লেখকঃ ইফতি
ব্লগে সম্প্রতি ”কৃত্রিম রোগ এইডস: শ্বাসরোধী সত্য।” শিরোনামে একটি লিখা প্রকাশিত হয়েছে। HIV মানুষের বানানো , বিজ্ঞানের অন্ধকার দিক , বিজ্ঞান বড় নিষ্ঠুর, এইসব বড় বড় বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ওই লিখার বিষয়বস্তু সত্য হলে পৃথিবীবাসীর জন্য তা খুব ভয়ংকর হত কিন্তু সৌভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। বিষয়টা অনেক আগেই বাতিল হয়ে গেছে। প্রাগৌতিহাসিক এইসব বিষয়ে লিখতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।পোস্ট গ্রাহ্য করতাম না কিন্তু একটু নাক দিতেই হল যখন দেখি পোস্টে মন্তব্যের সংখ্যা দেড়শ পেরিয়ে যায়। আর সবাই দেখি পোস্ট নিজেদের আতঙ্কের কথা জানাচ্ছেন , ধিক্কার দিচ্ছেন বিজ্ঞানকে। দেড়শ মানুষ থেকে কত হাজার মানুষে একটা ভুল তথ্য ছড়িয়ে যেতে পারে। একটা জিনিস এতগুলা মানুষ ভুল জানবে এইটা মেনে নিয়ে ঘুমানো কষ্ট।
বিজ্ঞান নিয়ে লিখা , তথ্যের উপর তথ্য কিন্তু পুরা লেখাই কোন রেফারেন্স ছিল না !! রূপকথার গল্পের সাথে এমন লেখার কোনই পার্থক্য নেই। আমার এই পোস্টে আমি এমন কোন গল্প বলব না।খাট্টাখোট্টা রসকষহীন একটা লিখা পড়তে যাচ্ছেন আপনি। এই লিখাটা পুরোপুরি হবে রেফারেন্সনির্ভর। ওই পোস্টে বর্নবাদ , কালো নিধন প্রকল্প এমন অপ্রাসঙ্গিক অনেক কথাই বলা হয়েছে। আমি এখানে শুধু মুল বিষয়টা ফোকাস করব মানে পোলিও ভ্যাক্সিন থেকে HIV ভাইরাস আসার শ্বাসরোধী সত্য নামে যে অভিযোগটা করা হয়েছে ওইটা যে ভুয়া সেটা দেখাব।
পোস্টের বক্তব্য অতি সংক্ষেপে নিচে দিলাম,
১৯৫৭’এর দিকে আফ্রিকায় বানরের বদলের শিম্পাঞ্জির রক্ত, কিডনিতে কালচার করা হয়েছে পোলিও ভ্যাক্সিন। এই শিম্পাঞ্জিতে ছিল SIV নামক ভাইরাস।। তাই কালচার করার সময় ভ্যাক্সিন শিম্পাঞ্জির SIV দিয়ে contaminated হল। এই contaminated ভ্যাক্সিন আফ্রিকান শিশুকে খাওয়ানো হল। এইভাবে শিম্প থেকে মানুষে এল এই ভাইরাস । পোস্টের উপসংহার হল বিজ্ঞানীর হাত ধরেই এই HIV ভাইরাসের উৎপত্তি, বিজ্ঞানীরা (সাদা জাতি )আফ্রিকানদের গিনিপিগ বানিয়ে যা খুশি করছে । বিজ্ঞান খুবই খারাপ।
ওনার পুরা লিখায় এই বিষয়টার কেতাবি নাম নাই। আমি বলে দিচ্ছি।এই হাইপোথিসিসের ভাল নাম oral polio vaccine (OPV) AIDS hypothesis।
পোস্টের কথাই আসি। নাটকীয় কথাবার্তায় ভরপুর। ”বাড়ছে এইডস। বিজ্ঞান-কম্যুনিটি একেবারে নিশ্চুপ। ..কেন এইডস রোগে মানুষ দশ হাজার বছর আগে থেকেই আক্রান্ত হয়নি?.. কেন হয়নি এমনকি দুইশ বছর আগেও? …তারপর অপ্রকৃত মানবদের বিলুপ্ত করার পথ শুরু হল। উত্তর আমেরিকায় প্রায় বিলুপ্ত। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় বিলুপ্ত। দক্ষিণ আমেরিকায় সাপ্রেসড। কিন্তু আসল সমস্যা তো কাটে না।… এশিয়ার কেলেগুলো তো ঝাড়েবংশে বাড়ছে।.. বাড়ছে আফ্রিকার পশুগুলোও। কালো ঠেকাও। ভাইরাস ছড়িয়ে দাও। চলুন যাই পাঁচ হাজার বছর আগে…..” এইসব খুবই অপ্রয়োজনীয় কথা। কয়েকটা মানুষের ছাড়া ছাড়া কথা কোট করা ছাড়া আর কিছু নাই।ভুলভাবে লিখা অনেক কিছুই।বেশ অনেকবারই বলেছেন বানরে নাকি এইডস হয়। হা হা… বানরে এইডস হয় আর পুরুষের পেটে বাচ্ছা হয় এই দুইটা কথার মাঝে খুব বেশি পার্থক্য নেই।
বিজ্ঞান-কম্যুনিটি মোটেই নিশ্চুপ না। এই হাইপোথিসিস অনেক আগেই পুরোপুরি বাতিল হয়ে গেছে।
‘’In an August 1992 letter published in Science, Koprowski himself repudiated the OPV AIDS hypothesis, pointing to multiple errors of fact in its assertions. In October 1992, Science ran a story titled “Panel Nixes Congo Vaccine as AIDS source,” describing the findings of an independent panel which found each proposed step in the OPV-AIDS hypothesis “problematic”. The story concluded:
…it can be stated with almost complete certainty that the large polio vaccine trial… was not the origin of AIDS.’’
উপরে দেখতেই পাচ্ছেন যে কপরাস্কির কথা ওই পোস্টে বলা হইছে সে নিজেই পরে এটা বাতিল করছে। এইটা নিয়ে Science জার্নালে তার লেখা AIDS and the Polio Vaccine
পোলিও ভ্যাক্সিন ট্রায়াল টা হইছিল ১৯৫৭’এর দিকে কিন্তু মলিকুলার ডাটা যা বলে এই ভাইরাসের উৎপত্তি আরো আগে ,১৯৩১ এর দিকে।
বানরে না করে শিম্পাঞ্জির কিডনীতে কালচার করার যে অভিযোগ করা হইছিল এইটাও পরীক্ষা করা হয়।আফসুস, শিম্পাঞ্জির ডিএনএ পাওয়া যায় নাই। পাওয়া গেছে ওই বানরের ডিএনএ। পুরা বিষয়টা সত্যিকার অর্থে এখানেই বাতিল হয়ে যায়।
Molecular Analyses of Oral Polio Vaccine Samples–>
বানর ব্যবহার করলে আর চিন্তা নাই কারন এই বানরে এই রিলেটেড ভাইরাস ছিল না। তবুও বিজ্ঞানীদের মন ভরে না।ওই ভ্যাক্সিন স্যাম্পল নিয়েও পরে পরীক্ষা করা হয়। কোন contamination পাওয়া যায় নি । এইটা নিয়ে ন্যাচার’ এ পেপার।
Polio vaccine samples not linked to AIDS—->
অতএব বিষয়টা যে বাতিল সেটা প্রমানিত। তবুও এমন সব শ্বাসরোধী বাতিল বিষয়ে নিয়ে আরো পোস্ট দিতে চাইলে নিচের লিংকে যান । পোলিওর মত Smallpox ভ্যাক্সিন থিওরী সবই পাওয়া যাবে..x(
এখানে
HIV ভাইরাস কই থেকে আসছে এটা নিয়ে এমন আরো অনেক থিওরি বাজারে আছে। The contaminated needle theory ,The colonialism theory । যে কোন একটা নিয়ে লাফালাফি করলে সমস্যা। আমিও তো একট থিওরি বানাইতে পারি। Extraterrestrial Origin of HIV! এই ভাইরাস এলিয়েনরা আনছে পৃথিবীতে ১৯৮০ সালে যে কারনে এইটা আগে হয়নি!! কথা হচ্ছে আমার হাইপোথিসিসের পক্ষে আমার প্রমাণ আছে কিনা, evidence যা হাতে আছে তার সাথে আমার হাইপোথিসিস কতটা সঙ্গতিপূর্ন। বিজ্ঞান চোখ বন্ধ করে কিছু মেনে নেয় না। যা সত্য তা কেন সত্য সেটার পক্ষে যেমন প্রমাণ খুজে যা মিথ্যা তা কেন মিথ্যা সেটা নিয়েও মাথা ঘামায়।
হান্টার থিওরি সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য। যা কিছু প্রমাণ এইদিকেই। আরো যে কয়টা থিওরী আছে The contaminated needle theory ,The colonialism theory এইগুলাও আসলে হান্টার থিওরিও পরিবর্ধিত রুপ।সিম্পল থিওরি ।মানুষে এইচআইভি আসে শিম্পাঞ্জি খেতে গিয়ে বা মারতে গিয়ে।এইটাকে বলে cross-species transmission। এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে লাফ দেয়া। উপরোক্ত ভ্যাক্সিন থিওরি ছাড়াই এই transmission ন্যাচারাল ভাবেই হতে পারে।
ফিগার ১ : বিজ্ঞানীদের ধারনা ১৯৩১’এর দিকে সাইউ ইস্ট ক্যামেরুনের এই শিম্পাঞ্জি কলোনি থেকেই SIV প্রথম ট্রান্সমিট হয় মানুষে
এমন উদাহরন আরো আছে। influenza A, Ebola, SARS, dengue সবই একইভাবে বিভিন্ন সময় অন্য প্রানী থেকে মানুষে আসছে। খেতে গিয়ে, মারতে গিয়ে ।বিভিন্ন পথে। হয় কি একটা ভাইরাস যখন তার অরিজিনাল পোষকে(host) থাকে তখন কোন ক্ষতি করে না। আমাদের অন্ত্রেও এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে। এইসব ব্যাকটেরিয়ার জন্য আমরা মানুষ হলাম অরিজিনাল পোষক।কোন সমস্যা নাই। এখন কোনভাবে যদি পোষক পরিবর্তন হয় ধরুন বাদুড়ের কোন ভাইরাস লাফ দিয়ে চলে আসল মানুষে। ভিন্ন পোষকে এই ভাইরাস তখন কোন রোগ তৈরি করবে।এইটা সবসময়েই হচ্ছে ।ভবিষ্যতেও হবে। আর এই লাফালাফি থেকেই জন্ম নিবে নতুন নতুন রোগ।
Cross-Species Virus Transmission and the Emergence of New Epidemic Diseases –>
ফিগার ২ : Sin Nombre (hantavirus) virus’এর ন্যাচারাল হোস্ট এই ইদুর।পরবর্তীতে মানুষে ট্রান্সমিট হয়ে পালমোনারি সিনড্রোম তৈরি করে।
এইভাবে কোন বাহকের মাধ্যমে পোষক পরিবর্তন করার আর একটা ভাল নাম আছে। Zoonosis। কুকুর বিড়াল , বাদুড় ,ভেড়া,বানর এমন অনেক বাহক প্রানী থেকেই মানুষে প্যাথোজেন আসার ঘটনা ঘটছে। খেয়াল করে দেখুন যেসব প্রানীর নাম বললাম সবার সাথেই মানুষের বেশ ভাল সম্পর্ক।যেখানেই যাবেন হাত বাড়ালেই পাবেন টাইপ।কিছু আছে গৃহপালিত প্রানী ,কিছু আমরা খাই ।এইসব প্রানী থেকে তাই বারবারই প্যাথোজেন ট্রান্সফারের ঘটনা ঘটছে।আর এটা খুব দ্রুত মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
ফিগার ৩ :প্যাথোজেন পিরামিড।প্রথমে কোন পোষক exposed হয় কোন প্যাথোজেনে। বারবার exposed হতে থাকলে একটা নিদির্ষ্ট সময় পর infection । Infectious dose (ID) একটা লেভেল পার হলেই পুরোপুরি ট্রান্সমিশন। অতঃপর মহামারী।
ফিগার ৪: পোষক পরিবর্তন করা কিছু প্যাথোজেনের তালিকা
আর মানুষ HIV আসায় সম্ভবত দুইটা cross-species transmission’এর ঘটনা ঘটছে। যেভাবে মানুষ, শিম্পাঞ্জি থেকে পাইছে ঠিক প্যারালাল ভাবেই শিম্পাঞ্জি এই ভাইরাস পাইছে বানর থেকে। দুইটাই cross-species transmission। গবেষনা যা বলে , শিম্পাঞ্জির SIV ভাইরাস আসলে একটা রিকমবিনেন্ট ভাইরাস।দুইটা বানর থেকে দুইটা রিলেটেড ভাইরাস SIVgsn (gsn-greater spot-nosed monkeys )আর SIVrcm (red-capped mangabeys) ট্রান্সমিট হইছে শিম্পাঞ্জিতে।ওই দুই ভাইরাসের রিকমবিনেশনে এই SIVcpz ভাইরাস (cpz-chimpanzees )। বানর পোষক থেকে লাফ দিয়ে ভিন্ন পোষক শিম্পাঞ্জিতে আসল ,ভাইরাসে কিছু মিউটেশন হল।নতুন পোষক’a নতুন রেসপেন্স।কিছু হালকা হালকা এইডস টাইপ সিনড্রোম শিম্পাঞ্জিতে দেখা গেল এই SIV এর কারনে। তবে এইডস না অবশ্যই। পরে শিম্পাঞ্জি থেকে মানুষে লাফ দিল।কিছু ব্যাপক মিউটেশন। বেচারা Nef gene টাই মাঝপথে নাই হয়ে গেল মানুষে ঢুকার পর। আরো কিছু মিউটেশন।সব মিলিয়ে T সেলকে আক্রমন করে immune সিস্টেমের পুরা বারটা বাজিয়ে দেয়ার ক্ষমতা চলে আসল। শুরু হল immunodeficiency । ভাইরাসের এই স্বভাবমতন নতুন পোষকে SIV বাদ দিয়ে নতুন নাম দেয়া হল HIV, Human immunodeficiency virus।
লিঙ্ক এখানে
ফিগার ৫ : এই ফিগারটা বুঝার জন্য চমৎকার। একটা গুরুত্বপূর্ন কথা। এই ট্রান্সমিশন শুধু একবার না। হতে পারে অনেকবার। HIV’এর ক্ষেত্রে ধারনা করা হয় কমপক্ষে তিনবার SIV ট্রান্সমিট হইছে মানুষে। এর বেশিও হতে পারে। যে কারনে মানুষে HIV’এর তিনটা স্ট্রেইন দেখা যায়। টাইপ M, N , O ।
ফিগার ৬: সেই বিখ্যাত গোল ছবি। 😀
HIV অরিজিন নিয়ে আরো জানতে চাইলে-
লেখাটা এখানেই শেষ করি। বদমাইশ HIV’এর গল্প বললে এতটুকু লেখায় শেষ করা যাবে না। তবে এইটুকু তো পরিষ্কার হল ১০০% প্রাকৃতিক উপায়ে প্যাথোজেন ট্রান্সফার হতে পারে..:D আর এটার ফল কখনো ভাল হয়নি। জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন রোগ। সামনে আসতে পারে HIV’এর চেয়ে বদমাইশ কোন ভাইরাস। বিজ্ঞানীরাও এই বিষয় নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত। এই ব্যাপক চিন্তা , গবেষনার মাঝে ভুল তথ্য জেনে পিছিয়ে থাকার সময় নেই। জানতে হবে। এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষদের বায়োলজি জ্ঞান কম আর তার মাঝে চারপাশের ভুলভাল তথ্য , ভুলে ভরা পাঠ্যবই সব মিলিয়ে একটা জগাখিচুড়ি অবস্থা । যা তা পাওয়া যায় ব্লগে ।বিজ্ঞানকে প্যাদানি দেয়া কথা বললে অনেকের আবার বেশ ভালও লাগে। এইসব ভুল চিন্তা ,ভুল তথ্য ভরা লেখা HIV ভাইরাসের মতনই ভয়ংকর। দুইটাই পরিত্যাজ্য। 😀
লেখকঃ ইফতি
মুক্তমনায় লেখকের পূর্বে প্রকাশিত লেখাঃ ঘটনা শেষ পর্যন্ত ঘটেই গেল !!
এইডস বিষয়ক অনেক তথ্য জানলাম।লেখকে ধন্যবাদ।
@সাদিয়া, ধন্যবাদ। 🙂
ধন্যবাদ লেখককে, কিছুটা বাড়তি সংযোগ করছি.কারন বিষয়টা ব্যাক্তিগত ইন্টারেস্ট :
এইডস মহামারীর কারন হিসাবে জীবানু দুষিত পোলিও ভ্যাক্সিন তত্ত্বটি সবচেয়ে বিতর্কিত। ১৯৯২ সালে রোলিং স্টোন পত্রিকায় সাংবাদিক টম কার্টিস তার নিবন্ধ The origin of AIDS: A Startling New Theory Attemps to Answer The Question ‘Was It an Act of God or an Act of Man?” এ প্রস্তাব করেন HIV মহামারীর কারন হতে পারে আফ্রিকায় ব্যবহার করা পরীক্ষা মুলক প্রথম ওরাল পোলিও ভ্যাক্সিন, যা হয়ত সেই সময়ের বিজ্ঞানীতের অজানা SIV ভাইরাস দিয়ে দুষিত ছিল। কারন ভ্যাক্সিন তৈরী করতে ব্যবহার করা হয়েছিল আফ্রিকান গ্রীন মাঙ্কিদের কিডনী থেকে সংগৃহীত কোষ। গ্রীন মাঙ্কির কোষ সেই সময় ব্যবহার করা হত ভাইরাসের সেল কালচারের সময়। এই ভ্যাক্সিনটির প্রথম ট্রায়াল হয়েছিল ১৯৫৭-১৯৬০ সালে বর্তমান ডেমোক্রাটিক রিপাবলিক কঙ্গো, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডায়; যে দেশগুলোকে বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন বিশ্বব্যাপী AIDS মহামারির সম্ভাব্য সুচনাকেন্দ্র হিসাবে। সেই বিশাল পোলিও ভ্যাক্সিন ক্যাম্পেইনের স্তপতি ভাইরোলিষ্ট হিলারী কপরোভস্কির সাক্ষাৎকার নেবার সময় পোলিও ভাইরাসের এই পাওনিয়ার ভ্যাক্সিনের জন্য কি ধরনের কোষ (গ্রীন মাঙ্কি না এশিয়ান ম্যাকাক) ব্যবহার করেছিলেন তার কোন প্রামান্য দলিলের অস্তিত্বের কথা মনে করতে পারেননি, তাছাড়া সেই সময়ে এই ভাইরাসটির অস্তিত্বই জানা ছিলনা, এছাড়া সেই সময়ের টেকনিক এই ভাইরাসটি শনাক্ত করতে সক্ষম ছিল না যা কিনা বানরের শরীরে কোন রোগ সৃষ্টি করেনা, এমন কোন জীবানুকে থেকে সুরক্ষা করার উপায়ও ছিল না;প্রায় ৯০০০০ ডোজ টিকা দেয়া হয়। । কার্টিস এই তত্ত্বটির প্রস্তাবক হিসাবে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার এইডস অ্যাক্টিভিস্ট ব্লেইন এলসউড; প্রায় একই সময় স্বতন্ত্র ভাবে আরো দুজন একই প্রস্তাব করেন, এদের একজন লুই পাসকাল, যিনি ব্লেইন এলসউড এর মত বিজ্ঞানী নন। এছাড়া একজন আইনজীবি ওয়াল্টার কাইল। ১৯৯২ সালের পর এই মতবাদের একজন সমর্থক হিসাবে আবির্ভুত হন বিবিসির একজন সাংবাদিক এডওযার্ড হুপার। ১৯৯৯ সালে বিতর্কিত বই The River: A Journey to The Scource of HIV and AIDS এ তিনি তার প্রস্তাবগুলো প্রকাশ করেন। তিনি কার্টিসের সাক্ষাৎকারের একটি বিষয় লক্ষ্য করেছিলেন, যেখানে হিলারী কপরোভস্কি তাদের একটি শিম্পান্জ্ঞি কলোনী প্রতিপালন করার কথা উল্লেখ করেছিলেন, হুপার বলেন এই শিম্পান্জ্ঞি থেকেই, গ্রীণ মাঙ্কি নয়, ভাইরাসটি পোলিও ভ্যাক্সিনে এসেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, শিম্পান্জীরা SIV দ্বারা সংক্রমিত হয় মাঝে মাঝে, এদের কোষই হিলারী কোপ্রোভস্কী ব্যবহার করেছিলেন তার ভ্যাক্সিনে; যা এই ভাইরাস দ্বারা দুষিত হতে পারে। কিন্তু ২০০০ সালের পরে এই তত্ত্বটির বীপরিতে বেশ কিছু স্বাক্ষ্য প্রমান জড়ো হয়। যেমন Wister Institute এর সেই ভ্যাক্সিন ব্যাচে পরীক্ষা করে সেখানে শিম্পান্জ্ঞির ডিএনএ কিংবা SIV কোনটাই পাওয়া যায়নি। তবে হুপার দাবী করেন স্থানীয় পর্যায়ে এই ভ্যাক্সিনটিকে আরো ডোজ তৈরী করা হয়েছে, তখন ব্যাপারটা ঘটতে পারে। কিন্তু বর্তমানে HIV র বেশ কয়েকটি স্থানীয় স্ট্রেইন যারা নির্দিষ্ট এলাকায় সমীবদ্ধ হিসাবে আবিষ্কৃত হয়েছে, গন ভ্যাক্সিনেশনের ব্যাপারটি এর ব্যাখ্যা দিতে পারে না। দ্বিতীয় যে কারনটি এই তত্ত্ব সম্বন্ধে সন্দেহর কারন হয়েছে তা হচ্ছে বেটে করবারের একটি গবেষনা, তারা HIV-1 এর M গ্রুপের নানা স্ট্রেইনগুলো জিন পর্যায়ে তাদের পার্থক্য গুলো অ্যানালাইসিস করে বের করেছেন এই শেষ কমন আদি ভাইরাসের সময়কালের কথা। যা বলছে এটি ১৯১৫ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে ঘটেছে। যা পোলিও ভ্যাক্সিন দেবার একদশক আগের কথা। HIV 2 এর ক্ষেত্রে যেমন, ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫; হিলারী কপরোভস্কির মুখে খাওয়ার প্রথম পোলিও ভ্যাক্সিনকে আফ্রিকা থেকে AIDS মহামারীর উৎস কার্টিস এবং হুপারের যে যুক্তি দেন তা হলো, শিম্পান্জ্ঞদের বহন করা SIV পোলিও ভ্যাক্সিনকে দুষিত করেছে কারন এটি তৈরী করার সময় ব্যবহার করা হয়েছে শিম্পান্জ্ঞিদের কোষ। এই ভাইরাসটি মিউটেট হয়ে রুপান্তিরিত হয়েছে HIV তে। আরো প্রমান হিসাবে তারা দাবী করেন AIDS মহামারীর শুরু হয়েছে সেই একই সময় ও স্থানে যেখানে কপরোভস্কি তার পোলিও ভ্যাক্সিনের কার্য্যক্রম পরিচালনা করেন। কার্টিস আর হুপারের এই তত্ত্ব বেশ নজর কাড়লেও বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারনার উপর ভিত্তি করে এটি গড়ে উঠেছে, যা পরবর্তী আরো গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে, যেমন, মহামারীর শুরুর স্থান থেকে এই মহামারী শুরু হয়নি, এছাড়া ভ্যাক্সিনটি তৈরী করার সময় শিম্পিান্জ্ঞির কোন কোষ ব্যবহার হয়নি। আফ্রিকান গ্রীণ মাঙ্কি কিডনী কোষ ব্যবহৃত হয়েছে। কয়েকটি SIV স্ট্রেইন যাদের HIV র প্রিকারসর মনে করা হয়, কিন্তুা মিউটেশনের মাধ্যমে তাদের HIV তে রুপান্তর হবার জন্য সময় দরকার। এছাড়া সে ভ্যাক্সিনের অবশিষ্ট ভায়ালগুলোতে SIV/HIV বা শিম্পান্জ্ঞিদের ডিএনএ ও পাওয়া যায়নি। ২০০০ সালের সেপ্টম্বরে রয়্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের একটি সেমিনারে চুড়ান্তভাবে ভুল প্রমান করেন স্ট্যানলী প্লটকিন ( যিনি জার্মান মিজলস এর ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেছিলেন), প্লটকিন নিজেও সেই ট্রায়ালের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০৬ সালে বিয়েত্রিস হান প্রমান করেন SIVcpz যা দক্ষিন ক্যামেরুনের বন্য শিম্পান্জ্ঞিরা বহন করে , সেখান থেকে এসেছে HIV -1 এর M গ্রুপের সাবটাইপগুলো, এবং এই প্রজাতি পরিবর্তনের ঘটনাটা ঘটেছে আনুমানিক ১৯৩০ এর দশকে, কপরোভস্কির ভ্যাক্সিন ট্রায়ালের প্রায় ২০ বছর আগে। ওরাল পোলিও ভ্যাক্সিনের তত্ত্বটির বিপক্ষে আরো একটি প্রমান হলো কপরোভস্কি যে শিম্পান্জ্ঞি কলোনীটাকে কিসানগানীর ক্যাম্প লিন্ডিতে প্রতিপালন করেছিলেন তার ভ্যাক্সিনের নিরাপত্তা দেখার জন্য, যা হুপার দাবী করছেন ভ্যাক্সিন তৈরী করার কোষ এসেছে এদের কিডনী থেকে। আপাতত HIV-1 এর মত SIVcpz টা এসেছে শুধু মধ্য পশ্চিম আফ্রিকায় পাওয়া যায় এমন শিম্পান্জ্ঞী উপপ্রজাতি থেকে (Pan troglodyte troglodytes); এর পর দ্বিতীয় অপেক্ষাকৃত কম সদৃশ স্ট্রেইনটি পাওয়া গেছে শুধু মাত্র Pan troglodyte schweinfurthii, যারা পুর্ব মধ্য আফ্রিকার বাসিন্দা, যেখানে ক্যাম্প লিন্ডির অবস্থান ছিল। সবচেয়ে কাছের Pan troglodyte troglodytes কলোনি সেখান থেকে প্রায ৫০০ মাইল দুরে। সুতরাং এই তত্ত্ব মোতাবেক যে SIVcpz টি HIV-1 এর জন্ম দিয়েছে তা অবশ্যই স্থানীয় না। কিন্তু এখনো এই তত্ত্বটির সপক্ষে যারা তারা দাবী করছেন, অল্প কিছু ভ্যাক্সিন নমুনায় SIV না পাওয়ার মানে কিন্তু ছিল না এটা বলা যাবে না। এছাড়া, ক্যাম্প লিন্ডির শহর কিশানগানী কঙ্গো নদীর মুখে ছিল, এবং এর সীমানার সাথেই ছিল Pan troglodyte troglodytes এলাকা বহু কিলোমিটার ধরে। এছাড়া যদি আফ্রিকার স্থানীয়রা আমেরিকানরা ভালো দাম দিচ্ছে বলে তাদের কাছে Pan troglodyte troglodytes বিক্রি করেনি এমন নিশ্চিয়তাও নেই। সে কারনে যদি জীববিজ্ঞানীয় প্রমান এর বিপরীতে থাকলেও এখনো তত্ত্বটি মৃত্যুবরণ করেনি। আপাতত যতটুকু জানা গেছে তা হলো HIV type 1 ভাইরাসটির এসেছে SIVcpz ( Pan troglodytes troglodytes) যা মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে দেখা যায় এবং সম্প্রতি আবিষ্কৃত গ্রুপ P এর উৎপত্তি ওয়েস্টার্ন লোল্যান্ড গরিলাদের মধ্যে দেখা যায় SIVgor (Gorilla gorilla gorilla) । অপরদিকে HIV 2 এর উৎপত্তি SIVsm বা শুটি ম্যাঙ্গাবে (Cerocebus atys atys), যাদের বসবাস পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে। মানুষের রক্ষিত বায়োলজিকাল নমুনায় HIV-1 জেনোম সিকোয়েন্স অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি হিসাব করে দেখেছেন যে, শিস্পান্জ্ঞি থেকে ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে অ্যাডাপ্ট করার ঘটনাটি ঘটেছে উনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে (১৮৭৩ থেকে ১৯৩৩, কোন কোন ক্ষেত্রে এটি ১৯০২ থেকে ১৯২১ এর মধ্যে কোন সময়ে, এই ডাটাটি এসেছে ১৯৫৯/৬০ সালে কঙ্গোর কিনশাশার একটি নমুনা থেকে); ভাইরাসটির উৎপত্তি নিয়ে আরো বেশ কিছু তত্ত্ব আছে, তবে ন্যাচারাল প্রক্রিয়া কাজ করেছে, সেক্ষেত্রে বুশ মিট আর কাট হান্টার থিওরীও সবচেয়ে জোরালো; ২০০৮ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট শেফার প্রমান করেন যে HIV যে পরিবারের সদস্য, সেই লেন্টিভাইরাস এর অস্তিত্ব ১৪ মিলিয়ন বছর ধরে। এটি পাওয়া গেছে গ্রে মাউস লেমুরের জীনের মধ্যে; ব্যপারটা ঘটেছে যখন মাদাগাস্কার আফ্রিকার মুল ভু খন্ডের সাথে সংযুক্ত ছিল, এবং এই লেমুরগুলো ভাইরাসটি বিরুদ্ধে একটি রোগ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, যখন স্তন্যপায়ীদের মধ্যে লেন্টিভাইরাসে ব্যপক প্রকোপ ছিল। এর আগের বছর বিজ্ঞানীরা ইকোয়েটরিয়াল গিনির উপকুল থেকে ৩২ কি মি দুরের দ্বীপ বিয়োকোর চার প্রজাতির বানরদের মধ্যে খুজে পাওয়া SIV স্ট্রেইনটি অ্যানালাইসিস করে তারা বুঝতে পেরেছেণ ভাইরাসটি প্রায় ৩২০০০ বছর ধরে বানরদের সংক্রমন করেছে, কিংবা সম্ভবত তারও আগে থেকে। বিয়োকো মুল ভুখন্ড থেকে আলাদা হয়েছে প্রায় ১১০০০ বছর আগে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার সাথে। বিজ্ঞানীরা ধারনা করছে আমরা মানুষদের HIV র সাথে অ্যাডাপ্ট হতে সেই রকম একটা সময় পার হতে হবে, যখন ভাইরাসটি অমাদের আর কোন ক্ষতির কারন হবে না।
@কাজী মাহবুব হাসান, গুরুত্বপূর্ন মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । 🙂
রেট্রোভাইরাসগুলো আমাদের সাথে বহু বছর ধরেই আছে, আমাদের জীনোমের ৮-৯% এই ভাইরাসের, বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ন জীন এসেছে এইসব ভাইরাস থেকে। সবই বহু মিলিয়ন বছর আগে আমাদের পুর্বপুরুষদের মাঝে সংক্রমিত হওয়া ভাইরাস । infect করতে করতে ধীরে ধীরে এক পর্যায়ে প্যাথোজেনেসিটি ছেড়ে দেয় । একটা সময় জীনোমের পার্ট হয়ে যায়। ঠিক এভাবেই SIV দীর্ঘ সময় পর শিম্পাঞ্জিতে অনেকটা নন প্যাথোজেনিক টাইপের হয়ে গেছে।কোনএকদিন জীনোমেই ঢুকে যাবে। :)) ভাইরাসের ধর্মই এটা।উপযুক্ত পোষক বের করা , তারপর নিজের সারভাইবালের জন্য ক্রমাগত ইনফেকশন ।একটা লম্বা সময় পর পোষকের সাথে সব ঝামেলা মিটমাট করে ফেলে। :))
কয়েক হাজার বছর পরে HIV ভাইরাসটাও এমন নীরিহ হয়ে যাবে( :rotfl: ) ,পুরোপুরি ঢুকে যাবে আমাদের জীনোমে। 🙂
@কাজী মাহবুব হাসান,
এত কথার মধ্যে যুক্তি কেমন ঘোলাটে হয়ে যায় .. এক দশকের ব্যবধান খুব কম সময় বলে আমার মনে হয় .. এর মধ্যে কিছুটা রাজনীতি আছে বলে মনে হচ্ছে .. এই প্রমান আর অপ্রমানের কতটুকু অকপট বলা মুশকিল .. মনের মধ্যে একটা খটকা থেকে যায় .. আজকের দিনেও নতুন কিছু চিকিত্সা পদ্ধতি চর্চা করা হয় সিঙ্গাপুর এবং থায়লেন্ডে ..
@পরমার্থ,
ভাই কি বুঝাতে চাইলেন কিছুই তো ঠাহর করতে পারলুম না।উল্টা আমার মাথাও যে ঘোলাটে হয়ে গেল। 🙁
কোথাও কোন রাজনীতি নাই। 🙂
@পরমার্থ, যুক্তিটি আসলে কোথায় ঘোলাটে হয় যাচ্ছে? আলোচনা হচ্ছে ভাইরাসটির উৎপত্তির একটি প্রস্তাবিত কারন সম্বন্ধে, যেটি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল প্রমানিত হয়েছে; কপট অকপটতার কোন ব্যাপার নেই, অজস্র রেফারেন্স আছে। ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপত্তি হয়েছে এটা কোন সন্দেহ নেই; এখন যে প্রস্তাবনাটা হচ্ছে সেটা হলো মহামারীর সুচনা সম্বন্ধে; ভাইরাসে উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক নিষ্পত্তি হয়েছে আগেই। এমনকি প্রায় একই ভাইরাস শিম্পান্জিকে কোন ক্ষতি করছে না, মানুষকে আক্রান্ত করছে ভয়াবহ একটা ব্যাধিতে তারও রহস্য উন্মোচিত হয়েছে; এছাড়া মহামারী সুচনা নিয়ে বেশ কিছু জোরালো প্রমান যোগাড় হয়েছে বুশমিট আর কাট হান্টার তত্ত্বের পক্ষে, সুতরাং আপনার খটকাটা আসলে কোথায়? আর কোন চিকিৎসার কথা বলছেন, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরে… সেটা পুরোপুরি না ব্যাখ্যা করলে মন্তব্য করতে পারছিনা।
@কাজী মাহবুব হাসান,
আমি বলছি না যে উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে কেও এই জীবানু তৈরী করেছে .. কিন্তু এই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট রোগ কিন্তু মানুষের কার্যকলাপের মাধ্যমে ছড়াতে পারে .. যেমন মনে করুন সিরিঞ্জের মাধ্যমে নেশাদ্রব্য গ্রহণের কারণে হতে পারে .. আর এইসব নেশাদ্রব্য ঐসব এলাকায় অবাধে ব্যবহৃত হয়েছে দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে ..
” যেমন Wister Institute এর সেই ভ্যাক্সিন ব্যাচে পরীক্ষা করে সেখানে শিম্পান্জ্ঞির ডিএনএ কিংবা SIV কোনটাই পাওয়া যায়নি। তবে হুপার দাবী করেন স্থানীয় পর্যায়ে এই ভ্যাক্সিনটিকে আরো ডোজ তৈরী করা হয়েছে, তখন ব্যাপারটা ঘটতে পারে। কিন্তু বর্তমানে HIV র বেশ কয়েকটি স্থানীয় স্ট্রেইন যারা নির্দিষ্ট এলাকায় সমীবদ্ধ হিসাবে আবিষ্কৃত হয়েছে, গন ভ্যাক্সিনেশনের ব্যাপারটি এর ব্যাখ্যা দিতে পারে না। দ্বিতীয় যে কারনটি এই তত্ত্ব সম্বন্ধে সন্দেহর কারন হয়েছে তা হচ্ছে বেটে করবারের একটি গবেষনা, তারা HIV-1 এর M গ্রুপের নানা স্ট্রেইনগুলো জিন পর্যায়ে তাদের পার্থক্য গুলো অ্যানালাইসিস করে বের করেছেন এই শেষ কমন আদি ভাইরাসের সময়কালের কথা। যা বলছে এটি ১৯১৫ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে ঘটেছে। যা পোলিও ভ্যাক্সিন দেবার একদশক আগের কথা।”
উপরের এই ব্যাপারগুলো প্রমান করে আমাদের ঐসব প্রাণী সম্পর্কে অনেক সাবধান হতে হবে .. ঐসব প্রাণীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রে আরও সাবধান হতে হবে .. আর এই প্রমাণগুলো অকাট্য যুক্তি না, এইসব যুক্তির উপর বেশি “বিশ্বাস” একধরনের রাজনৈতিক ব্যাপার .. আমি বলি ভাকসিন দেবার এক দশকের মধ্যে HIV শুরু হওয়া এক ভয়ঙ্কর কাকতালীয় ব্যাপার .. কারণ ওই ১৯১৫ থেকে ১৯৪১ এক দীর্ঘ সময় যার থেকে এক দশকের ত্রুটি শুধুমাত্র পরীক্ষাগারের সীমাবদ্ধতা থেকে উদ্ভুত ত্রুটি হতে পারে ..
এই ব্যাপারটির মধ্যে দলাদলি দেখলে আমার কষ্ট হয়, কারণ এর মধ্যে আমাদের দেশের কারো কোনো স্বার্থ নেই .. এই ভাকসিন HIV-এর উত্স হয়ে থাকতে পারে তা খুব সম্ভাব্য ..
থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে মানুষ চিকিত্সার জন্য যায় কারণ সেখানে অনেক নতুন চিকিত্সাপদ্ধতি পরীক্ষা করা হয় রোগীর দেহে যা আমেরিকাতে আইনসিদ্ধ নয় .. যেমন মনে করুন হৃদপিন্ডের স্টেম সেল চিকিত্সা যা অনেক জনপ্রিয় ..
@পরমার্থ, আমার মনে হয়না এখানে কোন দলাদলির ব্যাপার আছে। প্রশ্নটা হচ্ছে একটি প্রমানিত বৈজ্ঞানিক সত্যকে অস্বীকার করা। কপরোভস্কির পোলিও ভ্যাক্সিন এর সাথে HIV র উৎপত্তির কোন সম্পর্ক নেই, এটা এখন আর কেউই দাবী করেনা। আমি জানিনা কোনটি আপনার কাছে আকাট্য যুক্তি হতে পারে। তবে অসংখ্য রিসার্চ পেপার থেকে অন্তত আমি যেটুকু বুঝতে পারি যেখানে কোন সন্দেহর অবকাশ নেই।
অবশ্যই কোন প্রানী অঙ্গ গবেষনায় ব্যবহার করতে হলে আমাদের সাবধান হতে হবে, ঠিকই। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে নিরাপদ ভ্যাক্সিন তৈরী করার প্রযুক্তির ও মলিকিউলার বায়োলজী যে অগ্রগতি হয়েছে নব্বই দশক থেকে যে এ বিষয়ে কোন যুক্তিযুক্ত সন্দেহর আর অবকাশ নেই। প্রায় ৪০০০ প্রজাতির ভাইরাস আছে, এদের মধ্যে মানুষকে সংক্রমন করে কয়েক ডজন পরিবারের ভাইরাসরা, মানুষের নানা আচরন গত ৫০ বছরে বেশ কয়েকটি ভাইরাসকে প্রজাতির বাধা পার হবার সুযোগ করে দিয়েছে ( যেমন নিপাহ, সার্স ইত্যাদি) এবং আরো সম্ভাবনা তো রয়েই গেছে; সৌভাগ্য যে সারা বিশ্বব্যাপী একটি নেটওয়ার্ক কাজ করছে, অনেক বিজ্ঞানী আছে যারা ভাইরাস হান্টার, নানা ধরনের বিচিত্র আউটব্রেক খুজে বেড়াচ্ছেন। বাংলাদেশ যার একটি গুরুত্বপুর্ণ সদস্য (সরকারের প্রতিষ্ঠান IEDCR এর একটি নোডাল পয়েন্ট)
হয়তো আমার ব্যাখ্যায় আপনি ছিদ্র খুজে পেতে পারেন, তবে এটি প্রমানিত কপরোভস্কির সেই পোলিও ভ্যাক্সিন এর সময় ব্যাপারটি ঘটেনি। HIV তার আগেই বেশ কয়টি ট্রান্সমিশণ ইভেন্ট পেরিয়ে প্রয়োজনীয় অভিযোজন শেষ করেছে। এটি ছাড়া আরো জোরালো কিছু তত্ত্ব আছে যা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে।
তবে আমি অবশ্যই একমত আপনার সাথে এটি ব্যপক ভাবে বিস্তৃতি পেয়েছে মানুষেরই কিছু কার্য্যকলাপের মাধ্যমে; অন্য তত্ত্বগুলো ঠিক সেধরনেরই প্রস্তাব করছে…
যেমন ২য় তত্ত্বটি হলো কাট হান্টার বা বুশমিট বা হান্টার থিওরী নামে পরিচিত। এটি সবচে প্রধান তত্ত্ব, যা প্রস্তাব করছে, SIV মাঝেই মাঝেই বানর শিকারীদের শিকার করার সময় কামড় বা আচড় ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমিত করেছে। এই ধারনা অনুযায়ী, ভাইরাসটি মানুষের দেহে কোন রোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই বেশ কয়েকবার ভাইরাসটি মানুষের শরীরে অ্যাডাপ্ট করে নিয়েছে এবং নিজেকে HIV হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ব্যাপারটা চিন্তা করা কিন্তু কঠিন না কারন আহত ম্যাঙ্গাবী বা শিম্পান্জ্ঞি শিকারের সময় শিকারীরা কাটা ছেড়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে বা অন্য কোন ধরনের ন্যাচারাল ট্রান্সফার প্রক্রিয়া কাজ করছে যা এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে ভাইরাসটির ব্যাপক বিস্তারে বিশেষ সহায়তা করেছে। বর্তমানে এটাই সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা।
এছাড়া মধ্য বিংশ শতাব্দীতে HIV-1 এবং HIV-2 এর বিস্তারের জন্য আফ্রিকার দ্রুত নগরায়ন ও বানিজ্যকরনকে একটি ব্যাখ্যা হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এটিকে যৌনবাহিত রোগ হিসাবে এর বিস্তারকে তরান্বিত করেছে।
তৃতীয় তত্ত্বটি কাট হান্টার থিওরীর একটি রিফাইনমেন্ট। তুলান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিষ্ট প্রেষ্টন ই মার্ক্স মন্তব্য করেছিলেন যে ১৯৫০ এর দশকে ডিসপোজেবল প্লাষ্টিক সিরিন্জ আসার পরে যেমন জীবানু মুক্ত ইনজেকশন দেবার ব্যাপারটা নিশ্চিৎ হয়েছিল, তেমনি সিরিন্জের দামও কমে গিয়েছিল সেই অনুপাতে। সে সময় ইনজেকশনের মাধ্যমে ঔষধের প্রচলনও বেড়ে যায়। যেহেতু ডোজটা মাপা সহজ এবং ঔষধ খোলাবাজারে বিক্রি হয়ে যাবার সম্ভাবনা কম বলে ইনজেকশনের প্রচলন বেড়ে যায়, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো, চিকিৎসকরা ইনজেকশনের মাধ্যমে ঔষধ দেবার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে পড়েন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপাত দৃষ্টিতে সামান্য দামের জিনিসটাও যারা নগদ অর্থনীতির বাইরে অবস্থান করে তাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল ছিল, যেহেতু এটি পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করা যাবে না, সেকারনে এদের বহুব্যাবহারও বাড়তে লাগলো, যা জীবানু ছড়াতে সহায়ক হয়। মার্ক্স বলেন, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা SIV কে ঠেকাতে পারে যখন প্রথম আক্রান্ত হয়। তার বক্তব্য হচ্ছে ভাইরাসটি অ্যাডাপ্ট করে নেবার কারন হলো সিরিয়াল প্যাসেজের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মিউটেশন অর্জন করার সিলেকশন প্রেসার। সম্ভবত কোন এ ধরনের শিকারী যার রক্তে প্রচুর পরিমানে ভাইরাস পার্টিকল ছিল, তার শরীরে ব্যবহার করা অবিশুদ্ধ সিরিন্জ অন্য কারো শরীরে ব্যবহার করলে আরেকজনের শরীরে তা ছড়িয়ে পড়বে। এরাই আবার হয়তো আরো ইনজেকশন পেতে পারে, যেখানে প্রচুর ভাইরাস ছিল, এই বিশাল পরিমান ভাইরাল জনসংখ্যা এভাবে গয়তো বেশ কয়েকজনের শরীরে নানা ধরনের ইনজেকশনের মাধ্যমে জমা হতে পারে। যখনই ভাইরাস নতুন পোষকের শরীরের আসবে তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোন প্রতিরোধ করা আগে সংখ্যা বৃদ্ধি করার বাড়তি সুযোগ পাবে, চান্স মিউটেশনগুলো জড়ো হবার সুযোগ পায়, এভাবে SIV অ্যাডাপ্ট করে নেয় HIV রুপে।
চতুর্থ তত্ত্বটি পরিচিত হার্ট অব ডার্কনেস তত্ত্ব হিসাবে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার নৃতত্ত্ববিজ্ঞানের অধ্যাপক জিম মুর ও তার দুই রিসার্চ স্টুডেন্ট অমিত চিটনিস এবং ডায়ানা রাওলস, এর প্রস্তাবক। ২০০১ সালের পর বেশ কিছু আর্টিকেল প্রস্তাব করে কোন বুশমিট শিকারী বা এ ধরনের শিকার নানা চাড়া করেছে এমন কোন ব্যাক্তির কাছ থেকে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে বিস্তার করতে সহায়তা করে দুষিত সুচ এবং সিরিন্জের বহুব্যবহার। এই দ্রুত সিরিয়াল প্যাসেজ ভাইরাসটি মানুষের শরীরে অ্যাডাপ্ট করতে সয়াহতা করে। উপনিবেশিক আফ্রিকায় ব্যাপক ইনজেকশন প্রোগ্রামগুলো এই ভাইরাসটি ছড়াতে সহায়তা করেছে। সিরিয়াল প্যাসেজ বা সিরিয়াল ট্রান্সমিশান হলো এই তত্ত্বের মুল বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। যখন কোন ভাইরাসকে অল্প সময়ের ব্যাবধানে বিভিন্ন হোস্টের মধ্যে বংশবিস্তার করার সুযোগ করে দেয়া হয়, যখন হোষ্ট সংক্রমনের প্রথম পর্যায়ে থাকে এবং তখন ভাইরাসটি বেশী সুযোগ পায় একটি নতুন হোস্টের মধ্যে অ্যাডাপ্ট করে নেবার জন্য। এছাড়া জাক পেপাঁ এবং অ্যানি ক্লড ফ্যাবে ফরাসী কলোনীতে সরকারী ইনজেকশন কর্মসুচীর ডাটা পর্যবেক্ষন করেন; দক্ষিন ক্যামেরুনে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব (৪০-৫০%) এর সমান্তরলে HIV-1 এর বিস্তারকে ব্যাখ্যা করেন, ব্যপক দুষিত সিরিন্জের ব্যবহারকে। ২০১১ সালে তাদের বই The Origin of AIDS তারা দেখান ভাইরাসটির উৎপত্তি ১৯২১ সালে মধ্য আফ্রিকার একজন বুশহান্টার, এবং কলোনিয়াল শাসকদের মেডিকেল কর্মসুচী ভবিষ্যৎ মহামারীর পথটি সুগম করে দেয়। এই বইটিতে লেখক রা দাবী করেন জায়ার থেকে হাইতে ফেরা একজন শিক্ষক পশ্চিম গোলার্ধে ভাইরাসটি নিয়ে আসেন। এধরনের আরেকটি তত্ত্ব প্রস্তাব করেন জোয়াও দিনিস দ্য সুসা ও তার সহযোগীরা, তারা প্রস্তাব করেন HIV মহামারী রুপ পেয়েছে যৌন বাহিত ধারাবাহিক প্যাসেজ এর মাধ্যমে আফ্রিকার নব্য ঔপনিবেশিক শহরগুলোতে শতাব্দীর শুরুতে; ভাইরাসটির বিস্তারে সহায়তা করেছে এখানকার বসবাসকারীদের যৌনাঙ্গের আলসার জনিত অসুখের প্রাদুর্ভাবের উচ্চ হার। যৌনাঙ্গের আলসার রোগ করে যেমন সিফিলিস, শ্যানক্রয়েড, জেনিটাল হারপিস, লিম্ফোগ্রানুলোমা ভেনেরিয়াম ইত্যাদি। তাদের গবেষনা বলছে সব HIV গ্রুপের উদ্ভব হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর কোন এক সময়ে। সেই সময়ের মেডিকেল রেকর্ড, রিপোর্ট পর্যালোচনা করে টীমটি বলছে, নতুন শহরগুলোতে কাজ করার জন্য লেবার ক্যাম্পে পুরুষ শ্রমিকদের নিয়ে আসা হতো, যেখানে যৌন কর্মীও ছিল। এসময় যৌনাঙ্গের আলসার জনিত অসুখের হার ছিল অত্যন্ত বেশী। পরবর্তী ইনজেকশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে এগুলো কমে আসে। মহামারী শুরু হবার আগেই এই যৌনাঙ্গের আলসার জনিত অসুখের উচ্চ হার ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে বিস্তারের জন্য সময়ের দিক থেকে বেশ সঙ্গতিপুর্ন। এছাড়া গবেষকরা তথ্য দিয়ে দেখান যে যৌনাঙ্গের আলসার জনিত অসুখের হার (সিফিলিস এবং শ্যাঙ্ক্রয়েড, ইনজেকশনের মতই অনুপস্থিত ছিল মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার গহীন বনে ঢাকা সমাজগুলোতে, যে সামাজিক অবস্থার ব্যপক ছন্দপতন ঘটে সংঘটিত ইউরোপিয় ঔপনেবিশিক শাসনের মাধ্যমে ( ১৮৮০ দশকে); যা তারা দাবী করছেন, AIDS মহমারীর সুচনা ১৯ শতাব্দীর শেষ ভাগে কেন ঘটলো তা ব্যাখ্যা করে।
আর স্টেম সেল চিকিৎসা কিন্তু অন্য ব্যাপার, আমেরিকায় এটি আইনসিদ্ধ নয় অন্য কারনে, এটির সোর্স
নিয়ে বিতর্কর কারনে। সরকারী গবেষনার অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত, তবে নানা পর্যায়ে এটি নিয়ে ব্যপক গবেষনা হচ্ছে। কারন স্টেম সেল আর ইমিউন থেরাপী মেডিসিন এর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ফ্রন্টিয়ার, যেখানে উন্নত বিশ্বের কোন দেশই হাত গুটিয়ে বসে সেই। এছাড়া আমেরিকার FDA খুব কঠোর একটি প্রতিষ্ঠান ( হা: হোমিওপ্যাথীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব অবশ্য বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে), তার রেগুলেটরী কাঠামো কোন থেরাপীর পক্ষে পার হওয়া খুব সহজ কাজ না।
@কাজী মাহবুব হাসান,
আপনার চমৎকার মন্তব্যগুলো সব সময়ই নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস। এইডসের উৎস নিয়ে আমি কিছু ভাল বইয়ের সন্ধান চাচ্ছি। আপন কি এ ব্যাপারে একটু সাহায্য করতে পারেন? আপনি যে তত্ত্বগুলোর কথা লিখলেন সেটা কোন বইয়ে বা কোথায় রেফারসেন্স হিসেবে পাওয়া যাবে, সেটি জানলে ভাল লাগতো। ইন্টারনেট এ ব্যাপারে খুবই বায়াসড। বিশেষ করে ফ্যানাটিক রিলিজিয়াস সাইটগুলো তো কেবল সমকামিতাকে দোষারোপ করতেই ব্যস্ত, যেন পৃথিবীর সব এইডস রোগীই এসেছে সমকাম থেকে। এখনো কিছু অর্ধশিক্ষিত ফ্যানাটিক লোকজন এটাকে সত্যি মনে করে, মনে করে সমকামিতা = এইডস! যা হোক, এইডসের উৎপত্তির বিষয়ে আমি ভাল কিছু বইপত্রের সন্ধান চাচ্ছি। আপনার যেহেতু পড়াশুনা আছে, কিছু রেফারেন্স দিলে ভাল হয়।
আর হ্যা, অফ টপিক: আমি লরেন্স ক্রাউসের ইউনিভার্স ফ্রম নাথিং এর উপর একটা লেখা লিখতে গিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করতে গিয়ে দেখলাম আপনার নিজস্ব ব্লগে এ নিয়ে আগে কিছু লিখছেন। সে ব্লগে কমেন্ট করতে গিয়েও কেন যেন পারিনি, আমার ইউজার আইডি আর পাসওয়ার্ড চাচ্ছিল। যা হোক, আপনার কাছ থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা মুক্তমনায় নিয়মিত আশা করছি।
@অভিজিৎ, অবশ্যই; আপাতত আমি কয়েকটি উল্লেখ করছি, আমার ইমেইল [email protected];
এ বিষয়ে আর কোন সাহায্য লাগলে অবশ্যই আমাকে ইমেইল করতে কোন দ্বিধা করবেন না।
Laurie Garret এর The Coming Plague একটি অসাধারন বই ( সংক্রামক ব্যাধি রোগতত্ত্বে আমার অসফল ক্যারিয়ারের প্রথম প্রেরণাদাত্রী); এখানে অধ্যায় ১০ AIDS মহামারীর ইতিহাস নিয়ে;
American Scientist এ জিম মুর এর একটি চমৎকার রিভিউ, সবগুলো তত্ত্ব নিয়ে, বিশেষ করে কপরোভস্কির Tainted Polio Vaccine নিয়ে) The Puzzling Origins of AIDS (Moore J (2004). “The Puzzling Origins of AIDS”. American Scientist 92: 540–47);
The Origins of AIDS: Jacques Pepin ( আফ্রিকায় এর অরিজিনের একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা) Cambridge University Press. ISBN 978-0-521-18637-7.
Sharp, P. M.; Bailes, E.; Chaudhuri, R. R.; Rodenburg, C. M.; Santiago, M. O.; Hahn, B. H. (2001). “The origins of acquired immune deficiency syndrome viruses: where and when?”. Philosophical Transactions of the Royal Society B: Biological Sciences 356: 867–76. doi:10.1098/rstb.2001.0863. PMC 1088480. PMID 11405934.
(এটি বিয়েত্রিস হান এর গ্রুপের, উনার টেকনিকাল অনেক পেপার আছে, উনি আলাবামা ইউনিতে থাকার সময় বাংলাদেশে HIV epidemiology নিয়েও বেশ কিছু কাজ করেছেন। )
Chitnis, Amit; Rawls, Diana; Moore, Jim (2000). “Origin of HIV Type 1 in Colonial French Equatorial Africa?”. AIDS Research and Human Retroviruses 16 (1): 5–8. doi:10.1089/088922200309548. PMID 10628811. ( হার্ট অব ডার্কনেস তত্ত্বটি)
Marx PA, Alcabes PG, Drucker E (2001). “Serial human passage of simian immunodeficiency virus by unsterile injections and the emergence of epidemic human immunodeficiency virus in Africa”. Philos Trans R Soc Lond B Biol Sci 356 (1410): 911–20. doi:10.1098/rstb.2001.0867. PMC 1088484. PMID 11405938.
Lemey, P. (2003). “Tracing the origin and history of the HIV-2 epidemic”. Proceedings of the National Academy of Sciences 100: 6588–92. Bibcode 2003PNAS..100.6588L. doi:10.1073/pnas.0936469100. PMC 164491. PMID
12743376.
Sousa, João Dinis de; Müller, Viktor; Lemey, Philippe; Vandamme, Anne-Mieke (2010). “High GUD Incidence in the Early 20th century Created a Particularly Permissive Time Window for the Origin and Initial Spread of Epidemic HIV Strains”. PLoS ONE 5 (4): e9936. doi:10.1371/journal.pone.0009936. PMC 2848574. PMID 20376191.
Gao, Feng; Bailes, Elizabeth; Robertson, David L.; Chen, Yalu; Rodenburg, Cynthia M.; Michael, Scott F.; Cummins, Larry B.; Arthur, Larry O. et al. (1999). “Origin of HIV-1 in the chimpanzee Pan troglodytes troglodytes.”. Nature 397 (6718): 436–441. Bibcode 1999Natur.397..436G. doi:10.1038/17130. PMID 9989410.
Gifford RJ, Katzourakis A, Tristem M, Pybus OG, Winters M, Shafer RW (December 2008). “A transitional endogenous lentivirus from the genome of a basal primate and implications for lentivirus evolution”. Proc. Natl. Acad. Sci. U.S.A. 105 (51): 20362–7. Bibcode 2008PNAS..10520362G. doi:10.1073/pnas.0807873105. PMC 2603253. PMID 19075221.
PtERV এবং প্রাইমেটদের রেট্রোভাইরাল ইনভেশন নিয়ে ..http://www.sciencedaily.com/releases/2005/03/050328174826.htm
অনেক ধন্যবাদ আমার ব্লগের মন্তব্য করতে চাইবার জন্য; বেশ সমস্যাওয়ার্ডপ্রেসে কোন কমেন্ট করতে গেলে ওরা একটা নাম ইমেইল চায়;
আপনার সব অসাধারন উদ্যোগের জন্য আমার শুভকামনা।
দূর হোক অজ্ঞতা, জয় হোক বিজ্ঞান এর। ধন্যবাদ সুন্দর লিখার জন্য !
@আমিনুল, ধন্যবাদ। 🙂
ইফতি,
আপনার ফেসবুকের লেখাটি তখনই পড়েছিলাম। পোস্টে (Y)
জনাব লিসানি সম্পর্কে শুধু এটুকুই বলি, এই ব্যাক্তি প্রবন্ধের অর্থ না বুঝে শুধুমাত্র সেগুলো বঙ্গানুবাদ করে ব্লগে পোস্ট লেখে। উনি যেসব থিওরীর কথা বলেছেন, সেগুলো অনেকদিন আগেই বাতিল হয়ে গেছে। সমস্যা হল বঙ্গানুবাদ করার সময় উনি মনে হয় তারিখ বা, ওইসব থিওরীর কাউন্টারগুলো খেয়াল করেননি।
আমাদের বন্ধুমহলে একটি শব্দ প্রচলিত আছে: উইকি-পন্ডিত। এর মানে, যারা বই-আর্টিকেল-খবর এগুলো কিছু না পড়ে শুধুমাত্র উইকিপিডিয়ার পড়াশুনার মাধ্যমে পন্ডিত সাজতে চাই।
মানুষের মনের কালি দূর হোক। অল্প বিদ্যা লাভ করে বেশি জ্ঞান জাহির করার প্রবণতা হৃাস পাক। মাথার জটগুলো খুলে যাক। (I)
@সবুজ পাহাড়ের রাজা,
লেখককে গোনায় ধরি নি। পাঠকেরা যেভাবে রেসপন্স করছিল ওইটাই ছিল সমস্যা। :-Y
হু। তবে উইকি খারাপ না। একসাথে অনেক তথ্যের সংকলন আর সাথে নিচে ঐ রিলেটেড অনেক রেফারেন্স। সন্দেহ থাকলে কিছু নিয়ে নিচের রেফারেন্স দেখে মিলিয়ে নিতে পারেন। কোন জার্নালে প্রকাশ পাইছে সেটা দেখে নিয়ে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা আছে সেটাও দেখতে পারেন। এইসব অপলেখক( :guli: ) ঠিকমত উইকি পড়লেও জানত বিষয়গুলা। 🙂
@সবুজ পাহাড়ের রাজা,
মানুষে মানুষের চিন্তার আর বিবেচনার পাথক্য থাকে, সেজন্যই কিছু মানুষ ভালোভাবে বাঁচে আর কিছু কিছু মানুষ একটু কম ভালোভাবে .. আর যারা মানুষকে “পন্ডিত” বা ইত্যাকার গালিভুষিত করে তারা অবশ্যই নিজের ক্ষতি করে .. আর বিজ্ঞানের যুক্তিও অনেক সময় স্পষ্টভাবে প্রমান করে দেখানো যায় না .. যেমন ধরুন সিগেরেট খেলে মানুষে কেন্সার হয় বা মৃত্যুর হাজার পথ খুলে যায় এটা বললে লোকে বলবে, আমার বাবা তো ষাট বছর বিড়ি ফুকলেন, কিছু তো হলনা উনার .. বা চিনি খেলে ডায়বেটিস হয় না ভাই, মিষ্টি খান ..
@পরমার্থ,
উঁহু! আপনি আমার বক্তব্যার্থ বুঝতে পারেননি।
কন্সপেরেসী থিউরি বর্ণনা করা আর সেই কন্সপেরেসী থিউরির পক্ষে সাফাই গাওয়া ভ্ন্নি বিষয়। উপরন্তু, যদি সেই কন্সপেরেসী থিউরি ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটা নিয়ে অহেতুক দুর্বল যুক্তি দিয়ে সাফাই গাওয়াটা আরো দৃষ্টিকটু।
বুঝাতে পারলাম কি?