অদ্ভুত এই কারাগার
মীজান রহমান
যাবজ্জীবন কারাবাস কাকে বলে জানেন? নিশ্চয়ই জানেন। দশবছরের বাচ্চাও সেটা জানে। সেই কারাবাসের অর্থ বোঝেন? সম্ভবত না।
ধরুন আপনি একটা জগতে জীবনধারণ করছেন যেখানে এক অদৃশ্য মহাশক্তির নিরঙ্কুশ অঙ্গুলিনির্দেশ আর কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিধিমালা দিয়ে গাঁথা সবকিছু। এই যে ‘জীবনধারণ’ শব্দটি অবলীলাক্রমে ব্যবহার করে ফেললাম আমি,এটিও আক্ষরিক অর্থে প্রযোজ্য নয়। আপনার জীবনকে আপনি ‘ধারণ’ করেন না, যাপনই করেন কেবল। আপনি ক্রিয়ামাত্র, কারক নন। ‘ধারণ’ করার ক্ষমতা আপনার হাতে নয়, সেই মহাশক্তির হাতে। আপনার জন্মের মুহূর্ত থেকেই আপনার জীবন পুরোপুরি তার দখলে চলে গেল। ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাটেলকর্তাদের সদ্যজাত গবাদি পশুর মত। আপনি কি খাবেন, কি পরবেন, কাত হয়ে শোবেন, না সোজা হয়ে, শৌচাগারে লোটা-বদনা থাকবে না মাটির ঢেলা, সকালবেলা ঘুম ভাঙ্গার পর প্রথম কর্তব্য কি হবে আপনার—-এর কোনকিছুই আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভালো-লাগা-না-লাগার ওপর নির্ভর করে না। এগুলো সবই পূর্বনির্ধারিত। আপনি হয়ত জানেন না যে আপনি একটি অস্থি-মাংসনির্মিত রবোট ছাড়া কিছু নন। বাল্যাবস্থাতেই আপনার হাতে একটি গ্রন্থ দেওয়া হবে যাতে আপনার বাকি জীবনের একটা সার্বিক মানচিত্র সবিস্তারে এঁকে দেওয়া হবে। একরকমের জিপিএস বলতে পারেন, যার ইঙ্গিত ইশারা অনুযায়ী আপনার গতিবিধি নির্ধারিত হতে থাকবে, যদিও আবহ কণ্ঠটি মনুষ্যনির্মিত শকটের মত তেমন সুমধুর বা সুরেলা না’ও হতে পারে।
এই গ্রন্থটিতে পরিষ্কার বলিষ্ঠ অক্ষরে বর্ণিত থাকবে যে আপনার জীবন একটি নয়, দুটি। একটি সাময়িক, যা অত্যন্ত স্বল্পকালীন। আরেকটি অনন্তকালীন। সেহিসেবে আপনি আসলে একটি অমর প্রাণী (ঠিক যা চেয়েছিলেন আপনি, তাই না?)। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আপনি মারা যাবেন না আদৌ। না না, মারা যাবেন ঠিকই, এবং কবে, কিভাবে তা’ও সেই সর্বজ্ঞ মহাশক্তির খাতাতেই লেখা (সম্ভবত আপনার জন্মের আগেই)। শুধু তাই নয়, মারা যাবার আগে ও পরে, আপনার মরদেহটির কি ব্যবস্থা হবে, এবং কে বা কারা সেই ব্যবস্থার দায়িত্ব নেবে তা’ও পুংখাণুপুংখরূপে লিপিবদ্ধ ওই অমূল্য গ্রন্থখানিতে। এতে অবশ্য মন খারাপ করার কিছু নেই, কারণ এই ‘মৃত্যু’ আপনার জীবনের অন্তিম পরিণতি নয়, একটা অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থামাত্র। মৃত্যুর পর যে অন্তহীন জীবনটি শুরু হবে আপনার সেটিই আপনার আসল জীবন। মজার ব্যাপার যে সেই ‘আপাত মৃত্যু’-পূর্ব স্বল্পকালীন জীবনটিতে আপনি যাকিছু করেছেন তার ‘ভালমন্দ’এর বিচার দিয়েই যাচাই করা হবে আপনার ‘আপাত মৃত্যু’-ত্তর জীবনে কিরকম সুখসম্ভোগ বা দুর্ভোগ প্রাপ্য হবে। ‘পূর্ব’ জীবনে যা কিছু নিষিদ্ধ আপনার জন্যে (যেমন সুরাপান, যৌনাচার, ব্যভিচার, আনন্দ উপভোগ), সেগুলো থেকে যদি সত্যি সত্যি বিরত থাকতে পারেন তাহলে আপনি ‘উত্তর’ জীবনে ঠিক সেই সুখগুলোই ( যেমন সুরার পাত্রহস্তে হাস্যমুখে দণ্ডায়মান অনাঘ্রাতা, অনাস্বাদিতা, অনন্ত লাস্যময়ী, লীলাময়ী উদ্যানবালারা, অফুরান, অনন্তধারে)। তার মানে যাকিছু পাপ বলে চিহ্নিত করে রেখেছে সেই মহাশক্তি, ঠিক তা’ই পরিগণিত হবে পরম পুণ্য বলে। অর্থাৎ এ-জীবনের কষ্ট, সে-জীবনের অন্তহীন সুখ। এজীবনের আনন্দহীনতা সেজীবনের চিরানন্দময়তা। পক্ষান্তরে এজীবনের সুখ পরজীবনের সীমাহীন কষ্ট। (একটিমাত্র ব্যতিক্রমী পুরুষকে বাদ দিয়ে অবশ্য)। এদিক ওদিক তাকালে বোঝা যাবে, এই ‘ব্যতিক্রমী’ পুরুষগুলোর (খেয়াল করুন ব্যতিক্রমী নারীর কথা একবারও উল্লেখ করা হয়নি কোথাও) সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। পরম ভাগ্যবান এই বিশেষ পুরুষগুলোকে বাদ দিলে, আপনি-আমিসহ ইহজগতের আপামর জনসাধারণ যারা বেঁচে আছি পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহ করে, তাদের ভাগ্যে এ-জীবন ও-জীবন উভয় জীবনই আসলে এক অন্তহীন অশ্রুভরা মহাসমুদ্র ছাড়া কিছু নয়। কারণ এই মহাশক্তির নিজের বর্ণনাতেই পরিষ্কার উল্লেখ করা আছে যে আমরা যা করি বা ভাবি বা স্বপ্ন দেখি তার প্রতিটি বিষয়ই তার ইচ্ছা দ্বারা পরিচালিত। অর্থাৎ ভাল কিছু করলে যেমন তার ইচ্ছা, খারাপ করলেও তারই ইচ্ছা। যদিও এ’ও বর্ণিত হয়েছে যে খারাপের দায়িত্বটা আমাদের, আর ভালোর কৃতিত্বটা তার। উল্টোপাল্টা বিচার মনে হচ্ছে কি? হতে পারে। তবে এই মনে হওয়াটাও আপনার ইচ্ছায় ঘটছে না, ঘটছে সেই অদৃশ্য শক্তিরই ইচ্ছায়।
এই মহাশক্তির অস্তিত্বটি এমনই ব্যাপক ও সর্বগ্রাসী যে আপনার কর্মটিই নয় কেবল তার নিয়ন্ত্রণে, আপনার মনের ভাবনাখানিও। সুতরাং আপনি আসলে কেউ নন, কিছু নন, একটি অস্তিত্বহীন কাল্পনিক জীব।
এমন একটি অবস্থানকে আপনি কারাবাস না বলে আর কি বলতে পারেন? সাধারণ মানুষ কারাবাস থেকে যথাসত্ত্বর মুক্তিই কামনা করে, তাই না? কিন্তু এই কারাটি এমনই এক অদ্ভুত তন্তু দিয়ে গড়া যে আমরা, সাধারণ মানুষ, বুঝতেই পারিনা যে সারাটি জীবন এক সীমাপরিসীমাহীন, অন্ধকার, শ্বাসরোধকর কারাগারেই কাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেবল তাই নয়, আমরা, মূর্খ জনসাধারণ, কালে কালে এমন একটা অবস্থাতে পৌঁছে যাই যে এর থেকে ‘মুক্তি’ যে একটা কাম্য বস্তু তা’ও কল্পনার মধ্যে স্থান দিতে পারিনা।
এবার বলুন তো সেই মহাশক্তিটি আসলে কি। কোন ব্যক্তি, না সত্তা, না তত্ব, না এসবেরই এক বিচিত্র সংমিশ্রণ? ধরতে পারেননি এখনো? তাহলে থাক। চলুন অন্য প্রসঙ্গে যাই।
স্বজাতি বলতে কি বোঝায়? ব্যক্তিগতভাবে আমি বুঝি গোটা মনুষ্যজাতিটাকে। জানি, এ-পরিচয় দিয়ে বর্তমান যুগে কোথাও পার পাওয়া যাবে না। একটা-না-একটা খোপে আমাকে ঢুকতেই হবে। হ্যাঁ, একধরণের কবুতরের খোপ বই আর কি বলা যায় একে। খোপের ভেতরে বসবাস আমার মোটেও পছন্দ নয়, তবু তর্কের খাতিরে বা সামাজিক প্রয়োজনীয়তায় একটা খোপ যদি বাছাই করতেই হয় আমাকে, (ধরে নিচ্ছি যে বাছাই করার স্বাধীনতাটুকু আমাকে দেওয়া হচ্ছে, যা সবসময় স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেওয়া যায় না), তাহলে বলব ‘বাঙালি খোপ’। অর্থাৎ ভাষা আর সংস্কৃতি দিয়ে আলাদা করে চিহ্নিত করা যে খোপ। আসলে এমন কোনও খোপ সত্যি সত্যি আছে কিনা তা’ও আমার জানা নেই। ভাষা নিয়ে আমরা গণ আন্দোলন করি ঠিকই, কিন্তু ভাষাকে কিভাবে সম্মান করতে হয়, তাকে মর্যাদা দিতে হয় ধর্ন্মীয় সংস্কৃতির সমান্তরাল অবস্থানে, সেসম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা আমজনতার তেমন আছে বলে আমার মনে হয় না। ভাষার চেয়েও জটিল এবং সর্বসাধারণের জন্যে খানিক ধাঁধাময় বিষয় হল ভাষাজাত সংস্কৃতি, যেমন সঙ্গীত, শিল্প ও নৃত্যকলা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র। এগুলোকে একসাথে জড় করে একটা পরিচয় সৃষ্টি করা, আমাদের উপমহাদেশের জন্যে সেটা এবস্ট্রাক্ট আর্টের মতই দুরূহ ও দুর্বোধ্য। অথচ এই পরিচয়ের খোপটি ছাড়া অন্য কোন খোপই আমার জন্য আকর্ষণীয় তো নয়ই, ন্যুনতম বিবেচনায় গ্রহনীয়ও নয়।
আমজনতা বলতে আমরা সাধারণভাবে যা বুঝি, এবং যাদের নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা মাঠে-ময়দানে বিপ্লব উৎপাদন করেন, তাদের কাছে ভাষা একটা রাজনৈতিক দাবিদাওয়ার হাতিয়ার মাত্র, পরিচয়ের অংশ নয়। পরিচয়ের ক্ষেত্রে তারা একবাক্যে বলবেঃ কেন, আমরা যে মুসলমান বা আমরা যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান-জৈন-গারো, সেটা কি যথেষ্ঠ নয়? অর্থাৎ ঘেটেঘুটে সেই একই কথাঃধর্ম। সবচেয়ে সহজ যে-পরিচয়টি। এবং তাদের মতে, সবচেয়ে পবিত্র, খাঁটি ও সনাতন। ধর্মীয় পরিচয় আর মধ্যযুগীয় গৌত্রিক পরিচয়তে খুব একটা তফাৎ আছে কি? যখন ধর্ম ছিল না তখন ট্রাইব ছিল—-ট্রাইব ছাড়া বেঁচে থাকাটাই ছিল একটা বড় সমস্যা। তারপর যখন ধর্মপ্রচারকরা তাদের কল্পনার রঙ মিশিয়ে একটা নতুন জিনিস নিয়ে এলেন তাদের জন্যে এবং তারা আস্তে আস্তে দলে ভারি হয়ে উঠল তখন সেই ভারিত্বটাই ওদের একটা নতুন পরিচয়ের পথ তৈরি করে দিল। এখন খৃস্টান বললে সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বব্যাপী ১৫০ কোটি মানুষ দাঁড়িয়ে যাবে। মুসলমান বলতে দাঁড়াবে ১২০কোটি ( তার কারণ অবশ্য এক ধর্ম আরেক ধর্মের চেয়ে কোন অংশে খাটো তা নয়, তার অর্থ কেবল এই যে একদল যত রাজ্য দখল করতে সক্ষম হয়েছে আরেক দল তত পারেনি। এটা ইতিহাসের উনিশ-বিশের ব্যাপার মাত্র)।
মুসকিল এই যে ধর্ম বা গোত্র কোনটাই অর্জিত পরিচয় নয়, অর্পিত। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত একরকমের পারিবারিক শীলের মত—-বাপদাদা চোদ্দ পুরুষ ধরে এই শীল এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে হাতবদল হয়েছে। দলিল করা জমির মত। বাপের জমি ছেলেমেয়েরা যেভাবে পায় বাপের ধর্মও ঠিক সেভাবেই পায় তারা। এর মধ্যে চেষ্টাচরিত্রের ব্যাপারাদি নেই, স্কুলকলেজে যাওয়াযাওয়ির ব্যাপারাদি নেই। এক মূর্খের জমি যেমন পাবে আরেক মূর্খ, তেমনি তার তথাকথিত ‘বিশ্বাস’ও পাবে সেই একই বংশপরিক্রমায়। আধুনিক শিক্ষিত, প্রযুক্তিতাড়িত, বিশ্বদৃষ্টিসম্পন্ন সতেজ সজাগ বিশ্বনাগরিকের জন্য সেই একই পরিচয় প্রচলিত হতে থাকবে সেটা কেমন অদ্ভুত মনে হয়না? আপনার না হতে পারে, কিন্তু আমার হয়।
তবুও, এই কৃত্রিম, অর্পিত, সংকীর্ণ পরিচয়টির কথাই যে বলেন আপনি তাহলে আমি বলতে বাধ্য হব যে আমি মুসলমান। আমি মুসলমান কারণ আমার বাবা-মা মুসলমান, কারণ তাঁদের বাবামা মুসলমান, এবং আমার জানামতে তাঁদের বাবামা’ও মুসলমানই ছিলেন। আমার মুসলমানিত্বের মধ্যে একমাত্র নামটি ছাড়া আর কিছুই উল্লেখযোগ্য বা চমৎকারক চোখে পড়ে না আমার। নামের ব্যাপারেও আমার আপত্তির অনেক কারণ। প্রথম কারণঃ আমি আরবদেশে জন্মগ্রহণ করিনি, পিতামাতার কেউই আরব বংশোদ্ভুত নন, আমার চোদ্দ পুরুষের কোথাও আরব মুল্লুক থেকে আসা বনিক বা দস্যু বা দরবেশের অবস্থান বিষয়ে আমি অবজ্ঞাত নই, অথচ আমার নামখানা আরবি হয়ে গেল কেমন করে। বলা হয় যে আরবি নাম মাত্রই মুসলমান নাম। সেটা যে সত্য নয় তার প্রমাণ তো আমার নিজের কাছেই। আমার এক ছাত্র ছিল যার নাম নাসরুল্লাহ—খাঁটি আরবি নাম। ওর জন্ম লেবাননে—-পুরোদমে আরবি রাষ্ট্র। নাসরুল্লাহ আরব কিন্তু মুসলমান নয়, খৃস্টান। এবং এটা লেখাপড়াজানা লোকেদের কারুরই অজানা থাকবার কথা নয় যে লেবাননে ড্রুজ খৃস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বৈরিতার সম্পর্ক আজকের নয়, পুরো শতাব্দী ধরেই চলে আসছে সেটা। আরো একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। তারেক আজিজ। আরবি নাম। কিন্তু তিনি যে ইরাকের মুসলিম মন্ত্রী ছিলেন না, ছিলেন খৃস্টান ধর্মাবলম্বী মন্ত্রী, সেটা ওয়াকেফহাল মহলে কারুরই অজানা নয়। অতএব আরবি নাম মাত্রই মুসলমান নাম নয়। এমনকি সব দেশের সব মুসলমান নামও আরবি নয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এবং আফ্রিকার একাধিক দেশে অনেক মুসলমান রয়েছেন যাদের নাম আরবি নয়। কেবল আমাদের উপমহাদেশেই এই প্রথাটি আঠার মত লেগে রয়েছে। এর পেছনে আরবিপ্রীতি কতখানি কাজ করেছে, আর মোগল সাম্রাজ্যের ফারসি-আরবি ভাষার প্রতি মাত্রাধিক আনুকূল্য কাজ করেছে কতটা সেটা ভাববার বিষয়। মোট কথাঃ এর সঙ্গে মুসলমানিত্বের আদৌ কোন সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করিনা, সম্পর্ক যেটা আছে সেটা হল সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বশ্যতাবোধের। মোগল চলে গেছে তিনশ বছর আগে, ফারসি-আরবি বিদায় হয়েছে একই সঙ্গে বলা যায়, কিন্তু বাংলাভাষাভাষী মুসলিম সমাজের ঐতিহাসিকভাবে হৃত পরিচয়ের সঙ্কট এখনও কেটে ওঠেনি। অদূর ভবিষ্যতে সেটা উঠবে তারও কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। দেশ স্বাধীন হবার পর একটা ছোটখাটো সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, হয়ত এবার বাঙ্গালিজাতি নিজেকে খুঁজে পাবে ইতিহাসের পাতায়। হয়ত এবার ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের বদলে ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি করার কাজে উদ্যোগী হয়ে উঠবে বাংলাদেশের মুসলমান তাদের অন্যান্য ধর্মগোষ্ঠিদের সাথে হাত মিলিয়ে। অন্তত সেই প্রতিশ্রুতিতেই তো সৃষ্টি হয়েছিল দেশটা, তাই না? সেই প্রতিশ্রুতিতেই তো হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ-খৃষ্টান একসাথে যুদ্ধ করেছিল ধর্মোন্মাদনা তাড়িত বর্বর জাতি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে, তাই না? কিন্তু তারপর? তারপর কেন, কেমন করে সব স্বপ্ন সব আশা আকাঙ্ক্ষা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল? কেমন করে, কেন, কেন সেই পাকিস্তানের দালালরাই আবার দেশের ভাগ্যনিয়ন্তার আসন দখল করে ফেলল? আজ কোন শিশুর বাংলা নাম রাখা যায় না, কোনও জাতীয় অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ শব্দদুটি একসাথে উচ্চারণ করা যায় না ,কারণ বাংলা নাম বলতে বোঝায় হিন্দু নাম, জয়বাংলা বলতে বোঝায় ভারতের গোলামি। এ কি সেই একই দেশ যেখানে বাংলা ভাষার সম্মান বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিল সালাম-বরকত-রফিক-জাব্বার, এবং যেখানে আজ বাংলা বলতে বোঝায় ‘হিন্দু’? বাংলার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত হবে পাকিস্তানের উর্দু নয়, তার চেয়েও নিকৃষ্ট আরব জাতির আরবি ভাষা ও সংস্কৃতি, এমন এক উষ্ট্রপৃষ্ঠে আরূঢ় জাতিগঠনের স্বপ্ন নিয়েই কি প্রাণ দিয়েছিলেন ত্রিশ লক্ষ বাঙালি বীর সন্তান, সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ বাঙালি নারী-কিশোরী-বালিকা? আমার মনে হয় না। কিন্তু চারদিকে তাকালে তো বারবার সেই দৃশ্যটাই পীড়া দিতে থাকে চোখকে, মনকে। আজকে যত নারী স্বেচ্ছায় ইসলামি আব্রু-হিজাব-বোরখা পরিধান করছেন তার একাংশও দেখা যায়নি ‘৭১এর আগে। আজকে মানুষ নির্দ্বিধায় বাপদাদার আমল থেকে প্রচলিত ‘খোদা হাফেজ’কে বাদ দিয়ে ‘আল্লা হাফেজ’ আওড়াতে শুরু করেছে—-স্রেফ আরব হুজুরদের অনুকরণে। যেন আল্লাতা’লা ফারসি ‘খোদা’ শব্দটা ভালো বোঝেন না, তাঁর সঙ্গে কেবল আরবি ‘আল্লা’ই বলতে হবে। একে আপনি মানসিক, আত্মিক, সার্বিক বশ্যতা না বলে আর কিভাবে ব্যক্ত করবেন? একে আপনি মূর্খতা আর অজ্ঞতার অন্ধ উপাসনা ছাড়া আর কি বলবেন? না, এই বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের কারুরই মনে ছিল না, কিন্তু এই বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনও বাংলাদেশের যোগ্যতাও হয়ত আমাদের ছিল না। সেই যে প্রবাদ আছে, তুমি যা চাও তা পাবে না, যেটুকু যোগ্যতা কেবল সেটুকুই পাবে তুমি।
লোকে বলে বাঙালি মুসলমান ভীষণ ধর্মপ্রাণ। আমি বলি বাংগালি মুসলমান ভীষণ বশ্যতাপ্রিয়—-তারা মূলত স্বাধীনতাবিরোধী।
ফ্রিমন্ট, ক্যালিফোর্নিয়া
৩০শে ডিসেম্বর, ‘১২
মুক্তিসন ৪২
বাংগলাদেশের বাংগালীর জাতীয়তা নিয়ে হীনমন্যতা বা আত্মপরিচয় সংকট খুবই প্রকট। একদিকে ধর্মীয় জাতীয়তার মোহ, আরেকদিকে ভাষাগত জাতীয়তার বাস্তবতা…কোনটাকে প্রাধান্য দেবে? আমাদের জেনারেশন তাও পার করেছি, আরবী,উর্দু, ফার্সী, হিন্দীর যাঁতাকলে এখনকার জেনারেশন তৈরী হচ্ছে এক অদ্ভূত জগাখিচুড়ী সম্প্রদায় হিসেবে।
নবজাতকের নাম রাখতে হয় আরবীতে জাতে ইসলামী সত্বা অতি অবশ্যই প্রকাশ পায়, এরপর একটু বড় হলে সে আরবী নামধারী শিশু দেখি শস্তা হিন্দী সিনেমার সুরে নাচ শিখছে।
এবার দেশে কিছুটা আশার আলো দেখলাম যে কিছু পরিবার নবজাতকের নাম বাংলাতেই রাখছে।
এই হীনমন্যতা শুধু ব্যাক্তিগত নাম রাখারাখির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তাও হত, এর ব্যাপকতা আরো প্রবল। ‘৭৫ এর পর যে শ্লোগান জয়বাংলা দিয়ে দেশ স্বাধীন হল সেই শ্লোগান করা হল নিষিদ্ধ, আমদানী করা হল জিন্দাবাদ, সাচ্চা মুসলমানী শ্লোগান। আম জনতা নীরবে মেনেও নিল, কি আজব। বংগবন্ধুর বা আওয়ামী শাসন খারাপ হতে পারে মানা যায়, তাই বলে মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগানও ধর্মীয় জোশের মোহে ত্যাগ করতে হবে? এ দেশে রাজাকারি আদর্শ কায়েম কোন ব্যাপার নয়।
ব্যাক্তিগত সূত্রে শুনি প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভু্ক্ত দেশগুলির মুসলমান সম্প্রদায় এই রকম ভয়াবহ আত্মপরিচয় সংকটে ভোগে না। তাদের নাম অনেক সময় স্থানীয় হয়, আবার অনেক সময় মিশ্র হয়; যেমন রহিমভ। যে কমিউনিজিম আমলে ধর্মীয় আমার দুয়েকজন রুশ মুসলমান সহকর্মী ছিল যাদের খটমটে নামে বোঝার উপায় নেই যে তারাও মুসলমান।
মীজান ভাই,
বেদের মেয়ে জোসনা ছবিতে একটা হিট গান ছিল, মুজির পরদেশীর (আমার খুব প্রিয়) – :))
আমি বন্দী কারাগারে, আছি গো মা বিপদে
বাইরের আলো চোখে পড়ে না…!
এখানে
আপনার হতশাব্যঞ্জক লেখাটা পড়ে মনের আনন্দে গানটা শুনে নিলাম। মন ভাল হয়ে গেল। 🙂
মিজান স্যার,
পুরোপুরি একমত। আমাদের চারপাশের মানুষগুলোর দিকে এক্টু ভালভাবে লক্ষ করলেই বঝা যায়, গোলামি কাকে বলে কত প্রকার এবং কি কি।আপ নার লেখাটা খুব ভাল লাগল স্যার।
মুক্তমনাতে আজকালকার লেখাগুলো পড়লে বোঝা যাই, আমাদের সকলের ভিতরে কেমন যেনো একটা হতাশা আর ছটফটে ভাব, যা মাত্র এক বছর আগেও ছিলো না।
আরবি-ফারসি নাম রাখার চলটা মনে হয় উপমহাদেশেই সীমিত। তুরস্ক কিংবা মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোতেও(তুর্কমেনিস্তান, কাজাখাস্তান ইত্যাদি) এত আরবি নাম দেখি না।
@পৃথ্বী,
শুধু এটুকুই নয়। নামের পূর্বে “মোহাম্মদ” পরে “ইসলাম” এগুলী জুড়িয়ে না দিলেও তো মনে হয় সে যেন পাকা মুসলমান হতে পারলনা।
মুক্তমনার একজন জনপ্রীয় লেখকের মুখে আমি শুনেছি, এ্যারাবিয়ানরাও এতটা আরবী নাম, “মোহাম্মদ” নাম, বা “ইসলাম” নামের ভক্ত নয় যতটা ভক্ত বাঙ্গালী গন।
সম্ভবতঃ অন্য জাতির উপর প্রচন্ড বিদ্বেশ ও ঘৃনার থেকে এই প্রথার উৎপত্তি হয়েছে।
@পৃথ্বী,
তার কারণ, আমার মনে হয়, আমাদের মত ওদের গোলামির ইতিহাস তত লম্বা নয়। এই ‘ গোলামি’টা এখন আমাদের রক্তের ভেতর প্রবেশ করে গেছে। কোন-না-কোনভাবে, কারো-না-কারো, কোন-না-কোনকিছুর গোলামি আমাদের করতেই হবে।
নোটের সঙ্গে সহমত।
সাতের দশকের একজন বিপ্লবী দীর্ঘদিন কারাবাসের পর মুক্ত হয়ে বলেছিলেন:
তিনি হলেন আমার বাবা, সাবেক নকশালাইট নেতা আজিজ মেহের। এই কথা তাঁর আত্নজীবনীতে আছে।
(Y)
হ্যাঁ, ধরতে পেরেছি এটা একটি তত্ব
আর আমি বলি ” অন্যান্য জাতির মতই পূর্ব পুরুষ হতে আগত প্রথাদি অনুসরন ও অনুকরন প্রীয়।”
জনাব মিজান রহমান,
আপনার মাধ্যমে মুক্তমনার সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। হিজাব ছাড়াও হারাম হালালের উৎপাতে বন্ধুত্ত্ব পর্যন্ত হাড়াতে হচ্ছে আজকাল! এই অন্ধমোহ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি? আমাদের পশ্চাদগামী মানসিকতার পরিবর্তন কি আদৌ সম্ভব নয়?
লেখাটি পড়ে ভাল লাগল।শুধু ইংল্যান্ড, আমেরিকা নয় বাংলাদেশেও হিজাব পরা নারীর সংখ্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ সকল নারীদের বেশির ভাগই উচ্চ শিক্ষিত। আমার জানা মতে এদের অধিকাংশই তাদের নিজ ইচ্ছায় হিজাব পরছে কেউ চাপিয়ে দিচ্ছে না। এখানে অনেকে একে পশ্চাদ পদতা বলে মন্তব্য করেছেন কিন্তু এর যখার্খ কারণ না জেনে একে এভাবে চিহ্নিত করা আমার মনে হয় ঠিক না।
হিজাবের জনপ্রিয়তাটি কি ধর্মের প্রতি কঠোর অনুগত্যের বহিপ্রকাশ না ইঙ্গ-মার্কিনীদের মুসলিমদের প্রতি আগ্রাসী মনভাবের প্রতিবাদ তা বলা মুশকিল।কারণ মধ্যপ্রাচ্য, ইরাক,আফগানিস্তানে মার্কিন মদদপুষ্ট হামলার পর থেকেই আমার মনে হচ্ছে মুসলিম নর নারীদের মধ্য নিজের ধর্মের প্রতি ভালবাসা এবং পাশ্চাত্যের শিল্প, সংস্কৃতির প্রতি ঘৃণা ফুটে উঠেছে, যে বোধ মুসলিমদের মধ্যে শত সহস্র ধর্মের বাণী শুনিয়েও জাগ্রত করা সম্ভব হয়নি।
হিজাব পরার অন্তর্নিহিত কারণ যদি এ রকম কিছু হয় তাহলে একে পশ্চাদপদতা বলা আমার মনে হয় যুক্তিযুক্ত নয়।
@বিষন্নতা,
আর হজ্জ-কোরবাণীতে টাকার প্রদর্শনী, জাকাত নিয়ে বিলাসিতা, টুপি-দাড়ির ফ্যাসন শো, ব্যঙ্গাচির মত মসজিদ-মাদ্রাসা? এমনটা তো আগে ছিলনা। এগুলো কার প্রতি আগ্রাসী মনভাবের প্রতিবাদ? যারা কোনদিন নামাজী ছিলনা, মাদ্রাসায় পড়ে নাই, আজ তাদের গায়ের আতরের গন্ধে আর নামাজের যন্ত্রনায় মিটিং মাটিং করাই যায়না, দিনে সত্তরবার বলে নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গেছে।
হামলা হলো ইরাক-আফগানিস্তানে আর এর প্রতিবাদে হিজাব পরে বাংলাদেশের নারীরা, কেমনে কী বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে বলেন দাদা।
@আকাশ মালিক,
আমার মন্তব্যের জবাব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই আকাশ মালিক। আপনার মন্তব্যের জবাব দেওয়ার আগে আমার নিজের সম্পর্কে বলে রাখা ভাল মনে করছি।অনেকের মত আমিও জন্ম সূত্রে মুসলিম, তবে মুসলিম ধর্মের প্রতি আমার বিশেষ কোন অনুরাগ নাই।ধর্মীয় গোঁড়ামীকে আমি অত্যন্ত ঘৃণা করি, মেয়েদের হিজাব পরতে বাধ্য করাকে আমি মধ্যযুগীয় বর্বরতা মনে করি। তবে অন্যের ক্ষতি না করে কেউ যদি ধর্ম পালন করে এবং কোন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় হিজাব পরে তবে তাকে কটাক্ষ করার মত উদার এখনো হতে পারিনি। আপনি বলেছেন-
আর হজ্জ-কোরবাণীতে টাকার প্রদর্শনী, জাকাত নিয়ে বিলাসিতা, টুপি-দাড়ির ফ্যাসন শো, ব্যঙ্গাচির মত মসজিদ-মাদ্রাসা? এমনটা তো আগে ছিলনা। এগুলো কার প্রতি আগ্রাসী মনভাবের প্রতিবাদ? যারা কোনদিন নামাজী ছিলনা, মাদ্রাসায় পড়ে নাই, আজ তাদের গায়ের আতরের গন্ধে আর নামাজের যন্ত্রনায় মিটিং মাটিং করাই যায়না, দিনে সত্তরবার বলে নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গেছে।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে মুসলমানদের এ পরিবর্তন কেন? এ নিয়ে কি কোন গবেষণা হয়েছে? আপনি কি এর কারণ থোঁজার চেষ্টা করেছন?
খেয়াল করে দেখুন সারা বিশ্বের মুসলিমরা লেখাপড়া ছেড়ে দেয়নি। জ্ঞান বিজ্ঞানেরও চর্চাও করছে।মৌলবাদীরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে ধর্মের এ বিষয় গুলো সবার ঘাড়ে চাপিয়েও দেয়নি।বরং আমেরিকা বা ইউরোপ যে সব দেশে এ সব কাজকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে সে সব দেশে এ প্রবণতা আরো বেশী বেড়েছে।ধর্মের প্রতি মুসলিমদের হঠাৎ করে কেন এ অনুরাগ জন্ম নিল?
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলে, এতদিন তালেবান বা ধর্মীয় মৌলবাদীদের কদর্য় রূপ মুসলিমরা দেখছিল যে কারণে ধর্মের প্রতি অনেকে বীতশ্রদ্ধ ছিল। কিন্তু গণতন্ত্র,সভ্যতা এবং মানবিকতার ধারক, বাহক মার্কিনি এবং তাদের দোসরদের ইরাক, আফগানিস্থান ফিলিস্তিনে তাদের কার্যকলাপ দেখে হয়তো পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতি অনেকেরই মোহ ভঙ্গ হয়েছে। আপরদিকে তালেবান সহ মৌলবাদীরা কোনঠাসা হওয়ায় তাদের কদর্যতা অনেক খানি চাপা পড়ে গেছে। আমার মনে হয় সে কারণেই মুসলিমদের হঠাৎ করে এ ধর্ম অনুরাগ। এর বাইরে আপনার কাছে যদি অন্য কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ থাকে তবে তা জানালে বাধিত হব।
আপনি বলেছেন-
হামলা হলো ইরাক-আফগানিস্তানে আর এর প্রতিবাদে হিজাব পরে বাংলাদেশের নারীরা, কেমনে কী বুঝলাম না, একটু বুঝিয়ে বলেন দাদা।
আসলে আপনি আমার মন্তব্যের একটি খণ্ডিত অংশ অনুধাবন করায় এ রকম মনে হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে এ প্রবণতা সারা বিশ্ব ব্যাপি বিস্তার লাভ করেছে।যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে চোখ রাখলে জানা যায়। উপরের মন্তব্যে দু একজন ইংল্যাণ্ড, আমেরিকার কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের অধিবাসী হিসাবে এখানে আমি শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা টুকু বর্ণনা করেছি।ধন্যবাদ।
@আকাশ মালিক,
উপযুক্ত জবাব হইছে।
এখানে ব্রুকলীনে চার্চ মসজিদ নামে সম্প্রতি একটি মসজিদ হয়েছে যেটা খৃষ্টানদের গীর্জা মুসলমানেরা ক্রয় করে মসজিদে রুপান্তরিত করেছে।
কি দাপট তাহলে মুসলমানদের!!
আটলানটিক এভিন্যুতে ঠিক এভাবে আরো একটি মসজিদ আছে। যদিও এই মসজিদটির কর্তৃপক্ষের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ দেখা দেওয়ায়,বিরোধী পক্ষ ঠিক তার পার্শেই আর একটি মসজিদ খাড়া করেছে। এখন সেখানে এক সংগে জোড়া মসজিদ চলতেছে।
কি জোর তাহলে ইসলাম ধর্মের!!
কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যখন এই লেখার শেষ লাইনেই রয়েছে:
যদি তারা স্বাধীনতাবিরোধী হবেই, তবে কেন ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে উঠা পাকিস্তানের কবর রচনা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে? তাই আজ নতুন একটি বছরের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে:
বাঙালি মুসলমান কি আসলেই স্বাধীনতাবিরোধী, নাকি তাদের স্বাধীনতাবিরোধী বানিয়ে রাখা হয়েছে? তাদের স্বাধীনতার স্পৃহা ও আকাঙ্ক্ষাকে কি মেরে ফেলা হয়েছে একটু একটু করে (সাম্প্রদায়িক বা পুঁজিবাদী বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে)?
২০১৩ সনের অপার শুভেচ্ছা আপনাকেসহ সকল মুক্তমনাকে!
মানুষের জন্য নিম্নক্ত পাঁচটি বিষয়গত বৈশিষ্ট্য ত্যাগ বড়ই কঠিনঃ
১।নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
২।ধর্ম
৩।ভাষা
৪।সামাজিক সংস্কৃতি
৫।রাজনৈতিক জাতীয়তা
@সংবাদিকা,
আমার মনে হয়, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের, বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষদের, জীবনযাত্রার পুরো ইতিহাসটাই হল এক জরায়ু থেকে আরেক জরায়ুতে ভ্রমণ। দ্বিতীয় জরায়ুটার নাম হল ধর্ম। বাকিটা এই জরায়ুরই শাখাপ্রশাখামাত্র।
শুভ নববর্ষ। এবং অভিনন্দন বিশ্বনাশের ভবিষ্যদবাণী বণিকদের অগ্রাহ্য করে এখনো জীবিত থাকার জন্য।
@মীজান রহমান,
ধন্যবাদ স্যার, শুভ নববর্ষ 🙂
স্থূল্ভাবে সব কিছুকে পূর্ব নির্ধারিত বলা আসলে উচিত হবে না বরং আমরা বলতে পারি যতটুকু আমাদের অর্পিত বিশ্বাসের পক্ষে যায় তাই পূর্বনির্ধারিত, তাছাড়া বাকি সব জঘন্য অপরাধ, কলঙ্ক বা অবমাননা। যেকারনে অর্পিত বিশ্বাসের বাইরে কোন কিছু গেলেই পূর্ব নির্ধারিত বিশ্বাসটি নিমিষেই হাওয়া হয়ে শান্ত সৌম্য মুখশ্রীর পরিবর্তিত হয়ে মুহূর্তে দেখা দেয় সংহারকারী রুদ্র মূর্তি। অলৌকিক বিচারের ধৈর্য্য সেখানে শূন্য লৌকিক শাস্তি প্রদানে দেখা দেয় উদ্যত।
ভাবখানা এই যতই বিশ্বাস নামক ভাইরাসের প্রতিষেধকের কথা ছড়াক না কেন আমরা ততই বিশ্বাস রোগ ছড়াব।
ভালো থাকুন, রইল নতুন বছরের আগাম শুভেচ্ছা সাথে নিয়মিত লেখা প্রত্যাশা ।
অসাধারণ। চমৎকার লেখা।
লেখককে ধন্যবাদ। (Y) (F) (F)
খুব ভাল লাগছে আপনাকে আমাদের মাঝে পেয়ে। লেখাটি যে যুক্তি আর রসে ভরা থাকবে তা তো জানা কথা।
দূর্ভাগ্য ক্যালিফোর্নিয়ার গবাদি পশুদের।
ঠিক, তবে স্বেচ্ছায় শব্দটিতে দ্বিমত আছে।
বিরক্ত হয়ে এ নিয়ে একটা লেখা একবার লিখেছিলাম। সম্ভবত এর প্রচলন শুরু হয় সাঈদীর প্রচারণা থেকে। আপনি আরো বেশী করে আমাদের জন্যে লিখবেন এই অনুরোধ রইলো।
@আকাশ মালিক,
আপনার মন্তব্যের জন্যে অশেষ ধন্যবাদ। ‘স্বেচ্ছায়’ শব্দটি খুব কষ্টেই লেখা। দেশে তো বটেই, ক্যানাডা-আমেরিকার পথে ঘাটে নিত্যই এই হিজাব-নিকাবের উৎপাত অত্যন্ত প্রকট আকারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত। অধিকাংশ হিজাব পুরুষের আধিপত্য স্থাপনেরই চিরাচরিত পন্থা নিঃসন্দেহে, কিন্তু অত্যন্ত আশঙ্কাজনকভাবে আরো একটা জিনিস ক্রমবর্ধমান হারে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে ঘরের মা নিজে হিজাব বা বোরকা পরছেন না, কোনদিন পরেনও নি, কিন্তু তাঁর কলেজে-পড়া উচ্চশিক্ষিতা কন্যা আত্মশক্তি প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে শুধু নিজেই হিজাব গ্রহণ করছেন না, তাঁর বয়স্কা মাতাকেও একরকম বাধ্য করছেন পরতে। দেশে ও বিদেশে শিক্ষিত মুসলিম মেয়েরা সহসা নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের বাহক হিসেবে চয়ন করে নিচ্ছে,ব্যাপক হারে, ধর্মীয় ঝাণ্ডাধর একটি অবমাননাকর শিরস্ত্রাণ, এ এক অদ্ভুত মানসিক বৈকল্যের লক্ষণ বলেই মনে করি আমি। এদের সংখ্যা নেহাৎ নগণ্য মনে হয়নি বলেই আমার এই ‘স্বেচ্ছায়’ শব্দটি অনিচ্ছাক্রমে যুক্ত করে দেয়া। আশা করি নিজের সপক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে সক্ষম হলাম।
@মীজান রহমান,
একদম বাস্তব চিত্রটা তুলে ধরেছেন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বললে বোধ হয় ভুল হবেনা যে, ইংল্যান্ডের অবস্থা আরো মারাত্বক। মাত্র বিশ ত্রিশ বছরের ব্যবধানে চোখের সামনে কী হতে কী হয়ে গেল। সেদিন একটা বাঙ্গালী চ্যারিটি ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। দূর থেকে দেখে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবেনা এরা বাঙ্গালী। হলের এক পাশে অর্ধেক হল ভর্তি মহিলা শিশু-কিশোর, সকলের চোখ মুখ কালো হিজাব-নিকাব বোরকায় ঢাকা। অনুষ্ঠান আয়োজককে বললাম-এরা সব বাঙ্গালী না আফগানিস্তানী? এতবড় সমাগম, বাংলা মিউজিক কই? সে হাসে আর বলে, ওসব বলোনা এরা সকলে মিলে তোমাকে আমাকে পিটাবে। সকলেই পরিচিত সমবয়েসী, একই গ্রামের একই পাড়ার। অথচ এরা আগে এরকম ছিলনা।
আমি ইঙ্গিত করেছিলাম সমাজের অন্য দিকটার কথা। নতুন প্রজন্মকে এরা কীভাবে জোরপূর্বক পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। দশ বছর আগে আমার ইয়োথ ক্লাবের, আমার বাংলা স্কুলের সব চেয়ে মেধাবী যে মেয়েটা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ের উপর লেখা একটা নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করলো, সেও ছিল ঐ চ্যারিটি ফান্ড রেইজিং এর উদ্যোগতা। জিজ্ঞেস করলাম, হোসনে আরা তোমার এই অবস্থা? বলে, স্যার সে সব ভুল ছিল।
@আকাশ মালিক,
আপনার আল্লাহ হাফেজের দেশে লেখাটি অনবদ্য ছিল, বহুদিন আগের কথা, তখনো আমি ফোরাম জগতে যোগ দেইনি।
@আদিল মাহমুদ,
আমার জন্মস্থান সিলেটে যান নি কেন? আপনাকে তো শাবিতে মুক্তিযুদ্ধের মূর্তি স্থাপন প্রতিরোধ মিছিলে দেখলাম না। সেই বুলবুলি হুজুর আবার জিহাদি মুডে মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র মজিলস, ছাত্র জমিয়তসহ সিলেটের সকল ইসলামি দল ও ছাত্র সংগঠন আজ এক পথে এসে মিশেছে। এরা সবাই ৭১এ স্বাধীনতার বিপক্ষে অস্ত্র ধরেছিল সকলেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ছিল। তাবলিগ জামাতি শিক্ষকের পিটিশনে বা স্বারকলিপিতে সাক্ষর দেখে তার ছাত্ররা বড়ই অবাক হচ্ছেন। মানেটা কী দাঁড়ালো? তাদের বিশ্বাস হয়না জামাত ছাড়া কেউ স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। যে মানুষ মূর্তি আর ভাষ্কর্যের পার্থক্য বুঝেনা সে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হয় কেমনে? তাকে কেন ছাগু বলা যাবেনা?
আল্লাহ হাফেজের দেশে লেখাটি নতুন করে একদিন লিখবো যদি আপনাদের দোয়ায় বেঁচে থাকি। তার আগে অন্য দুইটি লেখা শেষ করবো ভাবছি।
@আকাশ মালিক,
আপনার জন্মস্থান বলেই তো সিলেট গেলাম না, কাজেই আমাকে মিছিলে আর দেখবেন কেমনে।
ছাত্রদলের যোগ এই মূর্তি ঠেকাও আন্দোলনে মনে হয় নেই, খবরের নীচে ‘৯৯ সালের কথায় হলের নামকরন ঠেকাও আন্দোলনের ব্যাপারে আছে।
এসব নিয়ে আর কত বলা যায়? চক্রাকারে একই কথা একই জবাবই আসবে। ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নেই…সবই জামাতি/ ধর্ম ব্যাবসায়ীদের কাজ…তেমনি সত্য হল এই তথাকথিত ধর্ম ব্যাবসায়ী যাদের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই তারাই ধর্মীয় সমাজ বা আলেম সমাজের নেতৃত্ব দেবে, এদের কাছেই লোকে ধর্মশিক্ষা অর্জন করতে ছেলেপিলেকে পাঠাবে।
তা জীবনটা পুরোপুরি তার দখলে তো চলে যাবেই। কারণ পবিত্র মহাগ্রন্থখানি তো ১৪০০ বছর পূর্বেই-এমন কি সৃস্টির বহু পুর্বেই পরিস্কার ভাষায় ঘোষনা দিয়ে রেখেছে “মানুষ এবং জিন জাতিকে আমার গোলামী করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনাই” (দুখিত রেফারেন্স টা এই মুহুর্তে দিতে পারছিনা বলে)।
আর তা ছাড়া এই ক্ষনিকের ৩০-৪০ বছরের ( প্রকৃত working hour life) এর পরিবর্তে যদি অনাদি অনন্তকালের একটা শুখময় জীবন লাভ করা যায়, সেইটাই তো প্রকৃত লাভজনক কাজ।
আর তাছাড়া যাবা কোথায়?
হয় আমার কথা বিশ্বাষ কর এবং গোলামী করে অনন্ত কালের শুখের জীবন গ্রহন কর অন্যথায় ঐ যে অনন্ত কলের জন্য জলন্ত অগ্নিকুন্ড রয়েছে, সেখানে যাও।
কার বাপের বুকের পাটায় এমন সাহস আছে যে এই জাল ছিড়ে বেরিয়ে যাবে?
মুক্ত মনা মডারেটর- মন্তব্যের প্রিভিউ দেখা যাচ্ছেনা। একটু ঠিক করে দিতে পারেন?