(১)
মানুষের চিন্তার সীমাবদ্ধতাগুলো আগ্রহের। মানুষ তার ইন্দ্রিয় দিয়ে তার আশেপাশের জগত সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ করে। সেই তথ্য আশেপাশের জগত সম্পর্কে তার ভেতরে ধারণা তৈরি করে তোলে। জগত যেমনই হোক, তার সম্পর্কে ধারণা তার ইন্দ্রিয় আর সেই ইন্দ্রিয়-বাহিত তথ্যের উপরে নাড়াচাড়া করা চিন্তাযন্ত্রের সরঞ্জাম দ্বারা সীমাবদ্ধ। নাকি মানুষ তার সরঞ্জাম-সীমবদ্ধতার ঊর্দ্ধে?
মানুষের চিন্তার সীমাবদ্ধতাটা জগতের সীমাবদ্ধতা হয়ে ওঠে না। কোনো মহাপরিকল্পক ছাড়া কীভাবে মহাবিশ্ব তৈরি হতে পারে, টিকে থাকতে পারে সেটা ভাবাটা একটা মানুষের পক্ষে হয়তো কষ্টকর, হয়তো অসম্ভব। কিন্তু তাতে মহাপরিকল্পকবিহীন মহাবিশ্বটা অসম্ভব প্রতিপন্ন হয় না।
সমাজ সম্পর্কেও মানুষের চিন্তার সীমাবদ্ধতা আছে। সমাজের ঝোঁক বিবর্তন, কিন্তু মানুষের চিন্তার ঝোঁকটা হলো পরিকল্পন। ভাষার ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায়। যদিও মূলত কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার বাইরেই অধিকাংশ ভাষার উৎপত্তি, বিকাশ ও বিবর্ধন, তথাপি ভাষা নিয়ে মানুষের বিবিধ পরিকল্পনমূলক ভাবনাচিন্তাই কাজ করে থাকে। যেমন,মানুষ অনেক সময়ে ভাবে – যোগাযোগের জন্যে সর্বজনীনতা “আবশ্যক”; ভাষার নানারূপের কিংবা নানা ভাষার সহাবস্থান “সমস্যাজনক”; ফলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভাষার প্রমিতকরণ আর তার আরোপ “জরুরি”।
তথাপি রংপুরের ট্রাক ড্রাইভার এখন যেমন চট্টগ্রামের চাঅলার সাথে বাৎচিত করে, প্রমিতকরণ যুগের পূর্বেও চট্টগ্রামের বণিক রংপুরের সরাইখানায় গিয়ে গল্প গুজব করতো। প্রমিতকরণ দুই ভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে তাদের যোগাযোগের মাধ্যমটা বাছাইয়ে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু প্রমিতকরণের অনুপস্থিতিটা তাদের যোগাযোগকে অসম্ভব করে তোলে না। বলপ্রয়োগমূলক আরোপের অনুপস্থিতি তো নয়ই। অর্থাৎ আরোপমূলক প্রমিতকরণের অনুপস্থিতিতেও মানুষের যোগাযোগ থেমে থাকে না, ব্যাহত হয় না। ব্যাপারটা আরো প্রতীয়মান হয় যখন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই ভাষার মানুষ একত্র হয়। ভিন্নভাষীর মধ্যকার ভাষার মাধ্যমটা অংশগ্রহণকারী ভাষাভাষীরাই নির্ণয় করে নিতে সক্ষম, দূরের কোনো গোলটেবিল বৈঠককারীর অনুপস্থিতিতে।
হ্যাঁ, ভাষার প্রাতিষ্ঠানিকতা নিয়ে সমস্যা হয় প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের। ভাষা সমাজের প্রাণ। রাষ্ট্র সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ভাষা নিয়ন্ত্রণ সমাজ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের অন্যতম হাতিয়ার। যেমন “রাষ্ট্র পাকিস্তান” একমাত্র রাষ্ট্রভাষা উর্দুর প্রচলনের মাধ্যমে সমগ্র পাকিস্তানে তার নিয়ন্ত্রণের সামগ্রিকতা জারি করতে চায়।
সমাজের কিছু বিষয়ে এক ধরনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন কিনা, যেমন সহিংসতারোধ, সেটা আলোচনার বিষয়। কিন্তু সেখানে ভাষা আসে অনেক পরে। আদৌ যদি আসে। আমার সামাজিকতার খাতিরে আমি আমার বিদ্যমান সমাজের খাদ্যাভ্যাস পোশাক আশাক রুচি অভিরুচির সাথে একধরনের সমতা তৈরি করি। সেই আপোষকে সমাজের পক্ষ থেকে একধরনের পরোক্ষ প্রভাব ভাবা যেতে পারে। কিন্তু সেখানে বাধ্যবাধকতা নেই। বা বাধ্যবাধকতা থাকাটা অনিবার্য নয়। ফলে সেখানে বিভিন্নতার সুযোগ আছে। আমি ভিন্ন অভিরুচির প্রকাশ ঘটাতে পারি সমাজে। এর ফলস্রুতি যদি হয় অগ্রহণযোগ্যতা, সেটা সামাজিক মিথস্ক্রিয়াতেই উদ্ভাসিত হবে। সেখানে আগে থেকে – “প্রকাশ করা আদৌ যাবে না” এহেন – সীমাবদ্ধতা আরোপের প্রয়োজন আছে কি?
রাষ্ট্রের কি প্রয়োজন আছে প্রচলিত খাদ্যাভ্যাস পোশাক আশাক রুচি অভিরুচি প্রমিতকরণের বা তা আরোপের? ভাষার ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন প্রযোজ্য। বহিরাগত তার নতুন সমাজের প্রচলিত ভাষাটাই তার প্রয়োজনে রপ্ত করতে চাইবে, সেটা প্রমিত হোক কি না হোক। রাষ্ট্রপক্ষের কথা বাদ দিলে সমাজের আর কারো কাছেই প্রমিতকরণ আরোপের অনুপস্থিতি তাদের মিথস্ক্রিয়াতে কোনো অসম্ভাব্যতা তৈরি করে না। এক উপায়কে সহজতর করার লক্ষ্যে বলপ্রয়োগে অন্যান্য উপায়কে রুদ্ধ করার আবশ্যিকতা তাই নেহায়েত সন্দেহযুক্ত।
পাকিস্তান যখন উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে তখন কী কী সমস্যা দেখা দেয়? এখানে সমস্যা হয় দুই স্তরের। একটি সমস্যা রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্বের সমস্যা। উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবার অর্থ বাংলাকে রাষ্ট্র অগ্রাহ্য করছে। যে বাংলাভাষাভাষী রাষ্ট্রের ভাষায় তার প্রতিনিধিত্ব চায়, সে বাংলাকেও রাষ্ট্রের ভাষা আরোপতায় বিদ্যমান দেখতে চাইবে। এই সমস্যার ইতি ঘটে বাংলাকেও রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণার মাধ্যমে। যদিও সেটা অন্যান্য সমস্যার দিকে আঙুল তুলে দিতেও ব্যর্থ নয়।
দ্বিতীয় স্তরের সমস্যাটি হলো ভাষার উপর রাষ্ট্রীয় আরোপের সমস্যা। এই সমস্যাটি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার মাধ্যমেও সমাধিত হয় না। কেননা এতে রাষ্ট্রে নিজ ভাষার প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও ভাষার উপর রাষ্ট্রের আরোপমূলক চরিত্র নাকচ হয় না। তা নিয়ে সে একরকম চুপ থাকে। ভাষার উপর থেকে রাষ্ট্রের আরোপ প্রবণতার অপসারণ ফলে আরো ভিন্ন, আরো প্রশস্ত চাওয়া।
উভয় চাওয়াই রাষ্ট্রভাষা একমাত্র উর্দু হওয়াকে সমস্যা মনে করে। এর প্রতিবাদ তথা ভাষা আন্দোলন দুটোর যেকোনো একটা সমস্যা থেকেই উৎসারিত হতে পারে।
আমাদের ভাষা আন্দোলনে প্রথম সমস্যাটাই যে রাজনৈতিকভাবে বেশি বেগবান ছিলো সেটা নিঃসন্দেহে বলা চলে। তবে দ্বিতীয় সমস্যাটা নিয়ে চেতনা যে একেবারে অনুপস্থিত ছিলো তা বলা যায় না। “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” বলার মাঝে প্রথম সমস্যার প্রতি ইঙ্গিতটা প্রবল হলেও “ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়” বলাটা দ্বিতীয় সমস্যাটার প্রতি আমাদের সচেতনতার উপস্থিতিকেই জানান দেয়।
এখানে “ওরা” কেবল পাকিস্তান রাষ্ট্র নয়, “আমার” আমি কেবল আমি বাঙালি নই, “মুখের ভাষা”টাও কেবল আমার বাংলা ভাষা নয়। এটা প্রতিটি মানুষের কথা। “ও”দের বিরুদ্ধে। যারা কেড়ে নিতে চায়। মুখের ভাষা।
মুখের ভাষা কোনটা? আমার মুখের থেকে যে ভাষা বের হয় তা-ই তো মুখের ভাষা। সে ভাষা আমার মায়ের ভাষা হতে পারে। আমার বাবার ভাষাও হতে পারে। কিন্তু কোনোটা হবারই আবার বাধ্যকতা নেই। আমার প্রথম ভাষা হবারও বাধ্যকতা নেই। প্রমিত বা প্রধান ভাষা রূপ হবারও বাধ্যকতা নেই। সে ভাষা কোনো বিশেষ প্রচলিত রূপ (যেমন আঞ্চলিক) হবারও বাধ্যকতা নেই। সে ভাষা আজ আর কাল এক থাকারই আসলে কোনো আবশ্যিকতা নেই। আপনার কাছে যা বিকৃত, আমার কাছে তা-ই মুখ-নিঃসৃত বাণী। মুখের সেই যা-ইচ্ছে-তাই বাণীটা লেখায় নিঃসৃত হলেই বা হীন হয় কীসে? আবদুল লতিফের কাছ থেকে তার বাবা-দাদা সঞ্চারিত নিজ মুখের ভাষাটা কেড়ে নেওয়া যদি না যায়, আপনার বা আমার যেকোনো “মুখের” বা “লেখার” ভাষাই বা কেড়ে নেওয়া যায় কী করে? সমস্যা হলো রাষ্ট্র সেটা কেড়ে নিতে চায়। বা যখন চায় তখন সেটা সমস্যা।
মানুষ বিভিন্নতার সমস্যাকে প্রয়োজনের তাগিদে নিজেরাই সমাধান করে নিতে সক্ষম। সেটা কী কোরে করে তার সম্পূর্ণ মডেলটি চিন্তা করতে আমরা সীমাবদ্ধ হতে পারি, কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতাটা সম্ভাবনাকে নাকচ করে না। একে আমরা বলতে পারি স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা। যে শৃঙ্খলা কোনো একক মানুষ বা গোষ্ঠির কোনো আরোপিত পরিকল্পনাপ্রসূত নয়, বরং মূলত একাধিক পক্ষ ও গোষ্ঠির মিথস্ক্রিয়া দ্বারা নির্ধারিত। সমাজ মূলত কোনো কেন্দ্র আরোপিত শৃঙ্খলার বিপরীতে এক ধরনের স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা। কেন্দ্রীয় আরোপ রাষ্ট্রের সংজ্ঞা। সমাজে তা প্রধানত অনাবশ্যক ও সম্ভবত নিবার্য।
স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা রাষ্ট্র আর তার মন্ত্রক বুদ্ধিজীবীদেরকে অপ্রয়োজনে পরিণত করে তোলে। কিন্তু মানুষের চিন্তার সীমাবদ্ধতা ও অসহায়ত্বটা রাষ্ট্রকে আবার প্রয়োজনে পরিণত করে। ঠিক যেমন তা ধর্ম ও ঈশ্বরকে পরিণত করে। কখনো রাষ্ট্র বুঝি অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজন হয়ে দেখা দেয়? তা ধর্মও বুঝি দেয় না? নাকি সেগুলোও পুনরায় সেই চিন্তার অসহায়ত্ব আর সীমাবদ্ধতাই?
গরীবের নাকি দুটোই লাগে। গরীবের পেটে ভাত নাই, তাকে ইচ্ছে মতো বলতে দিলে তো আর পেটে ভাত জুটবে না। সত্যি কথা। কিন্তু বলতে না দিলেইও কি তা অধিক জুটবে?
(২)
সবাই স্বার্থপর। কেউ কেউ কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। বাকিরা মানুষের চিন্তার সীমানায় আরোপের সন্ত্রী হয়ে হাঁটে।
পৃথিবী থেকে রাষ্ট্র ব্যবস্হা তুলে দিতে হলে একটা ফ্রেইম ওয়ার্ক এবং পরিকল্পনা নিশ্চয়ই লাগবে। এ সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন। পুরো পৃথিবী থেকে রাষ্ট্র ব্যবস্থা তুলে দিতে কত সময় প্রয়োজন এবং কিভাবে এটাকে সাফল্যের সাথে বাস্তবায়ন করা হবে ?
সমাজ , পরিবার এগুলো কি থাকবে না এগুলোকেও বিলুপ্ত করা হবে ?
@সংশপ্তক,
ভালো আলোচনার বিষয়।
রাষ্ট্রের সমস্যাটা তার বলপ্রয়োগের মনোপলিতে। রাষ্ট্র থেকে যদি তার বলপ্রয়োগের মনোপলিটা তুলে নেন, তাহলে তাত্ত্বিকভাবেই কিন্তু রাষ্ট্রের আর অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কিন্তু সমাজ ও পরিবার থেকে বলপ্রয়োগের মনোপলি বা এমনকি সহিংসতাও যদি সম্পূর্ণ তুলে নেন, তাহলেও কিন্তু তারা টিকে থাকতে সক্ষম। সহিংসতা জিনিসটা সমাজ ও পরিবারের ভিত্তি নয়, রাষ্ট্রের ভিত্তি – হ্যাঁ। ফলে রাষ্ট্রের তুলনায় চিন্তা করলে সমাজ ও পরিবার হলো blessing।
আপনি অন্যভাবে চিন্তা করছেন, যেভাবে আমি করছি না। রাষ্ট্রের সমস্যাগুলো (যদি সত্যিই সমস্যা হয়) চিহ্ণিত করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাষ্ট্র খেদানোর “পরিকল্পনায়” আমার কোনোই আস্থা নেই। সেরকমটা ভাবারও কোনো আগ্রহ নেই।
রাষ্ট্রের অস্তিত্বের মূল্যায়ন ক্রিটিকাল চিন্তাভাবনার অংশ হতে পারে, খেদানোর পরিকল্পনা একটা অ্যাক্টিভিজম, যেটাকে আমি ক্রিটিকাল আলাপ আলোচনা থেকে আলাদা রাখতে সক্ষম।
তবে এই আলোচনায় একমতকারীরা যদি কোনো প্রয়োগ নিয়ে আগ্রহী হোন, তবে প্রধান পরামর্শ হবে রাষ্ট্রযন্ত্র যেসব নিত্যনতুন আরোপের প্রস্তাব নিয়ে আসছে, সেগুলোর অপ্রয়োজনীয়তা রাষ্ট্রযন্ত্র ও তার সাবজেক্ট উভয়কে বোঝানো। তার নানাবিধ বর্ধনকে রোধ করা তাকে খেদানোর চেয়ে অনেক সহজ।
রাষ্ট্র ব্যবস্থার টেকসইত্ব নিয়ে আমার মত হলো, এটা নিজে একটি বিবর্তিত কাঠামো, এবং অনেকে সন্দেহ করেন যে বিবর্তনের ঝোঁক সম্ভবত বৃহৎ থেকে বৃহত্তর রাষ্ট্র। আর এর পেছনের মূল প্রণোদনা হলো মানুষের একটি একক কর্তৃত্বময়ের ছায়াতলে থাকার কামনা। এই সকলের বিপরীতে হঠাৎ ধরুন এটাকে বিলুপ্ত করলেন। সেটা একটা ম্যাসাকার হবে, এবং সবকিছু গুলিয়ে আবার আগের জায়গায় ফেরত যাবে। ফলে রাষ্ট্রবাদীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর বলা চলে সহিংস নৈরাজ্যবাদী/অ্যানার্কিস্ট অ্যাক্টিভিস্টরা।
এখন সমস্যা যেটা, মানুষের স্বাধীনতা বিবর্ধন ও সহিংসতার হ্রাসও সামাজিক বিবর্তনের আরেকটা ঝোঁক বলে অধুনা প্রতীয়মান হচ্ছে। রাষ্ট্রের বর্ধনের সাথে এটা একটা দ্বন্দ্ব তৈরি করে। আমরা, বলা চলে, এই দ্বন্দ্বই এখন প্রতিনিয়ত দেখছি, আরো দেখবো। রাষ্ট্র বর্তমানে মানুষকে স্বাধীনতা দেয়া আর নিজের বাড়বাড়ন্তি দুটোই দক্ষতার ম্যানেজ করতে সক্ষম হচ্ছে। মানুষ পৌনপুনিকভাবে রাষ্ট্রের চাওয়ার (will of the state) থেকে (জাতীসত্তাবোধ, জাতীয় একত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, জাতির বৃহত্তর উন্নয়ন ইত্যাদির থেকে) তার নিজের শরীর ও সম্পদের স্বাধীনতা (সহিংসতা থেকে নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত সম্পদের সংরক্ষণ, ইত্যাদির) চাওয়াতে বেশি আগ্রহী হবে, ব্যক্তিবোধ বাড়বে, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে।
এই সবের মুখে রাষ্ট্রের ডিফেন্স হলো রাষ্ট্রই ব্যক্তির শরীর ও সম্পদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। অর্থাৎ ব্যক্তি স্বাধীনতার যে কাঠামো সেটা রাষ্ট্রই সরবরাহ করে। ফলে নূ্যনতম হলেও রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের ক্ষমতা থাকাটা জরুরি। রাষ্ট্র evil, কিন্তু necessary। থমাস পেইন বা জেফারসনীয় ভাবনা যেমন। কিন্তু সেই বলপ্রয়োগের মনোপলিটার স্বরূপই হচ্ছে সে কেবল বাড়তে চায়। ফলে জেফারসনের যুক্তরাষ্ট্র আজকের সাম্রাজ্য (বেশ মোটাদাগে বললাম যদিও)।
কিন্তু কেমন হয় যদি ব্যক্তির শরীর ও সম্পদের স্বাধীনতা রাষ্ট্র বা কোনো বলপ্রয়োগকারী মনোপলি বডি ছাড়াই রক্ষা করা সম্ভব হয়? তাহলে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের আর কী আবশ্যিকতা থাকে?
বাড়ন্ত রাষ্ট্র বনাম বাড়ন্ত ব্যক্তিস্বাধীনতার দ্বন্দ্বে বিবর্তন কার পক্ষ নিবে সেটা দেখার বিষয়। আমি তাত্ত্বিকভাবে কীভাবে বিনা রাষ্ট্রে ব্যক্তির শরীর ও সম্পদের স্বাধীনতা রক্ষা পাওয়া সম্ভব, স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলার কাঠামোতে সেটার স্বরূপ উদ্ধারের চেষ্টা করছি।
এর একটা অংশ এই লেখাটা। অনেকের মতে রাষ্ট্র ছাড়া ভাষা বিপদে পড়বে। ফলে রাষ্ট্র ছাড়াও যে ভাষার সমস্যাগুলো সমাধানের ক্ষমতা মানুষের আছে, এমনকি রাষ্ট্রের অবর্তমানে ভাষা অনেক ক্ষতির হাত থেকেও যে আসলে বেঁচে যায়, সেটা দেখানোর একটা সংক্ষিপ্ত ও আলোচনাসূত্রপাতকারী প্রয়াস এই লেখাটা।
@রূপম (ধ্রুব),
বিবর্তনে যে মিউটেশনগুলো হয় তা হয় স্বতফূর্ত কিংবা বিক্ষিপ্তাকারে অনেকগুলো ভ্যারিয়েবলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে , যে কারণে বিবর্তন যথেষ্ট আনপ্রেডিক্টেবল বলা যায়। কিছু কিছু ভ্যারিয়েবলের উপর কোন নিয়ন্ত্রন চাইলেই খাটানো যায় না । এমতাবস্হায় বর্তমান ট্রেন্ড যে ভবিষ্যতে সবসময়ই একই রকম সরলরৈখিক থাকবে সেটাও নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই , অতীতেও যে তেমন ছিল সেরকম প্রমানও নেই। সামাজিক বিবর্তনে নিশ্চয়ই আবির্ভাবের পর থেকে এই আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। একটি সরল জীব থেকে একটি জটিল বহুকোষী জীবের বিবর্তনে যা হয়। এখন সেই সময়কার রাষ্ট্রের সাথে বর্তমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে যদি তুলনা করা যায় , উল্লেখযোগ্য মৌলিক পার্থক্য গুলোকে কিভাবে দেখছেন ?
@সংশপ্তক,
ঈশ্বরের প্রতিনিধির শাসনের নামে রাষ্ট্র চালানোর থেকে অনেক বিবর্তিত হয়ে জনকল্যাণের নামে রাষ্ট্র চালানোর দিকে যাচ্ছে বর্তমানে। রাষ্ট্রের সাবজেক্ট এখন রাষ্ট্রে অনেক মুখ্য (ভোট, ইনেলিনিয়েবল রাইট্স)। যদিও রাষ্ট্র তার বর্ধনের নানা উপায় খুঁজছে অবিরাম (ফোনে ও ইমেইলে আড়ি পাতা, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা, ইত্যাদি)। চট করে মাত্র এই কয়টা মনে পড়লো।
আপনি নিশ্চয়ই আরো অনেক যোগ করতে পারবেন।
@রূপম (ধ্রুব),
রাষ্ট্রের কার্যক্রমেও নিশ্চয়ই অনেক পরিবর্তন এসেছে , নাগরিক-সরকার সম্পর্কও এর বাইরে নয় । জনকল্যাণের নামে রাষ্ট্র চালানোর কথা যেমন বললেন। একজন নাগরিক হিসেবে আপনি যে দেশে থাকেন সেখানে রাষ্ট্র থেকে কোন সাহায্য সহায়তা পাওয়ার সুযোগ এ পর্যন্ত হয়েছে কি ? যেমন , শিক্ষা , চিকিৎসা সেবা , বাসস্থান ইত্যাদি ? এর বিপরীতে রাষ্ট্রকে দেয় কর প্রদান কি করতে হয়েছে আপনাকে ? জনকল্যাণের নামে রাষ্ট্র চালানোর কথা বলা হলেও আমি দেখতে চাইছি যে , বাস্তবে এর মধ্যে কতটুকু সত্যি ।
@সংশপ্তক,
আমার ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে জনকল্যাণ মেজার না করা ভালো। তারপরেও ব্যক্তিগত তথ্য থেকে সিদ্ধান্তে আসতে চাইলে আপনার নিজেরটা দিয়েই সেটা করতে কোনো বাধা দেখি না।
আপনি যে কথাগুলো তুলে বাস্তবতাটা দেখতে চাইছেন, সেগুলো প্রশ্ন আকারে না তুলে নিজেই অ্যাসার্টিভ বাক্যে প্রদান করলে আপনার দেখতে চাওয়াটা আরো সৎ (straightforward অর্থে) ও নিষ্ঠাপূর্ণ হয়।
@রূপম (ধ্রুব),
না , কেন বাধা নেই। তবে, সেক্ষেত্রে আমার মতামত নিরপেক্ষ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। আমি ‘নিরপেক্ষ’ সাজতে গিয়ে কথার কথায় রাষ্ট্রের নিন্দাবাদ করতে পারি , তবে সেটা অনেকটা নেমকহারামীর মতই হয়ে যাবে। :))
ব্যক্তিগত পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার একজন সরাসরি বেনিফিশিয়ারি হিসেবে আমি আমার অবস্থানে নিজের স্বার্থেই চাইবো যে রাষ্ট্র আরো শক্তিশালী হোক।
@সংশপ্তক,
ফ্রি লাঞ্চ সবাই চায়। কিন্তু There ain’t no such thing as a free lunch. আপনি আমি যে রাষ্ট্রীয় বেনিফিট পাই, সেগুলোর মূল ভিত্তি হলো কিছু মানুষের অনিচ্ছায় তার সম্পদ থেকে লুণ্ঠন করা – তথা কর প্রথা। এই প্রথাকে স্বেচ্ছামূলক করে দিতে রাজি আছি আমরা? থাকলে রাষ্ট্রটা একটা স্বেচ্ছামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে, ও আমার তর্ক ফুরোবে। বলপ্রয়োগমূলক এই করপ্রথা বলবৎ থাকায় রাজি আছি আমরা? তাহলে যে মানুষটি এতে রাজি নেই তার উপরে, আমরা একমতেরা, আমাদের মত বলপ্রয়োগে চাপিয়ে দিচ্ছি। এটা মব রুল ও অন্যায়। কেউ কেউ এটাকেই বলে জনকল্যাণ ও সামাজিক ন্যায় বিচার (social justice)।
কিন্তু আমার সমূহ সন্দেহ রয়েছে যে আপনি যেসব রাষ্ট্রীয় বেনিফিট ভোগ করেন সেগুলো আর দশজন যেমন করে তেমন গোছের, রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি গোছের না যা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের পেছনের কেবল মুষ্টিমেয়রা সানন্দে ভোগ করে। পরেরটা হলে তো কথাই নেই। কিন্তু আমার সন্দেহ সত্যি হলে হয়তো আপনার সুযোগ মিললেও মিলতে পারে এটা উপলব্ধি করার যে একই বেনিফিটগুলো রাষ্ট্রের অবর্তমানেও পাওয়া সম্ভব, সত্যিকারের অবাধ পুঁজিবাদে (laissez faire capitalism)। তেমনটা অবশ্য ভাবাটাই কঠিন বেশি।
ধরে নিলাম কথার কথা, সেই কঠিন কাজটাও করে ফেললেন। এখন আরেকটা কথা যেটা থাকে, সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রের বেনিফিট ভোগ করে আবার তার বিরুদ্ধে কীভাবে বলবেন? সেক্ষেত্রে এটা মনে রাখুন যে অনেকক্ষেত্রে এটা বেনিফিট নয়, একরকম জোরপূর্বকই প্রদত্ত (কারণ সেটা অন্যান্য মুক্ত সুযোগকে নষ্ট করে তৈরি করা হয়েছে)। তাছাড়া আপনি একা নন, আপনি যদি রাষ্ট্রের বেনিফিট ভোগী হোন, খুব সম্ভব সেই রকম বেনিফিশিয়ারি রাষ্ট্রের সকলেই।
দাসবালকও যে মুহূর্তে স্বাধীনতার কথা ভাবছে, সে মুহূর্তে সে তার মালিকের জোগাড় করে দেয়া খাবার থেকেই খাচ্ছে, তার সরবরাহ করা বাসস্থানেই থাকছে। এটা কি অসঙ্গতি তৈরি করে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যৌক্তিক আর্গুমেন্ট আর আর্গুমেন্ট প্রদানকারীর কর্মের অসঙ্গতি যুক্তিকে ইনভ্যালিড করে না। ইনভ্যালিড করে তেমন দাবি করাটাই একটা ফ্যালাসি। Fallacy of appeal to hypocrisy.
ফলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বেনিফিশিয়ারি থাকা অবস্থায় রাষ্ট্র ও তার অস্তিত্ব নিয়ে সমালোচনা করাটা মোটেও যৌক্তিক অসঙ্গতি তৈরি করে না, বরং ব্যক্তিগত পর্যায়ে বেনিফিশিয়ারি দেখে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমর্থন করাটাই একধরনের আনক্রিটিকাল চিন্তা হয়ে যেতে পারে।
@রূপম (ধ্রুব),
একমত। তবে , এই ফ্যালাসীর ছাতা পরিহার করতে বেশী পছন্দ করি। খুব বেশী বিপদে পরলে অবশ্য এই ছাতা ব্যবহার করতে আপত্তি নেই। যৌক্তিক আর্গুমেন্ট আর আর্গুমেন্ট প্রদানকারীর কর্মের সঙ্গতি দেখাতে পারলে মন্দ হয় না, যদিও ‘আবশ্যক’ নয়। এই ফ্যালাসীর ছাতা অতিমাত্রায় ব্যবহার করলে একটা সমস্যা সৃষ্টি হয় – মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা হ্রাস পায় যা অন্যান্য কাজের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে শুভকর নয়।
আমার পরিচিত একজন আন্তর্জাতিক ‘দারিদ্রতা বিমোচনকারী’ এবং বামপন্হী বিমানে প্রথম শ্রেনী ছাড়া ভ্রমন করেন না এবং পাঁচ তারা হোটেল ছাড়া রাত কাটান না। ব্যক্তিজীবনে প্লেবয় জীবন কাটান। কোন সমস্যা নেই কারণ ,সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যৌক্তিক আর্গুমেন্ট আর আর্গুমেন্ট প্রদানকারীর কর্মের অসঙ্গতি যুক্তিকে ইনভ্যালিড করে না। ইনভ্যালিড করে তেমন দাবি করাটাই একটা ফ্যালাসি। Fallacy of appeal to hypocrisy ।
কোন একদিন সেই ব্যক্তির নিরাপত্তার তদারকী আমাকে করতে দেয়া হলে হয়তো কিছু ‘বিপজ্জনক নিরাপত্তা ছিদ্র’ শনাক্ত করতে আমার অসুবিধা হবে। চোখে পড়লেও হয়তো খেয়াল করবো না …………………….।
@সংশপ্তক,
এবং ওই আন্তর্জাতিক ‘দারিদ্রতা বিমোচনকারী’ এবং বামপন্থীর আর্গুমেন্টগুলো নিশ্চয়ই তার জীবনাচরণ দিয়ে নাকচ করা সম্ভব নয়। (কীভাবে সম্ভব সেটা ভাবতেই তো মাথা চক্কর দিচ্ছে।)
ফ্যালাসি না এড়িয়ে কীভাবে যৌক্তিক আর্গুমেন্ট এগুনো আদৌ সম্ভব এটা আমার বোধগম্য নয়। সেই ব্যক্তির নিরাপত্তার তদারকী করার সময় তো আর তার ‘দারিদ্রতা বিমোচনকারী’ এবং বামপন্থী আর্গুমেন্টগুলোর বিপরীতে আর্গুমেন্ট দেয়ার প্রয়োজন পড়ছে না যে সেখানে তার যুক্তি ও কর্মের অসঙ্গতিটা আদৌ প্রাসঙ্গিক হবে।
যুক্তির সাথে ফ্যালাসি কোনো অবস্থাতেই মেলানোর নয়।
@রূপম (ধ্রুব),
একমত । একজন ‘ভন্ডের’ যৌক্তিক ভাবে সিদ্ধ হতে কোন সমস্যা নেই। ‘ভন্ড’ শব্দটাই একটা ফ্যালাসি।
@সংশপ্তক,
অন্যের ভুল হলে ফ্যালাসি ধরবেন, অন্যে ফ্যালাসি ধরলে তখন সেটা ছাতা হবে কেনো? ফ্যালাসি ধরাটা আগে আসে না, ফ্যালাসি ঘটাটা আগে আসে। আগে ফ্যালাসি ঘটে, তারপর মানুষ ফ্যালাসি ধরে। ফলে ফ্যালাসি বেশি বেশি ধরতে দেখলে হয় ফ্যালাসি ধরাটা ভুল হয়েছে, নয়তো অপরজন বেশি বেশি ফ্যলাসি তৈরি করছে। দোষটা যে ফ্যালাসি যে ধরছে তার ঘাড়ে যায় না।
মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি নিয়ে আলাপ করতে হবে আপনার সাথে বুঝি নি। আর্গুমেন্টে তাতে কী আসে যায়?
@সংশপ্তক,
বাদ দেন। আপনার কথাটা বুঝেছি। 😛
লেখাটি বুঝার জন্য আমাকে দুইবার পড়তে হল।
রাষ্ট্র কিন্তু তা করে। বাংলাদেশে যে কোন পোশাক পরে যে কোন জায়গায় যাওয়া যায় না। লুঙ্গি পরে কেউ অফিস করে না। এমনকি সরকারী অনেক পদ মর্যাদায পায়জামা পাঞ্জাবিও গ্রহণযোগ্য নয়।
খাদ্যাভাসের বিষয়টি এভাবে বলা যায় যে,রাষ্ট্রীয় কোন ভোজ সভায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খাদ্যাভাস কিন্তু মোটেও বিবেচিত হয় না।
@গীতা দাস,
তা তো ঠিকই। রাষ্ট্র তো তা করেই অনেক সময়। আরো অনেক কিছুই রাষ্ট্রীয় হয়ে উঠছে। কথাটা অবশ্য ছিলো “রাষ্ট্রের কি প্রয়োজন আছে” সেসবের?
@রূপম (ধ্রুব),
বা “রাষ্ট্রের” হয়তো প্রয়োজনই পড়ে। তা রাষ্ট্রের এসব করাটা আমাদের জন্যে কতোটা জরুরি হয়?
কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার কথা বললেন? তির, তীর্থ, সতীর্থ, তীর্থঙ্কর কি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার বাইরে ছিল? আপাততঃ এইটুকু। আধিব্যাধি নিয়ে আর নয়। উত্তর দিতে বিলম্ব হলে, ধরে নেবেন আমি মুদির দোকানে খদ্দেরদের সাথে পুঁজি বর্ধনে পুঁজ নির্গত করার কাজে ব্যস্ত।
রাষ্ট্রের মৃত্যু কামনায়, জলের ভেতরে দ্বীপ, সংগঠিত হোক, এই কামনা।
ধন্যবাদ।
@স্বপন মাঝি,
আপনি আলোচনাটা বাইনারিতে এনে একটা দুটো উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ করার ফ্যালাসি উৎপন্ন করতে পারেন। আমি বিবিধ মাত্রার কথা ভাবছি। আমি পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষা মূলত কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার বাইরে ভাবছি।
মানুষের স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা অবশ্য পরিকল্পকদের যেভাবে অপ্রয়োজনে পরিণত করে তোলে, তা তাদের জন্যে অস্বস্তিকরই বটে।
স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা (spontaneous order) নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করতে পারেন, দেখবেন ভাষার বিকাশে স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলার পর্যবেক্ষণ কোনো নতুন ঘটনা নয়।
আপনার সুবিধার জন্যে কিছু সূত্র দেই। উদ্ধৃতিগুলো সূত্রের উপলক্ষ্য কেবল।
হ্যাঁ, বানানো ভাষা তো আছেই। সেটা নিয়ে শেষ সূত্রে বলা এই কথাটি প্রণিধানযোগ্য –
আপনার আর মুদির দোকানির মধ্যকার এবং যেকোনো দুজন মানুষের মধ্যকার উৎপাদন ও সম্পদের স্বেচ্ছাকৃত বিনিময়ের কামনায়। বিনিমিত সম্পদ সংরক্ষণের অধিকার কামনায়। এর বিরুদ্ধে গণলুণ্ঠনের, ব্যক্তির বিরুদ্ধে গোষ্ঠির গণধর্ষণের মৃত্যু কামনায়।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার কেন এরকম মনে হলো, পত্রিকার পড়ার সময় হরণ করে, ভাবছি। ছিঃ শব্দটা নিজের উপর প্রয়োগ করে বলতে ইচ্ছে করছে, নীরব থাকাই ভাল।
আপনি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার কথা বললেন আর আমি
আপনার কেন মনে হলো, আমি এইটুকু দিয়ে, সবটুকু প্রমাণ করতে চাচ্ছি? আপনি কি ভেবেছেন, দু’এক লাইন দিয়ে বাজিমাত করতে চাচ্ছি?
আপনি “আপাততঃ এইটুকু” বাতিল করে মনের মাধুরী মিশিয়ে একখানা মন্তব্য করে বসলেন।
এবার একটা প্রশ্ন করিঃ
কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার কথা যে বললেন এবং বলতে গিয়ে যে যে উদ্ধৃতি দিলেন, তো আমি “বাড়ির পাশে আরশি নগর” যাকে মনে হয় আপনি একদিনও দেখেন নি; অনুরোধ করছি সিদ্ধান্ত নেবার আগে অন্যমত/ভিন্নমত একটু দেখে নিনঃ
http://forum.banglalibrary.org/topic1507.html
http://banglasemantics.net/works.html
ভাল থাকুন, কল্যাণ হোক।
@স্বপন মাঝি,
আমি বলেছি ফ্যালাসি উৎপন্ন করতে পারেন। তা নাও পারেন। কথা জোর করে গায়ে মাখছেন। আপনি যখন জানতে চেয়েছেন “তির, তীর্থ, সতীর্থ, তীর্থঙ্কর কি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার বাইরে ছিল” তখন আমিও গায়ে মেখে বলতে পারতাম যে এগুলো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার ভেতরে না বাইরে ছিলো তা নিয়ে আমি কি আদৌ কিছু বলেছি? আলাপ করা যায় এমন কোনো মন্তব্য করুন।
@রূপম (ধ্রুব),
প্রথম মন্তব্যে ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থের জগতে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গিয়েও পারিনি।
দ্বিতীয় মন্তব্যে ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর’এর দু’টো লিঙ্ক দিয়ে দিলাম। ভেবেছিলাম, আপনি নিজেই বরং কলিম খান ও হীরা চক্রবর্তী ( পরে তিনি কলিম খানের গবেষণায় যোগ দেন) কর্মের উপর একটুখানি চোখ বুলিয়ে আসবেন। তা হলে হয়তো একটু কথা বলা যাবে।
আর আপনি বললেন
আপনার উপদেশ খুব করে মনে রাখবো।
কল্যাণ হোক।
@স্বপন মাঝি,
কেমন হয় আমিও যদি ভেবে থাকি যে আপনি নিজে লিংক দেয়ার আগে প্রথমে আমার দেয়া সূত্রগুলোতেই একটু চোখ বুলিয়ে আসবেন? তা হলে হয়তো একটু কথা বলা যাবে? তেমনটা আমি ভাবছি না। সময় হলে নিশ্চয়ই দেখবেন। আমার বক্তব্য আমি দিয়েছি। উত্তরে আপনার সূত্র আপনিও দিয়েছেন। মাঝখানে ছিঃ টিঃ তুলে যেসব বললেন, সেসবের আলাপে আগ্রহী নই সেটাই বলতে চেয়েছি।
১.রাষ্ট্র সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য একটি সার্বজনীন ভাষার উপস্থিতি বাঞ্ছনীয়। হতে পারে তা বিদেশি ভাষা কিংবা সংখ্যাগুরু জনসাধারণের ভাষা।
২.আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, উর্দু ভাষা পাকিস্তানে বসবাসরত সংখ্যাগুরু জনসাধারণের মাতৃভাষা ছিলনা। বাংলা, পাঞ্জাবি এমনকি বেলুচ ভাষা হতেও উর্দু ভিন্ন। এটা আসলে অনেকেই “চেপে” যান। যাই হোক উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার মূল উদ্দেশ্য হল জিন্নাহর “স্বপ্নের” কাগজে কলমের ইসলামিক রাষ্ট্র বাস্তবায়ন (পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর বেশিরভাগই পশ্চিমা সংস্কৃতি বাহক এবং নন প্রাক্টিসিং মুসলিম ছিলেন।)। ভৌগলিক পাকিস্তান যেমন রাষ্ট্র হিসেবে অদূরদর্শী ছিল তেমন উর্দুকে ওভাবে ঘোষণা করাও। কোন ব্যক্তির কিংবা দলের “রোমান্টিক” স্বপ্ন নিয়ে কোটি কোটি মানুষের সাথে পুতুলের ন্যায় আচরণ করা ঠিক না, মানুষের ইচ্ছাটাকে গুরুত্ব দেওয়াই গণতন্ত্র। ১৯৫২ সালের অদূরদর্শী ঘোষণার পর, আন্দোলনের মুখে ১৯৫৬ সালেই বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষার করা হয়।
৩.অনেকেরই জানা নেই, রাষ্ট্র ভাষা প্রশ্নটি পাকিস্তানের স্বাধীন হবারো অনেক আগে, অবিভক্ত ভারতেই ঝামেলা হয়েছিলো, সেই ১৯৩৭ সালে চেন্নাইতে। ভারতের নেতারা এর গুরুত্ব বুঝতে পেরে ১৯৫০ সালে ঘোষণা দেননি। ধীরে চল নীতি গ্রহণ করে ১৫ বছর সময় নেন সাংবিধানিক ঘোষণা করার জন্য। তবে লাভ হয়নি। দক্ষিণ ভারতের অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর প্রবল বিরোধিতার কারণে ১৯৬৫ সালে হিন্দিকে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করা যায়নি। এটা নিয়ে দাঙ্গা হয় এবং হতাহতের ঘটনাও ঘটে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে এ নিয়ে কোন বিরোধিতাও হয়নি। দক্ষিণ ভারত এবং পশ্চিম বঙ্গের টিভি চ্যানেল গুলো দেখলেই বোঝা যায় পশ্চিম বঙ্গের হিন্দি প্রীতি এবং দক্ষিণ ভারতের অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর হিন্দি বিমুখতা। বাংলাভাষার দায়িত্ব বোধয় বাংলাদেশকেই নিতে হবে। বড়ই আইরনি!!!! ভারতের ডি-ফ্যাক্টো প্রধান সরকারি ভাষা ইংরেজী এবং তা ভারতের নিজের বৃহত্তর স্বার্থেই।
৪.পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বৃহৎ ভাষার কাছে স্থানীয় অন্যান্য ক্ষুদ্র ভাষা বঞ্চনার স্বীকার।
৫.দুটি কিংবা ততোধিক বৃহৎ ভাষা পাশাপাশি থাকলে আবার অসুস্থ প্রতিযোগিতাও চলে, যেমন একসময় পাকিস্তান-ভারতে হয়েছিল। এখন হচ্ছে ইউক্রেন, লাটভিয়া এবং বেলজিয়ামে। কানাডার কুইবেক অঞ্চলের ব্যাপারটাতো সর্বজনবিদিত। অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
@সংবাদিকা,
একদম ঠিক কথা। সেটাই বলছিলাম যে – এইসব সর্বজনীনতা-ফতা মূলত রাষ্ট্রেরই বাঞ্ছা। তবে কিনা বেঠিকভাবে পরিচালনা করতেও অনেক সময় রাষ্ট্রের এইসব বাঞ্ছা জাগতে পারে। :-s
@রূপম (ধ্রুব),
এখানে দোষ তো রাষ্ট্রের নয়, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাদের।
পুনশ্চ
এখানে কিছু আলোচনা এবং মন্তব্য আমাকে, জর্জ অরওয়েলের “রাজনীতি এবং ইংরেজি ভাষা” এবং রিচার্ড ডকিন্সের “উত্তরাধুনিকতাবাদের নগ্নীকরণ” শীর্ষক দুটি লেখার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। দুটিই কালোত্তীর্ণ। কতগুলো বিষয় মনে হয় আসলেই সার্বজনীন :-s
কিছু কিছু “মন্তব্যকে” এপিস্টেমিক প্যারাডক্সের নিরীক্ষায় ফেলাও অপ্রাসঙ্গিক হবেনা , যাইহোক উক্ত বিষয়ের বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকগণ এটা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন; দর্শন-যুক্তিবিদ্যার layperson দের জন্য এত গভীরে যাওয়ার চেষ্টা বৃথা তথা অনুৎপাদনশীল সময় ক্ষেপণ :-s
জর্জ অরওয়েল এবং রিচার্ড ডকিন্স তাদের সহজ লেখার মাধ্যমে কতগুলো মানুষের “বিশেষ বিশেষ” কিছু হতে যাওয়া, ভাব প্রকাশ, চাওয়া এবং তা করতে যেয়ে, কর্ম এবং ভাষাগত “অভিজাত্যের” বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস নিয়ে খুব সুন্দর আলোচনা করেছেন।
খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। অবশ্যই যথারীতি মন্তব্যগুলো সহ। বোঝা যাচ্ছে অনিবার্য কারনেই কঠিন সব শব্দগুলো নির্বাচন করছেন এমন জমাট করে লিখতে। পড়ার গতি যাতে কমাতে হয়; যা আবার কিনা অনিবার্য কারনে নয় :))
আমার ধারনা ‘অগ্রহণযোগ্যতা’ কথাটা সংস্কৃতিতে অতি গুরুত্বপূর্ন। তা ভাষা হোক অন্য বা অন্য যে কিছুই হোক না কেন। আজকের সভ্যতায় সমাজের বেশিরভাগ প্রমিত ভাষার মত ব্যপার মেনে নিয়ে আপোষ করলেও সেটা ওই পদ্ধতিকে ভর করে ক বছর টিকে থাকবে সেটাই মূল কথা। গ্রহনযোগ্যতা পেলে তা চর্চা হবে হবে, আদর পাবে শুধুমাত্র গ্রহণযোগ্যতার কারনেই। টিকেও থাকবে বহুকাল। যা গ্রহনযোগ্য হবে না, তা ঝরে যাবে। সীমাবদ্ধতা আরোপের প্রয়োজন বা অপ্রোয়জন আসলেই কি আলোচ্য বিষয়? সংস্কৃতিতে ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো বেশ ধীর আর লম্বা হয় বলেই তো জানি।
ক
প্রমিত রঙ্গ কইরা তরা, কইত্থ্য ভাষায় ক,
মনের সুখে বাংলা ভাষা, পরাণ ভইরা ক,
চাষাভূষা কামার কুমার, ক্ষ্যাতে বইয়া ক,
য্যাম্বে কবি ক বাঙ্গালী, বাংলায় কথা ক।
@কাজী রহমান,
আলোচনা গ্রহণ-অগ্রহণের যোগ্যতা প্রকাশের প্রধান মাধ্যম।
@রূপম (ধ্রুব),
বুঝলাম, কিন্তু ভাষার মত এত শক্তিশালী উপাদানকে তো গ্রহন বর্জনের বিশাল সময়ের একটা ব্যাপ্তির ভেতর দিয়ে যেতে হয়। হয় না? চটজলদি এর উত্তর পাবার উপায় আছে কি?
@কাজী রহমান,
আমার ধারণা আমরা আলোচনা করে বের করতে পারি – ভাষার উপর প্রয়োগমূলক আরোপ ভাষার হেদায়েতে আদৌ আবশ্যক কিনা। অনাবশ্যক হলে সেটা পরিহার্য। কারণ প্রয়োগ সর্বদা সম্ভাবনার পরিমাণকে হ্রাস করে। পরিহার্য আরো বিশেষত এ কারণে যে আরোপের প্রকৃত উদ্দেশ্য আসলে অন্য অন্যায়ের সংকল্পে নিহিত থাকে।
ভাষা নিয়ে যত রাজনৈতিক এবং তাত্ত্বিক আলোচনা হয় এর প্রথম বলিটা হয় জ্ঞান অর্জন । একজন শিক্ষার্থীকে কয়টা ‘উপভাষা’ শিখতে হবে জ্ঞান অর্জনের জন্য ? এখন যেমন প্রমিত ইংরেজী জানলেই পৃথিবীর বেশীরভাগ জ্ঞানের পুস্তক পড়া সম্ভব কিন্তু যে যার মত ইংরেজী লেখা শুরু করলে সেই সব ভাষা কি সবাই বুঝতে পারবে ? তিরিশ জন পি এইচ ডি শিক্ষার্থী তিরিশ রকম মনমত ভাষায় থিসিস জমা দেয়ার পর সেগুলো মূল্যায়নের পূর্বেই যে কাজে অধ্যাপককে গলদঘর্ম হতে হবে সেটা হচ্ছে থিসিসগুলোকে বোধগোম্য ভাষায় অনুবাদ করা। জ্ঞানের পূস্তকগুলোকে এই হাজারটা ব্যক্তিগত উপভাষা থেকে বিশ্বের কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের জন্য অনুবাদ কে করবে ?
রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে রেনেসঁসের আগ পর্যন্ত এক রকমের এনার্কীজমই বহাল ছিল ইউরোপে। লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা (LINGUA FRANCA) হিসেবে লাতিন এবং গ্রীককে কার্যতঃ বাদই দেয়া হয় সেসময়। এর ফলাফল আমাদের সকলেরই জানা। এই সময়টা জ্ঞানের জগতে অন্ধকার যুগ হিসেবে কুখ্যাত। আইজ্যাক নিউটন তার প্রিঞ্চিপিয়া (PRINCIPIA) গ্রন্হাবলী আপন মাতৃভাষা মধ্য ইংরেজীতে রচনা না করে লাতিনে করেছিলেন যাতে যে কোন মধ্য ইংরেজী না জানা অন্য কেউ তা পড়ে বুঝতে পারে। বিশ্বের এক প্রান্তের জ্ঞান অন্য প্রান্তের সাথে আদান প্রদানের জন্য কিছু প্রমিত ভাষার প্রয়োজন আছে। এটা না থাকলে পৃথিবীতে মধ্যযুগের মত আবার অন্ধকার যুগ নেমে আসবে। একবার ভেবে দেখুন যে , বৈজ্ঞানিক লাতিন প্রতিশব্দের বদলে যে যা খুশী শব্দ ব্যবহার করলে কি রকম সমস্যা সৃষ্টি হবে । পাইলট যখন তার বিমান থেকে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কাছে চট্রগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কিছু জানতে চাইবে তখন চীনাভাষী এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল কি জবাব দেবে ।
যারা মানুষ নিয়ে রাজনীতি করেন , তারা মানুষের সার্বিক কল্যানের চাইতে নিজেদের রাজনৈতিক মতবাদকেই বেশী গুরুত্ব দেন।
@সংশপ্তক,
প্রমিতকরণ অকাম্য নয়। স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা সেটা করতে সক্ষম। বলপ্রয়োগমূলক আরোপ নিবার্য।
সত্য। এবং কল্যাণের নামে বলপ্রয়োগমূলক আরোপের ঝাণ্ডাবাহী যারা, তাদের ক্ষেত্রে কথাটা অধিক সত্য।
মানুষের সার্বিক কল্যাণ চাহনেঅলারাও মানুষ নিয়ে রাজনীতিকরাদের বাইরে নন।
@রূপম (ধ্রুব),
কেউ বল প্রয়োগ করবে এবং অন্য কেউ বল প্রয়োগ করে সেটা প্রতিহত করবে – এটাই নিয়ম।
কেউ কারো দয়ার উপর নির্ভর করে না। কান্নাকাটি করে বল প্রয়োগ থামানো যায়? :))
@সংশপ্তক,
না। তবে যারা বলপ্রয়োগ করার আগে সেটা জাস্টিফাই করার জন্যে মানুষের সার্বিক কল্যাণের নামে কান্নাকাটি করে, তাদের সেটাকে রহস্য উন্মোচন করে একটা উত্তর দেয়া যায়। 😀
@সংশপ্তক,
যে বল প্রয়োগের বিপক্ষের রাজনীতি করে, সে বল প্রয়োগ করে উত্তর করলে সঙ্গতি থাকে কী করে?
বল প্রয়োগের পেছনে রাজনীতি কাজ করে। মানুষের গণসমর্থন একটা বড় ফ্যাক্টর। ফলে বলপ্রয়োগের অনাবশ্যকতা মানুষকে বোঝানোর যে রাজনীতি, সেটাও এখানে মুখ্য, যেটা বিনা বল প্রয়োগেই সবচেয়ে বেশি সঙ্গতিপূর্ণ থাকে। গণসমর্থনের অভাবে বলপ্রয়োগের রাজনীতিকারী পিছু হটে। কান্নাকাটি আর বলপ্রয়োগমূলক উত্তরের মাঝখানে অনেক অনেক রাজনৈতিক মাধ্যম আছে।
@রূপম (ধ্রুব),
গন সমর্থন এক ধরনের বল। অতএব , বল প্রয়োগ থাকছেই।
@সংশপ্তক,
মতান্তরে কান্নাকাটিও একধরনের বল, কারণ কান্নাকাটি গণ সমর্থন তৈরি ও প্রকাশের একটি উপায়। :-[
@রূপম (ধ্রুব),
অর্থ,কেউ বল প্রয়োগ করবে এবং অন্য কেউ বল প্রয়োগ করে সেটা প্রতিহত করবে – এটাই নিয়ম।
@সংশপ্তক,
কেবল যখন যেকোনো উত্তরকেই বলপ্রয়োগের সংজ্ঞায় ঢুকাতে সক্ষম হবেন। যদিও আপনিই প্রথমে বলপ্রয়োগমূলক ও অবলপ্রয়োগমূলক (কান্নাকাটি) উত্তরের একটা বিভাজনে আগ্রহী ছিলেন। এখন সব একাকার হয়ে যাচ্ছে নিয়মটার ঝাণ্ডা খাঁড়া রাখতে। :-[
@সংশপ্তক,
আপনার উদাহরণগুলো আমার লেখাটাকেই সবল করলো।
আমি কিন্তু প্রমিতকরণের বিপক্ষে বলছি না, বলছি রাষ্ট্রীয় আরোপের অনুপস্থিতিতে মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবেই সেটা তৈরি করতে সক্ষম। পাইলট নিজের প্রয়োজনেই চীনের আকাশে ঢোকার আগে মান্দারিন শিখে যাবে, অথবা দুজন একমত হবে ইংরেজি (শিখে) বলতে। নিজেদের তাগিদে তারা যে সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম, সেখানে রাষ্ট্রের আরোপ অনাবশ্যকে পরিণত হয়। সেটাই লেখার প্রতিপাদ্য।
বৈজ্ঞানিক প্রতিশব্দের বা জার্নালের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমি যদি উৎকৃষ্ট উপায়ে যোগাযোগ করতে চাই, তাহলে আমি যা খুশি কেনো বলতে যাবো যা বোঝা অসম্ভব হবে? অর্থাৎ লক্ষ্য করুন, যোগাযোগের প্রচেষ্টা স্বতোপ্রণোদিত, এমন নয় যে রাষ্ট্র আরোপ করে না দিলে মানুষ এই সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে সক্ষম নয়। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক স্ট্যান্ডার্ডগুলো কথা চিন্তা করুন। অনেকগুলোই কিন্তু নামকরা কারণ মানুষ সেগুলো অধিক ব্যবহার করে। তার মানে এই নয় যে অন্য স্ট্যান্ডার্ডগুলো মাঝে সাঝে ব্যবহার হয় না। এখানে একটা প্রচ্ছন্ন বিবর্তন কাজ করে, যেটা নিজেই কোনো সার্বিক আরোপ ছাড়া উৎকৃষ্ট মাধ্যমটা বেছে নিতে সক্ষম।
ফলে আপনি আমার লেখার বিরুদ্ধ কোনো তথ্য বা মত এখনো দিয়ে উঠেছেন বলে মনে হচ্ছে না।
@রূপম (ধ্রুব),
“রাষ্ট্রীয় আরোপের অনুপস্থিতিতে” স্রেফ সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে এটা কি সম্ভব? বুঝতে পারলাম না।
আমি একটা সিনারিওর কথা ভাবছি। এ সব বিষয়ে আমি খুব একটা জানি না, ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। ধরুন ঐ পাইলট তো আর শুধু চীনে যান না, আরও অনেক দেশে যান। ধরুন আরও ২০টি দেশে যান, যারা ২০টি ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। তাহলে কি ঐ পাইলট এখন ২০টি ভাষা শিখবেন, বা না শেখা পর্যন্ত ফ্লাই করতে পারবেন না? কিম্বা ঐ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে কি ২০টি দেশ থেকে আসা ২০টি ভাষাভাষী পাইলটদের সাথে কথা বলতে ঐ সবগুলি ভাষা শিখতে হবে? অন্য বিশটি দেশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকেও কি ২০টি ভাষা শিখতে হবে? ইংরেজি (শিখে) কথা বলার ব্যাপারে একমত হওয়ার কথা বলছেন? সবাইকেই যে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে ইংরেজি শিখেই কথা বলতে হবে, অর্থাৎ অন্য কোন ভাষা নয় – নয় যার যার নিজের ভাষা – ইংরেজিকেই হতে হবে সেই লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্র বা কোন সুপ্রান্যাশনাল বডি (ছদ্মবেশে রাষ্ট্র) ছাড়া আর কে নেবে এবং ইউনিভার্সালি (ইউনিভার্সালিই হতে হবে, নয়তো মরতে হবে বহু লোককে!) তা আরোপ করবে? সমস্ত পাইলট আর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা নিজেরা-নিজেরা আলাপ করে ঠিক করবে? আর তাদের ঐ বিদেশী ভাষায় ট্রেনিং দিবে কে? কার খরচে সেই ট্রেনিং হবে? রাষ্ট্র (বা প্রতিষ্ঠান) দিবে, নাকি তারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মত নিজের পয়সায় ইংরেজি শিখবে?
কোন না কোন ভাবে কেন যেন ‘আরোপের’ গন্ধ এখানে রয়েই যাচ্ছে বলে মনে হয়।
@আইকোনোক্লাস্ট,
ভালো পয়েন্ট।
ধরুন আপনি একটা প্রাইভেট রেডিও চ্যানেলে ঢুকলেন যেখানে তাদের পলিসি হচ্ছে আড়জে ভাষায় কথা বলা। এটা একধরনের আরোপ। এটাকে আমি বলপ্রয়োগমূলক আরোপ বলছি না। কারণ আপনি স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে সেখানে কাজ করতে গেছেন। ভালো না লাগলে আপনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসবেন। আড়জে ভাষায় বলতে কেউ আপনাকে বাধ্য করবে না। আপনি নিজের অর্জিত গণ্ডিতে আপনার পছন্দ মতো ভাষায় কথা বলতে পারবেন। যেমন নিজের রেডিওতে নিজের ইচ্ছেমতো ভাষায় বললেন। ভাষা বিভিন্নতা পেলো, রেহাইও পেলো।
অন্য দিকে ধরুন রাষ্ট্র আরোপ করলো যে সকল পাবলিকেশনে প্রমিত বাংলা ভাষায় লিখতে হবে। সেটাকে আমি বলপ্রয়োগমূলক আরোপ বলবো। কারণ আপনি চাইলেও আপনার নিজের অর্জিত গণ্ডিতে – যেমন ছাপানো বইতে – নিজের ভাষায় লিখতে পারবেন না। ফলে এটা বলপ্রয়োগমূলক আরোপ। এটা কোনো বাছাইয়ের সুযোগ রাখছে না। এতে ভাষা একটা আরোপিত বদ্ধতায় পর্যবসিত হলো।
তেমনি এয়ারলাইন্সদের কোনো গোষ্ঠি একসাথে যদি একমত হয় যে তাদের পাইলটেরা ইংরেজিতে বলবে, সেটা তাদের স্বেচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত। কোনো এয়ারলাইন্স সেই গোষ্ঠিতে থাকতে বাধ্য না। সে তার প্রয়োজনের খাতিরে সেই গোষ্ঠির নিয়মনীতির সাথে একমত হতে পারে। তার মুরোদ থাকলে সে নিজের মতোও চলতে পারে, সেটার ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে।
স্বাধীনতার অবশ্যই দাম আছে, সেটা চোকাতে তো হয়ই। কিন্তু রাষ্ট্র যখন বলপ্রয়োগমূলক আরোপ করে, তখন দাম চুকিয়েও স্বাধীনতা অর্জনের সুযোগ থাকে না। সুযোগ সিম্প্লি থাকে না। ফলে প্রাইভেট অর্গানাইজেশনের পন্থা যেমন আমার উপায় না হলে পথ দেখো, রাষ্ট্রের উপায় হলো আমার উপায় এবং কেবল মাত্র আমারই উপায়, অন্য কোনো উপায়ের অস্তিত্বই নেই। একারণে আমি রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগমূলক আরোপের ব্যাপারে সন্দেহযুক্ত হয়েছি। সন্দেহের উৎস কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভাষা শুদ্ধিমূলকতা থেকে। সেখান থেকে ভাষার উপর রাষ্ট্রের অন্যান্য আরোপতাও যে আসলে অনাবশ্যক সেই চিন্তায় অগ্রসর হচ্ছি।
বিদেশি ভাষা ট্রেইনিং কে দিবে এই ব্যাপারটা আপনি উল্টো করে দেখছেন। কিন্তু জনগোষ্ঠিতে যারা ঐ ভাষায় পারঙ্গম তারাই ঐ সেবায় নিয়োজিত হবে। ঐ সেবা আকর্ষণীয় হলে আপনিও ঐ ভাষা শিখে প্রস্তুত হতে চাইবেন। আপনার ভালো না লাগলে ঐ ভাষা শিখবেন না। আপনি ভাবছেন পাইলট আগে পাইলট হয়ে গেছে, এখন সে ভাষার সমস্যায় পড়েছে। এটা উল্টো করে দেখা। প্রস্তুতেরাই বরং পাইলট হবে এখানে।
@রূপম (ধ্রুব),
এ ব্যাপারটায় আমিও কৌতুহলী। আমি বিশেষ করে জানতে চাই রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগমূলক আরোপের বাস্তব ও সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলিকে কতদুর পর্যন্ত এলিমিনেট করা সম্ভব। সবটাই কি সম্ভব? আপনার কি মনে হয়?
যাহোক, প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের কোন সমিতি/এসোসিয়েশন আর প্রাইভেট স্তরে নেয়া তাদের সিদ্ধান্তের যে কথা আপনি বললেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আমার জানা মতে দুনিয়ার বেশির ভাগ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রনাধীন/মালিকনাধীন (জানায় ভুল থাকলে শুধরে দিয়েন)। ভাষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হলে এদেরকেও লাগবে, শুধু এয়ারলাইন্সগুলির বেসরকারী এসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত দিয়ে হবে না। বিশেষ করে যেখানে পাইলট্রা সবচেয়ে ক্রিটিকাল বিষয়ে মূলত এদের সাথেই ইন্টারএ্যাক্ট করবে। সুতরাং কান টানলে মাথা আসার মত রাষ্ট্রনিযুক্ত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সূত্র ধরে রাষ্ট্রের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি তথা রাষ্ট্র ও তার আরোপনীতিও চলে আসবে। এড়ানোর উপায় দেখছি না। আপনি অবশ্য বলতে পারেন উড়াউড়ির সমস্ত ব্যাপার থেকেই রাষ্ট্রকে বাদ দেয়া উচিত এবং প্রাইভেট উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। তবে সেক্ষেত্রে এই আলাপটা শুধু ভাষার ক্ষেত্রটা ছাড়িয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা লেভেলে চলে যাবে বলে মনে হয়, যেখানে সম্ভবত এক পর্যায়ে জীবনের সর্বক্ষেত্র থেকেই তাহলে রাষ্ট্রকে বাদ দেয়া যাবে না কেন, বা আদৌ রাষ্ট্রের অস্তিত্ত্ব থাকার কোন প্রয়োজন আছে কিনা এবং ব্যক্তির স্বাধীনতার লক্ষ্যে সবকিছুই প্রাইভেট অর্গানাইজেশনের হাতে কেন ছেড়ে দেয়া হবে না (না পোষালে বা না বনলে এবং মুরোদ থাকলে নিজেই নিজের পথ দেখার পরম স্বাধীনতাসহ) – সেইসব প্রশ্নও উঠবে। এই মুহূর্তে আর কোন বিকল্পের কথা মাথায় আসছে না। রাষ্ট্রের অস্তিত্ত্বকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন এমন কিছু মানুষ মনে হয় আছেন, তবে আমি তাদের যুক্তিগুলির সাথে তেমন পরিচিত নই। কিন্তু আমি যতটুকু বুঝি, রাষ্ট্রকে বিলোপ করে বলপ্রয়োগ বা আরোপচর্চা থেকে মানুষের মুক্তি ঘটবে না – বরং আরও বেশি করেই বলপ্রয়োগচর্চার ফাঁদে পড়ে যাবে মনে হয়। কারন রাষ্ট্র না থাকলে তখন বড় বড় কর্পোরেশন বা ওয়ারলর্ডদের একটা সংঘাতমূলক এনার্কি বা সমঝোতামূলক অলিগার্কি বা মাফিয়োক্রেসি তাকে রিপ্লেস করবে। ইতিহাসই তার প্রমান। অনেকটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আবির্ভাবের পূর্বাবস্থার মত আরকি, সোজা বাংলায় মাৎসান্যায় বা জোর যার মুল্লুক তার। এই পরিস্থিতিতে অল্প কিছু ব্যক্তির মুক্তি বা স্বাধীনতা লাভ হয়তো হবে, কিন্তু সংখ্যারিষ্ঠেরই হবে না। সুতরাং ‘সার্বিক কল্যান’ আপনার যতই ছদ্মবেশী বলপ্রয়োগমূলক আরোপচর্চা মনে হোক বা অপছন্দনীয় হোক, ব্যক্তিস্বাধীনতা আর সমষ্টির কল্যানের মধ্যে রেফারি হিসেবে ব্যক্তিভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা অবধারিত বলেই মনে হয়। এবং এই জটিল পৃথিবীতে এই রেফারিত্বের হাত অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়াটাও প্রায় অনিবার্য বলেই মনে হয়। অনেকে অবশ্য রাষ্ট্রের ভূমিকা পুরোপুরি অস্বীকার না করেও এর কর্মপরিধি ও প্রভাব সর্বোচ্চ পরিমানে সীমিত রাখতে চান যাতে স্বাধীনতার পরিধি সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় বিস্তৃত হয় এবং ব্যক্তি নিজের পছন্দ ও মুরোদ অনুযায়ী স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মনে হয় এই মতের অনেক সমর্থক আছেন। তবে এই মতাবলম্বীদের অন্য অকথিত উদ্দেশ্যটা (অন্তত উদ্দেশ্যনিরপেক্ষভাবে ফলাফলটা) মনে হয় এই যে – যোগ্যতম ব্যক্তিরাই সর্বোচ্চ স্বাধীনতা, অধিকার, সুযোগসুবিধা ও লাভালাভের প্রাপক হবেন এবং বাকিরা (সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তিরা) তাদের নির্ধারিত উচ্ছিষ্টের করুণাপ্রার্থী হবেন – যদিও তাদের ঘাড় ভেঙেই আসলে যোগ্যতমদের লাভালাভের অবকাঠামোটি তৈরি হবে, তারা সেই দায়িত্ব নিবেন না এবং সংখ্যাগরিষ্ঠে্র মাথায় কাঠাল ভেঙে তাদের সমস্ত স্বাধীন দুই নম্বরীর (লাভটুকু বাদ্দিয়ে) ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্বও ঐ সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের ঘাড়েই চালান করে দিতে হবে – শুধুমাত্র এই দুই কাজের মধ্যেই রাষ্ট্রকে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। অন্য ভাষায় বললে, রাষ্ট্রবিহীণ যোগ্যতমের মাফিয়াতন্ত্রই বজায় থাকবে – শুধু তার মাফিয়াসুলভ চেহারাটুকু দেখা যাবে না কারন পেটোয়াবাহিনীর দায়িত্বটা রাষ্ট্র নিয়ে নেয়ার ফলে সেটা আড়াল হয়ে যাবে।
অন্যদিকে সার্বিক কল্যানের নামে অনেক সময় রাষ্ট্রের বেশে যে একটা ব্যবস্থাপক গোষ্ঠী আর তাদের কায়েমী স্বার্থ তৈরি হয় এবং সেই স্বার্থও যে রাষ্ট্রের আছে কাঙ্ক্ষিত নিরপেক্ষ রেফারিং ও এনাব্লিং পরিবেশ সৃষ্টির বদলে একটা রেস্ট্রিক্টিভ, ডিজেম্পাওয়ারিং ও ডিজেব্লিং পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে সেটাও বিবেচ্য বটে। তবে তা আমার মতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আর ব্যক্তিস্বাধীনতা আর ব্যক্তি নিয়েই সৃষ্ট সমষ্টির কল্যানের মাধ্যমে ব্যক্তিকল্যান নিশ্চিত করার একটা আপোষমূলক কাঠামোর মধ্যেই বিবেচ্য। এই উদ্দেশ্য পুরোপুরি সাধন করতে হলে এই আপোষের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত সীমা-মোতাবেক রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগমূলক আরোপ (ব্যক্তি নিয়েই সৃষ্ট সমষ্টির কল্যানের মাধ্যমে ব্যক্তিকল্যান নিশ্চিত করার জন্য) যেমন অবধারিত, তেমনি সেই আরোপের মধ্যে সরাসরি ব্যক্তিক ও সমষ্টির ভায়া হয়ে ব্যক্তি কল্যানের মধ্যে একটা সুচিন্তিত ভারসাম্যরক্ষার প্রয়াসও পূর্বারোপিত হতে হবে এবং আরোপের পূর্বনির্ধারিত সীমা ও চরিত্রের সম্ভাব্য লঙ্ঘণের ক্ষেত্রে কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থাও সেখানে এমবেডেড থাকতে হবে। আমার মতে এখানে বিতর্কযোগ্য কিওয়ার্ডটা ‘ভারসাম্য’ – ‘বলপ্রয়োগ’, ‘আরোপ’ বা ‘রাষ্ট্র’ নয়। জ্ঞানের ঘাটতির জন্য এই ‘ভারসাম্য’ বা এর চরিত্র ও প্রতিটি ক্ষেত্রে এর সীমা সম্পর্কে আমি সুস্পষ্ট, বিশদ, নিশ্চিত, দ্ব্যর্থহীণ কিছু বলতে পা্রছি না। তবে সাধারণ ভাবে এটুকু হয়তো সাহস করে বলতে পারি যে, শেষ বিচারে সমাজে সংখ্যগরিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গের চেতনা, জ্ঞান, সাহস, কর্মোদ্যম, প্রয়োজনীয় সঙ্ঘবদ্ধতাশীলতা, চরিত্র, নীতিবোধ, মূল্যবোধ, ত্যাগস্বীকারে স্পৃহা, আর হ্যাঁ – সার্বিকভাবে বিদ্যমান সংগঠিত বলের ভারসাম্যে বলের ভার কোনদিকে – সেইসব বাস্তবতার উপরেই প্রথমোল্লিখিত ‘ভারসাম্যের’ চরিত্র ও সীমা নির্ভর করবে।
@আইকোনোক্লাস্ট,
আপনার আলোচনার অনেকটাই চমৎকার যৌক্তিকভাবে এগিয়েছে।
যেখান থেকে দ্বিমত হবার বেশি সুযোগ আছে, সেখান থেকে শুরু করি।
“করবে”র অবধারিতায় না গিয়ে বরং “করতে পারে”তে আমি একমত হতে পারি।
আবার নাও করতে পারে, যদি অবধারিতাকে অস্বীকার করি। একটা প্রধান কারণ হলো কর্পোরেটিজম হলো রাষ্ট্রাধীন মনোপলি ক্যাপিটালিজম ও ক্রনি ক্যাপিটালিজমের সৃষ্টি। বর্তমানে তারা টুউ বিগ টু ফেইল। ফলে তারা বেইলআউট পায়, যেটা মানুষের থেকে লুণ্ঠিত টাকা। তদুপরি ব্যাংক লোন পায়। ব্যাংক এতো লোন দেয় কী করে? তাকে দেয় ফেডারেল ব্যাংক। ফেডারেল ব্যাংকের এতো টাকা কই থেকে আসে? টাকা ছাপায় সে। টাকা ছাপালে কী হয়? আপনার জমানো এক হাজার টাকার প্রকৃত মূল্য রাতারাতি এক হাজারের চেয়ে কমে আসতে পারে। অথচ সেখানে আপনার কোনো দায় ছিলো না। অর্থাৎ সেটা আরেক নীরব লুণ্ঠন। এইসব রাষ্ট্রাধীন ফ্যাসিলিটির অভাবে কর্পোরেটদের এমন মহীরুহ হয়ে টিকে থাকা কঠিন হবে। তাদের বর্তমান এই বেপরোয়া একরোখা ভাবটা স্টেট স্পন্সর্ড।
ফলে নির্বিষ উপায়ে কর্পোরেটিজম টিকবে না দেখে একটা অপশন হতে পারে যে তারা সহিংসতার দিকে ঝুঁকবে। যেটা আপনি বললেন ওয়ারলর্ড। সেটা বেশিদিন টিকবে না, কারণ নিজের মূলধনে যুদ্ধ অলাভজনক আর অবিরাম ধ্বংসও অলাভজনক কারণ একই রিসোর্স (মানুষ ও তার সম্পদ) তারা উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারতো। ফলে তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তারা উৎপাদনের পরিবেশ তৈরি করে নিয়ে বরং উৎপাদনকারীদের থেকে লুণ্ঠন করবে, যেটাকে বললেন সমঝোতামূলক অলিগার্কি বা মাফিয়োক্রেসি। সেটা দুয়েকটা চক্কর নিয়ে তারপর আবার উপনীত হতে পারে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায়। সমঝোতামূলক অলিগার্কি অলরেডিই রাষ্ট্র। কিন্তু কী ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা হবে সেটা? তাদেরকে জনকল্যাণের কথা বলে টিকতে হবে। আধুনিক যুগে খোলা বন্দুক দেখিয়ে রাষ্ট্র টেকানোর মুরোদ নেই কোনো ওয়ারলর্ডের। ফলে রাষ্ট্র টিকছে আধুনিক যুগে কোন মূলধনকে ভিত্তি করে? বন্দুক? তার চেয়েও বেশি মানুষের বিশ্বাস যে রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে জনকল্যাণ পাওয়া সম্ভব ও রাষ্ট্রহীনতা অসম্ভব।
এখন এই লুপে একটা বড় হোল হলো মানুষের আস্থা অনাস্থার প্রসঙ্গ। আস্থাটা না থাকলেই কিন্তু উৎপাদনকারীদের থেকে বন্দুকের নলের মুখে আর অন্যদের জনকল্যাণের লোভ দেখিয়ে লুণ্ঠন পদ্ধতি কাজে দিতো না। কারণ এটা সেটা বলে অথবা বন্দুকের মুখে, কোনো উপায়েই মানুষ লুণ্ঠন করতে দিতে রাজি নয়। কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা প্রয়োজন, এবং তার জন্যে মানুষ খরচ করতে রাজি আছে। সেক্ষেত্রে ওয়ারলর্ডেরা একটা কম্পিটেটিভ নিরাপত্তা ইন্সুরেন্স বাজার তৈরি করাটাই অধিক লাভজনক মনে করতো। সেটা রাষ্ট্র ব্যবস্থার চেয়ে অনেক বেশি ন্যায়মূলক ও কল্যাণকর হবার সম্ভাবনা থাকে।
অনেক ব্যবসাই একটা সমঝোতামূলক সিন্ডিকেট সিস্টেম তৈরি করে বটে, কিন্তু অনেক ব্যবসাই আবার বাস্তবে মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলকও হয়। সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে বন্দুকধারীদের নিরাপত্তার ব্যবসা। তাদের খুব বড় প্রকৃতি হলো সমঝোতামূলক অলিগার্কিতে পরিণত হওয়া। এটা মানা যেতে পারে। কিন্তু আমি এটা অবধারিত মেনে নিতে নারাজ। যেমন ধরুন, রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনাস্থাশীল আর্ম্ড সিভিলিয়ানের সামনে একটা সমঝোতামূলক অলিগার্কি তৈরি ভীষণ কঠিন হবে বলে মনে করি। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনাস্থাশীল আর্ম্ড সিভিলিয়ান কীভাবে তৈরি হবে সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। এগুলো পরিকল্পনা করে হয় না। মানুষের সামাজিক বিবর্তনকে পরিকল্পনা করে নিয়ন্ত্রণ একটা ভ্রান্ত ধারণা। কেবল রাষ্ট্রই পারে এর একটা ছায়া তৈরি করতে। 😛 এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ আমরা যেটা করতে পারি, রাষ্ট্র যেসব অকারণ বর্ধনমূলক প্রস্তাব তৈরি করে, সেটার অনাবশ্যকতা রাষ্ট্রযন্ত্র আর তার সাবজেক্টকে বোঝানো। ইভেন সেটাও বড় কঠিন ও প্রায় অসম্ভব কারণ ম্যাস মেন্টালিটি অন্য আর দশটা ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত, যার মধ্যে প্রধানটা হলো রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের মনোপলিযুক্ত রাজনৈতিক কাঠামো ইটসেল্ফ।
মারি রথবার্ডের দ্য লিবার্টারিয়ান ম্যানিফেস্টো অধ্যায় দুই থেকে পড়া শুরু করতে পারেন। এর প্রথম পরিচ্ছেদটা অনুবাদ করেছিলাম। দেখতে পারেন।
আপনার সীমিত সরকার ব্যবস্থার পরিণতি সংক্রান্ত আলোচনাটার সাথে দ্বিমত আছে। সত্যিই যদি সরকার কেবল মানুষের নিরাপত্তাটাই দেখে আর বাজারে নাক না গলায়, তাহলে ইন প্রিন্সিপাল আপনি যেমন বললেন তেমন হওয়ার কথা না। বাজার অর্থনীতি জিরো সাম গেইম নয়, সেখানে সকল অংশগ্রহণকারীর লাভের সুযোগ থাকে। কিন্তু যোগ্যতম আর উচ্ছিষ্ট এগুলো বাজারকে জিরো সাম গেইম হিসেবে দেখা বয়ানের অংশ। মানুষের সম্পদের পার্থক্য থাকবে। কিন্তু সেটা মূল সমস্যা নাকি দারিদ্র্য মূল সমস্যা? প্রশ্ন হচ্ছে দারিদ্র্যটা বর্ধিত রাষ্ট্রে বেশি থাকবে নাকি সীমিত রাষ্ট্রে বেশি থাকবে। কম সম্পদের মানুষ কোনটাতে বেটার অফ থাকবে?
সীমিত রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে আমার মূল সমালোচনা হচ্ছে, সেখানে প্রধান যে অন্যায়টা, অন্যের অমতে তার কাছ থেকে লুণ্ঠন তথা করপ্রথা, সেটারই স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ চায় বলে যারা চায় না তাদের থেকে লুণ্ঠনের বৈধতা দেয়া হচ্ছে। এটা মব রুল ও অন্যায়। একটা বড় অন্যায়ের স্বীকৃতি আরো দশটা অন্যায়ের পথ করে দেয়। Ludwig von Mises যেমন বলেছেন –
মনোপলি ক্ষমতার প্রধান চরিত্র – সে বাড়তে থাকে।
@সংশপ্তক,
রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে রেনেসঁসের আগ পর্যন্ত এক রকমের এনার্কীজমই বহাল ছিল ইউরোপে। লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা (LINGUA FRANCA) হিসেবে লাতিন এবং গ্রীককে কার্যতঃ বাদই দেয়া হয় সেসময়। এর ফলাফল আমাদের সকলেরই জানা। এই সময়টা জ্ঞানের জগতে অন্ধকার যুগ হিসেবে কুখ্যাত।
ইউরোপের তথাকথিত রেনেসাঁস পরবর্তী ক্ল্যাসিক্যাল ঐতিহাসিকগণের রোমান্টিক ভাবনায় সাহিত্যিক ভাবধারায় ইতিহাস রচনার এক অন্যতম প্রিয় শব্দ “dark age” যার প্রথম ব্যবহারকারী ছিলেন এক ক্যাথলিক যাজক, যিনি খুব সঙ্গত কারণেই এই শব্দটি ব্যবহার করেন। আধুনিককালে আকাদেমিক আলোচনায় এই ভুল এবং ডেরোগেটোরি শব্দগুচ্ছটি সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
@সংবাদিকা,
Appeal to authority ফ্যালাসী হয়ে গেল না ? নাকি উইকিপিডিয়াতে এক নজর দেখেই এখানে তুলে দিলেন ? উইকি মাইনিং না করে বরং ফিরিস্তি দিতে পারতেন যে, পঞ্চম শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত জ্ঞান বিজ্ঞানে কি অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে যে, এসব কারণে এ সময়টাকে অন্ধকার যুগ বলা যাবে না। সাহিত্য নিয়ে আমার বক্তব্য ছিল না বরং সেটা ছিল ‘জ্ঞান বিজ্ঞানের’ বিষয় নিয়ে। আদিম যুগেও দেয়াল চিত্রের মত নৈর্ব্যক্তিক সাহিত্য খুঁজে পাওয়া যায় , তাই এখন বলে বসবেন না যে অসভ্য যুগকে আদিম যুগও বলা যাবে না। ঐ ধরণের বিকল্প ধারণা অবশ্য বিরল নয় যেমন , কিছু এনিমেল এ্যাক্টিভিস্ট ওরাং ঔটাং কিংবা চিম্পাঞ্জীকেও মানব স্টেইটাস দিতে ইচ্ছুক এদের জিনোমের সাথে ‘ন্যুনতম পার্থক্যের’ কারনে। কিন্তু এক শতাংশ জিনোমে পার্থক্য যে অনেক বড় বিষয় এটা এদের কে বোঝাবে ?
বক্তব্য খন্ডন করবেন জেনুইন তথ্য দিয়ে । ন্যারেটিভ অথবা কনজেকচার দিয়ে নয়।
@সংশপ্তক,
এখানে উইকি মাইনিং করে উইকি হতে আমি কিছুই উদ্ধৃতি করিনি; যা লিখেছিলাম এটা আমার তাৎক্ষণিক মন্তব্য। আমি মনে করি মূল ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে আমার সংক্ষেপিত আর্গুমেন্টের উপস্থাপন পর্যাপ্ত; তথাপি, আমার যৌক্তিক অবস্থান পরিষ্কার ভাবেই বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তবে এখন “dark age” বিষয়টির আরও সম্প্রসারণ করতে হচ্ছে মনে হচ্ছে-
বিভিন্ন দেশে কিভাবে ইতিহাসকে বিকৃতি, পরিমার্জন কিংবা পাশ কাটানো কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে ছোট করে দেখানো কিংবা বড় করে দেখানো হয় এটা সবারই জানা। এই বিংশ শতাব্দীর আগে আসলে বিজ্ঞানভিত্তিক ইতিহাসই রচনা হয়নি। ইতিহাস বলতে যা ছিল তা হল জাতীয়/রাজন্য মহাকাব্যর অংশ, ক্ষৌণীশ পঞ্জিকা, ভ্রমণ কাহিনীর অংশ অথবা লোক কাহিনীর সার। “রোমান্টিক ভাবনায় সাহিত্যিক ভাবধারায় ইতিহাস রচনার” বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি, ইতিহাস রচিত হত সাহিত্য লেখনীর ধারায় যেখানে আবেগ এবং বাস্তব মিশে একাকার হয়ে যেত। আধুনিক যুগেও এর খুব ব্যতিক্রম হয়েছে মনে হচ্ছে না, বেশি দূর যেতে হবেনা, এই ভারত উপমহাদেশের ৮টি দেশের প্রাথমিক-স্নাতকোত্তর শ্রেণীর বইয়ের পারস্পরিক বৈপরীত্য একই সাথে দেখলে মনে হবে সবগুলোই ফিকশন, একই ইতিহাস এবং একই ঘটনার উপর রচিত কিন্তু কি বৈচিত্র্যময় রচনাবলী।
পৃথিবীর সমস্ত ইতিহাসই রচিত হয়েছে সেই একই ধারায়- যেন, যেখানে রাবণ বরাবরই অসুর এবং রাম ত্রাণকর্তা… ইতিহাস সবসময়ই বিজয়ীদের। তেমনি কখন কি প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয় কিন্তু তার পরবর্তী ব্যবহার এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়না। সব কিছুই ঘুরে ফিরে সেই রাজনীতি কেন্দ্রিক যেন সামাজিক ইতিহাস পর্যালোচনা শুধু আকাদেমি গুরুদের মধ্যই সীমাবদ্ধ। এ যেন এস্ট্র ফিজিক্স-নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নিয়ে সর্বসাধারণের আগ্রহের একটা মিরর ইমেজ, যেখানে বর্ণনার সঙ্গে দু-একটি সমীকরণ উপস্থাপন করলেই গ্ল্যামার হারিয়ে ফেলে।
তথাকথিত “dark age” তৎকালীন ইতিহাসবিদদের/ জ্ঞান গুরুদের অন্যতম প্রিয় শব্দ। এমন আরও শব্দ আছে যেমন “barbarian”, “horde” ইত্যাদি। বাংলাতেও এমন কিছু শব্দ আছে।
বিজ্ঞানের উন্নয়ন সাধন বলতে, শুধুই একাডেমিক ভাবে একমুখী মৌলিক/ভৌত বিজ্ঞানের উন্নয়ন ধরা টা ভুল। প্রি-কলাম্বাইন পশ্চিম গোলার্ধের বিভিন্ন জাতি অনেক ক্ষেত্রে পূর্ব গোলার্ধের থেকে অনেক কিছুতেই এগিয়ে ছিল কিন্তু তারা কার্যকরী ভাবে চাকার ব্যবহার করতে শেখেনই, তাই বলে কি তারা ডার্ক এজে ছিল।
পশ্চিমে রোমান শাসনের যে আসলেই ইতি ঘটেছে সেটা কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত মানুষ বোঝেই নাই কেননা এর পূর্বাংশ বহাল তবিয়তে ছিল। রোম সাম্রাজ্যর সেরা সময়ে কিংবা রোমের এনেক্সেশন এরও আগের পশ্চিম ইউরোপের প্রেক্ষাপট, ৭ম-৮ম শতাব্দীর উক্ত অঞ্চলের প্রেক্ষাপটের সাথে খুব একটা পার্থক্য ছিলনা। মৌলিক জ্ঞানের চেষ্টা যতটুকু হত তা রোমের তথা ইউরোপের পূর্বাংশেই হত। মূল যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে “ছাপাখানা” প্রসারের পর। রেনেসাঁর সময়ও “জ্ঞান” সমাজের উপর শ্রেণীর মানুষের কাছে সীমাবদ্ধ ছিল। তারা তাদের বিভিন্ন স্বার্থে এটাকে ব্যবহারও করতেন; “dark age” এসবেরই সৃষ্টি।
যে কালকে জ্ঞান বিজ্ঞানের কাল হয় বলা হয় সেখানেও শুভঙ্করের ফাঁকি। মানব সভ্যতার শুরু হতে, প্রতিটি যুগেই কিছু না কিছু জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নয়ন হয়েছে এবং কিছুদিনের জন্য স্থবির হয়ে গিয়েছে। আবার উনবিংশ-বিংশ শতাব্দীতে এটা ভিন্ন মাত্রায় এগিয়ে গিয়েছে। আবার এই জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নয়নের যুগেও এমন অনেক কিছুই হয়েছে যা ক্লাসিক্যাল ইতিহাসবেত্তাগণের আরেক প্রিয় শব্দ “বর্বরতা” কেউ হার মানায়। তাই বলে এটা-ওটা-সেটা কোনটাই অন্ধকার যুগ নয়। “dark age” কেবলই একটা ক্ল্যাসিকাল রোম্যান্টিক catchphrase। ইউরোপ-উত্তর আমেরিকা হতে এশিয়া-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকা জ্ঞান বিজ্ঞানে এই মূহুর্তে অনেক পিছিয়ে তাই বলে কি এটাকে “dark age” / “অন্ধকার যুগ” বলা জায়েজ।
আধুনিক ইতিহাসবেত্তাগণ খুব সঙ্গত কারণেই “dark age” শব্দ গুচ্ছটি ব্যবহার করেননা। এটা রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতেই হোক।
@সংবাদিকা,
আমি রোমান সাম্রাজ্য আর রেনেসাঁর মাঝখানের সময়টাকে নৈরাজ্য বলা যায় কিনা সেটাতে একটু আলোকপাত করবেন?
আর একটা বিষয় একটু খোলাসা করবেন। আপনার আলোচনায় আমি কনফিউজ্ড। মনে হচ্ছে সভ্যতা এগিয়েছে সেটা বলা মুশকিল। এমন কিছু বলছেন কী? একেবারে শক্ত কিছু মানদণ্ডকে (মানবউন্নয়নের কিছু সূচককে) বিবেচনায় নিলে একটা ট্রেন্ডতো পরিলক্ষিত হয়ই। সহিংসতার রকমও পাল্টেছে। কিন্তু তুলনামূলক বিচার করলে অধিক সংখ্যক মানুষেরই জীবনযাত্রার মান (সেই মানদণ্ডে) বেড়েছে, নাকি? সেগুলোকে ব্যবহার করে কিছু কিছু সময়কালকে তুলনামূলকভাবে অন্ধকারাচ্ছান্ন চিহ্ণিত করা যায় না কি?
@রূপম (ধ্রুব),
কাকে যে কি জিজ্ঞাসা করেন ? ৪০০ – ১৬৫০ খৃঃ হাইপেশিয়া , কোপার্নিকাস , গ্যালিলিওর মত অসংখ্য মানুষকে হত্যা এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বিজ্ঞান চর্চার জন্য। জোয়ান অব আর্কের মত হাজার হাজার নারীদের সাথে পেরে উঠতে না পেরে ডাইনী আখ্যা দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে । লাইব্রেরী জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে শত শত । এসব কিছুই করা হয়েছে সরকারী মদদে । এপোলজিস্ট হয়ে মধ্য য়ুগীয় বর্বরতাকে বৈধতা দিতে এখানে ‘উইকিফিলিয়াদের’ ঔরফে ছদ্ম বুদ্ধিবৃত্তিকদের কপি পেস্ট আনাগোনায় আপনি অবাক হলেও আমি হইনা। বেশীরভাগ সময় চক্ষু লজ্জার কারণে কিছু বলি না কারণ তখন ঠগ বাছতে গা উজার হয়ে যাবে। এরা কিছু না বুঝেই আবোল তাবোল লিখে দেয় এবং প্রশ্ন করার পর নতুন করে উইকি ঘেটে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে। একজন কাগুজে পিএইচডি ধারীর কপি পেস্ট এখানে ধরে দেয়ার পর সেই থেকে তিনি লাপাত্তা। তদন্ত করলে দেখা যাবে যে, কোন খান থেকে থিসিস জালিয়াতি করে ডিগ্রী নিয়েছে। আমাদের এখানে তো প্রায় দিনই থিসিস জালিয়াতী ধরা পড়ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর তো মন্ত্রীত্বই চলে গেল এ কারণে।
ও হ্যা , Renaissance এর ইংরেজী এবং ফরাসী উভয় উচ্চারনই ‘রেনেসঁস – এখানে উচ্চারন শুনুন। অন্যদিকে, ‘রেনেসাঁ’ এক শ্রেনীর বাঙালী ছদ্ম বুদ্ধিজীবিদের উদ্ভাবিত একটি বিকৃত শব্দ যার অস্তিত্ব পৃথিবীর কোথাও নেই।
@সংশপ্তক,
Renaissance এর উচ্চারণ নিয়ে ওয়াকিবহাল আছি। রেনেসাঁ লেখাটা আমার বাংলা একাডেমীপনা বলতে পারেন। বহুলপ্রচলিততার স্বার্থে। আপনার উচ্চারণমূলকতাকেও সাধুবাদ জানাই। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
বাংলা একাডেমী বাংলা ছেড়ে ফরাসী শব্দ নিয়ে কেন মাতবরী করতে যায় ? :))
যাহোক , গুরত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে আসা যাক । এক শ্রেনীর ব্লগার যে প্রশ্নের সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিহীন মন্তব্য করে চলেছে সেটার কি হবে ? তাদের গোলাপের উপর প্রশ্ন করলে কিংবা লেখাটা গোলাপের উপর হলে তারা ফুটবল নিয়ে উত্তর দেয়। নদী নিয়ে লেখা হলে গরু নিয়ে এসে হাজির হয়। হয় উইকি থেকে নতুবা ছাপানো বই থেকে কপি পেস্ট আরকি । পুনরায় প্রশ্ন করলে বাইম মাছের মত বার বার পিছলে যায় উত্তর না দিয়ে কিংবা উত্তর দেয়ার ( বা পড়ার) ক্ষমতা না থাকলে । এমন নয় যে তারা অফটপিকে যাচ্ছে । যেটা এখানে হচ্ছে সেটা হল , বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু না বুঝে বা না পড়েই শুধু মন্তব্য করার খাতিরে মন্তব্য করা – অন্যকে দেখানে যে , এই দেখ আমি মুক্তমনায় লিখি ! আমি এটাকে প্রতারণা বলব যা অন্য ব্লগারদের সাথে করা হচ্ছে এবং এটা কোন স্বাস্থ্যকর আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে না।
@সংশপ্তক,
তেমন হলে তো খারাপ নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রত্যুত্তর আর ভুল ধরিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় কী বলেন? ফারুক সাহেবের কথা চিন্তা করুন। উনি যতোই মাথার উপর দিয়ে যাওয়া কথা বলুক, আমাদের পক্ষ থেকে ওনার যুক্তির ভুল ধরিয়ে দেয়ার খাটাখাটনিটা করাটাই কিন্তু ওনার লেখার মূল ধরনটাকে পাকাপোক্তভাবে উন্মোচিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছে। ওটা না করে স্রেফ ফাউল বলে ইগনোর করলে বিষয়টা অতোটা ফয়সালা হয়তো হতো না।
@সংশপ্তক,
আরেকটা ব্যাপার। সংবাদিকার ব্যাপার জানি না, তবে ইন জেনারেল, শব্দ সংক্রান্ত পলিটিকাল কারেক্টনেস কিন্তু সত্যিই একটা ট্রেন্ড বর্তমানে। উত্তরাধুনিক চর্চা বলতে পারেন। সদর্থেই শব্দটা ব্যবহার করলাম। কালচারাল মার্ক্সিজম, কালচারাল রিলেটিভিজম, এগুলোর সম্মুখীন হওয়া ছাড়া ইতিহাস ও সমাজ নিয়ে আলোচনা অধুনা একটি কঠিন ব্যাপার। এখানে বর্বরতা রিলেটিভ কন্সেপ্ট। যদিও বর্বরতা শব্দটার ব্যবহার যে ডেরোগেটরি, সেটা আবার অবজেক্টিভ ব্যাপার। যুক্তির অবজেক্টিভিটি নাই। একেক গোষ্ঠি একেকভাবে ভাবতে পারে। তাদের যুক্তির সেট আলাদা। আপনার কাছে যা ফ্যালাসি, অন্যের কাছে সেটাই যুক্তি। বুর্জোয়ার যুক্তির প্রোলিতারিয়েতের চেয়ে ভিন্ন। একে বলে polylogism। ফলে উত্তরাধুনিক ও মার্ক্সিস্ট লেখালেখিতে ফ্যালাসি ট্যালাসির ধার কেউ ধরে না, লিখে যায়। যদিও অ্যানালিটিকাল ফিলোসফির লোকেরা তাদের যৌক্তিক অসঙ্গতি ধরিয়ে দিতে দিতে ক্লান্ত। এদের লেখায় ফ্যালাসি দেখলে ধরিয়ে দিবেন। এর বেশি কিছু করার নেই। 🙁
@রূপম (ধ্রুব),
আমার মূল আর্গুমেন্ট “dark age” শব্দ গুচ্ছটি নিয়ে, “barbarian” কিংবা “horde” বাংলা ভাষায় “উপজাতি” শব্দটিও একই রকম ডেরোগেটোরি। এসব শব্দ প্রথম প্রয়োগ করা হয় কোন গবেষণা না করেই। বৃহৎ কোন একক রাষ্ট্রে না থাকাটা নৈরাজ্য বলা যায়না। আর যুদ্ধ বিগ্রহের কথা বললে সর্বশেষ শান্তিকালীন সময় ইউরোপে এসেছে ১৯৯১-৯২ সালে মাত্র ২০ বছর পার হয়েছে। রোমান সাম্রাজ্যর আগে কিংবা পরে সেই অর্থে ইউরোপ কখনই একক রাজনৈতিক শাসনের নিচে আসেনি। রোমানদের মত পরে অনেকেই চেষ্টা করেছে সফল হয়নি। এখন আবার চেস্টা চলছে তবে ভিন্ন ভাবে। এক কালে গ্রীক রাও পারস্যর অধিবাসীদেরকে “বর্বর” বলত যদিও প্রায় সকল দিক থেকে ঐ সময় পারস্য গ্রীস হতে এগিয়ে ছিল।
অন্ধকারাচ্ছন্ন কিভাবে বলা যায়। সমসাময়িক কালের অবস্থার প্রেক্ষিতেই কোন কালকেই অন্ধকারাচ্ছন্ন বলে ট্যাগ করা যায়না। আমি ইতিহাসবেত্তা নই তবে আধুনিক ইতিহাসবিদেরা এখন এই শব্দ ব্যবহার করেননা অত্যন্ত সঙ্গত কারনেই।
অফটপিক
১।বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে। যুদ্ধে ১১ সেক্টর বাংলাদেশকে ভাগ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সামরিক বাহিনী। এই তথ্য দেওয়ার পর কেউ যদি বলে উইকিপিডিয়া কিংবা অন্যান্য এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে টুকলিফাইয়ের অভিযোগ আনে তাহলে আর কি বা বলার আছে…… এনসাইক্লোপিডিয়াতে থাকেনা এমন গুরুত্বপূর্ন কিছু আছে! 😀
২।একটি কথা মনে পরছে; সুনামির পর পর পত্র পত্রিকায় যখন “সুনামি” শব্দটি বেশি আসা শুরু করল তখন এক আঁতেল পাঠক (প্রথম আলো পত্রিকায় সম্ভবত) প্রস্তাব করলেন সুনামি লেখার আগে একটি “ৎ” সংযোগ অবশ্যিক। কেননা জাপানিরা নাকি তেমন উচ্চারণ করে। উক্ত পাঠকের জানা ছিলনা ভিন্ন ভাষা হতে কোন শব্দ ব্যবহার করতে প্রয়োজন হলে তা ভাষা ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের উচ্চারণ অনুযায়ী সামান্য বদলানো হয় কখনও হুবুহু নেওয়ার চেষ্টা করা হয়না।“Renaissance” “Bourgeois” কিংবা “Rendezvous” শব্দের উচ্চারণ ইংরেজিতে সামান্য ভিন্ন। আনুষ্ঠানিক ভাবে ফরাসি ভাষা না শেখা কোন বৃটিশ কিংবা বাংলাদেশি কখনও ফরাসি উচ্চারণে মুখের ভেতর দিয়ে ফরাসীদের মত Renaissance উচ্চারণ করতে পারবেনা, অবশ্য অনেকে এই পার্থক্য ধরতে পারেনা। চাইনিজ কিংবা অ্যারাবিয়ান রা তো আরও অনেক দূরে।
লগ আউট হবার আগে আরেকটি অফ টপিক-
রোমানদের হাতেও লাইব্রেরী পোরাবার এবং জ্ঞানের জগতের অনেক পাইওনিয়ার হত্যার ঘটনা আছে। অনেকে রোম সাম্রাজ্য নিয়ে অতি রোমান্টিসিজম এর কারণে এর অনেক নেগেটিভ / দুঃখজনক দিক দেখতে পায়না কিংবা চায়না।
@সংবাদিকা, রোমানরা বই পুড়াতেই পারে, বই পুড়ানোর চেয়ে লক্ষগুণ বাজে কাজ তারা করেছিলো, তারা জীবন্ত মানুষের একে অপরকে হত্যার উতসব বিনোদন হিসেবে উপভোগ করতো কোলোসিয়ামে। রোমানরা খুব ভালো এই দাবি মনে হয়না কোন রুচিশীল মানুষ করবে। আজকের তুলনায় শুধু সভ্যতাগত কারণেই ২০০০ বছর পুর্বের রোমানরা পরিগণিত হবে মোর অর লেস পশু হিসবে। এই জন্যই সেইটা বলা হয় প্রাচীণ যুগ তাই না? আপনার আর্গুমেন্টটা আসলে কিসের বিরুদ্ধে? ডার্ক এইজ বলাই বাহুল্য বলা হচ্ছে বর্তমানের সাথে তুলনা করে। আঠারোশো শতকে লস অফ মোশন আবিষ্কার করে বিংশ শতকে ডীপ স্পেইসে তারা পাঠিয়েছে প্রোব, ঊনিশশো শতকে ইভোলিউশ আবিষ্কার করে বিংশ শতকে সমগ্র পৃথিবী হতে নির্মুল করেছে পোলিও, এই অভুতপুর্ব অগ্রগতি যেই সময়ে অর্জিত হয়েছে তার পুর্ববর্তি একটা সময়কে সেই সময়ের মানুষ বলাই বাহুল্য ডার্ক এইজ বলতেই পারে তুলনামুলকভাবে। ডার্ক এইজে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষ পুড়ানো হতো ডাইনী হিসেবে, মানুষকে হ্যাঙ্গ ড্রোন এন্ড কোয়র্টার করা হতো। যুক্তি দেখানো যায় যে এখনও বহু বিভতসতা পৃথিবীতে আছে, কিন্তু সেগুলো কি পুর্বকার কোন সময়ের বিভতসতার কাছে খুবই খুবই নগন্য না? আপনার দাবী কি, তখনকার সময়কে ডার্ক এইজ বলা যাবে না, নাকি বর্তমানকেও ডার্ক এইজ বলতে হবে? বর্তমান বলতে আমি বোঝাচ্ছি এমন একটি মুহুর্তের কথা যখন কিনা আপনার জীবন বাঁচানোর জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে চলছে হাজার হাজার ক্যান্সার রিসার্চার?
@আল্লাচালাইনা,
যেসব উদাহরণ দিলেন সেসব শূন্য হতে আবিষ্কৃত হয়নি। তারও আগের, হাজার বছর ধরে বিভিন্ন সময়ের এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং গণিতের সম্মিলিত ফসল। তবে অবশ্যই এখন গতি অনেক অনেক গুণ বেড়েছে।
এ সম্পর্কে বলার কিছুই নেই। এ সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা স্কোপের বাহিরে। বিভিন্ন ডাটা দেখার অনুরোধ করছি। “বীভৎসতা” কি কম !!! তাই কি??? একটু ভেবে দেখবেন; পপুলার নিউজ-ভিউজ নয়, ক্রিটিক্যালি।
চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেক বেশি আধুনিক। মানুষের মৃত্যুর হার অনেক কমেছে আগের যেকোন যুগ হতে। কিন্তু আগেই বলেছি এসব হঠাত হয়নি। এখন এর উন্নয়নের গতি অনেক মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। আজ হতে এক হাজার বছর তথা ৩০১২ সালে যখন পৃথিবী আরো বেশী অকল্পনীয় ভাবে বদলে যাবে তখন কি তার থেকে পশ্চাদ পদতার জন্য ২০১২ সালকে dark age বলা যৌক্তিক হবে???
ধর্ম অপ্রোজনীয় নিশ্চয়ই নয়, ধর্ম ও অধ্যাত্নবাদ অসংস্কৃত মানুষের কনফিডেন্সের উতস। ধর্মহীন পৃথিবীর স্বপ্ন আমি অন্তত ব্যক্তিগতভাবে কখনও দেখি না, প্রত্যাশা করি শুধু এমন মানুষজনই বিশ্বজুড়ে সংখ্যায় বাড়ুক যাদেরকে কিনা ধর্ম ও আধ্যাত্নবাদের মতো প্রায় হাস্যুকর জিনিষপত্র হতে কনফিডেন্স খুঁজতে না হয়, কনফিডেন্সের এর চেয়েও ভালো কোন উতস তারা আবিষ্কার করতে পারে।
🙂 রাষ্ট্রের প্রশ্নে আপনি বহতই ডিস্টার্বড দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটা ঠিক রাষ্ট্র নয়, সমস্যাটা হচ্ছে প্রশাসন। আমরা ভার্টিব্রেট, চার বিলিয়ন বছরের নিরবিচ্ছিন্ন ইতিহাস আমাদেরকে বানিয়েছে সোশ্যাল জীব, প্রত্যেকটি সোশ্যাল জীবেরই কর্মকান্ড কোওর্ডিনেট করতে হয়, নিজেদের টিকে থাকার জন্যই এটা করতে হয়, ফলশ্রুতিতে প্রত্যেকটি গোত্রবদ্ধ প্রজাতিরই একটি প্রশাসন আছে যেমন কিনা আছে ভাষা বা ভাবের আদান প্রদানের কোন না কোন মাধ্যম, এমনকি পিঁপড়া মৌমাছিরও আছে! এই প্রশাসনের বিভিন্ন গঠনও হয়তো রয়েছে, অনেকে হয়তো নিছকই ডিজাইনড (সরি ইভলভড) একটি আলফা মেইলের নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার জন্য; অনেকে হয়তো রাণী মৌমাছি কর্তৃক নিসৃত ফেরোমনের গন্ধ শুনে নির্দেশ লাভ করে কখন মৌচাক বানাতে হবে বা পতিত্যাগ করতে হবে মৌচাক; মানুষ বর্তমানে অনেক অনেক কমপ্লেক্স একটা প্রশাসনিক প্রটোকল মানে। এইটা কি থাকতে যাচ্ছে? উত্তর খুব সম্ভবত বোধহয় হচ্ছে হ্যা। এইটা বিলুপ্ত করে দিতে পারলে চমতকার হয় নিঃসন্দেহে, কিন্তু ঠিক কি মেকানিজমে এটা বিলুপ্ত করা হবে সেটা জানতে আমি আগ্রহী হবো। আমরা নেতৃত্বের জন্য ফাইট করার লক্ষ্যে প্রোগ্রামড, একটি প্রশাসনবিহীন সুখের সমাজ স্থাপিত যদি হয়ও এমনকি, সেই সমাজ সাস্টেইন্ড কিভাবে হবে, কিভাবে একজন ইন্ডিভিজ্যুয়লকে রোধ করা হবে প্রশাসন যন্ত্রের নেতৃত্ব নিজের করায়ত্ব করার কম্পিটিশনে নামা হতে; ব্যাপারটা খুব একটা সহজ না ইউ সী? কেননা খুব সম্ভবত ব্যাপারটা প্রিডিটার্মাইনড; এই প্রিডিটার্মিনেশনের কথা মাথাতে না রেখে আপনি যদি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রস্তাব করেন (যেমন-কমিউনিজম, এনার্কিজম, লিবেটারিয়ানিজম, লিউডাইটইজম ইত্যাদি ইত্যাদি), সমস্যা হচ্ছে শুনতে মতাদর্শটি খুবই সুন্দর শোনায়, কিন্তু সেটি কোন সাস্টেইনেবল কোন কিছু হয় না, ইউটোপিয় একটা কিছু হয়।
@আল্লাচালাইনা,
স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা বনাম পরিকল্পনাধীন শৃঙ্খলার জৈব বিবর্তনীয় আলোচনা আগ্রহজনক হবে। এদিকটা নিয়ে লিখবেন টিকবেন নাকি কিছু? মানুষের ভাষা, বাজার, এগুলোর বিবর্তনে স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলার উপাদান প্রধান। অন্যদিকে ক্ষমতা ও সহিংসতা প্রশ্নে অর্থাৎ প্রশাসনের বিবর্তনে আশংকা করি বিপরীতটার উপাদান প্রধান থেকেছে। রাষ্ট্রের বিবর্তনীয় বিশ্লেষণ নিঃসন্দেহে এ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে সাহায্য করবে।
রাষ্ট্র ভায়োলেন্স ও পাওয়ারের মনোপলির যে অন্যায় সেটা উপলব্ধি করে উঠলে ডিস্টার্বিংই লাগে বটে। তবে সেটা থেকে উতরে যেখানে তার অন্যায়ের নিরোধ সম্ভব সেখানে আলোকপাতকরণ মঙ্গলজনকই হবে। অধিকাংশ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে না চাইলে রাষ্ট্র ভাগবার নয়। সাস্টেইনিবিলিটির প্রশ্ন তো আছেই। তবে স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা হয়তো যথেষ্ট পাওয়ারফুলই। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাংশন হলো সহিংসতারোধ। এটা সে সহিংসতার মনোপলি গ্রহণের মাধ্যমে করে। এই মনোপলি তাকে অন্যান্য অন্যায়ের অবারিত সুযোগ দেয়।
আপনার মতো আমারও সন্দেহ মানুষ ধর্ম ও রাষ্ট্রের থেকে যে কন্ফিডেন্স ভোগ করে সেটা কতো অংশে ছেড়ে উঠবে। তবে ধর্মের ব্যাপারে হাজার বছরের লাগাতার স্কেপটিসিজমের ফলে ধর্ম নড়ে উঠেছে। এর অবশ্যম্ভাবিতাগুলো এখন অনেকের কাছেই এখন মিথ্যে বুলি।
রাষ্ট্রের অনেক অঙ্গেরও সেটাই বৈশিষ্ট্য। এটা যেহেতু বৈবর্তনীয় উপায় গড়ে উঠেছে, এর ব্যাপারে মানুষের ঝোঁক থাকবে। এটাকে আমি বলছি আমাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা ও অসহায়ত্ব। সেটাকে উতরে উঠার বুদ্ধিবৃত্তিক চেষ্টায় মঙ্গলই আছে বলে মনে করি। যেমন ধরুন সহিংসতারোধের স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা। এটার উপাদান ইতিহাসে অপ্রতুল বলা চলে। তবে অন্তত তাত্ত্বিকভাবে অসম্ভব নয়। ইনডিভিজ্যুয়ালেরা তাদের নিরাপত্তার জন্যে প্রাইভেট কোম্পানির কাছে ইনশিওরেন্স নিবে। একাধিক প্রাইভেট কোম্পানি থাকবে। তাদের সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী থাকবে। তারা স্বল্পমূল্যে বেস্ট নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে প্রতিযোগিতা করবে। তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ মূলত নিবারণ হবে সহিংসতার অলাভজনকতার উপলব্ধি দ্বারা। দ্বিতীয়ত প্রাইভেট আর্বিটার দ্বারা, যারা টাকা নিয়ে সমস্যা মীমাংসা করে দিবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অলরেডি প্রাইভেট আর্বিটার আছে এবং ইনশিওরেন্স কোম্পানিগুলো দ্বারাই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের নিজেদের সমস্যা মীমাংসা করতে। যেসব কারণে তারা প্রাইভেট আর্বিটারের কাছে গেছে তার মধ্যে আছে সরকারি কোর্টের স্থবিরতা, বেশি খরচ ও তাদের রায়ের ন্যায্যতায় পূর্বাভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোর অনাস্থা। এই ব্যবস্থায় একজন ইনডিভিজ্যুয়ালের মনোপলি নেওয়ার প্রচেষ্টা কোম্পানিগুলোর সশস্ত্রবাহিনী সম্মিলিতভাবেই রোধ করতে পারবে।
এখন এই তাত্ত্বিক সিনারিও সহিংসতারোধের স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলার সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। বাস্তবতাকে নাও করতে পারে। যেমন, কোম্পানিগুলো পারস্পরিক সহিংসতার ক্ষতিটা উপলব্ধি করতে না পারলে তাদের ক্ষতি হলেও তারা পরস্পর যুদ্ধ করে সহিংসতা বজায়ে রাখতে পারে। তাছাড়া এই স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলাটা উপলব্ধি যেহেতু পরিকল্পিত একক আরোপিত শৃঙ্খলার চেয়ে জটিল, এটা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের অনাস্থার একটা বড় কারণ হতে পারে। তথাপি সম্ভাবনার আলোচনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এতে রাষ্ট্র তাত্ত্বিক প্রতিযোগিতায় পড়ে, যেটা সে মূলত ঘৃণা করে। মানুষ চুপচাপ থাকলে তার কাজ করতে সুবিধা হয়।
ফলে বিবর্তনকে বুঝে উঠতে হবে। অর্থাৎ বুঝতেও হবে, আবার সেটার প্রিডিটার্মিনেশন থেকে ওঠার সম্ভাবনাকেও পরখ করে দেখতে হবে। সহিংস আচরণেরও শক্ত বিবর্তনীয় ভিত্তি আছে। তথাপি আমাদের সামাজিক নৈতিকতা ও বোধনে সহিংসতা বিরোধী যুক্তি যোগ হচ্ছে তো হচ্ছেই। রাষ্ট্রের বিকল্প আলোচনাও ফলে সামাজিক বিবর্তনেরই অংশ। সেখানটায় প্রিডিটার্মিনেশন ঘোলা থেকে ঘোলাতর। একমাত্র তাত্ত্বিক অসম্ভাব্যতাই যা প্রকৃত সীমাবদ্ধকর – যেমন, সকল মানুষ অস্বার্থপর হয়ে উঠলো। সে হবার নয়।
অটঃ অ্যাডমিন ভাইয়েরা, প্রিভিউ কাজ করছে না।
এই লাইনটি থেকে উপলব্ধি হতে পারে যে একটি ”কেন্দ্র আরোপিত শৃঙ্খলা” বিদ্যমান অবস্থায় এর বিপরীতে একটা স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে সমাজ তৈরি হল। অথচ
ব্যক্তি > সমাজ > রাষ্ট্র- শৃঙ্খলার মানদণ্ডে বলা যায়
স্টেট অব নেচারে ব্যক্তির শৃঙ্খলাহীনতা> স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলার সূচনার মাধ্যমে সমাজ গঠন> অতঃপর সমাজের ভিতর কিছু ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাহীনতা > সমন্বয়ের জন্য রাষ্ট্র গঠন – এমন একটি উত্তরণ প্রক্রিয়াই যুক্তিযুক্তভাবে অনুধাবনে আসে। ফলে ধরে নেয়া যায় সমাজের পক্ষে অনিবারণযোগ্য কিছু শৃঙ্খলাহীনতাকে সেলাই -ফোঁড়াই করবার জন্যে রাষ্ট্র খাড়া হয়। এই কাজটি রাষ্ট্র করে তার নিগেটিভ এক্সপ্রেশন দিয়ে কেন্দ্রীয় আরোপিত শৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে। যেমন রাষ্ট্র বলে অন্যের সম্পদ এবং জীবনের ক্ষতি করা যাবে না। এই কথাটি আমাদের সমাজও আকারে ইঙ্গিতে বলে বৈকি। কিন্তু দুইজনের বলার ভিতর ভাষা এবং মাধুর্যে, উপায় এবং উপকরণে বিস্তর তফাৎ। ছোট্ট শিশুকেও আঙ্গুল মুখে দিতে নিষেধ করলে তার ভঙ্গিতে প্রতিবাদের ছায়া ধরা পড়ে। কাজেই, রাষ্ট্র, যখন আমি একজন পূর্ণবয়স্ক সামাজিক জীব হবার পরেও আমার উপর পদে পদে আকারে ইঙ্গিতে ভাবে ভঙ্গিতে বিস্তর খবরদারি নজরদারি করতে থাকে, তখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাষ্ট্রের কাজের উপর আস্থা আনয়নের কোন সম্ভাবনা দেখিনা। অন্যদিকে, যেহেতু সমাজ তার ভাষায় এবং উদ্দেশ্যে তুলনামূলক সহনীয়, অতএব সমাজের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আরোপ অনাবশ্যক হতেই পারে। সমাজের স্বতঃস্ফুর্ত শৃঙ্খলায় আমাদের সকল রিপু অবদমিত হয়ে থেকে গেলে রাষ্ট্রর উৎপত্তি আর বিকাশের আবশ্যকতা ছিল বলে মনে হয়না। এমনকি এখনও এহেন একটা স্বতঃস্ফুর্ত শৃঙ্খলায় পৌঁছুতে পারলে রাষ্ট্র আপনাতেই অকার্যকর, ফলতঃ অদৃশ্য হয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু তা কেন অসম্ভব হতে পারে এর একটি ধারণা আপনার মন্তব্য অংশে সুন্দর বলেছেন।
আমি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে বলি।
আকেলমন্দের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। সেই বিচারে ভাষাহীনতাও যোগাযোগের ক্ষেত্রে তুমুল প্রতিবন্ধক নয় দাবী করা যেতে পারে। অন্যদিকে ভাষা যখন থাকলই, তখন তা যথেষ্ট বোধগম্য না হলে প্রকৃতপক্ষে যোগাযোগস্থাপনে উৎসাহী ব্যক্তিগণের ভিতর এই পরিস্থিতি ভাষাহীনতার সমানই কার্যকর হবে। এখন যোগাযোগ লক্ষ্য হলে ব্যক্তি কোন এক উপায়ে বিজাতিয় ভাষা বোধগম্যতার ভিতর নিয়ে আসবে- এতেও দ্বিমত নেই। এখন প্রশ্ন তোলা যেতে পারে- দুইজন ব্যক্তি- দুইটি ভাষা- কার ভাষা কে শিখবে? একটা জবাব হতে পারে- সাম্যাবস্থা। উভয়ে উভয়ের ভাষা এস্তেমাল করবেন। ভাবুন একবার- ড্যান মজিনা বাংলা শিখছেন পুরোদমে। আর দিপুমনি ইংরেজি। সেক্ষেত্রে এক থেকে কতগুলো ভাষা একজন মানুষের শেখার প্রয়োজন হতে পারে তা আমার পক্ষে অনুমান করা প্রায় অসম্ভব। এমনটি যদি হবার সম্ভাবনা বিরল বলে মনে হয় তবে এইখানে কিন্তু একটা আগ্রাসনের প্রশ্ন চলে আসে। হার্মাদের দল আমাদের ভাষার কয়টি শব্দ পর্তুগালে নিয়ে গেছে? আমরা কিন্তু ঠিকই ওদের শব্দ বয়ে বেড়াচ্ছি, রাষ্ট্রের আরোপ ছাড়াই।
কাজেই, রাষ্ট্র আরোপ না করলেই যে আমার ভাষার স্বাধীনতা রক্ষিত হবে, তার কোন রক্ষাকবচ আপাত অনুপস্থিত বোধ হচ্ছে।
জনাব রূপম,
আমার কাছে প্রমিত ভাষা ব্যবহারের গুরুত্ত্ব ব্যাপক। সে যে ভাষাই হোক না কেনো। একজন সিলেটবাসী যে ভাবে কথা বলবে সেটিকে সিলেটী ভাষা যদি বলি তবে সেটিরও প্রমিতব্যবহার প্রত্যাশিত, তেমনি ভাবে উত্তরবঙ্গীয় ভাষার ক্ষেত্রেও। আসামের বাংলা তো বাংলারই মত, তথাপি সেটি অসমীয়া। অন্ততঃপক্ষে লেখার ভাষা বা কোন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কথ্যভাষাটিও প্রমিত হওয়া চাই। তবে এর জন্যে একটি সামাজিক আকাঙ্খা থাকতে হবে। হ্যাঁ এটি ঠিক যে এই প্রমিতকরণের বিষয়টিতে রাষ্ট্রকর্তৃক বাধ্যবাধকতার হয়তো কোন প্রয়োজন নেই, কেননা
তবে একথাতো ঠিক যে প্রকাশ ভঙ্গীর মধ্যে যদি সমরূপতার অভাব থাকে তবে তা সুককর নয় মোটেও। সেটি যেকোন ধরনের প্রকাশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমার মনে হয় পোষাক আশাক এমনকি খাদ্যাভ্যাসও এর বাইরে নয়।
আমি একজন বিদেশী ধর্মজাযককে চিনি, যিনি বাংলায় কথা বলতে পারেন, বাংলা এবং বাঙ্গালীকে বোঝেন। কিন্তু সুধী সমাবেশে তিনি যখন বাংলা ব্যবহার করেন তখন তা অত্যন্ত শ্রুতিকটু মনে হয়! কারন তাঁর বাংলা শব্দে মিশে আছে বাংলাদেশের কোন এক অঞ্চলের বেশ কিছু আঞ্চলিক শব্দ ভান্ডার। বাংলাভাষার প্রমিতকরণ যদি সত্যিই কার্যকর হতো তবে এই শ্রুতিকটু বাংলা ব্যবহার সম্ভব হতো না। অথবা তাঁকে উক্ত অঞ্চলের ভাষাতেই বলতে হতো সব। ভাষার প্রমিতকরণ এই কারনেই প্রয়োজন।
সামাজিক মিথষ্ক্রিয়াতে আমরা যখন নিরন্তর ক্রিয়াশীল তখন কেউ বাংলা, উর্দু, ইংলিশ কিংবা জাপানীজ যাই বলুকনা কেনো, বোধের ক্ষেত্রে যদি তা অন্তরায় সৃষ্টি না করে তবে তাতে কোন কিছু আসে যায়না যেহেতু,
শুধু একটা ব্যপার এখানে লক্ষ্যনীয় সেটা হলো সৌন্দর্যবোধ আর শ্রুতিমধুরতা। একজন বিদেশীর উদাহরণ আগেই দিয়েছি, আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি জরুরী নয়কি? রাষ্ট্রের এবং এর প্রতিনিধিদের তাই রাষ্ট্রের মৌলিকত্ত্বের প্রকাশকে জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক ভাবে সার্বজনীন করার লক্ষ্যে সমাজকে, সমাজের কিছু যন্ত্রাংশকে তাই সচল ও উজ্জিবীত করতে হয়, যা রাষ্ট্রের দায়িত্ত্বের মধ্যেই পরে। এটিকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
এখানে মূল সমস্যা মনে হয় ভিন্ন। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষনার উদ্দ্যেশ্য ছিলো রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক। ভাষাকে উৎখাতের মাধ্যমে সংস্কৃতিকে দুর্বল করা। একটি স্বাধীন জাতিসত্ত্বার অবলুপ্তির মাধ্যমে তাকে শিরাবনত করে রাখা। অন্যভাবে বললে বলা যায় বাঙ্গালী সংস্কৃতির মুসলমানী করানো। এতে করে শাসন এব শোষন দুই-ই সুবিধে, প্রথমটি রাজনৈতিক আর পরেরটি অর্থনৈতিক।
@কেশব অধিকারী,
আপনার মন্তব্যে তেমন বিরোধ নেই। এক্সট্রিমিটিগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রমিতকরণের অনুপস্থিতিও আলোচনা করেছি। প্রমিতকরণ অকাম্য নয়। স্বতস্ফূর্ত শৃঙ্খলা সেটা করতে সক্ষম। বলপ্রয়োগমূলক আরোপ নিবার্য।
বিস্তারিত মন্তব্য করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।