ধর্ম কুল গোত্র জাতির তুলবে নাকো কেহ জিকির।
কেঁদে বলে লালন ফকির কে মোরে দেখায়ে দেবে।
এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে…
যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান জাতি গোত্র নাহি রবে।
লালন ফকিরের এই স্বপ্ন পথে যাত্রার পূর্বে জাতিগত সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন উল্লাসে নৃত্যরত শান্তির ধ্বজাধারী বাংলার হাজারো জিহাদি জনতা। জিহাদি যোশের আগুনে পুড়ে ছাই কয়েশ বৌদ্ধ ঘড়বাড়ি, অসংখ্য বৌদ্ধ পল্লী, বৌদ্ধ বিহার, জনপদ, বাদ পড়েনি হিন্দু মন্দির। ভয়ে, শোকে মূহ্যমান আজ বৌদ্ধ জনপদ। বৌদ্ধ সন্নাসীরা অস্থিত্ব রক্ষায় দিশেহারা। মৌলবাদীদের নির্মম আঘাতে অকাল মৃত্যু ঘটে এক বৌদ্ধ শ্রমণের। গগন বিদারী জিহাদি গর্জনে ভীত হয়ে স্টোক করে প্রজ্ঞানন্দ নামের এক বৌদ্ধ ভিক্ষু। গনিমতের মালের লোভে নির্বিচারে চলছে গণ লুটতরাজ। ভয়ে তটস্থ বাংলার প্রটিতি সংখ্যালঘু পরিবার। জানা যায় প্রায় হাজার দুয়েক মৌলবাদী রাতের আঁধারে লাঠি সোটা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে রামুর বৌদ্ধ মন্দির গুলোতে। ভাঙচুর করে বিহারের সব আসবাপত্র, বৌদ্ধ মূর্তি এরপর তাতে ধরিয়ে দেয় আগুন।
এ প্রসঙ্গে কালের কন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্ট দেখা যাক-
কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় গত শনিবার রাতে হঠাৎ করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর ও বৌদ্ধমন্দিরে ব্যাপক হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা সংঘবদ্ধভাবে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ১৬টি বৌদ্ধমন্দিরে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করে। লুটপাট করে মন্দিরের মূল্যবান সম্পদ। দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক বসতবাড়িতে অগি্নসংযোগ ও ভাঙচুর করে। আগুন লাগানোয় ব্যবহার করা হয় গানপাউডার ও পেট্রল। রাত সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই তাণ্ডব। এরপর আজ রবিবার দুপুরে চট্টগ্রামের পটিয়ায় চারটি বৌদ্ধমন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের তিনটি মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করা হয়।
হঠাৎ করে শুরু হওয়া এই নারকীয় হামলায় আক্রান্ত মন্দির ও মঠের মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। হতভম্ভ সাধারণ মানুষ অসহায় তাকিয়ে দেখে এ দুষ্কর্ম। রাতের বীভৎসতা পার হয়ে সকালের আলো ফুটলে সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রামুতে আক্রান্ত এলাকায় গতকাল সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে রামু উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আর্মড পুলিশ ও পুলিশের দল টহল দিচ্ছে।
একটি প্রচারণার মাধ্যমে আজ সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং জাদি মুরা বৌদ্ধবিহার ও কোটবাজার বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া রত্নাপালং ইউনিয়নের রুমখা বড়বিল এলাকায় মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এতে মিছিল থেকে পুলিশের ওপর গুলি ছোড়া হয়। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় পুলিশের এসআই আনোয়ার উল্লাহ, কনস্টেবল রতন, শিমুল দাশ, রুমকা এলাকার বশির আহমদের পুত্র গিয়াস উদ্দিন, রুমকা আলিম মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র আবদুল হকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়। উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিলু কান্তি বড়ুয়া এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় কিছু লোক টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। পুলিশ এখানে ২০টি ফাঁকা গুলি ছুড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টেকনাফের হোয়াইক্যং আমতলীর জোয়ারিখলায় মিছিলসহকারে বৌদ্ধমন্দিরে হামলার চেষ্টাকালে পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়। হামলাকারীরা আমতলীর বড়ুয়াপাড়ায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ১২টি বাড়ি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ডের মেম্বার মোস্তফা কামাল চৌধুরী।
পরিচিত সূত্র ধরে জানতে পারছি চট্টগ্রামের লাখেরা, চরখানাই, নাইখাইন উখিয়া, প্রভৃতি গ্রামে চলছে আক্রমনের প্রস্তুতি। শোনা যাচ্ছে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে বেশ কিছু আক্রমণকারী, গ্রেপ্তার হয়েছে অনেকে। পরিস্থিতি যে গতিতে ক্রমশ বিপদ জনক দিকে মোড় নিচ্ছে তাতে অকাল প্রাণ হানির সংখ্যা, খুন, ধর্ষনের মত যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়তে পারে আগামীতে। কক্সবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নাকি খুব ভয়াবহ।
এই তান্ডবের সূত্রপাত- রামুর বড়ুয়াপাড়ার উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এমন একটি ছবি দেখা গেছে, যা ইসলাম ধর্মের জন্য অবমাননাকর। এই ছবিটি সে নিজে এড করেনি একটা ফেইক আইডির মাধ্যমে তার একান্টে ঢুকে যায়। অথচ এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই বাচাই না করেই একটা জাতির উপর শুরু হয় চরম ধ্বংস যজ্ঞ।
সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ইসু, ইনোসেন্স অব মুসলিম, ফ্রান্সে নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন নিয়ে ফুঁসে ছিল মৌলবাদীরা। আমেরিকার পতাকায় অগ্নি সংযোগ, ভাংচুর, মিছিল মিটিং, প্রতিবাদ সমাবেশ তাদের উত্তপ্ত মনকে ঠিকমত শীতল করতে পারেনি। তাদের মনে লালন করছিল সমগ্র বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়া- ইসলাম অবমাননার ফল। উত্তেজনা প্রশমনে নিসপিস করছিল দু’হাত। এই সুযোগ এল বলে- সামান্য উছিলায় হায়েনার মত প্রতিশোধ স্পৃহায় ঝাঁপিয়ে পরতে দ্বিধা করেনি একটি ক্ষুদ্র জাতির উপর।
পাহাড়ী জনপদে বারবার গর্জন, বাবরি সমজিদ পরবর্তি ঘটনা, ৯১ নির্বাচন পরবর্তি হত্যা, ধর্ষন, অগ্নি সংযোগের ঘটনা, মাত্র গত হওয়া সাক্ষীরা ইতিহাস এবং চলমান অসংখ্য বৌদ্ধ জনপদ আক্রমণের মত নির্মম ঘটনা, সর্বদা মৌলবাদী হুংকার আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় এই দেশ তোমার নয়, এখানে অধিকার ফলাতে কখনো এসো না, এই দেশে সংখ্যালঘুর অধিকার থাকতে পারে না। যদি মানুষের মত নিতান্তই বাঁচার খায়েস থাকে- তাহলে পালাও দেশ ছেড়ে।
সংযুক্ত:
রামুর ঘটনায় আল-জাজিরার প্রতিবেদন…[লিংক]
পৃথিবীময়
শান্তিতে শান্তিতে শান্তিময়।
জঙ্গি উগ্রপন্থিরা এই মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় ছিল ।কে কথায় নবীর চরিত্র নিয়ে ধুয়া উড়াল ছাই পরছে বাংলাদেশে ।আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক দেশ । এখানে সাম্প্রদায়িক হামলা বরদাস্ত করা যাবেনা ।তোমার নবীর উপর আঙ্গুল তুললে যেমন কষ্ট লাগে,তেমনি অন্য ধর্মের উপশনালয় ভেঙ্গে নিজে কোন মহান পুণ্য হাসিল করছো ?পৃথিবীর সব ধর্মের অনুসরণকারীকে বলছি হয় শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্ম পালন করো নাহয় ধর্ম থেকে হাত ধুয়ে ফেল ।ধর্মের কারনেই জগতে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত হয়েছে ।যা হওয়া উচিৎ ছিল শান্তি-শান্তি-শান্তি ;-(
দেশ রসাতলে ( এর আরবিটা জানা থাকলে বলবেন কেউ দয়া করে, রসাতল তো আবার হিন্দুয়ানী ভাষা, ব্যবহার করে না জানি কল্লাটাই হারাতে হয় :-s )চলে গেছে অনেক আগেই।এদেশ কে নিয়ে আশা করতে ভয় করে।একদিকে কিছু মুক্ত মনের লোক চেষ্টা করছেন হয়ত ভাল কিছু করতে, অন্যদিকে এর বিরোধী শক্তি দিন দিন অনেক বেশি প্রবল হয়ে উঠছে।
আমি মুক্তির উপায় দেখিনা।আপ্নারা কেউ দেখেন কি?
একদম সত্যি কথা। ধর্মগুরুরা ক্রমাগত জিহাদি জোশ বপন করে যাচ্ছিল, কিন্তু ধর্ম-প্রেমিকেরা (ধর্ম-প্রেমিক শব্দের অবতারণা সচেতনভাবেই, যেহেতু এদের অনেকেই ব্যক্তিজীবনে ধর্মনিষ্ঠ নয় মোটেই) তা ফলানোর উর্বর ক্ষেত্র পাচ্ছিল না, সুদূর আমেরিকার প্রতীকী পতাকা-পোড়নে তাদের ক্ষুধিত আর ক্ষুর-ধারাল মন শান্ত হচ্ছিল না কিছুতেই। বন্ধ্যা আমেরিকান ফ্ল্যাগের পরিবর্তে মন চাইছিল কিছু অগ্নি-সতেজ জীবন্ত বস্তু।
আজকাল চতুর্দিকে সবাইকে ধর্ম-প্রেমে আকুল হতে দেখছি, মনে হচ্ছে, সবার জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছে, সবাই নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্ব নিয়ে এখন অনেক বেশী শিক্ষিত ও সচেতন। সেই ফিল্মমেকার কি তাহলে নিজের অজান্তেই মুসলিম জাতিকে জাগিয়ে দিয়ে গেলেন? মুসলিম জাতি কি এতদিন তবে ঘুমিয়ে ছিল? এখন তবে চলবে বীর দর্পে শত্রু নিধন? সারা দেশের বিধর্মীদের উৎখাত করা হবে, ভূমিসাৎ করে দেয়া হবে মন্দির, মঠ? তবেই মিলবে মুসলিম জাতির মহা-মুক্তি? এ দেশের মুসলমানদের পরিত্রাণ রয়েছে এতেই? নেই কোন দুর্নীতি, দারিদ্র্য, বা কোন সামাজিক শোষণ? মহা পরিত্রাণ তাহলে শুধু বিধর্ম নিধনে? আর ফিল্মমেকার বা ফেইক আইডি প্রণেতারা সেই পরিত্রাণের নিয়ামক?
কক্সবাজার দাউ দাউ করে জ্বলছে। তারও থেকেও ভয়াবহভাবে জ্বলছে সারাদেশের মৌলবাদী মনন, যেকোনো মুহূর্তে ফুঁসে উঠবে তারা। কবিগুরুর গানের কথা কি আমাদের পথ দেখাবে?
”আধারের গায়ে গায়ে পরশ তব
সারা রাত ফুটাক তারা নব নব
নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কাল
যেখানে পড়বে শিখা দেখবে আলো
ব্যথা মোর উঠবে জ্বলে উর্ধপানে
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে
এ জীবন পূর্ণ কর দহন দানে”
তোমাদের ওয়েবসাইট বাংলাদেশ (উচ্চারণঃ ”মুসলিম প্রধান উদার ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র”) থেকে ব্লক করা হইসে। বাট আমি ত কোন ওহি দেইনাই। এই কাম করলো কে? আল্লাহ ২.০ নাকি?
@মহান আল্লাহ,
কাদের ওয়েবসাইট। পরিষ্কার করে বলুন। বুঝতে পারছি না।
কার্যকর প্রতিরোধ আমাদের কিছুটা পথ দেখাতে পারে। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, ‘৯১ এ আমাদের এলাকায় কোন মানুষের গায়ে আঁচড় পড়েনি। এলাকাভিত্তিক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন,গণ-ভিত্তি আর সক্রিয়তার কারণে উগ্র-ধর্মীয় শক্তিগুলো কিছু করতে পারেনি। মসজিদে নামাজ শেষে খুব আফসোস করেছে, সাচ্ছা মুসলমানের অভাবজনিত কারণে। মজার ব্যাপার হলো এ খবরটাও চলে আসে মসজিদ থেকে আমাদের কাছে, আর প্রতিরোধটা করছিল সাধারণ মুসলমানরাই। আমরা ছিলাম সংগঠক।
মূল সমাধানের যাবার আগে, আমরা যার যার এলাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলে, মানুষের উত্তেজনাহীন জীবনে, একটা আলোড়ন তুলতে পারি।
দেশ-বিভাজনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে বাংলার। এপারে তৈরি হয়েছে সাংস্কৃতিক শূন্যতা। জায়গা তো খালি থাকে না। চলে গেছে মসজিদের দখলে। ফলে উগ্রতা বেড়েছে। সেই সাথে শাসকগোষ্ঠির নানামূখি তৎপরতা তো রয়েছেই।
ওপারে দেখুন বাংলাটা যেন মরতে বসেছে। অর্থাৎ ভাষাটাই মরে যাচ্ছে। এ পারের বাঙ্গালী ( সবাই তো জ্যোতিবাবু নন) ওপারে গিয়ে বাঙ্গাল হয়ে বেঁচে থাকে।
এই এক জীবনে এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার সুখ মনে হয় প্রতিরোধে।
৩ নং ছবিটি কোথাকার?
সংখ্যালঘুদের উপর অশ্লীল এই অত্যাচার বন্ধ হোক।
সাম্প্রদায়িক এই আগ্রাসনের নিন্দা জানাই। কোথায় যে যাচ্ছে দেশ, কে জানে!