার সব পুরোনো পত্রিকা, তার সন্তানেরা এগুলো মাথায় দিয়ে ছায়ার পরশ নেবে বলে। ভিখিরি তার জমানো সব টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাওয়াচ্ছে আন্দোলনরত মানুষদের, কোনো কোনো রিকশাওয়ালা টাকা নিচ্ছে না শাহবাগ অভিমুখী মানুষের। যে টোকাই লিখতে জানে না, সেও চক পেন্সিল দিয়ে অন্যের লেখা অনুকরণ করে দিয়ে আসছে রাজাকারদের বিচার চাওয়ার স্বাক্ষর ব্যানারে। লীনা রহমান তাঁর ফেইসবুকে লিখেছেন,
গতকাল একটা কাহিনি শুনলাম বন্ধু মুন্নার কাছে… ওরা একটা ব্যানার নিয়া বসছে আজিজের সামনে। অনেকেই স্বাক্ষর করতেছিল সেটাতে… এক দুই বছরের পিচ্চি, সে খালি “অ” লেখা শিখছে। সেই পিচ্চি ঐ “অ” ই লেইখা গেছে ব্যানারে… এইটাই ওর প্রতিবাদ!!!
এই হচ্ছে আন্দোলন! এই হচ্ছে আলোর ঝর্নাধারা!! এই হচ্ছে আগুনের ফুল!!! এই হচ্ছে অর্জন!!!!
আজ বাংলাদেশে আগুনের ফুল দুপাশে ফুটিয়ে যে আলোর স্রোতস্বিনীর জন্ম হয়েছে, তা বহমান থাকুক আজীবন। সকল আঁধার যেন দূর হয়ে যায় আলোকের এই ঝর্ণাধারার ঝিলিমিলি স্রোতে।
————————————————-
ঝালমুড়ি চানাচুর
একঃ
সারা বাংলাদেশে প্রতিটা মানুষের একটা করে মোমবাতি জ্বালানোর খবরে, আর শাহবাগে লক্ষ লক্ষ মোমবাতি জালানোর যে শৈল্পিক এবং শক্তিশালী ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম আমি। ফেইসবুকে একটা একটা স্ট্যাটাস লিখতে গিয়েছিলাম আমি। লিখতে গিয়ে দেখলাম কিছুটা বড় হয়ে গিয়েছে। তাড়াহুড়োর কারণে অনেক টাইপো ছিল। ঠিক করতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না। আমাদের সাইফুল জানালো যে, স্ট্যাটাস সম্পাদনা করা যায় না। সন্ধ্যায় হঠাত করে মনে হলো যে, ওখানে না যাক, আমার ফাইলতো শুদ্ধ করতে পারি আমি। এই শুদ্ধ করতে গিয়ে সেই ছোট লেখাটা মোটামুটি বেশ বিশাল হয়ে গেলো। আর হয়েই যখন গেলো, তখন মুক্তমনা ছাড়া কোথায়ই বা পোস্ট করবো?
দুইঃ
মুক্তমনা থেকে সরে আছি আমি বেশ কিছুদিন ধরেই। এখানে যাতায়াত নেই বললেই চলে। চোখের আড়াল হলেই নাকি মনের আড়াল হয়। সেরকম হয়তো হয়েও গিয়েছে। কিন্তু এর মাঝেও কেউ কেউ মনে রাখে। কেন যেন, সম্পূর্ণই বিনা কারণে। এরকমই একজন অর্ফিউস। কয়েকদিন আগে আমাকে অনুরোধ জানিয়েছিল এই আন্দোলন নিয়ে একটা লেখা লিখতে। যদিও প্রাথমিকভাবে এই লেখা সেই অনুরোধে নয়, তারপরেও লেখাটা বড় করতে গিয়ে বার বার আমার অর্ফিউসের কথাই মনে হচ্ছিল। আমার এই লেখাটা তাই অর্ফিউস নামের সেই চমৎকার ছেলেটির জন্য উৎসর্গীকৃত হলো।
তিনঃ
রায় ঘোষণার পরে রাজাকার কাদের মোল্লা এক বিরাট ভুল করে ফেলেছিল। ফাঁসি হয় নি সেই আনন্দেই হয়তো। দুই আঙুল তুলে বিজয় চিহ্ন দেখিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে। পরের ঘটনাতো আমরা এখন চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি। পৃথিবীর ইতিহাসে সেরা ব্লান্ডারগুলোর তালিকা করলে এটা শীর্ষে থাকবে নিঃসন্দেহে। 🙂
কাদের মোল্লার এই ভুল নিয়ে একটা ছড়া স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম ফেইসবুকে। এখানে তুলে দিচ্ছি সেটা।
রায় শুনে খুশি মনে মোল্লা কাদের,
তুলেছিল দু’ আঙুল দেখাতে যাদের।
চটে গিয়ে তারাই ডাকে মহাসমাবেশ,
রাজাকারের বংশ করবে যে নিকেশ।
শাহবাগের মোড়ে রচে ভাই ইতিহাস,
ইতি হলো জামাতের গলায় দিয়ে ফাঁস।
চারঃ
আমার এক পুরোনো ছাত্রী থাকে রাঙামাটিতে। নাম সীমা। ওর একটা ছোট ছেলে আছে। সীমা আমার এই স্ট্যাটাসে মন্তব্য করতে গিয়ে বলে যে, আমার ছেলেও স্লোগান দেয় ক তে কাদের মোল্লা তুই রাজাকার, তুই রাজাকার তারপর আমাকে বলে খ তে কি? শেষে নিজেই বলে গ তে গোলাম আজম তুই রাজাকার, তুই রাজাকার। আমি ওকে বলি যে, খ তে খালেক মজুমদার, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার, এটা শিখিয়ে দাও। ও বলে যে, দেব শিখিয়ে স্যার, আমার ছেলে অনেক খুশি হবে।
পাঁচঃ
আমার ফেইসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে রানা রায় নামের এক ভদ্রলোক আছেন। এই আন্দোলন নিয়ে তিনি দারুণ উচ্ছ্বসিত। অসংখ্য স্ট্যাটাস দেন প্রতিদিন, সেই সাথে আন্দোলনের দারুণ দারুণ সব ছবি। এই ছবিটা তাঁর ওয়াল থেকে নেয়া। ছবিটাকে আমি আমার ল্যাপটপের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে রেখে দিয়েছি তার অনুমতি ছাড়াই।
আমার একটাই মাত্র সন্তান। ছেলে। মেয়ের জন্য বুকের মধ্যে সুপ্ত একটা হাহাকার তাই রয়ে গিয়েছে সবসময়ই। ছবির এই অনিন্দ্যসুন্দর নিষ্পাপ মেয়েটাকে দেখে সেই হাহাকার আরো তীব্র হয়েছে। আমার এরকম পরীর মত একটা কিশোরী কন্যা থাকলে, আর আমি দেশে থাকলে, আমার মেয়েটাও হয়তো তার বাবার হাত ধরে, লাল সবুজের পোশাক পরে, কপালে বাংলাদেশের পতাকার ব্যান্ড জড়িয়ে শাহবাগের মোড়ে যেতো। তারপর ডাগর দুটো নিষ্পাপ চোখে আগুন জ্বেলে, ফুটফুটে কচি মুখে তীব্র কাঠিন্য এনে, বুকের সবটুকু ভালবাসাকে ফুসফুসে জড়ো করে, মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে আরো অসংখ্য মানুষের সাথে গলা মিলিয়ে স্লোগান দিত, জয়য়য়য় বাংলা।
ফরিদ ভাই, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আমার এবং আমার মত অনেকের মনের কথাগুলো বলে দেয়ার জন্য।
শাহবাগের আলোর মিছিলে যাবার সুযোগ আমার হয়েছে সাত ও আট ফেব্রুয়ারি। মনে হয়েছে কত যুগ পর পুনর্জন্ম হলো আমার। জামায়াত শিবির পরিচালিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নামক মাদ্রাসায় আমাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত। পুরো সময়টাই ছিল জামায়াত শিবিরের সুবর্ণযুগ। তাদের তলোয়ারের নিচ দিয়ে প্রাণ-হাতে নিয়ে কোন রকমে পাস করে আসা ছাড়া আর কিছুই করার ক্ষমতা ছিল না আমার এবং আমার মত আরো অনেক নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালির। রাজাকার আলবদরদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়ার স্বপ্ন দেখতেও ভয় পেতাম। শাহবাগ আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে প্রাণ খুলে দাবি জানাতে। ফাঁসির দাবি। আমি নির্ভয়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করে বলতে পেরেছি – সাকা চৌধুরি – তুই রাজাকার। কাদের মোল্লা – তুই রাজাকার। গোলাম আযম – তুই রাজাকার। সাঈদী – তুই রাজাকার। নিজামী – তুই রাজাকার।
শাহবাগের তারুণ্য – তোমাদের অভিবাদন জানাই।
আগুনের ফুল নামে হানান আশরাবির একটা বই পড়েছিলাম খুব সম্ভবত জনকন্ঠে। তবে এই লেখাটির টাইটেল হিসেবে যথার্থ হয়েছে, ফরিদ ভাই।
আমি একটি ৫ বছরের বাচ্চাকে দেখেছি। সে ক্রমাগত শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার বলেন, বাচ্চাদের এই জিনিস বা এইসব শ্লোগানের ভিতর নিয়ে যেয়ে অসুস্থ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে না কি? কিন্তু যে বাবা তার বাচ্চাকে নিয়ে যান, আমাদের তার অনুভূতি বুঝতে হবে আগে। ঐ বাবার ভিতর কিন্তু প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। উনি দেখেছেন, যারা তার ভাইকে মেরেছে, বোনকে ধর্ষন করেছে, তারাই আবার গাড়িতে পতাকা উড়ানোর সাহস দেখিয়েছে, যা ঘটেছে এ দেশেরি এক শ্রেণীর বস্তাপচা রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার রাজনীতির কারণে। এই বাবা নিজে পারেননি প্রতিশোধ নিতে, কিন্তু তা্র পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে এই প্রতিশোধের বীজ রোপিত করে যেতে চান।
আপনার আবেগঘন লেখায় মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না, ফরিদ ভাই! শুধু একটাই অনুযোগ, আপনি আরও লিখেন না কেন? আপনার লেখা আসতে এগারটি দিন পার হয়ে যেতে হবে?
ফেব্রুয়ারির রক্তিম শুভেচ্ছা!
ঝালমুড়ি চানাচুর এর তিন, চার ও পাঁচ হৃদয় ছুঁয়ে — ছিঁড়ে—- ছেয়ে গেছে। গতকাল চট্টগ্রাম থেকে এসে শাহবাগ গিয়েছিলাম। এমন অনেক মেয়েদের দেখলাম স্লোগানে স্লোগানে শাহবাগের বাতাস আর মানুষকে মুখরিত করছে। গর্ব অনুভব করেছি।
এ বিষয়ে অসংখ্য লেখা বেরিয়েছে, তবে আবেগ এবং বাস্তবের এমন অপূর্ব মিশেল এখনো পাইনি।
– সাহিত্যের প্রয়োযনেই মনে হয় বিস্মিত হবার ভানটা করতে হল :)) ? পাকি প্রেমের কারনটা আপনি আসলেই জানেন না আমাকে বিশ্বাস করতে বলেন? আর প্রেমটা কি পাকি প্রেম নাকি আরো বড় কিছুর প্রেম?
– লাখ কথার এক কথা বলেছেন। আমার কাছে কাদের মোল্লা, নিজামী পাজামি এসব কিছু কীটের ফাঁসী হবার তেমন বড় গুরুত্ব নেই। সুবিচার দরকার, হতেই হবে, হবেই। আমার কাছে এই আন্দোলনের মূল প্রাপ্তির দীর্ঘদিনের অনুপস্থিত এক সুপ্ত জাতিসত্ত্বার ব্যাঘ্র গর্জন, আমাদের মিউ মিউ সুরে জামাতিরা দিনে দিনে দুধে ভাতে পরিপুষ্ট হতে পেরেছে, মিশে যেতে পেরেছে সর্বসাধারনের মাঝে। কাদের মোল্লার ফাঁসীর রায় হয়ে গেলে এই জাগরন আর পরিষ্কার স্বতস্ফূর্ত মেসেজ মনে হয় না পিশাচকূলের কাছে এত সফলভাবে পৌছানো যেত বলে। ধন্যবাদ সেই বিচারপতিকে।
এক ডজন কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের চাইতে এই গনজাগরনের মূল্য অনেক অনেক বেশী।
অতীতে বহুবার মনে হয়েছে যে আমরা কি এতই হীন জাতি যে ‘৭১ এর মুখচেনা পিশাচদের ঘৃনা করার মতও মানসিক শক্তি আমাদের নেই?
এই গনজাগরনের সংবাদে আমার কিছু হাইপোথিটিক্যাল চিত্র মনে হয়। ‘৭৫ সালে কি আমাদের আগের প্রজন্ম পারত না এমন কিছু করে দেখাতে? কেন তারা জিজ্ঞাসা করতে পারেনি আওয়ামী সরকার/মুজিব খারাপ হতে পারে, কিন্তু জয়বাংলা কেন নিষিদ্ধ হবে? কেন সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারদের ছেড়ে দিতে হব……?
আজকের বিএনপিতে কি বিবেকবান বলে কেউ নেই? ছাত্রদলের নবীন সদস্যদের মাঝে কেউ নেই যারা দলের মুখে জুতো মেরে মিশে যেতে পারে সাধারনের মাঝে? কেন তারা তাদের নেতাদের জিজ্ঞাসা করে না জয় বাংলা কেন আওয়ামী লীগের দলীয় শ্লোগান হতে যাবে? রাজাকারদের বিচার কেন আওয়ামী লীগের দলীয় দায় হতে যাবে?
আমি কিছুতেই বুঝছি না বিএনপি সামনের নির্বাচনে ঠিক কোন শক্তির ভরসায় আছে। জনতার শক্তির ভরসায় নেই এটা পরিষ্কার। এত বড় গনজাগরনে নিজেরা না মিশে বিদ্বেষপূর্ন নানান উক্তি করে যাচ্ছে তাতে বোঝা যায় যে এরা জনগনের মতের কোন রকম তোয়াক্কা করছে না। কেমন যেন শংকার ছায়া পাই।
আওয়ামী নেতাদেরও উচিত জনতার মঞ্চে উঠে অতীতে জামাতের সাথে মাখামাখির অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়া। এইই শেষ সুযোগ।
@আদিল মাহমুদ,ফরিদ ভাই এর লেখাটির প্রশংসা করলে কেনো যেনো নিজেকে খেলো মনে হবে। প্রতিদিনই ঘন্টায় ঘন্টায় আফসোস লাগে কেনো এই সময়টিতে দেশে থাকতে পারলাম না বলে। লেখাটি পড়ে অনেক আগে পড়া বাংলায় একটা রাশিয়ান বই এর কথা মনে পড়লো, নামটা বোধহয় ছিলো ‘আগুনের ফুলকি’।
রাশিয়ান ভাষায় ফুলকি কে বলে ‘ইস্ক্রা’।
বিপ্লবের ফুলকি যে কখন কোথা থেকে আসবে এটা কখনোই আগে থেকে বলা যায় না।
“পাকি প্রেমের কারনটা আপনি আসলেই জানেন না আমাকে বিশ্বাস করতে বলেন? আর প্রেমটা কি পাকি প্রেম নাকি আরো বড় কিছুর প্রেম?”
পাকি প্রেমের উৎস কি কেবলই ইসলাম? বাংলাদেশী পাকিপ্রেমীরা কি কখনো আফ্রিকান মুসলিমদের জন্যে এরকম উদ্বেলিত হবে। উদ্বেলিত হবে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার প্রতি? এই ধরনের পাকিপ্রেমীদের মধ্যে উম্মাহ চিন্তা ছাড়াও নৃতাত্বিক জাতি গত হীন মন্যতা রয়েছে পূর্নমাত্রায়।
@সফিক,
ছেলেবেলায় আমিও রুশ শিশু সাহিত্যের খুব ভক্ত ছিলাম, এখনো সেসব বই পেলেই সাধ্যমত যোগাড় করে ফেলি। রুশ বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকগুলিই ভাল কিশোর উপন্যাস আছে। আগুনের ফুলকির নাম দেখেছি, পড়া হয়নি কখনোই।
পাকি প্রেম বিষয়ে আপনার কথা ঠিক। আমি মোটা দাগে বড় কারনটাই ইংগিত করেছিলাম। তবে এরপর আঞ্চলিক/নৃতাত্ত্বিক ব্যাপার আসবে ঠিকই। বিদেশে বাংগালী মুসলমান মুসলমান খুঁজে দোস্তি করলে পাকির সাথেই করে, আরবদের সাথে তার দোস্তি হয় না। এমনকি হায়াদ্রাবাদী মুসলমানদের সাথেও সেভাবে দোস্তি হয় না।
এটা শুধু বাংগালী মুসলমানদের বেলাতেই নয়, অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের বেলাতেও দেখা যায়। যেমন আরব অঞ্চলের মুসলমানরা বাংগালী মুসলমানদের চেয়ে অন্যান্য আরবভাষী মুসলমানদের বেশী আপন মনে করবে। ইন্দোনেশীয়/মালয়েশীয় মুসলমানেও নিশ্চয়ই উপমহাদেশীয় বা আফ্রিকীয় মুসলমানের আগে তাদের অঞ্চলের মুসলমানদেরই আপন ভাববে বেশী। এটাই স্বাভাবিক।
তবে বাংগালী পাকি ব্যাপারটাতে এসবের বাইরেও জাতিগত হীনমন্যতার ব্যাপারও আছে। বাংগালী এখনো নিজের জাতিসত্ত্বার পরিচয় নিয়ে দ্বিধা বোধ করে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতার আবেশ কেটে যেতেও বেশীদিন দেরী হয়নি, কারন ধর্মীয়ভাবে সে যা শিক্ষা যুগ যুগ ধরে পেয়ে এসেছে এবং আসে সেই মূল্যবোধের সাথে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ চরমভাবে সাংঘর্ষিক, ছাগু বা নবীন প্রজন্মের রাজাকার প্রজাতির জন্ম তাই খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ব্লগে ব্লগে আলোচনা পড়লেই দেখা যাবে যে প্রজন্ম সমাবেশের একটি দাবী ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে তুমুল বিতর্ক ধীরে ধীরে মাথা ছাড়া দিচ্ছে। এ তিক্ত বাস্তবতার সম্মূখীন একদিন হতেই হবে।
কোন সন্দেহ নেই। আর ঠিক তাই,
কুত্তা ছেঁড়া বোনের কথা ভুলিস নারে ভুলিস না
রাজাকারের শাস্তি ছাড়া ঘরে তোরা ফিরিস না।
চাইনা কোন দলের নেতা চাইনা কোন বাচাল রে
ধর্ষিতা মা কান্দে আমার ভাত চায় না শাস্তি দে।
খুলির ভিতর গভীর শিকড় স্বাধীনতার চেতনার
শোধ তুলব এবার সবাই অপমানের বেদ্নার।
১৯৪৭-এ যখন ভারত ভাগ হয় তখন বাঙ্গালি মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববঙ্গ পাঞ্জাবিদের তুলনায় এমন কোন তথাকথিত ‘সংস্কৃতিবান’ ছিলো না । বরং মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রধান পীঠ ছিলো বাংলা, পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য বাঙ্গালি মুসলিম সম্প্রদায়ই দায়ী । পাঞ্জাব-সীমান্তপ্রদেশ-সিন্ধ ব্রিটিশ ভারতীয় রাজনীতির ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে । বাঙ্গালি রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রগতিশীলতার পথ নির্ধারিত হয়েছে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে, ১৯৪৭-এর আগে নয় । অন্যদিকে সীমান্ত প্রদেশের খুদাই খিদমতগার এবং বেলুচিস্তানের স্বাধিনতা আন্দোলন যা বাংলাদেশের চেয়েও পুরনো এগুলোকে ক্রমাগত দমন ও দলন করা হয়েছে । ৭০ দশকে সিন্ধি ভাষা আন্দোলন কিছুটা সাফল্য পেয়েছে । পাকিস্তান প্রশাসনের খুব কাছের ভৌগলিক অবস্থানে অবস্থিত হলে আজকে বাংলাদেশের অবস্থা হতো বর্তমান পাকিস্তানের অন্য প্রদেশগুলোর চেয়েও খারাপ । বাঙ্গালি মুসলিমরা উপমহাদেশের সবচেয়ে ধার্মিক মুসলিম, যার কারণে এভাবে তাদেরকে এক্সপ্লয়েট করার প্রবণতাও ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে বেশী, যেমন পীর-মাজার ব্যবসা কিংবা ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাগের রাজনীতি । পাকিস্তানের জনগণের মৌলিক অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন এবং পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী যা দশকের পর দশক পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ জেনোসাইড চালিয়ে আসছে এবং অনেকগুলো সামরিক শাসনের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি নিষিদ্ধ অবস্থায় রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে পাকিস্তানের জনগণের প্রতি অবশ্যই সহানুভূতি জানানো উপমহাদেশের সকলের কর্তব্য বরে মনে করি । বাঙ্গালিরা পাকিস্তানের কেন্দ্র থেকে দূরে থাকায় অধিকার অন্দোলনগুলো যত অল্পদিনে সফল করতে পেরেছে পাকিস্তানের মানুষ তা পারেনি, বরং তারা অনেক বেশি দিন নির্যাতিত হয়েছে এবং হচ্ছে । উপমহাদেশের জনগণের সংস্কৃতি সম্পর্কে না জেনে তাদের সম্পর্কে অশ্লীল-বিরূপ মন্তব্য করার নিচতা লেখক পান কি করে ? লেখকের লেখায় উপমহাদেশের চিরন্তন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ধৃষ্টতা স্পষ্ট । খামাখা তর্ক করে লাভ নেই । লেখকের ১৯৪৭ পূর্বাপর সংস্কৃতি ও ইতিহাস জ্ঞান কতখানি তা স্পষ্ট । ভবিষ্যতে এর ওপর আর কোন কিছুর জবাব দেয়ার রুচি আমার নেই । উপমহাদেশের স্থান-ভাষা-বিশ্বাস নির্বিশেষে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন ।
@khurshid, এইখানে ইতিহাস কপচাইয়েন না।ইতিহাস কপচানোর অন্য জায়গা আছে, এই ব্লগেই। এই লেখাটা গনজাগরন নিয়ে লেখা এইখানে আপনার প্রিয় পাকওয়াতানের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না।আচ্ছা এত পাকি প্রীতি কেন আপনার? আপনিও কি একজন ছদ্মবেশী মানবতা বাদী?
@khurshid,
আপনার আপত্তি ফরিদ আহমেদের নীচের মন্তব্যটিতেঃ
উপরের মন্তব্যটিতে ফরিদ আহমেদ পরিস্কারভাবে ৪৭-পরবর্তী পাকিস্তান নামের দেশ আর তার নেতা-নীতিনির্ধারকদের কথা বলেছেন। এখানে পাকিস্তান মুসলিম শাসনের আগে কি ছিল তা টেনে আনার প্রয়োজন নেই কেননা তা ভারতবর্ষের সাধারণ ইতিহাস। সত্যি কথা বলতে কি বর্তমানের পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও ফরিদ আহমেদের মন্তব্য সমানভাবে খাটে।
পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ আর সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা ভারত থেকে আসেনি; তারাও পাকিস্তানি। কাজেই বর্তমানের লেজেগোবরে অবস্থার দায়ভার পাকিস্তানিদেরই নিতে হবে। আর বাংলাদেশের সাথে তুলনার কিছু নেই, নিজেদের তুলনা করুন ভারতের সাথে, ওরা প্রোব পাঁঠায় চাঁদে আর আপনারা সন্ত্রাসী পাঠান তাজে। আমেরিকার পদলেহন করে এত ভিক্ষা নেন তারপরও কাছা খোলে খোলে অবস্থা। আপনাদের রুপীর মান বাংলাদেশের টাকার চেয়েও কম। আপনারা এত সংস্কৃতিবান, কিন্তু মুক্তারী মাই-র মত ঘটনা আপনাদের দেশেই ঘটে। আমার মনে হয় আপনার আর কথা না বাড়ানোই উত্তম।
পড়ুন ওরা প্রোব পাঠায় চাঁদে আর আপনারা সন্ত্রাসী পাঠান তাজে। 🙂
মনের আড়াল হয় না।
কথার জাদুকর ফিরে এসেছে আমদের মাঝে।
প্রায় সময়েই দেখে এসেছি আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষ সহজে দলীয় গন্ডীর বাইরে যেতে পারেন না। তারা নিজ দলের মন্দ কাজের সমালোচনা কিংবা বিরোধী দলের ভাল কাজের প্রশংসা থেকে সচরাচর বিরত থাকার চেষ্টা করেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কাছে দেশ ও দশের চেয়ে দল আর নেতারাই বড় হয়ে দেখা দেয়। শাহবাগে কোন দলীয় লেজুড়বৃত্তি না করে কিছু খাস ও বেশীরভাগ আমজনতা দেশের স্বার্থ আর নিজেদের মর্যাদাকেই প্রাধান্য দিয়ে এক হয়ে দাঁড়িয়েছেন, এটাই বড় আশার কথা।
রাতারাতি সার্বজনীন মানসিকতার পরিবর্তন আমি আশা করি না, তবে আমি নিশ্চিত এধরনের ঘটনা জনগনকে বিশেষ করে আমাদের অগ্রণী তরুণ সমাজকে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাদের আসল শক্তি ও ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে। আর তা ইতিমধ্যেই আমরা ঘটতে দেখছি; লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি থেকে দূরে থাকা মেধাবী পড়ুয়া থেকে শুরু করে রাস্তার ভিখারী পর্যন্ত এক কাতারে সামিল হয়েছেন একটি সাধারণ গণদাবীকে কেন্দ্র করে।
যুদ্ধাপরাধীদের যথাযথ বিচার আর শাস্তির দাবীতে এই গণজাগরণ আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের জন্যও একটি সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে। অন্তর্জালে একজন মন্তব্য করেছেন, ভেতো বাংগালী ঠিক সময়ে জেগে ওঠে, এক মিনিট আগে না, এক মিনিট পরেও না। জনগন তো ঠিক সময়েই জেগে ওঠেছে, কিন্তু আমাদের নেতারা কি প্রস্তুত? সর্বসাধারণের প্রাণের এই স্পন্দন বোঝার ক্ষমতা আর এর প্রেক্ষিতে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেবার দূরদর্শিতা কি তারা দেখাতে পারবেন? আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর কথাই ধরা যাক। এখনো শাহবাগ নিয়ে তার মুখ থেকে তেমন কিছু শোনা যায় নি (দরকারী মুহুর্তে তার বাকসংযম ক্ষমতা প্রবাদ-প্রতীম!)। হয়তো তিনি এখনো জামাতের সহায়তায় নির্বাচন বৈতরণী পারাপারের জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত। তবে আমার মত স্বল্পবুদ্ধি মানুষের কাছে হিসাবটি অতি সাধারণ। তিনি শাহবাগে এসে বলুন যে আর কখনো জামাতের সাথে গাঁটছড়া বাঁধা নয়; একলাফে দেশপ্রেমিক জনগনের কাছে তার জনপ্রিয়তা আর সম্মান বেড়ে যাবে। পরবর্তী নির্বাচন জেতার জন্য তা যথেষ্ট হবে কিনা জানি না, কিন্তু আমাদের ইতিহাসে তিনি তার অবস্থান গৌরবোজ্জ্বল করে তুলবেন। জানি আমার এ আশা দুরাশা মাত্র, তবুও ভাবি হতেও তো পারে নয় মন ঘিয়ের জোগাড়!!
@মনজুর মুরশেদ,
সুন্দর লিখেছেন ভাই কিন্তু এই লাইনটা নিয়ে আমি আশাও করি না।৯ মন ঘিও জুটবে না, রাধাও নাচবে না।কাজেই আমার মনে হয় যে পরিবার তন্ত্রের অবসানের সময় এসেছে। নেতৃত্বে পরিবর্তন দরকার,কে নেতা হল সেটা বড় কথা নয়, যোগ্য লোকরাই নেতৃত্ব দেবে, আর সেখানে কোন আদর্শবাদের স্থান হবে না।তবেই সম্ভব অনেক কিছু বদল হওয়া, তবে আমিও রাতারাতি এই পরিবর্তন আশা করি না
@অর্ফিউস,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আপনার সাথে একমত। কেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হবেন জামাত সমর্থক? একটি পদ্মা সেতুর বিনিময়ে আবুলকে রক্ষা করা জরুরী কেন? কেন মানুষ বিনা বিচারে গুম হবে বা ক্রসফায়ারে মারা যাবে? কেন খালেদা-সাজেদার প্রভাবশালী পুত্ররা আইন ভেঙ্গে বিচার ব্যবস্থাকে কাঁচকলা দেখিয়ে পার পেয়ে যান? কেবলমাত্র একটি বিশেষ দলকে সমর্থন করি বলে এধরনের প্রশ্নগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাবার অবকাশ আর নেই। রাজনীতির গুনগত পরিবর্তন চাইলে দেশ আর জনগনের স্বার্থকে দল আর নেতার উপরে স্থান দিতেই হবে। মুক্তমনার মত একটি ফোরামে এই সাধারণ কথাগুলো বাহুল্য মনে হলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ এভাবে চিন্তা করেন না বা চিন্তা করলেও আপাতত এ নিয়ে কিছু করার নেই ভেবে নিস্ক্রিয় থাকেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীকে কেন্দ্র করে অন্তত কিছুটা হলেও এই গতানুগতিকতার বাত্যয় ঘটেছে।
@মনজুর মুরশেদ,
ঠিক বলেছেন ভাই। শুধু এইটুকুই কামনা করি যে, এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে।তবেই মুক্তির সম্ভাবনা আছে, না হলে সেটি সুদুর পরাহত।
আমি লেখাটির কিছু অংশের সাথে পুরোপুরি একমত নই । পাকিস্তান ‘অরুচিশীল, অমার্জিত, … ধর্মান্ধ সংস্কৃতি’র দেশ এটা সম্পূর্ণ ঠিক নয় । অরুচিশীল, অমার্জিত, ধর্মান্ধ সংস্কৃতি থেকে ভারত ও বাংলাদেশও মুক্ত নয় । বরং উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতার উৎস্য বর্তমান পাকিস্তানেই । উপমহাদেশের সবচেয়ে উন্নত সংস্কৃতির জন্ম পাঞ্জাব, গান্ধারা (সীমান্ত প্রদেশ), ময়েঞ্জোদাড়ো, হরপ্পা, শাকল, সুবাস্তু, তক্ষশিলা, পুরুষপুর যেমন, তেমনি মধ্যযুগে উত্তর ভারতের দিল্লী, আগ্রা, জৌনপুর, লক্ষ্ণৌ -এর মতো পাকিস্তানের লাহোর ও মুল্তান উপমহাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্মস্থান । ঋগ্বেদ থেকে কালিদাস, ইকবাল থেকে বড়ে গুলাম আলি, আর্য বৈদিক-সংস্কৃত ভাষার জন্মস্থান, উন্নত হিন্দোস্তানি (হিন্দী-উর্দু) সাহিত্য, পাঞ্জাবি – সিন্ধি – পাখ্তো সাহিত্য, বৈদিক ও সীখ ধর্মের জন্মস্থান, হিন্দোস্তানি ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীত ও স্থাপত্যরীতি – পাকিস্তান গর্ববোধ করতেই পারে । বরং হাজার বছরের সাংস্কৃতিক লীলাভূমি হিসেবে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে অনেক অনেক বেশি সমৃদ্ধ, উপমহাদেশের প্রথম সভ্যতার জন্মও সেখানে । অন্যদিকে বাংলা সংস্কৃতির জন্ম অনেক পরে, তাও পূর্ববঙ্গ কেন্দ্রিক নয় । আসলে পাকিস্তানের চেতনাগত অবনমনের জন্য মূলত ১৯৪৭ পরবর্তী ইসলামি রাষ্ট্র ও রাজনীতি দায়ী; অন্যদিকে ১৯৭১ বাংলাদেশকে দিয়েছে উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক চেতনা – যা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চেতনাকে শুধু পাকিস্তানের থেকেই নয়, ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের থেকেই এগিয়ে দিচ্ছে; মনে রাখতে হবে ‘১৯৭১’ উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে যা অনেকাংশেই উপমহাদেশের পুরোনো অধ্যায়কে ম্লান করে দিচ্ছে । এখানেই বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া – যা এখনো পুরোপুরিভাবে অর্জিত হয়নি ।
@khurshid,
আপনি যদি ভেবে থাকেন যে ফরিদ ভাই ৩৫০০ বছর আগের পাকিস্তান কে নিয়ে লিখেছেন তবে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই।সেক্ষেত্রে আপনি আর্য, বা তথাকথিত অনার্য( ভারতের স্থানীয় সভ্যতা) সভ্যতাকেও টেনে আনতে পারেন কারন পরবর্তিতে বহিরাগত আর্যরা এসেই স্থানীয়দের দাস বানিয়ে ফেলে।আর যেখানে ইতিহাস অনুসারে আর্য ব্যাপারটাই গোলমেলে এরা আসলে কারা বা কোথায় থেকে এসেছিল এর সঠিক কোন ইতিহাস নেই।কেউ বলে ইরান থেকে কেউ বলে ইউরোপ থেকে,কেউ ভাবে সাইবেরিয়া থেকে। অধুনা হিন্দুত্ববাদীদের দাবী যে আর্যরাই স্থানীয়; আর হরপ্পা সভ্যতা নাকি আর্য সভ্যতা;যদিও এর স্বপক্ষে কোন নির্ভেজাল প্রমান তারা হাজির করতে পারে নি। যাই হোক না কেন, ওই সময় বর্তমান পাকিস্তান অংশ কোনক্রমেই পাকিস্তান ছিল না কাজেই, ওইসব কথা বলে পাকিস্তানের সাফাই গাওয়া মানে, হয় আঁতলামী, আর না হয় পাকিস্তান প্রীতি।
আর যেহেতু আগের ওই অংশ কোনভাবেই পাকিস্তান ছিল না, কাজেই আপনার মন্তব্যের বাকি অংশ নিয়ে আর কিছু বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না।
@অর্ফিউস,
আরেকটি কথা জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে,ঋগ্বেদ থেকে কালিদাস বলতে কি বুঝাচ্ছেন? এটাকি ঋগ্বেদের আমল থেকে কালীদাসের আমলের কথা বলেছেন?সেক্ষেত্রে কালিদাসের কিছু রচনার নাম উল্লেখ করতে পারতেন।আর ঋগ্বেদের লেখক কে বলেন তো? এইসব প্রাগৈতিহাসিক জিনিসকে টেনে এনে পাকিস্তান কে গর্বিত করার অপচেষ্টা কেন?
@অর্ফিউস,
@khurshid, কি ভাই?
@khurshid,
প্রমাণতো হয়েই গেল উপমহাদেশের সভ্যতার লীলাভুমি পাকিস্তান! আর দেরি কেন? এবার যান, পাকিদের সুগঠিত, উত্থিত দন্ড মুখমেহন করেন গিয়ে।
(Y) (Y)
কি সব যে বলেন! আপনাকে ছাড়া মুক্তমনা…………ভাবা যায়!!?!
@মনজুর মুরশেদ,
(Y) ঠিক বলেছেন। ফরিদ ভাইকে আমি খুব মিস করি। আশা করি ফরিদ ভাই আবার নিয়মিত লিখবেন এখানে।
না হলে মুক্ত মনা পাঠকরা অনেক বেশি কিছু থেকে বঞ্চিত হবে। আশা রাখি শ্রদ্ধেয় ফরিদ ভাই আমাদের সবার কথা বিবেচনা করে আবার নিয়মিত ভাবে আমাদেরকে তার অসাধারন লেখাগুলো পাঠ করার সুযোগ করে দিবেন।
@অর্ফিউস,
অসাধারন ধাঁচের নতুন লেখাগুলো পাঠ করার সুযোগ করে দিবেন, অর্থাৎ আবার নিয়মিত লেখা লেখি করবেন।
@অর্ফিউস,
একমত (Y) ।
ফেইসবুকে আপনার স্ট্যাটাসগুলি সাজিয়ে বিবেক অনুভূতিতে দোল খাওয়া লেখা দেয়ার জন্য রইল অভিনন্দন। বিশেষ করে শুরুর দিকে পাকি প্রেম নিয়ে লেখাটা আমার মনের কোনে জমে থাকা খন্ড খন্ড অভিব্যক্তিগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রের মাত্রা দিয়েছেন। একটা বিষয় লক্ষ্য করার মত পাকি প্রেমে মাতোয়ারা এই মানুষগুলে মোটেই নিরক্ষর নয়, অশিক্ষিত নয়তো বটেই। গো আজম, সাকা, কাদের মোল্লা কিংবা ‘মেরী মি’ লেখা মেয়েটির কথাই ধরুন, ধরতে পারেন হাতে, মুখে, গালে পাকি পতাকার উল্কি আঁকা গ্যালারী ভর্তি উপচে পরা দর্শক গুলোর প্রতি। প্রত্যেই এরা উচ্চ শিক্ষিত, ক্ষমতাবান ধনী শ্রেণীর সন্তান। পাকিস্তান নামক দেশটির আনাচে কানাচের নিত্য দিনের ঘটনা প্রবাহ মিডিয়ার কল্যাণে নিশ্চই অজানা নয় তাদের। কী এমন দূর্লভ আদর্শে উজ্জীবিত পাকিস্তান রাষ্ট্রটি? দেশটির জন্মলঘ্ন থাকে এত সব ঘৃণ্য কর্মযজ্ঞের পরেও অপরিমেয় পাকি প্রেমের উৎসটা কী বলতে পারেন?
@রাজেশ তালুকদার,
রাজেশ দা, যদিও প্রশ্নটা ফরিদ ভাই কে করেছেন তবু আমার কিছু বলার ইচ্ছা হচ্ছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, মুসলমান ভাই ভাই এই অত্যন্ত নিচুশ্রেনীর সাম্প্রদায়িক স্লোগানই এটার জন্য দায়ী বলে আমার মনে হয়। সবার উপর মানুষ সত্য এই অসাধারণ মনোভাব নিয়ে চলতে পারলেই এই পাকি প্রেম থাকবে না বলেই মনে হয়।
কাজেই শাহবাগের এই গণজাগরণ যদি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীর পাশাপাশি,প্রকৃত ধর্ম নিপরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দাবীতে পরিনত হয়, তবেই এই আঁধার আস্তে আস্তে কেটে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। এমনিতেই আমি বেশ নিরাশাবাদী লোক ছিলাম বাংলাদেশীদের অবস্থা দেখে, তবে শাহবাগের এই ঐক্য দেখে আমার আবার সেক্যূলার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার ইচ্ছে হচ্ছে যেখানে নারী পুরুষ সমান ভুমিকা রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে,নারী হবে না লাঞ্ছিত,ধর্মের নামে মানুষকে আলাদা করে দেখা হবে না, এবং লাঞ্ছিত নারীকে দেহপসারিণী সাজিয়ে ধর্ষক কে বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে না সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন আবার দেখতে ইচ্ছে করছে।কেন জানি মনে হয় যে সেই সময় আর হয়তো বেশি দূরে নেই।এখন দেখি পরবর্তি সময়টায় কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।
@অর্ফিউস,
আপনার সেরা কমেন্ট মনে হয় ব্লগ জগত পেল।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ ভাই 🙂 ।আপনার কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়াটা সত্যি সৌভাগ্যের ব্যাপার। (L)
@অর্ফিউস,
হা হা হা প্রশ্ন করলে উত্তরটাও আমার অজানা নয়। ফরিদ ভাইয়ের মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম এই যা- ফরিদ ভাইয়ের হয়ে আপনি দিয়ে দিলেন, ধন্যবাদ। (F)
আমার সেই প্রশ্নের টোনটা আদিল ভাইয়ের ভাষায় ছিল-
@রাজেশ তালুকদার, 🙂 হুম দাদা আসলে আমার কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল তাই বলা,আপনি যে উত্তরটা জানেন সেটা আমিও অবশ্যই জানি।ভাল থাকবেন। (F)
ফরিদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সময়পযোগী অসাধারন লেখাটির জন্য। দারুন লেগেছে। আর বাড়তি কোন মন্তব্য করলাম না কারন শুধু মন্ত্র মুগ্ধের মত পড়ে গেলাম।
(Y) :guru: সত্যি আপনার তুলনা কেবল আপনি। আমি চেষ্টা করেও এত সুন্দর করে গুছিয়ে বলতে পারব না, লেখা তো দুরের কথা।
আমি ধন্য হলাম ফরিদ ভাই।মানুষ হিসাবে আমি কেমন জানি না ,আমার প্রতি স্নেহ থেকেই আপনি হয়ত চমৎকার বলেছেন আমাকে।তবে আপনার মত অতি পুরাতন আর অভিজ্ঞ লেখক এবং যাকে ( আপনাকে) আমি বড় ভাইয়ের মতই শ্রদ্ধা করি ( যদিও মুক্ত মনা থেকেই প্রথবারের মত মেইলে যোগাযোগ আপনার সাথ্য) , তাই আমি সত্যি যে কি পরিমান সম্মানিত বোধ করছি, বলে বোঝাতে পারব না।অন্য কেউ করলে কি হত জানি না, তবে এই লেখাটার লেখক আপনি তাই আমার অনুভুতিটা সত্যি সম্পুর্ন অন্যরকম। (F) (L)
সূত্র
মাটির ব্যাংকে যারাই ছোটবেলায় টাকা জমিয়েছেন তারা বুঝতে পারবেন কতটা বড় মন থাকলে বাচ্চা মেয়েটা এটা করেছে, তাকে হাজার স্যালুট।